ক্বারী মুহম্মদ আব্দুল বারী, গোড়ান, ঢাকা
মুহম্মদ সোহেলুর রহমান, রামপুরা, ঢাকা
সুওয়ালঃ সম্প্রতি ‘আহলে হাদীছ লাইব্রেরী ঢাকা’-এর সৌজন্যে প্রকাশিত একটি হ্যান্ডবিলে ‘শবে বরাত’ সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক কতিপয় উক্তি করা হয়েছে। কুরআন-সুন্নাহ্র নিরিখে সেসব কতটুকু সঠিক তা আপনাদের বহুল পঠিত, তাজদীদী মুখপত্র ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশ করলে বিভ্রান্তির নিরসণ হতো এবং সঠিক বিষয়টি উন্মোচিত হয়ে আওয়ামুন্ নাস খুবই উপকৃত হতো।
আপনাদের জ্ঞাতার্থে হ্যান্ডবিলের একটি মূল কপি প্রেরণ করা হলো। এতে আমাদের মনে যেসব প্রশ্নের উদয় হয়েছে তাহলো-
১. শবে বরাত কি? শবে বরাত-এর অর্থ কি? অর্ধেক ফারসী আর অর্ধেক আরবী সহযোগে শরীয়তে কোন নাম হতে পারে কি-না? শবে বরাত সম্পর্কে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে কোন তথ্য পাওয়া যায় কি-না?
২. কখন থেকে শবে বরাত শুরু হয়? শবে বরাত সম্পর্কে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন নির্দেশ-বাণী আছে কি-না?
৩. অর্ধ শা’বানের রাতটি ভাগ্য রজনী নামে নামকরণ কি বিদ্য়াত?
৪. নফল ইবাদতের মাধ্যমে রাত্রি জাগরণ ও দিনের বেলায় রোযা পালন করা কি বিদ্য়াত?
৫. এর সমর্থনে সূরা দুখানের ৩-৪নং আয়াত শরীফ পেশ করা সঠিক কি-না? ‘লাইলাতুম্ মুবারাকাহ্’ বলতে ‘লাইলাতুল ক্বদরকে’ বুঝানো হয়েছে? না ‘শবে বরাতকে’ বুঝানো হয়েছে?
৬. শবে বরাতে রিযিক বৃদ্ধি করা হয় এবং কতজন জন্মগ্রহণ করবে ও কতজন মৃত্যুবরণ করবে তা ধার্য্য করা হয়। এটা কুরআন-সুন্নাহ্ সম্মত কি-না?
৭. অর্ধ শা’বানের রাতে আলফিয়াহ বা রাগায়িব নামক কোন নামায আছে কি-না?
৮. অর্ধ শা’বানের রাতে কবর যিয়ারত করা নাকি বিদ্য়াত?
৯. হালুয়া-রুটি ও রকমারি খাদ্য প্রস্তুত করা ও বিলি করা নাকি বিদ্য়াত?
১০. অর্ধ শা’বান উপলক্ষে আয়োজিত মাহ্ফিল বিদয়াত কি-না?
১১. শবে বরাত উপলক্ষে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালত ছুটি ঘোষণা করা নাকি বিদ্য়াত চর্চার সুযোগ দেয়া?
১২. সউদী আরবের দারুল ইফতার সাবেক প্রধান ‘আব্দুল আযীয আব্দুল্লাহ বিন বায’-এর শবে বরাত পালন করা ও এদিনে রোযা রাখা বিদ্য়াত বলে অভিহিত করা কতটুকু সঠিক?
আশা করি উল্লিখিত প্রশ্নসমূহের দলীলভিত্তিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ মহান আল্লাহ পাক স্বীয় কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
فسئلوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون.
অর্থঃ- “তোমরা আহলে যিকির তথা আল্লাহওয়ালাগণকে জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জান।” (সূরা আম্বিয়া/৭)
যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত উপরোক্ত আয়াত শরীফের হাক্বীক্বী মিছদাক্ব। আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন-এর লক্ষ্যস্থল ওলী, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ওসীলায় এ পত্রিকাটি উম্মাহ্র জন্য শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত যার প্রতিটি লিখাই আক্বীদা-আমল হিফাযতকারী ও পরিশুদ্ধকারী। প্রসঙ্গতঃ সুওয়ালে উল্লিখিত প্রশ্নসমূহের ধারাবাহিক জাওয়াব পেশ করা হলো-
(ধারাবাহিক)
৭. অর্ধ শা’বানের রাতে আলফিয়াহ বা রাগায়িব নামক কোন নামায আছে কি-না?
এর জবাব হলো, হ্যাঁ, আলফিয়াহ বা রাগায়িব উপলক্ষে নামায রয়েছে তবে এ নামায অর্ধ শা’বানের রাতে নয় বরং রজব মাসের প্রথম জুমুয়ার রাতে।
এখানে শবে বরাত বিরোধী ওহাবী, খারিজী, জামাতী, তাবলীগী ও লা-মাযহাবীদের চরম নাদানী ও জিহালতী দেখে আশ্চর্য হতে হয় যে, তারা শবে বরাতের বিরোধিতা করতে গিয়ে রজব মাসে অনুষ্ঠিত আলফিয়াহ বা রাগায়িবকে শা’বান মাসের সাথে লাগিয়ে দিয়েছে।
মূলতঃ হক্বের বিরোধিতা করলে এরূপই হয়ে থাকে। পর্যায়ক্রমে ইলম্ সলব হয়, বিবেক-বুদ্ধি লোপ পায়, আমল নষ্ট হয়, ঈমান-আক্বীদা বিধ্বস্ত হয়, পরিনামে জাহান্নামের ইন্ধন হতে হয়।
উল্লেখ্য যে, রজব মাসের প্রথম জুমুয়ার রাতটি হচ্ছে ‘লাইলাতুর রাগায়িব’ বা রাগায়িবের রাত। এটি ফযীলতপূর্ণ রাতসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি রাত। এ মহান রাত্রিতে যিনি নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তিনি তাঁর আম্মার রেহেম শরীফে তাশরীফ নেন।
এ মুবারক রাত্রির ফযীলত প্রসঙ্গে যিনি হাম্বলী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “লাইলাতুর রাগায়িবের ফযীলত শবে ক্বদর, শবে বরাত এবং অন্যান্য ফযীলত পূর্ণ দিন-রাত্রির চেয়েও বেশী।” তিনি যখন এ বক্তব্য পেশ করলেন, তখন সমসাময়িক আলিম-উলামা, ইমাম-মুজতাহিদগণ তাঁর নিকট এসে বললেন, হুযূর! শবে ক্বদর, শবে বরাত এবং অন্যান্য ফযীলতপূর্ণ দিন-রাত্রির ফযীলত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু লাইলাতুর রাগায়িব বা শবে রাগায়িবের বর্ণনা তো কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে নেই, তাহলে কিভাবে এ রাত্রির ফযীলত উল্লিখিত ফযীলতপূর্ণ দিন-রাত্রির চেয়ে বেশী হতে পারে? তখন হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আপনারা কি জানেন, লাইলাতুর রাগায়িব কোন রাত্রিকে বলে? তারা জানেন না বলে স্বীকার করলে, তিনি লাইলাতুর রাগায়িবের পরিচয় তুলে ধরলেন, লাইলাতুর রাগায়িব হচ্ছে ঐ রাত্রি যে রাত্রিতে আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর আম্মার রেহেম শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। এ রাত্রির ফযীলত অন্যান্য সমস্ত ফযীলতপূর্ণ দিন-রাত্রির চেয়ে বেশী এই জন্য যে, যদি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর আম্মার রেহেম শরীফে অতঃপর যমীনে না আসতেন তাহলে শবে ক্বদর, শবে বরাত এবং অন্যান্য ফযীলতপূর্ণ দিন-রাত কোনটিই আসতোনা। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আগমনের ওসীলাতেই শবে ক্বদর, শবে বরাতসহ সমস্ত ফযীলতপূর্ণ দিন-রাত্রি এসেছে। কাজেই লাইলাতুর রাগায়িবের ফযীলত সবচেয়ে বেশী। (সুবহানাল্লাহ)
তিনি যখন লাইলাতুর রাগায়িবের পরিচয় পেশ করলেন, তখন সকল আলিম -উলামা, ইমাম-মুজতাহিদগণ নির্দিধায় তা মেনে নিলেন।
ছালাতুর রাগায়িব সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن انس رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم ذكر صلوة الرغائب وهى اول ليلة جمعة من رجب فصلى فيها بين المغرب والعشاء ثنتى عشرة ركعة بست تسليمات كل ركعة بفاتحة الكتاب والقدر ثلثا وقل هو الله احد ثنتى عشرة مرة فاذا فرغ من صلوته قال اللهم صلى على محمد ن النبى الامى وعلى اله بعد ما سلم سبعين مرة ثم سجد سجدة وقال فى سجوده سبوح قدوس رب الملئكة والروح سبعين مرة ثم رفع رأسه وقال رب اغفر وارحم وتجاوز عما تعلم انك انت العلى الاعظم. فى رواية اخرى الاعز الاكرم سبعين مرة ثم سجد وقال مثل ما قال فى السجدة الاولى ثم سأل الله وساجد حاجته فان الله لا يرد سائلد.
অর্থঃ- হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, নিশ্চয়ই রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উল্লেখ করেন যে, রাগায়িবের নামায হচ্ছে রজব মাসের প্রথম জুমুয়ার রাতের নামায। তিনি এ রাতে মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে ৬ সালামে ১২ রাকায়াত নামায আদায় করেন। প্রত্যেক রাকায়াতে সূরা ফাতিহার সাথে সূরা ক্বদর তিনবার এবং সূরা ইখলাছ ১২ বার পড়েন। অতঃপর নামায শেষ করে ৭০ বার এই দুরূদ শরীফ পাঠ করেন,
اللهم صلى على محمد ن النبى الامى وعلى اله وسلم.
(আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন্ নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লিম)
অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ পাক! নবীগণের লক্ষ্যস্থল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর আল ও ইয়ালগণের উপর খাছ রহমত ও খাছ শান্তি নাযিল করুন। অতঃপর সিজদা করেন এবং সিজদাতে গিয়ে ৭০ বার এই তাসবীহ পাঠ করেন,
سبوح قدوس رب الملئكة والروح.
(সুব্বূহুন কুদ্দূসুন রব্বুল মালায়িকাতি ওর্য়া রূহি)
অর্থাৎ- “সমস্ত তাসবীহ ও সমস্ত পবিত্রতা ফেরেশতা ও রূহগণের রব আল্লাহ পাক-এর জন্যে।” অতঃপর মাথা মুবারক উঠিয়ে এই দুয়া পাঠ করেন,
رب اغفر وارحم وتجاوز عما تعلم انك انت العلى العظيم.
(রব্বির্গ্ফি ওর্য়াহাম ওয়া তাজাওয়ায্ আম্মা তা’লামু ইন্নাকা আন্তাল আলিয়্যূল আ’যামু)
অর্থাৎ- হে আমার রব! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, রহম করুন, এবং যা আমার জন্য ভাল মনে করেন তা আমার জন্য বরাদ্দ বা সাব্যস্ত করুন। নিশ্চয়ই আপনি সুউচ্চ ও সুমহান মর্যাদার অধিকারী।”
অপর বর্ণনায় রয়েছে, উচ্চতর ইজ্জত ও সম্মানের অধিকারী। অতঃপর আরেক সিজদা করেন এবং সিজদাতে গিয়ে প্রথম সিজদার ন্যায় দুয়া করেন, অতঃপর সিজদা অবস্থায় নিজের যা যা প্রয়োজন তা আল্লাহ পাক-এর নিকট সুওয়াল করেন। কারণ নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সুওয়ালকারীকে ফিরিয়ে দেননা। (রযীন, মা ছাবাতা মিনাস্ সুন্নাহ)
অতএব, আলফিয়াহ বা রাগয়িব নামাক নামায বলতে নামায রয়েছে তবে তা রজব মাসের প্রথম জুমুয়ার রাতে। অর্ধ শা’বানের রাতে নয়। (চলবে)
খন্দকার সেলিম আহমদ
পাহাড়কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল
সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী/২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত মীলাদ-ক্বিয়ামের সমালোচনা করতে গিয়ে যে বক্তব্যগুলো পেশ করেছে তন্মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
১. প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি নাজায়েয। কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা, কিয়াসে এর কোন প্রমাণ নেই। বরং বূযুর্গদের আমল দ্বারা প্রমাণিত। তাই যদি কেউ মহাবুযুর্গ হন, কুরআন সুন্নাহর মুকাবিলায় তার আমল দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
২. বাদশাহ মুজাফ্ফার উদ্দিন কৌকুরী এবং খাজা তক্বী উদ্দীন সুবকী যারা এই মীলাদ- ক্বিয়ামের প্রবর্তন করেন তাদের এ আমলটি কুরআন সুন্নাহর বিরোধী বিধায় তা শরীয়তের দলীল হিসেবে গ্রহণ যোগ্য নয়।
৩. হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানে ক্বিয়াম করার প্রমাণ হাদীছ শরীফে উল্লেখ নেই। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানে ক্বিয়াম করেননি। (নাউযুবিল্লাহ)
৪. বরং মিশকাত শরীফে বর্ণিত হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সম্মানে দাঁড়ানোকে অপছন্দ করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ)
৫. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবে-তাবিয়ীন, চার মাযহাবের ইমাম রহতুল্লাহি আলাইহিমগণ থেকে নিয়ে শুরু করে ৭০০ (সাতশত) বছর পর্যন্ত কোন নবী প্রেমিক নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে বা মুহববতে ক্বিয়াম করেননি।
৬. পীর, ওস্তাদ, পিতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী প্রমুখ সম্মানিত ব্যক্তিগণের সম্মানে দাঁড়ানো জায়িয। কারণ, তারা সামনে উপস্থিত। আর মীলাদে দাঁড়ানো জায়িয নেই। কারণ, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুপস্থিত। (নাউযুবিল্লাহ)
৭. একজন নবীর পক্ষে একাধিক মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া সম্ভব নয়। (নাউযুবিল্লাহ)
এছাড়া মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী/২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।
উল্লিখিত বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে তারা তাদের নিজেদের লিখিত কিছু কিতাবের নাম উল্লেখ করেছে যা মুতাবার বা নির্ভরযোগ্য নয়; অনুসরনীয় ইমাম মুজতাহিদগণের কিতাব থেকে কোন কিতাবের নাম দলীল হিসেবে উল্লেখ করেনি বা করতে পারেনি।
এখন আমার সুওয়াল হলো, প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীল সম্মত? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কে হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে এবং অপর একটি পত্রিকার প্রশ্নোত্তর বিভাগে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধতো হয়নি বরং সম্পূর্ণই ডাহামিথ্যা, ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহ্গণের সর্বজনমান্য ও স্বীকৃত বিশ্ববিখ্যাত ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাব সমূহের বক্তব্যের বিপরীত ও বিরুদ্ধমত। যা ইতোপূর্বে আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ”-এর অনেক সংখ্যায় খণ্ডন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। আর ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ’-এর জাওয়াবকে খণ্ডন করা হাটহাজারী মৌলভীদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ্।
দ্বিতীয়তঃ আমাদের “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ, রাজারবাগ শরীফ-এর পক্ষ থেকে মীলাদ-ক্বিয়াম বিরোধীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ দেয়া হয় যে, “কেউ যদি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস দ্বারা মীলাদ-ক্বিয়াম নাজায়িয প্রমাণ করতে পারে, তাহলে তাকে দুই হাজার পাউন্ড পুরস্কার দেয়া হবে।”
কিন্তু এখন পর্যন্ত মীলাদ-ক্বিয়াম বিরোধীতাকারীরা ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ’-এর সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণের হিম্মত দেখাতে সমর্থ হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ্।
এরপরেও হাটহাজারীর মৌলভী এবং তাদের সকল সমজাতীয়রা বারবার মীলাদ ক্বিয়াম সম্পর্কে বিনা তাহক্বীকে ও বিনা দলীলে উক্ত ভুলেরই পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে।
যেমন, উল্লিখিত প্রথম বক্তব্যের প্রথমেই তারা বলেছে, “প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি নাজায়েয।”
এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই দলীলবিহীন, ডাহামিথ্যা ও কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ, কুরআন শরীফের কোন্ আয়াত শরীফে প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি নাজায়িয বলা হয়েছে এবং হাদীছ শরীফের কোন্ হাদীছ শরীফে প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি নাজায়িয বলা হয়েছে, এবং ইজমা- ক্বিয়াসের কোথায়, কোন্ ইবারতে প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি নাজায়িয বলা হয়েছে, তা হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা ও ক্বিয়াসের ইবারতসহ দলীল উল্লেখ করেনি।
সুতরাং তাদের দলীলবিহীন, ইবারতবিহীন, মনগড়া ও ডাহামিথ্যা বক্তব্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, মহান আল্লাহ্ পাক বলেছেন,
هاتوا برهانكم ان كنتم صدقين.
অর্থঃ- “যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো, তাহলে দলীল-প্রমাণ পেশ কর।” (সূরা বাক্বারা-১১১)
আর মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ পাক-এর লা’নত। কারণ আল্লাহ পাক বলেন,
لعنت الله على الكذبين.
অর্থঃ- “মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ পাক-এর লা’নত।” (সূরা আলে ইমরান-৬১)
দ্বিতীয়তঃ উল্লিখিত প্রথম বক্তব্যের দ্বিতীয় অংশে তারা বলেছে, “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা, ক্বিয়াসে-এর কোন প্রমাণ নেই।”
এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের এ বক্তব্যও ডাহামিথ্যা ও কুফরীমূলক হয়েছে।
কারণ, তারা তাদের এ বক্তব্যে “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা, কিয়াস অস্বীকার করেছে। অথচ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা, কিয়াসে-এর অনেক প্রমাণ রয়েছে।
(ধারাবাহিক)
ইজমা, ক্বিয়াসে তথা ইমাম-মুজতাহিদ, সলফে-ছালেহীন, বুযুর্গানে দ্বীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ থেকে মীলাদ ও ক্বিয়ামের প্রমাণ।
এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে,
وقال حسن البصرى رضى الله عنه وددت لو كان لى مثل جبل أحد ذهبا فانفقته على قرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم.
অর্থঃ- “(বিশিষ্ট তাবিয়ী) হযরত হাসান বছরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকত তাহলে আমি তা নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফ পাঠ উপলক্ষে ব্যয় করতাম।” (সুবহানাল্লাহ্)
সাইয়্যিদুত ত্বয়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
من حضر مولد النبى صلى الله عليه وسلم وعظم قدره فقد فاز بلإيمان.
অর্থঃ “যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফে উপস্থিত হবে এবং উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করবে সে তার ঈমানের দ্বারা সাফল্য লাভ করবে। অর্থাৎ সে বেহেশ্তি হবে। (সুবহানাল্লাহ্) (আন্ নি’মাতুল কুবরা)
وقال الامام الشافعى رحمة الله عليه من جمع لمولد النبى صلى الله عليه وسلم إخوانا وهيأ طعاما واخلى مكانا وعمل إحسانا وصار سببا لقرائته بعثه الله يوم القيامة مع الصديقين والتهداء والصالحين ويكون فى جنات النعيم.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদ শরীফ পাঠ উপলক্ষে লোকজন একত্রিত করলো এবং খাদ্য তৈরী করলো ও জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং মীলাদ পাঠের জন্য উত্তম ভাবে (তথা সুন্নাহ ভিত্তিক) আমল করলো তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক হাশরের দিন ছিদ্দীক, শহীদ, ছালিহীনগণের সাথে উঠাবেন এবং তাঁর ঠিকানা হবে জান্নাতে নাঈমে।” (সুবহানাল্লাহ্)
قال معروف الكرخى قدس الله سره من هيا طعاما لاجل قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم وجمع اخوانا واوقد سراجا ولبس جديدا وتبخر وتعطر تعظيما لمولد النبى صلى الله عليه وسلم حشره الله يوم القيامة مع الفرقة الاولى من النبيين وكان فى اعلى عليين.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম মা’রুফ কারখী কাদ্দাসাল্লাহু সিররাহু রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফ পাঠের কারণে খাদ্য প্রস্তুত করবে এবং নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফের সম্মানার্থে মুসলমান ভাইদেরকে একত্রিত করবে, প্রদীপ বা বাতি জ্বালাবে, নতুন পোষাক পরিধান করবে, (সুগন্ধির উদ্দেশ্যে) ধুপ জ্বালাবে এবং আতর-গোলাপ মাখবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক তার হাশর-নশর করবেন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রথম দলের সাথে এবং সে সুউচ্চ ইল্লীনে অবস্থান করবে।”
وقال سلطان العارفين الامام جلال الدين السيوطى قدس الله سره ونور ضريحه فى كتابه المسمى بالوسائل فى شرح الشمائل ما من بيت أومسجد أومحلة قرئ فيه مولد النبى صلى الله عليه وسلم إلا حفت الملائكة ذلك البيت أوالمسجد أو المحلة وصلت الملائكة على أهل ذلك المكان وعمهم الله تعالى بالرحمة والرضوان وأماالمطوقون بالنور يعنى جبرائيل وميكائيل وإسرافيل وعزرائيل عليهم السلام فإنهم يصلون على من كان سببا لقرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم.
অর্থঃ- “সুলতানুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “ওসায়িল ফী শরহি শামায়িল” নামক কিতাবে বলেন, যে কোন ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয়, তাহলে সে ঘরে অথবা সে মসজিদে অথবা সে মহল্লায় অবশ্যই আল্লাহ পাক-এর ফেরেশ্তাগণ বেষ্টন করে নেন। আর তাঁরা সে স্থানের অধিবাসীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন। আর আল্লাহ পাক তাদেরকে স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বারা সজ্জিত প্রধান চার ফেরেশ্তা, অর্থাৎ হযরত জিব্রাঈল, মীকাঈল, ইসরাফিল ও আজরাঈল আলাইহিমুস্ সালাম মীলাদ শরীফ পাঠকারীর উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন।” (সুবহানাল্লাহ্)
সর্বোপরি ইজমা, ক্বিয়াস তথা ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাব থেকেও মীলাদ-ক্বিয়ামের অনেক প্রমাণ রয়েছে
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর কিতাবে লিখেন,
من عظم ليلة مولده بما امكنه من التعظيم والاكرام كان من الفائزين بدار السلام.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি তার সাধ্য ও সামর্থ অনুযায়ী নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফকে ইজ্জত ও সম্মান করলো তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে সম্মানিত করা হবে।
বিখ্যাত মুহাদ্দিস, শায়খ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “কারামাতে আযীযিয়াহ্” নামক কিতাবে উল্লেখ করেন,
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- “সারা বৎসরে এই ফকীরের ঘরে দুই বার মাহ্ফিল হয়ে থাকে। প্রথমটি আশুরা অথবা তার ২/১ দিন পূর্বে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মাহ্ফিলে ৪০০/৫০০ কখনো হাজার লোকও সমবেত হয়ে থাকে। উক্ত মাহ্ফিলে ইমাম হাসান, হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমা-এর জীবনী হাদীস শরীফ হতে আলোচনা করা হতো। ….
দ্বিতীয় মাহ্ফিলটি হতো মীলাদ শরীফের মাহ্ফিল। এতে রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে পূর্ব নিয়ম অনুযায়ী (হাজার) লোক উপস্থিত হতো এবং দরূদ শরীফ পাঠে মশগুল হতো। অতঃপর আমি নিজেই সেখানে উপস্থিত হতাম।”
বাংলার মূলুকে প্রায় ৫৫ বৎসর দ্বীনের তথা ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাছাউফের প্রচার-প্রসারকারী, হযরত মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর তদ্বীয় “রিসালাতুল ফায়সালা” কিতাবে উল্লেখ করেন যে,
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- “আমি ‘মুলাখ্যাছ’ কিতাবে পঁচিশজন আলিম ও ইমামের (قول) বাণী ও (فعل) কর্ম দ্বারা এবং নিজ তরীক্বার বুযুর্গদের বাণী ও উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত দলীলের ভিত্তিতে মীলাদ শরীফকে যথার্থভাবেই (জায়েয) সাব্যস্ত করেছি। মীলাদ নিষেধকারী ব্যক্তি হলেন মাত্র ফাকেহানী মালেকী। সুতরাং (মীলাদ জায়েয বলে ফতওয়া দানকারী) বৃহৎ জামায়াতের মতের বিরুদ্ধে তার এ ধোকাবাজী মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। আর একজন মুজ্তাহিদ ও মক্কা শরীফের দু’জন বিশ্বস্ত ও প্রসিদ্ধ প্রাচীন আলিমের ফতওয়া ও বিখ্যাত কিতাবসমূহ এবং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত দলীলের ভিত্তিতে মীলাদ শরীফে “ক্বিয়াম” করা জায়িয প্রমাণ করেছি। আর উক্ত ক্বিয়াম, ক্বিয়ামে তা’যীমী বিধায় এটাকে হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু-এর থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফ দ্বারা (জায়িয) প্রমাণ করেছি।”
“মুলাখ্খাছ” কিতাবে উল্লেখ করেন,
قال علامة السيوطى اى نفع احسن من عمل المولد والقيام وانهم يهيجان محبة النبى صلى الله عظمته وجلالته فى قلب فاعله.
অর্থঃ- “আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মীলাদ ও ক্বিয়াম অপেক্ষা অধিকতর উত্তম বা ফলদায়ক আমল আর কি হতে পারে? কারণ এর দ্বারা মীলাদ ক্বিয়াম কারীর হৃদয়ে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বত, মর্যাদা ও মহিমার উদ্দীপনা জেগে উঠে।”
আশিকে রসূল, হযরতুল আল্লামা শাহ্ আব্দুল হক এলাহাবাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তদীয় “দুররুল মুনাজ্জাম” কিতাবে লিখেন,
ان القيام عند وضعه صلى الله عليه وسلم لتعظيم النبى صلى الله عليه وسلم.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বরকতময় বিলাদত শরীফের আলোচনার সময় তাঁর সম্মানার্থে বা তা’যীম-তাক্রীমের জন্যেই ক্বিয়াম করা হয়।” (আল উসীলাহ্-৬৮)
“ইক্বদুল জাওয়াহির” নামক কিতাবের ২৯নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
قد استحسن القيام عند ذكر ولادته الشريفة صلى الله عليه وسلم ائمة ذو رواية ودراية.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফের আলোচনাকালে ক্বিয়াম করাকে বিচক্ষণ ইমামগণ মুস্তাহ্সান বলেছেন।”
“ইশবাউল কালাম” নামক কিতাবের ৫৪নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
قد اجمعة الامة المحمدية من الاهل السنة والجماعة على استحسان القيام المذكور وقال عليه السلام لاتجتمع امتى على الضلالة.
অর্থঃ- “উম্মতে মুহম্মদীর আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সকল আলিম মীলাদ শরীফের ক্বিয়াম মুস্তাহ্সান হওয়ার ব্যাপারে ইজ্মা বা ঐক্যমত পোষণ করেন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার উম্মত (আলিমগণ) কখনোই গোমরাহীর উপর একমত হবেনা।”
মাওলানা আশরাফ আলী থানবী ছাহেবসহ সকল উলামায়ে দেওবন্দের পীর ও মুর্শিদ, শায়খে আরব ওয়াল আ’যম, হযরতুল আল্লামা, হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “হাফতে মাসায়েল” কিতাবে উল্লেখ করেন যে,
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- “মীলাদ শরীফের মাহ্ফিলকে বরকত লাভের ওসীলা মনে করে আমি প্রতি বৎসর মীলাদ শরীফের মজলিস করি এবং মীলাদ মাহ্ফিলে ক্বিয়াম করার সময় আমি অশেষ আনন্দ ও স্বাদ উপভোগ করি।”
মাওলানা আশরাফ আলী থানবী ছাহেব তাঁর “তরীকায়ে মীলাদ” কিতাবের ৮ম পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
ভাবার্থঃ “ঐ সকল কার্যাবলী (অর্থাৎ শীরনী, ক্বিয়াম ইত্যাদি) প্রকৃতপক্ষে মুবাহ্ কাজসমূহের অন্তর্ভূক্ত। তাতে কোন ক্ষতি নেই এবং সেজন্য প্রকৃত মীলাদ শরীফের ব্যাপারে কোন প্রকার নিষেধ আসতে পারেনা।”
মাওলানা আশরাফ আলী থানবী ছাহেব তাঁর “ইমদাদুল ফতওয়ার” ৪র্থ খণ্ডে ৩২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন,
والاحتفال بذكر الولادة ان كان خاليا عن البدعات المروجة جائزبل مندوب كسائر اذكاره صلى الله عليه وسلم- والقيام عند ذكر ولادته الشريفة حاشا الله ان يكون كفرا.
অর্থঃ- “হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফের বর্ণনা করার জন্য মাহ্ফিল করা জায়িয বরং মুস্তাহাব, যখন উহা (হিন্দুস্থানে) প্রচলিত বিদ্য়াত হতে পবিত্র হবে এবং (মীলাদ শরীফে) তাওয়াল্লুদ শরীফ পাঠ করার সময় ক্বিয়াম করা কখনো কুফরী নয়।”
“সীরাতে হালবীয়া” কিতাবের ১ম খন্ড ৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
جرت عادة كثيرة من المحبين اذا سمعوا بذكر وضعه صلى الله عليه وسلم ان يقاموا لتعظيم النبى صلى الله عليه وسلم.
অর্থঃ- “হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছল্লাম-এর অধিকাংশ মুহব্বতকারীর স্বভাব এটাই ছিল যে, তারা হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফের কথা শুনে সাথে সাথেই হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে ক্বিয়াম করেছেন।”
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তা’যীম করা সম্পর্কে আল্লামা কাজী আয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “কিতাবুশ শিফায়” উল্লেখ করেন,
اعلم ان حرمة النبى صلى الله عليه وسلم بعد موته وتوقيره وتعظيمه لازم كما كان حال حياته وذلك عند ذكره صلى الله وذكر حديثه وسنته وسمع اسمه وسيرته.
অর্থঃ- “জেনে রাখ! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওফাতের পর তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা বা তা’যীম-তাক্রীম করা ঐরূপই ওয়াজিব, যেরূপ হায়াত মুবারকে ওয়াজিব ছিল। কাজেই তাঁর বরকতময় জীবনী শ্রবণকালে, পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকালে, নাম মুবারক উচ্চারণকালে ও তাঁর বরকতময় ও উৎকৃষ্টতম আখলাকের কথা শ্রবণকালে, তাঁর প্রতি তা’যীম-তাক্রীম বা সম্মান প্রদর্শন করা ওয়াজিব।”
আর এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, মীলাদ শরীফে যে ক্বিয়াম করা হয়, তা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন বা তা’যীম-তাক্রীম করার জন্যেই করা হয়।
সুতরাং প্রমাণিত হলো, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী ছাহেব, গাঙ্গুহী ছাহেবসহ সকল ওলামায়ে দেওবন্দের পীর ও মুর্শিদ শায়খুল আরব ওয়াল আ’যম, আল্লামা হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বয়ং নিজেই মীলাদ-ক্বিয়াম করেছেন, যা তিনি তাঁর “হাফ্তে মাসায়েল ও মরকুমাতে ইমদাদিয়া” কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
তাছাড়া বড় কাটারা ও লালবাগ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা, মুজাহিদে আ’যম, খাদিমুল ইসলাম, হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী ছাহেব ক্বিয়াম সম্পর্কে তাঁর “তাসাউফ তত্ত্ব” কিতাবে লিখেন যে, “মীলাদ শরীফের মধ্যে ক্বিয়াম করা আদব, শরাফত বা ভদ্রতা।”
উপরোক্ত কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ পাক স্বয়ং নিজেই কুরআন শরীফে তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছানা-সিফত করেছেন। আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে স্বয়ং নিজেই নিজের ছানা-ছিফত করেছেন। শুধুমাত্র এতটুকুই নয় বরং স্বয়ং আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের দ্বারা করিয়েছেন। এবং ইজমা, ক্বিয়াসে তথা ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাব সমুহতেও এর বর্ণনা রয়েছে।
আর মীলাদ শরীফেরও আলোচ্য বিষয়ই হচ্ছে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছানা-ছিফত করা। তাহলে কি করে একথা বলা যেতে পারে যে, “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা, ক্বিয়াসে এর কোন প্রমাণ নেই।”?
প্রকৃতপক্ষে তাদের এ বক্তব্য দ্বারা তারা “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা, ক্বিয়াসকেই অস্বীকার করেছে। যার ফলে তারা ঈমান ও ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেছে। কারণ, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত শুধুমাত্র তাওহীদের উপর ঈমান আনলেও ক্বিয়ামত পর্যন্ত কোন ব্যক্তির পক্ষে ঈমানদার হওয়া সম্ভব নয় বা কোন ব্যক্তি ঈমানদার হতে পারবে না।
মুসাম্মত সানজিদা আক্তার
সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত
মুহম্মদপুর, ঢাকা
সুওয়ালঃ অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়-
জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। তাদের সকল আমল হবে খুবই নিখূঁত ও সুন্দর। তাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে, তাদের রোযা দেখে তোমাদের রোযাকে তোমরা তুচ্ছ ও নগণ্য মনে করবে। তাদের আমল দেখে তোমরা তোমাদের আমলকে হেয় মনে করবে, তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার নিচে যাবেনা। তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন-প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। এদলের আমল যতই তোমাদেরকে আকৃষ্ট করুক না কেন, কখনই তাদের দলে যাবেনা। কারণ প্রকৃতপক্ষে এরা হবে ইসলাম হতে খারিজ, দ্বীন হতে বহির্ভূত। তীর যেমন ধনুক হতে বের হয়ে যায় সে আর কখনও ধনুকের নিকট ফিরে আসেনা। তেমনিই এরা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে, আর কখনও দ্বীনের পথে, কুরআন ও সুন্নাহ্র পথে ফিরে আসবেনা।
আমার প্রশ্ন হল, উপরোক্ত হাদীছ ছহীহ্ কি-না? ছহীহ্ হলে এ দ্বারা উদ্দেশ্য কারা? উক্ত হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতের কোন সম্পর্ক আছে কি-না? অনেকে এই হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতকে জড়াতে চান। উক্ত হাদীসের সঙ্গে তাবলীগ জামাতকে জড়ানো সঠিক কি-না?
জবাবঃ প্রশ্নে বর্ণিত হাদীছ ছহীহ্। মুহাদ্দিছীনে কেরাম উক্ত হাদীছসহ এ জাতীয় হাদীছসমূহের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এ সব হাদীছ দ্বারা একটি নির্ধারিত জামাত বা খারিজী ফেরক্বা নামে পরিচিত তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর খিলাফত আমলে এই হাদীছসমূহের বাস্তবতা এবং খাওয়ারেজদের অবস্থার সমন্বয় ঘটেছিল। যার দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে বলা চলে যে, এ হাদীছসমূহ দ্বারা একমাত্র খাওয়ারেজদেরকেই বুঝানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণাদি ছাড়া অন্য কোন জামাতকে এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করা যাবেনা।
কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়া তাবলীগ জামাতকে এই হাদীছসমূহের মেসদাক বা উদ্দেশ্য বানানো, তাদেরকে খাওয়ারেজ বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে মারাত্মক অন্যায় ও অপরাধ। তাবলীগের নিয়মনীতি ও কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই। বর্তমান বিশ্বে আল্লাহ্ তা’আলা তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে পথহারা, ঈমানহারা, হেদায়েত থেকে বঞ্চিত অসংখ্য মানুষকে হেদায়েত করেছেন, ঈমান আনার তাওফিক দান করেছেন। এছাড়া এ জামাতের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে অসংখ্য জগদ্বিখ্যাত আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ।
অতএব, তাবলীগ জামাতকে খারেজী জামাত বলা, মিথ্যা অপবাদ বৈ কিছুই নয়। (ফতহুল বারী ১২ঃ৩৫০, আল মিরকাত ৭ঃ১০৭)
উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-
(১) উল্লিখিত হাদীছ শরীফে বর্ণিত গুণাবলী প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে আছে কি?
(২) উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা কি শুধু খারিজী ফিরক্বার লোকদেরকেই বুঝানো হয়েছে? নাকি খারিজীদের ন্যায় আক্বীদা পোষণকারীদের ক্ষেত্রেও এ হাদীছ শরীফ প্রযোজ্য?
(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?
(৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?
(৫) কুরআন-সুন্নাহ্র কোথাও প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করার নির্দেশ আছে কি? প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করা কুরআন-সুন্নাহ্ মতে জায়িয কিনা?
কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কিত উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।
শুধু তাই নয়, তারা প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের সাফাই গাইতে গিয়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যা করেছে। সাথে সাথে “ছয় উছূলীদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী কোন আক্বীদা-আমল নেই” বলে তাদের নির্লজ্জ দালালী করে নিজেদেরকে অপব্যাখ্যাকারী ও মিথ্যাবাদীরূপে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিক দলীলভিত্তিক আলোচনা করলেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে।
তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-
(ধারাবাহিক)
ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে
উল্লিখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা
ও মিথ্যাচারীতার খণ্ডনমূলক জবাব-৩
প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?”
আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, পর্যায়ক্রমে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলোর সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো-
প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ
বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ১৩
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, “আলিম-জাহিল সকলেই দ্বীন প্রচার করবে এবং দ্বীনের তাবলীগের জন্য আলিম হওয়ার কোনই জরুরত নাই। কারণ, তারা মনে করে যে, দ্বীন প্রচার শুধু আলিমের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে দ্বীন ধ্বংস হয়ে যেত এবং এখনো যাবে। অর্থাৎ জাহিল লোক তাবলীগ করার কারণে দ্বীন টিকে ছিল এবং ভবিষ্যতেও টিকে থাকবে।” (তাবলীগ জামায়াতের সমালোচনা ও উহার সদুত্তর-৯৫ পৃষ্ঠা, মূলঃ শাঃ হাঃ জাকারিয়া সাহেব, অনুবাদক- মাওলানা মুহিব্বুর রহ্মান আহমদ এবং তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব নামক কিতাব-৯৪ পৃষ্ঠা, লেখক- মাওলানা ইসমাঈল হোসেন দেওবন্দী)
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের এ বক্তব্য অত্যন্ত আপত্তিকর, বিভ্রান্তিমূলক ও কুরআন-সুন্নাহ্, ইজমা ক্বিয়াসের সম্পূর্ণ বিপরীত। যা স্পষ্টতঃ কুফরী।
এ প্রসঙ্গে হযরত ইব্নে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত রয়েছে যে, একদিন এক লোক তাঁর সাক্ষাতে আসলে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কি কর?’ সে জাওয়াব দিল, ‘দ্বীন প্রচার করি।’ তখন তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি কি ঐ সকল আয়াত শরীফের আমল করেছ? যা কুরআন শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে
(১) সূরা সফের ২নং আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক বলেন,
يا يهاالذين امنوا لم تقولون مالا تفعلون.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা করনা, তা কেন বল?”
“তুমি কি এ আয়াত শরীফের আমল করেছ?” সে জাওয়াব দিল, না।
(২) তিনি আবার বললেন যে, আল্লাহ্ পাক সূরা বাক্বারার ৪৪নং আয়াত শরীফে বলেছেন,
اتأمرون الناس بالبر وتنسون انفسكم وانتم تتلون الكتاب.
অর্থঃ- “তোমরা কি মানুষকে সৎ কাজের আদেশ কর, আর নিজেদের ব্যাপারে ভুলে যাও? অথচ তোমরা কিতাব তিলাওয়াত করে থাক।”
“তুমি কি এ আয়াত শরীফের আমল করেছ?” সে জাওয়াব দিল, না।
(৩) পুণরায় তিনি বললেন, “তুমি কি ঐ আয়াত শরীফের আমল করেছ? যা হযরত শোয়াইব আলাইহিমুস্ সালাম তাঁর ক্বওমকে বলেছিলেন,
وما اريد ان اخالفكم الى ما انهاكم عنه.
অর্থঃ- “আমি এটা চাইনা যে, তোমাদেরকে যে কাজ থেকে নিষেধ করি, আমি তার খেলাফ করি। অর্থাৎ আমি যা বলি, তা করি আর যা বলিনা, তা করিনা।” (সূরা হুদ-৮৮)
তুমি কি এ আয়াত শরীফের আমল করেছ? সে জাওয়াব দিল, না।
তখন হযরত ইব্নে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাকে বললেন, “তুমি প্রথমে এ আয়াত শরীফসমূহের আমল কর, অতঃপর তুমি দ্বীন প্রচারের কাজে নিজেকে নিয়োজিত কর।” অর্থাৎ উপরোক্ত আয়াত শরীফের আমল ব্যতিরেকে তাবলীগে আম করা জায়িয নেই।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এই প্রমাণিত হলো যে, তাবলীগে খাছ মুবাল্লিগে আম ও খাছ উভয়ের জন্যেই ফরযে আইন। আর তাবলীগে আম শুধুমাত্র মুবাল্লিগে খাছ তথা হক্কানী আলিমগণের জন্যেই প্রযোজ্য, যা তাঁদের জন্যে ফরযে ক্বিফায়ার অন্তর্ভুক্ত।
অতএব, মুবাল্লিগে আম বা সাধারণ লোকদের জন্যে তাবলীগে আম করা কখনো শুদ্ধ হবেনা বরং তাদের জন্যে তা করা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম হবে।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, তাবলীগে আম যা ফরযে কিফায়া তা একান্তভাবেই হাক্কানী আলিম বা নায়িবে রসূলগণের দায়িত্ব ও কর্তব্য অর্থাৎ তাবলীগে আমে’র জন্য আলেম হওয়া জরুরী।
আর জাহিলদের জন্যে তাবলীগে আম করা অপরিহার্য তো নয়ই বরং জাহিলদের জন্যে তাবলীগে আম বা আমভাবে দ্বীন প্রচার করা কুরআন-সুন্নাহ্ ইজ্মা, ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম।
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, জাহিলদের দ্বীন প্রচার সম্পর্কিত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, বানোয়াট, ও জিহালতপূর্ণ। কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা, ক্বিয়াসের খেলাফ তো অবশ্যই। (চলবে)
মুহম্মদ সুলতান মাহমুদ, মিরপুর, ঢাকা
মুহম্মদ আহমদুল্লাহ কামালী
মাধবদী, নরসিংদী।
সুওয়ালঃ মাসিক মদীনা ফেব্রুয়ারী/২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-
প্রশ্নঃ চুল…রাখার সুন্নত কি?……
উত্তরঃ…চুল রাখার দুই তরীকা, এক বাবরি রাখা, দুই মু-ানো।….(শামী, আলমগীরী, বুখারী, মুসলিম)
এখন আমার সুওয়াল হলো- মাথা মুন্ডন করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি মাথা মুন্ডন করা চুল রাখার দুই তরীকার, এক তরীকা? দলীলসহ সঠিক জাওয়াব দিয়ে, আমাদের আক্বীদা আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।।
জাওয়াবঃ
মাথা মু-ন করা চুল রাখার কোন তরীকাই নয়; বরং বাবরী চুল রাখাই সুন্নত
মাথার চুল মু-ন করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। কারণ, মাসিক মদীনার এবং তাদের সমজাতীয়রা এমন একখানা হাদীস শরীফ উল্লেখ করতে পারবে না, যেখানে উল্লেখ আছে যে, “আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্ব ও ওমরা ব্যতীত অন্য সময় নিজ মাথার চুল মুবারক মুন্ডন করেছেন।”
বরং অসংখ্য ছহীহ্ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় বাবরী চুল মুবারক রাখতেন। সেহেতু সকল উম্মতে মুহম্মদীর জন্য সর্বদা বাবরী চুল রাখাই দায়েমী সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
বাবরী চুল সুন্নত-এর পক্ষে কতিপয় দলীল
নিম্নে আমরা অসংখ্য হাদীস শরীফ থেকে কয়েকখানা হাদীস শরীফ পেশ করলাম।
যেমন, হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,
عن انس رضى الله تعالى عنه كان يضرب شعر النبى صلى الله عليه وسلم منكبيه.
অর্থঃ- “হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাথার বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কাঁধ মুবারক পর্যন্ত লম্বা ছিলো।” (বুখারী শরীফ ২য় খন্ড ৮৭৬ পৃষ্ঠা, শামায়িলুত্ তিরমিযী, শামায়িলুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
عن انس رضى الله تعالى عنه قال كان شعر رسول الله صلى الله عليه وسلم الى شحمة اذنيه.
অর্থঃ- “হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কানের লতি মুবারক পর্যন্ত লম্বা ছিলো।” (আবূ দাউদ শরীফ ২য় খন্ড ২২৩ পৃষ্ঠা, বযলুল মাজহুদ ৬ষ্ঠ খন্ড ৭৬ পৃষ্ঠা, শামায়িলুত্ তিরমিযী, শামায়িলুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
عن انس رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يضرب شعره منكبيه.
অর্থঃ- “হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কাঁধ মুবারক পর্যন্ত প্রলম্বিত ছিলো।” (মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড ২৫৮ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ, নাসাঈ শরীফ ২য় খন্ড ২৯১ পৃষ্ঠা)
عن البراء رضى الله تعالى عنه قال كان النبى صلى الله عليه وسلم له شعر يبلغ شحمة اذنيه.
অর্থঃ- “হযরত বারায়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কানের লতি মুবারকে পৌঁছত।” (আবূ দাউদ শরীফ ২য় খন্ড ২২৪ পৃষ্ঠা, বযলুল মাজহুদ ৬খন্ড ৭৬ পৃষ্ঠা)
عن قتادة رضى الله تعالى عنه قال قلت لانس كيف كان شعر رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لم يكن بالجعد ولا بالسبط كان يبلغ شعره شحمة اذنيه.
অর্থঃ- “হযরত ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চুল মুবারক কেমন ছিলো? তিনি জবাবে বললেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক সম্পূর্ণরূপে কোঁকড়ানোও ছিলো না, আবার সম্পূর্ণরূপে সোজাও ছিলো না। উক্ত বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কানের লতি মুবারকে পৌঁছত।” (শামায়িলুত্ তিরমিযী ৪ পৃষ্ঠা, শামায়িলুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, জামউল ওসায়িল ফি শারহিশ্ শামায়িল ১ম খন্ড ৯৪ পৃষ্ঠা)
عن قتادة رضى الله تعالى عنه قال سالت انس بن مالك رضى الله تعالى عنه عن شعر رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال كان شعر رسول الله صلى الله عليه وسلم رجلا ليس بالسبط ولاالجعد بين اذنيه وعاتقيه.
অর্থঃ- “হযরত ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত আনাছ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চুল মুবারক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক না অধিক কোঁকড়ানো ছিলো এবং না অধিক সোজা ছিলো। বরং দু’অবস্থার মাঝামাঝি ছিলো। আর উক্ত বাবরী চুল মুবারক লম্বায় ছিলো, তাঁর উভয় কান ও তাঁর উভয় কাঁধ মুবারকের মাঝ বরাবর।” (বুখারী শরীফ ২য় খন্ড ৮৭৬ পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড ২৫৮ পৃষ্ঠা, নাসাঈ শরীফ ২য় খন্ড ২৭৫ পৃষ্ঠা, ইবনু মাজাহ্ ২৬৭ পৃষ্ঠা)
عن انس بن مالك رضى الله تعالى عنه قال كان شعر رسول الله صلى الله عليه وسلم الى نصف اذنيه.
অর্থঃ- “হযরত আনাছ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কান মুবারকের মাঝামাঝি (অর্ধ) পর্যন্ত লম্বা ছিলো।” (শামায়িলুত্ তিরমিযী ৩য় পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ ২য় খন্ড ২২৩ পৃষ্ঠা, নাসাঈ শরীফ ২য় খন্ড ২৭৬ পৃষ্ঠা ও ২৯১ পৃৃষ্ঠা, বযলুল মাজহুদ ৬ষ্ঠ খন্ড ৭৬ পৃষ্ঠা, জামউল ওসায়িল ফি শারহিশ্ শামায়িল ১ম খন্ড ৯০ পৃষ্ঠা)
عن البراء بن عازب رضى الله تعالى عنه قال مارأيت من ذى لمة ……… احسن من رسول الله صلى الله عليه وسلم له شعر يضرب منكبيه.
অর্থঃ- “হযরত বারায়া ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি লিম্মা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারক অবস্থায় … রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অপেক্ষা অধিক সুন্দর আর কাউকে দেখিনি। তার বাবরী চুল মুবারক দু’কাঁধ মুবারক পর্যন্ত লম্বা ছিলো।” (তিরমিযী শরীফ ১ম খন্ড ২০৫ পৃষ্ঠা, নাসাঈ শরীফ ২য় খন্ড ২৯১ পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ ২য় খন্ড ২২৩ পৃষ্ঠা, শামায়িলুত্ তিরমিযী, বযলুল মাজহুদ ৬ষ্ঠ খন্ড ৭৬ পৃষ্ঠা)
قال ورأيت له لمة تضرب قريبا من منكبيه.
অর্থঃ- “হযরত বারায়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আমি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর লিম্মা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারক দেখেছি। উক্ত বাবরী চুল মুবারক তার দু’কাঁধ মুবারকের কাছাকাছি লম্বা ছিলো।” (নাসাঈ শরীফ ২য় খন্ড ২৭৬ পৃষ্ঠা)
عن مالك ان جمته لتضرب قريبا من منكبيه …… قال شعبة شعره يبلغ شحمة اذنيه.
অর্থঃ- “হযরত মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জুম্মা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারক অবশ্যই তাঁর দু’কাঁধ মুবারকের কাছাকাছি লম্বা ছিলো। আর শু’বা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কানের লতি মুবারকে পৌঁছত।” (বুখারী শরীফ ২য় খন্ড ৮৭৬ পৃষ্ঠা)
جمته الى شحمتى اذنيه.
অর্থঃ- “নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জুম্মা বিশিষ্ট চুল মুবারক তার দু’কানের দু’ লতি মুবারক পর্যন্ত লম্বা ছিলো।” (নাসাঈ শরীফ ২য় খন্ড ২৯১ পৃষ্ঠা)
وكانت جمته تضرب شحمة اذنيه.
অর্থঃ- “রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জুম্মা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কানের লতি মুবারক পর্যন্ত লম্বা ছিলো।” (শামায়িলুত্ তিরমিযী ৪ পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ, জামউল ওসায়িল ফি শারহিশ্ শামায়িল ১ম খন্ড ৯৩ পৃষ্ঠা)
يجاوز شعره شحمة اذنيه اذا هو وفره.
অর্থঃ- “রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক যখন তাঁর দু’কানের লতি মুবারক অতিক্রম করে যেত তখন তিনি তাঁর বাবরী চুল মুবারক ওয়াফরা পর্যন্ত লম্বা করতেন।” (শামায়িলুত্ তিরমিযী ২ পৃষ্ঠা)
عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت كنت اغتسل انا ورسول الله صلى الله عليه وسلم من اناء واحد وكان له شعر فوق الجمة ودون الوفرة.
অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একই পাত্রে গোছল করতাম। রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক ছিলো জুম্মা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারকের উপরে এবং ওয়াফরা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারকের নিচে।” (শামায়িলুত্ তিরমিযী ৪ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ৩৮২ পৃষ্ঠা, মিরকাত শরীফ ৮ম খন্ড ৩০৭-৩০৮ পৃষ্ঠা, জামউল ওয়াসিল ফি শারহিশ্ শামায়িল ১ম খন্ড ৯২ পৃষ্ঠা)
عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت كان شعر رسول الله صلى الله عليه وسلم فوق الوفرة ودون الجمة.
অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক ছিলো ওয়াফরা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারকের উপরে এবং জুম্মা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারকের নিচে।”(আবূ দাউদ শরীফ ২য় খন্ড ২২৩-২২৪ পৃষ্ঠা, বযলুল মাযহুদ ৬ষ্ঠ খন্ড ৭৬ পৃষ্ঠা)
عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت كان لرسول الله صلى الله عليه وسلم شعر دون الجمة وفوق الوفرة.
অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চুল মুবারক ছিলো জুম্মার নিচে এবং ওয়াফরা-এর উপরে। অর্থাৎ জুম্মা এবং ওয়াফ্রা-এর মাঝামাঝি যাকে লিম্মা বলা হয়।” (ইবনে মাজাহ্ শরীফ ২৬৭ পৃষ্ঠা)
চার তরীকায় বাবরী রাখা সুন্নত
উপরোক্ত হাদীস শরীফের আলোকে প্রমাণিত হলো যে, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চার তরীকায় বা চার প্রকারে বাবরী চুল মুবারক রাখতেন, যাকে হাদীস শরীফের বর্ণনায় জুম্মা, লিম্মা, ওয়াফরা ও নিছফু উযুনাইহি বলে। অর্থাৎ (১) কানের লতি বরাবর, (২) কাঁধ ও কানের লতির মাঝামাঝি, (৩) কাঁধের কাছাকাছি, (৪) আবার কোন কোন সময় দু’কানের মাঝামাঝি।
এই চার তরীকায় বা চার প্রকারের যে কোন এক তরীক্বায় বা এক প্রকারে মাথার চুল লম্বা রাখা এবং তাতে সিঁথি তোলা খাছ সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
যেটা মাসিক মদীনার জিহালতির কারণে স্পষ্টভাবে উল্লেখ না করে বলেছে, “চুল রাখার দুই তরীকা, এক বাবরি রাখা, দুই মু-ানো।
অথচ চুল রাখার তরীক্বা বা পরিমাণ সুস্পষ্টরূপে হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে যা আমরা উপরে উল্লেখ করেছি। (চলবে)
মুহম্মদ মুহিউদ্দীন
সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত
সন্দ্বীপ শাখা, চট্টগ্রাম।
সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানী মাযহাবের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর- জানুয়ারী/২০০৩-০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে ‘বিতিরের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম এবং বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব পাবে বলে উল্লেখ করেছে।’’ তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ্, নাসায়ী থেকে দলীল হিসেবে কয়েকখানা হাদীছ শরীফও উল্লেখ করেছে।
আর হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ডিসেম্বর/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, ‘বিতির নামাযের পর দুই রাক্আত নফল নামায… দাঁড়িয়ে পড়া ভাল। কারণ, নফল নামায বিনা কারণে বসে পড়লে অর্ধেক সাওয়াব হয়।”
এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা হালকী নফল নামায সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে হাদীছ শরীফগুলো উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য। তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডনসহ হালকী নফল সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায যাকে “হালক্বী নফল” বলা হয়, তা দাঁড়িয়ে পড়া সম্পর্কে অখ্যাত মাসিক পত্রিকাদ্বয়ের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ হয়েছে। এবং ক্ষেত্রবিশেষে কুফরীমূলক হয়েছে।
স্মর্তব্য যে, সাধারণতঃ নফল নামায বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব হলেও বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়াই মুস্তাহাব-সুন্নত, যা উত্তম ও পূর্ণ ছওয়াব এবং অধিক ফযীলতের কারণ। কেননা বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল এবং অন্যান্য নফলের ক্ষেত্রে একই হুকুম নয়। বরং বিত্র নামাযের পর দুই রাকায়াত নফলের হুকুম অন্যান্য নফল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অর্থাৎ অন্যান্য নফল দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব, বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব। আর হালক্বী নফল অর্থাৎ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব, আর বসে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব।
কারণ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায কখনও দাঁড়িয়ে আদায় করেননি। বরং বসেই আদায় করেছেন। যা সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।
(ধারাবাহিক)
উল্লেখ্য, রেযাখানীরা ‘বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ ও নাসায়ী শরীফ’ ইত্যাদি কিতাব থেকে দলীল হিসেবে যে বক্তব্য উল্লেখ করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য মোটেও সে রকম নয়। তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝতে না পারার কারণেই ‘হালক্বী নফল’ সম্পর্কে এরূপ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য উল্লেখ করেছে। শুধু তাই নয়, সাথে সাথে নিজেদের জিহালতীকে ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে উল্লিখিত কিতাবসমূহের কোন কোন ইবারত কারচুপি করে নিজেদের বাতিল মতকে ছাবিত করার ব্যর্থ কোশেশ করেছে। তারা উল্লিখিত কিতাবের বরাত দিয়ে যে সকল মিথ্যাচারিতা, প্রতারণা ও ইবারত কারচুপির আশ্রয় নিয়েছে সেগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা ও ফায়সালা তুলে ধরে তার খণ্ডনমূলক আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ্।
রেযাখানীদের কারচুপিমূলক
বক্তব্য উদঘাটন ও খণ্ডন
উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বলেছে, “যদি বিতরের পর দু’রাকাত নামায পড়া প্রিয় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দাওয়ামী সুন্নত…হয়।”
এর জবাবে বলতে হয় যে, আমরা একথা বলেনি যে, বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায পড়া রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দাওয়ামী সুন্নত। বরং আমরা বলেছি, বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায যেহেতু আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ্, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদায় করেছেন এবং তা বসেই আদায় করেছেন, সেহেতু বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করা সুন্নত, উত্তম ও অধিক ফযীলতের কারণ।
সুতরাং রেযাখানী মৌলভী সাহেবরা বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামাযকে “দাওয়ামী সুন্নত” বলে ডাহামিথ্যা কথা বলেছে।
আর মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ পাক-এর লা’নত। কারণ আল্লাহ পাক বলেন,
لعنت الله على الكذبين.
অর্থঃ- “মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ পাক-এর লা’নত।” (সূরা আলে ইমরান-৬১)
দ্বিতীয়তঃ তারা বলেছে, “যদি বিতরের পর দু’রাকাত নামায পড়া…..বসে উত্তম…হয়।”
এর জবাবে বলতে হয় যে, হ্যাঁ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করা সুন্নত, উত্তম ও অধিক ফযীলতের কারণ। কেননা ছহীহ্ ও নির্ভরযোগ্য হাদীস শরীফে বর্নিত আছে, বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায স্বয়ং আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসেই আদায় করেছেন। আর আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা করেছেন এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে যা কিছু সংশ্লিষ্ট হয়েছে তা উত্তম থেকে উত্তমতর।
আর আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন কাজকে কেউ যদি অনুত্তম বলে তাহলে সে কাট্টা কাফির হবে। কারণ, আল্লাহ্ পাক নিজেই বলেছেন,
انا اعطينك الكوثر.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে হাউজে কাওছার ও সমস্ত ভালাই দান করেছি।” (সূরা কাওছার/১)
অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক নিজেই বলতেছেন যে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তা উত্তম হতে উত্তমতর। এককথায় আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা করেছেন এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে যা কিছু সংশ্লিষ্ট হয়েছে তা উত্তম থেকে উত্তমতর।
তাছাড়া আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই দলীল। এ প্রসঙ্গে শরীয়তের উছূল হচ্ছে,
اصول الشرع ثلاثة القران والحديث والاجماع ورابعها القياس.
অর্থঃ- “শরীয়তের উছূল বা দলীল হচ্ছে প্রথমতঃ তিনটি- কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা এবং চতুর্থটি হচ্ছে ক্বিয়াস।”
কাজেই যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস শরীফকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করবে না এবং তা উত্তম নয় বলবে শরীয়তের দৃষ্টিতে সেও কাট্টা কাফিরের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
لوتركتم سنة نبيكم لكفرتم.
অর্থঃ- “যদি তোমরা তোমাদের নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতকে অস্বীকার কর, তাহলে তোমরা অবশ্যই কুফরী করলে বা কাফির হবে।” (আবু দাউদ শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كل امتى يدخلون الجنة الا من ابى قيل ومن ابى يا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال من اطاعنى دخل الجنة ومن عصانى فقد ابى.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার সমস্ত উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে ঐ ব্যক্তি ব্যতীত যে আমাকে অস্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কোন্ ব্যক্তি আপনাকে অস্বীকার করলো?’ তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ইত্য়াত (অনুসরণ) করলো সে জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানি করলো অর্থাৎ আমার ইত্য়াত করলোনা সেই আমাকে অস্বীকার করলো অর্থাৎ সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (বুখারী শরীফ)
কাজেই নেকী বা ছওয়াব ও সন্তুষ্টি রয়েছে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইতায়াত বা সুন্নতের অনুসরণের মধ্যে।
অথচ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
لو تركتم سنة نبيكم لكفرتم او لضللتم.
অর্থঃ- “যদি তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নতকে তরক (ইহানত বা অবজ্ঞা) করো তবে তোমরা কুফরী করলে বা গোমরাহ হলে।”
তৃতীয়তঃ তারা বলেছে, “যদি বিতরের পর দু’রাকাত নামায….. অস্বীকার করা কুফরী হয়,….।”
এর জবাবে বলতে হয় যে, হ্যাঁ হানাফী মাযহাবের অনুসারী কোন ব্যক্তি বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায অস্বীকার করলে কাট্টা কুফরী হবে। কারণ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করা সুন্নত। আর সুন্নতকে অস্বীকার করা কুফরী।
যেমন, আক্বাঈদের কিতাবে এসেছে
اهانة السنة كفر.
অর্থঃ- “সুন্নতকে ইহানত করা বা অস্বীকার করা কুফরী।”
অতএব, বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায অর্থাৎ ‘হালক্বী নফল’ নামায বসেই আদায় করা উত্তম, খাছ সুন্নত এবং অধিক ফযীলত ও বুযুর্গীর কারণ। যারা এটাকে ভুল, ভিত্তিহীন ও উত্তম নয় বলবে তারা মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদ ও কাফির হয়ে যাবে। এটা কারো বানানো ফতওয়া নয় বরং শরীয়তেরই ফতওয়া।
চতুর্থতঃ তারা বলেছে, “যদি বিতরের পর দু’রাকাত নামায পড়া প্রিয় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দাওয়ামী সুন্নত, বিধায় বসে উত্তম, তা অস্বীকার করা কুফরী হয়, তবে যে সব মাযহাবের সম্মানিত ইমাম ও মুজতাহিদ যারা এ দু’রাকাত নামাযকে মোটেই স্বীকার করেননি তাঁদের ব্যাপারে কী ফতোয়া দেয়া হবে।”……
এর জবাবে বলতে হয় যে, উপরোক্ত বক্তব্য প্রদান করে রেযাখানী মৌলভী সাহেবরা নিজেদেরকে চরম জাহিল হিসেবে সাব্যস্ত করলো। কারণ শরীয়তের অনেক বিষয়েই এবং অনেক হাদীছ শরীফ সম্পর্কে চার মাযহাবের ইমামগণের মধ্যে ইখতিলাফ বা মতভেদ রয়েছে। তাই হানাফী মাযহাবে কোন বিষয় ছাবেত করার ক্ষেত্রে অন্য মাযহাবের দলীল গ্রহণযোগ্য নয়।
সেহেতু, ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি হালকী নফল সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ সমূহ স্বীকার না করলেও হানাফী ইমামগণ তা স্বীকার করেছেন এবং উক্ত হাদীছ শরীফ সমূহের উপর ভিত্তি করে বিত্রের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে আদায় করাকে সুন্নত বলে ফতওয়া দিয়েছেন। তাই হানাফী মাযহাবের অনুসারীদের জন্য সুন্নতকে অস্বীকার করা, হাদীছ শরীফ অস্বীকার করারই নামান্তর। আর হাদীছ শরীফ অস্বীকার করা কুফরী।
এক্ষেত্রে অন্য মাযহাবের বরাত টানা মাযহাব সম্পর্কিত জিহালতী বা অজ্ঞতারই বহিঃপ্রকাশ। কারণ, হানাফী মাযহাবের অনুসারীদের জন্য অন্য মাযহাব অনূযায়ী ফতওয়া দেয়া বা অন্য মাযহাব অনূযায়ী আমল করা নাজায়িয, হারাম ও কুফরী।
যেমন, এ প্রসঙ্গে “তাফসীরে আহমদী” কিতাবের ৩৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
لايجوز الانتقال من مذهب الى مذهب اخر كذالك لايجوز ان يعمل فى مسئلة على مذهب وفى اخرى على اخر.
অর্থঃ- “এক মাযহাবের অনুসারী ব্যক্তিদের জন্য মাযহাব পরিবর্তন করে অন্য মাযহাব গ্রহণ করা যেরূপ জায়িয নেই; তদ্রুপ এক মাযহাবের অনুসারী ব্যক্তিদের জন্য অন্য মাযহাবের ‘মাসয়ালা’ আমল করাও জায়িয নেই, তথা হারাম।”
তাছাড়া ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তো সুন্নতকে অস্বীকার করেণনি। শুধু তাই নয়, সুন্নতকে অস্বীকার করা তো দুরের কথা বরং মাযহাবের সম্মানিত ইমাম ও মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ সুন্নত পালন করা ফরয ফতওয়া দিয়েছেন।
যেমন হাম্বলী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি ফতওয়া দিয়েছেন “সুন্নত পালন করা ফরয।”
যখন তিনি এ ফতওয়া দিলেন তখন উনার সমসাময়িক যারা ইমাম-মুজতাহিদ এবং ফক্বীহ ছিলেন তারা এসে জিজ্ঞাসা করলেন, হে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি! আমরা ফরযকে ফরয, ওয়াজিবকে ওয়াজিব, সুন্নতকে সুন্নত হিসাবে জানি ও মানি। কিন্তু আপনি সুন্নতকে ফরয হিসেবে ফতওয়া দিয়েছেন এটা কোন প্রকার ফতওয়া? আর এর পিছনে কি আপনার কোন দলীল রয়েছে? কারণ আল্লাহ পাক তো বলেছেন,
هاتوا برهانكم ان كنتم صادقين.
অর্থঃ- “তোমরা সত্যবাদী হলে দলীল পেশ কর।” (সূরা বাক্বারা/১১১)
তিনি বলেন যে, হ্যাঁ, এর পিছনে আমার ক্বিত্য়ী দলীল অর্থাৎ কুরআন শরীফ থেকে দলীল রয়েছে তা হচ্ছে, আল্লাহ পাক বলেন,
ما اتكم الرسول فخذوه ومانهكم عنه فالتهوا واتقوا الله ان الله شديد العقاب.
অর্থঃ- “রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের নিকট যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর আর তিনি যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাক। এ ব্যাপারে আল্লাহ পাককে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তিদাতা।” (সূরা হাশর/৭)
সুতরাং বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায যেহেতু আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসে আদায় করেছেন, সেহেতু বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল বসে পড়াই খাছ সুন্নত ও উত্তম এবং তা বসেই আদায় করতে হবে।
অতএব, কেউ যদি সুন্নত পালন না করে সে কখনোই কামিল মু’মিন হতে পারবেনা বরং সে ফাসিকের অন্তর্ভূক্ত হবে। আর কেউ যদি সুন্নতকে অবজ্ঞা বা অস্বীকার করে তাহলে তা কুফরী হবে। কোন মুসলমান যদি কুফরী করে তাহলে সে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। তখন উক্ত কুফরী থেকে খালিছ তওবা ইস্তিগফার না করা পর্যন্ত সে মুসলমান থাকতে পারবে না।
অতএব প্রমাণিত হলো যে, রেযাখানী মৌলভী সাহেবরা হালকী নফলের ক্ষেত্রে অন্য মাযহাবের বরাত টেনে অর্থাৎ হালকী নফলের ক্ষেত্রে ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতকে দলীল হিসেবে পেশ করে, নিজেদেরকে চরম জাহিল হিসেবে সাব্যস্ত করলো। (চলবে)
মুহম্মদ শমসের আলী
কাছারী পাড়া, পাবনা
সুওয়ালঃ আমাদের পাবনা শহরের কিছু লোক আপনাদের বহুল প্রচারিত, অকাট্য দলীলভিত্তিক মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর ‘পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে’ শিরোনামে প্রকাশিত ৯৪, ১৩২, ১৩৩, ও ১৩৪তম সংখ্যায় প্রদত্ত নিম্নলিখিত বিষয়গুলো নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা লোকদেরকে বুঝাচ্ছে যে, এ সমস্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে কুফরী ও শিরকীর অন্তর্ভুক্ত। আবার কিছু কিছু বক্তব্য সন্দেহজনক। যেমন, ১. দরবার শরীফের আমানতসমূহের কখনো খিয়ানত না করা। প্রশ্ন হলো- ‘দরবার শরীফের আমানতসমূহ কি?’
২. দরবার শরীফের গোপনীয় বিষয়গুলো সর্বদা গোপন রাখা। জানার বিষয় হলে- ‘দরবার শরীফের গোপনীয় বিষয়গুলো কি?’
৩. “পীর ছাহেব ক্বিবলার দরবার শরীফ আল্লাহ পাক-এর ও তাঁর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফের মত।” এ বক্তব্য কি কুফরী ও র্শিকীর অন্তর্ভুক্ত?
৪. “পীর ছাহেব ক্বিবলার দরবার শরীফে সেই রূপ ভয়ভীতি, আদব ও ইহতিরাম নিয়ে অবস্থান করতে হবে, যেরূপ ভয়ভীতি, আর আদব ও ইহতিরাম নিয়ে অবস্থান করতে হয় আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফে। বরং পীর ছাহেব ক্বিবলার দরবার শরীফে কোন কোন ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশী ভয়ভীতি আর আদব ও ইহতিরাম সহকারে অবস্থান করতে হয়।”
তবে কি পীর ছাহেব আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেয়েও বড় এবং অধিক মর্যাদা সম্পন্ন?
৫. “পীর ছাহেবের দরবার শরীফে অবস্থানকালীন সময় অন্তরে সর্বদা একথা বদ্ধমূল রাখতে হবে যে, এ দরবার শরীফ এমন আজিমুশ্ শান এবং মহান মর্যাদাপূর্ণ যে, এখানে সামান্য বেয়াদবীর কারণে জীবনের সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে।”
তবে কি পীর ছাহেবের দরবার শরীফ আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফ হতেও বড়?
আশা করি কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে তাদের উত্থাপিত সেই প্রশ্নগুলোর সঠিক জাওয়াব দান করে এলাকাবাসী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্তির কবল হতে মুক্তি পাওয়ার পথ দেখাবেন।
জাওয়াবঃ মাসিক আল বাইয়িনাতের ৯৪, ১৩২, ১৩৩ এবং ১৩৪ তম সংখ্যায় ‘ফিকহুল হাদীস ওয়াল আছার’ বিভাগে ‘পীর ছাহেব ও মুরীদের সর্ম্পক প্রসঙ্গে’ শিরোনামে পীর ছাহেব এবং দরবার শরীফের আমানতসমূহ ও তার স্বরূপ এবং গুরুত, তাৎপর্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। অনুসন্ধিৎসু মন এবং সত্যান্বেষী মনন নিয়ে পাঠ করলে বিষয়টি বুঝতে পারবেন। (ইনশাআল্লাহ)
আর যারা বিপরীত মন এবং মননের অধিকারী ও ইলমে তাছাউফ শুন্য বা তাছাউফ বিরোধী তারাই কেবল চিনির বলদের মত কিতাবের বোঝা বহনকারী ফিৎনা ফাসাদ সৃষ্টিকারী ও সঠিক বক্তব্যরে মনগড়া, অপব্যাখ্যা দানকারী। তাই ফিৎনাকারীদের ফিৎনা নিরসনের উদ্দেশ্যে ও হক্ব তালাশীদের নিকট বিষয়টি আরো সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলার লক্ষ্যে উপরোক্ত প্রশ্নসমূহের দলীলভিত্তিক বিস্তারিত জাওয়াব ধারাবাহিকভাবে নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
(ধারাবাহিক)
৩. “পীর ছাহেব ক্বিবলার দরবার শরীফ আল্লাহ পাক-এর দরবার শরীফ, আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফের মত।” মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর এ বক্তব্য কি কুফরী ও র্শিকীর অন্তর্ভুক্ত?
এর জাওয়াব হলো- না, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর বক্তব্য কুফরী ও শিরকীর অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং যারা কুফরী, শিরকী বলবে তারাই মুশরিক ও কাফিরের অন্তর্ভুক্ত হবে।
কেননা হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, “যদি কেউ কাউকে কাফির বলে তখন তার উক্ত কথা আসমানে চলে যায়। আর আসমানের দ্বার বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে যমীনে ফিরে আসে। তখন যমীনের দ্বারও বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে যাকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে তার দিকে ফিরে আসে, সে যদি উপযুক্ত হয় তাহলে তার উপর গিয়ে পড়ে অন্যথায় যে ব্যক্তি বলেছে তার উপরই পড়ে। আর সে কাফির, মুশরিক হিসেবে মৃত্যুবরণ করে।” (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)
মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর এ বক্তব্য সঠিক এবং দলীলভিত্তিক। মূলতঃ যারা দ্বীনের ছহীহ জ্ঞান রাখেনা, শিরক-কুফরী এ বিষয়টি সম্পর্কে যারা নেহায়েত অজ্ঞ তারাই এ বক্তব্যকে শিরক ও কুফরী বলে নিজেদের জিহালতী বা অজ্ঞতাকে জাহির করে। কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ সম্পর্কে যাদের সামান্যতম জ্ঞানও আছে তারা কখনও ঐ বক্তব্যকে কুফরী-শিরকী বলার মত দুঃসাহস দেখাতে পারেনা।
উল্লেখ্য যে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আনিত কোন বিষয়কে অস্বীকার বা প্রত্যাখান করাকে কুফরী বলে।
আর আল্লাহ পাক-এর জাত-পাক কিংবা আসমা-সিফতের মধ্যে কাউকে সমকক্ষ মনে করাকে র্শিক বলে।
অথচ উল্লিখিত বিষয় তার কোনটিই নয়। তাহলে কি করে তাকে কুফরী-শিরকী বলতে পারে?
অথচ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
من زار عالما فكانما زارنى ومن زارنى فقد زار الله ومن زار الله فقد غفرله.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি হক্কানী-রব্বানী কোন আলিমের সাথে সাক্ষাত করলো, সে যেন আমার সাথেই সাক্ষাত করলো। যে ব্যক্তি আমার সাথে সাক্ষাত করলো সে যেন আল্লাহ পাক-এর সাথেই সাক্ষাত করলো। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর সাথে সাক্ষাত করলো সে ক্ষমাপ্রাপ্ত হলো।” অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই বললেন, হক্কানী-রব্বানী আলিমের সাথে সাক্ষাত করাটা আল্লাহ পাক এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাতের অন্তর্ভুক্ত হয়।
আর কোন জিনিস বা বিষয়ের সাথে তাশবীহ বা তুলনা দিলে যদি কুফরী শিরকী হয় তবে তো সেই অপবাদের পরিণতি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
কারণ, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর উক্ত বক্তব্য তার নিজস্ব নয়। তা আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীছ শরীফে ইরশাদ রয়েছে,
الحلال بين والحرام بين.
অর্থঃ- “হালাল এবং হারাম সুস্পষ্ট।” (বুখারী)
কাজেই যা কুফরী, শিরকী তা তার স্বপক্ষে অবশ্যই সুস্পষ্ট দলীল রয়েছে। আউলিয়ায়ে কিরাম বিদ্বেষীরা কি তাদের মতের স্বপক্ষ্যে একটি দলীলও পেশ করতে পারবে? কশ্মিনকালেও তা পারবে না।
মাসিক আল বাইয়্যিনাত তো আল্লাহ পাক-এর দরবার শরীফের সাথে তাশ্বীহ (তুলনা) দিয়েছে। আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর সাথে তাশবীহ (তুলনা) দিয়েছেন তা আবার একটা দু’টা নয় বরং হাজার হাজার।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
ما احب عبد عبدا لله الا اكرم ربه عزوجل.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন এক বান্দা অপর কোন বান্দাকে আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টির জন্য মুহব্বত করে তখন সে যেন তার পরম সম্মানিত মহামহিম রবকেই সম্মান করলো।” (আহমদ, মিশকাত)
তিনি আরো বলেন,
السلطان ظل الله فى الارض.
অর্থঃ- “ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ যমীনে আল্লাহ পাক-এর ছায়া সদৃশ্য।”
তবে তারা কি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহু, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এ বাণী হাদীছ শরীফকে কুফরী, শিরকী বলবে? আর যদি বলে তাহলে তারা কোন্ স্তরের কাফিরে পরিণত হবে তা কি ব্যাখ্যা করতে হবে?
মূলতঃ মূর্খ লোক যদি স্বীয় মূর্খতাকে ত্রুটিপূর্ণ মনে করে নিজকে মূর্খ বলে জানে তাহলে ফিৎনার সম্ভাবনা থাকে না। আর সমজাতীয় মূর্খ যদি মহাজ্ঞানী পরিচয় দান করে আর মূর্খরাও যদি তাকে মহাজ্ঞানী বলে মেনে নেয় তাহলে সমাজে এরূপ আরো অনেক ফিৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি হতে পারে। যার দায়-দায়িত্ব ঐ সকল ব্যক্তির উপরই পড়বে। যারা তাদেরকে সমর্থন দান করবে, সাহায্য-সহযোগীতা করবে।
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমিরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে লক্বব দিয়েছেন,
اسد الله الغالب.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক-এর বিজয়ী সিংহ।”
উল্লেখ্য যে, বালাগাতের একটি অধ্যায় হচ্ছে তাশবীহ। তাশবীহ (তুলনা) তা একদিক থেকে হতে পারে আবার একাধিক দিকের সাথেও তুলনা দিতে পারে।
زيد كالاسد.
অর্থঃ- “যায়েদ বাঘের মত।” এ বাক্যে যায়েদকে চতুস্পদ জন্তু বাঘের সাথে (তাশরীহ) তুলনা দেয়া হয়েছে। এদ্বারা তার সীমাহীন শক্তিকে বুঝানো উদ্দেশ্য। মানুষ থেকে চতুস্পদ জন্তু বাঘে পরিণত হয়েছে- তা নয়। (ইসরারুল বালাগাত, দুরুসুল বালাগাত)
অনুরূপভাবে পীর ছাহেব ক্বিবলার দরবার শরীফকে আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফের সাথে তাশবীহ দিয়ে দরবার শরীফের মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলতকে বুঝানো উদ্দেশ্য।
কাজেই যাদের কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা, ক্বিয়াস, ইলমে বালাগাত এবং ফাসাহাতের জ্ঞান নেই অথচ আলিম নাম ধারণ করে সমাজে আলিম পরিচয় দান কারী তারাই প্রকারন্তরে নাজায়িযকে জায়িয, জায়িযকে নাজায়িয, হারামকে হালাল এবং হালালকে হারাম করে নিজে কুফরী, শিরকীতে নিমজ্জিত হয় এবং সমমনা ও অনুসারীদেরকে কুফরী, শিরকীতে নিমজ্জিত করার প্রয়াস পায়।
আর “পীর ছাহেব ক্বিবলার দরবার শরীফে সেইরূপ ভয়-ভীতি, আদব-ইহতিরাম সহকারে অবস্থান করতে হবে যেরূপ ভয়-ভীতি, আদব-ইহতিরাম সহকারে অবস্থান করতে হয় আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফে”- এ বক্তব্যও সেই মর্যাদা, মর্তবা, ফাযায়িল, ফযীলতকে গভীরভাবে উপলব্ধি করার জন্যই তাশবীহ বা তুলনা দেয়া হয়েছে। পীর ছাহেব ক্বিবলার দরবার শরীফকে আল্লাহ পাক ও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফ বানানোর উদ্দেশ্যে নয়।
মূলতঃ মূর্খ লোকের মূর্খতাসূচক বক্তব্যকে জ্ঞানী লোকেরা কখনো গ্রহণ করে না। তাদের দ্বারা শুধু মূর্খ ব্যক্তিরাই প্রতারিত হয়। আর হক্কানী-রব্বানী আলিম তথা পীর ছাহেব এর দরবার শরীফ এবং তাঁর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়কে যে আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মতই তা’যীম-তাকরীম করতে হবে তা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা, ক্বিয়াস দ্বারা সমর্থিত।
মহান আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
يايها الذين امنوا لاتقدموا بين يدى الله ورسوله واتقوا الله.
অর্থঃ- “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ পাক এবং তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অগ্রণী হইয়োনা। আর এব্যাপারে আল্লাহ পাককে ভয় কর।” (সূরা হুজুরাত/১)
আলোচ্য আয়াত শরীফ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শানে নাযিল হলেও হক্কানী-রব্বানী আলিম তথা পীর ছাহেবগণও তার আওতাভুক্ত। অর্থাৎ পীর ছাহেবগণের আগে আগে হাঁটা, আমলের ক্ষেত্রে তাঁর অগ্রণী হওয়া বা তিনি কোন কাজ করার পূর্বে কাজ করা, তিনি কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে সিদ্ধান্ত নেয়া বা ফায়সালা দেয়া চরম পর্যায়ের বেয়াদবী। অনুরূপভাবে তাঁর সাথে উচুঁ আওয়াজে কথা বলা, সাধারনের মাঝে যে রূপ সম্বোধন করা হয়, পরস্পর যেমন ডাকাডাকি করা হয় তেমনি ভাবে তাঁকে সম্বোধন করা কিংবা সেরূপ সম্বোধনে ডাকা, তাঁর মজলিসে উচুঁস্বরে কথা বলা ইত্যাদি সবই সীমাহীন বেয়াদবী এবং আমল ধ্বংসের কারণ।
উপরোক্ত আয়াত শরীফ নাযিলের পর একদিন আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে ছিদ্দিকে আকবর হযরত আবু বকর ছিদ্দিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সামনে সামনে চলতে দেখে সতর্ক করতঃ বললেন, ‘তুমি কি এমন এক ব্যক্তির সামনে সামনে চলছো যিনি দুনিয়া ও আখিরাতে তোমার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ তিনি আরো বললেন, ‘দুনিয়াতে এমন কোন ব্যক্তির উপর সুর্যোদ্বয় হয়নি ও সুর্যাস্ত যায়নি যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের পর হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ।’ (তাফসীরে রুহুল বয়ান, তারীখুল খুলাফা)
স্মর্তব্য যে, উক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অগ্রণী হতে নিষেধ করা হয়েছে। আর স্বয়ং তিনি তাঁর হুকুমকে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর উপর প্রয়োগ করলেন।
কাজেই পীর ছাহেব ক্বিবলার দরবার শরীফের বিষয়টি সেভাবে মূল্যায়িত হবে। অর্থাৎ পীর ছাহেব ক্বিবলার দরবার শরীফের মর্যাদা, মর্তবা, ফাযায়িল, ফযীলত আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফের মর্যাদা, মর্তবা, ফাযায়িল, ফযীলতের মতই হবে এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ স্বীকৃত।
আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন প্রসঙ্গ উল্লেখ্যের সাথে সাথে আল্লাহ পাককে সংশ্লিষ্ট করার কারণ কি? অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এরও দরবার শরীফ বলা হয় কেন?
এর জাওয়াবে বলতে হয়, মূলতঃ স্বয়ং আল্লাহ পাকই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন প্রসঙ্গ উল্লেখ্যের সাথে সাথে নিজকে সংশ্লিষ্ট করেছেন। আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন প্রসঙ্গ সেটা যেন আল্লাহ পাক-এরই প্রসঙ্গ। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আলোচনা যেন আল্লাহ পাক-এরই আলোচনা। যেমন মহান আল্লাহ পাক বলেন,
من يطع الرسول فقد اطاع الله.
অর্থঃ- “যে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইত্বায়াত (অনুসরণ) করলো সে যেন আল্লাহ পাক-এরই অনুসরণ করলো।” (সূরা নিসাঃ ৮০)
তাছাড়া এভাবে আলোচনা করা সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় কোন প্রসঙ্গ উল্লেখের সময় আল্লাহ পাক-এর নাম মুবারককে সংশ্লিষ্ট করে উল্লেখ করেছেন এবং উম্মতকে সেটাই শিক্ষা দিয়েছেন।
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, ‘একদা আমি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিছানায় দেখতে না পেয়ে খোঁজ করতে লাগলাম। দেখতে পেলাম তিনি জান্নাতুল বাক্বীতে সিজদারত আছেন। তিনি আমার আগমনের ব্যাপারটি অনুধাবন করতে পেরে ঘরে তাশরীফ রাখলেন এবং বললেন,
اكنت تخافين ان يحيف الله عليك ورسوله.
অর্থঃ- “আপনি কি ভাবছেন যে, আল্লাহ পাক এবং তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার সাথে খেয়ানত করেছেন?” (মিশকাত)
অথচ বিষয়টি একান্তভাবে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথেই সংশ্লিষ্ট ছিলো। সেক্ষেত্রেও তিনি আল্লাহ পাক-এর নাম মুবারক সংযুক্ত করলেন।
মূলতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সেই সুন্নতকে প্রতিষ্ঠার জন্যই আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফের উল্লেখ্যের সাথে সাথে আল্লাহ পাক-এর দরবার শরীফের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করা হয়েছে। (চলবে)