সুওয়াল জাওয়াব

সংখ্যা: ১৪৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

ক্বারী মুহম্মদ আব্দুল বারী, গোড়ান, ঢাকা।

মুহম্মদ সোহেলুর রহমান, রামপুরা, ঢাকা।

সুওয়ালঃ সম্প্রতি ‘আহলে হাদীছ লাইব্রেরী ঢাকা’ -এর সৌজন্যে প্রকাশিত একটি হ্যান্ডবিলে ‘শবে বরাত’ সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক কতিপয় উক্তি করা হয়েছে। কুরআন-সুন্নাহ্র নিরিখে সেসব কতটুকু সঠিক তা আপনাদের বহুল পঠিত, তাজদীদী মুখপত্র ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশ করলে বিভ্রান্তির নিরসণ হতো এবং সঠিক বিষয়টি উন্মোচিত হয়ে আওয়ামুন্ নাস খুবই উপকৃত হতো। আপনাদের জ্ঞাতার্থে হ্যান্ডবিলের একটি মূল কপি প্রেরণ করা হলো। এতে আমাদের মনে যেসব প্রশ্নের উদয় হয়েছে তাহলো- ১. শবে বরাত কি? শবে বরাত-এর অর্থ কি? অর্ধেক ফারসী আর অর্ধেক আরবী সহযোগে শরীয়তে কোন নাম হতে পারে কি-না? শবে বরাত সম্পর্কে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে কোন তথ্য পাওয়া যায় কি-না? ২. কখন থেকে শবে বরাত শুরু হয়? শবে বরাত সম্পর্কে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন নির্দেশ-বাণী আছে কি-না? ৩. অর্ধ শা’বানের রাতটি ভাগ্য রজনী নামে নামকরণ কি বিদ্য়াত? ৪. নফল ইবাদতের মাধ্যমে রাত্রি জাগরণ ও দিনের বেলায় রোযা পালন করা কি বিদ্য়াত? ৫. এর সমর্থনে সূরা দুখানের ৩-৪নং আয়াত শরীফ পেশ করা সঠিক কি-না? ‘লাইলাতুম্ মুবারাকাহ্’ বলতে ‘লাইলাতুল ক্বদরকে’ বুঝানো হয়েছে? না ‘শবে বরাতকে’ বুঝানো হয়েছে? ৬. শবে বরাতে রিযিক বৃদ্ধি করা হয় এবং কতজন জন্মগ্রহণ করবে ও কতজন মৃত্যুবরণ করবে তা ধার্য্য করা হয়। এটা কুরআন-সুন্নাহ্ সম্মত কি-না? ৭. অর্ধ শা’বানের রাতে আলফিয়াহ বা রাগায়িব নামক কোন নামায আছে কি-না? ৮. অর্ধ শা’বানের রাতে কবর যিয়ারত করা নাকি বিদ্য়াত? ৯. হালুয়া-রুটি ও রকমারি খাদ্য প্রস্তুত করা ও বিলি করা নাকি বিদ্য়াত?  ১০. অর্ধ শা’বান উপলক্ষে আয়োজিত মাহ্ফিল বিদয়াত কি-না? ১১. শবে বরাত উপলক্ষে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালত ছুটি ঘোষণা করা নাকি বিদ্য়াত চর্চার সুযোগ দেয়া? ১২. সউদী আরবের দারুল ইফতার সাবেক প্রধান ‘আব্দুল আযীয আব্দুল্লাহ বিন বায’-এর  শবে বরাত পালন করা ও এদিনে রোযা রাখা বিদ্য়াত বলে অভিহিত করা কতটুকু সঠিক? আশা করি উল্লিখিত প্রশ্নসমূহের দলীলভিত্তিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ মহান আল্লাহ পাক স্বীয় কালাম পাকে ইরশাদ করেন,

فسئلوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون.

অর্থঃ- “তোমরা আহলে যিকির তথা আল্লাহওয়ালাগণকে জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জান।” (সূরা আম্বিয়া-৭) যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত উপরোক্ত আয়াত শরীফের হাক্বীক্বী মিছদাক। আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন-এর লক্ষ্যস্থল ওলী, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ওসীলায় এ পত্রিকাটি উম্মাহ্র জন্য শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত যার প্রতিটি লিখাই আক্বীদা-আমল হিফাযতকারী ও পরিশুদ্ধকারী। প্রসঙ্গতঃ সুওয়ালে উল্লিখিত প্রশ্নসমূহের ধারাবাহিক জাওয়াব পেশ করা হলো-

(ধারাবাহিক)

৯. হালুয়া-রুটি ও রকমারি খাদ্য প্রস্তুত করা ও বিলি করা নাকি বিদ্য়াত? এর জবাব হলো, না, শবে বরাতে হালুয়া-রুটি ও রকমারি খাদ্য প্রস্তুত করা ও বিলি করা বিদ্য়াত ও নাজায়িয কোনটিই নয়। বরং তা সম্মূর্ণরূপে শরীয়ত তথা কুরআন-সুন্নাহ সম্মত ও অশেষ ছওয়াব বা নেকীর কারণ। শবে  বরাত উপলক্ষে বিশেষ করে আমাদের  দেশ ও তার আশ-পাশের দেশসমূহে যে রুটি হালুয়ার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে তার পিছনে ইতিহাস রয়েছে।

ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্ববর্তী যামানায় বর্তমানের মতো বাজার, বন্দর, হোটেল-রেস্তরা ইত্যাদি সর্বত্র ছিলনা। তখন মানুষ সাধারণতঃ সরাইখানা, লঙ্গরখানা, মুছাফিরখানা ইত্যাদিতে ছফর অবস্থায় প্রয়োজনে রাত্রিযাপন করতেন। অর্থাৎ মুছাফিরগণ তাদের ছফর অবস্থায় চলার পথে আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত জনের ঘর-বাড়ি না পেলে সাধারণতঃ সরাইখানা, মুছাফিরখানা ও লঙ্গরখানায় রাত্রিযাপন করতেন। আর এ সমস্ত মুসাফিরখানা, লঙ্গরখানা ও সরাইখানার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত থাকতেন তারাই মুছাফিরদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন।

বিশেষ করে মুছাফিরগণ শ’বে বরাতে যখন উল্লিখিত স্থানসমূহে রাত্রি যাপন করতেন তাদের মধ্যে অনেকেই রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করতেন ও দিনে রোযা রাখতেন। যার কারণে উল্লিখিত স্থানসমূহের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ খাবারের ব্যবস্থা করতেন যাতে মুসাফিরদের রাত্রে ইবাদত-বন্দেগী করতে ও দিনে রোযা রাখতে অসুবিধা না হয়।

আর যেহেতু হালুয়া-রুটি ও গোশ্ত-রুটি খাওয়া সুন্নত সেহেতু তারা হালুয়া-রুটি বা গোশ্ত-রুটির ব্যবস্থা করতেন। এছাড়াও আরবীয় এলাকার লোকদের প্রধান খাদ্য রুটি-হালুয়া বা রুটি-গোশ্ত। তারা ভাত, মাছ, ইত্যাদি খেতে অভ্যস্ত নয়। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে শ’বে বরাত উপলক্ষ্যে হালুয়া রুটির প্রচলন আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

উল্লেখ্য, প্রত্যেক আমলের ক্ষেত্রেই বদ্ রছম বা বদ প্রথার অনুসরণ করা জায়েয নেই।     এখন মাসয়ালা হচ্ছে- কেউ যদি শ’বে বরাত উপলক্ষে রছম রেওয়াজ না করে বা নিজের ইবাদত-বন্দেগীর ব্যাঘাত না ঘটিয়ে উক্ত হালুয়া-রুটির ব্যবস্থা করে তাহলে তা অবশ্যই জায়িয।           শুধু তাই নয় বরং যদি কেউ তার নিজের ইবাদত-বন্দেগী ঠিক রেখে অন্যান্যদের জন্য যারা রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করবে ও দিনে রোযা রাখবে তাদের ইবাদত-বন্দেগী ও রোযা পালনের সুবিধার্থে হালুয়া-রুটি বা গোশ্ত-রুটি অথবা আমাদের দেশে প্রচলিত খাদ্যসমূহের কোন প্রকারের খাদ্যের ব্যবস্থা করে তা অবশ্যই  নেকীর কারণ হবে।

হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن عبد الله بن سلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يايها الناس افشوا السلام والطعموا الطعام وصلوا الارحام وصلوا باليال والناس نيام تدخلوا الجنة بسلام.

অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রচলন কর, মানুষকে খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তার সর্ম্পক রক্ষা কর এবং রাতের বেলায় মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড় তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্, দারিমী) তবে সতর্ক থাকতে হবে যে, এই কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে যাতে এমন পরিশ্রম তথা এমন সময় ব্যয় না হয় যাতে করে কারো শবে বরাতের ইবাদতে ঘাটতি হয়। আরো উল্লেখ্য যে, খাদ্য বিতরণ যেন আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে বরং এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন অভাবগ্রস্তদের প্রাধান্য দেয়া হয়।

অতএব প্রমাণিত হলো যে, শবে বরাতে লোকদের ইবাদত-বন্দেগী ও রোযা পালনের সুবিধার্থে হালুয়া-রুটি ও রকমারি খাদ্যের ব্যবস্থা করা সম্মূর্ণরূপে কুরআন ও সুন্নাহ সম্মত। আর কুরআন-সুন্নাহ সম্মত বিষয়কে বিদ্য়াত তথা নাজায়িয বলা শক্ত কুফরী। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

يايها الذين امنوا لاتحرموا طيبت ما احل الله لكم.

অর্থঃ “হে মুমিনগণ! আল্লাহ পাক তোমাদের জন্য যা হালাল (জায়িয) করেছেন তোমরা তা হারাম (নাজায়িয বা বিদ্য়াত) সাব্যস্ত করনা।” (সূরা মায়িদাহ-৮৭) কাজেই, মুসলমানগণকে কথা বলতে হলে যবান সামলিয়ে কথা বলতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে, কোনভাবেই যেন তার দ্বারা কুফরীমূলক আমল বা বক্তব্য সংঘটিত না হয়। যদি হয় তাহলে সে মু’মিন -মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদ ও কাফিরে পরিণত হবে এবং পরিণামে সে আযাব-গযবে গ্রেফতার হযে যাবে। (চলবে)

খন্দকার সেলিম আহমদ

পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল।

সুওয়ালঃ  হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী/২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত মীলাদ-ক্বিয়ামের সমালোচনা করতে গিয়ে যে বক্তব্যগুলো পেশ করেছে তন্মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

১. প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি নাজায়েয। কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ,  ইজমা, কিয়াসে এর কোন প্রমাণ নেই। বরং বূযুর্গদের আমল দ্বারা প্রমাণিত। তাই যদি কেউ মহাবুযুর্গ হন, কুরআন সুন্নাহর মুকাবিলায় তার আমল দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।

২. বাদশাহ  মুজাফ্ফার উদ্দিন কৌকুরী এবং খাজা তক্বী উদ্দীন সুবকী যারা এই মীলাদ- ক্বিয়ামের প্রবর্তন করেন তাদের এ আমলটি কুরআন সুন্নাহর বিরোধী বিধায় তা শরীয়তের দলীল হিসেবে গ্রহণ যোগ্য নয়।

৩. নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানে ক্বিয়াম করার প্রমাণ হাদীছ শরীফে উল্লেখ নেই। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানে ক্বিয়াম করেননি। (নাউযুবিল্লাহ)

৪. বরং মিশকাত শরীফে বর্ণিত হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সম্মানে দাঁড়ানোকে অপছন্দ করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ)

৫. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবে-তাবিয়ীন, চার মাযহাবের ইমাম রহতুল্লাহি আলাইহিমগণ থেকে নিয়ে শুরু করে ৭০০ (সাতশত) বছর পর্যন্ত কোন নবী প্রেমিক নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে বা মুহববতে ক্বিয়াম করেননি।

৬. পীর, ওস্তাদ, পিতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী প্রমুখ সম্মানিত ব্যক্তিগণের সম্মানে দাঁড়ানো জায়িয। কারণ, তারা সামনে উপস্থিত। আর মীলাদে দাঁড়ানো জায়িয নেই। কারণ, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুপস্থিত।  (নাউযুবিল্লাহ)

৭. একজন নবীর পক্ষে একাধিক মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া সম্ভব নয়। (নাউযুবিল্লাহ)

এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী, যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহ্ েতাহ্রীমি। আইম্মায়ে মুজতাহিদীন কারো থেকে এই প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম প্রমাণিত নয়। তাছাড়া মীলাদ ও ক্বিয়াম সম্পর্কে কোন প্রকার হাদীসও বর্ণিত নেই। …..”

আর মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ হাসানা তথা ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং সায়্যিয়া অর্থাৎ মন্দ কাজের শামিল। কেননা, হাসানা বা সায়্যিয়ার বিবেচনা কুরআন সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে হতে হবে, সাধারণ চর্ম চোখে নয়। সমাজে বহুল প্রচলিত যে মীলাদ দেখা যায়, তা সম্পূর্ণ কুরআন সুন্নাহ্র খিলাফ, যা কোন দিন ভালো কাজ হতে পারে না” ….. “বর্তমানে প্রচলিত মীলাদের মধ্যে এমন কিছু দিক বা ধারা রয়েছে, যেগুলো শরীয়ত মনোনীত নয়। যেমন, মীলাদকে দ্বীন মনে করা, শরীয়ত অনুমোদিত নয়- এমন দরূদ সকলে মিলে এক সাথে উচ্চঃস্বরে পড়া ইত্যাদি। তাছাড়া এমন মীলাদ নবীজীর এবং সোনালী তিন যুগের কোন যুগে ছিল না বিধায় তা বিদআতের নামান্তর, যা পরিহার করা আবশ্যক।”

এছাড়া মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।

উল্লিখিত বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে তারা তাদের নিজেদের লিখিত কিছু কিতাবের নাম উল্লেখ করেছে যা মুতাবার বা নির্ভরযোগ্য নয়; অনুসরনীয় ইমাম মুজতাহিদগণের কিতাব থেকে কোন কিতাবের নাম দলীল হিসেবে উল্লেখ করেনি বা করতে পারেনি।  এখন আমার সুওয়াল হলো, প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীল সম্মত? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াবঃ প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কে হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে এবং অপর একটি পত্রিকার প্রশ্নোত্তর বিভাগে যা বলা  হয়েছে তা শুদ্ধতো হয়নি বরং সম্পূর্ণই ডাহামিথ্যা, ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহ্গণের সর্বজনমান্য ও স্বীকৃত বিশ্ববিখ্যাত ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাব সমূহের বক্তব্যের বিপরীত ও বিরুদ্ধমত। যা   ইতোপূর্বে আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ”-এর অনেক সংখ্যায় খণ্ডন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। আর ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ’-এর জাওয়াবকে খণ্ডন করা হাটহাজারী মৌলভী সাহেবদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ্।

দ্বিতীয়তঃ আমাদের “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ, রাজারবাগ শরীফ-এর পক্ষ থেকে মীলাদ-ক্বিয়াম বিরোধীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ দেয়া হয় যে, “কেউ যদি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস দ্বারা মীলাদ-ক্বিয়াম নাজায়িয প্রমাণ করতে পারে, তাহলে তাকে দুই হাজার পাউন্ড পুরস্কার দেয়া হবে।”  কিন্তু এখন পর্যন্ত মীলাদ-ক্বিয়াম বিরোধীতাকারীরা ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ’-এর সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণের হিম্মত দেখাতে সমর্থ হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ্।   এরপরেও হাটহাজারীর মৌলভী সাহেব এবং তাদের সকল সমজাতীয়রা বারবার মীলাদ ক্বিয়াম সম্পর্কে বিনা তাহক্বীকে ও বিনা দলীলে উক্ত ভুলেরই পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে।

যেমন, উল্লিখিত প্রথম বক্তব্যের প্রথমেই  তারা বলেছে, “প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি নাজায়েয।” এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই দলীলবিহীন, ডাহামিথ্যা ও কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ, কুরআন শরীফের কোন্ আয়াত শরীফে প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি নাজায়িয বলা হয়েছে এবং হাদীছ শরীফের কোন্ হাদীছ শরীফে প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি নাজায়িয বলা হয়েছে, এবং ইজমা- ক্বিয়াসের কোথায়, কোন্ ইবারতে প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি নাজায়িয বলা হয়েছে, তা হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা ও ক্বিয়াসের ইবারতসহ দলীল উল্লেখ করেনি।

সুতরাং তাদের দলীলবিহীন, ইবারতবিহীন, মনগড়া ও ডাহামিথ্যা বক্তব্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, মহান আল্লাহ্ পাক বলেছেন,

هاتوا برهانكم ان كنتم صدقين.

অর্থঃ- “যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক, তাহলে দলীল-প্রমাণ পেশ কর।” (সূরা বাক্বারা-১১১) আর মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ পাক-এর লা’নত। কারণ আল্লাহ পাক বলেন,

لعنت الله على الكذبين.

অর্থঃ- “মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ পাক-এর লা’নত।” (সূরা আলে ইমরান-৬১)

(ধারাবাহিক)

বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম নাজায়িয নয়

উল্লেখ্য, প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম যে নাজায়িয নয়। বরং প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি অবশ্যই একটি শরীয়তসম্মত ইবাদত। যা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ,  ইজমা,  কিয়াস  এবং বূযুর্গদের আমল দ্বারাও প্রমাণিত। আর বূযুর্গদের আমল যদি কুরআন সুন্নাহ সম্মত হয়, তাহলে বূযুর্গদের আমলও দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য। তাই ফতওয়া দেয়া হয়েছে, প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম সুন্নতে উম্মত, মুস্তাহাসান।

নিম্নে  কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা, ক্বিয়াস  এবং বূযুর্গদের আমল দ্বারা প্রমাণিত বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হলো-

স্মরণীয় যে, প্রচলিত মীলাদ ক্বিয়ামের মূল উদ্দেশ্য হলো সংক্ষেপে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছানা-ছিফত ও বিলাদত শরীফ সম্পর্কে আলোচনা করা এবং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করা।

এক কথায় মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম বলতে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত ও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নুরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছানা-ছিফত, তা’রীফ, প্রশংসা, তাঁর মু’জিযা বর্ণনা, বিলাদত শরীফের আলোচনা, না’ত, শে’র, কাছিদা পাঠ ও তাঁর প্রতি ছলাত ও সালাম প্রেরণ করা ইত্যাদি পাঠ করা হয়।

যেমন- “মীলাদ শরীফের প্রথমেই কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা হয়। কেননা, কোন নেক কাজ কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু করা রহ্মত, বরকত তথা আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টি লাভের কারণ। সেহেতু প্রথমেই পবিত্র কালামে পাক হতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফযীলত সম্বলিত আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করা হয়। যাতে স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এরই মীলাদ বা ছানা-ছিফত বর্ণনা করা হয়েছে।  যেমন, ইরশাদ হয়েছে,

لقد جاءكم رسول من النفسكم الخ.

অর্থঃ- “অবশ্যই তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য থেকে একজন রসূল আগমন করছেন. …।” (সূরা তওবা-১২৮)

ما كان محمد ابا احد من رجالكم ولكن رسول الله وخاتم النبين وكان الله بكل شئ عليما.

অর্থঃ- “মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নন। বরং তিনি হলেন আল্লাহ্ পাক-এর রসূল এবং শেষ নবী। আর আল্লাহ্ পাক সব বিষয় সম্পর্কে অবগত আছেন।” (সূরা আহযাব-৪০)

يايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما.

অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার হাবীব (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি ছলাত ও সালাম পাঠ কর পাঠ করার মত।” (সূরা আহযাব-৫৬) ইত্যাদি কুরআন শরীফের  আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করা হয়।

আর কুরআন শরীফ তিলাওয়াত সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

انما المؤمنون الذين اذا ذكر الله وجلت قلوبهم واذا تليت عليهم ايته زادتهم ايمانا وعلى ربهم يتوكلون.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই মু’মিনগণের বৈশিষ্ট হচ্ছে, যখন তাদের নিকট আল্লাহ্ পাক-এর যিক্র বা আলোচনা করা হয়, তখন তাদের অন্তরগুলো বিগলিত হয় (আল্লাহ্ভীতি পয়দা হয়।) অর্থাৎ আল্লাহ্ভীতি পয়দা হয় এবং তাদের নিকট যখন আয়াত সমূহ তিলাওয়াত করা হয় তখন তাদের ঈমান (ঈমানী কুওওয়াত) বৃদ্ধি হয় এবং তারা একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি তাওয়াক্কুল করে থাকে।” (সূরা আনফাল-২)

واذا قرئ القران فاستمعوا له وانصتوا.

অর্থঃ- “যখন কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা হয়, তখন তোমরা চুপ থেকে তা মনোযোগের সাথে শ্রবণ কর। অবশ্যই তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হবে।” (সূরা আ’রাফ-২০৪) আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

وعليك بتلوات القران فانه نور لك فى الارض وزخرلك فى السماء.

অর্থঃ- “কুরআন শরীফ তিলাওয়াত কর। নিশ্চয়ই সেটা ইহকালে তোমার জন্য নূর (হিদায়েত) হবে এবং পরকালে তোমার জন্য পুঁজি বা নাজাতের জরিয়া হবে।         হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن ابن مسعود رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قرء حرفا من كتاب الله فله به حسنة والحسنة بعشر امثالها ولااقول الم حرف بل الف حرف لام حرف ميم حرف.

অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কালামুল্লাহ শরীফের একটি অক্ষর তিলাওয়াত করবে তার জন্য নেকী রয়েছে। আর সে নেকীটা হচ্ছে (কমপক্ষে) দশগুণ। আমি বলিনা, আলিফ-লাম-মীম একটি অক্ষর। বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর, মীম একটি অক্ষর।” (তিরমিযী, দারিমী, মিশকাত)

আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন,

افضل عبادة امتى قرائة القران.

অর্থঃ- “আমার উম্মতের ইবাদতসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত হলো কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা।” (দাইলামী, বাইহাক্বী, কানযুল উম্মাল) মহান আল্লাহ্ তাঁর যিকির সম্পর্কে ইরশাদ করেন,

وذكروا الله كثيرا لعلكم تفلحون.

অর্থঃ- “তোমরা বেশী বেশী আল্লাহ্ পাক-এর যিকির কর। তাহলে অবশ্যই তোমরা কামিয়াবী লাভ করবে।” (সূরা জুমুয়া-১০)

فاذكرونى اذكركم.

অর্থঃ- “তোমরা আমার যিকির কর আমিও তোমাদের স্মরণ করব।” (সূরা বাক্বারা-১৫২)

আল্লাহ্ পাক হাদীছে কুদূসী শরীফে ইরশাদ করেন,

وانا معه اذا ذكرنى.

অর্থঃ- “বান্দা যখন আমার যিকির করে তখন আমি তার সাথে থাকি।” (বুখারী, মিশকাত)

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

اذا مررتم برياض الجنة فارتعوا قالوا وما رياض الجنة قال حلق الذكر.

অর্থঃ- “যখন তোমরা কোথাও বেহেশ্তের বাগান দেখতে পাবে তখন সেখান থেকে ফায়দা হাছিল কর। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ জিজ্ঞাসা করলেন, বেহেশতের বাগান কি? তিনি বললেন, যিকির মজলিস।” (বুখারী, মিশকাত) অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর ছলাত পাঠ করা হয়।  কারণ ছলাত পাঠ করা আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এরই নির্দেশ।

ছলাত-সালাম পাঠ সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

ان الله وملئكته يصلون على النبى يايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক এবং তাঁর ফেরেশ্তারা নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ছলাত (দরূদ শরীফ) পাঠ করেন। (হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি ছলাত পাঠ কর এবং সালাম দেয়ার মত সালাম দাও অর্থাৎ আদবের সাথে সালাম দাও।” (সূরা আহ্যাব-৫৬)

হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

من صلى على صلوة واحدة صلى الله عليه عشر صلوات وحطت عنه عشر خطيئات ورفعت له عشر درجات.

 অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার ছলাত  (দরূদ শরীফ) পাঠক করবে আল্লাহ্ পাক তার প্রতি দশটি রহমত নাযিল করবেন, তার দশটি গুণাহ্ ক্ষমা করবেন এবং তার দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন।” (নাসাঈ, মিশকাত) হাদীছ শরীফে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন,

من صلى على مائة كتب الله بين عينيه براءة من النفاق وبراءة من النار.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আমার প্রতি একশবার দরূদ শরীফ পাঠ করবে আল্লাহ্ পাক তাঁর দু’চোখের মাঝখানে কুদরতিভাবে লিখে দিবেন, তাকে মুনাফিকী ও জাহান্নামী থেকে মুক্তি দেয়া হলো।” (তবারানী, ছগীর)

ذكر الانبياء من العبادة.

 অর্থঃ- “নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর আলোচনা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।” (দাইলামী)

ما جلس قوم مجلسا لم يذكروا الله تعالى فيه ولم يصلوا على نبيه صلى الله عليه وسلم الا كان عليهم من الله ترة يوم القيامة فان شاء عذبهم وان شاء غفرلهم.

অর্থঃ- “কোথাও যদি লোকজন কোন মজলিসে একত্রিত হয় বা বসে অথচ তারা সেখানে আল্লাহ্ পাক-এর যিকিরও করেনা এবং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি দরূদ শরীফও পাঠ করেনা। তাহলে ঐ সকল লোকের জন্য আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে ক্বিয়ামত দিবসে অনুতাপের কারণ হবে এবং আল্লাহ্ পাক ইচ্ছা করলে তাদেরকে শাস্তি দিবেন এবং ইচ্ছা করলে তাদেরকে ক্ষমা করবেন।”

ما اجتمع قوم فى بيت من بيوت الله يتلون كتاب الله ويتدارسونه بينهم الا نزلت عليهم السكينة وغشيتهم الرحمة وحفتهم الملئكة وذكرهم الله فيمن عنده.

অর্থঃ- “যখন কোন এলাকার লোক আল্লাহ্ পাক-এর ঘরে অথবা কোন স্থানে একত্রিত হয়ে আল্লাহ্ পাক-এর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পরস্পর দ্বীনি আলোচনা করে তখন আল্লাহ্ পাক-এর রহমতের ফেরেশতারা তাদের বেষ্টন করে নেন, আল্লাহ্ পাক-এর রহমত তাদের উপর ছেঁয়ে যায় এবং তাদের উপর আল্লাহ্ পাক-এর নিকট হতে শান্তি বর্ষিত হয় এবং স্বয়ং আল্লাহ্ পাক রব্বুল আলামীন তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশ্তাদের সাথে সেই মাহ্ফিলের লোকদের সম্পর্কে আলোচনা করেন।” (মিশকাত)  সুতরাং মহান আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশ صلوا عليه. (তোমরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর দরূদ শরীফ পাঠ কর) এ আয়াত শরীফের নির্দেশ পালনার্থে এবং হাদীছ শরীফে দরূদ শরীফের প্রতি গুরুত্ব অনুধাবন করে মীলাদ শরীফে কুরআন শরীফ এবং দরূদ শরীফ পাঠ করা হয়। উপরোক্ত জবাব থেকে একথা প্রমাণিত হচ্ছে যে, আল্লাহ্ পাক কালামুল্লাহ্ শরীফে আর আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীস শরীফে পর্যায়ক্রমে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, যিকরুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করা ও ফাযায়িল-ফযীলত বর্ণনা করা ইত্যাদি সম্পর্কে আদেশ দিয়েছেন, নির্দেশ করেছেন ও গুরুত্বারোপ করেছেন। এক কথায় মীলাদ মাহ্ফিলে তাই করা হয়। তাহলে এত দলীল-আদিল্লাহ্ থাকার পরও কি করে একথা বলা যেতে পারে, “বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ হাসানা তথা ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং সায়্যিয়া অর্থাৎ মন্দ কাজের শামীল।” (নাউযুবিল্লাহ) প্রকৃতপক্ষে হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের এ বক্তব্য আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নির্দেশের সম্পূর্ণ খিলাফ হওয়ার কারণে কাট্টা কুফরী হয়েছে। কোন মুসলমান নামধারী ব্যক্তি কুফরী করলে সে মুরতাদ হয়ে যায়। আর মুরতাদের শরয়ী ফায়ছালা হলো তাকে তিনদিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য অন্যথায় মুরতাদের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। (চলবে)

মুসাম্মত সানজিদা আক্তার

সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত মুহম্মদপুর, ঢাকা।

সুওয়ালঃ অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়- জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না।  তাদের সকল আমল হবে খুবই নিখূঁত ও সুন্দর। তাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে, তাদের রোযা দেখে তোমাদের রোযাকে তোমরা তুচ্ছ ও নগণ্য মনে করবে। তাদের আমল দেখে তোমরা তোমাদের আমলকে হেয় মনে করবে, তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার নিচে যাবেনা। তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন-প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। এদলের আমল যতই তোমাদেরকে আকৃষ্ট করুক না কেন, কখনই তাদের দলে যাবেনা। কারণ প্রকৃতপক্ষে এরা হবে ইসলাম হতে খারিজ, দ্বীন হতে বহির্ভূত। তীর যেমন ধনুক হতে বের হয়ে যায় সে আর কখনও ধনুকের নিকট ফিরে আসেনা। তেমনিই এরা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে, আর কখনও দ্বীনের পথে, কুরআন ও সুন্নাহ্র পথে ফিরে আসবেনা। আমার প্রশ্ন হল, উপরোক্ত হাদীছ ছহীহ্ কি-না? ছহীহ্ হলে এ দ্বারা উদ্দেশ্য কারা? উক্ত হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতের কোন সম্পর্ক আছে কি-না? অনেকে এই হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতকে জড়াতে চান। উক্ত হাদীসের সঙ্গে তাবলীগ জামাতকে জড়ানো সঠিক কি-না? জবাবঃ প্রশ্নে বর্ণিত হাদীছ ছহীহ্। মুহাদ্দিছীনে কেরাম উক্ত হাদীছসহ এ জাতীয় হাদীছসমূহের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এ সব হাদীছ দ্বারা একটি নির্ধারিত জামাত বা খারিজী ফেরক্বা নামে পরিচিত তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর খিলাফত আমলে এই হাদীছসমূহের বাস্তবতা এবং খাওয়ারেজদের অবস্থার সমন্বয় ঘটেছিল। যার দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে বলা চলে যে, এ হাদীছসমূহ দ্বারা একমাত্র খাওয়ারেজদেরকেই বুঝানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণাদি ছাড়া অন্য কোন জামাতকে এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করা যাবেনা।

কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়া তাবলীগ জামাতকে এই হাদীছসমূহের মেসদাক বা উদ্দেশ্য বানানো, তাদেরকে খাওয়ারেজ বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে মারাত্মক অন্যায় ও অপরাধ। তাবলীগের নিয়মনীতি ও কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই। বর্তমান বিশ্বে আল্লাহ্ তা’আলা তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে পথহারা, ঈমানহারা, হেদায়েত থেকে বঞ্চিত অসংখ্য মানুষকে হেদায়েত করেছেন, ঈমান আনার তাওফিক দান করেছেন। এছাড়া এ জামাতের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে অসংখ্য জগদ্বিখ্যাত আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ।

অতএব, তাবলীগ জামাতকে খারেজী জামাত বলা, মিথ্যা অপবাদ বৈ কিছুই নয়। (ফতহুল বারী ১২ঃ৩৫০, আল মিরকাত ৭ঃ১০৭)

উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-

(১) উল্লিখিত হাদীছ শরীফে বর্ণিত গুণাবলী প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে আছে কি?

(২) উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা কি শুধু খারিজী ফিরক্বার লোকদেরকেই বুঝানো হয়েছে? নাকি খারিজীদের ন্যায় আক্বীদা পোষণকারীদের ক্ষেত্রেও এ হাদীছ শরীফ প্রযোজ্য?

(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?

(৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?

(৫) কুরআন-সুন্নাহ্র কোথাও প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করার নির্দেশ আছে কি? প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করা কুরআন-সুন্নাহ্ মতে জায়িয কিনা?

 কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াবঃ প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কিত উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।

শুধু তাই নয়, তারা প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের সাফাই গাইতে গিয়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যা করেছে। সাথে সাথে “ছয় উছূলীদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী কোন আক্বীদা-আমল নেই” বলে তাদের নির্লজ্জ দালালী করে নিজেদেরকে অপব্যাখ্যাকারী ও মিথ্যাবাদীরূপে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিক দলীলভিত্তিক আলোচনা করলেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে।

তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

(ধারাবাহিক)

ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে  উল্লিখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারীতার খণ্ডনমূলক জবাব-৩

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?”

আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, পর্যায়ক্রমে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলোর সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো-

প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ১৩

প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, “আলিম-জাহিল সকলেই দ্বীন প্রচার করবে এবং দ্বীনের তাবলীগের জন্য আলিম হওয়ার কোনই জরুরত নাই। কারণ, তারা মনে করে যে, দ্বীন প্রচার শুধু আলিমের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে দ্বীন ধ্বংস হয়ে যেত এবং এখনো যাবে। অর্থাৎ জাহিল লোক তাবলীগ করার কারণে দ্বীন টিকে ছিল এবং ভবিষ্যতেও টিকে থাকবে।” (তাবলীগ জামায়াতের সমালোচনা  ও উহার সদুত্তর-৯৫ পৃষ্ঠা, মূলঃ শাঃ হাঃ জাকারিয়া সাহেব, অনুবাদক- মাওলানা মুহিব্বুর রহ্মান আহমদ এবং তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব নামক কিতাব-৯৪ পৃষ্ঠা, লেখক- মাওলানা ইসমাঈল হোসেন দেওবন্দী)

প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের এ বক্তব্য অত্যন্ত আপত্তিকর, বিভ্রান্তিমূলক ও কুরআন-সুন্নাহ্, ইজমা ক্বিয়াসের সম্পূর্ণ বিপরীত। যা স্পষ্টতঃ কুফরী।

(দ্বিতীয় অংশ)

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “দু’প্রকার লোক আমার পিঠ বাঁকা করে দিয়েছে। (১) বে আমল আলিম, (২) বে ইল্ম অর্থাৎ মূর্খ আবিদ।”

এখানে উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মূর্খ লোকেরা আমার পিঠ বাঁকা করেছে বা আমার দ্বীনের ক্ষতি করেছে।” আর প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলছে, “মূর্খ লোকের কারণে দ্বীন টিকে আছে।”

এখন প্রশ্ন হলো, কোনটা সত্য? যদি বলা হয় হাদীছ শরীফের কথা সত্য, তবে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হয়। আর যদি তাদেরটা সত্য বলা হয়, তবে হাদীছ শরীফ মিথ্যা সাব্যস্ত হয়। অথচ হাদীছ শরীফকে মিথ্যা সাব্যস্ত করা কাট্টা কুফরী। কাজেই, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য ডাহা মিথ্যা ও কুরআন, সুন্নাহ্, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের সম্পূর্ণই খিলাফ।

মূলতঃ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে একথাই প্রমাণিত হয় যে, মহান আল্লাহ পাক হক্কানী-রব্বানী আলিমগণের মাধ্যমেই এ দ্বীনকে হিফাযত করবেন। মূর্খদের নিকট দ্বীনের ছহীহ্ ও সঠিক দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার জন্যই আলিমদেরকে পাঠিয়েছেন, পাঠাচ্ছেন এবং পাঠাবেন। তাই হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

ان الله يبعث لهذه الامة على راس كل مأة سنة من يجدد لها دينها.

অর্থঃ- “নিশ্চয় আল্লাহ পাক এ উম্মতের হিদায়েতের জন্যে প্রত্যেক হিজরী শতকের শুরুতে একজন করে মুজাদ্দিদ প্রেরণ করবেন, যিনি উম্মতের দ্বীনকে সংস্কার করবেন।” (আবু দাউদ, বযলুল মাজহুদ, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, শরহুত্ ত্বীবী, মুযাহিরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্)

অর্থাৎ যখন ওলামায়ে “ছূ” বা বিদ্য়াত-বিশরা ও মূর্খ লোকদের কারণে দ্বীনের ভিতর নানা রকম কুফরী, শিরকী ও বিদ্য়াতের সংমিশ্রন ঘটবে, তখন দ্বীন থেকে সে সকল কুফরী, শিরকী ও বিদ্য়াত কথাবার্তা বা আমল দূরীভূত করে দ্বীনকে সংস্কার করার জন্যে, এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন, যিনি হাক্বীক্বী নায়িবে রসূল অর্থাৎ যিনি ইল্মে শরীয়ত ও ইল্মে তাছাউফে পূর্ণতা প্রাপ্ত হক্কানী-রব্বানী আলিম। যাঁর আক্বীদা ও আমল, সীরত-ছূরত সম্পূণই কুরআন, সুন্নাহ্, ইজ্মা, ক্বিয়াস সম্মত।

এখন প্রশ্ন উঠে, যদি মূর্খ লোকের দ্বারাই দ্বীনের এ সকল কাজ হতো, তবে মহান আল্লাহ্ পাক-এর মুজাদ্দিদ প্রেরণ করার কি প্রয়োজন রয়েছে? মূলতঃ মূর্খ লোকের দ্বারা দ্বীনের ক্ষতি হওয়া ব্যতীত উপকার হওয়া কখনোই সম্ভব নয়। আর এ মূর্খদেরকে হিদায়েতের পথ দেখানোর জন্যেই মুজাদ্দিদ বা আলেমগণের আবির্ভাব। যেমন, আবির্ভাব ঘটেছিল ইমামে আ’যম, আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, গাউছূল আযম, মুহীউদ্দীন, হযরত আব্দুল ক্বাদির জ্বিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আফযালুল আওলিয়া, হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সূলতানুল হিন্দ, হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর। অনুরূপ আরো অসংখ্য অগণিত নায়িবে রসূল ও মুজাদ্দিদগণের। তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন দ্বীনের খাছ মুবাল্লিগ ও হাক্বীক্বী আলিম। তাঁদের ওসীলাতেই দ্বীন টিকে আছে এবং থাকবে।

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা একথাই প্রমাণিত হলো যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উল্লেখিত বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, বিভ্রান্তিকর, অজ্ঞতামূলক ও কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। এ ধরনের বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকা সংশ্লিষ্ট সকলের জন্যেই ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। (চলবে)

মুহম্মদ সুলতান মাহমুদ, মিরপুর, ঢাকা।

মুহম্মদ আহমদুল্লাহ কামালী, নরসিংদী।

সুওয়ালঃ মাসিক মদীনা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়- প্রশ্নঃ চুল…রাখার সুন্নত কি?…… উত্তরঃ…চুল রাখার দুই তরীকা, এক বাবরি রাখা, দুই মুণ্ডানো।….(শামী, আলমগীরী, বুখারী, মুসলিম) আর হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা এপ্রিল/২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “মাথা মুন্ডানো যদিও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে  হজ্বের মৌসুম ব্যতীত পাওয়া যায় না, কিন্তু হযরত আলী (রাযি.) থেকে মাথা মুন্ডানোর বর্ণনা পাওয়া যায় এবং হযরত আলী (রাযি.) এর এই আমলের উপর রাসূলুল্লাহ্  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বীকৃতি পাওয়া যায়। তাই সাহাবীর আমল হিসেবে মাথা মুন্ডানো সুন্নাত। অন্য এক রেওয়ায়াতে আছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাথা মুন্ডন কারীদের জন্য তিন বার রহমতের দোয়া করেছিলেন। আর হানাফী মাযহাবের গ্রহণযোগ্য কিতাবাদিতেও মাথা মুন্ডানোকে সুন্নাত বলা হয়েছে। (ফাত্ওয়ায়ে আলমগীরি ও শামী)

এখন আমার সুওয়াল হলো- মাথা মুন্ডন করা সম্পর্কে মাসিক মদীনা ও হাটহাজারী মৌলভীদের  উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি মাথা মুন্ডন করা সুন্নত বা চুল রাখার দুই তরীকার, এক তরীকা? দলীলসহ সঠিক জাওয়াব দিয়ে, আমাদের আক্বীদা আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াবঃ মাথা মুণ্ডন করা সুন্নত নয় বা চুল রাখার কোন তরীকাই নয়; বরং বাবরী চুল রাখাই সুন্নত। মাথার চুল মুণ্ডন করা সম্পর্কে মাসিক মদীনা  ও হাটহাজারী মৌলভীদের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। কারণ, মাসিক মদীনা ও হাটহাজারী মৌলভী ছাহেব এবং তাদের সমজাতীয়রা এমন একটি হাদীছ শরীফ উল্লেখ করতে পারবে না, যেখানে উল্লেখ আছে যে, “আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,  নুরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্ব ও ওমরা ব্যতীত অন্য সময় নিজ মাথার চুল মুবারক মুন্ডন করেছেন।”

বরং অসংখ্য ছহীহ্ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় বাবরী চুল মুবারক রাখতেন। সেহেতু সকল উম্মতে মুহম্মদীর জন্য সর্বদা বাবরী চুল রাখাই দায়েমী সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।

(ধারাবাহিক)

বাবরী চুল সুন্নত-এর পক্ষে কতিপয় দলীল নিম্নে

আমরা অসংখ্য হাদীস শরীফ থেকে কয়েকখানা হাদীস শরীফ পেশ করলাম।

যেমন, “ইবনু মাজাহ্ শরীফ” কিতাবের ২৬৭ পৃষ্ঠায়  উল্লেখ আছে,

عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت كان لرسول الله صلى الله عليه وسلم شعرا دون الجمة وفوق الوفرة.

অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক ছিলোঞ্জজুম্মা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারকের নিচে এবং ওয়াফরা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারকের উপরে।”

অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক দু’কানের লতি মুবারকের নীচ  এবং দু’কাঁধ মুবারকের উপর পর্যন্ত লম্বা ছিলো।

“মুসনাদুল ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল” রহমতুল্লাহি আলাইহি কিতাবের ৩য় খণ্ডের ১১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

حدثنا عبد الله حدثنى أبى حدثنا اسمعيل اخبرنا حميدن الطويل عن أنس رضى الله تعالى عنه قال كان شعر النبى صلى الله عليه وسلم الى انصاف أذنيه.

অর্থঃ- “হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল” রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমার কাছে বর্ণনা করেছেন আমার পিতা। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা হযরত ইসমাঈল রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত হুমাইদি রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আনাছ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে। আর হযরত আনাছ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কান মুবারকের (মাঝামাঝি) অর্ধ পর্যন্ত লম্বা ছিলো।”  “মুসলিম শরীফ” কিতাবের ২য় খন্ডের ২৫৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

قال سمعت البراء رضى الله تعالى عنه يقول كان رسول الله صلى الله عليه وسلم رجلا مربوعا بعيد ما بين المنكبين عظيم الجمة الى شحمة اذنيه.

অর্থঃ- “বর্ণনাকারী বলেন, আমি হযরত বারায়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছ থেকে শুনেছি। তিনি বলেন, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মধ্যম ধরনের ছিলেন। তাঁর উভয় কাঁধ মুবারক প্রশস্ত ছিল। আর  বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কানের লতি মুবারক পর্যন্ত লম্বা ছিলো।” “আবূ দাউদ শরীফ” কিতাবের ২য় খন্ডের ২২৩ পৃষ্ঠায়  উল্লেখ আছে,

عن البراء رضى الله تعالى عنه قال ما رايت من ذى لمة احسن فى حلة حمراء من رسول الله صلى الله عليه وسلم زاد محمد له شعر يضرب منكبيه قال ابو داود كذا رواه اسرائيل عن ابى اسحق يضرب منكبيه وقال شعبة يبلغ شحمة اذنيه.

অর্থঃ- “হযরত বারায়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, গন্ধম রংয়ের ইয়ামানী চাদর পরিহিত অবস্থায়  আল্লাহ্ পাক -এর রসূল  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর  চেয়ে অধিক সুন্দর আর কোন লিম্মা ওয়ালা বাবরী চুল বিশিষ্ট লোক দেখিনি। মুহম্মদ বিন সুলায়মান রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বর্ণনা করে বলেন যে, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উক্ত লিম্মা ওয়ালা বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কাঁধ মুবারক পর্যন্ত লম্বা ছিলো। হযরত ইমাম আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, রাবী ইসরাইল রহমতুল্লাহি আলাইহি; হযরত আবূ ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে অনুরূপ হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর   উক্ত  লিম্মা ওয়ালা  বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কাঁধ মুবারক পর্যন্ত লম্বা ছিলো। আর হযরত শু’বা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কানের লতি মুবারকে পৌঁছত।”

“আবূ দাউদ শরীফ” কিতাবের ২য় খন্ডের ২২৩ পৃষ্ঠায়  উল্লেখ আছে,

حدثنا مسدد حدثنا اسمعيل حدثنا حميد عن انس بن مالك رضى الله تعالى عنه قال كان شعر رسول الله صلى الله عليه وسلم الى انصاف اذنيه.

অর্থঃ- “হযরত ইমাম আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মুসাদ্দাত রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত ইসমাঈল  রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত  হুমাইদি রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আনাছ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে। আর হযরত আনাছ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কান মুবারকের (মাঝামাঝি) অর্ধ পর্যন্ত লম্বা ছিলো।”

  “আবূ দাউদ শরীফ” কিতাবের ২য় খন্ডের ২২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

عن البراء رضى الله تعالى عنه قال كان النبى صلى الله عليه وسلم له شعر يبلغ شحمة اذنيه.

অর্থঃ- “হযরত বারায়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিতঞ্জআছে। তিনি বলেন, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কানের লতি মুবারকে পৌঁছত।”

“নাসাঈ শরীফ” কিতাবের ২য় খন্ডের ২৭৬ ও ২৯১ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

عن انس رضى الله تعالى عنه قال كان شعر النبى صلى الله عليه وسلم الى نصف اذنيه.

অর্থঃ- “হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কান মুবারকের (মাঝামাঝি) অর্ধ পর্যন্ত লম্বা ছিলো।”

“আবূ দাউদ শরীফ” কিতাবের ২য় খন্ডের ২২৩-২২৪ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت كان شعر رسول الله صلى الله عليه وسلم فوق الوفرة ودون الجمة.

অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক ছিলো ওয়াফরা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারকের উপরে এবং জুম্মা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারকের নিচে।” অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক দু’কানের লতি মুবারকের নীচ  এবং দু’কাঁধ মুবারকের উপর পর্যন্ত লম্বা ছিলো।

চার তরীকায় বাবরী চুল রাখা সুন্নত

উপরোক্ত হাদীছ শরীফের আলোকে প্রমাণিত হলো যে, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম,     হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চার তরীকায় বা চার প্রকারে বাবরী চুল মুবারক রাখতেন, যাকে হাদীছ শরীফের বর্ণনায়  জুম্মা, লিম্মা, ওয়াফরা ও নিছফু উযুনাইহি বলে। অর্থাৎ (১) কানের লতি বরাবর, (২) কাঁধ ও কানের লতির মাঝামাঝি, (৩) কাঁধের কাছাকাছি, (৪) আবার কোন কোন সময় দু’কানের মাঝামাঝি।

এই চার তরীকায় বা চার প্রকারের যে কোন এক তরীক্বায় বা  এক প্রকারে  মাথার চুল লম্বা রাখা এবং তাতে সিঁথি তোলা খাছ সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

যেটা মাসিক মদীনা এবং হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের জিহালতির কারণে স্পষ্টভাবে উল্লেখ না করে বলেছে, “চুল রাখার দুই তরীকা, এক বাবরি রাখা, দুই মুণ্ডানো।”

আর হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবরা বলেছে, “মাথা মুন্ডানো সুন্নাত।” অথচ চুল রাখার সুন্নতী তরীক্বা বা পরিমাণ সুস্পষ্টরূপে হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে যা আমরা উপরে উল্লেখ করেছি।

এরপর প্রথমত মাসিক মদীনা  বলেছে, “চুল রাখার দুই তরীকার একটি  হলো মুণ্ডানো।  মাসিক মদীনার জিহালতী  বক্তব্য খণ্ডন  এর জবাবে বলতে হয় যে, মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য জিহালতপূর্ণ হয়েছে। কারণ মাথা মুণ্ডন করা চুল রাখার কোন তরীকাই নয়। কেননা মাথা মুণ্ডন করলে তো মাথায় কোন চুলই থাকে না, সেক্ষেত্রে মাথা মুণ্ডন করা চুল রাখার তরীকা হয় কি করে? (চলবে)

মুহম্মদ মুহিউদ্দীন

সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত

সন্দ্বীপ শাখা, চট্টগ্রাম।

সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানী মাযহাবের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর- জানুয়ারী/২০০৩-০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে ‘‘বিতিরের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম এবং বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব পাবে বলে উল্লেখ করেছে।’’ তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ্, নাসায়ী থেকে দলীল হিসেবে কয়েকখানা হাদীছ শরীফও উল্লেখ করেছে।  আর হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ডিসেম্বর/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, ‘‘বিতির নামাযের পর দুই রাক্আত নফল নামায…  দাঁড়িয়ে পড়া ভাল। কারণ, নফল নামায বিনা কারণে বসে পড়লে অর্ধেক সাওয়াব হয়।” এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা হালকী নফল নামায সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে হাদীছ শরীফগুলো উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য। তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডনসহ হালকী নফল সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াবঃ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায যাকে “হালক্বী নফল” বলা হয়, তা দাঁড়িয়ে পড়া সম্পর্কে অখ্যাত মাসিক পত্রিকাদ্বয়ের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ হয়েছে। এবং ক্ষেত্রবিশেষে কুফরীমূলক হয়েছে।

স্মর্তব্য যে, সাধারণতঃ নফল নামায বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব হলেও বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়াই মুস্তাহাব-সুন্নত, যা উত্তম ও পূর্ণ ছওয়াব এবং অধিক ফযীলতের কারণ। কেননা বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল এবং অন্যান্য নফলের ক্ষেত্রে একই হুকুম নয়। বরং বিত্র নামাযের পর দুই রাকায়াত নফলের হুকুম অন্যান্য নফল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অর্থাৎ অন্যান্য নফল দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব, বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব।  আর হালক্বী নফল অর্থাৎ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব, আর বসে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব।  কারণ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায কখনও দাঁড়িয়ে আদায় করেননি। বরং বসেই আদায় করেছেন। যা সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।  (ধারাবাহিক) উল্লেখ্য, রেযাখানীরা ‘বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ ও নাসায়ী শরীফ’ ইত্যাদি কিতাব থেকে দলীল হিসেবে যে বক্তব্য উল্লেখ করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য মোটেও সে রকম নয়। তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝতে না পারার কারণেই ‘হালক্বী নফল’ সম্পর্কে এরূপ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য উল্লেখ করেছে। শুধু তাই নয়, সাথে সাথে নিজেদের জিহালতীকে ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে উল্লিখিত কিতাবসমূহের কোন কোন ইবারত কারচুপি করে নিজেদের বাতিল মতকে ছাবিত করার ব্যর্থ কোশেশ করেছে। তারা উল্লিখিত কিতাবের বরাত দিয়ে যে সকল মিথ্যাচারিতা, প্রতারণা ও ইবারত কারচুপির আশ্রয় নিয়েছে সেগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা ও ফায়সালা তুলে ধরে তার খণ্ডনমূলক আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ্। রেযাখানীদের কারচুপিমূলক  বক্তব্য উদঘাটন ও খণ্ডন উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বলেছে, “যদি বিতরের পর দু’রাকাত নামায পড়া প্রিয় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দাওয়ামী সুন্নত, বিধায় বসে উত্তম, তা অস্বীকার করা কুফরী হয়, তবে যে সব মাযহাবের সম্মানিত ইমাম ও মুজতাহিদ যারা এ দু’রাকাত নামাযকে মোটেই স্বীকার করেননি তাঁদের ব্যাপারে কী ফতোয়া দেয়া হবে।”…… এর জবাবে বলতে হয় যে, তাহলে আমাদের বক্তব্য হলো  বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায সম্পর্কিত যে হাদীছ শরীফকে রেযাখানীদের মতে ইমাম মালিক এবং  ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমা অস্বীকার করলেন, বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায সম্পর্কিত সেই হাদীছ শরীফকে রেযাখানীরা একটু পরেই কি করে স্বীকার করলেন? (দলীলের অপেক্ষায় থাকুন।) তাতে কি বুঝা যায় না যে রেযা খাঁ  এবং মৌলভী আমজাদ আলী  এবং তাদের অনুসারী রেযাখানীদের ফতওয়া মুতাবেক  ইমাম মালিক এবং ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমা বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায সম্পর্কিত হাদীছ শরীফকে অস্বীকার করে কুফরী করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ্) রেযাখানীরা এটার কি জাওয়াব দিবে? নিশ্চয়ই তখন তারা বাঁচার জন্য বলবে যে এটা মালিকী মাযহাবের মত, এটা হানাফী মাযহাবের মত। ঠিক তদ্রুপেই বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত  হালকী নফল নামায  বসে পড়াকে অনুত্তম বলা বা অস্বীকার করা হানাফী মাযহাব মতে কুফরী। মালিকী মাযহাব মতে কুফরী নয়।  সপ্তমতঃ রেযাখানীরা যদি বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত হালকী নফল নামাযের ক্ষেত্রে অন্য মাযহাবের ইমামগণের মতকে গ্রহণ করে বা দলীল হিসেবে পেশ করতে চায়, তবে তাদেরকে ফতওয়া দিতে হবে যে, “কুসূফের নামায (সূর্যগ্রহণের নামায) সুন্নতে মুয়াক্কাদা।” কারণ হাম্বলী মাযহাবে “কুসূফের নামায (সূর্যগ্রহণের নামায) সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”           অথচ আমাদের হানাফী মাযহাবে কুসূফের নামায (সূর্যগ্রহণের নামায) সুন্নতে যায়েদাহ্ বা নফল। অষ্টমতঃ রেযাখানীরা যদি বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত হালকী নফল নামাযের ক্ষেত্রে অন্য মাযহাবের ইমামগণের মতকে গ্রহণ করে বা দলীল হিসেবে পেশ করতে চায়, তবে তাদেরকে ফতওয়া দিতে হবে যে,  পাঁচ ওয়াক্ত নামাযেই কুনূত পড়তে হবে। কারণ শাফেয়ী  মাযহাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযেই কুনূত পড়া জায়িয। অথচ আমাদের হানাফী মাযহাবে একমাত্র বিতির নামায ব্যতীত আর কোন নামাযেই কুনূত পড়া জায়িয নেই।  নবমতঃ রেযাখানীরা যদি বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত হালকী নফল নামাযের ক্ষেত্রে অন্য মাযহাবের ইমামগণের মতকে গ্রহণ করে বা দলীল হিসেবে পেশ করতে চায়, তবে তাদেরকে ফতওয়া দিতে হবে যে, ঈদের নামাযের তাকবীর বারটি। কারণ শাফেয়ী মাযহাবে ঈদের নামাযের তাকবীর  বারটি। অথচ  আমাদের হানাফী মাযহাবে ঈদের নামাযের তাকবীর ছয়টি। দশমতঃ রেযাখানীরা যদি বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত হালকী নফল নামাযের ক্ষেত্রে অন্য মাযহাবের ইমামগণের মতকে গ্রহণ করে বা দলীল হিসেবে পেশ করতে চায়, তবে তাদেরকে ফতওয়া দিতে হবে যে, ইমামের পিছনে মুক্তাদির কিরাত পড়া ওয়াজিব। কারণ শাফেয়ী মাযহাবে ইমামের পিছনে মুক্তাদির কিরাত পড়া ওয়াজিব।   অথচ আমাদের হানাফী মাযহাবে ইমামের পিছনে মুক্তাদির কিরাত পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী।  একাদশতঃ রেযাখানীরা যদি বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত হালকী নফল নামাযের ক্ষেত্রে অন্য মাযহাবের ইমামগণের মতকে গ্রহণ করে বা দলীল হিসেবে পেশ করতে চায়, তবে তাদেরকে ফতওয়া দিতে হবে যে,  সূরা ফাতিহার পর আমীন উচ্চ আওয়াজে পড়তে হবে। কারণ অন্য মাযহাবে সূরা ফাতিহার পর আমীন উচ্চ আওয়াজে পড়তে হয়। অথচ  আমাদের হানাফী মাযহাবে সূরা ফাতিহার পর আমীন চুপে পড়তে হয়। দ্বাদশতঃ রেযাখানীরা যদি বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত হালকী নফল নামাযের ক্ষেত্রে অন্য মাযহাবের ইমামগণের মতকে গ্রহণ করে বা দলীল হিসেবে পেশ করতে চায়, তবে তাদেরকে ফতওয়া দিতে হবে যে,  যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে আট শ্রেণীর প্রত্যেক শ্রেণীকে যাকাত দিতে হবে, অন্যথায় যাকাত আদায় হবে না। কারণ শাফেয়ী  মাযহাবে যাকাত আদায়ের খাত যথা ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায়কারী কর্মচারী, নও মুসলিম, গোলামদের আযাদকার্যে, ঋণগ্রস্থ, জ্বিহাদে লিপ্ত ব্যক্তি এবং মুসাফির এই আট শ্রেণীর প্রত্যেক শ্রেণীকে যাকাত দানের মাধ্যমে ফরয আদায় হবে, অন্যথায় যাকাত আদায় হবে না। অথচ  আমাদের হানাফী মাযহাবে বলা হয়েছে, যেহেতু যাকাত প্রদানের  আটটি খাতের সব খাতগুলি একই সাথে পাওয়া সম্ভব নয়, সেহেতু যাকাত প্রদানের  আটটি খাতের যে কোন একটি খাতে যাকাত প্রদান করলেই যাকাত আদায় হয়ে যাবে।  ত্রয়োদশতঃ রেযাখানীরা যদি বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত হালকী নফল নামাযের ক্ষেত্রে অন্য মাযহাবের ইমামগণের মতকে গ্রহণ করে বা দলীল হিসেবে পেশ করতে চায়, তবে তাদেরকে ফতওয়া দিতে হবে যে, জোর করে তালাক দিলে তালাক হবে না। কারণ মালেকী মাযহাবে জোর করে তালাক দিলে তালাক হবে না।   অথচ  আমাদের হানাফী মাযহাবে জোর করে তালাক দিলে তালাক হবে। চতুর্দশতঃ রেযাখানীরা যদি বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত হালকী নফল নামাযের ক্ষেত্রে অন্য মাযহাবের ইমামগণের মতকে গ্রহণ করে বা দলীল হিসেবে পেশ করতে চায়, তবে তাদেরকে ফতওয়া দিতে হবে যে, ঘোড়ার গোশ্ত খাওয়া জায়িয। কারণ শাফেয়ী মাযহাবে ঘোড়ার গোশ্ত খাওয়া জায়িয। অথচ  আমাদের হানাফী মাযহাবে ঘোড়ার গোশ্ত খাওয়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী। অথচ হানাফী মাযহাবের অনুসারীদের জন্য অন্য মাযহাব অনূযায়ী ফতওয়া দেয়া বা অন্য মাযহাব অনূযায়ী  আমল করা নাজায়িয, হারাম ও কুফরী। অতএব প্রমাণিত হলো যে, রেযাখানী মৌলভী সাহেবরা হালকী নফল নামাযের ক্ষেত্রে অন্য মাযহাবের বরাত  টেনে অর্থাৎ হালকী নফল নামাযের ক্ষেত্রে ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতকে  দলীল হিসেবে পেশ করে,  নিজেদেরকে চরম জাহিল হিসেবে সাব্যস্ত করলো। (নাউযুবিল্লাহ) (চলবে)  মুহম্মদ শমসের আলী কাছারী পাড়া, পাবনা  সুওয়ালঃ আমাদের পাবনা শহরের কিছু লোক আপনাদের বহুল প্রচারিত, অকাট্য দলীলভিত্তিক মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর ‘পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে’ শিরোনামে প্রকাশিত ৯৪, ১৩২, ১৩৩, ও ১৩৪তম সংখ্যায় প্রদত্ত নিম্নলিখিত বিষয়গুলো নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা লোকদেরকে বুঝাচ্ছে যে, এ সমস্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে কুফরী ও শিরকীর অন্তর্ভুক্ত। আবার কিছু কিছু বক্তব্য সন্দেহজনক। যেমন, ১. দরবার শরীফের আমানতসমূহের কখনো খিয়ানত না করা। প্রশ্ন হলো- ‘দরবার শরীফের আমানতসমূহ কি?’ ২. “পীর ছাহেব ক্বিবলার দরবার শরীফ আল্লাহ পাক-এর ও তাঁর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফের মত।”  এ বক্তব্য কি কুফরী ও র্শিকীর অন্তর্ভুক্ত? ৩. দরবার শরীফের গোপনীয় বিষয়গুলো সর্বদা গোপন রাখা। জানার বিষয় হলে- ‘দরবার শরীফের গোপনীয় বিষয়গুলো কি?’ ৪. “পীর ছাহেব ক্বিবলার দরবার শরীফে সেই রূপ ভয়ভীতি, আদব ও ইহতিরাম নিয়ে অবস্থান করতে হবে, যেরূপ ভয়ভীতি, আর আদব ও ইহতিরাম নিয়ে অবস্থান করতে হয় আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফে। বরং পীর ছাহেব ক্বিবলার দরবার শরীফে কোন কোন ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশী ভয়ভীতি আর আদব ও ইহতিরাম সহকারে অবস্থান করতে হয়।” তবে কি পীর ছাহেব আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেয়েও বড় এবং অধিক মর্যাদা সম্পন্ন? ৫. “পীর ছাহেবের দরবার শরীফে অবস্থানকালীন সময় অন্তরে সর্বদা একথা বদ্ধমূল রাখতে হবে যে, এ দরবার শরীফ এমন আজিমুশ্ শান এবং মহান মর্যাদাপূর্ণ যে, এখানে সামান্য বেয়াদবীর কারণে জীবনের সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে।” তবে কি পীর ছাহেবের দরবার শরীফ আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফ হতেও বড়?  আশা করি কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে তাদের উত্থাপিত সেই প্রশ্নগুলোর সঠিক জাওয়াব দান করে এলাকাবাসী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্তির কবল হতে মুক্তি পাওয়ার  পথ দেখাবেন।  জাওয়াবঃ    মাসিক আল বাইয়িনাতের ৯৪, ১৩২, ১৩৩ এবং ১৩৪ তম সংখ্যায় ‘ফিকহুল হাদীস ওয়াল আছার’ বিভাগে ‘পীর ছাহেব ও মুরীদের সর্ম্পক প্রসঙ্গে’ শিরোনামে পীর ছাহেব এবং দরবার শরীফের আমানতসমূহ ও তার স্বরূপ এবং গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সত্যান্বেষী ইচ্ছা নিয়ে পাঠ করলে বিষয়টি সহজেই অনুধাবনীয়। (ইনশাআল্লাহ) আর যারা বিপরীত মন এবং মননের অধিকারী ও ইলমে তাছাউফ শুন্য বা তাছাউফ বিরোধী তারাই কেবল চিনির বলদের মত কিতাবের বোঝা বহনকারীর উপমা হয়। তারা ফিৎনা ফাসাদ সৃষ্টিকারী ও সঠিক বক্তব্যের মনগড়া ও অপব্যাখ্যা দানকারী।  তাই ফিৎনাকারীদের ফিৎনা নিরসনের উদ্দেশ্যে ও হক্ব তালাশীদের নিকট বিষয়টি আরো সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলার লক্ষ্যে উপরোক্ত প্রশ্নসমূহের দলীলভিত্তিক বিস্তারিত জাওয়াব ধারাবাহিকভাবে নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

(ধারাবাহিক)

৩. দরবার শরীফের গোপনীয় বিষয়গুলো সর্বদা গোপন রাখা। জানার বিষয় হলে- ‘দরবার শরীফের গোপনীয় বিষয়গুলো কি?’

(দ্বিতীয় অংশ)

কাজেই আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যা গোপনীয় ছিলো, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ যা গোপন রাখেন সেটাই হচ্ছে পীর ছাহেব এবং তাঁর দরবার শরীফের গোপনীয় বিষয়। আর মুরীদগণ সেটাই গোপন রাখেন। হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,

لكل نبى صاحب السر صاحب سرى معاوية ابن ابى سفيان.

অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “প্রত্যেক নবীর গোপন রহস্যভেদ অবগত ছাহাবী ছিলেন। আমার গোপন ভেদ অবহিত ছাহাবী হচ্ছেন হযরত মুয়াবিয়া ইবনে আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবূ আমীরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জন্য এভাবে দোয়া করেছেন যে,

اللهم اجعله هاديا مهديا واهدبه.

অর্থঃ- “আয় আল্লাহ পাক! আপনি তাঁকে (মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে) সঠিক পথ প্রদর্শনকারী, সত্য পথের অনুসারী এবং তাঁর দ্বারা মানুষের হিদায়েত নছীব করুন।” (তিরমিযী শরীফ)

“মিশকাত শরীফের” ৫৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

حذيفة صاحب السر.

অর্থঃ- “হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হচ্ছেন গুপ্ত ভেদ অবহিত ছাহাবী।” সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, “হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তোমাদেরকে যা বলে তা সত্য বলে মনে করো।” (মিশকাত শরীফ)

প্রকাশ থাকে যে, তিনি তাঁর নিকট মুনাফিকদের নামের তালিকা দিয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, ফারুকে আযম, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সে ব্যক্তির জানাযার নামাযে শরীক হতেন যার জানাযার নামাযে ছহেবুস্ সির হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু শরীক থাকতেন। ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহু ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন ছহেবুস্ সিরগণের অন্যতম। তিনি  সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এমন নৈকট্য লাভ করেছিলেন যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ তাঁকে আহলে বাইতগণের অন্তর্ভূক্ত বলে মনে করতেন। (মিশকাত শরীফ) খাদিমু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে তো সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওসীয়তই করেছেন, “হে ছেলে! তুমি আমার গোপন কথা গোপন রাখবে। তবেই তুমি ঈমানদার হবে।” হযরত আনাছ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “আমার মা এবং অন্য কেউ আমার কাছে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গোপন কথা জিজ্ঞেস করলে, আমি তা বলিনি। আমি তাঁর কোন গোপন কথা কারও কাছে প্রকাশ করিনি।” এক দিনের ঘটনা, তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রয়োজনীয় কাজ সেরে দুপুরে বাড়ীর দিকে চলছেন। পথে দেখলেন, তাঁরই সমবয়সী ছেলেরা খেলছে। তাঁর কাছে খেলাটি ভালো লাগলো। তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন, তাদের খেলা দেখতে।  কিছুক্ষণ পর দেখলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের দিকে আসছেন। তিনি এসে প্রথমে ছেলেদের সালাম দিলেন, তারপর হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর হাতটি ধরে তাঁকে কোন কাজে পাঠালেন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর অপেক্ষায় একটি দেয়ালের আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকলেন। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কাজ সেরে ফিরে এলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাড়ীর দিকে ফিরলেন। আর তিনিও চললেন বাড়ীর দিকে। ফিরতে বিলম্ব হওয়ায় তাঁর মা জিজ্ঞেস করলেন, এত দেরী হলো কেন? তিনি বললেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটি গোপন কাজে গিয়েছিলাম এজন্য ফিরতে দেরী হয়েছে। মা মনে করলেন, ছেলে কি গোপন করছে, এই জন্য জানতে চাইলেনঃ কী কাজ? হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জবাব দিলেন একটি গোপন কথা, কাউকে বলা যাবেনা। মা বললেন, তাহলে গোপনই রাখ, কারও কাছে প্রকাশ করোনা। আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আজীবন এ সত্য গোপন রেখেছেন।  একবার তাঁর বিশিষ্ট ছাত্র সাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন সেই কথাটি জানতে চাইলেন তখন তিনি বললেন, কথাটি কাউকে জানালে তোমাকেই জানাতাম। কিন্তু আমি তা কাউকে বলবো না। (আল ফাতর্হু রাব্বানী মা’য়া বুলুগুল আমানী-২০৪ পৃষ্ঠা, হায়াতুছ্ ছাহাবা ১ম খণ্ড ৩৪৩ পৃষ্ঠা, ২য় খণ্ড ৫০৩ পৃষ্ঠা) হযরত আবূ লুবাবা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি ছিলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিশিষ্ট ছাহাবী। তাঁর জীবনে একটি ব্যতিক্রম ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। যা মুসলিম উম্মাহ্র জন্য বিশেষ ইবরত ও নছীহ্ত স্বরূপ।  বর্ণিত আছে যে, মদীনা শরীফে ইহুদীদের কয়েকটি বড় বড় সম্প্রদায় বাস করতো। তন্মধ্যে বনু কুরাইযা ছিল অন্যতম। মদীনা শরীফে হিজরতের পর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তাদের সাথে সন্ধি চুুক্তি করলেন যে, “আমরা পরস্পর মিলেমিশে বসবাস করবো এবং পরস্পর শত্রুতা পোষণ করবো না। অনুরূপ ভাবে কেউ কারো শত্রুর সাথেও হাত  মিলাতে পারবে না।” কিন্তু হিজরী ৫ম সালে আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে যখন দশ হাজার কুরাঈশ মদীনা শরীফ আক্রমণের জন্য অগ্রসর হলো, তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবয়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণকে নিয়ে মদীনা শরীফের অদূরে (সলিলা) পর্বতের নিকটবর্তী স্থানে খন্দক খনন করে শত্রুর মোকাবিলার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আর সে সময় ইহুদী সম্প্রদায় বনু কুরাইযা সন্ধি চুক্তি ভঙ্গ করে কুরাঈশদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছিল। যুদ্ধ শেষে বিশ্বাসঘাতক বনু কুরাইযাকে মদীনা শরীফ হতে বহিস্কার করার জন্য আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ হতে নির্দেশ আসলো। ফলে মুসলমানগণ তাদেরকে অবরোধ করল। তারা আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে অনুরোধ জানালো যে, হযরত আবু লুবাবা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে আমাদের কাছে পাঠিয়ে  দিন। আমরা তাঁর সাথে পরামর্শ করবো। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আবু লুবাবা ইবনে মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে তাদের কাছে পাঠালেন।  তাঁকে দেখা মাত্র পুরুষগণ তাঁকে অভিবাদন জানাতে ছুটে আসল, আর নারী ও শিশুরা তাঁর সামনে গিয়ে কেঁদে কেঁদে ফরিয়াদ জানালো। তাদের সে বুক ফাটা কান্না দেখে তাঁর অন্তর বিগলিত হলো। তারা বলল, “হে আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু! আপনি কি বলেন,  আমরা কি মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশমত দুর্গ হতে নেমে আসবো?” তিনি বললেন, “হ্যাঁ” সেই সাথে গলদেশের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, “তোমাদেরকে জবাই করা হবে।” পরবর্তীতে হযরত আবূ লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আল্লাহ্ পাক-এর কসম! সে স্থান হতে আমি এক কদমও উঠাইনি, এর মধ্যেই আমার উপলব্ধি হলো যে, আমি আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছি। কাজেই তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাত না করেই সোজাসুজি মসজিদে নববীতে চলে গেলেন এবং মসজিদের খুঁটির সাথে নিজেকে শক্ত করে বাঁধলেন। বললেন, যতক্ষণ আল্লাহ্ পাক আমাকে ক্ষমা না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত এ স্থান ত্যাগ করবো না। তিনি আরো প্রতিজ্ঞা করলেন যে, জীবনে কোন দিন বনু কুরাইযার মাটি মাড়াবো না এবং যে মাটিতে আল্লাহ্ পাক ও তদ্বীয় রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছি, সেখানে কখনও নিজের মুখ দেখাবো না। এভাবে  ছয় দিন অতিবাহিত হওয়ার পর আল্লাহ্ পাক তাঁর তওবা কবুল করতঃ খোশ খবরী দিয়ে আয়াত শরীফ নাযিল করেন,

واخرون اعترفوا بذنوبهم خلطوا عملا صالحا واخر سيئا عسى الله ان يتوب عليهم ان الله غفور رحيم.

অর্থঃ- “আর কোন কোন লোক এমন রয়েছে, যারা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করেছে, তারা একটি সৎ কর্মের সাথে অপর একটি অসৎ কর্ম মিশ্রিত করেছে। আল্লাহ্ পাক তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত করুণাময়।” (সূরা তওবা-১০২)

পরে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, নিজ হস্ত মুবারকে তাঁর বাঁধন খুলে তাঁকে মুক্ত করে দেন। (তাফসীরে জালালাইন, সীরাতে ইবনে হিশাম) মূলকথা হলো, আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যা গোপনীয় ছিলো, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ যা গোপন রাখেন সেটাই হচ্ছে পীর ছাহেব এবং তাঁর দরবার শরীফের গোপনীয় বিষয়। আর মুরীদগণ সেটাই গোপন রাখেন। সুতরাং এখানে বিনা তাহক্বীকে ধারণাবশতঃ অন্য কিছু সন্দেহ করা মোটেও শরীয়তসম্মত নয় কেননা, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ان بعض الظن اثم. অর্থাৎ- “অনেক ধারণা বা সন্দেহই গুনাহ্র কারণ।” (সূরা হুজুরাত-১২) (চলবে)

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

 সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব