সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১৩৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

 ক্বারী মুহম্মদ আব্দুল বারী, গোড়ান, ঢাকা

মুহম্মদ সোহেলুর রহমান, রামপুরা, ঢাকা

 সুওয়ালঃ সম্প্রতি ‘আহলে হাদীছ লাইব্রেরী ঢাকা’-এর সৌজন্যে প্রকাশিত একটি হ্যান্ডবিলে ‘শবে বরাত’ সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক কতিপয় উক্তি করা হয়েছে। কুরআন-সুন্নাহ্র নিরিখে সেসব কতটুকু সঠিক তা আপনাদের বহুল পঠিত, তাজদীদী মুখপত্র ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশ করলে বিভ্রান্তির নিরসণ হতো এবং সঠিক বিষয়টি উন্মোচিত হয়ে আওয়ামুন্ নাস খুবই উপকৃত হতো। আপনাদের জ্ঞাতার্থে হ্যান্ডবিলের একটি মূল কপি প্রেরণ করা হলো। এতে আমাদের মনে যেসব প্রশ্নের উদয় হয়েছে তাহলো- ১. শবে বরাত কি? শবে বরাত-এর অর্থ কি? অর্ধেক ফারসী আর অর্ধেক আরবী সহযোগে শরীয়তে কোন নাম হতে পারে কি-না? শবে বরাত সম্পর্কে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে কোন তথ্য পাওয়া যায় কি-না? ২. কখন থেকে শবে বরাত শুরু হয়? শবে বরাত সম্পর্কে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন নির্দেশ-বাণী আছে কি-না? ৩. অর্ধ শা’বানের রাতটি ভাগ্য রজনী নামে নামকরণ কি বিদ্য়াত? ৪. নফল ইবাদতের মাধ্যমে রাত্রি জাগরণ ও দিনের বেলায় রোযা পালন করা কি বিদ্য়াত? ৫. এর সমর্থনে সূরা দুখানের ৩-৪নং আয়াত শরীফ পেশ করা সঠিক কি-না? ‘লাইলাতুম্ মুবারাকাহ্’ বলতে ‘লাইলাতুল ক্বদরকে’ বুঝানো হয়েছে? না ‘শবে বরাতকে’ বুঝানো হয়েছে? ৬. শবে বরাতে রিযিক বৃদ্ধি করা হয় এবং কতজন জন্মগ্রহণ করবে ও কতজন মৃত্যুবরণ করবে তা ধার্য্য করা হয়। এটা কুরআন-সুন্নাহ্ সম্মত কি-না? ৭. অর্ধ শা’বানের রাতে আলফিয়াহ বা রাগায়িব নামক কোন নামায আছে কি-না? ৮. অর্ধ শা’বানের রাতে কবর যিয়ারত করা নাকি বিদ্য়াত? ৯. হালুয়া-রুটি ও রকমারি খাদ্য প্রস্তুত করা ও বিলি করা নাকি বিদ্য়াত?  ১০. অর্ধ শা’বান উপলক্ষে আয়োজিত মাহ্ফিল বিদয়াত কি-না? ১১. শবে বরাত উপলক্ষে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালত ছুটি ঘোষণা করা নাকি বিদ্য়াত চর্চার সুযোগ দেয়া? ১২. সউদী আরবের দারুল ইফতার সাবেক প্রধান ‘আব্দুল আযীয আব্দুল্লাহ বিন বায’-এর  শবে বরাত পালন করা ও এদিনে রোযা রাখা বিদ্য়াত বলে অভিহিত করা কতটুকু সঠিক? আশা করি উল্লিখিত প্রশ্নসমূহের দলীলভিত্তিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ মহান আল্লাহ পাক স্বীয় কালাম পাকে ইরশাদ করেন,

 فسئلوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون.

 অর্থঃ- “তোমরা আহলে যিকির তথা আল্লাহওয়ালাগণকে জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জান।” (সূরা আম্বিয়া/৭) যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত উপরোক্ত আয়াত শরীফের হাক্বীক্বী মিছদাক। আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন-এর লক্ষ্যস্থল ওলী, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ওসীলায় এ পত্রিকাটি উম্মাহ্র জন্য শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত যার প্রতিটি লিখাই আক্বীদা-আমল হিফাযতকারী ও পরিশুদ্ধকারী। প্রসঙ্গতঃ সুওয়ালে উল্লিখিত প্রশ্নসমূহের ধারাবাহিক জাওয়াব পেশ করা হলো- (ধারাবাহিক) ৩. অর্ধ শা’বানের রাতটি ভাগ্য রজনী নামে নামকরণ কি বিদ্য়াত? এর জবাব হলো, না, অর্ধ শা’বানের রাতটিকে ‘ভাগ্য রজনী’ নামে নামকরণ করা বিদয়াত নয়। বরং তা সম্পূর্ণভাবে কুরআন-সুন্নাহ তথা শরীয়ত সম্মত। আর শরীয়ত সম্মত কোন বিষয়কে বিদয়াত বলা শক্ত কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। মুসলমান হয়ে যে ব্যক্তি কুফরী করে সে মুরতাদ ও কাফিরে পরিণত হয়।  প্রকাশ থাকে যে, শা’বানের অর্ধ রাত্রি তথা শবে বরাত সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহ পাক “সূরা দুখান”-এর ৪নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেছেন,

 فيها يفرق كل امر حكيم.

 অর্থাৎ- “এটি এমন এক রাতে যে রাতে সমস্ত প্রজ্ঞাসম্পন্ন বিষয়ের ফায়সালা করা হয়।” উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 فيها ان يكتب كل مولود من بنى ادم فى هذه السنة وفيها ان يكتب كل هالك من بنى ادم فى هذه السنة وفيها ترفع اعمالهم وفيها تنزل ارزاقهم.

 অর্থাৎ- “বরাতের রাতে ফায়সালা করা হয় কতজন সন্তান এক বৎসরে জন্ম গ্রহণ করবে এবং কতজন সন্তান মৃত্য বরণ করবে। এ রাত্রিতে বান্দাদে আমল (আল্লাহ পাক-এর নিকট) পেশ করা হয় এবং এ রাত্রিতে বান্দাদের রিযিকের ফায়সালা করা হয়।” (বাইহাক্বী, মিশকাত)  কাজেই আল্লাহ পাক যেহেতু বলেছেন, বরকতময় রজনীতে সকল কাজের ফায়সালা করা হয়। আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও যেহেতু বলেছেন যে, বরাতের রাতেই সকল বিষয় যেমন, হায়াত, মউত, রিযিক ইত্যাদি যা কিছু মানুষের প্রয়োজন হয়ে থাকে তার ফায়সালা করা হয় এবং আমলনামারও ফয়সালা করা হয়। সেহেতু বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, নিঃসন্দেহে শা’বানের অর্ধ রাতটি الليلة القسمة তথা ভাগ্য রজনী। যে প্রসঙ্গে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,

 ومن اسمائها ليلة القسمة للارزاق والتقدير مايقضى الله تعالى فيها من امره الخطير. لما روى عن عطاء بن يسار قال اذا كان ليلة النصف من شعبان نسخ لملك الموت اسم كل من يموت من شعبان الى شعبان وان الرجل ليظلم ويفجر وينكح النسوان ويغرس الاشجار وقد نسخ اسمه من الاحياء الى الاموات وما من ليلة بعد ليلة القدر افضل منها. وفى رواية عنه اذا كان ليلة النصف من شعبان دفع الى ملك الموت عليه السلام صحيفة فيقال له اقبض من فى هذه الصحيفة فان العبد ليعرس الاغراس وينكح الازواج ويبنى البنيان وان اسمه قد نسخ فى الموت وما ينتظر به ملك الموت الا ان يؤمر به يقبضه.وفى رواية تقطع الاجال من شعبان الى شعبان حتى ان الرجل لينكح ويولد له وقد خرج اسمه فى الموت. وعن ابن عباس رضى الله عنهما انه قال ان الله يقضى الاقضية كلها ليلة النصف من شعبان ويسلمها الى اربابها ليلة القدر.

 অর্থঃ- “অর্ধ শা’বানের রাত তথা শবে বরাতের নামসমূহের মধ্যে একটি নাম হচ্ছে ‘লাইলাতুল ক্বিসমাতি বা ভাগ্য রজনী।’ এ কারণে যে, এ রাত্রিতে রিযিকসমূহ ও তাক্বদীর বা ভাগ্য নির্ধারণ, বন্টন ও ফায়সালা করা হয়। যেমন আল্লাহ পাক তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ এ মুবারক রাত্রিতে ফায়সালা করেন। হযরত আতা ইবনে ইয়সার রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত রয়েছে। তিনি বলেন, অর্ধ শা’বানের রাত্রিতে মালাকুল মউত হযরত আজরাইল আলাইহিস্ সালামকে ঐ সকল ব্যক্তির নামের একটা অনুলিপি বা তালিকা প্রদান করা হয় যারা এক শা’বান থেকে আরেক শা’বানের মধ্যে ইন্তিকাল করবে। এরপরও সে ব্যক্তিরা জুলুম করে, পাপ করে, মেয়েদের বিবাহ করে, গাছ রোপন করে অথচ তাদের হায়াত থেকে মউতের তালিকা প্রদান  করা হয়েছে। আর লাইলাতুল ক্বদরের পর এমন কোন রাত নেই যে রাতটি শবে বরাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।  হযরত আতা ইবনে ইয়াসার রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে অপর এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত রয়েছে, মধ্য শা’বানের রাত্রিতে মালাকুল মউত হযরত আজরাইল আলাইহিস্ সালামকে একখানা ছহীফা প্রদান করা হয় অতঃপর তাঁকে বলা হয় ঐ সকল লোকের রূহ কবজ করুন যাদের নাম এ ছহীফার মধ্যে রয়েছে। আর নিশ্চিতভাবে সে বান্দারা গাছ রোপন করে, বিবাহ-শাদী করে, অট্টালিকা নির্মাণ করে অথচ তাদের নাম মউতের জন্য তালিকাভুক্ত হয়ে গেছে। আর মালাকুল মউত আদেশের অপেক্ষা করছেন, আদেশ হওয়া মাত্রই তিনি তাদের রূহ কবজ করবেন।  অপর বর্ণনায় রয়েছে, ইন্তিকালের মিয়াদ কর্তন করে দেয়া হয় এক শা’বান থেকে পরবর্তী শা’বান পর্যন্ত। তারপরও সে ব্যক্তি বিবাহ-শাদী করে এবং তার থেকে সন্তানাদি জন্মগ্রহণ করে অথচ তার নাম ইন্তিকালের খাতায় চলে গেছে। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সমস্ত ফায়সালাকৃত বিষয়সমূহ শা’বানের মধ্য রাতে ফায়সালা করেন এবং এর প্রতিপালনকারী কদরের প্রতি  অর্পন করেন। স্মরণীয়, শা’বানের মধ্য রাতটির বহু ফাযায়িল-ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবার কথা বর্ণিত রয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত রাতকে কেবল যে ‘ভাগ্য রজনী’ হিসেবেই নামকরণ করা হয়েছে তা নয়। বরং বেশ কিছু নামে রাতটির নাম করণ করা হয়েছে। যা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফসহ বিভিন্ন কিতাবাদিতে উল্লেখ রয়েছে। নিম্নে কতিপয় নাম পেশ করা হলো- (১) الليلة المباركة (আল্লাইলাতুল মুবারকাতু) বরকতময় রজনী। (২) ليلة النصف من شعبان (লাইলাতুন্ নিছফি মিন শা’বানা) অর্ধ শা’বানের রজনী। (৩) ليلة القسمة (লাইলাতুল ক্বিস্মাতি) ভাগ্য রজনী। (৪) ليلة التكفير. (লাইলাতুত্ তাকফীরি) গুনাহ্খতা ক্ষমা বা কাফ্ফারার রাত্রি। (৫) ليلة الاجابة (লাইলাতুল ইজাবাতি) দুয়া কবুলের রাত্রি। (৬) ليلة الحياة (লাইলাতুল হায়াতি) হায়াত বা আয়ু বৃদ্ধির রাত্রি। (৭) ليلة عيد الملائكة (লাইলাতু ঈদিল্ মালায়িকাতি) ফেরেশতাগণের ঈদের রাত্রি। (৮) ليلة البراءة (লাইলাতুল বারাআতি) মুক্তির রাত্রি। (৯) ليلة التجويز (লাইলাতুত্ তাজবীযি) বিধান সাব্যস্ত করার রাত্রি। (১০) ليلة الفيصلة (লাইলাতুল ফায়সালাতি) সিদ্ধান্ত নেয়ার রাত্রি। (১১) ليلة الصك (লাইলাতুছ্ ছক্কি) ক্ষমার স্বীকৃতি দানের রাত্রি। (১২) ليلة الجائزة (লাইলাতুল জায়িযাতি) পুরুস্কারের রাত্রি। (১৩) ليلة الرجحان (লাইলার্তু রুজহানি) পরিপূর্ণ প্রতিদানের রাত্রি। (১৪) ليلة التعظيم (লাইলাত্ত্ ুতা’যীমি) সম্মান হাছিলের রাত্রি। (১৫) ليلة التقدير (লাইলাতুত্ তাক্বদীরি) তক্বদীর নির্ধারণের রাত্রি। (১৬) ليلة الغفران (লাইলাতুল গুফরানি) ক্ষমাপ্রাপ্তির রাত্রি। (১৭) ليلة العتق من النيران (লাইলাতুল ইত্ক্বি মিনান্ নীরানি) জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার রাত্রি। (১৮) ليلة العفو (লাইলাতুল আফবি) অতিশয় ক্ষমা লাভের রাত্রি। (১৯) ليلة الكرم (লাইলাতুল কারামি) অনুগ্রহ হাছিলের রাত্রি। (২০) ليلة التوبة (লাইলাতুত্ তাওবাতি) তওবা কবুলের রাত্রি। (২১) ليلة الندم (লাইলাতুন্ নাদামি) কৃত গুনাহ স্মরণে লজ্জিত হওয়ার রাত্রি। (২২) ليلة الذكر (লাইলাতুয্ যিকরি) যিকির-আযকার করার রাত্রি। (২৩) ليلة الصلوة (লাইলাতুছ্ ছলাতি) নামায আদায়ের রাত্রি। (২৪) ليلة الصدقة (লাইলাতুছ্ ছদাক্বাতি) দানের রাত্রি। (২৫) ليلة الخيرات (লাইলাতুল খইরাতি) নেককাজ সম্পাদনের রাত্রি। (২৬) ليلة انزال الرحمة (লাইলাতু ইনযালির রহ্মাতি) রহমত নাযিলের রাত্রি। (২৭) ليلة صلوة وسلام على سيد المرسلين صلى الله عليه وسلم (লাইলাতু ছলাতিন ওয়া সালামিন আলা সাইয়্যিদিল মুরসালীনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাইয়্যিদুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ছলাত ও সালাম পাঠের রাত্রি। (চলবে)

মুহম্মদ আলী হায়দার আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।

সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা আগস্ট/২০০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে ফাত্ওয়ায়ে শামী-১/৫৫৩, ৫২, আহসানুল ফাত্ওয়া-৩/৩২৬-৩২৭ পৃষ্ঠার, বরাত দিয়ে বলেছে, “যে মসজিদে ইমাম মুয়াজ্জিন নির্দিষ্ট আছে, তাতে আযান ব্যতীত দ্বিতীয় জামাআত প্রথম জামাআতের ন্যায় না করলে …দ্বিতীয় জামাআত করলে মাকরূহ হবে কি-না সে সম্পর্কে  ইমাম আবু হানিফা (রাহ) ও ইমাম আবু ইউসুফ (রাহ) এর মতনৈক্য রয়েছে। তবে উভয়েই একথায় একমত যে, উক্ত অবস্থায় নামায মাকরূহ থেকে খালী হবে না। তবে ইমাম আবু হানিফা (রাহ) এর মতে মাক্রূহে তাহরীমী হবে । এবং ইমাম আবু ইউসুফ (রাহ) এর মতে মাকরূহে তানযিহি হবে।  যেসব রিসালায় ৪র্থ তরীকা মাক্রূহে তাহরিমী বলা হয়েছে, তা ইমাম আবূ হানিফা (রাহ) এর মতানুযায়ী। মাসিক মুঈনুল ইসলামে যে বলা হয়েছে মাকরূহ হবে না, তা ইমাম আবু ইউসুফ (রাহ) এর মতানুযায়ী। তবে এর উদ্দেশ্য হল মাকরূহে তাহরীমি হবে না। কিন্তু মাকরূহে তানযিহি অবশ্যই হবে।  তাই ৪র্থ অবস্থা কোন ইমামের নিকটই পরিপূর্ণ মাকরূহ থেকে খালী নয় বিধায় দ্বিতীয় জামাআত না করে একাকি নামায পড়াই উত্তম। আর সানী জামাআত করলে মাকরূহে তাহরীমি হবে। সাধারণ ভাবে এর উপরই ফাত্ওয়া।  আর মাসিক মদীনা অক্টোবর/২০০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে,“ মসজিদে দ্বিতীয় জামাত করা মাকরূহ্ তাহরীমী।” অথচ আপনারা মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় লিখেছেন, জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয এবং সকল ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ইজমা বা ঐক্যমতে জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহ্রীমী নয়; যদি দ্বিতীয় জামায়াত প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয়।  এখন হাটহাজারীর ও মাসিক মদীনার বক্তব্য অথবা মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ফতওয়া কোনটি সঠিক? দয়া করে দলীল-আদিল্লাহসহ বিস্তারিতভাবে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ মহল্লা বা জামে মসজিদে (অর্থাৎ যেসব মসজিদে ইমাম-মুয়ায্যিন ও জামায়াত নির্ধারিত আছে এবং নির্দিষ্ট সময়ে জামায়াত কায়িম হয় সেসব মসজিদে একবার জামায়াত হওয়ার পর) ছানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর মাধ্যমে যা জানতে পেরেছেন সে ফতওয়াই সঠিক, নির্ভরযোগ্য, দলীলভিত্তিক এবং গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য। পক্ষান্তরে মাসিক মদীনা ও হাটহাজারীর মৌলভী সাহেবদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং ফতওয়াগ্রাহ্য মতের বিপরীত। শুধু তাই নয় বরং মাসিক মদীনা ও হাটহাজারীর মৌলভী সাহেবরা মহল্লা বা জামে মসজিদে ছানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করার বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়ে শক্ত গুণাহ্র কাজ করেছে। কেননা সঠিক, গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত অনুযায়ী জামে মসজিদে দ্বিতীয় জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহরীমী নয়। এটাই ترجيح (তারজীহ্) বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়া। আর ترجيح (তারজীহ্) বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়ার বিপরীত ফতওয়া দেয়া সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়িয। (ধারাবাহিক) হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবদের কারচুপিমূলক বক্তব্য  উদঘাটন ও খ-ন উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা প্রথমতঃ ফতওয়ায়ে শামী কিতাবের  ১ম খ-ের ৫৫২ ও ৫৫৩ পৃষ্ঠার বরাত দিয়ে যে কারচুপিমূলক বক্তব্য প্রদান করেছে, তা আমরা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর বিগত সংখ্যায় বিস্তারিত দলীল-আদিল্লার মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়েছি যে,  হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ ডাহা মিথ্যা, মনগড়া ও দলীল বিহীন। কারণ মহল্লা বা জামে মসজিদে দ্বিতীয় জামায়াত করা মাকরূহ্ সম্পর্কে ইমাম আবূ হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি যে একমত হয়েছেন এ ধরণের কোন বক্তব্য ফতওয়ায়ে শামী কিতাবের ১ম খ-ের ৫৫২ ও ৫৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ নেই। শুধু তাই নয়, ইমাম আবূ হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে দ্বিতীয় জামায়াত করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী এবং ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে মাকরূহ্ তানযীহী এ ধরনের কোন বর্ণনাও ফতওয়ায়ে শামী কিতাবের  ১ম খ-ের ৫৫২ ও ৫৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ নেই। এছাড়াও আমরা আরো প্রমাণ করে দিয়েছি যে, হাটহাজারীর মৌলভী সাহেবরা যে “ফতওয়ায়ে শামী কিতাবের” ১ম খ-ের  ৫৫২ ও ৫৫৩ পৃষ্ঠার বরাত দিয়েছে, সেই “ফতওয়ায়ে শামী কিতাবের” ১ম খ-ের ৫৫২ ও ৫৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে দ্বিতীয় জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহরীমী নয়। আর وبه نأخذ এটাই আমরা গ্রহণ  করেছি।” সুতরাং পাঠকের সুবিধার্থে “ফতওয়ায়ে শামী  কিতাবের” ১ম খ-ের ৫৫৩ পৃষ্ঠার একখানা ইবারত আবারো তুলে ধরা হলো। আর এতেই হাটহাজারী মৌলভী সাহেবদের ধোকাবাজী এবং কারচুপির মুখোশ উন্মোচিত হবে।  যেমন, প্রথমতঃ তাদের উল্লিখিত “ফতওয়ায়ে শামী  কিতাবের” ১ম খ-ের ৫৫৩ পৃষ্ঠাতেই উল্লেখ আছে,

 اذا لم تكن الجماعة على الهيئة الأولى لاتكره والا تكره وهو الصحيح وبالعدول عن المحراب تختلف الهيئة كذا فى البزازية انتهى وفى التاترخانية عن الولوالجية وبه نأخذا.

 অর্থঃ- “ছানী বা দ্বিতীয় জামায়াত যদি প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয়। (প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হওয়ার অর্থ হলো দ্বিতীয় জামায়াতের জন্য আযান ও ইক্বামত হবেনা। ইমামের নির্ধারিত স্থানে তথা মেহরাবে দাঁড়াতে পারবেনা।) তাহলে ছানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ্ হবেনা। অন্যথায় মাকরূহ্ হবে। আর وهو الصحيح এটাই ছহীহ্ ও বিশুদ্ধ ফতওয়া। আর মেহরাব থেকে সরে দাঁড়ানোই হলো প্রথম ছূরতের বিপরীত।” অনুরূপ বায্যাযীয়া কিতাবেও উল্লেখ আছে। আর তাতারখানিয়া কিতাবে ওয়ালওয়ালিজীয়া কিতাব থেকে উল্লেখ আছে যে, وبه نأخذ এটাই আমরা গ্রহণ করেছি। অর্থাৎ আমাদের হানাফী মাযহাবের গ্রহণযোগ্য মতে দ্বিতীয় জামায়াত মাকরূহ তাহ্রীমী নয়, যদি দ্বিতীয় জামায়াত প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয়।   সুতরাং প্রমাণিত হলো, হাটহাজারীর মৌলভী সাহেবরা ডাহা মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে, কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে।   তাদের ২য় দলীল হলো -“আহসানুল  ফাত্ওয়া”।           এর জবাবে বলতে হয় যে, আহসানুল  ফাত্ওয়া কোন নির্ভরযোগ্য কিতাব নয়। বরং তাদেরই মতো মৌলভী সাহেবের দ্বারা লিখিত কিতাব। সেখান থেকে হাটহাজারীর মৌলভী সাহেবরা শুধু বাংলায় অনুবাদ করে দিয়েছে মাত্র। সুতরাং তাদের লিখিত কিতাব এবং অনুবাদ দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। পরিশেষে হাট হাজারীর মৌলভী ছাহেবরা বলেছে, “সানী জামাআত করলে মাকরূহে তাহরীমি হবে। সাধারণভাবে এর উপরই ফাত্ওয়া। ” এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্যও ভুল, মনগড়া এবং দলীলবিহীন। কারন বিশ্বখ্যাত ফতওয়ার কিতাবসমূহে উল্লেখ আছে যে, মহল্লা বা জামে মসজিদে দ্বিতীয় জামায়াত করলে মাকরূহ্  তাহ্রীমী হবে না। আর  সাধারণ ভাবে এরই উপর সমস্ত মুসলমানগণ তথা সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন।” যেমন, “বাহরুর রায়িক” কিতাবের ১ম খ-ের ৩৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 لا بأس به مطلقا اذا صلى فى غير مقام الامام.

 অর্থঃ- (مطلقا) “সাধারণ ভাবে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করতে কোন অসুবিধা নেই, তবে শর্ত হলো মুকাররার ইমামের নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য স্থানে দ্বিতীয় জামায়াত কায়িম করবে।” অর্থাৎ ইমাম ছাহেব যে স্থানে দাঁড়িয়ে প্রথম জামায়াত আদায় করেছেন, সে স্থানে দ্বিতীয় জামায়াতের ইমাম ছাহেব দাঁড়াবেন না। বরং সেখান থেকে দূরে সরে দ্বিতীয় জামায়াতের ইমামতি করবেন; তাহলে “সাধারণ ভাবে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করতে কোন অসুবিধা নেই।  তাছাড়া “বাহরুর রায়িক” কিতাবের ১ম খ-ের ৩৪৬ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

 يجوز تكرار الجماعة بلا اذان ولا اقامة ثانية اتفاقا.

অর্থঃ- “সকল  ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার আযান ও ইক্বামত ব্যতীত দ্বিতীয় জামায়াত কায়িম করা জায়িয। “আল ফিক্বহু আ’লাল মাযাহিবিল আরবায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৪৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 لايكره مطلقا تكرار الجماعة فى مسجد المحلة بلا أذان واقامة.

 অর্থঃ- “(مطلقا) সাধারণ ভাবে মহল্লার মসজিদে (অর্থাৎ যেখানে ইমাম এবং জামায়াত নির্ধারিত আছে যাকে জামে মসজিদ বলা হয় সেখানেও) আযান ও ইক্বামত ব্যতীত দ্বিতীয় জামায়াত  করা মাকরূহ্ হবেনা।” “হাশিয়ায়ে তাহতাবী আলা দুররিল মুখতার” কিতাবের ১ম খন্ডের ২৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 اما اذا كررت بغير اذان فلا كراهة مطلقا وعليه المسلمون.

 অর্থঃ- “অতঃপর মহল্লার মসজিদে যদি আযান ব্যতীত দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করে, তাহলে  (مطلقا) সাধারণ ভাবে   দ্বিতীয় জামায়াত করা মাকরূহ হবেনা এবং এরই উপর সমস্ত মুসলমানগণ তথা সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন।” উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, বিশুদ্ধ ফতওয়া হলো, মহল্লা বা জামে মসজিদে (অর্থাৎ যেসব মসজিদে ইমাম-মুয়ায্যিন ও জামায়াত নির্ধারিত আছে এবং নির্দিষ্ট সময়ে জামায়াত কায়িম হয়, সেসব মসজিদে একবার জামায়াত হওয়ার পর)  ছানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ্ নয়। এটাই ترجيح (তারজীহ্) বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত  মাসয়ালা। আর প্রাধান্যপ্রাপ্ত মাসয়ালার বিপরীত ফতওয়া দেয়া সম্পূর্ণই নাজায়িয ও হারাম। অতএব, আরো প্রমাণিত হলো, মাসিক মদীনা ও হাটহাজারী মাদ্রাসার মৌলভী ছাহেবরা মহল্লা বা   জামে মসজিদে ছানী বা  দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করার বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়ে হারাম ও নাজায়িয কাজ করেছে। এবং ডাহা মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে, কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। [বিঃ দ্রঃ- এ সম্পর্কে আরো জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৩২, ৫০, ৫৮, ৫৯, ৬১, ৭৭, ১০১, ১১২, ১১৬ এবং ১৩১তম সংখ্যা ১৩৫তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে মাসিক মদীনা, অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এবং হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার  মহল্লা বা জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা সম্পর্কিত ভুল বক্তব্য খ-ন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, এবার ষষ্ঠবারের মত মাসিক মদীনা ও হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার, মহল্লা বা জামে মসজিদে ছানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা সম্পর্কিত ভুল বক্তব্য খ-ন করে সঠিক জওয়াব দেয়া হলো।

মুসাম্মত সানজিদা আক্তার সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত মুহম্মদপুর, ঢাকা

সুওয়ালঃ অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়- জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। তাদের সকল আমল হবে খুবই নিখূঁত ও সুন্দর। তাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে, তাদের রোযা দেখে তোমাদের রোযাকে তোমরা তুচ্ছ ও নগণ্য মনে করবে। তাদের আমল দেখে তোমরা তোমাদের আমলকে হেয় মনে করবে, তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার নিচে যাবেনা। তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন-প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। এদলের আমল যতই তোমাদেরকে আকৃষ্ট করুক না কেন, কখনই তাদের দলে যাবেনা। কারণ প্রকৃতপক্ষে এরা হবে ইসলাম হতে খারিজ, দ্বীন হতে বহির্ভূত। তীর যেমন ধনুক হতে বের হয়ে যায় সে আর কখনও ধনুকের নিকট ফিরে আসেনা। তেমনিই এরা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে, আর কখনও দ্বীনের পথে, কুরআন ও সুন্নাহ্র পথে ফিরে আসবেনা। আমার প্রশ্ন হল, উপরোক্ত হাদীছ ছহীহ্ কি-না? ছহীহ্ হলে এ দ্বারা উদ্দেশ্য কারা? উক্ত হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতের কোন সম্পর্ক আছে কি-না? অনেকে এই হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতকে জড়াতে চান। উক্ত হাদীসের সঙ্গে তাবলীগ জামাতকে জড়ানো সঠিক কি-না? জবাবঃ প্রশ্নে বর্ণিত হাদীছ ছহীহ্। মুহাদ্দিছীনে কেরাম উক্ত হাদীছসহ এ জাতীয় হাদীছসমূহের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এ সব হাদীছ দ্বারা একটি নির্ধারিত জামাত বা খারিজী ফেরক্বা নামে পরিচিত তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর খিলাফত আমলে এই হাদীছসমূহের বাস্তবতা এবং খাওয়ারেজদের অবস্থার সমন্বয় ঘটেছিল। যার দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে বলা চলে যে, এ হাদীছসমূহ দ্বারা একমাত্র খাওয়ারেজদেরকেই বুঝানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণাদি ছাড়া অন্য কোন জামাতকে এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করা যাবেনা। কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়া তাবলীগ জামাতকে এই হাদীছসমূহের মেসদাক বা উদ্দেশ্য বানানো, তাদেরকে খাওয়ারেজ বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে মারাত্মক অন্যায় ও অপরাধ। তাবলীগের নিয়মনীতি ও কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই। বর্তমান বিশ্বে আল্লাহ্ তা’আলা তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে পথহারা, ঈমানহারা, হেদায়েত থেকে বঞ্চিত অসংখ্য মানুষকে হেদায়েত করেছেন, ঈমান আনার তাওফিক দান করেছেন। এছাড়া এ জামাতের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে অসংখ্য জগদ্বিখ্যাত আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ। অতএব, তাবলীগ জামাতকে খারেজী জামাত বলা, মিথ্যা অপবাদ বৈ কিছুই নয়। (ফতহুল বারী ১২ঃ৩৫০, আল মিরকাত ৭ঃ১০৭) উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো- (১) উল্লিখিত হাদীছ শরীফে বর্ণিত গুণাবলী প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে আছে কি? (২) উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা কি শুধু খারিজী ফিরক্বার লোকদেরকেই বুঝানো হয়েছে? নাকি খারিজীদের ন্যায় আক্বীদা পোষণকারীদের ক্ষেত্রেও এ হাদীছ শরীফ প্রযোজ্য? (৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য? (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি? (৫) কুরআন-সুন্নাহ্র কোথাও প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করার নির্দেশ আছে কি? প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করা কুরআন-সুন্নাহ্ মতে জায়িয কিনা? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াবঃ প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কিত উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।  শুধু তাই নয়, তারা প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের সাফাই গাইতে গিয়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যা করেছে। সাথে সাথে “ছয় উছূলীদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী কোন আক্বীদা-আমল নেই” বলে তাদের নির্লজ্জ দালালী করে নিজেদেরকে অপব্যাখ্যাকারী ও মিথ্যাবাদীরূপে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিক দলীলভিত্তিক আলোচনা করলেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে। তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো- (ধারাবাহিক) ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে  উল্লিখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা  ও মিথ্যাচারীতার খ-নমূলক জবাব-৩  প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে।  তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, পর্যায়ক্রমে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলোর সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো- প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ১২ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের আক্বীদা হলো যে, “দাওয়াতের কাজ বন্ধ করার কারণে আল্লাহ পাক হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালামকে বিপদে ফেলেছিলেন এবং তিনি সেখানে নিজের অপরাধ স্বীকার করে চল্লিশ দিন কাঁদা-কাটার পর আল্লাহ পাক তাঁর অপরাধ ক্ষমা করেন। এ প্রসঙ্গে তাদের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে, “দাওয়াত বন্ধ করার কারণে, আল্লাহ পাক হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালামকে অবশ্য গযবে ফেলিলেন…..।”  “…. হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম মাছের পেটে চল্লিশ দিন আবদ্ধ থেকে নিজ ক্রটি স্বীকার করিয়া তওবা …. করার কারণে বিপদ হতে উদ্ধার পেলেন।” (তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, লেখক- ইসাইল হোসেন দেওবন্দী পৃঃ৬২ ও ৮৯) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য নেহায়েতই অজ্ঞতামূলক, বিভ্রান্তিকর, ও নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের শানের সম্পূর্ণ খিলাফ হওয়ার কারণে কুফরীমূলক হয়েছে। মূলতঃ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ সম্পর্কিত ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য ইসলামী আক্বীদাগত অজ্ঞতা হেতুই তারা এরূপ আপত্তিকর আক্বীদা পোষণ করে থাকে।  (দ্বিতীয় অংশ) নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ  সম্পর্কিত ছহীহ্ ইসলামী আক্বীদা স্মরণীয় যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ভুল করা তো দূরের কথা, কোন প্রকার অপছন্দনীয় কাজও তাঁরা করতেন না। বরং সর্ব প্রকার অপছন্দনীয় কাজ থেকেও তাঁরা বেঁচে থাকতেন বা পবিত্র থাকতেন, এ প্রসঙ্গে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র  সীরত মুবারক থেকে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়- “একবার আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুজরা শরীফে বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাত করার অনুমতি চাইলেন। এ সংবাদ উম্মুল মু’মিনীন, হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট পৌঁছালেন। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘সে ব্যক্তিকে অপেক্ষা করতে বল।’ একথা বলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পাগড়ী মুবারক, জামা বা কোর্তা মুবারক ইত্যাদি গুছগাছ করে নিলেন। এমন কি হুজরা শরীফ থেকে বের হওয়ার মূহুর্তে পানির গামলাতে নিজের চেহারা মুবারক দেখে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। তা দেখে সে সময় হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনিও কি এরূপ করেন?’ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘কিরূপ করি?’ হযরত আয়িশা সিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, ‘এরূপ পরিপাটি।’ এর জবাবে আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আমরা আল্লাহ্ পাক-এর নবী। আমাদের কোন কাজ কারো অপছন্দ হলে, সে ঈমান হারা হয়ে যাবে।’ (আল্ মুরশিদুল আমীন) অতএব, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ যে কতটুকু অপছন্দনীয় কাজ থেকে বেঁচে থাকতেন, হাদীছ শরীফের বর্ণিত ঘটনা তারই প্রমাণ। তাহলে কি করে এ কথা বলা যেতে পারে বা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে যে, ‘নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ভুল-ত্রুটি করেছিলেন?’ বস্তুতঃ এরূপ আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী। আরো উল্লেখ্য যে, আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীছ শরীফ বর্ণনা কারীদেরকে রাবী বলা হয়। এই রাবীগণের মধ্যে যাঁরা প্রথম শ্রেণীর, তাঁদেরকে বলা হয় ছেক্বাহ্ রাবী।  হাদীছ বিশারদগণ, ছেক্বাহ্ রাবী হওয়ার জন্য যে মানদ- নির্ধারণ করেছেন, তার মধ্যে মূল বিষয় হচ্ছে- (১) আদালত ও (২) জব্ত। জব্ত হচ্ছে- প্রখর স্মরণশক্তি। তা এমন যে, একবার শুনলে আর ভুলেনা। আর আদালত-এর মধ্যে চারটি শর্ত রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান হলো- দু’টি। যথা- (ক) তাক্বওয়া, (খ) মুরুওওয়াত।  (ক) তাক্বওয়া হচ্ছে- কুফরী, শেরেকী, বিদ্য়াতী, ফাসেকী কাজ থেকে বেঁচে থাকার সাথে সাথে কবীরাহ্ গুণাহ্ থেকে, এমনকি ছগীরাহ্ গুণাহ্ও বার বার করা থেকে বেঁচে থাকা।  (খ) আর মুরুওওয়াত হচ্ছে- অশালীন, অশোভনীয়, অপছন্দনীয়, এমনকি দৃষ্টিকটু কাজ থেকে বিরত থাকা। যেমন- রাস্তায় হেঁটে হেঁটে খাদ্য খাওয়া, রাস্তায় অট্টহাস্য করা, চিৎকার করা ইত্যাদি। (তাদরীবুর রাবী, মুকাদ্দামাতুশ শায়খ, মীযানুল আখবার)  এখন ফিকিরের বিষয় এই যে, হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী ছেক্বাহ্ রাবী যদি এত গুণ ও যোগ্যতাসম্পন্ন এবং তাক্বওয়াধারী হন অর্থাৎ উম্মতে মুহম্মদীর নিকট যদি ছেক্বাহ্ রাবী হিসেবে হাদীছ বর্ণনাকারী হওয়ার জন্য ছগীরাহ্ গুণাহ্ বার বার না করা ও দৃষ্টিকটু সাধারণ অপছন্দনীয় কাজও না করা শর্ত হয়, তাহলে যাদেরকে আল্লাহ পাক তাঁর নবী হিসেবে মনোনীত করলেন এবং যারা আল্লাহ পাক-এর কালাম বর্ণনাকারী হলেন, তাঁদের জন্য আল্লাহ্ পাক কি মানদ- নির্ধারণ করেছেন বা তাঁদের ক্ষেত্রে কতটুকু মা’ছূম ও মাহ্ফুজ হওয়া নির্দিষ্ট করছেন তা অতি গুরুত্বের সাথে অনুধাবনীয় অর্থাৎ ফিকিরের বিষয়। মূলতঃ উপরোক্ত আলোচনায় নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের শান ও তাঁদের প্রতি আদব সম্পর্কিত যে দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, সে আলোকে নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম সম্পর্কিত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আক্বীদাসমূহ পর্যালোচনা করলে তাদের জিহালত, বেয়াদবি, ভ্রান্তি ও গোমরাহী খুব সহজেই প্রতিভাত হয়। এবং ক্ষেত্র বিশেষে তাদের কিছু কিছু বক্তব্য কুফরী পর্যন্ত পৌঁছে।  কাজেই প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যে বলে থাকে, “দাওয়াত বন্ধ করার কারণে আল্লাহ্ পাক, হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালামকে অবশ্য গযবে ফেলিলেন ….। হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম মাছের পেটে ৪০ দিন আবদ্ধ থাকিয়া নিজ ক্রটি স্বীকার করিয়া তওবা …. করার কারণে বিপদ হতে উদ্ধার পাইলেন।” তা সম্পূর্ণ মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক।  মূলতঃ তারা নবী হিসেবে হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম-এর মর্যাদা না বুঝার কারণে এবং তাঁর সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস বা তথ্য না জানার কারণে এরূপ গোমরাহী ও কুফরীমূলক কথা বলে থাকে। নিম্নে হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা হলো- আল্লাহ পাক-এর রসূল, হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম যখন তাঁর সম্প্রদায়কে বা ক্বওমকে ঈমান ও সৎকাজের জন্য দাওয়াত দিলেন ও নসীহত করলেন, তখন তারা অবাধ্যতা প্রদর্শন করলো। এতে হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম তাদের বললেন, তোমরা যদি এরূপ কর, তবে আল্লাহ্ পাক-এর আযাব তোমাদের পাকড়াও করবে। একথা শুনে উক্ত ক্বওম বললো, “ঠিক আছে, আপনি যদি পারেন, তবে আল্লাহ্র আযাব আনুন।” তখন হযরত ইউনুস আলাইহিমুস্ সালাম আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশে তিনদিন পর আযাব আসার সংবাদ শুনিয়ে আল্লাহ্রই নির্দেশে নিজের অবস্থান থেকে বাইরে চলে যান।  অতঃপর যখন আযাবের কিছু কিছু চিহ্ন বা আলামত প্রকাশ পেল, তখন ঐ ক্বওম কুফরী ও শেরেকী থেকে তওবা করে।     আর আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সকলে জঙ্গলে চলে যায়। সাথে তাদের চতুস্পদ জন্তুগুলিকেও নিয়ে যায়। অতঃপর তারা নিজ নিজ বাচ্চাদেরকে মা থেকে আলাদা করে দিয়ে সকলে মিলে কান্নাকাটি শুরু করে এবং কাকুতি-মিনতি সহকারে আল্লাহ্ পাক-এর কাছে তওবা করে। আর বাচ্চারা তাদের মা থেকে আলাদা হওয়ার কারণে করুণ স্বরে কান্নাকাটি করতে থাকে। তখন আল্লাহ্ পাক তাদের তওবা কবুল করে আযাব দূর করে দেন। এদিকে তিনদিন অতিবাহিত হওয়ার পর, হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম সংবাদ পেলেন যে, তাঁর ক্বওম আযাবে ধ্বংস হয়নি। তখন তিনি চিন্তা করলেন যে, আল্লাহ্ পাক যে, তাঁকে সরে যেতে বলেছিলেন, তা কি সরা হয়েছে? না কিছু বাকী রয়েছে। কারণ আল্লাহ পাক-এর নবীগণ যে স্থানে অবস্থান করেন, সে স্থানে গযব নাযিল হয়না। তাঁরা নির্দিষ্ট স্থান ত্যাগ করার পরই গযব নাযিল হয়, একথা চিন্তা করে তিনি আরো সরতে লাগলেন। উল্লেখ্য হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম-এর ক্বওমের মধ্যে নিয়ম ছিল যে, কেউ মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হলে তার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। তাই নির্দিষ্ট স্থান ত্যাগ না করার কারণে যদি তাদের প্রতি গযব না আসে এবং তাঁকে তারা মিথ্যাবাদী বলে, তবে তাদের সকলের পরকালে আরো বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, একথা চিন্তা করে তিনি আরো সরতে লাগলেন। পথিমধ্যে নদী পড়লো, হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম একটি নৌকায় আরোহণ করলেন। নৌকায় লোক অতিরিক্ত হওয়ার কারণে ডুবে যাওয়ার উপক্রম হলো। তখন মাঝিরা বললো, আপনাদের মধ্যে একজনকে নেমে যেতে হবে। কে নামবে, তা লটারী করা হলো। লটারীতে একবার, দু’বার, তিনবার হযরত ইউনুস আলাইহিমুস্ সালাম-এরই নাম মুবারক উঠলো। যদিও লোকজনের ইচ্ছা ছিলনা হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালামকে নামিয়ে দেয়া, তা সত্ত্বেও তিনি অতিরিক্ত কাপড় খুলে নদীতে নেমে গেলেন। আর আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশে এক বিশেষ মাছ তাঁকে তা’যীম-তাকরীমের সাথে পেটে ধারণ করলো এবং মাছ বললো, হে আল্লাহ্র রসূল, হযরত ইউনুস আলাইহিমুস্ সালাম! আপনি চিন্তিত হবেন না, আমাকে আল্লাহ্ পাক খাছ করে আপনার জন্য তৈরী করেছেন, আমার পেটকে আপনার জন্য ইবাদতখানা হিসেবে নির্ধারিত করেছেন এবং আমার সমস্ত শরীরে আল্লাহ্র যিকির জারী রয়েছে। একথা শুনে হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম সে মাছের পেটে আল্লাহ্ পাক-এর যিকির-আয্কার ও ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল হলেন।  মূলতঃ আল্লাহ্র নবী, হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম মাছের পেটে প্রবেশ করার পেছনে শত-সহস্র কারণ রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো এই যে, সে যামানায় পানির নীচে যত মাছ ছিল, সমস্ত মাছ রোগাক্রান্ত হয়ে আল্লাহ্ পাক-এর কাছে সুস্থতার জন্য আরজু করছিল। আর আল্লাহ্ পাক তাদের বলেছিলেন “অপেক্ষা কর।”  যখন আল্লাহ্ পাক-এর নবী, হযরত ইউনুস আলাইহিমুস্ সালাম মাছের পেটে অবস্থান নিলেন, তখন আল্লাহ্ পাক মাছগুলোকে নির্দেশ দিলেন, “তোমরা আমার নবী হযরত ইউনুস আলাইহিমুস্ সালাম যে মাছের পেটে অবস্থান করছেন, সে মাছকে শুঁক বা ঘ্রাণ নাও। যেগুলো তাঁকে শুঁকবে বা ঘ্রাণ নিবে সেগুলো সুস্থতা লাভ করবে এবং দূরবর্তী যেসব মাছ রয়েছে, যেগুলো সরাসরি হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালামকে ধারণকৃত মাছকে শুঁকতে বা ঘ্রাণ নিতে পারবে না, সে সমস্ত মাছ যদি ঐ সমস্ত মাছ, যেগুলো হযরত ইউনুস আলাইহিমুস্ সালামকে ধারণকৃত মাছকে শুঁকে বা ঘ্রাণ নিয়ে সুস্থ্যতা লাভ করেছে, সেগুলোকে শুঁকবে বা ঘ্রাণ নিবে, তবে সেগুলোও সুস্থতা লাভ করবে। উল্লেখ্য এভাবে সমস্ত মাছের সুস্থতা লাভ করতে প্রায় চল্লিশ দিন অতিবাহিত হয়ে গেল। অতঃপর আল্লাহ্ পাক হযরত ইউনুস আলাইহিমুস্ সালামকে ধারণকৃত মাছকে নির্দেশ দিলেন যে, “তুমি আমার রসূল, হযরত ইউনুস আলাইহিমুস্ সালামকে তা’যীম-তাকরীমের সহিত নদীর পাড়ে পৌঁছে দাও।” তখন সে মাছ আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশে তাঁকে নদীর পাড়ে এক কদু গাছের নীচে তা’যীম-তাকরীমের সহিত পেট থেকে বের করে রাখলো। মূলতঃ এই হচ্ছে আল্লাহ্র রসূল, হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম-এর চল্লিশ দিন যাবত মাছের পেটে অবস্থান করার সঠিক তথ্য বা ইতিহাস। যা তাফসীরসমূহে ও নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের নির্ভরযোগ্য সীরাতের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। অতএব প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যে বলে, দাওয়াত বন্ধ করার কারণে আল্লাহ্ পাক হযরত ইউনুস আলাইহিমুস্ সালামকে গযবে ফেললেন, সেকথা আদৌ শুদ্ধ নয়।  কারণ যেখানে আল্লাহ্ পাক উম্মতদের মধ্যে যারা নেক্কার, আল্লাহ্র রহ্মত তাদের নিকটবর্তী বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফের সূরা আ’রাফের ৫৬নং আয়াত শরীফে বলেন,

 ان رحمة الله قريب من المحسنين.

 অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক-এর রহ্মত মুহ্সীনীন (নেক্কারদের) নিকটবর্তী।” সেখানে যিনি আল্লাহ্র রসূল, তাঁর প্রতি কি করে আল্লাহ্ পাক গযব নাযিল করতে পারেন? মূলতঃ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের উপর গযব নাযিল হওয়ার প্রশ্নই উঠেনা। বরং তাঁরা যে স্থানে অবস্থান করেন, সে স্থানে সবসময় আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে রহ্মত বর্ষিত হয়। যার কারণে আমরা কুরআন শরীফের অনেক স্থানেই দেখতে পাই যে, আল্লাহ্ পাক যে ক্বওমকে তাদের নাফরমানির কারণে শাস্তি দিতে ইচ্ছে পোষণ করেছেন, তখন সে ক্বওমের নবীকে সে নির্দিষ্ট স্থান ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ আল্লাহ পাক-এর নবী বা রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ যতক্ষণ পর্যন্ত সে নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত ঐ স্থানে আযাব-গযব নাযিল হবেনা। মূলতঃ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের অস্তিত্বই সার্বক্ষণিক রহ্মতের কারণ।  অতএব হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম-এর গযব সম্পর্কিত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ জেহালতপূর্ণ ও গোমরাহীমূলক। (চলবে)

 মুহম্মদ মুহিউদ্দীন সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত সন্দ্বীপ শাখা, চট্টগ্রাম

সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানী মাযহাবের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর- জানুয়ারী/২০০৩-০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে ‘‘বিত্রের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম এবং বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব পাবে বলে উল্লেখ করেছে।’’ তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ্, নাসায়ী থেকে দলীল হিসেবে কয়েকখানা হাদীছ শরীফও উল্লেখ করেছে।  আর হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ডিসেম্বর/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, ‘‘বিতির নামাযের পর দুই রাক্আত নফল নামায…  দাঁড়িয়ে পড়া ভাল। কারণ, নফল নামায বিনা কারণে বসে পড়লে অর্ধেক সাওয়াব হয়।” এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা হালকী নফল নামায সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে হাদীছ শরীফগুলো উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য। তাদের প্রতিটি দলীলের খ-নসহ হালকী নফল সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াবঃ বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায যাকে “হালক্বী নফল” বলা হয়, তা দাঁড়িয়ে পড়া সম্পর্কে অখ্যাত মাসিক পত্রিকাদ্বয়ের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ হয়েছে। এবং ক্ষেত্রবিশেষে কুফরীমূলক হয়েছে।  স্মর্তব্য যে, সাধারণতঃ নফল নামায বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব হলেও বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়াই মুস্তাহাব-সুন্নত, যা উত্তম ও পূর্ণ ছওয়াব এবং অধিক ফযীলতের কারণ। কেননা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল এবং অন্যান্য নফলের ক্ষেত্রে একই হুকুম নয়। বরং বিত্র নামাযের পর দুই রাকায়াত নফলের হুকুম অন্যান্য নফল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অর্থাৎ অন্যান্য নফল দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব, বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব। আর হালক্বী নফল অর্থাৎ বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব, আর বসে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব।  কারণ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায কখনও দাঁড়িয়ে আদায় করেননি। বরং বসেই আদায় করেছেন। যা সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।  (ধারাবাহিক) উল্লেখ্য,রেযাখানীরা ‘বুখার মুসলিম, ইবনে মাজাহ ও নাসায়ী শরীফ’ ইত্যাদি কিতাব থেকে দলীল হিসেবে যে বক্তব্য উল্লেখ করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য মোটেও সে রকম নয়। তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝতে না পারার কারণেই ‘হালক্বী নফল’ সম্পর্কে এরূপ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য উল্লেখ করেছে। শুধু তাই নয়, সাথে সাথে নিজেদের জিহালতীকে ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে উল্লিখিত কিতাবসমূহের কোন কোন ইবারত কারচুপি করে নিজেদের বাতিল মতকে ছাবিত করার ব্যর্থ কোশেশ করেছে। তারা উল্লিখিত কিতাবের বরাত দিয়ে যে সকল মিথ্যাচারিতা, প্রতারণা ও ইবারত কারচুপির আশ্রয় নিয়েছে সেগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা ও ফায়সালা তুলে ধরে তার খ-নমূলক আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ্। রেযাখানীদের কারচুপিমূলক বক্তব্য  উদঘাটন ও খ-ন উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বলেছে, “বিতরের পর দু’রাকাত নামায…..দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম ধারণাকারীগণকে কুফরীর ফতোয়া দেয়াটা চরম  মুর্খতা এবং ধর্ম ও নৈতিকতা বিরোধী কাজ…। এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানী মৌলভী সাহেবদের উক্ত বক্তব্যও কুফরীমূলক হয়েছে।  কারণ ছহীহ্ ও নির্ভরযোগ্য হাদীছ শরীফে বর্নিত আছে, বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায স্বয়ং আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসেই আদায় করেছেন।  অথচ রেযাখানী মৌলভী ছাহেবরা ছহীহ্ ও নির্ভরযোগ্য হাদীছ শরীফকে গুরুত্ব না দিয়ে ও অস্বীকার করে একান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে মনগড়াভাবে বানিয়ে বলেছে, “বিতরের পর দু’রাকাত নামায…..দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম। যা হাদীস শরীফকে তথা সুন্নতকে ইহানত করা হয়েছে আর হাদীছ শরীফকে ইহানত করা হচ্ছে কাট্টা কুফরী।  কেননা আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন কাজকে কেউ যদি অনুত্তম বলে তাহলে সে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদ ও কাট্টা কাফির হয়ে যাবে। এটা কারো বানানো ফতওয়া নয় বরং শরীয়তেরই ফতওয়া।   যার বিস্তারিত আলোচনা আমরা বিগত সংখ্যায় করেছি। অতএব বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করা  উত্তম ও সুন্নত। আর সুন্নত পালন করা আমভাবে সুন্নত, আর খাছভাবে ফরযের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন,

  قل ان كنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله ويغفرلكم ذنوبكم والله غفور رحيم.

 অর্থঃ- “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহ পাককে মুহব্বত করে থাক, তাহলে তোমরা আমাকেই ইত্তিবা (অনুসরণ) কর, তাহলে আল্লাহ পাক তোমাদেরকে মুহব্বত  করবেন, তোমাদের গুনাহখাতাসমূহ ক্ষমা করবেন এবং তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু হবেন।” (সূরা আলে ইমরান/৩১) এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

 من احب سنتى فقد احبنى ومن احبنى كان معى فى الجنة.

 অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে মুহব্বত করলো, সে আমাকেই মুহব্বত করলো, আর যে আমাকে মুহব্বত করলো সে আমার  সাথেই জান্নাতে অবস্থান করবে।” (তিরমিযী, মিশকাত)

 كل امتى يدخلون الجنة الا من ابى قيل ومن ابى قال من اطاعنى دخل الجنة ومن عصانى فقدابى.

 অর্থঃ- “আমার প্রত্যেক উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা ব্যতীত যারা আমাকে অস্বীকার করবে। জিজ্ঞাসা করা হলো হে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কে আপনাকে অস্বীকার করলো? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আমার ইতায়াত (অনুসরণ) করলো, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার নাফরমানী করলো অর্থাৎ সুন্নাতের অনুসরণ তথা আমাকে অনুসরণ করলো না, সেই আমাকে অস্বীকার করলো। অর্থাৎ সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা। (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ) এ জন্যই হাম্বলী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি ফতওয়া দিয়েছেন “সুন্নত পালন করা ফরয।” যখন তিনি এ ফতওয়া দিলেন তখন উনার সমসাময়িক যারা ইমাম-মুজতাহিদ এবং ফক্বীহ ছিলেন তারা এসে জিজ্ঞাসা করলেন, হে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি! আমরা ফরযকে ফরয, ওয়াজিবকে ওয়াজিব, সুন্নতকে সুন্নত হিসাবে জানি ও মানি। কিন্তু আপনি সুন্নতকে ফরয হিসেবে ফতওয়া দিয়েছেন এটা কোন প্রকার ফতওয়া? আর এর পিছনে কি আপনার কোন দলীল রয়েছে? কারণ আল্লাহ পাক  তো বলেছেন,

 هاتو برهانكم ان كنتم صادقين.

 অর্থঃ- “তোমরা সত্যবাদী হলে দলীল পেশ কর।” (সূরা বাক্বারা/১১১) তিনি বলেন যে, হ্যাঁ, এর পিছনে আমার ক্বিত্য়ী দলীল অর্থাৎ কুরআন শরীফ থেকে দলীল রয়েছে তা হচ্ছে, আল্লাহ পাক বলেন,

  ما اتكم الرسول فخذوه ومالهكم عنه فانتهوا وتقوا الله ان الله شديد العقاب.

 অর্থঃ- “রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের নিকট যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর আর তিনি যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাক। এ ব্যাপারে আল্লাহ পাককে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তিদাতা।” (সূরা হাশর/৭) হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

 تركت فيكم امرين بن تضلوا ما تمسكتم بهما كتاب الله وسنتى.

 অর্থঃ- “আমি তোমাদের নিকট দু’টি জিনিষ রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা সে দু’টি আঁকড়ে ধর তাহলে তোমরা কখনোই গোমরাহ হবেনা। একটি হলো আল্লাহ পাক-এর কিতাব এবং অপরটি হলো আমার সুন্নত।” (বুখারী, মিশকাত)

 لوتركتم شنة نبيكم لكفرتم.

 অর্থঃ- “যদি তোমরা তোমাদের নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত তরক (অবজ্ঞা) কর, তবে অবশ্যই তোমরা কুফরী করলে।” (বুখারী, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী)

 لو تركتم سنة نبيكم لصستم.

 অর্থঃ- “যদি তোমরা তোমাদের নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতকে তরক (অবজ্ঞা) কর তাহলে অবশ্যই তোমরা পথভ্রষ্ট হলে।” (মিশকাত) সুন্নত পালন করার ফযীলত সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন,

 من يطع الله ورسوله فقد فاز فوزا عظيما.

 অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ-অনুকরণ করবে, সে বিরাট সফলতা লাভ করবে।” (সূরা আহযাব/৭১) আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

 من تمسك بسنتى عند فساد امتى فله اجر مأة شهيد.

 অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আমার উম্মতের ফিৎনা-ফাসাদের যামানায় একটি সুন্নতকে আঁকড়ে ধরে থাকবে, সে একশত শহীদের ফযীলত পাবে।” (বাইহাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, ত্বীবী, মুযাহিরে হক্ব) উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই ছাবিত বা প্রমাণিত হলো যে, সুন্নত পালন করা ব্যতীত আল্লাহ পাক-এর মুহব্বত-মা’রিফাত ও আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে মাগফিরাত বা ক্ষমা এবং রহমত বা দয়া লাভ করা যাবেনা। শুধু এতটুকুই নয় বরং সে সুন্নত পালন করবেনা সে গোমরাহ ও নাফরমান সাব্যস্ত হয়ে জাহান্নামী হবে। মূলতঃ মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি হাছিল করা। এবং সেটা হাছিল করার জন্য শর্ত হচ্ছে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতের ইত্তিবা বা   সুন্নতের অনুসরণ।   অতএব, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে আমল যেভাবে সম্পাদন করেছেন উম্মতদেরকে সে আমল সেভাবেই করতে হবে। যেমন, নামাযের ক্ষেত্রে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ হলো-

  صلوا كما رايتمونى اصلى.

 “তোমরা সেভাবে নামায আদায় কর যেভাবে আমাকে নামায আদায় করতে দেখেছ।” (বুখারী, মুসলিম, মুসনদে আহমদ, দারিমী, মিশকাত)      সুতরাং বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায যেহেতু আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসে আদায় করেছেন, সেহেতু বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল বসে পড়াই খাছ সুন্নত ও উত্তম এবং তা বসেই আদায় করতে হবে। অতএব, কেউ যদি সুন্নত পালন না করে সে কখনোই কামিল মু’মিন হতে পারবেনা বরং সে ফাসিকের অন্তর্ভূক্ত হবে। আর কেউ যদি সুন্নতকে অবজ্ঞা বা অস্বীকার করে তাহলে তা কুফরী হবে। কোন মুসলমান যদি কুফরী করে তাহলে সে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। তখন উক্ত কুফরী থেকে খালিছ তওবা ইস্তিগফার না করা  পর্যন্ত সে মুসলমান  থাকতে পারবে না।   অতএব, বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায অর্থাৎ ‘হালক্বী নফল’ নামায বসেই আদায় করা উত্তম, খাছ সুন্নত এবং অধিক ফযীলত ও বুযুর্গীর কারণ।  যারা এটাকে ভুল, ভিত্তিহীন ও উত্তম নয় বলবে তারা মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদ ও কাফির হয়ে যাবে। এটা কারো বানানো ফতওয়া নয় বরং কুরআন-সুন্নাহ তথা শরীয়তেরই ফতওয়া।         (চলবে)  মুহম্মদ সাইফুল হাবীব, মহাস্থান, বগুড়া।  সুওয়ালঃ মুয়ানাকা বা কোলাকুলি করা কি? আর খাছ করে কোন বিশেষ দিনে যেমন, ঈদের দিনে মুয়ানাকা করা জায়িয কিনা? অনেকে ঈদের দিনে মুয়ানাকা করাকে বিদ্য়াত বলে থাকে। এটা কতটুকু ঠিক? জাওয়াবঃ মুয়ানাকা করা সুন্নত। কোন বিশেষ দিনে হোক আর বিশেষ দিন ছাড়া অন্য দিনেই হোক সব দিনেই মুয়ানাকা করা জায়েয এবং সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।  হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 عن عائشة عليها السلام تعالى عنها قالت قدم زيد بن حارثة المدينة ورسول الله صلى الله عليه وسلم فى بيتى فاتاه فقرع الباب فقام اليه رسول الله صلى الله عليه وسلم عريانا يجر ثوبه والله مارايته عريانا قبله ولابعده فاعتنقه وقبله.

 অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত যায়িদ ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মদীনা শরীফে আগমন করতঃ রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে আমার ঘরে আসলেন এবং দরজায় করাঘাত করলেন। তখন রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার ঘরে ছিলেন। রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  অনাবৃত শরীর মুবারকে চাদর টানতে টানতে তাঁর কাছে গেলেন। আল্লাহ্ পাক-এর কছম! আমি তাঁকে এর পূর্বে বা পরে কখনো অনাবৃত শরীর মুবারকে দেখিনি। তিনি (মুহব্বতের আতিশয্যে) তাঁর সাথে মুয়ানাকা করলেন এবং তাঁকে চুম্বন করলেন।” (তিরমিযী শরীফ) উল্লেখ্য, শরীয়তের ফতওয়া হলো- “কোন সুন্নতকে বিদ্য়াত বলা কুফরী।” যারা ঈদের দিনে মুয়ানাকা করাকে বিদ্য়াত বলে তারা বিনা দলীলে, মনগড়া এবং হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা ও মাসয়ালা না জানার কারণেই বলে থাকে। আবার যারা শুধু একবার বা একদিকে মুয়ানাকা করার কথা বলে, তারাও ঠিক একই কারণে বলে থাকে।        মূলতঃ ঈদের দিনে মুয়ানাকা করার সঠিক ইতিহাস হলো, পূর্ববর্তী যামানায় বর্তমান যামানার ন্যায় এলাকা ভিত্তিক এত ঘন ঘন ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হতোনা। বরং কোন স্থানে ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হলে সেখানে অনেক দূর দূরান্ত হতে লোক জামায়াত হয়ে নামায আদায় করতো। অতঃপর নামায শেষে অনেকের সাথে দীর্ঘ দিন পর দেখা-সাক্ষাৎ হতো, তারপর খোজ-খবর ও পরিচয় নেয়ার পাশাপাশি সালাম বিনিময়, মুছাফাহা ও মুয়ানাকা করতো। তখন থেকে ঈদের দিনে পরিচিত-অপরিচিত সবার সাথে সালাম-কালাম, মুছাফাহা, মুয়ানাকার ব্যাপক প্রচলন হয়ে আসছে। উপরোল্লিখিত প্রত্যেকটি আমলই খাছ সুন্নত এবং মুসলমান পরস্পর পরস্পরের প্রতি মুহব্বত বৃদ্ধি এবং আল্লাহ্ তায়ালার সন্তুষ্টির কারণ।   সুতরাং খালিছ বা নেক উদ্দেশ্যে মুয়ানাকা করা খাছ সুন্নত এবং আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টির কারণ। তবে ফিৎনার আশংকা থাকলে তথা কামভাবে মুয়ানাকা করা হলে তা নাজায়িয ও হারাম হবে। মুয়ানাকা করার নিয়মঃ প্রথমে উভয়ের ডান দিকে গলায় গলায় মিলাবে এরপর একইভাবে বাম দিকে মিলিয়ে পুনরায় ডান দিকে মিলাবে এবং নিম্নোক্ত দোয়াটি বলবে,

 اللهم زد محبتى لله ورسوله.

 অর্থঃ- “আয় আল্লাহ্ পাক! আপনি আমার মুহব্বত বৃদ্ধি করে দিন আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টির জন্য।” (তিরমিযী) হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الوتيراء.

 অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছোট বেজোড় থেকে নিষেধ করেছেন।”(ইবনে আব্দিল বার) সুতরাং একবার গলা মিলানো সুন্নত পরিপন্থী।   {দলীলসমূহঃ (১) বুখারী, (২) উমদাতুল ক্বারী, (৩) ফতহুল বারী, (৪) ইরশাদুছ্ ছারি, (৫) ফয়জুল বারী, (৬) তাইসীরুল কারী, (৭) তিরমিযী,  (৮) শরহে তিরমিযী, (৯) শরহে নববী, (১০) মিশকাত, (১১) মিরকাত, (১২) আশয়াতুল লুময়াত, (১৩) লুময়াত, (১৪) শরহুত ত্বীবী, (১৫) তালীক্বুছ ছবীহ্, (১৬) মুযাহিরে হক্ব, (১৭) শরহুস্ সুন্নাহ্, (১৮) মাকতুবাত শরীফ, (১৯) হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা ইত্যাদি।}  মুহম্মদ হাসান, মাদারটেক, ঢাকা।   সুওয়ালঃ কুরবানী কার উপর ওয়াজিব? জাওয়াবঃ যিলহজ্ব মাসের দশ, এগার, বার অর্থাৎ দশ তারিখের সুবহে সাদিক হতে বার তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কেউ মালিকে নিসাব হয় অর্থাৎ হাওয়ায়েজে আসলিয়াহ্ (নিত্য প্রয়োজনীয় ধন-সম্পদ) বাদ দিয়ে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা বা তার সমপরিমাণ মূল্যের মালিক হয়, তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব। উল্লেখ্য যে, যদি কারো নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকে এবং তা যদি নিসাব পরিমাণ হয়, যেমন- কারো পাঁচটি ঘর আছে, একটির মধ্যে সে থাকে আর তিনটির ভাড়া দিয়ে সে সংসার চালায় আর একটি অতিরিক্ত, যার মূল্য নিসাব পরিমাণ। এ ক্ষেত্রে তার উপরে কুরবানী ওয়াজিব হবে।   {দলীলসমূহঃ- (১) আলমগীরী, (২) শামী, (৩) আইনুল হিদায়া, (৪) ফতহুল কাদীর, (৫) গায়াতুল আওতার, (৬) শরহে বিকায়া, (৭) বাহর, (৮) দুররুল মুখতার, (৯) কাজীখান, (১০) ইনায়া ইত্যাদি।}  মুছাম্মত হাসিনা আক্তার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।  সুওয়ালঃ ঈদুল আয্হার উদ্দেশ্যে যে তাক্বীর পাঠ করতে হয়, তার উৎপত্তি কখন থেকে এবং তা কতদিন ও কতবার পাঠ করতে হয়। জাওয়াবঃ যিলহজ্ব মাসের নয় তারিখ ফজর থেকে তের তারিখ আছর পর্যন্ত মোট তেইশ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর একবার তাক্বীর পাঠ করা ওয়াজিব আর তিনবার পাঠ করা মুস্তাহাব।      এ তাক্বীর প্রত্যেক নামাযী ব্যক্তিকেই পাঠ করতে হবে। তা জামায়াতে হোক বা একাকী হোক, পুরুষ হোক বা মহিলা হোক, মুকিম হোক বা মুসাফির হোক, শহরে হোক বা গ্রামে হোক, সকলের জন্যই তা পাঠ করা ওয়াজিব।     এ তাক্বীরের ইতিহাস সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহ্ পাক-এর খলীল হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম যখন আল্লাহ্ পাক-এর আদেশে তাঁর প্রিয় সন্তান হযরত ইসমাইল আলাইহিস্ সালামকে আল্লাহ্ পাক-এরই সন্তুষ্টির জন্য কুরবানী করার উদ্দেশ্যে যমিনের উপর কাত করে শোয়ায়ে গলায় ছুরি চালাচ্ছিলেন, সেই মূহুর্তে আল্লাহ্ পাক হযরত জিব্রাইল আলাইহিস্ সালামকে বলে পাঠালেন, বেহেশ্ত থেকে নির্দিষ্ট দুম্বাটিকে নিয়ে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর খেদমতে পেশ করতে, যেন তিনি হযরত ইসমাইল আলাইহিস্ সালাম-এর পরিবর্তে এ দুম্বাটিকে কুরবানী করেন।”         এ দুম্বা নিয়ে হযরত জিব্রাইল (আলাইহিস্ সালামযখন হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস্ সালাম আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টির জন্য তাঁর প্রিয় ছেলের গলায় ছুরি চালাচ্ছেন, এটা দেখে তিনি আল্লাহ্ পাক-এর বড়ত্ব প্রকাশার্থে বলে উঠলেন- الله اكبر – الله اكبر. (আল্লাহু আক্বার, আল্লাহু আক্বার) এটা শুনে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম ও বলে উঠলেন,

 لا اله الا الله والله اكبر.

  (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আক্বার)। অতঃপর হযরত ইসমাইল আলাইহিস্ সালাম তাঁর পরিবর্তে কোরবানী করার জন্য আল্লাহ্ পাক দুম্বা পাঠিয়েছেন, বুঝতে পেরে বলে উঠলেন – الله اكبر ولله الحمد আক্বার ওয়া লিল্লাহিল হাম্দ। এর পর থেকে এ তাক্বীর পাঠ শুরু হয়। আর বিশেষ করে উম্মতে মুহম্মদীর জন্য জিলহজ্ব মাসের নয় তারিখ ফজর থেকে তের তারিখ আছর পর্যন্ত মোট তেইশ ওয়াক্ত ফরজ নামাযের পর, কমপক্ষে একবার তাক্বীর পাঠ করা ওয়াজিব করা হয়। তাকবীর হচ্ছে-

 الله اكبر – الله اكبر – لا اله الا الله-

والله اكبر – الله اكبر ولله الحمد.

 উচ্চারণ ঃ- “আল্লাহু আক্বার, আল্লাহু আক্বার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আক্বার, আল্লাহু আক্বার, ওয়া লিল্লাহিল হাম্দ।”  অর্থঃ- “আল্লাহ পাক বড়, আল্লাহ্ পাক বড়, আল্লাহ্ পাক ব্যতীত কোন ইলাহ্ (মাবুদ) নেই এবং আল্লাহ্ পাক বড়, আল্লাহ্ পাক বড় এবং সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এরই জন্য।  {দলীলসমূহঃ বাহ্রুর রায়েক, মারাকিউল ফালাহ্, দুররুল মোখতার, শামী, আলমগীরি, এনায়া, নূরুল ইযাহ্, মাজমাউল আন্হার বাদরুল মুন্তাকা, তাহ্তাবী ইত্যাদি।}  মুহম্মদ আশির্কু রহমান, খুলনা।   সুওয়ালঃ  তাকবীরে তাশ্রীক কতবার বলতে হয়?  জাওয়াবঃ “দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “তাকবীরে তাশরীক একবার বলা ওয়াজিব, তবে যদি (কেউ) একাধিকবার বলে, তাহলে তা ফযীলতের কারণ হবে। আর “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবে উল্লেখ আছে, وقيل ثلات مرات  অর্থঃ- কেউ কেউ বলেছেন (তাকবীরে তাশ্রীক) তিনবার।”  “গায়াতুল আওতার শরহে দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে, উর্দূ কম্পোজ করতে হবে  অর্থঃ- “বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে (আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ থেকে) আদিষ্ট হওয়ার কারণে একবার তাকবীরে তাশ্রীক বলা ওয়াজিব। আর যদি একবারের চেয়ে অতিরিক্ত বলে তবে সওয়াবের অধিকারী হবে।” উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য কিতাবের বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, একবার তাকবীরে তাশ্রীক বলা ওয়াজিব এবং তিনবার বলা মুস্তাহাব।   {দলীলসমূহঃ শামী, আইনী, আলমগিরী, হাশিয়ায়ে তাহ্তাবী, রদ্দুল মুহ্তার, দুররুল মুখতার ইত্যাদি।}  মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হুসাইন,  মিরপুর, ঢাকা।  সুওয়ালঃ    আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের নামায কখন পড়তেন? জাওয়াবঃ  আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ,  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের নামায সূর্য উদয় হওয়ার পর অর্থাৎ ইশরাক শুরু হওয়ার সময়তেই পড়তেন, দেরী করতেন না। তবে ঈদুল ফিত্র নামায তুলনামূলক একটু দেরী করে পড়ে নিতেন। এবং ঈদুল আযহার নামায সময় হওয়ার সাথে সাথেই  আদায় করে নিতেন।              হাদীছ শরীফে আছে, হযরত জুনদুব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে ঈদুল ফিত্রের নামায পড়াতেন সূর্য দু’নেযা পরিমাণ উদয়ের পর, আর ঈদুল আযহার নামায পড়াতেন এক নেযা পরিমাণ উদয়ের পর”।  এর অর্থ হলো সূর্য উদয়ের নিষিদ্ধ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর পরই নামায পড়ে নিতেন। হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, “আমাদের মদীনাবাসী ও আলিমগণকে দেখেছি, তাঁরা সূর্যোদয়ের পরপরই ঈদের নামাজের জন্য যেতেন”।   {দলীলসমূহঃ মুদাওওয়ানাতুল কুবরা, বুখারী, মুসলিম, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, শাফিয়ী, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুমায়াত, লুমায়াত তালিক, ত্বীবী, মুজাহেরে হক্ব, আলমগীরী, শামী, ফতহুল ক্বাদীর, আইনুল হিদায়া ও বাহর ইত্যাদি।} মুহম্মদ  আরিফ রব্বানী, গাজীপুর।  সুওয়ালঃ   ঈদের নামাযের নিয়ম কি? জানতে বাসনা রাখি। জাওয়াবঃ   প্রথমে নিয়ত করে হাত বাঁধবে।  বাংলা নিয়তঃ মুক্তাদি হলেঃ- “আমি ঈদুল আযহার দু’রাকায়াত ওয়াজিব নামায ছয় তাকবীরের সহিত ক্বিবলা মুখী হয়ে ইমাম সাহেবের পিছনে আদায় করছি।” ইমাম হলেঃ- “আমি আমার ইমামতীতে ঈদুল আযহার দু’রাকায়াত ওয়াজিব নামাজ ক্বিবলা মুখী হয়ে ছয় তাকবীরের সহিত মুক্তাদীসহ আদায় করছি।” আরবী নিয়তঃ মুক্তাদি হলেঃ-

 نويت ان اصلى لله تعالى ركعتى صلوة العيد الا صحى مع ستة تكبيرات واجب الله تعالى اقتديت بهذا الا مام متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر.

 ইমাম হলে  اقتديت بهذا الامام পবিবর্তে

 انا امام لمن حضر ومن يحضر.

 উচ্চারণঃ- “নাইয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকায়াতাই ছালাতিল ঈদিল আযহা মায়া-সিত্তাতি তাকবীরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তা’য়ালা ইক্বতাদাইতু বিহাযার ইমামমি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতির কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহ্ আকবর।” হাত বেঁেধ ছানা পড়বে। এরপর পর্যায়ক্রমে  আল্লাহু আকবার বলে তিন  তাকবীর দিবে। প্রতি তাকবীরে কানের লতি পর্যন্ত হাত উত্তোলন করবে। প্রত্যেক তাকবীরের পর কমপক্ষে তিন তাসবীহ পরিমাণ সময দেরী করবে। প্রথম দু’তাকবীর বলার পর হাত ছেড়ে দিবে তৃতীয় বা শেষ তাকবীর বলার পর হাত বেঁধে ফেলবে। অতঃপর মুক্তাদী চুপ করে থাকবে। আর ইমাম ছাহেব আউযুবিল্লাহ্ ও বিছমিল্লাহ্ বলে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে এব তার সাথে আরেকটি সূরা মিলাবে এরপর ইমাম সাহেব যথারীতি রুকু, সেজদা ইত্যাদি আদায় করে দ্বিতীয় রাকায়াতের জন্য দাঁড়াবে। দাঁড়িয়ে যথারীতি সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা মিলিয়ে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে পুনঃরায় তিন বার আল্লাহু আকবর বলে তাকবীর বলবে পত্যেক তাকবীরের পর হাত ছেড়ে দিবে এব তাকবীরের পর কমপক্ষে তিন তাছবীহ্ পরিমাণ সময় দেরী করবে। অতঃপর চতুর্থ তাকবীর বলে রুকুতে যাবে। অতঃপর যথারীতি রুকু, সেজদা ইত্যাদি আদায করে শেষ বৈঠকে বসে আত্তায়িহয়াতু, দরূদ শরীফ ও দোয়া মা’ছুরা পড়ে সালাম ফিরায়ে নামায শেষ করবে। অতঃপর ইমাম সাহেব মিম্বরে বসে সরাসরি দাড়িয়ে মিম্বরে আহরণ পূর্বক দু’টি খুৎবা পাঠ করবে। উভয় খুৎবার মাঝে তিন তাছবীহ্ পরিমাণ সময় বসবে। প্রথম খুৎবায় নয় বার ও দ্বিতীয় খুৎবার সাত বার তাকবীর পাঠ করবে।           উল্লেখ্য, ঈদুল ফিৎরের নামায পয়লা শাওয়ালেই পড়তে হবে। ওজরবশতঃ ২রা শাওয়ালে পড়তে পারবে। বিনা ওজরে ২রা শাওয়ালে নামায পড়লে আদায় হবে না।          আর ঈদুল আযহার নামায ১০ই জিলহজ্ব তারিখে আদায় করবে। ওজরতবশতঃ সেদিনে পড়া সম্ভব না হলে জিলহজ্বের ১১ ও ১২ তারিখে আদায় করতে পারবে।  বিনা ওজরে ১১ ও ১২ তারিখে আদায় করলে মাকরূহ্ সহিত আদায় হবে।  {দলীলসমূহঃ আলমগীরী, শামী, আইনুল হিদায়া, ফতহুল কাদীর, গয়াতুল আওতার, শরহে বিকায়া, বাহর, দুররুল মুখতার, কাজীখান ও ইনায়া ইত্যাদি।}  মুহম্মদ রবিউল আউয়াল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।  সুওয়ালঃ   বর্তমান সময়ে কোন ব্যক্তি যদি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে ছাগল, বকরী, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি কুরবানী দেয় অথবা গরু, মহিষ, উটের সাত নামের মধ্যে যদি এক নাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারকে দেয়, তবে উক্ত নামের গোশ্তের হুকুম কি? এটা কি সকলে খেতে পারবে? অথবা এ গোশ্ত অছিয়তকৃত গোশ্তের হুকুমের অন্তর্ভুুক্ত হবে কি না? জাওয়াবঃ  হ্যাঁ, উক্ত কুরবানীকৃত গোশ্ত সকলে খেতে পারবে। আর এটা অছিয়তকৃত গোশ্তের হুকুমের অন্তর্ভূক্ত হবে না। কেননা হাদীছ শরীফে আছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বিশেষভাবে কুরবানী করার জন্যে যে নির্দেশ দিয়েছেন এটা তাঁর জন্যই খাছ। বর্তমান সময়ে কোন ব্যক্তি যদি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তরফ থেকে কোরবানী দেয়, তবে এটা তার ফযীলত, তথা বারাকাত, ফুয়ুজাত, নিয়ামত, রহ্মত, মাগফিরাত, নাজাত সর্বোপরি আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি লাভ করা ও তার কুরবানী কবুল হওয়ার একটি উসীলা। কাজেই আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তরফ থেকে যদি কেউ কুরবানী দেয়, তবে উক্ত কুরবানীকৃত গোশ্ত সকলেই খেতে পারবে। {দলীলসমূহঃ আবূ দাউদ, তিরমীযী, বজলুল মজহুদ, শরহে তিরমীযী, মিশকাত, মিরকাত, লুমায়াত, আশয়াতুল লুমায়াত, ত্বীবী, তালিক ও মুজাহের ইত্যাদি।}  মুহম্মদ রাকিব হুসাইন, চট্টগ্রাম।  সুওয়ালঃ  কুরবানী করার সুন্নতী পদ্ধতি এবং নিয়ত জানালে খুশি হবো। জাওয়াবঃ    কুরবানীর পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা পশ্চিম দিকে রেখে অর্থাৎ ক্বিবলামুখী করে শোয়ায়ে পূর্ব দিক থেকে চেপে ধরতে হবে, তারপর কুরবানীর করতে হবে। আর  কুরবানীর করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, সীনার উপরিভাগ এবং কক্তনালীর মাঝামাঝি স্থানে যেন যবেহ করা হয়। আরো উল্লেখ্য যে, গলাতে চারটি রগ রয়েছে, তন্মধ্যে গলার সম্মূখভাগে দু’টি- খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী এবং দু’পার্শ্বে দু’টি রক্তনালী। এ চারটির মধ্যে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং দু’টি রক্তনালীর মধ্যে একটি অবশ্যই কাটতে হবে। অর্থাৎ চারটি রগ বা নালীর মধ্যে তিনটি অবশ্যই কাটতে হবে, অন্যথায় কুরবানীহবেনা। যদি সম্ভব হয়, তবে ছুরি চালানোর সময় বেজোড় সংখ্যার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। কুরবানীর নিয়ত- (যবেহ করার পূর্বে)

 انى وجهت وجهى للذى فطر السماوات والارض حنيفا وما انا من المشركين ان صلاتى ونسكى ومحياى ومماتى لله رب العالمين لاشريك له وبذالك امرت وانا من المسلمين ….. الله منك ولك-

 উচ্চারণঃ- ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না ছলাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্ইয়া ইয়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। লা শারীকালাহু ওয়া বি যালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।    এ  দোয়া  পড়ে بسم الله الله اكبر বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবর বলে জবেহ করতে হবে। যবেহ করার পর এ দোয়া পড়বে

  اللهم تقبله منى كما تقبلت من حبيبك سيدنا محمد صلى الله عليه وسلم وخليلك ابراهيم عليه السلام.

 উচ্চারণঃ- আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বালহু মিন্নী কামা তাক্বাব্বালতা মিন হাবীবিকা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও খালীলিকা ইব্রাহীমা আলাইহিস সালাম। যদি নিজের কুরবানী হয়, তবে منى (মিন্নী) বলতে হবে। আর যদি অন্যের কুরবানীহয়, তবে من (মিন) শব্দের পর যার বা যাদের কোবানী, তার বা তাদের নাম উল্লেখ করতে হবে। আর যদি অন্যের সাথে শরীক হয়, তাহলে منى (মিন্নী)ও বলবে, অতঃপর من (মিন) বলে অন্যদের নাম বলতে হবে। কেউ যদি উপরোক্ত নিয়ত না জানে, তাহলে জবেহ করার সময় শুধু বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবর বলে কুরবানী করলেও শুদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ নিয়ত অন্তরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে অবশ্যই প্রত্যেক যবেহকারীর উচিৎ উপরোক্ত নিয়ত শিক্ষা করা। কেননা উপরোক্ত নিয়ত পাঠ করে কুরবানী করা সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত।         {দলীলসমূহঃ- আহমদ, আবূ দাউদ, তিরমীযী, দারিমী ইবনে মাযাহ, বজলূল মযহুদ, মিশকাত, মিরকাত, মুজাহেরে হক্ব, লুমায়াত, ত্বীবী, তালিক্ছ্ ুছবীহ, আশয়াতুল লুমায়াত, আলমগীরী, শামী, দুররুল মুখতার, আইনুল হিদায়া ও বাহর ইত্যাদি।}  মুছাম্মত সাইরিন জাহান (সাথী), লালমনিরহাট।  সুওয়ালঃ  যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়নি, এমন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি এক নামে কুরবানী দিয়ে গোশ্ত বন্টন করে নিতে পারবে কিনা? জাওয়াবঃ  হ্যাঁ, যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়নি, এমন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি কুরবানী দিয়ে গোশ্ত বন্টন করে নিতে পারবে। তবে কুরবানীর পশু গরু, মহিষ ও উটে সাত নাম এবং দুম্বা, মেষ  বা ভেড়া, বকরী, খাসিতে এক নাম দেয়ার হুকুম রয়েছে।     গরু, মহিষ, উটে সাত নামের বেশী দিলে কুরবানী দুরুস্ত হবেনা। আর সাত নামের কমে কুরবানী করলে দুরুস্ত হবে। আর ছাগল, দুম্বা, ভেড়া এক নামের বেশী নামে কুরবানীকরলে কারো কুরবানী দুরুস্ত হবেনা।       যেমন- যদি ৪০ জন ব্যক্তি ২০০ টাকা করে ৮০০০ টাকা দিয়ে একটা গরু কিনে সাত নামে বা তার থেকে কম নামে কুরবানীকরে গোশ্ত বন্টন করে নেয়, তাতেও কুরবানী শুদ্ধ হবে।  তদ্রুপ একটা খাসি তিনজনে মিলে পয়সা দিয়ে খরীদ করে, যদি এক নামে কুরবানী করে গোশ্ত বন্টন করে নেয়, তবে সে কোরবানীও শুদ্ধ হবে।  এখন প্রশ্ন হলো- যারা সম্মিলিতভাবে টাকা দিয়ে কুরবানী করতে চায়, তারা কার নামে কুরবানী করবে?         এর জাওয়াব হচ্ছে- এরূপ কুরবানীর ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই যেহেতু নিজস্ব নামে কুরবানী করতে চাইবে, কোরবানীর ফযীলত হাছিলের জন্য। আর গরু, মহিষ ও উটে সাত নামের বেশী এবং ছাগল, ভেড়া ও দুম্বাতে এক নামের বেশী দেয়া যায় না। কার নাম দিবে বা কার নাম বাদ দিবে, এ নিয়ে ঝগড়া-ফ্যাসাদ ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হবে। এছাড়াও যদি কারো নামে দেয়া হয়, অন্য কেউ প্রকাশ্যে আপত্তি না করে কিন্তু অন্তরে সম্মতি না থাকে তাহলে কুরবানী শুদ্ধ হবেনা। কারণ একজনের টাকা দিয়ে অন্যজনের নামে কুরবানীকরলে কুরবানী শুদ্ধ হবেনা। টাকা ওয়ালার সম্মতি ব্যতীত। এজন্য উত্তম ও আদব হচ্ছে- এক নাম দিলে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম দেয়া। এরপর অন্য কারো নাম দিলে যাদের মাধ্যমে কুরবানীর বিধান চালু হয়ে আসছে, যেমন- হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম, হযরত ইসমাইল আলাইহিস্ সালাম, হযরত হাজেরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁদের নামে কুরবানী দেয়া উত্তম। আরো বেশী নামে কুরবানী দিলে হযরত আম্বিয়া আলাইহিস্ সালাম, আহ্লে বায়েত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর নামেও কুরবানী করা যেতে পারে।       {দলীলসমূহঃ শামী, আলমগীরি, ফতহুল ক্বাদীর, কাজীখান ইত্যাদি।} মুহম্মদ গোলাম রব্বানী, রাজশাহী।  সুওয়ালঃ   ওয়াজিব ও নফল কুরবানী, ওলীমা ও  আক্বীকা এক সাথে জায়িয হবে কিনা? জাওয়াবঃ   হ্যাঁ, জায়িয হবে।  {দলীলঃ- শামী, আলমগীরি ইত্যাদি।}  মুহম্মদ হামিদুল্লাহ, কিশোরগঞ্জ।  সুওয়ালঃ  মৃত ও জীবিত ব্যক্তির পক্ষ হতে একত্রে কুরবানী করলে কুরবানীর কোন ত্রুটি হবে কি? জাওয়াবঃ   না, এরূপ কুরবানীতে কোন প্রকার ত্রুটি হবে না, বরং সহীহ্, জায়িয ও সুন্নত হবে। আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের (মৃত ও জীবিত উভয়ের) পক্ষ হতে কুরবানী করেছিলেন।         {দলীলসমূহঃ মিশকাত শরীফ, হিদায়া শামী, মিরকাত, লুময়াত, ত্বীবী, তালিকুছ্ ছবীহ, মুজাহিরে হক্ব,  মিরয়াত ও আশয়াতু  লুমায়াত ইত্যাদি।}  মুহম্মদ বিন্ নূর রহমান, খুলনা।  সুওয়ালঃ   আইয়ামে নহর বা কুরবানীর দিনে কুরবানীর পশু কুরবানীকরার পূর্বে অথবা কুরবানীকরার সময়ে হাঁস, মুরগী, কবুতর ইত্যাদি যবেহ্ করা জায়িয আছে কি? জাওয়াবঃ মুসলমানদের আইয়ামে নহর বা কুরবানীর দিনে যারা মজুসী বা অগ্নী উপাসক তারা তাদের ধর্মীয় বিধান মুতাবিক হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করে থাকে। এখন যদি কোন মুসলমান তাদের সাথে মুশাবা বা সাদৃশ্য রেখে কোরবানীর দিন হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করে, তাহলে সেটা কুফরী হবে। কারণ আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

 من تشبه بقوم فهو منهم.

 অর্থঃ- “যে, যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত।” আর যদি কোন মুসলমান সাধারণভাবে উক্ত সময়ে হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করে, তাহলে সেটা মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে, যেহেতু এটাও মোশাবাহ্ হয়ে যায়।  আর যদি কোন মুসলমান খুব জরুরতে হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করে, তাহলে সেটাও মাকরূহ্ তান্যিহী হবে। আর এমন কোন মুসলমান, যার উপর কুরবানী ওয়াজিব অথবা ওয়াজিব নয়, তারা যদি কুরবানীর দিন হাঁস, মুরগী ইত্যাদি খেতে চায়, তাহলে তারা যেন সুব্হে সাদিকের পূর্বেই সেটা যবেহ্ করে, কেটে, পাক করে রেখে দেয় অথবা শুধু যবেহ্ করে, কেটে রেখে দিবে পরে পাক করলেও চলবে।  (এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৪৪, ৭০, ৭৯, ১০৭, তম সংখ্যাগুলো পাঠ করুন।)     {দলীলসমূহঃ শামী, আলমগীরি, ফতহুল ক্বাদীর, শরহে হিদায়া ইত্যাদি।}  মুহম্মদ সানাউল্লাহ, ফরিদপুর।  সুওয়ালঃ হালাল পশুর কোন কোন অংশ খাওয়া নিষিদ্ধ? জাওয়াবঃ  কুরবানীবা হালাল পশুর ৮টি জিনিস খাওয়া যাবেনা। (১) দমে মাছফুহা বা প্রবাহিত রক্ত হারাম, (২) অন্ডকোষ, (৩) মুত্রনালী, (৪) পিত্ত, (৫) লিঙ্গ, (৬) যোনি, (৭) গদুদ বা গুটলী মাকরূহ্ তাহ্রীমী, (৮) শিরদাড়ার ভিতরের মগজ, এটা কেউ মাকরূহ্ তাহ্রীমী, আবার কেউ মাকরূহ্ তান্যিহী বলেছেন।  {দলীলসমূহঃ শামী, মাতালেবুল মু’মিনীন, উমদাতুল কালাম, কিতাব- শাইখুল ইসলাম ইত্যাদি।”  মুহম্মদ সরোয়ার হুসাইন, বরিশাল।  সুওয়ালঃ কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করে সে টাকা মসজিদ কিম্বা ঈদগাহের ইমামকে দেয়া জায়িয হবে কিনা? জাওয়াবঃ  মসজিদ ও ঈদগাহে ইমামতি করা বাবদ উক্ত টাকা ইমাম ছাহেবকে দেয়া জায়িয হবেনা। অবশ্য ইমাম ছাহেব যদি ফিৎরা ও কুরবানীর ছাহেবে নেছাব না হন, তাহলে দান হিসেবে উক্ত টাকা নিতে পারেন। কিন্তু ছাহেবে নেছাব হলে, তা নিতে পারবেন না। আর চামড়া বিক্রয় না করে পুরো চামড়াটিই যদি ইমামকে দান হিসেবে দেয়া হয়, তবে ইমাম ধনী হলেও তা নিতে পারবেন। (সমূহ ফিক্বাহের কিতাব) মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম, কক্সবাজার।  সুওয়ালঃ    কুরবানীর পশু যবেহ করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়েয আছে কি? জাওয়াবঃ  কুরবানীর পশু অথবা অন্য যে কোন হালাল পশুই হোক, তা জবেহ্ করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়িয নেই। এমনিভাবে বাঁটে দুধ থাকতে, ঝিনুকে মুক্তা থাকতে, মেষের পিঠে লোম থাকতে, সে দুধ, মুক্তা, লোম বিক্রি করা নাজায়িয। (ফতওয়ায়ে শামী)  মুহম্মদ উমর ফারুক, চাঁদপুর।  সুওয়ালঃ   কুরবানীর কিছুদিন আগে নাকি হাত ও পায়ের নখ কাটা, মোছ ছাটা এবং মাথার চুল ইত্যাদি কাটা যায় না? কুরবানী করার পর কাটতে হয়! কথাটা কতটুকু সত্য? বিস্তারিত জানাবেন। জাওয়াবঃ  হ্যাঁ, যারা কুরবানী দেয়ার নিয়ত রাখেন, তাদের পক্ষে যিলহজ্বের চাঁদ ওঠার পর থেকে এই চাঁদের দশ তারিখ কুরবানীকরা পর্যন্ত মাথার চুল হাতের ও পায়ের নখ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 عن ام سلسة قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من راى هلال ذى الحجة واراد ان يضحى فلا ياخذ من شعره ولا من اظفاره.

 অর্থঃ- “হযরত উম্মে সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি যিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখলো এবং কুরবানী করার নিয়ত করলো, সে যেন (কুরবানীনা করা পর্যন্ত) তার শরীরের চুল, নখ ইত্যাদি না কাটে।” (মুসলিম শরীফ) মূলতঃ ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য মত হলো এই যে, যারা কুরবানীকরবে এবং যারা কুরবানী করবেনা, তাদের উভয়ের জন্যই উক্ত আমল মুস্তাহাব ও ফযীলতের কারণ। আর এ ব্যাপারে দলীল হলো এ হাদীছ শরীফ- যেমন হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,

 عن عبد الله بن عمرو قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم امرت بيوم الاضحى عيدا جعله الله لهذه الامة قال له رجل يارسول الله ارايت ان لم اجد الا منيحة انثى افاضحى بها قال لا ولكن خذ من شعرك واظفرك وتقص شربك وتحلق عانتك فذلك تمام اضحيتك عند الله.

 অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- আল্লাহ্ পাক-এর রযসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমি কুরবানীর দিনকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ্ পাক উক্ত দিনটিকে এই উম্মতের জন্য ঈদ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এক ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলো হে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি যদি একটি মাদী মানীহা (উটনী) ব্যতীত অন্য কোন পশু কুরবানীর জন্য না পাই, তাহলে আপনি কি (আমাকে) অনুমতি দিবেন যে, আমি উক্ত মাদী মানীহাকেই কুরবানী করবো। জবাবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, না- তুমি উক্ত পশুটিকে কুরবানী করবেনা। বরং তুমি কুরবানীর দিনে তোমার (মাথার) চুল ও হাত-পায়ের নখ কাটবে। তোমার গোঁফ খাট করবে এবং তোমার নাভীর নীচের চুল কাটবে, এটাই আল্লাহ্ পাক-এর নিকট তোমার পূর্ণ কুরবানী অর্থাৎ এর দ্বারা তুমি আল্লাহ্ পাক-এর নিকট কুরবানীর পূর্ণ ছওয়াব পাবে।” (আবু দাউদ শরীফ)      উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে যে, যারা কুরবানী করবেনা, তাদের জন্যও যিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানী করার আগ পর্যন্ত নিজ শরীরের চুল, নখ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব। আর যে ব্যক্তি তা কাটা থেকে বিরত থাকবে, সে একটি কুরবানীর সওয়াব পাবে। {দলীলসমূহঃ- নাসাঈ, মিশকাত, শরহে নববী, বজলুল মাযহুদ, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মুযাহেরে হক্ব ইত্যাদি।}

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

 সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব