সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ১৪৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ মনজুরুল হক, গুলবাগ, ঢাকা।

মুহম্মদ শরফুদ্দীন, দারোগাহাট রোড, চট্টগ্রাম।

সুওয়াল : ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ এবং ‘দৈনিক আল ইহসান’ পত্রিকার বরাত দিয়ে ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দেয়াল লিখনিতে বেশি কিছু মাসয়ালা উল্লেখ করা হয়েছে। যে মাসয়ালাগুলো মূলত: মানুষের ঈমান-আক্বীদা ও আমলের ক্ষেত্রে অতীব জরুরী। যেমন, ‘ইসলামের নামে ভোট, গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, মৌলবাদী দাবী করা, বেপর্দা হওয়া, ছবি তোলা, টিভি দেখা, টিভিতে প্রোগ্রাম করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া হারাম, নাজায়িয ও কুফরী।’ ‘যে সব মাওলানা টিভি চ্যানেল প্রোগ্রাম করে তারা উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী আলিম’ ইত্যাদি।

কিন্তু হাটহাজারী মাদরাসার মুখপত্র মাসিক মুঈনুল ইসলাম আগস্ট-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এক জিজ্ঞাসার সমাধানে দলীলবিহীন ও মনগড়াভাবে হরতাল করা, লংমার্চ করা, মৌলবাদী দাবী করাকে জায়িয বলা হয়েছে।

আরো বলা হয়েছে, ‘টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করার কারণে (প্রোগ্রামকারী মাওলানাদেরকে) উলামায়ে ‘সূ’ বলা জায়িয হবে না।’

এখন আমাদের সুওয়াল হলো- মাসিক মুঈনুল ইসলাম পত্রিকার প্রদত্ত্ব সমাধান কতটুকু সঠিক? তা কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনার দৃষ্টিতে জানতে ইচ্ছুক।

জাওয়াব : মাসিক মুঈনুল ইসলাম পত্রিকার উল্লিখিত জিজ্ঞাসার সমাধান সম্পূর্ণরূপে কুফরী হয়েছে।

কারণ, শরীয়তে কোন হারাম বা নাজায়িয বিষয়কে হালাল বা জায়িয সাব্যস্ত করা কুফরী। যেমন, আকাঈদের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, استحلال المعصية كفر.

অর্থ: “কোন গুনাহর বিষয়কে অর্থাৎ হারাম বা নাজায়িয বিষয়কে হালাল বা বৈধ জানা কুফরী।”

উল্লেখ্য, ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ এবং ‘দৈনিক আল ইহসান’ পত্রিকার বরাত দিয়ে যে সকল মাসয়ালা বা ফতওয়া দেয়াল লিখনিতে প্রচার করা হয়েছে, হচ্ছে ও হবে তা সবই কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ সম্মত। এবং উক্ত মাসয়ালা বা ফতওয়ার পিছনে রয়েছে অকাট্য ও অসংখ্য দলীল-আদিল্লাহ। যেমন-

১. হরতাল : “হরতাল” শব্দের অর্থ বিশৃঙ্খলা, অত্যাচার, স্বেচ্ছাচার, অবাধ্যতা, অরাজকতা, প্রতিবন্ধকতা, প্রতিরোধ ইত্যাদি।

হরতালের ব্যাখ্যায় বলা হয়, বিক্ষোভ প্রকাশের জন্য যানবাহন, হাট-বাজার, দোকানপাট, অফিস-আলাদত ইত্যাদি জনজীবনের সব কাজ-কর্ম অযাচিতভাবে বন্ধ করা।

হরতাল গুজরাটি শব্দ। ‘হর’ অর্থ প্রত্যেক। ‘তাল’ অর্থ তারা। অর্থাৎ প্রতি দরজায় তালা।

ইতিহাস : মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রাচীনকাল হতেই দাবী আদায়ের কৌশল হিসেবে নানা প্রকার পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। যেমন, আমেরিকার ফিলাডেলফিয়াতে ১৭৮৬ সালে ছাপাখানার কর্মচারীরা, জার্মানে ১৯২০ সালে রাজনৈতিক কারণে, ব্রিটেনে ১৯২৬ সালে কয়লা শ্রমিকরা, এছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকার নানা স্থানে বিভিন্ন গোষ্ঠী তাদের দাবী আদায় করার জন্য যে কৌশল অবলম্বন করেছিল, তার নাম দেয়া হয়েছে স্ট্রাইক।

আর ভারত উপমহাদেশে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, ব্রিটিশদের রাউলাট আইন বাতিল করার জন্য তার প্রতিবাদে যে পদ্ধতি অবলম্বন করে, তার নাম দেয়া হয় হরতাল। এ হরতাল পালিত হওয়ার কথা ছিল ১৯১৮ সালের ৩০ শে মার্চ। পরে এ তারিখ পিছিয়ে ৬ই এপ্রিল করা হয়। ফলে কোন স্থানে ৩০ শে মার্চ আবার কোন স্থানে ৬ই এপ্রিল সর্ব প্রথম হরতাল পালিত হয়।

বলাবাহুল্য, হরতাল গুজরাটি শব্দ। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী কট্টর মুসলিম বিদ্বেষী হিন্দু, সে দাবী আদায়ের পদ্ধতির নামকরণ করে হরতাল।

মূলত: স্ট্রাইক শব্দের প্রবর্তক হলো, ইহুদী-নাছারা। আর হরতাল শব্দের প্রবর্তক হলো, মুশরিক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। তাকে বলা হয়েছিল যে, তুমি স্ট্রাইক কর। সে বলেছিল, সে জাতী হিন্দু সে ইহুদী-নাছারাকে অনুসরণ করবে না। স্ট্রাইক করলে তার জাতীয় বৈশিষ্ট্য থাকবেনা। এই জন্য সে স্ট্রাইক বাদ দিয়ে হরতাল করে।

উল্লেখ্য, মুসলমান বিদ্বেষী মহনদাস করমচাঁদ গান্ধী নিজেকে জাতী হিন্দু দাবী করার কারণে সে ইহুদী-নাছারাদের অনুসরণ করে স্ট্রাইক করলোনা। বরং সে তার জাতীয়তা বজায় রাখার জন্য নাম পরিবর্তন করে “হরতাল” করলো।

অথচ বর্তমান আরিম নামধারী উলামায়ে “ছূ”রা নিজের অস্তিত্ব তো বিলীন করে দিয়েছেই সাথে সাথে ইসলামকে বিসর্জন দিয়ে কট্টর জাতী হিন্দু মহনদাস করমচাদ গান্ধীকে অনুসরণ করে হরতাল করছে। নাউযুবিল্লাহ!

শরীয়তের দৃষ্টিতে হরতালনাজায়িয ও হারাম

মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,

ومن يبتغ غير الاسلام دينا فلن يقبل منه وهو فى الاخرة من الخسرين.

অর্থ: “যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন (নিয়ম-নীতি, অন্য ধর্ম) তালাশ করে, তা কখনোই তার থেকে গ্রহণ করা হবেনা এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রন্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান-৮৫)

আর এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عن جابر عن النبى صلى الله عليه وسلم حين اتاه عمر فقال انا نسمع احاديث من يهود تعجبنا افترى ان نكتب بعضها فقال امتهوكون انتم كما تهوكت اليهود والنصارى لقد جئتكم بها بيضاء نقية، ولو كان موسى حيا ماوسعه الا اتباعى.

অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হতে বর্ণনা করেন যে, একদিন হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন, (ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমরা ইহুদীদের থেকে তাদের কিছু ধর্মীয় কথা শুনে থাকি, যাতে আমরা আশ্চর্যবোধ করি, ওটার কিছু আমরা লিখে রাখবো কি? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তোমরাও কি দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছো? যে রকম ইহুদী নাছারারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে? অবশ্যই আমি তোমাদের নিকট পরিপূর্ণ, উজ্জল ও পরিস্কার দ্বীন নিয়ে এসেছি। হযরত মুসা আলাইহিস সালাম তিনিও যদি দুনিয়ায় থাকতেন, তাহলে উনাকেও আমরা অনুসরণ করতে হতো।” (মুসনদে আহমদ, বায়হাক্বী, মিশকাত শরীফ)

সুতরাং উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ হতে বুঝা গেল যে, মুসলমানের জন্য কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা-ক্বিয়াস ছাড়া অন্য কোন বিজাতীয় পন্থার অনুসরণ-অনুকরণ ও আমল করা সম্পূর্ণরূপে হারাম। যারা বিজাতীয় পন্থার অনুসরণ অনুকরণ করবে তারা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عن عبد الله بن عمر رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল বা সাদৃশ্য রাখবে তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে। (আহমদ, আবু দাউদ)

এ প্রসঙ্গে একটি ওয়াকেয়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, তা হলো- হিন্দুস্থানে একজন জবরদস্ত মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী ছিলেন। যিনি ইন্তিকালের পর অন্য একজন বুযুর্গ ব্যক্তি উনাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করেন, “হে মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী, আপনি কেমন আছেন?” তখন সেই মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী জাওয়াবে বলেন, “আপাতত আমি ভালই আছি, কিন্তু আমার উপর দিয়ে এক কঠিন সময় অতিবাহিত হয়েছে। যা বলার অপেক্ষার রাখেনা। আমার ইন্তিকালের পর আমাকে ফেরেশতারা সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মুখে পেশ করেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ফেরেশতাদের বলেন, “হে ফেরেশতাগণ! তোমরা কেন উনাকে এখানে নিয়ে এসেছ”? ফেরেশতাগণ বলেন, “আয় মহান আল্লাহ পাক! আমরা উনাকে খাছ বান্দা হিসেবে আপনার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য নিয়ে এসেছি।” এটা শ্রবণ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, “উনাকে এখান থেকে নিয়ে যাও, উনার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে। কেননা সে পূঁজা করেছে। এটা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম এবং আমার সমস্ত শরীর ভয়ে কাঁপতে লাগল। তখন আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আরজু পেশ করলাম, “আয় মহান আল্লাহ পাক! আমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে কেন? আমি তো সব সময় আপনার এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফরমাবরদার ছিলাম। কখনও ইচ্ছাকৃত নাফরমানি করিনি এবং কখনো পূজা করিনি আর মন্দিরেও যাইনি।” তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, “তুমি সেইদিনের কথা স্মরণ কর, যেদিন হিন্দুস্থানে হোলি পূজা হচ্ছিল। তোমার সামনে-পিছনে, ডানে-বায়ে, উপরে-নীচে সমস্ত গাছ-পালা, তরু-লতা, পশু-পাখী, কীট-পতঙ্গ সবকিছুকে রঙ দেয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায় তোমার সামনে দিয়ে একটি গর্দভ যাচ্ছিল যাকে রঙ দেয়া হয়নি। তখন তুমি পান চিবাচ্ছিলে, তুমি সেই পর্দভের গায়ে এক চিপটি পানের রঙ্গিন রস নিক্ষেপ করে বলেছিলে, “হে গর্দভ তোমাকে তো কেউ রং দেয়নি, এই হোলি পূজার দিনে আমি তোমাকে রং দিয়ে দিলাম।” “এটা কি তোমার পূজা করা হয়নি? তুমি কি জান না”, من تشبه بقوم فهو منهم.

অর্থ: “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে।”

সুতরাং “তোমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে।” যখন মহান আল্লাহ পাক এ কথা বললেন, তখন আমি লা-জাওয়াব হয়ে গেলাম এবং ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে বললাম, “আয় মহান আল্লাহ পাক! আমি এটা বুঝতে পারিনি।” কিছুক্ষণ পর মহান আল্লাহ পাক বললেন, “হ্যাঁ তোমাকে অন্যান্য আমলের কারণে ক্ষমা করা হয়েছে।”

কাজেই, আলিম-ওয়ামাতো অবশ্যই সাধারণ মুসলমানদের জন্যও বিজাতীয়দের কোন নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীকা অনুসরণ অনুকরণ করা জায়িয নেই।

কারণ মুসলমানদেরকে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ অনুকরণ করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে কুরআন শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة.

অর্থ: “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (পবিত্র সূরা আহযাব-২১)

اطيعوا الله ورسوله ان كنتم مؤمنين.

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইতায়াত (অনুসরণ-অনুকরণ) করো যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাকে।” (পবিত্র সূরা আনফাল-১)

হাদীছ শরীফ-এ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

عليكم بسنتى.

অর্থ: “তোমাদের প্রতি আমার আদর্শ গ্রহণ করা ওয়াজিব।” (আহমদ, আবু দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ) অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক ও মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “তিনিই তথা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই হচ্ছেন আদর্শ এবং উনাকেই সর্বাবস্থায় আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে অনুসরণ-অনুকরণ করার জন্য।

অতএব, কট্টর জাতী হিন্দু মহনদাস করমচাদ গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে হরতাল করা সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয, হারাম ও কুফরী। (চলবে)

মুহম্মদ আসিফ মহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।

মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন, মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা।

সুওয়াল : ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে মাসিক মুহীনুল ইসলামের মুনাজত সম্পর্কে বক্তব্য খ-ন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুহীনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো-

…. ২. “মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বায়” বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা জঈফ। আর জঈফ বর্ণনাকে কোথাও প্রমাণ ও দলীল হিসেবে পেশ করা যায় না।…

এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাটহাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলভীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি।

জাওয়াব : গত সংখ্যায় প্রদত্ত দলীল-আদিল্লাহ ভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে আপনারা অবগত হয়েছেন যে, খোদ হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের গুরু বা মুরুব্বী ‘ফয়জুল্লাহ’সহ তাদের দেওবন্দী সিলসিলার মুরুব্বী যেমন, আশরাফ আলী থানবী ও জাফর আহমদ উছমানী ছাহেবসহ আরো অনেকেই তাদের কিতাবসমূহে ‘মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বার’ বরাতে رفع يديه ودعا. এ অংশটুকুসহ হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করেছে। তাই হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উচিত আল বাইয়্যিনাত-এর প্রতি মিথ্যারোপ না করে সর্বপ্রথম নিজ মুরুব্বীদের বক্তব্য বা লিখনীর ‘তদন্ত’ করে সঠিক রিপোর্ট পেশ করা। অর্থাৎ উক্ত হাদীছ শরীফ-এ যদি رفع يديه ودعا. এ অংশটুকু নাই থাকে তবে আজ থেকে প্রায় একশত বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের মুরুব্বীরা তাদের কিতাবে তা উল্লেখ করলো কিভাবে? আর এই একশত বৎসরের মধ্য কেউ তার প্রতিবাদ করলো না কেন?

মূলত: বিষয়টি যে ষড়যন্ত্রমূলক ও সন্দেহজনক তা হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের দ্বিতীয় বক্তব্য থেকেও প্রতিভাত হয়। অর্থাৎ খোদ হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবরা নিজেরাই এ ব্যাপারে দ্বিধাদন্দ্বে রয়েছে।

যেমন, তারা লিখেছে, “মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বায়” বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা জঈফ। আর জঈফ বর্ণনাকে কোথাও প্রমাণ ও দলীল হিসেবে পেশ করা যায় না।”

আমাদের কথা হলো, যদি তারা নিশ্চিতই হয় যে, رفع يديه ودعا. এ অংশটুকু হাদীছ শরীফ-এ নেই তবে তারা এটাকে জঈফ হাদীছ শরীফ হিসেবে মেনে নিলো কেন? এর দ্বারা কি হাটহাজারী মৌলভী ঝাহেবরা এটাই প্রমাণ করলো না যে, ‘মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বায়’ উক্ত হাদীছ শরীফখানা রয়েছে তবে তা ‘জঈফ।’

এবার হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের দ্বিতীয় বক্তব্যের বিস্তারিত জবাবে আসা যাক। তাদের দ্বিতীয় বক্তব্য হলো, ‘মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বায়’ বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা জঈফ। আর জঈফ বর্ণনাকে কোথাও প্রমাণ ও দলীল হিসেবে পেশ করা যায় না।

হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, ‘জঈফ হাদীছ শরীফ উনাকে কোথাও প্রমাণ ও দলীল হিসেবে পেশ করা যায়না’- তাদের এ বক্তব্য অসম্পূর্ণ, অশুদ্ধ ও দলীলবিহীন, মনগড়া। বরং এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ ও দলীলভিত্তিক ফায়ছালা হলো, জঈফ হাদীছ শরীফ শরীফ উনাকে ‘ফরয-ওয়াজিব’ ছাবেত করার ক্ষেত্রে দলীল হিসেবে পেশ করা যায়না। তবে জঈফ হাদীছ শরীফ দ্বারা মুস্তাহাব-সুন্নত প্রমাণিত হয়। মুস্তাহাব-সুন্নতের ফাযায়িল-ফযীলত হাছিলের লক্ষ্যে জঈফ হাদীছ শরীফ উনার উপর আমল করাকে আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম, হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ সকলেই জায়িয বলে মত পেশ করেছেন। নি¤েœ এ সম্পর্কিত কতিপয় দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হলো-

হানাফী মাযহাবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফক্বীহ, আল্লামা ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত ফিক্বাহর কিতাব “ফতহুল ক্বাদীর”-এ লিখেন,

الضعيف غير الموضوع لم يعمل به فى فضائل الاعمال.

অর্থ: “জঈফ হাদীছ শরীফ যা মওযূ নয়। তা ফযীলত অর্জনের জন্য আমল করা জায়িয।”

বিশ্বখ্যাত মুহাদ্দিছ ও ফক্বীহ হযরত ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “আল মাওযূয়াতুল কবীর” কিতাবে লিখেন,

الضعيف يعمل به فى فضائل الاعمال اتفاقا.

অর্থ: “এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, জঈফ হাদীছ শরীফ ফযীলত হাছিল করার লক্ষ্যে আমল করা জায়িয।”

ফিক্বাহর বিখ্যাত কিতাব “ফতহুল ক্বাদীর”-এ আরো উল্লেখ আছে যে,

الاستحباب يثبت بالضعيف غير الموضوع.

অর্থ: “জঈফ হাদীছ শরীফ যা মওযূ নয়, তা দ্বারা মুস্তাহাব-সুন্নত প্রমাণিত হয়।”

শুধু তাই নয়, জঈফ হাদীছ শরীফ যদি বিভিন্ন রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয় তবে তা ‘হাসান লি গাইরিহি’-এর স্তরে পৌঁছে যায়। তখন তা আহকাম ও আক্বাইদের ক্ষেত্রেও দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হয়। যেমন, এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুফাসসির ও ফক্বীহ আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “তাদরীবুর রাবী”-এর ২৯৯ পৃষ্ঠায় লিখেন,

ويعمل بالضعيف ايضا فى الاحكام اذاكان فيه الاحتياط.

অর্থ: “জঈফ হাদীছ শরীফ আহকামের ক্ষেত্রেও গ্রহণযোগ্য। যখন তাতে সাবধানতা অবলম্বন করা হবে। অর্থাৎ যখন তা হাসান লি গাইরিহী হবে।”

“ইলাউস সুনান”-এর ৩য় খণ্ডের ১৬৪ পৃষ্ঠায় এবং “ইমদাদুল ফতওয়া”-এর ১ম খণ্ডের ৭৯৭-৭৯৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وصرح فى ميزان الاعتدال وغيره بابه حديث ضعيف لكنه يعمل به فى الفضائل ….. ولا يخفى ان ائمة الحديث ذكروا ان رواية الضعيف مع الضعيف توجب الارتفاع من السقوط الى درجة الاعتبار.

অর্থ: “মীযানুল ই’তেদাল’ ও অন্যান্য কিতাবে উল্লেখ আছে যে, উক্ত হাদীছ শরীফখানা জঈফ। তবে জঈফ হাদীছ শরীফ ফযীলত হাছিল করার লক্ষে আমল করা যায়। ……. আর এটা সুস্পষ্ট যে, নিশ্চয়ই হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের ইমামগণ বলেন, কোন জঈফ বর্ণনার অনুকূলে যদি আরেকটি জঈফ বর্ণনা পাওয়া যায় তবে তার গ্রহণযোগ্যতা আরো বৃদ্ধি পেয়ে যায়।”

স্মর্তব্য যে, যে বিষয়ে কোন জঈফ হাদীছ শরীফও পাওয়া যাবে সে বিষয়ে কোন অবস্থাতেই ক্বিয়াস করা বৈধ নয়। তাই ইমামগণ সকলেই ব্যক্তিগত রায়ের উপর জঈফ হাদীছ শরীফ উনাকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

যেমন, এ প্রসঙ্গে ইমামে আ’যম, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,

قال ابوحنيفة الخبر الضعيف عن رسول الله صلى الله عليه وسلم اولى من القيام ولا يحل القياس مع موجوده.

অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হতে বর্ণিত জঈফ হাদীছ শরীফ ক্বিয়াস থেকে উত্তম। জঈফ হাদীছ শরীফ বর্তমান থাকা অবস্থায় ক্বিয়াস করা বৈধ হবে না।” (মুক্বাদ্দামায়ে ইলাউস সুনান-৫৯ পৃষ্ঠা)

উল্লেখিত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, জঈফ হাদীছ শরীফসমূহ শরীয়তে অবশ্যই গ্রহণযোগ্য এবং তা ফযীলত হাছিল করার জন্য আমল করাও জায়িয। সুতরাং হযরত আসওয়াদ আমেরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার দৃষ্টিতে ফযীলত অর্জনের লক্ষ্যে, ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা জায়িয ও মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়।

তাছাড়াও কোন হাদীছ শরীফ উনাকে রদ বা খণ্ডন করতে হলে অন্তত:পক্ষে তার বিপরীতে এ হাদীছ শরীফ উনার সমকক্ষ কোন হাদীছ শরীফ পেশ করতে হবে। মুনাজাত বিরোধীগণ পারবেন কি? হযরত আসওয়াদ আমেরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার ন্যায় এমন একখানা হাদীছ শরীফ পেশ করতে, যাতে ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করতে নিষেধ করা হয়েছে? জঈফ হাদীছ শরীফ তো দূরের কথা, মওজু বর্ণনাও পেশ করতে পারবে না। যদি তাই না পারে, তবে কি করে বলে যে, ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ? নাউযুবিল্লাহ!

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই বুঝা গেল যে, জঈফ হাদীছ শরীফ মুস্তাহাব প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট এবং ফযীলত হাছিলের জন্য জঈফ হাদীছ শরীফ উনার উপর আমল করাও জায়িয। কাজেই ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা মুস্তাহাব ও জায়িয, বিদয়াত মোটেও নয়। কারণ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনার কোথাও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করতে নিষেধ করা হয়েছে, এরূপ কোন মওজু বর্ণনা মুনাজাত বিরোধীগণ একটিও পেশ করতে পারবে না। (যদিও মওজু বর্ণনা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়)।

বরং মুনাজাতের পক্ষেই শতশত প্রমাণ রয়েছে। তাহলে এটা বিদয়াত হলো কি করে? কারণ বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ তো তাকেই বলে, যা দ্বীনের সামান্যতম ক্ষতিও করে থাকে। উক্ত মুনাজাতের কারণে দ্বীনের কি ক্ষতি হলো? বরং দ্বীনের সাহায্যকারীই বটে। মূলত: মুনাজাত বিরোধীদের এ বক্তব্য মনগড়া, বানোয়াট, মিথ্যা ও কুফরী বৈ কিছুই নয়।

কাজেই হাটহাজারী মৌলভী ছাহাবদের দ্বিতীয় বক্তব্যও ডাহা মিথ্যা, মনগড়া ও দলীলবিহীন বলে প্রমাণিত হলো। কারণ, তারা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কোন দলীলই পেশ করতে পারেনি এবং কখনোই পারবে না। যদি তারা সত্যবাদী হয়ে থাকে তবে তারা কিতাবের নাম, ইবারত, খ- ও পৃষ্ঠা নাম্বার উল্লেখ করত: প্রমাণ পেশ করুক যে, জঈফ হাদীছ শরীফ দ্বারা মুস্তাহাব ছাবেত হয়না। (চলবে)

ক্বারী মুহম্মদ আব্দুল বারী, গোড়ান, ঢাকা।

মুহম্মদ সোহেলুর রহমান, রামপুরা, ঢাকা।

সুওয়াল : সম্প্রতি ‘আহলে হাদীছ লাইব্রেরী ঢাকা’-এর সৌজন্যে প্রকাশিত একটি হ্যা-বিলে ‘শবে বরাত’ সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক কতিপয় উক্তি করা হয়েছে। কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনার নিরিখে সেসব কতটুকু সঠিক তা আপনাদের বহুল পঠিত, তাজদীদী মুখপত্র ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশ করলে বিভ্রান্তিক নিরসণ হতো এবং সঠিক বিষয়টি উন্মোচিত হয়ে আওয়ামুন নাস খুবই উপকৃত হতো।

আপনাদের জ্ঞাতার্থে হ্যা-বিলের একটি মূল কপি প্রেরণ করা হলো। এতে আমাদের মনে যেসব প্রশ্নের উদয় হয়েছে তাহলো-

… ১২. সউদী আরবের দারুল ইফতার সাবেক প্রধান ‘আব্দুল আযীয আব্দুল্লাহ বিন বা’য’-এর শবে বরাত পালন করা ও এদিনে রোযা রাখা বিদয়াত বলে অভিহিত করা কতটুকু সঠিক?

আশা করি উল্লিখিত প্রশ্নসমূহের দলীলভিত্তিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াব : মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় কালাম পাকে ইরশাদ মুবারক করেন,

فسئلوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون.

অর্থ: “তোমরা আহলে যিকির তথা আল্লাহওয়ালাগণ উনাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জান।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া-৭)

যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার হাক্বীক্বী মিছদাক। মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার লক্ষ্যস্থল ওলী, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ওসীলায় এ পত্রিকাটি উম্মাহর জন্য শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত যার প্রতিটি লিখাই আক্বীদা-আমল হিফাযতকারী ও পরিশুদ্ধকারী। প্রসঙ্গত: সুওয়ালে উল্লিখিত প্রশ্নসমূহের ধারাবাহিক জাওয়াব পেশ করা হলো-

(ধারাবাহিক)

১২. সউদী আরবের দারুল ইফতার সাবেক প্রধান ‘আব্দুল আযীয আব্দুল্লাহ বিন বা’য’-এর শবে বরাত পালন করা ও এদিনে রোযা রাখা বিদয়াত বলে অভিহিত করা কতটুকু সঠিক?

এর জাওয়াব হলো- শবে বরাত পালন করা ও এদিনে রোযা রাখা সম্পর্কে আব্দুল আযীয আব্দুল্লাহ বিন আ’য-এর প্রদত্ত্ব বক্তব্য সম্পূর্ণ কুফরী হয়েছে। কারণ, সে সুন্নতকে বিদয়াত বলে অভিহিত করেছে।

উল্লেখ্য, শবে বরাত বা বরাতের রাতে ইবাদত-বন্দিগী করা ও দিনের বেলায় রোযা রাখা হচ্ছে সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই এ মুবারক রাতে ইবাদত-বন্দিগী করে কাটিয়েছেন এবং দিনের বেলায় রোযা রেখেছেন এবং উম্মতকেও এ রাতে সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দিগী করার জন্য এবং দিনে রোযা রাখার জন্য আদেশ-নির্দেশ করেছেন।

এ সম্পর্কে উনার বহু হাদীছ শরীফও বর্ণিত রয়েছে। যার কতক বর্ণনা আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১৩৫তম সংখ্যা হতে ১৪৫তম সংখ্যার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।

যেমন, হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عن على رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا حتى يطلع الفجر.

অর্থ: “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন অর্ধ শা’বানের রাত উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন। অর্থাৎ রহমত খাছ নাযিল করেন। অত:পর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করব।” “কোন মুছিবতগ্রস্থ ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব।” এভাবে ফযর বা ছুবহে ছাদিক পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত শরীফ)

অপর এক হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عن عائشة رضى الله عنها قالت فقادت رسول الله عليه صلى الله عليه وسلم ليلة فاذا هو بالبقيع فقال اكنت تخافين ان يحيف الله عليك ورسوله قلت يا رسول الله انى ظننت انك اتيت بعض نسائك فقال ان الله تعالى ينزل ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر من اكثر من عدد شعر غنم كلب.

অর্থ: “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে কোন এক রাত্রিতে রাত্রিযাপন করছিলাম। এক সময় উনাকে বিছানায় না পেয়ে আমি মনে করলাম যে, তিনি হয়ত অন্য কোন আহলিয়ার হুজরা শরীফ গেছেন। অত:পর আমি তালাশ করে উনাকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয় হুজরা শরীফ-এ ফিরে আসলে তিনিও ফিরে এসে আমাকে বললেন, আপনি কি মনে করেছেন, মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনার সাথে আমানতের খিলাফ করেছেন! আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহু ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ধারণা করেছিলাম যে, আমি হয়তো আপনার অপর কোন আহলিয়ার নিকটে গেছেন। অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অত:পর তিনি বণী কলবের মেষের গায়ে যত সংখ্যক পশম রয়েছে তার চেয়ে অধিক সংখ্যাক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন।” (তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, রযীন শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অতএব, সুন্নতকে অস্বীকার করা এবং সেটাকে বিদয়াত বলে অভিহিত করা শক্ত কুফর্ ীআর যে কুফরী করে সে কাফির হয়ে যায়। যেমন, হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

لو تركتم سنة نبيكم لكفرتم.

অর্থ: “যদি তোমরা তোমাদের নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতকে তরক বা অস্বীকার করো তাহলে অবশ্যই তোমরা কাফির হয়ে যাবে।” (আবু দাউদ শরীফ)

হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

لو تركتم سنة نبيكم لضللتم.

অর্থ: “যদি তোমরা তোমাদের নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতকে তরক (অস্বীকার) করো তাহলে তোমরা গোমরাহ হয়ে যাবে।” (আবু দাউদ শরীফ)

আর আকাঈদের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,

اهانة السنة كفر.

অর্থ: “সুন্নতকে ইহানত করা কুফরী।”

উল্লিখিত হাদীছ শরীফ এবং আকাঈদের বর্ণনা দ্বারা সউদী আরবের দারুল ইফতার সাবেক প্রধান আব্দুল আযীয আব্দুল্লাহ বিন বা’য প্রকাশ্য কাফির ও গোমরাহ হিসেবে সাবাস্ত হলো।

আর প্রকৃতপক্ষে সে কাফির ও গোমরাহ। এটাই তার আসল পরিচয়। কারণ, সে হচ্ছে কট্টর ওহাবী। আর আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া মতে ওহাবীরা মু’মিন-মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং তারা কাফির। তারা হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত। (সমাপ্ত)

খন্দকার সেলিম আহমদ

পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল।

সুওয়াল : হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারি-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত মীলাদ-ক্বিয়ামের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারি-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।

তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

২. “বাদশাহ মুজাফফার উদ্দিন কৌকুরী এবং খাজা তক্বী উদ্দীন সুবকী যারা এই মীলাদ শরীফ-ক্বিয়াম শরীফ উনার প্রবর্তন করেন তাদের এ আমলটি কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনার বিরোধী বিধায় তা শরীয়তের দলীল হিসেবে গ্রহণ যোগ্য নয়। ……”

এখন আমার সুওয়াল হলো, মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীল সম্মত? কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা-ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব : হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য জিহালতপূর্ণ ও দলীলবিহীন। কারণ বাদশাহ মুজাফফার উদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি ও খাজা তকী উদ্দীন সুবুকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ উনার প্রবর্তক নন। বরং মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ উনার অস্তিত্ব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আনহুমগণ উনাদের যুগেই ছিল।

যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে,

عن ابى درداء رضى الله تعالى عنه انه مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لابنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك.

অর্থ: “হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আবু আমের আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয় স্বজন, জ্ঞাতী-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশিদেরকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস এই দিবস অর্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ এনেছেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করত: অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন।) তিনি লোকজনের মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতের দরজা তোমার জন্য উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতাগণ তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ তোমার মত এরূপ কাজ করবে, তোমার মত সেও নাযাত (ফযীলত) লাভ করবে।” (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী পৃষ্ঠা ৩৫৫)

এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبثرون ويحمدون الله ويصلون عليه صلى الله عليه وسلم فاذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم قال حلت لكم شفاعتى.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা উনার নিজগৃহে সমবেত ছাহাবীগণ উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা তাছবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর (ছলাত-সালাম) দরুদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তথায় উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করত: অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন।) তিনি লোকজনের মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, حلت لكم شفاعتى. অর্থাৎ তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।” (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী পৃষ্ঠা-৩৫৫)

উপরোক্ত হাদীছ শরীফ দ্বয়ের দ্বারা অকাট্য ভাবে প্রমানিত হলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ স্বয়ং মীলাদ শরীফ পাঠ করতেন। বাকি রইলো ক্বিয়াম শরীফ উনার বিষয়টি। মুলত: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তা’যীমার্থে বা সম্মানার্থে ক্বিয়াম শরীফ করার প্রমাণ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের মুবারক আমলে রয়েছে।

যেমন, হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يجلس معنا فى المسجد يحدثنا فاذا قام قمنا قياما حتى نرائه قد دخل بعض بيوت ازواجه.

অর্থ: “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একদা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের মাঝে বসে আমাদেরকে নছীহত করছিলেন। যখন তিনি উঠলেন বা দাঁড়ালেন, আমরাও সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম, ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ আমরা উনাকে দেখতে পাচ্ছিলাম। এমনকি উনার আহলিয়াগণ উনাদের ঘরে প্রবেশ না করা পর্যন্ত আমরা দাঁড়িয়ে রইলাম।” (বায়হাক্বী ফী শোয়াবিল ঈমান, মিশকাত শরীফ)

এছাড়া হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ একে অপরের জন্যও দাঁড়িয়েছেন। যেমন-

عن عبد الرحمن بن عبد الله بن كعب بن مالك عن ابيه عن جده كعب رضى الله عنه …….. وانطلقت الى رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى دخلت المسجد واذا برسول الله صلى الله عليه وسلم جالس حوله الناس فقال الى طلحة بن عبيد الله يهرول حتى صافحنى.

অর্থ: “হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ উনার দাদা হযরত কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ-এ গেলাম, এমনকি মসজিদে নব্বীতে প্রবেশ করলাম, তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে চতুর্দিকে বসা ছিলেন, অত:পর ত্বলহা ইবনে উবায়দুল্লাহ আমার জন্য দাঁড়ালেন, এমনকি দ্রুতগতিতে এসে আমার সাথে মুছাফাহা করলেন..।”

আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ক্বিয়াম শরীফ করার জন্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেকে নির্দেশও দিয়েছেন। যেমন, “মিশকাত শরীফ”-এর ৪০৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

عن ابى سعيدن الخدرى قال لما نولت بنو قريظة على حكم سعد بعث رسول الله صلى الله عليه وسلم اليه وكان قريبا منه فجاء على حمار فلما دنا من المسجد قال رسول الله صلى الله عليه وسلم للانصار قوموا الى سيدكم.

অর্থ: “হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, বনু কুরাইযা গোত্র যখন হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বিচারকে মেনে নেয়ার শর্তে দুর্গ থেকে অবতরণ করলো। তখন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ডেকে পাঠালেন। তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটেই ছিলেন। অতপর হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন গাধার পিঠে আরোহন করে মসজিদের নিকটবর্তী হলেন, তখন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে বললেন, তোমরা তোমাদের সর্দারের সম্মানে দাঁড়াও।” তাছাড়া স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেও ক্বিয়াম শরীফ পাঠ করেছেন।

যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,

عن عائشة رضى الله عليه تعلى عنها قالت مارايت احدا كان اشبه سمتا وهديا ودلا وفى رواية حديث وكلاما برسول الله صلى الله عليه وسلم من فاطمة كانت اذا دخلت عليه قام اليها فاخذ بيدها فقبلها واجلسها فى مجلسه وكان اذا دخل عليها قامت اليه فاخذت بيده فقبلته واجلسته فى مجلسها.

অর্থ: “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আচার-ব্যবহার, চাল-চলন, উত্তম স্বভাব, অন্য বর্ণনায় রয়েছে কথা-বার্তায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনার চেয়ে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ আর কাউকে দেখিনি। যখন তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট যেতেন তখন স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মুহব্বতে দাঁড়িয়ে উনার হাত মুবারক ধরে চুমু খেতেন ও নিজের স্থানে বসাতেন। অনুরূপ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনার নিকটে যেতেন তখন তিনিও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তা’যীমার্থে দাঁড়িয়ে হাত মুবারক ধরে চুমু খেয়ে নিজের স্থানে বসাতেন।” (আবু দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

মৌলভী রশীদ আহমদ গাংগুহী তদীয় “ফতওয়ায়ে রশীদিয়া” কিতাবের ৪৫৯ পৃষ্ঠায় বলেছেন,

উর্দূ কম্পোজ করতে হবে

অর্থ: “দ্বীনদার লোকের তা’যীমের জন্য দণ্ডায়মান হওয়া জায়িয (সুন্নত)। এরূপ লোকের পদ চুম্বন করাও জায়েয (সুন্নত)। এ কথা হাদীছ শরীফ দ্বারা সাব্যস্ত।”

উপরোক্ত হাদীছ শরীফ সমূহ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা স্বয়ং তা’যীমার্থে বা সম্মানার্থে ক্বিয়াম শরীফ করেছেন। সুতরাং বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের যুগের তথা সোনালি যুগেই ছিল। এটা সোনালি যুগের পরে উদ্ভাবিত হয়নি।

কাজেই, “মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ সম্পর্কিত বুযুর্গদের উক্ত আমল কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ বিরোধী” হাটহাজারী মৌলভী ছাহাবদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, জিহালতপূর্ণ ও সম্পূর্ণই দলীলবিহীন বলেই প্রমাণিত হলো। (চলবে)

মুসাম্মত সানজিদা আক্তার

সভানেত্রী- ছাত্রী আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত

মুহম্মদপুর, ঢাকা।

সুওয়াল : অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নি¤েœাক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়-

জিজ্ঞাসা : ছাহাবী হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনারা বলেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফযীলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …..

…… তারা কুরআন শরীফ উনার উপর আমল কিম্বা কুরআন শরীফ প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। …..

উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-

…… “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” ….

কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা-ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব : প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।

তারা তাদের জবাবে প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের সাফাই বর্ণনা করতে যেয়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করেছে। সাথে সাথে “ছয় উছূলীদের মধ্যে কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ বিরোধী কোন আক্বীদা-আমল নেই” বলে তাদের নির্লজ্জ দালালী করে নিজেদেরকে অপব্যাখ্যাকারী ও মিথ্যাবাদীরূপে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিক দলীলভিত্তিক আলোচনা করলেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে।

তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

(ধারাবাহিক)

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?”

আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নি¤েœ ধারাবাহিকভাবে, পর্যায়ক্রমে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলোর সাথে সাথে কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো।

প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য-১৬

দাওয়াত তাবলীগ কি ও কেন (মুহম্মদ ওবায়দুল হক রচিত) ১১৬ পৃষ্ঠা, পস্তী কা ওয়াহেদ এলাজ ৯ পৃষ্ঠা, মূলতঃ- মাওঃ এহতেশামুল হাসান কান্দলভী, অনুবাদক-ছাখাওয়াত উল্লাহ। তাবলীগী নেছাব ১১ পৃষ্ঠা, ফাজায়েলে তাবলীগ (মূলত: হযরত মাওলানা জাকারিয়া, অনুবাদক-আম্বর আলী) ৯ পৃষ্ঠা, তাবলীগে ইসলাম, লেখক- আব্দুস সাত্তার ত্রিশালী ৯ পৃষ্ঠা ও মাওলানা শাহ মনিরুজ্জামান লিখিত- আমি কেন তাবলীগ করি ১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “তাবলীগ তথা দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার কারণেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে, অন্য কোন কারণে নয়।” দলীল স্বরূপ তারা পবিত্র সূরা ইমরানের ১১০নং পবিত্র আয়াত শরীফ পেশ করে থাকে।

এর জবাবে বলতে হয়, পবিত্র সূরা আলে ইমরানের ১১০ নং পবিত্র আয়াত শরীফ প্রসঙ্গে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর এবং কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ভুল ও মনগড়া তাফসীর বা ব্যাখ্যার শামিল, যাকে “তাফসীর বিররায়” বলে। শরীয়তের দৃষ্টিতে “তাফসীর বিররায়” অর্থাৎ মনগড়া তাফসীর বা ব্যাখ্যা করা স্পষ্ট কুফরী।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,

من فسر القران برائه فقد كفر.

অর্থ: “যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ উনার মনগড়া তাফসীর করলো, সে কুফরী করলো।”

হাদীছ শরীফ-এ আরো উল্লেখ আছে,

من قال فى القران برائه فليتبوا مقعده من النار وفى رواية من قال فى القران بغير علم فليتبوا مقعده من النار.

অর্থ: “যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ উনার মনগড়া ব্যাখ্যা করে, সে যেন তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়। অন্য রেওয়াতে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি বিনা ইলমে বা না জেনে কুরআন শরীফ উনার ব্যাখ্যা করে, সেও যেন তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত ত্বীবী উরফুশ শাজী, তালীক)

মূলত: “পবিত্র সূরা আলে ইমরান”-এর এ পবিত্র আয়াত শরীফ-

كنتم خير امة اخرجت للناس تامرون بالمعروف وتنهون عن المنكر وتؤمنون بالله.

অর্থ: “তোমরা মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে এবং বদ কাজের নিষেধ করবে ও মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান আনবে।”

এর দ্বারা কখনোই প্রমাণিত হয় না যে, তাবলীগ তথা দাওয়াত দেয়ার কারণে উম্মতে মুহম্মদী শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে। বস্তুত: উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার সঠিক তাফসীর বা ব্যাখ্যা না জানার কারণেই এরূপ বিভ্রান্তিমূলক কথা বলা হয়েছে বা পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার সঠিক তাফসীর নিম্নে বর্ণিত হলো।

যেমন এ প্রসঙ্গে, আমিরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, ফারুকে আ’যম, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন,

لو شاء الله تعالى لقال انتم فكنا كلنا ولكن قال كنتم خاصة فى الصحاب محمد صلى الله عليه وسلم.

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি انتم (জমীর বা সর্বনাম) বলতেন, তাহলে সমস্ত উম্মতগণ উনাদেরকে বুঝানো হতো। যেহেতু মহান আল্লাহ পাক كنتم (ফে’ল) ব্যবহার করেছেন, সেহেতু খাছ করে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে বুঝানো হয়েছে। (হায়াতুছ ছাহাবা)

অর্থাৎ যদিও এ পবিত্র আয়াত শরীফখানা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের শানে নাযিল হয়েছে, তথাপিও যাঁরা উনাদের ওয়ারিছ বা নায়েব হবেন, উনাদের উপরও এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার হুকুম বর্তাবে।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি “পবিত্র সূরা তওবা”-এর ১০০নং পবিত্র আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক করেন,

والسبقون الاولون من المهجرين والانصار والذين اتبعوهم باحسان رضى الله عنهم ورضوا عنه.

অর্থ: “মুহাজির এবং আনসার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের মধ্যে (ঈমান গ্রহণের ব্যাপারে) যাঁরা পূর্ববর্তী ও অগ্রগামী এবং উনাদেরকে যারা উত্তম বা যথাযথভাবে অনুসরণকারী, উনাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি সন্তুষ্ট এবং উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার উপর সন্তুষ্ট।”

এ পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা এই প্রমাণিত হচ্ছে যে, যাঁরা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের অনুসরণ করবে, উনারাই শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে পরিগণিত হবে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি হাছিল করবে। (চলবে)

মুহম্মদ সুলতান মাহমুদ, মিরপুর, ঢাকা।

মুহম্মদ আহমদুল্লাহ কামালী, নরসিংদী।

সুওয়াল : মাসিক মদীনা ফেব্রুয়ারি-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নি¤েœাক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-

প্রশ্ন চুল … রাখার সুন্নত কি? ….

উত্তর : … চুল রাখার দুই তরীকা, এক বাবরি রাখা, দুই মুণ্ডানো। …. (শামী, আলমগীরী, বুখারী, মুসলিম শরীফ)

আর হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা এপ্রিল/২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “মাথা মুণ্ডানো যদিও রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে হজ্জের মৌসুম ব্যতীত পাওয়া যায় না, কিন্তু হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার থেকে মাথা মুণ্ডানোর বর্ণনা পাওয়া যায় এবং হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার এই আমলের উপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্বীকৃতি পাওয়া যায়। তাই ছাহাবী উনাদের আমল হিসেবে মাথা মুণ্ডানো সুন্নাত।

অন্য এক রেওয়ায়াতে আছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাথা মু-ন কারীদের জন্য তিন বার রহমতের দোয়া করেছিলেন। আর হানাফী মাযহাবের গ্রহণযোগ্য কিতাবাদিতেও মাথা মুণ্ডানোকে সুন্নাত বলা হয়েছে। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরি ও শামী)

এখন আমার সুওয়াল হলো- মাথা মু-ন করা সম্পর্কে মাসিক মদীনা ও হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি মাথা মু-ন করা সুন্নত বা চুল রাখার দুই তরীকার, এক তরীকা? দলীলসহ সঠিক জাওয়াব দিয়ে, আমাদের আক্বীদা আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব : মাথার চুল মুণ্ডন করা সম্পর্কে মাসিক মদীনা ও হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে।

কারণ, মাসিক মদীনা ও হাটহাজারী মৌলভী ছাহেব এবং তাদের সমজাতীয়রা এমন একটি হাদীছ শরীফও উল্লেখ করতে পারবে না, যেখানে উল্লেখ আছে যে, “মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হজ্জ ও ওমরাহ ব্যতীত অন্য সময় নিজ মাথার চুল মুবারক মুণ্ডন করেছেন।” বরং অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, “মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সব সময় বাবরী চুল মুবারক রাখতেন। সেহেতু সকল উম্মতে মুহম্মদীর জন্য সর্বদা বাবরী চুল রাখাই দায়িমী সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।

(ধারাবাহিক)

বর্তমান সংখ্যায় হাটহাজারীর

বক্তব্য খণ্ডন করা হলো

উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভী সাহেবরা বলেছে, “কিন্তু হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার মাথা মুণ্ডানোর বর্ণনা পাওয়া যায় ….।”

এর জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারীর মৌলভী সাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য মিথ্যা ও দলীলবিহীন। কেননা তারা এমন একখানা হাদীছ শরীফও পেশ করতে পারবেনা, যে হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে যে, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু তায়ালা আনহু তিনি মাথা মুবারক হলক্ব বা মু-ন করেছেন। বরং হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে যে, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু তিনি মাথা মুবারক উনার চুল মুবারক কছর বা ছোট করেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে “আবু দাউদ শরীফ” উনার ১ম খণ্ডের ৩৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

حدثنا موسى بن اسمعيل نا حماد انا عطاء بن السائب عن زاذان عن على رضى الله عنه قال ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال من ترك موضع شعرة من جنابة لم يغسلها فعل بها كذا وكذا من النار قال على رضى الله عنه فمن ثم عاديت راسى فمن ثم عاديت راسى فمن ثم عاديت راسى وكان يجز شعره رضى الله عنه.

অর্থ: “হযরত ইমাম আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত মুসা ইবনে ইসমাইল রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আতা ইবনে সায়িব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত যাযান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে। তিনি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার থেকে বর্ণনা যে, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি অপবিত্রতার গোসলের সময় তর শরীরের যে কোন একটি চুল পরিমাণ স্থান (ছেড়ে দিলো) তরক্ব করলো, উহা ধৌত করলো না, তার উক্ত স্থান জাহান্নামের আগুনে শাস্তি দেয়া হবে। হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু তিনি বলেন, আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে এই হাদীছ শরীফ শুনার পর তখন থেকে আমি আমার চুলের শত্রু হয়ে গেলাম। তখন আমি আমার চুলের শত্রু হয়ে গেলাম। বর্ণনাকারী বলেন, এ কারণেই হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার মাথা মুবারক উনার চুল মুবারক কছর বা ছোট করে রাখতেন। (আহমদ শরীফ, দারেমী শরীফ, মিরকাত শরীফ ২য় খণ্ড ৩৮ পৃষ্ঠা)

“সুনানু ইবনে মাজাহ শরীফ”-এর ৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেক আছে,

حدثنا ابو بكر بن ابى شيبة ثنا الاسود بن عامر ثنا حماد بن سلمة عن عطاء بن السائب عن زاذان عن على بن ابى طالب رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال من ترك شعرة من جساده من جنابة لم يغسلها فعل به كذاوكذا من النار قال على رضى الله تعالى عنه فمن ثم عاديت شعرى وكان يجزه.

অর্থ: “হযরত ইমাম ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আবু বকর ইবনে আবী শায়বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, হযরত আসওয়াদ ইবনে আমের রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত হাম্মাদ ইবনে সালামা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি হযরত আতা ইবনে সায়িব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে। তিনি হযরত যাযান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে। তিনি হযরত আলী ইবনে আবি ত্বলিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বর্ণনা করে বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি অপবিত্রতার গোসল করার সময় উনার শরীরের যে কোন একটি চুল পরিমাণ স্থান তরক্ব করলো (ছেড়ে দিলো) উহা ধৌত করলো না, তাকে এই পরিমাণ জাহান্নামে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু তিনি বলেন, এরপর থেকে আমি আমার চুলের সাথে শত্রুতা পোষণ করে আসছি এবং হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার মাথা মুবারক উনার চুল মুবারক কছর বা ছোট করে রাখতেন।”

“মিরকাত শরীফ” উনার ২য় খণ্ডের ৩৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

انه كان يجز شهره.

অর্থ: “নিশ্চয়ই হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার মাথা মুবারক উনার চুল মুবারক কছর বা ছোট করে রাখতেন।”

উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার মাথা মুবারক উনার চুল মুবারক কছর বা ছোট করে রাখতেন। কেননা উল্লিখিত হাদীছ শরীফ সমূহে يحلق শব্দ উল্লেখ নেই। বরং يجز শব্দ উল্লেখ আছে। আর অভিধানেও يجز শব্দের অর্থ قصر বা ছোট করা উল্লেখ আছে। তবে হ্যাঁ কেউ কেউ কোন কোন কিতাবে মু-ন করার কথাও উল্লেখ করেছেন। এটা সম্পূর্ণই তাদের ব্যক্তিগত অভিমত। এর পরেও যদি আমরা ধরে নেই যে, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু তিনি মাথা মুবারক মু-ন করেছেন। তবেও তা দ্বারা মাথা মু-ন সুন্নত প্রমাণিত হয় না। কারণ তিনি তা رخصة (রোখছত) বা মাজুর আমল হিসেবে করেছেন। আর رخصة (রোখছত) বা মাজুর আমল কখনোই আমভাবে সুন্নত হতে পারে না।

তাই কিতাবে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার উক্ত আমলকে رخصة (রোখছত) বা মাজুর আমল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

যেমন এ প্রসঙ্গে মিশকাত শরীফ উনার শরাহ “মিরকাত শরীফ” উনার ২য় খণ্ডের ৩৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ولايخفى أن فعله كرم الله وجهه اذا كان مخالفا لسنته عليه الصلاة والسلام وبقية الخلفاء من عدم الحلق الا بعد فراغ النسك يكون رخصة لاسنة.

অর্থ: “এটা সুস্পষ্ট যে, নিশ্চয়ই হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার উক্ত আমল যেহেতু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং প্রথম তিন খলীফা (হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম, হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনাদের সুন্নতের খিলাফ। কেননা উনারা হজ্জ ও ওমরাহ ব্যতীত কখনো মাথা মুবারক মু-ন করেন নাই। তাই হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার উক্ত আমল রোখছত বা ওজর হিসেবে গণ্য হবে। সুন্নত হিসেবে নয়।

“মিশকাত শরীফ” কিতাবের ৩৮৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ليس بسنة لانه صلى الله عليه وسلم مع سائر اصحابه وظب على ترك حلقه الا بعد فراع احد النسكين فالحلق رخصة وهذا هو الاظهر.

অর্থ: “মাথা মু-ন করা সুন্নত নয়। কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সমস্ত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ দায়েমীভাবে বাবরী চুল রাখতেন, হজ্জ ও ওমরাহ ব্যতীত কখনো মাথা মুবারক মু-ন করেন নাই। সুতরাং (হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার হলক করা সম্পর্কিত আমলটি রোখছত বা ওজর হিসেবে গণ্য হবে। (সুন্নত হিসেবে নয়।) আর এ মতটি সর্বাধিক সুস্পষ্ট বা গ্রহণযোগ্য।

দ্বিতীয়ত : তারা বলেছে, “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার এই আমলের উপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্বীকৃতি পাওয়া যায়। তাই সাহাবী উনাদের আমল হিসেবে মাথা মুণ্ডানো সুন্নাত। ……”

এর জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারী মৌলভী সাহেবদের এবক্তব্যও সঠিক হয়নি। অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার চুল মুবারক ছোট করার বা মু-ন করার আমলকে সুন্নত হিসেবে কখনোই স্বীকৃতি দেন নাই। বরং মাজুর বা রোখছত আমল হিসেবে দেখেছেন।

আর সত্যিকার অর্থে রোখছত বা মাজুরের কারণেই হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু তিনি নিজ মাথা মুবারক উনার চুল মুবারক ছোট করেছেন। যা হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। কেননা হাদীছ শরীফ-এ স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে, উনার মাথা মুবারক উনার চুল মুবারক অত্যাধিক ঘন হওয়ার কারণেই ফরয গোসলের সময় মাথা মুবারক উনার সবস্থানে পানি নাও পৌঁছতে পারে এ আশঙ্কায় ইহতিয়াত বা সাবধানতার জন্য অর্থাৎ মাজুর হয়ে মাথা মুবারক উনার চুল মুবারক ছোট করেছেন। আর আফসুস করে বলেছেন-

فمن ثم عاديت شعرى.

“আজ থেকে আমি আমার চুলের শত্রু হয়ে গেলাম।” অর্থাৎ আমি একটি খাছ সুন্নত থেকে মাজুরের কারণেই মাহরুম হয়ে গেলাম।

কাজেই প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার উক্ত আমলকে সুন্নত হিসেবে স্বীকৃতি দেন নাই। বরং তার উক্ত আমলকে রোখছত বা মাজুর হিসেবে দেখেছেন। আর হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু তিনি স্বয়ং নিজেও উক্ত আমলকে সুন্নত মনে করেন নাই। বরং সুন্নতের খেলাফ, রোখছত বা মাজুর আমল হিসেবে দেখেছেন। তাই কিতাবেও তার উক্ত আমলকে রোখছত বা মাজুর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুন্নত হিসেবে নয়। কাজেই “ছাহাবী উনাদের আমল হিসেবে মাথা মুণ্ডানো সুন্নাত। ….” হাটহাজারীর মৌলভী ছহেবদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, জিহালতপূর্ণ, দলীলবিহীন, মনগড়া ও কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা-ক্বিয়াস বিরোধী বলে সাব্যস্ত হলো।

পরিশেষে বলতে চাই হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, খুলাফায়ে রাশেদীন, সমস্ত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের আমল বাবরী চুল রাখার সুন্নতকে বাদ দিয়ে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার রোখছতী আমলকে সুন্নত হিসেবে আমল করে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার প্রতি এত ভক্তি ও মুহব্বত প্রদর্শন করার কারণ কি?

তবে কি তারা শিয়া মতবাদের প্রতি প্রত্যাবর্তন করলো? আমরা তো জানি একমাত্র শিয়ারাই হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনাকে সবচেয়ে বেশি ভক্তি মুহব্বত ও অনুসরণ করে থাকে। (চলবে)

মুহম্মদ মুহিউদ্দীন

সভাপতি- আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত

সন্দ্বীপ শাখা, চট্টগ্রাম।

সুওয়াল : চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানী মাযহাবের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর/জানুয়ারি-২০০৩-০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে “বিতিরের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম এবং বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব পাবে বলে উল্লেখ করেছে।” তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, নাসায়ী থেকে দলীল হিসেবে কয়েকখানা হাদীছ শরীফও উল্লেখ করেছে।

আর হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ডিসেম্বর/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা- সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “বিতির নামাযের পর দুই রাকআত নফল নামায…. দাঁড়িয়ে পড়া ভাল। কারণ, নফল নামায বিনা কারণে বসে পড়লে অর্ধেক সাওয়াব হয়।”

এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা হালকী নফল নামায সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে হাদীছ শরীফগুলো উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য।

তাদের প্রতিটি দলীলের খ-নসহ হালকী নফল সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব : বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায যাকে “হালকী নফল” বলা হয়, তা দাঁড়িয়ে পড়া সম্পর্কে অখ্যাত মাসিক পত্রিকাদ্বয়ের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া, দলীলবিহীন এং কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ খিলাফ হয়েছে। এবং ক্ষেত্রবিশেষে কুফরীমূলক হয়েছে।

স্মর্তব্য যে, সাধারণত: নফল নামায বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব হলেও বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়াই মুস্তাহাব-সুন্নত, যা উত্তম ও পূর্ণ ছওয়াব এবং অধিক ফযীলতের কারণ।

কেননা আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায কখনও দাঁড়িয়ে আদায় করেননি। বরং বসেই আদায় করেছেন। যা সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।

(ধারাবাহিক)

উল্লেখ্য, রেযাখানীরা ‘বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ ও নাসায়ী শরীফ’ ইত্যাদি কিতাব থেকে দলীল হিসেবে যে বক্তব্য উল্লেখ্য করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য মোটেও সে রকম নয়। উল্লিখিত কিতাবসমূহের কোন কোন ইবারত কারচুপি করে নিজেদের বাতিল মতকে ছাবিত করার ব্যর্থ কোশেশ করেছে। তারা উল্লিখিত কিতাবের বরাত দিয়ে যে সকল মিথ্যাচারিতা, প্রতারণা ও ইবারত কারচুপির আশ্রয় নিয়েছে সেগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা ও ফায়সালা তুলে ধরে তার খ-নমূলক আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

রেযাখানীদের কারচুপিমূলক

বক্তব্য উদঘাটন ও খণ্ডন

উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বলেছে, “আহমদ রেযা খান ব্রেলভী রচিত “ফতওয়ায়ে রেজভীয়া”-এর ৩য় খণ্ডে …. অন্যান্য নফল নামাযের ন্যায় বিতরের পর দু’রাকায়াত নফল নামাযও দাড়িয়ে পড়া উত্তম বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে।”

এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানীরা বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম বলে প্রথমত: “রেজভীয়া” কিতাবের ৩য় খণ্ডের বরনাত দিয়েছে। অথচ রেজভীয়া কিতাবের ৩য় এ ব্যাপারে দু’টি বক্তব্য বর্ণনা করা হয়েছে। একটি হলো ১৩২৫ হিজরীর এবং অপরটি হলো ১৩২৬ হিজরীর।

আর তরতীব অনুযায়ী ১৩২৫ হিজরীর বক্তব্যটি কিতাবে আগে আসার কথা এবং ১৩২৬ হিজরীর বক্তব্যটি কিতাবে পরে আসার কথা। কিন্তু আফসুস রেযা খার জন্য যে, সে ১৩২৫ হিজরীর বক্তব্যটি লিখেছে পরে কিতাবের ৪৬৭-৪৬৮ পৃষ্ঠায় এবং ১৩২৬ হিজরীর বক্তব্যটি লিখেছে আগে কিতাবের ৪৬০-৪৬১ পৃষ্ঠায়। অথচ তরতীব অনুযায়ী ১৩২৫ হিজরীর বক্তব্যটি কিতাবের ৪৬০-৪৬১ পৃষ্ঠায় এবং ১৩২৬ হিজরীর বক্তব্যটি কিতাবের ৪৬৭-৪৬৮ পৃষ্ঠায় লেখা উচিত ছিল। কিন্তু রেযা খা তরতীব ভঙ্গ করে আগের বক্তব্যটি পরে এবং পরের বক্তব্যটি আগে লিখে প্রতারণা করেছে। আর যারা প্রতারণা করে, তাদের লিখুনি বা বক্তব্য কি করে গ্রহণ যোগ্য হতে পারে?

দ্বিতীয়ত : “আহমদ রেযা খান ব্রেলভী রচিত “ফতওয়ায়ে রেজভীয়া”-এর ৩য় খণ্ডে …. অন্যান্য নফল নামাযের ন্যায় বিতরের পর দু’রাকায়াত নফল নামাযও দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে।” এ ধরণের সরাসরি কোন বক্তব্যও “রেজভীয়া” কিতাবের ৩য় খণ্ডের ৪৬০-৪৬১ পৃষ্ঠায় এবং ৪৬৭-৪৬৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ নেই। সুতরাং রেযাখানীরা এখানেও কিতাবের ৩য় খণ্ডের বরাত দিয়ে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে।

পরিশেষে বলতে হয় যে, রেযা খা বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায সম্পর্কে কিতাবে যে দু’টি বক্তব্য পেশ করেছে, তার একটি হলো ১৩২৫ হিজরীর এবং অপরটি হলো ১৩২৬ হিজরীর। আর উক্ত দু’টি বক্তব্যের মধ্যে তার চূড়ান্ত বক্তব্য হলো পরের বক্তব্যটি অর্থাৎ ১৩২৬ হিজরীর বক্তব্যটি। আর ১৩২৬ হিজরীর বক্তব্যটির শুরুতেই রেযাখানীদের গুরু মৌলভী রেযা খা সাহেব প্রথমত: স্বীকার করেছে যে,

উর্দু কম্পোজ করতে হবে

অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত নফল অর্থাৎ বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করেছেন।

এছাড়াও ১৩২৬ হিজরীর বক্তব্যটির শেষেও রেযা খা চুড়ান্ত মত ব্যক্ত করে লিখেছে যে,

উর্দূ কম্পোজ করতে হবে

অর্থাৎ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়ার ব্যাপারেও কোন এ’তেরাজ নেই।

আর আমরাও সেটাই বলে থাকি যে, বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়ার ব্যাপারে কোন এ’তেরাজ নেই। কারণ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায যেহেতু মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আদায় করেছেন এবং তা বসেই আদায় করেছেন, সেহেতু বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করা সুন্নত, উত্তম ও অধিক ফযীলতের কারণ।

যেমন, “ইবনে মাজাহ শরীফ উনার” ৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

عن ام سلمة رضى الله عنها ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يصلى بعد الوتر ركعتين خفيفتين وهو جالس.

অর্থ” “উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত আছে যে, আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিতর নামাযের পর সংক্ষিপ্তাকারে দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করতেন।”

উক্ত হাদীছ শরীফ-এ وهو جالس. জুমলাটিই প্রমাণ করে যে, উক্ত নামায বসেই আদায় করা সুন্নত। আর উক্ত হাদীছ শরীফ সমূহের উপর ভিত্তি করেই ইমাম, মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়াকেই মুস্তাহাব সুন্নত, অধিক ফযীলতের কারণ বলে ফতওয়া দেন।

অতএব, উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, রেযাখানীরা বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম বলে যে রেজভীয়া কিতাবের ৩য় খণ্ডের বরাত দিয়েছে, সেই রেজভীয়া কিতাবের ৩য় খণ্ডেই উল্লেখ আছে, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত নফল অর্থাৎ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করেছেন।”

এছাড়াও পরিশেষে রেযা খা রেজভীয়া কিতাবের ৩য় খণ্ডে চুড়ান্ত মত ব্যক্ত করে বলেছে যে, “বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়ার ব্যাপারে কোন এ’তেরাজ নেই।”

সুতরাং রেযাখানীদের জালিয়াতি, ধোঁকাবাজি, প্রতারণা, মিথ্যা ও ইবারত কারচুপি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো। (চলবে)

ডা. মুহম্মদ মুয়াজ্জিম হুসাইন,

শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

সুওয়াল : রমযান মাস আসলেই কেউ কেউ পেপার-পত্রিকায় ও প্রচার মাধ্যমে প্রচার করে থাকে যে, “রোযা অবস্থায় ইনজেকশন এমনকি স্যালাইন ইনজেকশন নিলেও রোযা ভঙ্গ হয়না।”

এখন আমার সুওয়াল হলো- তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোন দলীল আছে কি?

জাওয়াব : যারা বলে থাকে যে, “রোযা অবস্থায় ইনজেকশন বা স্যালাইন ইনজেকশন নিলেও রোযা ভঙ্গ হয়না” তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল ও জিহালতপূর্ণ। কেননা, তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য একটি দলীলও পেশ করতে পারবেনা। পক্ষান্তরে রোযা অবস্থায় যে কোন ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে এ ফতওয়াটিই ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য। কারন এর স্বপক্ষে ফিক্বাহ ও ফতওয়ার নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের অসংখ্যা দলীল বিদ্যমান রয়েছে।

যেমন, “হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ومن احتقن …. افطر لقوله صلى الله عليه وسلم الفطر مما دخل.

অর্থ: “এবং যদি কোন ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে।”

“বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খণ্ডের ২৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

واذا احتقن … افطر لقوله عليه السلام الفطر مما دخل وليس مما خرج.

অর্থ: “যদি কোন ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় …. তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে এবং বের হলে রোযা ভঙ্গ হবেনা।”

“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, ومن احتقن ….. افطر.

অর্থ: “এবং যদি কোন ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে।” অনুরূপ “ফতওয়ায়ে শামীতে”ও উল্লেখ আছে।

অতএব, উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হবে।

{দলীলসমূহ : (১) বুখারী শরীফ (২) মুসলিম শরীফ (৩) মিশকাত শরীফ (৪) আলমগীরী (৫) ফতহুল ক্বাদীর (৬) হিদায়া মায়াদ দিরায়া (৭) শামী ইত্যাদি।}

{বি: দ্র: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ২১, ২২, ৪৬, ও ৪৭তম সংখ্যা পাঠ করুন।}

মাওলানা মুহম্মদ সালাহুদ্দীন,

ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

সুওয়াল ; আমরা অনেক কিতাবেই দেখতে পাই যে, তারা ফতওয়া দিয়েছে- “তারাবীহর নামাযে বা অন্যান্য সময়ে কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা হারাম।”

এখন আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে যে, উপরোক্ত ফতওয়া কতটুকু গ্রহণযোগ্য, দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।

জাওয়াব : কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা সম্পর্কিত ওলামায়ে দেওবন্দের উক্ত ফতওয়া অসম্পূর্ণ ও অশুদ্ধ। কারণ উজরত গ্রহণ করা শর্ত সাপেক্ষে জায়েয, আবার শর্ত সাপেক্ষে নাজায়েয। অর্থাৎ সময় অথবা স্থান-নির্ধারণ করে দেয়া হলে, কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়েয। আর সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করা না হলে, উজরত গ্রহণ করা জায়েয নেই। এর উপরই ওলামায়ে মুতাআখখেরীনগণ উনাদের ফতওয়া এবং এটাই গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত।

যেমন, ফিক্বাহর বিখ্যাত কিতাব “বাহরুর রায়িকে” উল্লেখ আছে,

ان الفتى به جواز الاخذ على القرائة.

অর্থ: “নিশ্চয়ই কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়েয হওয়া ফতওয়াগ্রাহ্য মত।”

{দলীলসমূহ : (১) বাহরুর রায়িক (২) আলমগীরী (৩) তাতারখানিয়া (৪) ফতওয়ায়ে আযীযী (৫) দুররুল মুখতার ইত্যাদি।}

(বি: দ্র: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ২৩ ও ২৪তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৫১টি নির্ভর যোগ্য কিতাবের দলীল পেশ করা হয়েছে।)

মুহম্মদ নুরুল হুদা,

চিলমারী, কুড়িগ্রাম।

সুওয়াল : অনেকে বলে থাকে ‘খতমে তারাবীহ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ’ তাদের এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক?

জাওয়াব : “যারা বলে, ‘খতমে তারাবীহ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ’ তাদের সে বক্তব্য মোটেও শুদ্ধ নয়। কারণ, যেখানে তারাবীহর নামাযের জামায়াত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া সেখানে খতমে তারাবীহ কি করে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ হতে পারে।

যদি খতমে তারাবীহ সুন্নতে মুয়াক্কাদা হয় তাহলে তারাবীহ নামাযের জামায়াতকেও সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলতে হবে। কিফায়া বলা যাবে না। কারণ কিফায়া হলে তো কিছু লোক একাও নামায পড়তে পারেন।

অতএব, যারা একা নামায পড়বেন, তারা যদি হাফিযে কুরআন না হন, তবে খতমে তারাবীহ কি করে পড়বেন? খতমে কুরআন শরীফ যদি মুয়াক্কাদা হয়, তাহলে প্রত্যেককেই তো তা আদায় করতে হবে।

খতমে তারাবীহ যদি সুন্নতে মুয়াক্কাদা হয়, তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি মসজিদে তারাবীহ নামাযে অবশ্যই কুরআন শরীফ খতমে করতে হবে। অন্যথায় সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরকের গুণাহে গুণাহগার হবে।

অথচ পৃথিবীতে এমন অনেক স্থান, গ্রাম-গঞ্জ রয়েছে, যেখানে কুরআন শরীফ উনার হাফিয পাওয়া অসম্ভব, সেখানে কি করে কুরআন শরীফ খতম করা হবে।

যদি খতমে তারাবীহ সুন্নতে মুয়াক্কাদা হয়, তাহলে ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেক পুরুষ ও মহিলাকে কুরআন শরীফ উনার হাফিয হতে হবে। অন্যথায় পুরুষ হোক কিংবা মহিলা হোক তারাবীহর নামাযে কুরআন শরীফ খতম না করলে সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরক করার কারণে ওয়াজিব তরকের গুণাহে গুণাহগার হতে হবে।

যদি খতমে তারাবীহ সুন্নতে মুয়াক্কাদা হয় তাহলে পুরুষ-মহিলা সকলকে তারাবীহর জামায়াতে নামায আদায় করতে হবে। অথচ মহিলাদের জন্য তারাবীহসহ সকল প্রকার নামাযের জামায়াতে যাওয়া মাকরূহে তাহরীমীর অন্তর্ভুক্ত।

যদি কোন ব্যক্তি যে হাফিয নয় সে খতমে তারাবীহর জামায়াতে নামায পড়া শুরু করলো হঠাৎ কোন কারণবশতঃ সে ২ রাকায়াত বা ৪ রাকায়াত বা তার চেয়ে কম বা বেশি রাকায়াত নামায জামায়াতের সাথে পড়তে পারলো না। এখন সে কি করবে? সে যে কয় রাকায়াত নামায পড়তে পারল না তা পড়বে কি পড়বে না? যদি পড়ে তা কিভাবে পড়বে? যদি সূরা তারাবীহ পড়ে তাহলে তো তার খতম হয় না। শুদু তাই নয় পুরা রমযান শরীফ-এ তারাবীহর ২০ রাকায়াতের এক রাকায়াতও যদি জরুরতবশত: পড়তে না পারে তাহলে তার খতম হবে না।

যদি খতমে তারাবীহ সুন্নতে মুয়াক্কাদা হয় তাহলে সূরা তারাবীহর প্রশ্নই উঠতে পারে না। অথচ বিশ্বখ্যাত ফতওয়ার কিতাব সমূহে সূরা তারাবীহর আহকাম বর্ণনা করা হয়েছে।

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, খতমে তারাবীহ বা তারাবীহ নামাযে কুরআন শরীফ খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা নয়। বরং সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। একইভাবে সূরা তারাবীহ সেটাও সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া।

অএতব, কেউ ইচ্ছা করলে খতম তারাবীহ পড়তে পারে। আবার কেউ ইচ্ছা করলে সূরা তারাবীহ পড়তে পারে।

{দলীলসমূহ : (১) বাহরুর রায়িক (২) হিদায়া (৩) আলমগীরী (৪) ফতহুল কাদীর (৫) এনায়া ইত্যাদি।}

(এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১০০তম সংখ্যা পাঠ করুন।)

সাইয়্যিদা ছফূরা তাসনীমা

গাজীরদরগাহ, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম।

সুওয়াল : মহিলারা মসজিদে গিয়ে তারাবীহর নামায জামায়াতে আদায় করতে পারবে কিনা?

জাওয়াব : মহিলাদের জন্য তারাবীহ, পাঁচ ওয়াক্ত, জুমুয়া ঈদ ইত্যাদি কোন নামাযই জামায়াতে আদায় করার জন্য মসজিদ ও ঈদগাহে যাওয়া জায়িয নেই। তা আম মতে মাকরূহ তাহরীমী আর খাছ ফতওয়া মতে কুফরী। উল্লেখ্য, মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়ার মধ্যে ২৫ থেকে ২৭ গুণ যে ফযীলত বর্ণিত রয়েছে তা পুরুষের জন্য। কিন্তু মহিলাদের জন্য ২৫ গণ ফযীলত হচ্ছে তার নিজ ঘরে নামায আদায় করার মধ্যে। (দাইলামী শরীফ)

{দলীলসমূহ : উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী দুররুল মুখতার, ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া, খুলাছাতুল ফতওয়া, ফতহুল ক্বাদীর, আলমগীরী)

(এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ১১তম সংখ্যা পাঠ করুন, সেখানে প্রায় ৬৫টি অকাট্য দলীল পেশ করা হয়েছে।)

মুহম্মদ কবীর হুসাইন,

বানারীপাড়া, বরিশাল।

সুওয়াল : আমরা জানি, তারাবীহ নামায বিশ্ব রাকায়াত এবং তা আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অথচ কেউ কেউ বলে আট রাকায়াত, আবার কেউ কেউ বলে বার রাকায়াত।

এখন আমরা কোন মতটি সঠিক বলে জানবো? দলীলসহ জানতে ইচ্ছুক।

জাওয়াব : আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া মুতাবেক তারাবীহর নামায বিশ্ব রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অতএব, কেউ যদি বিশ রাকায়াত থেকে এক রাকায়াতও কম পড়ে, তবে তার সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার গুণাহ হবে। অর্থাৎ তারাবীহর নামায বিশ রাকায়াতই পড়তে হবে এবং এর উপরই ইজমা হয়েছে।

{দলীলসমূহ : মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী, আল কবীর লিত তিবরানী, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, বাহারুর রায়িক, মারাকিউল ফালাহ ইত্যাদি।}

(এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২৫-৩০তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৩০৪ খানা অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে ছাবিত করা হয়েছে যে, তারাবীহর নামায বিশ রাকায়াত পড়াই সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।)

মুহম্মদ কামরুল হাসান ফুয়াদ,

দিরাই, সুনামগঞ্জ।

সুওয়াল : অনেকে মনে করে যে, ‘তারাবীহ’ অর্থ তাড়াতাড়ি। তাই তারাবীহর নামায তাড়াতাড়ি পড়তে হয়। বাস্তবিক সমাজে এটাই পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, সূরা তারাবীহ হোক আর খতম তারাবীহ হোক উভয় প্রকার জামায়াতে ইমাম বা হাফিয ছাহেবরা দ্রুত সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ করে নামায শেষ করেন। বিশেষ করে খতম তারাবীহর ক্ষেত্রে অধিকাংশ হাফিয ছাহেবকে দেখা যায়, তারা এত দ্রুতগতিতে সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ করেন মুছল্লীরা তা স্পষ্ট শুনতে বা বুঝতে পারেন না। অথচ খতম তারাবীহ সম্পন্ন করার জন্য হাফিয ছহেবরা মুছল্লীদেরকে একবার ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম’ স্পষ্ট করে শুনিয়ে দেন। এ বিষয়ে সঠিক মাসয়ালা জানার বাসনা রাখি।

জাওয়াব : মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পাকে ইরশাদ মুবারক করেন, قوموا لله قانتين.

অর্থ: “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার উদ্দেশ্যে (নামাযে) বিনয়-ন¤্র সহকারে দণ্ডায়মান হও।” অর্থাৎ ধীরস্থিরভাবে নামাযের ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব যথাযথ আদায় করার মধ্য দিয়ে এবং হুযূরী ক্বলবের সাথে নামায আদায় করতে হবে। অন্যথায় নামাযের হক্ব আদায় হবে না। তা কেবল উঠা-বসার নামান্তর হবে।

‘তারাবীহ’ অর্থ তাড়াতাড়ি এটা ভুল ধারণা। সঠিক বর্ণনা হচ্ছে تراويح ‘তারাবীহ’ শব্দটি ترويحة ‘তারবীহাতুন’ শব্দের বহুবচন। এর অর্থ বিশ্রাম নেয়া, আরাম করা। অর্থাৎ চার রাকায়াতের পর বসে দোয়া-দুরূদ, তাসবীহ পাঠের মাধ্যমে বিরতি বা বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে রাকায়াত নামায আদায় করা হয় বলেই এ নামাযকে তারাবীহ নামে নামকরণ করা হয়েছে।

কাজেই, তারাবীহ নামায অন্যান্য ফরয-ওয়াজিব নামাযের মতোই ধীরস্থিরভাবে আদায় করতে হবে।

স্মরণীয় যে, নামাযের মধ্যে সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ করা হচ্ছে একটি ফরয। হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

قراءة الامام قراءة المقتدى.

অর্থ: “ইমাম ছাহেবের ক্বিরায়াতই হচ্ছে মুক্তাদীর ক্বিরায়াত।”

সুতরাং ইমাম ছাহেবকে তারতীলের সাথে স্পষ্ট করে সূরা-ক্বিরায়াত পড়তে হবে। এটা হচ্ছে ইমাম ছাহেবের দায়িত্ব। আর মুক্তাদীকে তা মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে। এটা হচ্ছে মুক্তাদীর দায়িত্ব।

এখন ইমাম ছাহেব যদি তার দায়িত্ব পালনে ত্রুটি করে, তাহলে ইমাম-মুক্তাদী সকলের নামাযই বাতিল হয়ে যাবে। এ জন্য এরূপ ইমাম নিযুক্ত করা এবং তার পিছনে নামায আদায় করা জায়িয নেই।

আর কোন মুক্তাদী যদি তার দায়িত্বের ব্যাপারে ত্রুটি করে তাহলে কেবল তার নিজের নামায বাতিল হবে।

অতএব, তারাবীহ পড়নেওয়ালা ইমাম বা হাফিয ছাহেবের দায়িত্ব হচ্ছে তারতীলের সাথে স্পষ্ট করে সূরা-ক্বিরায়াত পড়া বা খতম পড়া।

আর হাফিয ছাহেব খতম সম্পন্ন করার জন্য যেমন একবার বিসবিল্লাহির রহমানির রহীম স্পষ্ট করে সুন্দর করে মুক্তাদীকে শুনিয়ে দেন ঠিক পুরো কুরআন শরীফই স্পষ্ট করে শুনাতে হবে। এর ব্যতিক্রম করলে খতম ও নামায কোনটিই শুদ্ধ হবে না।

{দলীলসমূহ : তাফসীরে মাযহারী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, আলমগীরী, শামী, বাহরুর রায়িক ইত্যাদি।

হেলাল আহমদ, দাসাড়ী, চাঁদপুর।

সুওয়াল : রমযান শরীফ-এ ই’তিকাফ করার মাসয়ালা জানতে চাই?

জাওয়াব : রমযান মাসের শেষ দশদিন অর্থাৎ ২০ তারিখ বাদ আছর ও ২১ তারিখ মাগরিবের পূর্ব হতে ঈদের বা শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা পর্যন্ত ই’তিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। অর্থাৎ ৩০শে রমযানের দশদিন কিংবা ২৯শে রমযানের নয়দিনের এক মিনিট কম হলেও সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিফায়া ই’তিকাফ আদায় হবেনা।

প্রত্যেক মসজিদে এলাকার তরফ হতে একজন ই’তিকাফ করলেই সকলের পক্ষ হতে আদায় হয়ে যাবে। আর যদি কেউ ই’তিকাফ না করে তাহলে সকলেই সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার গুণাহে গুণাহগার হবে। (আলমগীরী, বাহরুর রায়িক, দুররুল মুখতার ইত্যাদি)

মুহম্মদ নূরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া।

সুওয়াল : তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া জায়িয কিনা?

জাওয়াব : না, তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া জায়িয নেই। তারাবীহ, কুসূফ (সূর্যগ্রহণ) ও ইস্তিসকা (বৃষ্টি চাওয়ার উদ্দেশ্যে নামায) এই তিনপ্রকার নফল (সুন্নত) নামায ব্যতীত অন্য কোন নফল বা সুন্নত নামায জামায়াতে আদায় করা জায়িয নেই।

আমাদের হানাফী মাযহাবে তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।

{দলীলসমূহ : ফতওয়ায়ে আলমগীরী, খুলাছাতুল ফতওয়া বাহরুর রায়িক ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া, মাবসুত, দুররুল মুখতার, ইনায়া ইত্যাদি।}

(এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ’ ১৩তম সংখ্যা পড়–ন। যাতে ৭৬টি নির্ভরযোগ্য কিতাবের দলীল পেশ করা হয়েছে।)

মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হুসাইন, নরসিংদী।

সুওয়াল : টাক পড়া লোকের পিছনে নামায আদায় করা শুদ্ধ হবে কি?

জাওয়াব : হ্যাঁ, শুদ্ধ হবে।

{আলমগীরী, শামী ফতহুল ক্বাদীর ইত্যাদি}

মুহম্মদ আবুল হাসান, মারারটেক, ঢাকা।

সুওয়াল : আপনাদের ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা’ রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাহরী ও ইফতার-এর সময়সূচীর সাথে দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত ক্যালেণ্ডারের সময়সূচীর পার্থক্য দেখা যায়। প্রকৃতপক্ষে কোনটা সঠিক?

জাওয়াব : আমাদের প্রকাশিত ক্যালেন্ডারটি সার্ভে অব বাংলাদেশ ডিফেন্স’ থেকে সংগ্রহকৃত নির্ভুল অক্ষাংশ ও দ্রাঘীমাংশ-এর ভিত্তিতে কম্পিউটার প্রোগ্রাম দ্বারা শরীয়তসম্মত পদ্ধতিতে প্রণয়ন করা হয়েছে। কাজেই, এর নির্ভরযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা অত্যধিক।

 সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল জাওয়াব