সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১২৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ মুহিউদ্দীন (সাঃ সম্পাদক) ছাত্র, আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত চান্দিনা শাখা, কুমিল্লা।

সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকা মার্চ/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে ‘‘বাজারে প্রচলিত কালো মেহেদী এবং মেহেদী রংয়ের কলপ ব্যবহার করা সম্পর্কে’’ নিম্নোক্ত জিজ্ঞাসার-সমাধান ছাপা হয়- জিজ্ঞাসাঃ বর্তমানে কাল মেহ্দী নামে এক প্রকার মেহ্দী বের হয়েছে। মাথার চুল কাল করার জন্য মেয়েদেরকে এটা ব্যবহার করতে দেখা যায়। এটাকে কি কলপ বলা যাবে?  যদি কলপ না হয়ে মেহ্দী হয়ে থাকে, তাহলে এর ব্যবহার জায়েয হবে কি? সমাধানঃ মেয়েদের চুলে মেহ্দী রঙের কলপ ব্যবহার  করা বৈধ। বাজারে প্রচলিত কাল মেহ্দী ব্যবহারে চুল যদি চিকচিকে কাল না হয়ে ঈষৎ বাদামী রঙের হয়,তাহলে মেয়েদের চুলে ব্যবহার করা যাবে। ………’’ আর মাসিক মদীনা অক্টোবর/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়- প্রশ্নঃ একজন মহিলার অল্প বয়সেই মাথার চুল পেকে গেছে। এনিয়ে তাঁকে দাম্পত্য জীবনে বিব্রত হতে হচ্ছে।  এই মহিলার পক্ষে কি স্মামীর মনোরঞ্জনের প্রতি লক্ষ্য রেখে মাথার চুলে  কলপ ব্যবহার করা জায়েয হবে? উত্তরঃ জায়েয হবে। এখন আমার সুওয়াল হলো বর্তমানে বাজারে প্রচলিত কালো মেহেদী এবং মেহেদী রংয়ের কলপ বা অন্য যে- কোন রংয়ের কলপ ব্যবহার করা সম্পর্কে হাটহাজারীর অখ্যাত মাসিক পত্রিকার ও মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? দলীল সহ সঠিক জাওয়াব জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ “বর্তমানে বাজারে প্রচলিত কালো মেহেদী এবং মেহেদী রংয়ের কলপ বা অন্য যে-কোন রংয়ের কলপ  ব্যবহার করা সম্পর্কে’’ হাট হাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার ও মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। কারণ কালো মেহেদী বলতে বর্তমানে বাজারে যা প্রচলিত রয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে কোন মেহেদী নয়। বরং এটা হচ্ছে সম্পূর্ণ রাসায়নিক উপাদান। সুতরাং বর্তমানে বাজারে প্রচলিত কালো মেহেদী এবং মেহেদী রংয়ের কলপ ব্যবহার করা যাবেনা । কারণ বর্তমানে বাজারে প্রচলিত কালো মেহেদী এবং মেহেদী রংয়ের কলপ ব্যবহার করলে মাথার চুলে ও দাড়িতে নখপালিশের ন্যায় একটি আবরণ বা প্রলেপ পড়ে, যার ফলে মাথার চুলে ও দাড়িতে পানি পৌঁছেনা এবং এ কারণে তার ওযু গোসল হবে না। আর ওযু ও গোসল না হলে তার নামাযও শুদ্ধ হবেনা। কারণ নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য পূর্বশর্ত হলো, শরীর পাক হওয়া। আর শরীর পাক করতে হলে গোসলে সমস্ত শরীর ধৌত করতে হবে এমনকি মাথার চুলে ও দাড়িতে পানি পৌঁছাতে হবে যেন একটি চুলও শুকনা না থাকে। শরীর পাক থাকলে নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য ওযু করা ফরয। আর ওযুতে মাথার চুল মাসেহ করা ফরয এবং দাড়িতে পানি প্রবাহিত করাও ফরয। কিন্তু বর্তমানে বাজারে প্রচলিত কালো মেহেদী এবং মেহেদী রংয়ের  কলপ বা অন্য যে কোন রংয়ের কলপ  লাগালে মাথার চুলে ও দাড়িতে প্রলেপ পড়ে যাওয়ার কারণে মূল চুলের উপর মাসেহ ও পানি প্রবাহিত হয়না বরং প্রলেপের উপর দিয়ে মাসেহ ও পানি প্রবাহিত হওয়ায় ওযু ও ফরয গোসল হবেনা। আর ওযু ও ফরয গোসল না হলে নামায শুদ্ধ হবেনা।  যেমন ফতওয়ায়ে আলমগীরী কিতাবের ১ম খন্ডের ৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

والخضاب اذا تجسد ويبس يمنع تمام الوضوء والغسل.

অর্থঃ- “খেযাব (কলপ) যখন শরীরে (চুলে, দাড়ি ইত্যাদিতে) জমে বা লেগে যাবে এবং শুকিয়ে যাবে তখন ওযূ ও গোসল শুদ্ধ হবেনা।” শুধু তাই নয়, এমনকি বর্তমানে বাজারে প্রচলিত কালো মেহেদী এবং মেহেদী রংয়ের কলপ বা অন্য যে-কোন রংয়ের কলপ ব্যবহারকারী ব্যক্তি মারা গেলে তার জানাযা নামাযও শুদ্ধ হবেনা। কারণ তাকে গোসল দেয়ার সময় তার দাড়িতে ও চুলে পানি না পৌঁছানোর কারণে সে পবিত্র হবেনা।  সুতরাং তাকে পবিত্র করতে হলে তার দাড়ি ও চুল মুন্ডন করে গোসল করাতে হবে। এরপর তার জানাযা দিতে হবে। অন্যথায় সে কস্মিনকালেও পবিত্র হবেনা এবং তার জানাযা নামায পড়ানোও জায়িয হবেনা।  স্মর্তব্য,  কলপ বা খেযাব দু’ধরণের হয়ে থাকে।  প্রথমতঃ যেটা ব্যবহার করলে আবরণ বা প্রলেপ পড়েনা কিন্তু কালো হয়। আর এ ধরণের কালো রংয়ের খেযাব ব্যবহার করাও শরীয়তে মাকরূহ্ তাহ্রীমী বলা হয়েছে।  যেমন, হাদীস শরীফের কিতাব “আবু দাউদ” ও “নাসাঈ শরীফে” উল্লেখ আছে,

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان قوم يخضبون بالسواد كحواصل الحمام لايجدون رائحة الجنة.

অর্থঃ-“সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় এমন কিছু লোক বের হবে যারা কবুতরের পালকের ন্যায় কালো খেযাব (কলপ) ব্যবহার করবে, তারা জান্নাতের ঘ্রাণও পাবেনা।”  হাদীছ শরীফের কিতাব “তিবরানী শরীফে” ইরশাদ হয়েছে,

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من خضب بالسواد سود الله وجهه يوم القيامة.

অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি কালো খেযাব (কলপ) ব্যবহার করবে, আল্লাহ্ পাক ক্বিয়ামতের দিন তার চেহারাকে কালো করে দিবেন।”  “মুসলিম শরীফের” ২য় খন্ডের ১৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ويحرم خضابه بالسواد على الاصح وقيل يكره كراهة تنزيه والمختار التحريم لقوله صلى الله عليه وسلم واجتنبوا السواد.

অর্থঃ- “অধিক ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ মতে কালো খেযাব (কলপ) ব্যবহার করা হারাম। কেউ কেউ বলেছেন, মাকরূহ তানযীহ। তবে গ্রহণযোগ্য মত হলো, কালো খেযাব (কলপ) ব্যবহার করা মাকরূহ্ তাহরীমী। কারণ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কালো রং (খেযাব) বর্জন কর।” কালো খেযাব (কলপ) সম্পর্কে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি “শরহে শামায়েলে তিরমিযীতে” উল্লেখ করেন,

 ذهب اكثر العلماء الى كراهة الخضاب بالسواد ورجح الثورى الى انها كراهة تحريم.

  অর্থঃ- “অধিকাংশ আলিমগণের মতে কালো খেযাব (কলপ) ব্যবহার করা মাকরূহ। ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে মাকরূহ্ তাহ্রীমী।” মিশকাত শরীফের শরাহ্ “আশয়াতুল লুময়াতে” উল্লেখ আছে,

 خضاب بحناء باتفاق جائز است ومختار در سواد حرمت است.

অর্থঃ- “মেহেদী বা মেন্দী দ্বারা খেযাব দেয়া সর্বসম্মতিক্রমে জায়িয। আর গ্রহণযোগ্য মতে, কালো খেযাব ব্যবহার করা হারাম। উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, চুল বা দাড়িতে কালো রংয়ের খেযাব (কলপ) ব্যবহার করা আমাদের হানাফী মায্হাব মুতাবিক মাকরূহ্ তাহ্রীমী। দ্বিতীয়তঃ আমাদের দেশে বা বিদেশে যে সমস্ত কলপ বা খেযাব পাওয়া যায় তার প্রত্যেকটি ব্যবহারেই প্রলেপ পড়ে। প্রলেপ পড়েনা এমন কোন খেযাব এখন পর্যন্ত তৈরী হয়নি বা বিশ্বে কোথাও পাওয়া যায়না। অতএব, বর্তমানে বাজারে প্রচলিত যে সব কালো মেহেদী এবং মেহেদী রংয়ের কলপ বা  অন্য যে কোন রংয়ের কলপ বা খেযাব পাওয়া যায় তার প্রত্যেকটি ব্যবহারেই প্রলেপ পড়ে। সুতরাং বাজারে প্রচলিত কালো মেহেদী এবং মেহেদী রংয়ের কলপ বা অন্য যে কোন রংয়ের কলপ  ব্যবহার করা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয।  উল্লেখ্য,  পাকা চুল, দাড়ি রঙ্গীন করতে মেহেদীর ব্যবহার সেই প্রাচীনকাল থেকেই। মেহেদীর ব্যবহারের পর সাদা চুলের মধ্যে যে বর্ণের ছটা আসে তাকে সামান্য একটু গাঢ় করার জন্যে অনেকেই কাতম মিশিয়ে চুল-দাড়িতে ব্যবহার করেন। আর এ রকম ব্যবহারতো ছিল হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মধ্যেও। জানা যায়, আফযালুন্ নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কাতম মিশ্রিত মেহেদী ব্যবহার করতেন। কিন্তু সে রকম কোন ধারণার সাথে কালি মেহেন্দীর সামান্যতম মিল নেই। যদিও প্যাকেটটির উপরে স্পষ্ট লেখা আছে কালি মেহেন্দী এবং এক পার্শ্বে বড় করে লেখা ঐঊজইঅখ অর্থাৎ ভেষজ। কালি মেহেন্দীকে ইংরেজীতে বলে Black Henna (ব্লাক হেন্না),  আর আরবীতে বলে আসওয়াদ হেন্না, কালি মেহেদী হচ্ছে একটি  AZO dye গ্রুপের উপাদান এবং সম্পূর্ণটাই Chemical। এই উপাদানটির পুরো নাম হচ্ছে P phenyl enediamine । তবে শুধুমাত্র ভারতে এবং আফ্রিকার কিছু দেশেই এই P phenyl enediamine Black Henna বা কালি মেহেন্দী নামে পরিচিত।  আপাতদৃষ্টিতে চুলের কলপ হিসেবে এটি অনন্য। কারণ সাদা চুল-দাড়ি সহজেই কালো হয়ে উঠে এবং থাকেও অনেকদিন। কিন্তু কালো মেহেদীর এই গুণ গুলো একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে ব্যাখ্যা করলে ধরা পড়বে এর আসল চেহারাটা। যদিও একে বলা হয় কালি মেহেন্দী কিন্তু আসলে এতে প্রাকৃতিক মেহেদীর কোন গন্ধও নেই। এটা হচ্ছে সম্পূর্ণই রাসায়নিক উপাদান।  দ্বিতীয়ত প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে Herbal কিন্তু এটা আসলে chemical substance। মাথার চুলের সাথে অনেকদিন লেগে থাকার কারণ হচ্ছে এর মধ্যে রয়েছে, coating properties  যেমন, P phenyl enediamine, urethen coating এ ব্যবহার হয়। Urethoan হচ্ছে এন্টি-নিওপ্লাষ্টিক এবং হিপনোটিক ড্রাগস। চুলের চতুর্দিকে এটা একটি আবরণ সৃষ্টি করে। চুলের চতুর্দিকের এই আবরণ সরে যেতে দীর্ঘ সময় লাগার পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে পানিতে এর দ্রবণীয়তা। ১০৪০ ফারেনহাইট (৮০০ সেলসিয়াস) তাপমাত্রায় চ- P phenyl enediamine বা কালি মেহেন্দী পানিতে দ্রবীভূত হয়। কিন্তু আমাদের গোছলের পানির তাপমাত্রা তার চাইতেও অনেক কম। সুতরাং পানিতে দ্রবীভূত হতে সময় লাগে বেশী এবং চুলে থাকেও বেশীদিন।  এবার আমরা কালো মেহেদীর কয়েকটি মন্দ দিক উল্লেখ করছি। প্রাকৃতিক মেহেদী কখনই চুলের গোড়া দিয়ে রক্ত স্রোতের সঙ্গে মিশে যায় না। আবার কোন কারণে মিশে গেলেও তা শরীরের উপর কোন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না। কিন্তু কালো মেহেদী P phenyl enediamine চুলের গোড়া দিয়ে রক্ত স্রোতের সঙ্গে মিশে যায় এবং তা আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনী, লিভার এবং হৃৎপিন্ডের ক্ষতি করে। এ ছাড়াও অনেকের ক্ষেত্রেই মারাত্মক এলার্জিক রিয়েকশন করে থাকে। (এ তথ্য প্যাকেটের গায়েও অনেক ক্ষুদ্রাকারে লেখা রয়েছে এবং তার কি কি ক্ষতিকর দিক আছে সেখানে তারও উল্লেখ আছে) নীচে তা উল্লেখ করা হলঃ-

POISON: FOR EXTERNAL USE ONLY SENSITIVITY TEST PARA- PHENYLENEDIAMINE CONTAINING PREPARATIONS MAY CAUSE SERIOUS INFLAMMATION OF THE SKIN IN SOME CASES AND SO A PRELIMINARY TEST SHOULD ALWAYS BE CARRIED OUT TO DETERMINE WHETHER OR NOT SPECIAL SENSITIVITY EXISTS. FOR CARRYING OUT THE TEST, CLEANSE A SMALL AREA OF SKIN BEHIND THE EAR OR UPON THE INNER SURFACE OF THE FOREARM, USING EITHER SOAP AND WATER OR ALCOHOL. APPLY A SMALL QUANTITY OF THE PREPARED KALI MEHANDI AND ALLOW IT TO DRY. AFTER 24 HOURS WASH THE AREA GENTLY WITH SOAP AND WATE IF NO IRRITATION OR INFLAMMATION IS APPARENT, THIS KALI MEHANDI CAN BE USED SAFELY.

CAUTION: THIS PREPARATION SHOULD ON NO ACCOUNT BE USED FOR DYEING EYEBROWS OR EYELASHES AS SEVERE INFLAMMATION OF THE EYE OR EVEN BLINDNESS MAY PESULT. P phenyl enediamine শরীরের উপর যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে তাতো অবশ্য কিন্তু এ ছাড়াও শরীয়তগত দিক থেকে এর ক্ষতিকর দিকটা আরও মারাত্মক।  প্রথমেই আসা যাক Coating porperty দিকটায়। যদিও এটা পানিতে সহজে দ্রবণীয় কিন্তু তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় ১০৪০ ফারেনহাইট (৮০০ সেলসিয়াস) কিন্তু আমাদের গোছলের/ওজুর পানির তাপমাত্রা এর চাইতে অনেক কম এবং সে তাপমাত্রায় P phenyl enediamine দ্রবীভূত হয়না ফলে ফরয গোছলের যে শর্ত চুলের মধ্যে পানি পৌঁছানো সে শর্ত পালন না হওয়াতে ফরয গোছল আদায় হয়না। শুধু তাই নয়, এরকম অবস্থায় একজন মৃত ব্যক্তির গোসল দিতে হলে তার সমস্ত চুল-দাড়ি মুন্ডিয়ে পানি পৌঁছাতে হবে।

দ্বিতীয়তঃ P phenyl enediamine বা কালি মেহেন্দির Water resistance ক্ষমতা বেশী থাকায় চুলে সর্বোচ্চ ২০ দিন পর্যন্ত লেগে থাকে। তাহলে একবার ব্যবহারের পর এ রকম লম্বা সময় ধরে ব্যবহারকারী নাপাক অবস্থার মধ্যে থাকে। ইসলাম হচ্ছে সবদিক থেকেই পূর্ণাঙ্গ। সেখানে সবকিছুর বর্ণনা রয়েছে। যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর ইসলাম কোনদিনই তা আমাদের ব্যবহারের অনুমতি দেয়না। যেখানে P phenyl enediamine যখন রক্তের মাধ্যমে প্রবেশ করে আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ লিভার, হার্ট, কিডনী প্রভৃতির ক্ষতি করে সে রকম  জিনিসের ব্যবহার শুধুমাত্র cosmatic quality- র জন্য জায়িয হতে পারেনা।

 অতএব বিবেচ্য বিষয় যে, যেহেতু কালো মেহেদী কোন প্রাকৃতিক মেহেদী নয়। বাজারে পাওয়া এ ধরণের প্যাকেটে Herbal লেখা দেখে বিশ্বাস করা হচ্ছে প্রতারণার স্বীকার হওয়া। এটা সম্পূর্ণ রাসায়নিক দ্রব্য যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনে। এছাড়াও এর রয়েছে coating property  যার জন্যে চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছেনা। সুতরাং ব্যবহারকারীর ফরয গোসল আদায় হয়না। অতএব, কালো মেহেদীর নামে এই কলপ বা খেজাব ব্যবহার করা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়িয। উল্লেখ্য, মাসিক মদীনায় বলা হয়েছে,‘‘মহিলার পক্ষে স্মামীর মনোরঞ্জনের প্রতি লক্ষ্য রেখে মাথার চুলে কলপ ব্যবহার করা  জায়েয হবে।’ এর জবাবে বলতে হয় যে, মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্যও ভুল হয়েছে। কারণ বাজারে প্রচলিত কলপ ব্যবহার করা যেহেতু হারাম,সেহেতু স্মামীর মনোরঞ্জনের জন্য হলেও কোন মহিলার পক্ষে মাথার চুলে কলপ ব্যবহার করা জায়িয হবে না। কেননা হাদীছ শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

لاطا عة لمخلوق فى معصية الخالق.

অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক-এর নাফরমানী করে কোন মাখলুকাতের আনুগত্য করা জায়িয নেই।” (মিশকাত) সুতরাং যেভাবেই হোক স্বামীকে বুঝায়ে  কলপ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যেহেতু স্বামী মুসলমান, সেহেতু হেকমতের সাথে তাকে বুঝাতে চেষ্টা করতে হবে এবং কলপ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে  হবে। কেননা হযরত আছিয়া আলাইহাস সালাম-এর স্বামী ফেরাউন কাফির হওয়া সত্বেও তিনি পরিপূর্ণরূপে দ্বীনে হক্বের উপর ছিলেন। কাজেই কোন অবস্থাতেই স্মামীর মনোরঞ্জনের জন্য  শরীয়তের হুকুমের খেলাফ কলপ ব্যবহার করা যাবেনা।  উপরোক্ত  দলীল ভিক্তিক আলোচনা থেকে এটাই সাব্যস্ত হলো যে,  বাজারে প্রচলিত কালো  মেহেদী এবং মেহেদী রংয়ের কলপ বা অন্য যে কোন রংয়ের কলপ ব্যবহার করতে পারবেনা। যা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং হাটহাজারীর অখ্যাত মাসিক পত্রিকার ও মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে বলেই প্রমাণিত হলো । {বিঃ দ্রঃ- এ সম্পর্কে আরো জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১৯, ৩২, ৪২, ৬০, ৬৬, ৬৭, ৭৫, ৯৫ ও১০৯তম সংখ্যাগুলো পড়ৃন। সেখানে বাজারে প্রচলিত কলপ ব্যবহার করা সম্পর্কে  মাসিক মদীনা, মাসিক রাহমানী পয়গাম ও মাসিক মুঈনুল ইসলামের ভুল বক্তব্য খ-ন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। এবার দি¦তীয় বারের মতো মাসিক মুঈনুল ইসলামের  এবং চতুর্থ বারের মতো মাসিক মদীনার বাজারে প্রচলিত কালো মেহেদী এবং মেহেদী রংয়ের কলপ বা অন্য যে-কোন রংয়ের কলপ ব্যবহার করা সম্পর্কে ভুল বক্তব্য খ-ন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হলো। {দলীলসমূহঃ (১) মুসলিম, (২) তিরমিযী, (৩) আবু দাউদ, (৪) নাসাঈ, (৫) ইবনে মাজাহ্, (৬) তিবরানী, (৭) মিশকাত, (৮) উমদাতুল ক্বারী, (৯) জামউল ওসায়িল, (১০) মিরকাত, (১১) আশয়াতুল লুময়াত, (১২) লুময়াত, (১৩) শরহে শামায়িলে তিরমিযী, (১৪) যখীরা, (১৫) ওয়াজীয, (১৬) সিরাজুল ওয়াহ্হাজ, (১৭) দুররুল মুখতার, (১৮) ফতওয়ায়ে আলমগীরী, (১৯) ফতওয়ায়ে শামী, (২০) ফতওয়ায়ে হিন্দীয়া, (২১) ইমদাদুল ফতওয়া, (২২) কিফায়াতুল মুফতী, (২৩) Manufacture of Beauty Products, By SBP Board of Consultants & Engineers, (28) Yahoo search engine P- Phenylenediamine all related files. ইত্যাদি}

সাইয়্যিদ  মুহম্মদ তীতুমীর, সাতক্ষীরা। মুহম্মদ ফয়জুল্লাহ্, লালমনিরহাট। মুহম্মদ নুরুল্লাহ্ খন্দকার, সিরাজগঞ্জ।

সুওয়ালঃ আমরা আগে আলিমগণের মুখে শুনতাম যে, টিভি দেখা জায়িয নেই। কিন্তু বর্তমানে দেখতে পাচ্ছি অনেক মাওলানা ছাহেবরা টিভিতে অনুষ্ঠান করছে। বিশেষ করে মানুষ যাদেরকে বড় মাওলানা মনে করে তারাই সেটা করছে। তাদের সে অনুষ্ঠানগুলো এ.টি.এন টিভি চ্যানেলসহ আরো অনেক চ্যানেলে প্রায়ই দেখানো হয় এবং তাতে ইসলামের অনেক শিক্ষণীয় বিষয় আছে বলে অনেকেই তা দেখে থাকে। এছাড়া মাসিক মদীনা মে/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যার ২১নং প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, “টেলিভিশন একটি যন্ত্রমাত্র। খোলা চোখে যা কিছু দেখা জায়িয বা মুবাহ টেলিভিশনের পর্দাতেও সেগুলি দেখা জায়েয বা মুবাহ। শিক্ষণীয় কিছু দেখলে বা শুনলে পূণ্য হওয়ারই কথা। অপর দিকে পাপযুক্ত যেসব দৃশ্য দেখানো হয় সেগুলি দেখা ও শোনাতে অবশ্যই গোনাহ্ হবে।”  অনুরূপ মাসিক রাহমানী পয়গাম জুলাই/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যার এক জিজ্ঞাসার জবাবে বলা হয়েছে, “টিভি দেখার শরয়ী মূলনীতি হলো, যে সকল বস্তু বা বিষয়াবলী (টিভির পর্দা, রেডিও ইত্যাদির মাধ্যম ছাড়া) সরাসরি দেখা ও শুনা জায়েয সেগুলো টিভির পর্দা, রেডিও ইত্যাদিতেও দেখা বা শুনা জায়িয। আর যে সকল বস্তু বা বিষয়াবলী সরাসরি দেখা ও শুনা জায়েয নেই সেগুলো টিভি, রেডিও ইত্যাদিতেও দেখা-শুনা জায়েয নেই।” এখন আমার জানার যে বিষয় তাহলো- (১) মাসিক মদীনা পত্রিকার প্রশ্নের উত্তর ও মাসিক রাহমানী পয়গাম পত্রিকার জিজ্ঞাসার জবাব শরীয়ত সম্মত হয়েছে কিনা? (২) ছবি কাকে বলে ও ছবির সংজ্ঞা কি? (৩) শরীয়তে টি.ভি দেখা জায়িয কিনা?  (৪) নাজায়িয পদ্ধতিতে ইল্মে দ্বীন শিক্ষা করা অর্থাৎ ইল্মে দ্বীন  শিক্ষার জন্য টিভি দেখা, শোনা ও টিভি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা শরীয়তসম্মত কিনা? (৫) নাজায়িয হলে যে সকল মাওলানা ছাহেব অনুষ্ঠান করে ও দেখে তাদের সম্পর্কে শরীয়তের ফতওয়া কি? এদেরকে আলিম বলা যাবে কিনা? এদের পিছনে নামায পড়া যাবে কিনা? কুরআন-সুন্নাহ্র দলীল সহকারে জাওয়াব দিলে খুবই উপকৃত ও খুশী হব।

জাওয়াবঃ   সুওয়ালে বর্ণিত সুওয়ালকারীর পাঁচটি সুওয়ালের জাওয়াবই ধারাবাহিকভাবে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ্।

(ধারাবাহিক)

(৪) নাজায়িয পদ্ধতিতে ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা অর্থাৎ ইলমে দ্বীন  শিক্ষার জন্য টিভি দেখা, শোনা ও টিভি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা শরীয়তসম্মত কিনা? এর জবাবে বলতে হয় যে, নাজায়িয পদ্ধতিতে ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা বা গ্রহণ করা কোনটাই কখনোই জায়িয হবেনা। আর ইলমে দ্বীন শেখার জন্য টিভি দেখা, শোনা ও তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা অর্থাৎ টিভি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়কে দ্বীনের হাদী বা শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ করা কখনোই শরীয়তসম্মত হবেনা বরং সম্পূর্ণরূপে শরীয়তের খিলাফ যা কাট্টা হারামের অন্তর্ভুক্ত।  ইলমে দ্বীন শিক্ষার ব্যাপারে আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন, তোমরা দোয়া কর-

رب زدنى علما.

অর্থঃ- “আয় আল্লাহ্ পাক! আপনি আমার ইল্ম বৃদ্ধি করে দিন।” (সূরা ত্বাহা/১১৪)

এর ব্যাখ্যায় আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

 طلب العلم فريضة على كل مسلم.

 অর্থঃ- “প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য (জরুরত আন্দাজ) ইল্ম অর্জন করা ফরয।” (ইবনে মাজাহ্, মিশকাত) এ ইল্ম মুসলমানেরা কিভাবে অর্জন করবে সে প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে ইরশাদ করেন,

انظروا عمن تأخذون دينكم.

 অর্থঃ- “তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন গ্রহণ করছ তাকে দেখে নাও।” (তিরমিযী, মিশকাত) অর্থাৎ ইলমে দ্বীন যার-তার নিকট থেকে শিক্ষা করা যাবেনা। ইল্মে দ্বীন শিক্ষা করতে হলে যিনি হক্কানী-রব্বানী আলিম তাঁর নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। তাহলে এখন প্রশ্ন এসে যায় যে, হক্কানী-রব্বানী আলিম কে? এবং হক্কানী-রব্বানী আলিম সম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহ্তে কি বলা হয়েছে, কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে হক্কানী-রব্বানী আলিম হওয়ার জন্য প্রধানত ও প্রথমতঃ দু’টি শর্ত দেয়া হয়েছে। (এক) ঈমান, (দুই) তাক্বওয়া। আলিম হওয়ার জন্য যে দু’টি শর্ত আরোপ করা হয়েছে তার প্রথমটি হচ্ছে ঈমান। আবার ঈমান দু’ভাগে বিভক্ত। (১) ঈমান, (২) আক্বীদা।  (১) ঈমানঃ ঈমান ব্যতীত কারো পক্ষে আলিম হওয়া সম্ভব নয়। এর উদাহরণ হচ্ছে, গ্রীশ চন্দ্র সেন। সে মাওলানা ছিল। সে কুরআন শরীফ অনুবাদ করেছে, মিশকাত শরীফ অনুবাদ করেছে, তাযকিরাতুল আউলিয়া অনুবাদ করেছে এবং আরো ইসলামী কিতাব লিখেছে তা সত্ত্বেও সে আলিম নয়। কারণ সে ঈমান গ্রহণ করেনি। সে ব্রাহ্ম সমাজের অন্তর্ভুক্ত ছিল। অর্থাৎ সে ‘এক আল্লাহ্ দ্বিতীয় নাস্তি’ এ বিশ্বাসে বিশ্বাসী ছিল। (২) আক্বীদাঃ আলিম হওয়ার জন্য শুধু ঈমান আনলেই চলবেনা সাথে  সাথে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা মুতাবিক আক্বীদা পোষণ করতে হবে। হাদীছ শরীফে ইরশাদ করেন,

 ستفترق امتى على ثلاث وسبعين ملة كلهم فى النار الا ملة واحدة قالوا من هى يا رسول الله قال ما انا عليه واصحابى رواه الترمذى وفى رواية احمد وابى داود عن معاوية ثنتان وسبعون فى النار وواحدة فى الجنة وهى الجماعة.

 অর্থঃ- “অতিশীঘ্রই আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত বাহাত্তরটি দলই জাহান্নামে যাবে। তখন হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যে একটি দল নাযাতপ্রাপ্ত, সে দলটি কোন দল?’ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি এবং আমার ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মত ও পথের উপর যারা ক্বায়িম থাকবে, (তারাই নাযাতপ্রাপ্ত দল)।” (তিরমিযী শরীফ) আর মুসনদে আহ্মদ ও আবূ দাউদ-এর বর্ণনায় হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, “৭২টি দল জাহান্নামে যাবে, আর একটি দল জান্নাতে যাবে। সে দলটিই হচ্ছে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত।” অতএব, যারা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মতে মত ও পথে পথ হয়েছেন তারাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত। আর আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত বলতে যারা হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাবভুক্ত তারা। কাজেই যারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়। তারা কাস্মিনকালেও আলিম হিসেবে গণ্য হবেনা।  এর উদাহরণ হচ্ছে খারিজী, শিয়া, মু’তাজিলা, রাফিযী, ওহাবী, ক্বদরীয়া, জাবারিয়া ইত্যাদি বাতিল ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত কোন ব্যক্তি যদি আলিম দাবী করে তাহলে  তাদের এ দাবী মিথ্যা। কারণ তার আক্বীদাই বিশুদ্ধ নয়। যেমন, খারিজী সম্প্রদায়ঃ খারিজীদের আক্বীদা হলো, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিছাল শরীফের পর হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উনার সাথে  কয়েকজন ছাহাবী ব্যতীত অন্যান্য সকল ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণই মুরতাদ হয়ে গেছেন। (নাউযুবিল্লাহ)  এমনকি হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁরাও মুরতাদ হয়ে গেছেন। (নাউযুবিল্লাহ) তাদের আরো কুফরী আক্বীদা হচ্ছে, তারা আল্লাহ পাক ছাড়া আর কাউকে বিচারক বা ফায়সালাকারী স্বীকার করেনা। শিয়া সম্প্রদায়ঃ শিয়াদের কুফরী আক্বিদা হলো, তারা বলে, আমাদের (শিয়া ইছনা আশারিয়া) মায্হাবের জরুরী আকায়েদের অন্যতম এই যে, আমাদের ইমামদের এমন মর্তবা ও স্তর অর্জিত আছে, যে মর্তবা বা স্তর কোন নৈকট্যশীল ফেরেশ্তা এবং নবী-রাসূলেরও নাই। (আল হুকুমাতুল ইসলামিয়াহ, পৃষ্ঠা-৫২) তাদের আরো কুফরী আক্বীদা বা বক্তব্য হচ্ছে, জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম যে কোরআন নিয়ে মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট নাযিল হয়েছিলেন, তাতে সতর হাজার আয়াত ছিল। (উছূলুল কাফী, ফাদলুল কুরআন অধ্যায় পৃঃ-৬৭১)

যে ব্যক্তি দাবী করে যে, তার নিকট সম্পূর্ণ কোরআন শরীফ রয়েছে যেভাবে তা নাযিল হয়েছিল, সে মিথ্যাবাদী। আল্লাহ্ পাক-এর নাযিলকৃত কোরআন শরীফ শুধু আলী ইব্নে আবী তালিব এবং তার পরে ইমামগণই সংকলন ও সংরক্ষণ করেছেন। (উছূলুল কাফী পৃষ্ঠা-১৩৯)

ومن يطع الله ورسوله فقد فاز فوزا عظيما.

অর্থঃ- “যে কেউ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আনুগত্য করবে, সে বিরাট সফলতা লাভ করবে।” (সূরা আহযাব/৭১)        এ আয়াত শরীফ প্রসঙ্গে উছূলে কাফীর ২৬২নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে যে, উক্ত আয়াত খানা এভাবে নাযিল হয়েছিল,

ومن يطع الله ورسوله فى ولاية على والائمة من بعده فقد فاز فوزا عظيما.

অর্থঃ- যে কেউ আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও তাঁর পরবর্তী ইমামগণের ব্যাপারে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, সে বিরাট সফলতা লাভ করবে।    এ ব্যাপারে তাদের আক্বীদা বা বক্তব্য হলো- এ আয়াতে হযরত আলী ও তার পরবর্তী সকল ইমামের ইমামত বর্ণিত হয়েছিল। কিন্তু উক্ত আয়াত থেকে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও তার পরবর্তী ইমামগণের কথাগুলো বাদ দেয়া হয়েছে, যা বর্তমান কুরআন শরীফে নেই। (নাউযুবিল্লাহ্)    আলিম হওয়ার জন্য দুই শর্তের দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে তাক্বওয়া। অর্থাৎ মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও বা ঈমান থাকা সত্ত্বেও অথবা আক্বীদা বিশুদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও সে আলিম হতে পারবে না তাক্বওয়া ব্যতীত। আর তাক্বওয়ার অর্থ হচ্ছে আল্লাহ্ভীতি। আল্লাহ্ভীতি বা তাক্বওয়া হচ্ছে সেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা হাছিল হওয়ার কারণে বান্দা শরীয়তের খিলাফ কাজ থেকে বিরত থাকে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

ان اكر مكم عند الله انقكم.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহ পাক-এর নিকট ব্যক্তি সবচেয়ে সম্মানিত যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশী মুত্তাক্বী।”(সূরা হুজুরাত/১৩)    হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

التقوى ههنا واشار الى صدره.

 অর্থঃ- “তাক্বওয়া হচ্ছে এখানে। এ বলে তাঁর বক্ষের দিকে ইশারা করলেন।” অর্থাৎ তাক্বওয়া অন্তরের বিষয়। যে ব্যক্তি তাক্বওয়া অবলম্বন করবে সে অন্তর থেকেই সমস্ত পাপ কাজ তথা শরীয়তের খিলাফ কাজ থেকে বিরত থাকবে। যা তার বাহ্যিক আমলের দ্বারাও ফুটে উঠবে। বা প্রকাশ পাবে। এ প্রসঙ্গে হাদীছ  শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 عن ابى ذر رضى اله عنه قال قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم اوصينى قال عليك بتقوى الله فانه رأس الامر كله.

অর্থঃ-“হযরত আবূ যর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে ওছিয়ত করুন। তিনি বললেন, আমি তোমাকে তাক্বওয়া অবলম্বন করার ওছীয়ত করছি। তুমি আল্লাহ পাককে ভয় কর। নিশ্চয়ই তাক্বওয়া সমস্ত আমলের মূল। (ইবনে হাব্বান)   অতএব, ইলমে দ্বীন শিখতে হলে এমন ব্যক্তির নিকট হতে শিখতে হবে, যিনি (১) ঈমানদার (২) যিনি আহলে সূন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা মুতাবিক  আক্বীদা পোষণ করেন, (৩) যিনি আমল করেন কুরআন-সুন্নাহ মুতাবিক অর্থাৎ সুন্নাত মুতাবিক এবং (৪) যিনি তাক্বওয়া ও ইখলাছ হাছিল করেছেন। অর্থাৎ মুত্তাক্বী ও মুখলিছ হয়েছেন। ইত্যাদি গুণ ও যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো নিকট থেকে ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা জায়িয নেই।  তাহলে এখন প্রশ্ন এসে যায় যে, টিভিতে অর্থাৎ টিভির যে কোন চ্যানেলের মাধ্যমে ইল্মে দ্বীন শিক্ষা করা যাবে কিনা। যদিও সে সমস্ত চ্যানেলের পরিচালনাকারী কোন মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ মুফাস্সির, খতীব, ছূফী, দরবেশ বা পীর নামধারী ইত্যাদি কেউ হয়? এর জবাবে বলতে হয়, যদি দ্বীনি ইল্ম তা’লিম দেয়ার জন্য এত যোগ্যতার প্রয়োজন হয় যা উপরে বর্ণনা করা হলো তাহলে কি করে টিভি ও তার চ্যানেলের মাধ্যমে ইল্মে দ্বীন শিখা যেতে পারে? তা কস্মিনকালেও জায়িয নেই। কারণ টিভি ও তার চ্যানেল সমূহের প্রথম দোষ বা ক্রটি হলো ছবি যা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপেই হারাম। যাকে হালাল হিসেবে জানা ও  মানা  উভয়টাই শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম ও কুফরী। দ্বিতীয় দোষ বা ত্রুটি হলো যারা প্রগ্রাম পরিচালনা করে তারা কেউ হক্কানী আলিম নয়। সে যত কিছুই দাবী করুক না কেন। এর জবাব স্বয়ং আল্লাহ পাকই তাঁর কালামে পাকে দিয়েছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহঞ্জপাক ইরশাদ ফরমান,

يسنلونك عن الخمر والميسر قل فيهما اثم كبير ومنا فع للناس.

অর্থঃ- “হে হাবীব! আপনাকে প্রশ্ন করা হয় মদ ও জুয়া সম্পর্কে। আপনি বলে দিন, মদ ও জুয়ার মধ্যে মানুষের জন্য ফায়দা রয়েছে। তবে ফায়দার চেয়ে গুনাহই বড়। কাজেই এগুলো হারাম।”(সূরা বাক্বারা/২১৯)   এখানে লক্ষণীয় যে, আল্লাহ্ পাক নিজেই স্বীকার করেছেন যে, মদ ও জুয়ার মধ্যে ফায়দা রয়েছে। মদ পান করলে স্বাস্থ্য ভাল হয়, জুয়া খেললে রাতারাতি অনেক টাকা পাওয়া যায়। তথাপি এগুলোর মধ্যে ফায়দার চেয়ে গুনাহ বেশী বলে এগুলোকে হারাম করা হয়েছে। কাজেই মদ ও জুয়ার মধ্যে উপকারীতা থাকা সত্ত্বেও এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়, এগুলো হারাম। শুধু তাই নয় এমনকি মদ ও জুয়ার মধ্যে উপকারীতার জন্য কেউ যদি এটাকে জায়িয মনে করে তবে সে কুফরী করল। ঠিক তদ্রুপ ছবির উপকারীতার জন্য যদি কেউ এটাকে (ছবিসহ ইসলামী প্রোগ্রামকে) জায়িয মনে করে, তবে সেও কুফরী করল।            সুতরাং টেলিভিশন ও তার  চ্যানেল এবং ভি.সি.আর ইত্যাদির মধ্যে যদিও ইসলামী প্রোগ্রাম হয় কিন্তু তার মূলই হল ছবি যা শরীয়তের দৃষ্টিতে স্পষ্ট হারাম ও নাজায়িয। আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে হালাল ও হারাম, জায়িয ও নাজায়িযকে একত্রিত করতে নিষেধ করেছেন এ প্রসঙ্গে স্বয়ং আল্লাহ্ পাক নিজেই ইরশাদ ফরমান,

 ولا تلبسوا الحق بالباطل.

 অর্থঃ- “তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করোনা।” (সূরা বাক্বারা/৪২) অন্যত্র আল্লাহ্ পাক বলেন,

 افتؤمنون ببعض الكتب وتكفرون ببعض.

অর্থঃ- “তোমরা কিতাবের কিছু অংশ মানবে, আর কিছু অংশ মানবে না, তা হবেনা।” (সূরা বাক্বারা/৮৫) অতএব, টিভি বা তার চ্যানেলে অথবা ভি.সি.আর এ ইল্মে দ্বীন বা জ্ঞানমূলক অনুষ্ঠান প্রচার বা দেখা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। তবে হ্যাঁ, যদি টেলিভিশন ও তার চ্যানেলসমূহ এবং ভি.সি.আর ইত্যাদির মাধ্যমে কোন জানদার প্রাণীর ছবি ব্যতীত শুধুমাত্র ইসলামী তা’লিম বা ইল্মে দ্বীন শিক্ষা দেওয়া হয়, তবে তা নাজায়িয নয়। যেমন এখানে নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত বা কারিগরি শিক্ষা পদ্ধতি দেখানো যেতে পারে ছবি ব্যতিত। বলাবাহুল্য, কাফিররা হল মুসলমানের খাদিম।  শুধু তাই নয় বরং সমস্ত মাখলুকাতই মুসলমানদের খাদিম। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন,

 هو الذى خلق لكم ما فى الارض جميعا.

  অর্থঃ- “ঐ মহান আল্লাহ পাক যিনি তোমাদের জন্যে জমিনের সব কিছু সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা বাক্বারা/২৯) অথএব, কেউ যদি কোন  কিছু  আবিস্কার করে বা তৈরি করে সে ঈমানদারও হতে পারে অথবা কাফির, বেদ্বীন-বদদ্বীনও হতে পারে। মুসলমানগণ নতুন আবিস্কারকৃত বা তৈরিকৃত কোন দ্রব্য সামগ্রী যন্ত্রপাতি ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণ করতে বা ব্যবহার করতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তা শরীয়তসম্মত না  হবে। যেমন, গাড়ী, লাইট, ফ্যান, মাইক, টি.ভি, ভি.সি.আর, ছবি ইত্যাদি। কাজেই মুসলমানগণ যখন দেখেন কাফিরদের খিদমত শরীয়তের খিলাফ নয়, তখন তারা ইচ্ছা করলে তা গ্রহণ করতে পারেন। আর যদি তা শরীয়তের খিলাফ হয় তাহলে অবশ্যই তা বর্জন করতে হবে। তা ব্যবহার করা যাবেনা। কারণ আল্লাহ্ পাক বলেন,

تعاونوا على البر والتقوى ولا تعاوهوا على الاثم والعدوان.

 অর্থঃ “তোমরা নেকী এবং পরহেজগারীর মধ্যে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য কর। পাপ এবং শত্রুতার মধ্যে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো না।”(সূরা মায়িদা/২) শুধু তাই নয়। এমনকি কোন পাপ কাজেও কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা বা সমর্থন করা যাবে না। তাই আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

 اذا عملت الخطيئة فى الارض من شهدها فكر هها كان كمن غاب عنها ومن غاب فرضيها كان كمن شهدها.

অর্থঃ “পৃথিবীতে যখন কোন অন্যায় বা পাপ সংঘঠিত হয়, তখন যে ব্যক্তি ঐস্থানে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও সেটাকে ঘৃণা করে সে যেন সেস্থানে উপস্থিত ছিল না। আর যে ব্যক্তি অনুপস্থিত থেকেও পাপের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে, সে যেন তথায় উপস্থিত ছিল।”(আবূ দাঊদ শরীফ) শুধু এতটুকুই নয়; এমনকি কোন পাপ কাজ সংঘটিত হলে তাতে ঘৃনা প্রকাশ না করলেও আল্লাহ পাক-এর গযব পতিত হবে। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে,

اوحى الله عز وجل الى جبريل عليه السلام ان اقلب مدينة كذا وكذا باهلها فقال يارب ان فيهم عبدك فلانا لم يعصك طرفة عين قط فقال اقلب عليه وعليهم فان وجهه لم يتمعر فى ساعة قط.

অর্থঃ- “আল্লাহ পাক হযরত জীব্রাইল আলাইহিস্ সালাম-এর প্রতি ওহী করলেন, হে হযরত জীব্রাইল আলাইহিস্ সালাম! অমুক শহরকে তার অধিবাসীসহ ধ্বংস করে দাও। হযরত জিব্রাইল আলাইহিস্ সালাম বললেন, হে বারে ইলাহী! সেখানে আপনার বান্দাদের মধ্যে এমন একজন রয়েছে, যে চোখের পলকের তরেও গুনাহ্র কাজ করেনা। আল্লাহ পাক বললেন, তাকে সহ  শহরের অধিবাসীদের ধ্বংস করে দাও, কারণ নিশ্চয়ই সে ব্যক্তি আমার নির্দেশের খিলাফ কাজ সংঘটিত হওয়ার জন্য কখনো আফসুসও করেনা। (অতঃপর সেই আবেদসহ শহরের সকলকে ধ্বংস  করে দেয়া হয়েছিল।) অতএব, কুরআন-সুন্নাহর উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, স্বয়ং আল্লাহ পাক নিজেই হারাম কাজে সাহায্য করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হারাম কাজে সমর্থন দিতে নিষেধ করেছেন। শুধু এতটুকুই নয় হারাম কাজে সম্মতি প্রকাশ না করেও নিরব থাকাটা আযাব-গযবে পতিত হওয়ার কারণ। যদি তাই হয় তাহলে হারাম পদ্ধতির মাধ্যমে ইলমে দ্বীন কি করে শিক্ষা করা জায়িয হতে পারে। কখনোই তা জায়িয নয়। তাহলে ঐ সমস্ত মাওলানা কি করে টিভি বা তার চ্যানেলে প্রগ্রাম করতে পারে? এ সমস্ত প্রগ্রাম করা কখনই জায়িয নেই বরং সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয যা হালাল জানা কাট্টা কুফরী। অতএব, বর্তমান পদ্ধতিতে টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা ও দেয়া উভয়টাই সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয ও হারামের অন্তর্ভুক্ত। (চলবে)

 মুসাম্মত সানজিদা আক্তার সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত মুহম্মদপুর, ঢাকা।

সুওয়ালঃ  অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়- জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না।  তাদের সকল আমল হবে খুবই নিখূঁত ও সুন্দর। তাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে, তাদের রোযা দেখে তোমাদের রোযাকে তোমরা তুচ্ছ ও নগণ্য মনে করবে। তাদের আমল দেখে তোমরা তোমাদের আমলকে হেয় মনে করবে, তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার নিচে যাবেনা। তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন-প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। এদলের আমল যতই তোমাদেরকে আকৃষ্ট করুক না কেন, কখনই তাদের দলে যাবেনা। কারণ প্রকৃতপক্ষে এরা হবে ইসলাম হতে খারিজ, দ্বীন হতে বহির্ভূত। তীর যেমন ধনুক হতে বের হয়ে যায় সে আর কখনও ধনুকের নিকট ফিরে আসেনা। তেমনিই এরা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে, আর কখনও দ্বীনের পথে, কুরআন ও সুন্নাহ্র পথে ফিরে আসবেনা। আমার প্রশ্ন হল, উপরোক্ত হাদীছ ছহীহ্ কি-না? ছহীহ্ হলে এ দ্বারা উদ্দেশ্য কারা? উক্ত হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতের কোন সম্পর্ক আছে কি-না? অনেকে এই হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতকে জড়াতে চান। উক্ত হাদীসের সঙ্গে তাবলীগ জামাতকে জড়ানো সঠিক কি-না?

জবাবঃ প্রশ্নে বর্ণিত হাদীছ ছহীহ্। মুহাদ্দিছীনে কেরাম উক্ত হাদীছসহ এ জাতীয় হাদীছসমূহের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এ সব হাদীছ দ্বারা একটি নির্ধারিত জামাত বা খারিজী ফেরক্বা নামে পরিচিত তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর খেলাফত আমলে এই হাদীছসমূহের বাস্তবতা এবং খাওয়ারেজদের অবস্থার সমন্বয় ঘটেছিল। যার দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে বলা চলে যে, এ হাদীছসমূহ দ্বারা একমাত্র খাওয়ারেজদেরকেই বুঝানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণাদি ছাড়া অন্য কোন জামাতকে এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করা যাবেনা। কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়া তাবলীগ জামাতকে এই হাদীছসমূহের মেসদাক বা উদ্দেশ্য বানানো, তাদেরকে খাওয়ারেজ বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে মারাত্মক অন্যায় ও অপরাধ। তাবলীগের নিয়মনীতি ও কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই। বর্তমান বিশ্বে আল্লাহ্ তা’আলা তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে পথহারা, ঈমানহারা, হেদায়েত থেকে বঞ্চিত অসংখ্য মানুষকে হেদায়েত করেছেন, ঈমান আনার তাওফিক দান করেছেন। এছাড়া এ জামাতের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে অসংখ্য জগদ্বিখ্যাত আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ। অতএব, তাবলীগ জামাতকে খারেজী জামাত বলা, মিথ্যা অপবাদ বৈ কিছুই নয়। (ফতহুল বারী ১২ঃ৩৫০, আল মিরকাত ৭ঃ১০৭) উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো- (১) উল্লিখিত হাদীছ শরীফে বর্ণিত গুণাবলী প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে আছে কি? (২) উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা কি শুধু খারিজী ফিরক্বার লোকদেরকেই বুঝানো হয়েছে? নাকি খারিজীদের ন্যায় আক্বীদা পোষণকারীদের ক্ষেত্রেও এ হাদীছ শরীফ প্রযোজ্য? (৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য? (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি? (৫) কুরআন-সুন্নাহ্র কোথাও প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করার নির্দেশ আছে কি? প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করা কুরআন-সুন্নাহ্ মতে জায়িয কিনা? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী। জাওয়াবঃ   প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ  জামায়াত সম্পর্কিত উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।  শুধু তাই নয়, তারা প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের সাফাই গাইতে গিয়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যা করেছে। সাথে সাথে “ছয় উছূলীদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী কোন আক্বীদা-আমল নেই” বলে তাদের নির্লজ্জ দালালী করে নিজেদেরকে অপব্যাখ্যাকারী ও মিথ্যাবাদীরূপে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিক দলীলভিত্তিক আলোচনা করলেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে। তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

(ধারাবাহিক)

ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে  উল্লিখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা  ও মিথ্যাচারীতার খ-নমূলক জবাব- (৩)   প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত  বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, পর্যায়ক্রমে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলোর সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো- প্রচলিত ছয় উছূলীদেরকুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ৫

 মাওলানা ইলিয়াছ ছাহেবের মলফূযাতের ৪৩ পৃষ্ঠার ৪২নং মলফূযে এবং নবুওয়ত ও মাওঃ ইলিয়াছ নামক কিতাবের ৩০-৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “মুসলমান দু’প্রকার- একদল প্রচলিত তাবলীগের জন্য হিজরত করবে, দ্বিতীয় দল নুছরত বা সাহায্য করবে, এ দু’দলই মুসলমান। অর্থাৎ যারা প্রচলিত তাবলীগও করবেনা আর তাবলীগকারীদেরকে সাহায্যও করবেনা, তারা মুসলমান নয়।”   তাদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে  হয় যে, তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই দলীল-আদিল্লা বিহীন, মনগড়া, যা সম্পূর্ণ শরীয়তের খিলাফ। মুসলমান হওয়ার জন্য ঈমানের যে শর্ত দেয়া হয়েছে, তাতে হিজরত ও নুছরতের  কোন শর্ত দেয়া হয়নি। অর্থাৎ মুসলমান হতে হলে হিজরত করতেই হবে, এমন কোন শর্ত নেই। মূলতঃ তারা হিজরত ও নুছরতের সঠিক অর্থ না জানা ও না বুঝার কারণেই এরূপ লিখেছে।  “হিজরত” শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো- পরিত্যাগ করা, ছেড়ে যাওয়া, বিরত থাকা।  আর শরীয়তের পরিভাষায় হিজরতের অর্থ হলো- দ্বীন ও ঈমান হিফাযতের উদ্দেশ্যে স্বীয় মাতৃভুমি স্থায়ীভাবে পরিত্যাগ করে দূরে কোথাও দ্বীন ও ঈমানের সাথে নিরাপদে বসবাসের ব্যবস্থা করা। শরীয়তের পরিভাষায় মুহাজির হচ্ছেন ঐসকল হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ, যাঁরা আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশে আল্লাহ্ পাক-এর সন্তূষ্টির উদ্দেশ্যে বাড়ী-ঘর ছেড়ে মদীনা শরীফ বা অন্যান্য স্থান যেমন- আবিসিনিয়াহ ইত্যাদিতে হিজরত করে সেখানে বসবাস করেছিলেন।    “নুছরত” শব্দের অর্থ হলো- সাহায্য করা। আর নুছরতের জন্য মুছাফির, মুক্বীম বা মুহাজির হওয়া শর্ত নয়। বরং এক মুসলমান অপর মুসলমানকে সাহায্য  করাটাই হচ্ছে নুছরত করা।           “আনছার” শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো- “সাহায্যকারীগণ।” শরীয়তের পরিভাষায় “আনছার” হলেন ঐসকল হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ, যাঁরা আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মদীনা শরীফ হিজরত করার পর সাহায্য সহযোগিতা করেছিলেন। (আল কামুস আল মুহীত, লিসানুল আরব, তাজুল উরুস, আসাসুল বালাগাহ্, আল মুনযিদ, মিসবাহুল লুগাত, আল কামুস আল জাদীদ, আল কামুস আল ইস্তিলাহী, আল মু’জামুল ওয়াসীত, বয়ানুল লিসান)

  মূলতঃ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যা করে থাকে, তা হচ্ছে ছফর। আর ছফরকারীকে বলা হয় মুছাফির।     মুছাফির হচ্ছে, দু’প্রকার। (১) উরফী, (২) শরয়ী। (সমূহ ফিক্বাহের কিতাব)

 উরফী  মুছাফির হচ্ছে- যারা ৪৮ মাইলের কম দুরত্বের স্থান ছফর করে। আর শরয়ী মুছাফির হচ্ছে তারা যারা ৪৮ মাইল বা তার চেয়ে বেশী দুরবর্তী স্থান ছফর করে।     উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বুঝা যায়, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যা করে থাকে, তা প্রকৃতপক্ষে হিজরত নয়। তারা যা করে, মূলতঃ তা হলো- ছফর। অর্থাৎ তারা  মুহাজির নয় বরং মুছাফির। আর যেহেতু তারা শরয়ী মুহাজির নয়, সেহেতু তাদেরকে যারা সাহায্য করে তারাও শরয়ী আনছার নয়। অর্থাৎ আনছারদের ন্যায় নুছরতকারী নয়। বরং তারা মুসলমান হিসেবে অপর মুসলমানকে সাহায্য করার ন্যায় সাধারণ নুছরত বা সাহায্য করে থাকে।  আর তাদের একথা যদি ধরেও নেয়া হয় যে, মুসলমান দু’প্রকার- একদল হিজরত করবে এবং অপর দল তারা, যারা হিজরতকারীদেরকে নুছরত বা সাহায্য করবে। তবে এ কথা অনুযায়ী প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরাও মুসলমানের আওতায় পড়েনা। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে তারাও মুহাজির বা আনছার উভয়টির কোনটিই নয়। অতএব, ছয় উছূলী তাবলীগ ওয়ালারা বলেছে, “মুসলমান দু’প্রকার- একদল প্রচলিত তাবলীগের জন্য হিজরত করবে, দ্বিতীয় দল নুছরত বা সাহায্য করবে, এ দু’দলই মুসলমান।” তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, বিভ্রান্তিকর, কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক হয়েছে। এরূপ বক্তব্য থেকে বিরত থাকা সকলের জন্যেই ফরয/ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। (চলবে)

মুহম্মদ মাহমুদ আলম আল হুসাইনী সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত রানীবন্দর, দিনাজপুর।

সুওয়ালঃ  চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানী মাযহাবের মুখপত্র জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী/২০০৩ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে “ঈদুল আযহার দিন হাঁস, মোরগ-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করা” সম্পর্কে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়- প্রশ্নঃ………পবিত্র ঈদুল  আজহার দিন ও পরবর্তী দু’দিন অর্থাৎ ১০, ১১, ১২ই যিলহজ¦ এই তিনদিন হাঁস,মোরগ-মুরগী, কবুতর ইত্যাদি গৃহ পালিত পাখি জবেহ করা যাবে কি?…… উত্তরঃ…..‘‘.উপরোক্ত   দিনসমূহে প্রয়োজনে হাঁস, মুরগী, যবেহ করা শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ নয়। ’’  (রদ্দুল মুখতার, আলমীরী ইত্যাদি)

আর মাসিক মদীনা মে/ ২০০৩ ঈসায়ী  সংখায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-  প্র্রশ্নঃ ঈদ-উল আযহার দিন মোরগ বা পাখী জবেহ্ করা জায়েয কি? বিস্তারিত জানতে চাই। উত্তরঃ হাঁস-মোরগ বা পাখী জাতীয় প্রাণী জবেহ্ করাতে কোন নিষেধাজ্ঞা নাই। যেসব জন্তুতে কোরবানী জায়েয সে ধরনের কোন পশু কোরবানী করার আগে জবেহ্ করা মাকরূহ।  এখন আমার সুওয়াল হলো- পবিত্র ঈদুল আযহার দিন অর্থাৎ কুরবানীর দিনগুলোতে হাঁস-মুরগী ইত্যাদি গৃহপালিত পাখি যবেহ্ করা সম্পর্কে  রেযাখানী মুখপত্রের ও  মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি?  দয়া করে দলীল আদিল্লাহ্ সহ সঠিক জাওয়াব জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ  কুরবানীর দিনগুলোতে হাঁস, মোরগ, মুরগী, কবুতর ইত্যাদি গৃহপালিত পাখি যবেহ্ করা সম্পর্কে রেযাখানী মুখপত্রের ও মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই মনগড়া ও দলীলবিহীন বিধায় সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে কুফরীমূলক হয়েছে।

কারণ কুরবানীর দিনগুলোতে হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করা রেযাখানী মাযহাবের মুখপাত্র   মৌলভীদের ও মাসিক মদীনার সম্পাদক  মাহিউদ্দীনের নিজস্ব বানানো শরীয়তে নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও ইসলামী শরীয়তে কুরবানীর দিনগুলোতে হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করা নিষেধ করা হয়েছে। আর ইসলামী শরীয়ত বলতে কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসকে বুঝায়। আর ইজমা ও ক্বিয়াসের সমষ্টিই হচ্ছে ফিক্বাহ্ ও ফতওয়া। সুতরাং ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবে থাকার অর্থই হলো ইজমা ও ক্বিয়াসে থাকা। আর ইজমা ও ক্বিয়াসে থাকার অর্থ হলো শরীয়তে থাকা।

অতএব, শরীয়তে তথা ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবে কুরবানীর দিনগুলোতে হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করা মাকরূহ্ তাহরীমী বলা হয়েছে। শুধু তাই নয় বরং শরীয়তে তথা ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবে এটাও বলা হয়েছে যে, কুরবানীর দিনগুলোতে হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করা মজূসীদের রুসূম অর্থাৎ অগ্নি উপাসকদের ধর্মীয় প্রথা। সেহেতু আম ফতওয়া হলো, কুরবানীর দিনগুলোতে মুসলমানদের জন্য হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করা মাকরূহ্ তাহরীমী। আর খাছ ফতওয়া কুফরী। কেননা, যারা মজূসী বা অগ্নি উপাসক তারা তাদের ধর্মীয় বিধান মুতাবিক মুসলমানদের আইয়্যামে নহর বা কুরবানীর দিনগুলোতে হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করে থাকে। এখন যদি কোন মুসলমান, মজূসী বা অগ্নি উপাসকদের সাথে তাশাব্বুহ্ বা সাদৃশ্য রেখে কুরবানীর দিনগুলোতে হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করে তাহলে সেটা কুফরী হবে। আর যদি কোন মুসলমান তার দারিদ্রতার কারণে, অভাব-অনটনের কারণে,খুব জরুরতে  বা প্রয়োজনে কুরবানীর দিনগুলোতে হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করে তাহলে সেটাও মাকরূহ্ তাহরীমী হবে। যেহেতু এটাও কুরবানী দাতার সঙ্গে তাশাব্বুহ্ হয়ে যায়।  যেমন, সর্বজনমান্য ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার বিখ্যাত কিতাব “আল বাহরুর রায়িক শারহু কানযিদ্ দাক্বায়িক” কিতাবের ২য় খন্ডের ১৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

التضحية بالديك أو بالدجاج فى أيام الاضحية ممن لاأضحية عليه لعسرته بطريق التشبيه بالمضحين مكروه لان هذا من رسوم المجوس.

 অর্থাৎ- “দারিদ্রতার কারণে বা অভাব-অনটনের কারণে যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়; সে ব্যক্তি যদি কুরবানীর দিনগুলোতে মোরগ-মুরগী অথবা গৃহপালিত পাখি অর্থাৎ হাঁস, মোরগ-মুরগী, কবুতর ইত্যাদি যবেহ্ করে তাহলে কুরবানী দাতাদের সাথে তাশবীহ্ বা সাদৃশ্য হওয়ার কারণেই মাকরূহ্ তাহরীমী হবে। কেননা, এটা অর্থাৎ কুরবানীর দিনগুলোতে মোরগ-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করা মজূসীদের বা অগ্নি উপাসকদের ধর্মীয় প্রথা।” “দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে,

فيكره ذبح دجاجاة وديك لانه تشبه بالمجوس.

অর্থাৎ- “মোরগ-মুরগী যবেহ্ করা মাকরূহ্ তাহরীমী। কেননা, এটা মজূসীদের সাথে তাশাব্বুহ্ বা সাদৃশ্য হয়।”  “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ৫ম খন্ডের ৩০০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

التضحية بالديك والدجاجة فى أيام الاضحية ممن لا أضحية عليه لاعساره تشبيها بالمضحين مكروه لانه من رسوم المجوس.

অর্থাৎ- “অস্বচ্ছলতার কারণে বা দারিদ্রতার কারণে; যে ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়নি, সে ব্যক্তি যদি কুরবানীর দিনগুলোতে মোরগ-মুরগী যবেহ্ করে, তাহলে কুরবানী দাতাদের সাথে তাশবীহ্ বা সাদৃশ্য হওয়ায় মাকরূহ্ তাহরীমী হবে। কেননা, এটা অর্থাৎ কুরবানীর দিনগুলোতে মোরগ-মুরগী যবেহ্ করা মজূসীদের রসমের অন্তর্ভুক্ত। উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রথমতঃ এটাই প্রমাণিত হলো যে, কুরবানীর দিনগুলোতে হাঁস, মোরগ, মুরগী, কবুতর, ইত্যাদি  গৃহপালিত পাখি যবেহ্ করা কুরবানীদাতার সঙ্গে তাশাব্বুহ্ হওয়ার কারণেই তা মাকরূহ্ তাহরীমী হবে। কেননা, এখানে তাশাব্বুহটা যদিও কুরবানী দাতার সঙ্গে অর্থাৎ মুসলমানদের সঙ্গে হয়েছে তবুও মাকরূহ্ তাহরীমী হবে।  যেমন, “বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খন্ডের ১৬৪ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উক্ত ইবারতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,

فان التشبه هنا وان كان بالمسلمين فهو مكروه.

অর্থাৎ- “নিশ্চয়ই এখানে তাশাব্বুহ্টা যদিও মুসলমানদের সঙ্গে অর্থাৎ কুরবানীদাতার সঙ্গে হয়েছে তবুও সেটা মাকরূহ্ তাহরীমী।” দ্বিতীয়তঃ“বাহরুর রায়িক” কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,

 ان العلة فى كراهة التضحية كونها من رسوم المجوس.

অর্থাৎ- “নিশ্চয়ই মুসলমানদের জন্য কুরবানীর দিনগুলোতে হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করা মাকরূহ্ তাহরীমী হওয়ার ইল্লতটা (কারণ) হলো, মজূসীদের রুসূম বা ধর্মীয় প্রথা (বিধান) হওয়ার কারণেই। অর্থাৎ মজূসী বা অগ্নি উপাসকরা যেহেতু তাদের ধর্মীয় প্রথা  বা বিধান  মুতাবিক কুরবানীর দিনগুলোতে হাঁস, মোরগ- মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করে থাকে সেহেতু মুসলমানদের জন্য কুরবানীর দিনগুলোতে হাঁস, মোরগ-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করা মাকরূহ্ তাহরীমী। আর খাছ ফতওয়া হলো কুফরী। কেননা, মুসলমানদের আইয়্যামে নহর বা কুরবানীর দিনে যারা মজূসী বা অগ্নি উপাসক তারা তাদের ধর্মীয় বিধান মুতাবিক হাঁস, মোরগ-মুরগী, ইত্যাদি যবেহ্ করে থাকে। এখন যদি কোন মুসলমান তাদের সাথে মুশাবাহ্ বা সাদৃশ্য রেখে কুরবানীর দিন হাঁস মোরগ-মুরগী, ইত্যাদি যবেহ্ করে, তাহলে সেটা কুফরী হবে। এবং সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। কারণ, বেদ্বীন, বদ্দ্বীন, বিধর্মী, বিজাতীদের অনুসরণ-অনুকরণ সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

من تشبه بقوم فهو منهم

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত।” (এমনকি তার হাশর-নশরও তাদের সাথে হবে।) (আবূ দাউদ, মুসনদে আহমদ) তিনি আরো বলেন,

ليس منا من تشبه بغيرنا.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আমাদের ভিন্ন অন্য জাতির অনুসরণ করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (তিরমিযী, মিশকাত)

সুতরাং মজূসী বা অগ্নি উপাসকদের সঙ্গে মুশাবাহ্ বা সাদৃশ্য রেখে কুরবানীর দিনগুলোতে হাঁস, মোরগ-মুরগী, কবুতর,ইত্যাদি যবেহ্ করা কুফরী। আর তাদের সাথে মুশাবাহ্ না রেখে সাধারণভাবে করলেও আম ফতওয়া মুতাবিক সেটা মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে।  উল্লেখ্য, আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক আইয়্যামে নহর বা কুরবানীর দিন হলো তিনদিন। অর্থাৎ ১০, ১১, ১২ই যিলহজ্ব।  যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে,

 الاضحى يومان بعد يوم الاضحى.

 অর্থঃ- “কুরবানীর দিনটির পর আরো দু’দিন হলো কুরবানীর দিন।” (মিশকাত, মিরকাত) আর ফতওয়ার কিতাবসমূহে উল্লেখ আছে,

ايام النحر ثلاثة يوم النحر وهو العاشر من ذى الحجة ويومان بعده.

অর্থঃ- “আইয়্যামে নহর বা কুরবানীর দিন হলো তিনদিন। আর তা হলো যিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ এবং তার পরবর্তী দু’দিন। অর্থাৎ ১০, ১১, ১২ই যিলহজ্ব এই তিনদিন হলো কুরবানীর দিন।” (খুলাছাতুল ফতওয়া, হাশিয়ায়ে তাহত্বাবী আলা মারাকিউল ফালাহ্, বাহরুর রায়িক, আলমগীরী, শামী, নুরুল ইযাহ্, আইনুল হিদায়া ইত্যাদি) অতএব, কোন অবস্থাতেই পবিত্র ঈদুল আযহার দিন ও পরবর্তী দু’দিন অর্থাৎ ১০, ১১, ১২ই যিলহজ্ব এই তিন দিন হাঁস, মোরগ, মুরগী, কবুতর, ইত্যাদি গৃহপালিত পাখি যবেহ্ করতে পারবে না। কারণ সেটা আম ফতওয়া মুতাবিক মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে। আর খাছ ফতওয়া মুতাবিক কুফরী হবে এবং ঈমানও নষ্ট হবে। কাজেই প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ওয়াজিব এই ধরণের কুফরী থেকে বেঁচে থাকা। আর এমন কোন মুসলমান, যার উপর কোরবানী ওয়াজিব অথবা ওয়াজিব নয়, তারা যদি কোরবানীর দিন হাঁস-মুরগী ইত্যাদি খেতে চায়, তাহলে তারা যেন সুব্হে সাদিকের পূর্বেই সেটা যবেহ্ করে, কেটে, পাক করে রেখে দেয় অথবা শুধু যবেহ্ করে, কেটে রেখে দিবে পরে পাক করলেও চলবে।

পরিশেষে বলতে হয় যে, রেযাখানী মুখপাত্রের মৌলভীরা বলেছে, ‘‘.উপরোক্ত   দিনসমূহে প্রয়োজনে হাঁস, মুরগী, যবেহ করা শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ নয়।’’  (রদ্দুল মুখতার, আলমীরী ইত্যাদি)   উল্লেখ্য, রেযাখানী মৌলভীরা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসাবে শরীয়তের দু’টি দলীল উল্লেখ করেছে, তাদের প্রথম দলীলটি হচ্ছে,‘‘রদ্দুল মুখতার”। তাদের প্রথম দলীলের জবাবে বলতে হয় যে,উক্ত নামে কোন কিতাবই নেই। বরং কিতাবের নাম হচ্ছে “রদ্দুল মুহতার।” তাদের দ্বিতীয় দলীলের জবাবে বলতে হয় যে, উক্ত নামেও কোন মু’তাবার কিতাব নেই । বরং কিতাবের নাম হচ্ছে ‘‘আলমগীরী”। আশ্চর্যের বিষয়! যারা কিতাবের নামই জানেনা তারা আবার ফতওয়া দেয়! আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো, তারা শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ বলে শরীয়তের যে দু’টি দলীল দিয়েছে, উক্ত দলীলেই উল্লেখ আছে , হাঁস, মোরগ, মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করা মাকরূহ তাহরীমী ও মজুসীদের ধর্মীয় বিধান । অতএব, প্রমাণিত হলো যে, রেযাখানী মাযহাবের মৌলভীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসাবে শরীয়তের যে দু’টি দলীল দিয়েছে, উক্ত দু’টি দলীলের মাধ্যমেই প্রমাণিত হলো যে, কুরবানীর দিন গুলোতে হাঁস, মোরগ, মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করা মাকরূহ তাহরীমী ও মজুসীদের ধর্মীয় বিধান। বিধায় উপরোক্ত দিন গুলোতে হাঁস, মোরগ, মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করা নিষিদ্ধ । সুতরাং পবিত্র ঈদুল আযহার দিন ও পরবর্তী দু’দিন অর্থাৎ ১০, ১১, ১২ই যিলহজ্ব এই তিন দিন হাঁস, মোরগ, মুরগী, কবুতর ইত্যাদি গৃহপালিত পাখি যবেহ্ করা সম্পর্কে  রেযাখানী মুখপত্রের ও মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য ভুল ও কুফরীমূলক হয়েছে বলে প্রমাণিত হলো। [ বিঃদ্রঃ পবিত্র ঈদুল আযহার দিন অর্থাৎ কুরবানীর দিনগুলোতে হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করা, আম ফতওয়া মুতাবিক মাকরূহ তাহরীমী এবং খাছ ফতওয়া মুতাবিক কুফরী। এ সম্পর্কে আরো জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৪৪, ৭০, ৭৯ এবং ১০৭তম সংখ্যা পাঠ করুন । ] সেখানে মাসিক মদীনার দলীল বিহীন ও ভূল বক্তব্য খন্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে ।

এবার দ্বিতীয় বারের মতো মাসিক মদীনার এবং প্রথম বারের মতো রেযাখানী মুখপত্রের কুরবানীর দিনগুলোতে হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করা সম্পর্কে দলীল বিহীন ও ভূল বক্তব্য খন্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হলো । {দলীলসমূহঃ  (১) যখীরা, (২) উছূলুত্ তাওহীদ, (৩) ওয়াজিয, (৪) আল বাহরুর রায়িক শারহু কানযিদ দাক্বায়িক, (৫) খুলাছাতুল ফতওয়া, (৬) ফতওয়ায়ে বায্যাযিয়া, (৭) মিনহাতুল খালিক আলাল বাহরির রায়িক, (৮) হাশিয়াতুত্ তাহতাবী আ’লাদ দুররিল মুখতার, (৯) ফতওয়ায়ে আলমগীরী, (১০) গায়াতুল আওতার, (১১) ফতহুল ক্বাদীর, (১২) শরহে হিদায়া, (১৩) দুররুল মুখতার, (১৪) শামী ইত্যাদি । }

মুসাম্মত রতনা বেগম সভানেত্রী- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত শরীফ সুন্দর, পীরগাছা, রংপুর।

সুওয়ালঃ   জনৈক মুসলমান ব্যক্তি এক হিন্দু পীরের অনুসারী। ঐ ব্যক্তির পীর প্রায় ত্রিশ-পয়ঁত্রিশ বছর পূর্বে মারা যায়। ঐ ব্যক্তি এখনও বিবাহ করেনি। তাকে বিবাহ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে সে বলে থাকে, তার পীরের ইজাযত পায়নি তাই সে বিবাহ করবে না। ঐ ব্যক্তি নিজেকেও পীর/দয়াল বলে দাবী করে থাকে। তার মধ্যে সুন্নতের কোন পাবন্দি নেই। তার দাড়ি নেই। সেই কোর্তা পরিধান করেনা। কিন্তু মাঝে মধ্যে টুপি পরিধান করে থাকে। সে ঠিক মত নামায, রোযা আদায় করে না। পর্দা নেই। তার ভক্তদের মধ্যে নারী-পুরুষ আছে। সে টেলিভিশন দেখে থাকে, তার পীরের ছবিকে সামনে রেখে নামায আদায় করে থাকে। সে নিজে ও তার ভক্তরা ছবিকে সামনে রেখে ধ্যান-মগ্ন হয়। ঐ ব্যক্তি তার ভক্তদের নিয়ে বাৎসরিক একটা অনুষ্ঠান করে থাকে। উল্লিখিত সুওয়ালের বিবরণে যে সকল প্রশ্নের উদয় হয় তা হলো-  (১) হিন্দু পীরের অনুসরণ করা। (২) হিন্দু পীরের ইজাযত না পাওয়ার কারণে বিবাহ হতে বিরত থাকা। (৩) নিজেকে পীর বা দয়াল বলে দাবী করা। (৪) সুন্নতের  পাবন্দি না করা। (৫) নামায রোযা আদায় না করা। (৬) পর্দা না করা। (৭) টিভি দেখা ও ছবিকে সামনে রেখে ধ্যানমগ্ন হওয়া। এখন আমার সুওয়াল হচ্ছে- উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে শরীয়তের ফায়সালা কি? এবং তার থেকে মসজিদের জন্য জমি নেয়া জায়িয হবে কিনা? মৃত্যুর পর তার জানাযায় শরীক হওয়া যাবে কিনা? তার সঙ্গে সামাজিক কোন কাজে উঠা-বসা করা যাবে কিনা? তার কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা যাবে কিনা? কুরআন-সুন্নাহ্ দলীলসহ জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ  আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,

لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة.

 অর্থঃ- “অবশ্যই তোমাদের জন্য আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আহযাব/২১) অর্থাৎ মুসলমানকে মাথার তালু থেকে পায়ের তলা, হায়াত থেকে মউত পর্যন্ত আক্বাইদ-ইবাদত, মুয়ামালাত-মুয়াশারাত ইত্যাদি প্রতিক্ষেত্রেই একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। কাজেই কোন মুসলমানের জন্য কোন বিধর্মীকে অনুসরণ ও অনুকরণ করা, তার কথা-কাজের উপর ইস্তিকামত  থাকা, তাকে অনুসরণ করে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নির্দেশের খিলাফ চলা, ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত তরক করা, হারাম-নাজায়িয আমল করা, বেপর্দা হওয়া, ছবি তোলা, টিভি দেখা ইত্যাদি সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। সুওয়ালে উল্লিখিত প্রত্যেকটি প্রশ্নেরই জাওয়াব ধারাবাহিকভাবে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ।

(ধারাবাহিক)

(২) হিন্দু পীরের ইজাযত না পাওয়ার কারণে বিবাহ হতে বিরত থাকা। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,

اطيعوا الله واطيعوا الرسول واولى الامر منكم.

অর্থঃ- “আল্লাহ পাককে অনুসরণ কর, আল্লাহ পাক-এর রসূলকে অনুসরণ কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর তাদেরকে অনুসরণ কর।”(সূরা নিসা/৫৯) উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীর বা ব্যাখ্যায় ‘উলিল আমর’ বলতে তাছাউফ বা তরীক্বতের হক্বানী পীর বা মুর্শিদকেও বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ মুরীদের জন্যে তার পীর বা মুর্শিদকেও প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুসরণ-অনুকরণ করা ফরয। এ প্রসঙ্গে বিশ্বখ্যাত ছূফী সাধক ও কবি হাফিয রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর দিওয়ানে হাফিযে লিখেন,

উদূ লেখা ঢুকবে……………………………………………

অর্থাৎ “তোমরা জ্ঞান বৃদ্ধ বা বুযূর্গ পীর বা মুর্শিদ যদি তোমার জায়নামায শরাবে ডুবাতে বলেন, তবে তাই করবে। কেননা, তোমার মুর্শিদ আল্লাহ পাক পর্যন্ত পৌঁছার রাস্তা সম্পর্কে পূর্ণ অবগত।” অতএব, প্রমাণিত হলো যে, মুরিদের জন্য পীর ছাহেবকে অনুসরণ করা তার আদেশ-নিষেধ মান্য করা তাঁর ইযাযত ব্যতীত কোন কাজ না করা ফরয। অর্থাৎ মুরীদ যে কোন কাজ স্বীয় পীর ছাহেবের ইযাযতেই করবে। তবে শর্ত হলো, উক্ত পীর ছাহেবকে অবশ্যই সত্যিকার ‘উলিল আমর’ বা হক্কানী রব্বানী ওলী ও বুযূর্গ হতে হবে। নচেৎ তাকে অনুসরণ-অনুকরণ করা কস্মিনকালেও জায়িয নয়। কারণ যারা হক্কানী-রব্বানী ওলী বা পীর ছাহেব নয় তারা আল্লাহ পাক থেকে গাফিল এবং তাদের কাজগুলো শরীয়তের খিলাফ। এধরণের লোকদেরকে অনুসরণ করতে মহান আল্লাহ পাকই  নিষেধ করেছেন।  যেমন কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে,

ولاتطع من اغفلنا قلبه عن ذكرنا واتبع هوه وكان امره فرطا.

অর্থঃ “যার অন্তরকে (তার বদ আমলের কারণে) আমার যিকির থেকে গাফিল রেখেছি অর্থাৎ যার অন্তর আমার যিকির থেকে গাফিল তাকে তোমরা অনুসরণ করনা, সে নফসের অনুসরণ করে এবং তার কাজগুলো শরীয়তের খিলাফ।” (সূরা কাহফ্/২৮)

যদি তাই হয়ে থাকে তবে মুসলমানের জন্য হিন্দুকে অনুসরণ করা এবং হিন্দুর ইযাযতে কাজ করা কি করে জায়িয হতে পারে?  মুলতঃ যে কোন বিষয়েই কোন হিন্দুকে অনুসরণ করা বা তার ইযাযতে কাজ করা নাজায়িয ও হারাম। যেহেতু সে নফস বা শয়তানের অনুসরণকারী। তাই তার আদেশ নিষেধ আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ নিষেধের খিলাফ হবে এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং ‘পীরের ইজাযত পায়নি বলে বিবাহ্ করবে না’ উক্ত ব্যক্তির এ কথাও আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদের্শ-নির্দেশের খিলাফ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

 فانكحوا ما طاب لكم من النساء.

 অর্থঃ- “তোমরা মেয়েদের মধ্য হতে তোমাদের পছন্দ মত বিবাহ কর।”(সূরা নিসা/৩) আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীস শরীফে ইরশাদ করেন,

النكاح من سنتى فمن رغب عن سنتى فليس منى.

 অর্থঃ- “বিবাহ্ করা হচ্ছে আমার সুন্নত। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে বিরত থাকবে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” অতএব, আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নির্দেশের খিলাফ কারো আদেশ-নির্দেশ, ইজাযত মানা বা গ্রহণ করা জায়িয নেই।  এ মর্মে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 لاطاعة لمخوق فى معصية الخالق.

 অর্থঃ- “স্রষ্টার নাফরমানী করে কোন সৃষ্টির অনুসরণ করা জায়িয নেই।” (মিশকাত) অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নির্দেশের খিলাফ অন্য কারো আদেশ-নির্দেশ গ্রহণ করা বা পালন করা জায়িয নেই।” উল্লেখ্য, আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীবের আদেশ-নির্দেশের খিলাফ কোন আদেশ-নির্দেশ মানা বা অনুসরণ করা নিষেধ। এ নিষেধ শুধু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রেই করা হয়নি বরং প্রতি ক্ষেত্রেই করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

  يا يها النبى اتق الله ولاتطع الكفرين والمنفقين ان الله كان عليما حكيما واتبع مايوحى ايك من ربك ان الله كان بم تعملون خبيرا.

অর্থঃ- “হে নবী! (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্ পাককে ভয় করুন। আর কাফিরদের ও মুনাফিকদের অনুসরণ করবেননা। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক মহাজ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময়।  আর আপনার রবের তরফ হতে যা আপনার প্রতি ওহীরূপে প্রেরীত হয় তার অনুসরণ করুন। (হে মানুষেরা!) নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তোমাদের আমল সম্পর্কে পূর্ণ খবর রাখেন।” (সূরা আহযাব/১, ২) এর ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن عمروبن شعيب رضى الله تعالى عنه عن ابيه عن جده ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ليس منا من تشبه بغير نا لا تشبهوا اليهود ولا بالنصارى.

অর্থঃ- “হযরত আমর বিন শুয়াইব রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের ব্যতীত অন্য সম্প্রদায়ের সাথে (আক্বীদা-আমলে) তাশাব্বুহ্ বা মিল রাখে সে আমাদের দলভুক্ত নয়। অতএব, তোমরা ইহুদী ও নাছারাদের সাথে সাদৃশ্য রেখনা।” (তিরমিযী, মিশকাত) উল্লেখ্য, বিবাহের মাসয়ালা হচ্ছে, সাধারণভাবে প্রত্যেকের জন্য  বিবাহ করা সুন্নত। পাপ কাজ সংঘটিত হওয়ার আশংকা থাকলে তার জন্য বিবাহ করা ফরয। আর বিবাহ করে হক্ব আদায় করতে পারবেনা, এমন ব্যক্তির জন্যে বিবাহ করা হারাম। য   (চলবে)

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ