ক্বারী মুহম্মদ আব্দুল বারী, গোড়ান, ঢাকা
মুহম্মদ সোহেলুর রহমান, রামপুরা, ঢাকা
সুওয়ালঃ সম্প্রতি ‘আহলে হাদীছ লাইব্রেরী ঢাকা’-এর সৌজন্যে প্রকাশিত একটি হ্যান্ডবিলে ‘শবে বরাত’ সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক কতিপয় উক্তি করা হয়েছে। কুরআন-সুন্নাহ্র নিরিখে সেসব কতটুকু সঠিক তা আপনাদের বহুল পঠিত, তাজদীদী মুখপত্র ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশ করলে বিভ্রান্তির নিরসণ হতো এবং সঠিক বিষয়টি উন্মোচিত হয়ে আওয়ামুন্ নাস খুবই উপকৃত হতো। আপনাদের জ্ঞাতার্থে হ্যান্ডবিলের একটি মূল কপি প্রেরণ করা হলো। এতে আমাদের মনে যেসব প্রশ্নের উদয় হয়েছে তাহলো- ১. শবে বরাত কি? শবে বরাত-এর অর্থ কি? অর্ধেক ফারসী আর অর্ধেক আরবী সহযোগে শরীয়তে কোন নাম হতে পারে কি-না? শবে বরাত সম্পর্কে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে কোন তথ্য পাওয়া যায় কি-না? ২. কখন থেকে শবে বরাত শুরু হয়? শবে বরাত সম্পর্কে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন নির্দেশ-বাণী আছে কি-না? ৩. অর্ধ শা’বানের রাতটি ভাগ্য রজনী নামে নামকরণ কি বিদ্য়াত? ৪. নফল ইবাদতের মাধ্যমে রাত্রি জাগরণ ও দিনের বেলায় রোযা পালন করা কি বিদ্য়াত? ৫. এর সমর্থনে সূরা দুখানের ৩-৪নং আয়াত শরীফ পেশ করা সঠিক কি-না? ‘লাইলাতুম্ মুবারাকাহ্’ বলতে ‘লাইলাতুল ক্বদরকে’ বুঝানো হয়েছে? না ‘শবে বরাতকে’ বুঝানো হয়েছে? ৬. শবে বরাতে রিযিক বৃদ্ধি করা হয় এবং কতজন জন্মগ্রহণ করবে ও কতজন মৃত্যুবরণ করবে তা ধার্য্য করা হয়। এটা কুরআন-সুন্নাহ্ সম্মত কি-না? ৭. অর্ধ শা’বানের রাতে আলফিয়াহ বা রাগায়িব নামক কোন নামায আছে কি-না? ৮. অর্ধ শা’বানের রাতে কবর যিয়ারত করা নাকি বিদ্য়াত? ৯. হালুয়া-রুটি ও রকমারি খাদ্য প্রস্তুত করা ও বিলি করা নাকি বিদ্য়াত? ১০. অর্ধ শা’বান উপলক্ষে আয়োজিত মাহ্ফিল বিদয়াত কি-না? ১১. শবে বরাত উপলক্ষে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালত ছুটি ঘোষণা করা নাকি বিদ্য়াত চর্চার সুযোগ দেয়া? ১২. সউদী আরবের দারুল ইফতার সাবেক প্রধান ‘আব্দুল আযীয আব্দুল্লাহ বিন বায’-এর শবে বরাত পালন করা ও এদিনে রোযা রাখা বিদ্য়াত বলে অভিহিত করা কতটুকু সঠিক? আশা করি উল্লিখিত প্রশ্নসমূহের দলীলভিত্তিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ মহান আল্লাহ পাক স্বীয় কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
فسئلوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون.
অর্থঃ- “তোমরা আহলে যিকির তথা আল্লাহওয়ালাগণকে জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জান।” (সূরা আম্বিয়া/৭) যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত উপরোক্ত আয়াত শরীফের হাক্বীক্বী মিছদাক। আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন-এর লক্ষ্যস্থল ওলী, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ওসীলায় এ পত্রিকাটি উম্মাহ্র জন্য শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত যার প্রতিটি লিখাই আক্বীদা-আমল হিফাযতকারী ও পরিশুদ্ধকারী। প্রেক্ষিত কারণে সুওয়ালে উল্লিখিত প্রশ্নসমূহের ধারাবাহিক জাওয়াব পেশ করা হলো- (ধারাবাহিক) ২. কখন থেকে শবে বরাত শুরু হয়? শবে বরাত সম্পর্কে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন নির্দেশ-বাণী আছে কি-না? “কখন থেকে শবে বরাত শুরু হয়?” এর জবাব হলো- শবে বরাত আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানা থেকেই শুরু হয়ে অদ্যাবধি তা পালিত হয়ে আসছে। এ মুবারক রাতটি উম্মতে মুহম্মদীর জন্য মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে খাছ রহম, করম ও ইহসানের কারণ। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে,
ان الدعاء يستجاب فى خمسى ليال اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة القدر المباركة وليلة العيدين.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের প্রথম রাতে, (২) শবে বরাতের রাতে, (৩) ক্বদরের রাতে, (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে, (৫) ঈদুল আযহার রাতে।” এ হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় বর্ণিত রয়েছে যে, “হাশরের দিনে বান্দার হিসাব-নিকাশ গ্রহণের পর দেখা যাবে, কতক উম্মতে মুহম্মদীর উপর জাহান্নামের ফায়ছালা হয়ে গেছে। তখন ফেরেশ্তারা তাদেরকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যেতে থাকবেন এবং পথিমধ্যে জিজ্ঞাসা করবেন, ‘হে ব্যক্তিরা! তোমাদেরকে দেখে মনে হচ্ছে, তোমরা উম্মতে মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তোমরা কেন জাহান্নামে যাচ্ছ? তোমাদের তো জাহান্নামে যাওয়ার কথা নয়। কারণ, তোমাদেরকে তোমাদের নবীর উছীলায় এমন পাঁচটি রাত্রি দেয়া হয়েছে যেই রাত্রিগুলো রহমত, বরকত, সাকীনা, মাগফিরাতের খাছ রাত্রি। তোমরা কি সেই পাঁচ রাত্রির সুসংবাদ পাওনি?” তারা বলবে, “হ্যাঁ, আমরা সেই রাত্রিগুলোর সুসংবাদ পেয়েছিলাম সত্যিই। কিন্তু তাতে ইবাদত-বন্দিগী করিনি, ক্ষমা প্রার্থনা করিনি, রাত্রিগুলোর কোন গুরুত্বই আমরা দেইনি”। তখন ফেরেশ্তারা বলবেন, “তোমাদের জন্য আফসুস! তোমরা যদি সেই পাঁচ রাত্রিতে জেগে ইবাদত-বন্দিগী করতে তাহলে আজকে জাহান্নামে না গিয়ে জান্নাতে চলে যেতে।” “শবে বরাত সম্পর্কে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন নির্দেশ-বাণী আছে কি-না?” এর জবাব হলো- হ্যাঁ, শবে বরাত সম্পর্কে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বহু নির্দেশ বাণী রয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزفه. الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.
অর্থঃ- “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের পনের তারিখ রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন, অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করব।” “কোন মুছিবতগ্রস্থ ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ্, মিশকাত) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
من يصلى على النبى صلى الله عليه وسلم ثلاث مرات عند افطاره غفر الله له ما تقدم من ذنبه وبارك له فى رزقه.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি (শবে বরাতের রোযা রেখে) ইফতার করার সময় আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি তিনবার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে আল্লাহ্ পাক তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ্ ক্ষমা করে দিবেন এবং তার রিযিকে বরকত দান করবেন।” হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن حضرت عائشة عليها السلام قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة فاذا هو بالبقيع فقال اكنت تخافين ان يحيف الله عليك ورسوله قلت يا رسول الله انى ظننت انك اتيت بعض نسائك فقال ان الله تعالى ينزل ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر لاكثر من عدد شعر غنم كلب.
অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে কোন এক রাত্রিতে রাত্রিযাপন করছিলাম। এক সময় তাঁকে বিছানায় না পেয়ে আমি মনে করলাম যে, তিনি হয়ত অন্য কোন স্ত্রীর হুজ্রা শরীফে গেছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে তাঁকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য আল্লাহ পাক-এর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয় হুজরা শরীফে ফিরে আসলে তিনিও ফিরে এসে আমাকে বললেন, তুমি কি মনে করেছ, আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমার সাথে আমানতের খিলাফ করেছেন! আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো অপর কোন হুজরা শরীফে গেছেন। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক শা’বানের পনের তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন, অতঃপর তিনি বণী কাল্বের মেষের গায়ে যত পশম রয়েছে তার চেয়ে অধিক সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্, রযীন, মিশকাত) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى موسى الاشعرى عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله تعالى ليطلع فى ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه الا لمشرك او مشاحن وفى روايته الا اثنين مشاحن وقاتل النفس.
অর্থঃ- “হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক শা’বানের পনের তারিখ রাত্রিতে ঘোষণা করেন যে, তাঁর সমস্ত মাখলুকাতকে তিনি ক্ষমা করে দিবেন। শুধু মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষকারী ব্যতীত। অপর এক রিওয়ায়েতে বর্ণিত রয়েছে, হিংসা-বিদ্বেষকারী ও হত্যাকারী ব্যতীত।” (ইবনে মাজাহ্, আহমদ, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, তালিকুছ্ ছবীহ, শরহুত্ ত্বীবী, মুযাহিরে হক্ব ইত্যাদি) (চলবে)
মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
সুওয়ালঃ হজ্জের ফরয ও ওয়াজিব সমূহ জানতে ইচ্ছুক।
জাওয়াবঃ হজ্বের ফরয তিনটি। যথা- ১. ইহ্রাম বাঁধাঃ পাক পবিত্রতা অর্জন করতঃ (পুরুষগণ) সেলাই বিহীন কাপড় পরিধান করে মীক্বাত অতিক্রম করার পূর্বেই হজ্ব ও ওমরাহ্র নিয়ত করে দু’রাকায়াত নামায পড়ে তালবিয়া পাঠ করাকে ইহরাম বলে। ২. ওকুফে আরাফাঃ ৯ই যিলহজ্ব সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে যাওয়ার পর থেকে ১০ই যিলহজ্ব সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত যে কোন সময়ে কিছুক্ষণের জন্য আরাফার ময়দানে অবস্থান করা। ৩. তাওয়াফে যিয়ারতঃ ১০ই যিলহজ্ব জামরায়ে আকাবায় কংকর নিক্ষেপের পর কুরবানীর দিনগুলো তথা ১০, ১১, ১২ ই যিলহজ্বের যে কোন এক সময় মিনা থেকে মক্কা শরীফে গিয়ে বাইতুল্লাহ্ শরীফ তাওয়াফ করা। হজ্বের ওয়াজিবসমূহ হচ্ছে- ১. সাফা ও মারওয়া সায়ী করাঃ সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সুনির্দিষ্ট নিয়মে সাতবার গমনাগমন করা। ২. মুযদালিফায় অবস্থানঃ যিলহজ্বের ৯ম তারিখে সূর্যাস্তের পর আরাফা থেকে মুজদালিফায় গমণ করে ১০ম তারিখে সুবহে সাদিকের পর হতে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত সময় সেখানে অবস্থান করা। ৩. কংকর নিক্ষেপঃ মিনায় অবস্থিত তিনটি জামরায় ১০, ১১ ও ১২ যিলহজ্বে মোট ৪৯ টি কংকর নিক্ষেপ করা। ৪. কুরবানী করাঃ যারা হজ্বে ক্বিরান অথবা হজ্বে তামাত্তু করবে তাদের জন্য কুরবানী করা ওয়াজিব। আর যারা হজ্বে ইফরাদ করবে তাদের জন্য কুরবানী করা মুস্তাহাব। ৫. তাওয়াফে ছুদূরঃ হজ্বের যাবতীয় কার্যাবলী সমাপনান্তে রমল ব্যতীত তাওয়াফ করা। এটাকে বিদায়ী তাওয়াফও বলে। এটা শুধু মীক্বাতের বাইরের হাজীদের উপর ওয়াজিব। ৬. মাথা মুন্ডানোঃ কুরবানী করার পর মাথা মুন্ডিয়ে বা চুল কেটে হালাল হওয়া। (দলীলঃ সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব দ্রষ্টব্য) মুহম্মদ নেছারুদ্দীন, ঘোড়াশাল। সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখতার হুসাইন রাজারহাট, কুড়িগ্রাম। সুওয়ালঃ- হজ্ব আদায়ের ছহীহ্ পদ্ধতি বা নিয়ম কি? সবিস্তারে জানিয়ে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ- হজ্ব করতে হলে প্রথমে ইহ্রাম বাঁধতে হয়। ইহ্রাম বাঁধা হজ্বের অন্যতম রোকন বা ফরজ। বাংলাদেশ তথা পাক ভারত উপমহাদেশের লোকেরা সাধারণতঃ ইয়েমেন হয়ে হজ্বে গমন করে থাকে। সে হিসেবে তাদের “মীক্বাত” (ইহ্রাম বাঁধার স্থান) হচ্ছে- “ইয়ালামলাম।” যারা সরাসরি হজ্ব করতে না গিয়ে আগে মদীনা শরীফ গিয়ে সেখানে অবস্থান করার পর হজ্ব আদায় করার ইচ্ছা পোষণ করে, তাদেরকে মদীনা শরীফের অধিবাসীদের মীক্বাত “জুলহুলাইফা” নামক স্থান হতে হজ্বের ইহ্রাম বাঁধতে হবে। আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক তিন প্রকার হজ্বের মধ্যে ‘হজ্বে ক্বিরান’ হচ্ছে সুন্নত ও আফযল। ইহ্রাম বাঁধতে হলে প্রথমে ওজু বা গোসল করে নিতে হয়, তবে গোসল করাটাই উত্তম। অতঃপর দু’খানা নতুন বা পরিস্কার কাপড় পরিধান করবে। একখানা সেলাইবিহীন ইযার বা লুঙ্গি অপরখানা চাদর। সাথে সুগন্ধি থাকলে মেখে নিবে। অতঃপর দু’রাকায়াত নামায পড়ে নিম্নের দোয়া পাঠ করবে যা হজ্বে কিরানের নিয়তঃ
اللهم انى اريد الحج والعمرة فيسر همالى وتقبلهما منى.
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী উরীদুল হাজ্জা ওয়াল ওমরাতা ফাইয়াস্সির-হুমা-লী ওয়া তাক্বাব্বালহুমা মিন্নী।” অর্থঃ- “হে আল্লাহ্ পাক! আমি হজ্ব ও ওমরার নিয়ত করলাম। আমার জন্য উভয়টি সহজ করুন এবং আমার পক্ষ থেকে উভয়টি কবুল করুন।” আর যদি কেউ হজ্বে তামাত্তুর নিয়ত করে তাহলে তাকে প্রথমে ওমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধতে হবে। ওমরার নিয়তঃ
اللهم انى اريد العمرة فيسرهالى وتقبلها منى.
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি উরীদুল ওমরাতা ফা ইয়াস্সির-হা-লী ওয়া তাক্বাব্বাল্হা মিন্নী। অর্থঃ- হে আল্লাহ্ পাক! আমি ওমরা করার নিয়ত করছি। অতঃপর তা আমার জন্য সহজ করে দিন এবং তা আমার তরফ থেকে কবুল করে নিন। আর যদি কেউ হজ্বে ইফরাদের নিয়ত করে তাহলে তাকে শুধু হজ্বের নিয়ত করতে হবে। হজ্বের নিয়তঃ
اللهم انى اريد الحج فيسره لى وتقبله منى.
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি উরীদুল হাজ্জ্বা ফাইয়াস্সিরহুলী ওয়া তাক্বাব্বাল্হু মিন্নী। অর্থঃ- হে আল্লাহ্ পাক! নিশ্চয়ই আমি শুধু হজ্ব করার নিয়ত করছি। সুতরাং আপনি আমার জন্য তা পালন করা সহজ করুন এবং আমার পক্ষ হতে কবুল করুন। অতঃপর তালবিয়া পাঠ করবে। তালবিয়া হচ্ছে-
لبيك اللهم لبيك لبيك لاشريك لك لبيك ان الحمد والنعمة لك والملك لاشريك لك.
উচ্চারণঃ- “লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা লাব্বাইকা লা- শারীকালাকা লাব্বাইকা ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্ নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্কা লা- শারীকালাকা।” অর্থঃ- “আমি হাজির আছি হে আল্লাহ্ পাক! আমি হাজির আছি। আমি হাজির আছি, আপনার কোন শরীক নেই, আমি হাজির আছি। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা ও সমস্ত নেয়ামত এবং সমস্ত রাজত্ব আপনারই, আপনার কোন শরীক নেই।” এ তালবিয়ার কোন শব্দ বাদ দেয়া যাবেনা। ইচ্ছা করলে বৃদ্ধি করা যেতে পারে। আর তালবিয়া পাঠ করা হলেই ইহ্রাম বাঁধা হয়ে গেল।
ইহ্রাম বেঁধে মক্কা শরীফ প্রবেশ করেই তাওয়াফের দ্বারাই কাজ শুরু করতে হবে। অর্থাৎ ক’াবা শরীফ ৭ বার প্রদক্ষিণ করে তাওয়াফের কাজ সমাধা করতে হবে। তাওয়াফের নিয়মঃ তাওয়াফের নিয়তের সহিত ওযু-গোসল করে কা’বা শরীফের হজ্বরে আসওয়াদের ঠিক বরাবর দাঁড়িয়ে হজরে আসওয়াদ চুম্বন করে আর ভীড়ের জন্য চুম্বন করতে না পারলে ইস্তেলাম (হাতে ইশারা করে চুম্বন করা) করে তাওয়াফ শুরু করবে। (উল্লেখ্য, হজরে আসওয়াদ থেকে সামনে বেড়ে তাওয়াফ শুরু করলে তাওয়াফ শুদ্ধ হবেনা। আর তাওয়াফকালীন শুধুমাত্র হজরে আসওয়াদ চুম্বন করার সময় মুখ কা’বা শরীফের দিকে থাকবে, অন্যসময় মুখ সামনের দিকে থাকবে। আর বাইতুল্লাহ্ শরীফ বাম পার্শ্বে থাকবে। তাওয়াফের সময় মুখ বা পিঠ ক্বাবা শরীফের দিকে থাকলে তাওয়াফ শুদ্ধ হবেনা।) পর্যায়ক্রমে হজরে আসওয়াদ থেকে শুরু করে মুলতাযিম এরপর বাইতুল্লাহ্ শরীফের দরজা, রুকনে ইরাকী হয়ে হাতিমের বাইর দিয়ে পর্যায়ক্রমে রুকনে শামী, রুকনে ইয়ামেন হয়ে এরপর হজরে আসওয়াদ পর্যন্ত পৌঁছলে এক চক্কর সমাধা হলো। অতঃপর হজরে আসওয়াদ চুম্বন করবে। ভীড়ের কারণে চুম্বন করতে না পারলে ইস্তেলাম করবে। পুণরায় হজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফের দ্বিতীয় চক্কর শুরু করবে। প্রত্যেক চক্করের সময় খেয়াল রাখতে হবে, তাওয়াফকারী যেন কোন চক্করের সময়ই হজরে আসওয়াদ থেকে সামনে বেড়ে তাওয়াফ শুরু না করে। তাওয়াফের মধ্যে প্রথম তিন চক্কর রমল (হাত বাঁকা করে বুক পর্যন্ত উঠিয়ে হাত নেড়ে নেড়ে বীরের ন্যায় মধ্য গতিতে দৌড়ানোকে রমল বলে) ও শেষ চার চক্কর মাশী (সাধারণ গতিতে চলাকে মাশী বলে।) করবে। তাওয়াফ সমাধা করে ছাফা মাওয়াতে সা’ঈ (দৌড়ানো) করবে। এ সমস্ত কাজগুলি ওমরার। অর্থাৎ ওমরাহ্ সমাধা হলো। যদি কেউ হজ্বে তামাত্তুর নিয়ত করে থাকে তাহলে চুল মুন্ডন করে ইহরাম ছেড়ে দিবে। অতঃপর তামাত্তুকারী ৮ই জিলহজ্ব হেরেম শরীফের সীমানা অন্তর্ভূক্ত কোন এক স্থান থেকে হজ্বের জন্য ইহ্রাম বেঁধে নিবে। এরপর যথারীতি হজের আহকামসমূহ পালন করবে। তামাত্তুকারীও যদি হজের পূর্বে নফল তাওয়াফ করে তার মধ্যে রমল, ইজতেবা আদায় করে এবং এরপর সাঈ করে তাহলে তামাত্তুকারীকেও তাওয়াফে যিয়ারতের মধ্যে রমল, ইজতেবা ও এরপর সাঈ করতে হবেনা। অতঃপর হজ্বের জন্য যথারীতি হজ্বে ইফরাদের মত তাওয়াফে কুদুম করতে হবে। ক্বিরানকারী তাওয়াফে কুদুম করার সময় রমল ও ইজতেবার সহিত তাওয়াফ করবে। অতঃপর সাফা ও মারওয়া সাঈ করবে। তাহলে তাওয়াফে যিয়ারতের সময় রমল ও ইজতেবা ও পরে সাঈ করতে হবেনা। হজ্বে ইফরাদকারী যদি তাওয়াফে কুদুমের মধ্যে রমল, ইজতেবা ও সাঈ করে তাহলে তাওয়াফে যিয়ারতের মধ্যে রমল, ইজতেবা ও এরপর সাঈ করতে হবেনা। তবে ইফরাদ হজ্বে তাওয়াফে যিয়ারতের পর সাঈ করা উত্তম। তাওয়াফ শুরু করার পূর্বে ইজতেবা করতে হবে। অর্থাৎ ইজতেবা হলো- চাদরকে ডান বগলের নীচে দিয়ে ও বাম কাঁধের উপর দিয়ে পরবে যাতে ডান কাঁধ খোলা থাকে এবং বাম কাঁধ ঢাকা থাকে। উল্লেখ্য, প্রতিবার তাওয়াফ করার সময় হাতীমের বাইর দিয়ে তাওয়াফ করতে হবে। হাতীম হলো- ক’াবা শরীফের উত্তর পার্শ্বে দু’দিক খোলা কমর পর্যন্ত উঁচু দেয়াল দ্বারা ঘেরা স্থান। তাওয়াফ করার সময় প্রথম তিন চক্কর রমল করবে ও শেষ চার চক্কর মাশী করবে। তাওয়াফ করাকালীন প্রত্যেকবারই হজরে আসওয়াদের নিকট আসলে উহাকে চুম্বন করবে অথবা হাতে ইস্তেলাম করবে। ইস্তেলাম হলো- হাতে ইশারা করে চুম্বন করা। শেষবার চুম্বন বা ইস্তেলাম করে তাওয়াফ সমাধা করবে। অতঃপর মাকামে ইব্রাহীমে এসে দু’রাকায়াত নামায আদায় করবে। যদি ভীড় বা অন্য কোন কারণে সেখানে নামায পড়া সম্ভব না হয় তাহলে মাকামে ইব্রাহীমের পিছনে মসজিদে হারামের যেখানে সম্ভব হয় সেখানেই দু’রাকায়াত নামায আদায় করবে। এই তাওয়াফকে তাওয়াফে কুদুম বলে। ইহা আদায় করা সুন্নত। ইহা মক্কাবাসীদের জন্য আদায় করতে হয়না। অতঃপর মসজিদে হারামের বাবুস্সাফা নামক দরজা দিয়ে বের হয়ে সাফা পাহাড়ে গিয়ে আরোহণ করবে। সেখানে ক’াবা শরীফের দিকে মুখ করে তাসবীহ্-তাহ্লীল বলে হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি দরুদ শরীফ পাঠ করে নিজের আরজু মোতাবেক দোয়া করবে। অতঃপর সেখান থেকে অবতরণ করে সাধারণ গতিতে মারওয়া পাহাড়ের দিকে চলবে। তবে বত্নে ওয়াদীতে পৌঁছে মাইলাইনে আখজারাইনে (সবুজ রংয়ের মাইলফলক বা স্তম্ভ দ্বারা চিহ্নিত স্থান) দৌঁড়াবে। অতঃপর সাধারণ গতিতে মারওয়া পাহাড়ে আরোহণ করবে। সাফা পাহাড়ের অনুরূপ মারওয়া পাহাড়েও তাকবীর, তাহলীল, দরুদ শরীফ পাঠ ও দোয়া করবে। এতে একবার হলো। অনুরূপ সাতবার সাফা মারওয়াতে দৌড়াবে। অর্থাৎ সাফা হতে শুরু করবে মারওয়াতে শেষ করবে। অতঃপর ইহ্রাম অবস্থায় মক্কা শরীফে অবস্থান করবে এবং যত ইচ্ছা তাওয়াফ করবে। উল্লেখ্য, হজ্ব উপলক্ষ্যে তিনটি খুৎবা দেয়া হয়। (১) জিলহজ্ব মাসের ৭ তারিখে যোহরের পর মসজিদে হারামে এক খুৎবা দিতে হয়। খুৎবার মধ্যে বসতে হয়না। (২) আরাফার ময়দানে জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখে দুই খুৎবার মধ্যে বসতে হবে। ইহা জুহরের নামাযের পূর্বে দিতে হয়। (৩) জিলহজ্বের ১১ই তারিখে মীনাতে জুহরের পরে এক খুৎবা দিতে হয়, মধ্যে বসতে হয়না। হজ্ব আদায়কারী ৮ই জিলহজ্ব ফজর নামায মক্কা শরীফে পড়ে মিনার দিকে রওয়ানা হবে। মিনাতে যোহর, আসর, মাগরিব, ইশা ও ফজর আদায় করবে। অতঃপর সেখান থেকে আরাফার ময়দানে যাবে অর্থাৎ ৯ই জিলহজ্ব আরাফার ময়দানে সারাদিন অবস্থান করবে। আরাফার ময়দানে ইমাম সাহেব খুৎবার মাধ্যমে আরাফার কার্যসমূহ শুরু করবে। খুৎবান্তে যোহরের ওয়াক্তে ইমাম ছাহেব এক আযান ও দু’ইকামতে যোহর ও আসরের নামায পড়াবেন। যে ব্যক্তি নিজ স্থানে একা একা নামায আদায় করবে সে যোহরের ওয়াক্তে যোহরের নামায, আসরের ওয়াক্তে আসরের নামায আদায় করবে। ইহাই ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ফতওয়া। তবে জামায়াতে পড়লে জোহরের ওয়াক্তে এক আযান ও দু’ইক্বামতে জোহর ও আছরের নামায পড়বে। নামাযের পরে আরাফার ময়দানে ওকুফ বা অবস্থান করবে যতটুকু সম্ভব জাবালে রহ্মতের নিকটে। আরাফার ময়দানে বত্নে আ’রানা ব্যতীত সমস্তটুকুই অবস্থানস্থল। ওকুফ অবস্থায় ইমাম সাহেব বাহনের উপর থেকে হাত তুলে দোয়া করবে। আর অন্যান্যরাও যত বেশী সম্ভব দোয়া ইস্তেগফারে মশগুল থাকবে। ৯ই জিলহজ্ব সূর্যাস্তের পর ইমাম সাহেব সকলকে নিয়ে সাধারণ গতিতে মুযদালেফায় রওয়ানা হবে। সেখানে কুজা নামক পাহাড় যার উপর মিকাদা রয়েছে তার নিকট অবতরণ করবে। সেখানে ইমাম সাহেব এশার ওয়াক্তে একই আযান ও একই ইকামতে সকলকে নিয়ে মাগরিব ও এশার নামায আদায় করবে। এর মধ্যে সুন্নত ও নফল পড়বেনা। পথে যদি কেউ মাগরিব পড়ে তবে সেটা আদায় হবেনা। বত্নে মুহাস্সার ব্যতীত সকল স্থানই মুযদালেফায় অবস্থানস্থল। সুব্হে সাদিক হওয়া মাত্রই ইমাম সাহেব সকলকে নিয়ে অন্ধকার থাকতেই ফজর নামায আদায় করে সকলকে নিয়ে দাঁড়িয়ে দোয়া করবে। আর সূর্যদ্বয়ের পূর্বে ইমাম সাহেব তার সাথে সকলকে নিয়ে মিনায় রওয়ানা হবে। মুযদালিফা হতে মিনায় যাওয়ার পূর্বে বা পথে ৪৯টি বা ৭টি বা ৭০টি কঙ্কর নিয়ে তালবিয়া পাঠ করতে করতে মিনার দিকে রওয়ানা দিবে। ১০ই জিলহজ্ব সকালে শুধুমাত্র মিনাস্থ জমরাতুল আকাবাতে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে। কঙ্কর নিক্ষেপ করতে প্রত্যেকবার তাকবির বলবে এবং কঙ্কর নিক্ষেপ করার পর সেখানে একটুও দাঁড়াবেনা। আর প্রথম কঙ্কর নিক্ষেপ করার সাথে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিবে। অতঃপর কোরবানী করতে হবে। যারা শুধু হজ্বে ইফরাদ করবে তাদের জন্য এ কোরবানী করা মুস্তাহাব। আর যারা হজ্বে তামাত্তু ও হজ্বে ক্বিরান করবে তাদের জন্য এ কোরবানী করা ওয়াজিব। যা কোরবানী করতে হবে তা হচ্ছে- এক বকরী অথবা এক দুম্বা অথবা গরু, মহিষ বা উটের এক সপ্তমাংশ। যদি তামাত্তু ও ক্বিরানকারী আর্থিক অনটনের কারণে ওয়াজিব কোরবানী করতে না পারে তাহলে তাদের জন্য ১০ই জিলহজ্বের পূর্বে ৩টি এবং ১৩ই জিলহজ্বের পরে ৭টি রোজা রাখা ওয়াজিব হবে। যদি ১০ই জিলহজ্বের পূর্বে ৩টি রোজা রাখতে না পারে তাহলে কোরবানী অবশ্যই করতে হবে। কোরবানী করার পর পুরুষেরা মাথা মুন্ডন করে অথবা চুল ছেটে ইহ্রাম খুলে ফেলবে। মহিলারা চুল মুন্ডন না করে এক অঙ্গুলি বা এক ইঞ্চি পরিমাণ চুল ছাটবে। এ অবস্থায় মুহরিমের জন্য স্ত্রী ব্যবহার ছাড়া সবই হালাল হয়ে গেল। একই দিনে অর্থাৎ ১০ই জিলহজ্বে তাওয়াফে জিয়ারত করা উত্তম যা হজ্বের শেষ ফরজ। তাওয়াফে জিয়ারত ১২ই জিলহজ্ব সূর্যাস্তের পূর্বে আদায় করতে হবে। অন্যথায় দম দেয়া ওয়াজিব হবে। ১০, ১১ এবং ১২ই জিলহজ্ব তারিখে মিনায় অবস্থান করা সুন্নত। ১১ এবং ১২ই জিলহজ্ব তারিখে মিনার জমরাতুল আকাবা, জমরাতুল উস্তা ও জমরাতুল উলাতে পর্যায়ক্রমে ৭টি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে। ১০ তারিখে সূর্য ঢলার পূর্বে ১১ ও ১২ তারিখে সূর্য ঢলার পরে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে। ১২ই জিলহজ্ব সূর্যাস্তের পূর্বেই মিনা হতে মক্কা শরীফে চলে আসা যায়। যদি আসতে রাত্র হয়ে যায় তাহলে আসাটা মাকরূহের সহিত জায়েয রয়েছে। আর যদি ১৩ তারিখ সকাল হয়ে যায় তাহলে তিন স্থানে ৭টি করে ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করে আসতে হবে। এটাই সুন্নাত। কঙ্কর নিক্ষেপের সময় হল সূর্য ঢলার পর হতে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। মিনাতে কঙ্কর নিক্ষেপের জন্য থেকে মাল-সামানা বা আসবাবপত্র মক্কা শরীফে পাঠিয়ে দেয়া মাকরূহ্। মিনাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করা শেষ করে মক্কা শরীফে আসার পথে মুহাস্সার নামক স্থানে কিছুক্ষণ অবস্থান করা সুন্নত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে যোহর, আসর, মাগরিব ও ইশার নামায আদায় করেছেন। অতঃপর মক্কা শরীফে এসে তাওয়াফে বিদা বা তাওয়াফে সুদুর করবে। মক্কাবাসী ব্যতীত অন্যান্য সকলের জন্য এ তাওয়াফে বিদা ও তাওয়াফে সুদুর ওয়াজিব। যাদের উপর তাওয়াফে বিদা বা তাওয়াফে সুদুর ওয়াজিব তারা এ তাওয়াফ না করলে তাদের জন্য দম দেয়া ওয়াজিব। যে সমস্ত মহিলারা অসুস্থ হয়ে যায় অর্থাৎ যাদের স্বাভাবিক মাজুরতা দেখা দেয় তাদের জন্য তাওয়াফে সুদুর ওয়াজিব থাকেনা। এ তাওয়াফ ব্যতীতই তারা বাড়ীতে প্রত্যাবর্তন করবে। (দলীল- সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব দৃষ্টব্য) সাইয়্যিদা মুসাম্মত ছাদিক্বা ফিরদাউস মুসাম্মত মাহবুবা ফিরদাউস উলিপুর, কুড়িগ্রাম। সুওয়ালঃ ইহ্রাম অবস্থায় নাকি মেয়েদের চেহারা বা মুখম-লে কাপড় লাগানো যায়না। কাপড় লাগলে বা স্পর্শ করলে দম ওয়াজিব হয়। তাহলে কি মেয়েরা চেহারা না ঢেকে খুলে রাখবে? অর্থাৎ ইহ্রাম অবস্থায় কি মেয়েদের জন্য পর্দা করার দরকার নেই? জাওয়াবঃ ‘ইহ্রাম অবস্থায় মেয়েদের চেহারা বা মুখম-লে কাপড় স্পর্শ করা বা লাগানো যাবেনা, এ কথা সত্য।’ তবে এক্ষেত্রে মাসয়ালা হলো, যদি একদিন বা এক রাত্রি মুখম-লে কাপড় স্পর্শ করে তাহলে তাদের উপর দম অর্থাৎ একটি কুরবানী ওয়াজিব হবে। আর যদি এক দিন বা এক রাত্রির কম সময় কাপড় স্পর্শ করে তাহলে এক ফিৎরা পরিমাণ ছদকা করা ওয়াজিব হবে। এর অর্থ এটা নয় যে মেয়েরা ইহ্রাম অবস্থায় মুখমন্ডল খোলা রেখে বে-পর্দা হবে। মেয়েদের সর্বাবস্থায় বেগানা পুরুষদের সামনে মুখম-ল খোলা রাখা হারাম যা কবীরা গুনাহ্রে অন্তর্ভূক্ত। অতএব, ইহ্রাম অবস্থায় মেয়েদের করণীয় হচ্ছে তারা মুখম-লের উপর এমনভাবে কাপড় ঝুলিয়ে রাখবে যাতে কাপড় মুখম-লে স্পর্শ না করে। অর্থাৎ নেকাব মুখমন্ডল থেকে কিছুটা দূরে নেট (জালি) জাতীয় কোন কিছুর সাহায্যে ঝুলিয়ে রাখবে। স্মরণ রাখতে হবে যে, কোন অবস্থাতেই পর্দার খেলাফ করা যাবেনা। কারণ মেয়েদের জন্য পর্দা রক্ষা করা করা হচ্ছে স্বতন্ত্র একটি ফরয। যা ফরযে আইন; এবং তা দায়েমী ফরযের অন্তর্ভূক্ত। যেমনিভাবে পুরুষের জন্য স্বতন্ত্র ও দায়েমী ফরয হচ্ছে হালাল কামাই করা। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
طلب كسب الحلال فريضة بعد الفريضة.
অর্থঃ- “পুরুষের জন্য অন্যান্য ফরযের পর ফরয হচ্ছে হালাল কামাই করা।”
وللنساء الحجاب.
অর্থঃ-“আর মেয়েদের জন্য ফরয হচ্ছে পর্দা করা।” অর্থাৎ কলেমা, নামায, রোযা, হজ্ব ও যাকাতের পর পুরুষের জন্য ফরয হলো হালাল কামাই করা আর মেয়েদের জন্য ফরয পর্দা করা। নামায, রোযা, হজ্ব ও যাকাতের ন্যায় এ দু’টি ফরয পালনের ক্ষেত্রেও কুরআন-সুন্নাহ্র কঠোর নির্দেশ আরোপিত হয়েছে। যেমন, হালাল রুজীর ব্যাপারে হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে, এক দিরহাম বা এক পয়সা-টাকা হারাম খেলে চল্লিশ দিন ইবাদত কবুল হয়না এবং আরো বর্ণিত হয়েছে,
كل لحم نبت من السحت كانت النار اولى به.
অর্থঃ- “শরীয়তের যে গোশতের টুকরোটি হারাম খাদ্যের দ্বারা তৈরী হয়েছে তার জন্য জাহান্নামের আগুনই যথেষ্ট। অর্থাৎ যে ব্যক্তি হারাম রুজী ভক্ষণ করে সে জাহান্নামী।” আর পর্দার ব্যাপারে হাদীছ শরীফে বর্নিত হয়েছে,
لعن الله الناظر والمنظور اليه.
অর্থঃ- “যে দেখে এবং দেখায় তার প্রতি আল্লাহ্ পাক-এর লা’নত।” আরো বর্ণিত হয়েছে যে,
لاتتبع النظرة فان لك الاولى وليست لك الاخرة.
অর্থঃ- “দৃষ্টিকে অনুসরণ করোনা। প্রথম দৃষ্টি যা অনিচ্ছা সত্ত্বে পতিত হয় তা ক্ষমা করা হবে; কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না।” অর্থাৎ প্রতি দৃষ্টিতে একটি কবীরা গুনাাহ্ লেখা হয়ে থাকে। পর্দা সম্পর্কে কুরআন শরীফের নির্দেশ আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,
وقرن فى بيوتكن ولاتبرجن تبرج الجاهلية الاولى.
অর্থঃ- “হে মহিলাগণ! তোমরা তোমাদের ঘরে আবদ্ধ থাক এবং জাহিলিয়াতের যুগে যেভাবে মেয়েরা সৌন্দর্য্য প্রদর্শণ করে বেড়াত সেভাবে তোমরা সৌন্দর্য্য প্রদর্শণ করে বের হয়োনা।”(সূরা আহযাব/৩৩) আল্লাহ্ পাক অন্যত্র ইরশাদ করেন,
وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن.
অর্থঃ- “হে হাবীব (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! ঈমানদার মেয়েদেরকে বলুন, তারা তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখবে।” (সূরা নূর/৩১) উপরোক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
المرأة عورة فاذا خرخت استثرفها الشيطن.
অর্থঃ- “মেয়েরা পর্দায় থাকবে। কেননা তারা যখন কোথাও বের হয় তখন শয়তান উঁকি-ঝুঁকি দিতে থাকে পাপ কাজ সংঘটিত করানো জন্য।” মূলতঃ একজন মেয়ে যখন উপুক্ত বা বালেগ হয় তখন হতে তার উপর ব্যক্তিগতভাবে পর্দা করা ফরয। এ ফরয পালনের যাতে কোন প্রকার গাফলতী কিংবা ত্রুটি না হয় এজন্য মেয়ের অভিভাবকগণকেও শরীয়ত কঠোর নির্দেশবাণী আরোপ করেছে। বলা হয়েছে,
الديوث لايدخل الجنة.
অর্থঃ- “দাইয়্যূস’ বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবেনা। ‘দাইয়্যূস’ ঐ ব্যক্তি যে তার অধীনস্থ মেয়েদের পর্দা করায়না।” উল্লেখ্য, মেয়েদের জন্য পর্দা এমন গুরুত্বপূর্ণ ফরয যে, তা কেবল জীবতাবস্থায়ই করতে হবে তা নয় বরং তাদের ইন্তিকালের পরও পর্দা করা ফরয। অর্থাৎ মৃত্যুর পরও যেন কোন বেগানা পুরুষ না দেখে। স্মরণযোগ্য যে, অন্যান্য ফরযের মত পর্দাও একটি ফরয এবং তার হুকুম-আহ্কামও আলাদাভাবে বর্ণিত রয়েছে। কাজেই শরীয়ত এ বিধান আরোপ করেনি যে, একটি ফরয পালন করার জন্য অন্য একটি ফরয পরিত্যাগ করতে হবে। বরং শরীয়তের নির্দেশ হচ্ছে এটাই যে, প্রতিটি ফরয-ওয়াজিব যথাযথভাবে আদায় করা। একটার জন্য আরেকটা ছেড়ে দেয়া জায়েয নেই। অতএব, পর্দা শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত একটি ফরয। কোন মেয়ে ইহ্রাম অবস্থায় হোক আর ইহ্রাম ব্যতীত অন্য অবস্থায়ই হোক পর্দা তরক্ব করা হারাম ও কবীরাহ্ গুনাহ্। যে মেয়ে ইহ্রাম অবস্থায় মুখম-ল খোলা রাখবে সে ফরয তরক্ব করার কারণে ফাসিক হিসেবে সাব্যস্ত হবে। অথচ আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে অশ্লীল-অশালীন ও ফিস্ক ফজুরী ইত্যাদি কাজ করতে নিষেধ করেছেন। আর যারা ইত্যাদি নিষেধ কাজ করে তাদের প্রকৃতপক্ষে হজ্বে মাবরুর নছীব হবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,
فمن فرض فيهن الحج فلا رفث ولا فسوق ولاجدال فى الحج وما تفعلوا من خير يعلمه الله وتزودوا فان خير الزاد التقوى واتقون ياولى الالباب.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি হজ্জের মাসসমূহে হজ্জ পালন করে তার হজ্জ পালন কালে কোন প্রকার অশ্লীলতা, বেপর্দা-বেহায়াপনা, নাফরমানী ও কোনরূপ ঝগড়া-কলহ বা যুদ্ধ-বিগ্রহ করা জায়িয নয়। আর তোমরা যে নেক কাজ করো আল্লাহ্ পাক তা জানেন এবং তোমরা পাথেয় সংগ্রহ করো। নিশ্চয়ই উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া বা খোদাভীতি। আর একমাত্র আমাকেই ভয় করো হে জ্ঞানীগণ।” (সূরা বাক্বারা/১৯৭) উল্লেখ্য, ‘হজ্বে মাবরূর’ অর্থ কবুল হজ্ব। এর ব্যাখায় বলা হয়েছে,
هو ما لايخالطه الاثم ولاسمعة ولارياء.
অর্থঃ- “যে হজ্বের মধ্যে কোন প্রকার পাপের সংমিশ্রণ ঘটবেনা, (বেপর্দা, বেহায়া-বেশরা কাজ করবেনা। অর্থাৎ কুফরী, শিরকী, বিদ্য়াতী হারাম, ফাসেকী, ফুজুরী, অশ্লীল-অশালীন কথা-বার্তা, আচার-আচরণ, ঝগড়া-ঝাটি, মারামারি, কাটাকাটি হেরেম শরীফে নিষিদ্ধ কার্যসমূহ করবেনা। এক কথায় ফরয-ওয়াজিব সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরক্ব করবেনা।) লোককে শোনানোর উদ্দেশ্যে থাকবেনা এবং রিয়া বা লোক প্রদর্শণের জন্য করা হবেনা।” এ সমস্ত প্রকার দোষত্রুটি হতে মুক্ত হজ্বকেই হজ্বে মাবরুর বলা হয়। আর বে-পর্দা হওয়া সাধারন বা ছগীরা গুনাহ্ নয়। বরং প্রকাশ্য হারাম ও কবীরা গুনাহ্র অন্তর্ভূক্ত। আর হারাম ও কবীরা গুনাহ্ করে হজ্ব সম্পাদন করা হলে তা কস্মিন কালেও হজ্বে মাবরুর হবেনা। অতএব, এ ব্যাপারে সকল পুরুষ ও মেয়েদের সাবধান ও সর্তক থাকতে হবে। {দলীলসমূহঃ (১) আহকামুল কুরআন জাস্সাস, (২) কুরতুবী, (৩) রুহুল মায়ানী, (৪) রুহুল বয়ান, (৫) খাযিন, (৬) বাগবী, (৭) তাবারী, (৮) কবীর, (৯) মাযহারী, (১০) দুররে মনছুর, (১১) বুখারী, (১২) মুসলিম, (১৩) আবূ দাউদ, (১৪) কানযুল উম্মাল, (১৫) মিশকাত, (১৬) মিরকাত, (১৭) আশয়াতুল লুময়াত, (১৮) লুময়াত, (১৯) ত্বীবী, (২০) তা’লিকুছ ছবীহ, (২১) মুযাহিরে হক্ব, (২২) আলমগীরী, (২৩) শামী, (২৪) দুররুল মুখতার, (২৫) রদ্দুল মুহতার, (২৬) আইনুল হিদায়া, (২৭) ফতহুল ক্বাদীর, (২৮) শরহে বিক্বায়া, (২৯) ফাযায়েলে হজ্ব, (৩০) আহ্কামে হজ্ব ও যিয়ারত, (৩১) হজ্ব ও যিয়ারত, (৩২) আহকামে হজ্ব, (৩৩) মক্কা ও মদীনার পথে ইত্যাদি।}
মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন,
হাটহাজারী, চট্টগ্রাম হাফিয মুহম্মদ কবীর হুসাইন, নরসিংদী
সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা আগস্ট/২০০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে ফাত্ওয়ায়ে শামী-১/৫৫৩, ৫২, আহসানুল ফাত্ওয়া-৩/৩২৬-৩২৭ পৃষ্ঠার, বরাত দিয়ে বলেছে, “যে মসজিদে ইমাম মুয়াজ্জিন নির্দিষ্ট আছে, তাতে আযান ব্যতীত দ্বিতীয় জামাআত প্রথম জামাআতের ন্যায় না করলে …দ্বিতীয় জামাআত করলে মাকরূহ হবে কি-না সে সম্পর্কে ইমাম আবু হানিফা (রাহ) ও ইমাম আবু ইউসুফ (রাহ) এর মতনৈক্য রয়েছে। তবে উভয়েই একথায় একমত যে, উক্ত অবস্থায় নামায মাকরূহ থেকে খালী হবে না। তবে ইমাম আবু হানিফা (রাহ) এর মতে মাক্রূহে তাহরীমী হবে । এবং ইমাম আবু ইউসুফ (রাহ) এর মতে মাকরূহে তানযিহি হবে। যেসব রিসালায় ৪র্থ তরীকা মাক্রূহে তাহরিমী বলা হয়েছে, তা ইমাম আবূ হানিফা (রাহ) এর মতানুযায়ী। মাসিক মুঈনুল ইসলামে যে বলা হয়েছে মাকরূহ হবে না, তা ইমাম আবু ইউসুফ (রাহ) এর মতানুযায়ী। তবে এর উদ্দেশ্য হল মাকরূহে তাহরীমি হবে না। কিন্তু মাকরূহে তানযিহি অবশ্যই হবে। তাই ৪র্থ অবস্থা কোন ইমামের নিকটই পরিপূর্ণ মাকরূহ থেকে খালী নয় বিধায় দ্বিতীয় জামাআত না করে একাকি নামায পড়াই উত্তম। আর সানী জামাআত করলে মাকরূহে তাহরীমি হবে। সাধারণ ভাবে এর উপরই ফাত্ওয়া। আর মাসিক মদীনা অক্টোবর/২০০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে,“ মসজিদে দ্বিতীয় জামাত করা মাকরূহ্ েতাহ্রিমি….।” অথচ আপনারা মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় লিখেছেন, জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয এবং সকল ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ইজমা বা ঐক্যমতে জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহ্রীমী নয়; যদি দ্বিতীয় জামায়াত প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয়। এখন হাটহাজারীর ও মাসিক মদীনার বক্তব্য অথবা মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ফতওয়া কোনটি সঠিক? দয়া করে দলীল-আদিল্লাহসহ বিস্তারিতভাবে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য জাওয়াব দানে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ মহল্লা বা জামে মসজিদে (অর্থাৎ যেসব মসজিদে ইমাম-মুয়ায্যিন ও জামায়াত নির্ধারিত আছে এবং নির্দিষ্ট সময়ে জামায়াত কায়িম হয় সেসব মসজিদে একবার জামায়াত হওয়ার পর) ছানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর মাধ্যমে যা জানতে পেরেছেন সে ফতওয়াই সঠিক, নির্ভরযোগ্য, দলীলভিত্তিক এবং গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য। পক্ষান্তরে মাসিক মদীনা ও হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং ফতওয়াগ্রাহ্য মতের বিপরীত। শুধু তাই নয়। বরং মাসিক মদীনা ও হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা মহল্লা বা জামে মসজিদে ছানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করার বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়ে শক্ত গুণাহ্র কাজ করেছে। কেননা সঠিক, গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত অনুযায়ী জামে মসজিদে দ্বিতীয় জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহরীমী নয়। এটাই ترجيح (তারজীহ্) বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়া। আর ترجيح (তারজীহ্) বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়ার বিপরীত ফতওয়া দেয়া সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়িয। উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা কিতাবের নাম দিয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছে, আসলে উক্ত কিতাবের বক্তব্য মোটেও সে রকম নয়। বরং তার সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ, তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝতে না পারার কারণেই এরূপ বিভ্রান্তিকর ও ভুল বক্তব্য প্রদান করেছে এবং ক্ষেত্র বিশেষ নিজের মনগড়া ও ভ্রান্ত মতকে টিকিয়ে রাখতে কিতাবের ইবারত কারচুপিও করেছে। তাই তাদের উল্লিখিত ফতওয়ায়ে শামী কিতাবের” ১ম খণ্ডের ৫৫২ ও ৫৫৩ পৃষ্ঠার সঠিক ফায়ছালা উল্লেখ করার সাথে সাথে তাদের উল্লিখিত মনগড়া, জিহালতপূর্ণ ও কারচুপিমূলক বক্তব্যগুলোর খ-নমূলক আলোচনাও করা হবে ইনশাআল্লাহ্। হাটহাজারীর মৌলভীদের কারচুপিমূলক বক্তব্য উদঘাটন ও খ-ন উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভীরা প্রথমতঃ ফতওয়ায়ে শামী কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫৫২ ও ৫৫৩ পৃষ্ঠার বরাত দিয়ে বলেছে, ……“দ্বিতীয় জামাআত করলে মাকরূহ হবে কি-না সে সম্পর্কে ইমাম আবু হানিফা (রাহ) ও ইমাম আবু ইউসুফ (রাহ) …… উভয়েই একথায় একমত যে, উক্ত অবস্থায় নামায মাকরূহ থেকে খালী হবে না। তবে ইমাম আবু হানিফা (রাহ) এর মতে মাক্রূহে তাহরীমী হবে । এবং ইমাম আবু ইউসুফ (রাহ) এর মতে মাকরূহে তানযিহি হবে।
…. এর জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারীর মৌলভীদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ ডাহা মিথ্যা, মনগড়া ও দলীল বিহীন। কারণ মহল্লা বা জামে মসজিদে দ্বিতীয় জামায়াত করা মাকরূহ্ সম্পর্কে ইমাম আবূ হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি যে একমত হয়েছেন এ ধরনের কোন বক্তব্য ফতওয়ায়ে শামী কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫৫২ ও ৫৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ নেই। শুধু তাই নয়, ইমাম আবূ হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে দ্বিতীয় জামায়াত করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী এবং ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে মাকরূহ্ তানযিহি এ ধরনের কোন বর্ণনাও ফতওয়ায়ে শামী কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫৫২ ও ৫৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ নেই। সুতরাং প্রমাণিত হলো হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা ডাহা মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে, কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। কেননা, ফতওয়ায়ে শামী, কিতাবেই উল্লেখ আছে, “মহল্লা বা জামে মসজিদে দ্বিতীয় জামায়াত প্রথম জামায়াতের ছূরতে না করলে সকল ইমাম- মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ইজমা বা ঐক্যমতে মহল্লা বা জামে মসজিদে দ্বিতীয় জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহ্রীমী নয়। আর وهو الصحيح এটাই ছহীহ্ ও বিশুদ্ধ ফতওয়া। সুতরাং পাঠকের সুবিধার্থে মহল্লা বা জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয এবং সকল ইমাম- মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ইজমা বা ঐক্যমতে মহল্লা বা জামে মসজিদে দ্বিতীয় জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহ্রীমী নয়; যদি দ্বিতীয় জামায়াত প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয়। এ সম্পর্কিত নির্ভরযোগ্য, সঠিক, গ্রহণযোগ্য, বিশুদ্ধ এবং ترجيح (তারজীহ্) বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়াটি প্রমাণ স্বরূপ শুধুমাত্র ধোকাবাজ হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা যে “ফতওয়ায়ে শামী কিতাবের” ১ম খণ্ডের ৫৫২ ও ৫৫৩ পৃষ্ঠার বরাত দিয়েছে, সেই “ফতওয়ায়ে শামী কিতাবের” ১ম খণ্ডের ৫৫২ ও ৫৫৩ পৃষ্ঠার ইবারত আবারো তুলে ধরা হলো। কারণ “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবেই উল্লেখ আছে, বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে দ্বিতীয় জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহরীমী নয়। আর وبه نأخذ এটাই আমরা গ্রহণ করেছি।” যেমন, প্রথমতঃ তাদের উল্লিখিত “ফতওয়ায়ে শামী কিতাবের” ১ম খণ্ডের ৫৫৩ পৃষ্ঠাতেই উল্লেখ আছে,
اذا لم تكن الجماعة على الهيئة الأولى لاتكره والا تكره وهو الصحيح وبالعدول عن المحراب تختلف الهيئة كذا فى البزازية انتهى وفى التاتر خانية عن الولوالجية وبه نأخذ.
অর্থঃ- “ছানী বা দ্বিতীয় জামায়াত যদি প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয়। (প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হওয়ার অর্থ হলো দ্বিতীয় জামায়াতের জন্য আযান ও ইক্বামত হবেনা। ইমামের নির্ধারিত স্থানে তথা মেহরাবে দাঁড়াতে পারবেনা।) তাহলে সানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ্ হবেনা। অন্যথায় মাকরূহ্ হবে। আর وهو الصحيح এটাই ছহীহ্ ও বিশুদ্ধ ফতওয়া। আর মেহরাব থেকে সরে দাঁড়ানোই হলো প্রথম ছূরতের বিপরীত।” অনুরূপ বায্যাযীয়া কিতাবেও উল্লেখ আছে। আর তাতারখানিয়া কিতাবে ওয়ালওয়ালিজীয়া কিতাব থেকে উল্লেখ আছে যে, وبه نأخذ এটাই আমরা গ্রহণ করেছি। অর্থাৎ আমাদের হানাফী মাযহাবের গ্রহণযোগ্য মতে দ্বিতীয় জামায়াত মাকরূহ নয়, যদি দ্বিতীয় জামায়াত প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয়। যেমন, “আল ফিক্বহু আ’লাল মাযাহিবিল আরবায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৪৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الحنفية قالوا لايكره تكرار الجماعة فى مساجد الطرق وهى ماليس لها امام وجماعة معينون. أما مساجد المحلة وهى مالها امام وجماعة معينون فلا يكره تكرار الجماعة فيها أيضا ان كانت على غير الهيئة الاولى كما صليت الاولى فى المحراب والثانية صليت بعد ذلك.
অর্থঃ- “হানাফীগণ বলেন, রাস্তার মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ্ হবেনা। আর রাস্তার মসজিদ একেই বলা হয় যার ইমাম এবং জামায়াত নির্ধারিত নেই। অনুরূপ মহল্লার মসজিদ- যে মহল্লার মসজিদে ইমাম ও জামায়াত নির্ধারিত আছে, উক্ত মহল্লার মসজিদেও দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ্ নয়। যদি দ্বিতীয় জামায়াত প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয়। আর দ্বিতীয় জামায়াত প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হওয়ার অর্থ হলো, যেমন প্রথম জামায়াতে মেহরাবে নামাযের ইমামতি করা আর দ্বিতীয় জামায়াতে মেহরাব থেকে দূরে সরে নামাযের ইমামতি করা।” “আল ফিকহুল হানাফীয়্যু ফী ছাওবীহিল জাদীদ” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
لاتكره الجماعة الثانية إذا كانت على غير هيئة الأولى وبالعدول عن المحراب تختلف الهيئة.
অর্থঃ- “মহল্লার মসজিদে সানী জামায়াত করা মাকরূহ হবে না। যদি সানী জামায়াত প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয়। আর মিহরাব থেকে সরে দাঁড়ানোই হলো প্রথম ছূরতের বিপরীত।” “আল ফিক্বহুল মুইয়াস্সার আ’লা মাযহাবিল ইমামিল আ’যম আবী হানীফা আন্ নু’মান” কিতাবের ১০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
أما اذا تغيرت الهيئة الاولى بأن قام امام الجماعة الثانية فى غير المكان الذى قام فيه امام الجماعة الاولى فلاتكره.
অর্থঃ- “মহল্লার মসজিদে যেখানে ইমাম ও মুয়ায্যিন নির্ধারিত আছে অতঃপর সেখানে যদি প্রথম জামায়াতের ছূরত পরিবর্তন করে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করে তাহলে মাকরূহ হবেনা। অর্থাৎ প্রথম জামায়াতের ইমাম ছাহেব যেখানে দাঁড়িয়েছিল, সেখানে দ্বিতীয় জামায়াতের ইমাম ছাহেব না দাঁড়িয়ে যদি অন্য স্থানে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করে, তাহলে দ্বিতীয় জামায়াত মাকরূহ নয়।” তাছাড়া “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, আযান-ইক্বামত ব্যতীত দ্বিতীয় জামায়াত কায়িম করলে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে না। বরং সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ইজমা বা ঐক্যমতে দ্বিতীয় জামায়াত কায়িম করা জায়িয। যেমন, “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫৫৩ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
ولو كرر أهله بدونهما ….. جاز اجماعا.
অর্থঃ- “যদি মহল্লার মসজিদের অধিবাসীগণ আযান-ইক্বামত ব্যতীত দ্বিতীয় জামায়াত করে, তাহলে সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ইজমা বা ঐক্যমতে দ্বিতীয় জামায়াত কায়িম করা জায়িয। “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩৭৭ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
لايكره تكرار الجماعة فى مسجد واحد.
অর্থঃ- “একই মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ হবেনা।” পরিশেষে আল্লামা ইব্নে আবেদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩৯৬ পৃষ্ঠায় চুড়ান্ত মত ব্যক্ত করে বলেন,
نعم قد علمت أن الصحيح أنه لايكره تكرار الجماعة إذا لم تكن على الهيئة الأولى.
অর্থঃ- “হ্যাঁ আমি চুড়ান্তভাবে অবগত হয়েছি, নিশ্চয়ই (الصحيح) ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ মত এই যে, দ্বিতীয় জামায়াত যদি প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয়, তাহলে দ্বিতীয় জামায়াত মাকরূহ্ নয়। অর্থাৎ প্রথম জামায়াতের মত আযান ও ইক্বামত না দিয়ে এবং ইমামের নির্ধারিত স্থানে না দাঁড়িয়ে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ্ হবে না। এটাই ছহীহ মত বা বিশুদ্ধ ফতওয়া।” অতঃপর আবারো প্রমাণিত হলো, কিতাবের সঙ্গে তাদের বক্তব্যের কোন মিল নেই বরং কিতাবের সঙ্গে হাটহাজারী মৌলভীদের বক্তব্য সম্পূর্ণ-ই বিপরীত। (চলবে)
মুহম্মদ মুহিউদ্দীন
সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত সন্দ্বীপ শাখা, চট্টগ্রাম
সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানী মাযহাবের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর- জানুয়ারী/২০০৩-০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে ‘‘বিত্রের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম এবং বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব পাবে বলে উল্লেখ করেছে।’’ তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ্, নাসায়ী থেকে দলীল হিসেবে কয়েকখানা হাদীছ শরীফও উল্লেখ করেছে। আর হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ডিসেম্বর/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, ‘‘বিতির নামাযের পর দুই রাক্আত নফল নামায… দাঁড়িয়ে পড়া ভাল। কারণ, নফল নামায বিনা কারণে বসে পড়লে অর্ধেক সাওয়াব হয়।” এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা হালকী নফল নামায সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে হাদীছ শরীফগুলো উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য। তাদের প্রতিটি দলীলের খ-নসহ হালকী নফল সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায যাকে “হালক্বী নফল” বলা হয়, তা দাঁড়িয়ে পড়া সম্পর্কে অখ্যাত মাসিক পত্রিকাদ্বয়ের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ হয়েছে। এবং ক্ষেত্রবিশেষে কুফরীমূলক হয়েছে। স্মর্তব্য যে, সাধারণতঃ নফল নামায বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব হলেও বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়াই মুস্তাহাব-সুন্নত, যা উত্তম ও পূর্ণ ছওয়াব এবং অধিক ফযীলতের কারণ। কেননা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল এবং অন্যান্য নফলের ক্ষেত্রে একই হুকুম নয়। বরং বিত্র নামাযের পর দুই রাকায়াত নফলের হুকুম অন্যান্য নফল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অর্থাৎ অন্যান্য নফল দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব, বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব। আর হালক্বী নফল অর্থাৎ বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব, আর বসে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব। কারণ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায কখনও দাঁড়িয়ে আদায় করেননি। বরং বসেই আদায় করেছেন। যা সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। (ধারাবাহিক) উল্লেখ্য, রেযাখানীরা ‘বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ ও নাসায়ী শরীফ’ ইত্যাদি কিতাব থেকে দলীল হিসেবে যে বক্তব্য উল্লেখ করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য মোটেও সে রকম নয়। তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝতে না পারার কারণেই ‘হালক্বী নফল’ সম্পর্কে এরূপ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য উল্লেখ করেছে। শুধু তাই নয়, সাথে সাথে নিজেদের জিহালতীকে ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে উল্লিখিত কিতাবসমূহের কোন কোন ইবারত কারচুপি করে নিজেদের বাতিল মতকে ছাবিত করার ব্যর্থ কোশেশ করেছে। তারা উল্লিখিত কিতাবের বরাত দিয়ে যে সকল মিথ্যাচারিতা, প্রতারণা ও ইবারত কারচুপির আশ্রয় নিয়েছে সেগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা ও ফায়সালা তুলে ধরে তার খ-নমূলক আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ্। রেযাখানীদের কারচুপিমূলক বক্তব্য উদঘাটন ও খ-ন উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বলেছে, “বিতরের পর দু’রাকাত নামায…..দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম ধারণাকারীগণকে কুফরীর ফতোয়া দেয়াটা চরম মুর্খতা এবং ধর্ম ও নৈতিকতা বিরোধী কাজ…।
এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ ছহীহ্ ও নির্ভরযোগ্য হাদীস শরীফে বর্নিত আছে, বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায স্বয়ং আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসেই আদায় করেছেন। এখন আমাদের প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, “আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কাজ করেছেন সেটা কি উত্তম না অনুত্তম?”
প্রথম প্রশ্নের শরীয়তের জবাব হচ্ছে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন কাজকে কেউ যদি অনুত্তম বলে তাহলে সে কাট্টা কাফির হবে। কারণ, আল্লাহ্ পাক নিজেই বলেছেন,
انا اعطينك الكوثر.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে হাউজে কাওছার ও সমস্ত ভালাই দান করেছি।” (সূরা কাওছার/১
অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক নিজেই বলতেছেন যে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তা উত্তম হতে উত্তমতর। এককথায় আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে যা কিছু সংশ্লিষ্ট হয়েছে তা উত্তম থেকে উত্তম।
দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, “আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা করেছেন তাই দলীল? না, দলীল নয়?” দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাব হচ্ছে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই দলীল। এ প্রসঙ্গে শরীয়তের উছূল হচ্ছে,
اصول الثرع ثلاثة القران والحديث والاجماع ورابعها القياس.
অর্থঃ- “শরীয়তের উছূল বা দলীল হচ্ছে প্রথমতঃ তিনটি- কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা এবং চতুর্থটি হচ্ছে ক্বিয়াস।” কাজেই যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস শরীফকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করবে না এবং তা উত্তম নয় বলবে শরীয়তের দৃষ্টিতে সেও কাট্টা কাফিরের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
لوتركتم سنة نبيكم لكفرتم.
অর্থঃ- “যদি তোমরা তোমাদের নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতকে অস্বীকার কর, তাহলে তোমরা অবশ্যই কুফরী করলে বা কাফির হবে।” (আবু দাউদ শরীফ) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كل امتى يدخلون الجنة الا من ابى قيل ومن ابى يا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال من اطاعنى دخل الجنة ومن عصانى فقد ابى.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার সমস্ত উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে ঐ ব্যক্তি ব্যতীত যে আমাকে অস্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কোন্ ব্যক্তি আপনাকে অস্বীকার করলো?’ তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ইত্য়াত (অনুসরণ) করলো সে জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানি করলো অর্থাৎ আমার ইত্য়াত করলোনা সেই আমাকে অস্বীকার করলো অর্থাৎ সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (বুখারী শরীফ) তাছাড়া কোন প্রকার ইবাদত-বন্দিগীতে কোন প্রকার নেকী নেই বা সন্তুষ্টি নেই; বরং সন্তুষ্টি ও নেকী রয়েছে একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর মতে মত হওয়ার মধ্যে এবং আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পথে পথ হওয়ার মধ্যে। এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে,
عن انس رضى الله عنه قال جاء ثلثة رهط الى ازواج النبى صلى الله عليه وسلم يسالون عن عبادة النبى صلى الله عليه وسلم فلما اخبروا بها كانهم تقالوها فقالوا اين نحن من النبى صلى الله عليه وسلم وقد غفر الله ماتقدم من ذنبه وما تأخر فقال احدهم اما انا فاصلى الليل ابدا وقال الاخر انا اصوم النهار ابدا ولا افطر وقال الاخر انا اعتزل النساء فلا اتزوج ابدا فجاء النبى صلى الله عليه وسلم اليهم فقال انتم الذين قلتم كذا وكذا اما والله انى لاخشاكم لله واتقاكم له لكنى اصوم وافطر واصلى وارقد واتزوج النساء فمن رغب عن سنتى فليس منى.
অর্থঃ- “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তিনজন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর একটি দল হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আহলিয়া অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণের নিকট এসে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। যখন তাঁদেরকে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আমল সম্পর্কে জানানো হলো, তখন তাঁরা উক্ত আমলকে অত্যন্ত কম মনে করলেন এবং বলতে লাগলেন যে, আমরা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তুলনায় কোথায়? তাঁর পূর্বাপর সমস্ত গুনাহ্খতা ক্ষমা করা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক তাঁকে মা’ছূম করে তাঁর মর্যাদাকে আরো বৃদ্ধি করেছেন। তখন তাঁদের মধ্য হতে একজন বললেন, আমি দায়িমীভাবে সারারাত নামায আদায় করবো। আর একজন বললেন, আমি সারা বছর রোযা রাখবো, কখনো ভঙ্গ করবোনা এবং অপরজন বললেন, আমি কখনো বিয়ে করবোনা, আজীবন স্ত্রী-সন্তান থেকে দূরে থাকবো। অতঃপর আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের নিকট আসলেন এবং বললেন, “তোমরা কি ঐ সমস্ত লোক, যারা এরূপ কথা বলেছো? তোমরা এ ব্যাপারে সাবধান হও। আল্লাহ্ পাক-এর কছম! আমি তোমাদের থেকে আল্লাহ্ পাককে বেশী ভয় করি এবং সবচেয়ে বেশী পরহিযগার বা মুত্তাকী। অথচ আমি রোযা রাখি আবার তা ভঙ্গ করি, নামায পড়ি এবং ঘুমিয়ে থাকি এবং আহলিয়ার হক্ব পুরোপুরি আদায় করি। জেনে রাখ! যে ব্যক্তি আমার সুন্নতের খিলাফ আমল করে, সে আমার উম্মত হতে খারিজ।” (মিশকাত শরীফ ২৭ পৃষ্ঠা, বুখারী, মুসলিম শরীফ)
এ হাদীছ শরীফ এবং অনুরূপ আরো অন্যান্য হাদীছ শরীফ থেকে এটাই ছাবিত হয় যে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইতায়াত বা অনুসরণই সন্তুষ্টির কারণ ও ইবাদত এবং এর মধ্যেই নেকী বা ছওয়াব রয়েছে। আর আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আমলের খিলাফ যত প্রকার আমল রয়েছে তা প্রত্যেকটিই পরিত্যাজ্য, গোমরাহী এবং আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে খারিজ হওয়ার কারণ।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ পড়লে আর অনুবাদ করলেই যদি মুসলমান হতে পারতো এবং ওলী আল্লাহ্ হতে পারতো তাহলে গিরিশ চন্দ্র মুসলমান হতো এবং বড় ওলী আল্লাহ্ হয়ে যেত। কিন্তু গিরিশ চন্দ্র ওলী আল্লাহ্ হওয়া তো দূরের কথা মুসলমানই হতে পারেনি যে কাট্টা কাফির হয়ে চির জাহান্নামী হয়ে গেছে। আর আমল বা ইবাদত বন্দিগী করলেই যদি ঈমানদার হওয়া যেত এবং ওলী আল্লাহ হওয়া যেত তাহলে ক্বদরিয়া সম্প্রদায় যাদের আমল ও ইবাদত সম্পর্কে স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এদের আমল ও ইবাদত বন্দেগী হবে দেখতে নবীদের মত কিন্তু তাদের ঈমান কক্তনালীর নীচে নামবেনা অর্থাৎ এরা মুসলমান দাবী করা সত্বেও কাট্টা কাফিরই থাকবে। কাজেই নেকী বা ছওয়াব ও সন্তুষ্টি রয়েছে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইতায়াত বা সুন্নতের অনুসরণের মধ্যে। মূলতঃ রেযাখানী মৌলভীরা নফসের ধোঁকায় ও শয়তানের ওয়াসওয়াসায় পড়ে সুন্নাতের বিরুদ্ধে এলামেলো বকছে। হযরত আল্লামা শায়খ সাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘গুলিস্তা’ কিতাবে বর্ণনা করেন,
اذا يئس الانسان طال لسانه.
অর্থঃ- “মানুষ যখন নিরূপায় হয়ে যায় তখন তার জ্বিহবা বড় হয়ে যায়।” সুতরাং রেযাখানী মৌলভীরা নিরূপায় হয়ে এখন সুন্নতের বিরুদ্ধে বলতে তথা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরুদ্ধে বলতে শুরু করেছে। অথচ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
لو تركتم سنة نبيكم لكفرتم او لضللتم.
অর্থঃ- “যদি তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নতকে তরক (ইহানত বা অবজ্ঞা) করো তবে তোমরা কুফরী করলে বা গোমরাহ হলে।” সেজন্যই আক্বাঈদের কিতাবে এসেছে,
اهانة السنة كفر.
অর্থঃ- “সুন্নতকে ইহানত করা কুফরী।” সুতরাং হাদীছ শরীফকে উপেক্ষা করে নিছক ধারণার বশবর্তী হয়ে বিত্রের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়ার ধারণা করাটা সম্পুর্ণই মিথ্যা, লানতপ্রাপ্ত এবং কুফরী। অতএব, বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায অর্থাৎ ‘হালক্বী নফল’ নামায বসেই আদায় করা উত্তম, খাছ সুন্নত এবং অধিক ফযীলত ও বুযুর্গীর কারণ। যারা এটাকে ভুল, ভিত্তিহীন ও উত্তম নয় বলবে তারা মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদ ও কাফির হয়ে যাবে। এটা কারো বানানো ফতওয়া নয় বরং শরীয়তেরই ফতওয়া। (চলবে)
মুসাম্মত সানজিদা আক্তার
সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত মুহম্মদপুর, ঢাকা
সুওয়ালঃ অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়- জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। তাদের সকল আমল হবে খুবই নিখূঁত ও সুন্দর। তাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে, তাদের রোযা দেখে তোমাদের রোযাকে তোমরা তুচ্ছ ও নগণ্য মনে করবে। তাদের আমল দেখে তোমরা তোমাদের আমলকে হেয় মনে করবে, তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার নিচে যাবেনা। তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন-প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। এদলের আমল যতই তোমাদেরকে আকৃষ্ট করুক না কেন, কখনই তাদের দলে যাবেনা। কারণ প্রকৃতপক্ষে এরা হবে ইসলাম হতে খারিজ, দ্বীন হতে বহির্ভূত। তীর যেমন ধনুক হতে বের হয়ে যায় সে আর কখনও ধনুকের নিকট ফিরে আসেনা। তেমনিই এরা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে, আর কখনও দ্বীনের পথে, কুরআন ও সুন্নাহ্র পথে ফিরে আসবেনা। আমার প্রশ্ন হল, উপরোক্ত হাদীছ ছহীহ্ কি-না? ছহীহ্ হলে এ দ্বারা উদ্দেশ্য কারা? উক্ত হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতের কোন সম্পর্ক আছে কি-না? অনেকে এই হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতকে জড়াতে চান। উক্ত হাদীসের সঙ্গে তাবলীগ জামাতকে জড়ানো সঠিক কি-না? জবাবঃ প্রশ্নে বর্ণিত হাদীছ ছহীহ্। মুহাদ্দিছীনে কেরাম উক্ত হাদীছসহ এ জাতীয় হাদীছসমূহের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এ সব হাদীছ দ্বারা একটি নির্ধারিত জামাত বা খারিজী ফেরক্বা নামে পরিচিত তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর খিলাফত আমলে এই হাদীছসমূহের বাস্তবতা এবং খাওয়ারেজদের অবস্থার সমন্বয় ঘটেছিল। যার দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে বলা চলে যে, এ হাদীছসমূহ দ্বারা একমাত্র খাওয়ারেজদেরকেই বুঝানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণাদি ছাড়া অন্য কোন জামাতকে এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করা যাবেনা। কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়া তাবলীগ জামাতকে এই হাদীছসমূহের মেসদাক বা উদ্দেশ্য বানানো, তাদেরকে খাওয়ারেজ বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে মারাত্মক অন্যায় ও অপরাধ। তাবলীগের নিয়মনীতি ও কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই। বর্তমান বিশ্বে আল্লাহ্ তা’আলা তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে পথহারা, ঈমানহারা, হেদায়েত থেকে বঞ্চিত অসংখ্য মানুষকে হেদায়েত করেছেন, ঈমান আনার তাওফিক দান করেছেন। এছাড়া এ জামাতের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে অসংখ্য জগদ্বিখ্যাত আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ। অতএব, তাবলীগ জামাতকে খারেজী জামাত বলা, মিথ্যা অপবাদ বৈ কিছুই নয়। (ফতহুল বারী ১২ঃ৩৫০, আল মিরকাত ৭ঃ১০৭)
উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো- (১) উল্লিখিত হাদীছ শরীফে বর্ণিত গুণাবলী প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে আছে কি? (২) উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা কি শুধু খারিজী ফিরক্বার লোকদেরকেই বুঝানো হয়েছে? নাকি খারিজীদের ন্যায় আক্বীদা পোষণকারীদের ক্ষেত্রেও এ হাদীছ শরীফ প্রযোজ্য? (৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য? (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি? (৫) কুরআন-সুন্নাহ্র কোথাও প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করার নির্দেশ আছে কি? প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করা কুরআন-সুন্নাহ্ মতে জায়িয কিনা? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী। জাওয়াবঃ প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কিত উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের সাফাই গাইতে গিয়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যা করেছে। সাথে সাথে “ছয় উছূলীদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী কোন আক্বীদা-আমল নেই” বলে তাদের নির্লজ্জ দালালী করে নিজেদেরকে অপব্যাখ্যাকারী ও মিথ্যাবাদীরূপে সাব্যস্ত করেছে।
সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিক দলীলভিত্তিক আলোচনা করলেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে। তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-
(ধারাবাহিক) ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারীতার খ-নমূলক জবাব-৩ প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, পর্যায়ক্রমে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলোর সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো- প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ১২ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের আক্বীদা হলো যে, “দাওয়াতের কাজ বন্ধ করার কারণে আল্লাহ পাক হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালামকে বিপদে ফেলেছিলেন এবং তিনি সেখানে নিজের অপরাধ স্বীকার করে চল্লিশ দিন কাঁদা-কাটার পর আল্লাহ পাক তাঁর অপরাধ ক্ষমা করেন। এ প্রসঙ্গে তাদের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে, “দাওয়াত বন্ধ করার কারণে, আল্লাহ পাক হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালামকে অবশ্য গযবে ফেলিলেন…..।” “…. হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম মাছের পেটে চল্লিশ দিন আবদ্ধ থেকে নিজ ক্রটি স্বীকার করিয়া তওবা …. করার কারণে বিপদ হতে উদ্ধার পেলেন।” (তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, লেখক- ইসাইল হোসেন দেওবন্দী পৃঃ৬২ ও ৮৯) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য নেহায়েতই অজ্ঞতামূলক, বিভ্রান্তিকর, ও নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের শানের সম্পূর্ণ খিলাফ হওয়ার কারণে কুফরীমূলক হয়েছে। মূলতঃ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ সম্পর্কিত ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য ইসলামী আক্বীদাগত অজ্ঞতা হেতুই তারা এরূপ আপত্তিকর আক্বীদা পোষণ করে থাকে। নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ সম্পর্কিত ছহীহ্ ইসলামী আক্বীদা বস্তুতঃ সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণই ছিলেন আল্লাহ্ পাক-এর খাছ ও মনোনীত বান্দাহ্গণের অন্তর্ভূক্ত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন,
الله يجتبى اليه من يشاء.
অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক যাকে ইচ্ছা (নবী আলাইহিমুস্ সালাম গণকে) মনোনীত করেন।” (সূরা শুয়ারা/১৩) আল্লাহ পাক “সূরা হজ্বের” ৭৫নং আয়াত শরীফে আরো বলেন,
الله يصطفى من الملئكة رسلا ومن الناس.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক ফেরেশ্তা ও মানুষের মধ্য থেকে রসূল মনোনীত করেন।” অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণকে আল্লাহ পাকই খাছভাবে মনোনীত করেন। কারো পক্ষে সাধনা বা রিয়াজত মুশাক্কাত করে কস্মিনকালেও নবী-রসূল হওয়া সম্ভব নয়। আর তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কুরআন শরীফের একাধিক স্থানে ইরশাদ হয়েছে,
نوحى اليهم.
অর্থঃ- “আমি তাঁদের (নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের) প্রতি ওহী পাঠাতাম।” (সূরা ইউসূফ/১০৯,নহল/৪৩, আম্বিয়া/৭) অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের যাবতীয় কার্যাবলীই ওহীর দ্বারা (আল্লাহ পাক কর্তৃক) পরিচালিত হতো। যার পরিপ্রেক্ষিতে আক্বাইদের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে,
الانبياء عليهم السلام كلهم معصومون.
অর্থঃ- “সকল আম্বিয়া (নবী-রসূল) আলাইহিমুস্ সালামগণ মাছূম বা নিস্পাপ।” আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে,
الانبياء عليهم السلام كلهم منزحون عن الصغائر والكبائر والكفر والقبائح.
অর্থঃ- “সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণই ছগীরা, কবীরা, কুফরী এবং অপছন্দনীয় কাজ হতেও পবিত্র।” এ উছূলের ভিত্তিতে আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো, কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ কখনও ভুল-ত্রুটি করেননি। ইচ্ছাকৃত তো নয়ই, অনিচ্ছাকৃতও নয়। অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ কোন ভুল-ত্রুটিই করেননি। (শরহে আক্বাইদে নসফী, ফিক্বহে আকবর, তাকমীলুল ঈমান, আক্বাইদে হাক্কাহ) অতএব যারা নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের ভুল সম্পর্কে বলে থাকে, তারা আক্বাইদ ও ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞ বা মূর্খ থাকার কারণে এবং কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা না বুঝার কারণে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের শানে এরূপ বেয়াদবীমূলক ও কুফরী কথাবার্তা বলে থাকে। উল্লেখ্য যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের সাথে কতটুকু আদব রক্ষা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে কিতাবে হযরত ইমাম র্সারী সাক্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ঘটনা উল্লেখ করা হয়। হযরত ইমাম র্সারী সাক্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর যামানায় আল্লাহ পাক-এর লক্ষ্যস্থল ছিলেন। তিনি ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত ছিলেন। তিনি একবার আল্লাহ পাক-এর নবী, হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্ সালামকে স্বপে¦ দেখে প্রশ্ন করেছিলেন, “হে আল্লাহ পাক-এর নবী হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্ সালাম! আপনার অন্তরে যদি আল্লাহ পাক-এর মুহব্বত সত্যিকার ভাবেই প্রবল হতো, তাহলে আপনি কি করে আপনার ছেলে হযরত ইউসুফ আলাইহিস্ সালাম-এর জুদাইয়ের (বিচ্ছেদের) কারণে তাঁর মহব্বতে চল্লিশ বছর যাবত কেঁঁদে কেঁদে আপনার চক্ষু নষ্ট করেছিলেন?” এ কথা বলার সাথে সাথে গায়েব থেকে নেদা (আওয়াজ) হলো, “হে র্সারী সাক্তী! মুখ শামলিয়ে নবীদের শানে কথা বল।” এরপর হযরত ইউসুফ আলাইহিস্ সালামকে তাঁর সামনে পেশ করা হলে দেখে তিনি বেহুশ হয়ে পড়েন এবং এভাবে একাধারা তের দিন, তের রাত্র বেহুশ থাকার পর হুঁশ ফিরে পান। তখন গায়েব থেকে নেদা হয়, “আল্লাহ্ পাক-এর নবীদের শানে আদবের খিলাফ কথা বললে এরূপই শাস্তি হয়ে থাকে।” (তাজকেরাতুল আওলিয়া) উপরোক্ত ওয়াকিয়ার আলোকে প্রতিভাত হয় যে, আদব কত সুক্ষ্ম জিনিস এবং হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের শানে কতটুকু আদবের সাথে কথা বলতে হবে এবং তাঁদের সাথে বেয়াদবির কি পরিণতি? বেয়াদব সম্পর্কে হযরত জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থঃ- “বেয়াদব আল্লাহ পাক-এর রহ্মত থেকে বঞ্চিত।” (মসনবী শরীফ) অতএব, অনুধাবণীয় যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রতি কতটুকু আদব রক্ষা করা দরকার। উল্লেখ্য যে, হযরত র্সারী সাক্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমামুয্ যামান, ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত ও আল্লাহ পাক-এর লক্ষ্যস্থল হওয়া সত্ত্বেও তাঁর প্রতি সতর্কবাণী ও সাবধানবাণী উচ্চারিত হয়েছে। এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রতি যথাযথ আদব রক্ষা করার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের বরকতময় জীবনীতেও রয়েছে। যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে, একদা জনৈক ছাহাবী, হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি বড় না হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বড়?’ জবাবে বিশিষ্ট ও মর্যাদাবান ছাহাবী, হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অত্যন্ত হেকমতপূর্ণ জবাব দিলেন এই বলে যে,
هو اكبر منى وانا اسن منه.
অর্থঃ- ‘সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবশ্যই আমার চেয়ে অনেক বড় (মর্যাদাবান)। তবে দুনিয়াবী দৃষ্টিতে আমার বয়স বেশী অর্থাৎ আমি দু’বছর আগে জন্ম গ্রহণ করেছি।’ (সুবহানাল্লাহ্) অতএব, বিশিষ্ট ছাহাবী, হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর উপরোক্ত হেকমতপূর্ণ ঘটনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ সম্পর্কে খুব আদব ও সতর্কতার সাথে কথা বলতে হবে। (চলবে) আবূ ছালেহ্ নূর মুহম্মদ আনছারী অন্নদানগর, রংপুর।
সুওয়ালঃ আমদের এলাকার এক মসজিদে জুমুয়ার দিন ‘ছানী আযান’ হয়না। এ ব্যাপারে ইমাম ছাহেবকে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বলেন, ‘জুমুয়ার ছানী আযান কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে নেই।’ এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, সত্যি কি জুমুয়ার ছানী আযানের কথা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে নেই? আর যদি থেকে থাকে তবে তার দলীল পেশ করে আমাদেরকে বাধিত করবেন? জাওয়াবঃ জুমুয়ার ছানী আযান সম্পর্কিত ইমাম ছাহেবের উক্ত বক্তব্য সত্য ও সঠিক নয়। বরং সত্য ও সঠিক ফতওয়া হলো, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে অবশ্যই জুমুয়ার ছানী আযানের কথা উল্লেখ আছে। তাছাড়া শুধুমাত্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফই শরীয়তের দলীল নয়। শরীয়তের দলীল হচ্ছে চারটি। যেমন, এ প্রসঙ্গে “নূরুল আনওয়ার” কিতাবে উল্লেখ আছে,
اصول الشرع ثلاثة القران والحذيث والاجماع ورابعها القياس.
অর্থঃ- “শরীয়তের উছূল বা দলীল হচ্ছে, চারটি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস।” স্মর্তব্য যে, জুমুয়ার ছানী আযান শুধু কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত নয় বরং তার সাথে সাথে ইজমা ও ক্বিয়াস বা ফিক্বাহের কিতাব দ্বারাও প্রমাণিত রয়েছে। নিম্নে জুমুয়ার ছানী আযান সম্পর্কিত দলীল-আদিল্লাহ সমূহ সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো- কুরআন শরীফ থেকে দলীল মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
يايها الذين امنوا اذا نودى للصلوة من يوم الجمعة فاسعوا فاسعوا الى ذكر الله.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! যখন জুমুয়ার দিন নামাযের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহ পাক-এর যিকিরের দিকে ধাবিত হও।” (সূরা জুমুয়া/১) এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে যে,
وقد كان الاذان على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم كما فى سائر الصلوات يؤذن واحد اذا جلس النبى على المنبر وكذالك كان يفعل ابو بكر وعمر رضى الله عنهما ثم زاد عثمان رضى الله عنه اذانا ثانيا يؤذنون بمدينة السلام وبعد اذان المنار بين يدى الامام تحت المنبر.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় জুমুয়ার দিন পাঁচ ওয়াক্ত আযানের ন্যায় একটি মাত্র আযানই প্রচলিত ছিল, যা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরে বসার পর দেয়া হতো। অনুরূপভাবে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ওমর ইব্নুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। অতঃপর হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মদীনায় দ্বিতীয় আরেকটি আযান বৃদ্ধি করেন এবং দ্বিতীয় আযানটি অর্থাৎ মিনারের আযানের পর ইমামের সম্মুখে, মিম্বরের নিকট প্রথম আযান দেয়া শুরু করেন।” (তাফসীরে আহ্কামুল কুরআন লিলকুরতুবী ১৮জিঃ পৃঃ১০০)
وقد كان لرسول الله صلى الله عليه وسلم مؤذن واحد فكان اذا جلس على المنبر اذن على باب المسجد فاذا انزل رسول الله صلى الله عليه وسلم اقامة الصلاة ثم كان ابو بكر وعمر على ذالك حتى اذا كان عثمان وكثر الناس زاد مؤذنا اخر فامر بالتأذين الاولى على داره التى تسمى زوراء فاذا جلس على المنبر اذن مؤذن الثانى بين يدى المنبر.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামল মরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় একটিমাত্র আযান প্রচলিত ছিল, যা তিনি মিম্বরে বসার পর দরজায় দেয়া হতো। অতঃপর যখন তিনি মিম্বর হতে নামাযের জন্য দাঁড়াতেন, তখন নামাযের জন্য ইক্বামত দেয়া হতো। অনুরূপভাবে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ওমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পর্যন্ত একটিমাত্র আযানই প্রচলিত ছিল। হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খিলাফতে আসীন হবার পর জনসংখ্যার আধিক্যের কারণে দ্বিতীয় আরেকটি আযান (বর্তমানে প্রথম আযান) বৃদ্ধি করেন, অতঃপর প্রথম আযানটি “যাওরা” নামক স্থানে দেয়ার হুকুম দেন ও দ্বিতীয় আযানটি মিম্বরে বসার পর মিম্বরের সম্মুখে দেয়ার আদেশ দেন।” (তাফসীরে রুহুল মায়ানী, ১৪জিঃ পৃঃ৯৮) এছাড়াও আরো বহু বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরে “ছানী আযানের” কথা উল্লেখ আছে। অতএব, প্রমাণিত হলো যে, কুরআন শরীফেই ছানী আযানের কথা উল্লেখ আছে। হাদীছ শরীফ থেকে দলীল এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن السائب بن يزيد قال كان الاذان على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم وابى بكر وعمر اذا خرج الامام واذ اقيمت الصلاة فلما كان عثمان زاد النداء الثالث على الزوراء.
অর্থঃ- “হযরত সাইব ইব্নে ইয়াযীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আবু বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ওমর ইব্নুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সময় একটি মাত্র আযানের প্রচলন ছিল। আর তা ইমাম (হুজরা) হতে বের হলে দেয়া হতো। এর পর (খুৎবা পাঠ করার পর) নামাযের জন্য ইক্বামত দেয়া হতো, অতঃপর হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (খেলাফতে আসীন হবার পর) “যাওরা” নামক স্থানে তৃতীয় আযান বৃদ্ধি করেন। (উল্লেখ্য হাদীছ শরীফের রাবীগণ ইক্বামতকেও আযান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাই হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর আযানকে তৃতীয় আযান বলেছেন) ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি এ হাদীছ শরীফকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। শব্দের সামান্য তারতম্য করে ইমাম বুখারী, ইমাম আহমদ ইব্নে হাম্বল, ইমাম আবু দাউদ, ইমাম নাসাঈ, ইমাম বায়হাক্বী, ইমাম ইব্নে মাজা রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত হাদীছ শরীফখানা স্ব স্ব কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
والظاهر انه كان لمطلق الاعلام لخصوص الانصات نعم لمازيد الاذان الاول كان الذى يدى الخطيب للانصات.
অর্থঃ- “প্রকাশ থাকে যে, নিশ্চয় (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়কার) আযান সাধারণতঃ মানুষদেরকে নামায ও খুৎবার সংবাদ জানানোর জন্যই দেয়া হতো। (তাই ওটা মসজিদের বাইরে দেয়া হতো, যাতে সকলে নামায ও খুৎবায় অংশ গ্রহণ করতে পারে) যখন ওটার পূর্বে আরো একটি আযান বৃদ্ধি করা হলো, তখন খতীবের সামনের আযানটি মূলতঃ মসজিদে উপস্থিত লোকদের চুপ হবার উদ্দেশ্যে দেয়া হয় (তাই সানী আযান মসজিদের ভিতরেই দেয়া হয়)।” (ফতহুল বারী শরহে বুখারী জিঃ২ পৃঃ৩৯৩, এলাউস সুনান জিঃ৮ পৃঃ৬৯)
كان الاذان فى عهد النبى صلى الله عليه وسلم وصاحبيه واحدا ولعله كان خارج المسجد فاذا كثر الناس زاد عثمان رضى الله عنه اذانا اخر على “الروراء” خارج المسجد ايمتنع الناس عن البيع والشراء والظاهر ان الاذان الثانى هو الاول انتقل الى داجل المسجد.
অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুরু করে হযরত ওমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফতকাল পর্যন্ত একটিমাত্র আযানই প্রচলিত ছিল, আর সম্ভবত তা মসজিদের বাইরে দেয়া হতো, অতঃপর হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মসজিদের বাইরে ‘যাওরা’ নামক স্থানে আরেকটি আযান বৃদ্ধি করেন, যাতে করে মানুষ আযান শুনে বেচা-কেনা বন্ধ করে (নামাযে অংশ গ্রহণ করতে পারে)। প্রকাশ থাকে যে, ছানী আযান যা মুলে প্রথম আযান ছিল, তা (মসজিদের বাহির হতে) স্থান পরিবর্তন করে মসজিদের ভিতরে নিয়ে আসা হয়।” (ফয়জুল বারী শরহে বুখারী জিঃ২ পৃঃ৩৩৫)
المشهور ان الاذان فى عهد النبى صلى الله عليه وسلم كان واحد اوخارج المسجد عند الشروع فى الخطبة وكذالك فى عهد الشيخين ثم قرر عثمان اذانا اخر قبل الشروع فى الخطبة خارج المسجد على الزوراء حين كشر المسلمون وهذ الاذان كان قبل الاذان بين يدى الخطيب بعد الزوال فالتقل الاذان الذى كان فى عهده عليه السلام الى داخل المسجد هذا هو الصحيح.
অর্থঃ- জুমুয়ার ছানী আযানের ব্যাপারে সবচেয়ে অধিক প্রসিদ্ধ বর্ণনা এই যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হযরত ওমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পর্যন্ত জুমুয়ার জন্য একটিমাত্র আযানই প্রচলিত ছিল, যা খুৎবা শুরু করার সময় মসজিদের বাইরে দেয়া হতো। অতঃপর হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সময় যখন মদীনায় মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তখন খুৎবার আযানের পূর্বে ‘যাওরা’ নামক স্থানে আরেকটি আযান বৃদ্ধি করেন। আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়কার আযানটি (বর্তমানের ছানী আযান) স্থান পরিবর্তন করে মসজিদের বাহির থেকে ভিতরে নিয়ে আসেন, আর এ বর্ণনাটিই সবচেয়ে অধিক সঠিক ও বিশুদ্ধ বর্ণনা।” (আল আরফুশ শাজী শরহে তিরমিযী জিঃ১ পৃঃ১১৬) এছাড়াও আরো বহু হাদীছ শরীফ ও তার ব্যাখ্যাগ্রন্থ সমূহে ছানী আযানের কথা উল্লেখ আছে। অতএব, সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, ছানী আযান হাদীছ শরীফে রয়েছে। উক্ত ইমাম যেহেতু গ-মূর্খ তাই সে “ছানী আযান” কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে খুজে পায়না। ফিক্বাহ্র কিতাব থেকে দলীল বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহের কিতাব সমূহে উল্লেখ আছে যে,
واذا صعد الامام المنبر وجلس ويؤذنون ثانيا بين يدى الخطيب.
অর্থঃ- “ইমাম যখন মিম্বরে উঠে বসবেন, তখন মুয়াজ্জিন খতীবের সামনে আযান দেবে।” (কাজেই খতীবের সম্মুখে আযান দেয়ার অর্থ হলো মসজিদের ভিতরে আযান দেয়া)। (হিদায়া জিঃ১ পৃঃ১৫৪, রদ্দুল মুহতার জিঃ১ পৃঃ৭৭০, আইনী শরহে হেদায়া জিঃ১ পৃঃ১০১৪, আল জাওহারাতুন নাইয়ারা পৃঃ১১৮)
اذان الثالى الذى يكون بين يدى المنبر لانه لم يكن فى زمنه عليه السلام.
অর্থঃ- “ছানী আযান যা মিম্বরের সম্মুখে বা সন্নিকটে দেয়া হয়, কেননা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় এটা ছিলনা।” (বাহরুর রায়িক জিঃ২ পৃঃ১৫৬, হিদায়া মায়াদ্দেরায়া জিঃ১ পৃঃ১৭১)
وقال ابو جعفر الطحاوى الحنفى وكان المعتبر هو الاذان الثانى عند المنبر بين يدى الخطيب.
অর্থঃ- “হানাফী মায্হাবের একজন শ্রেষ্ঠ ইমাম হযরত আবু জাফর তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, নির্ভরযোগ্য মত হলো- জুমুয়ার দিন খতীবের সামনে, মিম্বরের নিকট যখন খুৎবার জন্য আযান দিবে, তখন হতে মসজিদের দিকে তাড়াতাড়ী যাওয়া ওয়াজিব।” (ফাতহুল ক্বাদীর জিঃ২, পৃঃ১২০, মারাকিউল ফালাহ জিঃ২, পৃঃ২৮২)
واذاجلس على المنبر اذن ثانيا بين يديه اى المنبر.
অর্থঃ- “যখন ইমাম মিম্বরে বসবে, তখন তার সামনে অর্থাৎ মিম্বরের সম্মুখে বা সন্নিকটে ছানী আযান দিবে।” (শরহে বেক্বায়া জিঃ১ পৃঃ১৭৪, শরহে নেক্বায়া পৃঃ২৯৭, শরহে সেক্বায়া জিঃ১ পৃঃ২৮৩, ফতওয়ায়ে শরীয়ত পৃঃ৮৪, ইসলামী ফিক্বাহ জিঃ১ পৃঃ১২৯) এছাড়াও আরো বহু বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য ফিক্বাহের কিতাব সমূহে ছানী আযানের কথা উল্লেখ আছে। অতএব, আরো প্রমাণিত হলো যে, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে তো অবশ্যই রয়েছে সাথে সাথে ফিক্বাহের কিতাব সমূহেও ছানী আযানের কথা উল্লেখ আছে। ছানী আযানের উৎপত্তি ও ইতিহাস আমীরুল মু’মিনীন হযরত ওসমান ইবনে আফ্ফান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খেলাফতের পূর্বে মসজিদের ভিতরে ইমামের সম্মূখে এক্বামত ভিন্ন অন্য কোন আযানের প্রচলন ছিল না, তা ছাড়া জুমুয়ার দিন বাইরেও কোন আযান দেয়া হতো না। তখন একটি মাত্র আযান ছিল, আর ওটা দেয়া হতো মসজিদের দরজার উপর বা সন্নিকটে। এ আযানের পরেই খুৎবা পাঠান্তে এক্বামত দিয়ে নামায শুরু হয়ে যেত। এটার সীমাবদ্ধতা ছিল ২৪ হিজরী পর্যন্ত। হযরত ওসমান ইব্নে আফফান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ২৪ হিজরীর পহেলা মুর্হরম খেলাফতে আসীন হন। তিনি খলীফা হয়ে যে সকল বিধি-বিধানের প্রচলন করেন, তার মধ্যে অন্যতম জুমুয়ার নামাযে মসজিদের বাইরে মদীনা শরীফের একটি বাজারের “যাওরা” (তুলনা মুলক উঁচু) নামক স্থানে অতিরিক্ত আযানের ব্যবস্থা করা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়কালীন আযান অর্থাৎ বর্তমানের ছানী আযান মসজিদের দরজা হতে স্থানান্তরিত করে মসজিদের ভিতরে মিম্বরের নিকট খতীবের সম্মুখে দেয়ার ব্যবস্থা করা। আর এ আযানের উৎপত্তির ইতিহাস এই যে, কিছু সংখ্যক সাহাবী খলীফাতুল মুসলিমীন, হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে অবহিত করলেন যে, ব্যস্ততার কারণে অনেকের পক্ষেই আযানের পূর্বে (রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়কার আযান) মসজিদে আসা সম্ভব হয়না। তাই সতর্কতামূলক মসজিদের বাইরে আরেকটি আযানের ব্যবস্থা করা হলে কেমন হয়? তখন হযরত ওসমান ইব্নে আফফান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বুযুর্গ সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণদের নিয়ে পরামর্শ করে দ্বিতীয় আযানের ব্যবস্থা করেন। যা বর্তমানে প্রথম আযানরূপে দেখা যায়। আর রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়কার আযানকে স্থানান্তরিত করে মসজিদের ভিতরে মিম্বরের নিকট ইমামের সম্মুখে নিয়ে আসেন, তখন হতেই এটা ছানী আযান হিসেবে পরিগণিত। যেমন এ প্রসঙ্গে বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে খাযেন ও মাদারেকে উল্লেখ রয়েছে,
فلما كان عثمان وكثر الناس زاد النداء الثالى على الزوراء.
অর্থঃ- “অতঃপর হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খলীফা হওয়ার পর জনসংখ্যার আধিক্যতার কারণে ‘যাওরা’ নামক স্থানে জুমুয়ার দ্বিতীয় আযান (বর্তমানে প্রথম আযান) বৃদ্ধি করেন।” আর বুখারী শরীফের শরাহ ফয়জুল বারীতে উল্লেখ রয়েছে,
والظاهر ان الاذان الثانى هو الاول انتقل الى داخل المسجد.
অর্থঃ- “প্রকাশ থাকে যে ছানী আযান, যা প্রথম আযান ছিল (দরজার উপর দেয়া হতো)। অতঃপর স্থান পরিবর্তন করে মসজিদের ভিতরে নেয়া হয়।” অনুরূপ তিরমিযী শরীফের শরাহ্ “আল আরফুশ শাযীতে”ও উল্লেখ আছে। অতএব, প্রমাণিত হলো যে, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্বয়ং নিজেই জুমুয়ার দিনে অতিরিক্ত একটি আযানের প্রবর্তন করেন এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়কার দরজার আযানকে স্থানান্তরিত করে মসজিদের ভিতর মিম্বরের নিকট খতীবের সম্মুখে নিয়ে আসেন। ছানী আযান অস্বীকার করা কুফরী। কারণ এর উপর ইজমায়ে আযীমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়,
الاذان الثالث هو الاول وجودا اذا كانت مشروعيته باجتهاد عثمان وموافقه سائر الصحابة له بالسكوت وعدم الانكار فصار اجماعا.
অর্থঃ- “তৃতীয় আযান, এটাই মুলতঃ প্রথম আযান, (তৃতীয় এ জন্য বলা হয় যে, ইক্বামতকেও আযান বলা হয়) যা হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ইজ্তিহাদের দ্বারা সাব্যস্ত করা হয়। (যখন হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দ্বিতীয় আরেকটি আযানের প্রচলন করেন) তখন প্রায় সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণই তা জ্ঞাত ছিলেন। কেউ এটার ব্যপারে প্রতিবাদ না করার কারণে এর উপর ইজ্মা তথা ইজ্মায়ে আযীমত প্রতিষ্ঠিত হযে যায়। (আইনী শরহে বুখারী, হাশিয়ায়ে আবু দাউদ) অতএব, খোলাফা-ই-রাশেদীন বা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের উদ্ভাবিত কোন বিষয় অনুসরণ করা আমাদের জন্য সর্বতোভাবেই ওয়াজিব, যেমনিভাবে রাসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করা ওয়াজিব। কারণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
فعليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين المهدين.
অর্থঃ- “তোমাদের জন্য আমার ও আমার হিদায়েতপ্রাপ্ত খোলাফা-ই-রাশেদীন-এর (উদ্ভাবিত। সুন্নতকে আঁকড়িয়ে ধরা ওয়াজিব।” (মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, শরহুত্ ত্বীবী, মিরআতুল মানাজীহ্) মোটকথা হলো- মত্লক্ব আযান অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আযান ও জুমুয়ার প্রথম আযান মসজিদের বাইরে দেয়া সুন্নত, মসজিদের ভিতরে দেয়া মাকরূহ্ তান্যীহী। আর শুধুমাত্র জুমুয়ার ছানী আযান মসজিদের ভিতরে, ইমামের সম্মুখে দেয়া সুন্নতে সাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। যা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের ইজ্মা তথা ইজ্মায়ে আযীমত দ্বারা প্রমাণিত। এ ইজ্মাকে অস্বীকার করা সকলের মতেই কুফরী। উপরোক্ত বিস্তারিত ও দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, ছানী আযানের কথা শুধু কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে নয় বরং ইজমা ও ক্বিয়াস তথা ফিক্বাহের কিতাবেও রয়েছে। আর ছানী আযান মুলতঃ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ারা আনহুমগণের ইজমায়ে আযীমত দ্বারা সাব্যস্ত যা অস্বীকার করা কাট্টা কুফরী। কাজেই ‘ছানী আযান’ সম্পর্কিত ইমাম ছাহেবের উক্ত বক্তব্য শুধু ভুল ও জিহালতপূর্ণই হয় নাই বরং শরীয়ত বিরোধী ও কুফরীমূলক হয়েছে। তাই ইমাম ছাহেবের উচিৎ খাছ তওবা করা এবং মসজিদে ‘ছানী আযান’ চালু করা। {দলীলসমূহঃ (১) তাফসীরে কুরতুবী, (২) আহকামুল কুরআন জাস্সাস, (৩) মাজহারী, (৪) মুরাগী, (৫) রুহুল মায়ানী, (৬) সিরাজুম্ মুনীর, (৭) আহকামুল কুরআন ইবনুল আরাবী, (৮) আহকামুল কুরআন শফী, (৯) কামালাঈন, (১০) মা’রিফুল কুরআন, (১১) তিরমিযী শরীফ, (১২) বুখারী শরীফ (১৩) আবূ দাঊদ শরীফ, (১৪) মুসনাদে আহমদ, (১৫) বায়হাক্বী, (১৬) ফতহুল বারী, (১৭) শরহে জামিউছ্ ছহীহ, (১৮) ফয়জুল বারী, (১৯) আরফুশ্ শাযী, (২০) মিরকাত, (২১) হিদায়া, (২২) ফতহুল ক্বাদীর, (২৩) রদ্দুল মুহতার, (২৪) র্দুরুল মুখতার, (২৫) বাহরুর রায়িক, (২৬) মারাকিউল ফালাহ, (২৭) শরহে বিকায়া, (২৮) কবীরী, (২৯) ইনায়া, (৩০) কিফায়া, (৩১) ইলাউস্ সুনান ইত্যাদি} যেসব মাওলানা টিভি চ্যানেলে গ্রোগ্রাম করে তারা দুনিয়াদার আলিম; আল বাইয়্যিনাত-এর দেয়াল লিখনী যারা অস্বীকার করবে সঙ্গতকারণেই মাওলানা, মুফতী লক্বব তাদের ত্যাগ করতে হবে॥ মহা সম্মানিত কালামুল্লাহ শরীফের প্রথমেই মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন বলেন, “এ এমন এক কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই।” অথচ সন্দেহের ঊর্ধ্বে এই কিতাবকেও মূল্যায়ন করে না মানুষ। তন্মধ্যে এক শ্রেণী কুরআন শরীফেরই দোহাই দানকারী বা ধর্মব্যবসায়ী। এদের সম্পর্কেই আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ মান আর কিছু অংশ অস্বীকার কর?” (সূরা বাক্বারা/২৮) উদ্ধৃত আয়াত শরীফের এক সাক্ষাত উদাহরণ তৈরী করলো ‘আমার দেশ’ নামক কথিত একটি দৈনিকের ১৮ই অক্টোবর ২০০৪ তারিখের “রমযান প্রতিদিন” শীর্ষক পাতা। এ পাতায় ‘রমযান অশ্লীলতা পরিহারের মর্ম’ শীর্ষক নিবন্ধে ‘সূরা নূর’-এর ৩০-৩১নং আয়াত শরীফ, ‘সূরা আহযাব’-এর ৩৫নং আয়াত শরীফের প্রেক্ষিতে পর্দাহীনতা ও ‘সূরা আনয়াম’-এর ১৫১নং আয়াত শরীফের প্রেক্ষিতে অশ্লীলতাকে হারাম বলে তা ত্যাগ করাকে ফরয বলা হয়েছে। এমনকি কুরআন শরীফের আয়াত শরীফের উদ্ধৃতির পর মশহুর হাদীছ শরীফেরও উল্লেখ করা হয়েছে, “হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। একদা তিনি এবং হযরত মাইমুনা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে বসা ছিলেন। এমনি সময় সেখানে উপস্থিত হলেন অন্ধ ছাহাবী হযরত ইবনু উম্মে মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং তাঁর কাছে প্রবেশ করলেন। (এঘটনা আমাদের কাছে পর্দার বিধান নাযিলের পর) হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা দু’জন তাঁর থেকে পর্দা কর। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি কি অন্ধ নন? তিনি তো আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছেন না। উত্তরে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরাও কি অন্ধ? তোমরাও কি তাঁকে দেখতে পাচ্ছো না?” (আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ) উক্ত হাদীছ শরীফ থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্দার ব্যাপারে কত কঠোর ছিলেন। বলাবাহুল্য, এগুলো উক্ত পত্রিকারই একটি নিবন্ধের বক্তব্য। কিন্তু এ বক্তব্যের সাথে চরম সংঘাতযুক্ত মন্তব্য একই পাতায় পত্রস্থ হয়েছে প্রশ্নোত্তর বিভাগের তথাকথিত মুফতি ছাহেবের ফতওয়া-
প্রশ্নঃ রোজা রেখে টিভি দেখলে রোজা হাল্কা হয় না কি? ব উত্তরঃ টিভির ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপভোগ করা নিঃসন্দেহে জ্ঞানচর্চার অন্তর্ভুক্ত একটি বিষয়। রোজা অবস্থায় চক্ষু, জিহবা ও হাত-পাকে রোজার সঙ্গে সম্পৃক্তকরণ একটি জরুরী বিষয়। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের রোজা সর্বাঙ্গ দিয়ে পালিত হয়ে থাকে। অতএব অশ্লীল ছবি দর্শনে রোজার কিছুটা ক্ষতি হওয়াই স্বাভাবিক। প্রদত্ত উত্তরের একটি দিক প্রথমতঃ উদঘাটন করছি। একই পাতায় মন্তব্য করা হয়েছে যে, অশ্লীলতা খুবই নিকৃষ্ট হারাম। আল্লাহ পাক তার ধারে কাছে যেতেও সরাসরি নিষেধ করেছেন। মুসলমান হিসেবে আল্লাহ পাক-এর আদেশ সরাসরি অমান্য করা কঠিন হারাম। পাশাপাশি অন্ধের সাথে পর্দার দৃষ্টান্তও তুলে ধরা হয়েছে। সুতরাং টিভি সিনেমাতে যে ছবি প্রদর্শিত হয় তাতে ছেলেরা যে মেয়েদের দেখে আর মেয়েরা ছেলেদের দেখে তাতে পর্দার কি বালাই থাকে? বরং ইসলামের হুকুম মতে প্রতি মুহুর্তে তখন অগণিত ব্যভিচার বা চোখের যিনা হয়ে থাকে। সেখানে তথাকথিত এই মুফতী কি করে বলতে পারলেন যে, ‘অতএব অশ্লীল ছবি দর্শনে রোজার কিছুটা ক্ষতি হওয়াই স্বাভাবিক।’ মূলতঃ তার এ মন্তব্য থেকে কয়েকটি বিষয় প্রতিভাত হয়- (ক) ক্ষতি হওয়া স্বাভাবিক কিন্তু ক্ষতি না হলেও, হতে পারে। (খ) তিনি বলেছেন, অশ্লীল ছবি দর্শনে কিন্তু কতটা দর্শনে? তা তিনি বলেননি। তিনি যদি বলতেন এক সেকেন্ড বা এক মিনিট বা এক ঘন্টা তাহলেও একটা মাত্র থাকত। কিন্তু তার বাক্যের মধ্যে কোন মাত্রা নেই। তাহলে সুবহে সাদিক থেকে ইফতারী পর্যন্ত অশ্লীল ছবি দর্শন করা হয় তবে তাও তার বিবৃত ঐ কিছুটা ক্ষতির মধ্যেই নির্দিষ্ট থাকে। কিন্তু কুরআন-সুন্নাহ্য় কি বলা হয়েছে? হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, এমন অনেক রোজাদার আছে যাদের ক্ষুধা-পিপাসাই সার হয়। তাদের ফাসিকী কাজের জন্য রোজা তাদের কোন উপকারই আসে না। আর অন্য হাদীছ শরীফে সরাসরি ইরশাদ হয়েছে, যে রোজা রাখলো কিন্তু অশ্লীলতা ত্যাগ করতে পারলো না তার রোজা রাখার কোনই দরকার নেই। এতদ্বপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন দাঁড়ায় যে, তাহলে মুফতে ছাহেব কি আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী মানেন না? তাঁর হাদীছ শরীফকে বিশ্বাস করেন না? নাকি তিনি নিজেই নিজেকে বর্তমানে যুগের নবী দাবী করেন, তথাকথিত মুফতীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এ প্রশ্নগুলোই জোরদারভাবে প্রযোজ্য হয়। মুফতে ছাহেব নিজেকে খুব আপটুডেট ভাবেন। শাশ্বত ইসলামকে মনে করেন ব্যাকডেটেড। পরের এক প্রশ্নোত্তরে তিনি বলেন, ে “প্রশ্নঃ রমজানে টিভিতে অনেক ভালো অনুষ্ঠান হয় যা আমি দেখি। কিন্তু ঢাকার বিভিন্ন দেয়ালে লেখা রয়েছে দেখলাম, “যে আলিম টিভিতে অনুষ্ঠান করে তারা দুনিয়ার আলিম”- এ ব্যাপারে জানতে চাই। ব উত্তরঃ একথাটি শুদ্ধ নয়, বরং জ্ঞানচর্চার বর্তমান অত্যাধুনিক মাধ্যম হলো মিডিয়া। সেক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আলেমদার অংশগ্রহণ, ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের ও আলেমদের মুখ নিঃসৃত দিক-নির্দেশনামূলক আলোচনা শ্রবণ এবং জীবনঘনিষ্ঠ ধর্মীয় বিষয়ের আলোচনা টিভিতে আসা দোষের কিছু নয়।” মুফতে ছাহেবের এই দ্বিতীয় উত্তরে প্রতিভাত হয় যে, তিনি শুধু নিজেকে মডার্নই প্রতিপন্ন করতে চাননা বরং আলট্রা মডার্ন হিসেবে স্বীকৃতি পেতে চান। তিনি বলেছেন, “জ্ঞানচর্চার বর্তমান অত্যাধুনিক মাধ্যম হলো মিডিয়া।” সেক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আলেমদের অংশগ্রহণ, ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের ও আলেমদের মুখ নিঃসৃত দিক-নির্দেশনামূলক আলোচনা শ্রবণ এবং জীবনঘনিষ্ঠ ধর্মীয় বিষয়ের আলোচনা টিভিতে আসা দোষের কিছু নয়।” মূলতঃ মুফতে ছাহেবের একথাগুলোই যে কত দোষের তা তার মোহগ্রস্থ দিলে তিনি বুঝে উঠতে পারেননি। আলট্রা মর্ডাণ সাজার মোহ, পরিচিতি পাবার মোহ, খ্যাতি পাবার মোহ, পদ পাবার মোহ, অর্থ ও যশ হাছিলের মোহ সর্বোপরি নফসে আম্মারার মোহ থেকে যদি তিনি মুক্ত হতে পারতেন; তাহলে তিনি নিজেও উপলব্ধি করতে পারতেন যে, কত মারাত্মক নাফরমানী ও গোমরাহী প্রকাশিত হয়েছে তার এ বক্তব্যের মাধ্যমে। প্রথমতঃ তিনি অত্যাধুনিকতার দোহাই দিয়েছেন। অথচ ইসলাম পরিপূর্ন ও চিরন্তন দ্বীন। যুগের আবহে ও দাবীতে ইসলামী অনুশাসনের পরিবর্তন হয়না। যুগের আবহে ইসলামী অনুশাসনে যদি পরিবর্তনের হাওয়াকে গ্রহণ করতে হয় তবে পরিবর্তনের দোলায় গোটা ইসলামই নড়ে যাবে।
ওযু প্রথা থাকবে না, বলা হবে, আগের দিনের মানুষ ঘর্ম-কর্দমাক্ত থাকত। এখন এয়ার টাইটরূমে এ.সি-এর মধ্যে থাকলে ওযুর প্রয়োজন হয়না।
সূরা ফাতিহা মানে দোয়া। গোটা নামাযও তাই। কাজেই এভাবে পুরোনো কায়দায় নামায না পড়ে বসে দিনে বা সপ্তাহে একবার দোয়া করলেই হবে। তাতে ঝামেলাও কমবে। সময়ও বাঁচবে। মানুষ শ্রম বেশী দিতে পারবে। অর্থনীতি দৃঢ় হবে, আধুনিক ইউরোপ আমেরিকার মত সাপ্তাহিক প্রার্থনার সাথে মিল হবে। কষ্ট করে টাকা ব্যয় করে হজ্ব করতে যাওয়ার দরকার নেই। টিভিতে হজ্বের সম্প্রচার দেখে বা ভিডিও অন করে তলবিয়া পাঠ করলেই চলবে।
আর আধুনিক যুগে যেহেতু ট্যাক্স দিতেই হয় সুতরাং যাকাত দেয়ার প্রয়োজন অবশিষ্ট থাকেনা।” মূলতঃ আধুনিকতা তথা উত্তর আধুনিক মানসিকতাকে যদি মূল্যায়ন করতে হয় তাহলে তার প্রবাহ পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে এটি তার একটি উদাহরণ মাত্র। সবচেয়ে মজার কথা হচ্ছে যে, মুফতে ছাহেব এই যে, মুফতী শব্দটি ধারণ করে আছেন, একটি মাদ্রাসার সাথে সম্পৃক্ত আছেন এ দু’টোই কিন্তু কথিত আধুনিকাতার প্রেক্ষিতে একেবারে অচল শব্দ এবং অনেকটা বিদ্রুপজনিত বিষয়। কারণ আধুনিকতা- মুফতি, মাওলানা এসবকে তাচ্ছিল্য ভরে প্রত্যাখান করে। সাথে সাথে মাদ্রাসার কথা বললে সব আধুনিকরাই নাক সিঁটকান। সুতরাং আধুনিকতার প্রবাহে চলতে চাইলে এ দুটোর পাশাপাশি তাকে তার বেশ-ভূষাও খুলে ফেলতে হবে। তার মুখাবয়বে ধারণকৃত দাড়িগুলোও মুণ্ডিত করতে হবে। পরতে হবে স্যুট-কোট-টাই। কাজেই মুফতে ছাহেব যে অত্যাধুনিকতার দোহাই দিয়েছেন তার পরিণতিতে যে তাকে আধুনিকতার মানদণ্ডে কথিত আলখেল্লা ছেড়ে সুটেড-বুটেড হতে হবে সে চিন্তা তার মাথায় ছিল কি? মূলতঃ মুফতে ছাহেব নিজেকে নিয়ে খুব হামবড়া করলেও আসলে তার ইল্ম, আমল ও ইখলাছের পরিধি খুবই নাজুক। মাত্র দু’চারটা কথাতেই তার গভীরতার ব্যাপ্তি ধরা পড়েছে। এজন্য ফার্সীতে প্রবাদ রয়েছে, “মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত কথা না বলে ততক্ষণ তার দোষত্রুটি চুপিয়ে থাকে।” (ইনশাআল্লাহ চলবে)