মুহম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম
দুবাই
সুওয়াল: জুমাদাল উখরা ১৪৪৬ হিজরী সনে প্রকাশিত এক অখ্যাত মাসিক পত্রিকায় পাকিস্তানের মুফতী তকী উসমানী সে আশরাফ আলী থানবীর বরাত দিয়ে লিখেছে- মক্কায় থাকা অবস্থায় মুসলমানদের সকলের মাঝে উন্নত চরিত্র, ইখলাছ, সবর ও তাক্বওয়া গুণ দৃঢ়তা লাভ করেনি। এ অবস্থায় সশস্ত্র জিহাদের অনুমতি দিলে সকল মোকাবিলা হতো কেবল উদ্দীপনা, জোশ, ক্রোধ ও প্রতিশোধের লক্ষ্যে। কেবল আখলাক্ব ও আল্লাহ পাক উনার কালিমা বুলন্দ করার উদ্দেশ্যে হতো না। এ অবস্থায় উনারা ফেরেশতাদের পবিত্র কাফেলার সহযোগিতা লাভের উপযুক্ত হতেন না। এবং মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে নিরাপত্তা লাভেরও যোগ্য বিবেচিত হতেন না। নাউযুবিল্লাহ! একথা কতটুকু শরীয়তসম্মত
জাওয়াব: আশরাফ আলী থানবীর বরাত দিয়ে পাকিস্তানের কথিত মুফতী তকী উসমানী সে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে যেসব বক্তব্য উল্লেখ করেছে তা সম্পূর্ণরূপে মনগড়া, দলীলবিহীন এবং উনাদের সুমহান শান বা মর্যাদা মুবারকের খিলাফ হওয়ার কারণে কুফরী হয়েছে। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বা সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়ছালা হচ্ছে, মুসলমান নামধারী কেউ কুফরী করলে, সে কাফির ও মুরতাদ হয়ে যায়।
আর সম্মানিত শরীয়তে মুরতাদের হুকুম হচ্ছে- তাদেরকে তওবা করার জন্য তিনদিন সময় দেয়া হবে, তিনদিনের মধ্যে তওবা না করলে তাদের একমাত্র শরঈ শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। তারা হজ্জ করলে হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে। বিবাহ করলে বিবাহ ফাসেদ হয়ে যাবে। তাদের ওয়ারিছ সত্ত্ব বাতিল হবে। তাদের জীবনের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। তারা মারা গেলে তাদের গোসল, কাফন, দাফন কোনটিই করা যাবে না, এমনকি মুসলমানদের কোনো কবরস্থানেও তাদেরকে দাফন করা যাবে না। বরং মৃত কুকুর-শৃগালের মতো তাদেরকে গর্তে পঁুতে রাখতে হবে। কেউ যদি তাদের গোসল, কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করে তার উপরও একই হুকুম বর্তাবে। নাঊযুবিল্লাহ! এখন যদি সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক থাকতো তাহলে তাদের সবার উপর এই হুকুম কায়িম করা হতো। তবে তারা ইহকালে রক্ষা পেলেও পরকালে অবশ্যই কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে।
মুরতাদ তকী উসমানী তার মুরুব্বীর বক্তব্যের বরাত দিয়েছে। অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি মুরুব্বীর বরাত দিতে নিষেধ করেছেন। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَإِذَا قِيْلَ لَـهُمُ اتَّبِعُوْا مَا أَنْـزَلَ اللهُ قَالُوْا بَلْ نَـتَّبِعُ مَا أَلْفَيْـنَا عَلَيْهِ اٰبَاءَنَا ۗ أَوَلَوْ كَانَ اٰبَاؤُهُمْ لَا يَـعْقِلُوْنَ شَيْـئًا وَّلَا يَـهْتَدُوْنَ
অর্থ: যখন তাদেরকে বলা হয়, মহান আল্লাহ পাক তিনি যা নাযিল করেছেন সেগুলোর অনুসরণ করো। তখন তারা বলে, আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে যার উপর পেয়েছি তার অনুসরণ করবো। যদিও তাদের পূর্বপুরুষরা জ্ঞানীও ছিলনা এবং হিদায়েতপ্রাপ্তও ছিল না। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭০)
কাজেই, মুরতাদ তকী উসমানীকে মুরুব্বীর বরাত বাদ দিয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ থেকে দলীল দিতে হবে। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
هَاتُـوْا بُـرْهَانَكُمْ اِنْ كُنْـتُمْ صَادِقِيْنَ
অর্থ: তোমরা সত্যবাদী হলে দলীল পেশ করো। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১১১, সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নমল শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৪)
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দলীল ব্যতীত তার উক্ত বক্তব্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
মহান আল্লাহ পাক তিনি মুহাজির ও আনছার সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের শান মুবারকে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَالسَّابِقُوْنَ الْأَوَّلُوْنَ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ وَالْأَنصَارِ وَالَّذِيْنَ اتَّـبَـعُوْهُمْ بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللهُ عَنْـهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ تَحْتَـهَا الْأَنْـهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْـهَا أَبَدًا ۚ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
অর্থ: মুহাজির ও আনছার সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম যারা (ঈমান আনয়নে) অগ্রগামী, প্রথম উনারা এবং উনাদেরকে যারা উত্তমভাবে অনুসরণ করবেন উনাদের সকলের প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি সন্তুষ্টি ঘোষণা করেছেন এবং উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট রয়েছেন। উনাদের জন্য তিনি এমন জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছেন যার নিম্নদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত থাকবে। উনারা সেখানে চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান করবেন। ইহা উনাদের জন্য বিরাট কামিয়াবী । (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা তওবাহ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১০০)
পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لَا تَمَسُّ النَّارُ مُسْلِمًا رَاٰنِىْ أَوْ رَأَى مَنْ رَاٰنِىْ
অর্থ: ঐ সকল মুসলমান উনাদেরকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না, যারা আমাকে দেখেছেন অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম এবং উনাদেরকে যারা দেখেছেন (হযরত তাবিয়ীনে কিরাম) উনাদেরকেও জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। (তিরমিযী শরীফ, মা’রিফাতুছ ছাহাবা ইত্যাদি)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে প্রতিভাত যে, সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সার্বিকভাবে সবদিক থেকে চূড়ান্তভাবে পূর্ণতাপ্রাপ্ত ছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট এমন মকবূল হয়েছেন যার কারণে তিনি উনাদের প্রতি যমীনে থাকতেই সন্তষ্টি ও জান্নাত মুবারকের সুসংবাদ দিয়েছেন। এমনকি উনাদেরকে যারা দেখবেন এবং উত্তমভাবে অনুসরণ করবেন উনাদের জন্যও সন্তুষ্টি ও জান্নাত মুবারকের সুসংবাদ দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বৈশিষ্ট্য মুবারক সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি অনেক আয়াত শরীফ নাযিল করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلٰكِنَّ اللهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الْإِيمَانَ وَزَيَّـنَهٗ فِي قُـلُوْبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوْقَ وَالْعِصْيَانَ ۚ أُولٰئِكَ هُمُ الرَّاشِدُوْنَ
অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের নিকট সম্মানিত ঈমানকে প্রিয় বা পছন্দনীয় করে দিয়েছেন এবং আপনাদের অন্তরে তা সুশোভিত করে দিয়েছেন। আর আপনাদের নিকট কুফরী, ফাসিকী ও নাফরমানীকে অপছন্দনীয় করে দিয়েছেন। উনারাই হচ্ছেন হাক্বীক্বী হিদায়েতপ্রাপ্ত। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা হুজুরাত শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ০৭)
কাজেই, কোন উম্মতের জন্য এমন কথা বলা বা বক্তব্য দেয়া যাবে না যা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বিন্দুতম শান মুবারকের খিলাফ হয়। খিলাফ হলে সেটা কুফরী হবে এবং জাহান্নামী হওয়ার কারণ হবে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَللهَ اَللهَ فِى أَصْحَابِىْ اَللهَ اَللهَ فِى أَصْحَابِىْ لاَ تَـتَّخِذُوْهُمْ غَرَضًا بَعْدِىْ فَمَنْ أَحَبَّـهُمْ فَبِحُبِّىْ أَحَبَّـهُمْ وَمَنْ أَبْـغَضَهُمْ فَبِبُـغْضِىْ أَبْـغَضَهُمْ وَمَنْ اٰذَاهُمْ فَـقَدْ اٰذَانِىْ وَمَنْ اٰذَانِىْ فَـقَدْ اٰذَى اللهَ وَمَنْ اٰذَى اللهَ فَـيُـوْشِكُ أَنْ يَّأْخُذَهٗ
অর্থ: “আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো, আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। আমার বিছাল শরীফের পরে উনাদেরকে তোমরা তিরস্কারের লক্ষ্যস্থল করোনা। যে ব্যক্তি উনাদেরকে মুহব্বত করলো, সে আমাকে মুহব্বত করার কারণেই মুহব্বত করলো, আর যে ব্যক্তি উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করলো, সে আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার কারণেই তা করলো। যে ব্যক্তি উনাদেরকে কষ্ট দিল, সে মুলতঃ আমাকেই কষ্ট দিল, আর যে আমাকে কষ্ট দিল, সে মূলত মহান আল্লাহ পাক উনাকেই কষ্ট দিল, আর যে মহান আল্লাহ পাক উনাকে কষ্ট দিল, মহান আল্লাহ পাক তিনি শীঘ্রই তাকে পাকড়াও করবেন।” (তিরমিযী শরীফ)
অনুরূপ পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
إِنَّ الَّذِيْنَ يُـؤْذُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ لَعَنَـهُمُ اللهُ فِي الدُّنْـيَا وَالْاٰخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُّهِيْـنًا
অর্থ: “নিশ্চয় যারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার অভিসম্পাত এবং তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عُمَرَ الْفَارُوْقِ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَـقُوْلُ: ” سَأَلْتُ رَبِّيْ عَنِ اخْتِلَافِ أَصْحَابِيْ مِنْ بَـعْدِيْ فَأَوْحَى إِلَيَّ: يَا مُحَمَّدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ أَصْحَابَكَ عِنْدِيْ بِمَنْزِلَةِ النُّجُوْمِ فِي السَّمَاءِ بَـعْضُهَا أَقْـوَى مِنْ بَـعْضٍ وَلِكُلٍّ نُـوْرٌ فَمَنْ أَخَذَ بِشَيْءٍ مِمَّا هُمْ عَلَيْهِ مِنْ اِخْتِلَافِهِمْ فَـهُوَ عِنْدِيْ عَلَى هُدًى قَالَ: وَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَصْحَابِيْ كَالنُّجُومِ فَبِأَيِّهِمْ اِقْـتَدَيْـتُمْ اِهْتَدَيْـتُمْ
অর্থ: আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার বিছাল শরীফের পরে আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ইখতিলাফ (মতবিরোধ) সম্পর্কে আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে জিজ্ঞাসা করেছি।” মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে বললেন, “আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আপনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আমার নিকট আকাশের তারকা সমতুল্য। কারো আলোর চেয়ে কারো আলো বেশী, তবে প্রত্যেকেরই আলো রয়েছে। সুতরাং, উনাদের যেকোন ইখতিলাফকে যারা আঁকড়িয়ে ধরবে, তারা হিদায়েত পেয়ে যাবে। কারণ উনাদের ইখতিলাফগুলো আমার নিকট হিদায়েত হিসাবে গণ্য।” অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ (প্রত্যেকেই) তারকা সাদৃশ্য, উনাদের যে কাউকে তোমরা অনুসরণ করবে, হিদায়েতপ্রাপ্ত হবে।” সুবহানাল্লাহ! (মিশকাত শরীফ, রযীন)
অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারাও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের চূড়ান্ত কুবূলিয়াতে বিষয়টি পরিস্ফুটিত হয়েছে। যার কারণে উনাদের ইখতিলাফও হিদায়েতের কারণ এবং তা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট গ্রহণযোগ্য হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। যার ফলশ্রম্নতিতে উনাদের যে কাউকে, যে কোন ব্যক্তি, যে কোন বিষয়ে অনুসরণ করবে, সে ব্যক্তি হিদায়েত লাভ করবে বা হিদায়েতের উপর থাকবে। সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা, উনাদেরকে দোষারোপ করা, উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা এবং উনাদেরকে নাকিছ বা অপূর্ণ বলা সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী।
এদের সম্পর্কেই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَيَأْتِيْ قَـوْمٌ يَسُبُّـوْنَـهُمْ وَيَـنْـتَقِصُوْنَـهُمْ فَلاَ تُجَالِسُوْهُمْ وَلاَ تُـؤَاكِلُوْهُمْ وَلَا تُشَارِبُـوْهُمْ , وَلَا تُـنَاكِحُوْهُمْ وَفِىْ رِوَايَةٍ وَلَا تُصَلُّوْا مَعَهُمْ وَلَاتَدْعُوْلَهُمْ
অর্থ: হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “শীঘ্রই একটি দল বের হবে, যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে দোষারোপ করবে, উনাদেরকে নাকিছ বা অপূর্ণ বলবে। সাবধান! তোমরা তাদের মজলিসে বসবেনা, তাদের সাথে পানাহার করবেনা, তাদের সাথে বিবাহ-শাদীর ব্যবস্থা করবেনা। অন্য রেওয়ায়েতে উল্লেখ রয়েছে, তাদের পেছনে নামায পড়বেনা এবং তাদের জন্য দোয়া করবেনা।”
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا رَأَيْـتُمُ الَّذِيْنَ يَسُبُّـوْنَ أَصْحَابِيْ فَـقُوْلُوْا : لَعْنَةُ اللهِ عَلَى شَرِّكُمْ
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যখন তোমরা কাউকে আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে দোষারোপ করতে দেখবে, তখন তোমরা বলো, এ নিকৃষ্ট কাজের জন্য তোমাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত বর্ষিত হোক।” (তিরমিযী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে-
عَنْ حَضْرَتْ عُوَيْمِ بْنِ سَاعِدَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ اللهَ اخْتَارَنِيْ، وَاخْتَارَ لِيْ أَصْحَابًا، فَجَعَلَ لِيْ بَيْنَهُمْ وُزَرَاءَ، وَأَنْصَارًا، وَأَصْهَارًا، فَمَنْ سَبَّـهُمْ فَـعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ، لا يُـقْبَلُ مِنْهُ يَـوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفٌ وَّلَا عَدْلٌ”
অর্থ: “হযরত উয়াইম ইবনে সায়িদাহ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে মনোনীত করেছেন এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে মনোনীত করেছেন এবং উনাদের মধ্য থেকে আমার কার্য সম্পাদনকারী, খিদমতকারী ও বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়বর্গ নির্ধারণ করেছেন। অতএব যারা উনাদেরকে দোষারোপ করবে, তাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার, হযরত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও সমস্ত মানুষ সকলেরই লা’নত এবং তাদের কোন ফরয ও নফল ইবাদত মহান আল্লাহ পাক তিনি কবুল করবেন না।” (তবারানী শরীফ, হাকিম শরীফ)
বিশ্বখ্যাত মুহাদ্দিছ হাফিয ইবনে হাজার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত গ্রন্থ “ইসাবা” কিতাবের ১ম খণ্ডে প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিছ হাফিয আবূ যারআ রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিম্নোক্ত বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন-
اِذَا رَاَيْتَ الرَّجُلَ يَـنْقِصُ اَحَدًا مِّنْ اَصْحَابِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاعْلَمْ اَنَّهٗ زِنْدِيْقٌ
অর্থ: “যখন কাউকে দেখবে যে, সে কোন একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অবমাননা করছে, তখন তুমি জানবে, সে ব্যক্তি নির্ঘাত যিন্দিক তথা কাফির।”
মুহম্মদ উবায়দুল্লাহ
কিশোরগঞ্জ
সুওয়াল: ক্বওমী মাদরাসার মুখপত্রের জুমাদাল উখরা ১৪৪৬ হিজরী সংখ্যায় এক সুওয়ালের জাওয়াবে বলা হয়েছে, কদমবুছি নিষেধ হওয়ার পক্ষে শরীয়তে কোন নস তথা প্রমাণ নেই। তবে সেজদার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ যেনো না হয়ে যায় সেজন্য সতর্কতা হলো- কদমবুছি থেকে বিরত থাকা।
জাওয়াব: কওমী মাদরাসার মুফতীদের উক্ত জাওয়াব স্বয়ং যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আমল মুাবরকের খিলাফ বা বিরোধী হওয়ার কারণে কুফরী হয়েছে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বহু সংখ্যক বর্ণনার মধ্যে রয়েছে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বদমবুছি করেছেন। আর তিনি উনাদের ক্বদমবুছী গ্রহন করেছেন। অনুরূপভাবে একজন ছাহাবী আরেকজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ক্বদমবুছী করেছেন। অর্থাৎ ক্বদমবুছী খাছ সুন্নত মুবারকের অন্তর্ভুক্ত।
কাজেই ক্বদমবুছী থেকে বিরত থাকার জন্য বলার অর্থ হচ্ছে সুন্নত মুবারক থেকে বিরত থাকতে বলা। যা কাট্টা কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ। এ সমস্ত লোক আসলে আক্বীদা-আমলে পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি জাহান্নামী ফিরকার অন্তর্ভুক্ত। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফে রয়েছে আখিরী উম্মত ৭৩ ফিরক্বা বা দলে বিভক্ত হবে। তন্মধ্যে ১টি ব্যতীত বাকী ৭২টি দলই হবে জাহান্নামী।
যে একটি দল জান্নাতী হবেন উনাদের পরিচয় সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَا اَنَا عَلَيْهِ وَاَصْحَابِىْ
অর্থ: যার উপর আমি এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম রয়েছি। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম উনাদেরকে যে আক্বীদা আমল শিক্ষা দিয়েছেন সেই আক্বীদা-আমল যারা গ্রহন করবেন উনারাই হচ্ছেন সেই একটি দল বা জান্নাতী দল।
প্রতিভাত হচ্ছে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কদমবুছী করেছেন এখন যারা ক্বদমবুছি করবে উনারা হবেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসারী এবং জান্নাতী দলের অন্তর্ভুক্ত। আর যারা ক্বদমবুছি করতে নিষেধ করবে বা বিরত থাকতে বলবে তারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসারী নয়। ফলে তারা জান্নাতী দলটির অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং তারা জান্নাতী দলটির বিপরীত ৭২টি জাহান্নামী দলের অন্তর্ভুক্ত। নাউযুবিল্লাহ!
উল্লেখ্য, ক্বদমবুছি করার দলীলসমূহ জানতে পাঠ করুন যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১২তম সংখ্যা। যেখানে অসংখ্য দলীল-প্রমাণ সাপেক্ষে বিস্তারিত ফতওয়া প্রদান করা হয়েছে।
পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ ثَابِتٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ أَنَّهُ قَـبَّلَ يَدَ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ وَأَخْرَجَ أَيْضًا أَنَّ عَلِيًّا عَلَيْهِ السَّلَامُ قَـبَّلَ يَدَ الْعَبَّاسِ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَرِجْلَهٗ
অর্থ: “হযরত ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাত মুবারকে বুছা (চুম্বন) দিয়েছেন। তিনি এটাও বর্ণনা করেন যে, হযরত ইমামুল আউওয়াল কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার হাত ও পা মুবারকে বুছা (চুম্বন) দিয়েছেন।” (ফতহুল বারী খণ্ড ১১ পৃঃ৫৭, তুহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী শরহে তিরমিযী খণ্ড ৭ পৃঃ৫২৮)
عَنْ حَضْرَتْ بُـرَيْدَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ فَائْذَنْ لِّى اُقَبِّلُ يَدَيْكَ وَرِجْلَيْكَ فَاَذِنَ لَهٗ اَىْ فِى تَـقْبِيْلِ يَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ فَـقَبَّـلَهُمَا
অথ: “হযরত বুরাইদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (গাছের সিজদা দেয়ার ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর) আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে আপনার উভয় হাত ও পা মুবারকে বুছা (চুম্বন) দেয়ার অনুমতি দিন। তখন উনাকে উভয় হাত ও পা মুবারকে বুছা (চুম্বন) দেয়ার অনুমতি দেয়া হলো। তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উভয় হাত ও পা মুবারকে বুছা (চুম্বন) দিলেন।” (নাসীমুর রিয়াজ শরহে কাজী আয়াজ খণ্ড ৩ পৃঃ ৫০, কিতাবুল আযকার লিন্ নববী)
عَنِ الْوَازِعِ بْنِ زَارِعٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ ، عَنْ جَدِّهَا وَكَانَ فِيْ وَفْدِ عَبْدِ الْقَيْسِ قَالَ: لَمَّا قَدِمْنَا الْمَدِينَةَ فَجَعَلْنَا نَـتَـبَادَرُ مِنْ رَوَاحِلِنَا فَـنُـقَبِّلُ يَدَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرِجْلَهٗ
অর্থ: “হযরত ওয়াযে’ ইবনে যারে রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দাদা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা আব্দুল কায়েস গোত্রে থাকা অবস্থায় যখন মদীনা শরীফ আসতাম, তখন আমরা সাওয়ারী হতে তাড়াতাড়ী অবতরণ করে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল মাগফিরাত বা হাত মুবারক ও নূরুদ দারাজাত বা পা মুবারক বুছা (চুম্বন) দিতাম।” (আবু দাউদ শরীফ খণ্ড ২ পৃঃ ৭০৯, বযলুল মাজহুদ খণ্ড ৬ পৃঃ ৩২৮, ফতহুল বারী খণ্ড ১১ পৃঃ৫৭, মেশকাত শরীফ, মেরকাত খণ্ড ৭ পৃঃ ৮০, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহেরে হক্ব, ই’লাউস সুনান খণ্ড ১৭ পৃঃ ৪২৬)
উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত হয়েছে যে, কদমবুছি করা সুন্নতে ছাহাবা’র অন্তুর্ভুক্ত। আর সুন্নতে ছাহাবা পালন করা সম্পর্কে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِيْ وَسُنَّةِ الْـخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ تَمَسَّكُوْابِهَا وَعَضُّوْا عَلَيْـهَا بِالنَّـوَاجِذِ
অর্থ: “তোমাদের প্রতি আমার সুন্নত মুবারক ও আমার হেদায়েতপ্রাপ্ত হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন তথা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সুন্নত মুবারক পালন করা ওয়াজিব। তোমরা তা মাড়ির দাঁত দিয়ে দৃঢ়তার সহিত আঁকড়ে ধরো অর্থাৎ আমল করো।” (মেশকাত শরীফ)
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আজকাল কিছু নীম মোল্লার উদ্ভব ঘটেছে যাদের ক্বদমবুছী সম্পর্কে ইলিম না থাকায় কু যুক্তি দিয়ে থাকে যে, কদমবুছী করতে মাথা নীচু করতে হয় যা সিজদার নামান্তর বিধায় তা শিরিক। নাউযুবিল্লাহ!
নীম মোল্লাদের বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, তারা তো অনেক কাজে মাথা নীচু করে সম্পাদন করে থাকে তাহলে তারাওতো শিরিক কাজ করে মুশরিক হয়েছে। যেমন পানাহারে, অযু- ইস্তিঞ্জায়, লেখা-পড়ায়, ঘর ঝাড়– দেয়ার সময় ইত্যাদি কাজে মাথা নীচু করতে হয়, এগুলোকে তো শিরক বা সিজদা বলা হয় না। মূলতঃ সিজদা হয় নাক ও কপাল দিয়ে। আর চুম্বন হয় মুখ দিয়ে। চুম্বন করতে তো মাথা নীচু করতেই হবে। যদি মাথা নীচু করলেই শিরিক হয় তাহলে জামায়াতে নামাযের সময় কাতার বন্দী হয়ে একজন অপরজনের পায়ের কাছে সিজদা করে নামায পড়ে থাকে তাহলে এটাকেতো আরো বড় শিরক বলা হতো। কিন্তু তাতো বলা হয় না।
মোটকথা, মাথা নিচু হলেই সিজদা বা শিরিক হয় না। সিজদার আলাদা হুকুম। আর কদমবুছি’র আলাদা হুকুম। একটার সাথে আরেকটার কোন সম্পর্ক নেই।
দলীলসমূহঃ (১) বুখারী, (২) তিরমিযী, (৩) নাসাঈ, (৪) আবু দাউদ, (৫) ইবনে মাজাহ, (৬) মেশকাত, (৭) ফতহুল বারী, (৮) উমদাতুল ক্বারী, (৯) মেরকাত,(১০) আশয়াতুল লুময়াত, (১১) লুময়াত,(১২) মোজাহেরে হক্ব, (১৩) তোহফাতুল আহওয়াজী, (১৪) ই’লাউস্ সুনান, (১৫) আদাবুল মুফরাদ, (১৬) মুছান্নেফ ইবনে আবী শায়বা, (১৭) বজলুল মাজহুদ, (১৮) কিতাবুল আযকার লিন নববী, (১৯) নাসিমুর রিয়াজ শরহে কাজী আয়াজ, (২০) দালায়েল লিল বায়হাক্বী, (২১) তবরানী, (২২) মুসতাদরেকে হাকেম, (২৩) মুসনাদে আহমদ, (২৪) আলমগীরী, (২৫) শামী, (২৬) দুররুল মুখতার, (২৭) গায়াতুল আওতার, (২৮) তাতারখানিয়া, (২৯) মুহীত ইত্যাদি।
মুহম্মদ তা’রীফুর রহমান
মুন্সীগঞ্জ।
সুওয়াল: যাদের আক্বীদা-আমল-আখলাক্ব শুদ্ধ নয় এমন গরীব মিসকীনদেরকে যাকাত দেয়া যাবে কি?
জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
تَـعَاوَنُـوْا عَلَى الْبِـرِّ وَالتَّـقْوٰى وَلَاتَـعَاوَنُـوْا عَلَى الْإِثْـمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّـقُوا اللهَ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
অর্থ: “তোমরা নেকী ও পরহেযগারীর মধ্যে সহযোগিতা করো; পাপ ও নাফরমানীর মধ্যে সহযোগিতা করো না। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২)
পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলে দিয়েছেন কোথায় আমাদের যাকাত, ফিতরা, উশর দিতে হবে। অর্থাৎ ১. আদেশ: যারা নেককার, পরহেযগার তাদেরকে যাকাত, ফিতরা, উশর দিতে হবে। আর ২. নিষেধ: পাপে, বদীতে, সীমালঙ্ঘনে, শত্রুতায় কোন সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে না। মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ-নিষেধ মানা ফরয। কোন কারণে তা লঙ্ঘণ করলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।
স্মরনীয় যে, যাদের ঈমান-আক্বীদা বিশুদ্ধ নয়: যাদের ঈমান নাই,আক্বীদা নষ্ট তাদেরকে কোন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে না। অনুরূপ যারা নেককার-পরহেযগার নয়। যারা পাপী; মহাপাপী। তাদেরকেও যাকাত, ফিতরা, উশর দেয়া যাবে না।
হযরত ইমাম গাযযালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন- বিরাট পর্বতমালা যার অস্তিত্ব শত শত মাইল দূর হতে দেখা যায়। কিন্তু ঈমান অত্যন্ত সূক্ষ, যার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় না। কিভাবে যে একজন ঈমানদার ব্যক্তি বেঈমান হয়ে যায় তা বোঝা কঠিন। যার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে কাদিয়ানীরা। তারা সব মানে কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘খ¦াতামুন নাবিয়্যীন’ অর্থাৎ শেষ নবী স্বীকার করে না। নাঊযুবিল্লাহ! এ কারণে তারা মির্জা গোলাম কাদিয়ানী (যে কিনা ইস্তিঞ্জাখানায় পড়ে মারা গিয়েছে) তাকে নবী বলে দাবী করে। নাঊযুবিল্লাহ! এরা যত আমলই করুক না কেন এদের কোন আমলই কবুল হবে না। এরা কাট্টা কাফির, চির জাহান্নামী।
এরকম যারা বলে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাত-পা আছে, নাঊযুবিল্লাহ! যারা বলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের বড় ভাই, নাঊযুবিল্লাহ! যারা বলে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা দোষ করেছেন, নাঊযুবিল্লাহ! যারা বলে থাকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ত্রুটি আছে, নাঊযুবিল্লাহ! যারা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সম্মান নিয়ে নানা কথা বলে, নাঊযুবিল্লাহ! এই সমস্ত লোকদের ঈমান নেই। তারা পথভ্রষ্ট ও জাহান্নামী।
এ রকম আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে। যেমন-আশরাফ আলী থানবী, যে ‘হিফযুল ঈমান’ (তার মোটা মোটা আরও অনেক বই আছে) নামে একটি বইয়ের মধ্যে লিখেছে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইলমে গইব হাইওয়ান, বাচপান, মজনুন অর্থাৎ উনার ইলমে গইব পশুর মতো নাঊযুবিল্লাহ! শিশুর মতো নাঊযূবিল্লাহ! এবং পাগলের মতো নাঊযূবিল্লাহ! সুতরাং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে যে এমন নিকৃষ্ট উদাহরণ দিতে পারে শরীয়তের ফতওয়া মতে তার ঈমান থাকতে পারে না।
ক্বওমী, দেওবন্দী তাদের সিলেবাসে এগুলো শিখানো হয়। নাঊযুবিল্লাহ! কওমী, দেওবন্দীরা আরো বলে, মহান আল্লাহ পাক তিনি মিথ্যা কথা বলতে পারেন। নাঊযূবিল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত বাহাত্তরটি দলই জাহান্নামে যাবে। তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যে একটি দল নাযাতপ্রাপ্ত, সে দলটি কোন দল? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মত মুবারক ও পথ মুবারক উনাদের উপর যারা কায়িম থাকবেন (উনারাই নাযাতপ্রাপ্ত দল)।” (তিরমিযী শরীফ)
সুতরাং বোঝা যায়, এরা মূলত বাতিল ৭২ ফেরকার অন্তর্ভুক্ত। এদেরকে যাকাত, ফিতরা, উশর কিছুই দেয়া যাবে না। এদেরকে যাকাত, ফিতরা, উশর দিলে তা কবুল হবে না।
এছাড়া আরো যাদেরকে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর দেয়া যাবে না তারা হচ্ছে:
১। উলামায়ে সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী মালানা অথবা তথাকথিত ইসলামী চিন্তাবিদদের দ্বারা পরিচালিত মাদরাসা অর্থাৎ যারা হরতাল, লংমার্চ, মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ, কুশপুত্তলিকা দাহ ও অন্যান্য কুফরী মতবাদের সাথে সম্পৃক্ত, সেই সব মাদরাসাগুলোতে পবিত্র যাকাত প্রদান করলে পবিত্র যাকাত আদায় হবে না। যেমন পত্রিকার প্রতিবেদন পাওয়া যায়, জামাতী-খারিজীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদরাসায় সংগৃহীত যাকাত, ফিতরা, কুরবানীর চামড়ার মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করে। যা মূলতঃ তাদের বদ আক্বীদা ও বদ আমল, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে তথা ধর্মব্যবসায় ও পবিত্র দ্বীন-ইসলাম বিরোধী কাজেই ব্যয়িত হয়। কাজেই এদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না, যে বা যারা তাদেরকে যাকাত দিবে কস্মিনকালেও তাদের যাকাত আদায় হবে না।
২। ঠিক একইভাবে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা- যেখানে আমভাবে ধনী-গরীব সকলের জন্য ফায়দা লাভের সুযোগ করে দেয়- এমন কোন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে বা সংগঠনে প্রদান করা হারাম ও নাজায়িয। যেমন ‘আনজুমানে মফিদুল ইসলাম’ এই সংগঠনটি বিশেষ ৩ পদ্ধতিতে মুসলমানদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে-
(ক) পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা হাতিয়ে নেয়ার মাধ্যমে গরীব-মিসকীনদের হক্ব বিনষ্ট করে তাদেরকে বঞ্চিত করে দিচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!
(খ) অপরদিক থেকে জনকল্যাণমূলক সুবিধা প্রদান ও গ্রহণের মাধ্যমে ধনীদেরকেও পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা খাওয়ায়ে তথা হারাম গ্রহণের মাধ্যমে তাদের ইবাদত-বন্দেগী বিনষ্ট করে দিচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!
গ) আরেক দিক থেকে যাকাতদাতাদের পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা যথাস্থানে না যাওয়ায় এবং যথাযথ কাজে ব্যবহার না হওয়ায় যাকাত দাতাদেরকে ফরয ইবাদতের কবুলিয়াত থেকে বঞ্চিত করছে। নাউযুবিল্লাহ! অর্থাৎ যাকাতদাতাদের কোন যাকাতই আদায় হচ্ছে না। কাজেই এ সমস্ত সংগঠনে পবিত্র যাকাত উনার টাকা প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম।
৩। অনুরূপভাবে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা আত্মসাতের আরেকটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন’। এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত হিন্দু ও বৌদ্ধদের ‘যোগ সাধনা শিক্ষা’ প্রদানের একটি প্রতিষ্ঠান, যা মুসলমান উনাদের জন্য শিক্ষা করা সম্পূর্ণরূপে কুফরী। এই প্রতিষ্ঠানটি একদিকে এই কুফরী শিক্ষা বাস্তবায়ন করে মুসলমান উনাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে, অন্যদিকে মুসলমান উনাদের পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, দান-ছদকা, মান্নত বা কুরবানীর চামড়া বিক্রিকৃত টাকা হাতিয়ে নিয়ে তা তাদের কুফরী কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের মাধ্যমে গরীব-মিসকীনের হক্ব বিনষ্ট করছে। অপরদিকে যাকাত প্রদানকারীদেরকেও তাদের ফরয ইবাদত থেকে বঞ্চিত করে কবীরা গুনাহে গুনাহগার করছে। নাউযুবিল্লাহ! কাজেই মুসলমানদের জন্য কাফিরদের এই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয তো অবশ্যই, এমনকি সাধারণ দান করাও হারাম ও নাজায়িয।
৪। নিছাব পরিমাণ মালের অধিকারী বা ধনী ব্যক্তিকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। এদেরকে পবিত্র যাকাত দিলে আবার তা নতুন করে আদায় করতে হবে।
৫। মুতাক্বাদ্দিমীন অর্থাৎ পূর্ববর্তী আলিমগণ উনাদের মতে কুরাইশ গোত্রের বনু হাশিম উনাদের বংশধরের জন্য পবিত্র যাকাত গ্রহণ বৈধ নয়। তবে মুতাআখখিরীন অর্থাৎ পরবর্তী আলিমগণ উনাদের মতে বৈধ।
৬। অমুসলিম ব্যক্তিকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।
৭। দরিদ্র পিতা-মাতাকে এবং উর্ধ্বতন পুরুষ অর্থাৎ দাদা-দাদী, নানা-নানীকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।
৮। আপন সন্তানকে এবং অধঃস্তন সন্তান অর্থাৎ নাতি-নাতনীদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।
৯। স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরস্পরকে পবিত্র যাকাত দিতে পারবে না।
১০। প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ইয়াতীমখানা লিল্লাহ বোডিংয়ের জন্য পবিত্র যাকাত আদায়কারী নিযুক্ত হলে তাকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।
১১। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি যদি উপার্জন ছেড়ে দিয়ে পবিত্র নামায-রোযা ইত্যাদি নফল ইবাদতে মশগুল হয়ে যায় তাকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। তবে সে যদি উপার্জন না থাকার কারণে পবিত্র যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত হয় তবে যাকাত দেয়া যাবে।
১২। পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের হুকুম অনুযায়ী যারা আমল করেনা অর্থাৎ যারা পবিত্র শরীয়ত উনার খিলাফ আমল ও আক্বীদায় অভ্যস্ত তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।
১৩। যারা পবিত্র যাকাত গ্রহণ করে উক্ত যাকাতের টাকা দিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নাফরমানীমূলক কাজে মশগুল হয় তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।
১৪। বেতন বা ভাতা হিসেবে নিজ অধিনস্ত ব্যক্তি বা কর্মচারীকে পবিত্র যাকাত উনার টাকা দেয়া যাবে না।
১৫। যাদের আক্বীদা ও আমল আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত বহিভুর্ত তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। যারা হারাম কাজে অভ্যস্ত তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।
১৬। জনকল্যাণমূলক কাজে ও প্রতিষ্ঠানে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। যেমন : আমভাবে লাশ বহন ও দাফন, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, সেতু নির্মাণ, হাসপাতাল নির্মাণ, বৃক্ষরোপন, পানির ব্যবস্থাকরণ ইত্যাদি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।
মুহম্মদ আব্দুল বারিক
লালমনিরহাট
সুওয়াল: পাওনা ও আটকে পড়া সম্পদের পবিত্র যাকাত উনার বিধান কি?
জাওয়াব: এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-
عَنْ حَضْرَتِ الْـحَسَنِ الْبَصْرِىِّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ اِذَا حَضَرَ الْوَقْتُ الَّذِىْ يُـوَدِّىْ فِيْهِ الرَّجُلُ زَكَاتَهٗ اَدّٰى عَنْ كُلِّ مَالٍ وَّعَنْ كُلِّ دَيْنٍ اِلَّا مَا كَانَ ضِمَارًا لَا يَـرْجُوْهُ
অর্থ: “বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যখন পবিত্র যাকাত প্রদানের সময় উপস্থিত হবে, তখন পবিত্র যাকাত প্রদানকারী ব্যক্তি তার সমস্ত সম্পদের উপর এবং সকল পাওনার উপর পবিত্র যাকাত দিবেন। তবে যে পাওনা বা সম্পদ আটকে রাখা হয়েছে এবং যা ফেরত পাওয়ার সে আশা করে না, সেই সম্পদের পবিত্র যাকাত দিতে হবে না। তবে যখন পাবে তখন (শুরু থেকে পাওয়া পর্যন্ত) তার পবিত্র যাকাত আদায় করবে।” (ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এ মতটি হযরত আবূ উবাইদ কাসিম ইবনে সালাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সঙ্কলন করেছেন)
মুহম্মদ মিজানুর রহমান
বাবুরহাট, চাঁদপুর
সুওয়াল: কোনো ব্যক্তি যদি পবিত্র রোযা রেখে স্বপ্নে অথবা জাগ্রত অবস্থায় ভুলে কিছু পান করে অথবা খেয়ে ফেলে, তবে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে কি?
জাওয়াব: না, পবিত্র রোযা রাখা অবস্থায় স্বপ্নে কিছু পান করলে বা খেলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। আর জাগ্রত অবস্থায় ভুলে পেট ভরে পানাহার করলেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। তবে অবশ্যই পবিত্র রোযা উনার কথা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথেই পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। পবিত্র রোযা উনার কথা স্মরণ হওয়ার পরও যদি অনিচ্ছাসত্ত্বে সামান্য খাদ্য বা পানীয় গিলে ফেলে, তবে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এতে শুধু উক্ত পবিত্র রোযা উনার কাযা আদায় করতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না। (দুররুল মুখতার, শামী)
মুহম্মদ দেলোয়ার হুসাইন
ডেমরা, ঢাকা
সুওয়াল: পবিত্র রোযা অবস্থায় তরকারী পাক করার সময় লবণ হয়েছে কিনা, তা দেখার জন্য জিহ্বার অগ্রভাগ দিয়ে স্বাদ পরীক্ষা করা জায়িয আছে কিনা?
জাওয়াব: সাধারণভাবে এরূপ করা জায়িয নেই। হ্যাঁ, যদি কেউ সতর্কতার সাথে এরূপ করে, তবে তা মাকরূহের সহিত জায়িয রয়েছে, না করাই উচিত। তবে কারো স্বামী যদি এমন যালিম হয় যে, তরকারীতে লবণ কম বা বেশি হলে মারধর, যুলুম ইত্যাদি করে, তাহলে যালিমের যুলুম হতে বাঁচার জন্য জিহ¡ার অগ্রভাগ দিয়ে তরকারীর স্বাদ পরীক্ষা করা জায়েয রয়েছে। এক্ষেত্রে মাকরূহ্ হবে না।
লক্ষ্যণীয় যে, তরকারীযুক্ত থুথু কোনো ক্রমেই যেন ভিতরে প্রবেশ না করতে পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। (সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব)
মুহম্মদ নাজমুল হুদা
কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ
সুওয়াল: রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ পান করালে মায়ের রোযা ভঙ্গ হবে কি?
জাওয়াব: না, পবিত্র রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ খাওয়ালে মায়ের পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না, এমন কি ওযুও ভঙ্গ হবে না। (আলমগীরী)
মুহম্মদ আতিকুর রহমান
সদর, চাঁদপুর
সুওয়াল: রোযা রাখা অবস্থায় বমি করলে রোযার কোন ক্ষতি হবে কি?
জাওয়াব: পবিত্র রোযা রাখা অবস্থায় বমি করার ব্যাপারে কয়েকটি ছূরত কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। বমি করাটা সাধারণতঃ দু’প্রকারের হয়ে থাকে- (১) ইচ্ছাকৃত, (২) অনিচ্ছাকৃত।
কেউ যদি ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করে, তাহলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে। আর ইচ্ছাকৃত অল্প বমি করলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি হোক অথবা অল্প বমি হোক, তাতে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। কেউ যদি ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে অথবা অল্প বমি গিলে ফেলে, তাতে তার পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে। আর যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে অল্প বমি ভিতরে চলে চায়, তাতে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। কিন্তু মুখ ভরা বমি অনিচ্ছাকৃতভাবেও ভিতরে চলে গেলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে।
উপরোল্লিখিত কোনো কারণে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হলে সেটার ক্বাযা আদায় করতে হবে কিন্তু কাফাফারা আদায় করতে হবে না। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)
মুহম্মদ নুরুজ্জামান
সদর, কিশোরগঞ্জ
সুওয়াল: অনেকে দেখা যায়, পবিত্র রোযা রেখে বারবার থুথু ফেলে থাকে। এই থুথু না ফেলে গিলে ফেললে পবিত্র রোযার কোনো ক্ষতি হবে কি?
জাওয়াব: পবিত্র রোযা রেখে মুখের থুথু বারবার না ফেলে গিলে ফেললে পবিত্র রোযার কোনো ক্ষতি হবে না। (আলমগীরী)
মুহম্মদ মুফীজুর রহমান
আমান বাড়িয়া
সুওয়াল: রোযা রেখে টিকা, ইনজেকশন, ইনহেলার ও স্যালাইন নেয়া যাবে কি- না?
জাওয়াব: রোযা অবস্থায় টিকাসহ কোন ধরনের টিকা, ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন, ইনসুলিন ইত্যাদি গ্রহণ করা যাবে না। গ্রহণ করলে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْمُـؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْـهَا السَّلَامُ قَالَتْ اِنَّـمَا الْاِفْطَارُ مِـمَّا دَخَلَ وَلَيْسَ مِـمَّا خَرَجَ وَفِـىْ رِوَايَةٍ اَلْفَطْرُ مِـمَّا دَخَلَ وَلَيْسَ مِـمَّا خَرَجَ
অর্থ : “হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে। কিছু বের হলে ভঙ্গ হবে না।” (আবূ ইয়া’লা শরীফ ৪/৩২৮: হাদীছ শরীফ ৪৬০২)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ الله بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰـى عَنْهُ مِنْ قَـوْلِهٖ اِنَّـمَا الْوُضُوْءُ مِـمَّا خَرَجَ وَلَيْسَ مِـمَّا دَخَلَ وَالْفَطْرُ فِى الصَّوْمِ مِـمَّا دَخَلَ وَلَيْسَ مِـمَّا خَرَجَ
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে- ওযূর ব্যাপারে নিয়ম হলো- শরীর হতে কিছু বের হলে ওযূ ভঙ্গ হবে, প্রবেশ করলে ভঙ্গ হবে না। আর রোযার ব্যাপারে নিয়ম হলো- শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে, বের হলে নয়।” (বায়হাক্বী শরীফ ১/১১৬: হাদীছ ৫৬৬, ত্ববারানী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰـى عَنْهُ اَلْفَطْرُ مِـمَّا دَخَلَ وَالْوُضُوْءُ مِـمَّا خَرَجَ
অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে, বের হলে রোযা ভঙ্গ হবে না। শরীর হতে কিছু বের হলে ওযূ ভঙ্গ হবে, প্রবেশ করলে ভঙ্গ হবে না।” (আবূ শায়বা শরীফ ৩/৩৯: হাদীছ ৯২৯৩, ত্ববারানী শরীফ)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত যে, শরীরের ভিতর কোন কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পরিপ্রেক্ষিতে অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণ ফতওয়া দিয়েছেন যে, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, স্যালাইন, ইনহেলার, ইনসুলিন, টিকা ইত্যাদি নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ। যা ফিক্বাহ’র বিশ্বখ্যাত কিতাব- ফতওয়ায়ে শামী, বাহরুর রায়িক, ফতহুল ক্বাদীর, হিদায়া, আইনুল হিদায়া, জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ ইত্যাদি কিতাবে উল্লেখ আছে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে ‘রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নেয়ার আহকাম’ কিতাবখানা এবং মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ২১, ২২ এবং ২৮২তম সংখ্যা পাঠ করুন।
মুহম্মদ ফদ্বলে রাব্বী
কক্সবাজার
সুওয়াল: রোযা রাখা অবস্থায় চোখে ওষুধ বা সুরমা দিলে রোযা ভঙ্গ হবে কি?
জাওয়াব: না, রোযা রাখা অবস্থায় চোখে ওষুধ বা সুরমা দিলে রোযা ভঙ্গ হবে না। এমনকি যদি ওষূধের স্বাদ গলায় অনুভব হয় বা সুরমার রং যদি থুথুর সাথে দেখা দেয়, তাতেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। (আলমগীরী, মাবছূত, আইনুল হেদায়া)
আহমাদ সাহারা
কুতুবখালী, ঢাকা
সুওয়াল: মহিলারা মসজিদে গিয়ে তারাবীহ নামায জামায়াতে পড়তে পারবে কি না?
জাওয়াব: সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের ফতওয়া হলো মহিলাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত, পবিত্র জুমুয়া, পবিত্র তারাবীহ ও পবিত্র ঈদের নামাযসহ সকল নামাযের জামায়াতের জন্য মসজিদ, ঈদগাহ অর্থাৎ যে কোনো স্থানে যাওয়া নাজায়িয, হারাম ও কাট্টা কুফরী।
(এ সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১১, ১৪, ১৯, ২২, ২৯, ৩৭, ৪৪, ৪৭, ৪৮, ৫৫, ৬৫, ৭১, ৮২, ১০১ ও ১০২তম সংখ্যাগুলো পড়–ন যাতে বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ হতে প্রায় ১০০টি দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হয়েছে।
মুহম্মদ বিলাল হুসাইন
গাজীপুর
সুওয়াল: পবিত্র তারাবীহ উনার নামায বা অন্যান্য সময়ে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করার ব্যাপারে সঠিক ফায়ছালা জানতে ইচ্ছুক।
জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা শর্ত সাপেক্ষে জায়িয, আবার শর্ত সাপেক্ষে নাজায়িয।
অথার্ৎ সময় অথবা স্থান নিধার্রণ করে দেয়া হলে ইমামতী, শিক্ষকতা, পবিত্র হজ্জ উনার মাসয়ালা-মাসায়িল ও পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়ে খতম বা তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয। আর সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করা না হলে উজরত গ্রহণ করা জায়িয নেই। এর উপরই উলামায়ে মুতাআখ্খিরীনগণের ফতওয়া এবং এটাই গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত।
যেমন, ফিক্বাহর বিখ্যাত কিতাব “বাহরুর রায়িকে” উল্লেখ আছে-
اِنَّ الْـمُفْتٰـى بِهٖ جَوَازُ الْاَخْذِ عَلَى الْقِرَائَةِ
অর্থ: “নিশ্চয়ই পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয হওয়া ফতওয়াগ্রাহ্য মত।”
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ২৩ ও ২৪তম সংখ্যা পাঠ করুন।
সেখানে ৫১টি নির্ভরযোগ্য কিতাবের দলীল পেশ করা হয়েছে।
মুহম্মদ আব্দুল আজিজ
লন্ডন
সুওয়াল: উল্লেখ্য আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনৈক বক্তার একটি বক্তব্য দেখতে পাই যা আমার নিকট অত্যান্ত আপত্তিজনক মনে হয়েছে। তাই এই বক্তব্যের শরঈ কি ফয়সালা তা জানার জন্য উক্ত বক্তব্যটি আপনাদের ফতওয়া গবেষণা বিভাগে পাঠানো হলো। বিষয় হলো জনৈক বক্তা সৃষ্টি কায়িনাতের মহাসম্মানিত যিনি রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত আহলু বাইত আযওয়াজে মুতহ্হারাত হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনাদের সম্পর্কে ব্যঙ্গোক্তি বা উপহাস করে একটি বক্তব্য দিয়েছে। বক্তব্যটির ওডিও অনলাইনে প্রচারিত হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, সে ও শ্রোতারা অট্টহাসি ও হাত তালি দিয়েছে। বক্তব্যটি নিম্নরূপ:
ইসলামের নবী একজন ব্যবসায়ী মহিলাকে বিবাহ করেছিলেন। (উপহাসের হাসি এবং হাত তালি)।
তিনি শুধু একজন ব্যবসায়ী মহিলাকে বিবাহই করেননি, আগে তিনি তার অধীনে কাজ করেছিলেন। (উপহাসের হাসি এবং হাত তালি)।
তিনি একটি চাকরি নিয়েছিলেন; তিনি তার অধীনে একটি চাকরি নিয়েছিলেন। তারপর তিনি তাকে বিবাহ করেছিলেন। আমি বলি, যদি ভালো মুসলমান হতে চাও (উপহাসের হাসি); তাহলে তোমাকে মহানবীর পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হবে। (উপহাসের হাসি)।
আর যদি তুমি এমন কোনো মহিলাকে খুঁজে না পাও তাহলে আমাদের কাছে আসো। হা হা হা। (উপহাসের হাসি এবং জোরে হাত তালি)। (এর পরে সে হাত ঝাঁকিয়ে বলে) আমাদের কাছে এমন অনেক মহিলা আছে। (উপহাসের হাসি এবং জোরে হাত তালি)।
আশাকরি, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে সঠিক জাওয়াব প্রদান করবেন।
জাওয়াব: উল্লেখিত বক্তার উক্ত বক্তব্য মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার সম্মানিত যাওজাতুম মুতহ্হারাহ হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার অথার্ৎ উনাদের সুমহান শান মুবারক বিরোধী হওয়ার কারণে মারাত্মক কুফরী হয়েছে। সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়ছালা হচ্ছে, মুসলমান নামধারী কেউ কুফরী করলে সে কাফির ও মুরতাদ হয়ে যায়। আর সম্মানিত শরীয়তে মুরতাদ হচ্ছে দুই প্রকার: ১ম প্রকার হলো- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার, মহাসম্মানিতা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুবারক শানে বেয়াদবিকারী, এদের জন্য তওবা করার কোন সুযোগ ও রুখছত নেই। তৎক্ষণাত এদেরকে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। আর ২য় প্রকার হলো- যারা দ্বীন ইসলাম উনার কোন হুকুম-আহকাম অস্বীকার করে।
তাদেরকে তওবা করার জন্য তিনদিন সময় দেয়া হবে, তিনদিনের মধ্যে তওবা না করলে তাদের একমাত্র শরঈ শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। তারা হজ্জ করলে হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে। বিবাহ করলে বিবাহ ফাসেদ হয়ে যাবে। তাদের ওয়ারিছ সত্ত্ব বাতিল হবে। তাদের জীবনের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। তারা মারা গেলে তাদের গোসল, কাফন, দাফন কোনটিই করা যাবে না, এমনকি মুসলমানদের কোনো কবরস্থানেও তাদেরকে দাফন করা যাবে না। বরং মৃত কুকুর-শৃগালের মতো তাদেরকে গর্তে পঁুতে রাখতে হবে। কেউ যদি তাদের গোসল, কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করে তার উপরও একই হুকুম বর্তাবে। নাঊযুবিল্লাহ! এখন যদি সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক থাকতো তাহলে তাদের সবার উপর এই হুকুম জারী করা হতো। তবে তারা ইহকালে রক্ষা পেলেও পরকালে অবশ্যই কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে।
উক্ত বক্তা তার বক্তব্য অনুযায়ী সে হচ্ছে প্রথম শ্রেণীর মুরতাদ। তার কুফরী বক্তব্যের শুরুতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমাদের সম্মানিত নবী বা রসূল বলে সম্বোধন করার পরিবর্তে ইহানতের সূরে ইসলামের নবী বলে সম্বোধন করেছে। নাঊযুবিল্লাহ!
সে নিজের ভিতরে থাকা কুফরী প্রকাশ করে আরো র্নিলজ্জভাবে বলেছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একজন ব্যবসায়ী মহিলাকে বিবাহ করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ!
এখানে উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাদের জন্য ব্যবসা করাকে হালাল করেছেন। তাই এই ব্যবসা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত আব্বা আলাইহিস সালাম তিনি পরিচালনা করেছিলেন।
উনার বিছাল শরীফ অর্থাৎ ইন্তিকালের পর উক্ত ব্যবসার দায়িত্বভার হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার উপর অর্পিত হয়। কিন্তু তিনি এই ব্যবসা লোকের দ্বারা করাতেন। যাদের দ্বারা ব্যবসা করাতেন তারা দক্ষ ও অভিজ্ঞ না হওয়ার কারণে তিনি ব্যবসা করার জন্য একজন বিশ্বস্ত, সৎ, মহান ব্যক্তিত্বকে খুঁজতেছিলেন। তখন উনার চাচার মাধ্যমে খাজা আবু ত্বালিব উনার সাথে যোগাযোগ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মুদ্বারাবার শর্ত অনুযায়ী ব্যবসা করার প্রস্তাব পেশ করেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্মতি মুবারক প্রকাশ করেন এবং ব্যবসা করেন। এর পরেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উনার নিসবতে আযীমাহ মুবারক (বিবাহ মুবারক) সংঘটিত হয়। অতঃপর হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি উনার সমস্ত সম্পদ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সোপর্দ করেন অর্থাৎ হাদিয়া মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার অধীনে চাকরী নিয়েছিলেন অথবা কাজ করেছিলেন উক্ত বক্তার এসব বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে কল্পনাপ্রসূত, মিথ্যা, মনগড়া ও অজ্ঞতামূলক এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান বা মর্যাদা মুবারকের বিরোধী। যা কাট্টা কুফরী।
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সম্মানিত কিতাব পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করে কায়িনাতবাসীকে জানিয়ে দেন-
اَلنَّبِيُّ أَوْلٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ أَنْـفُسِهِمْ وَأَزْوَاجُهٗ أُمَّهَاتُـهُمْ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং উনার সম্মানিতা আযওয়াজে মুতহ্হারাত আলাইহিন্নাস সালাম উনারা মু’মিনদের নিকট তাদের জীবন অপেক্ষা অধিক প্রিয়। (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন মু’মিনদের মহাসম্মানিত পিতা) আর উনার আযওয়াজে মুতহ্হারাত আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন মু’মিনদের মহাসম্মানিতা মাতা। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ০৬)
অর্থাৎ উম্মতের সম্মানিত পিতা হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আর উম্মতের সম্মানিতা মাতা হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা।
কাজেই, উম্মতের পক্ষে উম্মতের যিনি মহাসম্মানিত রসূল ও মহাসম্মানিত পিতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উম্মতের যাঁরা মহাসম্মানিতা মাতা আলাইহিন্নাস সালাম। উনাদের শান মুবারকের খিলাফ বক্তব্য প্রদান করা উম্মত ও সন্তান নামের কলঙ্ক। এ মহা কলঙ্কজনক কাজটিই করেছে উল্লেখিত বক্তা। নাঊযুবিল্লাহ!
এই শ্রেণীর লোকদের সম্পর্কেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত কিতাব পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيْـرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ لَهُمْ قُـلُوبٌ لَّا يَـفْقَهُوْنَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُـبْصِرُوْنَ بِهَا وَلَهُمْ اٰذَانٌ لَّا يَسْمَعُوْنَ بِهَا أُولٰئِكَ كَالْأَنْـعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُولٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُوْنَ
অর্থ: “আমি জিন-ইনসানের মধ্য হতে অনেককে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। অর্থাৎ অনেকেই বদ আমলের কারণে জাহান্নামী হবে। তাদের অন্তর থাকার পরও তারা বুঝে না, চক্ষু থাকার পরও তারা দেখে না এবং কান থাকার পরও তারা শুনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো। বরং তার চেয়েও নির্বোধ। এবং তারা চরম গাফিল অর্থাৎ তারা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে চরম জাহিল। উনাদের যিকির ও ছানা-ছিফত করার ব্যাপারে অমনোযোগী।” (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭৯)
অথার্ৎ, এসব লোক পশুর চেয়ে নিবোর্ধ ও নিকৃষ্ট। পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট এইজন্য যে, পশুর জাহান্নামে শাস্তি হবে না। কিন্তু পশুর চেয়ে নিবোর্ধ এসব ব্যক্তিদের জাহান্নামে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। নাঊযুবিল্লাহ! এরা পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট বা নিবোর্ধ হওয়ার আরো একটি কারণ হচ্ছে, এরা গাফিল যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার থেকে এবং উনার যিনি মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে। এবং মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে। নাঊযুবিল্লাহ!
উনাদের সম্পের্ক চরম গাফিল ও গণ্ডমূর্খ হওয়ার কারণে উনাদের শান মুবারকে কিরূপ ভাষা ব্যবহার করতে হবে, কিরূপ আকীদা পোষণ করতে হবে, কিরূপ ধারণা রাখতে হবে সে ব্যাপারে এরা নেহায়েত অজ্ঞ, চরম জাহিল, গন্ডমূর্খ।
জানা আবশ্যক, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সৃষ্টির মূল। মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম উনাকেই সৃষ্টি মুবারক করেন। অর্থাৎ উনার সম্মানিত অজূদ মুবারক সম্মানিত নূর মুবারক সর্বপ্রথম সৃষ্টি করা হয় এবং সেই নূর মুবারক হতে কুদরতীভাবে পযার্য়ক্রমে সমস্তকিছু সৃষ্টি করা হয়। এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সাইয়্যদিুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُـوْرِىْ وَخَلَقَ كُلَّ شَىْءٍ مِّنْ نُـوْرِىْ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি র্সবপ্রথম আমার সম্মানিত নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন এবং আমার সম্মানিত নূর মুবারক থেকেই সমস্ত কায়নিাত সৃষ্টি করেছেন।” (নূরে মুহম্মদী, আল ইনসানুল কামিল, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّمَا أَنَا قَاسِمٌ وَخَازِنٌ وَاللهُ يُـعْطِيْ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন (সবকিছুর) দাতা বা দানকারী আর নিশ্চয়ই আমি হচ্ছি (সবকিছুর) বণ্টনকারী ও ভান্ডার। (বুখারী শরীফ)
বলার অপেক্ষা রাখে না, যিনি বণ্টনকারী তিনিও দাতা বা দানকারীই হয়ে থাকেন। বণ্টনকারী না দিলে কেউ কিছু লাভ করতে পারবে না। অথার্ৎ উম্মত যে কোন নিয়ামত লাভ করতে হলে উম্মতের যিনি মহাসম্মানিত রসূল যিনি নিয়ামত মুবারকের ভান্ডার ও বণ্টনকারী উনার মাধ্যমেই লাভ করতে হবে। এটা উম্মত মাত্রই সকলকে বুঝতে হবে। তবে পশুর চেয়ে যে বা যারা নিবোর্ধ তাদের পক্ষে বুঝাটা কঠিন।
এখন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জমিনে পাঠিয়েছেন উদ্দেশ্য হচ্ছে, বান্দা-উম্মত মহান আল্লাহ পাক উনার মতে মত হবে এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ হবে। মূলতঃ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য বা উনাকে অনুসরণ অনুকরণ করেই সেটা হতে হবে। উনার সমস্ত বিষয়ই উম্মতের শিক্ষার জন্য এবং আদর্শ হিসেবে গ্রহনের জন্য। যেমন তিনি খেয়েছেন, বাজারে গিয়েছেন ইত্যাদি। কিন্তু কাফিররা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান মুবারক উপলব্ধি করতে না পেরে ইহানতের সূরে বললো-
مَالِ هٰذَا الرَّسُوْلِ يَأْكُلُ الطَّعَامَ وَيَمْشِيْ فِي الْأَسْوَاقِ
অর্থ:“ইনি আবার কেমন রসূল যিনি খাবার খান এবং বাজারে যান। নাঊযুবিল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ফুরক্বান শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ০৭)
উল্লেখ্য, উক্ত বক্তাও একই সূরে মহসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সীমাহীন শান মুবারক উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়ে উনাকে নিজের মতো একজন ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করেছে। নাঊযুবিল্লাহ!
অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান মুবারক সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُوْلٌ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত রসূল ব্যতীত কেউ নন। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৪)
অথার্ৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টির জন্য মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
قُلْ يَاأَيُّـهَا النَّاسُ إِنِّيْ رَسُوْلُ اللهِ إِلَيْكُمْ جَمِيْـعًا
অর্থ:(আমার সম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলে দিন, হে মানুষেরা! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সকলের জন্য মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫৮)
অত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَأُرْسِلْتُ إِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً
অর্থ: আর আমি সমস্ত সৃষ্টির জন্য রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। (মুসলিম শরীফ)
অথার্ৎ, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
আর হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি সহ সকল হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। উনাদেরকে মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। উনাদের শান মুবারক সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَـيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْـرًا
অর্থ: “আয় হযরত আহলে বাইত শরীফ! মহান আল্লাহ পাক তিনি অবশ্যই চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে পবিত্র করার মত পবিত্র করেই সৃষ্টি করেছেন। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩ )
অত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেনÑ
اَنَا وَاَهْلُ بَـيْتِى مُطَهَّرُوْنَ مِنَ الذُّنُـوْبِ
অর্থ: আমি এবং আমার সম্মানিত আহলু বাইত আলাইহিমুস সালাম উনারা সমস্ত গুনাহ থেকে পবিত্র।
মহাসম্মনিত আহলু বাইত শরীফ হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান মুবারক সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا نِسَآءَ النَّبِىِّ لَسْتُنَّ كَاَحَدٍ مِّنَ النِّسَآءِ
অর্থ: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আযওয়াজে মুতহ্হারাত আলাইহিন্নাস সালাম! আপনারা কোন মহিলাদের মতো নন। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩২)
উল্লেখ্য যে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা যেমন কোন মহিলাদের মতো বা কারো মতো নন তদ্রুপ মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও কোন পুরুষ বা কারো মতো নন।
যেমন মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
لَسْتُ كَاَحَدٍ مِّنْكُمْ
অর্থ: আমি তোমাদের কারো মতো নই। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
نَـحْنُ اَهْلُ بَـيْتٍ لَّا يُـقَاسُ بِنَا اَحَدٌ
অর্থ: “আমরা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমাদের সাথে অন্য কারো ক্বিয়াস বা তুলনা করা যাবে না।” (দায়লামী ৪/২৮৩, জামি‘উল আহাদীছ ২২/২১৯, কানযুল উম্মাল ১২/১০৪
এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যখ্যায় হযরত ইমামুল খামিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
نَـحْنُ اَهْلُ بَـيْـتٍ مَنْ قَاسَ بِنَا اَحَدًا فَـقَدْ كَفَرَ
অর্থ: আমরা সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। যে আমাদের সাথে কাউকে তুলনা করলো সে কাফির হয়ে গেল। নাঊযুবিল্লাহ!
উপরে উল্লেখিত পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে উল্লেখিত বক্তা কাট্টা কাফিরে পরিণত হয়ে গেছে। কারণ সে যেভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান মুবারকে এলো মেলো কুফরী বক্তব্য দিয়েছে
ঠিক অনুরূপভাবে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকেও বেপর্দা বেহায়া বদ চরিত্র মহিলাদের সাথে তুলনা দিয়ে উপহাস করতঃ অট্টহাসি দিয়েছে ও হাত তালি দিয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! তার এসব প্রতিটি কাজই প্রকাশ্য কুফরী, কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হওয়ার কারণ। নাঊযুবিল্লাহ!
আরো উল্লেখ্য যে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা এরূপ মর্যাদা ও ফযীলতের অধিকারিণী যে, উনাদের শান মুবারকের খিলাফকারীদের বিরূদ্ধে হুশিয়ারী ঘোষণা দিয়ে পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে। ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
مَلْعُونِيْنَ أَيْـنَمَا ثُقِفُوْا أُخِذُوْا وَقُتِّلُوْا تَـقْتِيْلًا
অর্থ: (হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান মুবারকের খিলাফকারীরা) তারা লা’নতগ্রস্ত। তাদেরকে যেখানেই পাবে, সেখানেই পাকড়াও করবে এবং তাদেরকে ক্বতল করার মত ক্বতল করবে। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৬১)