সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ১৪৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ মনজুরুল হক, গুলবাগ, ঢাকা।
মুহম্মদ শরফুদ্দীন, দারোগাহাট রোড, চট্টগ্রাম।
সুওয়াল: ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ এবং ‘দৈনিক আল ইহসান’ পত্রিকার বরাত দিয়ে ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন জিলায় দেয়াল লিখনিতে বেশ কিছু মাসয়ালা উল্লেখ করা হয়েছে। যে মাসয়ালাগুলো মূলত: মানুষের ঈমান—আক্বীদা ও আমলের ক্ষেত্রে অতীব জরুরী। যেমন, ‘ইসলামের নামে ভোট, গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, মৌলবাদী দাবী করা, বেপর্দা হওয়া, ছবি তোলা, টিভি দেখা, টিভিতে প্রোগ্রাম করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া হারাম, নাজায়িয ও কুফরী।’ ‘যে সব মাওলানা টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করে তারা উলামায়ে ‘ছূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী আলিম’ ইত্যাদি।
কিন্তু হাটহাজারী মাদ্রাসার মুখপত্র মাসিক মুঈনুল ইসলাম আগস্ট—২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এক জিজ্ঞাসার সমাধানে দলীলবিহীন ও মনগড়াভাবে হরতাল করা, লংমার্চ করা, মৌলবাদী দাবী করাকে জায়িয বলা হয়েছে।  আরো বলা হয়েছে, ‘টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করার কারণে (প্রোগ্রামকারী মাওলানাদেরকে) উলামায়ে ‘ছূ’ বলা জায়িয হবে না।’
এখন আমাদের সুওয়াল হলো— মাসিক মুঈনুল ইসলাম পত্রিকার প্রদত্ত্ব সমাধান কতটুকু সঠিক? তা কুরআন—সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে জানতে ইচ্ছুক।
জাওয়াব:  মাসিক মুঈনুল ইসলাম পত্রিকার উল্লিখিত জিজ্ঞাসার সমাধান সম্পূর্ণরূপে কুফরী হয়েছে।
কারণ, শরীয়তে কোন হারাম বা নাজায়িয বিষয়কে হালাল বা জায়িয সাব্যস্ত করা কুফরী। যেমন, আকাঈদের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
استحلال المعصية كفر.
অর্থঃ— “কোন গুনাহ্র বিষয়কে অর্থাৎ হারাম বা নাজায়িয বিষয়কে হালাল বা বৈধ জানা কুফরী।”(আক্বাইদে নছফী)
উল্লেখ্য, ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ এবং ‘দৈনিক আল ইহসান’ পত্রিকার বরাত দিয়ে যে সকল মাসয়ালা বা ফতওয়া দেয়াল লিখনিতে প্রচার করা হয়েছে, হচ্ছে ও হবে তা সবই কুরআন ও সুন্নাহ সম্মত। এবং উক্ত মাসয়ালা বা ফতওয়ার পিছনে রয়েছে অকাট্য ও অসংখ্য দলীল—আদিল্লাহ। যেমনঃ
(ধারাবাহিক)
৪. টিভিঃ শরীয়তে টিভি দেখা ও টিভিতে অনুষ্ঠান করা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম। কারণ টিভিতে জানদার প্রাণীর ছবির মাধ্যমে অনুষ্ঠান বা প্রগ্রাম করা হয়।
শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রাণির ছবি তোলা, আঁকা, রাখা, সম্পূর্ণ হারামের অন্তভুর্ক্ত।
“বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ” ইত্যাদি সমস্ত বিশ্বস্ত হাদীছ শরীফের কিতাবসমূহে “ছবি তোলা শক্ত হারাম” বলে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.
অর্থঃ— “নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দিবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ)
ان من اشد اهل النار يوم القيامة عذابا المصورون.
অর্থঃ— “নিশ্চয় ক্বিয়ামতের দিন দোযখবাসীদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে বা তোলে।” (মুসলিম শরীফ)
ان اشد الناس عذابا يوم القيامة الذين يشبهون بخلق الله.
অর্থঃ— “নিশ্চয় ক্বিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে আল্লাহ পাক—এর সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছূরত তৈরী করে।” (নাসাঈ)
من صور صورة عذبة الله حتى ينفخ فيها يعنى الروح وليس ينافخ فيها.
অর্থঃ— “যে ব্যক্তি কোন প্রাণীর ছবি তৈরী করবে, আল্লাহ্ পাক তাকে ঐ ছবির মধ্যে প্রাণ না দেয়া পর্যন্ত শাস্তি দিবেন। কিন্তু সে তার মধ্যে প্রাণ দিতে সক্ষম হবে না।” (তিরমিযী শরীফ)
উল্লেখ্য, টিভিতে যেহেতু ছবির সাহায্যে প্রোগ্রাম করা হয় সেহেতু যারা প্রোগ্রাম করে এবং যারা দেখে পুরুষ—মহিলা প্রত্যেকেই পর্দা তরক করে থাকে। অথচ পর্দা করা ফরযে আইন আর বেপর্দা হওয়া কবীরা গুণাহ।
কুরআন শরীফে “সূরা নিসা, সূরা নূর ও সূরা আহযাব” ইত্যাদি সূরাসমূহে পর্দা করার ব্যাপারে কঠোর আদেশ নির্দেশ করা হয়েছে।
যেমন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم ويحفظوا فروجهم ذلك ازكى لهم ان الله خبير بما يصنعون. وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن ويحفظن فروجهن ولايبدين زينتهن.
অর্থঃ— “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি মু’মিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত—আবরু হিফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতার কারণ। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তারা যা করে তার খবর রাখেন। আর আপনি মু’মিনাদেরকে বলুন, তারাও যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত—আবরু হিফাযত করে ও তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (সূরা নূর—৩০,৩১)
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
لعن الله الناظر والمنظور اليه.
অর্থঃ— “যে দেখে এবং যে দেখায় উভয়ের প্রতি আল্লাহ পাক—এর লা’নত।” (বায়হাক্বী ফি শুয়াবিল ঈমান, মিশকাত, মিরকাত)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাক এবং আল্লাহ্ পাক—এর হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাদীছ শরীফ দ্বারা সরাসরি পর্দাকে ফরয করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় বরং চোখের দৃষ্টিসহ সমস্ত অঙ্গ—প্রত্যঙ্গকে হিফাযত করে পর্দা করতে বলেছেন।
যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
العينان زناهما النظر والاذنان زناهما الاستماع واللسان زناه الكلام واليد زناها البطش والرجل زناها الخطى والقلب يهوى ويمنى ويصدق ذلك الفرج اويكذبه.
অর্থঃ— “চোখের ব্যভিচার হলো দৃষ্টি করা, কানের ব্যভিচার হলো শ্রবণ করা, মুখের ব্যভিচার হলো কথা বলা, হাতের ব্যভিচার হলো স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার হলো ধাবিত হওয়া, অন্তর চায় ও আকাঙ্খা করে এবং লজ্জাস্থান সেটাকে সত্য অথবা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে।” (বুখারী শরীফ, কানযুল উম্মাল)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
لاتتبع النظرة النظرة فان لك الاولى وليست لك الاخرة.
অর্থঃ— “তোমরা দৃষ্টিকে অনুসরণ করোনা। প্রথম দৃষ্টিকে ক্ষমা করা হবে (যদি তা ইচ্ছাকৃত না হয়) কিন্তু পরবতীর্ দৃষ্টিকে ক্ষমা করা হবেনা। অর্থাৎ পরবতীর্ প্রতি দৃষ্টিতে একটা করে কবীরা গুণাহ্ লিখা হবে।” (আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ, দারিমী, মিশকাত, মিরকাত)
অর্থাৎ যারা বেপর্দা হয়ে থাকে হাদীছ শরীফের বর্ণনা মুতাবিক তারা সমস্ত অঙ্গ—প্রত্যঙ্গের দ্বারা অবৈধ কাজ তথা ব্যভিচারে মশগুল বা লিপ্ত। অতএব, টিভি দেখা ও টিভিতে প্রোগ্রাম করা কোনমতেই জায়িয নেই। বরং তা শক্ত হারাম ও কবীরা গুণাহ্র অন্তর্ভূক্ত
কাজেই, যে সমস্ত মাওলানা টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করে ও টেলিভিশন দেখে তারা দু’ শ্রেণীতে বিভক্ত।
প্রথম শ্রেণীঃ যারা টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করা ও টেলিভিশন দেখা হারাম জেনে করে ও দেখে তারা শরীয়তের দৃষ্টিতে ফাসিকের অন্তভুর্ক্ত। দ্বিতীয় শ্রেণীঃ যারা টেলিভিশন দেখা ও টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করা জায়িয মনে করে শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদের উপর কুফরীর ফতওয়া বর্তাবে। কোন মুসলমান কুফরী করলে সে মুরতাদ হয়ে যায়।
শরীয়তে মুরতাদের শাস্তি হচ্ছে— তার যিন্দিগীর সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। বিয়ে করে থাকলে তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। হজ্জ করে থাকলে তা বাতিল হয়ে যাবে। তার ওয়ারিছ সত্ত্ব বাতিল হয়ে যাবে। তার তওবার জন্য সময়সীমা হচ্ছে তিনদিন। এর মধ্যে তওবা না করলে ইসলামী খিলাফতের তরফ থেকে তার একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। সে মারা গেলে তার জানাযা, দাফন, কাফন কোনটিই জায়িয নেই। বরং তাকে কুকুর—শৃগালের মত গর্তে পূঁতে রাখতে হবে।
কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
بان الذين كفروا وماتوا وهم كفار فلن يقبل من احدهم ملء الارض ذهبا ولو افتدى به اولئك لهم عذاب اليم وما لهم من نصرين.
অর্থঃ— “নিশ্চয়ই যারা কাফির এবং কুফরী অবস্থায় মারা গেছে, তারা যদি যমীন পরিপূর্ণ স্বর্ণ তার ফিদিয়া বা কাফ্ফারা বাবদ দেয় (আমার থেকে বাঁচার জন্যে), তা কখনো গ্রহণ করা হবেনা। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব এবং তাদের জন্য কোন সাহায্যকারীও থাকবেনা। (সূরা আলে ইমরান—৯১)    (চলবে)
মুহম্মদ আসিফ মহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন, মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা।
সুওয়াল: ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই—২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে মাসিক মুহীনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খণ্ডন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুহীনুল ইসলাম’ জুন—২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা—সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো—
….. ৩. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম একটি নিম্ন শ্রেণীর কাজকেও বর্ণনা করতে সংকোচবোধ করেননি। আর মুনাজাত এমন এক কাজ যা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযান্তে প্রকাশ্যভাবে পাঁচবার যদি করতেন তবে কেন তার কোন বর্ণনা করা হয়নি। …….
এখন সুওয়াল হলো— “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাটহাজারীর খারিজী—ওহাবী মৌলবীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান—আমল হেফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি।
জাওয়াব: “ফরজ নামাযের পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার স্বপক্ষে কোন বর্ণনা নেই” হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও দলীলবিহীন। কেননা “ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করার স্বপক্ষে একটি, দুটি নয় বরং অসংখ্য ফে’লী ও ক্বওলী হাদীছ শরীফ রয়েছে যে সকল হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্বয়ং আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিজেও ফরজ নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন।
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
যেমন, হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করতেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণও স্বর্ণের আংটি বানিয়ে ব্যবহার করা শুরু করলেন। কিন্তু যখন স্বর্ণ ব্যবহার পুরুষের জন্য সম্পূর্ণ হারাম হয়ে যায়, তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আংটিটি খুলে ফেলে দিলেন এবং বললেন, “আমি আর কখনও এটা ব্যবহার করবো না।” তখন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সকলেই তাঁদের আংটিগুলো খুলে ফেলে দিলেন। এটাই ছিল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের আখিরী রসূল, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণের নমুনা। এরকম হাজারো লাখো ঘটনার দ্বারা প্রমাণ করা সম্ভব যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সব ব্যাপারে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর অনুসরণ—অনুকরণ করেছেন। কেবলমাত্র যেসব ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছে, ঐ নিষেধ মানাও অনুসরণ। অনুকরণের অন্তভূর্ক্ত।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে হুকুম না দেয়া সত্বেও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর অনুসরণের লক্ষ্যে সকলেই জুতা ও আংটি মুবারক খুলে ফেললেন।
এটাই যদি হতে পারে, তবে যেখানে ফরজ নামাযের পর দোয়া কবুল হওয়ার সুসংবাদ দেয়া হয়েছে এবং সম্মিলিতভাবে দোয়া কবুল হয় বলে ছহীহ্ ক্বাওলী হাদীছ শরীফ রয়েছে এবং যেখানে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং হাত মুবারক উঠালেন, সেখানে উপস্থিত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ হাত উঠাননি এরূপ ধারণা তারাই করতে পারে— যাদের, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে কতটুকু অনুসরণ—অনুকরণ করতেন, সে সম্পর্কে মোটেও ইল্ম নেই এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মান—মর্যাদা সম্পর্কে নেহায়েত অজ্ঞ ও মূর্খ।
কাজেই হযরত আসওয়াদ আমিরী রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফের ইবারত দ্বারা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের হাত না উঠানো যতটুকু প্রমাণিত হয়, তার চেয়ে বেশী প্রমাণিত হয় হাত উঠানোর।
কারণ হাদীছ শরীফে স্পষ্ট বলা হয়নি যে, “আখিরী রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাত মুবারক উঠালেন কিন্তু আমরা হাত উঠাইনি।”
এখন মুনাজাত বিরোধীদের নিকট আমাদের জিজ্ঞাসা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর সাথে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ হাত উঠাননি, এরূপ স্পষ্ট বর্ণনা আপনারা একটিও দেখাতে পারবেন কি? কখনো নয়। তবে কিসের ভিত্তিতে বলেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ হাত উঠাননি?
اما الدعاء اجتماعا فهو ايضا ثبت بحديث رواه الحاكم وقال على شرط مسلم مرفوعا— قال النبى صلى الله عليه وسلم لا يجتمع ملاء فيدعو بعضهم ويأمن بعضهم الا استجاب الله دعائهم.
অর্থঃ— “মূলতঃ সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করাও হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে। যেটা হযরত হাকিম রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, এ হাদীছ শরীফখানা হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি—এর শর্তানুসারে মরফূ হিসাবে সাব্যস্ত। (হাদীছ শরীফখানা হলো— আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সম্মিলিত মুনাজাতে কিছু লোক মুনাজাত করলো, আর কিছু লোক আমীন বললো, আল্লাহ পাক অবশ্যই তাদের এ মুনাজাত কবূল করবেন।” (আল মুরীদ ইলাল মুরাদ, অনুরূপ সাবাহাতুল ফিক্র ও কিতাবুল আয্কারে বর্ণিত রয়েছে)
كان فى زمن النبى صلى الله عليه وسلم رجل يقال له ابودجانة فاذا صلى الصبح خرج من المسجد سريعا ولم يحضر فسأله النبى صلى الله عليه وسلم الدعاء من ذالك فقال ان جارى له نخلة يسقط رطبها فى دارى ليلا من الهواء— فاسبق اولادى قبل ان يستيقظوا فاطرحه فى داره فقال النبى صلى الله عليه وسلم لصاحبها يعنى نخلتك بعشر نخلات فى الجنة عروقها من ذهب احمر وزبرجد اخضر والغصانها من اللؤلؤ الابيض— فقال لا ابيع حاضر الغائب فقال ابوبكر صديق رضى الله عنه قد اشتريتها منه بعشر نخلات فى مكان كذا ….. الخ.
অর্থঃ— “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর সময় হযরত আবূ দাজানা রহমতুল্লাহি আলাইহি নামক এক ব্যক্তি ছিল। তিনি একদিন ফজরের নামায (জামায়াতে) আদায় করে, মুনাজাতে শরীক না হয়ে দ্রুতবেগে মসজিদ হতে বের হয়ে গেলেন। পরবতীর্তে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবূ দাজানা রহমতুল্লাহি আলাইহিকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন যে, (তুমি কেন মুনাজাতে হাজির না থেকে তাড়াতাড়ি চলে গেলে?) হযরত আবূ দাজানা রহমতুল্লাহি আলাইহি উত্তর দিলেন— আমার প্রতিবেশীর একটি খেজুর গাছ রয়েছে, রাত্রিবেলায় ঝড়ে উক্ত গাছের খেজুর আমার সিমানায় পড়ে, আমার সন্তানগণ ঘুম হতে উঠার পূর্বেই আমি সেখানে পেঁৗছে যাই এবং উক্ত খেজুরগুলো কুড়ায়ে তার সিমানায় পেঁৗছে দেই। (যেন আমার সন্তানগণ উক্ত খেজুর খেয়ে পরের হক্ব নষ্ট না করে)
অতঃপর রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবূ দাজানা রহমতুল্লাহি আলাইহি—এর উত্তর শুনে, উক্ত খেজুর গাছের মালিককে বললেন— তোমার খেজুর গাছটি বেহেস্তী লাল, সোনালী ও সবুজ, হলুদ শিকড় ও সাদা মুতি—জহরতের ডালা বিশিষ্ট দশটি খেজুর গাছের বিণিময়ে আমার নিকট বিক্রি করে দাও। সে ব্যক্তি বললো— আমার বিদ্যমান গাছটিকে অদৃশ্য গাছের বিণিময়ে বিক্রি করবোনা। তখন হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  বললেন, তাহলে আমি আমার অমুক স্থানের দশটি খেজুর গাছের বিণিময়ে এই খেজুর গাছটি (হযরত আবূ দাজানা রহমতুল্লাহি আলাইহি—এরর জন্যে) কিনে নিলাম …. ।” (সুবহানাল্লাহ্) (নুজহাতুল মাজালিস লি আবদিল হক্ব মুহাদ্দিস দেহ্লভী)
উক্ত ঘটনার মধ্যে বিশেষভাবে লক্ষনীয় বিষয় হলো, বলা হয়েছে—
ولم يحضر فى الدعاء অর্থাৎ— “হযরত আবূ দাজানা  রহমতুল্লাহি আলাইহি মুনাজাতে উপস্থিত না হয়ে দ্রুতবেগে চলে গেলেন।” একথা বলা হয়নি যে, ولم يدع অর্থাৎ— “মুনাজাত করলেন না।”
সুতরাং এতে স্পষ্টই বুঝা যায় যে, তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করতে ছিলেন।
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, ফরজ নামাযের পর হাত উঠিয়ে ও সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার অসংখ্য বর্ণনা হাদীছ শরীফে রয়েছে। আর হাদীছ শরীফে রয়েছে বলেই অনুসরনীয় ইমাম, মুজতাহিদ তথা ফক্বীহগণ নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে এমনকি হাটহাজারী মৌলভীদের মুরুব্বীরা তাদের কিতাবে “ফরজ নামাযের পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করাকে মুস্তাহাব—সুন্নত বলে” ফতওয়া দিয়েছেন। যেমন,
استحباب الذكر عقيب الصلوة لانها اوقات فاضلة يرتجى فيها اجابة الدعاء.
অর্থঃ— “নামাযের পর যিকির অর্থাৎ তাস্বীহ্—তাহ্লীল পাঠ করা মুস্তাহাব। কেননা উহা উত্তম সময়ের অন্তভূর্ক্ত। আর তাই ফরজ নামাযের পর মুনাজাত কবূল হওয়ার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।” (উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী)
واستدل البخارى بمشروعية الذكر بعد الصلوة على مشروعية الدعاء بعدها.
অর্থঃ— “হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি শরীয়ত মতে নামাযের পর মুনাজাতের বিধান রয়েছে, এ কথার প্রমাণ পেশ করেছেন নামাযের পর যিকিরের বিধান থাকার ভিত্তিতে।” (ফতহুল মুলহিম শরহে মুসলিম)
وقال الحافظ وما ادعاه من النفى مطلقا مردود فقد يبت عن معاذ بن جبل ان النبى صلى الله عليه وسلم قال له يا معاذ انى والله احبك … وحديث ابى بكرة فى قول اللهم انى اعوذ بك …. كان النبى صلى الله عليه وسلم يدعو بهن دبر كل صلوة.
অর্থঃ— “হাফিজুল হাদীছ, ইবনে হাজর আস্ক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ফরজ নামাযের পর দোয়া করা যাবেনা বলে যে দাবী করা হয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত রয়েছে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন— হে মুয়াজ! আল্লাহ পাক—এর কসম! আমি তোমাকে ভালবাসি…. তুমি প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর এ দোয়া করতে ছাড়বেনা। হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  হতে বর্ণিত আছে— হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক নামাযের পর এ দোয়া করতেন। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযূবিকা ……।” (ফতহুল মুলহিম শরহে সহীহ্ মুসলিম)
ان الصلوة جعلت فى خير الساعات فعليكم بالدعاء خلف الصلوة.
অর্থঃ— “নিশ্চয় নামাযকে উত্তম সময়ে নির্ধারিত করা হয়েছে। সুতরাং তোমাদের নামাযের পর মুনাজাত করা কর্তব্য।” (ইহ্ইয়াউ উলুমুদ্দীন)
فاذا فرغت من الصلوة فارغب للدعاء الى الله تعالى فانه اقرب الى الاجابة.
অর্থঃ— “যখন (ফরজ) নামায শেষ করবে, তখন আল্লাহ পাক—এর দরবারে মুনাজাত করবে, কেননা ফরজ নামাযের পর মুনাহাত কবূল হওয়া অধিক নিকটবতীর্।” (মাব্ছূত লিস্ সারাখসী, অনুরূপ তুহ্ফাতুল মারগুবা কিতাবেও বর্ণিত আছে)
উল্লিখিত বর্ণনায় ফরয, নফল বা কোন সময়ের নির্ধারণ ছাড়াই সম্মিলিত মুনাজাত কবুল হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং উপরোক্ত বর্ণনাসমূহ ফরয নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাত জায়িয হওয়ারই প্রমাণ বহন করে।
প্রদত্ত সুওয়াল—জাওয়াবের টীকা ভাষ্যঃ
ফরয নামাযের পর মুনাজাত করার স্বপক্ষে গত সংখ্যায় অনেক ফে’লী ও ক্বওলী হাদীছ শরীফের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। যথাঃ তিরমিযী, ইলাউস্ সুনান, নাসাঈ, বুখারী, মুসলিম, আবূ দাউদ শরীফসহ আরো অনেক দলীল দেয়া হয়েছে। মুনাজাত বিরোধীরা হযরত আসওয়াদ আমেরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু—এর বর্ণিত হাদীছ শরীফ উল্লেখ করে সম্মিলিতভাবে মুনাজাতের বিপক্ষে যে কথা বলেছে তার শক্ত ও সঠিক জাওয়াব গত সংখ্যায় দেয়া হয়েছে এবং বর্তমান সংখ্যায়ও রয়েছে।
ড এ সংখ্যায় তার পাশাপাশি অনুসরনীয় ইমাম—মুজতাহিদগণ যে ফরয নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাতকে মুস্তাহাব—সুন্নত বলেছেন তার প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। (চলবে)
মুহম্মদ সেলিম আহমদ
পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল।
সুওয়াল: হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী—২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা—সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত—অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত মীলাদ—ক্বিয়ামের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল—২০০৫ ঈসায়ী ও মে—২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী—২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।
তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো—
৩. নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর সম্মানে ক্বিয়াম করার প্রমাণ হাদীছ শরীফে উল্লেখ নেই। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর সম্মানে ক্বিয়াম করেননি। (নাউযুবিল্লাহ)
এখন আমার সুওয়াল হলো, ক্বিয়াম সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীল সম্মত? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য জিহালতপূর্ণ ও দলীলবিহীন। কারণ ক্বিয়াম করা হয় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর প্রতি তা’যীম প্রদর্শনার্থে ও আদব রক্ষার্থে। আর কুরআন শরীফে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তা’যীম—তাক্রীম করার ও তাঁর প্রতি আদব রক্ষা করার কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
যেমন, আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
وتعزروه وتوقروه.
অর্থঃ— “তোমরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর খিদমত কর ও তা’যীম কর।” (সূরা ফাত্হ—৯)
আর  সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর সম্মানে বা তা’যীমার্থে ক্বিয়াম করার প্রমাণ সরাসরি খোদ হাদীছ শরীফেও উল্লেখ আছে এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর সম্মানে ক্বিয়াম করেছেন।  এছাড়াও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ একে অপরের জন্যও দাঁড়িয়েছেন।
 শুধু তাই নয় ক্বিয়াম করার জন্য স্বয়ং আল্লাহ্ পাক—এর হাবীব, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে নির্দেশও দিয়েছেন।
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
যেমন, “মিশকাত শরীফ”—এর ৪০৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن ابى سعيد الخدرى رضى الله تعالى عنه قال لما نزلت بنو قريظة على حكم سعد رضى الله تعالى عنه بعث رسول الله صلى الله عليه وسلم اليه وكان قريبا منه فجاء على حمار فلما دنا من المسجد قال رسول الله صلى الله عليه وسلم للانصار قوموا الى سيدكم.
অর্থঃ— “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, বনু কুরাইযা গোত্র যখন হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু এর বিচারকে মেনে নেয়ার শর্তে দুর্গ থেকে অবতরণ করলো। তখন আল্লাহ্ পাক—এর রসূল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুকে ডেকে পাঠালেন। তিনি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর নিকটেই ছিলেন। অতঃপর হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন গাধার পিঠে আরোহন করে মসজিদের নিকটবতীর্ হলেন, তখন আল্লাহ্ পাক—এর রসূল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে বললেন, তোমরা তোমাদের সর্দারের সম্মানে দাঁড়াও।”
(বুখারী শরীফ ১ম খণ্ড ৪২৭ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ ২য় খণ্ড ৯২৬ পৃষ্ঠা,  আবূ দাউদ শরীফ ২য় খণ্ড ৩৬১—৩৬২ পৃষ্ঠা, , শোয়াবুল ঈমান লিল্ বায়হাক্বী ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৪৬৬ পৃষ্ঠার ৮৯২৫—৮৯২৬ নং হাদীছ শরীফ)
 তাছাড়া স্বয়ং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও ক্বিয়াম করেছেন। এবং হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর তা’যীমার্থে বা সম্মানে  দাঁড়িয়েছেন বা ক্বিয়াম করেছেন।
যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت قدم زيد بن حارثة رضى الله تعالى عنه المدينة ورسول الله صلى الله عليه وسلم فى بيتى فاتاه فقرع الباب فقال اليه رسول الله صلى الله عليه وسلم …
অর্থঃ— “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন; একদা হযরত যায়িদ বিন হারিসা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু মদীনা শরীফে আগমন করলেন। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার হুজরা শরীফে ছিলেন। হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু দরজার নিকটে এসে দরজার কড়া নাড়লেন। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (তাঁর মুহব্বতে) দাঁড়ালেন দ্বদ্বদ্বদ্ব।”(তিরমিযী শরীফ ২য় খণ্ড ৯৭—৯৮ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ৪০২ পৃষ্ঠা,)
অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক—এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত যায়িদ বিন হারিসা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুকে খুব বেশী মুহব্বত করতেন। যার কারণে তাঁর আগমনে খুশি হয়ে তাঁর মুহব্বতে ক্বিয়াম করেছেন।
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت مارايت احدا كان اشبه سمتا وهديا ودلا وفى رواية حديثا وكلاما برسول الله صلى الله عليه وسلم من فاطمة رضى الله تعالى عنها كانت اذا دخلت عليه قام اليها فاخذ بيدها فقبلها واجلسها فى مجلسه وكان اذا دخل عليها قامت اليه فاخذت بيده فقبلته واجلسته فى مجلسها.
অর্থঃ— “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, ঞ্জআমি আচার—ব্যবহার, চাল—চলন, উত্তম স্বভাব, অন্য বর্ণনায় রয়েছে কথা—বার্তায় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর সাথে হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা—এর চেয়ে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ আর কাউকে দেখিনি। যখন হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর নিকট যেতেন তখন স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা—এর মুহব্বতে দাঁড়িয়ে তাঁর হাত মুবারক ধরে চুমু খেতেন ও নিজের স্থানে বসাতেন। অনুরূপ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা—এর নিকটে যেতেন তখন হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহাও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর তা’যীমার্থে দাঁড়িয়ে হাত মুবারক ধরে চুমু খেয়ে নিজের স্থানে বসাতেন।” (আবূ দাউদ শরীফ ২য় খণ্ড ৩৬২ পৃষ্ঠা ,শোয়াবুল ঈমান লিল্ বায়হাক্বী ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৪৬৭ পৃষ্ঠার ৮৯২৭ নং হাদীছ শরীফ,  মিশকাত শরীফ ৪০২ পৃষ্ঠা,)
এ কারণেই খোদ হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের গুরু মৌলভী রশীদ আহ্মদ গাংগুহী তদীয় “ফতওয়ায়ে রশীদিয়া” কিতাবের ৪৫৯ পৃষ্ঠায় ুলিখেছে,
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ— “দ্বীনদার লোকের তা’যীমের জন্য দন্ডায়মান হওয়া বা ক্বিয়াম করা জায়িয (সুন্নত)। এরূপ লোকের পদ চুম্বন করাও জায়িয (সুন্নত)। এ কথা হাদীছ শরীফ দ্বারা সাব্যস্ত।”
উপরোক্ত বর্ণনাসমূহ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর সম্মানে ক্বিয়াম করার প্রমাণ সরাসরি হাদীছ শরীফেই উল্লেখ আছে এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ স্বয়ং নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর সম্মানে ক্বিয়াম করেছেন।  এছাড়াও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ একে অপরের জন্যও দাঁড়িয়েছেন। শুধু তাই নয় ক্বিয়াম করার জন্য স্বয়ং আল্লাহ্ পাক—এর হাবীব, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে নির্দেশও দিয়েছেন।
 তাহলে এত দলীল—আদিল্লাহ্ থাকার পরও কি করে একথা বলা যেতে পারে, “নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর সম্মানে ক্বিয়াম করার প্রমাণ হাদীছ শরীফে উল্লেখ নেই। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর সম্মানে ক্বিয়াম করেননি।” (নাউযুবিল্লাহ)
কাজেই, ক্বিয়াম সম্পর্কিত হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, জিহালতপূর্ণ ও সম্পূর্ণই দলীলবিহীন বলে প্রমাণিত হলো।
প্রদত্ত সুওয়াল—জাওয়াবের টীকা ভাষ্যঃ
(ক) বিগত সংখ্যায় বলা হয়েছে,নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর সম্মানে ক্বিয়াম করার প্রমাণ খোদ হাদীছ শরীফেই উল্লেখ আছে। এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণও নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর সম্মানে ক্বিয়াম করেছেন। এছাড়াও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ একে অপরের জন্যও দাঁড়িয়েছেন।
(খ) বর্তমান সংখ্যায়  উক্ত জবাবের মূল কথা হলো, স্বয়ং নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও ক্বিয়াম করেছেন। এবং ক্বিয়াম করার জন্য স্বয়ং আল্লাহ্ পাক—এর হাবীব, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে নির্দেশও দিয়েছেন।
(গ) পরবতীর্ সংখ্যায় প্রমাণ করা হবে, মিশকাত শরীফে বর্ণিত হাদীছ শরীফে দাঁড়িয়ে সালাম করতে নিষেধ করা হয়নি। (চলবে)
মুসাম্মত সানজিদা আক্তার
সভানেত্রী— ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত
মুহম্মদপুর, ঢাকা।
সুওয়াল: অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার—জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার—জবাব ছাপা হয়—
জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …….. তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। …….
উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা—জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো—
….. “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” ….
কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।
তারা তাদের জবাবে প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের সাফাই বর্ণনা করতে যেয়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যা করেছে। সাথে সাথে “ছয় উছূলীদের মধ্যে কুরআন—সুন্নাহ্ বিরোধী কোন আক্বীদা—আমল নেই” বলে তাদের নির্লজ্জ দালালী করে নিজেদেরকে অপব্যাখ্যাকারী ও মিথ্যাবাদীরূপে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিক দলীলভিত্তিক আলোচনা করলেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে।
তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো—
(ধারাবাহিক)
প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো— “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা—আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?”
আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন—সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা—আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, পর্যায়ক্রমে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন—সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলোর সাথে সাথে কুরআন—সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো।
প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন—সুন্নাহ
বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য— ১৭
মুহম্মদ মুযাম্মিলুল হক লিখিত— “তাবলীগ জামায়াত প্রসঙ্গে ১৩ দফা” কিতাবের ১৪ পৃষ্ঠায় লেখা আছে যে, “প্রচলিত তাবলীগ হচ্ছে নবীওয়ালা কাজ।”
এর জাওয়াবে বলতে হয়, প্রচলিত তাবলীগকে তারা যেজন্য নবীওয়ালা কাজ বলতে চায়, সেটা হলো— তারা মনে করে যে, নবী আলাইহিমুস্ সালামগণ যেভাবে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন, তারাও বুঝি সেভাবেই ইসলামের দাওয়াত দেয়। কিন্তু হাক্বীক্বতে এ দু’য়ের মধ্যে আকাশ—পাতাল ফারাক (প্রার্থক্য)। কারণ নবী আলাইহিমুস্ সালামগণ সকলেই মা’রিফাতে পূর্ণ হয়ে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন এবং তা দেয়া হয়েছে কাফিরদেরকে। সে কারণে বলা হয় যে, সকল নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের তাসাউফ এক, কিন্তু শরীয়ত আলাদা।
কিন্তু প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের প্রায় সবাই একেবারেই তাসাউফ শুন্য হয়ে তাদের ছয় উছূল ভিত্তিক দাওয়াত দেয়। যে দাওয়াতটা কিনা মুসলমানদেরই মুখ্যতঃ দেয়া হয়।
কাজেই প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত যা করে, তা মুসলমানকে সাধারণ বা প্রাথমিক তা’লীম—তালক্বীন দেয়া ব্যতীত কিছুই নয়।
প্রসঙ্গক্রমে এখানে আরো কথা এসে যায়, সেটা হচ্ছে এই যে, মাদ্রাসা—মক্তবে কিতাবী দর্স ও তা’লীম দেয়া, মসজিদে, জনসমাবেশে ওয়াজ—নছীহত করা, দ্বীনী ইল্মের জন্য কিতাব প্রনয়ণ করা, সর্বোপরি, পীরানে তরীক্বত, আউলিয়ায়ে কিরামগণ তাঁদের খান্কা শরীফে ও দরগায় এই ইল্মে তাছাউফ ও ইল্মে ফিক্বাহ্ শিক্ষা দেয়া কি তাহলে নবীওয়ালা কাজ নয়? তবে কি এটা শয়তানওয়ালা কাজ? (নাউযুবিল্লাহ্)
যদি কোন ব্যক্তি উপরোক্ত আক্বীদা পোষণ করে, তাহলে সে ঈমান হারা হয়ে কুফরীতে নিপতিত হবে।
উল্লেখ্য যে, যদিও প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা ছূরতান নবীওয়ালা কাজ করে বলে দাবী করে, কিন্তু হাক্বীক্বতান তারা নবীওয়ালা কাজ করেনা। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
وان العلماء ورثة الانبياء وان الانبياء لم يورثوا دينارا ولا درهما وانما ورثوا العلم فمن اخذه اخذ بحظ وافر.
অর্থঃ— “নিশ্চয়ই আলিমগণ নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের ওয়ারিছ এবং নিশ্চয়ই নবী আলাইহিমুস্ সালামগণ কোন দিনার—দিরহাম রেখে যাননি বরং তাঁরা ইল্মে দ্বীন রেখে গিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করলো, সে পূর্ণ অংশ (বিরাট সফলতা) লাভ করলো।” (আহমদ, তিরমীযী)
আখিরী রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,
العلم علمان علم فى القلب فذاك العلم النافع وعلم على اللسان فذالك حجة الله عزوجل على ابن ادم.
অর্থঃ— “ইল্ম দু’প্রকার, একটি হচ্ছে— ক্বাল্বী ইল্ম (ইল্মে তাছাউফ) যা উপকারী ইল্ম। অপরটি হচ্ছে— যবানী ইল্ম (ইল্মে ফিক্বাহ) যা আল্লাহ পাক—এর তরফ থেকে বান্দার প্রতি দলীল স্বরূপ।” (দারিমী, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত)
হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “মিরকাত শরীফে” এ প্রসঙ্গে  উল্লেখ করেন, মালিকী মায্হাবের ইমাম, হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
من تفقه ولم يتصوف فقد تفسق ومن تصوف ولم يتفقه فقد تزندق ومن جمع بينهما فقد تحقق.
অর্থঃ— “যে ব্যক্তি ইল্মে ফিক্বাহ শিক্ষা করলো, কিন্তু ইল্মে তাসাউফ শিক্ষা করলো না, সে ব্যক্তি ফাসিকের অন্তভুর্ক্ত। আর যে ব্যক্তি তাছাউফ করে অর্থাৎ মা’রিফাত চর্চা করে অথচ ইল্মে ফিক্বাহ্ শিক্ষা করেনা অর্থাৎ শরীয়ত মানেনা বা অস্বীকার করে, সে কাফিরের অন্তভুর্ক্ত। আর যে উভয়টাই শিক্ষা করলো, সেই মুহাক্কিক অথার্ৎ সে ব্যক্তিই নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের ওয়ারিছ বা হাক্বীক্বী আলেম।
উল্লেখ্য যে, যিনি ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাছাউফ হাছিল করেছেন, তিনিই হচ্ছেন— নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের ওয়ারিছ বা নায়েবে নবী। যাঁরা নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের ওয়ারিছ বা নায়েবে নবী, তাঁদের পক্ষেই একমাত্র নবীওয়ালা কাজ পুর্ণভাবে করা সম্ভব।
অথচ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উছূলের মধ্যে তাছাউফের কোন শিক্ষাই নেই। শুধু ইল্মে ফিক্বাহ্র শিক্ষা যৎসামান্যই রয়েছে, তাহলে কি করে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের পক্ষে হাক্বীক্বতান নবীওয়ালা কাজ করে বলে দাবী করা সম্ভব?
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও কুরআন—সুন্নাহ তথা শরীয়ত বিরোধী। যার থেকে বেঁচে থাকা সকলের জন্যেই দায়িত্ব ও কর্তব্য। (চলবে)
মুহম্মদ সুলতান মাহমুদ, মিরপুর, ঢাকা।
মুহম্মদ আহমদুল্লাহ কামালী, নরসিংদী।
সুওয়ালঃ মাসিক মদীনা ফেব্রুয়ারী ২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়—
প্রশ্নঃ চুল…রাখার সুন্নত কি?……
উত্তরঃ…চুল রাখার দুই তরীকা, এক বাবরি রাখা, দুই মুণ্ডানো।….(শামী, আলমগীরী, বুখারী, মুসলিম)
আর হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা এপ্রিল/২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা—সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “মাথা মুন্ডানো যদিও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে  হজ্বের মৌসুম ব্যতীত পাওয়া যায় না, কিন্তু হযরত আলী (রাযি.) থেকে মাথা মুন্ডানোর বর্ণনা পাওয়া যায় এবং হযরত আলী (রাযি.)—এর এই আমলের উপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্বীকৃতি পাওয়া যায়। তাই সাহাবীর আমল হিসেবে মাথা মুন্ডানো সুন্নাত।
অন্য এক রেওয়ায়াতে আছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাথা মুন্ডন কারীদের জন্য তিন বার রহমতের দোয়া করেছিলেন। আর হানাফী মাযহাবের গ্রহণযোগ্য কিতাবাদিতেও মাথা মুন্ডানোকে সুন্নাত বলা হয়েছে। (ফাত্ওয়ায়ে আলমগীরি ও শামী)
এখন আমার সুওয়াল হলো— মাথা মুণ্ডন করা সম্পর্কে মাসিক মদীনা ও হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের  উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি মাথা মুণ্ডন করা সুন্নত বা চুল রাখার দুই তরীকার, এক তরীকা? দলীলসহ সঠিক জাওয়াব দিয়ে, আমাদের আক্বীদা আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ মাথার চুল মুণ্ডন করা সম্পর্কে মাসিক মদীনা  ও হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে।  কারণ, মাসিক মদীনা ও হাটহাজারী মৌলভী ছাহেব এবং তাদের সমজাতীয়রা এমন একটি হাদীছ শরীফও উল্লেখ করতে পারবে না, যেখানে উল্লেখ আছে যে, “আল্লাহ্ পাক—এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নুরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্ব ও ওমরাহ ব্যতীত অন্য সময় নিজ মাথার চুল মুবারক মুণ্ডন করেছেন।” বরং অসংখ্য ছহীহ্ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, “আল্লাহ পাক—এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় বাবরী চুল মুবারক রাখতেন। সেহেতু সকল উম্মতে মুহম্মদীর জন্য সর্বদা বাবরী চুল রাখাই দায়িমী সুন্নতের অন্তভুর্ক্ত।
(ধারাবাহিক)
চুল রাখা সম্পর্কে হাটহাজারীর জিহালতপূর্ণ বক্তব্যের খণ্ডন মুলক জবাব—৫
উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভী সাহেবরা বলেছে, “আর হানাফী মাযহাবের গ্রহণযোগ্য কিতাবাদিতেও মাথা মুন্ডানোকে সুন্নাত বলা হয়েছে। (ফাত্ওয়ায়ে আলমগীরি ও শামী) ….।”
এর জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারীর মৌলভী সাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্যও  চরম জিহালতপূর্ণ হয়েছে। কারণ হানাফী মাযহাবের গ্রহণযোগ্য কিতাবাদিতেও শুধুমাত্র মাথা মুন্ডানোকে সুন্নাত বলা হয়নি। বরং সিঁথি বিশিষ্ট বাবরী রাখাকেও সুন্নত বলা হয়েছে।
হাটহাজারীর দলীলের ভুল ব্যাখ্যা উদঘাটন
উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভী সাহেবরা মাথা মুণ্ডন করা সুন্নত বলে তাদের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে  ফতওয়ায়ে আলমগীরী ও শামী, কিতাবের বরাত দিয়েছে। আর উক্ত কিতাবে হযরত ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি—এর মতটিই উল্লেখ করা হয়েছে। আর হযরত ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি হজ্জ ও ওমরার উপর ক্বিয়াস করে মাথা মুণ্ডন করাকে সুন্নত বলেছেন যা মোটেও ছহীহ নয়। কারণ, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (হজ্জ ও ওমরাহ ব্যতীত) অন্য সময় মাথা মুণ্ডন করেছেন এ ধরনের একটি দলীলও তিনি পেশ করেনি। মূলত: কারো পক্ষে পেশ করাও সম্ভব নয়। যদি তাই হয়ে থাকে তবে হজ্ব ও ওমরাহ ব্যতীত অন্য সময় মাথা মুণ্ডন করা কি করে সুন্নতে রসূল হতে পারে?
আর বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবূ দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ্ ইত্যাদি ছিহাহ্ সিত্তাহ্সহ অনেক হাদীছ শরীফের অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা অকাট্টভাবে প্রমাণিত আছে যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদাই ‘বাবরী চুল মুবারক’ রেখেছেন। সম্পূর্ণ হায়াত মুবারকে শুধুমাত্র চারবার (ওমরাহ ও হজ্জ পালন কালে) মাথা মুণ্ডন করেছেন।
যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
عن انس رضى الله تعالى عنه قال اعتمر رسول الله صلى الله عليه وسلم اربع عمر كلهن فى ذى القعدة الا التى كانت مع حجته عمرة من الحد يبية فى ذى القعدة وعمرة من العام المقبل فى ذى القعدة وعمرة من الجعرانة حيث قسم غنائم حنين فى ذى القعدة وعمرة مع حجته.
অর্থঃ— “হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চার বার ওমরাহ করেছেন। প্রত্যেকটি করেছেন যিলক্বদ মাসে। তবে হজ্জের সাথে যেটা আদায় করেছেন সেটা ব্যতীত। (কেননা তা ছিল যিলহজ্জ মাসে) একটি ওমরাহ করেছেন হুদায়বিয়া হতে যিলক্বদ মাসে ৬ষ্ঠ হিজরীতে। একটি তার পরবতীর্ বছর (৭ম হিজরীর) জিলক্বদ মাসে, যাকে ওমরাতুল কাজ্বাও বলা হয়। একটি ওমরাহ করেছেন জি’রানা থেকে, যেখানে তিনি হুনাইনের গণিমত বণ্টন করেছেন; (৮ম হিজরীর) যিলক্বদ মাসে। আর একটি ছিল তাঁর হজ্জের সাথে অর্থাৎ ১০ম হিজরীতে বিদায় হজ্জে।” (বুখারী, মুসলিম)
“জামউল ওসায়িল ফি শারহিশ্ শামায়িল” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ان المصطفى كان لايحلق شعره لغير نسك.
অর্থঃ— “নিশ্চয়ই নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্জ ব্যতীত অন্য কোন সময় তাঁর মাথার চুল মুবারক মুণ্ডন করেননি।”
يحلق رأسه لاجل النسك.
অর্থাৎ— “একমাত্র হজ্জের কারণেই মাথা মুণ্ডন করেছেন। (অন্য কোন কারণে নয়।)”
আর শুধুমাত্র হজ্জ ও ওমরাহ পালন কালে মাথা মুণ্ডন করা সুন্নত বিধায় তিনি হজ্জ ও ওমরাহ—এ মাথা মুণ্ডনকারীদের জন্য তিনবার দোয়া করেছেন। অর্থাৎ হজ্জের মধ্যে হাজীদের জন্য চুল ছোট করা ওয়াজিব এবং চুল মুণ্ডনকরা সুন্নত। যেহেতু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্জ ও ওমরার সময় চুূল মুবারক মুণ্ডন করেছেন। সেহেতু হজ্জ ও ওমরায় চুল মুণ্ডন করা সুন্নতের অন্তভুর্ক্ত।
যেসব হাজী ছাহেবগণ চুল মুণ্ডন করেন তারা ওয়াজিব আদায় করার সাথে সাথে সুন্নতও আদায় করে থাকেন। আর এ সুন্নত আদায় করার কারণেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের জন্য তিনবার দোয়া করেছেন। আর যারা চুল ছোট করে শুধু ওয়াজিব আদায় করেন, সুন্নত আদায় করেন না তাদের জন্য একবার দোয়া করেছেন।
এছাড়া বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবূ দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ্ ইত্যাদি ছিহাহ্ সিত্তাহ্সহ অনেক হাদীছ শরীফের অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা অকাট্টভাবে প্রমাণিত আছে যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদাই ‘বাবরী চুল মুবারক’ রেখেছেন। এবং হজ্জ ও ওমরাহ্ ব্যতীত অন্য সময় কখনোই মাথা মুবারক মুণ্ডন করেননি। সেহেতু হানাফী মাযহাবের গ্রহণযোগ্য কিতাবাদিতেও বলা হয়েছে যে, (হজ্জ ও ওমরাহ্ ব্যতীত) “মাথা মুণ্ডন করা সুন্নত নয়।”
যেমন, “ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ৯ম খণ্ডের  ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থাৎ— (হজ্জ ও ওমরাহ্ ব্যতীত) “মাথা মুণ্ডন করা সুন্নত নয়।”
সুতরাং প্রমাণিত হলো, যেখানে হজ্জ, ওমরাহ্ ব্যতীত আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনই মাথার চুল মুবারক মুণ্ডন করেননি সেখানে “মাথা মুণ্ডন করা সুন্নত” এ প্রশ্নই আসতে পারেনা।
 অতএব, আবারো প্রমাণিত হলো যে, মাথা মুণ্ডন করা সুন্নত নয়। বরং সর্বদা বাবরী চুল রাখাই খাছ সুন্নতে রসূল ছল্লৗাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যা হানাফী মাযহাবের গ্রহণযোগ্য কিতাবাদিতেও দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। যেমন, উক্ত “ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ৯ম খণ্ডের ৯৩ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থাৎ— “চুল রাখার একমাত্র সুন্নত তরীক্বা এটাই যে, চুল মাথার মধ্যখান থেকে সিিঁথ করে রাখবে।” অথার্ৎ বাবরী রাখবে।
 সুতরাং মাথা মুণ্ডন করা সম্পর্কিত হাটহাজারীর  জাহিল মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য ভুল হয়েছে।
প্রদত্ত সুওয়াল—জাওয়াবের টীকা ভাষ্যঃ
 (ক) বিগত সংখ্যায় বলা হয়েছে, “হানাফী মাযহাবের গ্রহণযোগ্য কিতাবাদিতেও শুধুমাত্র মাথা মুন্ডানোকে সুন্নাত বলা হয়নি। বরং হানাফী মাযহাবের গ্রহণযোগ্য কিতাবের  ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য মত হলো, “শুধু মাত্র  সিঁথি বিশিষ্ট বাবরী চুল রাখাই সুন্নত।”
(খ) বর্তমান সংখ্যায়  উক্ত জবাবের মূল কথা হলো,   আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদাই ‘বাবরী চুল মুবারক’ রেখেছেন। এবং হজ্জ ও ওমরাহ্ ব্যতীত অন্য সময় কখনোই মাথা মুবারক মুণ্ডন করেননি।
(গ) পরবতীর্ সংখ্যায় দলীল—আদিল্লাহ্ দ্বারা  ইনশাআল্লাহ প্রমাণ করা হবে যে, হযরত ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি শুধু হজ্বের উপর ক্বিয়াস করে মাথা মুন্ডন করাকে সুন্নত বলেছেন।
আর হযরত ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি—এর উক্ত ক্বিয়াস গ্রহণযোগ্য নয়। (চলবে)
মুহম্মদ মুহিউদ্দীন
সভাপতি— আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত
সন্দ্বীপ শাখা, চট্টগ্রাম।
সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানী মাযহাবের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর— জানুয়ারী/২০০৩—০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে ‘বিতিরের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম এবং বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব পাবে বলে উল্লেখ করেছে।’’ তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ্, নাসায়ী থেকে দলীল হিসেবে কয়েকখানা হাদীছ শরীফও উল্লেখ করেছে।
আর হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ডিসেম্বর/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা—সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, ‘‘বিতির নামাযের পর দুই রাক্আত নফল নামায…  দাঁড়িয়ে পড়া ভাল। কারণ, নফল নামায বিনা কারণে বসে পড়লে অর্ধেক সাওয়াব হয়।”
এখন আমার সুওয়াল হলো— তারা হালকী নফল নামায সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে হাদীছ শরীফগুলো উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য।
তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডনসহ হালকী নফল সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল—আদিল্লাহ্ পেশ করে আমাদের ঈমান—আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ   বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায যাকে “হালকী নফল” বলা হয়, তা দাঁড়িয়ে পড়া সম্পর্কে অখ্যাত মাসিক পত্রিকাদ্বয়ের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং কুরআন—সুন্নাহ্র খিলাফ হয়েছে। এবং ক্ষেত্রবিশেষে কুফরীমূলক হয়েছে।
স্মর্তব্য যে, সাধারণতঃ নফল নামায বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব হলেও বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়াই মুস্তাহাব—সুন্নত, যা উত্তম ও পূর্ণ ছওয়াব এবং অধিক ফযীলতের কারণ।
কেননা আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায কখনও দাঁড়িয়ে আদায় করেননি। বরং বসেই আদায় করেছেন। যা সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।
(ধারাবাহিক)
উল্লেখ্য, রেযাখানীরা ‘বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ ও নাসায়ী শরীফ’ ইত্যাদি কিতাব থেকে দলীল হিসেবে যে বক্তব্য উল্লেখ করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য মোটেও সে রকম নয়। উল্লিখিত কিতাবসমূহের কোন কোন ইবারত কারচুপি করে নিজেদের বাতিল মতকে ছাবিত করার ব্যর্থ কোশেশ করেছে। তারা উল্লিখিত কিতাবের বরাত দিয়ে যে সকল মিথ্যাচারিতা, প্রতারণা ও কারচুপির আশ্রয় নিয়েছে সেগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা ও ফায়সালা তুলে ধরে তার খণ্ডনমূলক আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ্।
রেযা খাঁর হাদীছ জালিয়াতি উদঘাটন
 রেযা খাঁ তার লিখিত “রেজভীয়া” কিতাবের ৩য় খণ্ডে ইবনে মাজাহ্ শরীফের বরাতে দু’জন রাবী থেকে বর্ণিত পৃথক পৃথক দু’ খানা হাদীছ শরীফ একত্রে একখানা করে একজনের নামে চালিয়ে দিয়ে হাদীছ জালিয়াতি করেছে।
যেমন, ইবনে মাজাহ শরীফের বরাতে প্রথম হাদীছ শরীফ খানা হলো, হযরত ام سلمة رضى الله تعالى عنها. (হযরত উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা) থেকে।
অতঃপর ইবনে মাজাহ শরীফের বরাতে দ্বিতীয় হাদীছ শরীফ খানা হলো, হযরত عائشة رضى الله تعالى عنها (হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা) থেকে।
আর হযরত ام سلمة رضى الله تعالى عنها (উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা) থেকে বর্ণিত প্রথম হাদীছ শরীফ খানার সর্বশেষ ইবারত হলো وهو جالس (ওয়া হুয়া জালিসুন) আর وهو جالس (ওয়া হুয়া জালিসুন) এরপর উক্ত হাদীছ শরীফে আর কোন ইবারত উল্লেখ নেই।
আর হযরত عائشة رضى الله تعالى عنها (আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা) থেকে বর্ণিত দ্বিতীয় হাদীছ শরীফ খানার সর্বশেষ ইবারত হলো فاذا اراد ان يركع قام فركع অথচ রেযা খাঁ হযরত عائشة رضى الله تعالى عنها (আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা) থেকে বর্ণিত দ্বিতীয় হাদীছ শরীফ খানার সর্বশেষ فاذا اراد ان يركع قام فركع এই ইবারত গুলো, হযরত ام سلمة رضى الله تعالى عنها (উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা) থেকে বর্ণিত প্রথম হাদীছ শরীফ খানার শেষে অর্থাৎ وهو جالس এর পর সংযোজন করে বা জোড়া দিয়ে, হযরত ام سلمة رضى الله تعالى عنها (উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) এর নামে চালিয়ে দিয়ে হাদীছ শরীফ জালিয়াতি করেছে।
 নিম্নে রেযা খাঁর হাদীছ জালিয়াতীর ফিরিস্তি,  প্রমাণসহ হুবহু তুলে ধরা হলো, যেমন “রেজভীয়া” কিতাবের ৩য় খণ্ডের ৪৬৮ পৃষ্ঠায় রেযা খাঁ ইবনে মাজাহ্ শরীফের বরাত দিয়ে হযরত ام سلمة رضى الله تعالى عنها (উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা) থেকে হাদীছ শরীফ খানা এভাবে লিখেছে যে,
فلابن ماجة عن ام المومنين ام سلمة رضى الله تعالى عنها انه صلى الله تعالى عليه وسلم كان يصلى بعد الوتر ركعثين خفيفتين وهو جالس فاذا اراد ان يركع قام …….
 রেযা খাঁর লিখিত উক্ত ইবারতে এটাই প্রমাণিত হলো যে, ইবনে মাজাহ্ শরীফের বরাতে হযরত ام سلمة رضى الله تعالى عنها (উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা) থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফে وهو جالس এর পর فاذا اراد ان يركع قام فركع এই ইবারত গুলোও উল্লেখ আছে।
 অথচ “ইবনে মাজাহ্ শরীফের” ৮৫ পৃষ্ঠায় হযরত ام سلمة رضى الله تعالى عنها (উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা) থেকে যে হাদীছ শরীফ খানা বর্ণিত আছে, তাতে فاذا اراد ان يركع قام فركع এই ইবারত গুলো  উল্লেখ নেই। বরং তাতে كان يصلى بعد الوتر ركعتين خفيفتين وهو جالس. পর্যন্তই ইবারত উল্লেখ আছে। এবং وهو جالس পর্যন্তই ইবারত শেষ। আর وهو جالس এর পর উক্ত হাদীছ শরীফে আর কোন ইবারত  উল্লেখ নেই। এবং وهو جالس এর পর উক্ত হাদীছ শরীফে আর কোন বক্তব্যও উল্লেখ নেই।
সেহেতু পাঠকের সুবিধার্থে “ইবনে মাজাহ্ শরীফের হুবহু হাদীছ শরীফ খানা আবারো উল্লেখ করা হলো, আর এতেই প্রমাণিত হবে যে, রেযা খাঁ হযরত ام سلمة رضى الله تعالى عنها (উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা) এর বরাত দিয়ে فاذا اراد ان يركع قام فركع এই ইবারত গুলো সংযোজন করে বা জোড়া—তালি দিয়ে, হযরত উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা—এর নামে চালিয়ে দিয়ে হাদীছ জালিয়াতি করেছে।
যেমন, “ইবনে মাজাহ্ শরীফের” ৮৫ পৃষ্ঠায়  উল্লেি্রখত প্রথম হাদীছ শরীফ খানা হচ্ছে,
عن ام سلمة رضى الله عنها ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يصلى بعد الوتر ركعتين خفيفتين وهو جالس.
অর্থঃ— “উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে যে, আখেরী রাসুল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামাযের পর সংক্ষিপ্তাকারে দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করতেন।”
উপরোক্ত হাদীছ শরীফের ইবারত থেকে সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ্ পাক—এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত নফল অর্থাৎ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করেছেন। এবং উক্ত হাদীছ শরীফে وهو جالس পর্যন্ত ইবারত উল্লেখ আছে। এবং وهو جالس পর্যন্তই ইবারত শেষ।
আর وهو جالس এর পর উক্ত হাদীছ শরীফে আর কোন ইবারত উল্লেখ নেই। এবং উক্ত হাদীছ শরীফে وهو جالس এর পর আর কোন বক্তব্যও উল্লেখ নেই।
সুতরাং প্রমাণিত হলো রেযা খাঁ ইবনে মাজাহ্ শরীফের বরাতে হযরত ام سلمة رضى الله تعالى عنها (উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা) থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফ খানার শেষে وهو جالس এরপর فاذا اراد ان يركع قام فركع এই ইবারত গুলো সংযোজন করে বা জোড়া—তালি দিয়ে, হযরত ام سلمة رضى الله تعالى عنها (উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা) এর নামে  চালিয়ে দিয়ে হাদীছ শরীফ জালিয়াতি করেছে।
সুতরাং রেযা খাঁর হাদীছ জালিয়াতির প্রমাণ সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো এবং সেই সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যারা হাদীছ শরীফ জালিয়াতি করে বা একজনের বর্ণিত হাদীছ অপরের নামে চালিয়ে দিয়ে হাদীছ শরীফ জালিয়াতি করে তাদের ফতওয়া মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রদত্ত সুওয়াল—জাওয়াবের টীকা ভাষ্যঃ
(ক) বিগত সংখ্যায় বলা হয়েছে, “রেযা খাঁ ‘বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়া সম্পর্কিত ইবনে মাজাহ্ শরীফের প্রথম হাদীছ শরীফ খানা জালীয়াতী করে নিজেকে থানভীর সমগোত্রীয় বলে প্রমাণ করলো ।
(খ) পরবতীর্ সংখ্যায় দলীল—আদিল্লাহ্ দ্বারা  ইনশাআল্লাহ প্রমাণ করা হবে যে, ‘বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়ার বর্ণনা খোদ রেযা খাঁই তার লিখিত  “রেজভীয়া” কিতাবেই উল্লেখ করেছে। (চলবে)
মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম, পাবনা।
সুওয়ালঃ হজ্ব পালনের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলার আমলের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি?
জাওয়াবঃ  হঁ্যা, পুরুষ ও মহিলার আমলের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। তন্মধ্যে জরুরী কিছু পার্থক্য বর্ণনা করা হলো।
(১) হজ্জে পুরুষেরা মাথা খোলা রাখবে মহিলারা মাথা ঢেকে রাখবে।
(২) পুরুষেরা তালবিয়া পাঠ করবে উচ্চস্বরে আর মহিলারা তালবিয়া পাঠ করবে নিম্নস্বরে।
(৩) পুরুষেরা তাওয়াফের সময় রমল করবে মহিলারা রমল করবেনা।
(৪) ইজতেবা পুরুষেরা করবে মহিলাদের করতে হয়না।
(৫) সাঈ করার সময় পুরুষেরা মাইলাইনে আখজারাইনের মধ্যস্থানে দৌড়াবে। মহিলারা দৌড়াবেনা।
(৬) পুরুষেরা মাথা কামাবে মহিলারা শুধু মাথার চুল এক অঙ্গুলি বা এক ইঞ্চি পরিমাণ ছাটবে।
(৭) বিদেশী পুরুষ হাজী সাহেবদের জন্য তাওয়াফে বিদা করা ওয়াজিব। বিদেশী মহিলা হাজীদের জন্যও ওয়াজিব। তবে প্রাকৃতিক কারণে মহিলারা অসুস্থ হয়ে পড়লে এ ওয়াজিব তাদের জন্য সাকেত হয়ে যায়।
(৮) পুরুষদের জন্য সেলাই করা কাপড় নিষিদ্ধ মহিলারা সেলাই করা কাপড় পরিধান করতে পারবে।
মুছাম্মত রাবেয়া আক্তার (রুবি)
রাজারহাট, কুড়িগ্রাম।
সুওয়ালঃ মহিলারা হজ্জে সেলাইযুক্ত কাপড় পড়তে এবং মাথা ঢেকে রাখতে পারে পুরুষেরাও যদি তাদের অনুরূপ করে তাহলে কি হুকুম হবে?
জাওয়াবঃ পুরুষ যদি সেলাইযুক্ত কাপড় পরিধান করা অবস্থায় অথবা মাথা ঢেকে রাখা অবস্থায় পূর্ণ একদিন বা তার চেয়ে বেশী সময় অতিবাহিত করে তাহলে তাদের উপর দম দেয়া ওয়াজিব। আর একদিনের কম সময় যদি হয় তাহলে সদকা দেয়া ওয়াজিব।
মুহম্মদ মাসউদ, কুমিল্লা।
সুওয়ালঃ তাওয়াফের সময় নামাযের সামনে দিয়ে যাওয়া জায়িয কিনা?
জাওয়াবঃ হজ্জের আহ্কাম পালনের ক্ষেত্রে কতক মাসয়ালা অন্য স্থানের সাধারণ মাসয়ালার ব্যতিক্রম। যেমন— আরাফার ময়দানে একই আজান ও ভিন্ন ইকামতে যোহর ও আসর নামায পড়তে হয় যা অন্য সময় জায়িয নেই। তেমনি অন্য স্থানে নামাযের সামনে দিয়ে গমনাগমন জায়িয নেই কিন্তু কা’বা শরীফে তাওয়াফের সময় নামাযের সামনে দিয়ে যাওয়া জায়িয রয়েছে এবং এ মাসয়ালা শুধু কা’বা শরীফের জন্যই খাছ।
মুহম্মদ আখতারুজ্জামান বাবু, সিলেট।
সুওয়ালঃ হজ্জ আদায়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্থানে যে আলাদা আলাদা দোয়া—দুরূদ ও তাসবীহ্ পড়ার নিয়ম রয়েছে তা প্রায় অনেক হাজী ছাহেবদের পক্ষেই আদায় করা সম্ভব হয়না। তার কারণ হচ্ছে— (১) স্মরণ শক্তির অভাব, (২) সময়ের স্বল্পতা ও (৩) অধিক ব্যস্ততা ইত্যাদি।
এক্ষেত্রে তাদের জন্য এমন কোন আমল আছে কি যা হাজী ছাহেবরা সহজে আদায় করতে পারবে?
জাওয়াবঃ হঁ্যা, যে সমস্ত হাজী ছাহেবরা হজ্বের বিস্তারিত দোয়া—দুরূদ ও তাসবীহ্ ইত্যাদি পাঠ করতে অপারগ তাদের জন্য সবচেয়ে সহজ আমল হচ্ছে তারা প্রতি কদমে, প্রতি মাকামে ও প্রতি স্থানে শুধু দরূদ শরীফ পাঠ করবে। আর দরূদ শরীফের মধ্যে সবচেয়ে সহজ দুরূদ শরীফ হলো— صلى الله عليه وسلم
উচ্চারণঃ “ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”।
আর যদি কোন হাজী ছাহেবদের পক্ষে সম্ভব হয় তাহলে উক্ত দুরূদ শরীফ পাঠ করার ফাঁকে ফাঁকে যা হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর খাছ দোয়া, তা পাঠ করতে পারে। দোয়াটি হচ্ছে—
لا اله الا الله وحده لاشريك له الملك وله الحمد وهو على كل شيئ قدير.
উচ্চারণঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকালাহু লাহুল মূলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির।”
 শুয়াইব আহমদ, লালমনির হাট
সুওয়াল: কুরবানী কার উপর ওয়াজিব?
জাওয়াবঃ যিলহজ্জ মাসের দশ, এগার, বার অর্থাৎ দশ তারিখের সুবহে সাদিক হতে বার তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কেউ মালিকে নেসাব হয় অর্থাৎ হাওয়ায়েজে আসলিয়াহ্ (নিত্য প্রয়োজনীয় ধন—সম্পদ) বাদ দিয়ে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা বা তার সমপরিমাণ মূল্যের মালিক হয়, তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব। উল্লেখ্য যে, যদি কারো নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকে এবং তা যদি নেসাব পরিমাণ হয়, যেমন— কারো পাঁচটি ঘর আছে, একটির মধ্যে সে থাকে আর তিনটির ভাড়া দিয়ে সে সংসার চালায় আর একটি অতিরিক্ত, যার মূল্য নেসাব পরিমাণ। এ ক্ষেত্রে তার উপরে কুরবানী ওয়াজিব হবে।
{দলীলসমূহঃ আলমগীরী, শামী, আইনুল হিদায়া, ফতহুল কাদীর, গয়াতুল আওতার, শরহে বিকায়া, বাহর, দুররুল মুখতার, কাযিখান ও ইনায়া ইত্যাদি।
মুহম্মদ আব্দুল করীম, বাগেরহাট
সুওয়ালঃ কোন ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব। সে তার নিজের নামে কুরবানী না দিয়ে মৃত বা জীবিত পিতা—মাতার নামে কুরবানী দিলে তার নিজের ওয়াজিব কুরবানী আদায় হবে কিনা?
জাওয়াবঃ আদায় হবে না। যার উপরে কুরবানী ওয়াজিব তার নামেই কুরবানী দিতে হবে। অন্যথায় ওয়াজিব তরক্বের গুণাহ হবে।
মুহম্মদ নেছারুদ্দীন, বগুড়া।
সুওয়াল ঃ কুরবানী করার সুন্নতী পদ্ধতি এবং নিয়ত জানালে খুশি হবো।
জাওয়াবঃ কুরবানীর পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা পশ্চিম দিকে রেখে অর্থাৎ ক্বিবলামুখী করে শোয়ায়ে পূর্ব দিক থেকে চেপে ধরতে হবে, তারপর কুবানীর করতে হবে। আর কুরবানীর করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, সীনার উপরিভাগ এবং কক্তনালীর মাঝামাঝি স্থানে যেন জবেহ করা হয়। আরো উল্লেখ্য যে, গলাতে চারটি রগ রয়েছে, তন্মধ্যে গলার সম্মূখভাগে দু’টি— খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী এবং দু’পার্শ্বে দু’টি রক্তনালী। এ চারটির মধ্যে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং দু’টি রক্তনালীর মধ্যে একটি অবশ্যই কাটতে হবে। অর্থাৎ চারটি রগ বা নালীর মধ্যে তিনটি অবশ্যই কাটতে হবে, অন্যথায় কুরবানী হবেনা। যদি সম্ভব হয়, তবে ছুরি চালানোর সময় বেজোড় সংখ্যার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। কুরবানীর নিয়ত ঃ— (যবেহ করার পূর্বে)
انى وجهت وجهى للذى فطر السماوات والارض حنيفا وما انا من المشركين. ان صلاتى ونسكى ومحياى ومماتى لله رب العالمين لاشريك له وبذالك امرت وانا من المسلمين— اللهم منك ولك—
উচ্চারণঃ— ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না ছলাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্ইয়া ইয়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। লা শারীকালাহু ওয়া বি যালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা। এ  দোয়া পড়ে بسم الله الله اكبر বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবর বলে জবেহ করতে হবে। জবেহ করার পর এ দোয়া পড়বে
اللهم تقبله منى كما تقبلت من حبيبك سيدنا محمد صلى الله عليه وسلم وخليلك ابراهيم عليه السلام.
উচ্চারণঃ— আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বালহু মিন্নী কামা তাক্বাব্বালতা মিন হাবীবিকা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও খালীলিকা ইব্রাহীমা আলাইহিস সালাম।
যদি নিজের কুরবানী হয়, তবে منى (মিন্নী) বলতে হবে। আর যদি অন্যের কুরবানী হয়, তবে من (মিন) শব্দের পর যার বা যাদের কোবানী, তার বা তাদের নাম উল্লেখ করতে হবে। আর যদি অন্যের সাথে শরীক হয়, তাহলে منى (মিন্নী)ও বলবে, অতঃপর من (মিন) বলে অন্যদের নাম বলতে হবে। কেউ যদি উপরোক্ত নিয়ত না জানে, তাহলে জবেহ করার সময় শুধু বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবর বলে কুরবানী করলেও শুদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ নিয়ত অন্তরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে অবশ্যই প্রত্যেক জবেহকারীর উচিৎ উপরোক্ত নিয়ত শিক্ষা করা। কেননা উপরোক্ত নিয়ত পাঠ করে কুরবানী করা সুন্নাতের অন্তভূর্ক্ত।
{দলীলসমূহঃ আহমদ, আবূ দাউদ, তিরমীযী, দারিমী ইবনে মাযাহ, বজলূল মযহুদ, মিশকাত, মিরকাত, মুযাহেরে হক্ব, লুমায়াত, ত্বীবী, তালিকু্ছ্ ছবীহ, আশয়াতুল লুমুয়াত, আলমগীরী, শামী, দুররুল মুখতার, আইনুল হিদায়া ও বাহর ইত্যাদি।
মুছাম্মত শুমাইয়া আক্তার (সুমি)
বাগেরহাট, খুলনা।
সুওয়ালঃ বর্তমান সময়ে কোন ব্যক্তি যদি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর নামে ছাগল, বকরী, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি কুরবানী দেয় অথবা গরু, মহিষ, উটের সাত নামের মধ্যে যদি এক নাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর নাম মুবারকে দেয়, তবে উক্ত নামের গোশ্তের হুকুম কি? এটা কি সকলে খেতে পারবে? অথবা এ গোশ্ত অছিয়তকৃত গোশ্তের হুকুমের অন্তভূর্ক্ত হবে কি না?
জাওয়াবঃ হ্যঁা, উক্ত কুরবানীকৃত গোশ্ত সকলে খেতে পারবে। আর এটা অছিয়তকৃত গোশ্তের হুকুমের অন্তভূর্ক্ত হবে না। কেননা হাদীছ শরীফে আছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বিশেষভাবে কুরবানী করার জন্যে যে নির্দেশ দিয়েছেন এটা তাঁর জন্যই খাছ।
বর্তমান সময়ে কোন ব্যক্তি যদি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর তরফ থেকে কুরবানী দেয়, তবে এটা তার ফযীলত, তথা বারাকাত, ফুয়ুজাত, নিয়ামত, রহ্মত, মাগফিরাত, নাজাত সর্বোপরি আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর সন্তুষ্টি লাভ করা ও তার কুরবানী কবুল হওয়ার একটি উসীলা।
কাজেই আল্লাহ্ পাক—এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর তরফ থেকে যদি কেউ কুরবানী দেয়, তবে উক্ত কুরবানীকৃত গোশ্ত সকলেই খেতে পারবে।
{দলীলসমূহঃ আবূ দাউদ, তিরমীযী, বযলুল মজহুদ, শরহে তিরমীযী, মিশকাত, মিরকাত, লুমায়াত, আশয়াতুল লুমায়াত, ত্বীবী, তালিক ও মুযাহিরে ইত্যাদি।}
মুহম্মদ সাইফুল্লাহ মুনীর, টঙ্গী
সুওয়ালঃ যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়নি, এমন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি এক নামে কুরবানী দিয়ে গোশ্ত বন্টন করে নিতে পারবে কিনা?
জাওয়াবঃ হঁ্যা, যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়নি, এমন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি কুরবানী দিয়ে গোশ্ত বন্টন করে নিতে পারবে। তবে কোরবানীর পশু গরু, মহিষ ও উটে সাত নাম এবং দুম্বা, মেষ  বা ভেড়া, বকরী, খাসিতে এক নাম দেয়ার হুকুম রয়েছে।
গরু, মহিষ, উটে সাত নামের বেশী দিলে কুরবানী দুরুস্ত হবেনা। আর সাত নামের কমে কুরবানী করলে দুরুস্ত হবে। আর ছাগল, দুম্বা, ভেড়া এক নামের বেশী কুরবানী করলে কারো কুরবানী দুরুস্ত হবেনা।
যেমন— যদি ৪০ জন ব্যক্তি ২০০ টাকা করে ৮০০০ টাকা দিয়ে একটা গরু কিনে সাত নামে বা তার থেকে কম নামে কুরবানী করে গোশ্ত বন্টন করে নেয়, তাতেও কুরবানী শুদ্ধ হবে।
তদ্রুপ একটা খাসি তিনজনে মিলে পয়সা দিয়ে খরীদ করে, যদি এক নামে কুরবানী করে গোশ্ত বন্টন করে নেয়, তবে সে কুরবানীও শুদ্ধ হবে।
এখন প্রশ্ন হলো— যারা সম্মিলিতভাবে টাকা দিয়ে কুরবানী করতে চায়, তারা কার নামে কুরবানী করবে?
এর জাওয়াব হচ্ছে— এরূপ কুরবানীর ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই যেহেতু নিজস্ব নামে কুরবানী করতে চাইবে, কুরবানীর ফযীলত হাছিলের জন্য। আর গরু, মহিষ ও উটে সাত নামের বেশী এবং ছাগল, ভেড়া ও দুম্বাতে এক নামের বেশী দেয়া যায় না। কার নাম দিবে বা কার নাম বাদ দিবে, এ নিয়ে ঝগড়া—ফ্যাসাদ ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হবে। এছাড়াও যদি কারো নামে দেয়া হয়, অন্য কেউ প্রকাশ্যে আপত্তি না করে কিন্তু অন্তরে সম্মতি না থাকে তাহলে কুরবানী শুদ্ধ হবেনা। কারণ একজনের টাকা দিয়ে অন্যজনের নামে কুরবানী করলে কুরবানী শুদ্ধ হবেনা। টাকা ওয়ালার সম্মতি ব্যতীত। এজন্য উত্তম ও আদব হচ্ছে— এক নাম দিলে আল্লাহ পাক—এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—এর নাম দেয়া। এরপর অন্য কারো নাম দিলে যাদের মাধ্যমে কুরবানীর বিধান চালু হয়ে আসছে,
যেমন— হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম, হযরত ইসমাইল আলাইহিস্ সালাম, হযরত হাজেরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তাঁদের নামে কুরবানী দেয়া উত্তম। আরো বেশী নামে কুরবানী দিলে হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালাম,, আহ্লে বায়েত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম—এর নামেও কুরবানী করা যেতে পারে।
{দলীলসমূহঃ শামী, আলমগীরী ফতহুল ক্বাদীর, কাযীখান ইত্যাদি।}
মুহম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম, নোয়াখালী
সুওয়ালঃ   ওয়াজিব ও নফল কুরবানী, ওলীমা ও আক্বীকা এক সাথে জায়িয হবে কিনা?
জাওয়াবঃ   হঁ্যা, জায়িয হবে।
{দলীলসমূহঃ শামী, আলমগীরী ইত্যাদি।}
মুহম্মদ আবূ তাহের ছিদ্দীক্বী, নাটোর
সুওয়ালঃ মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী করা জায়িয কিনা?
জাওয়াবঃ কুরবানী আল্লাহ্ পাক—এর নামে করতে হবে। যেমন— بسم الله الله اكبر.
উচ্চারণঃ “বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আক্বার” বলে কুরবানী করতে হবে।
এখন যদি কেউ কোন ব্যক্তির নামে, হোক সে জীবিত অথবা মৃত—এর নামে করে, যেমন— “বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার”—এর পরিবর্তে আব্দুর রহীম, আব্দুল করীম, বকর, যায়েদ, আমর ইত্যাদি নামে কুরবানী করে, তাহলে কুরবানী অশুদ্ধ হবে। উক্ত পশুর গোশ্ত খাওয়াও হারাম হবে ও সাথে সাথে কুফরী ও কবীরা গুণাহ্ হবে। মূলতঃ কুরবানী একমাত্র আল্লাহ্ পাক—এর নামেই করতে হবে। তবে পশুতে সাত নাম ও এক নাম দেয়ার কথা যে উল্লেখ করা হয়েছে, তাহলো— সাতজন অথবা একজন (চাই তারা জীবিত হোক অথবা মৃত হোক)—এর তরফ থেকে বা পক্ষ থেকে আল্লাহ্ পাক—এর নামে কুরবানী করা।
এ মাসয়ালাটি না বুঝার কারণে অনেকে সরাসরি বলে থাকে, কোরবানীর পশুতে মৃত পূর্ব পুরুষদের নাম দেয়া যাবেনা।
{দলীলসমূহঃ আলমগীরি, শামী, নূরুল হিদায়া, বাজ্জাজিয়া, কাযীখান ইত্যাদি।}
মুসাম্মত ফাতিমা আখতার সুলতানা
 কুমিল্লা সদর, কুমিল্লা
সুওয়ালঃ আইয়ামে নহর বা কুরবানীর দিনে কুরবানীর পশু কুরবানী করার পূর্বে অথবা কুরবানী করার সময়ে হাঁস, মুরগী, কবুতর ইত্যাদি যবেহ্ করা জায়িয আছে কি?
জাওয়াবঃ মুসলমানদের আইয়ামে নহর বা কুরবানীর দিনে যারা মজুসী বা অগ্নী উপাসক তারা তাদের ধমীর্য় বিধান মোতাবেক হাঁস—মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করে থাকে। এখন যদি কোন মুসলমান তাদের সাথে মুশাবা বা সাদৃশ্য রেখে কুরবানীর দিন হাঁস—মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করে, তাহলে সেটা হারাম হবে। কারণ আল্লাহ্ পাক—এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
من تشبه بقوم فهو منهم.
 অর্থঃ— “যে, যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদেরই অন্তভূর্ক্ত।”
আর যদি কোন মুসলমান সাধারণভাবে উক্ত সময়ে হাঁস—মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করে, তাহলে সেটা মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে, যেহেতু এটাও মোশাবাহ্ হয়ে যায়।
আর যদি কোন মুসলমান খুব জরুরতে হাঁস—মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করে, তাহলে সেটাও মাকরূহ্ তান্যিহী হবে। আর এমন কোন মুসলমান, যার উপর কুরবানী ওয়াজিব অথবা ওয়াজিব নয়, তারা যদি কোরবানীর দিন হাঁস, মুরগী ইত্যাদি খেতে চায়, তাহলে তারা যেন সুব্হে সাদিকের পূর্বেই সেটা যবেহ্ করে, কেটে, পাক করে রেখে দেয় অথবা শুধু যবেহ্ করে, কেটে রেখে দিবে পরে পাক করলেও চলবে।
{দলীলসমূহঃ শামী, আলমগীরি, ফতহুল ক্বাদীর, শরহে হিদায়া ইত্যাদি।}
মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও
সুওয়ালঃ হালাল পশুর কোন কোন অংশ খাওয়া নিষিদ্ধ?
জাওয়াবঃ কুরবানী বা হালাল পশুর ৮টি জিনিস খাওয়া যাবেনা। (১) দমে মাছফুহা বা প্রবাহিত রক্ত হারাম, (২) অন্ডকোষ,
(৩) মুত্রনালী, (৪) পিত্ত, (৫) লিঙ্গ, (৬) যোনি, (৭) গদুদ বা গুটলী মাকরূহ্ তাহ্রীমী, (৮) শিরদাড়ার ভিতরের মগজ, এটা কেউ মাকরূহ্ তাহ্রীমী, আবার কেউ মাকরূহ্ তান্যিহী বলেছেন।
{দলীলসমূহঃ শামী, মাতালেবুল মু’মিনীন, উমদাতুল কালাম ইত্যাদি।}
মুহম্মদ সাব্বির হুসাইন, টেকনাফ
সুওয়ালঃ কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করে সে টাকা মসজিদ কিম্বা ঈদগাহের ইমামকে দেয়া জায়িয হবে কিনা?
জাওয়াবঃ মসজিদ ও ঈদগাহে ইমামতি করা বাবদ উক্ত টাকা ইমাম ছাহেবকে দেয়া জায়িয হবেনা। অবশ্য ইমাম ছাহেব যদি ফিৎরা ও কুরবানীর ছাহেবে নেছাব না হন, তাহলে দান হিসেবে উক্ত টাকা নিতে পারেন। কিন্তু ছাহেবে নেছাব হলে, তা নিতে পারবেন না। আর চামড়া বিক্রয় না করে পুরো চামড়াটিই যদি ইমামকে দান হিসেবে দেয়া হয়, তবে ইমাম ধনী হলেও তা নিতে পারবেন। (সমূহ ফিক্বাহের কিতাব)
মুহম্মদ আব্দুল গফুর, মাহিগঞ্জ, রংপুর
সুওয়ালঃ কুরবানীর পশু যবেহ করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়েয আছে কি?
জাওয়াবঃ কুরবানীর পশু অথবা অন্য যে কোন হালাল পশুই হোক, তা যবেহ্ করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়িয নেই। এমনিভাবে বাঁটে দুধ থাকতে, ঝিনুকে মুক্তা থাকতে, মেষের পিঠে লোম থাকতে, সে দুধ, মুক্তা, লোম বিক্রি করা নাজায়েয। (ফতওয়ায়ে শামী)
মুহম্মদ মুজিবুর রহমান, লালবাগ, ঢাকা
সুওয়ালঃ যে সকল মাদ্রাসার লিল্লাহ্ বোডিংয়ে যাকাত, ফিৎরা ও কোরবানীর চামড়া তোলা হয়, সে লিল্লাহ্ বোডিংয়ে উক্ত মাদ্রাসার শিক্ষকগণ খেতে পারবে কিনা? এবং সে টাকা দ্বারা শিক্ষকদের বেতন দেয়া ও ছাত্রদের থাকা ও পড়ার জন্য মাদ্রাসা ঘর তৈরী করা জায়িয হবে কিনা? বিস্তারিত জানিয়ে উপকৃত করবেন।
জাওয়াবঃ যাকাত, ফিৎরা, কুরবানীর চামড়া বা তার মূল্য ইত্যাদি গরীব, মিস্কীন ও ইয়াতীমদের হক্ব অর্থাৎ ওয়াজিব সদ্কা (আদায় হওয়ার জন্য) গরীব, মিস্কীন ও ইয়াতীমদেরকে তার (সদ্কার) মালিক করে দেয়া শর্ত। তাই যে সকল মাদ্রাসায় লিল্লাহ্ বোডিং অর্থাৎ গরীব, মিস্কীন ও ইয়াতীম ছাত্র রয়েছে, সে সকল মাদ্রাসায় যাকাত, ফিৎরা ও কোরবানীর চামড়া বা তার মূল্য দেয়া যেরূপ জায়েয, তদ্রুপ মাদ্রাসা কতৃর্পক্ষের জন্য তা লিল্লাহ্ বোডিংয়ে গ্রহণ করাও জায়েয।
উল্লেখ্য, উক্ত সদ্কার টাকা দিয়ে শুধুমাত্র ছাত্রদেরকে খাওয়ালেই চলবেনা বরং ছাত্রদেরকে তা’লীম দেয়ার জন্য ওস্তাদ বা শিক্ষকের প্রয়োজন রয়েছে ও ছাত্রদের থাকার জন্য ঘরের দরকার রয়েছে, আর তার জন্যে টাকা—পয়সারও জরুরত রয়েছে। তাই সম্মানিত ফক্বীহ্গণ এরূপ সদ্কার ব্যাপারে একটি সুন্দর সমাধান বা ফায়সালা দান করেছেন। অর্থাৎ তাঁরা বলেছেন, “সদ্কার টাকা হিলা করা হলে, তা দ্বারা ওস্তাদদের বেতন দেয়া, খাওয়ার ব্যবস্থা করা ও মাদ্রাসার জন্য ঘর তৈরী করা সবই জায়েয।”
আর হিলার পদ্ধতি হলো— মাদ্রাসা কতৃর্পক্ষ কোন গরীব, মিস্কীন বা ইয়াতীমকে উক্ত সদ্কার টাকাগুলোর মালিক করে দিবে। অতঃপর উক্ত গরীব, মিস্কীন ও ইয়াতীম সে টাকাগুলো মাদ্রাসায় দান করে দিবে।
অতএব, শুধুমাত্র উক্ত ছূরতেই সদ্কার টাকা দিয়ে ওস্তাদদের বেতন দেয়া, খাওয়ার ব্যবস্থা করা ও মাদ্রাসার জন্য ঘর তৈরী করা জায়েয ও শরীয়তসম্মত।
{দলীলসমূহঃ শামী, দুররুল মুখতার, আলমগীরী, আইনুল হিদায়া, নাওয়াদেরুল ফতওয়া ইত্যাদি।}
মুহম্মদ আব্দুল কাদির, খিলগাঁও, ঢাকা
সুওয়ালঃ অনেকে বলে থাকে, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হয়, তার গোশ্ত পিতা—মাতা খেতে পারবে না, এটা শরীয়তসম্মত কিনা জানালে খুশী হবো।
জাওয়াবঃ হ্যাঁ, আক্বীকার গোশ্ত পিতা—মাতা খেতে পারবে, এটাই শরীয়তসম্মত। (সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব)

 সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল জাওয়াব