সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১২১তম সংখ্যা | বিভাগ:

 মাওলানা মুহম্মদ তাহেরুল ইসলাম রাজারহাট, কুড়িগ্রাম।

 সুওয়ালঃ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনা বিলাদত শরীফ উপলক্ষে ঈদে মীলাদুন্ নবী তথা সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম বা ঈদে আকবর পালন করাটা কতটুকু শরীয়ত সম্মত? কারণ, একই দিনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ হয়েছে। প্রশ্ন হলো, বিছাল শরীফ তথা বিদায়ের দিন খুশী প্রকাশ করাটা কতটুকু শরীয়ত সম্মত? তা জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ মহান আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ একই দিনে সংঘটিত হওয়ার কারণেই সেই দিন ঈদে মীলাদুন্ নবী তথা সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম বা ঈদে আকবর পালন করা সুন্নাতুল্লাহ্, সুন্নাতু রসূলিল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সুন্নাতুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, সুন্নাতু আছহাবিন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সুন্নাতু আউলিয়া-ই-কিরাম। অর্থাৎ  আল্লাহ্ পাক উনার সুন্নত, আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত, অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের সুন্নত, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সুন্নত এবং হযরত ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়া-ই-কিরাম-এর সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। প্রকৃতপক্ষে নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের বিলাদত শরীফের দিন যদি বিছাল শরীফ সম্পন্ন হয় তাহলে সেই দিনকে ঈদের দিন ঘোষণা করা সুন্নাতুল্লাহ্ এবং সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

এর উদাহরণ হচ্ছে যেমন, হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম। হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে শুক্রবার দিন, যমীনে পাঠানো হয়েছে শুক্রবার দিন এবং বিছাল শরীফ সম্পন্ন হয়েছে শুক্রবার দিন।

তাই শুক্রবার দিনকে স্বয়ং আল্লাহ্ পাক, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে ঈদের দিন ঘোষণা করেছেন। শুধু তাই নয় উক্ত শুক্রবার দিনকে ঈদের দিন হিসেবে পালন করার জন্য নির্দেশ পর্যন্ত দিয়েছেন।  এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى ليلة بن عبد المنذر قال قال النبى صلى الله عليه وسلم ان يوم الجمعة سيد الايام واعظمها عند الله وهو اعظم عند الله من يوم الاضحى ويوم الفطر فيه خمس خلال خلق الله فيه ادم واهبط الله فيه ادم الى الارض وفيه توفى الله ادم وفيه ساعة لايسأل العبد فيها شيئا الا اعطاه ما لايسأل حراما وفيه تقوم الساعة ما من ملك مقرب ولا سماء ولا ارض ولا رياح ولا جبال ولابحر الاهو مشفق من يوم الجمعة.

অর্থঃ- “হযরত আবূ লায়লা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন যে, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, জুমুয়ার দিন সকল দিনের সর্দার এবং সকল দিন অপেক্ষা আল্লাহ্ পাক-এর নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এটি ঈদুল আযহার দিন ও ঈদুল ফিত্রের দিন অপেক্ষাও আল্লাহ্ পাক-এর নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এ দিনটিতে পাঁচটি (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয় রয়েছে, (১) এ দিনে আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে সৃষ্টি করেছেন, (২) এ দিনে তাঁকে যমীনে প্রেরণ করেছেন, (৩) এ দিনে তাঁকে ওফাত দান করেছেন, (৪) এ দিনটিতে এমন একটি সময় রয়েছে যে সময়টিতে বান্দা আল্লাহ্ পাক-এর নিকট কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তাকে তা দান করেন যে পর্যন্ত না সে হারাম কিছু চায় এবং (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এমন কোন ফেরেশ্তা নেই, আসমান নেই, যমীন নেই, বাতাস নেই, পাহাড় নেই, সমুদ্র নেই, যে জুমুয়ার দিন সম্পর্কে ভীত নয়।” (ইবনে মাজাহ্, মিশকাত) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن عبيد بن السباق مرسلا وعن ابن عباس رضى الله تعالى عنه متصلا قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم فى جمعة من الجمع يا معشر المسلمين ان هذا يوم جعلة الله عيدا فاغسلوا ومن كان عنده طيب فلايضره ان يمس منه وعليكم بالسواك.

অর্থঃ- “হযরত ওবায়েদ বিন সাব্বাক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুরসাল সনদে বর্ণনা করেন, আর হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুত্তাছিল সনদে বর্ণনা করেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক জুমুয়ার দিনে বলেন, ‘হে মুসলমান সম্প্রদায়! এটি (জুমুয়ার দিন) এমন একটি দিন যাকে আল্লাহ্ পাক ঈদ স্বরূপ নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং তোমরা এ দিনে গোসল করবে এবং যার নিকট কোন সুগন্ধি (আতর) আছে সে কোনরূপ অসুবিধা মনে না করে তা মেখে নিবে বা ব্যবহার করবে আর অবশ্যই তোমরা মিসওয়াক করবে।” (ইবনে মাজাহ্, মুয়াত্তা মালিক, মিশকাত)

উল্লেখ্য, হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর পয়দা হওয়ার দিনই বিছাল শরীফ সম্পন্ন হয়েছে অর্থাৎ বিছাল শরীফ সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেদিনকে শোকের দিন হিসেবে ঘোষণা তো করেননিই শুধু তাই নয় সাধারণ দিন হিসেবেও সেদিনকে রাখেননি বরং সেদিনকে খুশীর দিন বা ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা করেছেন।  যদি তাই হয়, তাহলে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ একই দিনে সংঘটিত হওয়ায় সেদিনকে কেন খুশীর দিন বা ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা দেয়া বা পালন করা যাবেনা? তা অবশ্যই করা যাবে। শুধু ঈদের দিনই নয় বরং সেদিনকে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ তথা সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম ও ঈদে আকবর হিসেবেই ঘোষণা দিতে হবে ও পালন করতে হবে যা প্রত্যেক মু’মিন-মুসলমান নর-নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত।

কারণ, প্রকৃতপক্ষে নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ উভয় দিনই রহমত, বরকত ও সাকীনা নাযিল ও হাছিলের দিন। এ প্রসঙ্গে স্বয়ং আল্লাহ্ পাক নিজেই ইরশাদ করেন,

وسلم عليه يوم ولد ويوم يموت ويوم يبعث حيا.

অর্থঃ- “তাঁর (হযরত ইয়াহ্ইয়া আলাইহিস্ সালাম-এর) প্রতি সালাম (শান্তি) যেদিন তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন এবং যেদিন তিনি ইন্তিকাল করবেন এবং যেদিন জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবেন।” (সূরা মরিয়ম/১৫) অনুরূপ হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম সম্পর্কে তাঁর নিজের বক্তব্যই কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 والسلم على يوم ولدت ويوم اموت ويوم ابعث حيا.

অর্থঃ- “আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করি, যেদিন আমি ইন্তিকাল করি এবং যেদিন জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হব।” (সূরা মরিয়ম/৩৩)

অতএব, উপরোক্ত কুরআন-সুন্নাহ্র আলোচনা দ্বারা এটাই ছাবিত বা প্রমাণিত হলো যে,  অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের আগমন ও বিদায়ের দিন খুশীর দিন বা ঈদের দিন। কেননা সেদিন রহমত, বরকত ও সাকীনা নাযিল ও হাছিলের কারণ।  এতে আরো ছাবিত বা প্রমাণিত হলো যে, যিনি নবীদের নবী, রসূলদের রসূল আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর আগমন ও বিদায় বা বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফের দিন এর চাইতে লক্ষ কোটি গুণ বেশী খুশীর দিন বা ঈদের দিন এবং রহমত, বরকত, সাকীনা নাযিল ও হাছিলের কারণ।       সে প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই ইরশাদ করেন,

حياتى خيرلكم ومماتى خيرلكم.

অর্থঃ- “আমার হায়াত ও মউত (ইহ্কাল ও পরকাল) সব অবস্থাই তোমাদের জন্য রহমত ও খায়ের-বরকতের কারণ।” (কানযুল উম্মাল)  আর আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে আরো স্পষ্টভাবে ইরশাদ করেন,

واذ اخذ الله ميثاق النبين لما اتيتكم من كتب وحكمة ثم جاءكم رسول مصدق لما معكم لتؤمنن به ولتنصرنه قال ءاقررتم واخذتم على ذلكم اصرى قالوا اقررنا قال فاشهدوا وانا معكم من الشهدين.

অর্থঃ- “আর যখন মহান আল্লাহ্ পাক নবীগণের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন, আমি তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত দান করবো, অতঃপর যখন সেই রসূল আগমন করে তোমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তা সত্য প্রতিপাদন করবেন। (তোমরা তাঁকে পেলে) অবশ্যই তাঁর প্রতি ঈমান আনবে এবং তাঁর খিদমত করবে। তিনি (আল্লাহ্ পাক তাদেরকে) বললেন, তোমরা কি (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রিসালতকে) স্বীকার করে নিলে? এবং তোমাদের প্রতি আমার এ অঙ্গীকার গ্রহণ করলে? তাঁরা (নবীগণ) বললেন, আমরা স্বীকার করে নিলাম। তিনি (আল্লাহ্ পাক) বললেন, তোমরা সাক্ষী থাক এবং আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম।” (সূরা আলে ইমরান/৮১)

তাই অন্যান্য নবী-রসূলগণের আগমন ও বিদায়ের দিন অপেক্ষা সেদিন লক্ষ-কোটি গুণ বেশী খুশী বা ঈদের কারণ ও ঈদের দিন যা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ তথা সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম ও ঈদে আকবরও।

কাজেই সেদিন শোকের দিন ঘোষণা করা ও সে হিসেবে উদ্যাপন করা আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মতের খিলাফ যা শরীয়ত তথা কুরআন-সুন্নাহ্র সম্পূর্ণ খিলাফ। বরং সেদিনকে খুশীর দিন বা ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা করা  ও খুশীর দিন বা ঈদের দিন হিসেবে উদ্যাপন করাই আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মত যা শরীয়ত তথা কুরআন-সুন্নাহ্র নির্দেশেরই অন্তর্ভুক্ত।

এছাড়াও আলাদাভাবে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের সাথে সম্পর্কিত ও তাঁদের ফযীলত প্রকাশার্থে যে সকল ঘটনা যে দিনসমূহে সংঘটিত হয়েছে সে দিনসমূহ ঈদের দিন বা খুশীর দিন হিসেবে পালন করা আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত এবং অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণেরও সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى لله عليه وسلم قدم المديئة فوجد اليهود صيام يوم عاشوراء فقال لهم رسول الله صلى الله عليه وسلم ما هذا اليوم الذى تصومونه فقالوا هذا يوم عظيم اتجى الله فيه موسى وقومه وغرق فرعون وقومه فصامه موسى شكرا فنحن نصومه فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم فنحن احق واولى بموسى منكم فصامه رسول الله صلى الله عليه وسلم وامر بصيامه.

অর্থঃ- “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনা শরীফে তাশরীফ আনলেন তখন তিনি ইহুদীদেরকে আশুরার রোযা রাখতে দেখলেন। তখন তিনি ইহুদীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তোমরা এই দিন কেন রোযা রাখ? তারা বললো, এটা একটি মহান দিন, যেদিন আল্লাহ্ পাক হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম ও তাঁর ক্বওমকে নাযাত দিয়েছিলেন আর ফিরআউন এবং তার সম্প্রদায়কে লোহিত সাগরে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। সেজন্য হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম শুকরিয়া স্বরূপ রোযা রাখেন তাই আমরাও রোযা রাখি। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম বললেন, আমরাই হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম-এর বেশী হক্বদার ও নিকটবর্তী তোমাদের চাইতে। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও রোযা রাখলেন এবং অন্যান্যদেরকেও রোযা রাখতে আদেশ করলেন।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত/১৮০)

আরো উল্লেখ্য যে, স্বয়ং আল্লাহ্ পাক কালামুল্লাহ্ শরীফে ‘সূরা মায়িদার’ ১১৪ নং আয়াত শরীফে উল্লেখ করেছেন, “আল্লাহ্ পাক-এর জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম তাঁর উম্মতের আরজু বা আকাঙ্খার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্ পাক-এর কাছে দোয়া করেছিলেন, যেন আল্লাহ্ পাক উনার উম্মতের জন্য আসমান থেকে খোদায়ী খাদ্য নাযিল করেন। যার প্রেক্ষিতে উনারা শুকরিয়াস্বরূপ সেই দিনকে ঈদের দিন বা খুশীর দিন ঘোষণা করবেন এবং তা পালন করবেন।

এ দোয়ার কারণে স্বয়ং আল্লাহ্ পাক সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর সম্মানার্থে জান্নাতী বা আসমানী খাদ্য নাযিল করেন। যার কারণে স্বয়ং হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম সেই দিনকে ঈদের দিন বা খুশীর দিন ঘোষণা করেন। এ বিষয়টি স্বয়ং আল্লাহ্ পাক নিজেই তাঁর কালাম পাকে বর্ণনা করেন,

ربنا انزل علينا مائدة من السماء تكون لنا عيدا لاولنا واخرنا واية منك وارزقنا وانت خير الرزقين.

অর্থঃ “(হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর প্রার্থনা) হে আমাদের রব! আপনি আমাদের জন্য আসমান হতে (বেহেশ্তী খাদ্যের) একটি খাঞ্চা নাযিল করুন, খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষ্যটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের জন্য ঈদ বা খুশীস্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ হতে হবে নিদর্শনস্বরূপ। এবং আপনি আমাদেরকে রিযিক দান করুন। আপনি তো উত্তম রিযিকদাতা।” (সূরা মায়িদা/১১৪)     উল্লেখ্য, প্রথমতঃ আল্লাহ্ পাক-এর নবী ও রসূল হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম যে দিনটিতে তাঁর ক্বওমসহ ফিরআউনের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন এবং লোহিত সাগর পার হয়েছিলেন সে দিনটিকে শুকরিয়া স্বরূপ রোযা রেখে পালন করেছেন এবং তাঁর ক্বওমকেও পালন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন ও সেদিনকে ইয়াওমে আযীম বা মহান দিন হিসেবে ঘোষণাও দিয়েছেন।

শুধু এতটুকুই নয় এমনকি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হিজরত করে মদীনা শরীফে তাশরীফ আনলেন সেখানে তিনি দেখতে পেলেন ইহুদীরা আশুরার দিন রোযা রাখছে। তিনি তাদেরকে রোযা রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। তারা বললেন, এ দিনটিতে আমাদের নবী ও রসূল হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম তাঁর ক্বওমসহ ফিরআউনের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন এবং লোহিত সাগর পার হয়েছিলেন আর ফিরআউন তার দলবলসহ লোহিত সাগরে ডুবে মারা গিয়েছিল। সেই কারণে আল্লাহ্ পাক-এর নবী ও রসূল হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম শুকরিয়া স্বরূপ রোযা রেখে পালন করেছিলেন এবং আমাদেরকেও পালন করতে বলেছেন। তাই আমরাও রোযা রেখে সেই মহান দিন বা ইয়াওমে আযীমকে পালন করে থাকি। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও সেদিনকে ইয়াওমে আযীম বা মহান দিন ও খুশীর দিন হিসেবে কবুল করে শুকরিয়া স্বরূপ সেদিন রোযা পালন করেন ও স্বীয় উম্মতদেরকেও রোযা রেখে পালন করতে বললেন।      দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ হতে খাদ্যের খাঞ্চা নাযিল হওয়ার কারণে তা যদি হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর ভাষায় সৃষ্টির শুরু হতে শেষ পর্যন্ত ঈদ বা খুশীর কারণ ও আল্লাহ্ পাক-এর নিদর্শন হয়; তাহলে কি এ থেকে এটাই ছাবিত বা প্রমাণিত হয় না যে, যিনি সৃষ্টির মূল, রহমতের মূল সেই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মতো মহান নিয়ামত, যিনি আগমন না করলে হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম ও হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালামসহ কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামই সৃষ্টি হতেন না। তাঁর বিলাদত শরীফের দিন ও বিছাল শরীফের দিনই যে সবচেয়ে বেশী মর্যাদাসম্পন্ন ও সবচাইতে বেশী খুশী বা ঈদের দিন যা পালন করা সকলের জন্যই জরুরী বা অবশ্য কর্তব্য। হ্যাঁ, তা অবশ্যই প্রমাণিত ও ছাবিত হয়। সেদিন শুধু সাধারণভাবে পালন করলেই চলবে না বরং তা শুকরিয়ার সাথে খাছভাবে পালন করতে হবে। যা প্রত্যেক মু’মিন-মুসলমান নর ও নারীর জন্য অবশ্য কর্তব্য।

এতে নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় হবে। এবং এ উছীলায় আল্লাহ্ পাক তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মুহব্বত বৃদ্ধি করে দিবেন ও সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করে দিবেন।  এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন, لئن شكرتم لازيدنكم.  অর্থঃ- “যদি তোমরা (নিয়ামতের) শুকরিয়া আদায় কর তাহলে অবশ্যই আমি তোমাদেরকে (নিয়ামত) আরো বৃদ্ধি করে দিব।” (সূরা ইব্রাহীম/৮)

অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক ‍ুউনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন উপলক্ষে শুকরিয়া স্বরূপ খুশী বা ঈদ পালন করলে আল্লাহ্ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি আমাদের মুহব্বত বৃদ্ধি করে দিবেন এবং তাঁর প্রতি সম্পর্কও আরো সূদৃঢ় করে দিবেন। এ প্রসঙ্গে বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ “আন্ নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,

 قال ابو بكر الصديق رضى الله تعالى عنه من أنفق درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم كان رفعيقى فى الجنة.

অর্থঃ- “হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ পাঠ (মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপলক্ষে এক দিরহাম ব্যয় করবে সে জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে।” (সুবহানাল্লাহ্)

وقال عثمان رضى الله تعالى عنه من أنفق درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم فكانما شهد غزوة بدر وحنين.

অর্থঃ- “হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে এক দিরহাম খরচ করল সে যেন বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীক থাকলো।” (সুবহানাল্লাহ্)

وقال حسن البصرى رضى الله عنه وددت لو كان لى مثل جبل أحد ذهبا فأنفقته على قرائة مولد النبى الله صلى الله عليه وسلم.

অর্থঃ- “(বিশিষ্ট তাবিয়ী) হযরত হাসান বছরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকত তাহলে তা মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ব্যয় করতাম।” (সুবহানাল্লাহ্) এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক নিজেই ইরশাদ করেন,

واذكروا نعمت الله عليكم.

অর্থঃ- “তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহ্ পাক প্রদত্ত্ব নিয়ামতের কথা স্মরণ কর।” (সূরা আলে ইমরান/১০৩) আল্লাহ্ পাক আরো ইরশাদ করেন,

قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرحوا.

অর্থঃ- “(হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) বলুন, আল্লাহ্ পাক-এর অনুগ্রহ ও রহমত নাযিল হওয়ার কারণে এতে মু’মিনগণের খুশী প্রকাশ করা উচিৎ বা কর্তব্য।” (সূরা ইউনুছ/৫৮)       উপরোক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে সুলতানুল আরিফীন, আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি “তাফসীরে দুররুল মুনছূর” কিতাবে রঈসুল মুফাস্সিরীন হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা-এর উদ্বৃতি দিয়ে বলেন,

عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما قال فى الاية فضل الله العلم ورحمته محمد صلى الله عليه وسلم قال الله تعالى وما ارسلناك الا رحمة للعلمين.

অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন, এ আয়াত শরীফের তাফসীরে এখানে আল্লাহ্ পাক-এর অনুগ্রহ বলতে ইল্মকে বুঝানো হয়েছে। আর রহমত দ্বারা বুঝানো হয়েছে, হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে। যেমন আল্লাহ্ পাক বলেন, আমি তো আপনাকে তামাম আলমের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।”

কোন কোন মুফাস্সির আল্লাহ্ পাক-এর অনুগ্রহ ও রহমত বলতে দ্বীন ইসলাম, হিদায়েত, কুরআন শরীফ ইত্যাদি বুঝিয়েছেন।     স্মরণীয় যে, স্বয়ং আল্লাহ্ পাক দ্বীন ইসলাম, হিদায়েত ও কুরআন শরীফ নাযিলের কারণে খুশী প্রকাশ করতে বলেছেন। যা করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য অবশ্য কর্তব্য। তাহলে যার আগমনের উছীলায় বা কারণে ও যার মাধ্যমে দ্বীন ইসলাম, হিদায়েত ও কুরআন শরীফ সবকিছুই পাওয়া গেলো তাঁর আগমন উপলক্ষে সেদিন খুশী প্রকাশ করা বা ঈদ পালন করা যাবে না কেন?  বরং এ থেকে এটাই ছাবিত বা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফের দিনকেই সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়ে শুকরিয়ার সাথে খুশীর দিন বা ঈদের দিন তথা সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম ও ঈদে আকবর এক কথায় সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ হিসেবে পালন করতে হবে যা আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ।  অতএব, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ একই দিনে হওয়ার কারণেই সেই দিনকে ঈদে মীলাদুন্ নবী তথা  সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ বা সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম ও ঈদে আকবর রূপে পালন করাটা কুরআন-সুন্নাহ তথা শরীয়তেরই নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত।

 {দলীলসমূহঃ (১) রুহুল মায়ানী, (২) রুহুল বয়ান, (৩) মাযহারী, (৪) ইবনে কাছীর, (৫) ইবনে আব্বাস, (৬) খাযিন, (৭) বাগবী, (৮) কুরতুবী, (৯) কবীর, (১০) তাবারী, (১১) দুররে মনছুর, (১২) ছফওয়াতুত্ তাফাসীর, (১৩) বুখারী,(১৪) মুসলিম, (১৫) তিরমিযী, (১৬) ইবনে মাজাহ্, (১৭) মুয়াত্তা মালিক,(১৮) দারিমী, (১৯) মুস্তাদরিকে হাকিম, (২০) মিশকাত, (২১) ফতহুল বারী, (২২) উমদাতুল কারী, (২৩) ইরশাদুস্ সারী, (২৪) তাইসীরুল বারী, (২৫) তুহ্ফাতুল আহওয়াজী, (২৬) উরফুশ্ শাজী, (২৭) আরিদাতুল আহ্ওয়াজী, (২৮) ফতহুল মুলহিম, (২৮) মুফহিম, (২৯) শরহে নববী, (৩০) মিরকাত, (৩১) মুযাহিরে হক্ব, (৩২) আশয়াতুল লুময়াত, (৩৩) লুময়াত, (৩৪) শরহুত্ ত্বীবী, (৩৫) তালীকুছ ছবীহ্ (৩৬) হাশিয়ায়ে হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া, (৩৭) ফতহুল ক্বাদীর মা’য়াল কিফায়া, (৩৮) আন্ নি’মাতুল কুবরা ইত্যাদি।

মুসাম্মত সানজিদা আক্তার সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত

মুহম্মদপুর, ঢাকা।

 সুওয়ালঃ অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়- জিজ্ঞাসা: সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না।  তাদের সকল আমল হবে খুবই নিখূঁত ও সুন্দর। তাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে, তাদের রোযা দেখে তোমাদের রোযাকে তোমরা তুচ্ছ ও নগণ্য মনে করবে। তাদের আমল দেখে তোমরা তোমাদের আমলকে হেয় মনে করবে, তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার নিচে যাবেনা। তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন-প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। এদলের আমল যতই তোমাদেরকে আকৃষ্ট করুক না কেন, কখনই তাদের দলে যাবেনা। কারণ প্রকৃতপক্ষে এরা হবে ইসলাম হতে খারিজ, দ্বীন হতে বহির্ভূত। তীর যেমন ধনুক হতে বের হয়ে যায় সে আর কখনও ধনুকের নিকট ফিরে আসেনা। তেমনিই এরা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে, আর কখনও দ্বীনের পথে, কুরআন ও সুন্নাহ পথে ফিরে আসবেনা।

 আমার প্রশ্ন হল, উপরোক্ত হাদীছ ছহীহ্ কি-না? ছহীহ্ হলে এ দ্বারা উদ্দেশ্য কারা? উক্ত হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতের কোন সম্পর্ক আছে কি-না? অনেকে এই হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতকে জড়াতে চান। উক্ত হাদীসের সঙ্গে তাবলীগ জামাতকে জড়ানো সঠিক কি-না? জবাবঃ প্রশ্নে বর্ণিত হাদীছ ছহীহ্। মুহাদ্দিছীনে কেরাম উক্ত হাদীছসহ এ জাতীয় হাদীছসমূহের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এ সব হাদীছ দ্বারা একটি নির্ধারিত জামাত বা খারিজী ফেরক্বা নামে পরিচিত তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর খেলাফত আমলে এই হাদীছসমূহের বাস্তবতা এবং খাওয়ারেজদের অবস্থার সমন্বয় ঘটেছিল। যার দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে বলা চলে যে, এ হাদীছসমূহ দ্বারা একমাত্র খাওয়ারেজদেরকেই বুঝানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণাদি ছাড়া অন্য কোন জামাতকে এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করা যাবেনা।

কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়া তাবলীগ জামাতকে এই হাদীছসমূহের মেসদাক বা উদ্দেশ্য বানানো, তাদেরকে খাওয়ারেজ বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে মারাত্মক অন্যায় ও অপরাধ। তাবলীগের নিয়মনীতি ও কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই। বর্তমান বিশ্বে আল্লাহ্ তা’আলা তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে পথহারা, ঈমানহারা, হেদায়েত থেকে বঞ্চিত অসংখ্য মানুষকে হেদায়েত করেছেন, ঈমান আনার তাওফিক দান করেছেন। এছাড়া এ জামাতের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে অসংখ্য জগদ্বিখ্যাত আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ।

অতএব, তাবলীগ জামাতকে খারেজী জামাত বলা, মিথ্যা অপবাদ বৈ কিছুই নয়। (ফতহুল বারী ১২:৩৫০, আল মিরকাত ৭:১০৭)

উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-  (১) উল্লিখিত হাদীছ শরীফে বর্ণিত গুণাবলী প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে আছে কি?  (২) উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা কি শুধু খারিজী ফিরক্বার লোকদেরকেই বুঝানো হয়েছে? নাকি খারিজীদের ন্যায় আক্বীদা পোষণকারীদের ক্ষেত্রেও এ হাদীছ শরীফ প্রযোজ্য?  (৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?  (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি? (৫) কুরআন-সুন্নাহ কোথাও প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করার নির্দেশ আছে কি? প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করা কুরআন-সুন্নাহ্ মতে জায়িয কিনা?   কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াবঃ  প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ  জামায়াত সম্পর্কিত উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।  শুধু তাই নয়, তারা প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের সাফাই গাইতে গিয়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যা করেছে। সাথে সাথে “ছয় উছূলীদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী কোন আক্বীদা-আমল নেই” বলে তাদের নির্লজ্জ দালালী করে নিজেদেরকে অপব্যাখ্যাকারী ও মিথ্যাবাদীরূপে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিক দলীলভিত্তিক আলোচনা করলেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে।  তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

(ধারাবাহিক)

ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে  উল্লিখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারীতার খণ্ডনমূলক জবাব- (৩)

          প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত  বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য।” আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, পর্যায়ক্রমে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলোর সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো-

প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ  বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ১

          মৌলভী সাখাওয়াত উল্লাহ্ অনুদিত- “হযরতজীর মালফূযাত” নামক কিতাবের ৭ পৃষ্ঠায়, ইসমাঈল হোসেন দেওবন্দী লিখিত “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ৫৬ পৃষ্ঠায়, মৌলভী আব্দুস্ সাত্তার ত্রিশালী লিখিত- “তাবলীগে ইসলাম” নামক কিতাবের ৩ পৃষ্ঠায় ও মাওলানা এহতেশামুল হাসান কান্দালভী লিখিত- “পস্তী কা ওয়াহেদ এলাজ” নামক কিতাবের ২২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,  “মূর্খ হোক আলিম হোক, ধনী হোক, দরিদ্র হোক, সকল পেশার সকল মুসলমানের জন্য তাবলীগ করা ফরযে আইন” প্রচলিত ছয় উছূলীদের উক্ত বক্তব্য সুস্পষ্টভাবেই কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক হয়েছে। কেননা, কুরআন-সুন্নাহ্ কোথাও আমভাবে তাবলীগ করাকে ফরযে আইন করা হয়নি। বরং ফরযে কিফায়া করা হয়েছে। তাবলীগে আম ফরযে কিফায়া এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক ‘সূরা তওবার ১২২নং’ আয়াত শরীফে বলেন,

ما كان المؤمنون لينفروا كافة.

অর্থঃ- “সকল মু’মিনদের জন্য একসাথে কোন কাজে বের হওয়া উচিৎ নয়।” ইমাম, মুজ্তাহিদগণ এই আয়াত শরীফ থেকে উছূল বের করেছেন যে, মু’মিনদের জন্য সমষ্টিগতভাবে কোন কাজ করা ফরযে আইন নয় বরং তা ফরযে কিফায়ার অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীরে মাযহারী, রুহুল মা’য়ানী, রুহুল বয়ান, ফতহুল ক্বাদীর, কাশশাফ, হাশিয়ায়ে সাবী, যাদুল মাসীর, খাযিন, বাগবী, কুরতুবী, কবীর, ইবনে কাছীর ইত্যাদি)   অতএব যদি কেউ বলে- মূর্খ হোক, আলিম হোক, ধনী হোক, দরিদ্র হোক, সকল পেশার সকল মুসলমানের জন্য তাবলীগ করা ফরযে আইন তবে তা সম্পূর্ণই কুরআন-সুন্নাহ্ ও ইজ্মা-ক্বিয়াসের খিলাফ যা প্রকৃতপক্ষে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার খিলাফ বা পরিপন্থী হবে। আর ফরযে কিফায়াকে ফরযে আইন বলাও হারাম ও কুফরীর নামান্তর, যা থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্যই ওয়াজিব।           স্মর্তব্য যে, হাক্বীক্বত ছয় উছূলীরা তাবলীগ শব্দের অর্থ ও তাঁর প্রকার ভেদ সম্পর্কে নেহায়েতই অজ্ঞ, তাই তারা এরূপ কুফরীমূলক বক্তব্য প্রদান করেছে। মূলতঃ তাবলীগ করা ফরযে আইন, না ফরযে কিফায়া তা জানতে বা বুঝতে হলে, প্রথমে তা কত প্রকার ও কি কি এবং তার অর্থ কি, তা জানতে হবে।  তাবলীগ অর্থ হলো- প্রচার করা। তাবলীগ দু’প্রকার অর্থাৎ সাধারণতঃ ইসলাম দু’ভাবে প্রচার করা হয়ে থাকে- (১) তাবলীগে আম বা  সাধারণভাবে,(২) তাবলীগে খাছ বা বিশেষভাবে। আবার দ্বীন প্রচারকারী (মুবাল্লিগ) ও দু’প্রকার- (১) মুবাল্লিগে আম (সাধারণ দ্বীন প্রচারক ও (২) মুবাল্লিগে খাছ (বিশেষ দ্বীন প্রচারক)।  মুবাল্লিগে আম ও তার হিদায়েতের ক্ষেত্র   মুবাল্লিগে আম অর্থাৎ সাধারণ মুবাল্লিগ (দ্বীন প্রচারকারী)- তার বিশেষ কোন যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। শুধু দ্বীনী সমঝ বা বুঝ থাকলেই চলবে। সে খাছ বা বিশেষভাবে যেমন ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী, ভাই-বোন, ভাতিজা-ভাতিজী ও কর্মচারী তথা তার অধীনস্থ সকলকে দ্বীনী আমলের জন্য তথা দ্বীনদারী হাছিলের জন্য তাকীদ বা উৎসাহিত করবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফের সূরা তাহ্রীমের ৬নং আয়াত শরীফে বলেন,

يايها الذين امنوا قو انفسكم واهليكم نارا.

অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে আগুন (জাহান্নাম) থেকে বাঁচাও।” আর বুখারী শরীফের হাদীছ শরীফে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

الا كلكم راع وكلكم مسئول عن رعيته.

অর্থঃ- “সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই (নিজের অধীনস্থদের ব্যাপারে) রক্ষক এবং প্রত্যেকেই তার রক্ষিত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।” মুবাল্লিগে খাছ ও তার হিদায়েতের ক্ষেত্র মুবাল্লিগে খাছ (বিশেষ দ্বীন প্রচারক), মুবাল্লিগে আম-এর মত নয়। অর্থাৎ মুবাল্লিগে আম কেবল তার অধীনস্থদেরই বলার যোগ্যতা রাখেন। আর মুবাল্লিগে খাছ তিনি কেবল তার অধীনস্থদেরই নয় বরং তিনি আমভাবে সকল উম্মতকেই হিদায়েত করার উপযুক্ত।  আর যারা মুবাল্লিগে খাছ বা বিশিষ্ট প্রচারক তাঁদের শানে আল্লাহ্ পাক বলেন,

ولتكن منكم امة يدعون الى الخير ويأمرون بالمعروف وينهون عن المنكر والولئك هم المفلحون.

অর্থঃ- “তোমাদের মধ্যে এমন একটি সম্প্রদায় হওয়া জরুরী, যারা (মানুষকে) কল্যাণের(কুরআন-সুন্নাহ্ তথা ইসলামের) দিকে ডাকবে এবং সৎ কাজের আদেশ করবে এবং বদ্ কাজ থেকে নিষেধ করবে, আর তারাই মূলতঃ কামিয়াব।” (সূরা ইমরান/১০৪)  অর্থাৎ যিনি মুবাল্লিগে খাছ হবেন তাঁকে অবশ্যই দ্বীনী বিষয়ে অর্থাৎ ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাছাউফে বিশেষ দক্ষতা তথা ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নত পরিমাণ ইল্ম, আমল এবং ইখ্লাছ হাছিল করতে হবে।  এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক আরো বলেন,

فلولا نفر من كل فرقة منهم طائفة ليتفقهوا فى الدين ولينذروا قومهم اذا رجعوا اليهم لعلهم يحذرون.

অর্থঃ- “কেন তাদের প্রত্যেক ক্বওম বা ফেরক্বা থেকে একটি দল বের হয়না এজন্য যে, তারা পবিত্র দ্বীনী ইল্মে (ইল্মে ফিক্বাহ ও ইল্মে তাছাউফ) দক্ষতা অর্জন করবে এবং তাদের ক্বওমকে ভয় প্রদর্শন করবে, যখন তারা তাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে। তাহলে অবশ্যই তারা বাঁচতে পারবে।” (সূরা তওবা/১২২)     আয়াত শরীফ সমূহের ব্যাখ্যায় আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

العلماء ورثة الانبياء.

অর্থঃ- “আলিমগণ হলেন- নবীগণের ওয়ারিছ বা উত্তরাধিকারী।” (আহ্মদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ্, মিশকাত)           অর্থাৎ যারা ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া বা নায়িবে নবী তাঁরাই হচ্ছেন হক্বানী আলিম ও ওলীআল্লাহ্। আর যারা হক্বানী আলিম ও ওলীআল্লাহ্ তাঁরাই হচ্ছেন মুবাল্লিগে খাছ। (তাফসীরে মাযহারী, রুহুল মা’য়ানী, রুহুল বয়ান, ফতহুল ক্বাদীর, কাশশাফ, হাশিয়ায়ে সাবী, যাদুল মাসীর, খাযিন, বাগবী, কুরতুবী, কবীর, ইবনে কাছীর ইত্যাদি)

انما يخشى الله من عباده العلماء.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই বান্দাদের মধ্যে আলিমরাই আল্লাহ্ পাককে ভয় করেন।” (সূরা ফাতির/২৮)

এ আয়াত শরীফের তাফসীর হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “যার মধ্যে যতবেশী আল্লাহ্ ভীতি রয়েছে, তিনি তত বড় আলিম।” আর হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে,

من ارباب العلم قال الذين يعملون بما يعلمون قال فما اخرج العلم من قلوب العلماء قال الطمع.

অর্থঃ- “(জিজ্ঞাসা করা হলো) আলিম কে? উত্তরে বললেন, যাঁরা ইল্ম অনুযায়ী আমল করেন। পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, কোন্ জিনিস আলিমের অন্তর থেকে ইল্মকে বের করে দেয়? তিনি বললেন, লোভ (দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাছিলের আকাঙ্খা)।”  (দারেমী, মিশকাত)      অর্থাৎ যিনি ইল্ম অনুযায়ী আমল করেন, তিনিই হক্কানী-রব্বানী আলিম বা আল্লাহ্ওয়ালা।        কাজেই যিনি ইল্ম, আমল ও ইখ্লাছ হাছিল করেছেন, তিনিই হক্কানী আলিম ও ওলীআল্লাহ্ আর তিনিই নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের ওয়ারিছ। মুবাল্লিগে খাছ-এর শর্ত    মুবাল্লিগে খাছের শর্ত প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে, “হযরত ইব্নে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত রয়েছে যে, একদিন এক লোক তাঁর সাক্ষাতে আসলে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি কর?” সে জাওয়াব দিল, দ্বীন প্রচার করি। তখন তিনি তাকে বললেন, “তুমি কি ঐ সকল আয়াত শরীফের আমল করেছ?” যা কুরআন শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে-  (১) সূরা ছফের ২নং আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক বলেন,

يايها الذين امنوا لم تقولون مالا تفعلون.

অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা করনা, তা কেন বল?” “তুমি কি এ আয়াত শরীফের আমল করেছ?” সে জাওয়াব দিল, না।  (২) তিনি আবার বললেন যে, আল্লাহ্ পাক ‘সূরা বাক্বারার ৪৪নং’ আয়াত শরীফে বলেছেন,

اتأمرون الناس بالبر وتنسون انفسكم وانتم تتلون الكتب.

অর্থঃ- “তোমরা কি মানুষকে সৎ কাজের আদেশ কর, আর নিজেদের ব্যাপারে ভুলে যাও? অথচ তোমরা কিতাব তিলাওয়াত করে থাক।” “তুমি কি এ আয়াত শরীফের আমল করেছ?” সে জাওয়াব দিল, না। (৩) পুনরায় তিনি বললেন, “তুমি কি ঐ আয়াত শরীফের আমল করেছ? যা হযরত শোয়াইব আলাইহিস্ সালাম তাঁর ক্বওমকে বলেছিলেন,

 وما اريد ان اخالفكم الى ما انهكم عنه.

অর্থঃ- “আমি এটা চাইনা যে, তোমাদেরকে যে কাজ থেকে নিষেধ করি, আমি তার খিলাফ করি। অর্থাৎ আমি যা বলি, তা করি আর যা বলিনা, তা করিনা।” (সূরা হুদ/৮৮)

তুমি কি এ আয়াত শরীফের আমল করেছ? সে জাওয়াব দিল, না।  তখন হযরত ইব্নে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাকে বললেন, “তুমি প্রথমে এ আয়াত শরীফসমূহের আমল কর, অতঃপর তুমি দ্বীন প্রচারের কাজে অর্থাৎ মুবাল্লিগে খাছ হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত কর।” অর্থাৎ উপরোক্ত আয়াত শরীফের আমল ব্যতিরেকে যেমন মুবাল্লিগে খাছ হওয়া সম্ভব নয় তেমনি তাবলীগে আম করাও জায়িয নেই।     উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, তাবলীগে খাছ মুবাল্লিগে আম ও খাছ উভয়ের জন্যেই ফরযে আইন। আর তাবলীগে আম শুধুমাত্র মুবাল্লিগে খাছ তথা হক্কানী-রব্বানী আলিমগণের জন্যেই প্রযোজ্য, যা তাঁদের জন্যে ফরযে কিফায়ার অন্তর্ভুক্ত। অতএব, মুবাল্লিগে আম বা সাধারণ লোকদের জন্যে তাবলীগে আম করা কখনো শুদ্ধ হবেনা বরং তাদের জন্যে তা করা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম হবে যা গুণাহ্র কারণ।     বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, বর্তমানে প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ যাকে তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা তাবলীগে আম বলে থাকে, (যা আমাদের নিকট মক্তবী শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত যদি আক্বীদা শুদ্ধ হয়ে থাকে) যদি তাদের কথা মুতাবিক সেটাকে তাবলীগে আম ধরা হয়, তাহলে তো অবশ্যই সেটা মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্য করা উচিৎ ছিল। অথচ তা এমন সব লোকেরা করে থাকে যারা মুবাল্লিগে খাছ তো নয়ই, বরং তাদের মধ্যে অনেকেই মুবাল্লিগে আম-এরও উপযুক্ত নয়। যদিও কিছু সংখ্যক মুবাল্লিগে আম রয়েছে।

অতএব তাবলীগে আম মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্যই করা ফরযে কিফায়া। যা মুবাল্লিগে আম-এর জন্য করা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম। আর সাধারণ লোকেরতো প্রশ্নই উঠেনা।  এখন হয়তো কেউ প্রশ্ন করতে পারে যে, অনেক সময় দেখা যায় এমন কতক লোক, যারা মুবাল্লিগে খাছ ও আম কোনটাই নয়, তারা অনেকেই নামাযের জামায়াতে যাওয়ার সময় বা নামাজ পড়ার সময় অন্যকে নামাযে ডেকে নিয়ে যায়, রোযার মাসে রোযা রাখার কথা বলে, ইত্যাদি অনেক নেক কাজের কথাই বলে থাকে, যা তাদের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিলনা তবে সেটার ফায়সালা কি? এর ফায়সালা হলো, ঐ সকল লোক মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদীছ শরীফ- الدين نصبحة. “দ্বীন হচ্ছে অপরের ভাল কামনা করা।” এর মিছদাক বা নমুনা। অর্থাৎ এদেরকে কেউ হিদায়েতের দায়িত্ব দেয়নি বা এরা হিদায়েতের ব্যাপারে কোন দায়িত্ব গ্রহণ করেনি। এরা হচ্ছে মানুষের খয়েরখাঁ বা হিতাকাঙ্খী। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, بلعوا عنى ولو اية.  অর্থঃ- “তোমরা আমার থেকে একটি হাদীছ হলেও তা (মানুষের নিকট) পৌঁছে দাও।” (বুখারী শরীফ)

অন্য হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, যখন হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা নিজেরা পুরোপুরিভাবে আমল করবো, ততক্ষণ পর্যন্ত কি আমরা সৎ কাজের আদেশ দিব না? অথবা যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সমস্ত খারাবী হতে ক্ষ্যান্ত হবো, ততক্ষণ পর্যন্ত কি অসৎ কাজে নিষেধ করবো না? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- “না, বরং তোমরা সৎকাজের আদেশ দান করবে, যদিও তোমরা নিজেরা পুরোপুরিভাবে আমল করতে না পার। তদ্রুপ মন্দ কাজে নিষেধ করবে, যদিও তোমরা নিজেরা পুরোপুরিভাবে তা থেকে বেঁচে থাকতে না পার।” (তিবরানী শরীফ)

এখানে উল্লেখ্য যে, বুখারী শরীফ ও তিবরানী শরীফের উপরোক্ত হাদীছে দেখা যাচ্ছে যে, সৎকাজ না করলেও অপরকে সৎ কাজ করতে বলা হয়েছে। অথচ কুরআন শরীফে আল্লাহ্ পাক বলেন, “তোমরা ঐ কথা বল কেন, যা তোমরা নিজেরা করোনা।”       তাহলে এই আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফের বক্তব্যের মধ্যে ফায়সালা কি? মূলতঃ এর ফায়সালা ওলামায়ে মুহাক্কিক, মুদাক্কিকগণ দিয়েছেন। তাঁদের মতে তিবরানী শরীফের হাদীছ শরীফে সৎ কাজ না করলেও সৎ কাজের দাওয়াত দেয়ার যে কথা বলা হয়েছে, তা মুবাল্লিগে আম-এর জন্য। যেমন কোন বাবা নিজে নামায বা অন্যান্য নেক কাজ না করা সত্বেও তার সন্তান ও অধীনস্তদের নামায বা অন্যান্য নেক কাজের জন্য বলতে পারেন।           আর কুরআন শরীফের উক্ত আয়াত শরীফে নিজে সৎ কাজ না করে অপরকে তা বলার জন্য যে নিষেধবাণী করা হয়েছে, তা হলো- মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্য। অর্থাৎ মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্য নিজে কোন সৎ কাজ না করে অপরকে তা করতে বলা জায়িয নেই।    এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মি’রাজ শরীফে যান, তখন দেখলেন কিছু লোকের জিহ্বা আগুনের কেঁচি দ্বারা কাটা হচ্ছে; তখন জিজ্ঞাসা করা হলো- এরা কারা? হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম বললেন, এরা ঐসকল লোক, যারা অন্যকে নেক কাজের উপদেশ দিতো কিন্তু নিজেরা তা করতো না।”

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, যারা মুবাল্লিগে আম, তারা তিবরানী শরীফের বর্ণনা মুতাবিক সৎকাজ না করেও অপরকে সৎকাজ করার কথা বলতে পারবেন। আর যারা মুবাল্লিগে খাছ, তারা কুরআন শরীফের উক্ত আয়াত শরীফ মুতাবিক নিজে সৎকাজ না করে অপরকে সৎকাজ করার কথা বলতে পারবেন না। কারণ যদি সকলের জন্যে আমভাবে একথা বলা হয় যে, সৎকাজ না করেও অপরকে সৎকাজের কথা বলা জায়িয, তবে মি’রাজ শরীফের হাদীছে বর্ণিত লোকদের জিহ¡া কাটা হলো কেন? এতে বুঝা গেল যে, তিবরানী শরীফের উক্ত হুকুম সকলের জন্যে প্রযোজ্য নয়। বরং যারা মুবাল্লিগে আম, তাদের জন্যেই প্রযোজ্য। আর কুরআন শরীফের উক্ত আয়াত শরীফ ও মি’রাজ শরীফ সম্পর্কিত হাদীছ শরীফখানা যারা মুবাল্লিগে খাছ, তাদের জন্যে প্রযোজ্য।

সুতরাং হাক্বীক্বতে উক্ত হাদীছ শরীফ ও আয়াত শরীফের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই। অনেকে ব্যাখ্যা না জানার কারণে এ ব্যাপারে বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা বলে থাকে। মূলতঃ উক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ যার যার ক্ষেত্র অনুযায়ী প্রযোজ্য ও অনুসরণীয়। নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের দাওয়াত ও তাবলীগ, তা’লীম ও তালক্বীন এবং হিদায়েতের ক্ষেত্র যেমন আম বা ব্যাপকভাবে উম্মতদের প্রতি প্রযোজ্য, তদ্রুপ যাঁরা মুবাল্লিগে খাছ, তাঁরা নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের ওয়ারিছ হওয়ার কারণে তাঁদেরও দাওয়াত ও তাবলীগ, তা’লীম ও তালক্বীন এবং হিদায়েতের ক্ষেত্র আম বা ব্যাপকভাবে উম্মতদের প্রতি প্রযোজ্য। আর এ আম তা’লীম ফরযে কিফায়ার অন্তর্ভুক্ত। যা অতীতে ও বর্তমানে ওলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণ তাসাউফ শিক্ষা দিয়ে, মাদ্রাসায় পড়িয়ে, মসজিদে ইমামতি করে, কিতাবাদি লিখে, ওয়াজ-নছীহত করে ইত্যাদিভাবে দাওয়াত ও তা’লীম-তালক্বীন দিয়ে হিদায়েতের কাজ করে মুবাল্লিগে খাছ-এর দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে, তাবলীগে আম-এর (ফরযে কিফায়ার) ও তাবলীগে খাছ-এর (ফরযে আইনের) খিদমতের আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।  “তাবলীগ” সম্পর্কিত উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্য ভাবেই প্রমাণিত হলো  যে, আম ভাবে সকলের জন্য তাবলীগ করা ফরযে আইন নয়, কেননা ফরযে আইন হলো এমন ইবাদত, যা প্রত্যেককেই আলাদাভাবে ফরয হিসেবে পালন করতে হয়। যেমন- নামায, রোযা ইত্যাদি।  আর ফরযে কিফায়া হলো এমন ইবাদত, যা সমষ্টিগত লোকের প্রতি পালন করা ফরয। এ ফরয দেশবাসী, শহরবাসী, এলাকাবাসী বা কোন সম্প্রদায় থেকে একজন আদায় করলেই সকলের তরফ থেকে ফরযের হক্ব আদায় হয়ে যায়। যেমন- হাফিয বা আলিম হওয়া, জানাযার নামায পড়া ইত্যাদি। উপরোক্ত বক্তব্যের জবাবে আরো বলতে হয়- যদি তাবলীগ করা ফরযে আইন হয়, তবে কার জন্য ফরযে আইন? এবং যদি ফরযে কিফায়া হয়, তবে কার জন্য ফরযে কিফায়া? আর যদি উভয়টাই হয়, তবে সেটাই বা কাদের জন্য?   মূলতঃ তাবলীগ করা ফরযে আইন ও ফরযে  কিফায়া উভয়টাই। যাঁরা মুবাল্লিগে খাছ তাঁদের জন্য তাবলীগে আম করা ফরযে কিফায়া। আর যারা মুবাল্লিগে আম তাদের জন্য তাবলীগে আম করা জায়িয নেই। তাদের করতে হবে তাবলীগে খাছ, যা মুবাল্লিগে আম ও খাছ উভয়ের জন্যই করা ফরযে আইন।      মুবাল্লিগে আম বা খাছ ব্যতীত আওয়ামুন্নাছ বা সাধারণ জনগণের জন্য তাবলীগে আম বা খাছ কোনটাই করা ফরযে আইন বা ফরযে কিফায়া নয়।  আর তাবলীগে আম করা কারো জন্যই ফরযে আইন নয়, যদিও সে মুবাল্লিগে খাছ হোক না কেন। আর তাবলীগে আম করা শুধু মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্য ফরযে কিফায়া, যা মুবাল্লিগে আম-এর জন্য করা জায়িয নেই। অতএব, অখ্যাত পত্রিকায় যে লিখেছে, “ছয় উছূলীদের মধ্যে কোন কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা আমল নেই। তা মিথ্যা প্রমাণিত হলো। (চলবে)

মুহম্মদ শহীদুর রহমান টেকনাফ,

কক্সবাজার।

  সুওয়ালঃ মাসিক মদীনা জুন/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যার ২৬নং প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, “ওলী-আওলিয়াগণের নামে দুরুদ পড়া বেদাত ও নাজায়েয।”      এছাড়াও অনেকে বলে থাকে, হাদীছ শরীফে বর্ণিত দুরূদ শরীফ ব্যতীত অন্য কোন দুরূদ শরীফ পড়াও যাবেনা। আর পড়লে ফযীলতও লাভ করা যাবেনা।          নতুন কোন দুরূদ শরীফ রচনা করার প্রয়োজন নেই। আর বুযূর্গগণ কর্তৃক রচিত দুরূদ শরীফ সর্বোতভাবে বর্জনীয়। আর তা পাঠে ছওয়াবও হবে না। কেননা, শুধুমাত্র কুরআন-হাদীছে উল্লিখিত দুরূদ শরীফই গ্রহণযোগ্য।     মাসিক মদীনার বক্তব্যসহ এ বক্তব্যগুলো কতটুকু সঠিক? দলীল-আদিল্লাহ্ ভিত্তিতে জাওয়াব দানে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ হযরত আউলিয়া-ই-কিরামগণের উপর ছলাত-সালাম বা দুরূদ শরীফ পাঠ সম্পর্কে মাসিক মদীনা পত্রিকার উল্লিখিত প্রশ্নের উত্তর ও অন্যান্যদের বক্তব্য কোনটিই সঠিক হয়নি। বরং কুরআন-সুন্নাহ খিলাফ হওয়ার কারণে কুফরী হয়েছে। যারা কুরআন-সুন্নাহ্ সম্পর্কে অজ্ঞ তাদেরকে প্রশ্ন করাও শরীয়তে নিষেধ রয়েছে।          নিম্নে হযরত ‘আউলিয়া-ই-কিরামগণের প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ সম্পর্কে’ কুরআন-সুন্নাহ্র দলীলভিত্তিক জাওয়াব প্রদান করা হলো। দুরূদ শরীফ বা ছলাত পাঠ সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ্ পাক নিজেই তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,

 ان الله وملئكته يصلون على النبى يايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক এবং তাঁর ফেরেশ্তাগণ নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত (দুরূদ) পাঠ করেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি ছলাত ও সালাম পাঠ করার মতো পাঠ কর।” (সূরা আহ্যাব/৫৬)           এ আয়াত শরীফের শানে নুযূল সম্পর্কে বলা হয়, যখন এ আয়াত শরীফ নাযিল হল তখন আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বললেন, “হে আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আল্লাহ্ পাক আমার প্রতি আজকে একখানা আয়াত শরীফ নাযিল করেছেন, তাতে আমার বিশেষ মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।”         অতঃপর তিনি আয়াত শরীফখানা তিলাওয়াত করলেন। তা শুনে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এর মধ্যে আমাদের কি কোন হিস্সা রয়েছে?        কেননা, আপনি আমাদেরকে মি’রাজ শরীফের সময়েও ভুলেননি, সেখানেও আপনি আমাদেরকে আল্লাহ্ তায়ালা প্রদত্ত নিয়ামতের অংশীদার করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক যখন আপনার প্রতি সালাম পেশ করলেন,

السلام عليك ايها النبى ورحمة الله وبركته.

অর্থঃ- “হে নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি সালাম এবং আল্লাহ্ পাক-এর রহমত ও বরকত। তখন আপনি এর জাওয়াবে বলেছিলেন,

السلام علينا وعلى عباد الله الصلحين.

অর্থঃ- “আয় আল্লাহ্ পাক! আপনার প্রদত্ত সালাম (রহমত, বরকত) আমাদের (সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম) এবং সমস্ত নেক বান্দাদের উপরও।” অর্থাৎ আপনার উপর আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে নাযিলকৃত বা প্রদত্ত সালাম, রহমত, বরকতের হিস্সা আমাদেরকে দান করেছিলেন।  তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ করে রইলেন। যেহেতু তিনি ওহী ছাড়া কোন কথা বলেননা।  কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 وما ينطق عن الهوى ان هو الا وحى يوحى.

অর্থঃ- “তিনি (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওহী ছাড়া নিজের থেকে কোন কথা বলেননা।” (সূরা নজম্/৩, ৪) তখন আল্লাহ্ পাক নাযিল করলেন,

هو الذى يصلى عليكم وملئكته ليخرجكم من الظلمت الى النور وكان بالمؤمنين رحيما.

অর্থঃ- “তিনি (সেই মহান আল্লাহ্ পাক) এবং তাঁর ফেরেশ্তাগণ তোমাদের প্রতি ছলাত পাঠ করেন তোমাদেরকে গোমরাহী থেকে হিদায়েতের পথে বের করার জন্য। আর তিনি মু’মিনদের প্রতি দয়ালু।” (সূরা আহ্যাব/৪৩)

উল্লেখ্য, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি আল্লাহ্ পাক ও তাঁর ফেরেশ্তাগণের ছলাত বা দুরূদ শরীফ পাঠের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাঁর বুলন্দ মর্যাদা ও মর্তবার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো।  আর উম্মতের প্রতি আল্লাহ্ পাক ও তাঁর ফেরেশ্তাগণের ছলাত বা দুরূদ শরীফ পাঠের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদেরকে গোমরাহী থেকে ফিরিয়ে হিদায়েতের পথে পরিচালিত করা। আর এর ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,

 عن عبد الله بن ابى اوفى قال كان النبى صلى الله عليه وسلم اذا اتاه قوم بصدقتهم قال اللهم صل على ال فلان فاتاه ابى بصدقته قال اللهم صل على ال ابى اوفى. وفى رواية اذا اتى الرجل النبى صلى الله عليه وسلم بصدقته قال اللهم صلى عليه.

অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবি আওফা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, যখন কোন সম্প্রদায় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ছদকা (যাকাত) নিয়ে আসত তখন তিনি বলতেন, “আল্লাহ্ পাক! আপনি ওমুক পরিবারের উপর ছলাত (রহমত) বর্ষণ করুন।” অতঃপর আমার পিতা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট তার ছদকা(যাকাত) নিয়ে আসলেন তখন তিনি বললেন, আয় আল্লাহ্ পাক! আপনি আবূ আওফার পরিবারের উপর ছলাত (রহমত) বর্ষণ করুন। অন্য বর্ণনায় আছে, যখন কোন লোক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ছদকা নিয়ে আসত তখন তিনি বলতেন, আল্লাহ্ পাক! তার প্রতি ছলাত (রহমত) বর্ষণ করুন।” (মুত্তাফাকুন আলাইহি)   উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় তাফসীর ও হাদীছ শরীফের শরাহতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহ্ল ও ইয়াল অর্থাৎ আল আওলাদ, আযওয়াজ, আছহাব, ইমাম, মুজতাহিদ আউলিয়া-ই-কিরাম, বুযুর্গানে দ্বীন, পীরানে তরীক্বত সকলের উপরই ছলাত(দুরূদ) পাঠ করা জায়িয রয়েছে। তবে শর্ত হচ্ছে, প্রথমে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত পাঠ করে এরপর অন্যান্যদের প্রতি পাঠ করতে হবে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে ছলাত পাঠ করার কথা বলেছেন কিন্তু তা কিভাবে পাঠ করতে হবে তার কাইফিয়ত বা পদ্ধতি বলে দেননি। বরং তার কাইফিয়ত বর্ণনা করেছেন আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং পরবর্তীতে তাঁর ওয়ারিছ বা নায়িবে নবীগণ।         যেমন, হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, “হযরত কা’ব বিন উজরা রদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমরা আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!

 كيف الصلوة عليكم اهل البيت فان الله قد علمنا كيف نسلم عليك قال قولوا اللهم صل على محمد وعلى ال محمد الخ.

অর্থঃ- “কিভাবে আপনার প্রতি ও আপনার পরিবার-পরিজনের প্রতি ছলাত পাঠ করব? আর আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, কিভাবে আপনার প্রতি সালাম পাঠ করব।”  তিনি বললেন, “তোমরা বল, হে আল্লাহ্ পাক! আপনি রহমত নাযিল করুন মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর এবং তাঁর পরিবার পরিজনের উপর।” (বুখারী, মুসলিম) এখন ال (আল) বা পরিবার পরিজন বলতে শুধু তাঁর আল আওলাদ, আযওয়াজ, আহ্লে বাইতই নন বরং তাঁরা তো অবশ্যই, এমনকি হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম এবং মু’মিন, মুত্তাক্বী ও মুসলমান। আর হযরত আউলিয়া-ই-কিরামগণ হচ্ছেন খালিছ মু’মিন, মুত্তাক্বী ও মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত।  এ সম্পর্কে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

من سلك على طريقى فهو الى.

অর্থঃ- “যে আমার তর্জ-তরীক্বা মুতাবিক চলে সে আমার আল বা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।”   আর গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, সুলতানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ক্বাইয়্যূমে আউয়াল, আফযালুল আউলিয়া হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমূখ আওলিয়া-ই-কিরামগণ হচ্ছেন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ ‘আল বা পরিবারের’ অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ নায়িবে নবী বা ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া।      বর্ণিত হাদীছ শরীফে দেখা যাচ্ছে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি কিভাবে ছলাত পাঠ করতে হবে? তার পদ্ধতি তিনি নিজেই শিক্ষা দিয়েছেন যে, প্রথমে তাঁর প্রতি এবং সেই সাথে তাঁর আওলাদগণের প্রতি ছলাত পাঠ করতে হবে।    সুতরাং এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, পীর-বুযুর্গ বা আউলিয়া-ই-কিরামগণের প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করা নিঃসন্দেহে জায়িয এবং তাঁদের জন্য দুরূদ শরীফ রচনা করাও জায়িয।  হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে,

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله وملئكته واهل السموت والارض حتى النملة فى جحرها وحتى الحوت ليصلون على معلم الناس الخير.

অর্থঃ- “হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক ও তাঁর ফেরেশ্তাগণ এবং আসমান ও যমীনবাসী, এমনকি গর্তের ভিতর পিপীলিকা ও মাছ পর্যন্ত আলিমের প্রতি ছলাত পাঠ করেন।” (তিরমিযী, দারিমী, মিশকাত, মা’য়ারেফুস্ সুনান) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

ان الله وملئكته يصلون على المستسحرين.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক ও তাঁর ফেরেশ্তাগণ যারা সেহ্রী খান তাদের প্রতি ছলাত পাঠ করেন।”         অতএব গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, সুলতানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও কাইয়্যূমে আউয়াল, আফযালুল আউলিয়া হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রতি যে দুরূদ শরীফ পাঠ করা হয়ে থাকে তা সম্পূর্ণই কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ সম্মত। প্রকৃতপক্ষে জাহিল ও মুর্খ লোকেরা তাদের জিহালত ও অজ্ঞতার কারণে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ বুঝতে না পেরে মনগড়া, বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক বক্তব্য পেশ করে থাকে।     “নতুন করে দুরূদ শরীফ রচনা করার প্রয়োজনীতা নেই” এ কথা বলা সম্পূর্ণ জিহালতপূর্ণ।  কারণ, “সূরা আহ্যাবের” ৫৬ নং আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক ঈমানদারগণকে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত ও সালাম প্রেরণ করতে বলেছেন কিন্তু ছলাতের নির্দিষ্ট কোন তর্জ-তরীক্বা বেঁধে দেননি।  অপরপক্ষে হাদীছ শরীফে বিভিন্ন দুরূদ শরীফের ফযীলতের কথা বর্ণিত থাকলেও এ রকম কোন হাদীছ শরীফ কেউ দেখাতে পারবেনা যেখানে বলা হয়েছে, “হাদীছ শরীফে উল্লিখিত দুরূদ শরীফ ব্যতীত অন্য কোন দুরূদ শরীফ রচনা করা যাবেনা বা পড়া যাবেনা।” অর্থাৎ এ সম্পর্কিত কোন নিষেধবাণী কুরআন-সুন্নাহ্র কোথাও নেই। সুতরাং যা কুরআন-সুন্নাহ্র কোথাও নিষেধ নেই তা করতে নিষেধ করা প্রকাশ্য কুফরী।       আর নতুন দুরূদ শরীফ রচনা করা যাবেনা এ কথার অর্থ হলো, নতুন নেক কাজের সূচনা করা বা ইজতিহাদের দরজাকে বন্ধ করে দেয়া। অথচ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 من سن فى الاسلام سنة حسنة فله اجرها واجر من عمل بها من بعده.

অর্থঃ- “যে কেউ দ্বীন ইসলামে উত্তম কোন পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে (যা শরীয়ত সম্মত), তার জন্য সে ছওয়াব পাবে এবং তারপরে যারা এ পদ্ধতির অনুসরণ করবে, তার ছওয়াবও সে পাবে।” (মুসলিম, মিশকাত) মূলতঃ ইজ্তিহাদের দরজা ক্বিয়ামত পর্যন্ত খোলা থাকবে। উদাহরণস্বরূপ আল্লাহ্ পাককে খোদা বলে সম্বোধন করা হয়ে থাকে যা কুরআন, হাদীছের কোথাও নেই। অথচ মুজ্তাহিদগণ ইজ্তিহাদ করে আল্লাহ্ পাককে খোদা বলে সম্বোধন করা জায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যারা মুজতাহিদ হবেন তারা ইজতিহাদ করে অনেক দুরূদ শরীফই রচনা করেছেন ও করবেন। তবে শর্ত হচ্ছে তা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস সম্মত কিনা? কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস সম্মত হলে তা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হবে। অন্যথায় গ্রহণযোগ্য হবেনা।           কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস সম্মত কোন নতুন দুরূদ শরীফ রচনা করার অর্থ এটা নয় যে, হাদীছ শরীফে বর্ণিত দুরূদ শরীফকে উপেক্ষা করা। বরং হাদীছ শরীফে বর্ণিত দুরূদ শরীফ সমর্থক নতুন দুরূদ শরীফ মূলতঃ হাদীছ শরীফ সমর্থিত দুরূদ শরীফ। সুতরাং তাদের এ বক্তব্যও জিহালতপূর্ণ।         “কুরআন-হাদীছ সম্মত ইবাদতই শুধু গ্রহণযোগ্য।” এ বক্তব্যও গোমরাহীমূলক।            কারণ, আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের দলীল হচ্ছে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াস। কাজেই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা, ক্বিয়াস সম্মত ইবাদতই আল্লাহ্ পাক-এর নিকট গ্রহণযোগ্য। মনগড়া ইবাদত যা নব আবিস্কার যা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা, ক্বিয়াস সম্মত নয় তা কস্মিনকালেও গ্রহণযোগ্য নয়।

উল্লেখ্য, সরাসরি হাদীছ শরীফে বর্ণিত না থাকলেই তা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয় এ কথা শুদ্ধ নয়। বরং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা, ক্বিয়াস দ্বারা প্রমাণিত হলেই তা শরীয়ত সম্মত। আর যা শরীয়ত সম্মত তাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত “ফযীলত লাভ করতে হলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত দুরূদ শরীফ পাঠই বাঞ্ছনীয়।”

এর জবাবে বলতে হয়, কুরআন-সুন্নাহ, ইজ্মা ও ক্বিয়াস সম্মত প্রত্যেকটি দুরূদ শরীফই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেই প্রমাণিত।   “কোন বুযুর্গ কর্তৃক রচিত দুরূদ শরীফ পাঠে ছওয়াব হবেনা এবং তা সর্বোতভাবে বর্জনীয়।” একথাও কুফরীমূলক ও গোমরাহী।   উল্লেখ্য, কোন বুযুর্গ কর্তৃক রচিত দুরূদ শরীফ বলতে সে সব বাক্যাবলীকেই বুঝানো হবে যাতে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত-সালাম প্রেরণের বিষয়টি বর্ণিত থাকবে। আর “আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত-সালাম প্রেরণ সম্বলিত বাক্যাবলী” কোন বুযুর্গ লোক তো বটেই এমনকি কোন আদনা লোকও যদি রচনা করে বা আওড়ায় তবে তা কি করে বর্জনীয় হতে পারে?  মূলতঃ আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত-সালাম সম্বলিত বাক্য না হলে তাকে দুরূদ শরীফই বলা যাবেনা। আর দুরূদ শরীফ হলে সে যেই রচনা করুক তা সর্বোতভাবে বর্জনীয় একথা বলা সুস্পষ্ট কুফরী। আরো উল্লেখ্য যে, হাদীছ শরীফে উল্লিখিত দুরূদ শরীফ পাঠে দশটি ক্ষমা, দশটি রহমত, দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি ইত্যাদির ক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট দুরূদ শরীফ বলে দেয়া হয়নি। এর দ্বারা এটা বুঝায় যে, যে কোন দুরূদ শরীফ পড়লেই তা পাওয়া যাবে।     সুতরাং গোমরাহ লোকদের বক্তব্য “কোন বুযুর্গ কর্তৃক রচিত দুরূদ শরীফ পাঠে ছওয়াব হবেনা” এ কথা বলা মূলতঃ আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নামে মিথ্যা কথা বলার শামীলও হয়েছে যা তাদের ঈমান ছলব, আমল বরবাদ এবং দুনিয়ায় থাকতেই জাহান্নামী হওয়ার কারণ। গোমরাহ ও জাহিল লোকেরা মানুষকে ধোকা দেয়ার জন্য অনেক সময় অনেক হাদীছ শরীফের বরাত দেয়। প্রকৃতপক্ষে সে সমস্ত কিতাবে পীর, বুযুর্গ বা আউলিয়া-ই-কিরামগণের প্রতি দুরূদ শরীফ পড়া নিষেধ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র কোন বর্ণনা উল্লেখ নেই। বরং তাতে দুরূদ শরীফ পড়ার পক্ষেই বর্ণনা রয়েছে।  যেমন, “মিশকাত শরীফ”-এর ৮৭ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় মু’মিন, মুত্তাক্বীগণের প্রতিও দুরূদ শরীফপাঠ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে,

اجمعوا على الصلوة على نبينا صلوات الله عليه وكذا على سائر الانبياء استقلالا وام غيرهم فالجمهور على عدم الجواز ابتداء وقيل انه حرام وقيل انه مكروه وقيل هو ترك الاولى والصحيح انه مكروه كرهية تنزيه واتفقوا على جواز جعل غير الانبياء تبعالهم فى الصلوة.

অর্থঃ- “আমাদের নবীয়ে দু’জাহান ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠের ব্যাপারে সকল উলামা-ই-কিরামগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন, অনুরূপ স্বতন্ত্রভাবে সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রতিও দুরূদ শরীফ পাঠের ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন। আর নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ব্যতীত অন্যান্য মু’মিন-মুত্তাক্বীগণের প্রতি স্বতন্ত্রভাবে দুরূদ শরীফ পাঠের ব্যাপারে জমহুর উলামাগণের মত হচ্ছে, মু’মিন-মুত্তাক্বীগণের প্রতি শুরুতেই দুরূদ শরীফ পাঠ করা জায়িয নেই। কেউ কেউ এটা হারাম বলেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, মাকরূহ। কেউ কেউ বলেছেন, না পড়াই উত্তম। বিশুদ্ধ মত এই যে, অন্যান্যদের প্রতি শুরুতেই দুরূদ শরীফ পড়া মাকরূহ তানযীহী। আর নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের অনুসরণ করে অন্যান্য মু’মিন, মুত্তাক্বীগণের প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করা জায়িয হওয়ার ব্যাপারে সকল উলামা-ই-কিরাম ঐক্যমত পোষণ করেছেন। অর্থাৎ প্রথমে নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করে তারপর অন্যান্য মু’মিন, মুত্তাক্বীগণের প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করা জায়িয।

অতএব, গোমরাহ ও জাহিল লোকদের বক্তব্য শরীয়তের দৃষ্টিতে পরিপূর্ণভাবে বর্জনীয়। কারণ তা কুরআন, হাদীছ, ইজ্মা, ক্বিয়াসের সম্পূর্ণ বিপরীত হয়েছে যা জিহালতপূর্ণ, গোমরাহীমূলক ও কুফরী সূচক। এ সমস্ত বিভ্রান্তকারী, গোমরাহ ও জাহিল লোকদের ছোহবত ইখতিয়ার থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয-ওয়াজিব।        স্মরণীয়, কোন ব্যক্তি যদি সত্যিই হক্ব মত ও পথে চলতে চায় এবং সঠিক মাসয়ালা জানতে চায় বা শিক্ষা করতে চায় তাহলে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে যামানার মুজাদ্দিদ ও ইমামের দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ পাঠ করা। বিঃদ্রঃ “আউলিয়া-ই-কিরামগণের প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করা জায়িয” এ সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে বিস্তারিত ফতওয়া প্রদান করা হবে ইনশাআল্লাহ্। {দলীলসমূহঃ (১) আহকামুল কুরআন জাস্সাস, (২) কুরতুবী, (৩) মাযহারী, (৪) খাযিন, (৫) বাগবী, (৬) তাবারী, (৭) ইবনে কাছীর, (৮) ইবনে আব্বাস, (৯) রুহুল মায়ানী,(১০) রুহুল বয়ান, (১১) বায়যাভী, (১২) সমরকন্দী, (১৩) জাওয়াহির, (১৪) কবীর, (১৫) দুররে মনছুর, (১৬) কাশ্শাফ, (১৭) মাআরিফুল কুরআন, (১৮) কাছিমী, (১৯) বুখারী, (২০) মুসলিম, (২১) আবূ দাউদ, (২২) তিরমিযী, (২৩) নাসাঈ, (২৪) ইবনে মাজাহ্, (২৫) মিশকাত, (২৬) ফতহুল বারী, (২৭) উমদাতুল ক্বারী, (২৮) ইরশাদুস্ সারী, (২৯) শরহে নববী, (৩০) আল আযকার, (৩১) আওনুল মা’বুদ, (৩২) বযলুল মাযহুদ, (৩৩) মিরকাত, (৩৪) আশয়াতুল লুময়াত, (৩৫) লুময়াত, (৩৬) মুযাহিরে হক্ব, (৩৭) শরহত্ ত্বীবী, (৩৮) তালীকুছ্ ছবীহ্, (৩৯) হাকিম, (৪০) দাইলামী, (৪১) কানযুল উম্মাল ইত্যাদি।

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

ছাতক, সুনামগঞ্জ।

সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার মে/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে নিম্নোক্ত জিজ্ঞাসার সমাধান ছাপা হয়- জিজ্ঞাসাঃ আযানে ‘আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্’ বলার সময় দুই বৃদ্ধাঙ্গুলীতে চুমু খেয়ে চোখে বোলানো এবং আযান শেষে মুনাজাত করা কি? সমাধানঃ উল্লিখিত দু’টি বিষয়ের পক্ষে শরীয়তের গ্রহণযোগ্য কোন প্রমাণ নেই। কাজেই এগুলোকে সুন্নাত বা মুস্তাহাব হিসেবে পালন করা নাজায়েয। বলা বাহুল্য, আযানের পর হাত না উঠিয়ে মুখে বলার দোয়া হাদীছে উল্লেখ রয়েছে, যার অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে।   এখন আমার সুওয়াল হলো- “আযানে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ্” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলার সময় দুই বৃদ্ধাঙ্গুলীতে চুমু খেয়ে চোখে লাগানো এবং আযান শেষে মুনাজাত করা সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? দলীলসহ সঠিক জাওয়াব জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: আযানে “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ্” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলার সময় দু’বৃদ্ধাঙ্গুলীতে চুমু খেয়ে চোখে লাগানো এবং আযান শেষে মুনাজাত করা সম্পর্কে হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার উক্ত বক্তব্য কুফরীমূলক হয়েছে।    উপরোক্ত জিজ্ঞাসার সমাধানে দু’টি বিষয় উল্লেখ করেছে। (১) আযানে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ্’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলার সময় চোখে বুছা দেয়া সম্পর্কে। (২) আযান শেষে মুনাজাত করা সম্পর্কে।   আমরা পর্যায়ক্রমে উভয়টিরই সংক্ষিপ্ত অথচ দলীলভিত্তিক আলোচনা করব (ইনশাআল্লাহ্)। (ধারাবাহিক) (২) আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাযাত করা সম্পর্কে তারা বলেছে, শরীয়তে গ্রহণযোগ্য কোন প্রমাণ নেই ও সুন্নত-মুস্তাহাব হিসেবে পালন করা নাজায়িয। শরীয়তে গ্রহণযোগ্য কোন প্রমাণ নেই।”           এর জবাবে বলতে হয়, শরীয়ত হচ্ছে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের সমন্বয়। কাজেই এ চারটির কোন একটির মধ্যে যদি পাওয়া যায় তাহলে সেটাই শরীয়তে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ হিসেবে সাব্যস্ত হবে।       স্মর্তব্য, যে সমস্ত বিষয় শরয়ী দলীলের দ্বারা প্রমাণিত তা অস্বীকার করা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কেননা এতে প্রকৃতপক্ষে শরীয়ত তথা ইসলামকেই অস্বীকার করা হয়।  সুন্নত-মুস্তাহাব হিসেবে পালন করা নাজায়িয।”         এর জবাবে বলতে হয় যে, কেউ যদি সুন্নতকে ইহানত করে, অবজ্ঞা করে বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে তাহলে সেটা কুফরী হবে। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

لو تركتم سنة نبيكم لكفرتم.

অর্থঃ- “যদি তোমরা তোমাদের নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতকে তরক (অস্বীকার) কর তাহলে অবশ্যই তোমরা কাফির হবে।” (আবূ দাউদ) আরো ইরশাদ হয়েছে,

لو تركتم سنة نبيكم لضللتم.

অর্থঃ- “যদি তোমরা তোমাদের নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতকে তরক (অস্বীকার) কর  তাহলে অবশ্যই তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।” (দারিমী, আহমদ) আকাঈদের কিতাবে উল্লেখ আছে,

اهانة السنة كفر.

অর্থঃ- “সুন্নতকে ইহানত বা অবজ্ঞা করা কুফরী।”         যদি তাই হয়, তাহলে সুন্নতকে নাজায়িয বলার অর্থ হলো হালালকে হারাম বলা। আর হালালকে হারাম বলা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।     আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করাও মুস্তাহাব সুন্নত। কারণ, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফের কোথাও আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করতে নিষেধ করা হয়নি। বরং হাত উঠিয়ে দোয়া ও মুনাজাত করা সম্পর্কিত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফের শরাহ্গুলোতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, “নামাযের বাইরে যে কোন দোয়া ও মুনাজাতে হাত উঠানো সুন্নত।”          যেমন, বিশ্ববিখ্যাত কিতাব “মিশকাত শরীফের শরাহ্ মিরকাত শরীফে” উল্লেখ আছে,

استفيد من هذا الحديث والذى قبله انه يسن رفع اليدين الى السماء فى كل دعاء.

অর্থঃ- “(দোয়ায় হাত উঠানো সম্পর্কিত) হাদীছ শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, (নামাযের বাইরে) সকল দোয়াতেই হাত উঠানো সুন্নত।” “ফতওয়ায়ে শামীতে” উল্লেখ আছে,

يرفع هما لمطلق الدعاء فى سائر الامكنة والازمنة على طبق ما وردت به السنة.

অর্থঃ- “হাদীছ শরীফের বর্ণনা মতে সর্বস্থানে, সকল সময়, সমস্ত দোয়াতে হাত উঠানো প্রমাণিত হয়।”  “ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবে উল্লেখ আছে,

ووجهه عموم دليل الرفع للدعاء ويجاب بانه مخصوصة بما ليس فى الصلوة لاجماع على ان لا رفع فى دعاء التشهد.

অর্থঃ- “দোয়ার মধ্যে হাত উঠানোর দলীল কোন দোয়ার জন্য বিশেষভাবে নির্দিষ্ট নয়। সকল দোয়াতেই হাত উঠানো জায়িয। তবে নামাযের মধ্যস্থিত দোয়ায় হাত উঠানো বিধেয় নয়, কেননা সর্বসম্মত মত হলো তাশাহ্হুদের দোয়াতে হাত উঠানো জায়িয নয়।”    উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা এবং তাদের সমজাতীয়রা তাদের দেওবন্দী সিলসিলার কিতাবগুলোরও খবর রাখেনা। কারণ তাদের দেওবন্দী সিলসিলার কিতাবগুলোতেই উল্লেখ আছে যে, “আযানের পর হাত উঠিয়ে দোয়া ও মুনাজাত করা সুন্নত।” “ইমদাদুুল ফতওয়া” কিতাবের ১ম জিঃ, ১০২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,  উর্দূ কম্পোজ করতে হবে  সুওয়ালঃ “আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা সম্পর্কে উলামায়ে দ্বীনের রায় কি?”  উর্দূ কম্পোজ করতে হবে  জাওয়াবঃ “… তবে সাধারণভাবে (যে কোন) মুনাজাতের সময় হাত উঠানো সম্পর্কে বহু ক্বওলী, ফে’লী, মরফূ, মওকূফ ও বহু প্রসিদ্ধ হাদীছ শরীফ বিদ্যমান রয়েছে। কোন দোয়াকে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। সুতরাং আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করাও সুন্নত প্রমাণিত হয়। কেননা এতদ্সম্পর্কিত দলীলসমূহ ব্যাপক।” “ফতওয়ায়ে দেওবন্দ” কিতাবে  উল্লেখ আছে,  উর্দূ কম্পোজ করতে হবে সুওয়ালঃ “আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করবে কি? সুন্নত তরীক্বা কোনটি?  উর্দূ কম্পোজ করতে হবে জাওয়াবঃ “প্রত্যেক অবস্থায় জায়িয আছে। অর্থাৎ হাত উঠানো এবং না উঠানো উভয়ই জায়িয।” (তবে হাত উঠানোই উত্তম, কেননা দোয়ায় হাত উঠানো  মুস্তাহাব ও আদবের অন্তর্ভুক্ত)।  “ফতওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ” কিতাবের ২য় জিঃ ১১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,  উর্দূ কম্পোজ করতে হবে সুওয়ালঃ আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা প্রমাণিত আছে কি?  উর্দূ কম্পোজ করতে হবে জাওয়াবঃ “…. তবে সাধারণভাবে যেহেতু মুনাজাতের মধ্যে হাত উঠানো মুস্তাহাব, তাই আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা মুস্তাহাব হওয়ার প্রমাণই বহন করে। সুতরাং আযানের দোয়াতেও হাত উঠানো জায়িয ও সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত হবে।” “ফতওয়ায়ে রহীমিয়া” কিতাবের ৩য় জিঃ ১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,  উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থঃ- “আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা (আমল দ্বারা) বর্ণিত নেই। তবে সাধারণভাবে মুনাজাতে হাত উঠানো ক্বওলী এবং ফে’লী উভয় প্রকার হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে। তাই আজানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করাকে সুন্নতের  খিলাফ বলা যাবেনা।” “কিফায়াতুল মুফতী” কিতাবের ৩য় জিঃ ৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উর্দূ কম্পোজ করতে হবে

“সুওয়ালঃ আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা কিরূপ?”

উর্দূ কম্পোজ করতে হবে

জাওয়াবঃ “আযানের পর যে সকল শব্দসমূহ পড়া হয়, সেগুলো দোয়ার শব্দ। আর দোয়ার সময় উভয় হাত উঠানো আদবের অন্তর্ভুক্ত। তাই হাত উঠিয়ে মুনাজাত করাতে কোন ক্ষতি নেই।” উল্লেখ্য, কিতাবে বর্ণিত আছে,

الادب خير من الذهب والفضة.

অর্থঃ- “আদব স্বর্ণ-রৌপ্যের চেয়েও উত্তম।” কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,  উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থঃ- “বেয়াদব আল্লাহ্ পাক-এর রহমত থেকে বঞ্চিত।” “ফতওয়ায়ে মাহ্মুদিয়া” কিতাবের ২য় জিঃ ৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, উর্দূ কম্পোজ করতে হবে  “সুওয়ালঃ “আযানের পর মুনাজাত করা কি?” জাওয়াবঃ “আযানের পর দোয়ায়ে উছীলা পড়া (অর্থাৎ মুনাজাত করা) মুস্তাহাব। অনুরূপ “দুররুল মুখতার” ১ম জিঃ ৪১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে।” কুতুবুল ইরশাদ, হাফিযে হাদীছ, বাহ্রুল উলূম, ফক্বীহুল উম্মত, সাইয়্যিদুল মুনাজিরীন, রঈসুল মুহাদ্দিসীন, তাজুল মুফাস্সিরীন, শায়খুল মাশায়িখ, আমীরুশ শরীয়ত ওয়াত্ তরীক্বত, শাহ্ ছূফী, শায়খ, হযরতুল আল্লামা মুহম্মদ রুহুল আমীন বশীরহাটী রহমতুল্লাহি আলাইহি(খলীফায়ে ফুরফুরা শরীফ) তাঁর লিখিত “জরুরী মাসায়েল” কিতাবে উল্লেখ করেন, “আযানের পর হাত উঠিয়ে দোয়া করা জায়িয।”   আযানের পর মুয়াজ্জিন ও শ্রোতাদের হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা মুস্তাহাব। শুধু আযানের পর নয়, নামাযের মধ্যস্থিত (দোয়া কুনূত, দোয়ায়ে মাছূরা ইত্যাদি) দোয়া ব্যতীত সকল দোয়ার জন্য হাত উঠানো এবং উক্ত হাত মুখমণ্ডলে মাসেহ্ করাও মুস্তাহাব। (ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া/১৪৫)

অতএব, উপরোক্ত দলীল আদিল্লাহ ভিত্তিক আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা জায়িয, মুস্তাহাব-সুন্নত এবং আদবের অন্তর্ভুক্ত। সাথে সাথে হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত পত্রিকার বক্তব্য যে ভুল, মনগড়া ও কুফরী তাও প্রমাণিত হলো। {বিঃদ্রঃ আযানের পর মুনাজাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে পড়ণ্ডন মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১৮, ৮১, ৯৮ ও ১০৬তম সংখ্যা। বিশেষ করে ৮১ ও ৯৮তম সংখ্যা পড়ণ্ডন। সেখানে মাসিক মদীনা পত্রিকা ও হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত পত্রিকার আযানের পর মুনাজাত সম্পর্কিত ভুল বক্তব্য খণ্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে।  এবার দ্বিতীয়বারের মত হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার আযানের পর মুনাজাত করা সম্পর্কিত ভুল বক্তব্য খণ্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হলো।     {দলীলসমূহঃ  (১) মিরকাত, (২) ফতহুল ক্বাদীর, (৩) দুররুল মুখতার, (৪) রদ্দুল মুহতার, (৫)  শামী, (৬) ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া, (৭) জরুরী মাসায়িল, (৮) ইমদাদুল ফতওয়া, (৯) ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, (১০) ফতওয়ায়ে রহীমিয়া, (১১) কিফায়াতুল মুফতী, (১২) ফতওয়ায়ে মাহমুদিয়া ইত্যাদি}

মাওলানা মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান

মাওলানা মুহম্মদ মাছূম বিল্লাহ্

মুহম্মদ আসাদুর রহমান,

মুহম্মদ মাইজুর রহমান ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

সুওয়ালঃ  আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম এই তিনটি সংখ্যায় ৩৫৩টি অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে প্রদত্ত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ, মুহাক্কিক-মুদাক্কিক ও হক্কানী উলামায়ে কিরামগণের ফতওয়া মুতাবিক জানতে পারলাম যে, “প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা করানো, ঘরে রাখা সর্বাবস্থায় হারাম।”  অথচ রেযাখানী মুখপত্র নভেম্বর/২০০১ ঈসায়ী সংখ্যায় ছবি সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ফতওয়া প্রকাশ করেছে। যা কিনা মানুষের ঈমান-আমল বিনষ্ট হওয়ার কারণ। রেযাখানীদের ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যের যে বিষয়গুলো আপত্তিকর সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো-    (ক) রেযাখানীরা ছবি তোলাকে বৈধ বলেছে; কিন্তু দলীল হিসেবে পেশ করেছে ঘরে ছবি রাখা সম্পর্কিত হাদীসসমূহকে। (খ) .. কতেক উলামা যেসব ছবির শরীর ও ছায়া নেই সেসব ছবিকে বৈধ বলেছেন। (গ) পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ এবং হাম্বলী, শাফেয়ী, মালেকী এমনকি হানাফীদেরও কেউ কেউ নাকি (গায়রে মুজাস্সাম) শরীরবিহীন ছবিকে বৈধ বলেছেন। (ঘ) হুজুর আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুরুর দিকে ছবি তৈরী করা ও সংরক্ষণ করাকে নিষেধ করেছিলেন; কিন্তু পরবর্তীতে অনুমতি দেন। (ঙ) ছবি হারাম হওয়ার মূলে হলো গায়রুল্লাহ সম্মান ও ইবাদত।  (চ) প্রত্যেক যুগের ফক্বীহ্, মুফতী, কাজী ও আলিমগণ যুগের চাহিদা অনুযায়ী ফতওয়া দিয়েছেন এবং দেয়া উচিত। (ছ) সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তোলা বৈধ যা যুগের চাহিদাও। (জ) প্রয়োজনীয় রেকর্ডের জন্য ফাইলবন্দি ছবিসমূহ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট জ্ঞান ও ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানার নিমিত্তে সরকারী-বেসরকারী যাদুঘর বা বিশেষ প্রতিষ্ঠানসমূহে পূর্বের নানা মনীষীগণের ছবি সংরক্ষণ/ধারণ করে রাখা বিশেষ প্রয়োজনে মাকরূহ্ হবেনা। এছাড়াও আরো বহু আপত্তিকর বিষয় তাদের উক্ত ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যে স্থান পেয়েছে।

কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে তাদের উল্লিখিত আপত্তিকর বক্তব্যগুলোর শরয়ী ফায়সালা কামনা করি।

জাওয়াবঃ  হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম)

উল্লিখিত হাদীস শরীফের পূর্ণ মিছদাক বা নমুনা হচ্ছে রেযাখানীরা। তারা ছবির ব্যাপারে এমন সব বক্তব্য প্রদান করেছে যা কিতাবে দেখা তো দূরের কথা কেউ কোনদিন শুনেওনি। মূলতঃ রেযাখানীরা নিজেদেরকৃত বদ আমলকে ধামা-চাপা দেয়ার উদ্দেশ্যেই মনগড়াভাবে ছবিকে জায়িয করার অপচেষ্টা করেছে। (ধারাবাহিক) প্রাণীর ছবি সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত রেযাখানীদের আপত্তিকর ও প্রতারণামূলক বক্তব্য সমূহের খণ্ডন মূলক জবাব- (ছ ও জ) অতঃপর রেযাখানীরা লিখেছে “(ছ) সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তোলা বৈধ যা যুগের চাহিদাও।”      (জ) প্রয়োজনে রেকর্ডের জন্য ফাইল বন্দি ছবিসমূহ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট জ্ঞান ও ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানার নিমিত্তে সরকারী-বেসরকারী যাদুঘর বা বিশেষ প্রতিষ্ঠানসমূহে পূর্বের নানা মনীষীগণের ছবি সংরক্ষণ বা ধারণ করে রাখা বিশেষ প্রয়োজনে মাকরূহ হবেনা।”   অর্থাৎ  রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্যের মূল বিষয়বস্তু হলো “বিশেষ প্রয়োজনে” ছবি তোলা ও ধারণ করা বৈধ।”  মূলতঃ রেযাখানীদের এ বক্তব্য দলীলবিহীন, মনগড়া ও স্ববিরোধী। কারণ তারা প্রথমেই বিনা শর্ত-শারায়েতে ছায়াহীন ছবি জায়িয প্রমাণ করতে চাইলো কিন্ত এখানে এসে “বিশেষ প্রয়োজনে” শর্ত আরোপ করলো, কেন? যদি তাদের মতে ছায়াহীন” ছবি জায়িযই হয় তবে তো প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ও বিশেষ প্রয়োজনে সব অবস্থাতেই ছবি তোলা বৈধ। “বিশেষ প্রয়োজনে” শর্ত আরোপ করার দ্বারা এতে কি এটাই প্রমাণিত হয় না যে, তারা যে বলেছে “ছায়াহীন ছবি বৈধ” তাদের একথা ভুল।      উপরন্তু বিশেষ প্রয়োজনের পাশাপাশি রেযাখানীরা আরো বলেছে যে, “ছবি তোলা বৈধ যা যুগের চাহিদাও।”  এ প্রেক্ষিতে বলতে হয়, তাদের এ বক্তব্য  কাট্টা কুফরীর  অন্তর্ভুক্ত।   কেননা, যদি যুগের চাহিদা অনুযায়ীই ফতওয়া দিতে হয়, তবে তো গান-বাজনা, সুদ-ঘুষ, জুয়া-মদ, বেপর্দা-বেহায়াপনা ইত্যাদিকেও জায়িয বা বৈধ বলে ফতওয়া দিতে হবে। কেননা এগুলোও তো যুগের চাহিদা। (নাউযুবিল্লাহ)    পক্ষান্তরে নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, পর্দা, হালাল কামাই, সুন্নতের আমল ইত্যাদিকে হারাম বলে ফতওয়া দিতে হবে। কেননা এটাও যুগের চাহিদা। (নাউযুবিল্লাহ্)  মূলতঃ ফতওয়া দিতে হবে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস অনুযায়ী, যুগের চাহিদা অনুযায়ী নয়। হাক্বীক্বত ছবি তোলা সর্বাবস্থায়ই হারাম। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি রাষ্ট্রীয় বা আর্ন্তজাতিক প্রেক্ষাপটের কারণে মা’জুর বা অপারগ হয় তবে সেক্ষেত্রে তার জন্য মা’জুর হিসেবে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ছবি তোলা ‘মুবাহ’ বলে গণ্য হবে। এ প্রসঙ্গে ইমামূল মুহাদ্দিসীন, আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিশ্বখ্যাত “মিরকাত শরীফ”-এর ৮ম খণ্ড ৩৩০ পৃষ্ঠায় লিখেন,

فان الضرورة تبيح المحظورات.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই জরুরত হারামকে মুবাহ করে দেয়।” আর শরীয়তে এক্ষেত্রে মা’জুর বলা হয় তাকে, যাকে ফরয, ওয়াজিব ও সুুন্নাতে মুয়াক্কাদা আদায় করার ক্ষেত্রে হারাম কাজে বাধ্য করা হয়। যেমন হজ্ব করা ফরজ, ইলম অর্জন করা ফরয, হালাল কামাই করা ফরজ।” সুতরাং হজ্ব করার লক্ষ্যে মক্কা শরীফ যেতে হলে ছবি তুলতেই হবে, ইল্ম অর্জনের লক্ষ্যে মাদ্রাসা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হলে ছবি তুলতেই হবে, হালাল কামাই করার লক্ষ্যে বিদেশ যেতে হলে ছবি তুলতেই হবে। এসকল ক্ষেত্রে সে মা’জুর। এক্ষেত্রে যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু ছবি তোলা তার জন্যে মুবাহ। অবশ্য এগুলোও তাকে হারাম জেনে ও মেনেই তুলতে হবে।    আরো উল্লেখ্য যে, রেযাখানীরা বলেছে,  “… ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট জ্ঞান ও ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানার নিমিত্তে সরকারী-বেসরকারী যাদুঘর বা বিশেষ প্রতিষ্ঠানসমূহে পূর্বের নানা মনীষীগণের ছবি সংরক্ষণ বা ধারণ করে রাখা বিশেষ প্রয়োজনে মাকরূহ হবেনা।” মূলতঃ এ কথাও যে স্পষ্ট শরীয়তের খিলাফ তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এ প্রসঙ্গে একটি হাদীছ শরীফই যথেষ্ট। যেমন বলা হয়েছে, “আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা’বা শরীফের তাওয়াফ সমাপ্ত করে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে কা’বা গৃহের ভিতর প্রবেশ করে সাইয়্যিদুনা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম ও হযরত ইসমাঈল আলাইহিস্ সালাম-এর ছবি (প্রতিকৃতি) অঙ্কন করা দেখে বললেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! এ কাজ যারা করেছে তাদেরকে ধ্বংস করুন।” সেখানে কাঠের তৈরী একটি কবুতরও সংরক্ষিত ছিলো। তিনি তৎক্ষনাৎ দু’জন নবী আলাইহিমুস্ সালাম-এর প্রতিকৃতি ও কবুতরের কাঠের মূর্তিটি অপসারণ করলেন।” (আর রাহীকুল মাখতুম/৪০৪ পৃষ্ঠা)

উল্লেখ্য, যেখানে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম ও হযরত ইসমাঈল আলাইহিস্ সালাম-এর মত নবী-রসূলগণের ছবি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধ্বংস করলেন; সেখানে অপর কোন্ মনীষী থাকতে পারে যে, রেযাখানীরা তার ছবি রাখা প্রয়োজন মনে করছে? মূলতঃ রেযাখানীদের এই বক্তব্য যদি ঠিক হয় তবে বলতে হয়, তাদের গুরু রেযাখাঁই বড় ভুল করেছে। অথবা সে তাদের কথিত মনীষীর মধ্যে পড়েনা। কারণ, যে নিজেই ছবি ধ্বংস করেছে বা তার নিজেরও কোন ছবি নেই।     উপরন্তু হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম ও হযরত ইসমাঈল আলাইহিস্ সালাম-এর ছবি রাখার জন্য যেখানে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বদ্ দোয়া করেছেন সেখানে এই ধরণের কাজকে কি করে রেযাখানীরা বিশেষ প্রয়োজন বলতে পারে?          মূলতঃ তাদের এ বক্তব্য স্পষ্টভাবে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতার শামীল যা প্রকাশ্য কুফরীর মধ্যে পড়ে এবং সুন্নী দাবীর অন্তরালে তাদের হাক্বীক্বত প্রকাশ করে।

অতএব, যাদুঘর বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফাইল বন্দি করে রাখা বা ধারণ করার উদ্দেশ্যে ছবি তোলা সম্পূর্ণই হারাম।    তবে হ্যাঁ, ধর্ম ব্যবসায়ীদের উঠানো ছবি দলীল হিসেবে অর্থাৎ কেউ যদি হক্ব দাবী করে অথচ সে ছবি তোলে যা হারাম আবার স্বীকারও করে ও বলে যে, সে ছবি তোলেনা। তখন তার এ দাবী যে মিথ্যা ও প্রতারণামূলক এবং সে যে না হক্ব তা প্রমাণ করার লক্ষ্যে তার দ্বারা উঠানো ছবি কাটিং করে ফাইল বন্দি হতে পারে তবে সেটাও প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে খোলা রাখা জায়িয নয়। যেমন, ‘কেউ তৈয়ব শাহ, তাহের শাহ এর ছবি দলীল হিসাবে কাটিং করে ফাইল বন্দি করে রাখলো’ এটা মাকরুহ্ বা নিষেধ নয়। অতএব, বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তোলা সম্পর্কিত রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই দলীলবিহীন অশুদ্ধ, মনগড়া ও স্ববিরোধী ও কূফরীর অন্তর্ভুক্ত বলে প্রমাণিত হলো।    স্মর্তব্য যে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১০০তম সংখ্যা থেকে  ১২১তম সংখ্যা পযর্ন্ত রেযাখানীদের প্রাণীর ছবি সম্পর্কিত কূফরী, প্রতারণামূলক, ইবারত কারচুপিতে ভরপুর, কলঙ্কিত রচনার খণ্ডনমূলক আলোচনা দ্বারা যে বিষয়গুলো প্রমাণিত হলো তার সংক্ষিপ্ত সারকথা হলো, প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা করানো হাতে তৈরী করুক বা ক্যামেরার সাহায্যে, কাগজে হোক বা কাপড়ে ছায়াহীন হোক বা ছায়াযুক্ত সর্বাবস্থায়ই হারাম ও কবীরা গুনাহ। এটাকে জায়িয মনে করা কূফুরী। রেযাখানীরা উক্ত সুষ্পষ্ট ও কাট্টা হারামকে সুকৌশলে প্রতারণা, ঠগবাজী ও ইবারত কারচুপির আশ্রয় নিয়ে হালাল করার অপচেষ্টা করার কারণে তাদের কূফরী হয়েছে। তাদের উচিৎ অতি সত্তর এ কুফরী আক্বীদা থেকে খালিছ তওবা করা। কারণ, কেউ কুফরী করলে সে মুরতাদ হয়ে যায়।

আর মুরতাদের হুকুম হলো, সে ঈমান হারা হয়, হজ্ব করে থাকলে বাতিল হয়, বিয়ে করে থাকলে স্ত্রী তালাক হয়, জীবনের সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়। ইসলামী খিলাফতে তিন দিনের মধ্যে তওবা না করলে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। সুতরাং যারা এ প্রকারের কুফরী আক্বীদা বা ফতওয়ায় বিশ্বাসী তাদেরকে খালিছ তওবা করতে হবে।

স্মর্তব্য, রেযাখানীরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাকে তবে তারা যেন আল বাইয়্যিনাত-এর প্রদত্ত বক্তব্য খণ্ডন করার মত দুঃসাহস দেখায় অথবা এ বিষয়ে প্রকাশ্য বাহাছে অবতীর্ণ হয়। নচেৎ প্রমাণিত হবে যে, তারা ধোকাবাজ, মিথ্যাবাদী ও গোমরাহ।   আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে হক্ব বুঝার ও হক্ব মানার তাওফিক দান করুন। (আমীন)

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ