সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ১৬৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ আমজাদ আলী, বাইতুল মোর্কারম মার্কেট

মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন, মিরপুর, ঢাকা

ডাঃ লুৎফর রহমান, মুন্সিগঞ্জ

সুওয়ালঃ ২০০৭ ঈসায়ী সনে দেশে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। যার প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দিয়েছিল খিলাফত মজলিস দলের একাংশের চেয়ারম্যান তথা কথিত শাইখুল হাদীছ  মাওলানা আজিজুল হক ছাহেব। শর্তারোপ করেছিল পাঁচ দফা দাবি পূরণের।

এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কথিত শাইখুল হাদীছ ছাহেবের উল্লিখিত পাঁচ দফা দাবি পূরনের শর্তে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়াটা কতটুকু কুরআন-সুন্নাহ তথা শরীয়ত সম্মত ছিল? দয়া করে সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ জেনে শুনে হক্বের বিরোধতিা করলে হক্বের সাথে নাহক্বকে মিশ্রিত করলে, নিজ স্বার্থ রক্ষায় নাহক্ব মত-পথ অনুসরণ করলে তার নাম বা কুনিয়াত পরিবর্তন করে যথপোযুক্ত নামে বা কুনিয়াতে সম্বোধন করা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।

সাড়া বিশ্বে সুন্নত যিন্দাকারী মাসিক আল বাইয়্যিনাত আল্লাহ পাক-এর রহমতে বহু পূর্বেই অনেকের ক্ষেত্রেই এরূপ সুন্নত আদায় করেছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো- সুওয়ালে উল্লেখিত তথাকথিত ‘শাইখুল হাদীছ’।

মাসিক আল বাইয়্যিনাতে তাকে সম্বোধন করা হয় ‘শাইখুল হদছ’ হিসেবে। আর কেন তাকে ‘শাইখুল হদছ’ বা হারাম নাজায়িয কাজের গুরু বলা হয় তার কিছু প্রমাণ আপনারা পেয়েছেন। আরো বহু প্রমাণ আমাদের নিকট মওজূদ আছে। কাজেই এমন একজন লোকের পক্ষে দুনিয়াবী স্বার্থ হাছিলের লক্ষে মহাজোটে কেন “কাফিরের জোটে” যোগ দেয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়। নিম্নে তার মহাজোটে যোগ দেয়ার বিষয়ে কিঞ্চিত আলোচনা করা হলো।

শাইখুল হদছ সম্পর্কে যারা ভাল জানেন তারা তার সদ্য ভোল পাল্টানোতে আশ্চর্য না হলেও সাধারণ মানুষ যুগপৎ হতচকিত ও ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। পঞ্চাশ বছরেরও অধিককাল হাদীছ শরীফ পড়িয়েছে- এমনটিই তার প্রচারণা। সে প্রেক্ষিতে হাদীছ শরীফের আদর্শ ও প্রজ্ঞা তার থেকে বিকশিত হবে তাই সবার আশা। কিন্তু সে আদর্শের মানদ-কে বস্তু স্বার্থপ্রনোদিত হয়ে সে বার বারই  খান খান করে ভেঙ্গেছে। তবে এক্ষেত্রে কতটুকু চশমখোর ও নির্লজ্জ নীতিহীন হতে পারে, মহাজোটে যোগ দিয়ে তারই জ্বলন্ত নজীর সে দেখালো। ভোজবাজির মত বিবৃতি পাল্টানো ও বেপরোয়া, দলবদলের ধারাবাহিকতায় এরশাদ এখন প্রচলিত রাজনীতির ভাষায় বিতর্র্কিত রাজনৈতিক হিসেবে পর্যবসিত। কিন্তু তারপরেও এরশাদ যা করছেন তা রাজনীতির বিতর্কিত পথে চলা। কিন্তু শাইখূল হদছ তো প্রচলিত রাজনীতির প্রক্রিয়ায় চলছে না। সে সুবিধা ভোগ করছে ধর্মের ছদ্মাবরণে, ধর্মের আশ্রয়ে ও ধর্মের ব্যানারে।

কাজেই শাইখুল হদছের মূল্যায়নে ধর্মের তথা ইসলামের মাপকাঠিটা অনিবার্যভাবে সম্পৃক্ত। শাইখুল হদছ ৫ দফা চুক্তির মাঝে শর্ত করেছে সনদ প্রাপ্ত হক্কানী আলিমগণ ফতওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করবেন।

কিন্তু শাইখুল হদছের কর্মকা-, সে নিজেই যে কোনো মতেই হক্কানী আলিম নয় বরং সাক্ষাত ধর্মব্যবসায়ী সে কথা উজারভাবে প্রকাশ ও প্রমান করেছে। এ বিষয়ে সাক্ষী সাবুদ দরকার নেই। তার অজস্র লেখা তার বিবৃতি ও সঙ্কলনই যথেষ্ট।

৩৬, বাংলাবাজার হাছানিয়া লাইব্রেরী থেকে ডিসেম্বর/১৯৯৯ সালে, শাইখুল হদছ আজিজুল হকের রচিত, “আল কোরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা” নামক একটি বই প্রকাশিত হয়। উক্ত বইয়ের ১৩৪ পৃষ্ঠায় সে লিখেছে,

“রং বেরংয়ের পোশাক, লিপিষ্টিক লাগানো, সভা সমিতি করা, রাজনৈতিক আসরে নামা, প্রকাশ্যে সভা-সমিতিতে বক্তৃতা দেয়া আর বেশ্যাবৃত্তি করা। শুধু পেশাদারী বেশ্যা না, অপেশাদার বেশ্যাবৃত্তি করা।”

শাইখুল হদছের এই লিখিত বিবৃতি থেকে প্রতিভাত হয় যে, সে বেশ্যার বাহুবন্ধনে আবদ্ধ ছিলো এবং আছে।

শুধু তাই নয় যার জন্য শাইখুল হদছ ‘টুপি পড়তে পারেনি’ ‘পাগড়ী পড়তে পারেনি’, ‘ওযুর পানি পায়নি’, তার ভাষায় যারা ছিল- চিহ্নিত ইসলাম বিদ্বেষী, ভারত ও র’এর এজেন্ট তারা আজ কোন তওবা ছাড়াই শাইখুল হদছের রাজনৈতিক গুরু ও পূজ্য হয়ে উঠলেন। গত ৫ বছরে শাইখুল হদছ জোট সরকার ও তার নেত্রীর যে ছানা-ছিফত বয়ান করেছে এবং শেখ হাছিনা ও তার দলকে শয়তান ও বদকারের সাথে তুলনা করেছে তার ফিরিস্তি অনেক। পত্রিকার কলেবরে তার প্রকাশ সম্ভব নয়। তবে রাধুনীর জন্য ভাত একটি টিপলেই যথেষ্ট। তেমনি শাইখুল হদছের দু’চারটি উক্তিই বিষয়টি পরিষ্কার করবে।

ইসলাম বিদ্বেষী আ’লীগ চিরতরে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে -শাইখুল হদস আজিজুল হক

কক্সবাজার থেকে স্টাফ রিপোর্টার: চারদলীয় ঐক্যজোটের অন্যতম শীর্ষনেতা ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান শাইখুল হদছ আজিজুল হক বলেছেন, ইসলাম বিদ্বেষের কারণে আওয়ামী লীগ চিরতরে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। বিগত ৯৬/২০০১ সাল পর্যন্ত এদেশের আলিম-ওলামা, মসজিদ মাদ্রাসাসহ ইসলামপ্রিয় জনতার ওপর শেখ হাছিনার আওয়ামী লীগ সরকারের অকথ্য নির্যাতনের কারণে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছে, এই দলটি এখনও দেশী বিদেশী ইসলাম বিরোধী শক্তির সাথে আঁতাত করে চারদলীয় জোট সরকার উৎখাত করার ষড়যন্ত্র করছে। ইনকিলাব- ২৪শে এপ্রিল/২০০৪

চারদলীয় জোট সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে শাইখুল হদছ বলে, “উদ্ভট কথা বলায় শেখ হাছিনার জুড়ি নাই। বর্তমান সরকারকে আওয়ামী লীগের রেখে যাওয়া ঝড়  জঞ্জাল সাফ করতে হচ্ছে। (দৈনিক সংগ্রাম ২০ শে অক্টোবর ০১)

“প্রধানমন্ত্রী খালেদা ধৈর্য ধারণ করে আওয়ামী লীগের জঞ্জাল সাফ করে দেশকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। নিশ্চয় এজন্য তিনি সোয়াবের ভাগিদার হবেন।” (২০শে অক্টেবর আজকের কাগজ/০৩)

“চারদলীয় জোট সরকার বিশেষ করে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেভাবে ধৈর্য ও সহিঞ্চুতার সঙ্গে অগ্রসর হচ্ছেন ইনশাআল্লাহ তার সাফল্য অনিবার্য। তার উপর আল্লাহ্র রহমত আছে, অবশ্যই থাকবে। (দৈনিক যুগান্তর ২০শে অক্টোবর-০৩)

রহমত কার উপর আছে সেটা আল্লাহ পাক ভাল জানেন। তবে শাইখুল হদছ যে রহমত থেকে দূরে সরে গেছে তা তার বক্তব্য কর্মকা- থেকেই প্রতিভাত হয়। এবং এ কারণেই সে আর হক্কানী আলিম নেই। তাও প্রমাণিত হয়।

উল্লেখ্য, একই জনসভায় শাইখুল হদছ চারদলীয় জোট থেকেই নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেয়।

“ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান শাইখুল হাদীছ আল্লামা আজিজুল হক তার বক্তৃতায় চারদলীয় ঐক্যজোটের সঙ্গে এক থেকে ভবিষ্যতে নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি দেন। (দৈনিক সংবাদ ২০ শে অক্টোবর-০৩)

কিন্তু শাইখুল হদছ তার প্রতিশ্রুতি রাখেনি। আর শাইখুল হদছ হিসেবে নিশ্চয়ই তার ভালো জানা আছে যে, মুনাফিক তথা ধর্মব্যবসায়ীর ৪টি বৈশিষ্ট্যের প্রথম ২টি হল- ১. মিথ্যা বলা ২. ওয়াদার খিলাফ করা।

উল্লেখ্য হাসিনা সরকারের সময় তারা টুপি-পাগড়ী পড়তে পারেনি এটা যেমন মুনাফিকী তেমনি চারদলীয় জোটের সাথে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ এটাও তেমন মুনাফিকী। আর মুনাফেকীর শাস্তি হল জাহান্নামের অতল গহবরে সে কথাও শায়খুল হদছের অজানা নেই।

এদিকে শাইখুল হদছ সারা দেশের মুসলমানকে কাফের বা বোকা ঠাওরানোর অবকাশ পেয়েছেন। তার চুক্তিনামার বিষয় হল- “হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী” -এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করা- মূলতঃ এটি সব মুসলমান এমনিতেই মানেন। তাতে আবার আইন প্রণয়নের পেছনে কোন্ দুরভিসন্ধি?

তবে কি ‘শাইখুল হদছ’ এই প্রমাণ করতে চায় যে দেশের সবাই অমুসলমান আছে আর তাদেরকে মুসলমান বানানোর জন্যই সে জলীল সাহেবের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করলো। (নাঊযুবিল্লাহ)

সে আরো বলেছে, সনদপ্রাপ্ত হক্কানী আলেমগণ ফতওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করেন। কিন্তু সনদপ্রাপ্ত হলেও আলিম যদি হক্কানী না হয়, তাহলে কি হবে? যেমন শাইখুল  হদছ সনদ প্রাপ্ত হলেও তার বক্তব্য অনুযায়ীই সে হক্কানী নয়। আর সনদপ্রাপ্ত ও হক্কানী এ দু’টো বিষয় মূল্যায়ণ করবে কে? সে ও তার পরিষদ এ মূল্যায়নের ইজারা নিয়ে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির জোয়ার এবং ফেরকা ও ফিতনার ছয়লাব ঘটানোর মাওকাই যে কুক্ষিগত করতে চাচ্ছে তা বলাইবাহুল্য।

সে আরো বলেছে, “নবী-রসূল ছাহাবায়ে কিরামের অপরাধ ও কুৎসা রটনা করা দ-নীয় অপরাধ।”

শাইখূল হদছ উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা নিজেই দ-ণীয় অপরাধ করে বসেছে। কারণ তার বক্তব্য দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, “নবী-রসূল ও ছাহাবায়ে কিরামগণ অপরাধ করেছেন” নাউযুবিল্লাহ। তাছাড়া

নবী-রসূল ও ছাহাবায়ে কিরামের কোন সনদ ছিলনা। তবে কি হদছের মতে তারা ফতওয়া দেয়ার ক্ষেত্রে মূর্খ ও আযোগ্য ছিলেন? (নাঊযুবিল্লাহ)

তারা কি ফতওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করতেন না? তাহলে আজকে ফতওয়ার সাথে কথিত সনদের সংযোগ করে শাইখুল হদছ মূলতঃ নিজেই নবী-রসূল ও ছাহাবায়ে কিরামের মানহানির চেষ্টা করলো। এখন সে নিজেই প্রথম নিজের শাস্তি দাবী করবে কি?

মজার ব্যাপার হল, সারাদেশে ফতওয়ার নামে যেসব অরাজকতা ঘটেছে সবই তার কওমী সনদওয়ালারাই করেছে। এখন এ ক্ষেত্রে সে কি জবাব দিবে?

পরিশেষে বলতে হয় যে, সে দেশবাসীর সাথে ইসলামের নামে চরম ধোকা ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে।

সে আব্দুল জলীলের সাথে চুক্তিনামায় বলেছে যে, পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ ও শরীয়তবিরোধী কোন আইন প্রণয়ন হবেনা। কিন্তু বাস্তব কথা হলো-বর্তমানে দেশে কি কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী শত শত আইন নেই? তবে এগুলো বন্ধের ব্যাপারে তাদের কোন চুক্তি হলো না কেন?

আর ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রেক্ষিতে বর্তমান সংবিধানের আওতায় যে সম্পূর্ণভাবে কুরআন-সুন্নাহর আইনের আদলে সব আইন প্রণয়ন করা বা বিরোধী আইন প্রণয়ন না করা সম্ভব নয় একথা সাধারণেও বুঝে। কিন্তু তারপরেও বামপন্থী, এলডিপি, আওয়ামী লীগ না হয় এটাকে নির্বাচনী কৌশল বলে পার পেতে চাইছেন।

কিন্তু ইসলামকে ব্যবহার করে যারা ভ-ামী, বোমাবাজী ও ব্যবসা করছে তারা কিভাবে তা করতে পারছে?

মুলতঃ তারা যে কোন্ পর্যায়ের লোক সেটা তারা নিজেরাও অবগত। কারণ তথাকথিত শাইখুল হাদীছ হিসেবে তারা তো বহুবার আওড়িয়েছে যে, “ধর্মব্যবসায়ীরা সৃষ্টির নিকৃষ্ট। ধর্ম ব্যবসায়ী মুনাফিকদের অবস্থান হবে জাহান্নামের অতল  গহবরে।”

সুতরাং এ ধরনের নিকৃষ্ট মুনাফিকদের জন্য অসম্ভব কিছুই নয়। ধর্মের নামে ব্যবসা, গিরগিটির ন্যায় বার বার রং পাল্টানো তো তাদের কাছে নস্যি মাত্র।

মুহম্মদ আসিফ মহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।

মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন।

মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা।

 সুওয়াল:  ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খ-ন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো-

… ৪. ইসলামী স্বর্ণযুগে এবং তৎপরবর্তীতে ফুক্বাহায়ে কিরাম ও হাদীছ বিশারদগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। তাই তা হযরত মুফতিয়ানে কিরামের ঐক্যমতে বিদয়াত। (নাঊযুবিল্লাহি মিনাল কাযিবীন)

এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাট হাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি।

(ধারাবাহিক)

 জাওয়াব: হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য শুধু ডাহা মিথ্যাই নয় বরং সম্পূর্ণরূপেই মনগড়া, দলীলবিহীন ও বিভ্রান্তিকর। শুধু তাই নয়, তার পাশাপাশি স্বয়ং আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম, ফক্বীহ ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের প্রতি মিথ্যারোপ করার কারণে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

স্মর্তব্য যে, হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

(১) স্বর্ণযুগে কেউ ফরজ নামাযের পরে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হলো, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি।

(২) তৎপরবর্তিতে অর্থাৎ স্বর্ণযুগের পর থেকে অদ্যবধি ফুক্বাহায়ে কিরাম ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের কেউ তথা একজনও ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করেননি।

(৩) সকল মুফতিয়ানে কিরাম ঐক্যমত হয়ে ফতওয়া দিয়েছেন যে, ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদয়াত বা নাজায়িয।  (নাউযুবিল্লাহ)

উল্লেখ্য, হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবরা তাদের উল্লিখিত তিনটি বক্তব্যের কোন একটিও নির্ভরযোগ্য কিতাবের ইবারত বা দলীল দ্বারা প্রমাণ করতে পারেনি এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করলেও তা প্রমাণ করতে পারবেনা। সুতরাং এমনিতেই তাদের উল্লিখিত বক্তব্যগুলো মিথ্যা, বানোয়াট ও পরিত্যাজ্য বলে সাব্যস্ত হয়। এরপরও আমরা তাদের উল্লিখিত প্রতিটি বক্তব্য দলীলভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে মিথ্যা, বানোয়াট ও কুফরীমূলক বলে প্রমাণ করবো। ইনশাআল্লাহ। যেমন হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের প্রথম বক্তব্য হলো-

(১) স্বর্ণযুগে কেউ ফরজ নামাযের পরে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। অর্থাৎ  তাদের বক্তব্য হলো হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। (নাউযুবিল্লাহ)

হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য যে ভুল, মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া ও দলীলবিহীন তা আপনারা গত কয়েক সংখ্যার আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবেই অবগত হয়েছেন। অথাৎ অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন। যদি তাই হয়ে থাকে তবে তাদের উক্ত বক্তব্য রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যারোপের শামিল নয় কি? আর উনাদের প্রতি মিথ্যারোপ করা কুফরী নয় কি? হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

من كذب على متعمدا فليتبوا مقعده من النار.

অর্থঃ- যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে সে যেন জমিনে থাকতেই তার  স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়। (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের দ্বিতীয় বক্তব্য হলো-

(২) তৎপরবর্তিতে অর্থাৎ স্বর্ণযুগের পর থেকে অদ্যবধি ফুক্বাহায়ে কিরাম ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের কেউ তথা একজনও ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করেননি।

এর জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, “স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরয নামাযের পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে নিয়ে হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন” এটা হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হওয়ার পর অন্য কোন দলীলের কোনই প্রয়োজন নেই। বরং এ ক্ষেত্রে অন্য কোন দলীল তালাশ করা কুফরী বৈ কিছুই নয়।

দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, “ফুক্বাহায়ে কিরামগণের ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের কেউ তথা একজনও ফরয নামাযের পর মুনাজাত করেননি।” হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের এ বক্তব্য চরম মিথ্যা, বানোয়াট ও ফুক্বাহায়ে কিরাম ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের শানে সুস্পষ্ট মিথ্যারোপের শামিল। কারণ তারা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে একটি দুর্বল থেকে দূর্বলতম দলীলও পেশ করতে পারেনি এবং তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ক্বিয়ামত পর্যন্ত কোশেশ করলেও উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোন দলীল তারা পেশ করতে পারবে না।

পক্ষান্তরে অনুসরনীয় সকল মুহাদ্দিছীনে কিরাম ও ফুক্বাহায়ে কিরাম যে ফরয নামাযের পর মুনাজাত করাকে সমর্থন করেছেন এবং নিজেরাও করেছেন তার বহু প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে। যা অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে ও অনেক সংখ্যাতেই পত্রস্থ হয়েছে। এখানেও কতিপয় প্রমাণ পেশ করা হলো-

যেমন এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হাফিয আবূ বকর ইবনে আবী শায়বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত হাদীছগ্রন্থ “মুছান্নিফ ইবনে আবী শায়বায়” লিখেন,

عن الاسود العامرى عن ابيه قال. صليت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم الفجر فما سلم انصرف ورفع يديه ودعا.

অর্থঃ হযরত আসওয়াদ আমিরী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে ফজর নামায আদায় করলাম, যখন তিনি সালাম ফিরালেন ঘুরে বসলেন এবং উভয় হাত মুবারক উঠায়ে মুনাজাত করলেন।”..

“ইলাউস সুনান” কিতাবের ৩য় জিঃ ১৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ما اخرجه الحافظ ابو بكربن ابى شيبة فى مصنفه عن الاسود العامرى عن ابيه قال. صليت مع رسول الله صلى الله عيه وسلم الفجر فلما سلم انصرف ورفع يديه ودعا.

অর্থঃ- “হাফিয আবু বকর ইবনে আবী শায়বা তাঁর “মুছান্নাফে” যা বর্ননা করেছেন। হযরত আসওয়াদ আমিরী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে ফজর নামায আদায় করলাম, যখন তিনি সালাম ফিরালেন ঘুরে বসলেন এবং উভয় হাত মুবারক উঠায়ে মুনাজাত করলেন।”..

হাটহাজারী মৌলভী ছাহেব ও দেওবন্দীদের গুরু বা মুরুব্বী আশরাফ আলী থানবী ছাহেব-এর “ইমদাদুল ফতওয়া” কিতাবের ১ জিঃ ৭৯৭, ৭৯৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ما اخرجه الحافظ ابو بكربن ابى شيبة فى مصنفه عن ااسود العامرى عن ابيه قال صليت مع رسول اله صلى اله عليه وسلم الفجر فلما سلم انصرف ورفع يديه ودعا.

অর্থঃ- হাফিয আবু বকর ইবনে আবী শায়বা তাঁর “মুছানাœফে” যা বর্ননা করেছেন। হযরত আসওয়াদ আমিরী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে ফজর নামায আদায় করলাম, যখন তিনি সালাম ফিরালেন ঘুরে বসলেন এবং উভয় হাত মুবারক উঠায়ে মুনাজাত করলেন।”..

জা’ফর আহমদ ওছমানী-এর “ইমদাদুল আহকাম” কিতাবের ১ জিঃ ২৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………

অর্থঃ “সুওয়াল- যায়েদ বলে যে, ফরজ নামাজসমূহের পর হাত উঠায়ে মুনাজাত করা, হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত নেই, তাই এটা বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্। যায়েদের একথাটি কিরূপ? মুনাজাতের প্রমাণ থাকলে হাদীস শরীফ পেশ করবেন।

জাওয়াব- হ্যাঁ ‘সিহাহ্ সিত্তার’ বর্ণনায় এটা স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। কিন্তু “মুছান্নিফ ইবনে আবী শায়বায়” একটি বর্ণনা রয়েছে, যার মধ্যে ফরজ নামাজের পর হাত উঠায়ে মুনাজাত করার কথা উল্লেখ রয়েছে। এ হাদীস শরীফ “ইলাউস সুনান” কিতাবেও উল্লেখ রয়েছে।”

عن ابى موسى قال قال رسول اله صلى اله عليه وسلم من كانت ه اى الله حاجة فيدع بها دبر صلوة مفروضة.

অর্থঃ- “হযরত আবূ মূসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  বর্ণনা করেন- রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তির আল্লাহ পাক-এর নিকট কোন বিষয় চাওয়ার প্রয়োজন হয়, সে যেন ফরয নামাযের পর তার জন্য আল্লাহ্ পাক-এর নিকট দোয়া করে।” (তরজমাতুল হুজ্জাজ লিইবনে আসাকির)

حدثنا محمد بن يحيى الاسلمى قال رأيت عبد الله بن زبير رضى الله عنه وراى رجلا رافعا يديه يدعو قبل ان يفرغ من صلوته فلما فرغ منها قال له ان رسول الله صلى الله عيه وسلم لم يكن يرفع يديه حتى يغرغ من صلوته رجاله ثقات.

অর্থঃ- “মুহম্মদ ইবনে ইয়াহ্ইয়া আসলামী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  কোন এক ব্যক্তিকে নামায শেষ না করেই হাত উঠিয়ে মুনাজাত করতে দেখলেন, সে ব্যক্তি নামায শেষ করার পর তাকে বললেন, নিশ্চয় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায শেষ করে উভয় হাত মুবারক উঠিয়ে মুনাজাত করতেন।” (ফাদ্দুল ওয়া লি জালালুদ্দীন সুয়ূতী)  (চলবে)

মুহম্মদ মনজুরুল হক্ব  গুলবাগ, ঢাকা।

সুওয়ালঃ  “মাসিক মদীনা মার্চ/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, “আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফেকাহ্ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাসবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।”  (ফতোয়া দারুল উলুম, ১ম খ-, পৃ. ১৮০)

এখন আমার সুওয়াল হলো- “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা  তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ফিক্বাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ? দয়া করে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। শুধু তাই নয় বরং তার পেশকৃত দলীল “ফতোয়া দারুল উলুম”-এর ফতওয়াও শুদ্ধ নয়। বরং ভুল, অশুদ্ধ ও গোমরাহীমূলক হয়েছে। যা মানুষকে গোমরাহ করার  জন্য যথেষ্ট। কারণ আযান ও ইকামতের মাঝে তাছবীব করাকে ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা উত্তম বলা হয়েছে।  অর্থাৎ আযানের পর  পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা  তাছবীব করার জন্য  الصلاة الصلاة   (আছ্ ছলাহ! আছ্ ছলাহ!)    নামায! নামায! অথবা  قامت قامت  (ক্বামাত! ক্বামাত!) নামায আসন্ন, নামায আসন্ন, অথবা  التنحنح  (আত্তানাহ্নুহ্) গলা খাকড়ানো, ইত্যাদি শব্দ দিয়ে আহবান করা বা তাছবীব করা সুন্নত, উত্তম ওমুস্তাহ্সান। যার আরো কিছু প্রমাণ নিম্নে পেশ করা হলো-

(ধারাবাহিক)

যেমন, “আইনুল হিদায়া” কিতাবের নিছফে আউয়াল খ-ের ৩৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………

অর্থঃ-“তাছবীবের অর্থ হলো পুনরায়ঞ্জমানুষদেরকে  নামাযের সংবাদ  জানিয়ে দেয়া। আর এই তাছবীব  লোকদের মাঝে  পরিচিত শব্দ

অনুযায়ী করতে হবে। অর্থাৎ

حى على اصلوة وحى عى الفلاح.

 (হাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্ ) দিয়েই যে করতে হবে  তা নির্ধারিত নয়। বরং الصلوة الصلوة  অথবা قامت الصلوة অথবা অনুরূপ কোন পরিচিত শব্দ দিয়ে আহবান করে তাহলে এটাই যথেষ্ট হবে।

“হিদায়া মায়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ومعناه اى التثويب العود الى الاعلام وهو على حسب ما تعارفوه وهذا تثويب احدثه علماء الكوفة بعد عهد الصحابه رضى الله تعالى عنهم لتغير احوال الناس.

অর্থঃ- “তাছবীবের অর্থ হলো আযানের পর পুনরায়   মানুষদেরকে  নামাযের  কথা জানিয়ে দেয়া। আর এই তাছবীব  প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দ দিয়েই করতে হবে। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পর মানুষের অবস্থার পরিবর্তনের কারণেই কুফা বাসী উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এই তাছবীবের প্রচলন করেছেন।”

“হিদায়া মায়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৮৯ পৃষ্ঠায়  আরো উল্লেখ আছে,

والتثويب فى الفجر حى على الصلاة حى على الفلاح مرتين بين الاذان والاقامة حس لانه وقت نوم وغفلة.

অর্থঃ- “ফজরের নামাযে আযান ও  ইক্বামতের   মাঝে দু’বার

 حى على الصلاة. حى على الفلاح.

 (হাইয়া আলাছ্ ছলাত এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্)  বলে সকল মানুষদেরকে  নামাযের জন্য  তাছবীব করা উত্তম।” কেননা ফজরের ওয়াক্তটা হলো ঘুম ও গাফলতির সময়।”

 “আইনুল হিদায়া” কিতাবের নিছফে আউয়াল খ-ের ৩৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………

অর্থঃ- “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পর  কুফার উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ মানুষের অবস্থা পরিবর্তন  এবং তাদের মধ্যে গাফলতী ও সুস্তী-কাহেলী পয়দা হওয়ার কারণেই এই তাছবীবের প্রচলন করেন। অর্থাৎ প্রথম যামানায় ঘুমের গাফলতী থেকে সতর্ক করার জন্য তাছবীব করা হতো। আর এই যামানায় মানুষের মধ্যে জাগ্রত অবস্থাতেই গাফলতী ও সুস্তী-কাহেলী পয়দা হয়েছে।” (অতএব বর্তমান যামানায় তাছবীবের গুরুত্ব আরো বেশী।

“হিদায়া মায়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৮৯ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

وقال أبو يوسف رحمه الله تعالى لا أرى باسا أن يقول المؤذن للامير فى الصلوات كلها السلام عليك أيها الامير ورحمة الله وبركاته حى عى الصلاة حى على الفلاح اصلاة يرحمك الله واستبعده محمد رحمه الله نعالى لان الناس سواسية فى أمر الجماعة.

অর্থঃ- “ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহিঞ্জবলেন, মুয়াজ্জিন সাহেব যদি আযানের পর  সকল  নামাযেই আমীর-উমারাদেরকে

السلام عليك أيها الامير حى على الصلاة وحى على الفلاح.

 (আস্সালামু আলাইকা আইয়্যুহাল আমীর, হাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্) الصلاة  (আছ্ ছলাহ) يرحمك الله (ইয়ারহামুকাল্লাহু) বলে তাছবীব করে, তাহলে আমি এতে কোন অসুবিধা মনে করি না। তবে ইমাম মুহম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর  উক্ত মতকে অসম্ভব মনে করে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ জামায়াতের আদেশের ব্যাপারে সকল মানুষ সমান। (কাজেই তাছবীব করার ব্যাপারে শুধুমাত্র আমীর-উমারা, মুফতী, কাজী ছাহেবদেরকে খাছ করা যায় না। বরং আমভাবে সকল মানুষকে তাছবীব করা মুস্তাহ্সান।” আর এরই উপর ফতওয়া)

“হিদায়া মায়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৮৯ পৃষ্ঠার ১৩নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

واحدث المتأخرون التثويب بين الاذان والاقامة على ما تعارفوه فى جميع اصلوات.

অর্থঃ- “উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ  আযান ও  ইক্বামতের   মাঝে   প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দ দিয়ে সকল নামাযেই এই তাছবীবের প্রচলন করেছেন। কারণ উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ বলেছেন, সকল নামাযেই তাছবীব করা মুস্তাহ্সান বা উত্তম।”  “আইনুল হিদায়া” কিতাবের নিছফে আউয়াল খ-ের ৩৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………

অর্থঃ- “উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ  সকল নামাযেই এই তাছবীব” করাকে  মুস্তাহ্সান  বলেছেন।” (চলবে)

মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান

টাইগার পাস রোড, চট্টগ্রাম।

সুওয়ালঃ  চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব” …।

এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?

জাওয়াবঃ   আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং স্ববিরোধী, ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে  এবং ছহীহ্ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিকাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহনযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে।

নিম্নে পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খ-ন সহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে-

(ধারাবাহিক)

রেযাখানী মুখপত্রে প্রদত্ত দলীল

সমুহের খণ্ডনমূলক আলোচনা

উল্লেখ্য, রেযাখানীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। কারণ তাদের বক্তব্যের সাথে কিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই। নিম্নে রেযাখানীদের হুবহু বক্তব্য তুলে ধরে তার সঠিক জবাব উল্লেখ করা হলোঃ

যেমন, রেযাখানীরা বলেছে, “আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব।”

এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্য যে, ডাহা মিথ্যা এবং দলীল বিহীন তা আমরা আমাদের মাসিক আল বাইর্য়্যিনাতে বিগত সংখ্যায় প্রমাণ করেছি যে, তাদের বক্তব্যের সাথে কিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই।

কারণ তারা  তাদের বক্তব্যের  স্বপক্ষে দলীল হিসাবে ‘আল ফিক্বহু আ’লাল মাযাহিবিল আরবায়া’ কিতাবের বরাত দিয়েছে,

অথচ আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব। এধরনের কোন বক্তব্য, কোন বর্ণনা, কোন ইবারত তাদের উল্লিখিত “আল ফিক্বহু আ’লাল মাযাহিবিল আরবায়া” কিতাবের ইবারতে উল্লেখ নেই।

সুতরাং প্রমাণিত হলো রেযাখানীদের  বক্তব্যের সাথেঞ্জকিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই। অতএব রেযাখানীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কিতাবের ইবারত  ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। ইহা  তাদের  প্রথম ধোকা ।

দ্বিতীয়তঃ জামায়াত যেখানে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্। সেখানে জামায়াতে শরীক হওয়ার জন্য  গমন করা ওয়াজিব হয় কি করে। কারণ নির্ভরযোগ্য সকল ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবে এ কথাই উল্লেখ আছে যে, “জামায়াত হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা”। অর্থাৎ জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

  বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাবগুলোতে মূল ফতওয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা হিসেবে উল্লেখ আছে। যেমন, বিশ্ব বিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব-

  “ফতওয়ায়ে নাওয়াযিল” কিতাবের ৪৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اداء الصلوة بالجماعة سنة مؤكدة.

অর্থঃ- “জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”

          “আল মুখ্তাছারুল কুদুরী”  কিতাবের ২৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اجماعة سنة مؤكدة.

অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”

          “জাওয়াহিরুল ইকলীল শরহে মুখতাছারিল ইমাম খলীল” কিতাবের ১ম খন্ডের ৭৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

الجماعة اى الصلاة معها بفرض غير جمعة سنة مؤكدة.

অর্থঃ- “জুমুয়া ব্যতীত সকল ফরয নামায জামায়াতে আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”

“শরহুল কুদূরী আললুবাব লিল মায়দানী” কিতাবের ১ম খন্ডের ৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

الجماعة للرجال سنة مؤكدة.

অর্থঃ- “পুরুষের জন্য জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”

          “মিনহাতুল খালিক্ব” কিতাবে উল্লেখ আছে,

الجماعة سنة مؤكدة.

অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।” “খুলাছাতুল ফতওয়া, মা’আ মাজমুআতুল ফতওয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اجماعة سنة مؤكدة.

অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”

          “তানবীরুল আবছার” কিতাবে উল্লেখ আছে,

الحماعة سنة مؤكدة للرجال.

অর্থঃ- “পুরুষের জন্য জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”

          “রওজাতুন্ নারীয়্যা শরহে  দুরারিল বাহিয়্যা” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

صلاة الجماعة هى من اكد السنن.

অর্থঃ- “জামায়াতে নামায আদায় করা এটা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”

“মুখতাছারুল ইমাম খলিল” কিতাবে উল্লেখ আছে,

الجماعة بفرض غير جمعة سنة.

অর্থঃ- “জুমুয়া ব্যতীত ফরয নামায জামায়াতে আদায় করা সুন্নত।”

          “হিদায়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ১২১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

الجماعة سنة مؤكدة.

অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”

          “তাতারখানিয়া”  কিতাবের ১ম খন্ডের ৬২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

  الجماعة سنة مؤكدة.

অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”

 “ফতওয়ায়ে আলমগীরী”  কিতাবের ১ম খন্ডের ৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

الجماعة سنة مؤكدة كذا فى المتون والخلاصة والمحيط ومحيط السرخسى.

অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা, অনুরূপ মাতুন, খোলাছা, মুহীত্ব এবং মুহীত্বে সারাখসী-এর মধ্যে উল্লেখ আছে যে, জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”

সুতরাং জামায়াত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্ হলে, আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব হতে পারে না।

অতএব রেযাখানীরা যে বলেছে, আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব। ইহা তাদের দলীল বিহীন দ্বিতীয় ধোকা।

খন্দকার সেলিম আহমদ

পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল

সুওয়াল:  হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।

তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

৬. পীর, ওস্তাদ, পিতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী প্রমুখ সম্মানিত ব্যক্তিগণের সম্মানে দাঁড়ানো জায়িয। কারণ, তারা সামনে উপস্থিত। আর মীলাদে দাঁড়ানো জায়িয নেই। কারণ, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুপস্থিত।  (নাউযুবিল্লাহ)

এখন আমার সুওয়াল হলো, মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম  বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীল সম্মত?

জাওয়াব:  মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য ভুল, অশুদ্ধ, দলীলবিহীন ও স্ববিরোধী। প্রথমতঃ তারা বলেছে, “পীর, ওস্তাদ, পিতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী প্রমুখ সম্মানিত ব্যক্তিগণের সম্মানে দাঁড়ানো জায়িয।”

এ বক্তব্য দ্বারা স্বীকার করতে বাধ্য হলো যে,  তা’যীম বা সম্মানার্থে ক্বিয়াম  জায়িয। অথচ এর পূর্বে তারা বরাবরই বলে বা লিখে এসেছে যে, ক্বিয়াম বলতেই বিদয়াত বা নাজায়িয।

তারা আরো প্রমাণ করলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণের হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে ক্বিয়াম  করা বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ গুলো সঠিকই রয়েছে।

দ্বিতীয়তঃ তারা বলেছে, “রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুপস্থিত। তাই ক্বিয়াম  করা যাবে না।” তাদের এ বক্তব্যও অজ্ঞতাসূচক ও দলীলবিহীন। তারা নির্ভরযোগ্য কোন কিতাব থেকে এর প্রমাণ পেশ করতে পারে নাই এবং পারবেও না ইন্শাআল্লাহ।

মুলতঃ মীলাদ শরীফের যে ক্বিয়াম তার সাথে উপস্থিত থাকা বা না থাকার কোন শর্ত নেই। মীলাদ শরীফের যে ক্বিয়াম  করা হয় তা মূলত আদব, শরাফত ও মুহব্বতের কারণেই করা হয়। কেননা সালাম পেশ করার সময় দাঁড়িয়ে পেশ করাই হচ্ছে আদব, শরাফত ও মুহব্বতের আলামত। হাটহাজারীর মৌলভী সাহেবরা ক্বিয়াম সম্পর্কে নিহায়েত অজ্ঞ হওয়ার কারনেই ক্বিয়াম সম্পর্কে এরূপ বক্তব্য পেশ করেছে। তাই নিম্নে ক্বিয়ামের প্রকারভেদ সহ ক্বিয়াম সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হলো।

ক্বিয়ামের প্রকারভেদ ও আহকাম

ক্বিয়াম القيام শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- …………………..  অর্থাৎ ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো। (কামূস আল মুহীত, তাজুল উরুস, লিসানুল আরব, মিছবাহুল লুগাত, আল মুনজিদ)

আর ক্বিয়াম শব্দের ইস্তেলাহী বা পরিভাষিক অর্থ হচ্ছে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি “সালাম” পাঠকালে তা’যীমার্থে বা মুহব্বতে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো। এছাড়াও মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে প্রায়ই ক্বিয়াম করতে হয়। তাই ইসলামী শরীয়ত ক্বিয়ামকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছে। যেমন (১) ফরয ক্বিয়াম (২) সুন্নত ক্বিয়াম (৩) মুস্তাহাব ক্বিয়াম (৪) হারাম ক্বিয়াম (৫) মাকরূহ ক্বিয়াম।

(ধারাবাহিক)

৫. মাকরূহ ক্বিয়াম

যমযমের পানি, ওজুর অবশিষ্ট পানি এবং পীর ছাহেব ক্বিবলা পানি পান করার পর অবশিষ্ট পানি বা তাবারুক ব্যতীত সকল খাদ্য বা পানি বিনা ওজরে দাঁড়িয়ে পান করা মাকরূহ। অনুরূপ দুনিয়াবী স্বার্থ হাছিলের উদ্দেশ্যে দুনিয়াদার বা ফাসিক-ফুজ্জারের সম্মানে ক্বিয়াম করা ও কোন বিধর্মীকে তার সম্পদের লোভে দাঁড়িয়ে সম্মান করা মাকরূহ।

যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে

عن انس رضى الله تعلى عنه عن النبى صلى اله عليه وسلم انه نهى ان يشرب الرجل قائما قال قتادة رضى الله تعالى عنه فقلنا فالاكل فقال ذاك اشر او اخبث.

অর্থঃ- “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,  আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। হযরত ক্বাতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমরা জিজ্ঞাসা করলাম দাঁড়িয়ে খাওয়া কিরূপ? তিনি বলেন দাঁড়িয়ে খাওয়া আরো অধিক নিন্দনীয় অর্থাৎ আরো অধিক মাকরূহ্।” (মুসলিম শরীফ, তিরিমিযী শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল)

ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব ‘ফতওয়ায়ে আলমগীরী”  কিতাবের ৫ম খ-ের ৩৪৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وان قام تعظيما له من غير ان ينوى شيئا مما ذكرنا او قام طمعا لغناء كره ذاك.

অর্থঃ উপরে যা উল্লেখ করেছি অর্থাৎ তা’যীম করলে ইসলাম গ্রহণ করবে এরূপ উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে বা সম্পদের লোভে বিধর্মীদের দাঁড়িয়ে তা’যীম করা মাকরূহ।”

মূলকথা হলো- “ক্বিয়াম” সম্পর্কিত উপরোক্ত বিস্তারিত আলোচনার দ্বারা যে বিষয়গুলো সাব্যস্ত হয়েছে, তন্মধ্যে অন্যতম হলো-সাধারণ মু’মিনদের কবর, আল্লাহ্ পাক-এর ওলীগণের মাযার শরীফ এবং আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র রওযা শরীফ যিয়ারত করার সময়  বা সালাম পেশ করার সময় ক্বিয়াম করা বা দাঁড়িয়ে সালাম দেয়াই হচ্ছে খাছ সুন্নত। অনুরূপ  শ্রোদ্ধেয় ও সম্মানিত ব্যক্তিগণের আলোচনা বা তাঁদের বিলাদত বা আগমনের সুসংবাদ শ্রবন করতঃ তা’যীম বা মুহব্বতে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়িয়ে যাওয়াও মুস্তাহাব-সুন্নত।

 তাছাড়া মাওলানা রশীদ আহ্মদ গাংগুহী তদীয় “ফতওয়ায়ে রশীদিয়া” কিতাবের ৪৫৯ পৃষ্ঠায় বলেছেন,

উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………

অর্থঃ- “দ্বীনদার লোকের তা’যীমের জন্য দন্ডায়মান হওয়া জায়িয, এরূপ লোকের পদ চুম্বন করাও জায়িয। এ কথা হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।”

সুতরাং মীলাদ শরীফে যে ক্বিয়াম করা হয় তা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফের বা আগমনের সুসংবাদ শ্রবন করত এবং তাঁর প্রতি সালাম পেশ করার উদ্দেশ্যে তা’যীমার্থে করা হয়। কাজেই মীলাদ শরীফের ক্বিয়াম খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।

কাজেই, ক্বিয়াম সম্পর্কিত  হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই মিথ্যা, মনগড়া, দলীলবিহীন, কুফরী ও প্রতারণামূলক। (চলবে)

মুসাম্মত সানজিদা আক্তার

সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত

মুহম্মদপুর, ঢাকা।

সুওয়াল:     অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়-

জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না।  …….. তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো।  উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই।

উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-

….. “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” ….

কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব:     প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।

তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?”

আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলো উল্লেখ করার সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো।

প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ

বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ২৪

(৬ষ্ঠ অংশ)

“ইশবাউল কালাম” নামক কিতাবের ৫৪নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

قد اجمعت الامة المحمدية من الاهل السنة واجماعة على استحسان القبام المذكور وقال عليه السلام لا تجتمع امتى على الصلالة.

অর্থঃ- “উম্মতে মুহাম্মদীর আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সকল আলেমগণ মীলাদ শরীফের ক্বিয়াম মুস্তাহ্সান হওয়ার ব্যাপারে ইজ্মা বা ঐক্যমত পোষণ করেন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার উম্মত (আলেমগণ) কখনোই গোমরাহীর উপর একমত হবেনা।”

          সীরাতে হালবীয়া কিতাবের ১ম খন্ড ৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

جرت عادة كثيرة من المحبين اذا سمعوابذكر وضعه صلى الله عليه وسلم ان يقاموا لتعظيم انبى صلى الله عليه وسلم.

অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অধিকাংশ মুহব্বতকারীগণের স্বভাব এটাই ছিল যে, তারা হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্ম বিবরণ শুনে সাথে সাথেই ক্বিয়াম করেন।”

          সুতরাং মীলাদ-ক্বিয়াম যেহেতু অসংখ্য আলেম, ফাযেল, মুহাদ্দিস, মুফাস্সির, ফক্বীহ, বুজুর্গ, ইমাম, মুজতাহিদ ও আওলিয়া-ই-কিরামগণের আমল দ্বারা প্রমাণিত ও পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ মুসলমান মীলাদ-ক্বিয়াম করেন ও তাকে উত্তম মনে করেন। সেহেতু মীলাদ-ক্বিয়াম করা শরীয়তে সম্পূর্ণ জায়েয বরং সুন্নতে উম্মত মুস্তাহ্সান। আর মীলাদ-ক্বিয়ামকে বিদ্য়াত ও নাজায়েয বলা গোমরাহী ও অজ্ঞতার নামান্তর।

          এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, যারা বলে থাকে- মাওলানা আশ্রাফ আলী থানবী ও রশীদ আহ্মদ গাঙ্গুহী সাহেব মীলাদ-ক্বিয়াম করা বিদ্য়াত এবং পাপের কাজ বলেছে, অথচ তাদের পীর সাহেব, যিনি শায়খুল আরব ওয়াল আ’যম হযরতুল আল্লামা হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি নিজে মীলাদ-ক্বিয়াম করেছেন এবং মীলাদ-ক্বিয়ামকে সাবিত করার জন্য তার পক্ষে কিতাবও লিখেছেন।

সুতরাং মীলাদ-ক্বিয়াম করা যদি বিদ্য়াতই হয়, তবে তাদের (মীলাদ-ক্বিয়াম বিরোধীদের) ফতওয়া মোতাবেক হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি বিদ্য়াতী ও পাপী, আর বিদ্য়াতীরা গোমরাহ্।  যেহেতু উনি বিদ্য়াতী ও গোমরাহ্, সেহেতু ওনার মুরীদ- মুতাক্বেদ যারা, তারাও বিদ্য়াতী, পাপী ও গোমরাহ্। তার মধ্যে অন্যতম বিদ্য়াতী, পাপী ও গোমরাহ্ হলো আশ্রাফ আলী থানবী সাহেব ও রশীদ আহ্মদ গাঙ্গুহী সাহেব। কেননা তারা উনার বিশিষ্ট মুরীদের অন্তর্ভূক্ত। এক কথায় ওলামায়ে দেওবন্দ ও তাদের অনুসারী সকলেই বিদ্য়াতী ও গোমরাহ্-এর অন্তর্ভূক্ত। অথচ মীলাদ-ক্বিয়াম অবশ্যই জায়েয বরং সুন্নতে উম্মত মুস্তাহ্সান, আর হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মুহাজেরে মক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি সর্বজনমান্য ও অনুসরণীয় বুজুর্গ, হক্বানী আলেম, ওলী আল্লাহ্র অন্তর্ভূক্ত।

          উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মীলাদ শরীফ সম্পর্কে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর, দলীল বিহীন ও কুফরীমূলক।

এখানে আরো উল্লেখ্য যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যদি সাধারণভাবে মীলাদ শরীফ পাঠ না করে বা মীলাদ মজলিসে না বসে, তবে সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু যদি মীলাদ শরীফকে বিদ্য়াত বা নাজায়েয অর্থাৎ পাপের কাজ মনে করে, মীলাদ মজলিসে না বসে, তবে অবশ্যই নাজায়েয ও গুণাহ্র কারণ।

          তাছাড়া প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যে বলে থাকে, “আল্লাহ্ পাক শেরেকের গুণাহ্ মাফ করবেন, কিন্তু মীলাদ-ক্বিয়াম করার গুণাহ্ আল্লাহ্ পাক মাফ করবেন না।”

তাদের এ বক্তব্যটিও অত্যান্ত আপত্তিকর ও কুফরীমূলক। এ ধরণের আক্বীদা যারা পোষণ করে, তারা আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের দৃষ্টিতে মুসলমান থাকতে পারেনা। কাজেই এরূপ বক্তব্য প্রদান ও আক্বীদা পোষণ করা থেকে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের জন্যেই ফরজ/ওয়াজিব। (চলবে)

নায়ক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক

ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।

সুওয়াল:          হানাফী মাযহাবে –

(১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।

(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।

(৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।

(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।

(৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা।

(৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে।

(৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।

(৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্য বা শব্দগুলো জোড়া জোড়া এবং আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে।

(৯) তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।

(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।

(১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।

(১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি।

কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই।

অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আর ১৬১তম সংখ্যা থেকে উল্লেখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবিহক জাওয়াব পেশ করা হচ্ছে।

(৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে।

এর জাওয়াব হলোঃ আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফের হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইল্ম্ রাখতেন। যার কারণে তাঁর প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে।

অতএব, হানাফী মাযহাবে ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে সে বর্ণনা হাদীছ শরীফেই রয়েছে।

(২য় অংশ)

যেমন ইরশাদ হয়েছে,

عن ثوبان رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه ويلم لا يؤمن رجل قوما فيخص نفسه بالدعاء دونهم فان فعل ذالك فقد خانهم.

অর্থঃ “হযরত ছাওবান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোন ব্যক্তি ইমামতি করে মুক্তাদীদেরকে বাদ দিয়ে শুধু নিজের জন্য দুয়া করলে তা জায়িয হবে না। যদি কোন ইমাম এরূপ করে অর্থাৎ মুক্তাদীদেরকে বাদ দিয়ে শুধু নিজের জন্য দুয়া বা মুনাজাত করে তাহলে সে মুক্তাদীদের প্রতি খিয়ানতকারী হিসেবে সাব্যস্ত হবে।”

(আবূ দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত)

اخرجه الحاكم وقال صحيح الاسناد قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يجتمع ملأفيدعو بعضهم ويؤمن بعضهم الا اجابهم الله.

অর্থঃ “হাকিম তাঁর হাদীছ শরীফগ্রন্থে এ হাদীছ শরীফখানা ছহীহ সনদে উল্লেখ করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, জামায়াতের সাথে সম্মিলিতভাবে যখন একজন দুয়া করেন আর অন্য সকলে আমীন বলতে থাকেন তখন ঐ দুয়া কখনই বিফলে যায় না। আল্লাহ পাক অবশ্যই তাদের দুয়া কবুল করেন।

عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا دعوت الله فادع بباطن كفيك ولا تدع بظهورهما فاذا فرغت فامح بهما وجهك.

অর্থঃ হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ইরশাদ করেন, যখন দুয়া করবে তখন দু’ হাত উঠিয়ে দুয়া করবে এবং হাতের তালু নিজের বা উপরের দিকে রাখবে, হাতের পিঠ নিজের দিকে করবে না। এবং যখন দুয়া শেষ করবে তখন দু’ হাত দ্বারা নিজের মুখম-লের উপর বুলাবে বা মাসেহ করবে। (ইবনে মাজাহ)

উল্লেখিত হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, ইমাম-মুক্তাদী সকলের জন্যেই ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। (চলবে)

ডাঃ মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন

৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা, জানাইকা

এনওয়াই, ১১৪৩২, ইউএসএ-২০৩৪

সুওয়ালঃ   কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয কিনা? আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাউযুবিল্লাহ)

এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-ক্বিয়াসে ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদীল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান- আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি।

জাওয়াবঃ    হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দুয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি তাঁদের অজুদ মুবারক, তাঁদের নাম মুবারক ও তাঁদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত।

কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই তারা কাদিয়ানী অথবা তারা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, মু’তাজিলা, মুশাবিহা, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, তাবলীগী, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভূক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়।

নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফের বহু আয়াত শরীফ এবং বহু হাদীছ শরীফ ইরশাদ হয়েছে। যার বর্ণনা বিগত সংখ্যাগুলোর মধ্যে পেশ করা হয়েছে।

মূলতঃ হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং সমস্ত উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত এবং আক্বীদা হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহু, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির জন্য মহান ওসীলা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তোফায়েলে ওলীগণও ওসীলা। এ সম্পর্কে কতিপয় বর্ণনা এখানে পেশ করা হলো-

রঈসুল মুাহাদ্দিছীন হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

خضوصا حضرت سيد المرسلين محبوب رب العالمين صلى الله عليه وسلم كه رجاء قول بطفيل واكثر اتم دار فرد اكمل است وفعل انبياء مرسلين وسيرت سلف صالحين است.

অর্থাৎ বিশেষতঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, মাহবূবে রব্বুল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলায় দুয়া করবে। কেননা, এটা পরিপূর্ণরূপে দুয়া কবুল হওয়ার কারণ। আর এটা পূর্ববর্তী নবী আলাইহিমুস্ সালামগণ এবং বুযুর্গগণের তরীক্বা।

আর সূরা ফাতিহার মধ্যে স্বয়ং আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন বান্দাকে  নবী এবং ওলীগণের তরীক্বা অনুসরণ করতে বলেছেন।

ইরশাদ হয়েছে,

اهدنا الصراط المستقيم. صراط الذين انعمت عيلهم.

অর্থাৎ, তোমরা দুয়া কর, আয় বারে ইলাহী! আমাদেরকে সঠিক পথ দান করুন। তাদের পথ যাঁদেরকে আপনি নিয়ামত দান করেছেন।

কাদেরকে নিয়ামত দান করা হয়েছে? সে প্রসঙ্গে অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,

انعم الله عليهم من النبين والصديقين والشهداء والصلحين.

অর্থঃ “আল্লাহ পাক নিয়ামত দান করেছেন তাঁদেরকে যাঁরা নবী, ছিদ্দীক, শহীদ এবং ছালেহ। (সূরা নিসা-৬৯)

নবী হলেন এক স্তর। আর ছিদ্দীক্ব, শহীদ ও ছালেহ হলেন আরেক স্তর অর্থাৎ আওলিয়ায়ে কিরামের স্তর।

কাজেই, কেউ যদি ‘ছিরাতুল মুস্তাক্বীম’ -এর উপর থাকতে চায় তাহলে তাকে সর্বক্ষেত্রে নবী ও ওলীগণের ত্বরীকা অনুসরণ করতে হবে। অতএব, দুয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহ পাক-এর হাবীব, নবীদের নবী, রসূলদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উনার যাঁরা খাছ নায়িব ও ওয়ারিছ তথা ওলী-আওলিয়ায়ে কিরাম তাঁদের ওসীলা নিয়ে দুয়া করতে হবে। আল্লাহ পাক সকলকে দ্বীন ইসলামের সঠিক ইল্ম্ ও সমঝ দান করুন। অসমাপ্ত

মুহম্মদ আহমাদুর রহমান, পটিয়া, চট্টগ্রাম

মুহম্মদ মাসউদুল হক (ফাহিম) সোনাইমুরি, নোয়াখালী

সুওয়াল:    পটিয়া জমিরিয়া খারিজী মাদ্রাসার অখ্যাত পত্রিকা অক্টোবর+নভেম্বর/২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় সমস্যা ও সমাধান বিভাগে প্রদত্ত একটি সমাধানের প্রেক্ষিতে যে বিষয়গুলো আমরা জানতে ইচ্ছুক তা হলো-

….. ৪. “আল্লাহ পাক চেহারা সতরের বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত করেননি কিন্তু উলামায়ে কিরাম চেহারা খোলা রাখাকে নাজায়িয বলেছেন” তাদের এ বক্তব্য দ্বারা কি এই  প্রমাণিত হয় না যে, উলামায়ে কিরাম আল্লাহ পাক-এর বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়েছেন। (নাঊযুবিল্লাহ)

৫. খারেজী মাদ্রাসার সরকারী স্বীকৃতি দ্বীনি জরুরতের মধ্যে পরে কি? আর এরূপ জরুরতে বেপর্দা হওয়ার অনুমতি আছে কি?

৬. যদি ফিৎনার কোন আশংকা না থাকে তবে কি বেপর্দা হওয়া বা বেগানা মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাত করা জায়িয রয়েছে?

৭. “চোখের যিনা হলো বেগানা লোককে দেখা,” এ হাদীছ শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা কি? যদি খাহেশাতের সাথে দৃষ্টি না দেয় তবেও কি তা ব্যাভিচার বলে গণ্য হবে?

উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: পটিয়া খারেজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবরা মুলতঃ হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা বা উলামায়ে ‘ছূ’-এর অন্তর্ভুক্ত। তাই তারা নিজেদের কথিত শীর্ষস্থানীয় উলামাদের বাঁচাতে নির্লজ্জভাবে কুরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যা করেছে, আল্লাহ পাক, তাঁর রসূল ও হক্কানী উলামায়ে কিরামকে দোষারূপ করেছে, বেপর্দাকে সুকৌশলে জায়িয করে শরীয়ত পাল্টে দিয়ে নতুন শরীয়ত প্রকাশ করে নব্য কাদিয়ানী হিসেবে নিজেদেরকে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত প্রতিটি বিষয় বিস্তারিতভাবে ও দলীলের মাধ্যমে পর্যালোচনা করলে এটাই সুস্পষ্ট প্রমাণিত হবে। তাই নিম্নে সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবহিকভাবে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

(ধারাবাহিক)

৪. “আল্লাহ পাক চেহারা সতরের বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত করেননি কিন্তু উলামায়ে কিরাম চেহারা খোলা রাখাকে নাজায়িয বলেছেন” পটিয়া খারিজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবদের এ বক্তব্য দ্বারা কি এই  প্রমাণিত হয় না যে, উলামায়ে কিরাম আল্লাহ পাক-এর বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়েছেন। (নাঊযুবিল্লাহ)

(তৃতীয় অংশ)

এর জবাবে বলতে হয় যে, “আল্লাহ পাক চেহারা সতরের বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত করেননি” তাদের একথা যে ডাহা মিথ্যা ও কুফরীমূলক হয়েছে তা বিগত কয়েকটি সংখ্যায়  প্রদত্ত বিস্তারিত ও দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে, অর্থাৎ এটাই ছাবিত হয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাক বেগানা মহিলার চেহারাসহ সমস্ত শরীরই সতর বা পর্দার অন্তর্ভূক্ত করেছেন।

অতএব, পটিয়ার খারিজী মৌলবী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য প্রথমতঃ মহান আল্লাহ পাক-এর শানে চরম মিথ্যারোপের শামিল হওয়ার কারণে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

فمن اظلم ممن افترى على اله كذبا ليضل الناس بغير علم ان الله لا يهدى القوم الظلمين.

অর্থঃ- “অতএব, সে ব্যক্তি অপেক্ষা বড় যালিম আর কে হবে, যে ব্যক্তি বিনা প্রমাণে আল্লাহ পাক-এর প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে মানুষদেরকে বিভ্রান্ত বা পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে; নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেননা।” (সূরা আনয়াম-১৪৪)

অর্থাৎ যারা আল্লাহ পাক-এর নামে মিথ্যা বলে তারা যালিম, তারা গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট। সেজন্য তারা আল্লাহ পাক-এর নামে মিথ্যা বলে মানুষদেরকে বিনা দলীলে গোমরাহ করতে চায়।

আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে আরো ইরশাদ করেন,

ولا تقولوا لما تصف السنتكم الكذب هذا حلل وهذا حرام لتفتروا على الله الكذب ان الذين يفترون على الله الكذب لايفلحون.

অর্থঃ- “তোমাদের মুখ থেকে সাধারণতঃ যেসব মিথ্যা বের হয়ে আসে, তেমনি করে তোমরা আল্লাহ পাক-এর প্রতি মিথ্যারোপ করে বলোনা যে, (আল্লাহ পাক) এটা হালাল এবং ওটা হারাম (করেছেন), নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ পাক-এর প্রতি মিথ্যারোপ করে, তাদের জন্য কামিয়াবী নেই।” (সূরা নহল-১১৬) অর্থাৎ যারা আল্লাহ পাক-এর নামে মিথ্যা বলে তাদের জন্য কামিয়াবী তো নেই এমনকি তাদের ফতওয়াও গ্রহনযোগ্য নয়। শুধু তাই নয়, বরং তাদের জন্য কঠিন শাস্তি মৃত্যুদ- রয়েছে।

আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন,

لوتقول علينابعض الاقاويل لا خذنا منه باليمين. ثم لقطعنا منه الوتين. فما منكم من احد عنه حجزين.

অর্থঃ- তোমরা যদি অর্থাৎ কেউ যদি আমার অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর নামে বানিয়ে কোন কথা বলে, তবে আমি তাঁর দক্ষিণ হস্ত ধরে তার গ্রীবা বা প্রাণ রগ কেটে দিব, তোমাদের কেউই এতে বাধা দিতে পারবে না।” (সূরা হাক্কা- ৪৪, ৪৫, ৪৬)

উপরোক্ত  আয়াত শরীফের শানে নুযূল সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে যে, কাফির, মুশরিকরা বলতো, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাকি আল্লাহ পাক-এর নাম মুবারকে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলেন। (নাউযুবিল্লাহ) এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক এ আয়াত শরীফ নাযিল করে জানিয়ে দিলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনই আল্লাহ পাক-এর নাম মুবারকে মিথ্যা বলেন না। শুধু এতটুকুই নয় আরো জানিয়ে দিলেন, যারা আল্লাহ পাক-এর নাম মুবারকে মিথ্যা বলবে তাদের শাস্তি হলো মৃত্যুদ-।

আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন,

ومن اظلم ممن افترى على الله الكذب وهو يدعى الى الاسلام والله لا يهدى القوم الظلمين.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইসলামের প্রতি আহুত হয়েও আল্লাহ পাক সম্পর্কে মিথ্যা বলে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে? আর আল্লাহ পাক যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেননা।” (সূরা ছফ-৭)

অর্থাৎ আল্লাহ পাক সম্পর্কে মিথ্যা বলা হচ্ছে সবচাইতে বড় যুলূম। কাজেই, যে বা যারা মুসলমান হওয়ার পরও আল্লাহ পাক-এর নামে মিথ্যা বলে সে বা তারা চরম ও বড় যালিম এবং যালিম হওয়ার কারণে তারা হিদায়েত থেকে মাহরূম হয়ে থাকে। অর্থাৎ তারা চরম গোমরাহ। তাই এদের ফতওয়া শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।

কারণ আল্লাহ পাক সম্পর্কে যে মিথ্যা বলে সে কুফরী করে, আর যে কুফরী করে সে মুরতাদ হয়ে যায়। আর শরীয়তের ফতওয়া হলো, যারা মুরতাদ হয়ে যায় তাদের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদ-। শরীয়তে তাদের তওবা করার জন্য তিনদিন সময় দেয়া হয়েছে অন্যথায় শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদ-।

অতএব, “যারা আল্লাহ পাক ও আল্লাহ পাক-এর কালাম কুরআন শরীফ সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলে। অর্থাৎ আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে “মহিলাদের চেহারাকে সতর বা পর্দার অন্তর্ভূক্ত করার পরও যারা বলবে আল্লাহ পাক চেহারাকে সতর বা পর্দার অন্তর্ভূক্ত করেননি” তারা চরম যালিম, মুরতাদ ও কাফির।

দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, “আল্লাহ পাক মহিলাদের চেহারা সতর বা পর্দার অন্তর্ভূক্ত করেননি। কিন্তু উলামায়ে কিরাম চেহারা খোলা রাখাকে নাজায়িয বলেছেন (নাউযুবিল্লাহ) পটিয়া খারিজী মাদ্রাসার মৌলবী  ছাহেবদের জন্য আফসূস! তারা এত দিন কুরআন হাদীছ পড়ে কি এই শিখলো এবং তাদের ছাত্রদেরকে কি তাহলে এটাই শিখালো যে, অনুসরনীয় উলামায়ে কিরাম আল্লাহ পাক-এর বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়েছেন। (নাউযুবিল্লাহ) তারা তাদের উক্ত বক্তব্য দ্বারা কি মানুষকে এটাই বুঝাচ্ছে না যে, উলামায়ে কিরামকে অনুসরণ করা যাবে না। কারণ তারা আল্লাহ পাক-এর বিরোধীতা করেন ও ভুল ফতওয়া দেন। মূলতঃ উলামায়ে কিরামের উপর থেকে সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট করা ও তাদের অনুসরণ থেকে ফিরায়ে রাখার এটি একটি নতুন কৌশল বা ষড়যন্ত্র। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। এছাড়াও তাদের উক্ত বক্তব্য হযরত উলামায়ে কিরাম তথা ইমাম মুজতাহিদগণের শানে সুস্পষ্ট মিথ্যা তোহমত দেয়ার কারণে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।

মূলতঃ আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে পর্দা সম্পর্কে যা বলেছেন হক্কানী-রব্বানী উলামায়ে কিরাম তথা অনুসরনীয় ইমাম মুজতাহিদগণ তাঁদের কিতাবে ঠিক তাই উল্লেখ করেছেন। এর বিপরীত উনারা কিছুই উল্লেখ করেননি।

বস্তুতঃ পটিয়া খারিজী মৌলবী ছাহেব ও তাদের সমগোত্রীয় উলামায়ে ছূরাই পর্দাসহ অনেক বিষয়েই আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়েছে ও দিচ্ছে। যার বাস্তব প্রমাণ হচ্ছে সুওয়ালে উল্লিখিত উক্ত বক্তব্য। কাজেই দাজ্জালের চেলা এসব উলামায়ে ‘ছূ’ বা নিকৃষ্ট মৌলবীদের ধোঁকা থেকে নিজের ঈমান আমলকে হিফাযত করা প্রত্যেকের জন্যই ফরয-ওয়াজীব। (চলবে)

মুহম্মদ সাইফুর রহমান, মৌলভীবাজার

সুওয়ালঃ    তারাবীহ্ নামাযে দু’রাকায়াত ও চার রাকায়াতের পর কি দু’য়া পড়তে  হয়? এবং কত রাকায়াত পর পর মুনাজাত করার নিয়ম?

জাওয়াবঃ   তারাবীহ্ নামাযে দু’রাকায়াতের পর নিম্নোক্ত দু’য়া পড়তে হয়-

هذا من فضل ربى يا كريم المعروف يا قديم الاحسان احسن الينا باحسانك القديم ثبت قلوبنا على دينك برحمتك يا ارحمالرحمين.

উচ্চারণঃ হাযা মিন ফাদ্বলি রব্বী, ইয়া কারীমাল মা’রূফ, ইয়া ক্বদীমাল ইহ্সান, আহ্সিন ইলাইনা বিইহ্সানিকাল ক্বদীম, ছাব্বিত কুলূবানা আলা দীনিকা বিরহ্মাতিকা ইয়া র্আহার্মা রাহিমীন।

অর্থঃ- “ইহা (রমাদ্বান শরীফের রোযা ও তারাবীহ্র নামায) আমার রবের করুণা বা দয়া। হে সম্মানিত দাতা, হে চির ইহসানকারী, আপনার ইহসানের দ্বারা আমাদের প্রতি ইহসান করুন এবং আপনার সদয় অনুগ্রহে আমাদের দিল-মনকে আপনার দ্বীনের উপর কায়িম রাখুন। আয় আল্লাহ পাক! আপনিই সর্বপেক্ষা দয়ালু।”

আর চার রাকায়াতের পর নিম্নোক্ত দু’য়া পড়তে  হয়-

سبحان ذى الملك والملكوت سبحان ذى العزة والعظمة والهيبة والقدرة والكبرياء والجبروت. سبحان الملك الحى الذى لاينام ولايموت ابذا ابدا سبوح قدوس ربنا وربت الملئكة والروح.

উচ্চারণঃ সুব্হানা যিল্ মুলকি ওয়াল্ মালাকূতি সুব্হানা যিল্ ইয্যাতি ওয়াল্ আয্মাতি ওয়াল্ হাইবাতি ওয়াল্ কুদ্রতি ওয়াল্ কিব্রিয়ায়ি ওয়াল্ জাবারূত, সুব্হানাল মালিকিল্ হাইয়্যিল্ লাযী লা-ইয়ানামু ওয়ালা-ইয়ামূতু আবাদা আবাদান সুববূহুন কুদ্দূর্সু রব্বুনা ওয়া রব্বুল মালায়িকাতি ওর্য়া রূহ।

অর্থঃ- “আমি ঐ আল্লাহ পাক-এর পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি সমস্ত কর্তৃত্ব ও ফেরেশ্তাগণের মালিক। আমি তাঁরই পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি সমস্ত ইজ্জত, আযমত, হাইবত (প্রভাব), কুদরত, বড়ত্ব ও শক্তিমত্তার অধিকারী। আমি সেই চিরজীবি মালিকেরই পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি বিশ্রাম করেন না, যিনি অমর, যিনি পুতঃপবিত্র, তিনিই আমাদের রব এবং ফেরেশ্তা ও রূহসমূহের রব।”

উল্লেখ্য, যদি কারো উপরোক্ত দু’য়া জানা না থাকে তবে সে দুরূদ শরীফ পাঠ করবে।

 তারাবীহ্ নামাযে চার রাকায়াত পর পর মুনাজাত করার নিয়ম। মুনাজাতটি নিম্নোরূপ-

اللهم صلى على سيدنا وببينا وحبيبنا وشفيعنا ومولنا خحمد صلى الله عليه وسلم- رب ارحم هما كما ربيانى صعيرا. ربنا افرغ علينا صبراو توفنا مسلمين. اللهم انا نسئلك احنة ونعوذبك من النار يا خالق الحنة والنار برحمبك يا عزيز يا غفار ياكريم يا ستار يا رحيم يا جبار يا خالق يا بار. اللهم اجرنا من انار يا مجير يا مجير يا مجير برحمتك يا ارحم الراحمين- ربنا اتنا فى الذنيا حسنة وفى الاخرةحسنة وقنا عذاب النار. سبحن ربك رب العزة عما يصفون وسلم على المرسلين والحمد لله رب العلمين.

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা সাইয়্যিদিনা ওয়া নাবিয়্যিনা, ওয়া হাবীবিনা ওয়া শাফীয়িনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।ঞ্জরর্ব্বিহাম হুমা কামা রব্বাইয়ানী ছাগীরা। রব্বানা আফরিগ আলাইনা ছব্রাঁও ওয়া তাওয়াফ্ফানা মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্আলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউযুবিকা মিনান্ নার, ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান্ নার, বিরহ্মাতিকা ইয়া আযীযু, ইয়া গফ্ফারু, ইয়া কারীমু, ইয়া সাত্তারু, ইয়া রহীমু, ইয়া জাব্বারু, ইয়া খালিক্বু, ইয়া র্বারু, আল্লাহুম্মা আর্জিনা মিনান্ র্না, ইয়া মুজীরু, ইয়া মুজীরু, ইয়া মুজীর, বিরহ্মাতিকা ইয়া র্আহার্মা রাহিমীন। রব্বানা আাতিনা ফিদ্ দুন্ইয়া হাসানাহ্ ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ্ ওয়া ক্বিনা আযাবান্ নার।সুবহানা রব্বিকা রব্বিল ইয্যাতি আম্মা ইয়াছিফূন ওয়া সালামুন আলাল্ মুরসালীন্ ওয়াল্ হামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন।

অর্থঃ “আয় আল্লাহ পাক! আপনি ছলাত-সালাম অর্থাৎ খাছ রহম ও শান্তি নাযিল করুন আমাদের সাইয়্যিদ, নবী, হাবীব, শাফায়াতকারী ও অভিভাবক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। আয় আল্লাহ পাক! আপনি আমাদের পিতা-মাতার প্রতি রহম-ইহ্সান করুন। যেরুপ তারা আমাদেরকে ছোট বেলায় দয়া-ইহ্সানের সাথে লালন-পালন করেছেন। আয় আল্লাহ পাক! আপনি আমাদেরকে ধৈর্যের উপর ইস্তিক্বামাত করে দিন এবং আমাদেরকে মুসলমান হিসেবে ইন্তিকাল দান করুন। আয় আল্লাহ পাক! নিশ্চয়ই আমরা আপনারই নিকট জান্নাতের আবেদন করছি এবং আপনারই নিকট জাহান্নাম থেকে পানাহ তলব করছি, হে জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টিকারী! হে ক্ষমতাশালী, হে ক্ষমাকারী, হে দানশীল, হে অপরাধ গোপনকারী, হে দয়ালু, হে পরাক্রমশীল, হে সৃষ্টিকর্তা, হে অনুগ্রহকারী। আয় আল্লাহ পাক! আপনার সদয় অনুগ্রহে আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তিদান করুন, হে মুক্তিদানকারী, হে মুক্তিদানকারী, হে মুক্তিদানকারী, হে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু আল্লাহ পাক। আয় আমাদের রব!  আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে ভালাই দান করুন। সমস্ত ইজ্জত-সম্মানের মালিক আপনার রবের জন্যেই। যিনি পবিত্র তারা যা বর্ণনা করে তা থেকে। সালাম বা খাছ শান্তি বর্ষিত হোক রসূলগণের উপর। আর তামাম আলমের রব আল্লাহ পাক-এর জন্যেই সমস্ত প্রশংসা।  (দলীলঃ সমূহ হাদীছ শরীফ, তাফসীর ও ফিকাহ্ কিতাব)

মুহম্মদ আল আমীন, ঘোড়াশাল, নরসিংদী

সুওয়ালঃ মহিলাদের জন্য তারাবীহ্ নামায জামায়াতে পড়ার হুকুম কি?

জাওয়াবঃ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আম ফতওয়া হলো মহিলাদের পাঁচ ওয়াক্ত, জুমুয়া, তারাবীহ্ ও ঈদের নামাযসহ সকল নামাযের জামায়াতের জন্য মসজিদ, ঈদগাহ ও যে কোন স্থানে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী। আর খাছ ফতওয়া হলো কুফরী।

(এ সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১১, ১৪, ১৯, ২২, ২৯, ৩৭, ৪৪, ৪৭, ৪৮, ৫৫, ৬৫, ৭১, ৮২, ১০১ ও ১০২তম সংখ্যাগুলো পড়ুন যাতে বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ হতে প্রায় ১০০টি দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করা হয়েছে।

মুহম্মদ মিজানুর রহমান, বাবুরহাট, চাঁদপুর

সুওয়ালঃ    রমাদ্বান মাস আসলেই কেউ কেউ পেপার-পত্রিকায় ও প্রচার মাধ্যমে প্রচার করে থাকে যে, “রোযা অবস্থায় ইন্জেকশন এমনকি স্যালাইন নিলেও রোযা ভঙ্গ হয়না।”

এখন আমার সুওয়াল হলো- তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোন দলীল আছে কি?

জাওয়াবঃ    যারা বলে থাকে যে, “রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, স্যালাইন ও ইনহেলার নিলেও রোযা ভঙ্গ হয়না” তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল ও জিহালতপূর্ণ।

তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য একটি দলীলও পেশ করতে পারবে না। পক্ষান্তরে রোযা অবস্থায় যে কোন ইনজেকশন, স্যালাইন ও ইনহেলার নিলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। যেমন, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার নির্ভরযোগ্য কিতাব “হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ২২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ومن احتقن ….. افطر لقوله صلى الله عليه وسلم الفطر مما دخل.

অর্থঃ- “যদি কোন ব্যক্তি ইন্জেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে।”

অতএব, উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, ইন্জেকশন নিলে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হবে।

[বিঃ দ্রঃ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ২১, ২২, ৪৬ ও ৪৭তম সংখ্যা পাঠ করুন।]

মাওলানা মুহম্মদ সালাহুদ্দীন

ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সুওয়ালঃ  তারাবীহ্ নামাযে কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা বিনিময় গ্রহণ করা জায়িয আছে কিনা? এ সম্পর্কে ফুক্বাহায়ে কিরামের সঠিক মতামত বা ফতওয়া জানতে ইচ্ছুক।

জাওয়াবঃ “সময় ও স্থান নির্ধারণ করার শর্তে কুরআন শরীফ খত্ম করা তথা খ্ত্মে তারাবীহ ও সূরা তারাবীহ্সহ সকল প্রকার ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুয়াক্কাদা ইত্যাদি সর্বপ্রকার ইবাদতের বিনিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক দেয়া এবং গ্রহণ করা জায়িয ও শরীয়তসম্মত।” এটাই গ্রহণযোগ্য মত এবং এ মতের উপরই ফতওয়া। এর বিপরীত ফতওয়া দেয়া নাজায়িয ও হারাম। ”

[ বিঃ দ্রঃ তারাবীহ্ নামাযে কুরআন শরীফ খতম করে বিনিময় গ্রহণ করা জায়িয’ এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ২৩ ও ২৪তম সংখ্যার ফতওয়া বিভাগ পড়ুন এবং বিশেষ করে ৩৬, ৪৭,  ৬৬, ৭১, ৭৭,  ৮৭, ৮৮, ৯০ ও ১১১তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে মাসিক মদীনা,অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এবং হাটহাজারীর অখ্যাত মাসিক  পত্রিকার ভুল বক্তব্য খ-ন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে।

মুহম্মদ হারিছুর রহমান খান, রাজপাড়া,  রাজশাহী

সুওয়ালঃ    অনেকে বলে থাকে ‘খত্মে তারাবীহ্ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ’ তাদের এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক?

জাওয়াবঃ    “যারা বলে, ‘খত্মে তারাবীহ্ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ’ তাদের সে বক্তব্য মোটেও শুদ্ধ নয়। কারণ, যেখানে তারাবীহ্র নামাযের জামায়াত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া সেখানে খত্মে তারাবীহ্ কি করে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ হতে পারে।

যদি খত্মে তারাবীহ্ সুন্নতে মুয়াক্কাদা হয় তাহলে তারাবীহ্ নামাযের জামায়াতকেও সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলতে হবে। কিফায়া বলা যাবে না। কারণ কিফায়া হলে তো কিছু লোক একাও নামায পড়তে পারেন।

অতএব, যারা একা নামায পড়বেন, তারা যদি হাফিযে কুরআন না হন, তবে খত্মে তারাবীহ্ কি করে পড়বেন? খত্মে কুরআন যদি মুয়াক্কাদা হয়, তাহলে প্রত্যেককেই তো তা আদায় করতে হবে।

খত্মে তারাবীহ্ যদি সুন্নতে মুয়াক্কাদা হয়, তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি মসজিদে তারাবীহ্ নামাযে অবশ্যই কুরআন শরীফ খত্ম করতে হবে। অন্যথায় সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরকের গুণাহে গুণাহ্গার হবে।

অথচ পৃথিবীতে এমন অনেক স্থান, গ্রাম-গঞ্জ রয়েছে, যেখানে কুরআন শরীফের হাফিয পাওয়া অসম্ভব, সেখানে কি করে কুরআন শরীফ খতম করা হবে।

  অতএব, প্রমাণিত হলো যে, খত্মে তারাবীহ্ বা তারাবীহ্ নামাযে কুরআন শরীফ খত্ম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা নয়। বরং সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। একইভাবে সূরা তারাবীহ্ সেটাও সুন্নতে মুয়াক্কাদ কিফায়া।

অএতব, কেউ ইচ্ছা করলে খতম তারাবীহ্ পড়তে পারে। আবার কেউ ইচ্ছা করলে সূরা তারাবীহ্ পড়তে পারে।

   {দলীলসমূহ ঃ  (১) বাহরুর রায়িক, (২) হিদায়া, (৩) আলমগীরী, (৪) ফতহুল কাদীর, (৫) এনায়া  ইত্যাদি।}

(এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১০০তম সংখ্যা পাঠ করুন।)

মুহম্মদ জাকির হুসাইন, মালদহপট্টী দিনাজপুর

সুওয়াল:     আমরা জানি, তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত এবং তা আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অথচ কেউ কেউ বলে আট রাকায়াত, আবার কেউ কেউ বলে বার রাকায়াত।

কোনটি সঠিক?

জাওয়াব:     আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া মোতাবেক তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্। অতএব, কেউ যদি বিশ রাকায়াত থেকে এক রাকায়াতও কম পড়ে, তবে তার সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্ তরক করার গুণাহ্ হবে। অর্থাৎ তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াতই পড়তে হবে এবং এর উপরই ইজ্মা হয়েছে।

{দলীলসমূহ: মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী, আল কবীর লিত্ তবারানী, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, বাহ্রুর রায়িক, মারাকিউল ফালাহ্ ইত্যাদি।}

(এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২৫-৩০তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৩০৪ খানা অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে ছাবিত করা হয়েছে যে, তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়াই সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্।)

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ