মুহম্মদ মনজুরুল হক, গুলবাগ, ঢাকা।
মুহম্মদ শরফুদ্দীন, দারোগাহাট রোড, চট্টগ্রাম।
সুওয়াল: ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ এবং ‘দৈনিক আল ইহসান’ পত্রিকার বরাত দিয়ে ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন জিলায় দেয়াল লিখনিতে বেশ কিছু মাসয়ালা উল্লেখ করা হয়েছে। যে মাসয়ালাগুলো মূলত: মানুষের ঈমান-আক্বীদা ও আমলের ক্ষেত্রে অতীব জরুরী। যেমন, ‘ইসলামের নামে ভোট, গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, মৌলবাদী দাবী করা, বেপর্দা হওয়া, ছবি তোলা, টিভি দেখা, টিভিতে প্রোগ্রাম করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া হারাম, নাজায়িয ও কুফরী।’ ‘যে সব মাওলানা টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করে তারা উলামায়ে ‘ছূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী আলিম’ ইত্যাদি। কিন্তু হাটহাজারী মাদ্রাসার মুখপত্র মাসিক মুঈনুল ইসলাম আগস্ট-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এক জিজ্ঞাসার সমাধানে দলীলবিহীন ও মনগড়াভাবে হরতাল করা, লংমার্চ করা, মৌলবাদী দাবী করাকে জায়িয বলা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, ‘টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করার কারণে (প্রোগ্রামকারী মাওলানাদেরকে) উলামায়ে ‘ছূ’ বলা জায়িয হবে না।’ এখন আমাদের সুওয়াল হলো- মাসিক মুঈনুল ইসলাম পত্রিকার প্রদত্ত্ব সমাধান কতটুকু সঠিক? তা কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে জানতে ইচ্ছুক।
জাওয়াব: মাসিক মুঈনুল ইসলাম পত্রিকার উল্লিখিত জিজ্ঞাসার সমাধান সম্পূর্ণরূপে কুফরী হয়েছে। কারণ, শরীয়তে কোন হারাম বা নাজায়িয বিষয়কে হালাল বা জায়িয সাব্যস্ত করা কুফরী। যেমন, আকাঈদের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, استحلال المعصية كفر. অর্থঃ- “কোন গুনাহ্র বিষয়কে অর্থাৎ হারাম বা নাজায়িয বিষয়কে হালাল বা বৈধ জানা কুফরী।” (আক্বাইদে নছফী)
উল্লেখ্য, ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ এবং ‘দৈনিক আল ইহসান’ পত্রিকার বরাত দিয়ে যে সকল মাসয়ালা বা ফতওয়া দেয়াল লিখনিতে প্রচার করা হয়েছে, হচ্ছে ও হবে তা সবই কুরআন ও সুন্নাহ সম্মত। এবং উক্ত মাসয়ালা বা ফতওয়ার পিছনে রয়েছে অকাট্য ও অসংখ্য দলীল-আদিল্লাহ। যেমনঃ
(ধারাবাহিক)
২. লংমার্চ : ১৯৩০-৩৪ সালের মধ্যবর্তী সময় তৎকালীন চীনের প্রেসিডেন্ট কমুনিস্টদের বিরূদ্ধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ১৯৩৪ সালে তিনি জার্মান সামরিক উপদেষ্টাদের সহযোগিতায় কিয়াংসি প্রদেশে অবস্থানরত কমুনিস্টদের অবস্থানের প্রায় চতুর্দিকেই শক্ত ঘাঁটি ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এর ফলে কমুনিস্টগণ পালাতে বাধ্য হয়। পালানোর কৌশল হিসেবে তারা চীনের দক্ষিণ-পূর্ব কিয়াংসি থেকে পশ্চিম দিক দিয়ে ঘুরে প্রায় (৬-৮) হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে চীনের উত্তর পশ্চিম সেনসি প্রদেশে পৌঁছে। পথে তাদের ১৮টি পাহাড়ের সারি ও ২৪টি নদী অতিক্রম করতে হয়। মাওসেতুং এর নেতৃত্বে কমুনিস্টদের এই দীর্ঘ বিপদসঙ্কুল পথ পলায়নের কাহিনীই ইতিহাসে লংমার্চ নামে অভিহিত বা মশহুর। এ প্রসঙ্গে কমুনিষ্ট আন্দোলনের নেতা মাওসেতুং ২৭শে ডিসেম্বর ১৯৩৬ সালে লংমার্চের স্মৃতিচারণ করে যা লিখেছে তা তার Selected works of mao Ise tung vol, 1. page ১৬১-১৬২ সংকলিত হয়েছে। যার বর্ণনা নিম্নরূপ- “ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহে লংমার্চ এ ধরণের প্রথম ঘটনা। একটি ইস্তেহার, একটি প্রচার বাহিনী, একটি বীজ বপনকারী যন্ত্র। পানগু যখন স্বর্গ থেকে মর্ত আলাদা করে দেয় এবং তিন রাজা ও পাঁচ সম্রাট রাজত্ব করত সেই থেকে ইতিহাস কি কখনো আমাদের মত একটি লংমার্চ প্রত্যক্ষ করেছে? আমরা অবর্ণনীয় কষ্ট এবং বিপদের মুকাবেলা করেছি; তথাপি দু’পা ব্যবহার করে আমরা এগারটি প্রদেশের দৈর্ঘ্যে এবং প্রস্থে বিশ হাজার লী’র বেশী দূরত্ব অতিক্রম করেছি। জিজ্ঞেস করতে চাই ইতিহাসে কি কখনো এ ধরণের লংমার্চের ঘটনা ঘটেছে? না, কখনোই নয়। লংমার্চ একটি ইস্তেহার। লংমার্চ গোটা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছে লাল ফৌজ বীরদের বাহিনী, সাম্রাজ্যবাদীরা এবং তাদের পা চাটা কুকুর জিয়াং জিয়েশি (চিয়াং কাই-শেক) ও তার দোসররা নপুংসক, আমাদের ঘেরাও, অনুসরণ, প্রতিরোধ এবং গতিরোধে তাদের চরম ব্যর্থতার কথাও লংমার্চ জানিয়ে দিয়েছে। লংমার্চ একটি প্রচারণী শক্তিও। এগারোটি প্রদেশের প্রায় ২০ কোটি জনগণকে লংমার্চ দেখিয়েছে লাল ফৌজের পথই তাদের মুক্তির একমাত্র পথ। লংমার্চ ছাড়া ব্যাপক জনগণ স্বল্প সময়ে কিভাবে লাল ফৌজের বাস্তবতা সম্পর্কে জানতে পারতেন? লংমার্চ বীজ বপনকারী যন্ত্রও। এগারোটি প্রদেশে লংমার্চ যে অসংখ্য বীজ বুনেছে, তা মুঞ্জরিত হবে, পাতা গজাবে, বিকশিত হবে, ফল ধারণ করবে এবং ভবিষ্যতেও ফসল দেবে। এক কথায় আমাদের জন্য বিজয় এবং শত্রুর জন্য পরাজয়ের মধ্য দিয়ে লংমার্চ শেষ হয়েছে। কারা লংমার্চকে বিজয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছে? কমিউনিষ্ট পার্টি। কমিউনিষ্ট পার্টি ছাড়া এ ধরণের একটি লংমার্চ কল্পনাই করা যেতনা। কাজেই, লংমার্চ হলো নাস্তিকদের নাস্তিক্যবাদ রক্ষার জন্য পলায়নের মাধ্যমে তাদের প্রবর্তিত এক বিশেষ পদ্ধতির নাম যা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা এবং ক্বিয়াসের বহির্ভূত।
শরীয়তের দৃষ্টিতে লংমার্চ
নাজায়িয ও হারাম।
আল্লাহ পাক বলেন,
افغير دين الله يبغون وله اسلم من فى السموت والارض طوعا وكرها واليه يرجعون.
অর্থঃ- “তোমরা কি আল্লাহ পাক-এর দ্বীন (ইসলাম) ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম তালাশ কর। অথচ তাঁরই প্রতি আসমান-যমীনের সবকিছু ইচ্ছা এবং অনিচ্ছায় সমর্পিত রয়েছে এবং সবকিছু তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হবে।” (সূরা আলে ইমরান-৮৩)
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
من سن فى الاسلام سنة سيئة كان عليه وذرها ووزر من عمل بها.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলামের মধ্যে কোন বদ প্রথা প্রচলন করলো এর গুণাহ্ তার উপর বর্তাবে এবং যারা উক্ত বদ প্রথা আমল করবে তাদের গুণাহ্ও তার উপর বর্তাবে।” (মুসলিম, মিশকাত)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দ্বীন-ইসলামের নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা ব্যতীত অন্য কোন নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা গ্রহণ করা যাবেনা। যদি কেউ বিধর্মী বিজাতীয়দের অনুসরণে কোন বদ্ প্রথা প্রচলন করে তাহলে সেই বদ্ প্রথা অনুযায়ী যারা চলবে তাদের সকলেরই গুণাহ্ যে বদ্ প্রথা প্রচলন করেছে তার উপর বর্তাবে। তাই মুসলমান মাত্রই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস অনুযায়ী চলবে। কারণ মুসলমান কখনো নাস্তিক, বিধর্মী, বিজাতীয়দের অনুসরণ-অনুকরণ করতে পারেনা। কাজেই, সকল মুসলমানের জন্যই কট্টর নাস্তিক, মুসলমান নিধনকারী মাওসেতুং-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে লংমার্চ করা সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয ও হারাম। (চলবে)
মুহম্মদ আসিফ মুহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম। মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন, মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা।
সুওয়াল: ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে মাসিক মুহীনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খণ্ডন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুহীনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো- ….. ৩. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম একটি নিম্ন শ্রেণীর কাজকেও বর্ণনা করতে সংকোচবোধ করেননি। আর মুনাজাত এমন এক কাজ যা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযান্তে প্রকাশ্যভাবে পাঁচবার যদি করতেন তবে কেন তার কোন বর্ণনা করা হয়নি। ……. এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাটহাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হেফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি।
জাওয়াব: “ফরয নামাযের পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার স্বপক্ষে কোন বর্ণনা নেই” হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও দলীলবিহীন।
কেননা “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা স্বপক্ষে একটি-দুটি নয় বরং অসংখ্য ফে’লী ও ক্বওলী হাদীছ শরীফ রয়েছে যে সকল হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্বয়ং আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিজেও ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন। যেমন-
عن ابى امامة رضى الله تعالى عنه قال مادنوت من رسول الله صلى الله عليه وسلم فى دبرصلوة مكتوبة ولا تطوع الا سمعته يقول اللهم اغفرلى ذنوبى وخطاياى كلها.
অর্থঃ- “হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে নামায আদায় করেছি এবং শুনেছি, তিনি ফরয ও নফল নামাযের পর বলেছেন- আল্লাহুম্মাগ্ফিরলী ……….. ।” (আমালুল ইয়াত্তমি ওয়াল লাইলি)
عن معاذ بن جبل رضى الله تعالى عنه قال ان رسول الله صلى الله عليه وسلم اخذ بيدى يوما ثم قال يامعاذ والله انى لاحبك فقال معاذ بابى انت وامى يا رسول الله صلى الله عليه وسلم وانا والله احبك فقال اوصيك يامعاذ لاتدعن فى دبر كل صلوة ان تقول …… اعنى على ذكرك وشكرك الخ.
অর্থঃ- “হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন আমার হাত ধরে বলেন, হে মুয়ায! আল্লাহ পাক-এর কসম! আমি তোমাকে মুহব্বত করি। হযরত মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার জন্যে আমার পিতা-মাতা কোরবান হোক। আল্লাহ পাক-এর কসম! আমিও আপনাকে মুহব্বত করি। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হে মুয়ায! আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি- তুমি প্রত্যেক নামাযের পর কখনো এই দোয়া পড়া ছেড়ে দিওনা। দোয়াটি হলো- আল্লাহুম্মা আঈনী আলা যিক্রিকা ওয়া শুক্রিকা ……. ।” (আবূ দাউদ শরীফ, নাসাঈ শরীফ, মুস্তাদ্রাকে হাকিম, ইবনে হাব্বান)
عن المغيرة ابن شعبة رضى الله عنه انه قال ان رسول الله صلى عليه وسلم كان اذا فرغ من الصلوة قال لا اله الا الله وحده ….. الخ وفى البخارى انه صلى الله عليه وسلم كان يقول هذه الكلمات دبر كل صلوة وفى كتاب الصلوة فى دبر كل صلوة مكتوبة.
অর্থঃ- “হযরত মুগীরা ইবনে শো’বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায শেষ করে বলতেন, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু …..।’ বুখারী শরীফে বর্ণিত রয়েছে, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দোয়া পড়তেন প্রত্যেক নামাযের পর। আর “কিতাবুস সালাত”-এ রয়েছে, প্রত্যেক ফরয নামাযের পর।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, নাসাঈ শরীফ)
اخرج ابوبكر بن ابيض ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال من صلى فريضة فله دعوة مستجابة.
অর্থঃ- “হযরত আবূ বকর ইবনে আব্ ইয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ফরয নামায আদায় করলো, তার একটি দোয়া অবশ্যই কবুলযোগ্য।” (সিহামুল ইছাবাহ্ লিজালালুদ্দীন সুয়ূতী)
عن ابى موسى قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من كانت له الى الله حاجة فليدع بها دبر صلوة مفروضة.
অর্থঃ- “হযরত আবূ মূসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন- রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তির আল্লাহ পাক-এর নিকট কোন বিষয় চাওয়ার প্রয়োজন হয়, সে যেন ফরয নামাযের পর তার জন্য আল্লাহ্ পাক-এর নিকট দোয়া করে।” (তরজমাতুল হুজ্জাজ লিইবনে আসাকির)
عن انس بن مالك رضى الله عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال مامن عبد يبسط كفيه فى دبر كل صلوة يقول اللهم والهى …… الا كان حقا على الله ان لايرد يديه خائبتين.
অর্থঃ- “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন কোন বান্দা প্রত্যেক নামাযের পর উভয় হাত উঠায়ে বলবে- আয় আল্লাহ্ …। তখন আল্লাহ্ পাক-এর দায়িত্ব হয়ে যায়, তাকে খালি হাতে না ফিরানো।” (আমালুল লাইলি ওয়াল ইত্তয়ামি)
حدثنا محمد بن يحيى الاسلمى قال رأيت عبد الله بن زبيز رضى الله عنه وراى رجلا رافعا يديه يدعو قبل ان يفرغ من صلوته فلما فرغ منها قال له ان رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يكن يرفع يديه حتى يفرغ من صلوته رجاله ثقات.
অর্থঃ- “মুহম্মদ ইবনে ইয়াহ্ইয়া আসলামী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কোন এক ব্যক্তিকে নামায শেষ না করেই হাত উঠিয়ে মুনাজাত করতে দেখলেন, সে ব্যক্তি নামায শেষ করার পর তাকে বললেন, নিশ্চয় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায শেষ করে উভয় হাত মুবারক উঠিয়ে মুনাজাত করতেন।” (ফাদ্দুল ওয়া লি জালালুদ্দীন সূয়ূতী)
عن الفضل بن عباس رضى الله عنه قال- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الصلوة مثنى مثنى تشهد فى كل ركعتين وتخشع وتضرع وتمسكن ثم تقنع يديك يقول ترفعهما الى ربك …… من لم يفعل ذالك فهو كذا وكذا.
অর্থঃ- “হযরত ফদল ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নামায দুই-দুই রাকায়াত করে, প্রত্যেক দুই রাকায়াতের মধ্যে তাশাহ্হুদ পড়বে এবং খুশুখুজু, বিনয় ও সুকূনাতের সাথে নামায পড়বে। অতঃপর তোমার উভয় হাত আল্লাহ পাক-এর নিকট উঠায়ে বলবে, হে আমার রব!…। আর যে ব্যক্তি এরূপ না করবে, তার নামায অপূর্ণ থাকবে।” (তিরমিযী, নাসাঈ, ইলাউস সুনান)
عن ثوبان قال قال النبى صلى الله عليه وسلم لايؤم قوما فيخص نفسه بدعوة دونهم فان فعل خانهم-
অর্থঃ- “কোন ইমাম ছাহেব মুক্তাদীগণকে বাদ দিয়ে শুধু নিজের জন্য মুনাজাত করবে না। যদি সে তা করে, তবে সে মুক্তাদীগণের প্রতি খিয়ানতকারী হবে।” (তিরমিযী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ-৪৭)
উল্লেখিত হাদীছ শরীফখানা ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার প্রতিই ইঙ্গিত দেয়। কেননা এ হাদীছ শরীফে সরাসরি ইমাম ও মুক্তাদীর কথা উল্লেখ রয়েছে।
لا يجتمع ملاء فيدعو بعضهم ويؤمن بعضهم الا اجابهم.
অর্থঃ- “সম্মিলিত মুনাজাতে কিছু লোক মুনাজাত করলো, আর কিছু লোক ‘আমিন’ বললো, আল্লাহ্ পাক অবশ্যই তাদের এ মুনাজাত কবূল করবেন।” (মায়ারিফুস্ সুনান)
উল্লিখিত হাদীছ শরীফে ফরয, নফল বা কোন সময়ের নির্ধারণ ছাড়াই সম্মিলিত মুনাজাত কবূল হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং এ হাদীছ শরীফ ফরয নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাত জায়িয হওয়ারও প্রমাণ বহন করে। (চলবে)
খন্দকার সেলিম আহমদ
পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল।
সুওয়াল: হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত মীলাদ-ক্বিয়ামের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে। তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
২. “বাদশাহ মুজাফ্ফার উদ্দিন কৌকুরী এবং খাজা তক্বী উদ্দীন সুবকী যারা এই মীলাদ- ক্বিয়ামের প্রবর্তন করেন তাদের এ আমলটি কুরআন সুন্নাহর বিরোধী বিধায় তা শরীয়তের দলীল হিসেবে গ্রহণ যোগ্য নয়।…….” এখন আমার সুওয়াল হলো, মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীল সম্মত? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য জিহালতপূর্ণ ও দলীলবিহীন। কারণ বাদশাহ্ মুজাফ্ফার উদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি ও খাজা তকী উদ্দীন সুবুকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি মীলাদ ক্বিয়ামের প্রবর্তক নন। বরং মীলাদ ও ক্বিয়ামের অস্তিত্ব আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণের যুগেই ছিল।
(ধারাবাহিক)
উল্লেখ্য যে, মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়ামের যে তরতীব বা তর্জতরীকা রয়েছে অর্থাৎ বর্তমানে আমরা যে তরতীবে মীলাদ শরীফ পাঠ করে থাকি এরূপ তরতীব বা তর্জতরীকার প্রবর্তক হচ্ছেন হযরত শায়খ উমর ইবনে মুহম্মদ মুল্লা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও খাজা তকী উদ্দীন সুবুকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। আর সর্ব প্রথম রাজকীয়ভাবে ও জাকজমকপূর্ণ পরিবেশে ব্যাপক প্রচার-প্রসারের মাধ্যমে মীলাদ শরীফের আয়োজন করেণ আরবলের বাদশাহ্ মুজাফ্ফার উদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি। যেমন এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উস্তাদ, বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস, হাফিজে হাদীছ, ইমাম শিহাব উদ্দীন বিন ইসমাঈল আবূ সামাহ্ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “আল বায়িছ ফী ইনকারিল বিদায়ি ওয়াল হাওয়াদিছ” নামক কিতাবে লিখেন যে,
واول من فعل ذالك بالموصول الشيخ عمر بن محمد الملا احد الصالحين المشهورين وبه اقتدى فى ذالك صاحب اربل رحمهم الله تعالى.
অর্থঃ- “যিনি সর্বপ্রথম মাওছেল নামক স্থানে মীলাদ মাহফিল শুরু করেন, তিনি হলেন হযরত শায়খ উমর বিন মুহম্মদ মুল্লা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি ছিলেন তৎকালীন যুগের বিখ্যাত বুযুর্গ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম গণের মধ্যে অন্যতম। আর আরবলের বাদশা এবং অনেক লোক তাঁর অনুসরণ করতঃ মীলাদ মাহফিলের আহবান করতে আরম্ভ করেন। আল্লাহ্ পাক তাঁদের প্রতি রহমত নাযিল করুন।” হাফিজুল হুফ্ফায, ইমামুল মুহাদ্দিসীন, আল্লামা, ইমাম হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি “হুসনুল মাকাসিদ ফি আমালিল মাওয়ালিদ” নামক কিতাবে বর্ণনা করেন,
واول من احدث فعل ذالك صاحب اربل الملك المظفر ابو سعيد كوكبرى بن زين الدين على بن بكتكين احد الملوك الامجاد والكبراء الاجواد وكان له اثار حسنة وهو الذى عمر الجامع المظفر.
অর্থঃ- “সর্বপ্রথম যিনি এই প্রকার অর্থাৎ বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ মাহ্ফিলের প্রচলন করেন, তিনি হলেন আরবলের বাদশাহ্ মালিক মুজাফ্ফার আবূ সাঈদ বিন জয়নুদ্দীন আলী বিন বুকতেগীন রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি ছিলেন উচ্চ মর্যাদা ও মহত্বের অধিকারী, দানশীল বাদশাহ্গণের মধ্যে অন্যতম ।
তাঁর অনেক উত্তম স্মৃতি রয়েছে, তিনিই জামে মুজাফ্ফারী মসজিদ নির্মাণ করেছেন।” (হাবিউল ফতওয়া)
“সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফী সিরাতি খাইরুল ইবাদ” কিতাবে উল্লেখ আছে,
وأول من احدث ذالك صاحب اربل الملك المظفر ابو سعيد ..
অর্থঃ- “সর্বপ্রথম যিনি এই প্রকার অর্থাৎ বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ মাহ্ফিলের প্রচলন করেন, তিনি হলেন আরবলের বাদশাহ্ মালিক মুজাফ্ফার আবূ সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি।” (সিরাতে শামিয়া)
ইমাম সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত বাদশাহ্ সম্বন্ধে তাঁর “হুসনুল মাকাসিদ ফি আমালিল মাওয়ালিদ” কিতাবে সুপ্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিছ আল্লামা ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেন যে,
وكان ملكا شهما شجاعا بطلا عاقلا عالما عادلا رحمه الله تعالى واكرم مثواه.
অর্থাৎ- “তিনি তীক্ষ্ন বুদ্ধি-সম্পন্ন, সাহসী, বীর্যবান, বিজ্ঞ আলিম ও ন্যায় বিচারক বাদশাহ্ ছিলেন। আল্লাহ্ পাক তাঁর প্রতি রহম করুন এবং তাঁকে সম্মানিত বাসস্থান দান করুন।” (তারিখে ইবনে কাছীর, হাবিউল ফতওয়া)
শুধু তাই নয় বাদশাহ্ মুজাফ্ফর উদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর নৈকট্য লাভের আশায় উক্ত মীলাদ মাহ্ফিল করেছেন এবং সে যামানার অনেক হক্কানী, রব্বানী উলামায়ে কিরাম, সলফে-ছালেহী ও মাশায়েখে ইযাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণও উক্ত মীলাদ মাহ্ফিল উপস্থিত হতেন। যেমন, ইমাম সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত বাদশাহ্ সম্বন্ধে তাঁর “হুসনুল মাকাসিদ ফি আমালিল মাওয়ালিদ” কিতাবে আরো বলেন যে,
انه احدثه ملك عادل عالم قصد به التقرب الى الله تعالى وحضر عنده فيه العلماء والصلحاء من غير نكير منهم.
অর্থঃ- “বাদশাহ্ মুজাফ্ফর উদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি এমন একজন ন্যায় বিচারক, বিজ্ঞ আলিম, বাদশাহ্ ছিলেন, যিনি একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর নৈকট্য লাভের আশায় উক্ত মীলাদ মাহ্ফিল করেছেন। আর বাদশাহ্ মুজাফ্ফর উদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্ত মীলাদ মাহ্ফিলে সে যামানার অনেক হক্কানী, রব্বানী উলামায়ে কিরাম, ছূফী দরবেশ, ও সলফে-ছালেহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণও নিঃসংকোচে উপস্থিত হতেন।” “তাফসীরে রুহুল বয়ান” কিতাবের ৯ম খণ্ডের ৫৬ পৃষ্ঠায় সূরা ফাতাহ্-এর শেষ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে,
وقداجتمع عند الامام تقى الدين السبكى رحمة الله عليه جمع كثير من علماء عصره فانشد منشد قول الصرصرى رحمه الله فى مدحه عليه فعند ذالك قام الامام السبكى وجميع من بالمجلس فحصل انس عظيم بذالك المجلس وكفى ذالك فى الاقتداء.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম তাকী উদ্দীন সুবুকী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর খিদমতে সে যুগের উলামায়ে কিরামের এক সমাবেশ হয়েছিলো। তার মধ্যে থেকে কোন একজন আলিম হযরত ছারছারি রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর লিখিত কাব্য থেকে দু’টি লাইন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রশংসার কবিতা আবৃতি করলেন। এই সময় হযরত ইমাম সুবুকী রহমতুল্লাহি আলাইহি দাঁড়িয়ে গেলেন এবং তাঁর সাথে সাথে উপস্থিত সকল উলামায়ে কিরামও দাঁড়িয়ে গেলেন। যার ফলে মাহফিলটি এক গভীর প্রশান্তিতে নিমজ্জিত হয়ে যায়। অনুকরণের জন্য এই ঘটনাই যথেষ্ট।” অতএব, উল্লিখিত বুযুর্গগণ মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়ামের যে তরতীব প্রবর্তন করেছেন তা মোটেও কুরআন সুন্নাহর বিরোধী নয়। হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়ামের যে তরতীব রয়েছে তার কোন একটি বিষয়কেও কুরআন সুন্নাহর বিরোধী প্রমাণ করতে পারে নাই এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত পারবেও না। (ইনশাআল্লাহ)
কাজেই “মীলাদ ক্বিয়াম সম্পর্কিত বুযুর্গদের উক্ত আমল কুরআন সুন্নাহ্ বিরোধী” হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, জিহালতপূর্ণ ও সম্পূর্ণই দলীলবিহীন বলেই প্রমাণিত হলো। (চলবে)
মুসাম্মত সানজিদা আক্তার
সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত মুহম্মদপুর, ঢাকা।
সুওয়াল: অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়- জিজ্ঞাসা : সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …. …….. তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। ……. উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো- ….. “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” …. কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে। তারা তাদের জবাবে প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের সাফাই বর্ণনা করতে যেয়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যা করেছে। সাথে সাথে “ছয় উছূলীদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী কোন আক্বীদা-আমল নেই” বলে তাদের নির্লজ্জ দালালী করে নিজেদেরকে অপব্যাখ্যাকারী ও মিথ্যাবাদীরূপে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিক দলীলভিত্তিক আলোচনা করলেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে। তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-
(ধারাবাহিক)
প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, পর্যায়ক্রমে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলোর সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো।
প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ১৬
দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন (মুহম্মদ ওবায়দুল হক রচিত) ১১৬ পৃষ্ঠা, পস্তী কা ওয়াহেদ এলাজ ৯ পৃষ্ঠা, মূলঃ- মাওঃ এহ্তেশামুল হাসান কান্দলভী, অনুবাদক- ছাখাওয়াত উল্লাহ। তাবলীগী নেছাব ১১ পৃষ্ঠা, ফাজায়েলে তাবলীগ (মূলঃ- হযরত মাওলানা জাকারিয়া, অনুবাদক- আম্বর আলী) ৯ পৃষ্ঠা, তাবলীগে ইসলাম, লেখক- আব্দুস সাত্তার ত্রিশালী ৯ পৃষ্ঠা ও মাওলানা শাহ্ মনিরুজ্জামান লিখিত- আমি কেন তাবলীগ করি ১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “তাবলীগ তথা দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার কারণেই হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মতকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে, অন্য কোন কারণে নয়।” দলীল স্বরূপ তারা সূরা ইমরানের ১১০নং আয়াত শরীফ পেশ করে থাকে।
(দ্বিতীয় অংশ)
এখানে উল্লেখ্য যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের ন্যায় আরো অনেকেই সূরা আলে ইমরানের উপরোল্লিখিত আয়াত শরীফ উল্লেখ করে বলে থাকে যে, “আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ উম্মত বলা হয়েছে। কারণ আমরা সৎ কাজের আদেশ করি এবং অসৎ কাজের নিষেধ করি।”
মূলতঃ তাদের কৃত এ অর্থ ও ব্যাখ্যা কোনটাই সঠিক নয়। কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মত হওয়াটাই হলো আমাদের জন্য শ্রেষ্ঠত্ব। আর এছাড়া আমাদের যতগুলো গুণ দেয়া হয়েছে, তাও একমাত্র হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কারণেই। তাবলীগ তথা শুধু দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার কারণেই শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়নি। শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে, একমাত্র সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মত হওয়ার কারণেই। হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে, “সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মত হওয়ার জন্য আল্লাহ পাক-এর নিকট আরজু করেছেন।” (সমূহ তাফসীর)
সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর দোয়াই আল্লাহ পাক কবুল করেছেন, তবে সরাসরি কবুল করেছেন হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর দোয়া। অনেকে মনে করে থাকে বা বলে থাকে, “একমাত্র হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম ব্যতীত আর কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর দোয়াই কবুল হয়নি”- এ কথাও সঠিক নয়। কেননা হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে, দোয়া কবুল হয় তিন ভাবে:
(১) বান্দা যা চায়, আল্লাহ পাক সরাসরি তা দিয়ে দেন।
(২) বান্দা যা চায়, তার চেয়ে যা বেশী জরুরী, তাই আল্লাহ পাক দিয়ে থাকেন, যে জরুরত সম্বন্ধে বান্দা নিজেই জানে না।
(৩) বান্দা যা চায়, আল্লাহ পাক তা তাকে না দিয়ে তার দোয়া কবুল করে তার সওয়াবটুকু পরকালের জন্য জমা করে রাখেন। কোন কোন বান্দা যখন হাশরের ময়দানে উপস্থিত হয়ে তাদের নেকী কম দেখবে, তখন তারা অস্থির হয়ে যাবে যে, তাদের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে যায় কিনা। তখন আল্লাহ পাক বান্দাদেরকে ডেকে বলবেন, “হে বান্দারা! তোমরা অস্থির হয়োনা, তোমাদের জন্য অমুক স্থানে নেকী রাখা হয়েছে।” তখন সেই বান্দারা গিয়ে দেখবে যে, তাদের জন্য পাহাড় পাহাড় নেকী রাখা হয়েছে। তারা বলবে, আল্লাহ পাক! আমরা তো এত নেক কাজ করিনি, আমাদের এত পরিমাণ নেকী আসলো কোথা থেকে? তখন আল্লাহ পাক বলবেন, “তোমরা দুনিয়াতে যে সকল দোয়া করেছিলে, যার বদলা দুনিয়াতে দেয়া হয়নি। তোমরা বুঝতে পারনি, দোয়া কবুল হলো বা হলোনা, অথচ আমি তা কবুল করেছিলাম এবং সেগুলিই পাহাড় পাহাড় পরিমাণ নেকী আকারে জমা হয়েছে।” তখন বান্দারা বলবে, আল্লাহ পাক! দুনিয়াতে আমাদের সমস্ত দোয়াগুলিরই বদলা না দিয়ে যদি পরকালের জন্য জমা রাখা হতো, তাহলে তা আমাদের জন্য আরো ফায়দার কারণ হতো। (বুখারী শরীফ, ফত্হুল বারী, উমদাতুল বারী, ইরশাদুস্ সারী)
উল্লেখ্য যে, শুধুমাত্র দাওয়াতের কারণেই যদি উম্মতে মুহম্মদীর শ্রেষ্ঠত্ব হতো, তাহলে অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ দাওয়াতের দায়িত্ব পাওয়া সত্ত্বেও আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মত হবার জন্য দোয়া করতেন না। সুতরাং উম্মতে মুহম্মদীর শ্রেষ্ঠত্ব, দাওয়াতের কারণে নয় বরং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মত হওয়ার কারণেই। পবিতর কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
وكذلك جعلنكم امة وسطا لتكونوا شهداء على الناس ويكون الرسول عليكم شهيدا.
অর্থঃ- “এরূপেই আমি তোমাদেরকে উম্মতে ওয়াসাত (শ্রেষ্ঠ উম্মত) করেছি। যেন তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও সমস্ত মানুষের জন্য এবং যাতে নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্য।” (সূরা বাক্বারা-১৪৩)
এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়, হাশরের ময়দানে যখন সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের গুণাহ্গার উম্মতদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, “তোমরা কেন নেক কাজ করনি?” তখন তারা বলবে, দুনিয়াতে আমাদের কাছে কোন আসমানী কিতাবও আসেনি এবং কোন নবী আলাইহিস্ সালামও আগমন করেননি। তখন আল্লাহ পাক নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণকে জিজ্ঞেস করবেন, “আপনারা কি তাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছাননি?” তাঁরা বলবেন, “হ্যাঁ, পৌঁছিয়েছি।”
তখন অন্য নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর উম্মতগণ তা অস্বীকার করবে। তখন আল্লাহ পাক বলবেন, “হে নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ! আপনাদের সাক্ষী কোথায়?” তখন তাঁরা বলবেন, “উম্মতে মুহম্মদীগণই আমাদের সাক্ষী।”
তখন উম্মতে মুহম্মদীগণকে ডেকে জিজ্ঞেস করা হলে তাঁরা বলবেন, “হ্যাঁ, সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণই তাঁদের দাওয়াত পৌঁছিয়েছেন এবং দায়িত্ব পালন করেছেন।”
একথা শুনে অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের উম্মতগণ বলবে, উম্মতে মুহম্মদী তো আমাদের থেকে অনেক পরে এসেছেন, তাঁরা কিভাবে আমাদের সাক্ষী হয়? তখন আল্লাহ পাক উম্মতে মুহম্মদীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা বলবেন, “হ্যাঁ, আমরা তাদের থেকে অনেক পরে এসেছি, তবে আমাদের নিকট এসেছিলেন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তিনি আমাদেরকে এ বিষয়ে জানিয়েছেন। আমরা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাঁকে সত্য বলে জেনেছি, তাই আমাদের সাক্ষ্য সত্য।”
অতঃপর আল্লাহ পাক আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করবেন এবং তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মতে মুহম্মদীকে সমর্থন করে সাক্ষী দেবেন, “হ্যাঁ, তারা যা বলেছে, সবই সত্য এবং আমিই তাদেরকে এ তথ্য জানিয়েছি, যা আমি আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে জেনেছি।” (সিহাহ সিত্তাহ্ ও সমূহ তাফসীর)
সুতরাং সূরা ইমরানের উপরোক্ত আয়াত শরীফে আমাদেরকে যে শ্রেষ্ঠ উম্মত বলা হয়েছে, তা দাওয়াতী কাজ করার জন্য নয় বরং তা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রকৃত উম্মত হওয়ার কারণে। (তাফসীরে রুহুল মায়ানী, রুহুল বয়ান, মাযহারী, কুরতুবী, খাযেন, বাগবী, কবিরী, ইবনে আব্বাস, আবিস্ সউদ, দুররে মনসুর ইত্যাদি) (চলবে)
মুহম্মদ সুলতান মাহমুদ, মিরপুর, ঢাকা।
মুহম্মদ আহমদুল্লাহ কামালী, নরসিংদী।
সুওয়ালঃ মাসিক মদীনা ফেব্রুয়ারী ২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়- প্রশ্নঃ চুল…রাখার সুন্নত কি?…… উত্তরঃ…চুল রাখার দুই তরীকা, এক বাবরি রাখা, দুই মু-ানো।….(শামী, আলমগীরী, বুখারী, মুসলিম) আর হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা এপ্রিল/২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “মাথা মুন্ডানো যদিও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হজ্বের মৌসুম ব্যতীত পাওয়া যায় না, কিন্তু হযরত আলী (রাযি.) থেকে মাথা মুন্ডানোর বর্ণনা পাওয়া যায় এবং হযরত আলী (রাযি.)-এর এই আমলের উপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্বীকৃতি পাওয়া যায়। তাই সাহাবীর আমল হিসেবে মাথা মুন্ডানো সুন্নাত। অন্য এক রেওয়ায়াতে আছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাথা মুন্ডন কারীদের জন্য তিন বার রহমতের দোয়া করেছিলেন। আর হানাফী মাযহাবের গ্রহণযোগ্য কিতাবাদিতেও মাথা মুন্ডানোকে সুন্নাত বলা হয়েছে। (ফাত্ওয়ায়ে আলমগীরি ও শামী) এখন আমার সুওয়াল হলো- মাথা মুণ্ডন করা সম্পর্কে মাসিক মদীনা ও হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি মাথা মুণ্ডন করা সুন্নত বা চুল রাখার দুই তরীকার, এক তরীকা? দলীলসহ সঠিক জাওয়াব দিয়ে, আমাদের আক্বীদা আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ মাথার চুল মুণ্ডন করা সম্পর্কে মাসিক মদীনা ও হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে।
কারণ, মাসিক মদীনা ও হাটহাজারী মৌলভী ছাহেব এবং তাদের সমজাতীয়রা এমন একটি হাদীছ শরীফও উল্লেখ করতে পারবে না, যেখানে উল্লেখ আছে যে, “আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নুরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্ব ও ওমরাহ ব্যতীত অন্য সময় নিজ মাথার চুল মুবারক মুণ্ডন করেছেন।” বরং অসংখ্য ছহীহ্ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, “আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় বাবরী চুল মুবারক রাখতেন। সেহেতু সকল উম্মতে মুহম্মদীর জন্য সর্বদা বাবরী চুল রাখাই দায়িমী সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
(ধারাবাহিক)
চুল রাখা সম্পর্কে হাটহাজারীর জিহালতপূর্ণ বক্তব্যের খণ্ডন মুলক জবাব-৩
উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা বলেছে, “অন্য এক রেওয়ায়াতে আছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাথা মুন্ডন কারীদের জন্য তিন বার রহমতের দোয়া করেছিলেন …।”
এর জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য চরম জিহালতপূর্ণ হয়েছে। কারণ উক্ত হাদীছ শরীফখানা শুধুমাত্র হাজীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। উক্ত হাদীছ শরীফ খানা আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাজীদের জন্যই বলেছেন। আর শুধুমাত্র হজ্জ ও ওমরাহ্ পালন কালে মাথা মুন্ডন করা সুন্নত বিধায় তিনি হজ্জ ও ওমরাহ-এ মাথা মুন্ডন কারীদের জন্য তিন বার দোয়া করেছেন।
যেমন, এ সম্পর্কে “মুসলিম শরীফের” ১ম খণ্ডের ৪২১ পৃষ্ঠায় হজ্জের আলোচনায় হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,
حدثنا ابو بن ابى شيبة حدثنا وكيع وابو داود الطياليسى عن شعبة عن يحيى بن الحصين عن جدته انها سمعت النبى صلى الله عليه وسلم فى حجة الوداع دعا للمحلقين ثلاثا وللمقصرين مرة.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আবূ বকর ইবনে আবী শাইবা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত ওয়াকী’ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আবূ দাউদ ত্বইয়ালাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শু’বা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি হযরত ইয়াহ্ইয়া ইবনে হুছাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। হযরত ইয়াহ্ইয়া ইবনে হুছাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর দাদী থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই তাঁর দাদী বিদায় হজ্জে হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে দোয়া করতে শুনেছেন যে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (ওমরাহ্ ও হজ্জের মধ্যে হাজীদের থেকে) যারা চুল মুণ্ডন করবে, তাদের জন্যে তিনবার দোয়া করেছেন। আর যারা চুল ছোট করবে, তাদের জন্যে একবার দোয়া করেছেন। অর্থাৎ হজ্জের মধ্যে মুণ্ডন করাকে ছোট করার উপর ফযীলত বা প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।” (বুখারী শরীফ)
“মিশকাত শরীফের” ২৩২ পৃষ্ঠায় হজ্জের আলোচনায় হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,
عن يحيى بن الحصين عن جدته انها سمعت النبى صلى الله صلى الله عليه وسلم فى حجة الوداع دعا للمحلقين ثلاثا وللمقصرين مرة واحدة.
অর্থঃ- “হযরত ইয়াহ্ইয়া ইবনে হুছাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে। তিনি তাঁর দাদী থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই তাঁর দাদী বিদায় হজ্জে হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে দোয়া করতে শুনেছেন যে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (ওমরাহ্ ও হজ্জের মধ্যে) যারা চুল মুণ্ডন করবে, তাদের জন্যে তিনবার দোয়া করেছেন। আর যারা চুল ছোট করবে, তাদের জন্যে একবার দোয়া করেছেন।”
“বুখারী শরীফের” ১ম খণ্ডের ২৩৩ পৃষ্ঠায় হজ্জের আলোচনায় হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,
حدثنا عبد الله بن يوسف انا مالك عن نافع عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنهما ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال اللهم ارحم المحلقين قالوا والمقصرين يا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال اللهم ارحم المحلقين قالوا و المقصرين يا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال وللمقصرين.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উইসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত নাফেঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমা বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (বিদায় হজ্জের মধ্যে হাজীদের থেকে) যারা চুল মুণ্ডন করবে, তাদের জন্যে এভাবে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ্ পাক (হজ্জের মধ্যে) যারা চুল মুণ্ডন করবে, তাদের প্রতি রহমত করুন। তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যারা চুল ছোট করবে, তাদের কি হবে? আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবারো দ্বিতীয়বার দোয়া করলেন, হে আল্লাহ্ পাক (হজ্জের মধ্যে হাজীদের থেকে) যারা চুল মুণ্ডন করবে, তাদের প্রতি রহমত করুন। এবারও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যারা চুল ছোট করবে, তাদের কি হবে? অতপরঃ আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ্ পাক (হজ্জের মধ্যে হাজীদের থেকে) যারা চুল ছোট করবে, তাদের প্রতিও রহমত করুন।”
(মুসলিম শরীফ ১ম খণ্ড ৪২০ পৃষ্ঠা, আবূ দাউদ শরীফ, ১ম খণ্ড ২৭৯ পৃষ্ঠা)
“মিশকাত শরীফের” ২৩২ পৃষ্ঠায় হজ্জের আলোচনায় হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,
عن ابن عمر رضى الله تعالى عنهما ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال فى حجة الوداع اللهم ارحم المحلقين قالوا والمقصرين يا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال اللهم ارحم المحلقين قالوا المقصرين يا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال والمقصرين.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজ্জে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ পাক (হজ্জের মধ্যে হাজীদের থেকে) যারা চুল মুণ্ডন করবে, তাদের প্রতি রহমত করুন। তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যারা চুল ছোট করবে, তাদের কি হবে? আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবারো দ্বিতীয়বার দোয়া করলেন, হে আল্লাহ্ পাক (হজ্জের মধ্যে হাজীদের থেকে) যারা চুল মুণ্ডন করবে, তাদের প্রতি রহমত করুন। এবারও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যারা চুল ছোট করবে, তাদের কি হবে? অতপরঃ আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ্ পাক (হজ্জের মধ্যে হাজীদের থেকে) যারা চুল ছোট করবে, তাদের প্রতিও রহমত করুন।”
উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভী সাহেবরা বলেছে, “……..তিন বার রহমতের দোয়া করেছিলেন….।” এর জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারীর জাহিল মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য ভুল হয়েছে। কারণ আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু রহমতের জন্যই দোয়া করেননি। বরং হজ্জ ও ওমরায় যারা মাথা মুণ্ডন করবে তাদের জন্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাগফিরাতের জন্যও দোয়া করেছেন, যেমন, “মুসলিম শরীফ”-এর ১ম খণ্ড ৪২১ পৃষ্ঠায় হজ্জের আলোচনায় হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,
وحدثنا ابو بكر بن ابى شيبة وزهير بن حرب وابن نمير وابو كريب جميعا عن ابن فضيل قال زهير حدثنا محمد بن فضيل حدثنا عمارة عن انى زرعة عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اللهم اغفر للمحلقين قالوا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم وللمقصرين قال اللهم اغفر للمحلقين قالوا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم وللمقصرين قال اللهم اغفر للمحلقين قالوا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم وللمقصرين قال وللمقصرين.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আবূ বকর ইবনে আবী শায়বা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত যুহাইর ইবনে হরব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে নুমাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আবূ কুরাইব রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনারা সকলেই হযরত ইবনে ফুযাইল রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন। হযরত যুহাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন মুহম্মদ ইবনে ফুযাইল রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত উমারাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত যুরয়াহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন। হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (হজ্জের মধ্যে হাজীদের থেকে) যারা চুল মুণ্ডন করবে, তাদের জন্যে এভাবে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ্ পাক (হজ্জের মধ্যে হাজীদের থেকে) যারা চুল মুণ্ডন করবে, তাদেরকে আপনি ক্ষমা করুন। তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যারা চুল ছোট করবে, তাদের জন্য কি হবে? আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বিতীয়বারও দোয়া করলেন, হে আল্লাহ্ পাক (হজ্জের মধ্যে হাজীদের থেকে) যারা চুল মুণ্ডন করবে, তাদেরকে আপনি ক্ষমা করুন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যারা চুল ছোট করবে, তাদের জন্য কি হবে? আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুনরায় তৃতীয়বার দোয়া করলেন, আয় আল্লাহ্ পাক! (হজ্জের মধ্যে হাজীদের থেকে) যারা চুল মুণ্ডন করবে, তাদেরকে আপনি ক্ষমা করুন। তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ তৃতীয়বারও বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যারা চুল ছোট করবে, তাদের জন্য কি হবে? অতপরঃ আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চতুর্থবার বললেন, হে আল্লাহ্ পাক (হজ্জের মধ্যে হাজীদের থেকে) যারা চুল ছোট করবে, তাদেরকেও আপনি ক্ষমা করুন।” (বুখারী শরীফ ১ম খণ্ড ২৩৩ পৃষ্ঠা, ইবনে মাজাহ্ শরীফ ২২৫ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র ওমরাহ্কারী ও হাজীদের জন্যই রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করেছেন। অর্থাৎ হজ্জের মধ্যে হাজীদের জন্য চুল ছোট করা ওয়াজিব এবং চুল মুণ্ডন করা সুন্নত। যেহেতু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্জ ও ওমরার সময় চুূল মুবারক মুণ্ডন করেছেন। সেহেতু হজ্জ ও ওমরায় চুল মুণ্ডন করা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
যেসব হাজী ছাহেবগণ চুল মুণ্ডন করেন তারা ওয়াজিব আদায় করার সাথে সাথে সুন্নতও আদায় করে থাকেন। আর এ সুন্নত আদায় করার কারণেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের জন্য তিনবার রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করেছেন। আর যারা চুল ছোট করে শুধু ওয়াজিব আদায় করেন, সুন্নত আদায় করেন না তাদের জন্য একবার দোয়া করেছেন।
তাছাড়া অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা অকাট্টভাবে প্রমাণিত আছে যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদাই ‘বাবরী চুল মুবারক’ রেখেছেন। সম্পূর্ণ হায়াত মুবারকে শুধুমাত্র চারবার (ওমরাহ ও হজ্জ পালন কালে) মাথা মুণ্ডন করেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে “মিশকাত শরীফ”-এর ২২১ পৃষ্ঠায় হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
عن انس رضى الله تعالى عنه قال اعتمر رسول الله صلى الله عليه وسلم اربع عمر كلهن فى ذى القعدة الا التى كانت مع حجته عمرة من الحد يببة فى ذى القعدة وعمرة من الجعرانة حيث قسم عنائم حنين فى ذى القعدة وعمرة مع حجته.
অর্থঃ- “হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চারবার ওমরাহ করেছেন। প্রত্যেকটি করেছেন যিলক্বদ মাসে। তবে হজ্জের সাথে যেটা আদায় করেছেন সেটা ব্যতীত। (কেননা তা ছিল যিলহজ্জ মাসে) একটি ওমরাহ করেছেন হুদায়বিয়া হতে যিলক্বদ মাসে ৬ষ্ঠ হিজরীতে। একটি তার পরবর্তী বছর (৭ম হিজরীর) যিলক্বদ মাসে, যাকে ওমরাতুল কাজ্বাও বলা হয়। একটি ওমরাহ করেছেন জি’রানা থেকে, যেখানে তিনি হুনাইনের গণিমত বণ্টন করেছেন; (৮ম হিজরীর) যিলক্বদ মাসে। আর একটি ছিল তাঁর হজ্জের সাথে অর্থাৎ ১০ম হিজরীতে বিদায় হজ্জে।” (বুখারী শরীফ ১ম খণ্ড ২৩৯ পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ ১ম খণ্ড ৪০৯ পৃষ্ঠা, আবূ দাউদ শরীফ ১ম খণ্ড ২৮০ পৃষ্ঠা)
আর শুধুমাত্র হজ্জ ও ওমরাহ পালন কালে মাথা মুণ্ডন করা সুন্নত বিধায় তিনি হজ্জ ও ওমরাহ-এ মাথা মুণ্ডনকারীদের জন্য তিনবার রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করেছেন।
অতএব, উপরোক্ত অকাট্য দলীল-আদিল্লাহ্র ভিত্তিতে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাথা মুন্ডন কারীদের জন্য যে, তিনবার রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করেছিলেন তা শুধুমাত্র হাজীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
কারণ শুধুমাত্র হজ্জ ও ওমরাহ্ পালন কালে মাথা মুণ্ডন করা সুন্নত বিধায় তিনি হজ্জ ও ওমরাহ-এ মাথা মুণ্ডন কারীদের জন্য তিন বার রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করেছেন। সুতরাং মাথা মুণ্ডন করা সম্পর্কিত হাটহাজারীর জাহিল মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য ছহীহ্ নয়। বরং ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য মত হলো, “শুধু মাত্র বাবরী চুল রাখাই সুন্নত।”
যেমন এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে,
وانما صح عبد المترجم الفرق فقط ولم يصح ان الحلق سنة.
অর্থঃ- “আর মুতারজিম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট নিশ্চয়ই ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য মত হলো এই যে, শুধু মাত্র সিঁথি বিশিষ্ট বাবরী চুল রাখাই সুন্নত। (হজ্জ ও ওমরাহ্ ব্যতীত) মাথা মুণ্ডন করা সুন্নত, এ মতটি ছহীহ্ বা গ্রহণযোগ্য নয়”। (ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া) (চলবে)
মুহম্মদ মুহিউদ্দীন
সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত
সন্দ্বীপ শাখা, চট্টগ্রাম।
সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানী মাযহাবের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর- জানুয়ারী/২০০৩-০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে ‘‘বিতিরের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম এবং বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব পাবে বলে উল্লেখ করেছে।’’
তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ্, নাসায়ী থেকে দলীল হিসেবে কয়েকখানা হাদীছ শরীফও উল্লেখ করেছে। আর হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ডিসেম্বর/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, ‘‘বিতির নামাযের পর দুই রাক্আত নফল নামায… দাঁড়িয়ে পড়া ভাল। কারণ, নফল নামায বিনা কারণে বসে পড়লে অর্ধেক সাওয়াব হয়।” এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা হালকী নফল নামায সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে হাদীছ শরীফগুলো উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য। তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডনসহ হালকী নফল সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায যাকে “হালকী নফল” বলা হয়, তা দাঁড়িয়ে পড়া সম্পর্কে অখ্যাত মাসিক পত্রিকাদ্বয়ের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ হয়েছে। এবং ক্ষেত্রবিশেষে কুফরীমূলক হয়েছে।
স্মর্তব্য যে, সাধারণতঃ নফল নামায বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব হলেও বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়াই মুস্তাহাব-সুন্নত, যা উত্তম ও পূর্ণ ছওয়াব এবং অধিক ফযীলতের কারণ। কেননা আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায কখনও দাঁড়িয়ে আদায় করেননি। বরং বসেই আদায় করেছেন। যা সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।
(ধারাবাহিক)
উল্লেখ্য, রেযাখানীরা ‘বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ ও নাসায়ী শরীফ’ ইত্যাদি কিতাব থেকে দলীল হিসেবে যে বক্তব্য উল্লেখ করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য মোটেও সে রকম নয়। উল্লিখিত কিতাবসমূহের কোন কোন ইবারত কারচুপি করে নিজেদের বাতিল মতকে ছাবিত করার ব্যর্থ কোশেশ করেছে। তারা উল্লিখিত কিতাবের বরাত দিয়ে যে সকল মিথ্যাচারিতা, প্রতারণা ও কারচুপির আশ্রয় নিয়েছে সেগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা ও ফায়সালা তুলে ধরে তার খণ্ডনমূলক আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ্।
রেযাখানীদের কারচুপিমূলক
বক্তব্য উদঘাটন ও খণ্ডন
উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বলেছে, “আহমদ রেজা খান ব্রেলভী রচিত “ফতওয়ায়ে রেজভীয়া”-এর ৩য় খণ্ডে ……অন্যান্য নফল নামাযের ন্যায় বিত্রের পর দু’রাকায়াত নফল নামাযও দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে।”
এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানীরা বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম বলে প্রথমতঃ “রেজভীয়া” কিতাবের ৩য় খণ্ডের বরাত দিয়েছে। অথচ রেজভীয়া কিতাবের ৩য় খণ্ডে এ ব্যাপারে দু’টি বক্তব্য বর্ণনা করা হয়েছে। একটি হলো ১৩২৫ হিজরীর এবং অপরটি হলো ১৩২৬ হিজরীর। নিম্নে “রেজভীয়া” কিতাবের ৩য় খণ্ডের ১৩২৫ হিজরীর বক্তব্যটির হুবহু ইবারত তুলে ধরা হলো। যেমন “রেজভীয়া” কিতাবের ৩য় খণ্ডের ৪৬৭-৪৬৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- “মাসয়ালাঃ……বিতির নামাযের পর যে নফল নামায পড়া হয় তা বসে পড়া উত্তম না দাঁড়িয়ে, মালা বুদ্দা মিনহু কিতাবে লিখিত আছে বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়া মুস্তাহাব। জাওয়াবঃ দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম, বসে পড়ায় অর্ধেক ছওয়াব। রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, দাঁড়িয়ে নামায পড়া আফযল, যে ব্যাক্তি বসে নামায আদায় করে, সে দাঁড়ানো ব্যাক্তির তুলনায় অর্ধেক ছওয়াব পাবে।”
“রেজভীয়া” কিতাবের ৩য় খণ্ডে উল্লিখিত উক্ত ইবারতে প্রথমতঃ এটাই প্রমাণিত হলো যে, রেযাখানীদের গুরু মৌলভী রেযা খাঁ সাহেব উল্লিখিত ইবারতে যে জাওয়াব দিয়েছে, তার উক্ত জাওয়াবের মধ্যে উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থাৎ- “বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামাযের ইবারতটি তার জাওয়াবে সরাসরি উল্লেখ নেই।”
অথচ আমাদের বক্তব্য হলো- উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থাৎ- বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করা সম্পর্কে।
দ্বিতীয়তঃ রেযাখানীদের গুরু মৌলভী রেযা খাঁ ছাহেবকে মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করা হয়েছে খাছ করে উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থাৎ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায সম্পর্কে। অথচ রেযা খাঁ কুটকৌশলে উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থাৎ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামাযের প্রসঙ্গটি কুটকৌশলে এড়িয়ে গিয়ে আমভাবে অন্যান্য নফল নামাযের কথা বলেছে, সেহেতু উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থাৎ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামাযের ইবারতটি তার জাওয়াবে সরাসরি উল্লেখ করেনি। তৃতীয়তঃ রেযাখানীদের গুরু মৌলভী রেযা খাঁ ছাহেব উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থাৎ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামাযের ইবারতটি তার জাওয়াবে সরাসরি উল্লেখ না করে ধোকা ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে।
চতুর্থতঃ রেযাখানীদের গুরু মৌলভী রেযা খাঁ সাহেব তার মাসয়ালার জাওয়াবে দলীল হিসেবে যে হাদীছ শরীফ খানার ইবারত উল্লেখ করেছে, উক্ত হাদীছ শরীফ খানার ইবারতেও সে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। কারণ উক্ত হাদীছ শরীফের ইবারতের মধ্যে যেহেতু وهو جالس بعد الوتر ركعتين خفيفتين. (বা’দাল বিত্রি রাকয়াতাইনি…..) অর্থাৎ বিতরের পর দু’রাকায়াত (নফল) নামায যাকে হালকী নফল বলা হয় তার উল্লেখ নেই, সেহেতু সেই হাদীছ শরীফের ইবারতের দ্বারা বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামাযের প্রশ্ন আসে কি করে? মুলতঃ উল্লিখিত হাদীছ শরীফ খানার ইবারতে বিতরের পর দু’রাকায়াত নফল ব্যতীত অন্য সকল নফল নামাযের কথা বলা হয়েছে। বিতরের পর দু’রাকায়ত নফলের কথা বলা হয়নি। আর আমরা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাতের মধ্যে হাদীছ শরীফের সুস্পষ্ট ইবারতের দ্বারা প্রমাণ করে দিয়েছি যে, বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করা সুন্নত ও পূর্ণ ছওয়াব।
কারণ হাদীছ শরীফের ইবারতের মধ্যে يصلى بعد الوتر ركعتين خفيفتين وهو جالس. বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করার বর্র্ণনা সুস্পষ্টভাবে হুবহু উল্লেখ আছে। সুতরাং পাঠকের সুবিধার্থে বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করা সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ খানা আবারো হুবহু তুলে ধরা হলো।
“ইবনে মাজাহ্ শরীফের” ৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
حدثنا محمد بن بشار حدثنا حماد بن مسعدة حدثنا ميمون بن موسى المرئى عن الحسن عن امه عن ام سلمة رضى الله عنها ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يصلى بعد الوتر ركعتين خفيفتين وهو جالس.
অর্থঃ- “ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মুহম্মদ ইবনে বাশ্শার রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত হাম্মাদ ইবনে মাসয়াদা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মায়মূনা ইবনে মূসা আল-মারায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি তাঁর মা থেকে বর্ণনা করেন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে যে, আখিরী রসুল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম يصلى بعد الوتر ركعتين خفيفتين وهو جالس. বিতর নামাযের পর সংক্ষিপ্তাকারে দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করতেন। অতএব, রেযাখানীরা বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম বলে “রেজভীয়া” কিতাবের ৩য় খণ্ডের বরাত দিয়ে সাধারণ মানুষকে চরমভাবে ধোকা দিয়েছে। অথচ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে- من غش فليس منا. অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ধোকা দেয়, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” সুতরাং তাদের ফতওয়া হাদীছ শরীফের খিলাফ হওয়ার কারণে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন
শান্তিবাগ, ঢাকা।
সুওয়াল: ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে এ বছরের (১৪২৬ হিজরী সন) ছদকাতুল ফিত্র নির্ধারণী এক সভায় বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খতীব মাওলানা উবায়দুল হক ও সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতী মুহম্মদ নুরুদ্দীন এবং তাদের সমগোত্রীয় কতিপয় মাওলানা, মুফতী, ইমাম ও খতীবের গৃহীত সিদ্ধান্তে বলা হয় যে, ছদকাতুল ফিতর জন প্রতি নিছফে ‘সা’ অর্থাৎ ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম আটা অথবা এর স্থানীয় বাজার মূল্যে আদায় করতে হবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে খোলা বাজার যাচাই করে উন্নত মানের আটার মূল্য হিসেবে এবারের জনপ্রতি বা মাথাপিছু ফিতরার পরিমাণ ৩৩ টাকা ধার্য করা হয়েছে। এ খবর ১২ অক্টোবর-২০০৫ ঈসায়ী তারিখে দৈনিক ইনকিলাব, প্রথম আলো, সংগ্রাম, সংবাদ, আমার দেশ ইত্যাদি পত্রিকায় ছাপানো হয়। এখন আমার সুওয়াল হলো- ছদকাতুল ফিতর সম্পর্কে তাদের উক্ত সিদ্ধান্ত কতটুকু সঠিক হয়েছে? তা জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: ছদকাতুল ফিতরের পরিমাণ ও তার মূল্য নির্ধারণ সম্পর্কে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অনুষ্ঠিত সভায় মাওলানা, মুফতী, ইমাম ও খতীব ছাহেবরা যে সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে তা ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। সুতরাং, উল্লিখিত পরিমাণে কেউ ছদকাতুল ফিতর আদায় করলে তা আদায় হবে না। কারণ, ছহীহ এবং গ্রহণযোগ্য মতে, নিছফু ‘সা’ বা অর্ধ ‘সা’ বলতে এক সের সাড়ে বার ছটাক বুঝানো হয়েছে, যা গ্রাম হিসাবে প্রায় ১৬৫৭ গ্রাম হয়। প্রমাণ: ১ সের সাড়ে ১২ ছটাক = ১৬ ছটাক+১২ ছটাক কাজেই, যাদের উপর ছদ্কাতুল ফিতর ওয়াজিব অর্থাৎ ঈদের দিন ছুব্হে ছাদিকের সময় নিসাব পরিমাণ (সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সমপরিমাণ টাকা) সম্পদ থাকে, তাদের প্রত্যেককেই উল্লিখিত একসের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটা বা তার মূল্য দান করতে হবে। অথচ উল্লিখিত মাওলানা, মুফতী, ইমাম ও খতীবগং ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম তথা ১৬৫০ গ্রাম উল্লেখ করেছে। যা তাদের গণিত শাস্ত্রের চরম অবজ্ঞার প্রমাণ বহন করে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় আটার দাম বিভিন্ন রকম। কাজেই, যাদের উপর ছদ্কাতুল ফিতর ওয়াজিব, তাদেরকে তাদের নিজ নিজ এলাকার বর্তমান মূল্য হিসাবে একসের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য দিতে হবে। কিন্তু উল্লিখিত মাওলানা, মুফতী, ইমাম ও খতীব ছাহেবগং দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে খোলা বাজার যাচাই করে আটার মূল্য হিসেব করে জন প্রতি ফিতরার পরিমাণ ধার্য করেছে ৩৩ টাকা যা তাদের চরম জিহালত বা মূর্খতা বৈ কিছুই নয়।
কারণ, দেশের সব এলাকার আটার দাম এক রকম নয়। সাধারণত শহরের তুলনায় গ্রামে দ্রব্যমূল্যের দাম কিছুটা কম হয়ে থাকে। আবার খোলা আটার তুলনায় প্যাকেটের আটার মান ভালো হয়ে থাকে এবং তার দামও বেশী হয়ে থাকে। আর শরীয়তের ফতওয়াও হচ্ছে, যেটা সবচেয়ে ভাল, পছন্দনীয় ও মূল্যবান সেটাই দান করতে হবে। খারাপ বা নিম্ন মূল্যের যেটা সেটা দান করা যাবেনা। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
يايها الذين امنوا النفقوا من طيبت ما كسبتم ومما اخرجنا لكم من الارض ولاتيمموا الخبيث منه تنفقون ولستم باحذيه الا ان تغمضوا فيه واعلموا ان الله غنى حميد.
অর্থঃ- “হে ঈমারদারগণ! তোমরা স্বীয় উপার্জন থেকে এবং যা আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে উৎপন্ন করেছি তা থেকে উৎকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করো এবং তা থেকে নিকৃষ্ট জিনিষ ব্যয় করতে নিয়ত বা মনস্থ করোনা। কেননা, তা তোমরা কখনোও অনিচ্ছাকৃত ব্যতীত বা অনিচ্ছাসত্ত্বে ব্যতীত গ্রহণ করবে না। জেনে রেখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।” (সূরা বাক্বারা-২৬৭)
এ আয়াতে কারীমায় মালের যাকাত, ফিত্রা এবং জমির ফসলের ওশর ইত্যাদি ফরয, ওয়াজিব ও নফল সকল দান-ছদক্বার কথাই বলা হয়েছে। অর্থাৎ যেটা উত্তম, উৎকৃষ্ট ও মূল্যবান সেটাই দিতে হবে। যেটা নিকৃষ্ট, নিম্নমানের বা নিম্নমূল্যের সেটা দেয়া তো দূরের কথা সেটা দেয়ার কল্পনা বা চিন্তাও করা যাবেনা। কেননা, খারাপটা কেউই গ্রহণ করতে চায়না তাহলে আল্লাহ পাক সেটা কি করে গ্রহণ করবেন। এখন কেউ যদি যাচাই না করে চোখ বন্ধ বন্ধ করে নিজের খেয়াল খুশী মতো সেটা দিয়ে দেয় সেক্ষেত্রে আল্লাহ পাক জানিয়েছেন যে, আল্লাহ পাক তোমাদের এগুলোর মুখাপেক্ষী নন, তিনি গণী বা অভাবমুক্ত এবং হামীদ বা চরম প্রশংসিত। উক্ত মাওলানা, মুফতী, ইমাম ও খতীব ছাহেবরা ছদক্বাতুল ফিতরের পরিমাণ ও তার মূল্য নির্ধারণে যা করেছে তা গরীবদের প্রাপ্য হক্ব হতে বঞ্চিত ও তাদের প্রতি জুলূমের শামিল। যেমন, প্রথমত তারা ছদকাতুল ফিতরের পরিমাণ ১৬৫৭ গ্রাম থেকে কমিয়ে ১৬৫০ গ্রাম নির্ধারণ করেছে।
দ্বিতীয়ত: খোলা বাজারের আটার দাম নির্ধারণ করেছে।
তৃতীয়ত: এই মূল্য শহর, গ্রাম নির্বিশেষে সবার জন্য ধার্য করেছে। এর দ্বারা প্রকৃতপক্ষে তারা হক্কুল্লাহ ও হক্কুল ইবাদ উভয়টিই নষ্ট করেছে। এ বছর ঢাকা শহরে ২২.০০ টাকা কেজি হিসাবে এক সের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য- ৩৬.৫০ টাকা (প্রায়)। এর কম দেয়া যাবেনা। তবে ইচ্ছা করলে বেশী দিতে পারবে।
উল্লেখ্য, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ফিতরা সম্পর্কিত এ ফতওয়া গত ২৩ অক্টোবর-২০০৫ ঈসায়ী তারিখে দৈনিক ইত্তেফাকের শেষ পৃষ্ঠায়, দৈনিক সমকালের ১৫ পৃষ্ঠায় এবং গত ২২ অক্টোবর-২০০৫ ঈসায়ী তারিখে দৈনিক ভোরের কাগজের শেষ পৃষ্ঠায় ও দৈনিক যুগান্তর এবং অন্যান্য পত্রিকায়ও এসেছে। {দলীলসমূহ: আবূ দাউদ, মিশকাত, মিরকাত, আলমগীরী, বাহরুর রায়িক্ব, দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার, কাজীখান, ফতহুল ক্বাদীর ইত্যাদি}
মুহম্মদ আহসানুল্লাহ (মুরাদ),
উলিপুর, কুড়িগ্রাম।
সুওয়ালঃ ঈদের রাতের ফযীলত ও আমল সম্পর্কে জানতে চাই।
জাওয়াবঃ বছরে পাঁচ রাতে বিশেষভাবে দোয়া কবুল হয়। তার মধ্যে দু’ঈদের দু’রাত।
এ রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত-বন্দিগী, দোয়া-ইস্তিগ্ফার, দুরূদ শরীফ, যিকির-আয্কার, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা এবং দিলের নেক মকসুদসমূহ আল্লাহ্ পাক-এর নিকট পেশ করা হচ্ছে এ রাতের আমল। হাদীছ শরীফে ঈদের রাতের বহু ফযীলত ও মর্তবার কথা বর্ণিত রয়েছে। যেমন এক হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আয্হার রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদতে মশগুল থাকবে, যেদিন অন্য সমস্ত দিল মরবে, সেদিন তার দিল মরবে না।” এর অর্থ হলো- ক্বিয়ামতের দিন অন্যান্য দিল পেরেশানীতে থাকলেও দু’ঈদের রাতে জাগরনকারী ব্যক্তির দিল শান্তিতে থাকবে। (তবারানী শরীফ)
ছূফী মুহম্মদ মুহসিনূর রহমান
ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
সুওয়ালঃ ঈদের নামাযের পূর্বে কোন নফল ইবাদত বা কুরআন শরীফ তিলাওয়াত বা কবর যিয়ারত করা যাবে কি? জাওয়াবঃ ঈদের নামাযের পূর্বে কোন নফল নামায আদায়, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, কবর যিয়ারত ইত্যাদি কোনটাই করা যাবেনা। তা মাকরূহ্রে অন্তর্ভুক্ত।
{দলীলসমূহ: মারাকিউল ফালাহ্, তাহ্তাবী, তাতারখানিয়া ইত্যাদি।}
মুহম্মদ আতিকুর রহমান
সদর, গাইবান্ধা।
সুওয়ালঃ ঈদের দিনের সুন্নতসমূহ কি? জানালে কৃতার্থ হবো।
জাওয়াবঃ ঈদের দিনের সুন্নত হলো- (১) খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠা, (২) গোসল করা, (৩) মিস্ওয়াক করা, (৪) সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা, (৫) আতর ব্যবহার করা, (৬) নামাযের পূর্বে ছদকাতুল ফিতর আদায় করা, (৭) ঈদুল ফিত্র নামাযের পূর্বে কিছু মিষ্টান্ন খাওয়া (৮) তিন, পাঁচ বা বেজোড় সংখ্যক খেজুর বা খুরমা খাওয়া, (৯) মহল্লার (এলাকার) মসজিদে গিয়ে ফজরের নামায পড়া, (১০) ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া, (১১) এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা, (১২) সকাল সকাল ঈদের নামায পড়ার জন্য যাওয়া, (১৩) ঈদের নামায, ঈদগাহে গিয়ে পড়া। সম্ভব না হলে মহল্লার (এলাকার) মসজিদে ঈদের নামায পড়া, (১৪) আস্তে আস্তে নিম্নলিখিত দোয়া পড়তে পড়তে ঈদগাহে যাওয়া
الله اكبر الله اكبر لا اله الا الله والله اكبر الله اكبر ولله الحمد.
উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ্। অর্থঃ- “আল্লাহ পাক মহান, আল্লাহ পাক মহান, আল্লাহ পাক ব্যতীত কোন ইলাহ (মা’বুদ) নেই। আল্লাহ পাক মহান, আল্লাহ পাক-এর জন্যই সমস্ত প্রশংসা।” (১৫) শরীয়তের সীমার মধ্যে থেকে খুশী প্রকাশ করা ইত্যাদি ঈদের সুন্নত।
{দলীলসমূহ: আলমগীরী, নূরুল ইজাহ ও সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব)
মুহম্মদ বক্তে জামাল
ওয়ার্লেস্ কলোনী, লালমনিরহাট।
সুওয়ালঃ ঈদের নামায কখন পড়া সুন্নত? জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াবঃ সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হবার পর থেকে (অর্থাৎ মাকরূহ্ ওয়াক্ত শেষ হবার পর থেকে অথবা সূর্য উদয়ের শুরু থেকে ঘড়ির মিনিট অনুযায়ী ২৩মিঃ পর) ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর যাহওয়াতুল কুবরা বা যাওয়াল অথবা শরয়ী অর্ধদিন বা দ্বিপ্রহর অর্থাৎ সূর্যের এস্তাওয়া আরম্ভ হবার পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে। ফজরের ওয়াক্ত শেষ হবার পর ২৩মিঃ পর্যন্ত মাকরূহ্ ওয়াক্ত এবং এরপর ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং যোহরের ওয়াক্ত শুরু হবার ১ ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে।
সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হবার পর থেকে অর্থাৎ মাকরূহ্ ওয়াক্ত যা ঘড়ির হিসাব অনুযায়ী ২৩মিঃ অতিক্রম হবার পূর্বে ঈদের নামায আদায় করলে নামায হবে না এবং যোহরের নামাজের ওয়াক্ত হবার পূর্বের ১ ঘন্টা যা মাকরূহ্ ওয়াক্ত নামে পরিচিত অর্থাৎ যাহওয়াতুল কোবরা বা সূর্যের এস্তাওয়া আরম্ভ হবার পর ঈদের নামায আদায় করলে তা আদায় হবে না। ঈদের নামায কোন্ সময় আদায় করলে তা সুন্নত হবে সে সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “ঈদের দিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামায পড়ে হুজরা শরীফে যেয়ে সকাল সকাল গোসল করতেন এবং ঈদুল ফিত্র হলে বেজোড় সংখ্যক (৩,৫,৭) খোরমা, খেজুর খেয়ে ঈদগাহে যেতেন। আর ঈদুল আযহার সময় কিছু না খেয়ে সরাসরি ইদগাহে যেতেন এবং ঈদের নামাযের ওয়াক্ত হবার সাথে সাথে ঈদের নামায আদায় করতেন এবং তারপর খুতবা দিতেন ও নছীহত করতেন।”
“হযরত আবুল হোয়ায়রেস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আমর ইবনে হাযম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে নাজরানের গভর্ণর থাকা অবস্থায় চিঠি দিয়ে আদেশ করেছেন, ঈদুল আযহার নামায খুব সকাল সকাল পড়বে এবং ঈদুল ফিত্রের নামায ঈদুল আযহার চেয়ে অল্প একটু দেরীতে পড়বে এবং নামাযের পরে মানুষকে নছীহত করবে।”
কাজেই, ঈদের নামায সকাল সকাল পড়া সুন্নত। ঈদের নামাজের সন্মানার্থে এবং ঈদের নামায যাতে আদায়ে দেরী না হয়, সেজন্য ঈদের দিন ইশরাকসহ অন্যান্য নফল নামায পড়া নিষিদ্ধ।
সাইয়্যিদা সফুরা তাসনীমা, শান্তিবাগ, ঢাকা।
সুওয়ালঃ মহিলারা ঈদের নামায পড়তে পারবে কিনা? জাওয়াব: মহিলাদের জন্য ঈদ ও জুমুয়ার নামায নেই। কারণ, ঈদ ও জুমুয়ার নামাযের জন্য জামায়াত শর্ত। হানাফী মাযহাব মতে, ইমাম ব্যতীত কমপক্ষে তিনজন মুছল্লী থাকতে হবে। অন্যথায় ঈদ ও জুমুয়া আদায় হবে না। আর ফতওয়া হচ্ছে, মহিলাদের জন্য ঈদ হোক, জুমুয়া হোক, পাঞ্জেগানা হোক, তারাবীহ্ হোক কোন নামাযই জামায়াতে আদায় করার জন্য মসজিদ ও ঈদগাহে যাওয়া জায়িয নেই। তা আম ফতওয়া মতে মাকরূহ তাহরীমী আর খাছ ফতওয়া মতে কুফরী। অতএব, মহিলারা ঈদের নামাযে গেলে কঠিন গুনাহে গুনাহ্গার হবে। (এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে আল বাইয়্যিনাতের ১১তম সংখ্যা পাঠ করুন, সেখানে প্রায় ৬৫টি দলীল পেশ করা হয়েছে।)
{দলীলসমূহ: উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী, দুররুল মুখতার, ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া, খুলাছাতুল ফতওয়া, ফতহুল ক্বাদীর, আলমগীরী)