মুহম্মদ মুহিউদ্দীন সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত সন্দ্বীপ শাখা, চট্টগ্রাম।
সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানী মাযহাবের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর- জানুয়ারী/২০০৩’০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে ‘‘বিত্রের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম এবং বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব পাবে বলে উল্লেখ করেছে।’’ তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে বুখারী, ইবনে মাজাহ্, নাসায়ী থেকে দলীল হিসেবে কয়েকখানা হাদীছ শরীফও উল্লেখ করেছে। আর হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ডিসেম্বর/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে,‘‘বিতির নামাযের পর দুই রাক্আত নফল নামায …….. দাঁড়িয়ে পড়া ভাল। কারণ, নফল নামায বিনা কারণে বসে পড়লে অর্ধেক সাওয়াব হয়।’’ এখন আমার সুওয়াল হলো তারা হালকী নফল নামায সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে হাদীছ শরীফ গুলো উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহনযোগ্য। তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডন সহ হালকী নফল সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল আদিল্লাহ্ পেশ করে আমাদের ঈমান আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায যাকে “হালক্বী নফল” বলা হয়, তা দাঁড়িয়ে পড়া সম্পর্কে অখ্যাত মাসিক পত্রিকাদ্বয়ের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি বরং ভুল, অশুদ্ধ এবং ক্ষেত্র বিশেষে কুফরীমুলক হয়েছে। কারণ তা মনগড়া, দলীলবিহীন এবং কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ হয়েছে। যেমন, হাটহাজারীর অখ্যাত মাসিক পত্রিকায় বলা হয়েছে, ‘বিতির নামাযের পর দুই রাক্আত নফল নামায ………. দাঁড়িয়ে পড়া ভাল। কারণ, নফল নামায বিনা কারণে বসে পড়লে অর্ধেক সাওয়াব হয়।’’ হাটহাজারী ও রেযাখানী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, নফল নামায বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব হলেও বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়াই মুস্তাহাব সুন্নত, যা উত্তম ও পূর্ণ ছওয়াব এবং অধিক ফযীলতের কারণ। কেননা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল এবং অন্যান্য নফলের ক্ষেত্রে একই হুকুম নয়। বরং বিত্র নামাযের পর দুই রাকায়াত নফলের হুকুম অন্যান্য নফল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অর্থাৎ অন্যান্য নফল দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব। আর হালক্বী নফল অর্থাৎ বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব আর বসে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব। কারণ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্রের পর দু’রাকায়াত নফল নামায কখনও দাঁড়িয়ে আদায় করেন নাই। বরং বসেই আদায় করেছেন। যা সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। হাদীছ শরীফে হালকী নফল বসে পড়ার প্রমাণ প্রথমে আমরা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত হালকী নফল সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ সমূহ বিভিন্ন হাদীছ শরীফের কিতাব থেকে উল্লেখ করে তার ব্যাখ্যা বর্ণনা করবো। অতঃপর তাদের বক্তব্যগুলো ধারাবাহিকভাবে দলীলের দ্বারা খণ্ডন করে বিস্তারিতভাবে জাওয়াব দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ। যেমন, “ইবনে মাজাহ শরীফের” ৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
حدثنا محمد بن بشار حدثنا حماد بن مسعدة حدثنا ميمون بن موسى المرئى عن الحسن عن امه عن ام سلة رضى الله عنها ان النبى صلى اله عليه وسلم كان سصلى بعد الوتر ركعتين خفيفتين وهو جالس.
অর্থঃ- “ইবনে মাজাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মুহম্মদ ইবনে বাশ্শার রহমতুল্লাহি আলাইহিমা। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত হাম্মাদ ইবনে মাসয়াদা রহমতুল্লাহি আলাইহিমা। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মায়মূনা ইবনে মূসা আল-মারায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি তাঁর মা থেকে বর্ণনা করেন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে যে, আখেরী রাসুল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামাযের পর সংক্ষিপ্তাকারে দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করতেন।” “মিশকাত শরীফের” ১১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وعن ام سلمة رضى الله عنها ان النبى صلى الله عليه وسلم كان سصلى بعد الوتر ركعتين رواه الترمذى وزاد ابن ماجة خفيفتين وهو جالس.
অর্থঃ- “উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয় নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায আদায় করতেন।-তিরমিযী উহা বর্ণনা করেছেন। আর ইবনে মাজাহ্ আরোও বর্ণনা করেছেন যে, বিত্র নামাযের পর উক্ত দু’রাকায়াত নফল নামায সংক্ষিপ্তাকারে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসেই আদায় করতেন।’’ ‘‘ইবনে মাজাহ্’’শরীফের ৮৫ পৃষ্ঠায় ও মিশকাত শরীফের ১১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن عائشة رضى الله عنها قالت كان رسول الله صلى الله عيه وسلم يوتر بواحدة ثم يركع ركعتين يقرأ فيهما وهو جالس فاذا اراد ان يركع فام فركع.
অর্থঃ- “হযরত আয়শা সিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (পৃর্বের দু’রাকায়াতের সাথে) এক রাকায়াত বিত্র নামায আদায় করলেন। অতঃপর তিনি দু’রাকায়াত নামায আদায় করলেন, তাতে তিনি ক্বিরয়াত পাঠ করলেন বসা অবস্থায়। অতঃপর যখন রুকু করতে ইচ্ছা করলেন, তিনি দাঁড়ালেন অতঃপর রুকু করলেন।” “মুসনাদুল ইমাম আহমদ্ ইবনে হাম্বল” কিতাবের ৫ম খণ্ডের ২৬০ পৃষ্ঠায় ও মিশকাত শরীফের ১১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
حدثنا عبد الله حدثنى أبى حدثنا عبد الصمد حدثنى ابى حدثنا عبد العزيز يعنى ابن صهيب عن ابى غالب عن ابى امامة رضى الله عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يصليهما بعد الوتر وهو جالس يقرأ فيهما اذا زلزلت الارض وقل يايها الكافرون.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন আমার পিতা। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুছ ছমাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন আমার পিতা। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি,অর্থাৎ ইবনে ছুহাইব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবূ গালিব রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন, হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয় নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামায আদায়ের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করেছেন। আর উক্ত দু’ রাকায়াত নামাযে
اذا زلزلت الارض এবং قل يا يها الكافرون
অর্থাৎ সুরা যিলযাল এবং সুরা কাফিরুন পাঠ করতেন।” ‘‘ইবনে মাজাহ’’ঞ্জশরীফের ৮৫ পৃষ্ঠার ২নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
عن عائشة رضى الله عنها كان يصلى ثلث عشرة ركعة يصلى ثمان ركعات ثم يوتر ثم يصلى ركعتين وهو جالس.
অর্থঃ- “হযরত আয়শা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে,তিনি বলেন আখিরী রসুল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (রাতে) তের রাকায়াত নামায আদায় করতেন। আট রাকায়াত (তাহাজ্জুদ) পড়ে তিন রাকায়াত বিত্র পড়তেন। অতঃপর বসে বসে দু’রাকায়াত (নফল) নামায পড়তেন।” ‘‘নাসায়ী শরীফের’’ ১ম খণ্ডের ২৫০ পৃষ্ঠার ৫নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
وعن ابى امامة البا هلى رضى الله عنه كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلى ركعتين بعد الوتر وهو جالس يقرأ فيهما باذا زلزلت الارض وقل يايها الكافرون. অর্থঃ- “হযরত আবু উমামা আল-বাহিলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামায আদায়ের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করেছেন। আর উক্ত দু’রাকায়াত নামাযে اذا زلزلت الارض এবং قل يايها الكافرون অর্থাৎ সুরা যিলযাল এবং সুরা কাফিরুন পাঠ করতেন।” ‘‘মুসনাদুল ইমাম আহমদ্ ইবনে হাম্বল’’ কিতাবের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ২৯৮-২৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
حدثنا عبد الله حدثنى أبى حدثنا حماد بن مسعدة حدثنا ميمون بن موسى المرائى عن الحسن عن أمه عن أم سلمة رضى الله عنها ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يركع ركعتين بعد الوتر وهو جالس.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, আব্দুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন আমার পিতা। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হাম্মাদ ইবনে মাসয়াদা রহমতুল্লাহি আলাইহিমা। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন মায়মূনা ইবনে মূসা আল-মারায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি তাঁর মা থেকে বর্ণনা করেন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে, নিশ্চয় নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করতেন।” ‘‘নাসায়ী শরীফের’’ ১ম খণ্ডের ২৫০ পৃষ্ঠার ৫নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
عن ام سلمة رضى الله عنها قالت كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلى بعد الوتر ركعتين خفيفتين وهو جالس.
অর্থঃ- “উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ্ পাক-এর রসুল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামাযের পর সংক্ষিপ্তাকারে দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করতেন।”
অতএব উপরোক্ত হাদীছ শরীফ সমূহ থেকে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হলো যে,আল্লাহ্ পাক-এর রসুল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায সংক্ষিপ্তাকারে বসেই আদায় করেছেন। কারন, উক্ত হাদীছ শরীফ সমূহে جالس শব্দটি সুস্পষ্টভাবেই উল্লেখ আছে যা দ্বারা বুঝা যায় যে, উক্ত নামায বসেই আদায় করা সুন্নত। আর উক্ত হাদীছ শরীফ সমূহের উপর ভিত্তি করেই ইমাম, মুজতাহিদ ও ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ বিত্রের নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়াকেই মুস্তাহাব সুন্নত,অধিক ফযীলতের কারণ বলে ফতওয়া দেন। যেমন এ প্রসঙ্গে হানাফী মাযহাবের বিশিষ্ট ইমাম ও মুজতাহিদ, বিশিষ্ট ফক্বীহ, মুজাদ্দিদিয়া ত্বরীকার বিশিষ্ট ছূফী, বিশ্ববিখ্যাত মা’রিফাত তত্ত্ববিদ আউলিয়া হযরত মির্জা মাযহার জানে জানান শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বিশিষ্ট খলীফা ইলমুল হুদা, বাইহাক্বীয়ে ওয়াক্ত, বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী, সর্বজনমান্য, সর্বজনস্বীকৃত ও বিশ্বখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে মাযহারীর” সম্মানিত লিখক মুফাস্সিরে আ’যম, আল্লামা হযরত কাজী ছানাউল্লাহ্, হানাফী, মুজাদ্দিদী পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ফার্সী ভাষায় রচিত বিখ্যাত কিতাব যা প্রায় তিনশত বছর ধরে অত্যন্ত আদব ও মুহব্বতের সঙ্গে পঠিত হয়ে আসছে। সেই “মালাবুদ্দা মিনহু” কিতাবের ৭৪, ৭৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে,
بعد وتر دو ركعت نشسته خواندن مستحب ست.
অর্থাৎ- “বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে আদায় করা মুস্তাহাব।” হাদীয়ে বাঙ্গাল আল্লামা হযরত কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর উর্দু ভাষায় লিখিত “মিফতাহুল জান্নাত” কিতাবে উল্লেখ করেছেন, “হালকী নফল নামায বসে পড়া সুন্নত।”
ফক্বীহুল আছার, মুফতীউল আ’যম, আল্লামা হযরত সাইয়্যিদ আমীমুল ইহ্সান মুজাদ্দিদী বরকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর উর্দু ভাষায় লিখিত “হাদিয়াতুল মুছল্লীন” কিতাবে বর্ণনা করেছেন, “হালকী নফল নামায বসে পড়া মুস্তাহাব- সুন্নত।” এছাড়া ফিক্বাহ্র বিশিষ্ট কিতাব বাজ্জারেও অনুরূপ ফতওয়া বর্ণিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্য, দেওবন্দীদের দ্বারা লিখিত “আকাবের কা রমাজান” নামক কিতাবে লিখিত হয়েছে, “হযরত শায়খুল হিন্দ তিনি দু’রাকায়াত নফল বরাবর বসেই পড়তেন। কেউ একবার হযরতের খিদমতে আরজ করল এতে (বসে পড়াতে) অর্ধেক ছওয়াব হয় মাত্র। তখন হযরত উত্তরে বলেছিলেন, হ্যাঁ ভাই, ছওয়াব বেশী না হলেও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণের মধ্যেই মন লাগে বেশী। আমার ধারণা, রীতি অনুসারে এতে ছওয়াব অর্ধেকই হবে বটে তবে সুন্নতের প্রতি এই যে অপার অনুরাগ এর ছওয়াব হয়ত পুরা ছওয়াবকে ছাড়িয়ে যাবে।”
হ্যাঁ, মাহমুদুল হাসান ছাহেবের উক্ত আমল অর্থাৎ হালকী নফল নামায বসে আদায় করা যথার্থই ছিল। তবে তিনি বসে পড়াতে ছওয়াবের ব্যাপারে যে ধারণা করেছেন তা আদৌ শুদ্ধ হয়নি। কারণ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ তথা সুন্নতের ইত্তিবার মধ্যেই ছওয়াব বেশী রয়েছে। কাজেই অন্যান্য নফল বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব এবং দাঁড়িয়ে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব। আর হালকী নফল বসে পড়লেই বেশী ছওয়াব এবং বসে পড়াই উত্তম, যেহেতু এটা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও হাদীস শরীফের সহীহ্ কিতাব সুনানে ইবনে মাজাহ্-এর সম্মানিত লেখক উক্ত দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই পড়া যে মুস্তাহাব- সুন্নত, তা সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য আলাদা বাব রচনা করেছেন। যার নাম দিয়েছেন,
باب ما جاء فى الركعتين بعد الوتر جالسا.
অর্থঃ- এ অধ্যায়টি বিত্রের পর দু’রাকায়াত নামায বসে আদায় করা সম্পর্কে। কাজেই বিত্রের নামাযের পর দু’ রাকায়াত নফল নামায যেহেতু আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসেই আদায় করেছেন, সেহেতু তা বসেই আদায় করা উত্তম ও অধিক ফযীলতের কারণ। উক্ত নামায দাড়িয়ে আদায় করা উত্তম বলার অর্থই হলো উল্লিখিত হাদীছ শরীফকে অস্বীকার করা,সুন্নত অস্বীকার করা, সুন্নতের ফযীলত কম বলে দাবী করা ও অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ ও ফুক্বাহা-ই- কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিমগণকে অস্বীকার করা যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। (চলবে)
মুহম্মদ লুতফর রহমান, মুন্সীগঞ্জ। মুসাম্মত রতনা বেগম শরীফ সুন্দর, পীরগাছা, রংপুর।
সুওয়ালঃ জনৈক মুসলমান ব্যক্তি এক হিন্দু পীরের অনুসারী। ঐ ব্যক্তির পীর প্রায় ত্রিশ-পয়ঁত্রিশ বছর পূর্বে মারা যায়। ঐ ব্যক্তি এখনও বিবাহ করেনি। তাকে বিবাহ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে সে বলে থাকে, তার পীরের ইজাযত পায়নি তাই সে বিবাহ করবে না। ঐ ব্যক্তি নিজেকেও পীর/দয়াল বলে দাবী করে থাকে। তার মধ্যে সুন্নতের কোন পাবন্দি নেই। তার দাড়ি নেই। সে কোর্তা পরিধান করেনা। কিন্তু মাঝে মধ্যে টুপি পরিধান করে থাকে। সে ঠিক মত নামায, রোযা আদায় করে না। পর্দা নেই। তার ভক্তদের মধ্যে নারী-পুরুষ আছে। সে টেলিভিশন দেখে থাকে, তার পীরের ছবিকে সামনে রেখে নামায আদায় করে থাকে। সে নিজে ও তার ভক্তরা ছবিকে সামনে রেখে ধ্যান-মগ্ন হয়। ঐ ব্যক্তি তার ভক্তদের নিয়ে বাৎসরিক একটা অনুষ্ঠান করে থাকে। উল্লিখিত সুওয়ালের বিবরণে যে সকল প্রশ্নের উদয় হয় তা হলো- (১) হিন্দু পীরের অনুসরণ করা। (২) হিন্দু পীরের ইজাযত না পাওয়ার কারণে বিবাহ হতে বিরত থাকা। (৩) নিজেকে পীর বা দয়াল বলে দাবী করা। (৪) সুন্নতের পাবন্দি না করা। (৫) নামায রোযা আদায় না করা। (৬) পর্দা না করা। (৭) টিভি দেখা ও ছবিকে সামনে রেখে ধ্যানমগ্ন হওয়া। এখন আমার সুওয়াল হচ্ছে- উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে শরীয়তের ফায়সালা কি? এবং তার থেকে মসজিদের জন্য জমি নেয়া জায়িয হবে কিনা? মৃত্যুর পর তার জানাযায় শরীক হওয়া যাবে কিনা? তার সঙ্গে সামাজিক কোন কাজে উঠা-বসা করা যাবে কিনা? তার কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা যাবে কিনা? কুরআন-সুন্নাহ্র দলীলসহ জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,
لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة.
অর্থঃ- “অবশ্যই তোমাদের জন্য আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আহযাব/২১) অর্থাৎ মুসলমানকে মাথার তালু থেকে পায়ের তলা, হায়াত থেকে মউত পর্যন্ত আক্বাইদ-ইবাদত, মুয়ামালাত-মুয়াশারাত ইত্যাদি প্রতিক্ষেত্রেই একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। কাজেই কোন মুসলমানের জন্য কোন বিধর্মীকে অনুসরণ ও অনুকরণ করা, তার কথা-কাজের উপর ইস্তিকামত থাকা, তাকে অনুসরণ করে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নির্দেশের খিলাফ চলা, ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত তরক করা, হারাম-নাজায়িয আমল করা, বেপর্দা হওয়া, ছবি তোলা, টিভি দেখা ইত্যাদি সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
সুওয়ালে উল্লিখিত প্রত্যেকটি প্রশ্নেরই জাওয়াব ধারাবাহিকভাবে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ।
(ধারাবাহিক)
(৪) সুন্নতের পাবন্দি না করা। সুন্নত পালন করা আমভাবে সুন্নত আর খাছভাবে ফরযের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন,
قل ان كنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله ويغفر لكم ذنوبكم والله غفور رحيم.
অর্থঃ- “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহ পাককে মুহব্বত করে থাক, তাহলে তোমরা আমাকেই ইত্তিবা (অনুসরণ) কর, তাহলে আল্লাহ পাক তোমাদেরকে মুহব্বত করবেন, তোমাদের গুনাহখাতাসমূহ ক্ষমা করবেন এবং তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু হবেন।” (সূরা আলে ইমরান/৩১) এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
من احب سنتى فقد احبنى ومن احبنى كان معى فى الجنة.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে মুহব্বত করলো, সে আমাকেই মুহব্বত করলো, আর যে আমাকে মুহব্বত করলো সে আমার সাথেই জান্নাতে অবস্থান করবে।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ) তিনি আরো ইরশাদ করেন,
كل امتى يدخلون الجنة الا من ابى قيل ومن ابى قال من اطا عئى دخل الجنة ومن عصانى فقد ابى.
অর্থঃ- “আমার প্রত্যেক উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা ব্যতীত যারা আমাকে অস্বীকার করবে। জিজ্ঞাসা করা হলো হে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কে আপনাকে অস্বীকার করলো? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আমার ইতায়াত (অনুসরণ) করলো, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার নাফরমানী করলো অর্থাৎ সুন্নাতের অনুসরণ তথা আমাকে অনুসরণ করলো না সেই আমাকে অস্বীকার করলো। অর্থাৎ সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা। (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ) এ জন্যই হাম্বলী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি ফতওয়া দিয়েছেন “সুন্নত পালন করা ফরয।” যখন তিনি এ ফতওয়া দিলেন তখন উনার সমসাময়িক যারা ইমাম-মুজতাহিদ এবং ফক্বীহ ছিলেন তারা এসে জিজ্ঞাসা করলেন, হে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি! আমরা ফরযকে ফরয, ওয়াজিবকে ওয়াজিব, সুন্নতকে সুন্নত হিসাবে জানি ও মানি। কিন্তু আপনি সুন্নতকে ফরয হিসেবে ফতওয়া দিয়েছেন এটা কোন প্রকার ফতওয়া? আর এর পিছনে কি আপনার কোন দলীল রয়েছে? কারণ আল্লাহ পাক তো বলেছেন,
هاتوا برهانكم ان كنتم صادقين.
অর্থঃ- “তোমরা সত্যবাদী হলে দলীল পেশ কর।” (সূরা বাক্বারা/১১১) তিনি বলেন যে, হ্যাঁ, এর পিছনে আমার ক্বিত্য়ী দলীল অর্থাৎ কুরআন শরীফ থেকে দলীল রয়েছে তা হচ্ছে, আল্লাহ পাক বলেন,
ما اتكم الرسول فخذوه وما نهكم عنه فانتهوا واتقوا اله ان الله شديد العقاب.
অর্থঃ- “রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের নিকট যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর আর তিনি যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাক। এ ব্যাপারে আল্লাহ পাককে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তিদাতা।” (সূরা হাশর/৭) হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
تركت فيكم امرين ن تضلوا ما تمسكتم بهما كتاب الله وسنتى.
অর্থঃ- “আমি তোমাদের নিকট দু’টি জিনিষ রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা সে দু’টি আঁকড়ে ধর তাহলে তোমরা কখনোই গোমরাহ হবেনা। একটি হলো আল্লাহ পাক-এর কিতাব এবং অপরটি হলো আমার সুন্নত।”(বুখারী, মিশকাত)
لو تركتم سنة نبيكم لكفرتم.
অর্থঃ- “যদি তোমরা তোমাদের নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত তরক (অবজ্ঞা) কর, তবে অবশ্যই তোমরা কাফির হবে।” (বুখারী, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
لو تركتم سنة نبيكم لصللتم.
অর্থঃ- “যদি তোমরা তোমাদের নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতকে তরক (অবজ্ঞা) কর তাহলে অবশ্যই তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।” (মিশকাত) সুন্নত পালন করার ফযীলত সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন,
من يطع الله ورسوله فقد فاز فوزا عظيما.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ-অনুকরণ করবে, সে বিরাট সফলতা লাভ করবে।” (সূরা আহযাব/৭১) আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
من تمسك بسنتى عند فساد امتى فله اجر مأة شهيد.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আমার উম্মতের ফিৎনা-ফাসাদের যামানায় একটি সুন্নতকে আঁকড়ে ধরে থাকবে, সে একশত শহীদের ফযীলত পাবে।” (বাইহাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, ত্বীবী, মুযাহিরে হক্ব) উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই ছাবেত বা প্রমাণিত হলো যে, সুন্নত পালন করা ব্যতীত আল্লাহ পাক-এর মুহব্বত-মা’রিফাত ও আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে মাগফিরাত বা ক্ষমা এবং রহমত বা দয়া লাভ করা যাবেনা। শুধু এতটুকুই নয় বরং সে গোমরাহ ও নাফরমান হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে জাহান্নামী হবে। অতএব, কেউ যদি সুন্নত পালন না করে সে কখনোই কামিল মু’মিন হতে পারবেনা বরং সে ফাসিকের অন্তর্ভূক্ত হবে। আর কেউ যদি সুন্নত অবজ্ঞা বা অস্বীকার করে তাহলে তা কুফরী হবে। কোন মুসলমান যদি কুফরী করে তাহলে সে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। তখন উক্ত কুফরী থেকে খালিছ তওবা ইস্তিগফার না করা পর্যন্ত সে মুসলমান থাকতে পারবেনা। (চলবে)
মুসাম্মত সানজিদা আখতার সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত মুহম্মদপুর, ঢাকা।
সুওয়ালঃ অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়- জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। তাদের সকল আমল হবে খুবই নিখূঁত ও সুন্দর। তাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে, তাদের রোযা দেখে তোমাদের রোযাকে তোমরা তুচ্ছ ও নগণ্য মনে করবে। তাদের আমল দেখে তোমরা তোমাদের আমলকে হেয় মনে করবে, তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার নিচে যাবেনা। তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন-প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। এদলের আমল যতই তোমাদেরকে আকৃষ্ট করুক না কেন, কখনই তাদের দলে যাবেনা। কারণ প্রকৃতপক্ষে এরা হবে ইসলাম হতে খারিজ, দ্বীন হতে বহির্ভূত। তীর যেমন ধনুক হতে বের হয়ে যায় সে আর কখনও ধনুকের নিকট ফিরে আসেনা। তেমনিই এরা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে, আর কখনও দ্বীনের পথে, কুরআন ও সুন্নাহ্র পথে ফিরে আসবেনা। আমার প্রশ্ন হল, উপরোক্ত হাদীছ ছহীহ্ কি-না? ছহীহ্ হলে এ দ্বারা উদ্দেশ্য কারা? উক্ত হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতের কোন সম্পর্ক আছে কি-না? অনেকে এই হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতকে জড়াতে চান। উক্ত হাদীসের সঙ্গে তাবলীগ জামাতকে জড়ানো সঠিক কি-না? জবাবঃ প্রশ্নে বর্ণিত হাদীছ ছহীহ্। মুহাদ্দিছীনে কেরাম উক্ত হাদীছসহ এ জাতীয় হাদীছসমূহের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এ সব হাদীছ দ্বারা একটি নির্ধারিত জামাত বা খারিজী ফেরক্বা নামে পরিচিত তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর খেলাফত আমলে এই হাদীছসমূহের বাস্তবতা এবং খাওয়ারেজদের অবস্থার সমন্বয় ঘটেছিল। যার দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে বলা চলে যে, এ হাদীছসমূহ দ্বারা একমাত্র খাওয়ারেজদেরকেই বুঝানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণাদি ছাড়া অন্য কোন জামাতকে এই হাদীছের অন্তর্ভুক্ত করা যাবেনা। কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়া তাবলীগ জামাতকে এই হাদীছসমূহের মেসদাক বা উদ্দেশ্য বানানো, তাদেরকে খাওয়ারেজ বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে মারাত্মক অন্যায় ও অপরাধ। তাবলীগের নিয়মনীতি ও কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই। বর্তমান বিশ্বে আল্লাহ্ তা’আলা তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে পথহারা, ঈমানহারা, হিদায়েত থেকে বঞ্চিত অসংখ্য মানুষকে হিদায়েত করেছেন, ঈমান আনার তাওফিক দান করেছেন। এছাড়া এ জামাতের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে অসংখ্য জগদ্বিখ্যাত আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ। অতএব, তাবলীগ জামাতকে খারেজী জামাত বলা, মিথ্যা অপবাদ বৈ কিছুই নয়। (ফতহুল বারী ১২ঃ৩৫০, আল মিরকাত ৭ঃ১০৭) উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-
(১) উল্লিখিত হাদীছ শরীফে বর্ণিত গুণাবলী প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে আছে কি? (২) উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা কি শুধু খারিজী ফিরক্বার লোকদেরকেই বুঝানো হয়েছে? নাকি খারিজীদের ন্যায় আক্বীদা পোষণকারীদের ক্ষেত্রেও এ হাদীছ শরীফ প্রযোজ্য? (৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য? (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি? (৫) কুরআন-সুন্নাহ্র কোথাও প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করার নির্দেশ আছে কি? প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করা কুরআন-সুন্নাহ্ মতে জায়িয কিনা? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কিত উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের সাফাই গাইতে গিয়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যা করেছে। সাথে সাথে “ছয় উছূলীদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী কোন আক্বীদা-আমল নেই” বলে তাদের নির্লজ্জ দালালী করে নিজেদেরকে অপব্যাখ্যাকারী ও মিথ্যাবাদীরূপে সাব্যস্ত করেছে।
সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিক দলীলভিত্তিক আলোচনা করলেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে। তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-
(ধারাবাহিক)
ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারীতার খণ্ডনমূলক জবাব-৩
প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, পর্যায়ক্রমে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলো সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো- প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য-৭ তারা সাধারণ লোকদেরকে তাবলীগ জামায়াতের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য আরো বলে থাকে যে, “প্রচলিত তাবলীগের কাজ হযরত নূহ্ আলাইহিস্ সালাম-এর কিশ্তীর ন্যায়, তাতে যারা আরোহন করলো, তারাই নাযাত পেলো।” এ কথার প্রমাণ তাবলীগ কা মুকামী কাম পৃষ্ঠা-৩৯ ও ভ্রান্তির বেড়াজালে বর্তমান তাবলীগ জামায়াত পৃষ্ঠা-১২ কিতাবদ্বয়ে উল্লেখ আছে। তাদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, তারা বলেছে, “প্রচলিত তাবলীগের কাজ হযরত নূহ আলঅইহিস্ সালাম-এর কিশ্তীর ন্যায় ………।” তাদের এ বক্তব্য ও প্রচারণা সম্পূর্ণই মনগড়া, কল্পনা প্রসূত ও কুরআন-সুন্নাহ্র সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যহীন। কারণ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা কস্মিন কালেও প্রমাণ করতে সক্ষম হবেনা যে, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের কোথাও তাদের প্রবর্তিত তাবলীগের কাজকে হযরত নূহ্ আলাইহিস্ সালাম-এর কিশ্তীর ন্যায় বলা হয়েছে। বরং হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
ان اولادى كسفينة نوح فمن دخلها فقد نجا.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আমার আওলাদ ও আহ্লে বাইতগণ, হযরত নূহ্ আলাইহিস্ সালাম-এর কিশ্তীর ন্যায়, (তাঁদেরকে মুহব্বত, তা’যীম-তাক্রীম করার মাধ্যমে) যারা তাতে প্রবেশ করবে, তারা নাযাত পাবে।” (সিররুশ শাহাদাতাইন) হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى ذرقال……… سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول الا ان مثل اهل بيتى فيكم مثل سفينة نوح من ركبها نجا ومن تخلف عنها هلك.
অর্থঃ- হযরত আবূ যর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি শুনেছি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “সাবধান! নিশ্চয় তোমাদের সাথে আমার আহ্লে বাইত-এর মেছাল হলো, হযরত নূহ্ আলাইহিস্ সালাম-এর কিশ্তীর ন্যায়। তাতে যারা আরোহণ করবে, অর্থাৎ আমার আহ্লে বাইতকে মুহব্বত ও অনুসরণ-অনুকরণ করবে, তারা নাযাত পাবে। আর যারা তাতে আরোহণ করবেনা অর্থাৎ তাদেরকে মুহব্বত ও অনুসরণ-অনুকরণ করবেনা, তারা হালাক হয়ে যাবে। (আহমদ, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, শরহুত্ ত্বীবী, মুযাহিরে হক্ব) এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, উক্ত হাদীছ শরীফসমূহে আওলাদে রসূল ও আহ্লে বাইতগণকেই হযরত নূহ্ আলাইহিস্ সালাম-এর কিশ্তীর ন্যায় বলা হয়েছে। অথচ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা তাদের প্রবর্তিত কাজকে হযরত নূহ্ আলাইহিস্ সালাম-এর কিশ্তীর ন্যায় বলে প্রচার করে থাকে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কুরআন-হাদীছ বহির্ভূত বক্তব্য। আর এ ধরনের লোকদের প্রসঙ্গেই হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
يكون فى اخر الزمان دجالون كذا بون ياتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا ابائكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.
অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আখিরী যামানায় (মানুষের মধ্য হতে) একদল মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদেরকে এমন সব (উদ্ভট ও আজগুবী) কথা বলবে, যা তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও কখনো শুনেনি। তোমরা তাদের নিকট থেকে দূরে থাক এবং তাদেরকেও তোমাদের নিকট থেকে দূরে রাখ। তবে তারা তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে ও ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম, মিশকাত, শরহুন্ নববী, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ, মুযাহিরে হক্ব) অতএব, উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যদি হক্ব মত ও হক্ব পথে ক্বায়িম থাকতে চায় তাহলে তাদের জন্য এ ধরণের আপত্তিকর ও কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী, বিভ্রান্তিকর ও কুফরী বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকা ফরয/ওয়াজিব। (চলবে)
সাইয়্যিদ মুহম্মদ তীতুমীর, সাতক্ষীরা। মুহম্মদ ফয়জুল্লাহ্, লালমনিরহাট।
মুহম্মদ নুরুল্লাহ্ খন্দকার, সিরাজগঞ্জ।
সুওয়ালঃ আমরা আগে আলিমগণের মুখে শুনতাম যে, টিভি দেখা জায়িয নেই। কিন্তু বর্তমানে দেখতে পাচ্ছি অনেক মাওলানা ছাহেবরা টিভিতে অনুষ্ঠান করছে। বিশেষ করে মানুষ যাদেরকে বড় মাওলানা মনে করে তারাই সেটা করছে। তাদের সে অনুষ্ঠানগুলো এ.টি.এন টিভি চ্যানেলসহ আরো অনেক চ্যানেলে প্রায়ই দেখানো হয় এবং তাতে ইসলামের অনেক শিক্ষণীয় বিষয় আছে বলে অনেকেই তা দেখে থাকে। এছাড়া মাসিক মদীনা মে/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যার ২১নং প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, “টেলিভিশন একটি যন্ত্রমাত্র। খোলা চোখে যা কিছু দেখা জায়িয বা মুবাহ টেলিভিশনের পর্দাতেও সেগুলি দেখা জায়েয বা মুবাহ। শিক্ষণীয় কিছু দেখলে বা শুনলে পূণ্য হওয়ারই কথা। অপর দিকে পাপযুক্ত যেসব দৃশ্য দেখানো হয় সেগুলি দেখা ও শোনাতে অবশ্যই গোনাহ্ হবে।” অনুরূপ মাসিক রাহমানী পয়গাম জুলাই/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যার এক জিজ্ঞাসার জবাবে বলা হয়েছে, “টিভি দেখার শরয়ী মূলনীতি হলো, যে সকল বস্তু বা বিষয়াবলী (টিভির পর্দা, রেডিও ইত্যাদির মাধ্যম ছাড়া) সরাসরি দেখা ও শুনা জায়েয সেগুলো টিভির পর্দা, রেডিও ইত্যাদিতেও দেখা বা শুনা জায়িয। আর যে সকল বস্তু বা বিষয়াবলী সরাসরি দেখা ও শুনা জায়েয নেই সেগুলো টিভি, রেডিও ইত্যাদিতেও দেখা-শুনা জায়েয নেই।” এখন আমার জানার যে বিষয় তাহলো- (১) মাসিক মদীনা পত্রিকার প্রশ্নের উত্তর ও মাসিক রাহমানী পয়গাম পত্রিকার জিজ্ঞাসার জবাব শরীয়ত সম্মত হয়েছে কিনা? (২) ছবি কাকে বলে ও ছবির সংজ্ঞা কি? (৩) শরীয়তে টি.ভি দেখা জায়িয কিনা? (৪) নাজায়িয পদ্ধতিতে ইল্মে দ্বীন শিক্ষা করা অর্থাৎ ইল্মে দ্বীন শিক্ষার জন্য টিভি দেখা, শোনা ও টিভি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা শরীয়তসম্মত কিনা? (৫) (ক) নাজায়িয হলে যে সকল মাওলানা ছাহেব অনুষ্ঠান করে ও দেখে তাদের সম্পর্কে শরীয়তের ফতওয়া কি? (খ) এদেরকে আলিম বলা যাবে কিনা? (গ) এদের পিছনে নামায পড়া যাবে কিনা? কুরআন-সুন্নাহ্র দলীল সহকারে জাওয়াব দিলে খুবই উপকৃত ও খুশী হব।
জাওয়াবঃ সুওয়ালে বর্ণিত সুওয়ালকারীর পাঁচটি সুওয়ালের জাওয়াবই ধারাবাহিকভাবে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ্।
(ধারাবাহিক)
(৫) (খ) এদেরকে আলিম বলা যাবে কিনা? তাদেরকে আলিম বলা যাবে কিনা এর জাওয়াব বলতে হয় যে, না, তাদেরকে আলিম বলা যাবেনা। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে আলিম হওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে। তারমধ্যে প্রধান দু’টি শর্ত। একটি হচ্ছে, ঈমান অপরটি হচ্ছে, তাক্বওয়া। আবার ঈমান দু’ভাগে বিভক্ত। (১) ঈমান, (২) আক্বীদা। (১) ঈমানঃ সংক্ষেপে ঈমান হচ্ছে, এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ পাক ব্যতীত কোন ইলাহ নেই আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক-এর বান্দা ও রসূল। ঈমান ব্যতীত কারো পক্ষে আলিম হওয়া সম্ভব নয়। এর উদাহরণ হচ্ছে, গিরিশ চন্দ্র সেন। সে মাওলানা ছিল। সে কুরআন শরীফ অনুবাদ করেছে, মিশকাত শরীফ অনুবাদ করেছে, তাযকিরাতুল আউলিয়া অনুবাদ করেছে এবং আরো ইসলামী কিতাব লিখেছে তা সত্ত্বেও সে আলিম নয়। কারণ সে ঈমান গ্রহণ করেনি। সে ব্রাহ্ম সমাজের অন্তর্ভুক্ত ছিল। অর্থাৎ সে ‘এক আল্লাহ্ দ্বিতীয় নাস্তি’ এ বিশ্বাসে বিশ্বাসী ছিল। (২) আক্বীদাঃ শরীয়ত যে বিষয়কে যেভাবে বিশ্বাস করতে বলেছে সে বিষয়কে সেভাবে বিশ্বাস স্থাপন করার নাম আক্বীদা। যেমন, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ সকলেই মা’ছূম বা নিষ্পাপ। এ আক্বীদা পোষণ করা শরীয়তের নির্দেশ। এবং এটাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা। আলিম হওয়ার জন্য শুধু ঈমান আনলেই চলবেনা সাথে সাথে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা মুতাবিক আক্বীদা পোষণ করতে হবে। হাদীছ শরীফে ইরশাদ করেন,
ستفترق امتى على ثلاث وسبعين ملة كلهم فى النار الا ملة واحدة قالوا من هى يا رسول الله قال ما انا عليه واصحابى رواه الترمذى وفى رواية احمد وابى داود عن معاوية ثنتان وسبعون فى النار وواحة فى الجنة وهى الجماعة.
অর্থঃ- “অতিশীঘ্রই আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত বাহাত্তরটি দলই জাহান্নামে যাবে। তখন হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যে একটি দল নাযাতপ্রাপ্ত, সে দলটি কোন দল?’ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি এবং আমার ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মত ও পথের উপর যারা ক্বায়িম থাকবে, (তারাই নাযাতপ্রাপ্ত দল)।” (তিরমিযী শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ) আর মুসনদে আহ্মদ ও আবূ দাউদ-এর বর্ণনায় হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, “৭২টি দল জাহান্নামে যাবে, আর একটি দল জান্নাতে যাবে। সে দলটিই হচ্ছে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত।” অতএব, যারা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মতে মত ও পথে পথ হয়েছেন তারাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত। আর আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত বলতে যারা হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাবভুক্ত তারা। কাজেই যারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয় তারা কস্মিনকালেও আলিম হিসেবে গণ্য হবেনা। এর উদাহরণ হচ্ছে খারিজী, শিয়া, মু’তাজিলা, রাফিযী, ওহাবী, ক্বদরীয়া, জাবারিয়া ইত্যাদি বাতিল ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত কোন ব্যক্তি যদি আলিম দাবী করে তাহলে তার এ দাবী মিথ্যা। কারণ তার আক্বীদাই বিশুদ্ধ নয়। আলিম হওয়ার জন্য দুই শর্তের দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে তাক্বওয়া। অর্থাৎ মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও বা ঈমান থাকা সত্ত্বেও অথবা আক্বীদা বিশুদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও সে আলিম হতে পারবে না তাক্বওয়া ব্যতীত। আর তাক্বওয়ার অর্থ হচ্ছে আল্লাহভীতি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
انما يخشى الله من عباده العلماء.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই বান্দাদের মধ্যে আলিমগণই আল্লাহ পাককে (হাক্বীক্বীভাবে) ভয় করেন।” (সূরা ফাত্বির/২৮) আল্লাহ্ভীতি বা তাক্বওয়া হচ্ছে সেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা হাছিল হওয়ার কারণে বান্দা শরীয়তের খিলাফ কাজ থেকে বিরত থাকে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
ان اكر مكم عند الله اتعكم.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহ পাক-এর নিকট ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে সম্মানিত যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশী মুত্তাক্বী।”(সূরা হুজুরাত/১৩) হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
التقوى ههنا واشار الى صدره.
অর্থঃ- “তাক্বওয়া হচ্ছে এখানে। এ বলে তিনি তাঁর বুকের দিকে ইশারা করলেন।” অর্থাৎ তাক্বওয়া অন্তরের বিষয়। যে ব্যক্তি তাক্বওয়া অবলম্বন করবে সে অন্তর থেকেই সমস্ত পাপ কাজ তথা শরীয়তের খিলাফ কাজ থেকে বিরত থাকবে। যা তার বাহ্যিক আমলের দ্বারাও ফুটে উঠবে বা প্রকাশ পাবে। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
فانه رأس الامر كله.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই তাক্বওয়া সমস্ত আমলের মূল।” (ইবনে হাব্বান) আর তাক্বওয়াও দু’ভাগে বিভক্ত। (১) আমল ও (২) ইখলাছ। (১) আমলঃ আমল হচ্ছে, সুন্নতের ইত্তিবা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন,
قل ان كنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله ويغفر لكم ذنوبكم والله غفور رحيم.
অর্থঃ- “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহ পাককে মুহব্বত করে থাক, তাহলে তোমরা আমাকেই ইত্তিবা (অনুসরণ) কর তাহলে আল্লাহ পাক তোমাদেরকে মুহব্বত করবেন, তোমাদের গুনাহখাতাসমূহ ক্ষমা করবেন এবং তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু হবেন।” (সূরা আলে ইমরান/৩১) আর সুন্নতের আমল ব্যতীত আল্লাহ পাক-এর মুহব্বত হাছিল হবেনা, গুনাহখাতা মাফ এবং আল্লাহ পাককে দয়ালু হিসেবেও পাওয়া যাবেনা। (২) ইখলাছঃ একমাত্র আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টি হাছিলের উদ্দেশ্যেই আমল করার নাম ইখলাছ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন,
وما امروا الا ليعبوا الله مخلصين له الدين.
অর্থঃ- “তাদেরকে কেবলমাত্র ইখলাছের সহিত আল্লাহ্ পাক-এর ইবাদত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।” (সূরা আল বাইয়্যিনাহ্/৫) আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
اخلص دينك يكفيك العمل القيل.
অর্থঃ- “ইছলাছের সাথে আমল কর, অল্প আমলই তোমার (নাযাতের) জন্য যথেষ্ট।” আল্লাহ পাক-এর মুহব্বত ব্যতীত ইখলাছ হাছিল হবে না। আর ইখলাছ ব্যতীত হাক্বীক্বী তাক্বওয়া হাছিল করা যাবেনা। আর তাক্বওয়া ব্যতীত আলিম হওয়া যাবেনা। (চলবে)
মুহম্মদ আহছানুল্লাহ তারেক ক্লথ ষ্টোর, মধ্যবাজার, ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া।
মুহম্মদ আজহারুল ইসলাম কাকরাইল, ঢাকা।
সুওয়ালঃ প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা তাদের প্রচলিত তাবলীগের ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে বলে থাকে যে, হাদীছ শরীফে নাকি রয়েছে, তাদের প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগে গিয়ে এক টাকা খরচ করলে ‘ঊনপঞ্চাশ কোটি টাকা” খরচ করার ফযীলত পাওয়া যাবে। তাদের এ দাবী কতটুকু সত্য এবং কুরআন-সুন্নাহ সম্মত? দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে উপকৃত করবেন বলে আশাবাদী।
জাওয়াবঃ প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াতের লোকদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা-বানোয়াট ও কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। তাদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, তারা ছয় উছূলী তাবলীগের ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে হাদীছ শরীফ তথা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যারোপ করার কারণে কুফরী করেছে। কেননা হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
من كذب على متعمدا فاليتبوأ مقعده من النار.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আমার প্রতি মিথ্যা কথা বলে সে যেন তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারন করে নিল।” (বুখারী, মিশকাত) স্মর্তব্য যে, ছয় উছূলী তাবলীগওয়ালারা একটি জয়ীফ হাদীছও দেখাতে পারবেনা যেখানে ছয় উছূলী তাবলীগের ক্ষেত্রে উক্ত ফযীলত বর্ণিত আছে। মুলতঃ ছয় উছূলী তাবলীগের কথা হাদীছ শরীফে বর্ণিত থাকার প্রশ্নই আসে না। কারণ ছয় উছূলী তাবলীগের উৎপত্তিই হয়েছে তেরশত পঁয়তাল্লিশ হিজরীতে। অর্থাৎ মাত্র প্রায় ৮০ বৎসর পূর্বে। কাজেই প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগওয়ালাদের উক্ত বক্তব্য যে, সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও কুফরীমূলক হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা। দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগওয়ালারা হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যা ও অপপ্রায়োগ করছে। কারণ হাদীছ শরীফে দানের যে ফযীলত বর্ণিত হয়েছে তা ‘তাবলীগের’ ক্ষেত্রে নয় বরং ‘জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ’ এর ক্ষেত্রে বর্ণিত হয়েছে। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن على بن ابى طالب وابى الدرداء وابى هريرة وابى امامة الباهلى وعبد الله بن عمر وعبد الله بن عمرو وحابر بن عبد الله وعمران بن الحصين كلهم يحدث عن رسول الله صلى الله عليه وسلم انه قال من ارسل بنفقة فى سبيل الله واقام فى بيته فله بكل درهم سبع مائة درهم ومن غزى بنفسه فى سبيل الله وانفق فى وجه ذلك فه بكل درهم سبع مائة الف درهم ثم تلى هذه الاية والله يضاعف لمن يشاء.
অর্থঃ- “হযরত আলী ইবনে আবী ত্বালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবূ উমামা বাহিলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা, হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা এবং হযরত ইমরান ইবনে হুনাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তারা সকলেই হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর রাস্তায় (জিহাদে) খরচের জন্য আর্থিক সাহায্য পাঠালো কিন্তু নিজে বাড়ীতে রয়ে গেল, সে ব্যক্তি তার প্রেরিত সাহায্যের প্রত্যেক দিরহামের বিনিময়ে সাত শত দিরহামের ছওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি স্বয়ং জিহাদে অংশ গ্রহণ করে এবং তাতে মালও ব্যয় করে সে ব্যক্তি প্রত্যেক দিরহামের বিনিময়ে সাত লক্ষ দিরহামের ছওয়াব পাবে। অতঃপর তিনি এ আয়াত শরীফখানা তিলাওয়াত করলেন,
والله يضاعف لمن يشاء.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক যাকে ইচ্ছা করেন, তাকে অধিক পরিমাণে প্রতিদান দেন।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত) জিহাদে গিয়ে দান করার ও ইবাদত-বন্দিগী করার ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن سهل بن معاذ عن ابيه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الصلوة والصيام والذكر يضاعف على النفقة فى سبيل الله هزوجل بسبع مائة ضعف.
অর্থঃ- “হযরত সাহল্ বিন মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন যে, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই (জিহাদরত অবস্থায়) নামায, রোযা ও যিকিরের ছওয়াব আল্লাহ পাক-এর রাস্তায় (জিহাদে) খরচ করার ন্যায় সাতশত গুণ বৃদ্ধি করা হয়।” (আবূ দাঊদ শরীফ) মূলতঃ ইবনে মাজাহ ও আবূ দাউদ শরীফে বর্ণিত হাদীছ শরীফদ্বয়ে দানের যে ফযীলত বর্ণিত হয়েছে তা ‘জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ’ বা আল্লাহ পাক-এর রাস্তায় সশস্ত্র জিহাদে গিয়ে খরচ করার কথা বলা হয়েছে। উক্ত হাদীছ শরীফের সাথে ‘তবলীগের’ কোনই সম্পর্ক নেই। উক্ত হাদীছ শরীফদ্বয় যে ‘জিহাদের’ সাথেই সম্পর্কিত তার প্রথম প্রমাণ হলো- হাদীছ শরীফদ্বয় ‘ইবনে মাজাহ ও আবূ দাউদ’ শরীফের كتاب الجهاد ‘কিতাবুল জিহাদ’ বা জিহাদ অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে। এর দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত যে, হাদীছ শরীফে বর্ণিত দানের ফযীলত ‘জিহাদের ক্ষেত্রেই বর্ণিত হয়েছে। ‘তবলীগের ক্ষেত্রে নয়।’ দ্বিতীয় প্রমাণ হলো, হাদীছ শরীফের ইবারতে من غزى অর্থাৎ “যে ব্যক্তি জিহাদ বা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করলো।” বাক্যটি স্পষ্টভাবেই উল্লেখ আছে। এর দ্বারাও সুস্পষ্টভাবেই ছাবিত বা প্রমাণিত হয় যে, উল্লিখিত ফযীলত ‘জিহাদের’ ক্ষেত্রেই বর্ণিত হয়েছে, তাবলীগের ক্ষেত্রে উক্ত ফযীলত গ্রহণযোগ্য নয়। তৃতীয় প্রমাণ হলো, হাদীছ শরীফে فى سبيل الله. ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ বাক্যটিও স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। যার অর্থ হলো ‘ সশস্ত্র জিহাদে বা যুদ্ধে।’ ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ অর্থ ‘আল্লাহ পাক-এর রাস্তায় জিহাদ বা যুদ্ধ করা।’ তার প্রমাণ কুরআন শরীফেই রয়েছে। যেমন আল্লাহ পাক ‘সূরা তওবার’ ৬০নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
انما الصدقت للفقراء والمسكين والعملين عليها والمؤلفة قلوبهم وفى الرقاب والغرمين وفى سبيل الله وابن السبيل فريضة من الله والله عليم حكيم.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই ছদক্বা বা যাকাত হলো ফক্বীর, মিসকীন, যাকাত আদায়ে নিযুক্ত ব্যক্তি, নব মুসলিমদের আকৃষ্ট করার জন্য, দাস মুক্তির জন্য,ঋণগ্রস্থদের জন্য, আল্লাহ পাকের পথে জিহাদকারীদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য। এ বিধান আল্লাহ পাক-এর পক্ষ থেকে ফরয। আল্লাহ পাক সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” উক্ত আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক যে আট প্রকার লোককে যাকাত বা ছদক্বা দেয়ার কথা বলেছেন, তার মধ্যে এক প্রকার হলো فى سبيل الله ‘ফী সাবীল্লিাহ’ আর ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ এর ব্যাখ্যায় সকল অনুসরণীয় মুফাস্সির, মুহাক্কিক্ব ও মাদাক্কিক্বগণ ‘মুজাহিদ বা আল্লাহ পাক-এর রাস্তায় সশস্ত্র জিহাদকারীর কথাই উল্লেখ করেছেন। এতেও কি প্রমাণিত হয় না যে, হাদীছ শরীফে বর্ণিত দানের ফযীলত তবলীগের ক্ষেত্রে নয় বরং জিহাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য? মূলকথা হলো, ‘ইবনে মাজাহ ও আবূ দাঊদ’ শরীফে দানের যে ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, তা একান্তই জিহাদের জন্য প্রযোজ্য। প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগওয়ালারা বর্ণিত হাদীছ শরীফকে তাবলীগের ক্ষেত্রে বর্ণনা করে নিজেদেরকে জাহিল ও প্রতারক এবং হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যাকারী ও অপপ্রয়োগকারী হিসেবে সাব্যস্ত করলো। তৃতীয়তঃ বলতে হয় যে, অন্যান্য হাদীছ শরীফে শরীয়ত সম্মত তাবলীগ বা দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্রে দানের যে ফযীলত বর্ণিত হয়েছে তাও প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের ক্ষেত্রে কয়েকটি কারণে প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগে গিয়ে দান করে ও আমল করে কোন ফযীলতই লাভ করা সম্ভব নয়। প্রথম কারণ, প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী তথা কুফরী আক্বীদাতে ভরপুর। যেমন তারা বিশ্বাস ও প্রচার করে থাকে যে, হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম গন্দম খেয়ে ভুল বা গুনাহ করেছিলেন, হযরত ইউনুছ আলাইহিস্ সালাম দাওয়াতের কাজ বন্ধ করার কারণে গযবে পতিত হয়েছিলেন। (নাঊযুবিল্লাহ) আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চিল্লা দেয়ার কারণেই কুরআন ও নবুওওয়াত প্রাপ্ত হয়েছিলেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সকলেই মুর্খ ছিলেন। তারা চিল্লা দেয়ার করণেই তাদের ঈমান পাকা-পোক্ত হয়েছে। (নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক) অনুরূপ আরো বহু কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী তথা কুফরী আক্বীদা ও বক্তব্য তাঁদের কিতাবাদীতে লিপিবদ্ধ রয়েছে যা এই অল্প পরিসরে বণর্না করা সম্ভব না। সুতরাং এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী হয়ে হাজারো দান-খয়রাত আর ইবাদত-বন্দিগী করে কোনই ফায়দা হবেনা। কারণ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে আমলের জন্যে ঈমান তথা বিশুদ্ধ আক্বীদাকে শর্ত করা হয়েছে। বিশুদ্ধ আক্বীদা ব্যতীত নেক আমলের কোনই মূল্য নেই। এজন্যেই বাহাত্তরটি বাতিল ফিরকা জাহান্নামী। কারণ তারা নেক আমল করে ঠিকই কিন্তু তাদের ঈমান বা আক্বীদা বিশুদ্ধ নয় বরং বিভিন্ন কুফরী আক্বীদায় তারা বিশ্বাসী। দ্বিতীয় কারণ, প্রচলিত ছয় উছূলীরা যদি সমস্ত কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী তথা কুফরী আক্বীদাসমূহ থেকে তওবা করে শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে তাবলীগ করে তবুও তারা দান খয়রাত বা নেক আমলের দ্বারা মহান আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারবেনা। কারণ ইবাদত-বন্দিগী কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত হচ্ছে ‘ইখলাছ’। আর ইখলাছ অর্জন করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ‘ইলমে তাছাউফ বা ক্বল্বী যিকির।’ অথচ ছয় উছূলী তাবলীগে ‘ইলমে তাছাউফ’ বা ক্বলবী যিকিরের কোন অস্তিত্বই নেই। যার ফলে প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগওয়ালারা ‘ইখলাছ থেকে সম্পূর্ণরূপেই খালী। অথচ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
ان الله لايقبل من عمل الا ماكان خالصاله.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক ঐ সকল আমল কবুল করেন না যা ইখলাছের সাথে করা না হয়।” যদি তাই হয়ে থাকে, তবে প্রচলিত ছয় উছূলীদের দান-খয়রাত ও ইবাদত-বন্দিগীর কি মূল্য রয়েছে? সুতরাং তাদের উচিৎ, ফযীলত লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদত না করে আক্বীদাকে শুদ্ধ করতঃ একজন হক্কানী পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চার মাধ্যমে ইখলাছ হাছিল করা। তবে সমস্ত আমল একমাত্র আল্লাহ পাক-এর জন্যে করা সম্ভব। আর তখনই ইবাদত-বন্দিগী, দান-খয়রাত আল্লাহ পাক কবুল করবেন। মুলকথা হলো, প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগওয়ালারা হাদীছ শরীফের বরাত দিয়ে দানের যে ফযীলত বর্ণনা করে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে মিথ্যারোপ করার নামান্তর যা কুফরীও বটে। কারণ হাদীছ শরীফের কোথাও ছয় উছূলী তাবলীগ তো দূরের কথা শরীয়তসম্মত তাবলীগের ক্ষেত্রেও দানের উক্ত ফযীলত বর্ণিত হয় নাই। বরং উক্ত ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, ‘জিহাদের’ ক্ষেত্রে। কাজেই জিহাদের ক্ষেত্রে বর্ণিত হাদীছ শরীফকে তাবলীগের ক্ষেত্রে বর্ণনা করা চরম জিহালতী, জালিয়াতী ও প্রতারণা বৈ কিছুই নয়। এ ধরনের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও প্রতারণামূলক বক্তব্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকা সংশ্লিষ্ট সকলের জন্যেই ফরয-ওয়াজিব। {দলীলসমূহঃ (১) তাফসীরে কুরতুবী, (২) তাবারী, (৩) খাযিন, (৪) বাগবী, (৫) বুখারী শরীফ, (৬) মুসলিম শরীফ, (৭) ইবনে মাজাহ শরীফ, (৮) আবূ দাঊদ শরীফ, (৯) মিশকাত শরীফ, (১০) ফতহুল বারী, (১১) উমদাতুল ক্বারী, (১২) ইরশাদুস্ সারী, (১৩) শরহে নববী, (১৪) ফতহুল মুলহিম, (১৫) বযলুল মাজহুদ, (১৬) মিরকাত, (১৭) লুময়াত, (১৮) আশয়াতুল লুময়াত, (১৯) শরহুত্ তীবী, (২০) তা’লীকুছ্ ছবীহ্, (২১) মুজাহিরে হক্ব, (২২) ক্বিমিয়ায়ে সায়াদাত, (২৩) ইহ্উয়াউ উলুমিদ্দীন, (২৪) ফতহুর রহব্বানী, (২৫) গুনিয়াতুত্ তালিবীন, (২৬) তালবীসুল ইবলীস, (২৭) আক্বাঈদে নছফী, (২৮) ফিকহুল আকবর, (২৯) মালফুযাতে ইলিয়াছ, (৩০) তাবলীগী নেছাব জাকারিয়া, (৩১) হযরতজীর স্মরণীয় বয়ান, (৩২) তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব ইসমাইল দেওবন্দী ইত্যাদি}
মুহম্মদ তাজুর রহমান (রনি) সভাপতি- ছাত্র আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত ভোলাহাট শাখা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
সুওয়ালঃ হার্ভেষ্ট ইনফার্টিলিটি কেয়ার লিমিটেড এর অধ্যাপক ডাক্তার এম. আনোয়ার হোসেন “টেষ্ট টিউব বেবী” প্রযুক্তি সম্পর্কে দেশের একটি সাপ্তাহিকে নিম্নরূপ বক্তব্য দিয়েছেন- “টেষ্ট টিউব বেবী” নিয়ে বাংলাদেশে প্রচন্ড রকম বিভ্রান্তি রয়েছে। অনেকের ধারণা, আমরা ধর্ম বিরুদ্ধ নাজায়িয কাজ করছি। বিয়ে বহির্ভূত বেগানা পুরুষের মনি থেকে শুক্রানু নিয়ে আমরা টেষ্ট টিউবের ভেতর সন্তান তৈরী করছি। এসবই ভুল। মিথ্যা রটনা ও কুসংস্কার। যে কাজটি আমরা করছি তা হলো- স্বামীর মনি পরীক্ষা করে সেখান থেকে জীবিত শুক্রানু নিয়ে, মায়ের ডিম্বানু, জঠর থেকে বের করে এনে, বিশুদ্ধ ও জীবানুমুক্ত কাঁচের ছোট্ট পিরিচে সেটা নিষিক্ত করে ভ্রুণ তৈরি করা। নির্দিষ্ট সময় পর সুস্থ-সবল, একাধিক ভ্রুণ (দুই-তিনটি) মায়ের জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করে মায়ের রেহেম সঞ্চারের ব্যবস্থা করে দেই। টেষ্ট টিউবে নিষিক্ত ভ্রুণ নিয়ে মাতৃ জঠরে আর দশটা শিশুর মত স্বাভাবিক পরিবেশে বেড়ে ওঠে এই শিশুরা। নয় মাস পর সাধারণ যে কোন হাসপাতালে কিংবা ক্লিনিকে অন্য দশজন স্বাভাবিক মায়ের মতো এই মায়েরাও সন্তান লাভ করেন। এতে কোন অধর্ম নেই। নেই কোন ছলচাতুরির অবকাশ। কারণ টেষ্ট টিউব ভ্রুণ হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ষ্টেজে স্বামী তার স্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। এখন প্রশ্ন হলো, উপরোক্ত বর্ণনা মতে টেষ্ট টিউব পদ্ধতি গ্রহণ করা কি শরীয়ত সম্মত? বিস্তারিত জানতে ইচ্ছুক।
জাওয়াবঃ অধ্যাপক ডাক্তার এম. আনোয়ার হোসেন ‘টেষ্ট টিউব বেবী’ প্রযুক্তি সম্পর্কে যা বলেছেন সেখান থেকে দু’টো বিষয় বেরিয়ে আসে। (১) বিয়ে বহির্ভুত বেগানা পুরুষের মনি থেকে শুক্রাণু নিয়ে টেষ্ট টিউবে সন্তান লাভের প্রাথমিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা। (২) স্বামীর মনি পরীক্ষা করে সেখান থেকে জীবিত শুক্রানু নিয়ে, স্ত্রীর জঠর থেকে ডিম্বানূ বের করে এনে বিশুদ্ধ ও জীবানুমুক্ত কাঁচের ছোট্ট পিরিচে সেটা নিষিক্ত করে ভ্রুণ তৈরী করা। প্রথম বিষয়ে অর্থাৎ বিয়ে বহির্ভূত বেগানা পুরুষের মনি থেকে শুক্রাণু নিয়ে টেষ্ট টিউবে সন্তান লাভের সকল প্রচেষ্টা সর্বসম্মতিক্রমে শরীয়ত বহির্ভুত, হারাম এবং নাজায়িয। এই প্রচেষ্টায় আগত শিশু হবে অবৈধ। এতে যারা সংশ্লিষ্ট থাকবে তারা প্রত্যেকেই কঠিন গুণাহে গুণাহ্গার হবে। দ্বিতীয়তঃ স্বামী ও স্ত্রীর যথাক্রমে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু নিয়ে সন্তান লাভের প্রচেষ্টাও সঠিক ফতওয়া মুতাবিক সম্পূর্ণ হারাম, নাজায়িয এবং কঠিন গুনাহ্র কাজ। কিন্তু যেহেতু কেউ কেউ বিবাহিত দম্পত্তির ক্ষেত্রে তাদের শুক্রাণু ও ডিম্বাণু নিয়ে সন্তান জন্মের প্রচেষ্টাকে অর্থাৎ টেষ্ট টিউব পদ্ধতিকে জায়িয বলার চেষ্টা করছেন সেহেতু আমরা এখানে বিস্তারিত আলোচনা উপস্থাপন করছি। টেষ্ট টিউব পদ্ধতি কি? মহিলার শরীরের বাইরে স্ত্রী ডিম্বাণূ এবং শুক্রাণু নিষেকের (ঋবৎঃরষরুধঃরড়হ) পর যে ভ্রুণ (ঊসনৎুড়) তৈরী হয় সেই ভ্রুণ রেহেমে ধারণকে বলা হয় টেষ্ট টিউব পদ্ধতি। টেষ্ট টিউব শব্দটি বিভ্রান্তিকর, কেননা কোন শিশুই ঞবংঃ ঃঁনব এ জন্মায় না। অর্থাৎ কোন মহিলার শরীরের বাইরে ভ্রুণ থেকে শিশুতে পরিণত হয় না। সাধারণতঃ মহিলাদের মাসিক চক্রে একটি ডিম্ব প্রস্ফুটিত হয়, বিশেষ হরমোন প্রয়োগ করলে অনেকগুলো ডিম্ব এক সাথে পরিপক্ক হয়। ডিম্বগুলো নির্দিষ্ট বয়সসীমায় পৌঁছলে সরু একটি নলের সাহায্যে বের করে আনা হয়। একটি প্রেট্রিডিশে (কাঁচের এক ধরণের বাটি) ডিম্বাণুগুলো নিয়ে উপযুক্ত পরিবেশে রাখা হয় এবং এরই মধ্যে স্বামীর মনি সংগ্রহ করে বিশেষ পদ্ধতিতে ধুয়ে নেয়া হয়। এবার ডিম্বাণু ও শুক্রাণুগুলোকে ইনকিউবেটরের পরিবেশে কয়েকদিন রেখে দিলে নিষিক্ত ভ্রুণ তৈরী হয়। পরবর্তীতে নিষিক্ত ভ্রুণ সরু নলের সাহায্যে জরায়ূতে সাবধানে প্রবেশ করানো হয় এবং সেখানে ভ্রুণ ধীরে ধীরে শিশু হিসেবে বেড়ে উঠে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, মহিলার শরীরের বাইরে বিশেষ পরিবেশে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর নিষেক ঘটিয়ে সে ভ্রুণ জরায়ুতে প্রবেশ করানোর পদ্ধতিকেই বলা হয় টেষ্ট টিউব পদ্ধতি। অবশ্য বর্তমানে একে বলা হয় ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (ওঠঋ) যার মানে শরীরের বাইরে নিষেক। অনেকেই মত প্রকাশ করেন, টেষ্ট টিউব পদ্ধতিতে মহিলার শরীরের বাইরে নিষেকের এই পদ্ধতি জায়িয হবে, যদি সেক্ষেত্রে স্ত্রী ও স্বামীর যথাক্রমে ডিম্বানু ও শুক্রাণু ব্যবহার করা হয়। তাদের ধারণা কোন নিঃসন্তান দম্পত্তি যদি এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সন্তান পেতে পারে, তবে এ রকম পদ্ধতি ব্যবহার করা শরীয়তে অবৈধ হবেনা বরং বৈধ। শরীয়ত অনুযায়ী টেষ্ট টিউব পদ্ধতি জায়িয কিনা সেটা জানতে হলে আমাদের প্রথমেই বিস্তারিতভাবে জানতে হবে- টেষ্ট টিউব পদ্ধতিতে যতগুলো বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি রয়েছে সে সবগুলো বিষয় শরীয়তের বিভিন্ন মাপকাঠিতে জায়িয কিনা। নাজায়িয হলে টেষ্ট টিউব পদ্ধতি হবে নাজায়িয বা হারাম। এবারে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যায় আসা যাক। পর্দা করা ফরয আমরা এখানে টেষ্ট টিউব পদ্ধতিতে ব্যবহৃত বিষয়গুলোকে যখন পর্দার খিলাফ কাজ বলছি তখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে সন্তান জন্মের সময় ধাত্রী বা ডাক্তার একজন মহিলার গোপনীয় অংশগুলো দেখতে পান অথবা ব্রেষ্ট ক্যান্সারের রোগীর অপারেশনের সময় যখন ডাক্তারের ধরা বা কাটার বিষয়টি পর্দার খিলাফ না হয়, তাহলে নিঃসন্তান দম্পত্তির সন্তান পাওয়ার আশায় ডিম্বাণু ও শুক্রাণুকে দেখা এবং পরে তাদের সংগ্রহ এবং নিষেক সংঘটনের বিষয়টিকে কেন পর্দার খিলাফ বলা হবে, এ বিষয়টি বুঝতে হলে পর্দার সীমারেখা কি বা পর্দার মাসয়ালা কি তা প্রথমে বুঝতে হবে। মানুষ হচ্ছে আশরাফুল মাখলুকাত অর্থাৎ সৃষ্টির মধ্যে সেরা। মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর মধ্যেও প্রজনন পদ্ধতি চালু আছে, মানুষের মধ্যেও আছে এবং এতে মানুষের আশরাফিয়াতের কোন সমস্যা নেই। আবার অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীরও বাচ্চা হয় এবং মানুষ থেকেও সন্তান জন্মগ্রহণ করে এতেও মানুষের আশরাফিয়াতের কোন সমস্যা নেই। আবার প্রাণী কুলের বিভিন্ন রোগের কারণে যেমনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি হয়েছে তেমনি মানুষেরও বিভিন্ন রোগে চিকিৎসা শাস্ত্রের সাহায্য নেয়া সেটাই ফিতরাত অর্থাৎ স্বাভাবিক। এতে হতে পারে মহিলাদের জরায়ুর সমস্যা, ফেলোপিয়ান টিউবের সমস্যা, স্তনের সমস্যা ইত্যাদি। চিকিৎসা গ্রহণের সময় এইসব অঙ্গের প্রদর্শন মাজুর হিসেবে অবস্থাভেদে শরীয়ত মুবাহ করেছে, জায়িয করেছে এবং অবস্থাভেদে ফরযও করেছে অবস্থাভেদে হারামও করেছে এতেও মানুষ আশরাফই থাকছে। কিন্তু প্রজনন পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম গ্রহণের বিষয়টি সব মাখলুকের মধ্যে থাকলেও মানুষের মধ্যে রয়েছে বিয়ের পদ্ধতি, যার মাধ্যমে শরীয়ত একজনকে অপরজনের জন্যে হালাল করেছে। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, “মোহরানার বিনিময়ে স্ত্রীদেরকে তোমাদের জন্য হালাল করা হল।” অর্থাৎ বিয়ে পদ্ধতি, মোহরানার বিনিময়, ইজাব-কবুল, একে অপরের জন্য হালাল হওয়া, এই সকল পদ্ধতি শুধুমাত্র জ্বিন ও মানুষের মধ্যেই রয়েছে অন্য কোন প্রাণীর মধ্যে নেই। আর এ কারণে স্বামী ও স্ত্রী নিজেদের মধ্যে একে অপরের জন্য হালাল হওয়াতে এখানে কোন পর্দার বিধান নেই। তারপরেও স্বামী ও স্ত্রীর অনেক হালাল কাজ পর্দার কারণে (এমনকি তাদের মাহরামদের সামনে) প্রকাশ্যে করাকে হারাম করা হয়েছে। এ বিষয়টিই সূক্ষ্মভাবে অনুধাবণীয় যে, একমাত্র মানুষের মধ্যে (নারী-পুরুষের) একান্তবাস হয় পর্দার সাথে কিন্তু জ্বিন ও মানুষ ব্যতীত অন্য মাখলুকাতের মধ্যে একান্তবাসের ক্ষেত্রে কোন গোপনীয়তা নেই, লজ্জা নেই, পর্দা নেই। প্রাণীদের একান্তবাস হতে পারে মানুষের উপস্থিতির বাইরে অথবা প্রকাশ্যে। কিন্তু মানুষের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর একান্তবাসের ক্ষেত্রেও তাক্বওয়ার জন্যে বলা হয়েছে, ‘সম্পূর্ণ বিবস্ত্র না হয়ে নিজেদেরকে বড় কাপড়ে বা চাদরে আচ্ছাদিত করে নেয়া যাতে ফেরেশ্তাদের কাছে নিজেকে ঢেকে রাখা যায়।’ সীমারেখাটা এখানেই। টেষ্ট টিউব পদ্ধতির বিষয়টিকে পর্দার খিলাফ কাজ বলছি কেননা, এখানে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু একত্রিকরণ বিষয়টি স্বামী-স্ত্রীর একান্তবাসের মত গোপনীয় বিষয় এবং এখানেই মানুষের আশরাফিয়াত। গবেষণাগারে হোক অথবা তার বাইরে হোক, ডাক্তারের মাধ্যমেই হোক অথবা মাহরাম ব্যক্তিদের মাধ্যমেই হোক স্বামী ও স্ত্রীর ডিম্বাণূ একত্রিকরণ বিষয়টি হবে অন্যান্য প্রাণীর একান্তবাসের মত, যেখানে তারা কারো উপস্থিতির বাছ-বিচার করেনা। সুতরাং চিকিৎসা বিজ্ঞানের নামে এমন কোন কাজ করা যাবে না যেখানে মানুষের আশরাফিয়াতের কোন একটি বিষয়ও প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে ওঠে বা পর্দার খিলাফ কাজ হয়ে যায়। লজ্জা ঈমানের অঙ্গ আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন,
انما يريد الله ليذهب عنكم الرجس.
“নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক চান আপনাদের থেকে নাপাকী, অপছন্দনীয়, অশ্লীলতা, বে-পর্দা, বেহায়া যা কিছু রয়েছে সেটা দূর করে দিতে।” (সূরা আহযাব/৩৩) আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
الحياء شعبة من الايمان.
“লজ্জা ঈমানের একটি বিশেষ অঙ্গ।” (তিরমিযী শরীফ) হাদীছ শরীফে আরো বলা হয়েছে,
اذا لم تستحى فاصنع ماشئت.
“যখন তুমি নির্লজ্জ হও তখন যা ইচ্ছা তাই করতে পার।” (বুখারী শরীফ) অর্থাৎ লজ্জা না থাকলে মানুষ যিনা, চুরি, অশ্লীলবাক্য, গালাগালী, বিবস্ত্র হওয়া, বেপর্দা ইত্যাদি সকল অপকর্ম, অন্যায় কাজ করতে পারে। টেষ্ট টিউব পদ্ধতিতে পুরুষের মনি সংগ্রহ, নলের সাহায্যে যোনীপথে ডিম্বাণু বের করে আনা, আবার বাইরে পুরুষের শুক্রাণু ও মহিলার ডিম্বাণু নিষেক ঘটানো এবং পরিশেষে নমনীয় নলের সাহায্যে জরায়ুর অভ্যন্তরে প্রবেশ করানো এরকম প্রতিটি কাজেই রয়েছে পর্দার খিলাফ কাজ ছাড়াও লজ্জাশীলতার অভাব। প্রশ্ন হতে পারে, চিকিৎসার জন্য মহিলাদের মল-মূত্র পরীক্ষা করানো বিভিন্ন লজ্জাশীল অঙ্গের অপারেশন করানোতে যদি লজ্জাশীলতার বিষয়টি এত প্রবল না হয় তাহলে শুধু টেষ্ট টিউব পদ্ধতিতে বিষয়গুলোকে কেন এতটা লজ্জার বিষয় বলা হচ্ছে। অর্থাৎ চরম নির্লজ্জতা। যদিও পর্দার আলোচনায় আমরা বিস্তারিত সীমারেখার বিষয়টি আলোচনা করেছি তারপরেও এখানে বলছি, যেখানে প্রাণ নাশের হুমকি থাকে সেখানে চিকিৎসা করানো ফরয। রক্ত, মল-মুত্র পরীক্ষার বিষয়টি রোগ নিরাময়ের জন্যে করানো হয়ে থাকে। কেননা অনেক ক্ষেত্রেই পরীক্ষা না করে ভুল চিকিৎসা গ্রহণ বা চিকিৎসা গ্রহণ না করলে প্রাণ নাশের হুমকি থাকে। এসব ক্ষেত্রে সার্বিক বিবেচনায় চিকিৎসা গ্রহণের জন্য শরীয়ত নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু টেষ্ট টিউব পদ্ধতির মাধ্যমে সন্তান পাওয়ার বিষয়টি ফরয নয়। একজন মহিলার সন্তান ধারণে সমস্যা হলে পুরুষটি অন্য বিয়ের মাধ্যমে বাবা হতে পারেন (যদি পুরুষের অন্য কোন সমস্যা না থাকে)। কিন্তু মহিলার বিশেষ কোন সমস্যা থাকলে সর্বোচ্চ চিকিৎসা গ্রহণের পরেও উন্নতি না হলে তার পক্ষে মা হওয়া কঠিন। তাই বলে সেক্ষেত্রে সব অবস্থাতেই টেষ্ট টিউব পদ্ধতিতে সন্তান পাওয়া যাবে ধারণাটি ভুল। কেননা মহিলাদের জরায়ুতেই সমস্যা থাকলে কোন পদ্ধতিতেই মা হওয়া সম্ভব নয়। অবশ্য জরায়ুর সমস্যা না থাকলেও টেষ্ট টিউব পদ্ধতিতে সন্তান নেয়া জায়িয হবে না। এক্ষেত্রে সেই আয়াত শরীফ উল্লেখ যোগ্য যেখানে আল্লাহ পাক বলেন,
ولنبلونكم بشىء من الخوف والجوع ونقص من الاموال والانفس والثمرت.
অর্থঃ- “অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল তথা ধন-সম্পদ ও জান তথা সন্তান-সন্তুটির ক্ষতি এবং ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে।”(সূরা বাক্বারা/ ১৫৫) সুতরাং বুঝা যাচ্ছে, কেউ সন্তানের বাবা-মা হতে না পারলে তারা শরীয়তের সীমারেখায় থেকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারে কিন্তু তাই বলে টেষ্ট টিউব পদ্ধতি গ্রহণ করে বাবা-মা হবার বিষয়টি হবে সীমা অতিক্রমমূলক লজ্জাহীনতার একটি কাজ যা শরীয়ত কোনদিনই অনুমোদন করেনা। ফিতরাতের ধর্ম ইসলাম ইসলাম হচ্ছে ফিতরাত অর্থাৎ স্বাভাবিকতার ধর্ম। যেমন ইসলামে পুরুষদের দাড়ি চেঁছে ফেলাকে এবং মেয়েদের মত লম্বা চুল রাখাকে হারাম করা হয়েছে যদিও একইভাবে মহিলাদের পুরুষদের মত চুল ছাটাকে হারাম করা হয়েছে যদিও এর অনেক কারণ রয়েছে। তবে একটি কারণ হচ্ছে, ‘ফিতরাত’ অর্থাৎ স্বাভাবিকতা। যেমন, পুরুষের থুতনিতে দাড়ি গজাবে এটাই স্বাভাবিক। সেটা কাটা, চাঁছা হারাম। সুতরাং সেটা ছেড়ে দিয়ে এক মুষ্ঠি পরিমাণ রাখা ফরয। এমনিভাবে পুরুষের চুল খুব লম্বা না হবার কারণে লম্বা না রাখাই ফিতরাত অর্থাৎ স্বাভাবিকতা এবং মেয়েদের মত চুল রাখা হারাম। পাশাপাশি মেয়েদের চুল লম্বা রাখাটাই তাদের জন্য স্বাভাবিকতা এবং কেটে ছোট করে রাখা হারাম। এবার দেখা যাক, সন্তান লাভের বিষয়টি কি? সাধারণ প্রজনন পদ্ধতিতে আমরা দেখতে পাই মহিলা ও পুরুষের যথাক্রমে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু নিষেকের পর যে জাইগোট উৎপন্ন হয় তা মহিলার রেহেমে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে একজন মানব শিশুতে পরিণত হয়। আর এ প্রজনন পদ্ধতি সামাজিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে একজন নারী ও পুরুষের বিয়ের মাধ্যমে। সুতরাং এভাবে সন্তান লাভ করাই ফিতরাত। কিন্তু টেষ্ট টিউব পদ্ধতিতে দেখা যাচ্ছে- (১) যে ওভাম মহিলাদের শরীরের ভেতরে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, তাকে বাইরে বের করে আনা হয়। (২) যে শুক্রাণূ মহিলার শরীরের ভিতরে নিক্ষেপ করা হয়, তা বাইরে সংগ্রহ করা হয়। (৩) যে শুক্রাণু ও ডিম্বাণূর নিষেক শরীরের ভিতরে সংঘটিত হবার কথা তা শরীরের বাইরে সংঘটিত করা হয়। (৪) নিষেকের পর যে ভ্রুণ এর বৃদ্ধি শরীরের ভেতরেই হবার কথা, টেষ্ট টিউব পদ্ধতির ক্ষেত্রে বাইরে নিষেকের পর তা জরায়ুতে দেয়া হয় বৃদ্ধির জন্য। (৫) যে শুক্রাণু পূর্ণ অবয়বে (লেজ, মাথা সহ) থাকে সেখানে ওঈঝও (ওহঃৎধ পুঃড়ঢ়ষধংসরপ ংঢ়বৎস) টেষ্ট টিউব পদ্ধতিতে শুক্রাণুর লেজ কেটে ডিম্বাণূ গাত্র ভেদ করে ভিতরে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়। উপরে বর্ণিত প্রতিটি বিষয়ে রয়েছে ফিতরাত অর্থাৎ স্বাভাবিকতার খিলাফ কাজ যা ইসলাম কখনই সমর্থন করেনা। এ দীর্ঘ আলোচনার প্রথমেই আমরা বলেছি যে, শরীয়তের কোন একটি মাপকাঠিতেও যদি প্রমাণ করা যায় টেষ্ট টিউব পদ্ধতিতে ব্যবহৃত বিষয়গুলো অথবা একটি বিষয় শরীয়ত সমর্থিত নয়, তবে সেক্ষেত্রে সন্তান পাবার জন্যে টেষ্ট টিউব পদ্ধতি গ্রহণ করা জায়িয নয়। আমরা পর্দা, লজ্জাশীলতা এবং ফিতরাতের দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রমাণ করলাম যে, টেষ্ট টিউব পদ্ধতিতে যদিও স্বামী-স্ত্রীর শুক্রাণু ও ডিম্বাণু ব্যবহৃত হয়, তা সন্তান পাবার জন্য গ্রহণ করা জায়িয নয়। (প্রয়োজনে পরবর্তীতে আরো বিস্তারিত ফতওয়া দেয়া হবে। ইনশাআল্লাহ) {দলীলসমূহঃ (১) আহকামুল কুরআন, (২) কুরতুবী, (৩) মাযহারী, (৪) খাযিন, (৫) বাগবী, (৬) ইবনে কাছীর, (৭) তাবারী, (৮) রুহুল মায়ানী, (৯) রুহুল বয়ান, (১০) কবীর, (১১) দুররে মানছূর, (১২) বুখারী শরীফ, (১৩) মুসলিম শরীফ, (১৪) তিরমিযী শরীফ, (১৫) মিশকাত শরীফ, (১৬) ফতহুল বারী, (১৭) উমদাতুল ক্বারী, (১৮) ইরশাদুস্ সারী, (১৯) তাইসীরুল ক্বারী, (২০) ফতহুল মুলহিম, (২১) শরহে নববী, (২২) মিরকাত, (২৩) আশয়াতুল লুময়াত, (২৪) লুময়াত, (২৫) শরহুত্ ত্বীবী, (২৬) তা’লীকুছ্ ছবীহ, (২৭) ঋভডটর্রট ঋভডহডফমযণঢধট, (২৮) অর্ভণরভর্ণ ইত্যাদি। } মুহম্মদ শাহ ইমরান (শিশির) সভাপতি- ছাত্র আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত রংপুর জিলা শাখা। সুওয়ালঃ আশুরা উপলক্ষ্যে কয়টি রোযা রাখা সুন্নত, জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াবঃ হাদীস শরীফের দ্বারা ছাবেত আছে দু’টি রোযা রাখা সুন্নত। মুর্হরমের ৯ ও ১০ তারিখে অথবা ১০ ও ১১ তারিখে। তবে ৯ ও ১০ তারিখে রোযা রাখা আফযল। {দলীলসমূহঃ (১) বুখারী শরীফ, (২) মুসলিম শরীফ, (৩) মিশকাত, (৪) তিরমিযী, (৫) মুয়াত্তা ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি, (৬) জামিউল ফাওয়ায়েদ, (৭) মসনদে ফেরদৌস দায়লামী, (৮) মাসাবাতা বিস্ সুন্নাহ্, (৯) মুসনাদে ইমাম আহ্মদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি ইত্যাদি}
মুহম্মদ আশিকুল্লাহ ছিদ্দীক্বী ছারছীনা দারুস্ সুন্নাত কামিল মাদ্রাসা নেছারাবাদ, পিরোজপুর।
সুওয়ালঃ আশুরাকে কেন্দ্র করে কিছু লোক নবী-রাসূল আলাইহিমুস্ সালাম সম্পর্কে এলোমেলো বক্তব্য পেশ করে থাকে। যেমন তারা বলে থাকে যে, হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম গন্ধম খেয়ে ভুল করেছিলেন ইত্যাদি। এখন আমার প্রশ্ন হলো সত্যিই কি নবী-রাসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ভুল-ত্রুটি করেছিলেন অথবা করেননি? সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো, কোন নবী-রাসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ কখনও ভুল করেননি। ইচ্ছাকৃত তো নয়ই, অনিচ্ছাকৃতও নয়। অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ কোন ভুলই করেননি। (শরহে আক্বাইদে নসফী, ফিক্বহে আকবর, তাকমীলুল ঈমান, আক্বাইদে হাক্কাহ) অর্থাৎ সকল নবী-রাসূল আলাইহিমুস্ সালামগণই ছিলেন আল্লাহ্ পাক-এর খাছ ও মনোনীত বান্দাহ্গণের অন্তর্ভূক্ত। তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ যদি ভুল করেন একথা যদি স্বীকার করা হয় তা হলে এ থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে স্বয়ং আল্লাহ পাকই ভুল করেছেন। (নাঊযুবিল্লাহ) যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। অথচ স্বয়ং আল্লাহ পাকই তাঁর কুরআন শরীফের একাধিক স্থানে ইরশাদ করেন,
نوحى اليهم. অর্থঃ- “আমি তাঁদের (নবী-রাসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের) প্রতি ওহী পাঠাতাম।” (সূরা ইউসূফ/১০৯, নহল/৪৩, আম্বিয়া/৭) অর্থাৎ নবী-রাসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের যাবতীয় কার্যাবলীই ওহীর দ্বারা (আল্লাহ্ পাক কর্তৃক) পরিচালিত হতো। যার পরিপ্রেক্ষিতে আক্বাইদের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে-
الانبياء عليهم السلام كلهم معصوم.
অর্থঃ- “সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণ মা’ছূম বা নিস্পাপ।” আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে,
الانبياء عليهم السلام كلهم منزحون عن الصغائر والكبائر والكفر والقبائح.
অর্থঃ- “সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণই ছগীরা, কবীরা, কুফরী এবং অপছন্দনীয় কাজ হতেও পবিত্র।” অতএব, যারা নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের ভুল সম্পর্কে বলে থাকে, আক্বাইদ সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই তারা তা বলে থাকে। যেমন তারা বলে থাকে যে, হযরত আদম আলাইহিমুস্ সালাম গন্দম খেয়ে ভুল করেছিলেন। (নাঊযুবিল্লাহ্) মূলতঃ তাদের একথা সঠিক নয়। সম্পূর্ণরূপে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের আক্বিদা কেউ পোষন করলে সে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। (বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১০, ১৫, ৪৫, ৫৭, ৬৪, ৬৮, ৭০, ৭১, ৭৩, ৮০, ৮২, ১০৫ ও ১০৬তম সংখ্যাগুলো দেখুন।) {দলীলসমূহঃ (১) কুরআন শরীফ, (২) তাফসীরুল কুরতুবী, (৩) তাফসীরুত্ ত্ববারী, (৪) আহকামুল কুরআন লিল জাছ্ছাছ্ (৫) আহকামুল কুরআন লিই বনিল্ আরাবী, (৬) তাফসীরুল্ খাযিন, (৭) তাফসীরুল বাগবী, (৮) তাফসীরে মাদারিকুত তানযীল (৯) তাফসীরুল্ মাযহারী, (১০) তাফসীরুল্ বাইযাবী, (১১) তাফসীরুল জালালাইন, (১২) বুখারী শরীফ, (১৩) ফতহুল বারী (১৪) উমদাতুল্ ক্বারী, (১৫) ইরশাদুস্ সারী, (১৬) মুসলিম শরীফ, (১৭) শরহুন্ নববী, (১৮) তিরমিযী শরীফ, (১৯) তুহফাতুল্ আহওয়াযী, (২০) আরিদ্বাতুল্ আহওয়াযী, (২১) উরফুশ্ শাযী, (২২) আবূ দাঊদ শরীফ, (২৩) বযলুল্ মাজহুদ, (২৪) আউনুল মা’বূদ, (২৫) নাসায়ী শরীফ, (২৬) যখীরায়ে উকবা (২৭) ইবনু মাজাহ্ শরীফ, (২৮) মুওয়াত্তায়ে ইমাম মালিক, (২৯) যুরকানী শরহে মুওয়াত্তা, (৩০) মুওয়াত্তায়ে ইমাম মুহম্মদ, (৩১) মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল, (৩২) দারিমী, (৩৩) ত্ববারানী, (৩৪) দাইলামী শরীফ, (৩৫) মিশকাত শরীফ, (৩৬) মিরকাত, (৩৭) মুযাহিরে হক্ব, (৩৮) হিদায়া, (৩৯) দুররুল মুখতার, (৪০) রদ্দুল মুহতার, (৪১) শামী, (৪২) ফতওয়ায়ে আলমগীরী, (৪৩) ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া, (৪৪) গুনিয়াতুত্ ত্বলিবীন, (৪৫) ফতহুল গাইব, (৪৬) ফতহুল রব্বানী, (৪৭) ইহ্ইয়াউ উলুমিদ্দীন, (৪৮) আনিসূল আরওয়াহ, (৪৯) মাকতুবাত শরীফ, (৫০) মসনবী শরীফ, (৫১) শরহে আক্বাইদে নসফী, (৫২) ফিক্বহে আকবর, (৫৩) তাকমীলুল ঈমান, (৫৪) আক্বাঈদে হক্কা, (৫৫) আক্বীদাতুত্ ত্বহাবী, (৫৬) নূরে মুহম্মদী, (৫৭) ফাওয়ায়েদুল ফুওয়াদ, (৫৮) কুদূরী, (৫৯) হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইত্যাদি।}
মুহম্মদ রাশেদুল ইসলাম (রাসেল) মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান ‘মা’রুফ’ রাজারহাট, কুড়িগ্রাম।
সুওয়ালঃ বর্তমান সময়ে বিভিন্ন দেশে নববর্ষ উপলক্ষে পহেলা তারিখে যেমন- ১লা বৈশাখ, ১লা জানুয়ারী ইত্যাদি তারিখে ভাল ভাল খাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়, এটা কতটুকু শরীয়তসম্মত? আর শরীয়তে কোন নির্দিষ্ট দিনে ভাল খাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়েছে কি?
জাওয়াবঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে দশই মুর্হরমে ভাল খাদ্য খাওয়ানোর তাগিদ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
من وسع على عياله فى النفقة يوم عاشوراء وسع الله عليه سائر سنته.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি তার পরিবারবর্গকে আশুরার দিন অর্থাৎ দশই মুর্হরমে ভাল খাদ্য খাওয়াবে, আল্লাহ্ পাক তাকে এক বৎসরের জন্য সচ্ছলতা দান করবেন।” অর্থাৎ দশই মুর্হরম প্রত্যেক পরিবারের প্রধানের দায়িত্ব অধিনস্থদের ভাল খাদ্য খাওয়ানো। আর কুরআন-সুন্নাহ্-এর দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ ও পহেলা জানুয়ারীতে ভাল খাদ্য খাওয়ানোর জন্য আলাদা কোন নির্দেশ নেই। (বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ২, ১০, ১৫, ৪৫, ৫৭, ৬৮, ৮০ ও ৯২তম সংখ্যাগুলো দেখুন।) {দলীলসমূহঃ- (১) জামিউল ফাওয়ায়েদ, (২) ত্ববারানী, (৩) বায়হাক্বী, (৪) ইবনে হাব্বান, (৫) মসনদে ফেরদৌস লিদ দায়লামী, (৬) মাসাবাতা বিস্ সুন্নাহ্ ইত্যাদি}