মুহম্মদ আমজাদ আলী, বাইতুল মোর্ক্রাম মার্কেট
মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন, মিরপুর, ঢাকা। ডাঃ লুৎফর রহমান, মুন্সিগঞ্জ।
সুওয়ালঃ ২০০৭ ঈসায়ী সনে দেশে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। যাতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দিয়েছিল খিলাফত মজলিস দলের একাংশের চেয়ারম্যান তথা কথিত শাইখুল হাদীছ মাওলানা আজিজুল হক ছাহেব। শর্তারোপ করেছিল পাঁচ দফা দাবি পূরণের। দাবিগুলো হচ্ছে-
(১) কুরআন-সুন্নাহ ও শরীয়ত বিরোধী কোনও আইন প্রণয়ন করা হবে না।
(২) কওমী মাদ্রাসা সনদের সরকারি স্বীকৃতি যথাযথ বাস্তবায়ন করা হবে।
আইন করা হবে-
(৩) হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী।
(৪) নবী-রসূল ও ছাহাবায়ে কিরামের সমালোচনা ও কুৎসা রটনা করা দ-নীয় অপরাধ।
(৫) সনদপ্রাপ্ত হক্কানী আলিমরা ফতওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করেন। সনদবিহীন কোনও ব্যক্তি ফতওয়া দিতে পারবেন না। (সমূহ জাতীয় দৈনিক)
এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কথিত শাইখুল হাদীছ ছাহেবের উল্লিখিত পাঁচ দফা দাবি পূরনের শর্তে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়াটা কতটুকু কুরআন-সুন্নাহ তথা শরীয়ত সম্মত? দয়া করে সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ ‘আবূ জাহিলকে’ চিনেনা পৃথিবীতে এরূপ মুসলমান খুজে পাওয়া দুস্কর হবে। ‘আবূ জাহিলকে’ তার নাম কখনোই ছিলনা, তার নাম ছিল ‘আবুল হিকাম’ অর্থাৎ জ্ঞানীর পিতা বা মহা পণ্ডিত হিসেবেই সে কাফিরদের নিকট অধিক মশহুর ছিল সে এতটাই পণ্ডিত ছিল যে আরব দেশে কোন বিচার হতো না ‘আবুল হিকাম’ কে ছাড়া।
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীনে হক্ব’ প্রচার শুরু করলেন, ‘মহা পণ্ডিত’ নিজ স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে এবং স্বার্থ হাছিলের লক্ষে ইসলামকে হক، বা সত্য জানা ও বুঝার পরও দ্বীনে হক্বের বিরোধিতা করলো এবং বাতিল মতবাদ বা কুফরী শিরকীর মধ্যে দৃঢ় রইল।
রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সঙ্গত কারণেই মহা পণ্ডিত ‘আবুল হিকামের’ নাম পরিবর্তন করে ‘আবূ জাহিল’ তথা মুর্খের পিতা বা ‘মহা মুর্খ’ রাখলেন। সে থেকে অদ্যবধি সাড়া বিশ্ববাসী তাকে ‘আবূ জাহিল’ বলেই সম্বোধন করে আসছে।
উপরোক্ত ঘটনা থেকে প্রমাণিত হলো, জেনে শুনে হক্বের বিরোধতিা করলে হকে،র সাথে নাহক্বকে মিশ্রিত করলে, নিজ স্বার্থ রক্ষায় নাহক্ব মত-পথ অনুসরণ করলে তার নাম পরিবর্তন করে যথপোযুক্ত নামে সম্বোধন করা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
সাড়া বিশ্বে সুন্নত যিন্দাকারী মাসিক আল বাইয়্যিনাত আল্লাহ পাক-এর রহমতে বহু পূর্বেই অনেকের ক্ষেত্রেই এরূপ সুন্নত আদায় করেছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো- সুওয়ালে উল্লেখিত তথাকথিত ‘শাইখুল হদছ’ ।
মাসিক আল বাইয়্যিনাতে তাকে সম্বোধন করা হয় ‘শাইখুল হদছ’ হিসেবে। প্রশ্ন উঠতে পারে কেন তাকে ‘শাইখুল হদছ’ হিসেবে সম্বোধন করা হলো?
অবশ্য এর জবাবও মাসিক আল বাইয়্যিনাতের মতামত বিভাগে বহুবার দেয়া হয়েছে। আমরা মূল আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে পুনরায় উক্ত বিষয় আলোচনা করবো যাতে করে সুওয়ালে উল্লেখিত বিষয়গুলো বুঝতে আমাদের সহজ হবে।
(ধারাবাহিক)
তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আজিজুল হককে ‘শাইখুল হদছ’ বলার কারণ-৪
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে বা অনুসরণ করে সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (মুসনাদে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ)
এ হাদীছ শরীফের আলোকে নিম্নে শাইখুল হদছের আমলের ফিরিস্তি তুলে ধরা হলো এবং কি কারণে তাকে ‘শাইখুল হদছ’ বলা হয় তার বর্ণনা দেয়া হলো-
৪। পেপার পত্রিকায় ছবি দেয়া ও টিভিতে প্রোগ্রাম করা
তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আযীযুল হকের অসংখ্য হদছ বা নাপাক অর্থাৎ হারাম, নাজায়িয ও শরীয়ত বিরোধী আমলের একটি অন্যতম আমল হচ্ছে পেপার পত্রিকায় ছবি দেয়া ও টিভিতে প্রোগ্রাম করা। অথচ শরীয়তের দৃষ্টিতে তা সুস্পষ্ট হারাম। এটাকে হালাল মনে করা কুফরী।
কারণ সমস্ত বিশ্বস্ত হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাবসমূহে “ছবি তোলা শক্ত হারাম ও কবীরা গুণাহ” বলে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى حجيفة عن ابيه ان النبى صلى الله عليه وسلم نهى عن ثمن الدم وهمن الكلب وكسب البغى ولعن اكل الربى وموكله والواشمة والمستوشمة والمصور.
অর্থঃ- হযরত আবু হুজায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাহার পিতা তাকে বর্ণনা করেন, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রক্তের দাম, ও কুকুরের দাম নিতে এবং ব্যভিচারকারীনীর উপার্জন নিষেধ করেছেন এবং যে ঘুষ খায়, যে ঘুষ দেয়, যে অংগে উলকি আঁকে এবং যে আঁকায়, আর যে ছবি অংকন করে, এদের সবার উপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লা’নত দিয়েছেন।” (বুখারী ২য় জিঃ পৃঃ ৮৮১)
عن عائشة قالت دخل على رسول الله صلى الله عليه وسلم وانا متسترة بقرام فيه صورة فتلون وجهه ثم تنا ول الستر فهنكه ثم قال ان من اشد الناس عذابا يوم القيمة الذين يشبهون بخلق الله تعالى.
অর্থঃ- হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার নিকট আসলেন। প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা চাদর গায়ে দেওয়া ছিলাম। এটা দেখে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চেহারা মুবারক রঙ্গিন হয়ে গেল। অতঃপর তিনি চাদর খানা নিয়ে ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন “ক্বিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে ব্যক্তি আল্লাহর সৃষ্টির সাদৃশ্য (কোন প্রাণীর ছুরত) সৃষ্টি করে”
عن ابى معاوية ان من اشد اهل النار يوم القيمة عذابا المصورون.
অর্থঃ- “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, “নিশ্চয় ক্বিয়ামতের দিন দোযখবাসীদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন আজাব হবে, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে বা তোলে।” (মুসলিম ২য় জিঃ পৃঃ ২০১)
عن سعيد قال جاء رحل اى ابن عباس فقال انى رجل اصور هذه الصور فافتنى فيها. فقال له ادن منى فدنا حتى وضع يده على راسه وقال انبئك بما سمعت من رسول الله صلى الله عليه وسلم سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول كل مصور فى النار يجعل له بكل صورة صورها نفاسا فتعذبه فى جهنم وقال ان كنت لابد فاعلا فاصنع الشجر ومالا نفس له.
অর্থঃ- হযরত সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর নিকট এসে বলল, আমি এমন এক ব্যক্তি যে প্রাণীর ছবি অংকন করি, সুতরাং এ ব্যাপারে আমাকে ফতওয়া দিন। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাকে বললেন, তুমি আমার নিকটবর্তী হও। পুনরায় বললেন, তুমি আরো নিকটবর্তী হও। সে আরো নিকটবর্তী হলোু হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার মাথায় হাত রেখে বললেন, আমি আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ ব্যাপারে যা বলতে শুনেছি তোমাকে তা বলব। আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক প্রাণীর ছবি তৈরিকারীই জাহান্নামে যাবে। এবং আল্লাহ পাক প্রত্যেকটি ছবিকে প্রাণ দিবেন এবং সেই ছবিগুলো তাদেরকে জাহান্নামে শাস্তি দিতে থাকবে।” এবং ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তোমার যদি ছবি আঁকতেই হয় তবে গাছ-পালা বা প্রাণহীন বস্তুর ছবি আঁক। (মুসলিম ২য় জিঃ পৃঃ ২০২) (চলবে)
মুহম্মদ আসিফ মহিউদ্দীন পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন
মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা।
সুওয়ালঃ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মাদ্্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খ-ন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো-
…. ৪। ইসলামী স্বর্ণযুগে এবং তৎপরবর্তীতে ফুক্বাহায়ে কিরাম ও হাদীছ বিশারদগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। তাই তা হযরত মুফতিয়ানে কিরামের ঐক্যমতে বিদয়াত। (নাউযুবিল্লাহি মিনাল কাযিবীন)
এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাট হাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদী।
(ধারাবাহিক)
জাওয়াবঃ হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য শুধু ডাহা মিথ্যাই নয় বরং সম্পূর্ণরূপেই মনগড়া, দলীলবিহীন ও বিভ্রান্তিকর। শুধু তাই নয়, তার পাশাপামি স্বয়ং আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম, ফক্বীহ ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের প্রতি মিথ্যারোপ করার কারণে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।
স্মর্তব্য হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। (১) স্বর্ণযুগে কেউ ফরজ নামাযের পরে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হলো, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজত করেননি। (২) তৎপরবর্তীতে অর্থাৎ স্বর্ণযুগের পর থেকে অদ্যবধি ফুক্বাহায়ে কিরাম ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের কেউ তথা একজনও ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করেননি। (৩) সকল মুফতিয়ানে কিরাম ঐক্যমত হয়ে ফতওয়া দিয়েছেন যে, ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদয়াত ও বা নাজায়িয। (নাউজুবিল্লাহ)
উল্লেখ্য, হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবরা তাদের উল্লিখিত তিনটি বক্তব্যের কোন একটিও নির্ভরযোগ্য কিতাবের ইবারত বা দলীল দ্বারা প্রমাণ করতে পারেনি এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করলেও তা প্রমাণ করতে পারবেনা। ইনশাআল্লাহ
সুতরাং এমনিতেই তাদের উল্লিখিত বক্তব্যগুলো মিথ্যা, বানোয়াট ও পরিত্যাজ্য বলে সাব্যস্ত হয়। এরপরও আমরা তাদের উল্লিখিত প্রতিটি বক্তব্য দলীলভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে মিথ্যা, বানোয়াট ও কুফরীমূলক বলে প্রমাণ করবো। ইনশাআল্লাহ। যেমন হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের প্রথম বক্তব্য হলো-
১। স্বর্ণযুগে কেউ ফরজ নামাযের পরে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হলো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। (নাউযুবিল্লাহ)
এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের এ বক্তব্য স্বয়ং আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যারোপের অন্তর্ভুক্ত। কারণ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ফরজ নামাযের পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণসহ অর্থাৎ সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন হাদীছ শরীফ দ্বারাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।
যেমন এ প্রসঙ্গে “আমালূল ইয়াত্তমি ওয়াল লাইলি” কিতাবে উল্লেখ আছে,
عن ابى امامة رضى الله تعالى عنه قال مدنوت من رسول الله صلى الله عليه و سلم فى دبر صلوة مكتوبة ولا تطوع الا سمعته يقول اللهم اغفرلى ذنوبى وخطاياى كلها.
অর্থঃ- “হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে নামায আদায় করেচি এবং শুনেছি, তিনি ফরয ও নফল নামাযের পর বলেছেন আল্লাহুম্মাগ্ফিরলী …..।”
যেমন এ প্রসঙ্গে “আবূ দাউদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, মুস্তাদ্্রাকে হাকিম, ইবনে হাব্বান” কিতাবে উল্লেখ আছে,
عن معاذ بن جبل رضى الله تعالى عنه قال ان رسول الله صلى اله عليه وسلم اخذ بيدى يوما ثم قال يا معاذ والله انى لا حبك فقال معاذ با بى انت وامى يا رسول الله صلى الله عيه وسلم وانا والله احبك فقال اوصيك يأمعاذ لا تذعن فى دبر كل صلوة ان تقول ….. اعنى على ذكرك وشكرك الخ.
অর্থঃ- “হযরত মুয়ায ইবে জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল,হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম একদিন আমার হাত ধরে বলেন, হে মুয়ায! আল্লাহ পাক-এর কসম! আমি তোমাকে মুহব্বত করি। হযরত মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আহু বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার জন্যে আমার পিতা-মাতা কোরবান হোক। আল্লাহ পাক-এর কসম! আমিও আপনাকে মুহব্বত করি। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হে মুয়ায! আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি- তুমি প্রত্যেক নামাযের পর কখনো এই দোয়া পড়া ছেড়ে দিওনা। দোয়াটি হলো- আল্লাহুম্মা আঈনী আলা যিক্রিকা ওয়া শুক্রিকা ……।”
যেমন এ প্রসঙ্গে “বুখারী শরীফ,মুসলিম শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, নাসায়ী শরীফে” উল্লেখ আছে,
عن امغيرة ابن شعبة رضى الله تعالى عنه قال ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان اذا فرغ من الصلوة قال لا اله الا الله وحده .. اخ وفى البخارى انه صلى اله عليه وسلم كان يقول هذه الكلمات دبر كل صلوة وفى كتاب الصلوة فى دبر كل صلوة مكتوبة.
অর্থঃ- “হযরত মুগীরা ইবনে শো’বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শেষ করে বলতেন, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্্দাহু… ।’ বুখারী শরীফে বর্ণিত রয়েছে, রসূলেপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দোয়া পড়তেন প্রত্যেক নামাযের পর। আর “কিতাবুস সালাত”-এ রয়েছে, প্রত্যেক ফরয নামাযের পর।”
যেমন এ প্রসঙ্গে “ফাদ্দুল ওয়া লি জালালুদ্দীন সূয়ূতী” কিতাবে উল্লেখ আছে,
حدثنا مخمد بن يحيى الاسلمى قال رأيت عبد الله بن زبير رضى الله عنه ورأى رجلا رافعا يديه يدعو فبل ان يفرغ من صلوته فلما فرغ منها قال له ان رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يكن يرفع يديه حتى يفرغ من صلوته رجاله ثقات.
অর্থঃ- “হযরত মুহম্মদ ইবনে ইয়াহ্্ইয়া আসলামী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কোন এক ব্যক্তিকে নামায শেষ না করেই হাত উঠিয়ে মুনাজাত করতে দেখলেন, সে ব্যক্তি নামায শেষ করার পর তাকে বললেন, নিশ্চয় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায শেষ করে উভয় হাত মুবারক উঠিয়ে মুনাজাত করতেন।” (চলবে)
মুহম্মদ মঞ্জুরুল হক গুলবাগ, ঢাকা।
সুওয়ালঃ “মাসিক মদীনা মার্চ/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, “আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফেকাহ্্ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাসবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ? দয়া করে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। শুধু তাই নয় বরং তার পেশকৃত দলীল “ফতোয়া দারুল উলুম”-এর ফতওয়াও শুদ্ধ নয়। বরং ভুল, অশুদ্ধ ও গোমরাহীমূলক হয়েছে। যা মানুষকে গোমরাহ করার ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা উত্তম বলা হয়েছে। অর্থাৎ আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করার জন্য الصلاة الصلاة (আছ্্ছলাহ!) নামায! নামায! অথবা قامت قامت (ক্বামাত! ক্বামাত!) নামায আসন্ন, নামায আসন্ন, অথবা التنحنح (আত্্তানাহ্নুহ্্) গলা খাকড়ানো, ইত্যাদি শব্দ দিয়ে আহবান করা বা তাছ্বীব করা সুন্নত, গুমুস্তাহ্্সান। যার আরো কিছু প্রমাণ নিম্নে পেশ করা হলো-
(ধারাবাহিক)
যেমন, “ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবের ১ম খ-ের ২১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
والتثويب فى الفجر حى على الصلاة حى على الفلاح مرتين بين الاذان والاقامة حسن لانه وقت نوم وغفلة.
অর্থঃ- “ফজরের নামাযে আযান ও ইক্বামতের মাঝে দু’বার
حى عى الصلاة حى على الفلاح. (হাইয়া আলাছ্্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্্) বলে সকল মানুষদেরকে নামাযের জন্য তাছবীব করা উত্তম।” কেননা ফজরের ওয়াক্তটা ঘুম ও গাফলতির সময়।”
“কিফায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,
وما أخدثه أبو يوسف رحمه الله تعال للامير بان يقو اسلام عليك أيها الامير حى على الصلاة حى على الفلاح ير حمك الله ……… وكرهه محمد رحمه الله تعالى وقا افاابى يوسف رحمه الله تعالى حيث خص الامراء بالتثويب لما روى ان عمررضى الله تعالى عنه اتاه مؤذن مكة يؤذنه بالصلاة فانتهره وقال أليس فى أذانك ما يكفينا.
অর্থঃ- “ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি আযানের পর সকল নামাযেই আমীর-উমারদের জন্য
السلام عليك أيها الامير حى على الصلاة وحى على الفلاح.
(আস্্সালামু আলাইকা আইয়্যুহাল আমীর, হাইয়া আলাছ্্ ছলাহ্্ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্্) يرحمك الله(ইয়ারহামুকাল্লাহ) বলে তাছবীব করার প্রচলন করেছেন। তবে ইমাম মুহম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্ত মতকে অপছন্দ মনে করে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং ইমাম মুহম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন যে ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর জন্য আফছুছ, যেহেতু তিনি তাছবীব করার ব্যাপারে শুধুমাত্র আমীর-উমারাদেরকে খাছ করেছেন। অথচ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর বিন খত্ত্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট মক্কা শরীফের মুয়াজ্জিন সাহেব আসলেন এবং আযানের পর তাকে الصلاة (আছ্্ ছলাত) বলে তাছবীব করলেন। অতঃপর হযরত উমর বিন খত্ত্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাকে ধমক দিয়ে বললেন যে, তোমার আযানই কি আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়? (সুতরাং প্রমাণিত হলো তাছবীব করার ব্যাপারে শুধুমাত্র আমীর-উমারা, মুফতী, কাজী সাহেবদেরকে খাছ করা যাবে না। বরং আমভাবে সকল মানুষকে তাছবীব করা মুস্তাহাসান।”
“শরহুল ঈসায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,
والمـأخرون استحسنوه أى التثوبب المحدث فى الصلوات كلها لظهور التوانى فى الامور الدينية ولكن لم يشنر طوا عين ذكك اللفظ الذى هو حى على الصلاة حى عى الفلاح بل ذكروا ما تعارفوه.
অর্থঃ- “দ্বীনী কাজে তথা নামাযে মানুষের গাফলতি প্রকাশের কারণেই উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ সকল নামাযেই তাছবীব করাকে মুস্তাহ্্সান বলেছেন। তবে তাছবীব করার ক্ষেত্রে উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ শুধুমাত্র।
حى عى الصلاة حى على الفلاح.
(হাইয়া আলাছ্ ছলাত এবং হাইয়া আলাল ফালাহ) কেই নির্দিষ্টভাবে শর্ত করেননি। বরং উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমুতল্লাহি আলাইহিমগণ বলেছেন এই তাছবীব প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দ দিয়েই করতে হবে। অর্থাৎ যে ধরণের শব্দ দিয়ে তাছবীব করলে শহরবাসী বুঝতে পারে, সে ধরণের শব্দ দিয়েই তাছবীব করতে হবে।” (চলবে)
মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান
টাইগার পাস রোড,চট্টগ্রাম।
সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্্ ও রদ্দুল মুহ্্তার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তহাব” ….।
এখন আমার সুওয়াল হলো- “আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?
জাওয়াবঃ আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং স্ববিরোধী, ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ্্ হাধীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিকাহ্্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহণযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে।
নিম্নে পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খ-ন সহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে-
(ধরাবাহিক)
রেযাখানী মুখপত্রে প্রদত্ত দলীল সমূহের খণ্ডনমূলক আলোচনা
উল্লেখ্য, রেযাখানীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। কারণ তাদের বক্তব্যের সাথে কিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই। নিম্নে রেযাখানীদের হুবহু বক্তব্য তুলে ধরা হলোঃ যেমন, রেযাখানীরা বলেছে, “আর দ্বিতীয় প্রকারের আযানের জবাব দেওয়া, অর্থাৎ আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়া শরীয়ত সম্মত কোন ওজর বা আপত্তি না থাকলে আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব। যেমন- সর্বমান্য হানাফী ফক্বীহ্্ ইমাম আব্দুর রহমান জাযীরিহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ‘আল ফিক্বহ আ’লা মাযাহিবিল আরবা’আহ্্ গ্রন্থের مباحث الاذان অধ্যায়ের اجابة المؤذن পরিচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন যে,
اجابة المؤذن مندوبة لمن يمع الاذان وو كان جنبا …….. ان الحنفية اشترطوا ان لا تكون حا ئضا او نساء فان كانت فلاتندب لها الاجبة بخلاف با قى الائمة- لا نهما ليت من اهل الاجابة بالفعل فكذا بالقول- (الفقه على مذاهب الاربعة ج১، ص ৩১৮-৩১৭)
অর্থাৎ যে আযান শুনবে তার জন্য মুয়াজ্জিনের আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব। যদিও সে নাপাকি অবস্থায় থাকে। কিন্তু হানাফীদের মতে ঋতুস্রাব ও নেফাস সম্পন্না মহিলাদের জন্য আযানের জবাব দেওয়া মুস্তাহাব নয়। কিন্তু অন্যান্য ইমামগণের মতে মুস্তাহাব। যেহেতু ঋতুস্রাব ও মুস্তাহাব নয়। কিন্তু অন্যান্য ইমামগণের মতে মুস্তাহাব। যেহেুত ঋতুস্রাব ও নেফাস সম্পন্না মহিলা হায়েজ ও নেফাসের কারণে আযানের بالفعل তথা কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে জবাব দেওয়ার উপযুক্ত নয়। তেমনিভাবে মৌখিকভাবেও জবাব দেবেনা। আল ফিক্বহু আ’লা মাযাহিবিল আরবাআ, ১ম ভাগ, পৃঃ ৩১৭-৩১৮, ইস্তাম্বুল থেকে প্রকাশিত।
এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্যে প্রথমঃ ধোকা এটাই প্রমাণিত হলো যে, তাদেরবক্তব্যের সাথে কিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই।
কারণ তাদের বক্তব্যে তারা বলেছে, “…… আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব। যেমন- সর্বমান্য হানাফী ফক্বীহ ইমাম আব্দুর রহমান জায়ীরিহ্্ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ‘আল ফিক্বহ আ’লা মাযাহিবিল আরবা’ আহ্্ গ্রন্থের مباحث الاذان অধ্যায়ের اجابة المؤذن পরিচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন যে,
اجابة المؤذن مندوبة لمن يسمع الاذان ولو كان جنبا ……..
অথচ আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব। এধরনের কোন বক্তব্য, কোন বর্ণনা, কোন ইবারত তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে তাদের উল্লিখিত কিতাবের ইবারতে উল্লেখ নেই।
সুতরাং প্রমাণিত হলো রেযাখানীদের বক্তব্যের সাথে কিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই। অতএব রেযাখানীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কিতাবের ইবারত ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। ইহা তাদের প্রথম ধোকা।
দ্বিতীয়তঃ রেযাখানীরা কিতাবের ইবারত
يسمع …….. اجابة المؤذن مندوبة لمن الاذان ولو كان جنبا ……..
এই পর্যন্ত উল্লেখ করে ………… (ডট ডট) চিহি ব্যবহার করেছে।
অথচ উক্ত ইবারতের অর্থে এধনের কোন ………. (ডট ডট) চিহ ব্যবহার করেনি। বরং উক্ত ইবারতের অর্থকে পরবর্তী ইবারতের অর্থের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেছে। ইহা তাদের দ্বিতীয় ধোকা।
তৃতীয়তঃ রেযাখানীরা কিতাবের ইবারত ভুল লিখেছে। যেমন, তারা লিখেছে نساء অথচ কিতাবে উল্লেখ আছে نفساء
চতুর্থতঃ রেযাখানীরা এক পৃষ্ঠার ইবারতের সঙ্গে অন্য পৃষ্ঠার ইবারতকে জোড়াতালি দিয়েছে। অর্থাৎ কিতাবে উল্লিখিত ৩১৭ পৃষ্ঠার ইবারতের সঙ্গে ৩১৮ পৃষ্ঠার ইবারতকে জোড়াতালি দিয়ে উভয় পৃষ্ঠার ইবারতকে একই সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেছে।
যেমন তাদের উল্লিখিত بخلاف باقى الائمة এই ইবারতগুলো ৩১৭ পৃষ্ঠার ইবারত। এবং এর পরেই তাদের উল্লিখিত لانهما ليت من أهل الاجابة এই ইবারতগুলো হলো ৩১৮ পৃষ্ঠার ইবারত।
অথচ রেযাখানীরা ধোকা দেয়ার জন্যই উভয় পৃষ্ঠার ইবারতগুলো একই সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেছে।
পঞ্চমতঃ ধোকাবাজ রেযাখানীরা শুধু ইবারতের ক্ষেত্রেই নয়। বরং অর্থের ক্ষেত্রেও উভয় পৃষ্ঠার ইবারতের অর্থকেও জোড়াতালি দিয়ে একই সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেছে।
ষষ্ঠতঃ রেযাখানীরা তাদের উল্লিখিত ইবারতে কিতাবের ৩১৮ পৃষ্ঠার ইবারতেও ভুল লিখেছে। যেমন, তারা তাদের উল্লিখিত ইবারতে লিখেছে ليت অথচ কিতাবে উল্লেখ আছে لبستا
সপ্তমতঃ রেযাখানীরা তাদের উল্লিখিত ইবারতের শেষে কিতাবের নাম লিখেছে الفقه على مذاهت الاربعة অথচ কিতাবের নাম الفقه على المذاهب الاربعة
সুতরাং যারা কিতাবের নাম লিখতেই ভুল করে তারা আবার ফতওয়া দেয়।
সুতরাং প্রমাণিত হলো রেযাখনীদের বক্তব্যের সাথে কিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই। অতএব রেযাখনীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কিতাবের ইবারত ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। (চলবে)
খন্দকার সেলিম আহমদ
পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল
সুওয়ালঃ- হাটহাজারী ম্্ারাসা সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।
তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
৬. পীর, ওস্তাদ, পিতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী প্রমুখ সম্মানিত ব্যক্তিগণের সম্মানে দাঁড়ানো জায়িয। কারণ, তারা সামনে উপস্থিত। আর মীলাদে দাঁড়ানো জায়িয নেই। কারণ,রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুপস্থিত। (নাউযুবিল্লাহ)
এখন আমার সুওয়াল হলো, মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীল সম্মত?
জাওয়াবঃ- মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য ভুল, অশুদ্ধ,দলীলবিহীন ও সববিরোধী। প্রথমঃ তারা বলেছে, “পীর, ওস্তাদ, পিতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী, প্রমুখ সম্মানিত ব্যক্তিগণের সম্মানে দাঁড়নো জাযিয়।”
এ বক্তব্য দ্বারা স্বীকার করতে বাধ্য হলো যে, তা’যীম বা সম্মানার্থে ক্বিয়াম জায়িয। অথচ এর পূর্বে তারা বরাবরই বলে বা লিখে এসেছে যে, ক্বিয়াম বলতেই বিদয়াত বা নাজায়িয।
তারা আরো প্রমাণ করলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত হাদীছ শরীফগুলো সঠিকই রয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ তারা বলেছে, “রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুপস্থিত। তাই ক্বিয়াম করা যাবে না।” তাদের এ বক্তব্যও অজ্ঞতাসূচক ও দলীলবিহীন। তারা নির্ভরযোগ্য কোন কিতাব থেকে এর প্রমাণ পেশ করতে পারে নাই এবং পারবেও না ইন্্শাআল্লাহ।
মূলতঃ মীলাদ শলীফের যে ক্বিয়াম তার সাথে উপস্থিত থাকা বা না থাকার কোন শর্ত নেই। মীলাদ শরীফের যে ক্বিয়াম করা হয় তা মূলত আদব, শরাফত ও মুহব্বতের কারণেই করা হয়। কেননা সালাম পেশ করার সময় দাঁড়িয়ে পেশ করাই হচ্ছে আদব, শরাফত ও মুহব্বতের আলামত। হাটহাজারীর মৌলভী সাহেবরা ক্বিয়াম সম্পর্কে নিহায়েত অজ্ঞ হওয়ার কারণেই ক্বিয়াম সম্পর্কে এরূপ বক্তব্য পেশ করেছে। তাই নিম্নে ক্বিয়ামের প্রকারভেদ সহ ক্বিয়াম সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হলো।
ক্বিয়ামের প্রকারভেদ ও আহকাম
ক্বিয়াম القيام শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে
উদূ লেখা ঢুকবে……………..
অর্থাৎ ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো। (কামুস আল মুহীত, তাজুল উরুস, লিসানুল আরব, মিছবাহুল লুগাত, আল মুনজিদ)
আর ক্বিয়াম শব্দের ইস্তেলাহী বা পরিভাষিক অর্থ হচ্ছে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি “সালাম” পাঠকালে তা’যীমার্থে বা মুহব্বতে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো। এছাড়াও মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে প্রায়ই ক্বিয়াম, করতে হয়। তাই ইসলামী শরীয়ত ক্বিয়ামকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছে। যেমন (১) ফরয ক্বিয়াম (২) সুন্নত ক্বিয়াম (৩) মুস্তাহাব ক্বিয়াম (৪) হারাম ক্বিয়াম (৫) মাকরূহ ক্বিয়াম।
(ধারাবাহিক)
৪. হারাম ক্বিয়াম
“ক্বিয়ামে তাকাব্বুরী বা অহংকারের ক্বিয়াম” হারাম। যেমন কেউ বসে রইল আর সকলেই তার সম্মুখে মূর্তির মতো নমস্কারের ছূরতে হাত জোর করে মস্তক অবনত করে দাঁড়িয়ে রইল। এ ধরনের ক্বিয়াম সম্পর্কেই আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
لاتقوموا كما يقوم الاعاجم.
অর্থাৎ “তোমরা আজমীদের মত (মাথা নীচু করে নমস্কারের ছূরতে দাঁড়াইওনা।” সুতরাং এরূপ ক্বিয়াম শরীয়তে সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়েয।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে আরো উল্লেখ হয়েছে,
عن معاوية رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى اله عليه وسلم يقول من احب ان يمثل له الرجال قياما فليتبوأ مقعده من النار.
অর্থঃ- “হযরত মুয়াবিয়াহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি এটা পছন্দ করে যে মানুষ তার জন্য মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকুক তাহলে সে যেন নিজেই তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নিল।” অর্থাৎ “মানুষ তার সামনে মূর্তির মত দাঁড়িয়েথাকুক এটাই যদি সে পছন্দ করে তাহলে সে জাহান্নামী।” (আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মুসনাদে আহমদ)
মূলতঃ এ হাদীছ শরীফ দ্বারাও ক্বিয়ামে তাকাববুরীকে বুঝানো হয়েছে যা মুতাকাব্বির ও মুতাজাবিবর (গর্বকারী ও অহংকারী) লোকদের স্বভবগত অভ্যাস। এধরণের ক্বিয়ামও শরীয়তে হারাম।
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, ক্বিয়ামে তাকাব্বুরী বা অহংকারের ক্বিয়াম সম্পূর্ণই হারাম। (চলবে)
মুসাম্মত সানজিদা আক্তার
সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত
মুহম্মদপুর, ঢাকা।
সুওয়ালঃ- অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭ নং জিজ্ঞাসার জবাব ছাপা হয়।
জিজ্ঞাসাঃ- ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি
দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মুর্খ এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মুর্খের মত তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফযীলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …………. তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীত স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই।
উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-
…. (৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?”
কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিীখত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
ুজাওয়াবঃ- প্রলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।
তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-
প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতিবা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?”
আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলো উল্লেখ করার সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো।
প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য-২৪
(পঞ্চম অংশ)
বাংলার মুলুকে প্রায় ৫৫ বৎসর দ্বীন প্রচারকারী আল্লামা কারামত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর رساله الفيصله (রিসালাতুল ফায়সালা) নামক কিতাবে উল্লেখ করেন যে,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………….
অর্থঃ- “আমি ‘মুলাখাছ’ কিতাবে ২৫ জন আলেম ও ইমামের قول বানী ও فعل কর্ম দ্বারা এবং নিজ তরীক্বার বুযুর্গদের বাণী ও উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত দলীলের ভিত্তিতে মীলাদ শরীফকে যথার্থভাবেই (জায়েয) সাব্যস্ত করেছি। মীলাদ নিষেধকারী ব্যক্তি হলেন, মাত্র ফাকেহানী মালেকী। সুতরাং (মীলাদ জায়েয বলে ফতওয়া দানকারী) বৃহৎ জামায়াতের মতের বিরুদ্ধে তার এ ধোকাবাজী মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। আর একজন মুজ্্তাহিদ ও মক্কা শরীফের দু’জন বিশ্বস্ত ও প্রসিদ্ধ প্রাচীন আলেমের ফতওয়া ও বিখ্যাত কিতাবসমূহ এবং উত্তরাদিকার সূত্রে প্রাপ্ত দলীলের ভিত্তিতে মীলাদ শরীফে “ক্বিয়াম” করা জায়েয প্রমাণ করেছি। আর উক্ত ক্বিয়াম, ক্বিয়ামে তা’যীমী বিধায় উহাকে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত হাদীছ শরীফ দ্বারা (জায়েয) প্রমাণ করেছি।”
আশেক্বে রাসূল, হযরতুল আল্লামা শাহ্্ আব্দুল হক এলাহাবাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তদীয় “দুররুল মুনাজ্জাম” কিতাবে লিখেন,
ان القيام عند وضعه صلى الله عليه وسم لتعظيم النبى صلى اله عليه وسلم.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বরকতময় জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনার সময় তাঁর সম্মানার্থে বা তা’যীম-তাক্্রীমের জন্যেই ক্বিয়াম করা হয়।” (আল ওসীলাহ্্ পৃঃ ৫৮) (চলবে)
নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোরুল হক
ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।
সুওয়ালঃ- হানাফী মাযহাবে-
১। নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।
২। ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।
৩। জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।
৪। ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।
৫। রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা।
৬। ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত উত্তোলন করেনা।
৭। তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।
৮। ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্্য বা শব্দগুলো জোড় জোড় এবং আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ ছলাহ বলে।
৯। তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।
১০। ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।
১১। জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।
১২। উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে।
ইত্যাদি কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই।
অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ আনীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আর ১৬১তম সংখ্যা থেকে উল্লেখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবাহিক জাওয়াব পেশ করা হচ্ছে।
(৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে।
এর জাওয়াব হলোঃ- আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফের হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইলম রাখতেন। যার কারণে তাঁর প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে।
অতএব, হানাফী মাযহাবে ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে সে বর্ণনা হাদীছ শরীফেই রয়েছে।
যেমন ইরশাদ হয়েছে-
عن ابى امامة رضى اله تعاى عنه قال يا رسول الله صلى الله عليه وسم اى الدعاء اسمع قال جوف الليل الاخر ودبر كل صلوت مكتوبات.
অর্থঃ- “হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট জানতে চাইলেন যে, কোন সময়ের দুয়া আল্লাহ পাক সবচাইতে বেশী কবুল করেন? উত্তরে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, শেষ রাতের দুয়া এবং পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর যে দুয়া করা হয় তা আল্লাহ পাক-এর নিকট বেশী গুরুত্বপূর্ণ। (তিরমিযী শরীফ)
عن افض بن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الصلوة مثنى مثنى تشهد فى كل ركعتين كوتخشع وتضرع وتمسكن ثم تقنع يديك يقول تر فعهما الى ربك مستقبلا ببطونها وجهك وتقول يا رب يا رت ومن لم يفعل ذالك فهو كذا وكذا وفى رواية فهو خداج.
অর্থঃ- “হযরত ফজল ইবনে আব্বাস দ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নামাযের প্রত্যেক দুই দুই রাকায়াতের পর তাশাহ্্হুদ পড়বে এবং খুশূ, খযূ, বিনয় ও সুকূনাতের সাথে নামায পড়বে অতঃপর সালাম ফিরানোর পর তুমি তোমার দু’ হাত তুলে দুয়া করবে। বর্ণনাকারী বলেন, তুমি তোমার দু’ হাত তোমার রবের নিকট (দুয়ার জন্য) উঠাবে, হাতের বুকের দিক তোমার চেহারার দিকে করবে এবং বলবে, হে আমার রব! হে আমার পরওয়ারদিগার! (অর্থাৎ পুনঃ পুনঃ দুয়া করবে) যে ব্যক্তি এরূপ অর্থাৎ দুয়া করবে না তার নামায অপূর্ণ থেকে যাবে। অপর বর্ণনায় রয়েছে, যে ব্যক্তি নামায শেষে দুয়া বা মুনাজাত করবে না সে ধোকাবাজদের অন্তর্ভূক্ত। (তিরমিযী, মিশকাত, নাসায়ী, ই’লাউস সুনান)
عن انس بن مالك رضى الله تعاى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال ما من عبد يبسط كفيه فى دبر كل صلوة يقول اللهم والهى ……. الا كان حقا على الله ان لا يرد يديه خائبتين.
অর্থঃ- “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন কোন বান্দা প্রত্যেক নামাযের পর উভয় হাত উঠিয়ে বলবে- হে আল্লাহ পাক, হে আমার রব! ………………….. তখন আল্লাহ পাক-এর দায়িত্ব হয়ে যায়, তাকে খালী হাতে না ফিরানো।” (আল আমালুল লাইলি ওয়াল ইয়াওমি)
جدثنا محمد بن يحيى الاسلمى قال رأيت عبد الله بن زبير رضى الله تعالى عنه وراى رجلا رافعا يديه يدعو قبل ان يفرع من صلوته فلما فرغ منها قال له ان رسول اله صلى الله عليه وسلم لم يكن يرفع يديه حتى يفرغ من صلوته- رجاله ثقات.
অর্থঃ- “মুহম্মদ ইবনে ইয়াহ্্ইয়া আসলামী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কোন এক ব্যক্তিকে নামায শেষ না করেই হাত উঠিয়ে মুনাজাত করতে দেখলেন, সে ব্যক্তি নামায শেষ করার পর তাকে বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায শেষ করে উভয় হাত মুবারক উঠিয়ে মুনাজাত করতেন।” (ফাদ্দুল ওয়া লি জালালুদ্দীন সূয়ূতী)
عن الاسود العمرى عن ابيه قال صليت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم الفجرفلما سلم انحرف ورفع يديه ودعا.
অর্থঃ- “হযরত আস্্ওয়াদ আমিরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তাঁর পিতা বলেন, আমি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে ফজর নামায পড়লাম। যখন তিনি সালাম ফিরালেন, তখন উভয় হাত মুবারক উঠিয়ে মুনাজাত করলেন।” (মুছান্নিফ ইবনে আবী শায়বা) (চলবে)
ডাঃ মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন
৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা, জানাইকা
এনওয়াই, ১১৪৩২, ইউএসএ-২০৩৪
সুওয়ালঃ- কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্্ সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয কিনা? আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাউযুবিল্লাহ)
এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-ক্বিয়াসে ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদীল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি।
জাওয়াবঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত আওলিয়া কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দুয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি তাঁদের অজুদ মুবারক, তাঁদের নাম মুবারক ও তাঁদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত।
কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই তারা কাদিয়ানী অথবা তারা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, মুতাজিলা, মুশাবিহা, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, তাবলিগী, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভুক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফের বহু আয়াত শরীফ এবং বহু হাদীছ শরীফ ইরশাদ হয়েছে। যার বর্ণনা বিগত সংখ্যাগুলোর মধ্যে পেশ করা হয়েছে।
মূলতঃ হযরত ছাহাবা আজমঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং সমস্ত উম্মতের ইজমা ঐক্যমত এবং আক্বীদা হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্্ নাবিয়্যীন হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির জন্য মহান ওসীলা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তোফায়েলে ওলীগণও ওসীলা।এ সম্পর্কে কতিপয় বর্ণনা এখানে পেশ করা হলো-
হযরত ইমাম জালালুদ্দীন রূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বরচিত কিতাব ‘মসনবী শরীফে’ বলেন,
উদূ লেখা ঢুকবে……………..
অর্থঃ- “কবরে শায়িত অনেক বান্দা হাজার হাজার জীবিত ব্যক্তির চেয়ে অধিক উপকার করে থাকেন। তাঁদের কবরের মাটিও মানুষের উপর ছায়া দানকারী। লাখো জীবিত ব্যক্তি এ কবরবাসীদের ছায়ায় রয়েছে।”
বুঝা গেল, হযরত মাওলানা রূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দাগণকে ওফাতের পর জীবিত ব্যক্তিদের জন্য ওসীলা মানেন।
হযরত আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বরচিত কিতাব ‘নুযহাতুল খাওয়াতির ফী তারজুমাতে শায়খ আব্দুল ক্বাদির”-এর মধ্যে বলেন, হযরত গওছে পাক রহমতুল্লাহি আলাইহি ইরশাদ করেন,
من استغاث بى كربة كشفت عنه ومن نادى لى باسمى فى شدة فرجت عنه ومن توسل بى الى الله فى حاجته قضيت.
অর্থঃ- “যে কেউ আমার নিকট দুঃখের মুহূর্তে সাহায্য প্রার্থনা করবে তাহলে ঐ মুছীবত দুর হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি বিপদের সময় আমার নাম নিয়ে আমাকে আহবান করবে, তাহলে ঐ বিপদ লাঘব হয়ে যাবে। আর যে আমাকে আল্লাহ তায়ালার নিকট তার প্রয়োজনে ওসীলা গ্রহণ করবে তার মনস্কামনা পূর্ণ। হবে।”
এরপর হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘নামাযে গওছিয়া’ এর নিয়ম উল্লেখ করে বলেন, এটা অনেকবার পরীক্ষা করা হয়েছে এবং ছহীহ প্রমাণিত হয়েছে।
হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজেই গওছে পাক হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ওসীলা গ্রহণ করে বলেন যে, এটা বৈধ।
উল্লেখ্য, হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ঐ বুযুর্গ ব্যক্তি যাকে দেওবন্দী, ওহাবী ও লা-মাযহাবীরা অত্যন্ত জোর গলায় মেনে থাকে
“ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ভূমিকায় বর্ণিত আছে, হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
انى لا تبسرك بابى حنيفة واجئ الى قبره فاذا عرضت لى جاجة صليت ركعتين وسألت الله عند قبره فتقضى سريعا.
অর্থঃ- “আমি হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মাযার শরীফ হতে বরকত হাছিল করি এবং তাঁর মাযার শরীফে আসি। য৩খন আমার কোন প্রয়োজন সম্মুখীন হয় তখন আমি দু’ রাকায়াত নামায আদায় করি এবং হযরত ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মাযার শরীফের নিকট দাঁড়িয়ে আল্লাহ তায়ালার নিকট দুয়া করি তখন সহসাই প্রয়োজন মিটে যায়।
মাযহাবের এই ইমাম অর্থাৎ ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মাযার শরীফকে দুয়ার ওসীলা হিসেবে গ্রহণ করতঃ সেখানে সফর করে আসতেন এবং তাঁর ওসীলা দিয়ে দুয়া করতেন।
‘হিসনে হাসীন’ কিতাবে দুয়ার আদব বর্ণনা করা হয়েছে। এতে ‘বুখারী শরীফ ও মুসনাদে বায্্যাব’ -এর বরাত দিয়ে দুয়ার এক আদব প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে,
وان يتوسل اى الله تعالى بالانبياء والصلحين من عباده.
অর্থঃ- “দুয়ার প্রার্থনা করবে হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস্্ সালাম ও নেক্্কার বান্দা তথা হযরত আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা নিয়ে।”
অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা নবী ও ওলীগণ দুয়া কবুল হওয়ার ওসীলা।
সুলতান মাহমুদ গজনবী যখন সোমনাথের উপর হামলা করতে গেলেন তখন তিনি হযরত শায়খ আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর জুব্বা মুবারক সামনে রেখে দুয়া করলেন, মাওলা! এ জুব্বা শরীফের ওসীলায় বিজয় দান করুন। আল্লাহ পাক সুলতানের দুয়া কবুল করে তাঁকে বিজয় দান করলেন। সে বিজয় আজ পর্যন্ত স্মরণীয় হয়ে আছে। আর আল্লাহ পাক-এর বিশিষ্ট ওলী হযরত আবুল হাসান খারকানী রহমুতল্লাহি আলাইহি স্বীয় জুব্বা মুবারক এজন্য দান করেছিলেন যে, যা দুয়া কবুল ও বিজয় লাভের ওসীলা হিসেবে গ্রহণ করা হবে। (চলবে)
মুহম্মদ আহমাদুর রহমান, পটিয়া, চট্টগ্রাম
মুহম্মদ মাসউদুল হক (ফাহিম) সোনাইমুরি, নোয়াখালী
সুওয়ালঃ- পটিয়া জমিরিয়া খারিজী মাদ্্রাসার অখ্যাত পত্রিকা অক্টোবর+নভেম্বর/২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় সমস্যা ও সমাধান বিভাগে প্রদত্ত একটি সমাধানের প্রেক্ষিতে যে বিষয়গুলো আমরা জানতে ইচ্ছুক তা হলো-
১। মহান আল্লাহ পাক কি সত্যিই বেগানা পুরুষকে বেগানা মহিলার চেহারা দেখার অনুমতি দিয়েছেন?
২। কোন সূরার কত নং আয়াত শরীফে বেগানা মহিলার চেহারা দেখা জায়িয হওয়ার অনুমতি রয়েছে?
৩। নামায, হজ্জ সাক্ষ্যদান ইত্যাদি সময়ে চেহারা খোলা রাখা বৈধ এটা কতটুকু সঠিক? এর কি কোন ব্যাখ্যা রয়েছে?
৪। “আল্লাহ পাক চেহারা সতরের অন্তর্ভূক্ত করেননি। কিন্তু উলামায়ে কিরাম চেহারা খোলা রাখাকে নাজায়িয বলেছেন” তাদের এ বক্তব্য দ্বারা কি এই প্রমাণিত হয় না যে, উলামায়ে কিরাম আল্লাহ পাক-এর বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়েছেন। (নাউযুবিল্লাহ)
৫। খারেজী মাদ্্রাসার সরকারী স্বীকৃতি দ্বীনি জরুরতের মধ্যে পরে কি? আর এরূপ জরুরতে বেপর্দা হওয়ার অনুমতি আছে কি?
৬। যদি ফিৎনার কোন আশঙ্কা না থাকে তবে কি বেপর্দা হওয়া বা বেগানা মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাত করা জায়িয রয়েছে?
৭। “চোখের যিনা হলো বেগানা লোককে দেখা,” এ হাদীছ শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা কি? যদি খাহেশাতের সাথে দৃষ্টি না দেয় তবেও কি তা ব্যাভিচার বলে গণ্য হবে?
উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ-পটিয়া খারেজী মাদ্্রাসার মৌলবী ছাহেবরা মূলতঃ হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা বা উলামায়ে ‘ছূ’-এর অন্তর্ভুক্ত। তাই হারা নিজেদের বথিত শীর্ষস্থানীয় উলামাদের বাঁচাতে নির্লজ্জভাবে কুরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যা করেছে, আল্লাহ পাক, তাঁর রসূল ও হক্কানী উলামায়ে কিরামকে দোষারূপ করেছে, বেপর্দাকে সুকৌশলে জায়িয করে শরীয়ত পাল্টে দিয়ে নতুন শরীয়ত প্রকাশ করে নব্য কাদিয়ানী হিসেবে নিজেদেরকে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত প্রতিটি বিষয় বিস্তারিতভাবে ও দলীলের মাধ্যমে পর্যালোচনা করলে এটাই সুস্পষ্ট প্রমাণিত তবে। তাই নিম্নে সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিকভাবে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-
(ধারাবাহিক)
৪। “আল্লাহ পাক চেহারা সতরের অন্তর্ভুক্ত করেননি কিন্তু উলামায়ে কিরাম চেহারা খোলা রাখাকে নাজায়িয বলেছেন” পটিয়া খারিজী মাদ্্রাসার মৌলভী ছাহেবদের এ বক্তব্য দ্বারা কি এই প্রমাণিত হয় না যে, উলামায়ে কিরাম আল্লাহ পাক-এর বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়েছেন। (নাউযবিল্লাহ)
(দ্বিতীয় অংশ)
এর জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, “আল্লাহ পাক চেহারা সতরের অন্তর্ভুক্ত করেননি” তাদের একথা যে ডাহা মিথ্যা ও কুফরীমূলক হয়েছে তা বিগত কয়েকটি সংখ্যায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনা ও বুঝার সুবিধার্থে এখানেও সংক্ষেপে তা উল্লেখ করা হলো। অর্থাৎ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া হলো মহান আল্লাহ পাক সরাসরী কুরআন শরীফের আয়াতে শরীফ দ্বারাই মহিলাদের চেহারাকে সতর বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক ‘সূরা আযহাবের’ ৫৯নং আয়ত শরীফে ইরশাদ করেন,
یایها النبی قل لازواجک وبنتک ونساء المؤمنین ید نین علیهن من جلا بیبهن ذلک ادنی ان یعرفن فلایؤذین وکان الله غفورا رحیما.
অর্থঃ- “হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার আহ্লিয়া অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীনগণকে, কন্যাগণকে এবং মু’মিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের মুখম-লের উপর ঝলিয়ে রাখে। এতে তাঁদেরকে চিনা সহজ হবে। ফলে তাঁদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ পাক ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” (সূরা আহযাব/৫৯)
উল্লিখিত আয়াত শরীফের মূল বিষয় হলো-
ید نین علیهن من جلا بیبهن
“তারা যেন তাদের মুখম-লের উপর “জিলবাব’ جلباب চাদর বা পর্দা ঝুলিয়ে রাখে।
নিম্নে এ আয়াত শরীফের হুকুম সম্পর্কিত আলোচনা বিশ্ব বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থসমূহ থেকে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো।
নিম্নে এ আয়াত শরীফের হুকুম সম্পর্কিত আলোচনা বিশ্ববিখ্যাত নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ সমূহ থেকে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো।
তাফসীরে গারাইবুল কুরআন ওয়া রাগাইবুল ফুরক্বান লিন্্ নীশাপুরী ১০ম জিঃ ৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(يدنين عليهن) يرخين عليهن يقال للمرأة اذا زل الثوب عن وجهها ادنى ثوبك على وجهك ومعنى التبعيض فى (من جلا بيبهن) ان يكون للمرأة جلابيب.
অর্থঃ- “(তারা যেন ঝুলিয়ে রাখে) মহিলারা যেন নিজের উপর দিয়ে চাদরের একটা অংশ ঝুলিয়ে রাখে। যখন তাদের মুখের উপর থেকে কাপড় সরে যাবে, তখন তোমরা তাদের কাপড় চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিবে। অর্থাৎ কাপড়ের অংশ। (চাদরের কিয়দাংশ) এভাবে মহিলাদেরকে মাথা ও চেহারা ঢেকে রাখতে বলা হয়েছে।”
তাফসীরে রুহুল বয়ান ৭ম জিঃ ২৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(يدنين عليهن من دلا بيبهن) ……….. ومن للتبعيض لان المراة ترخى بعض دلبنا بها وتتلفع ببعض (والتلفع: جامه بسر تا. ى در كرفت) والمعنى يغطين بها وجوههن وابدا نهى وقت خروجهن من بيوتهن لحاجة ولا يخرجن مكشوفات الوجوه والابدان كالاماء حتى لايتعرض لهن السفهاء ظنا بانهن اماء.
অর্থঃ- “(তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ চেহারার উপর ঝুলিয়ে রাখে। من جلابیبهن এর من ‘মিন’ অবায়টি আংশিক অর্থজ্ঞাপক। কেননা মহিলারা প্রশস্ত ওড়নার একটা অংশ সামনে ঝুলিয়ে রাখে যার অর্থ হলো, মহিলারা বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ার সময় যা ঘরে তাদের মুখম-ল এবং সমস্ত শরীর ঢেকে রাখে। তারা দাসীদের মত তাদের মুখম-ল ও শরীর খোলা না রাখে। যাতে অজ্ঞ লোকেরা ধারণা করার সুযোগ না পায় যে, তারা দাসী।”
তাফসীরে রুহুল মায়ানী ১২ জিঃ ৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(قل لازواجك وبنا تك ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلا بيبهن) …………. الجلابيب جمع جباب وهو على ماروى عن ابن عباس الذى يستر من فوق الى اسفل.
অর্থঃ- “(আপনি আপনার আহলিয়াগণকে, কন্যাগণকে এবং মু’মিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ তাদের চেহারার উপর ঝুলিয়ে রাখে) جلا بیب ‘জালাবীব’ শব্দটি جلباب ‘জিলবাব’ শব্দের বহুবচন। এর মর্ম সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন যে, ‘জিলবাব’ হচ্ছে এমন চাদর যা মাথা থেকে পা পর্যন্ত আপদমস্তক ঢেকে রাখে।
এছাড়াও আরো বহু নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থেই মহিলাদের চেহারাকে সতর বা পর্দার অন্তর্ভূক্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ স্বয়ং আল্লাহ পাকই মহিলাদের চেহারাকে সতরের অন্তর্ভূক্ত করে দিয়েছেন।
কাজেই “আল্লাহ পাক মহিলাদের চেহারাকে সতরের অন্তর্ভূক্ত করেননি এ কথা মহান আল্লাহ পাক-এর প্রতি মিথ্যারোপের শামিল বা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। (চলবে)