সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১৩০তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ মুহিউদ্দীন সভাপতি- আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত সন্দ্বীপ শাখা, চট্টগ্রাম।

সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানী মাযহাবের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর- জানুয়ারী/২০০৩-০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে ‘‘বিত্রের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম এবং বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব পাবে বলে উল্লেখ করেছে।’’ তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে বুখারী, ইবনে মাজাহ্, নাসায়ী থেকে দলীল হিসেবে কয়েকখানা হাদীছ শরীফও উল্লেখ করেছে।  আর হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ডিসেম্বর/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, ‘‘বিতির নামাযের পর দুই রাক্আত নফল নামায…  দাঁড়িয়ে পড়া ভাল। কারণ, নফল নামায বিনা কারণে বসে পড়লে অর্ধেক সাওয়াব হয়।” এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা হালকী নফল নামায সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে হাদীছ শরীফগুলো উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহনযোগ্য। তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডনসহ হালকী নফল সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াবঃ বিতির পর দু’রাকায়াত নফল নামায যাকে “হালক্বী নফল” বলা হয়, তা দাঁড়িয়ে পড়া সম্পর্কে অখ্যাত মাসিক পত্রিকাদ্বয়ের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ হয়েছে। এবং ক্ষেত্রবিশেষে কুফরীমুলক হয়েছে।  কেননা সাধারণতঃ নফল নামায বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব হলেও বিতির পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়াই মুস্তাহাব-সুন্নত, যা উত্তম ও পূর্ণ ছওয়াব এবং অধিক ফযীলতের কারণ। কেননা বিতির পর দু’রাকায়াত নফল এবং অন্যান্য নফলের ক্ষেত্রে একই হুকুম নয়। বরং বিতির পর দুই রাকায়াত নফলের হুকুম অন্যান্য নফল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অর্থাৎ অন্যান্য নফল দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব, বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব। আর হালক্বী নফল অর্থাৎ বিতির পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব, আর বসে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব।  কারণ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিতির পর দু’রাকায়াত নফল নামায কখনও দাঁড়িয়ে আদায় করেননি। বরং বসেই আদায় করেছেন। যা সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।  (ধারাবাহিক) উল্লেখ্য, রেযাখানীরা ‘বুখারী, ইবনে মাজাহ ও নাসায়ী শরীফ’ ইত্যাদি কিতাব থেকে দলীল হিসেবে যে কয়েকখানা হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছে আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। কারণ তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে ইবারত কারচুপি করে “বুখারী শরীফ, ইবনে মাজাহ, মিরকাত ও নাসায়ী শরীফ ইত্যাদি  কিতাব” -এর বরাত দিয়ে যেটা বলতে চেয়েছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। আমরা পর্যায়ক্রমে সেটা তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ্।     নিম্নে মিরকাত শরীফ কিতাবের  বক্তব্য পর্যালোচনা করা হলো- উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বিতির পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম বলে হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মিনহাজ কিতাবের এবং হযরত মুল্লা আলী কারী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মিরকাত শরীফ কিতাবের  বরাত দিয়ে যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে, নিম্নে তা হুবহু উল্লেখ করা হলো।  যেমন রেযাখানীদের হুবহু ইবারত খানা হচ্ছে – হযরত ইমাম নববী ‘মিনহাজে’ ও হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ‘মিরকাত শরীফে’ এ প্রসঙ্গে লিখেছেন যে,

هاتان الركعتان فعلهما رسول الله صلى الله عليه وسلم جالسالبيان جواز الصلواة بعد الوتر وبيان جواز النفل جالسا ولم يواظب على ذلك الخ. هكذا فى حاشية سنن ابن ماجه قال النووى الصواب ان هاتبن الر كعتين فعلهما رسول الله صلى الله عليه وسلم بعد الوتر جالسا لبيان جواز الصلواة بعد الوتر ولبيان حواز النفل جالساولم يواظب على ذال الخ.

 অর্থাৎ- বিতরের পর এ দু’রাকাত নামায রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসে এজন্য আদায় করেছেন যেন এ কথাও প্রমাণ করে যে, বিতরের পর নফল নামায পড়া এবং বসে বসে পড়া বৈধ। এখানে প্রথমতঃ বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, “রেযাখানীরা বিতির পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম বলে মিনহাজ ও মিরকাত কিতাবের বরাত দিয়ে যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে, উক্ত  ইবারতেই উল্লেখ আছে,

 ان هاتين الركعتين فعهما رسول الله صلى الله عليه وسم بعد الوتر جالسا.

অর্থাৎ- নিশ্চয়ই বিত্রের পর দু’রাকায়াত নফল নামায রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসেই আদায় করেছেন। সুতরাং, রেযাখানীদের বক্তব্য স্ববিরোধী বলেই প্রমাণিত হলো। কেননা রেযাখানীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে, উক্ত ইবারতেই উল্লেখ আছে যে, রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম بعد الوتر جالسا বিতির পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করেছেন। রেযাখানীদের কারচুপিমূলক  বক্তব্য  উদঘাটন ও খণ্ডন দ্বিতীয়তঃ রেযাখানীরা ‘মিনহাজ’ ও ‘মিরকাত শরীফের’ বরাত দিয়ে যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে, উক্ত  ইবারতেও তারা সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে।  কারণ রেযাখানীরা কিতাবের নাম দিয়ে সমস্ত ইবারত গুলো যেভাবে পাশাপাশি উল্লেখ করেছে, অথচ মিরকাত শরীফে সেভাবে হুবহু উক্ত সমস্ত ইবারত গুলো উল্লেখ নেই।  তৃতীয়তঃ রেযাখানীরা যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে, উক্ত ইবারতের অর্থেও তারা ভুল করেছে। চতুর্থতঃ রেযাখানীরা কিতাবের ইবারতের অর্থের সঙ্গে হাদীস শরীফের অর্থ ঢুকিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে চরম জালিয়াতী করেছে। পঞ্চমতঃ রেযাখানীরা ‘মিনহাজ’ ও ‘মিরকাত শরীফ’ কিতাবের বরাত দিয়ে যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে, উক্ত  ইবারতের অর্থেও তারা কারচুপি করেছে। কারণ উক্ত ইবারত খানার সম্পূর্ণ অর্থ তারা করেনি। যারা ইবারতের সঠিক অর্থই জানেনা তারা আবার ফতওয়া দেয় কিভাবে? ষষ্ঠতঃ রেযাখানীরা ‘মিনহাজ’ ও ‘মিরকাত শরীফ’ নামক দু’টি কিতাবের নাম ব্যবহার করে যে সমস্ত ইবারত উল্লেখ করেছে, উক্ত ইবারতের মাঝখানে তৃতীয় আরেকটি কিতাবের নাম ঢুকিয়ে ইবারত জালিয়াতি করেছে।  যেমন রেযাখানীরা ইবারতের মাঝখানে তৃতীয় আরেকটি কিতাবের নাম ঢুকিয়ে ইবারত জালিয়াতি করে এভাবে ইবারত উল্লেখ করেছে-

 هكذا فى حاشية سنن ابن ماجه قال النووى……….

 অর্থাৎ অনুরূপ সুনানু ইবনে মাজাহ্ শরীফের হাশিয়াতে উল্লেখ আছে ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ….  অথচ রেযাখানীরা সুনানু ইবনে মাজাহ্ শরীফের হাশিয়ার বরাত দিয়ে যে ইবারত গুলো কারচুপি করেছে, সুনানু ইবনে মাজাহ্ শরীফের হাশিয়ায় উল্লিখিত সেই ইবারতেই উল্লেখ আছে, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিতির পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করেছেন।  যেমন “সুনানু ইবনে মাজাহ’’ শরীফের ১ম খণ্ডের ৮৫ পৃষ্ঠার ২নং হাশিয়ায়  উল্লেখ আছে,

 عن عائشة رضى اله عنها كان يصلى ثلث عشرة ركعة يصلى ثمان ركعات ثم يوتر ثم يصلى ركعتين وهو جالس.

অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আখিরী রসুল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (রাতে) তের রাকায়াত নামায আদায় করতেন। আট রাকায়াত (তাহাজ্জুদ) পরে তিন রাকায়াত বিত্র পড়তেন। অতঃপর   দু’রাকায়াত (নফল) নামায বসেই আদায় করতেন।” উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, রেযাখানীরা সুনানু ইবনে মাজাহ্ শরীফের হাশিয়ার বরাত দিয়ে যে ইবারত গুলো কারচুপি করেছে, ‘সুনানু ইবনে মাজাহ্ শরীফের’ হাশিয়ায় উল্লিখিত সেই ইবারতেই উল্লেখ আছে, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিতির পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করেছেন।  যা হাদীছ শরীফে উল্লিখিত وهوجالس ইবারতটিই প্রমাণ করে। অতএব, রেযাখানীরা বিতির পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম বলে হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মিনহাজ কিতাবের এবং হযরত মুল্লা আলী কারী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মিরকাত শরীফ কিতাবের  বরাত দিয়ে যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে, সেই ইবারতের মধ্যেই

ان هاتين الر كعتين فعلهما رسول الله صلى الله عليه وسلم بعد الوتر جالسا.

 বিতির পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করার বর্র্ণনা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। সুতরাং, কিতাবের নাম ব্যবহার করে রেযাখানীদের জালিয়াতি, ধোঁকাবাজী, প্রতারণা, মিথ্যা ও ইবারত কারচুপি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো। (চলবে)

মুহম্মদ মামুনূর রহমান, চট্টগ্রাম

সরকার মুহম্মদ আল মাহমুদ, দিনাজপুর

সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা জানুয়ারী/২০০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে পাগড়ী পরিধান করে নামায পড়ার ছওয়াব সম্পর্কে বলা হয়েছে, “…… পাগড়ী মাথায় নামায পড়লে ১ রাক্আতে ৭০ রাক্আতের সাওয়াব পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এই বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবের বর্ণনা পাওয়া যায় না।”  ….. এখন আমার সুওয়াল হলো- পাগড়ী পরিধান করে নামায পড়ার ছওয়াব সম্পর্কে অখ্যাত মাসিক পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? দলীলসহ সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ  না, পাগড়ী পরিধান করে নামায পড়ার ছওয়াব সম্পর্কে হাটহাজারীর অখ্যাত মাসিক পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও কুফরী হয়েছে। কারণ মাথায় পাগড়ী পরিধান করে নামায পড়লে এক রাকায়াতে সত্তর রাকায়াতের ছওয়াব পাওয়ার কথা যে উল্লেখ করা হয়েছে, তা হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যা সর্বজনমান্য, বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবে বর্ণিত রয়েছে।  যেমন,ঞ্জসর্বজনমান্য ও জগতখ্যাত মুহাদ্দিস শায়খ হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিস রহমতুল্লাহি আলাইহি  তাঁর  বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাব ‘আশয়াতুল লুময়াত’ কিতাবের ৩য় খন্ডের ৫৪৫ পৃষ্ঠায়, ‘তিরমিযী শরীফের’ ১ম খণ্ডের ২০৭ পৃষ্ঠার ২নং হাশিয়ায়, ‘তরজুমাতুল মিশকাত’ ও ‘উরফুশ্ শাজী’ কিতাবে  উল্লেখ আছে,

উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………..

 অর্থঃ- “পাগড়ী মাথায় বেঁধে রাখা সুন্নত। অসংখ্য হাদীস শরীফে এর ফযীলত আলোচিত হয়েছে। যেমন, পাগড়ীসহ দু’রাকায়াত নামায পাগড়ী ছাড়া সত্তর রাকায়াত নামাযের চেয়ে উত্তম।”  মিশকাত শরীফের সর্বজনমান্য, বিশ্বখ্যাত, নির্ভরযোগ্য ও মশহুর শরাহ্ “মিরকাত শরীফের” ২য় খন্ডের ২৩৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 وروى انه عليه السلام قال صلاة بعمامة أفضل من سبعين صلاة بغير عمامة كذا نقله ابن حجر.

অর্থঃ- “বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, পাগড়ীসহ এক ওয়াক্ত নামায পাগড়ী ছাড়া সত্তর ওয়াক্ত নামাযের থেকে অতি উত্তম। অনুরূপ বর্ণনা হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহিও বর্ণনা করেছেন।”  ‘মিরকাত শরীফের’ ৮ম খণ্ডের ২৫০ পৃষ্ঠায় ও ‘তুহফাতুল আহ্ওয়াযী’ কিতাবের ৫ম খণ্ডের ৪১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وروى ابن عساكر عن ابن عمر رضى الله عنهما مرفوعا صلاة تطوع أو فريضة بعمامة تعدل خمسا وعشرين صلاة بلاعمامة وجمعة بعمامة تعدل سبعين جمعة بلا عمامة فهذا كله يدل على فضيلة العمامة مطلقا.

 অর্থঃ- “হযরত ইবনে আসাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে মারফু হাদীস বর্ণনা করেন যে, পাগড়ীসহ একটি ফরয অথবা নফল নামাযে পাগড়ী ছাড়া পঁচিশটি ফরয অথবা নফল নামাযের সমান ছওয়াব পাওয়া যায়। অনুরূপভাবে পাগড়ীসহ একটি জুমুয়া আদায় করলে পাগড়ী ছাড়া সত্তরটি জুমুয়া আদায়ের সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যায়। সাধারণতঃ এটা দ্বারা পাগড়ী পরিধানের ফযীলতের দলীল সাব্যস্ত হয়।” “কাশফুল খফা ওয়া মুযীলুল ইলবাস” কিতাবের ২য় খন্ডের ৬৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 أورده الديلمى فى مسنده عن ابن عمر رضى الله عنهما رفعه بلفظ صلاة بعمامة تعدل بخمس وعشرين صلاة وجمعة بعمامة تعدل سبعين جمعة.

 অর্থঃ-  “হযরত দাইলামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মুসনাদ কিতাবে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে মারফু হাদীস বর্ণনা করেন যে, পাগড়ীসহ এক ওয়াক্ত নামায পাগড়ী ছাড়া পঁচিশ ওয়াক্ত নামাযের সমপরিমাণ ছওয়াব পাওয়া যায়।  আর পাগড়ীসহ একটি জুমুয়া আদায় করলে পাগড়ী ছাড়া সত্তরটি জুমুয়া আদায়ের সমপরিমাণ ছওয়াব পাওয়া যায়।” “মিরকাত শরীফের” ২য় খণ্ডের ২৩৯ পৃষ্ঠায় হাদীস শরীফের বিখ্যাত কিতাব “দাইলামী শরীফের” বরাত দিয়ে  উল্লেখ করা হয়েছে-

من حديث ابن عمر رضى الله عنهما مرفوعا صلاة بعمامة تعدل بخمس وعشرين صلاة وجمعة بعمامة تعدل سبعين جمعة.

 অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে মারফু হাদীস বর্ণনা করেন যে, পাগড়ীসহ এক ওয়াক্ত নামায পাগড়ী ছাড়া পঁিচশ ওয়াক্ত নামাযের সমপরিমাণ ছওয়াব পাওয়া যায়। আর পাগড়ীসহ একটি জুমুয়া আদায় করলে পাগড়ী ছাড়া সত্তরটি জুমুয়া আদায়ের সমপরিমাণ ছওয়াব পাওয়া যায়।” উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে

 ومن حديث أنس رضى الله عنه مرفوعا اصلاة فى العمامة بعشرة.

  অর্থঃ- “হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে মারফু হাদীস বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, পাগড়ীসহ নামায আদায় করলে দশগুণ ছওয়াব লাভ হয়।” “আল ফিরদাউস বি-মা’ছূরিল খিত্বাব লিদ দাইলামী” কিতাবের ২য় খণ্ডের ১০৯ পৃষ্ঠার ২৫৭১ নং হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,

 عن ابن عمر رضى الله عنهما حمعة بعمامة افضل من سبعين جمعة بلاعمامة.

অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে ঞ্জবর্ণিত আছে, তিনি বর্ণনা করেন যে, পাগড়ীসহ একটি জুমুয়া আদায় করলে পাগড়ী ছাড়া সত্তরটি জুমুয়া আদায়ের থকে উত্তম।” এছাড়াও হাদীস শরীফের বিখ্যাত শরাহ গ্রন্থগুলোতে উল্লেখ আছে যে, পাগড়ী পরিধান করে এক রাকায়াত নামায আদায় করলে সত্তর রাকায়াত নামাযের ফযীলতের কথা উল্লেখ আছে। যেমন, “শামাইলুত্ তিরমিযী” কিতাবের ৮ পৃষ্ঠার ১৫ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

ان ركعتين مع العمامة افضل من سبعين ركعة بدونها.  অর্থঃ- “নিশ্চয়ই পাগড়ী পরিধান করে দু’রাকায়াত নামায আদায় করা, পাগড়ী ছাড়া সত্তর রাকায়াত নামায আদায় করার চেয়ে অধিক ফযীলতপূর্ণ।” “মিরয়াতুল্ মানাজীহ্” কিতাবের ৬ষ্ঠ খন্ডের ১০৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………..

অর্থঃ- “পাগড়ী ছাড়া সত্তর রাকায়াত নামাযের ছওয়াব পাগড়ীসহ এক রাকায়াত নামাযের সমপরিমাণ ছওয়াবতুল্য।”

“হিদায়াতুল ইবাদ” কিতাবের ৬৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

فى الحديث جمعة بعمامة افضل من سبعين صلاة بلاة بلا عمامة.

অর্থঃ- “হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, পাগড়ীসহ এক জুমুয়ার নামায পাগড়ী ছাড়া সত্তর জুমুয়ার নামায অপেক্ষা উত্তম।”

“কাশফুল খফা ওয়া মুযীলুল ইলবাস” ২য় খন্ডের ৬৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 عن جابر رضى الله عنه ركعتان بعمامة افضل من سبعين من غيرها.

অর্থঃ- “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, পাগড়ীসহ দু’রাকায়াত নামায পাগড়ী ছাড়া সত্তর রাকায়াত নামায থেকে উত্তম।”  শুধু তাই নয়, মাথায় পাগড়ী পরিধান করে নামায আদায় করলে হাজার গুন কল্যাণ নিহিত রয়েছে।  যেমন,“আল ফিরদাউস বি-মা’ছূরিল খিত্বাব লিদ দাইলামী” কিতাবের ২য় খণ্ডের ৪০৬ পৃষ্ঠার ৩৮০৫ নং হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,

  عن أنس رضى الله عنه الصلاة فى العمامة عشرة الف حسنة.

অর্থঃ- “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, পাগড়ী পরিধান করে নামায আদায় করলে এক হাজার কল্যাণ নিহিত আছে।” বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, পাগড়ী পরিধান করে নামায আদায় করলে এক রাকায়াতে সত্তর রাকায়াতের যে ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে, তা সর্বজনমান্য, বিশ্বখ্যাত,  নির্ভরযোগ্য ও অনুসরণীয় ইমাম মুজতাহিদ, সলফে ছলিহীন রহমতুল্লাহি আইহিমগণেরই দ্বারা লিখিত কিতাব। যেমন, প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম দায়লামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর লিখিত ‘আল ফিরদাউস’ কিতাবে, বিখ্যাত মুহাদ্দিস, হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মিশকাত শরীফের বিশ্বখ্যাত শরাহ্ ‘মিরকাত শরীফে,’ জগতখ্যাত মুহাদ্দিস শায়খ হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিস রহমতুল্লাহি আলাইহি  তার ‘আশয়াতুল লুমআত’ কিতাবে এবং এছাড়াও “হিদায়াতুল ইবাদ, কাশফুল খফা ওয়া মুযীলুল ইলবাস, হাশিয়ায়ে তিরমিযী, মিরয়াতুল্ মানাজীহ, হাশিয়ায়ে শামাইলুত্ তিরমিযী,তুহ্ফাতুল আহওয়াযী,ইত্যাদি কিতাবেও  মাথায় পাগড়ী পরিধান করে এক রাকায়াত নামায আদায় করলে সত্তর রাকায়াত নামাযের ছওয়াব বা ফযীলত-এর কথা বর্ণনা  করা হয়েছে।

অতএব, উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য কিতাবের দলীল আদিল্লার মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হলো যে, মাথায় পাগড়ী পরিধান করে নামায আদায় করলে এক রাকায়াতে সত্তর রাকায়াতের ফযীলত পাওয়া যায়।  সুতরাং হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকায় যে বলা হয়েছে, “পাগড়ী মাথায় নামায পড়লে ১ রাক্আতে ৭০ রাক্আতের সাওয়াব পাওয়ার কথা … নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবের বর্ণনা পাওয়া যায় না।”  তাদের এ  বক্তব্য হাদীছ শরীফ অস্বীকার করার কারণে কুফরী হয়েছে। কাজেই তাদেরকে খালিছ ইস্তিগ্ফার ও তওবা করতে হবে। {দলীলসমূহঃ (১) আল ফিরদাউস লিদ দাইলামী শরীফ, (২) মিরকাত শরীফ, (৩) হাশিয়ায়ে শামাইলুত্ তিরমিযী, (৪) তুহ্ফাতুল আহওয়াযী, (৫) হাশিয়ায়ে তিরমিযী শরীফ, (৬) হিদায়াতুল ইবাদ, (৭) কাশফুল খফা ওয়া মুযীলুল ইলবাস, (৮) আশয়াতুল লুময়াত, (৯) তরজমাতুল মিশকাত, (১০) উরফুশ্ শাজী, (১১) নাফয়ু ক্বূতিল মুগতাযী (১২) মিরয়াতুল্ মানাজীহ, (১৩) গুলজারে সুন্নত ইত্যাদি।  [বিঃ দ্রঃ- পাগড়ী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৮৩তম সংখ্যা থেকে ৯৬তম সংখ্যার ফতওয়া বিভাগ পাঠ করুন। সেখানে প্রায় ১৫০০ দলীল-আদিল্লাহ্ দ্বারা প্রমাণ করা হয়েছে যে, পাগড়ী পরিধান করা দায়িমী সুন্নত এবং মাথায় পাগড়ী পরিধান করে এক রাকায়াত নামায আদায় করলে সত্তর রাকায়াত নামাযের  ছওয়াব পাওয়া যায়।]

মুছাম্মত রাবেয়া আক্তার (লিজা)

সভানেত্রী- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত পলাশবাড়ি শাখা, গাইবান্ধা

সুওয়ালঃ মাসিক মদীনা এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে ৬নং প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, “ওলীরা মরে না, ওলীরা অমর, একথা হাদীসের কোথায় আছে, তা আমাদের জানা নেই।”

এখন আমার সুওয়াল হলো- ওলীরা মরে না, একথা হাদীছ শরীফের কোথায় আছে তা দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ “ওলীরা মরেনা।” একথা হাদীছ শরীফের কোথায় আছে তা মাসিক মদীনার সম্পাদক ছাহেবের পক্ষে জানা না থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ, শুধুমাত্র বক্বদরে নেছাব পরিমাণ দু’চারটি চটি রেসালা পাঠ করলে আর সদা সর্বদা হারাম কাজে মশগুল থাকলে এ ধরণের কথা জানা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়তঃ “ওলীরা মরেনা” একথা হাদীছ শরীফের কোথায় আছে, তা মাসিক মদীনার সম্পাদক ছাহেবের যদি জানা না থাকে তাহলে কি উক্ত বর্ণনাটি বাদ দিতে হবে? কস্মিনকালেও নয়।       বরং আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশ হচ্ছে,

فاسئوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون.

অর্থঃ- “তোমরা আহলে যিকিরগণকে জিজ্ঞাসা কর যদি তোমরা না জান।” (সূরা নহল্/৪৩)      অতএব, শরয়ী মাসায়ালা-মাসায়িল যাকে-তাকে জিজ্ঞাসা করা জায়িয নয়। একমাত্র যারা আহলে যিকির তাঁদেরকেই জিজ্ঞাসা করতে হবে।  শরীয়তের মাসয়ালা অর্থাৎ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হচ্ছে, ওলীরা মরে না, একথা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। এ সম্পর্কে হাদীছে কুদসীতে বলা হয়েছে,

ان اولياء الله لا يموتون بل ينتقلون من دار الفناء الى دار البقاء.

অর্থঃ- “নিশ্চয় আল্লাহ্ পাক-এর ওলীগণ মৃত্যুবরণ করেন না; বরং তাঁরা অস্থায়ী আবাস থেকে স্থায়ী আবাসের দিকে ইন্তিকাল করেন অর্থাৎ প্রত্যাবর্তন করেন।”     “মিশকাত শরীফের” ১২১ পৃষ্ঠার ২নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

اولياء الله لايموتون ولكن ينتقلون من دار الفناء الى دار البقاء.

অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক-এর ওলীগণ মৃত্যুবরণ করেন না। তবে তাঁরা অস্থায়ী আবাস থেকে স্থায়ী আবাসের দিকে প্রত্যাবর্তন করেন।” “মিরকাত শরীফের” ৩য় খণ্ডের ২৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

أولياء الله لايموتون ولكن ينتقلون من دار الى دار.

 অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক-এর ওলীগণ মৃত্যুবরণ করেন না। তবে তাঁরা এক আবাস থেকে অন্য আবাসের দিকে প্রত্যাবর্তন করেন ।’’  আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন

,  الانبياء والاولياء يصلون فى قبورهم كما يصلون فى بيوتهم.

 অর্থঃ- ‘‘হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাঁদের কবর শরীফে নামায আদায় করেন, যেমন তাঁরা তাদের ঘরে নামায আদায় করতেন।’’ (সিররুল্ আসরার )  উল্লেখ্য, শুধু ওলীগণই নয় বরং কোন একজন বান্দা যদি আল্লাহ্ পাককে এবং আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দৃঢ় মনে বিশ্বাস করে তাহলে উক্ত বান্দাও মৃত্যুবরণ করেন না।   যেমন, “তাবারানী শরীফের” ২০তম খণ্ডের ৪৫ পৃষ্ঠার ৭১নং হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,

عن معاذ عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لايموت عبد يشهد أن لا اله الا الله وأنى سرول الله يرجع ذلك الى قلب موقن الا دخل الجنة.

অর্থঃ- “হযরত মুয়ায ইবনু জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, যদি কোন বান্দা এই সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ পাক ছাড়া আর কোন মা’বুদ নেই এবং আমি মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্ পাক-এর রসূল। আর এই কথাগুলো যদি অন্তরের মধ্যে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করে নেয়, তাহলে উক্ত বান্দাও মৃত্যুবরণ করবেন না। বরং জান্নাতে প্রবেশ করবেন।’’ “তাবারানী শরীফের” ১০ খণ্ডের ১৮৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

عن عبد الله قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لايموت عبد وهو لايجعل لله نذا الا ادخله الله الجنة.

অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন বান্দা যদি আল্লাহ্ পাক-এর সঙ্গে সমকক্ষ স্থাপন না করে তাহলে উক্ত বান্দা মৃত্যুবরণ করবেন না। বরং আল্লাহ পাক তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।”        “তাবারানী শরীফের” ১৭তম খণ্ডের ৪৮ পৃষ্ঠায় ১০১নং হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,

عبيد بن عمير الليثى عن ابيه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم فى حجة اوداع ان أولياء الله المصلون لا يموت رجل لم يعمل هؤلاء الكبائر ويقيم الصلاة ويؤتى الزكوة الا رافق محمدا صلى الله عليه وسلم فى بحبوحة جنة.

অর্থঃ- ‘‘হযরত উবাইদ ইবনে উমাইর আল লাইছী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজ্বে বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক-এর ওলীগণ নামায পড়েন। কোন ব্যক্তি যদি কবীরাহ্ গুণাহ্ না করে, নামায পড়ে, যাকাত দেয় তাহলে উক্ত ব্যক্তিও মৃত্যুবরণ করবেন না। বরং সে ব্যক্তি মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে জান্নাতে সঙ্গী হিসেবে থাকবেন।” “কানযুল উম্মাল” কিতাবের ১৫ খণ্ডের ২৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 لايموت أحد من المسلمين.

অর্থঃ- “প্রকৃতপক্ষে কোন মুসলমানই মৃত্যুবরণ করেননা।” উপরোক্ত হাদীছ শরীফের আলোকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, যদি কোন বান্দা দৃঢ় মনে বিশ্বাস স্থাপন করে যে, আল্লাহ্ পাক ছাড়া আর কোন মা’বুদ নেই এবং মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, নামায পড়ে, যাকাত দেয়, কবীরাহ্ গুণাহ্ না করে তাহলে উক্ত মু’মিন বান্দাও মৃত্যুবরণ করবেন না। যদি তাই হয় তাহলে আল্লাহ্ পাক-এর ওলীগণ যে, মৃত্যুবরণ করেন না তা বলার অপেক্ষাই রাখে না। কারণ আল্লাহ্ পাক-এর ওলীগণের মর্যাদা উক্ত বান্দার চেয়ে অনেক অনেক উপরে। আরো উল্লেখ্য যে, স্বয়ং আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে শহীদগণ সম্পর্কে বলেন যে, তোমরা তাঁদের মৃত বলোনা। শুধু তাই নয় বরং মৃত বলে ধারণাও করোনা।  আল্লাহ পাক বলেন,

  ولاتقولوا لمن يقتل فى سبيل الله اموات بل احياء ولكن لا تشعرون.

অর্থঃ- “যারা আল্লাহ পাক-এর রাস্তায় জিহাদে শহীদ হয়েছেন তাঁদেরকে তোমরা মৃত বলোনা; বরং তারা জীবিত। যদিও তোমরা তা বুঝনা।” (সূরা বাক্বারা/১৫৪)

ولاتحسبن الذين قتلوا فى سبيل الله امواتا بل احياء عند ربهم يرزقون.

অর্থঃ- “যারা আল্লাহ পাক-এর রাস্তায় শহীদ হয়েছেন তোমরা তাঁদেরকে মৃত মনে করো না; বরং তারা জীবিত এবং তাঁদের রবের পক্ষ হতে রিযিকপ্রাপ্ত।” (সূরা আলে ইমরান/১৬৯) আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন ,

   المؤمنون لايموتون بل ينتقلون من دار الفنا الى دارالبقا.

 অর্থঃ- ‘‘মু’মিনগণ মৃত্যু বরন করেন না; বরং তারা অস্থায়ী জগত থেকে স্থায়ী জগতে গমন করেন।’’ (সিররুল্ আসরার ) অতএব, উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, ওলীগণ মৃত্যুবরণ করেননা। বরং ওলীগণ দুনিয়া হতে আখিরাতের দিকে ইন্তিকাল করেন। অর্থাৎ প্রত্যাবর্তন করেন। সুতরাং যা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ ও বিশ্ববিখ্যাত কিতাবের দলীলের দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত তা মূর্খ লোকদের পক্ষে না জানাটাই স্বাভাবাকি। আল্লাহ পাক সকলকেই এ প্রকার মূর্খলোক থেকে হিফাযত করুন। {দলীলসমূহঃ (১) তাফসীরে আহকামুল কুরআন জাস্সাস, (২) কুরতুবী, (৩) রুহুল মায়ানী, (৪) রুহুল বয়ান, (৫) মাযহারী, (৬) খাযিন, (৭) বাগবী, (৮) কবীর, (৯) মাদারিকুত তানযীল, (১০) তাবারী, (১১) তবারানী, (১২) কানযুল উম্মাল, (১৩) দাইলামী, (১৪) আহমদ, (১৫) মুসতাদরিকে হাকিম, (১৬) বাইহাক্বী, (১৭) মু’জামুল কবীর, (১৮) জামউল জাওয়ামে, (১৯) মিশকাত, (২০) মিরকাত, (২১) সীরাতে গাউছুল আ’যম, (২২) সিররুল্ আসরার, ইত্যাদি।}

 মুহম্মদ লুতফর রহমান, মুন্সীগঞ্জ মুছাম্মত রতনা বেগম শরীফসুন্দর, পীরগাছা, রংপুর  সুওয়ালঃ  জনৈক মুসলমান ব্যক্তি এক হিন্দু পীরের অনুসারী। ঐ ব্যক্তির পীর প্রায় ত্রিশ-পয়ঁত্রিশ বছর পূর্বে মারা যায়। ঐ ব্যক্তি এখনও বিবাহ করেনি। তাকে বিবাহ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে সে বলে থাকে, তার পীরের ইজাযত পায়নি তাই সে বিবাহ করবে না। ঐ ব্যক্তি নিজেকেও পীর/দয়াল বলে দাবী করে থাকে। তার মধ্যে সুন্নতের কোন পাবন্দি নেই। তার দাড়ি নেই। সে কোর্তা পরিধান করেনা। কিন্তু মাঝে মধ্যে টুপি পরিধান করে থাকে। সে ঠিক মত নামায, রোযা আদায় করে না। পর্দা নেই। তার ভক্তদের মধ্যে নারী-পুরুষ আছে। সে টেলিভিশন দেখে থাকে, তার পীরের ছবিকে সামনে রেখে নামায আদায় করে থাকে। সে নিজে ও তার ভক্তরা ছবিকে সামনে রেখে ধ্যান-মগ্ন হয়। ঐ ব্যক্তি তার ভক্তদের নিয়ে বাৎসরিক একটা অনুষ্ঠান করে থাকে। উল্লিখিত সুওয়ালের বিবরণে যে সকল প্রশ্নের উদয় হয় তা হলো-  (১) হিন্দু পীরের অনুসরণ করা। (২) হিন্দু পীরের ইজাযত না পাওয়ার কারণে বিবাহ হতে বিরত থাকা। (৩) নিজেকে পীর বা দয়াল বলে দাবী করা। (৪) সুন্নতের  পাবন্দি না করা। (৫) নামায-রোযা আদায় না করা। (৬) পর্দা না করা। (৭) টিভি দেখা ও ছবিকে সামনে রেখে ধ্যানমগ্ন হওয়া। এখন আমার সুওয়াল হচ্ছে- উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে শরীয়তের ফায়সালা কি? এবং তার থেকে মসজিদের জন্য জমি নেয়া জায়িয হবে কিনা? মৃত্যুর পর তার জানাযায় শরীক হওয়া যাবে কিনা? তার সঙ্গে সামাজিক কোন কাজে উঠা-বসা করা যাবে কিনা? তার কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা যাবে কিনা? কুরআন-সুন্নাহ্র দলীলসহ জাওয়াব দানে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ  আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,

 لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة.

অর্থঃ- “অবশ্যই তোমাদের জন্য আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আহযাব/২১) অর্থাৎ মুসলমানকে মাথার তালু থেকে পায়ের তলা; হায়াত থেকে মউত পর্যন্ত আক্বাইদ-ইবাদত, মুয়ামালাত-মুয়াশারাত ইত্যাদি প্রতিক্ষেত্রেই একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। কাজেই কোন মুসলমানের জন্য কোন বিধর্মীকে অনুসরণ ও অনুকরণ করা, তার কথা-কাজের উপর ইস্তিকামত  থাকা, তাকে অনুসরণ করে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নির্দেশের খিলাফ চলা, ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত তরক করা, হারাম-নাজায়িয আমল করা, বেপর্দা হওয়া, ছবি তোলা, টিভি দেখা ইত্যাদি সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। সুওয়ালে উল্লিখিত প্রত্যেকটি প্রশ্নেরই জাওয়াব ধারাবাহিকভাবে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে দেয়া হচ্ছে ইনশাআল্লাহ।

(ধারাবাহিক)

(৭) “টিভি দেখা ও ছবিকে সামনে রেখে ধ্যানমগ্ন হওয়া।” শরীয়তে টিভি দেখা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম। কারণ টিভিতে জানদার প্রাণীর ছবির মাধ্যমে অনুষ্ঠান করা হয়। আর শরীয়তের দৃষ্টিতে ছবি তোলা, আঁকা, রাখা, সম্পূর্ণ হারামের অন্তর্ভুক্ত। হালাল বা জায়িয বলা সম্পূর্ণরূপে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। জানদার প্রাণির ছবি তোলা, আঁকা ও রাখা সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

 ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.

অর্থঃ- “নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ্ পাক কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, ৮৮০ পৃষ্ঠা) তিনি আরো ইরশাদ করেন,

 ان من اشد اهل النار يوم القيمة عذابا المصورون.

 অর্থঃ “নিশ্চয় ক্বিয়ামতের দিন দোযখবাসীদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন আযাব হবে, যে ব্যক্তি প্রাণির ছবি আঁকে বা তোলে।” (মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ ২০১ পৃষ্ঠা) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

 عن ابى طلحة رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال لا تدخل الملئكة بيتا فيه كلب ولا صورة.

অর্থঃ- “হযরত আবু ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ঐ ঘরে রহমতের ফেরেশ্তা প্রবেশ করেনা, যে ঘরে কুকুর বা প্রাণির ছবি থাকে।” (নাসাঈ শরীফ ২য় জিঃ ২৯৯ পৃষ্ঠা) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن عائشة رضى الله تعالى عنها زوج النبى صلى الله عليه وسلم قالت دخل على رسول الله صلى الله عليه وسلم وقد سترت بقرام فيه تماثيل فلما راه تلون وجهه ثم هتكه بيده وقال ان اشد الناس عذابا يوم القيمة الذين يشبهون بخلق الله.

অর্থঃ- উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। আর আমি ঘরের মধ্যে প্রাণির ছবিযুক্ত একখানা পর্দা লাগিয়েছিলাম। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সেটা দেখলেন, তখন তাঁর চেহারা মুবারক রঙ্গীন হয়ে গেল এবং পর্দাখানা নিজ হাতে ছিড়ে ফেললেন এবং বললেন, নিশ্চয়ই ক্বিয়ামত দিবসে ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে আল্লাহ্ পাক-এর সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণির ছুরত তৈরী করে।” (নাসাঈ শরীফ ২য় জিঃ ৩০০ পৃষ্ঠা) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

 عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صور صورة عذبه الله حتى ينفخ فيها يعنى الروح وليس ينافخ فيها.

অর্থঃ- হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন প্রাণির ছবি তৈরী করবে, আল্লাহ পাক তাকে ঐ ছবির মধ্যে প্রাণ না দেয়া পর্যন্ত শাস্তি দিবেন কিন্তু সেটার মধ্যে প্রাণ দিতে সক্ষম হবে না।” (তিরমিযী শরীফ ১ম জিঃ ২৮ পৃষ্ঠা) উপরোক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় ইমাম, মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণ বিশ্ববিখ্যাত ফিক্বহ্ ও ফতওয়ার কিতাবে বলেছেন বা ফতওয়া দিয়েছেন,

 وان كان ورد فى حق عاص فيكون اشد عذابا من غيرة من العصاة ويكون ذلك ذالا على المعصية المنكورة وفى الترضيح قال اصحابنا وغيرهم صورة الحيوان حرام اشد التحريم وهم من الكبائر سواء صنعه لما يمتهن او لغيره حرام بكل حال لان فيه مضاهاة لخلق الله وسواء كان فى ثوب اوبساط اودينار اودرهم اوفلس او اناء او حائط.

 অর্থঃ- “যদিও অন্যান্য গুরুতর পাপের জন্য হাদীছ শরীফে কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে, কিন্তু ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণকারীর শাস্তি সর্বাপেক্ষা কঠিন হবে এবং কঠোর শাস্তিই পাপের গুরুত্ব প্রমাণ করছে। ‘তাওজীহ্’ কিতাবে উল্লেখ আছে যে, জীব-জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা নিষিদ্ধ,বরং কঠোর নিষিদ্ধ কাজ অর্থাৎ হারাম। এটা কবীরাহ্ গুণাহ। চাই এটাকে যত্ন সম্মান প্রদর্শন করুক কিংবা অন্য যে কোন উদ্দেশ্যেই বানিয়ে থাকুক। কেননা এরূপ কাজে আল্লাহ পাক-এর সৃষ্টির অনুকরণ করা হয়। এটা বস্ত্রে, বিছানায়, মোহরে, মুদ্রায়, পয়সায়, পাত্রে ও প্রাচীর গাত্রে যে কোন স্থানে আঁকা বা নির্মাণ করা হারাম।” (উম্দাতুল ক্বারী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া ৩৭৮ পৃষ্ঠা, আয্ যাওয়াজির  ২য় জিঃ, ৩৩ পৃষ্ঠা)

قال اصحابنا وغيرهم من العلماء تصوير صورة للحيوان حرام شديد التحريم وهو من الكبانر لانه متوعد عليه بهذا الوعيد الشديد المذكور فى الاحاديث سواء صنعه فى ثوب او بساط او دينار اودرهم.

অর্থঃ- “আমাদের মাশায়িখগণ ও উলামাগণ বলেছেন যে, প্রাণির ছবি তৈরী করা হারাম, এমনকি গুরুতর হারাম। এটা কবীরাহ্ গুনাহ্। কেননা এরূপ কাজের জন্য বিশেষ ভীতিপ্রদ অবস্থা হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। এটা কাপড়ে, বিছানায়, মোহরে, টাকা-পয়সায় কিংবা যে কোন স্থানে আঁকা থাকুক না কেন তা সমান কথা।” (শরহে মিরকাত, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া ৩৭৯ পৃষ্ঠা, নাইলুল আওতার ২য় জিঃ, ১০৫ পৃষ্ঠা)

ويكره ان يكون فوق راسه فى السقف اوبيى يديه او بحذاءه تصاوير او صورة معلقة واشدها كراهة ان تكون امام المصلى ثم من فوق راسه ثم على يمينه ثم على شماله ثم خلفه.

অর্থঃ- “নামায মাকরূহ্ তাহ্রিমী হবে, নামাযীর মাথার উপর, ছাদের মধ্যে অথবা সামনে অথবা জুতোর মধ্যে অথবা ঝুলন্ত অবস্থায় প্রাণির ছবি থাকলে। এবং নামায শক্ত মাকরূহ্ তাহ্রিমী হবে, প্রাণির ছবি নামাযীর সামনে, মাথার উপরে, ডানে, বাঁয়ে, পিছনে থাকলে।” (ফাতহুল কাদীর ১ম জিঃ ৩৬২ পৃষ্ঠা, আইনী শরহে হিদায়া ১ম জিঃ ৮০৭ পৃষ্ঠা, বাহ্রুর রায়িক ২য় জিঃ ২৭ পৃষ্ঠা, লিসসুরুখছিল মাবছুত ১ম জিঃ ২১১ পৃষ্ঠা, হিদায়া ১ম জিঃ ১৪২ পৃষ্ঠা, শরহে বিকায়া ১ম জিঃ ১২৮ পৃষ্ঠা, শরহে নিকায়া ১ম জিঃ ২১৭ পৃষ্ঠা, কিতাবুল ফিকাহ আলা মাযাহিবিল আরবা ১ম জিঃ ২৭৮ পৃষ্ঠা, মারাকিউল ফালায় ২৪০ পৃষ্ঠা, জামিউছ ছগীর ২৬ পৃষ্ঠা, মালাবুদ্দা মিন্হু ৬১ পৃষ্ঠা, আনোয়ারে মাহ্মূদ ৫৬ পৃষ্ঠা)

  উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………..

 অর্থঃ- প্রাণীর ছবিযুক্ত স্থানে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রিমী এবং উক্ত নামায দোহ্রানো ওয়াজিব। কেননা আলমগীরি, ফতহুল কাদীর কিতাবে মাকরূর বয়ানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নামাযের মধ্যে মাকরূহ্ তাহ্রিমী হলে নামায দোহ্রানো ওয়াজিব, আর মাকরূহ তান্জীহ্ হলে নামায দোহ্রানো মুস্তাহাব। (আহসানুল ফতওয়া ৩য় জিঃ পৃঃ ৪২৭, আলমগীরি, ফতহুল ক্বাদীর ইত্যাদি)

উপরোক্ত কুরআন-সুন্নাহর আলোচনা দ্বারা এটাই ছাবিত বা প্রমাণিত হলো যে ছবি তোলা, আঁকা, রাখা, দেখা  ইত্যাদি সমস্ত কিছুই হারাম ও নাজায়িয। যেহেতু টিভির মূল বিষয়ই হচ্ছে ছবি সেহেতু টিভি দেখা রাখা ইত্যাদি প্রত্যেকটাই নাজায়িয ও শক্ত হারামের অন্তর্ভুক্ত।   কাজেই যদি ছবি তোলা, আঁকা, রাখা ও টি.ভি দেখা শক্ত হারাম হয় তাহলে সামনে ছবি রেখে ধ্যানমগ্ন হওয়া কি করে জায়িয হতে পারে। অর্থাৎ একইভাবে ছবিকে সামনে রেখে ধ্যানমগ্ন হওয়া শক্ত হারাম ও নাজায়িয।  অতএব, কেউ যদি হারাম জেনে টিভি দেখে ও ছবি সামনে রেখে ধ্যানমগ্ন হয় তাহলে সে কবীরা গুনাহে গুনাহগার হবে এবং চরম ফাসিকের অন্তর্ভুক্ত হবে।  টিভি দেখা ও ছবি সামনে রেখে ধ্যানমগ্ন হতে খালিছ তওবা ইস্তিগফার না করা পর্যন্ত সে মু’মিনে কামিল হতে পারবেনা।  আর কেউ যদি জায়িয মনে করে টিভি দেখে ও ছবি সামনে রেখে ধ্যানমগ্ন হয় তাহলে তা কুফরী হওয়ার কারণে সে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। তখন উক্ত কুফরী থেকে খালিছ তওবা-ইস্তিগফার না করা পর্যন্ত সে মুসলমান থাকতে পারবেনা। বরং তার উপর মুরতাদের হুকুম বর্তাবে। (চলবে)  মুসাম্মত সানজিদা আক্তার সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত মুহম্মদপুর শাখা, ঢাকা  সুওয়ালঃ অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়- জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। তাদের সকল আমল হবে খুবই নিখূঁত ও সুন্দর। তাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে, তাদের রোযা দেখে তোমাদের রোযাকে তোমরা তুচ্ছ ও নগণ্য মনে করবে। তাদের আমল দেখে তোমরা তোমাদের আমলকে হেয় মনে করবে, তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার নিচে যাবেনা। তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন-প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। এদলের আমল যতই তোমাদেরকে আকৃষ্ট করুক না কেন, কখনই তাদের দলে যাবেনা। কারণ প্রকৃতপক্ষে এরা হবে ইসলাম হতে খারিজ, দ্বীন হতে বহির্ভূত। তীর যেমন ধনুক হতে বের হয়ে যায় সে আর কখনও ধনুকের নিকট ফিরে আসেনা। তেমনিই এরা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে, আর কখনও দ্বীনের পথে, কুরআন ও সুন্নাহ্র পথে ফিরে আসবেনা। আমার প্রশ্ন হল, উপরোক্ত হাদীছ ছহীহ্ কি-না? ছহীহ্ হলে এ দ্বারা উদ্দেশ্য কারা? উক্ত হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতের কোন সম্পর্ক আছে কি-না? অনেকে এই হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতকে জড়াতে চান। উক্ত হাদীসের সঙ্গে তাবলীগ জামাতকে জড়ানো সঠিক কি-না? জবাবঃ প্রশ্নে বর্ণিত হাদীছ ছহীহ্। মুহাদ্দিছীনে কেরাম উক্ত হাদীছসহ এ জাতীয় হাদীছসমূহের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এ সব হাদীছ দ্বারা একটি নির্ধারিত জামাত বা খারিজী ফেরক্বা নামে পরিচিত তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর খেলাফত আমলে এই হাদীছসমূহের বাস্তবতা এবং খাওয়ারেজদের অবস্থার সমন্বয় ঘটেছিল। যার দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে বলা চলে যে, এ হাদীছসমূহ দ্বারা একমাত্র খাওয়ারেজদেরকেই বুঝানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণাদি ছাড়া অন্য কোন জামাতকে এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করা যাবেনা। কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়া তাবলীগ জামাতকে এই হাদীছসমূহের মেসদাক বা উদ্দেশ্য বানানো, তাদেরকে খাওয়ারেজ বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে মারাত্মক অন্যায় ও অপরাধ। তাবলীগের নিয়মনীতি ও কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই। বর্তমান বিশ্বে আল্লাহ্ তা’আলা তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে পথহারা, ঈমানহারা, হেদায়েত থেকে বঞ্চিত অসংখ্য মানুষকে হেদায়েত করেছেন, ঈমান আনার তাওফিক দান করেছেন। এছাড়া এ জামাতের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে অসংখ্য জগদ্বিখ্যাত আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ। অতএব, তাবলীগ জামাতকে খারেজী জামাত বলা, মিথ্যা অপবাদ বৈ কিছুই নয়। (ফতহুল বারী ১২ঃ৩৫০, আল মিরকাত ৭ঃ১০৭) উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো- (১) উল্লিখিত হাদীছ শরীফে বর্ণিত গুণাবলী প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে আছে কি? (২) উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা কি শুধু খারিজী ফিরক্বার লোকদেরকেই বুঝানো হয়েছে? নাকি খারিজীদের ন্যায় আক্বীদা পোষণকারীদের ক্ষেত্রেও এ হাদীছ শরীফ প্রযোজ্য? (৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য? (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি? (৫) কুরআন-সুন্নাহ্র কোথাও প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করার নির্দেশ আছে কি? প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করা কুরআন-সুন্নাহ্ মতে জায়িয কিনা? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী। জাওয়াবঃ প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কিত উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।  শুধু তাই নয়, তারা প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের সাফাই গাইতে গিয়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যা করেছে। সাথে সাথে “ছয় উছূলীদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী কোন আক্বীদা-আমল নেই” বলে তাদের নির্লজ্জ দালালী করে নিজেদেরকে অপব্যাখ্যাকারী ও মিথ্যাবাদীরূপে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিক দলীলভিত্তিক আলোচনা করলেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে। তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

(ধারাবাহিক)

ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে  উল্লিখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা  ও মিথ্যাচারীতার খণ্ডনমূলক জবাব-৩

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে।  তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, পর্যায়ক্রমে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলোর সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো- প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ৯ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মনে করে বা প্রচার করে থাকে যে, মাওলানা ইলিয়াস ছাহেব প্রবর্তিত “তাবলীগ জামায়াতই আসল ও একমাত্র নাযাতের পথ।” যে প্রসঙ্গে মাওলানা ইলিয়াস ছাহেব ও তার “মলফুযাতের ২৪নং মলফুযে বলেছেন, “আসল কাজের তরীক্বা তাবলীগ হতে শিখতে হবে।” (প্রকাশিতের পর) ইবাদতের বর্ণনা ইল্মে ফিক্বাহের দ্বিতীয়ভাগ হচ্ছে- “ইবাদত।” বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করার পর বান্দার দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- ইবাদত তথা নেক আমল করার এবং তদ্বসংক্রান্ত ইল্ম বা শিক্ষা লাভ করা। ইমাম, মুজ্তাহিদ ও আওলিয়া-ই-কিরামগণ ইবাদতকে পাঁচ ভাগে বিভক্ত করেছেন- (১) কলেমা, (২) নামায, (৩) রোযা, (৪) হজ্জ (৫) যাকাত। আর এগুলোই মূলতঃ ইসলামের মূল ভিত্তি বা বুনিয়াদ। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 بنى الاسلام  على خمس شهادة ان لا اله الا الله وان محمدا عبده ورسوله واقام الصلوة وايتاء الزكوة والحج وصوم رمضان.

 অর্থঃ- “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি- (১) সাক্ষি দেয়া যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই এবং হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্ পাক-এর বান্দা ও রসূল। (২) নামায আদায় করা, (৩) মালের যাকাত দেয়া, (৪) হজ্জ পালন করা, (৫) রমাদ্বান মাসের রোযা রাখা।” কলেমার বিবরণ  কলেমার দু’টি অংশ রয়েছে। প্রথমতঃ তাওহীদ অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক-এর একত্ববাদ। দ্বিতীয়তঃ রেসালত অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রসূল অর্থাৎ শেষ নবী বা রসূল হিসেবে বিশ্বাস করা। মূলতঃ কলেমা বা ঈমানের তিনটি শাখা রয়েছে- (১) ইক্বরার বিল্ লিসান, (২) তাছদীক্ব বিল জিনান, (৩) আমল বিল আরকান। অর্থাৎ প্রথমতঃ কলেমা শরীফ মুখে উচ্চারণ করা, দ্বিতীয়তঃ অন্তরে বিশ্বাস করা, তৃতীয়তঃ আমলে পরিণত করা তথা আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হুকুম আহ্কাম মেনে চলা। সুতরাং কোন ব্যক্তিকে ঈমানদার হতে হলে কলেমা শরীফ অর্থাৎ তাওহীদ ও রেসালতের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস তো রাখতেই হবে, সাথে সাথে ইসলামের কতগুলো মৌলিক বিষয়ের প্রতিও তাকে ঈমান আনতে হবে বা বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। যে প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম জিজ্ঞাসা করেছিলেন,

 فاخبرنى عن الايمان قال ان تؤمن بالله وملائكته ورسله واليوم الاخر ةتؤمن بالقدر خيره وشره.

  অর্থঃ- “ঈমান সম্পর্কে আমাকে বলুন (ঈমান কাকে বলে)? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মহান আল্লাহ্ পাক, তাঁর ফেরেশ্তাগণ, কিতাবসমূহ, রসূল আলাইহিস্ সালামগণ, পরকালের প্রতি এবং তক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার নামই হচ্ছে ঈমান।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহে নববী, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, মুযাহিরে হক্ব) এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, আমাদের হানাফী মায্হাব মুতাবিক ঈমানদার বা মু’মিন হতে হলে উপরোল্লিখিত বিষয়সমূহকে প্রথমতঃ اقرار باللسان (ইক্বরারবিল্ লিসান) মুখে স্বীকার করতে হবে। দ্বিতীয়তঃ تصديق بالجنان (তাছদীক্ব বিল্ জানান) অন্তরে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। অর্থাৎ মুখে স্বীকার করার সাথে সাথে অন্তরে বিশ্বাস না করলে সে মু’মিন বা মুসলমান বলে গণ্য হবেনা। অতএব, কলেমার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে- ঈমান বা আক্বীদা, যা নুবুওওয়াত ও রেসালত সংশ্লিষ্ট। সুতরাং ঈমান বা আক্বীদা সংক্রান্ত ফরয পরিমাণ ই্লম অর্জন বা শিক্ষা লাভ করা প্রত্যেকের জন্যই ফরয।  অথচ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে কলেমা বা ঈমান, যা নুবুওওয়াত ও রেসালত সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি সম্পর্কে তেমন কিছুই শিক্ষা দেয়া হয়না। শুধুমাত্র শুদ্ধ করে কলেমা শরীফ মুখস্ত করানো হয়, যা আক্বাইদ সংক্রান্ত শিক্ষার তুলনায় একশত ভাগের একভাগও নয়। নামাযের বিবরণ  কালিমার পর ইবাদতের একটি অংশ হচ্ছে, নামায। নামায ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে একটি অন্যতম স্তম্ভ। এ প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

 الصلوة عماد الدين من اقامها فقد اقام الدين ومن تركها فقد هدم الدين.

অর্থঃ- “নামায দ্বীনের স্তম্ভ বা খুঁটি। যে ব্যক্তি নামাজ আদায় করলো, সে দ্বীন কায়েম রাখলো। আর যে ব্যক্তি নামায তরক করলো, সে দ্বীন ধ্বংস করলো।” মূলতঃ নামায সংক্রান্ত শিক্ষা অত্যান্ত ব্যাপক। কারণ নামাযের মধ্যে রয়েছে অনেক হুকুম-আহ্কাম ও মাসয়ালা-মাসায়েল। যেমন- নামায পড়তে গেলে প্রথমেই তাহারাত বা পূর্ণ পবিত্রতা হাছিল করা শর্ত। তাহারাত ব্যতীত নামাজ শুদ্ধ হয়না। আর এ তাহারাতের অন্তর্ভূক্ত হলো- ওযু ও গোসল। সুতরাং তাহারাত সম্পর্কিত ফরয পরিমাণ ইল্ম বা শিক্ষা অর্জন করাও সকল মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরজে আইন। অথচ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের ৬ (ছয়) উছূলে তাহারাতের উল্লেখ নেই। অতঃপর নামাযে তিলাওয়াত করার জন্য প্রয়োজনীয় সুরা-ক্বিরআত শুদ্ধভাবে পাঠ করতে শিখাও ফরয। আর শুদ্ধ করে কুরআন তিলাওয়াত করতে হলে ফরয পরিমাণ তাজ্বীদের ইল্ম বা শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। তাজ্বীদ শিক্ষা করা ব্যতীত কুরআন শরীফ শুদ্ধ করে পাঠ করা দুরূহ্ ব্যাপার। অথচ নামাযের মধ্যে বিশেষ করে মাখরাজ যদি সঠিকভাবে আদায় না হয়, তবে নামায বাতিল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই অধিক। কিন্তু তাজ্বীদের এ গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাও প্রচলিত তাবলীগের ৬(ছয়) উছূলে খুঁজে পাওয়া যাবেনা। তারপর রয়েছে- নামাযের আরকান-আহ্কাম, মাসয়ালা-মাসায়েল। প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে উল্লিখিত মাসয়ালা বা বিষয়সমূহের যৎযামান্য শিক্ষাই দিয়ে থাকে।   অতএব, প্রমাণিত হলো যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে নামাযসম্পর্কিত পূর্ণ শিক্ষা দেয়া তো দূরের কথা, ফরয পরিমাণ শিক্ষাও দেয়া হয়না। রোযার বিবরণ

পবিত্র রমজান মাসের ২৯ অথবা ৩০ দিন রোযা রাখা ফরয। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,

كتب عليكم الصيام كما كتب على الذين من قبكم لعلكم تتقون.

অর্থঃ- “তোমাদের উপর (রমজানের) রোযা ফরয করা হলো, যেরূপ তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল। যেন তোমরা মুত্তাক্বী হতে পার।” (সূরা বাক্বারা/১৮৩) আর হাদীছ শরীফে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

ان الله تبارك وتعالى فرض صيام رمضان عليكم وسننت لكم قيامه.

অর্থঃ- “নিশ্চয় আল্লাহ্ পাক তাবারুকু তা’য়ালা তোমাদের উপর রমজানের রোযাকে ফরয করেছেন। আর আমি তোমাদের উপর তারাবীহ্ নামাজকে সুন্নত করেছি।” (নাসাঈ শরীফ) অতএব, রোযা রাখা যেহেতু ফরয, সেহেতু রোযা সম্পর্কিত ফরয পরিমাণ ইল্ম অর্জন করাও ফরয। অর্থাৎ রোযার প্রয়োজনীয় মাসয়ালা-মাসায়েল যেমন- চাঁদ দেখা, রোযার ফরয-ওয়াজিব-সুন্নত সম্পর্কে জানা, রোযা ভঙ্গ হওয়ার কারণ এবং রোযার ক্বাজা ও কাফ্ফারা ইত্যাদি সকল বিষয়ে ইল্ম বা শিক্ষা লাভ করা সকলের জন্যই ফরয-ওয়াজিব। অথচ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে ইসলামের একটি অন্যতম ভিত্তি রোযা সম্পর্কিত ইল্ম বা শিক্ষা সম্পূর্ণই অনুপস্থিত। হজ্জের বিবরণ হজ্জ ইসলামের বুনিয়াদী একটি ইবাদত। এই হজ্জ শুধুমাত্র সম্পদশালী ও সামর্থবানদের উপরই জীবনে একবার আদায় করা ফরয। অর্থাৎ শাওয়াল মাস থেকে জ্বিলহজ্জ মাসের দশ তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যার নিকট মক্কা শরীফে যাতায়াতের এবং পরিবারের ভরণ-পোষণের পাথেয় থাকবে, তার উপর হজ্জ করা ফরয।  এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক কালামে পাকে ইরশাদ ফরমান,

ولله على الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا.

অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) উদ্দেশ্যে কা’বা শরীফ গমনে সামর্থবান ব্যক্তিদের উপর হজ্জ করা অবশ্য কর্তব্য।” (সূরা আলে ইমরান/৯৭) আর হাদীছ শরীফে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

يايها الناس قدفرض عليكم الحج فحجوا.

অর্থঃ- “হে মানুষেরা, তোমাদের উপর হজ্জকে ফরয করা হয়েছে, সুতরাং তোমরা হজ্জ আদায় কর।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত, শরহে নববী, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, শরহুত ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ, মিরআতুল মানাজীহ) অতএব, প্রমাণিত হলো যে, হজ্জ একটি বুনিয়াদী ফরয ইবাদত। তাই যারা হজ্জ আদায় করার সামর্থ রাখে, তাদেরকে হজ্জের প্রয়োজনীয় শিক্ষা লাভ করতে হবে। মূলতঃ হজ্জের শিক্ষা অনেক ব্যাপক। যেমন- হজ্জের প্রকারভেদ, ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, ইহ্রাম, ইহ্রাম ভঙ্গ হওয়ার কারণ ইত্যাদি সকল বিষয়ের প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করা হজ্জ পালনকারী সকলের জন্যই ফরয। অথচ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত প্রবর্তীত ৬ (ছয়) উছূলী শিক্ষায় হজ্জের কোন চিহ্নও নেই। অর্থাৎ হজ্জ সম্পর্কিত শিক্ষার সম্পূর্ণটাই তাদের মধ্যে অনুপস্থিত। যাকাতের বিবরণ যাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি বিশেষ স্তম্ভ। যাকাত আদায় করা আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন,

اقيموا الصلوة واتوا الزكوة.

 অর্থঃ- “তোমরা নামাযও যাকাত আদায় কর।” কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে যাকাত আদায় না করার কারণে কঠিন ও শক্ত আযাবের কথা উল্লেখ রয়েছে।  এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 ولايحسبن الذين يبخلون بما اتهم الله من فضله هو خيرا لهم بل هو شر لهم سيطوقون ما بخلوا به يوم القيمة ولله ميراث السموت والارض والله بما تعملون خبير.

অর্থঃ- “আল্লাহ পাক তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে যা দান করেছেন তাতে যারা কৃপণতা করে এই কার্পণ্য তাদের জন্য কল্যাণ কর হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের জন্য একান্তই ক্ষতিকর রূপে পরিগণিত হবে। যে ধন-সম্পদ নিয়ে তারা কার্পণ্য করে তা কিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পড়ানো হবে। আসমান জমিনের সত্বাধিকার বা মালিকানা আল্লাহ পাক-এরই এবং তোমরা যা কিছু কর সে সম্পর্কে আল্লাহ পাক পূর্ণরূপে খবর রাখেন।” (সূরা আলে ইমরান/১৮০) যাকাতের গুরুত্ব সম্পর্কে উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من اتاه الله مالا فلم يؤد زكواته مثل له ماله يوم القيامة شجاعا اقرع ه زبيبتان يطوقه يوم القيامة ثم ياخذ بلهز متيه ثم يقو انا مالك وكنزك.

অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যাকে সম্পদ দেয়া হয়েছে, অথচ সে ব্যক্তি সম্পদের যাকাত আদায় করলোনা। তার সে সম্পদ ক্বিয়ামতের দিন শিং বিশিষ্ট সর্পে পরিণত হবে। সে সাপ তাকে ক্বিয়ামতের দিন শাস্তি দিবে এবং বলবে- আমি তোমার সেই সঞ্চিত সম্পদ।” (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল কারী, ইরসাদুস্ সারী, তাইসীরুল ক্বারী) অতএব, যে ব্যক্তির বৎসরের আবশ্যিক ব্যয় বাদ দিয়ে তার নিকট ৭.৫০ (সাড়ে সাত) তোলা স্বর্ণ অথবা ৫২.৫০ (সাড়ে বায়ান্ন) তোলা রূপা বা সেই পরিমাণ টাকা এক বৎসর জমা থাকবে, তার উপর ৪০ ভাগের একভাগ যাকাত হিসাবে দান করা ফরয। সুতরাং যাকাত সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় ইল্ম বা শিক্ষা যেমন – যাকাতের হার, কি কি জিনিসের যাকাত দিতে হয়, কাকে কাকে যাকাত দিতে হয় এবং কখন যাকাত ফরয হয় ইত্যাদি সম্পর্কে ফরয পরিমাণ ইল্ম অর্জন করা ফরজে আইন। অথচ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে যাকাত সম্পর্কিত মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা দেয়ার কোন উছূল নেই। অর্থাৎ ইসলামের একটি বুনিয়াদী ফরয, যাকাত সম্পর্কিত শিক্ষার সম্পূর্ণটাই তাদের ৬(ছয়) উছূলী শিক্ষার মধ্যে অনুপস্থিত।

মুহম্মদ মিজানুর রহমান মতলব, চাঁদপুর

সুওয়ালঃ সম্প্রতি এক ব্যক্তি যে বেশ কিছু খুন করেছে তার ফাঁসি নিয়ে নানা জনের নানা প্রশ্ন। কেউ কেউ মনে করে, সে ক্ষমা পাবে না। আবার কেউ কেউ মনে করে, সে জাহান্নামী। আবার কেউ কেউ তার বিপরীত মনে করে যেহেতু তার ফাঁসির পূর্বে সে তওবা-ইস্তিগ্ফার করেছে তাই সে ক্ষমাপ্রাপ্ত ও জান্নাতী।  প্রকৃতপক্ষে উক্ত খুনি ব্যক্তি সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়সালা কি হবে? তা জানতে আগ্রহী।

জাওয়াবঃ শরীয়তের ফতওয়া জাহিরের (বাহ্যিক) উপর। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ‘সূর্য পশ্চিম আকাশে উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত (আমভাবে) তওবার দরজা খোলা রয়েছে। আর (খাছ বা ব্যক্তিগতভাবে) প্রত্যেক ব্যক্তির মৃত্যুর গড়গড়া উঠার পূর্ব পর্যন্ত তওবার দরজা খোলা রয়েছে। অতএব, যেহেতু সূর্য এখনো পশ্চিম আকাশে উদিত হয়নি সেহেতু কোন ব্যক্তি যদি কেবল মৃত্যুর গড়গড়া উঠার পূর্বে খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করে তাহলে সে যত গুণাহ্ই করুক না কেন তার সমস্ত গুণাহ্ই আল্লাহ পাক ক্ষমা করে দিবেন। বর্ণিত রয়েছে, প্রশ্নোল্লিখিত খুনি ব্যক্তি মসজিদের ইমাম ছাহেবের কাছে তওবা করেছে। এমনকি ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় সে জোড়ে জোড়ে কলেমা শরীফ পাঠ করেছে। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

التائب من الذنب كمن لاذنثب له.

 অর্থঃ- “তওবাকারী যেন কোন গুণাহ্ই করেনি।” (বাইহাক্বী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত) আরো ইরশাদ হয়েছে,

كل بنى ادم خطاء خير الخطائين التوابون.

 অর্থঃ- “প্রত্যেক আদম সন্তানই গুণাহ্গার। গুণাহ্গারদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ঐ ব্যক্তি যে বেশী বেশী তওবা-ইস্তিগ্ফার করে।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত) এ সকল হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় বর্ণিত রয়েছে, বান্দা যদি সমূদ্রের ফেনা পরিমাণ, মরুভূমির বালুকণা পরিমাণও গুণাহ্খতা করে আর সে যদি একবার খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করে আল্লাহ পাক তৎক্ষনাত তাকে ক্ষমা করে দেন।  এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফের ছহীহ কিতাব ‘বুখারী ও মুসলিম শরীফে’ বর্ণিত রয়েছে,

عن ابى سعيدن الخدرى قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كان فى بنى اسرائي رجل قتل تسعة وتسعين انسانا ثم خرج يسال فاتى راهبا فساله فقال اله توبة قال لا فقتله وجعل يسأل فقال له رجل ائت فرية كذا وكذا فادركه الموت فناء بصدره نحوها فاختصمت فيه ملائكة الرحمة وملائكة العذاب فاوحى الله الى هذه ان تقربى والى هذه ان تباعدى فقال قيسوا ما بينهما فوجد الى هذه اقرب بشبر فغفرله.

অর্থঃ- “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, বণী ইসরাঈলের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিলো যে নিরানব্বই জন মানুষকে হত্যা করেছিলো। অতঃপর সে ফতওয়া জিজ্ঞাসা করার জন্য বের হলো এবং একজন দরবেশের নিকট গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, এইরূপ ব্যক্তির জন্য তওবার দরজা খোলা আছে কিনা? তিনি বললেন, না নেই। অতঃপর সে তাকেও হত্যা করলো। এবং বরাবর লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করতে অব্যাহত রইল। এক ব্যক্তি বললো, অমুক গ্রামে গিয়ে অমুককে জিজ্ঞাসা করো। এ সময় তার মৃত্যু এসে উপস্থিত হলো এবং মৃত্যুকালে সে আপন সিনাকে ঐ গ্রামের দিকে কিছু বাড়িয়ে দিলো। অতঃপর রহমতের ফেরেশ্তা ও আযাবের ফেরেশ্তাদল পরস্পর আলোচনা করতে লাগলো, কারা তার রূহ নিয়ে যাবে। এ সময় আল্লাহ পাক ঐ গ্রামকে বললেন, তুমি মৃত ব্যক্তির নিকটে আস। আর তার নিজ গ্রামকে বললেন, তুমি দূরে সরে যাও। অতঃপর ফেরেশ্তাদের বললেন, তোমরা উভয় স্থানের দূরত্ব মেপে দেখ। মাপে তাকে এই (তওবার) গ্রামের দিকে এক বিঘত নিকটে পাওয়া গেলো। সুতরাং তাকে ক্ষমা করে দেয়া হলো।” অর্থাৎ বণী ইসরাঈলের এক ব্যক্তি যে একশ’টি খুন করেছিল সে তওবার উদ্দেশ্যে তওবার স্থলে যাওয়ার জন্য শুধুমাত্র সে তার সিনাটাকে ঘুরিয়েছিল এমতবস্থায় তার মৃত্যু উপস্থিত হয়ে গেল। অর্থাৎ রূহ কবজকারী দু’দল ফেরেশ্তা- একদল যারা নেক্কারদের রূহ কবজ করেন আরেকদল যারা বদ্কারদের রূহ কবজ করেন তারা উপস্থিত হয়ে পরস্পর আলোচনা করতে লাগলেন, কারা তার রূহ কবজ করবেন। অর্থাৎ তাকে নেক্কার হিসেবে রূহ কবজ করা হবে, না বদকার হিসেবে রূহ কবজ করা হবে? কারণ একদলের বক্তব্য হলো, সে তওবা করার জন্য খালিছ নিয়ত করেছে কাজেই সে নেক্কার। তাকে নেক্কার হিসেবেই রূহ কবজ করতে হবে। আরেকদলের বক্তব্য হলো, যেহেতু সে একশ’টি  খুন করেছে সেহেতু তাকে বদ্কার হিসেবেই রূহ কবজ করতে হবে। যখন উভয়দল ফেরেশ্তা সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারলেন না তখন তাঁরা আল্লাহ পাক-এর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, হে বারে ইলাহী! এ ব্যক্তির সঠিক ফায়সালা কি হবে? তাকে কি নেক্কার হিসেবে রূহ কবজ করা হবে? না কি বদ্কার হিসেবে রূহ কবজ করা হবে? আল্লাহ পাক যেহেতু রহমান, রহীম, গফ্ফার, সাত্তার, তিনি সামান্যতম ওসীলা পেলেই বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। তাই আল্লাহ পাক ইরশাদ করলেন, যেহেতু এ বান্দা একশ’টি খুন করেছে আবার তওবার জন্য খালিছ নিয়তও করেছে সেহেতু তোমরা এক কাজ কর, এ বান্দার মৃত্যুর স্থল থেকে তার তওবার স্থল এবং তার বাড়ীর স্থল উভয়টাই মেপে দেখ। যদি তওবার স্থল নিকটবর্তী হয় তাহলে সে নেক্কার। আর তওবার স্থল দূরবর্তী হলে সে বদ্কার।  প্রকৃতপক্ষে তার বাড়ীর স্থলই তওবার স্থল থেকে নিকটবর্তী ছিল; কিন্তু আল্লাহ পাক যেহেতু রহমান, রহীম, গফ্ফার, সাত্তার সেহেতু তিনি ফেরেশ্তাদের অজান্তেই যমীনকে আদেশ করলেন যেন তওবার স্থল মৃত্যুর স্থলের নিকটবর্তী হয়ে যায় এবং তাই হলো।  তখন দু’দল ফেরেশ্তা তওবার ও বাড়ীর উভয় স্থলের দূরত্ব মাপলেন। মেপে দেখলেন যে, তার তওবার স্থলই নিকটবর্তী আর বাড়ীর স্থলই দূরবর্তী।  আল্লাহ পাক তো সবই জানেন। তারপরেও ফেরেশ্তারা আল্লাহ পাককে জানালেন যে, হে বারে ইলাহী! তার তওবার স্থলই নিকটবর্তী। এখন আমরা কি করব? তখন আল্লাহ পাক বললেন, যেহেতু তার তওবার স্থল নিকটবর্তী সেহেতু তাকে নেক্কার হিসেবেই রূহ কবজ কর। অতঃপর তাই করা হলো এবং তাকে ক্ষমা করা হলো।  অতএব, বান্দা যত পাপই করুক না কেন সে যদি খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করে তাহলে আল্লাহ পাক তাকে ক্ষমা করে দেন। আর এ ক্ষমার কারণেই সে নাযাতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। সুতরাং প্রশ্নোল্লিখিত ব্যক্তি সম্পর্কে যে মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, ‘সে ক্ষমাপ্রাপ্ত ও জান্নাতী কিনা?’ এর জাওয়াব হচ্ছে,  প্রথমতঃ ‘সে ক্ষমাপ্রাপ্ত কিনা?’  শরীয়তের ফতওয়া হচ্ছে, জাহিরের উপর। যদি সে ব্যক্তি খালিছ তওবা-ইস্তিগ্ফার করে থাকে তাহলে সে অবশ্যই ক্ষমাপ্রাপ্ত।  আর বাতিনান আল্লাহ পাক তাকে ক্ষমা করবেন কিনা, তা আল্লাহ পাক-এর ইখতিয়ার। এটা ফতওয়ার অধীন নয়। দ্বিতীয়তঃ জান্নাতী কিনা?

এর জাওয়াব হচ্ছে, কোন ব্যক্তি যদি সত্যিই খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করে তবে শরীয়তের ফতওয়া হচ্ছে জাহিরের উপর, তাহলো আল্লাহ পাক তাকে নাযাত দিয়ে জান্নাতী করে দেন।  আর বাতিনান আল্লাহ পাক তাকে জান্নাতী করবেন, না জাহান্নামী করবেন, তা আল্লাহ পাক-এর ইখ্তিয়ার। এটা ফতওয়ার অধীন নয়।

উল্লেখ্য, গুণাহ্ থেকে তওবা-ইস্তিগফার করলে আল্লাহ পাক ক্ষমা করে দেন। এই ভেবে কেউ যেন গুণাহ্র কাজে ধাবিত ও মশগুল না হয়। কারণ আল্লাহ পাক না করুন এমনও হতে পারে যে, তার মৃত্যুর পয়গাম এসে উপস্থিত হবে আর সে তওবা-ইস্তিগ্ফার করার সুযোগও পাবেনা। তখন তাকে কঠিন ফায়সালার সম্মুখীন হতে হবে।  আল্লাহ পাক বলেন,

ليست التوبة للذين يعملون السيأت حتى اذا حضر احدهم الموت قال انى تبت الان.

অর্থঃ- “ঐ ব্যক্তির জন্য তওবা নয়, যে পাপ কাজে রত রয়েছে। এমনকি এ অবস্থায় যখন তাদের কারো মৃত্যু (মৃত্যুর গড়গড়া) এসে উপস্থিত হয় তখন সে বলে, আমি এখন তওবা করছি।” (সূরা নিসা/১৮) {দলীলসমূহঃ (১) আহকামুল কুরআন, (২) কুরতুবী, (৩) খাযিন, (৪) বাগবী, (৫) মাযহারী, (৬) ইবনে কাছীর, (৭) দুররে মনছূর, (৮) বুখারী, (৯) মুসলিম, (১০) তিরমিযী, (১১) ইবনে মাজাহ, (১২) বাইহাক্বী, (১৩) মিশকাত, (১৪) ফতহুল বারী, (১৫) উমদাতুল ক্বারী, (১৬) শরহে নববী, (১৭) তুহফাতুল আহওয়াজী, (১৮) মিরকাত ইত্যাদি}

মুহম্মদ শাহিনূর রহমান ওয়ার্লেস কলোনী, লালমনিরহাট

সুওয়ালঃ  যে সমস্ত মাওলানা টি,ভি, চ্যানেলে প্রোগ্রাম (অনুষ্ঠান) করে তাদের ফতওয়া গ্রহণযোগ্য কিনা?

জাওয়াবঃ না, তারা চরম ফাসিকের অন্তর্ভুক্ত। ফাসিকের ফতওয়া শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। ফাসিকের ফতওয়া থেকে সদা-সর্বদা সাবধান থাকতে হবে। আর যদি তারা জায়িয মনে করে টি.ভি চ্যানালে অনুষ্ঠান করে তাহলে তারা কাফিরের অন্তর্ভুক্ত হবে। কাফিরের ফতওয়া গ্রহণযোগ্য হওয়ার প্রশ্নই উঠেনা। {দলীলসমূহঃ আবু দাউদ শরীফ, আদাবুল মুফতিয়্যীন, আলী ইতকান, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৩২, ১২২-১২৯তম সংখ্যা।}   সেলিম আহমদ সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত মিরপুর শাখা, ঢাকা

সুওয়ালঃ  ইসলামের নামে ভোট দেয়া কি?

জাওয়াবঃ হারাম ও কুফরী। {দলীলসমূহঃ তাফসীরে রুহুল বয়ান, মুয়াত্তা মালিক, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ২৮, ৩০, ৮৪, ৯০, ৯৭তম সংখ্যা।}

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব