মুহম্মদ আসিফ মহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন, মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা।
সুওয়াল : ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে মাসিক মুহীনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খণ্ড করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুহীনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো-
১. মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ ‘মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বার’ বরাতে যে হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে নাকি رفع يديه ودعا. ‘রফায়া ইদাইহি ওয়াদা‘য়া’ এ অংশটুকুর উল্লেখ নেই। প্রমাণস্বরূপ তারা কয়েকটি প্রকাশনালয়ের কথা উল্লেখ করেছে। যেমন, মুলতানের তৈয়ব একাডেমী, বোম্বাইয়ের দারুস সালাফিয়া ইত্যাদি। …
এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাটহাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধ বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি।
জাওয়াব : মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ প্রদত্ত ‘মুনাজাত’ সম্পর্কিত বক্তব্যের লোক দেখানো জবাব দিতে যদিও তারা দীর্ঘ তিনটি বছর ব্যয় করেছে। তবে এতে নতুন কিছুই তারা উল্লেখ করতে পারেনি। সেই পুরনো মিথ্যে বুলিই তারা আওড়িয়ে গেছে যে, ‘স্বর্ণযুগের কেউ ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজত করেননি’- তাই এটা বিদয়াত।
হ্যাঁ, তাদের সেই পুরনো মিথ্যাচারিতার সাথে আরেকটি নতুন মিথ্যাচারিতা যোগ হয়েছে বটে। এ ধরনের মিথ্যাচারিতা এই ১৫শ’ বছরের মধ্যে কেউ দেখাতে সাহস পায়নি। সম্ভবত: সেই নতুন মিথ্যাচারিতার সকল ব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করতেই তাদের ৩টি বৎসর ব্যয় হয়ে গেছে। তাদের সেই মিথ্যাচারিতা হচ্ছে সুওয়ালে উল্লিখিত তাদের প্রথম বক্তব্য।
যেমন তারা লিখেছে, “মাসিক আল বাইয়্যিনা-এ ‘মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বার’ বরাতে যে হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে رفع يديه ودعا. ‘রফায়া ইদাইহি ওয়াদায়া’ এ অংশটুকু উল্লেখ নেই। প্রমাণস্বরূপ তারা মুলতানের তৈয়ব একাডেমী, বোম্বাইয়ের দারুস সালাফিয়া ইত্যাদির সংস্করনের কথা উল্লেখ করেছে। …..”
এর জবাবে বলতে হয়, গত সংখ্যায় প্রদত্ত বক্তব্য ও দলীল ভিত্তিক বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, ওহাবী, খারেজীরা কিতাবের বক্তব্য কাট-ছাট ও কম-বেশি করার ক্ষেত্রে খুবই পারদর্শী। ভবিষ্যতে আর কোন কোন বিষয়গুলো তারা কিতাব থেকে বাদ দেয় এবং নতুন কোন বিষয় প্রবেশ করায় সেটাই এখন দেখার বিষয়।
“মুছান্নেফে ইবনে আবী শায়বায়” বর্ণিত মুনাজাত সম্পর্কিত হাদীছ শরীফখানা নিয়ে যে, ওহাবী, খারেজী ও লা-মাযহাবীরা গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে তা একেবারেই সুস্পষ্ট।
কারণ উক্ত হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত “رفع يديه ودعا.” এ অংশটুকু যদি উক্ত কিতাবে নাই থাকতো, তবে পূর্ববর্তী ইমাম মুজতাহিদ বা আলিম-উলামাগণ কখনোই নিজ নিজ কিতাব সমূহে “মুছান্নেফে ইবনে আবী শায়বার” বরাতে উক্ত অংশসহ হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করতেন না। তবে কি ওনারা হাদীছ জালিয়াতি করেছেন?
ধরে নিলাম হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের মতে তাদের সিলসিলার বাইরে যারা রয়েছে তারা হয়তোবা হাদীছ জালিয়াতি করতেও পারেন। তাই তাদের সিলসিলার বাইরের কোন কিতাবের বরাত দিলে হয়তোবা তারা তা মানবেনা বা বিশ্বাস করবেনা। কিন্তু তাদের মতে তাদের সিলসিলার অর্থাৎ দেওবন্দী আকাবিররা তো আর হাদীছ শরীফ জালিয়াতি করতে পারে না? দেওবন্দী আকাবিরদের কিতাবের বরাত দিয়ে নিশ্চয়ই মানতে ও বিশ্বাস করতে কোন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
তাই নিম্নে হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের সিলসিলা দেওবন্দের আকাবির ও মুরুব্বীদের কিতাব থেকেই কয়েকটি প্রমাণ পেশ করা হচ্ছে যে, “মুছান্নেফে ইবনে আবী শায়বায়” বর্ণিত উক্ত হাদীছ শরীফ-এ “رفع يديه ودعا.” এ অংশটুকু রয়েছে।
যেমন- দেওবন্দী মৌলভী ছাহেবরা যাকে খুব বড় হাস্তী মনে করে থাকে এবং তার ভূয়সী প্রশংসা করে থাকে তিনি হচ্ছেন থানবী ছাহেবের ভাগ্নে মাওলানা জা’ফর আহমদ ওছমানী ছাহেব। তিনি তার “ইলাউস সুনান’ কিতাবের ৩য় জি: ১৬৪ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদীছ শরীফখানা এভাবে উল্লেখ করেছেন,
ما اخرجه الحافظ ابوبكر بن ابى شيبة فى مصنفه عن الاسود العامرى عن ابيه قال. صليت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم الفجر فلما سلم انصرف ورفع يديه ودعا.
অর্থ: “হাফিয আবু বকর ইবনে আবী শায়বা উনার “মুছান্নাফে” যা বর্ণনা করেছেন। হযরত আসওয়াদ আমিরী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ফযর নামায আদায় করলাম, যখন তিনি সালাম ফিরালেন ঘুরে বসলেন এবং উভয় হাত মুবারক উঠায়ে মুনাজত করলেন।” …
হাটহাজারী মৌলভী ছাহেব ও দেবন্দীদের গুরু বা মুরুব্বী আশরাফ আলী থানবী ছাহেব তার “ইমদাদুল ফতওয়া” কিতাবের ১ জি: ৭৯৭, ৭৯৮ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদীছ শরীফখানা এভাবে উল্লেখ করেছে,
ما اخرجه الحافظ ابوبكر بن ابى شيبة فى مصنفه عن الاسود العامرى عن ابيه قال. صليت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم الفجر فلما سلم انصرف ورفع يديه ودعا.
অর্থ: হাফিয আবু বকর ইবনে আবী শায়বা উনার “মুছান্নাফে” যা বর্ণনা করেছেন। হযরত আসওয়াদ আমিরী উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ফযর নামায আদায় করলাম, যখন তিনি সালাম ফিরালেন ঘুরে বসলেন এবং উভয় হাত মুবারক উঠায়ে মুনাজাত করলেন।” …
থানবীর ভাগ্নে জা’ফর আহমদ ওছমানী তার “ইমদাদুল আহকাম” কিতাবের ১ জি: ২৪৬ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে লিখেন,
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থ: “সুওয়াল- যায়েদ বলে যে, ফরয নামাযসমূহের পর হাত উঠায়ে মুনাজত করা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে প্রমাণিত নেই, তাই এটা বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। যায়েদের একথাটি কিরূপ? মুনাজাতের প্রমাণ থাকলে হাদীছ শরীফ পেশ করবেন।
জাওয়াব- হ্যাঁ ‘সিহাহ সিত্তার’ বর্ণনায় এটা স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। কিন্তু “মুছান্নেফ ইবনে আবী শায়বায়” একটি বর্ণনা রয়েছে, যার মধ্যে ফরয নামাযের পর হাত উঠায়ে মুনাজত করার কথা উল্লেখ রয়েছে। এ হাদীছ শরীফ “আলাউস সুনান” কিতাবেও উল্লেখ রয়েছে।”
শুধু তাই নয় হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদেরকে যে ব্যক্তি ‘মুনাজাত” সম্পর্কে বিভ্রান্তিতে ফেলেছে এবং এ দেশে সর্ব প্রথম ‘মুনাজাত’ বিদয়াত বলে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে সেই “ফয়জুল্লাহও’ তার কিতাবে رفع يديه ودعا. এ অংশটুকুসহই উক্ত হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করেছে।
যেমন ইউসুফ ইসলামাবাদী সম্পদিত মাওলানা কাসেম কর্তৃক হাটহাজারী, চট্টগ্রাম ‘ফয়জিয়া কুতুবখানা’ থেকে প্রকাশিত ‘মুনাজাত সম্বন্ধে অভিমত’ নামক কিতাবের ৭ পৃষ্ঠায় ফয়জুল্লাহ বলেছে, “… অবশ্য কোন কোন জঈফ ও দূর্বল কর্মগত হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, শুধু একবার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফযরের ফরয নামাযবাদ নিজে একাভাবে দুই হাত মুবারক উঠাইয়া দোয়া করেন। …. বর্ণনাকারী … আসাওয়াদ আমেরী ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন …।”
অতঃপর উক্ত কিতাবের ১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “… হাদীছ শরীফ-এ আছে,
فلما سلم انحرف ورفع يديه ودعا.
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের গুরু খোদ ফয়জুল্লাই স্বীকার করেছে যে, হযরত আসওয়াদ আমিরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত হাদীছ শরীফ-এ رفع يديه ودعا. এ অংশটুকু রয়েছে। কাজেই “মুছান্নেফে ইবনে আবী শায়বায়” যদি উক্ত অংশটুকু নাই থাকতো তবে হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের গুরু বা মুরুব্বীরা এমনকি খোদ ফয়জুল্লাহ তাদের কিতাবে তা উল্লেখ করলো কিভাবে?
তবে কি হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের মতে তারা হাদীছ জালিয়াতী করেছে? নাকি কিতাব না পড়ে ফতওয়া দিয়েছে? (চলবে)
ক্বারী মুহম্মদ আব্দুল বারী, গোড়ান, ঢাকা।
মুহম্মদ সোহেলুর রহমান, রামপুরা, ঢাকা।
সুওয়াল : সম্প্রতি ‘আহলে হাদীছ লাইব্রেরী ঢাকা’-এর সৌজন্যে প্রকাশিত একটি হ্যান্ডবিলে ‘শবে বরাত’ সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক কতিপয় উক্তি করা হয়েছে। কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের নিরিখে সেসব কতটুকু সঠিক তা আপনাদের বহুল পঠিত, তাজদীদী মুখপত্র ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশ করলে বিভ্রান্তির নিসরণ হতো এবং সঠিক বিষয়টি উন্মোচিত হয়ে আওয়ামুন নাস খুবই উপকৃত হতো।
আপনাদের জ্ঞাতার্থে হ্যান্ডবিলের একটি মূল কপি প্রেরণ করা হলো। এতে আমাদের মনে যেসব প্রশ্নের উদয় হয়েছে তাহলো-
…. ১১. শবে বরাত উপলক্ষে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালত ছুটি ঘোষণা করা নাকি বিদয়াত চর্চার সুযোগ দেয়া? ……
আশা করি উল্লিখিত প্রশ্নসমূহের দলীলভিত্তিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াব : মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
فسئلوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون.
অর্থ: “তোমরা আহলে যিকির তথা আল্লাহওয়ালাগণকে জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জান।” (সূরা আম্বিয়া-৭)
যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার হাক্বীক্বী মিছদাক। মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার লক্ষ্যস্থল ওলী, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ওসীলায় এ পত্রিকাটি উম্মাহর জন্য শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত যার প্রতিটি লিখাই আক্বীদা-আমল হিফাযতকারী ও পরিশুদ্ধকারী। প্রসঙ্গত: সুওয়ালে উল্লিখিত প্রশ্নসমূহের ধারাবাহিক জাওয়াব পেশ করা হলো-
(ধারাবাহিক)
১১. শবে বরাত উপলক্ষে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালত ছুটি ঘোষণা করা নাকি বিদয়াত চর্চার সুযোগ দেয়া?
এর জবাব হলো- শবে বরাত উপলক্ষে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালত ছুটি ঘোষণা করা বিদয়াত চর্চার সুযোগ দেয়া নয় বরং নেক কাজের সুযোগ করে দেয়া বা সাহায্য করা। কেননা এ রাতেই বান্দার বিগত এক বছরের আমলনামা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পেশ করা হয়, পরবর্তী এক বছরের রিযিকের ফায়ছালা করা হয়। আগামী এক বছরে কত জন সন্তান জন্মগ্রহণ করবে এবং কতজন লোক ইন্তিকাল করবে তাও ফায়ছালা করা হয় এ রাতেই। অর্থাৎ এ রাতেই প্রজ্ঞাসম্পন্ন যাবতীয় বিষয়ের ফায়ছালা করা হয়।
যেমন এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
انا انزلنه فى ليلة مبركة انا كنا منذرين فيها يفرق كل امر حكيم.
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি কুরআন শরীফ নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এক বরকতপূর্ণ রাত্রিতে। নিশ্চয়ই আমি ভীতি প্রদর্শনকারী। উক্ত রাত্রিতে প্রতিটি প্রজ্ঞাসম্পন্ন বিষয়ের ফায়ছালা করা হয়।” (সূরা দুখান-৩, ৪)
প্রজ্ঞাসম্পন্ন কি কি বিষয়ের ফায়ছালা করা হয় সে সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
فيها ان يكتب كل مولود من بنى ادم فى هذه السنة وفيها ان يكتب كل هالك من بنى ادم فى هذه السنة وفيها ترفع اعمالهم وفيها تنزل ارزاقهم.
অর্থ: “এ বরাতের রাতে আগামী এক বছরে কতজন সন্তান জন্মগ্রহণ করবে এবং কতজন লোক মৃত্যুবরণ করবে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ রাতে বান্দার আমলসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পেশ করা হয় এবং এ রাতে বান্দার রিযিকের ফায়সালা করা হয়।” (মিশকাত)
তাই এ রাতে ইবাদত-বন্দিগী করা, দুয়া করা, আরজু পেশ করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং দিনের বেলা রোযা রাখার জন্য আদেশ-নির্দেশ করা হয়েছে।
যেমন, হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
عن على رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.
অর্থ: “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন অর্ধ শা’বানের রাত উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উক্ত রাতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন। অর্থাৎ রহমত খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিরক দান করব।” “কোন মুছিবতগ্রস্থ ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব।” এভাবে ফযর বা ছুবহে ছাদীক পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
শবে বরাত বা বরাতের রাতটি রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের খাছ রাত এবং দুয়া কবুলের খাছ রাত। বছরের যে পাঁচটি খাছ রাতে দোয়া কবুলের কথা হাদীছ শরীফ-এ ঘোষণা করা হয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে বরাতের রাত।
যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
ان الدعاء يستجاب فى خمس ليال اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلتى العيدين وليلة القدر المباركة.
অর্থ: “নিশ্চয়ই পাঁচ রাতে (বিশেষভাবে) দোয়া কবুল হয়। রজব মাসের পহেলা রাত, শা’বানের মধ্য রাত অর্থাৎ শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত, ঈদুল ফিতরের রাত, ঈদুল আযহার রাত এবং বরকতপূর্ণ ক্বদরের রাত।”
সুতরাং বান্দারা এ মুবারক রাতে ইবাদত-বন্দিগী করে এবং দিনের বেলায় রোযা রেখে যাতে পুরোপুরি রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাত হাছিল করতে পারে সে উপলক্ষে উক্ত রাতে ও দিনে ইবাদতের প্রস্তুতির জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ইত্যাদি ছুটি ঘোষণা করা হয়।
কেননা, শবে বরাতে সারা রাত জেগে ইবাদত বন্দিগী করার কারণে এবং দিনের বেলায় রোযা রাখার কারণে অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সঠিকভাবে কাজ করা বা দায়িত্ব পালন করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আর শবে বরাতে উক্ত ইবাদত-বন্দিগী করার জন্য প্রস্তুতিরও প্রয়োজন রয়েছে। এ উদ্দেশ্যেই মূলত: শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান অফিস-আদালত ইত্যাদি ছুটি ঘোষণা করা হয়। এটা নেক কাজে সুযোগ বা সাহায্য করারই শামিল।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
تعاونوا على البر والتقوى.
অর্থ: “তোমরা নেকী ও পরহেযগারীর মধ্যে সাহায্য কর।” (সূরা মায়িদা-২)
আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
الدال على الخير كفاعله.
অর্থ: “নেক কাজে পথ প্রদর্শনকারী ব্যক্তি নেক কাজ সম্পদনকারীর অনুরূপ ছওয়াব লাভ করবে।”
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের খাছ মাস হচ্ছে রমাদ্বান শরীফ। এ মাসে দিনের বেলায় রোযা রাখা মহান আল্লাহ পাক তিনি ফরয করে দিয়েছেন। আর রাতের বেলায় তারাবীহর নামায আদায় করা মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সুন্নত করে দিয়েছেন। এই রোযা-নামায পালনসহ রমাদ্বান মাসের হক্ব উম্মত যাতে যথাযথভাবে আদায় করতে পারে এবং তার রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের পরিপূর্ণ হিসসা রাভ করতে পারে সে উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তি যদি তার অধীনস্ত কর্মচারীর ডিউটি কমিয়ে দেয় তার ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
من خفف عن مملوكه فيه غفر الله له واعتقه من النار.
অর্থ: “যে ব্যক্তি এ মাসে আপন গোলাম বা কর্মচারীর দায়িত্বের বোঝা হালকা করে দিবেন মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন।” (মিশকাত)
এ কারণে দেখা যায়, রমাদ্বান মাসে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয় অথবা ডিউটি কমিয়ে দেয়া হয়। ঠিক একই কারণে শবে বরাতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ইত্যাদি বন্ধ ঘোষণা করা হয়ে থাকে। সুতরাং এটাকে বিদয়াত চর্চার সুযোগ দেয়া বলে অভিহিত করা সম্পূর্ণরূপে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
এ কুফরী প্রচারণা মূলত: দাজ্জালে কাযযাব ওহাবী, খারিজী, জামাতী, তাবলীগী ও লা-মাযহাবীদের।
সুতরাং এ ক্ষেত্রে নিজেদের ঈমান-আমল হিফাযতের জন্য প্রত্যেককে সতর্ক সাবধান থাকতে হবে।
কারণ হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.
অর্থ: “হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে। তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
এ হাদীছ শরীফ-এ ক্বিয়ামতের পূর্বে অনেক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে সেটাই বলা হয়েছে।
হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা মতে মূল দাজ্জাল একজনই হবে তবে তার অনুসারী অর্থাৎ দাজ্জালের চেলা হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ হবে।
প্রকৃত কথা হচ্ছে, মূল দাজ্জালের পূর্বে বহু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জালের প্রকাশ ঘটবে। মূল দাজ্জালের যে কাজ সে কাজকে তারা আঞ্জাম দিবে। তাহলো মানুষের আক্বীদা-আমল নষ্ট করে কুফরীতে নিমজ্জিত করা।
কাজেই তাদেরকে চিনে তাদের থেকে নিজের আক্বীদা-আমল হিফাযত করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। নচেৎ উক্ত দাজ্জালের খপ্পরে বা ওয়াসওয়াসায় যারা পড়বে তাদের হাশরণ্ডশর সে দাজ্জালের সাথেই হবে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে সেই দাজ্জালদের পরিচয় লাভ করার এবং তাদের থেকে দূরে থেকে নিজেদের আক্বীদা-আমল হিফাযত করত: মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন) (চলবে)
খন্দকার সেলিম আহমদ
পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল।
সুওয়াল : হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারি-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত মীলাদ-ক্বিয়ামের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারি-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।
তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
১. “প্রচলিত মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ উভয়টি নাজায়েয। কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা-ক্বিয়াসে এর কোন প্রমাণ নেই। বরং বুযুর্গদের আমল দ্বারা প্রমাণিত। তাই যদি কেউ মহাবুযুর্গ হন, কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের মুকাবিলায় তার আমল দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। ……”
উল্লিখিত বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে তারা তাদের নিজেদের লিখিত কিছু কিতাবের নাম উল্লেখ করেছে যা মুতাবার বা নির্ভরযোগ্য নয়; অনুসরণীয় ইমাম মুজতাহিদগণ উনাদের কিতাব থেকে কোন কিতাবের নাম দলীল হিসেবে উল্লেখ করেনি বা করতে পারেনি।
এখন আমার সুওয়াল হলো, প্রচলিত মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীল সম্মত? কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব : প্রচলিত মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ সম্পর্কে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে এবং মাসিক মদীনার প্রশ্নোত্তর বিভাগে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধ হয়নি বরং সম্পূর্ণই ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা-ক্বিয়াস উনাদের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে।
আমাদের “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ উনার পক্ষ থেকে মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ উনাদের বিরোধীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ দেয়া হয় যে, “কেউ যদি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা-ক্বিয়াস দ্বারা মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ নাজায়িয প্রমাণ করতে পারে, তাহলে তাকে দুই হাজার পাউ- পুরস্কার দেয়া হবে।” কিন্তু এখন পর্যন্ত মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ বিরোধীরা সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণের হিম্মত দেখাতে সমর্থ হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ।
(ধারাবাহিক)
প্রচলিত মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ অবশ্যই জায়িয ও কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ সম্মত।
প্রচলিত মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম যে নাজায়িয নয়। বরং প্রচলিত মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ উভয়টি অবশ্যই একটি শরীয়তসম্মত ইবাদত। যা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা-ক্বিয়াস দ্বারাও প্রমাণিত। নিম্নে এ সম্পর্কিত বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হলো-
স্মর্তব্য যে, মীলাদ শরীফ-এ সাইয়ি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত, তা’রীফ, প্রশংসা, উনার মু’জিযা বর্ণনা, বিলাদত শরীফ উনার আলোচনা, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, না’ত শরীফ, শে’র, কাছীদা শরীফ পাঠ ও উনার প্রতি ছলাত ও সালাম প্রেরণ করা হয়।
অর্থাৎ মীলাদ শরীফ-এ যা কিছু করা হয় তার প্রত্যেকটাই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসসম্মত। যেমন- মীলাদ শরীফ-এর প্রথমেই কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা হয়। এরপর মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ صلوا عليه. (তোমরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ কর)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার নির্দেশ পালনার্থে এবং হাদীছ শরীফ-এ দুরূদ শরীফ উনার প্রতি গুরুত্ব অনুধাবন করে মীলাদ শরীফ-এ দুরূদ শরীফ পাঠ করা হয়।
অতঃপর “মীলাদ শরীফ-এ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে শরীয়ত সম্মত সুন্দর সুন্দর কাছীদা শরীফ পাঠ করা হয়। অতঃপর ক্বিয়াম শরীফ করা হয় বা দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করা হয়। কেননা প্রচলিত অর্থে ক্বিয়াম শব্দের অর্থ হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকতময় তাওয়াল্লুদ শরীফ অর্থাৎ পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার বর্ণনা শ্রবণ করে দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করা। আর সালাম দাঁড়িয়ে দেয়া সুন্নত, যা শরাফত ও ভদ্রতা। সেহেতু সম্মানার্থে ও আদব রক্ষার্থে ক্বিয়াম শরীফ করে বা দাঁড়িয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সালাম পাঠ করা হয়, যেহেতু মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন, وسلموا تسليما. “তোমরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর সালাম দেয়ার মত সালাম দাও। অর্থাৎ আদবের সহিত সালাম দাও।” (সূরা আহযাব/৫৬)
তাছাড়া কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনাদের অসংখ্য জায়গায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তা’যীম-তাকরীম করার ও উনার প্রতি আদব রক্ষা করার কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন, মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পাকে ইরশাদ মুবারক করেন,
وتعزروه وتوقروه.
অর্থ: “তোমরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত কর ও তা’যীম কর।” (সূরা ফাতহ/৯)
এ প্রসঙ্গে আশিকে রসূল, হযরতুল আল্লামা শাহ আব্দুল হক এলাহাবাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তদীয় “দুররুল মুনাজ্জাম” কিতাবে লিখেন,
ان القيام عند وضعه صلى الله عليه وسلم لتعظيم النبى صلى الله عليه وسلم.
অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকতময় বিলাদত শরীফ আলোচনার সময় উনার সম্মানার্থে বা তা’যীম-তাকরীমের জন্যেই ক্বিয়াম শরীফ করা হয়।” (আল উছীলাহ পৃ:৫৮)
“ইক্বদুল জাওয়াহির” নামক কিতাবের ২৯নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
قد استحسن القيام عند ذكر ولادته الشريفة صلى الله عليه وسلم ائمة ذو رواية ودراية.
অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ আলোচনাকালে ক্বিয়াম শরীফ করাকে বিচক্ষণ ইমামগণ মুস্তাহসান বলেছেন।”
বাংলার মুলুকে প্রায় ৫৫ বৎসর দ্বীনের তথা ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফের প্রচার-প্রসারকারী, হযরত মাওলানা কারামত আলী জৌনপুর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তদীয় “মুলাখখাছ” কিতাবে উল্লেখ করেন,
قال علامة السيوطى اى نفع احسن من عمل المولد والقيام وانهم يهيجان محبة النبى صلى الله عظمته وجلالته فى قلب فاعله.
অর্থ: “আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ অপেক্ষা অধিকতর উত্তম বা ফলদায়ক আমল আর কি হতে পারে? কারণ এর দ্বারা মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়ামকারীর হৃদয়ে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত, মর্যাদা ও মহিমার উদ্দীপনা জেগে উঠে।”
“ইশবাউল কালাম” নামক কিতাবের ৫৪নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
قد اجمعت الامة المحمدية من الاهل السنة والجماعة على استحسان القيام المذكور وقال عليه السلام لاتجتمع امتى على الضلالة.
অর্থ: “উম্মতে মুহম্মদীর আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সকল আলিম মীলাদ শরীফ উনার ক্বিয়াম মুস্তাহসান হওয়ার ব্যাপারে ইজমা বা ঐক্যমত পোষণ করেন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমার উম্মত (আলিমগণ) কখনোই গোমরাহীর উপর একমত হবেনা।”
মাওলানা আশরাফ আলী থানবী ছাহেবসহ সকল উলামায়ে দেওবন্দের পীর ও মুর্শিদ, শায়খে আরব ওয়াল আ’যম, হযরতুল আল্লামা, হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “হাফতে মাসায়েল” কিতাবে উল্লেখ করেন যে,
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থ: “মীলাদ শরীফ উনার মাহফিলকে বরকত লাভের উসীলা মনে করে আমি প্রতি বৎসর মীলাদ শরীফ উনার মজলিস করি এবং মীলাদ মাহফিলে ক্বিয়াম শরীফ করার সময় আমি অশেষ আনন্দ ও স্বাদ উপভোগ করি।”
সুতরাং প্রমাণিত হলো, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী ছাহেব, গাঙ্গুহী ছাহেবসহ সকল ওলামায়ে দেওবন্দের পীর ও মুর্শিদ শায়খুল আরব ওয়াল আ’যম, আল্লামা হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বয়ং নিজেই মীলাদ শরীফ- ক্বিয়াম শরীফ করেছেন, যা তিনি উনার “হাফতে মাসায়েল ও মরকুমাতে ইমদাদিয়া” কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
তাছাড়া বড় কাটারা ও লালবাগ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা, মুজাহিদে আ’যম, খাদিমুল ইসলাম, হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী ছাহেব ক্বিয়াম শরীফ সম্পর্কে উনার “তাসাউফ তত্ত্ব” কিতাবে লিখেন যে, “মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে ক্বিয়াম শরীফ করা আদব, শরাফত বা ভদ্রতা।”
বিশেষভাবে উল্লেখ যে, শরীয়তের কোথাও দাঁড়িয়ে সালাম তিনি পাঠ করতে নিষেধ করা হয়েছে, এরূপ একটি প্রমাণও কেউ পেশ করতে পারবেনা।
অতঃপর ক্বিয়াম শরীফ শেষে দোয়া করার জন্য বসে মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ ادعونى استجب لكم.
অর্থ: “তোমরা আমার নিকট দোয়া করো আমি তা কবুল করবো।” (সূরা আল মু’মিন-৬০)
এ আদেশ পালনার্থে বসে ছওয়াব রেসানী করে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উছীলা দিয়ে মুনাজাত করা হয়। যাতে বান্দা মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি ও আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারে।
উপরোক্ত জবাব থেকে একথা প্রমাণিত হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফ-এ আর মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাদীছ শরীফ-এ পর্যায়ক্রমে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, যিকরুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত-সালাম, কাছিদা শরীফ পাঠ করা ও ফাযায়িল-ফযীলত বর্ণনা করা সম্পর্কে আদেশ দিয়েছেন, নির্দেশ করেছেন ও গুরুত্বরোপ করেছেন।
এক কথায় মীলাদ মাহফিলে তাই করা হয়। তাহলে এত দলীল-আদিল্লাহ থাকার পরও কি করে একথা বলা যেতে পারে যে, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা-ক্বিয়াসে এর কোন প্রমাণ নেই।
অতএব আবারো প্রমাণিত হলো প্রচলিত মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ-এ উপরোক্ত কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা-ক্বিয়াস সম্মত আমলই করা হয়।
সুতরাং প্রচলিত মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ সম্পর্কে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধতো হয়নি। বরং সম্পূর্ণ ভুল, মনগড়া, মিথ্যা ও দলীলবিহীন এবং কাট্টা কুফরী হয়েছে, যা থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য ফরয, ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। (চলবে)
মুসাম্মত সানজিদা আক্তার
সভানেত্রী- ছাত্রী আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত
মুহম্মদপুর, ঢাকা।
সুওয়াল : অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়-
জিজ্ঞাসা : ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু তিনি বলেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মুর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফযিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। ….
…… তারা কুরআন শরীফ উনার উপর আমল কিম্বা কুরআন শরীফ প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। ……
উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-
….. “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” …
কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা-ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব : প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।
তারা তাদের জবাবে প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের সাফাই বর্ণনা করতে যেয়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করেছে। সাথে সাথে “ছয় উছূলীদের মধ্যে কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ বিরোধী কোন আক্বীদা-আমল নেই” বলে তাদের নির্লজ্জ দালালী করে নিজেদেরকে অপব্যাখ্যাকারী ও মিথ্যাবাদীরূপে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিক দলীলভিত্তিক আলোচনা করলেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে।
তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-
(ধারাবাহিক)
প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?”
আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, পর্যায়ক্রমে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলোর সাথে সাথে কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো।
প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ১৫
তাবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াছ ছাহেবের ‘মালফূযাত’-এর ৫৩নং পৃষ্ঠার ৮০নং মালফূযে একথা উল্লেখ আছে যে, “প্রচলিত তাবলীগের বা অতরীক্বত পন্থীদের, তাছাউফের বা ছূফীদের বই পড়া উচিৎ নয়।”
উপরোক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, তাছাউফের বা ছূফীদের কিতাবে তাছাউফ সম্পর্কে যে সুক্ষ্ম বর্ণনা রয়েছে, তা প্রচলিত তাবলীগওয়ালা বা অতরীক্বত পন্থীদের পক্ষে বোঝা সত্যিই খুব দুরূহ ব্যাপার। সেজন্য তাদেরকে ইলমে তাছাউফ থেকে ফিরিয়ে রাখা কখনই জায়িয হবেনা। কারণ প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জরুরত আন্দাজ ইলমে তাছাউফ শিক্ষা করা ফরয।
কাজেই “অতরীক্বত পন্থীদের তাছাউফ বা ছূফীদের বই পড়া উচিৎ নয়”- একথা বলার অর্থ হলো, পূর্ণ ইসলামী শিক্ষা থেকে মাহরূম করা ও অন্তর পরিশুদ্ধ করে ইখলাছ অর্জনে বাধা সৃষ্টি করা, যা সম্পূর্ণই শরীয়ত বিরোধী কাজ।
কারণ, কোন লোক যখন ইলমে তাছাউফ অর্জন বা ক্বালবী যিকির থেকে বিরত থাকে, তখন শয়তান তার সঙ্গী হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক করেন,
ومن يعش عن ذكر الرحمن نقيض له شيطنا فهو له قرين.
অর্থ: “যে ব্যক্তি আমার যিকির থেকে বিরত থাকে, তার জন্য একটি শয়তান নির্দিষ্ট হয়ে যায়, সে তাকে ওয়াসওয়াসা দিয়ে গোমরাহ করে দেয়।” (সূরা যুখরূফ-৩৬, তাফসীরে জালালাইন, আবি সউদ, মাদারেক, রুহুল বয়ান, রুহুল মায়ানী, মাযহারী)
আর হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে,
الشيطان جاثم على قلب ابن ادم فاذا ذكر الله خنس واذا غفل وسوس.
অর্থ: “শয়তান মানুষের অন্তরে বসে, যখন সে যিকির করে, তখন পালিয়ে যায়। আর যখন যিকির থেকে গাফেল থাকে, তখন ওয়াসওয়াসা দেয়।” (বুখারী শরীফ)
কাজেই প্রমাণিত হলো যে, ইলমে তাছাউফ চর্চা থেকে বিরত রাখার অর্থ হলো- লোকদেরকে শয়তানের সঙ্গি করে দেয়া বা গোমরাহীতে নিপতিত করা।
আরো উল্লেখ্য যে, ছূফীদের বই পড়া বা ইলমে তাছাউফ থেকে বিরত রাখার মানে হচ্ছে, দ্বীন ইসলামের অর্ধ শিক্ষা ও অর্ধ আমল থেকে বিরত রাখা। অথচ মহান আল্লাহ পাক পরিপূর্ণভাবে দ্বীন ইসলামের মধ্যে দাখিল হতে বলেছেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
يايها الذين امنوا ادخلوا فى السلم كافة.
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণরূপে দ্বীন ইসলামে দাখিল হও।” (সূরা বাক্বারা-২০৮)
অন্যত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اليوم اكملت لكم دينكم.
অর্থ: “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম।” (সূরা মায়িদা-৩)
ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য মহান আল্লাহ পাক উনার বিধানের বিপরীত, যা দ্বীনের মধ্যে তাহরীফের শামিল ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
মূলত: তারা চায়, একথা বলে ইলমে তাছাউফকে নিশ্চিহ্ন করতে বা ইলমে তাছাউফের শিক্ষা থেকে সাধারণ লোকদেরকে দূরে রেখে নিজেদের দল ভারী করতে। মূলত: এটা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। কারণ মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আ’লামীন পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ মুবারক করেন,
يريدون ليطفؤا نور الله بافوا ههم والله متم نوره ولو كره الكفرون.
অর্থ: “তারা চায়, মহান আল্লাহ পাক উনার নূরকে ফূ দিয়ে নিভিয়ে দিতে। মহান আল্লাহ পাক উনার নূরকে পরিপূর্ণ করবেন, যদিও কাফেররা তা পছন্দ করেনা।” (সূরা ছফ-৮)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এ নূরের ব্যাখ্যায় মুহাক্কিক, মুদাক্কিত ও অনুসরণীয় মুফাসসিরীনে কিরামগণ উনাদের কেউ কেউ বলেন, ‘নূর’ হচ্ছে দ্বীন ইসলাম। আর ‘ইসলাম’ হচ্ছে ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফের সমন্বয়। (তাফসীরে মাযহারী, ইবনে কাছীর, রুহুল মায়ানী, রুহুল বয়ান, কবীর, ফতহুল ক্বাদীর, তাবারী, আবী সউদ ইত্যাদি)
অতএব, ইলমে তাছাউফ থেকে ফিরিয়ে রাখা অর্থ দ্বীন থেকে ফিরিয়ে রাখার নামান্তর, যা অবশ্যই শরীয়ত বিরোধী কাজ।
সুতরাং ইলমে তাছাউফ, যা দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করার মূল ও একমাত্র মাধ্যম, তা কারো পক্ষেই নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব নয় বরং তা ক্বিয়ামত পর্যন্তই বহাল থাকবে।
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ বা শরীয়ত বিরোধী। কাজেই একথা বলা তাদের উচিৎ হয়নি। বরং তাদের উচিৎ হবে একথা বলা যে, যারা প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোক বা অতরীক্বতপন্থী, তারা যেন কোন হক্কানী পীরানে তরীক্বত, আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের কাছে বাইয়াত হয়ে তাছাউফ শিক্ষা ও কিতাবদি পাঠের মাধ্যমে ফরয পরিমাণ ইলম অর্জন করে। কারণ, দুররুল মুখতার, শামী, তাফসীরে মাজহারী, তাফসীরে কবীর, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, মকতুবাত শরীফ, ইহইয়াউলুমুদ্দীন, কিমিয়ায়ে সায়াদাত, ফতহুর রব্বানী, আল বুনিয়ানুল মুশাইয়্যাদ ইত্যাদি কিতাবসমূহে ইলমে তাছাউফ অর্জন করা এবং সেজন্য একজন কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হওয়াকে ফরয বলা হয়েছে। (চলবে)
মুহম্মদ সুলতান মাহমুদ, মিরপুর, ঢাকা।
মুহম্মদ আহমদুল্লাহ কামালী, নরসিংদী।
সুওয়াল : মাসিক মদীনা ফেব্রুয়ারি-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়- প্রশ্ন চুল …. রাখার সুন্নত কি? ….
উত্তর : …. চুল রাখার দুই তরীকা, এক বাবরি রাখা, দুই মু-ানো। …. (শামী, আলমগীরী, বুখারী, মুসলিম)
আর হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা এপ্রিল/২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “মাথা মুন্ডানো যদিও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে হজ্জের মৌসুম ব্যতীত পাওয়া যায় না, কিন্তু হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার থেকে মাথা মুন্ডানোর বর্ণনা পাওয়া যায় এবং হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার ইে আমলের উপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্বীকৃতি পাওয়া যায়। তাই ছাহাবী উনাদের আমল হিসেবে মাথা মুন্ডানো সুন্নাত। অন্য এক রেওয়ায়াতে আছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাথা মুবারক মুন্ডন কারীদের জন্য তিন বার রহমতের দোয়া করেছিলেন। আর হানাফী মাযহাবের গ্রহণযোগ্য কিতাবাদিতেও মাথা মুন্ডানোকে সুন্নাত বলা হয়েছে। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরি ও শামী)
এখন আমার সুওয়াল হলো- মাথা মুন্ডন করা সম্পর্কে মাসিক মদীনা ও হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি মাথা মুন্ডন করা সুন œত বা চুল রাখার দুই তরীকার, এক তরীকা? দলীলসহ সঠিক জাওয়াব দিয়ে, আমাদের আক্বীদা আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব : মাথার চুল মুন্ডন করা সম্পর্কে মাসিক মদীনা ও হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে।
কারণ, মাসিক মদীনা ও হাটহাজারী মৌলভী ছাহেব এবং তাদের সমজাতীয়রা এমন একটি হাদীছ শরীফও উল্লেখ করতে পারবে না, যেখানে উল্লেখ আছে যে, “মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হজ্জ ও ওমরাহ ব্যতীত অন্য সময় নিজ মাথা মুবারক উনার চুল মুবারক মুন্ডন করেছেন।” বরং অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, “মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সব সময় বাবরী চুল মুবারক রাখতেন। সেহেতু সকল উম্মতে মুহম্মদীর জন্য সর্বদা বাবরী চুল রাখাই দায়িমী সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
(ধারাবাহিক)
বর্তমান সংখ্যায় হাটহাজারীর
বক্তব্য খন্ডন করা হলো
উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভী ছহেবরা বলেছে, “মাথা মুন্ডানো যদিও রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে হজ্জের মৌসুম ব্যতীত পাওয়া যায় না, …..।”
এর জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারীর মৌলভী সাহেবরা বিলম্বে হলেও আল বাইয়্যিনাত-এর ফতওয়া মানতে বাধ্য হলো যে, মাথা মুন্ডন করা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত নয়। এবং মাথা মুন্ডন করা খুলাফায়ে রাশেদীন এবং অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরও সুন্নত নয়।
কারণ তারাই স্বীকার করেছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হজ্জ ও ওমরাহ ব্যতীত কখনোই মাথা মুবারক মুন্ডন করেন নাই। খুলাফায়ে রাশেদীন এবং অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা মাথা মুবারক মুন্ডন করতেন এরূপ একটি প্রমাণও তারা পেশ করতে পারে নাই। কাজেই আল বাইয়্যিনাত-এ যে বলা হয়েছে মাথা মুন্ডন করা সুন্নত নয়। বরং বাবরী চুল রাখাই খাছ সুন্নত। এ ফতওয়াই সঠিক ও দলীল ভিত্তিক প্রমাণিত হলো।
কারণ এর স্বপক্ষে বহু নির্ভরযোগ্য ও ছহীহ হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। যেমন, “বুখারী শরীফ” কিতাবের ২য় খণ্ডের ৮৭৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
حدثنى عمرو بن على قال حدثنا وهب ابن جرير قال حدثنا ابى عن قتادة سالت انس بن مالك رضى الله تعالى عنه عن شعر رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال كان شعر رسول الله صلى الله عليه وسلم رجلا ليس بالسبط ولا الجعد بين اذنيه وعاتقيه.
অর্থ: “হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আমর ইবনে আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত ওয়াহাব ইবনে জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন আমার পিতা হযরত ক্বাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে। আর হযরত কাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাথা মুবারক উনার চুল মুবারক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি জবাবে বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বাবরী চুল মুবারক মধ্যম ধরণের ছিলো। না অধিক সোজা ছিলো এবং না অধিক কোঁকড়ানো ছিলো। বরং দু’অবস্থার মাঝামাঝি ছিলো। আর উক্ত বাবরী চুল মুবারক লম্বায় ছিলো, উনার উভয় কান ও উনার উভয় কাঁধ মুবারক উনার মাঝ বরাবর পর্যন্ত লম্বা।”
“বুখারী শরীফ” কিতাবের ২য় খণ্ডের ৮৭৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
عن مالك ان جمته لتضرب قريبا من منكبه قال شعبة شعره يبلغ شحمة اذنيه.
অর্থ: “হযরত মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জুম্মা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারক অবশ্যই উনার কাঁধ মুবারক উনার কাছাকাছি পর্যন্ত লম্বা ছিলো। আর হযরত শু’বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাবরী চুল মুবারক উনার দু’কানের লতি মুবারক-এ পৌঁছত।”
“মুসলিম শরীফ” কিতাবের ২য় খণ্ডের ২৫৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن البراء رضى الله تعالى عنه قال ما رايت من ذى لمة احسن فى حلة حمراء من رسول الله صلى الله عليه وسلم شعره يضرب منكبيه.
অর্থ: “হযরত বারায়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, গন্ধম রংয়ের ইয়ামানী চাদর পরিহিত অবস্থায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেয়ে অধিক সুন্দর আর কোন লিম্মা ওয়ালা বাবরী চুল বিশিষ্ট লোক দেখিনি। আর উনার মাথা মুবারক উনার বাবরী চুল মুবারক উনার দু’কাঁধ মুবারক পর্যন্ত লম্বা ছিলো।”
“তিরমিযী শরীফ” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২০৮ পৃষ্ঠা এবং “মিশকাত শরীফ” কিতাবের ৩৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت كنت اغتسل انا ورسول الله صلى الله عليه وسلم من اناء واحد وكان له شعر فوق الجمة ودون الوفرة.
অর্থ: “হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আমি এবং মহান আল্লাহ পাক উনার রসূর, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একই পাত্র থেকে পানি নিয়ে গোছল করতাম। আর মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বাবরী চুল মুবারক ছিলো জুম্মা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারক উনার উপরে এবং ওয়াফারা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারক উনার নিচে।”
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বাবরী চুল মুবারক দু’কানের লতি মুবারক থেকে দু’কাঁধ মুবারক পর্যন্ত লম্বা ছিলো।”
“আবূ দাউদ শরীফ” কিতাবের ২য় খণ্ডের ২২৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
حدثنا مخلد بن خالد حدثنا عبد الرزاق اخبرنا معمر عن ثابت عن انس رضى الله تعالى عنه قال كان شعر رسول الله صلى الله عليه وسلم الى شحمة اذنيه.
অর্থ: “হযরত ইমাম আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মাখলাদ ইবনে খালিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মা’মার রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ছাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে; তিনি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করে বলেন, হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বাবরী চুল মুবারক উনার দু’কানের লতি মুবারক পর্যন্ত লম্বা ছিলো।”
“নাসাঈ শরীফ” কিতাবের ২য় খণ্ডের ২৭৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن البراء رضى الله تعالى عنه قال ما رأيت احدا احسن فى حلة حمراء من رسول الله صلى الله عليه وسلم وجمته تضرب منكبيه.
অর্থ: “হযরত বারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, গন্ধম রংয়ের ইয়ামানী চাদর পরিহিত অবস্থায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেয়ে অধিক সুন্দর আমি আর কোন ব্যক্তিকে দেখিনি।
আর মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জুম্মা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারক উনার দু’কাঁধ মুবারক পর্যন্ত লম্বা ছিলো।”
“ইবনু মাজাহ শরীফ” কিতাবের ২৬৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن انس رضى الله تعالى عنه قال كان شعر رسول الله صلى الله عليه وسلم شعرا رجلا بين اذنيه ومنكبيه.
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বাবরী চুল মুবারক উনার উভয় কান ও উনার উভয় কাঁধ মুবারক উনার মাঝ বরাবর মধ্যম ধরণের ছিলো। অর্থাৎ না অধিক কোঁকড়ানো ছিলো এবং না অধিক সোজা ছিলো। বরং দু’অবস্থার মাঝামাঝি ছিলো। আর উক্ত বাবরী চুল মুবারক লম্বায় ছিলো উনার উভয় কান ও উনার উভয় কাঁধ মুবারক উনার মাঝ বরাবর।”
“নাসাঈ শরীফ” কিতাবের ২য় খণ্ডের ২৭৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
حدثنى البراء رضى الله تعالى عنه قال ما رأيت رجلا احسن فى حلة حمراء من رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ورأيت له لمة تضرب قريبا من منكبيه.
অর্থ: “রাবী বলেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন হযরত বারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি বলেন, গন্ধম রংয়ের ইয়ামানী চাদর পরিহিত অবস্থায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেয়ে অধিক সুন্দর আমি আর কোন লোককে দেখিনি। তিনি বলেন, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে লম্বা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারক অবস্থায় দেখেছি। আর উক্ত লম্বা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারক উনার দু’কাঁধ মুবারক উনার কাছাকাছি পর্যন্ত লম্বা ছিলো।”
অনুরূপ হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন এবং অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারাও যে সর্বদা বাবরী চুল মুবারক রাখতেন, তার প্রমাণও কিতাবে রয়েছে।
যেমন মিশকাত শরীফ উনার শরাহ “মিরকাত” শরীফ উনার ২য় খণ্ডের ৩৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ولا يخفى أن فعله كرم الله وجهه اذا كان مخالفا لسنته عليه الصلاة والسلام وبقية الخلفاء من عدم الحلق الا بعد فراغ النسك يكون رخصة لا سنة.
অর্থ: “এটা সুস্পষ্ট যে, নিশ্চয়ই হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার উক্ত আমল যেহেতু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং প্রথম তিন খলীফা (হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম, হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু) উনাদের সুন্নতের খিলাফ। কেননা উনারা হজ্জ ও ওমরাহ ব্যতীত কখনো মাথা মুবারক মুন্ডন করেন নাই। তাই হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার উক্ত আমল রোখছত বা ওজর হিসেবে গণ্য হবে। সুন্নত হিসেবে নয়।
“মিশকাত শরীফ” কিতাবের ৩৮৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ليس بسنته لانه صلى الله عليه وسلم مع سائر اصحابه واظب على ترك حلقه الا بعد فراغ احد النسكين فالحلق رخصة وهذا هو الاظهر.
অর্থ; “মাথা মুন্ডন করা সুন্নত নয়। কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সমস্ত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা দায়িমীভাবে বাবরী চুল মুবারক রাখতেন, হজ্জ ও ওমরাহ ব্যতীত কখনো মাথা মুবারক মুন্ডন করেন নাই। সুতরাং হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু উনার হলক করা সম্পর্কিত আমলটি রোখছত বা ওজর হিসেবে গণ্য হবে। আর এ মতটি সর্বাধিক সুস্পষ্ট বা গ্রহণ যোগ্য।
কাজেই, হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা তাদের উক্ত বক্তব্য দ্বারা এটাই স্বীকার করে নিল যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা কখনোই (হজ্জ ওমরাহ ব্যতীত) মাথা মুবারক মুন্ডন করেন নাই, বরং সর্বদাই বাবরী চুল রেখেছেন। সুতরাং যেখানে স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, খুলাফায়ে রাশেদীন এবং অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের আমল দ্বারা বাবরী চুল রাখা সুন্নত প্রমাণিত হয়, সেখানে উনাদের আমলকে উপেক্ষা করে একটি ইখতিলাফী ও রোখছতী বর্ণনাকে দলীল হিসেবে পেশ করা গোমরাহী নয় কি? (চলবে)
মুহম্মদ মুহিউদ্দীন
সভাপতি- আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত
সন্দ্বীপ শাখা, চট্টগ্রাম।
সুওয়াল : চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানী মাযহাবের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর জানুয়ারি/২০০৩-০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভগে “বিতিরের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম এবং বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব পাবে বলে উল্লেখ করেছে।” তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ, নাসায়ী থেকে দলীল হিসেবে কয়েকখানা হাদীছ শরীফও উল্লেখ করেছে।
আর হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ডিসেম্বর/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “বিতির নামাযের পর দুই রাকয়াত নফল নামায …. দাঁড়িয়ে পড়া ভাল। কারণ, নফল নামায বিনা কারণে বসে পড়লে অর্ধেক সাওয়াব হয়।”
এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা হালকী নফল নামায সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে হাদীছ শরীফগুলো উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য।
তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডসহ হালকী নফল সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব : বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায যাকে “হালকী নফল” বলা হয়, তা দাঁড়িয়ে পড়া সম্পর্কে অখ্যাত মাসিক পত্রিকাদ্বয়ের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ হয়েছে। এবং ক্ষেত্রবিশেষে কুফরীমূলক হয়েছে।
স্মর্তব্য যে, সাধারণত: নফল নামায বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব হলেও বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়াই মুস্তাহাব-সুন্নত, যা উত্তম ও পূর্ণ ছওয়াব এবং অধিক ফযীলতের কারণ।
কেননা আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায কখনও দাঁড়িয়ে আদায় করেননি। বরং বসেই আদায় করেছেন। যা সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।
(ধারাবাহিক)
উল্লেখ্য, রেযাখানীরা ‘বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ ও নাসায়ী শরীফ’ ইত্যাদি কিতাব থেকে দলীল হিসেবে যে বক্তব্য উল্লেখ করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য মোটেও সে রকম নয়। উল্লিখিত কিতাবসমূহের কোন কোন ইবারত কারচুপি করে নিজেদের বাতিল মতকে ছাবিত করার ব্যর্থ কোশেশ করেছে। তারা উল্লিখিত কিতাবের বরাত দিয়ে যে সকল মিথ্যাচারিতা, প্রতারণা ও ইবারত কারচুপির আশ্রয় নিয়েছে সেগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা ও ফায়সালা তুলে ধরে তার খণ্ডমূলক আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
রেযাখার কুফরীমূলক বক্তব্য উদঘাটন ও খণ্ড
উল্লেখ্য, রেযা খা তার রেজভীয়া” কিতাবের ৩য় খণ্ডের ৪৬১ পৃষ্ঠায় ইশার নামায বা’দ (অর্থাৎ বিতির নামাযের পর) দু’রাকায়াত নফল নামায আদায় করা সম্পর্কিত বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যরোপ করার কারণে কুফরী করেছে।
নিম্নে রেযা খার হুবহু বক্তব্য উল্লেক করা হলো- যেমন রেযা খা বলেছে,
নিম্নে রেযা খার হুবহু বক্তব্য উল্লেখ করা হলো- যেমন রেযা খা বলেছে,
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত নফল নামায বসেই আদায় করেছেন। তবে সাথে সাথে একথাও বলেছেন যে, আমি তোমাদের মত নই। আমার দাঁড়িয়ে এবং বসে নামায আদায় করা উভয়ের মধ্যেই সমান ছওয়াব। উম্মতের জন্য দাঁড়িয়ে নামায পড়া আফযল ও দ্বিগুন ছওয়াব এবং বসে পড়ার ব্যাপারেও কোন বিতর্ক নাই।”
এর জবাবে প্রথমত বলতে হয় যে, রেযা খা তার উক্ত বক্তব্যে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যরোপ করার কারণে কুফরী করেছে। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত নফল অর্থাৎ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করে সাথে সাথে একথা বলেননি যে, আমি তোমাদের মত নই।
দ্বিতীয়ত: মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত নফল অর্থাৎ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করে সাথে সাথে একথা বলেননি যে, আমার দাঁড়িয়ে এবং বসে নামায আদায় করা উভয়ের মধ্যেই সমান ছওয়াব।
তৃতীয়ত : মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত নফল অর্থাৎ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করে সাথে সাথে একথা বলেননি যে, উম্মতের জন্য দাঁড়িয়ে নামায পড়া আফযল ও দ্বিগুন ছওয়াব।
চতুর্থত : মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত নফল অর্থাৎ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করে সাথে সাথে যে, বলেছেন আমি তোমাদের মত নাই। এ ধরণের কোন ইবারতও উক্ত নফল অর্থাৎ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করা সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ নেই।
সেহেতু পাঠকের সুবিধার্থে হুবহু হাদীছ শরীফখানা আবারো উল্লেখ করা হলো, আর এতেই প্রমাণিত হবে যে রেযা খার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ধোকাপূর্ণ, প্রতারণামূলক এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মিথ্যারোপের শামিল। কেননা, “ইবনে মাজাহ শরীফ উনার” ৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن ام سلمة رضى الله عنها ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يصلى بعد الوتر ركعتين خفيفتين وهو جالس.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার হতে বর্ণিত আছে যে, আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিতর নামাযের পর সংক্ষিপ্তাকারে দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করতেন।”
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ উনার ইবারত থেকে সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হলো যে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত নফল অর্থাৎ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করেছেন। এবং উক্ত হাদীছ শরীফ-এ وهو جالس পর্যন্ত ইবারত উল্লেখ আছে।
এরপর উক্ত হাদীছ শরীফ আর কোন ইবারত উল্লেখ নেই। এবং উক্ত হাদীছ শরীফ-এ وهو جالس. এরপর আর কোন বক্তব্যও উল্লেখ নেই।
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি রেযা খার মিথ্যাচারিতা
সুতরাং রেযা খা যে বলেছে, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত নফল (অর্থাৎ বিতর নামাযের পর সাথে সাথে একথাও বলেছেন যে, আমি তোমাদের মত নই। আমার দাঁড়িয়ে এবং বসে নামায আদায় করা উভয়ের মধ্যেই সমান ছওয়াব। উম্মতের জন্য দাঁড়িয়ে নামায পড়া আফযল ও দ্বিগুন ছওয়াব।” রেযা খার এ বক্তব্য আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যরোপ করার কারণে কুফরী প্রমাণিত হলো। কেননা হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
من كذب على متعمدا فاليتبوأ مقعده من النار.
অর্থ: “যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আমার প্রতি মিথ্যা কথা বলে সে যেন তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারন করে নিল।” (বুখারী, মিশকাত)
অথচ হাদীছ শরীফ-এ
يصلى بعد الوتر ركعتين خفيفتين وهو جالس.
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিতর নামাযের পর সংক্ষিপ্তাকারে দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করতেন।” এবং উক্ত হাদীছ শরীফ-এوهو جالس. পর্যন্তই ইবারত উল্লেখ আছে।
সুতরাং وهو جالس. এর পর উক্ত হাদীছ শরীফ-এ আর কোন ইবারত উল্লেখ নেই। এবং وهو جالس. এরপর উক্ত হাদীছ শরীফ-এ আর কোন বক্তব্যও উল্লেখ নেই।
অতএব, রেযা খার উক্ত বক্তব্য যে সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও কুফরীমূলক হয়েছে তা প্রমাণিত হলো। এবং উক্ত নফল অর্থাৎ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে আদায় করা সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ উনার সঙ্গে রেযা খা তার নিজের মনগড়া বক্তব্যকে হাদীছ শরীফ উনার নামে চালিয়ে দিয়ে যে কুফরী করেছে সেটাও প্রমাণিত হলো। (চলবে)
মুহম্মদ শমসের আলী
কাছারী পাড়া, পাবনা।
সুওয়াল : আমাদের পাবনা শহরের কিছু লোক আপনাদের বহুল প্রচারিত, অকাট্য দলীলভিত্তিক মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর ‘পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে’ শিরোনামে প্রকাশিত ৯৪, ১৩২, ১৩৩, ও ১৩৪তম সংখ্যায় প্রদত্ত নি¤œলিখিত বিষয়গুলো নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা লোকদেরকে বুঝাচ্ছে যে, এ সমস্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে কুফরী ও শিরকীর অন্তর্ভুক্ত। আবার কিছু কিছু বক্তব্য সন্দেহজনক। যেমন,
…….. ৫. ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাতে’ “পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে” শিরোনামে ‘দরবার শরীফ-এ অবস্থানের আদব’ ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, “পীর ছাহেবের দরবার শরীফ-এ অবস্থানকালীন সময় অন্তরে সর্বদা একথা বদ্ধমূল রাখতে হবে।
এ দরবার শরীফ এমন আজিমুশ শান এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি মর্যাদাপূর্ণ যে, এখানে সামান্য বেয়াদবীর কারণে জীবনের সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে।”
তাহলে কি পীর ছাহেবের দরবার শরীফ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ হতেও বড়? ….
আশা করি কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনার আলোকে তাদের উত্থাপিত সেই প্রশ্নগুলোর সঠিক জাওয়াব দান করে এলাকাবাসী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্তির কবল হতে মুক্তি পাওয়ার পথ দেখাবেন।
জাওয়াব : মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৯৪, ১৩২, ১৩৩ এবং ১৩৪তম সংখ্যায় ‘ফিকহুল হাদীছ ওয়াল আছার’ বিভাগে ‘পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্কে প্রসঙ্গে’ শিরোনামে পীর ছাহেব এবং দরবার শরীফ উনার আমানতসমূহ ও তার স্বরূপ এবং গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সত্যান্বেষী ইচ্ছা নিয়ে পাঠ করলে বিষয়টি সহজেই অনুধাবনীয়। (ইনশাআল্লাহ)
আর যারা বিপরীত মন এবং মননের অধিকারী ও ইলমে তাছাউফ শূন্য বা তাছাউফ বিরোধী তারাই কেবল চিনির বলদের মত কিতাবের বোঝা বহনকারীর উপমা হয়। তারা ফিৎনা ফাসাদ সৃষ্টিকারী ও সঠিক বক্তব্যরে মনগড়া, অপব্যাখ্যা দানকারী। তাই ফিৎনাকারীদের ফিৎনা নিরসনের উদ্দেশ্য ও হক্ব তালাশীদের নিকট বিষয়টি আরো সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলার লক্ষ্যে উপরোক্ত প্রশ্নসমূহের দলীলভিত্তিক বিস্তারিত জাওয়াব ধারাবাহিকভাবে নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
(ধারাবাহিক)
৫. ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ’ “পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে” শিরোনামে ‘দরবার শরীফ-এ অবস্থানের আদব’ ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, “পীর ছাহেবের দরবার শরীফ-এ অবস্থানকালীন সময় অন্তরে সর্বদা একথা বদ্ধমূল রাখতে হবে, এ দরবার শরীফ এমন আজিমুশ শান এবং মহান মর্যাদাপূর্ণ যে, এখানে সামান্য বেয়াদবীর কারণে জীবনের সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে।”
তাহলে কি পীর ছাহেবের দরবার শরীফ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ হতেও বড়?
এর জাওয়াবে ইমাম-মুজতাহিদ এবং আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের মুখ নিসৃত বাণী উল্লেখ করতে হয়। উনাদের অভিমত- قلت علم ، قلت فهم.
‘কম জ্ঞান, কম বুঝই হচ্ছে ফিৎনার মূল।”
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তারাও আশাদুদ দরজার জাহিল। চরম মূর্খ। অন্যথায় কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের প্রকাশ্য নির্দেশ অমান্যকারী কাট্টা কাফির।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
يايها الذين امنوا لاترفعوا اصواتكم فوق صوت النبى ولاتجهروا له بالقول كجهر بعضكم لبعض ان تحبط اعمالكم وانتم لاتشعرون.
অর্থ: “হে মু’মিনগণ! তোমরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কণ্ঠস্বরের উপর তোমাদের কণ্ঠস্বরকে উঁচু করো না। আর তোমরা পরস্পর যেরূপ উঁচুস্বরে কথা বলো উনার সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা বলোনা। অন্যথায় তোমাদের অজান্তে তোমাদের আমল বরবাদ হয়ে যাবে।” (সূরা হুজুরাত-২)
আলোচ্য পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিলের পর আফজালুল নাছ বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম তিনি আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক উনার কছম! এখন থেকে বিদায় নেয়া পর্যন্ত আপনার সাথে কানাকানির অনুরূপ কথা বলবো।” (বাইহাক্বী শরীফ)
আর আমিরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এমন আস্তে কথা বলতেন যে, প্রায় পুনরায় জিজ্ঞাসা করতে হতো।
হযরত ছাবিত ইবনে কায়েস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দরবারে নব্বী শরীফ-এ আসা বন্ধই করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সু-সংবাদ পেয়ে আসা শুরু করলেন। (তাফসীরে দুররে মানছুর)
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের দরবারে নব্বী শরীফ-এ এমন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বসতেন যেন, উনাদের মাথা মুবারক উনার উপর পাখি বসে আছে। একবার বর্ণি তামীম গোত্রের কিছু লোক দরবারে নব্বী শরীফ-এ উপস্থিত হয়ে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ডাকাডাকি করলেন। উনাদের এরূপ আচরণ মহান আল্লাহ পাক উনার পছন্দ হলোনা। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
ان الذين ينادونك من وراء الحجرت اكثرهم لايعقلون.
অর্থ: “নিশ্চয়ই যারা দরবারে নব্বী শরীফ-এ উপস্থিত হয়ে আপনাকে উঁচূস্বরে ডাকে তাদের অধিকাংশই বেআক্বল।” (সূরা হুজুরাত-৪)
শুধু তাই নয়, বরং স্বেচ্চায় বা অনিচ্ছায় যেভাবে হোকনা কেন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ-এ উপস্থিত হয়ে উনার কষ্টদায়ক কোন আমল করলে জীবনের সমস্ত আমল বরবাদ তো হবেই এমনকি তার উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত বর্ষিত হবে। আবাদুল আবাদ জাহান্নামের কঠিন যন্ত্রণাদায়ক আযাবে গ্রেফতার হবে। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
ان الذين يؤذون الله ورسوله لعنهم الله فى الدنيا والاخرة واعدلهم عذابا مهينا.
অর্থ: “নিশ্চয়ই যারা মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত। আর তাদের জন্য কঠিন যন্ত্রণাদায়ক আযাব নির্ধ্বারণ করে রেখেছি।” (পবিত্র সূরা আহযাব-৫৭)
ইমাম-মুজতাহিদ আউলিয়ায়ে কিরামগণ দরবারে নব্বী শরীফ-এ আদবের প্রতি এমন গুরুত্বারোপ করেছেন এবং ভয়-ভীতি নিয়ে দরবারে নব্বী শরীফ-এ অবস্থান করতেন যে, জোড়ে জোড়ে শ্বাস পর্যন্ত গ্রহণ করতেন না।
আল্লামা ইকবাল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যথার্থই বলেছেন,
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থ: “আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ আসমানের নীচে এমন এক আদবের স্থান, যা আরশের চেয়েও সুক্ষ্ম (পবিত্র) এস্থানে হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত বাইজিদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মত ওলীগণও আদবহীনতার আশঙ্কায় বড় করে শ্বাস ফেলা হতে বিরত থাকতেন।” (যিকরে জামীল-৩১)
সেক্ষেত্রে যারা দরবার শরীফ উনার প্রতি আদব রক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করেনা তারা কত বড় কাফির তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। দুনিয়ার সকল ইমাম-মুজতাহিদ আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের স্ব স্ব কিতাবে দরবারে নব্বী শরীফ উনার আদব-ইহতিরামের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
আশিকে রসূল, রঈসুল মুহাদ্দিসীন, হযরত শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মদীনা শরীফ-এ অবস্থান বালে মাটিতে পা রাখার সময় এবং উঠানোর সময় মনে রাখতে হবে যে, এটা ঐ পবিত্র স্থান যা আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কদম মুবারক চুম্বন করেছে এবং তিনি উনার কদম মুবারক এ মাটিতে রেখেছেন। আর অন্তরে সদা-সর্বদা এ কথা জাগ্রত রাখা চাই যে, এ দরবার শরীফ এমনই আজিমুশ শান ও মহান মর্যাদাপূর্ণ যে, এখানকার সামান্য বেয়াদবীর দ্বারা যেমন (উঁচূস্বরে কথা বলা) সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যায়। (চলবে)
মুহম্মদ ইদ্রিস বিশ্বাস, দাকোপ, খুলনা।
সুওয়াল : মহিলাদের জন্য প্রকাশিত একটি তথাকথিত ইসলামী পত্রিকার এক প্রশ্নের উত্তরে লিখা হয়েছে যে, ‘পুটি কিস্তি হোক অথবা পাঁচ কল্লি হোক অথবা গোল হোক তা মাথার সাথে লেগে থাকলেই সুন্নত আদায় হবে।’
এখন আমার সুওয়াল হলো- উল্লিখিত উত্তর সঠিক হয়েছে কিনা? প্রকৃতপক্ষে কোন ধরনের টুপি খাছ সুন্নত? জানার বাসনা রাখি।
জাওয়াব : টুপি সম্পর্কিত উক্ত পত্রিকার প্রশ্নের উত্তর শুদ্ধ হয়নি। বরং তা মনগড়া, দলীলবিহীন এবং সর্বোপরি কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ ও কুফরী হয়েছে।
কারণ, একমাত্র চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপিই খাছ সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এছাড়া যত ধরনের টুপি রয়েছে তা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
প্রকাশ থাকে যে, খাছ সুন্নতী টুপি হচ্ছে ঐ টুপি, যে টুপি স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উনারা ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা পরিধান করেছেন। আর কিস্তি টুপি ও পাঁচ কল্লি টুপির তো স্পষ্ট বর্ণনাই রয়েছে। তা হচ্ছে, কিস্তি টুপি হিন্দু মারওয়ারীদের টুপি। সুতরাং তা পরিধান করা সুন্নত হয় কিভাবে? বরং তা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফ উনার অসংখ্য জায়গায় কাফির, মুশরিক, মুনাফিক ইহুদী-নাছারা তথা বিধর্মীদের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন।
যেমন এক জায়গায় তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
ولاتطع الكافرين.
অর্থ: “তোমরা কাফিরদের অনুসরণ করো না।” (পবিত্র সূরা আহযাব-১)
একইভাবে পাঁচ কল্লি টুপির প্রবর্তক হচ্ছে আকাবিরে দেওবন্দ অর্থাৎ দেওবন্দের মুরুব্বীরা। সুতরাং সেটা আবার পরিধান করা কি করে সুন্নত হতে পারে? এটাও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
واذا قيل لهم اتبعوا ما انزل الله قالوا بل نتبع ما الفينا عليه اباءنا اولو كان اباؤهم لا يعقلون شيئا ولا يهتدون.
অর্থ: “যখন তাদেরকে বলা হয়, মহান আল্লাহ পাক তিনি যা নাযিল করেছেন তোমরা তার অনুসরণ করো। তারা বলে বরং আমরা আমাদের পূর্বপুরুষ তথা মুরুব্বীদেরকে যে মতাদর্শের উপর পেয়েছি তার অনুসরণ করবো। যদিও তাদের পূর্বপুরুষ বা মুরুব্বীদের সে বিষয়ে জ্ঞান ছিলো না এবং তারা হিদায়াতপ্রাপ্তও ছিলোনা।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা-১০)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা কুরআন শরফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ মুরুব্বীদের যাবতীয় আক্বীদা ও আমল অনুসরণ করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
অতএব, কিস্তি, পাঁচ কল্লি ইত্যাদি কোন টুপিই পরিধান করা খাছ সুন্নত নয়। খাছ সুন্নতী টুপি হচ্ছে চার টুকরো বিশিষ্ট গোল, সাদা, সুতি কাপড়ের টুপি যা মাথার সাথে চতুর্দিক থেকে লেগে থাকে। (এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে পাঠ করুন মাসিক আল বাইয়্যিনাত ২য় এবং ৫৩ থেকে ৫৯তম সংখ্যা। সেখানে শতাধিক দলীলের বরাত দিয়ে খাছ সুন্নতী টুপির ফতওয়া দেয়া হয়েছে।)
{দলীলসমূহ: তিরমিযী, মাওয়াহিবুল লাদুননিয়া, আনিসুল আরওয়াহ, ফতওয়ায়ে আমীনিয়া, গোলজারে সুন্নাত ইত্যাদি।}
সৈয়দ মুহম্মদ নূরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া।
সুওয়াল : “ছলাতুত তাসবীহ” নামাযের ফযীলত ও নিয়ম জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব : “ছলাতুত তাসবীহ” নামাযের বহু ফযীলত হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে। যেমন, হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن عباس ان النبى صلى الله عليه وسلم قال للعباس بن عبد المطلب يا عباس يا عماه الا اعطيك الا امنحك الا اخبرك الا افعل بك عشر خصال اذا انت فعلت ذالك غفر الله لك ذنبك اوله واخره قديمه وحديثه خطأه وعمده صغيره وكبيره سره وعلانيته ان تصلى اربع ركعات ……. ان استطعت ان تصليها فى كل يوم مرة فافعل فان لم تفعل ففى كل جمعه مرة فان لم تفعل ففى كل سنة مرة فان لم تفعل ففى عمرك مرة.
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। একদা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আমার পিতা) হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বলেন, ‘হে হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! হে আমার চাচা! আমি কি আপনাকে দিবনা, আমি কি আপনাকে দান করবোনা, আমি কি আপনাকে বলবোনা, আমি কি আপনার সাথে করবোনা দশটি কাজ? (অর্থাৎ শিক্ষা দিবনা দশটি তাসবীহ) যখন আপনি তা আমল করবেন, মহান আল্লাহ পাক আপনার প্রথম গুণাহ, নতুন গুণাহ, অনিচ্ছাকৃত গুণাহ, ইচ্ছাকৃত গুণাহ, ছোট গুণাহ, বড় গুনাহ, গোপন গুণাহ, প্রকাশ্য গুণাহ ইত্যাদি সকল গুণাহ-খতা ক্ষমা করে দিবেন। আপনি (ছলাতুত তাসবীহ-এর চার রাকায়াত নামায পড়বেন। ….
যদি সম্ভব হয় তবে প্রতিদিন একবার এ নামায আপনি পড়বেন। যদি সম্ভব না হয় তবে সপ্তাহে একবার। তাও যদি সম্ভব না হয় তবে বৎসরে একবার। তাও যদি সম্ভব না হয় তবে জীবনে অন্তত একবার এ নামায আপনি পড়বেন।” (আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ, বায়হাকী ফী দাওয়াতিল কবীর, তিরমিযী, মিশকাত)
আর ‘ছলাতুত তাসবীহ’ নামাযের নিয়ম সম্পর্কে কিতাবে দু’টি মত উল্লেখ আছে। একটি হানাফী মাযহাব অনুযায়ী অপরটি শাফিয়ী মাযহাব অনুযায়ী।
এখানে আমাদের হানাফী নিয়মটিই উল্লেখ করা হলো-
প্রথমত, এই বলে নিয়ত করবে যে, “আমি ছলাতুত তাসবীহ-এর চার রাকায়াত সুন্নত নামায ক্বিবলামুখী হয়ে আদায় করছি।”
অতঃপর তাকবীরে তাহরীমা বেঁধে ছানা পাঠ করবে, ছানা পাঠ করে সূরা ক্বিরয়াত পাঠ করার পূর্বেই ১৫ বার নিম্নোক্ত তাসবীহ পাঠ করবে।
سبحان الله والحمد لله ولا اله الا الله والله اكبر.
উচ্চারণ : “সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।”
* অতঃপর পবিত্র সূরা ক্বিরয়াত পাঠ করে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে ১০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। * রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবীহ পাঠ করার পর ১০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। * রুকু থেকে উঠে সিজদায় যাওয়ার পূর্বে দাঁড়িয়ে ১০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। *অতঃপর সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ পাঠ করে ১০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। * সিজদার থেকে উঠে দ্বিতীয় সিজদায় যাওয়ার পূর্বে বসে ১০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। * অতঃপর দ্বিতীয় সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ পাঠ করে ১০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। * অর্থাৎ এরূপভাবে প্রতি রাকায়াত ৭৫ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে।
অতঃপর পরবর্তী রাকায়াতের জন্য দাঁড়াবে। দাঁড়িয়ে প্রথমেই ১৫ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। তারপর প্রথম রাকায়াতের মতই উক্ত তাসবীহগুলো আদায় করবে। অর্থাৎ চার রাকায়াত নামাযে মোট ৩০০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে।
স্মরনীয় যে, “ছলাতুত তাসবীহ” নামায আদায়কালীন হাতে তাসবীহ নিযে ছলাতুত তাসবীহ-এর নামাযের তাসবীহগুলো গণনা করা মাকরূহ। অঙ্গুলী টিপে টিপে তাসবীহগুলো গণনা করতে হবে।
কোন স্থানে তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে পরবর্তী তাসবীহ পাঠের সময় তা আদায় করে নিতে হবে। তবে শর্ত হচ্ছে ক্বওমা ও জলসায় উক্ত তাসবীহ আদায় করা যাবেনা। (রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাড়ানোকে কওমা বলে আর দু’সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠককে জলসা বলে) যেমন, সূরা ক্বিরয়াত পাঠের পূর্বে তাসবীহ ভুলে গেলে তা ক্বিরয়াতের পর আদায় করতে হবে। ক্বিরয়াতের পর তাসবীহ ভুলে গেলে রুকুতে আদায় করতে হবে। রুকুতে তাসবীহ ভুলে গেলে উক্ত তাসবীহ ক্বওমায় আদায় না করে প্রথম সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। ক্বওমায় তাসবীহ ভুলে গেলে তাও প্রথম সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। প্রথম সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে তা জলসায় আদায় না করে দ্বিতীয় সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। জলসায় তাসবীহ ভুলে গেলে তাও দ্বিতীয় সিজদায় আদায় করতে হবে। আর দ্বিতীয় সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে পবিত্র সূরা-ক্বিরয়াত পাঠ করার পূর্বে আদায় করে নিতে হবে। আর ভুলে যাওয়া তাসবীহ প্রত্যেক স্থানে ছলাতুত তাসবীহ-এর নির্ধারিত তাসবীহ পাঠ করার পর পাঠ করতে হবে।
{দলীলসমূহ : (১) আবূ দাউদ শরীফ, (২) ইবনে মাজাহ শরীফ, (৩) বায়হাক্বী শরীফ, (৪) তিরমিযী শরীফ, (৫) মিশকাত শরীফ, (৬) ফতহুল ক্বাদীর, (৭) বাহরুর রায়িক, (৮) মারাকিউল ফালাহ, (৯) আলমগীরী, (১০) শরহে বিক্বায়া, (১১) হিদায়া, (১২) আইনুল হিদায়া ইত্যাদি}
মুহম্মদ রুহুল কুদুস ভূইয়া, শান্তিবাগ, ঢাকা।
সুওয়াল : টেলিভিশনে দেখে এমন ব্যক্তির পিছনে ইক্তিদা করা জায়িয কিনা? দলীলসহ জানাবেন।
জাওয়াব : টেলিভিশন দেখা শরীয়তে সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। কোন ব্যক্তি যদি জায়িয মনে করে টিভি দেখে থাকে তাহলে তার পিছনে নামায পড়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
কারণ, হারামকে জায়িয মনে করা কুফরী। অর্থাৎ সে কাফির হয়ে যায়। কাফিরের পিছনে নামায আদায় করা জায়িয নেই।
আর কোন ব্যক্তি যদি হারাম জেনে টিভি দেখে থাকে তাহলে সে চরম ফাসিক। ফাসিক ইমামের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। তার পিছনে নামায আদায় করলেও তা দোহরানো ওয়াজিব। এ ধরনের ইমামের পিছনে নামায না আদায় করাই উচিত।
{দলীলসমূহ : আলমগীরী, শামী, দুররুল মুখতার, আকাইদে নছফী, আকাইদে হাক্কাহ ইত্যাদি।}
মুহম্মদ ফরহাদ আলম, রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর।
সুওয়াল : আমাদের এলাকায় কতিপয় মাওলানা এবং তাদের অনুসারীরা সিলাইবিহীন সুন্নতী লুঙ্গির বিরোধিতা করে বলে যে, ‘এটা নাকি হিন্দুদের ধুতি?’ (নাউযুবিল্লাহ) তাদের এ ধরনের বক্তব্যের শরয়ী ফায়সালা জানতে ইচ্ছুক।
জাওয়াব : আক্বাইদের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, اهانة السنة كفر. “সুন্নতকে ইহানত করা কুফরী।”
অর্থাৎ সুন্নত অস্বীকার করা, অবজ্ঞা করা, অসম্মান করা, অপছন্দ করা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা ও সুন্নতের বিরোধিতা করা ইত্যাদি প্রত্যেকটিই কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
অতএব, মুসলমান হয়ে যারা সিলাইবিহীন তথা সুন্নতী লুঙ্গির বিরোধিতা বশত: হিন্দুর ধুতির সাথে তুলনা করবে তারা ঈমান ও ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদ হয়ে যাবে। শরীয়তে মুরতাদের শাস্তি হচ্ছে- তার যিন্দিগীর সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। বিয়ে করে থাকলে তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। হজ্জ করে থাকলে তা বাতিল হয়ে যাবে। তার ওয়ারিছ সত্ত্ব বাতিল হয়ে যাবে। তার তওবার জন্য সময়সীমা হচ্ছে তিনদিন। এর মধ্যে তওবা না করলে ইসলামী খিলাফতের তরফ থেকে তার একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদ-। সে মারা গেলে তার জানাযা, দাফন, কাফন কোনটিই জায়িয নেই। বরং তাকে কুকুর-শৃগালের মতো পূঁতে রাখতে হবে।
(দলীলসমূহ : বুখারী, ফতহুল বারী, শামায়িলে তিরমিযী, জামউল ওসায়িল, আকাইদে নছফী।}
মাওলানা মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হুসাইন, নরসিংদী।
সুওয়াল : জনৈক হাফিয ছাহেব দাড়িতে কলপ (খেযাব) লাগান। তিনি তারাবীহর নামাযের ইমামতি করতে পারবেন কিনা? দলীলসহ জানতে চাই।
জাওয়াব : কলপ বা খেযাব লাগানো জায়িয নেই। হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
من خضب بالسواد سود الله وجهه يوم القيامة.
অর্থ: “যে ব্যক্তি কালো খেযাব বা কলপ ব্যবহার করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্বিয়ামতের দিন তার চেহারাকে কালো করে দিবেন।” (তিবরানী শরীফ) অন্য হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “যারা কালো খেযাব ব্যবহার করবে তারা জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।” (আবূ দাউদ শরীফ)
আর বর্তমান বাজারে যে কলপ পাওয়া যায় তা লাগালে চুলের মধ্যে নেইল পালিশের মতো আবরণ বা প্রলেপ পড়ে থাকে। সুতরাং তা লাগালে অযূ-গোসল কোনটিই শুদ্ধ হবেনা।
অতএব, দাড়ি বা চুলে কলপ লাগানো ব্যক্তির ইমামতির তো প্রশ্নই আসতে পারে না। কারণ সে সর্বদাই নাপাক অবস্থার মধ্যে অতিবাহিত করে থাকে। মহান আল্লাহ পাক তিনি না করুন এ অবস্থায় কোন ব্যক্তি ইন্তিকাল করলে তার জানাযার নামায পর্যন্ত পড়া জায়িয নেই। কারণ, জানাযা পড়ানোর জন্য পবিত্র করানো শর্ত।
সুতরাং জানাযা পড়াতে হলে চুল, দাড়ি চেছে তারপর জানাযা পড়াতে হবে। এটাই শরীয়তের মাসয়ালা। (এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৯৫তম সংখ্যা পাঠ করুন।)
(দলীলসমূহ : মুসলিম, তিরমিযী, আবূ দাউদ, নাসাঈ, তিবরানী, মিশকাত ইত্যাদি।)
আমীন আহমদ, জেলা সদর, বগুড়া।
সুওয়াল : হানাফী মাযহাবের লোক শাফিয়ী মাযহাবে গিয়ে রফা ইয়াদাইন করা জায়িয আছে কি?
জাওয়াব : হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী প্রতিটি মাযহাবই কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটিই হক্ব ও মকবুল এবং এর অনুসারীরাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত।
উল্লেখ্য, এক মাযহাব থেকে অন্য মাযহাবে যাওয়া জায়িয নেই। একইভাবে এক মাযহাবের লোক অন্য মাযহাবের অনুসরণ করাও জায়িয নেই।
অতএব, এ মাযহাবের লোক অন্য মাযহাবের লোকের পিছনে যখন নামায আদায় করবে তখন ইমাম-মুক্তাদী প্রত্যেককেই নিজ নিজ মাযহাব অনুযায়ী নামায আদায় করতে হবে।
{দলীলসমূহ : অতাফসীরে আযীযী, তাফসীরে আহমদিয়াত, জামউল জাওয়ামি আল মুসাল্লাম, যাজিযুল মাযাহিব ইত্যাদি।}
মুহম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম (বাবু), নূরপুর, রংপুর।
সুওয়াল : আমাদের মধ্যে একটি ধারনা রয়েছে যে, মাগরিবের নামায আযানের একদম সাথে সাথে পড়তে হয়। অর্থাৎ আমাদের ধারনা মতে মাগরিবের নামাযের ওয়াক্ত ৫-১০ মিনিট থাকে। এ কারণে ১০ মিনিট অতিক্রান্ত হলে আমরা আর মাগরিবের নামায পড়িনা। আমাদের এ ধারনা সত্যি সত্যিই ঠিক কিনা? জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব ; উল্লিখিত ধারণা ঠিক নয়। আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর ‘শফকে আহমার’ অর্থাৎ লাল আভা অতঃপর ‘শফকে আবইয়াদ’ অর্থাৎ সাদা আভা যতক্ষণ পর্যন্ত পশ্চিমাকাশে বিদ্যমান থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত মাগরিব নামাযের ওয়াক্ত বা সময়।
সে হিসেবে ঘড়ির সময় অনুযায়ী প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা মাগরিবের নামাযের সময়।
{দলীলসমূহ : মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, আলমগীরী, শামী, তরীকুল ইসলাম, শামী ইত্যাদি।}
মুহম্মদ আব্দুর রহিম, কল্যাণপুর, ঢাকা।
সুওয়াল : গত ১৮ই আগস্ট দৈনিক নয়া দিগন্তে একটি রিপোর্টের বোমা হামলার ক্ষেত্রে আল বাইয়্যিনাত-এর নাম এসেছে। এ সম্পর্কে জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব : নয়া দিগন্তের উক্ত রিপোর্ট আদৌ সত্য নয়। কারণ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেই প্রথম মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ এর বিরুদ্ধে ফতওয়া দেয়া হয়েছে। মাসিক আল বাইয়্যিনাত সব সময়ই মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও বোমাবাজদের বিরুদ্ধে ক্ষুরধার লিখনী চালিয়ে আসছে। তারপরেও মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর বিরুদ্ধে এরূপ রটনা প্রকাশ্য অপবাদ রটনার শামিল।
উল্লেখ্য, ‘গীবত’ হচ্ছে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার শামিল। আর ‘অপবাদ’ তার চেয়েও ভয়াবহ। যদিও দৈনিক নয়া দিগন্ত পরদিন আল বাইয়্যিনাত-এর প্রতিবাদ ছাপিয়েছে। কিন্তু তারপরেও বলতে হয় যে, তারা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আল বাইয়্যিনাত-এর নামে অপবাদ রটনা করতে চেয়েছিল। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি তা সফল হতে দেননি। নীচে নয়া দিগন্তের পরদিনের পত্রস্থ প্রতিবাদ দেয়া হলো –
প্রকাশিত খবর প্রসঙ্গে
গত ১৮ আগস্ট ‘বোমা হামলার উৎস সন্ধানে মাঠে নেমেছে সব ক’টি গোয়েন্দা সংস্থা’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের একটি অংশের প্রতিবাদ করেছেন আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় আহব্বায়ক আল্লামা মাহবুব আলম। প্রতিবাদলিপিতে তিনি বলেছেন, আল বাইয়্যিনাত শুরু থেকে মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ তথা বোমা হামলার বিরুদ্ধে। …. (দৈনিক নয়া দিগন্ত ২০-০৮-৫ই পৃষ্ঠা ২, ক: ৪)
উল্লেখ্য মাসিক আল বাইয়্যিনাত তথা আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত বোমা হামলার যে নিন্দা ও প্রতিবাদ জ্ঞাপন করেছে তা ২০-০৮-০৫ তারিখে দৈনিক ইত্তেফাক শেষ পৃষ্ঠা, দৈনিক সংবাদ ২য় পৃষ্ঠা, ২১-০৮-০৫ তারিখে দৈনিক যুগান্তর ১৪ পৃষ্ঠা ও দৈনিক সমকাল ১৫ পৃষ্ঠায় এসেছে।