সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১৩৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

 মাওলানা মুহম্মদ আযীযুল হক জামী, সুনামগঞ্জ মুহম্মদ আযীযুল হক বেলাল,

চাপাইনবাবগঞ্জ মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান, চট্টগ্রাম

সুওয়ালঃ আপনাদের ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ’ পত্রিকায় মতামত বিভাগে উসামা বিন লাদেন, মোল্লা উমরকে সি.আই.এ-এর এজেন্ট, মুনাফিক ইত্যাদি বলা হয়েছে। অথচ অনেকেই তাদেরকে ওলীআল্লাহ, আমীরুল মু’মিনীন, বিশ্ব মুসলিম নেতা ইত্যাদি মনে করে থাকে। এখন আমরা কোন্টা বিশ্বাস করবো?

জাওয়াবঃ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ’ পত্রিকায় যা লিখা হয় তা দলীলভিত্তিক এবং সঠিকই লিখা হয়। মনগড়া, ধারণা বা অনুমান করে কোন কিছু লিখা হয়না। তা মতামত বিভাগে হোক কিংবা অন্য কোন বিভাগে হোক। সুতরাং যা দলীল-প্রমাণ ভিত্তিক সেটাই গ্রহণযোগ্য এবং সেটাই বিশ্বাসযোগ্য।    আর এর বিপরীতে যত কিছুই বলা হোক এবং যারাই বলুক তা কস্মিনকালেও গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য বলে বিবেচিত নয়। কারণ দলীল-প্রমাণ বিহীন ধারণা বা অনুমান করে কোন কিছু বলা ও বিশ্বাস করা সম্পূর্ণরূপে কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ এবং ক্ষেত্র বিশেষে কুফরীর শামীল।  আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

هاتوا برهانكم ان كنتم صدقين.

অর্থঃ- “তোমরা সত্যবাদী হলে দলীল-প্রমাণ পেশ কর।” (সূরা বাক্বারা/১১১) অর্থাৎ কেউ যদি তার ঈমান-আক্বীদা, আমল-আখলাক, বক্তব্য, লিখনী ইত্যাদি কোন বিষয়কে সঠিক বলে প্রমাণ করতে চায় তাহলে তাকে দলীল দিয়ে প্রমাণ করতে হবে। অন্যথায় তার দাবী গ্রহণযোগ্য হবেনা।”

قتل الخرصون.

অর্থঃ- “অনুমানকারীরা ধ্বংস হোক।” (সূরা যারিয়াত/১০)

 ان بعض الظن اثم.

 অর্থঃ- “নিশ্চয়ই কতক ধারণা গুণাহ্র কারণ।” (সূরা হুজুরাত/১২)  আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 كفى بالمرء كذبا ان يحدث بكل ما سمعه.

 অর্থঃ- “কোন ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য নিদর্শন হিসেবে এটাই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে (সত্য-মিথ্যা যাচাই-বাছাই না করে) তাই বলে বেড়ায়।” (মিশকাত শরীফ)     কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফতকালে তিনি একদা সমবেত এক মজলিসে এক ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলেন। মজলিসের কোন একজন বলে উঠলেন, ‘হে আমীরুল মু’মিনীন! আমি তাকে চিনি।’ খলীফা বললেন, ‘তুমি তাকে কিভাবে চিন? তুমি কি তার প্রতিবেশী?’ সে ব্যক্তি বললো, ‘না।’ ‘তুমি কি তার সাথে লেনদেন করেছো?’ সে ব্যক্তি বললো, ‘না।’ ‘তুমি কি তার সাথে সফর করেছো?’ সে ব্যক্তি বললো, ‘না।’ তার না সূচক উত্তর শুনে খলীফা বললেন যে, তাহলে তুমি তাকে চিননা। অর্থাৎ কেউ কাউকে চিনার জন্য, জানার জন্য উল্লিখিত তিনটি শর্তের একটি শর্ত অবশ্যই থাকতে হবে। অন্যথায় চিনার দাবী, জানার দাবী, পরিচয়ের দাবী মিথ্যা প্রতিপন্ন হবে।

কাজেই উসামা বিন লাদেন, মোল্লা উমর সম্পর্কে যে তথ্য, তত্ত্ব পরিবেশিত হয়েছে, প্রকাশিত হয়েছে, সে তত্ত্ব ও তথ্যের ভিত্তিতেই মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর মতামত বিভাগে আলোচনা এসেছে যে, উসামা বিন লাদেন, মোল্লা উমর এরা প্রত্যেকেই সি.আই.এ অর্থাৎ আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট বা সদস্য। যেমন, ইরাকের সাদ্দাম হোসেন সেও সি.আই.এ-এর এজেন্ট।

স্মরণীয়, ইহুদীদের “প্রটোকল অব ইহুদী” নামে দু’টি মাস্টার প্লান- একটা একশ’ বছরের, আরেকটা দু’শ বছরের যা পরবর্তীতে ফাঁস হয়ে যায়। তাতে তারা উল্লেখ করেছিলো যে, একশ’ বছর অথবা দু’শ বছরের মধ্যে তারা সারা বিশ্বকে দখল করে নিবে, সেখানে ইহুদী রাজ্য ক্বায়িম করবে এবং মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করে দিবে। তাদের সেই প্লান বাস্তবায়ন করার জন্য মুসলমান নামধারী মুনাফিক শ্রেণীর কিছু মুসলমান দিয়ে সেটা করবে। যেমন, ইরানের প্রেসিডেন্ট রেজা শাহ পাহলবী সে ছিল সুন্নী মুসলমান। যদিও তার আমলে কিছুটা ত্রুটি ছিল কিন্তু আক্বীদাগত দিক থেকে সে ছিল সুন্নী। সে ইরানকে সামরিক শক্তিতে এতটুকু শক্তিশালী করেছিলো, যার ফলে সে জাতিসংঘের কাছে ‘ভেটো পাওয়ার’ চেয়েছিলো। উল্লেখ্য, বিশ্বে পাঁচটি দেশের ‘ভেটো পাওয়ার’ রয়েছে, আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স। যখন রেজা শাহ পাহলবী ভেটো পাওয়ার চাইলো তখন আমেরিকা তথা ইহুদীরা দেখলো, যদি ইরানকে ‘ভেটো পাওয়ার’ দেয়া হয় তাহলে জাতিসংঘে কোন প্রস্তাব পেশ করা হলে ইরান তা অবজেকশন (বাধা) দিয়ে বন্ধ করে দিবে। তাই ইহুদীরা চিন্তা করলো যে, মুসলমানকে ‘ভেটো পাওয়ার’ দেয়া যেতে পারে না। তাহলে কি করতে হবে? ইরানকে ধ্বংস করে দিতে হবে।

 ইরানে শুরু থেকেই শিয়া ও সুন্নীদের মাঝে একটা দ্বন্দ্ব ছিলো। এটাকে ইস্যু করে আমেরিকা মনে মনে ফিকির করলো, শিয়া ও সুন্নীদের মাঝে দ্বন্দ্ব বাঁধিয়ে দিয়ে ধ্বংস করে দিতে হবে। শিয়াদের প্রধানকে বলে আয়াতুল্লাহ উযমা। তখন আয়াতুল্লাহ উযমা ছিল শরীয়ত মাদানী। আমেরিকা শরীয়ত মাদারীকে প্রস্তাব দেয় যে, তুমি আমাদের কথা মতো চলে আস আমরা তোমাকে রাষ্ট্রপ্রধান বানিয়ে দিব। কিন্তু শরীয়ত মাদারী তাতে রাজী হয়নি। তখন শিয়াদের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে খোমেনীকে তারা প্রস্তাব দিলো। খোমেনী আয়াতুল্লাহ উযমা ছিলনা বরং সে ছিল আয়াতুল্লাহ। খোমেনী তাদের সে প্রস্তাবে রাজী হয়ে গেলো। তখন আমেরিকা তাকে প্যারিসে নিয়ে লালন-পালন করিয়ে, তন্ত্র-মন্ত্র সবকিছু শিখিয়ে রেজা শাহ পাহলবীকে সরিয়ে পর্যায়ক্রমে তাকে রাষ্ট্রপ্রধান বানিয়ে দিলো।

স্মরণীয় যে, শিয়ারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া মুতাবিক কাফিরের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, তাদের অনেক কুফরী আক্বীদা রয়েছে। যেমন, শিয়ারা মনে করে থাকে, ১. তাদের ইমামদের মর্যাদা হযরত নবী-রসূল আলাইহিস্ সালামগণের এমনকি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেয়েও বেশী। (নাউযুবিল্লাহ)   ২. হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মেকদাদ ইবনুল আসওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবু জর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত সালমান ফার্সী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ব্যতীত সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ কাফির। (নাউযুবিল্লাহ) ৩. বিশেষ করে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন দুশ্চরিত্রসম্পন্ন, ক্ষমতালোভী ও মুনাফিক। যার কারণে প্রস্তাব দেয়া সত্ত্বেও তাঁদের নিকট হযরত ফাতেমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে বিবাহ্ দেয়া হয়নি। (নাউযুবিল্লাহ) ৪. উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ও হযরত হাফ্সা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হত্যাকারিনী। কারণ, তাঁরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিষ খাওয়ায়ে শহীদ করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ)   ৫. বর্তমান কুরআন শরীফ পরিবর্তিত ও বিকৃত। মূলতঃ আসল কুরআন শরীফে ১৭ হাজার আয়াত শরীফ ছিলো যেখানে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ইমামতের কথা ছিলো সেগুলো কুরআন শরীফ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। (নাউযুবিল্লাহ)

৬. মুত্য়া বা কন্ট্রাক্ট বিবাহ জায়িয তো অবশ্যই বরং মর্যাদা লাভের কারণ। হযরত ওমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এটা হারাম বলার কারণে প্রকাশ্য কুরআন শরীফের বিরোধিতা করে কাফির হয়েছেন। (নাউযুবিল্লাহ)

৭. আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদ তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসারী কোন ব্যক্তির নামায হয়নি বা হয়না। কারণ, তাঁরা নামাযে হাতের উপর হাত রাখেন ও স্বেচ্ছায় সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর আমীন বলেন এবং র্আদ বা মাটির উপর সিজ্দা করেন না। (নাউযুবিল্লাহ)

 

৮. নিজের পরিচয় বা দোষ গোপন করা এবং অপরকে ধোকা দেয়ার উদ্দেশ্যে ‘তাকিয়া’ বা মিথ্যার আশ্রয় নেয়া জায়িয। (নাউযুবিল্লাহ)   ৯. প্রাণীর ছবি আঁকা হারাম, আর তোলা জায়িয। উক্ত তোলা ছবি ঘরে রাখা ও তার উপস্থিতিতে নামায পড়াও জায়িয। (নাউযুবিল্লাহ) এমনি ধরনের আরো অনেক কুফরী আক্বীদা তারা পোষণ করে থাকে।

খোমেনীর ন্যায় একইভাবে হাফিয আল আসাদ এবং গাদ্দাফী এরা বার্থ পার্টির সদস্য, রাশিয়ানপন্থী, নাস্তিক। এদের সাথে সাদ্দামও ছিল বার্থ পার্টির সদস্য, রাশিয়ানপন্থী নাস্তিক। সাদ্দাম রাশিয়ার কাছে টাকা-পয়সা চাইলো, রাশিয়া টাকা দিতে অস্বীকার করে। তখন আমেরিকা তাকে টাকা দেয়ার প্রস্তাব পেশ করে যে, তোমার যত টাকা-পয়সা দরকার আমরা তা দিব তবে তোমাকে আমাদের শর্ত মুতাবিক কাজ করতে হবে। অর্থাৎ মিডিলিস্টে ফিৎনা সৃষ্টি করে মুসলমানদের ক্ষতি করতে হবে। তখন সে আমেরিকার শর্ত মুতাবিক ইরাক-কুয়েত এবং সৌদী আরব যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়ে কুয়েতের টাকা-পয়সা শেষ করে দিলো, সৌদী আরবের টাকা-পয়সা শেষ করে দিলো এবং ইরাক-ইরান যুদ্ধ লাগিয়ে মুসলমানের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করলো। খোমেনী ইস্রাইলের সাথে চুক্তি করে পাঁচ হাজার ছবি ইহুদীদের নিকট পাঠায়। ইহুদীরা সে ছবি নিয়ে ইরাকে এসে ইরাকের পারমাণবিক চুল্লি ধ্বংস করে। এটা সাদ্দামের সাথে চুক্তি করে তারা করেছিলো।   এখন তাদের ‘প্রটোকলে’ যেটা রয়েছে সেটা হচ্ছে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ লাগিয়ে দেয়া। যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়ে প্রথমতঃ আফগানিস্তান ধ্বংস করা এরপর দ্বিতীয়তঃ পাকিস্তানকে ধ্বংস করা। পাকিস্তানে যে পারমাণবিক চুল্লি রয়েছে সেটা ধ্বংস করা। কারণ পাকিস্তান সেখানে এটম বোমা তৈরী করেছিলো, আমেরিকা সেটা নিষেধ করেছিলো কিন্তু পাকিস্তান সেটা শুনেনি। পাকিস্তানকে বোমা ফুটাতে নিষেধ করা হয়েছিলো পাকিস্তান সেটাও শুনেনি। অর্থাৎ ইহুদীদের প্লান হচ্ছে, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ লাগিয়ে উভয় মুসলমান দেশকে ধ্বংস করা। এজন্য উসামা বিন লাদেন এবং মোল্লা উমরকে তারা নিয়োগ করেছে। যেমন, সাদ্দাম এবং খোমেনী মুসলমানদের ক্ষতি করেছে একইভাবে তারাও ক্ষতি করেছে, করে যাচ্ছে এবং করবে।           উসামা বিন লাদেন সৌদি আরবে লালিত-পালিত হয়েছে আমেরিকান কায়দায়। মোল্লা উমর সেও সি.আই.এ-এর এজেন্ট। তারা কখনই মুসলমানদের পক্ষে কাজ করবে না। যেমন, খোমেনী ও সাদ্দাম মুসলমানদের পক্ষে কাজ করেনি।

মাসিক আল বাইয়্যিনাতে উসামা বিন লাদেন, মোল্লা উমরকে যে সি.আই.এ-এর এজেন্ট, মুনাফিক ইত্যাদি বলা হয়েছে তার পিছনে আক্বলী ও নক্বলী উভয় প্রকারেরই অনেক দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে।

আক্বলী দলীল হচ্ছে সাধারণ জ্ঞানসম্মত দলীল বা দুনিয়াবী প্রমাণ। যে সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাতসহ অন্যান্য অনেক আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় পত্র-পত্রিকায়ও অনেক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। যাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, উসামা বিন লাদেন, মোল্লা উমর, সাদ্দাম এরা প্রত্যেকেই সি.আই.এ-এর এজেন্ট। আর নক্বলী দলীল হচ্ছে, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দলীল।     আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো, কেউ যদি আল্লাহ পাক-এর ওলী হন তার মধ্যে কমপক্ষে কিছু নিদর্শন থাকবে। তাহলো- (১) তিনি কোন ফরয-ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা তো তরক্ব করবেনই না এমনকি মুস্তাহাব-সুন্নত সম্পর্কেও তিনি সতর্ক থাকবেন। (২) তিনি কুফরী, শিরেকী, বিদ্য়াতী, হারাম, মাকরূহ তাহরীমী কোন কাজ তো করবেনই না, এমনকি মাকরূহ তানযীহী কাজ থেকেও সতর্ক থাকবেন।         এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা আপনার পর কার ছোহবত ইখতিয়ার করবো? উত্তরে তিনি বললেন,

 من ذكركم الله رؤيته وزاد فى علمكم منطقه وذكركم بالاخرة عمله.

 অর্থ- “যাকে দেখলে আল্লাহ পাক-এর কথা স্মরণ হয়, যার কথা শুনলে দ্বীনি ইলম্ বৃদ্ধি হয় এবং যার আমল দেখলে পরকালের আমল করতে আগ্রহ পয়দা হয়। অর্থাৎ এমন গুণসম্পন্ন ব্যক্তিই হচ্ছেন আল্লাহ পাক-এর ওলী, তাঁরই ছোহবত গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ যিনি কথা-বার্তা, আচার-আচরণ, কাজ-কর্ম, চাল-চলন, উঠা-বসা, খাওয়া-দাওয়া, ছূরত-সীরত সব দিক থেকেই আল্লাহ পাক-এর মতে মত এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পথে পথ, যিনি কোন বিষয়ে ও কোন অবস্থাতেই নফসের পায়রবী করেন না।” এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,

 ولاتطع من اغفلنا قلبه عن ذكرنا واتبع هوه وكان امره فرطا.

 অর্থঃ- “ঐ ব্যক্তির অনুসরণ করোনা যার ক্বলব আল্লাহ পাক-এর যিকির থেকে গাফিল, যে নফসের পায়রবী করে থাকে এবং যার কাজগুলি শরীয়তের খিলাফ।” (সূরা কাহফ্/২৮) অর্থাৎ ঐ ব্যক্তির কাজগুলিই শরীয়তের খিলাফ হবে যে নফসের পায়রবী করবে। আর যে নফসের পায়রবী করবে সে কখনো আল্লাহ পাক-এর ওলী হতে পারবে না। আর যে আল্লাহ পাক-এর ওলী নয়, সে কখনোই অনুসরণীয়, অনুকরণীয় নয়।    উপরোক্ত নক্বলী দলীলের আলোকে আমরা যদি উসামা বিন লাদেন, মোল্লা উমরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ বা যাচাই-বাছাই করি তাহলে আমরা কি দেখতে পাই? উল্লেখ্য, বর্তমানে আফগানিস্তানের একমাত্র আয়ের উৎস হচ্ছে মাদকদ্রব্য। সেখানে হিরোইন, আফিম ইত্যাদি তৈরী হয়ে থাকে। উসামা বিন লাদেন ও মোল্লা উমরের সময় প্রত্যেক বৎসর আফগানিস্তান দশ হাজার কোটি ডলার থেকে বিশ হাজার কোটি ডলার আয় করতো মাদকদ্রব্যের মাধ্যমে।

 শরীয়তের ফয়সালা হলো, যারা মাদকদ্রব্যের সাথে জড়িত থাকে তারা কস্মিনকালেও ওলীআল্লাহ হতে পারে না। বরং তারা ওলীউশ্ শয়তান হতে পারে। কারণ যারা মাদকদ্রব্যের সাথে সম্পৃক্ত থাকে তারা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তরফ থেকে লা’নতপ্রাপ্ত। অর্থাৎ তারা মালউন হয়ে থাকে। আর যে মালউন হয় সে রহমত থেকে বঞ্চিত হয়, আর যে রহমত থেকে বঞ্চিত হয় সে কখনও ওলী আল্লাহ হতে পারে না বরং সে ওলীউশ্ শয়তান হয়ে থাকে। এই উসামা বিন লাদেন এবং মোল্লা উমর মাদকদ্রব্যের সাথে পরিপূর্ণভাবে জড়িত ছিল। অথচ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

  عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعن الله الخمر وشاربها وساقيها وبائعها ومتباعها وعاصرها ومعتصرها وحاملها والمحمولة اليه.

 অর্থঃ- “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন যে, আল্লাহ পাক-এর লা’নত মদের উপর, মদ পানকারীর উপর, যে মদ পান করায় তার উপর, মদ বিক্রেতার উপর, মদ ক্রেতার উপর, মদ প্রস্তুতকারীর উপর, মদের পরামর্শদাতার উপর, মদ বহনকারীর উপর এবং যার জন্য বহন করা হয় তার উপর।” (ইবনে মাজাহ, আবূ দাউদ, মিশকাত)

 عن انس رضى الله تعالى عنه قال لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الخمر عشرة عاصرها ومعتصرها وشاربها وحاملها والمحمولة اليه وساقيها وبائعها واكل ثمنها والمشترى لها والمشترى له.

 অর্থঃ- “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদ সংশ্লিষ্ট দশজনের প্রতি লা’নত করেছেনঃ (১) যে মদ তৈরী করে, (২) যে মদ তৈরীর ফরমায়েশ দেয়, (৩) যে মদ পান করে, (৪) যে মদ বহন করে, (৫) যার জন্য মদ বহন করা হয়, (৬) যে মদ পান করায়, (৭) যে মদ বিক্রি করে, (৮) যে এর মূল্য ভোগ করে, (৯) যে মদ ক্রয় করে, (১০) যার জন্য মদ ক্রয় করা হয়।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

 ثلاثة قدحرم الله عليهم الجنة مدمن الخمر والعاق ولديوث.

 অর্থঃ- “আল্লাহ পাক তিন ব্যক্তির উপর জান্নাত হারাম ঘোষণা করেছেন। ১. মদ পানকারী, ২. পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং ৩. দাইয়ূছ অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজে পর্দা করেনা এবং তার অধিনস্থ মেয়েদের পর্দা করায়না।” (আহমদ) আর কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 يايها الذين امنوا انما الخمر والميسر والانصاب والازلام رجس من عمل الشيطن فاجتنبوه لعلكم تفلحون انما يريد الشيطن ان يوقع بينكم العداوة والبغضاء فى الخمر والميسر ويصدكم عن ذكر الله وعن الصلوة فهل انتم منتهون.

 অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, বলি দেয়ার বেদি, ভাগ্য নির্ধারক তীর এগুলো শয়তানের আমলের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এগুলো থেকে তোমরা বেঁচে থাক। তবেই তোমরা সফলকাম হতে পারবে। নিশ্চয়ই শয়তান চায় যে, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহ পাক-এর যিকির ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, এখনো কি তোমরা (এসব থেকে) বিরত হবে না?” (সূরা মায়িদা ৯০, ৯১)           এখানে আমেরিকার অনেকগুলো পলিসি রয়েছে। একটা পলিসি হচ্ছে, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের মাঝে যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়ে উভয় মুসলমান দেশকে ধ্বংস করা। আরেকটা হচ্ছে, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে মাদকদ্রব্য পাচার করে মুসলমান যুবক সমাজের স্বভাব-চরিত্র নষ্ট করে দেয়া। বাস্তবে পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম দেশসমূহে ও আমাদের দেশেও তাই দেখা যাচ্ছে।

অতএব, উপরোক্ত কুরআন-সুন্নাহ্র দলীলের দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো, যারা মাদকদ্রব্যের সাথে জড়িত তারা আল্লাহ পাক ও আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পক্ষ হতে লা’নতপ্রাপ্ত এবং তাদের জন্য জান্নাত হারাম।        একইভাবে এটাও প্রমাণিত হলো যে, উসামা বিন লাদেন, মোল্লা উমর মাদকদ্রব্যের সাথে জড়িত থাকার কারণে তাদের উপরও একই হুকুম বর্তাবে। তাহলে তারা কি করে ওলীআল্লাহ হতে পারে? বরং তারা ওলীআল্লাহ নয় তারা ওলীউশ্ শয়তান। আর আক্বলী দলীলের দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, এরা চরম মুনাফিক ও মুসলমানের শত্রু এবং এরাই সি.আই.এ-এর এজেন্ট।        {দলীলসমূহঃ (১) আহকামুল কুরআন, (২) কুরতুবী, (৩) মাযহারী, (৪) খাযেন, (৫) বাগবী, (৬) রুহুল মায়ানী, (৭) রুহুল বয়ান, (৮) কুরতুবী, (৯) তাবারী, (১০) ইবনে কাছীর, (১১) বুখারী, (১২) মুসলিম, (১৩) আবূ দাউদ, (১৪) তিরমিযী, (১৫) আহমদ, (১৬) নাসাঈ, (১৭) ইবনে মাজাহ, (১৮) মিশকাত, (১৯) ফতহুল বারী, (২০) উমদাতুল ক্বারী, (২১) ফতহুল মুলহিম, (২২) মিরকাত, (২৩) আশয়াতুল লুময়াত, (২৪) লুময়াত, (২৫) ত্বীবী, (২৬) তালীকুছ ছবীহ, (২৭) মুযাহিরে হক্ব (২৮)

**.

সহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েব সাইট ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাসমূহ।}

মুহম্মদ আলী হায়দার আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।

সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা জানুয়ারী,ফেব্রুয়ারী,মে/২০০৪ ঈসায়ী সনে পরপর তিনটি সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে ফতওয়ায়ে শামী, আলমগীরী, বাহরুর রায়িক, হিন্দিয়া, তাতারখানিয়া, ইত্যাদি কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “সানি জামাআত করা জায়েয নেই …।” …নির্ভরযোগ্য উক্তি অনুযায়ী সানী বা দ্বিতীয় জামায়াত করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী…।”       আর আপনারা মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় লিখেছেন, জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয এবং সকল ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ঐক্যমতে জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহ্রীমী নয়; যদি জামায়াত প্রথম ছূরতে না হয়। কোনটি সঠিক?      দয়া করে দলীল-আদিল্লাহসহ বিস্তারিতভাবে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য জাওয়াব দানে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ মহল্লা বা জামে মসজিদে (অর্থাৎ যেসব মসজিদে ইমাম-মুয়ায্যিন ও জামায়াত নির্ধারিত আছে এবং নির্দিষ্ট সময়ে জামায়াত কায়িম হয় সেসব মসজিদে একবার জামায়াত হওয়ার পর)  সানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর মাধ্যমে যা জানতে পেরেছেন সেই ফতওয়াই সঠিক, নির্ভরযোগ্য, দলীলভিত্তিক এবং গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত। পক্ষান্তরে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং ফতওয়াগ্রাহ্য মতের বিপরীত। শুধু তাই নয়। বরং হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার মৌলভী ছাহেবরা মহল্লা বা জামে মসজিদে সানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করার বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়ে শক্ত গুণাহ্র কাজ করেছে। কেননা সঠিক, গ্রহণযোগ্য ও বিশুদ্ধ ফতওয়া মুতাবিক জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহরীমী নয়। এটাই ترجيح (তারজীহ্) বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়া। আর ترجيح (তারজীহ্) বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়ার বিপরীত ফতওয়া দেয়া সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়িয।

উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা কিতাবের নাম দিয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। বরং তার সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ, তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে মনগড়া বক্তব্য প্রদান করেছে এবং ক্ষেত্র বিশেষ নিজের ভ্রান্ত মতকে টিকিয়ে রাখতে কিতাবের ইবারত  কারচুপি করে ফতওয়ায়ে শামী, আলমগীরী, বাহরুর রায়িক, হিন্দিয়া, তাতারখানিয়া, ইত্যাদি  কিতাব”-এর বরাত দিয়ে যেটা বলতে চেয়েছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। আমরা পর্যায়ক্রমে সেটা তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ্।    (ধারাবাহিক)   উল্লেখ্য, হাটহাজারীর অখ্যাত মাসিক পত্রিকার মৌলভী ছাহেবরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে      দলীল হিসাবে ফতওয়ায়ে শামী, আলমগীরী, বাহরুর রায়িক, হিন্দিয়া, তাতারখানিয়া, ইত্যাদি কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “সানি জামাআত করা জায়েয নেই …।” …নির্ভরযোগ্য উক্তি অনুযায়ী সানী বা দ্বিতীয় জামায়াত করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী…।”        হাটহাজারীদের উক্ত বক্তব্য যে, সম্পূর্ণ ভুল ও ধোকাপূর্ণ। তা আমরা আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” এর বিগত সংখ্যাগুলোতে ফতওয়ায়ে শামী, আলমগীরী, বাহরুর রায়িক, হিন্দিয়া, তাতারখানিয়া, ইত্যাদি  কিতাব”-এর বক্তব্য বিস্তারিত ভাবে বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে প্রমাণ করেছি যে, তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, জিহালতপূর্ণ, জালিয়াতী, প্রতারণামূলক ও ধোকাপূর্ণ। কারণ হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে।

শুধু তাই নয়, বরং ফতওয়ায়ে শামী, আলমগীরী, বাহরুর রায়িক, হিন্দিয়া, তাতারখানিয়া, ইত্যাদি   কিতাবেই উল্লেখ আছে, মহল্লা বা জামে মসজিদে  পুনরায়   আযান ব্যতীত যদি  দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করে, তাহলে সকলের ইজমা বা ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয। এই হুকুম রাস্তার মসজিদের জন্যও প্রযোজ্য।

সুতরাং পাঠকের সুবিধার্থে  মহল্লা বা জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয  এবং সকল ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ঐক্যমতে মহল্লা বা জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহ্রীমী নয়; যদি দ্বিতীয় জামায়াত প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয়। এ সম্পর্কিত নির্ভরযোগ্য, সঠিক, গ্রহণযোগ্য, বিশুদ্ধ এবং ترجيح (তারজীহ্) বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়াটি  উক্ত কিতাবগুলো থেকে প্রমাণ স্বরূপ শুধুমাত্র শামী কিতাবের ইবারত আবারো তুলে ধরা হলো। যেমন, “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 اذا لم تكن الجماعة على الهيئة الأولى لاتكره والا تكره وهو الصحيح وبالعدول عن المحراب تختلف الهيئة كذا فى البزازية انتهى وفى التاترخانية عن الولوالجية وبه ناخذ.

 অর্থঃ- “সানী বা দ্বিতীয় জামায়াত যদি প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয়। (প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হওয়ার অর্থ হলো দ্বিতীয় জামায়াতের জন্য আযান ও ইক্বামত হবেনা। ইমামের নির্ধারিত স্থানে তথা মেহরাবে দাঁড়াতে পারবেনা।) তাহলে সানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ্ হবেনা। অন্যথায় মাকরূহ্ হবে। আর وهو الصحيح. এটাই ছহীহ্ ও বিশুদ্ধ ফতওয়া। আর মেহরাব থেকে সরে দাঁড়ানোই হলো প্রথম ছূরতের বিপরীত।” অনুরূপ বায্যাযীয়া কিতাবেও উল্লেখ আছে। আর তাতারখানিয়া কিতাবে ওয়ালওয়ালিজীয়া কিতাব থেকে উল্লেখ আছে যে وبه نأخذ এটাই আমরা গ্রহণ করেছি।

  “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, আযান-ইক্বামত ব্যতীত সানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করলে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে না। বরং সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ইজমা বা ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয। যেমন, “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫৫৩ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

ولو كرر أهله بدونهما …. جاز اجماعا.

অর্থঃ- “যদি মহল্লার মসজিদের অধিবাসীগণ আযান-ইক্বামত ব্যতীত সানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত করে, তাহলে সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের اجماع (ইজমা) বা ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয। “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩৯৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

  ان الصحيح انه لايكره تكرار الجماعة اذا لم تكن على الهيئة الاولى.

 অর্থঃ- “নিশ্চয়ই (الصحيح) ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ মত এই যে, দ্বিতীয় জামায়াত যদি প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয় তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ্ হবেনা। অর্থাৎ প্রথম জামায়াতের মত আযান ও ইক্বামত না দিয়ে এবং ইমামের নির্ধারিত স্থানে অর্থাৎ মেহরাবে না দাঁড়িয়ে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ্ হবে না। এটাই ছহীহ্ মত।” “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩৭৭ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

       لايكره تكرار الجماعة فى مسجد واحد.

 অর্থঃ- “একই মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ হবেনা।”  এছাড়াও নিম্নে সর্বজনমান্য, বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাব থেকে দলীল পেশ করা হলো- যেমন “জাওহারাতুন নাইয়ারাহ” কিতাবের ৭৬ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

  وفى شرح المنية اذا لم تكن الجماعة على الهيئة الاولى لاتكره والا تكره وهو الصحيح وبالبول عن المحراب تختلف الهيئة كذا فى البزازية.

 অর্থঃ- “শরহুল মুনিয়ায়” উল্লেখ আছে, যদি প্রথম জামায়াতের ছূরতে দ্বিতীয় জামায়াত না হয় তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ্ হবে না। (প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হওয়ার অর্থ হলো, দ্বিতীয় জামায়াতের জন্য আযান ও ইক্বামত হবেনা, ইমামের নির্ধারিত স্থানে অর্থাৎ মেহরাবে  দাঁড়াতে পারবেনা, তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ হবে না) অন্যথায় মাকরূহ হবে। আর وهو الصحيح এটাই ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ ফতওয়া। আর মেহরাব থেকে সরে দাঁড়ানোই হলো প্রথম ছূরতের বিপরীত।” অনুরূপ “বায্যাযীয়ায়” উল্লেখ আছে। “আইনুল হিদায়া” কিতাবের নিছফে আউয়াল খণ্ডের ৫৬৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, উর্দূ কম্পোজ করতে হবে  অর্থঃ- “মহল্লার মসজিদে আযান ও ইক্বামত ব্যতীত দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করলে, সকলের  ইজমা বা ঐক্যমতে মাকরূহ্ হবে না।” “ওয়ালওয়ালিজীয়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,

 ولم يقم مقام الاول وبه نأخذ.

 অর্থঃ- “দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ্ নয়। তবে প্রথম স্থানে দাঁড়ানো যাবেনা। অর্থাৎ প্রথম জামায়াতের ইমাম ছাহেব যেখানে দাঁড়িয়ে ইমামতি করেছেন দ্বিতীয় জামায়াতের ইমাম ছাহেব সেখানে দাঁড়াবেন না। বরং সেখান থেকে দূরে সরে দ্বিতীয় জামায়াতের ইমামতি করবেন। আর وبه نأخذ এটাই আমরা গ্রহণ করেছি।” “আল লুবাব লিল মায়দানী” কিতাবে উল্লেখ আছে,

 اذا لم تكن الجماعة على الهيئة الاولى لاتكره والا تكره وهو الصحيح.

 অর্থঃ- “দ্বিতীয় জামায়াত যদি প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয় তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ হবে না। (প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হওয়ার অর্থ হলো, দ্বিতীয় জামায়াতের জন্য আযান ও ইক্বামত হবেনা, ইমামের নির্ধারিত স্থানে দাঁড়াতে পারবেনা, তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করলে মাকরূহ হবে না) অন্যথায় মাকরূহ্ হবে। আর وهو الصحيح এটাই ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ ফতওয়া।” উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, বিশুদ্ধ ফতওয়া মুতাবিক মহল্লা বা জামে মসজিদে (অর্থাৎ যেসব মসজিদে ইমাম-মুয়ায্যিন ও জামায়াত নির্ধারিত আছে এবং নির্দিষ্ট সময়ে জামায়াত কায়িম হয় সেসব মসজিদে একবার জামায়াত হওয়ার পর)  সানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা  মাকরূহ্ নয় বরং জায়িয। এটাই বা ترجيح প্রাধান্যপ্রাপ্ত মাসয়ালা। আর প্রাধান্যপ্রাপ্ত মাসয়ালার বিপরীত ফতওয়া দেয়া সম্পূর্ণই নাজায়িয ও হারাম। (চলবে)  মুসাম্মত সানজিদা আক্তার সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত মুহম্মদপুর, ঢাকা    সুওয়ালঃ অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়-    জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না।  তাদের সকল আমল হবে খুবই নিখুঁত ও সুন্দর। তাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে, তাদের রোযা দেখে তোমাদের রোযাকে তোমরা তুচ্ছ ও নগণ্য মনে করবে। তাদের আমল দেখে তোমরা তোমাদের আমলকে হেয় মনে করবে, তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার নিচে যাবেনা। তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন-প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। এদলের আমল যতই তোমাদেরকে আকৃষ্ট করুক না কেন, কখনই তাদের দলে যাবেনা। কারণ প্রকৃতপক্ষে এরা হবে ইসলাম হতে খারিজ, দ্বীন হতে বহির্ভূত। তীর যেমন ধনুক হতে বের হয়ে যায় সে আর কখনও ধনুকের নিকট ফিরে আসেনা। তেমনিই এরা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে, আর কখনও দ্বীনের পথে, কুরআন ও সুন্নাহ্র পথে ফিরে আসবেনা।

আমার প্রশ্ন হল, উপরোক্ত হাদীছ ছহীহ্ কি-না? ছহীহ্ হলে এ দ্বারা উদ্দেশ্য কারা? উক্ত হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতের কোন সম্পর্ক আছে কি-না? অনেকে এই হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতকে জড়াতে চান। উক্ত হাদীসের সঙ্গে তাবলীগ জামাতকে জড়ানো সঠিক কি-না?

জবাবঃ প্রশ্নে বর্ণিত হাদীছ ছহীহ্। মুহাদ্দিছীনে কেরাম উক্ত হাদীছসহ এ জাতীয় হাদীছসমূহের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এ সব হাদীছ দ্বারা একটি নির্ধারিত জামাত বা খারিজী ফেরক্বা নামে পরিচিত তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর খিলাফত আমলে এই হাদীছসমূহের বাস্তবতা এবং খাওয়ারেজদের অবস্থার সমন্বয় ঘটেছিল। যার দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে বলা চলে যে, এ হাদীছসমূহ দ্বারা একমাত্র খাওয়ারেজদেরকেই বুঝানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণাদি ছাড়া অন্য কোন জামাতকে এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করা যাবেনা।

কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়া তাবলীগ জামাতকে এই হাদীছসমূহের মেসদাক বা উদ্দেশ্য বানানো, তাদেরকে খাওয়ারেজ বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে মারাত্মক অন্যায় ও অপরাধ। তাবলীগের নিয়মনীতি ও কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই। বর্তমান বিশ্বে আল্লাহ্ তা’আলা তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে পথহারা, ঈমানহারা, হেদায়েত থেকে বঞ্চিত অসংখ্য মানুষকে হেদায়েত করেছেন, ঈমান আনার তাওফিক দান করেছেন। এছাড়া এ জামাতের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে অসংখ্য জগদ্বিখ্যাত আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ।

অতএব, তাবলীগ জামাতকে খারেজী জামাত বলা, মিথ্যা অপবাদ বৈ কিছুই নয়। (ফতহুল বারী ১২ঃ৩৫০, আল মিরকাত ৭ঃ১০৭)    

উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-

(১) উল্লিখিত হাদীছ শরীফে বর্ণিত গুণাবলী প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে আছে কি?

(২) উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা কি শুধু খারিজী ফিরক্বার লোকদেরকেই বুঝানো হয়েছে? নাকি খারিজীদের ন্যায় আক্বীদা পোষণকারীদের ক্ষেত্রেও এ হাদীছ শরীফ প্রযোজ্য?

(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?          (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?

(৫) কুরআন-সুন্নাহ্র কোথাও প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করার নির্দেশ আছে কি? প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করা কুরআন-সুন্নাহ্ মতে জায়িয কিনা?        কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।      জাওয়াবঃ   প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কিত উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।  শুধু তাই নয়, তারা প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের সাফাই গাইতে গিয়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যা করেছে। সাথে সাথে “ছয় উছূলীদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী কোন আক্বীদা-আমল নেই” বলে তাদের নির্লজ্জ দালালী করে নিজেদেরকে অপব্যাখ্যাকারী ও মিথ্যাবাদীরূপে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিক দলীলভিত্তিক আলোচনা করলেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে। তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো- (ধারাবাহিক) ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে  উল্লিখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারীতার খ-নমূলক জবাব-৩

 প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?”

আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, পর্যায়ক্রমে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলোর সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো-

প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ১০

প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অধিকাংশ লোকের আক্বীদা হলো যে, “দীর্ঘদিন পর্যন্ত ঈমানের তাবলীগ করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের ঈমানকে পরিপোক্ত করেছেন।” (নাউযুবিল্লাহ) যেমন তাদের কিতাবে লিখিত হয়েছে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম … দীর্ঘকাল পর্যন্ত ঈমানের তাবলীগ করে প্রথমে ঈমানকে পরিপক্ত করিয়াছেন …।  (তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব পৃষ্ঠা-৭০ লেখক- ইসমাঈল হোসেন দেওবন্দী)

তাদের উপরোক্ত বক্তব্য ও আক্বীদা ডাহা মিথ্যা, অশুদ্ধ ও কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী তথা কুফরীমূলক হয়েছে। কেননা তাদের এ বক্তব্যের দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ পাক নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণকে নুবুওওয়াত ও রিসালত দেয়ার জন্য এমন এক ব্যক্তির নুবুওওয়ত ও রেসালতের প্রতি ঈমান আনার শর্ত আরোপ করলেন, আর আল্লাহ পাক এমন এক ব্যক্তির প্রতি নুবুওওয়াত ও রিসালত দান করলেন আর তাঁর নুবুওওয়তের আনুষ্ঠানিকতাও ঘোষণা করলেন চল্লিশ বছর বয়স মুবারকে এবং ঘোষণা করে কিতাবও দান করলেন, যিনি আল্লাহ পাক-এর প্রতি তখনো পরিপোক্তভাবে ঈমান আনেননি।

অর্থাৎ আল্লাহ পাক নুবুওওয়াত, রিসালত ও কিতাব দান করা সত্বেও ঈমান পরিপোক্ত হবেনা, ঈমানের তাবলীগ না করা পর্যন্ত। অথচ এটি সম্পূর্ণই মনগড়া বক্তব্য, যা অমূলক ও গোমরাহীর নামান্তর।

 উল্লেখ্য আমাদের হানাফী মায্হাব মুতাবিক ঈমান বাড়েও না এবং কমেও না, বরং ঈমানের কুওওয়াত বা শক্তি বাড়ে বা কমে। আর যদি শাফেয়ী মায্হাব মুতাবিক ধরে নেয়া হয় ঈমান বাড়ে-কমে, তবে তা কাদের সম্পর্কে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের? না, উম্মতদের?   মূলতঃ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের ঈমান যেমন কখনো বাড়েওনা বা কমেওনা, তেমনি তাঁদের ঈমানের কুওওয়াতও কখনো বাড়েওনা এবং কমেওনা। অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রত্যেককেই তাঁদের মর্যাদা অনুযায়ী ঈমান ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় পরিপূর্ণ করে নুবুওওয়াত দান করেন। অথবা নুবুওওয়াত ও রিসালত দান করার কারণে তাঁদের ঈমান ও অন্যান্য সব বিষয়াদি পরিপূর্ণতা প্রাপ্ত হয়।   প্রকৃতপক্ষে উম্মতদেরই ঈমানের কুওওয়াত বাড়ে বা কমে। যে প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক সূরা নিসার ১৩৬নং আয়াত শরীফে বলেন,

 يايها الذين امنوا امنوا بالله ورسوله والكتب الذى نزل على رسوله والكتب الذى انزل من قبل.

 অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ঈমান আন, আল্লাহ্ পাক-এর উপর এবং তাঁর রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর এবং কিতাবের উপর, যা নাযিল করেছেন, তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি এবং সে সমস্ত কিতাবের উপর, যা ইতিপূর্বে নাযিল করেছেন।” উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক ঈমানদারদেরকে পরিপূর্ণভাবে ঈমান আনতে বলেছেন। এখানে আল্লাহ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঈমান পরিপূর্ণ করতে বলেননি, বরং উম্মতদেরকে ঈমান পরিপূর্ণ করতে বলেছেন। আর ঈমান পরিপূর্ণ করতে বলেছেন আল্লাহ পাক-এর প্রতি এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ও কিতাবসমূহের উপর।

আর হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,

 قال فاخبرنى عن الايمان قال ان تؤمن بالله وملئكتة وكتبه ورسله واليوم الاخر وتؤمن بالقدر خيره وشره.

 অর্থঃ- হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একদিন হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম এসে আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে ঈমান সম্পর্কে সংবাদ দিন অর্থাৎ ঈমান কাকে বলে? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ঈমান হলো আল্লাহ পাক-এর প্রতি এবং তাঁর ফেরেশ্তাগণের প্রতি এবং তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর রসূলগণের প্রতি এবং পরকালের প্রতি এবং তক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল ক্বারী, শরহে নববী, ফতহুল মুল্হিম, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী) অর্থাৎ ঈমান হচ্ছে উপরোক্ত বিষয়সমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। আর ঈমান বৃদ্ধি বা ঘাটতি প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক সূরা আনআম-এর ২নং আয়াত শরীফে উল্লেখ করেন,

 انما المؤمنون الذين اذا ذكر الله وجلت قلوبهم واذا تليت عليهم اياته زادتهم ايمانا وعلى ربهم يتوكلون.

 অর্থঃ- “নিশ্চয়ই ঈমানদারগণ এরূপ, যখন (তাদের সম্মুখে) আল্লাহ্ পাক-এর যিকির করা হয়, তখন তাদের অন্তরসমূহ ভয়ে কেঁপে উঠে এবং যখন (তাদের সম্মুখে) আল্লাহ্ পাক-এর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে শুনানো হয়, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি হয় এবং তাদের রবের উপর তারা তাওয়াক্কুল করে।”         আর হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে,

 عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم جددوا ايمانكم قيل يا رسول الله كيف نجدد ايماننا قال اكثروا من قول لا اله الا الله.

 অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের ঈমানকে (কুওওয়াত) বৃদ্ধি কর।’ বলা হলো- ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কিভাবে ঈমান (কুওওয়াত) বৃদ্ধি করবো? তিনি বললেন, ‘বেশী বেশী লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু যিকিরের দ্বারা।” (আহ্মদ, তিবরানী, হাকিম, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব) অর্থাৎ ঈমানের কুওওয়াত বৃদ্ধি করতে হলে বেশী বেশী যিকির করতে হবে।

উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা বুঝা গেল যে, যিকিরের দ্বারাই ঈমানের কুওওয়াত বৃদ্ধি ও আল্লাহ্ ভীতি পয়দা হয় এবং কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের দ্বারা ঈমানের কুওওয়াত বৃদ্ধি পায়। তাই ঈমান বৃদ্ধি করতে হলে যিকিরের সাথে সাথে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতে হবে। আর এ লক্ষ্যে যিকির দ্বারা ফায়দা হাছিলের ক্ষেত্রে ওলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণ তাছাউফের তর্জ-তরীক্বার যিকিরকেই ফরয বলে নির্ধারণ করেছেন। নতুবা তার আসল ফযীলত ও মকছূদ হাছিল আদৌ সম্ভব নয়। এ সম্পর্কে হুজ্জাতুল ইসলাম, হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কিমিয়ায়ে সায়াদাত, ইহ্ইয়াউ উলুমুদ্দীন কিতাবে, গাউছূল আ’যম, মুহিউদ্দীন, হযরত বড় পীর আব্দুল ক্বাদির জ্বিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ফতহুর রব্বানী কিতাবে, আফযালুল আওলিয়া, হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মকতুবাত শরীফ কিতাবে এবং শায়খ আহমদ রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর আল বুনিয়ানুল মুশাইয়্যাদ কিতাবে উল্লেখ করেছেন। অপরদিকে ঈমানের কুওওয়াত বৃদ্ধি বা আল্লাহ্ভীতি পয়দা করার জন্যে ইসলামে তথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের কোথাও তাবলীগ করাকে শর্ত করা হয়নি বা তাবলীগ করাকে শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি বরং উল্লেখ রয়েছে যে, কেউ যদি আল্লাহভীতি ও ঈমানী কুওওয়াত বৃদ্ধি করতে চায়, তাহলে তাকে আল্লাহ পাক-এর যিকিরের সাথে সাথে কুরআন শরীফও রীতিমত তিলাওয়াত করতে হবে।

অতএব, উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হলো, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যে বলে থাকে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীর্ঘকাল পর্যন্ত ঈমানের তাবলীগ করে প্রথমে ঈমানকে পরিপোক্ত করেছেন, সে কথা সম্পূর্ণই মিথ্যা অপবাদ, গোমরাহীমূলক, বিভ্রান্তিকর, মনগড়া, জেহালতপূর্ণ এবং নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের শানে চরম বেয়াদবী, যা সর্বোত অংশেই ঈমান হানিকর এবং যা থেকে বেঁচে থাকা প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতসহ সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।

ছূফী মুহম্মদ তছলিমুদ্দীন বসুনিয়া উলিপুর, কুড়িগ্রাম

সুওয়ালঃ   মাসিক মদীনা ফেব্রুয়ারী/২০০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-     প্রশ্নঃ অনেকের মুখে শুনেছি যে, ঘরে মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি থাকলে সেই ঘরে নামায হয় না। দোকান ঘরে বিভিন্ন জিনিষের ঠোঙ্গায় মানুষ ও জীব-জন্তুর ছবি থাকে। এই দোকান ঘরেই নামায আদায় করতে হয়। অনেক দোকানে ৮/১০ জনে জামাত করেও নামায পড়তে দেখা যায়। এমতাবস্থায় এসব দোকানে নামায শুদ্ধ হবে কিনা? এবং করণীয় কি?       উত্তর: মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি ঘরে মজুদ থাকলেই সেই ঘরে নামায শুদ্ধ হবে না,বিষয়টা এমন নয়। ছবি যদি নামাযীর সামনে থাকে তবে অবশ্যই নামায শুদ্ধ হবে না। কিন্তু যদি ছবি দৃশ্যমান না থাকে এবং বিশেষভাবে নামাযী ব্যক্তির চোখের সামনে না থাকে তাহলে নামাযের ক্ষতি হবে না।

উল্লেখ্য, মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্যে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, (১) মানুষ বা জীব-জন্তু ইত্যাদি  প্রাণীর ছবি ঘরে মওজুদ রাখতে কোন অসুবিধা নেই। তবে নামাযীর সামনে না পড়লেই হলো।   (২) শুধুমাত্র নামাযীর সামনে মানুষ বা জীব- জন্তু ইত্যাদি প্রাণীর ছবি মওজুদ থাকলে নামায মাকরূহ্ হবে। নামাযীর ডানে-বামে, উপরে-নিচে, পিছনে মানুষ বা জীব-জন্তুর  ছবি মওজুদ থাকলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। এখন আমার সুওয়াল হলো- মানুষ বা জীব-জন্তু ইত্যাদি  প্রাণীর ছবি ঘরে মওজুদ থাকা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি মানুষ বা জীব-জন্তু ইত্যাদি প্রাণীর ছবি ঘরের ভিতরে নামাযীর চোখে পড়ে না, এমন কোন ঘরে প্রাণীর ছবি  মওজুদ  থাকলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। দলীলসহ সঠিক জাওয়াব জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ ঘরের ভিতরে নামাযরত অবস্থায় নামাযীর চোখে পড়ে না, এমন কোন ঘরে মানুষ বা জীব-জন্তুর  ছবি মওজুদ রেখে নামায পড়া  সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য  সঠিক হয়নি, বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে।

(ধারাবাহিক)

উল্লেখ্য, বিগত সংখ্যায় আমরা ঘরে ছবি মওজুদ রেখে নামায পড়া সম্পর্কে মাসিক মদীনার ভুল বক্তব্য দলীল আদিল্লাহ্-এর মাধ্যমে খ-ন করে প্রমাণ করে দিয়েছি যে, “যে ঘরে মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি মওজুদ থাকে, সে ঘরে প্রবেশ করা, বসা এবং পরিদর্শন করাটাও মাকরূহ্ তাহ্রীমী তথা নিষিদ্ধ বা হারাম।” সুতরাং যেখানে ঘরে মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি মওজুদ রাখাই হারাম, সেখানে ছবিযুক্ত ঘরে নামায শুদ্ধ হয় কি করে?

অতএব, মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি ঘরে মওজুদ থাকলে,সেই ঘরে নামায পড়া শুদ্ধ হবে না। এটাই  সঠিক, নির্ভরযোগ্য, দলীলভিত্তিক এবং গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত। নিম্নে মাসিক মদীনার মনগড়া  বক্তব্য খ-ন করা হলো- দ্বিতীয়তঃ মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্যে এটাও প্রতীয়মান হয় যে, “(২) শুধুমাত্র নামাযীর সামনে মানুষ বা জীব-জন্তু ইত্যাদি প্রাণীর ছবি মওজুদ থাকলে নামায মাকরূহ্ হবে। নামাযীর ডানে-বামে, উপরে-নিচে, পিছনে মানুষ বা জীব-জন্তুর   ছবি  মওজুদ থাকলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না।”

এর জবাবে বলতে হয় যে, মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্যও ভুল হয়েছে। কারণ সর্বজনমান্য, বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে সুস্পষ্টভাবে এটাই উল্লেখ আছে যে, মানুষ বা জীব-জন্তুর  ছবি ঘরে মওজুদ রেখে নামায পড়লে নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে। চাই উক্ত প্রাণীর ছবি নামাযীর সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নিচে, দৃষ্টির সামনে অথবা দৃষ্টির আড়ালে  দৃশ্যমান থাকুক অথবা চোখের সামনে পড়ুক বা না পড়ুক সকল অবস্থাতেই প্রাণীর ছবি ঘরে মওজুদ থাকলে সে ঘরে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী হবে। যেমন, “ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩৬২/৩৬৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

  ويكره أن يكون فوق رأسه فى السقف أو بين يديه أو بحذائه تصاوير أو صورة معلقبة ….. وأشدها كراهة أن تكون امام المصلى ثم من فوق رأسه ثم على يمينه ثم على شماله ثم خلفه.

 অর্থঃ- “নামায মাকরূহ তাহ্রীমী হবে যদি ঞ্জনামাযীর মাথার উপর, ছাদের মধ্যে অথবা সামনে অথবা জুতার মধ্যে অথবা ঝুলন্ত বা লটকানো  অবস্থায় প্রাণীর ছবি অথবা মূর্তি থাকে। ….. এবং নামায শক্ত মাকরূহ তাহ্রীমী হবে যদি প্রাণীর ছবি নামাযীর সামনে বা মাথার উপরে বা ডানে-বামে বা নামাযীর পিছনে থাকে।” “রুকনুদ্দীন মুসাম্মা বিহি ইমাদুদ্দীন” কিতাবের ৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, উর্দূ কম্পোজ করতে হবে  অর্থঃ- “নামাযীর মাথার উপর, সামনে, ডানে-বামে ছবি থাকলে নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে।” “সুন্নী বেহেশতী জেওর” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উর্দূ কম্পোজ করতে হবে

অর্থঃ- “নামায মাকরূহ্ তাহরীমী হবে ….. নামাযীর সামনে-পিছনে, ডানে- বামে, মাথার উপর ছাদে বা অন্যখানে অথবা সিজদার  জায়গায় অথবা নামাযীর পিছনে ছবি থাকলে।” “মালাবুদ্দা মিনহু” কিতাবের ৬১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উর্দূ কম্পোজ করতে হবে

অর্থঃ- “মাথার উপর, চেহারার সামনে, অথবা ডান বা বাম হাতের দিকে ছবি থাকলে নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে।” “ইলমুল ফিক্বাহ্” কিতাবের ২য় খণ্ডের ২৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উর্দূ কম্পোজ করতে হবে

অর্থঃ- “নামায অবস্থায় এমন কোন কাপড় পরিধান করা যাতে প্রাণীর ছবি থাকে, তাহলে নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে। অনুরূপভাবে এমন স্থানে নামায পড়া যেখানে ছাদের উপর অথবা ডানে-বামেঞ্জকোন প্রাণীর ছবি থাকলে নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে।” “নূরুল ইজাহ্” কিতাবের ৯১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 يكره للمصلى ….. ان يكون فوق راسه او خلفه او بين يديه او بحذائه صورة.

 অর্থঃ- “নামাযীর মাথার উপর, পিছনে, সামনে,  অথবা

নামাযীর ডানে-বামে ছবি থাকলে নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে।”   “আইনুল হিদায়া” কিতাবের নিছফে আউয়াল খণ্ডের ৬৫৯,৬৬০, ৬৬১, পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উর্দূ কম্পোজ করতে হবে

অর্থঃ- “নামায মাকরূহ তাহ্রীমী হবে যদি নামাযীর মাথার উপর ছাদে, সামনে, অথবা ঞ্জডানে- বামে ঝুলন্ত বা লটকানো  অবস্থায়ঞ্জকোন প্রাণীর ছবি অথবা মূর্তি থাকে। … এবং নামায অধিক মাকরূহ তাহ্রীমী হবে যদি প্রাণীর ছবি নামাযীর সামনে, মাথার উপরে, ডানে-বামে বা নামাযীর পিছনে থাকে।”  “নূরুল ইছবাহ্” কিতাবের ৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উর্দূ কম্পোজ করতে হবে

অর্থঃ- “নামাযীর মাথার উপর সামনে-পিছনে, অথবা ডানে-বামে ছবি থাকলে নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে।” “নূরুল হিদায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১০৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উর্দূ কম্পোজ করতে হবে

  অর্থঃ- “নামাযীর মাথার উপর, সামনে, ডানে- বামে অথবা নামাযীর পিছনে ছবি থাকলে নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে।” “নূরুদ দিরায়া” কিতাবের ২য় খণ্ডের ৯ম অংশের ৬৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,   উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থঃ- “মুছাল্লী বা নামাযীর মাথার উপর, ছাদে, অথবা নামাযীর সামনে, ডানে-বামে কোন ছবি অথবা কোন মূর্তি ঝুলন্ত বা লটকানো অবস্থায় থাকলে নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে।”  “কানযুদ্্ দাকায়িক” কিতাবে উল্লেখ আছে,

 وان يكون فوق رأسه او بين يديه او بحذائه صورة

  অর্থঃ- “নামাযীর মাথার উপর সামনে, অথবা ডানে- বামে ছবি থাকলে নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে।” “কাশফুল হাকায়িক” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,  উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থঃ- “নামাযী ব্যক্তি যদি এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে নামায পড়ে যে, উক্ত নামাযীর মাথার উপর, সামনে অথবা ডানে-বামে ছবি থাকে তাহলে নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে।” “মুনীয়াতুল মুছাল্লী” কিতাবের ১৪৩,১৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

  ويكره ان تكون فوق رأسه فى السقف او بين يديه او بحذائه تصاوير او صورة موضوعة معلقة.

 অর্থঃ- “নামাযীর মাথার উপর, ছাদে, সামনে অথবা ডানে-বামে ছবি অথবা বানানো মূর্তি ঝুলন্ত অথবা লটকানো থাকলে নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে।” “আনওয়ারে মাহ্মূদা” কিতাবের ৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,   উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থঃ- “মাথার উপর, চেহারার সামনে, অথবা ডান বা বাম হাতের দিকে ছবি থাকলে নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে।” “তুহ্ফাতুল আজম” কিতাবের ৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উর্দূ কম্পোজ করতে হবে

অর্থঃ- “নামাযীর মাথার উপর, সামনে, ডানে-বামে ছবি থাকলে নামায মাকরূহ্ তহ্রীমী হবে।” “নূরুল ইজাহ্” কিতাবের ৯১ পৃষ্ঠার ২নং হাশিয়ায়  উল্লেখ আছে,

 واشدها كراهة امامه ثم فوقه ثم يمينه ثم يساره ثم خلفه.

 অর্থঃ- “নামায শক্ত মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে যদি নামাযীর সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে ছবি থাকে।”    অতএব, আবারো প্রমাণিত হলো যে,মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি ঘরে মওজুদ থাকলে সে ঘরে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে। চাই প্রাণীর ছবি ঘরের ভিতরে নামাযী ব্যক্তির সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নীচে যেখানেই  মওজুদ  থাকুক না কেন।  তাই করণীয় হলো- ঘরে, দোকানে বা যে-কোন স্থানে মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি মওজুদ রাখা যাবে না এবং উক্ত প্রাণীর ছবি ঘরে মওজুদ থাকলে সেই ঘরে নামায পড়া যাবে না। (চলবে)

মুহম্মদ মুহিউদ্দীন

সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত সন্দ্বীপ শাখা, চট্টগ্রাম

সুওয়ালঃ  চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানী মাযহাবের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর- জানুয়ারী/২০০৩-০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে ‘‘বিত্রের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম এবং বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব পাবে বলে উল্লেখ করেছে।’’ তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের সপক্ষে বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ্, নাসায়ী থেকে দলীল হিসেবে কয়েকখানা হাদীছ শরীফও উল্লেখ করেছে।

আর হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ডিসেম্বর/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, ‘‘বিতির নামাযের পর দুই রাক্আত নফল নামায…  দাঁড়িয়ে পড়া ভাল। কারণ, নফল নামায বিনা কারণে বসে পড়লে অর্ধেক সাওয়াব হয়।” এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা হালকী নফল নামায সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক?

এবং এ সম্পর্কে যে হাদীছ শরীফগুলো উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য। তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডন হালকী নফল সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াবঃ  পবিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায যাকে “হালক্বী নফল” বলা হয়, তা দাঁড়িয়ে পড়া সম্পর্কে অখ্যাত মাসিক পত্রিকাদ্বয়ের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং কুরআন-সুন্নাহর খিলাফ হয়েছে। এবং ক্ষেত্রবিশেষে কুফরীমূলক হয়েছে।

  কেননা সাধারণতঃ নফল নামায বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব হলেও বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়াই মুস্তাহাব-সুন্নত, যা উত্তম ও পূর্ণ ছওয়াব এবং অধিক ফযীলতের কারণ। কেননা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল এবং অন্যান্য নফলের ক্ষেত্রে একই হুকুম নয়। বরং বিত্র নামাযের পর দুই রাকায়াত নফলের হুকুম অন্যান্য নফল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অর্থাৎ অন্যান্য নফল দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব, বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব। আর হালক্বী নফল অর্থাৎ বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব, আর বসে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব।

কারণ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায কখনও দাঁড়িয়ে আদায় করেননি। বরং বসেই আদায় করেছেন। যা সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।

(ধারাবাহিক)

উল্লেখ্য, রেযাখানীরা ‘বুখারী, মুসলিম,ইবনে মাজাহ ও নাসায়ী শরীফ’ ইত্যাদি কিতাব থেকে দলীল হিসেবে যে কয়েকখানা হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছে আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। আসলে তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে ইবারত কারচুপি করে “বুখারী, ইবনে মাজাহ, মিনহাজ, মিরকাত, মুসলিম, নাসায়ী ও রদ্দুল মুহ্তার ইত্যাদি  কিতাবের বরাত দিয়ে যেটা বলতে চেয়েছে, প্রকৃতপক্ষে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। আমরা পর্যায়ক্রমে সেটা তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ্। রেযাখানীদের কারচুপিমূলক বক্তব্য

উদঘাটন ও খণ্ডন  উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বলেছে, “ অতএব, নির্ভরযোগ্য হাদীস ও ফিক্হের ইমামগণের মতকে উপেক্ষা করে বিতরের পর দু’রাকাতকে বসে পড়া উত্তম বলাটা নিছক মুর্খতা  বৈকি?

অধিকারী, সর্বজনমান্য, সর্বজনস্বীকৃত ও বিশ্বখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে মাযহারীর” সম্মানিত লিখক মুফাসসিরে আ’যম, আল্লামা হযরত কাজী ছানাউল্লাহ, হানাফী, মুজাদ্দিদী পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফার্সী ভাষায় রচিত বিখ্যাত কিতাব যা প্রায় তিনশত বছর ধরে অত্যন্ত আদব ও মুহব্বতের সঙ্গে পঠিত হয়ে আসছে। সেই “মালাবুদ্দা মিনহু” কিতাবের ৭৪, ৭৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে,

بعد وتر دو ركعت نشسته خواندن مستحب ست.

অর্থাৎ “বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে আদায় করা মুস্তাহাব।”

হাদীয়ে বাঙ্গাল আল্লামা হযরত কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উর্দু ভাষায় লিখিত “মিফতাহুল জান্নাত” কিতাবে উল্লেখ করেছেন, “হালকী নফল নামায বসে পড়া সুন্নত।”

ফক্বীহুল আছার, মুফতীউল আ’যম, আল্লামা হযরত সাইয়্যিদ আমীমুল ইহসান মুজাদ্দিদী বরকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উর্দু ভাষায় লিখিত “হাদিয়াতুল মুছল্লীন” কিতাবে বর্ণনা করেছেন, “হালকী নফল নামায বসে পড়া মুস্তাহাব- সুন্নত।” এছাড়া ফিক্বাহর বিশিষ্ট কিতাব বাজ্জারেও অনুরূপ ফতওয়া বর্ণিত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্য, দেওবন্দীদের দ্বারা লিখিত “আকাবের কা রমাজান” নামক কিতাবে লিখিত হয়েছে, “হযরত শায়খুল হিন্দ তিনি দু’রাকায়াত নফল বরাবর বসেই পড়তেন। কেউ একবার হযরতের খিদমতে আরজ করল এতে (বসে পড়াতে) অর্ধেক ছওয়াব হয় মাত্র। তখন হযরত উত্তরে বলেছিলেন, হ্যাঁ ভাই, ছওয়াব বেশি না হলেও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণের মধ্যেই মন লাগে বেশি। আমার ধারণা, রীতি অনুসারে এতে ছওয়াব অর্ধেকই হবে বটে তবে সুন্নতের প্রতি এই যে অপার অনুরাগ এর ছওয়াব হয়ত পুরা ছওয়াবকে ছাড়িয়ে যাবে।”

হ্যাঁ, মাহমুদুল হাসান ছাহেবের উক্ত আমল অর্থাৎ হালকী নফল নামায বসে আদায় করা যথার্থই ছিল। তবে তিনি বসে পড়াতে ছওয়াবের ব্যাপারে যে ধারণা করেছেন তা আদৌ শুদ্ধ হয়নি। কারণ প্রকৃতপক্ষে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ তথা সুন্নতের ইত্তিবার মধ্যেই ছওয়াব বেশি রয়েছে। কাজেই অন্যান্য নফল বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব এবং দাঁড়িয়ে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব।

আর হালকী নফল বসে পড়লেই বেশি ছওয়াব এবং বসে পড়াই উত্তম, যেহেতু এটা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।

এছাড়াও হাদীছ শরীফ উনার ছহীহ কিতাব সুনানু ইবনে মাজাহ উনার সম্মানিত লেখক হযরত ইমাম ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিতরের পর উক্ত দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই পড়া যে মুস্তাহাব- সুন্নত, তা সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য আলাদা বাব রচনা করেছেন। যার নাম দিয়েছেন,

باب ما جاء فى الركعتين بعد الوتر جالسا.

অর্থ: “এ অধ্যায়টি বিতরের পর দু’রাকায়াত নামায বসে আদায় করা সম্পর্কে।

কাজেই বিতরের নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায যেহেতুা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বসেই আদায় করেছেন, সেহেতু তা বসেই আদায় করা সুন্নত, উত্তম ও অধিক ফযীলতের কারণ।

উক্ত নামায দাড়িয়ে আদায় করা উত্তম বলার অর্থই হলো উল্লিখিত হাদীছ শরীফ উনাকে অস্বীকার করা, সুন্নত অস্বীকার করা, সুন্নতের ফযীলত কম বলে দাবী করা ও অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদেরকে অস্বীকার করা যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

সুতরাং প্রমাণিত হলো ধোঁকাবাজ, প্রতারক, জাহিল, মুর্খ রেযাখানী মৌলভীরাই নির্ভরযোগ্য হাদীছ শরীফ, ফিক্বাহ, ফতওয়া এবং অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের মতকে উপেক্ষা করে চরম মুর্খতার এবং কুফরীর পরিচয় দিয়েছে। (চলবে)

সুওয়ালঃ    তারাবীহ্র নামায জামায়াতে পড়া কি?

জাওয়াবঃ   সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া।  [দলীলসমূহঃ বাহরুর রায়িক, হিদায়া, আলমগীরী, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১২৪তম সংখ্যা]

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

 সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব