সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ১৩৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

 ক্বারী মুহম্মদ আব্দুল বারী, গোড়ান,

ঢাকা। মুহম্মদ সোহেলুর রহমান, রামপুরা, ঢাকা।

 সুওয়ালঃ সম্প্রতি ‘আহলে হাদীছ লাইব্রেরী ঢাকা’-এর সৌজন্যে প্রকাশিত একটি হ্যান্ডবিলে ‘শবে বরাত’ সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক কতিপয় উক্তি করা হয়েছে। কুরআন-সুন্নাহ্র নিরিখে সেসব কতটুকু সঠিক তা আপনাদের বহুল পঠিত, তাজদীদী মুখপত্র ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশ করলে বিভ্রান্তির নিরসণ হতো এবং সঠিক বিষয়টি উন্মোচিত হয়ে আওয়ামুন্ নাস খুবই উপকৃত হতো। আপনাদের জ্ঞাতার্থে হ্যান্ডবিলের একটি মূল কপি প্রেরণ করা হলো। এতে আমাদের মনে যেসব প্রশ্নের উদয় হয়েছে তাহলো- ১. শবে বরাত কি? শবে বরাত-এর অর্থ কি? অর্ধেক ফারসী আর অর্ধেক আরবী সহযোগে শরীয়তে কোন নাম হতে পারে কি-না? শবে বরাত সম্পর্কে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে কোন তথ্য পাওয়া যায় কি-না? ২. কখন থেকে শবে বরাত শুরু হয়? শবে বরাত সম্পর্কে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন নির্দেশ-বাণী আছে কি-না? ৩. অর্ধ শা’বানের রাতটি ভাগ্য রজনী নামে নামকরণ কি বিদ্য়াত? ৪. নফল ইবাদতের মাধ্যমে রাত্রি জাগরণ ও দিনের বেলায় রোযা পালন করা কি বিদ্য়াত? ৫. এর সমর্থনে সূরা দুখানের ৩-৪নং আয়াত শরীফ পেশ করা সঠিক কি-না? ‘লাইলাতুম্ মুবারাকাহ্’ বলতে ‘লাইলাতুল ক্বদরকে’ বুঝানো হয়েছে? না ‘শবে বরাতকে’ বুঝানো হয়েছে? ৬. শবে বরাতে রিযিক বৃদ্ধি করা হয় এবং কতজন জন্মগ্রহণ করবে ও কতজন মৃত্যুবরণ করবে তা ধার্য্য করা হয়। এটা কুরআন-সুন্নাহ্ সম্মত কি-না? ৭. অর্ধ শা’বানের রাতে আলফিয়াহ বা রাগায়িব নামক কোন নামায আছে কি-না? ৮. অর্ধ শা’বানের রাতে কবর যিয়ারত করা নাকি বিদ্য়াত? ৯. হালুয়া-রুটি ও রকমারি খাদ্য প্রস্তুত করা ও বিলি করা নাকি বিদ্য়াত?  ১০. অর্ধ শা’বান উপলক্ষে আয়োজিত মাহ্ফিল বিদয়াত কি-না? ১১. শবে বরাত উপলক্ষে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালত ছুটি ঘোষণা করা নাকি বিদ্য়াত চর্চার সুযোগ দেয়া? ১২. সউদী আরবের দারুল ইফতার সাবেক প্রধান ‘আব্দুল আযীয আব্দুল্লাহ বিন বায’-এর  শবে বরাত পালন করা ও এদিনে রোযা রাখা বিদ্য়াত বলে অভিহিত করা কতটুকু সঠিক? আশা করি উল্লিখিত প্রশ্নসমূহের দলীলভিত্তিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ  মহান আল্লাহ পাক স্বীয় কালাম পাকে ইরশাদ করেন,

 فسئلوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون.

 অর্থঃ- “তোমরা আহলে যিকির তথা আল্লাহওয়ালাগণকে জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জান।” (সূরা আম্বিয়া/৭) যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত উপরোক্ত আয়াত শরীফের হাক্বীক্বী মিছদাক। আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন-এর লক্ষ্যস্থল ওলী, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ওছীলায় এ পত্রিকাটি উম্মাহ্র জন্য শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত যার প্রতিটি লিখাই আক্বীদা-আমল হিফাযতকারী ও পরিশুদ্ধকারী। প্রসঙ্গতঃ সুওয়ালে উল্লিখিত প্রশ্নসমূহের ধারাবাহিক জাওয়াব পেশ করা হলো- (ধারাবাহিক) ৪. নফল ইবাদতের মাধ্যমে রাত্রি জাগরণ ও দিনের বেলায় রোযা পালন করা কি বিদ্য়াত? এর জবাব হলো, না, নফল ইবাদতের মাধ্যমে রাত্রি জাগরণ ও দিনের বেলায় রোযা পালন করা বিদ্য়াত নয়। বরং তা সম্পূর্ণ কুরআন-সুন্নাহ তথা শরীয়তসম্মত। আর কুরআন-সুন্নাহ্সম্মত কোন বিষয়কে বিদ্য়াত বলা প্রকাশ্য কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। মুসলমান হয়ে যে বা যারা কুফরী করে সে বা তারা মুরতাদ ও কাফিরে পরিণত হয়। প্রকাশ থাকে যে, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের বর্ণনা মতে, ইবাদতগুলো মূলতঃ দু’প্রকার। এক- ফরয, দুই- নফল। ওয়াজিব, সুন্নত (মুয়াক্কাদাহ ও যায়িদাহ), মুস্তাহাব ইত্যাদি নফলেরই প্রকার। তা’কীদ অনুসারে কোনোটা ওয়াজিব, কোনোটা সুন্নতে মুয়াক্কাদা, কোনোটা সুন্নতে যায়িদাহ, কোনোটা মুস্তাহাব হিসেবে ভাগ করা হয়েছে। নফল ইবাদতের মধ্যেমে রাত্রি জাগরণ সম্পর্কে কালামুল্লাহ শরীফের একাধিক সূরার মধ্যে একাধিক আয়াত শরীফে আদশে-নির্দেশ করা হয়েছে।  ইরশাদ হয়েছে,

 يايها المزمل قم اليل الا قليلا نصفه او القص منه قليلا اوزد عليه ورتل القران ترتيلا انا سنلقى عليك قولا ثقيلا ان ناشئة اليل هى اشد وطا واقوم قيلا ان لك فى النهار سبحا طويلا واذكر اسم ربك وتبتل اليه تبتيلا رب المشرق والمغرب لا اله الا هو فاتخذه وكيلا.

 অর্থঃ- “হে কম্বল আচ্ছাদিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! রাত্রিতে দ-ায়মান হোন কিছু অংশ বাদ দিয়ে; অর্ধরাত্রি অথবা  তদপেক্ষ কিছু কম অথবা তদপেক্ষা বেশী। এবং কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করুন সুবিন্যস্তভাবে ও স্পষ্টভাবে। আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি গুরুত্বপূর্ণ বাণী। নিশ্চয়ই রাত্রিতে উঠা একাত্মতা সৃষ্টিতে খুবই কার্যকর এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল। নিশ্চয়ই দিবাভাগে রয়েছে আপনার দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা। আপনি আপনার রবের নাম মুবারকের যিকির করুন এবং একাগ্রচিত্তে তাতে মগ্ন হোন। তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের রব। তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ (মা’বূদ) নেই। অতএব, তাঁকেই সবকিছুর জিম্মাদার হিসেবে গ্রহণ করুন।” (সূরা মুয্যাম্মিল/১-৯) উল্লিখিত আয়াতে কারীমাসমূহে রাত্রিবেলায় আল্লাহ পাক-এর ইবাদতে মশগুল হওয়া তথা তাহাজ্জুদ নামায আদায় করা, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা, একাগ্রচিত্তে আল্লাহ পাক-এর যিকির করা এবং সৃষ্টির সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করতঃ কেবলমাত্র আল্লাহ পাক-এর দিকে মনোনিবেশ করার জন্য বলা হয়েছে।  উল্লেখ্য, তাহাজ্জুদ নামায, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত এবং যিকির দ্বারা এখানে নফল ইবাদতকেই বুঝানো হয়েছে। আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 عن عبد الله بن سلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يايها الناس افشوا السلام وطعموا الطعام وصلوا الارحام وصلوا بالليال والناس نيام تدخلوا الجنة بسلام.

 অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,  হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রচলন কর, মানুষকে খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তার সর্ম্পক রক্ষা কর এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড় তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (তিরমিযী, ইবনে মাযাহ্, দারিমী) উপরোক্ত হাদীছ শরীফে وصلوا باليال والناس نيام. অর্থাৎ- “মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড়”- এ দ্বারা রাতের বেলা নফল ইবাদত তথা বিশেষভাবে তাহজ্জুদ নামাযের কথা বলা হয়েছে। দিনের বেলায় (নফল) রোযা পালনের আদেশ-নির্দেশ সম্পর্কে শত শত হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে।  ইরশাদ হয়েছে,

 عن على رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.

 অর্থঃ- “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের পনের তারিখ রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন। অর্থাৎ রহমত খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করব।” “কোন মুছিবতগ্রস্থ ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব।” এভাবে ফযর বা ছুবহে সাদীক পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ্, মিশকাত) এ হাদীছ শরীফে فقوموا ليلها وصوموا يومها.  অর্থাৎ- “তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে (শবে বরাতে) নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে”- এ দ্বারা রাতের বেলা নফল ইবাদত এবং দিনের বেলা নফল রোযার আদেশ করা হয়েছে। অতএব, প্রমাণিত হলো যে, নফল ইবাদতের মাধ্যমে রত্রি জাগরণ এবং দিনের বেলায় রোযা পালন সরাসরি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। আরো উল্লেখ্য যে, এমন কোন ফরয পাওয়া যাবেনা যার মধ্যে নফল তথা ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব আমলের মিশ্রণ ঘটেনি। অর্থাৎ প্রতিটি ফরযের মধ্যেই নফলের মিশ্রণ রয়েছে এবং বর্ণিত রয়েছে, ‘আল্লাহ পাক প্রতিটি ফরয আমলকে সুন্নত আমলের দ্বারা পূর্ণতা দান ও সৌন্দর্য মণ্ডিত করেছেন।’ তাহলে ফরয ইবাদত করতে গেলেও তো নফল আমল বা ইবাদত করতে হচ্ছে।  সুতরাং একথা কি করে শুদ্ধ হতে পারে যে, ‘নফল ইবাদতের মাধ্যমে রাত্রি জাগরণ ও দিনের বেলায় রোযা পালন করা বিদ্য়াত?’ মূলতঃ এ ধরনের উক্তি এমন সব লোকই করতে পারে, যারা হাক্বীক্বতে ইসলাম ও মুসলমান থেকে খারিজ, প্রকৃত মুরতাদের অন্তর্ভুক্ত। যাদের পরিচয় খোদ আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে পেশ করেছেন।  ইরশাদ হয়েছে,

 عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا ابأؤكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.

 অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ) এ হাদীছ শরীফে ক্বিয়ামতের পূর্বে অনেক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে সেটাই বলা হয়েছে। হাদীছ শরীফের বর্ণনা মতে মূল দাজ্জাল একজনই হবে তবে তার অনুসারী অর্থাৎ দাজ্জালের চেলা হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ হবে। প্রকৃত কথা হচ্ছে, মূল দাজ্জালের পূর্বে বহু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জালের প্রকাশ ঘটবে। মূল দাজ্জালের যে কাজ সে কাজরে তারা আঞ্জাম দিবে। তাহলো মানুষের আক্বীদা-আমল নষ্ট করে কুফরীতে নিমজ্জিত করা। কাজেই তাদেরকে চিনে তাদের থেকে নিজের আক্বীদা-আমল হিফাযত করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। নচেৎ উক্ত দাজ্জালের খপ্পরে বা ওয়াস্ওয়াসায় যারা পড়বে তাদের হাশরণ্ডনশর সে দাজ্জালের সাথেই হবে।  আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে সেই দাজ্জালদের পরিচয় লাভ করার এবং তাদের থেকে দূরে থেকে নিজেদের আক্বীদা-আমল হিফাযত করতঃ আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি হাছিল করার তাওফীক দান করুন।  (আমীন) (চলবে)  মুহম্মদ আলীনূর রহমান রাঙ্গাদিয়া, চট্টগ্রাম।  সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা জানুয়ারী/২০০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে নিম্নোক্ত জিজ্ঞাসা-সমাধান ছাপা হয়-  জিজ্ঞাসাঃ আযান-ইক্বামতের সময় যখন ‘আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্’ বলা হয়, তখন কিছু লোককে দেখা যায়, তারা তাদের হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলদ্বয় চুম্বন করে চোখ মাসেহ্ করেন। এটা কতটুকু শরীয়ত সম্মত?  সমাধানঃ এ কাজটি সহীহ্ কোন হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। কাজেই ইবাদত ও সাওয়াবের নিয়্যাতে এটি করা বিদ্আত।….. হাটহাজারীর উক্ত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা এপ্রিল/২০০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে আরো বলা হয়েছে, “আযান-ইক্বামতে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শুনে বা দরূদ শরীফ পড়ে উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে ফুঁ দিয়ে বা চুমু দিয়ে সুন্নাত জেনে সাওয়াব বা ফযিলতের উদ্দেশ্যে চোখে লাগানো জায়েয নেই। ….” এখন আমার সুওয়াল হলো- “আযান ও ইক্বামতে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ্” (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলার সময় উভয় হাতের দুই বৃদ্ধাঙ্গুলীতে চুমু খেয়ে চোখে লাগানোর প্রমাণ সহীহ্ হাদীসে আছে কি? আর সহীহ্ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত না হলেই কি তা বিদ্য়াত? আর এ সম্পর্কে  হাটহাজারীর অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লার ভিত্তিতে সঠিক জাওয়াব  জানিয়ে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ “আযান ও ইক্বামতে ‘‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ্” (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলার সময় উভয় হাতের দুই বৃদ্ধাঙ্গুলীতে চুমু খেয়ে চোখে লাগানো সম্পর্কে হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার উক্ত বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, মনগড়া, বিভ্রান্তিকর, জেহালতপূর্ণ ও কুফরীমূলক হয়েছে। তাদের এ বক্তব্য এটাই প্রমাণ করে যে, তারা হাদীছ শরীফ ও তার উছূল সম্পর্কে নেহায়েতই অজ্ঞ।  উল্লেখ্য, কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে এ প্রকার অজ্ঞ লোকদের নিকট সূক্ষ্ম ও জ্ঞানমূলক মাসয়ালা জিজ্ঞেস করা নিষেধ। আর এদেরকে এ প্রকার মাসয়ালা জিজ্ঞেস করাও জ্ঞানী লোকদের লক্ষণ নয়। কাজেই মূর্খ লোককে কোন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তার জবাব যেমন হওয়া দরকার এখানেও ঠিক তাই হয়েছে। (১) যেমন, হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা প্রথমেই বলেছে যে, “এ কাজটি সহীহ্ কোন হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়।”… এর জবাবে বলতে হয় যে, হাদীছ শরীফের কিতাবে “আযান ও ইক্বামতে ‘‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ্” (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলার সময় উভয় হাতের দুই বৃদ্ধাঙ্গুলীতে চুমু খেয়ে চোখে লাগানোর ব্যাপারে সহীহ্ হিসেবে মরফু ও মাওকুফ হাদীছ বর্ণিত রয়েছে।        যেমন, ফিক্বাহ্র বিখ্যাত ও মাশহুর কিতাব “মারাকিউল ফালাহ্” কিতাবের ১৩৭ পৃষ্ঠায় হাদীছ শরীফের কিতাব “দায়লামী” শরীফের বরাত দিয়ে উক্ত হাদীছ শরীফখানা মারফু হিসেবে উল্লেখ আছে,

 وذكر الديلمى فى الفردوس من حديث ابى بكر رضى الله عنه مرفوعا من مسح العين بباطن النملة السبابتين بعد تقبيلهما عند قول المؤذن اشهد ان محمدا رسول الله ………. حلت له شفاعتى.

 অর্থঃ- “ইমাম দায়লামী রহমতুল্লাহি আলাইহি(তাঁর বিখ্যাত ও মাশহুর হাদীছ শরীফের কিতাব) ‘ফিরদাউস লিদ দায়লামীতে” হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে মারফূ হাদীছ উল্লেখ করেন যে, “যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আযানের সময় ‘মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ্’ শুনে শাহাদাত অঙ্গুলি দু’টির ভিতরের দিকে চুম্বন করে চোখে মাসেহ্ করবে……..তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব।”   আর আযানে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র নাম মুবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে লাগানোর ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফে আরো উল্লেখ আছে,

 قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من سمع اسمى فى الاذان ووضع ابهاميه على عينيه فانا طالبه فى صفوف القيامة وقائده الى الجنة.

 অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি  আযানের সময় আমার নাম শুনলো এবং তার উভয় অঙ্গুলী দু’চোখের উপর রাখল, আমি তাকে ক্বিয়ামতের দিন কাতারের মধ্যে তালাশ করবো এবং তাকে বেহেশ্তে প্রবেশ করাবো।” (সুবহানাল্লাহ্) (ছালাতে নখশী) অতএব “আযান ও ইক্বামতে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ্” (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলার সময় উভয় হাতের দুই বৃদ্ধাঙ্গুলীতে চুমু খেয়ে চোখে লাগানোর ব্যাপারে উল্লিখিত হাদীছ শরীফ খানা যে, ছহীহ্ হিসেবে মরফু ও মাওকুফ হাদীছ বর্ণিত রয়েছে;  তা হযরত ইমাম ছাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “মাকাসিদুল হাসানা” কিতাবে,  হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “মাওযুআতুল কবীর” কিতাবে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া হযরত মুহম্মদ ফাত্তানী রহমতুল্লাহি আলাইহিও তাঁর “মাজমাউল বিহার” কিতাবে “আযানের সময় অঙ্গুলী চুম্বন করা সম্পর্কিত হাদীছ শরীফকে মারফু হিসেবে ছহীহ্ বলে উল্লেখ করেছেন।” আবার মুফতিয়্যুল আ’যম হযরত আমীমুল ইহ্সান মুজাদ্দিদী আল বরকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “ফতওয়ায়ে বরকতিয়া” কিতাবে এ হাদীছ শরীফকে “মাওকুফ” হিসেবে ছহীহ্ বলে উল্লেখ করেন।   অতএব, হাটহাজারীর মৌলভী সহেবরা যে বলেছে, “এ কাজটি সহীহ্ কোন হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়।” তা উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক বর্ণনা দ্বারা সম্পূর্ণরূপে  ডাহা মিথ্যা, মনগড়া, বিভ্রান্তিকর, জেহালতপূর্ণ ও দলীল বিহীন বলেই প্রমাণিত হলো। (২) দ্বিতীয়তঃ হাটহাজারীর মৌলভীরা বলেছে,“ এ কাজটি সহীহ্ কোন হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। কাজেই ইবাদত ও সাওয়াবের নিয়তে এটি করা বিদ্আত।….. এর জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারী মৌলভী সাহেবদের উক্ত বক্তব্যটিও  ডাহা মিথ্যা, দলীল বিহীন এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের খেলাফ। কেননা শরীয়তের কোথাও একথা উল্লেখ নেই যে, কোন বিষয়ে ছহীহ্ হাদীছ শরীফের প্রমাণ না থাকলেই তা বিদ্য়াত। বরং শরীয়তের বিধান হলো- যেসকল বিষয় ছহীহ্ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত নয় ,বরং জঈফ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত, সেসকল বিষয়ও ফযীলত লাভের উদ্দেশ্যে আমল করা কখনো বিদ্য়াত নয় বরং জায়েয ও মুস্তাহাব।   এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহের বিশ্ব বিখ্যাত কিতাব “ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবে উল্লেখ আছে,

 الاستحباب يثبت بالصعيف.

 অর্থঃ- “জঈফ হাদীছ শরীফ দ্বারা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়।”   “তাফসীরে জালালাইন শরীফের” ৩৫৭ পৃষ্ঠার ১৩ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

 قد صح من العلماء تجويز الاخذ بالحديث الضعيف فى العمليات.

 অর্থাৎ- “আমলের ক্ষেত্রে জঈফ হাদীছ শরীফকে গ্রহণ করা জায়েয। এ মতটিকে অধিকাংশ উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ বলেছেন। কিন্তু এরপরেও কিছু কিছু লোক তাদের কিল্লতে ইল্মের কারণে, স্বল্পজ্ঞানের কারণে, বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।”          যেমন, “তাফসীরে জালালাইন শরীফের” ৩৫৭ পৃষ্ঠার ১৩ নং হাশিয়ার পরিশেষে বলা হয়েছে,

 لان بعض الناس ينازع فيه لقلة علمه.

 অর্থাৎ- “কিছু কিছু লোক তাদের ক্বিল্লতে ইল্মের কারণে এ ব্যাপারে অর্থাৎ আযানে অঙ্গুলী চুম্বন করে চোখে লাগানোর ব্যাপারে বিতর্কের সৃষ্টি করে।” কাজেই যেখানে “আযানের সময় বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করা সম্পর্কে” জঈফ হাদীছ তো অবশ্যই, উপরোন্ত মরফূ ও মওকুফ হাদীছ শরীফ সহীহ্ হিসেবে বর্ণিত আছে। সেখানে এটাকে বিদ্য়াত বলা কি করে জায়েয বা শরীয়তসম্মত হতে পারে?       মূলতঃ এটাকে বিদ্য়াত বলার অর্থই হচ্ছে- হাদীছ শরীফের উছূলকে অস্বীকার করা এবং অনুসরণীয় হক্কানী-রব্বানী আলেমগণের প্রতি বিদ্য়াতের তোহ্মত দেয়া। কেননা অনুসরণীয় ও বিশ্বখ্যাত ইমাম, মুজ্তাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাঁদের স্ব স্ব কিতাবে “আযানের মধ্যে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মোবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করে চোখে লাগানোর আমলকে” মুস্তাহাব বলে ফতওয়া দিয়েছেন।   যেমন, “তাফসীরে জালালাইন শরীফের” ৩৫৭ পৃষ্ঠার ১৩ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

 اعلم انه يستحب ان يقال عند سماع الاولى من الشهادة الثانية صلى عليك يا رسول الله وعند سماع الثانية قرة عينى بك يا رسول الله ثم يقال اللهم متعنى بالسمع والبصر بعد وضع ظفر الابهامين على العينين فانه صلى الله عليه وسلم قائد له الى الجنة.

 অর্থঃ- “জেনে রাখ! আযানের সময় শাহাদাতে ছানিয়া অর্থাৎ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ্ প্র্রথমবার শুনে “ছল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া রসূলাল্লাহ্” বলা এবং উক্ত শাহাদতের বাক্য দ্বিতীয়বার শুনে “র্কুরাতু আইনী বিকা ইয়া রসূলাল্লাহ্” বলা মুস্তাহাব।        অতঃপর বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ চুম্বন করে চোখের উপর রেখে “আল্লাহুমা মাত্তি’নী বিস্সাময়ী ওয়াল বাছার” বলা মুস্তাহাব। এরূপ আমলকারীকে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে বেহেশ্তে নিয়ে যাবেন।” (সুবহানাল্লাহ্) (জামিউর রুমুজ, কানযুল ইবাদ, শরহে কবীর, শরহে ইলিয়াছ) এছাড়াও অন্যান্য অনুসরণীয় ও বিশ্বখ্যাত ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম, ও ফুকাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাঁদের স্ব-স্ব কিতাবে “আযানের মধ্যে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করে চোখে লাগানোর  আমলকে জায়েয, ফযীলতের কারণ ও মুস্তাহাব বলে ফতওয়া দিয়েছেন।  যেমন- তাফসীরে রুহুল বয়ান, মুনীরুল আইন ফী তাকবীলুল ইবহামাইন, মাজমাউল বিহার, মাকাসিদুল হাসানাহ্, এয়ানাতুত্ তালেবীন আলা হল্লে আলফাযে ফাত্হিল মুবীন, নাহ্জুস্ সালামাহ্ ফী তাকবীলিল ইবহামাইনে ফিল ইক্বামা, ছালাতে নক্শী,  কুওয়াতুল কুলুব, কিতাবুন নেয়ামুল ইনতেবাহ্, কানযুল ইবাদ, কাহিস্তানী, ফতওয়ায়ে খাজানাতুর রেওয়ায়েত, ফতওয়ায়ে সিরাজুম মুনীর, ফতওয়ায়ে মেফতাহুল যিনান, ফতওয়ায়ে সিদ্দীকিয়া, ফতওয়ায়ে বরকতীয়া,ইত্যাদি আরো অনেক কিতাবেই এটাকে জায়েয, ফযীলতের কারণ ও মুস্তাহাব বলা হয়েছে।  তাছাড়া, “বাহরুর রায়িক, মারাকিউল ফালাহ্,  ফতওয়ায়ে শামী, ফতওয়ায়ে ছূফিয়া,  শরহে ইলিয়াস, জামিউর রুমুয, শরহে কবীর, মজমুয়ায়ে ফতওয়া, শরহে নিকায়া, সিরাতে হালবিয়া, হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন,তরীকুল ইসলাম, ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, আহসানুল ফতওয়া ইত্যাদি কিতাবে উক্ত আমলের কথা বর্ণিত আছে।”       অনুরূপ শাফী মাযহাবের বিখ্যাত কিতাব “ইয়ানাতুত্ ত্বালিবীন আলা হাল্লি আলফাযি ফাত্হিল মুবীন” কিতাবে এবং মালিকী মাযহাবের বিখ্যাত কিতাবে “কিফায়াতুত্ ত্বালিবির রব্বানী লি রিসালাতি আবি যায়িদিল কায়রুয়ানী” কিতাবে আযানে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র নাম মুবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ চুম্বন করে চোখে লাগানোর প্রমাণ রয়েছে।    এখন প্রশ্ন হলো- হাটহাজারীর  মৌলভীদের বক্তব্য মোতাবেক উল্লিখিত কিতাবসমূহের সম্মানিত লেখকগণ তথা অনুসরণীয় ও বিশ্বখ্যাত ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম, ও ফুকাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাঁদের স্ব-স্ব কিতাবে এটাকে জায়েয-মুস্তাহাব বা ফযীলতের কারণ বলে বিদ্য়াতীদের অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন কি? (নাউযুবিল্লাহ)  এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, শরীয়ত যে বিষয়ে স্পষ্টভাবে কোন আদেশ বা নিষেধ প্রদান করেনি, তা মোবাহ্ হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত। তাহলে “আযানের সময় বৃদ্ধাঙ্গুুলী চুম্বন করার আমল” যেখানে ছহীহ্ মরফু ও মওকুফ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত, তা কি করে বিদ্য়াত হতে পারে?    আর যদি উক্ত হাদীছ শরীফকে জঈফও ধরে নেই, তথাপিও তা বিদ্য়াত হতে পারেনা। কারণ সকল মুহাদ্দিসগণের মতেই জঈফ হাদীছ শরীফ ফযীলত অর্জনের জন্য আমল করা জায়েয। আর জঈফ হাদীছ শরীফ দ্বারাও মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়। যা উপরোক্ত দলীলের মাধ্যমে  প্রমাণিত হয়েছে।  কাজেই কোন বিষয়ে ছহীহ্ হাদীছ দ্বারা  প্রমাণ না থাকলেই তা বিদ্য়াত নয়। বরং শরয়ী দলীল-প্রমাণ ব্যতীত কোন বিষয়কে বিদ্য়াত বলা চরম জেহালতী ও গোমরাহী।       উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, আযান-ইক্বামতের সময় হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মোবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে লাগানোর ব্যাপারে হাটহাজারী মৌলভী সাহেবদের উক্ত  বক্তব্য সম্পূর্ণ অশুদ্ধ, দলীলবিহীন, বিভ্রান্তিকর ও অনুসরণীয়  বিশ্বখ্যাত ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম, ও ফুকাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের প্রতি বিদ্য়াতের তোহ্মত স্বরূপ। (চলবে)  মুসাম্মত সানজিদা আক্তার সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত মুহম্মদপুর, ঢাকা।

 সুওয়ালঃ অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়- জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না।  তাদের সকল আমল হবে খুবই নিখূঁত ও সুন্দর। তাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে, তাদের রোযা দেখে তোমাদের রোযাকে তোমরা তুচ্ছ ও নগণ্য মনে করবে। তাদের আমল দেখে তোমরা তোমাদের আমলকে হেয় মনে করবে, তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার নিচে যাবেনা। তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন-প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। এদলের আমল যতই তোমাদেরকে আকৃষ্ট করুক না কেন, কখনই তাদের দলে যাবেনা। কারণ প্রকৃতপক্ষে এরা হবে ইসলাম হতে খারিজ, দ্বীন হতে বহির্ভূত। তীর যেমন ধনুক হতে বের হয়ে যায় সে আর কখনও ধনুকের নিকট ফিরে আসেনা। তেমনিই এরা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে, আর কখনও দ্বীনের পথে, কুরআন ও সুন্নাহ্র পথে ফিরে আসবেনা। আমার প্রশ্ন হল, উপরোক্ত হাদীছ ছহীহ্ কি-না? ছহীহ্ হলে এ দ্বারা উদ্দেশ্য কারা? উক্ত হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতের কোন সম্পর্ক আছে কি-না? অনেকে এই হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতকে জড়াতে চান। উক্ত হাদীসের সঙ্গে তাবলীগ জামাতকে জড়ানো সঠিক কি-না? জবাবঃ প্রশ্নে বর্ণিত হাদীছ ছহীহ্। মুহাদ্দিছীনে কেরাম উক্ত হাদীছসহ এ জাতীয় হাদীছসমূহের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এ সব হাদীছ দ্বারা একটি নির্ধারিত জামাত বা খারিজী ফেরক্বা নামে পরিচিত তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর খিলাফত আমলে এই হাদীছসমূহের বাস্তবতা এবং খাওয়ারেজদের অবস্থার সমন্বয় ঘটেছিল। যার দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে বলা চলে যে, এ হাদীছসমূহ দ্বারা একমাত্র খাওয়ারেজদেরকেই বুঝানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণাদি ছাড়া অন্য কোন জামাতকে এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করা যাবেনা। কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়া তাবলীগ জামাতকে এই হাদীছসমূহের মেসদাক বা উদ্দেশ্য বানানো, তাদেরকে খাওয়ারেজ বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে মারাত্মক অন্যায় ও অপরাধ। তাবলীগের নিয়মনীতি ও কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই। বর্তমান বিশ্বে আল্লাহ্ তা’আলা তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে পথহারা, ঈমানহারা, হেদায়েত থেকে বঞ্চিত অসংখ্য মানুষকে হেদায়েত করেছেন, ঈমান আনার তাওফিক দান করেছেন। এছাড়া এ জামাতের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে অসংখ্য জগদ্বিখ্যাত আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ। অতএব, তাবলীগ জামাতকে খারেজী জামাত বলা, মিথ্যা অপবাদ বৈ কিছুই নয়। (ফতহুল বারী ১২ঃ৩৫০, আল মিরকাত ৭ঃ১০৭) উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো- (১) উল্লিখিত হাদীছ শরীফে বর্ণিত গুণাবলী প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে আছে কি? (২) উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা কি শুধু খারিজী ফিরক্বার লোকদেরকেই বুঝানো হয়েছে? নাকি খারিজীদের ন্যায় আক্বীদা পোষণকারীদের ক্ষেত্রেও এ হাদীছ শরীফ প্রযোজ্য? (৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য? (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি? (৫) কুরআন-সুন্নাহ্র কোথাও প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করার নির্দেশ আছে কি? প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করা কুরআন-সুন্নাহ্ মতে জায়িয কিনা? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী। জাওয়াবঃ   প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কিত উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।  শুধু তাই নয়, তারা প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের সাফাই গাইতে গিয়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যা করেছে। সাথে সাথে “ছয় উছূলীদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী কোন আক্বীদা-আমল নেই” বলে তাদের নির্লজ্জ দালালী করে নিজেদেরকে অপব্যাখ্যাকারী ও মিথ্যাবাদীরূপে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিক দলীলভিত্তিক আলোচনা করলেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে। তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো- (ধারাবাহিক) ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে  উল্লিখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা  ও মিথ্যাচারীতার খণ্ডনমূলক জবাব-৩  প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, পর্যায়ক্রমে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলোর সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো-

প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ১২

প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের আক্বীদা হলো যে, “দাওয়াতের কাজ বন্ধ করার কারণে আল্লাহ পাক হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালামকে বিপদে ফেলেছিলেন এবং তিনি সেখানে নিজের অপরাধ স্বীকার করে চল্লিশ দিন কাঁদা-কাটার পর আল্লাহ পাক তাঁর অপরাধ ক্ষমা করেন। এ প্রসঙ্গে তাদের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে, “দাওয়াত বন্ধ করার কারণে, আল্লাহ পাক হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালামকে অবশ্য গযবে ফেলিলেন…..।”  “…. হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম মাছের পেটে চল্লিশ দিন আবদ্ধ থেকে নিজ ক্রটি স্বীকার করিয়া তওবা …. করার কারণে বিপদ হতে উদ্ধার পেলেন।” (তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, লেখক- ইসাইল হোসেন দেওবন্দী পৃঃ৬২ ও ৮৯) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য নেহায়েতই অজ্ঞতামূলক, বিভ্রান্তিকর, ও নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের শানের সম্পূর্ণ খিলাফ হওয়ার কারণে কুফরীমূলক হয়েছে। মূলতঃ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ সম্পর্কিত ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য ইসলামী আক্বীদাগত অজ্ঞতা হেতুই তারা এরূপ আপত্তিকর আক্বীদা পোষণ করে থাকে।  (তৃতীয় অংশ) নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ  সম্পর্কিত ছহীহ্ ইসলামী আক্বীদা এরপর আরো বলা হয়েছে যে, “হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম চল্লিশ দিন পর্যন্ত মাছের পেটে থেকে, নিজ ত্রুটি স্বীকার করে তওবা করার ফলে বিপদ হইতে উদ্ধার পাইলেন।” অর্থাৎ তিনি ত্রুটি করেছেন এবং ত্রুটি স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণে আল্লাহ্ পাক তাঁকে ক্ষমা করেছেন।” প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের এ বক্তব্যটিও সম্পূর্ণ মনগড়া, বিভ্রান্তিকর ও হযরত ইউনুস আলাইহিমুস্ সালাম-এর শানের খিলাফ। আর পূর্বেই প্রমাণিত হয়েছে যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ছগীরা, কবীরা, কুফরী, শেরেকী, ভুল-ক্রটি, এমনকি অপছন্দনীয় কথা বা কাজ হতেও পবিত্র। কারণ তাঁরা আল্লাহ পাক-এর ওহী দ্বারা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত।  কাজেই এ ব্যাপারে হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম-এর কোন ত্রুটিই ছিলনা। বরং তা ছিল, আল্লাহ পাক-এর নির্দেশেরই অন্তর্ভুক্ত। এখন কেউ বলতে পারে- যদি তা আল্লাহ পাক-এর নির্দেশই হয়ে থাকে, আর হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম-এর যদি কোন প্রকার ত্রুটিই না হয়ে থাকে, তবে তিনি একথা কেন বললেন যে,

 لا اله الا انت سبحالك انى كنت من الظالمين.

 অর্থঃ- “আপনি পবিত্র, আল্লাহ পাক ব্যতীত আর কোন ইলাহ্ নেই। আর আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।” (সূরা আম্বিয়া/৮৭) অর্থাৎ  আল্লাহ পাক-এর রসূল, হযরত ইউনুস আলাইহিমুস্ সালাম মাছের পেটে প্রবেশ করার পর চিন্তা করলেন যে, আমাকে স্বাভাবিকভাবে যমীনের উপর অথবা পানির উপর দিয়ে চলার কথা ছিল, কিন্তু আমি মাছের পেটে প্রবেশ করলাম কেন, আমার দ্বারা কি জুলুম হয়ে গেল? তখন তিনি দোয়া করতে লাগলেন, আর দোয়ার মধ্যে উল্লিখিত বাক্য পাঠ করলেন। তখন আল্লাহ পাক জবাবে বললেন,

 فاستجبنا له ونجينه من الغم وكذالك ننجى المؤمنين.

 অর্থঃ- “আমি তাঁর (হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম-এর) আহ্বানের জবাব দিলাম এবং তাঁকে নাযাত দিলাম দুঃশ্চিন্তা থেকে। আমি এমনিভাবে মুক্তি দিয়ে থাকি মু’মিনদেরকে।” (সূরা আম্বিয়া/৮৮) অর্থাৎ আল্লাহ পাক হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালামকে জানিয়ে দিলেন যে, আপনি আপনার দ্বারা জুলুম হয়ে যাওয়ার যে চিন্তায় মশগুল আছেন, আপনাকে সে চিন্তা থেকে নাযাত দেয়া হলো। অর্থাৎ আপনি কোন জুলুম করেননি এবং জালেমও নন। এখানে স্মরণযোগ্য যে, আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাদেরকে মুছীবতের দ্বারা পরীক্ষা করে থাকেন, তার কয়েকটি অবস্থা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক সূরা বাক্বারার ১৫৫ হতে ১৫৭নং আয়াত শরীফে বলেন,

 ولنبلونكم بشئ من الخوف والجوع ونقص من الاموال والانفس والثمرت وبشر الصبرين. الذين اذا اصابتهم مصيبة قالوا انا لله وانا اليه رجعون. اولئك عليهم صلوت من ربهم ورحمة واولئك هم المهتدون.

 অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো কিছু বিষয় দ্বারা, যেমন- ভয়, ক্ষুধার দ্বারা, মাল ও জানের ক্ষতি করে এবং ফসল ও ফলাদি নষ্ট করার মাধ্যমে এবং সুসংবাদ দান করুন সবরকারীদেরকে, যখন তারা মুছীবতে পতিত হয়, তখন তারা বলে নিশ্চয়ই আমরা সকলেই আল্লাহ পাক-এর জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা সকলেই তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করবো। তাঁরাই ঐ সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহ পাক-এর অফুরন্ত রহ্মত রয়েছে এবং তাঁরাই হিদায়েত প্রাপ্ত।” আর এই আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফে উল্লেখ রয়েছে, বান্দাদেরকে তিন কারণে মুছীবতগ্রস্থ করা হয়- (১) নাফরমানীর কারণে গযব নাযিল করা হয়। (২) গুণাহ্ মাফ করার জন্য মুছীবতগ্রস্থ করা হয়। (৩) মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য মুছীবতগ্রস্থ করা হয়।    আর এ তিন প্রকার মুছীবতের তিনটি লক্ষণ রয়েছে। যার দ্বারা প্রত্যেক বান্দার জন্যই বুঝা সহজ হয়ে যায় যে, এ মুছীবত কোন কারণে পতিত হয়েছে। (১) যখন কোন বান্দার প্রতি অতিরিক্ত নাফরমানীর কারণে গযব নাযিল হয়, তার লক্ষণ হলো- সে আল্লাহ পাককে অশ্লীল ভাষায় গালি-গালাজ করতে থাকে। (২) যখন কোন বান্দার গুণাহ্  মাফ করার জন্য, মুছীবতগ্রস্থ করা হয়। তার লক্ষণ হলো- সে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে। (৩) যখন কোন বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করার জন্য মুছীবতগ্রস্থ করা হয়। অথচ বান্দা গুণাহ্গার নয়, এক্ষেত্রে তার লক্ষণ হলো- সে মুছীবতগ্রস্থ হয়ে বেশী বেশী ইস্তেগ্ফার করতে থাকে। (সমূহ তাফসীরের কিতাব)  উল্লেখ্য যে, সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ কোন মুছীবতগ্রস্থ হলে, বেশী বেশী এস্তেগ্ফার করতেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নবী-রসুল আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রতি যে সকল মুছীবত এসেছে, তা তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধিরই কারণ। স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও আকাশ একটু অন্ধকার দেখলেই মসজিদে প্রবেশ করে এস্তেগ্ফার করতেন।  তদ্রুপ আল্লাহ পাক-এর রসূল, হযরত ইউনুস আলাইহিমুস্ সালাম মুছীবতগ্রস্থ হয়ে ইস্তেগ্ফার করেছেন, তাও তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধির কারণেই, কোন গুণাহ্ বা ত্রুটি করার কারণে নয়। এ ইস্তেগ্ফার করার অর্থ এই নয় যে, গুণাহ্ বা ত্রুটি রয়েছে। বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন সত্তর থেকে একশতবার ইস্তেগ্ফার করতেন। অর্থাৎ অসংখ্যবার ইস্তেগ্ফার করতেন। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,

 والله انى لاستغفر الله واتوب اليه فى اليوم اكثر من سبعين مرة.

 অর্থঃ- “আল্লাহ পাক-এর শপথ, আমি প্রতিদিন আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে সত্তর বারেরও বেশী এস্তেগ্ফার ও তওবা করে থাকি।” (বুখারী শরীফ, উমদাতুল ক্বারী, ফতহুল বারী, ইরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল ক্বারী) অথচ আল্লাহ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন গুণাহ্ বা ত্রুটি কিছুই ছিলনা। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, বিশ্বখ্যাত কবি, বিশিষ্ট ছূফী সাধক, হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন তাঁর পীর ছাহেব, হযরত শাম্সে তাবরীজী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট বাইয়াত হওয়ার আরজু করলেন, তখন হযরত শাম্সে তাবরীজী রহমতুল্লাহি আলাইহি মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে কয়েকটি প্রশ্ন করেছিলেন। তার মধ্যে একটি হলো- তিনি বললেন, হে মাওলানা রুমী! বলতো দেখি, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে, প্রতিদিন সত্তর থেকে একশতবার ইস্তেগ্ফার পাঠ করতেন, তার কি কারণ? তাঁর কি কোন গুণাহ্খাতা ছিল? জবাবে মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি  বললেন, না, তাঁর কোন গুণাহ্খাতা ছিলনা। বরং উম্মতকে তা’লীম দেয়ার জন্য ও রফ্য়ে দারাজাত বা মর্যাদা বৃদ্ধির ফলে তিনি ইস্তেগ্ফার করতেন। অতএব, প্রমাণিত হলো যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ, যে ইস্তেগ্ফার বা তওবা করেছেন, তা বিণয় প্রকাশ বা মর্যাদা বৃদ্ধির ফলে করেছেন। কাজেই যদি বলা হয়, হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম ত্রুটি বা ভুল করার কারণে তওবা করেছেন, তবে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বলতে হবে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বেশী ভুল বা ত্রুটি করেছেন, যার কারণে তিনি প্রতিদিন সত্তর থেকে একশতবার তওবা করতেন। (নাউযুবিল্লাহ্ মিন যালিক) মূলতঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেরূপ ত্রুটি বা ভুল করার কারণে তওবা করেননি, বরং বিণয় প্রকাশ বা মর্যাদা বৃদ্ধির ফলে করেছেন, তদ্রুপ হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালামও ভুল বা ত্রুটি করার কারণে তওবা করেননি, বরং বিণয় প্রকাশার্থে ও মর্যাদা বৃদ্ধির কারণেই তওবা করেছেন।  উল্লেখ্য সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে ইরশাদ ফরমান,

  لا تفوقولى فوق يونس بن متى.

 অর্থঃ- “তোমরা হযরত ইউনুস ইবনে মাত্তা আলাইহিমুস্ সালাম-এর উপর আমাকে প্রাধান্য দিওনা।” সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,

 ولا اقول ان احدا افضل من يونس بن متى.

 অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমি বলিনা যে, নিশ্চয় কেউ হযরত ইউনুস ইব্নে মাত্তা আলাইহিমুস্ সালাম থেকে অধিক উত্তম।” (মায়ারিফুল কুরআন) এ প্রসঙ্গে আরো ইরশাদ হয়েছে যে,

 عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ماينبغى لعبد ان يقول انى خير من يونس بن متى.

 অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “কারো জন্যে একথা বলা উচিৎ হবেনা যে, আমি হযরত ইউনুস ইব্নে মাত্তা আলাইহিমুস্ সালাম হতে উত্তম।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল ক্বারী, শরহে নববী, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, শরহুত্ ত্বীবী, মুযাহিরে হক্ব, মিরআতুল মানাযীহ্) অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বা অন্য কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে, যেন হযরত ইউনুস আলাইহিমুস্ সালামকে হীন বা খাট না করা হয়। উল্লেখ্য, আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত নবীদের নবী, রসূলদের রসূল। তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন। কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামকে নুবুওওয়াত দেয়া হয়নি এবং কোন রসূল আলাইহিমুস্ সালামকে রেসালত দেয়া হয়নি, তাঁর প্রতি ঈমান আনা ব্যতীত, যা আল্লাহ পাক সূরা ইমরানের ৮১নং আয়াত শরীফে উল্লেখ করেছেন। সেই আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেখানে হযরত ইউনুস আলাইহিমুস্ সালাম-এর মর্যাদাহীন বা খাটো করতে নিষেধ করার সাথে সাথে তা’যীম-তাকরীম করতে আদেশ করেছেন, সেখানে উম্মতে মুহম্মদীর পক্ষে আল্লাহ পাক-এর রসূল, হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম-এর মর্যাদা হানিকর উক্তি করা যেমন, তাঁকে গযবে ফেলা হয়েছে, তিনি ত্রুটি করেছেন, অতঃপর তওবা করার পর তাঁকে মাফ করা হয়েছে ইত্যাদি মন্তব্য করা বা আক্বীদা পোষণ করা কি করে জায়িয হতে পারে? এবং তা কতটুকু গুরুতর অপরাধ হতে পারে তা বিশেষভাবে অনুধাবনীয়। মূলতঃ হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালাম সম্পর্কিত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ আপত্তিকর, বিভ্রান্তিমূলক, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের শানের খিলাফ, আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার সম্পূর্ণ বিপরীত, যা স্পষ্টতঃ কুফরীর অন্তর্ভুক্ত এবং যা থেকে তওবা করে বিরত থাকা ফরজ/ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। (চলবে)  মুহম্মদ মুহিউদ্দীন সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত সন্দ্বীপ শাখা, চট্টগ্রাম।  সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানী মাযহাবের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর- জানুয়ারী/২০০৩-০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে ‘‘বিত্রের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম এবং বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব পাবে বলে উল্লেখ করেছে।’’ তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ্, নাসায়ী থেকে দলীল হিসেবে কয়েকখানা হাদীছ শরীফও উল্লেখ করেছে।  আর হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ডিসেম্বর/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, ‘‘বিতির নামাযের পর দুই রাক্আত নফল নামায…  দাঁড়িয়ে পড়া ভাল। কারণ, নফল নামায বিনা কারণে বসে পড়লে অর্ধেক সাওয়াব হয়।” এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা হালকী নফল নামায সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে হাদীছ শরীফগুলো উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য। তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডনসহ হালকী নফল সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।      জাওয়াবঃ   বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায যাকে “হালক্বী নফল” বলা হয়, তা দাঁড়িয়ে পড়া সম্পর্কে অখ্যাত মাসিক পত্রিকাদ্বয়ের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ হয়েছে। এবং ক্ষেত্রবিশেষে কুফরীমূলক হয়েছে।  স্মর্তব্য যে, সাধারণতঃ নফল নামায বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব হলেও বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়াই মুস্তাহাব-সুন্নত, যা উত্তম ও পূর্ণ ছওয়াব এবং অধিক ফযীলতের কারণ। কেননা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল এবং অন্যান্য নফলের ক্ষেত্রে একই হুকুম নয়। বরং বিত্র নামাযের পর দুই রাকায়াত নফলের হুকুম অন্যান্য নফল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অর্থাৎ অন্যান্য নফল দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব, বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব। আর হালক্বী নফল অর্থাৎ বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব, আর বসে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব।  কারণ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায কখনও দাঁড়িয়ে আদায় করেননি। বরং বসেই আদায় করেছেন। যা সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।  (ধারাবাহিক) উল্লেখ্য,রেযাখানীরা ‘বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ ও নাসায়ী শরীফ’ ইত্যাদি কিতাব থেকে দলীল হিসেবে যে বক্তব্য উল্লেখ করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য মোটেও সে রকম নয়। তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝতে না পারার কারণেই ‘হালক্বী নফল’ সম্পর্কে এরূপ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য উল্লেখ করেছে। শুধু তাই নয়, সাথে সাথে নিজেদের জিহালতীকে ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে উল্লিখিত কিতাবসমূহের কোন কোন ইবারত কারচুপি করে নিজেদের বাতিল মতকে ছাবিত করার ব্যর্থ কোশেশ করেছে। তারা উল্লিখিত কিতাবের বরাত দিয়ে যে সকল মিথ্যাচারিতা, প্রতারণা ও ইবারত কারচুপির আশ্রয় নিয়েছে সেগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা ও ফায়সালা তুলে ধরে তার খণ্ডনমূলক আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ্। রেযাখানীদের কারচুপিমূলক  বক্তব্য উদঘাটন ও খণ্ডন উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বলেছে,“যদি বিতরের পর দু’রাকাত নামায পড়া প্রিয় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দাওয়ামী সুন্নত, বিধায় বসে উত্তম, তা অস্বীকার করা কুফরী হয়, তবে যে সব মাযহাবের সম্মানিত ইমাম ও মুজতাহিদ যারা এ দু’রাকাত নামাযকে মোটেই স্বীকার করেননি তাঁদের ব্যাপারে কী ফতোয়া দেয়া হবে।”…… এর জবাবে  বলতে হয় যে,  উপরোক্ত বক্তব্য প্রদান করে রেযাখানী মৌলভী সাহেবরা নিজেদেরকে চরম জাহিল হিসেবে সাব্যস্ত করলো। কারণ শরীয়তের অনেক বিষয়েই এবং অনেক হাদীছ শরীফ সম্পর্কে চার মাযহাবের ইমামগণের মধ্যে ইখতিলাফ বা মতভেদ রয়েছে। তাই হানাফী মাযহাবে কোন বিষয় ছাবেত করার ক্ষেত্রে অন্য মাযহাবের দলীল গ্রহণযোগ্য নয়।  সেহেতু, ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হালকী নফল সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ সমূহ স্বীকার না করলেও হানাফী ইমামগণ তা স্বীকার করেছেন এবং উক্ত হাদীছ শরীফ সমূহের উপর ভিত্তি করে বিত্রের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে আদায় করাকে সুন্নত বলে ফতওয়া দিয়েছেন। তাই হানাফী মাযহাবের অনুসারীদের জন্য সুন্নতকে অস্বীকার করা, হাদীছ শরীফ অস্বীকার করারই নামান্তর। আর হাদীছ শরীফ অস্বীকার করা কুফরী।  এক্ষেত্রে অন্য মাযহাবের বরাত টানা মাযহাব সম্পর্কিত জিহালতী বা অজ্ঞতারই বহিঃপ্রকাশ। কারণ যারা মাযহাবের অনুসারী, তাদের ভাল করেই জানা রয়েছে যে, এমন অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি একভাবে গ্রহণ করেছেন। আর অন্য মাযহাবের ইমামগণ অন্যভাবে গ্রহণ করেছেন। প্রমাণ স্বরূপ নিম্নে কিছু উদাহরণ পেশ করা হলো যেমন,  (১) আমাদের হানাফী মাযহাবে ওজুর ফরজ চারটি।   অথচ হাম্বলী মাযহাবে ওজুর ফরজ দশটি। (২) আমাদের হানাফী মাযহাবে রক্ত ঝরলে ওজু ভঙ্গ হবে এবং এ অবস্থায় নামায পড়লে কুফরী হবে।   অথচ শাফেয়ী মাযহাবে রক্ত ঝরলে ওজু ভঙ্গ হয় না।   (৩) আমাদের হানাফী মাযহাবে পুরুষের ছতর হলো- নাভীর নীচ থেকে হাঁটুর নীচ পর্যন্ত আবৃত করা।   অথচ মালেকী মাযহাবে আন্ডারওয়ার বা ছোট প্যান্ট  পরিধান করলে ছতর ঢাকা ফরজ আদায় হবে। (৪) আমাদের হানাফী মাযহাবে ঈদের নামায ওয়াজিব।  অথচ হাম্বলী মাযহাবে “ঈদের নামায ফরযে ক্বিফায়া।” শাফেয়ী ও মালেকী মাযহাবে “ঈদের নামায সুন্নত। (৫) আমাদের হানাফী মাযহাবে কুসূফের নামায (সূর্যগ্রহণের নামায) সুন্নতে যায়েদাহ্ বা নফল।       অথচ হাম্বলী মাযহাবে “কুসূফের নামায (সূর্যগ্রহণের নামায) সুন্নতে মুয়াক্কাদা।” (৬) আমাদের হানাফী মাযহাবে একমাত্র বিতের নামায ব্যতীত আর কোন নামাযেই কুনূত পড়া জায়িয নেই।   অথচ শাফেয়ী  মাযহাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযেই কুনূত পড়া জায়িয।  (৭) আমাদের হানাফী মাযহাবে ঈদের নামাযের তাকবীর ছয়টি। অথচ শাফেয়ী মাযহাবে ঈদের নামাযের তাকবীর   বারটি। (৮) আমাদের হানাফী মাযহাবে ইমামের পিছনে মুক্তাদির কিরাত পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী।   অথচ শাফেয়ী মাযহাবে ইমামের পিছনে মুক্তাদির কিরাত পড়া ওয়াজিব।  (৯) আমাদের হানাফী মাযহাবে সূরা ফাতিহার পর আমীন চুপে পড়তে হয়।   অথচ অন্য মাযহাবে সূরা ফাতিহার পর আমীন উচ্চ আওয়াজে পড়তে হয়।  (১০) আমাদের হানাফী মাযহাবে “বিস্মিল্লাহ্” সুরা ফাতিহার অংশ নয়।  অথচ শাফেয়ী মাযহাবে “বিস্মিল্লাহ্” সুরা ফাতিহার অংশ। (১১) আমাদের হানাফী মাযহাবে শিশু চুরি করলে শিশুর হাত কাটা যাবে না।   অথচ মালেকী মাযহাবে শিশু চুরি করলে শিশুরও  হাত কাটতে হবে।  (১২) আমাদের হানাফী মাযহাবে কাফন চোরের হাত  কাটা যাবে না।   অথচ অন্যান্য মাযহাবে বলা হয়েছে, কাফন চোরের হাত কাটতে হবে।  (১৩) আমাদের হানাফী মাযহাবে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক চুরির জন্য হাত কাটা যাবে না।    অথচ মালেকী মাযহাবে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক চুরির জন্য হাত কাটতে হবে।  (১৪) আমাদের হানাফী মাযহাবে কুরআন শরীফ চুরি করলে হাত কাটা যাবে না।   অথচ শাফেয়ী  মাযহাবে কুরআন শরীফ চুরি করলে হাত কাটতে হবে।  (১৫) আমাদের হানাফী মাযহাবে পিতার সম্পদ পুত্র চুরি করলে হাত কাটা যাবে না।  অথচ মালেকী মাযহাবে পিতার সম্পদ পুত্র চুরি করলে হাত কাটতে হবে।  (১৬) আমাদের হানাফী মাযহাবে বলা হয়েছে, যেহেতু যাকাত প্রদানের সব খাতগুলি একই সাথে পাওয়া সম্ভব নয়, সেহেতু যে কোন একটি খাতে যাকাত প্রদান করলেই যাকাত আদায় হয়ে যাবে।   অথচ শাফেয়ী  মাযহাবে যাকাত আদায়ের খাত যথা ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায়কারী কর্মচারী, নও মুসলিম, গোলামদের আযাদকার্যে, ঋণগ্রস্থ, জ্বিহাদে লিপ্ত ব্যক্তি এবং মুসাফির এই আট শ্রেণীর প্রত্যেক শ্রেণীকে যাকাত দানের মাধ্যমে ফরয আদায় হবে, অন্যথায় যাকাত আদায় হবে না। (১৭) আমাদের হানাফী মাযহাবে জোর করে তালাক দিলে তালাক হবে।  অথচ মালেকী মাযহাবে জোর করে তালাক দেয়ালে তালাক হবে না।  (১৮) আমাদের হানাফী মাযহাবে ঘোড়ার গোশ্ত খাওয়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী।  অথচ শাফেয়ী মাযহাবে ঘোড়ার গোশ্ত খাওয়া জায়িয। এখন রেযাখানী মৌলভী সাহেবদের প্রতি আমাদের প্রশ্ন উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে রেযাখানীরা কি মাসয়ালা দিবে। তারা হানাফী মাযহাবের ফতওয়া দিবে না অন্য মাযহাবের উপর ফতওয়া দিবে?  যদি হালকী নফলের ক্ষেত্রে হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতকে গ্রহণ করে বা দলীল হিসেবে পেশ করতে চায়, তবে তাদেরকে ফতওয়া দিতে হবে যে, ওজুর ফরজ দশটি। রক্ত ঝরলে ওজু ভঙ্গ হয় না। আন্ডারওয়ার বা ছোট প্যান্ট পরিধান করলে ছতর ঢাকা ফরজ আদায় হবে।। ঈদের নামায ফরযে ক্বিফায়া বা ঈদের নামায সুন্নত। কুসূফের নামায (সূর্যগ্রহণের নামায) সুন্নতে মুয়াক্কাদা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযেই কুনূত পড়তে হবে। ঈদের নামাযের তাকবীর   বারটি। ইমামের পিছনে মুক্তাদির কিরাত পড়া ওয়াজিব। সূরা ফাতিহার পর আমীন উচ্চ আওয়াজে পড়তে হবে। “বিস্মিল্লাহ্” সুরা ফাতিহার অংশ।   শিশু চুরি করলে শিশুরও  হাত কাটতে হবে।  কাফন চোরের হাত কাটতে হবে। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক চুরির জন্য হাত কাটতে হবে। কুরআন শরীফ চুরি করলে হাত কাটতে হবে।   পিতার সম্পদ পুত্র চুরি করলে হাত কাটতে হবে।  যাকাত আদায়ের খাত যথা ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায়কারী কর্মচারী, নও মুসলিম, গোলামদের আযাদকার্যে, ঋণগ্রস্থ, জ্বিহাদে লিপ্ত ব্যক্তি এবং মুসাফির এই আট শ্রেণীর প্রত্যেক শ্রেণীকে যাকাত দিতে  হবে, অন্যথায় যাকাত আদায় হবে না। জোর করে তালাক দেয়ালে তালাক হবে না। ঘোড়ার গোশ্ত খাওয়া জায়িয। অথচ হানাফী মাযহাবের অনুসারীদের জন্য অন্য মাযহাব অনূযায়ী ফতওয়া দেয়া বা অন্য মাযহাব অনূযায়ী  আমল করা নাজায়িয, হারাম ও কুফরী। যেমন, এ প্রসঙ্গে “তাফসীরে আহমদী” কিতাবের ৩৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 لايجوز الانتقال من مذهب الى مذهب اخر كذالك لايجوز ان يعمل فى مسئلة على مذهب وفى اخرى على اخر.

 অর্থঃ- “এক মাযহাবের অনুসারী ব্যক্তিদের জন্য  মাযহাব পরিবর্তন করে অন্য মাযহাব গ্রহণ করা যেরূপ জায়িয নেই; তদ্রুপ এক মাযহাবে অনুসারীর ব্যক্তিদের জন্য অন্য মাযহাবের মাসয়ালা আমল করাও জায়িয নেই।” “তাফসীরে আহমদী” কিতাবের ৩৪৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে যে,

 لايجوز للحنفية العمل على مذهب الشافعى.

 অর্থঃ- “হানাফীদের জন্য শাফিয়ী মাযহাবের (মাসয়ালা’র উপর) আমল করা নাজায়িয তথা হারাম।” অতএব প্রমাণিত হলো যে, রেযাখানী মৌলভী সাহেবরা হালকী নফলের ক্ষেত্রে অন্য মাযহাবের বরাত  টেনে অর্থাৎ হালকী নফলের ক্ষেত্রে ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতকে দলীল হিসেবে পেশ করে, নিজেদেরকে চরম জাহিল হিসেবে সাব্যস্ত করলো। (চলবে)  ঞ্জমুহম্মদ হামির্দু রহমান ফতুল্লা, এনগঞ্জ।  সুওয়ালঃ মাসিক মদীনা নভেম্বর/২০০৪ ঈসায়ী সংখ্যায়  প্রশ্নোত্তর বিভাগে  এক প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, “আযানের জবাব শাব্দিক ভাবে দেয়া সকলের জন্যই সন্নত”…..।  আর চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানী মাযহাবের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী/২০০৩-০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে,…. “আযানের  মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব নয় বরং মুস্তাহাব।”….. এখন আমার সুওয়াল হলো- মাসিক মদীনা ও রেযাখানী  মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর  মৌখিক বা শাব্দিক ভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া সকলের জন্যই ওয়াজিব না সুন্নত-মুস্তাহাব। নির্ভরযোগ্য দলীল আদিল্লার মাধ্যমে  সঠিক জাওয়াব জানাবেন। জাওয়াবঃ   সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিক ভাবে  আযানের জবাব দেয়া সম্পর্কে মাসিক মদীনা ও রেযাখানী  মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক  হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। কারণ মৌখিক বা শাব্দিক ভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া আযান শ্রোতাদের সকলের জন্যই ওয়াজিব যা বহু হাদীছ শরীফ ও বিশ্ববিখ্যাত নির্ভরযোগ্য ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এর উপরই ফতওয়া দেয়া হয়েছে।  সুতরাং এ সাধারণ মাসয়ালা ভুল করলে সমাজে স্বাভাবিকভাবেই বিভ্রান্তি ছড়ানোর কথা। তবে উত্তর দাতার উচিৎ কোন মাসয়ালা বলার পূর্বে তাহ্ক্বীক্ব করে বলা। কারণ এ ভুলের জন্য সকলের ওয়াজিব তরকের গুণাহ্ উক্ত ভুল উত্তর দাতার উপরই বর্তাবে।  উল্লেখ্য, মৌখিক বা শাব্দিকভাবে  মুখে আযানের জাওয়াব দেয়া আযান শ্রোতাদের  সকলের জন্যই যে ওয়াজিব এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফের কিতাবসমূহে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। যা নিম্নে প্রদত্ত হলো-   যেমন হাদীছ শরীফের সহীহ কিতাব “বুখারী শরীফের” ১ম খন্ডের ৮৬ পৃষ্ঠায় ও মুসলিম শরীফের ১ম খন্ডের ১৬৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 عن ابى سعيدن الخدرى رضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال اذا سمعتم النداء فقولو مثل مايقول المؤذن.

 অর্থঃ- “হযরত আবূ সাঈদ খুদরীঞ্জরদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন  তোমরা আযান শুনবে, তখন মুয়াজ্জিন যা বলে, তোমরাও তাই বল।”    “তিরমিযী শরীফের” ১ম খন্ডের ২৯ পৃষ্ঠায় ও “আবূ দাউদ শরীফ” কিতাবের ১ম খন্ডের ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 عن ابى سعيد رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا سمعتم النداء فقولوا مثل مايقول المؤذن.

 অর্থঃ- “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা আযান শুনবে তখন মুয়াজ্জিন যেরূপ বলে তোমরাও অনুরূপ বল।”   “ইবনে মাযাহ্ শরীফের” ৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

  عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا اذن المؤذن فقولوا مثل قوله.

 অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন যে, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মুয়াজ্জিন যখন আযান দেয়, তখন তোমরা মুয়াজ্জিনের অনুরূপ বল।” “মিশকাত শরীফের” ৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 وعن عبد الله ابن عمرو بن العاص رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا صمعتم المؤذن فقولو مثل ما يقول.

 অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর বিন আস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম হতে বর্ণিত আছে। তিনি বর্ণনা করেন যে, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা মুয়াজ্জিনের আযান শুনবে তখন তোমরাও অনুরূপ বল যা মুয়াজ্জিন বলে।” এছাড়াও “নাসাঈ শরীফে”, “মুয়াত্তা ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি” কিতাবের ৬১ পৃষ্ঠায়, “মুয়াত্তা ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি” কিতাবের ৭৫ পৃষ্ঠায়, উল্লেখ আছে যে, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা মুয়াজ্জিনের আযান শুনবে তখন তোমরাও অনুরূপ বল যা মুয়াজ্জিন বলে।            উপরোক্ত হাদীছ শরীফের বর্ণনা অনুসারে দিবালোকের ন্যায় একথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, আযানের শব্দ যা রয়েছে,আযান শ্রবণকারী তাই বলবে। আর বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীছ শরীফে রয়েছে, “হাইয়া আলাছ্ ছলাহ্ ও ফালাহ্ বাক্যদ্বয় শুনে লা-হাওলা-ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্ বলতে হবে।” এটা হাশিয়ায়ে মুয়াত্তা ইমাম মুহম্মদ-রহমতুল্লাহি আলাইহি” কিতাবের  ৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে।  উক্ত হাদীছ শরীফ অনুসারে ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও আসহাবে জাওয়াহিরের মত হচ্ছে- মৌখিক বা  শাব্দিক ভাবে  মুখে আযানের জাওয়াব দেয়া আযান শ্রোতাদের সকলের জন্যই ওয়াজিব।  কারণ হাদীছ শরীফের ইবারতে قولوا শব্দটি امر (আমর) এর ছিগাহ। আর আমাদের হানাফীগণের নিকট উছূল হলো- امر (আমর) এর হুকুম হচ্ছে- وجوب (উজুব) অর্থাৎ ওয়াজিব। তাই যে পর্যন্ত এর বিপরীত কোন দলীল পাওয়া না যাবে, সে পর্যন্ত مطلقا (সাধারণভাবে) امر (আমর) -এর হুকুমব্জ وجوب বা (ওয়াজিব) হিসেবে বর্তাবে।  যেমন “বাদায়েউস্ সানায়ে” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

   ومطلق الامر لوجوب العمل.

 অর্থাৎ “সাধারণভাবে امر (আমর) আমলকে ওয়াজিব করে দেয়।”  সুতরাং মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জাওয়াব দেয়া আযান শ্রোতাদের সকলের জন্যই ওয়াজিব সাব্যস্ত হলো।          এছাড়াও নিম্নে সর্বজনমান্য, বিশ্ববিখ্যাত আরো ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাব থেকে অকাট্ট ও নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লা পেশ করা হলো- যেমন ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব “ফিক্বহুল  ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু” কিতাবের ১ম জিঃ ৫৫২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

 يجب فى الراجح عند الحنفية لمن سمع الاذان …. فالاجابة انما هى باللسان وهو الطاهر عند الحنفية.

 অর্থঃ- “হানাফী মাযহাবের প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়া এবং জাহের রেওয়ায়েতের বর্ণনা মোতাবেক যারা আযান শুনবে তাদের সকলের জন্যই…. মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের  জবাব দেয়া ওয়াজিব।”  “বাহ্রুর রায়েক” কিতাবের ১ম খন্ডের ২৫৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 والظاهر ان الإجابة باللسان واجبة لظاهر الامر فى قوله صلى الله عليه وسلم اذا سمعتم المؤذن فقولوا مثل مايقول.

 অর্থঃ- “জাহের রেওয়ায়েত অনুযায়ী নিশ্চয়ই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। কারণ হাদীছ শরীফে আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,  হাবীবুল্লাহ্ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্টভাবে আদেশ করেছেন যে, যখন তোমরা মুয়াজ্জিনের আযান শুনবে তখন মুয়াজ্জিন যেরূপ বলে তোমরাও তদ্রুপ বল।” “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খন্ডের ৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 يجب السامعين عند الاذان الاجابة …… ولاينبغى ان يتكلم السامع فى خلال الاذان والاقامة ولا يشتغل بقرائة القران ولا بشيئ من الاعمال سوى الاجابة.

 অর্থঃ- “আযানের সময় শ্রোতাদের সকলের জন্যই  মৌখিক আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। …. আর আযান ও ইক্বামতের সময় শ্রোতাদের কথা বলা উচিত হবেনা এবং কুরআন শরীফ পাঠ করবেনা এবং আযানের জবাব দেয়া ব্যতীত কোন কাজই করা যাবেনা।” “ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, উর্দূ কম্পোজ করতে হবে  অর্থঃ- “আযানের সময় শ্রোতাদের সকলের জন্যই মৌখিক আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব।” “খোলাছাতুল ফতওয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ৫০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 ومن سمع الاذان فعليه ان يجيب وان كان جنبا.

 অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আযান শুনবে, তার উপর ওয়াজিব হলো, মৌখিক আযানের জবাব দেয়া যদিও সে নাপাকী অবস্থায় থাকে।” “জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্” কিতাবের ১ম খন্ডের ৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 وينبغى لسامع الذان ان لايتكلم فى حال الاذان والاقامة ولايشتغل بشيئ سوى الاجابة.

 অর্থঃ-“আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই  উচিত হবে অর্থাৎ ওয়াজিব যে, সে আযান ও ইকামতের সময় কোন প্রকার কথা-বার্তা বলবেনা এবং মৌখিক আযানের জবাব দেয়া ব্যতীত কোন কাজে মশগুল হবেনা।” “তিরমিযী শরীফের” ১ম খন্ড ২৯ পৃষ্ঠার ৩ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

 قال الشيخ فى اللمعات اجابة المؤذن واجبة ويكره التكلم عند الاذان.

 অর্থঃ- শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি “লুময়াত” কিতাবে বলেছেন, “মুয়াজ্জিনের আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব এবং আযানের সময় কথা বলা মাকরূহ্ তাহ্রীমী।” “আবূ দাউদ শরীফ” কিতাবের ১ম খন্ডের ৯৩ পৃষ্ঠায় ৬ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

  اجابة المؤذن واجبة ويكره التكلم عند الاذان.

 অর্থঃ- “মুয়াজ্জিনের আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব। আর আযানের সময় কথা বলা মাকরূহ তাহ্রীমী।” “মাজমাউল আনহুর” কিতাবের ১ম খন্ডের ৭৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 انه ينبغى ان يجيب المستمع ويقول مثل ما قال المؤذن.

 অর্থঃ- “আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই উচিত অর্থাৎ ওয়াজিব হলো আযানের মৌখিক জবাব দেয়া এবং আযান শ্রবণকারীর সকলেই অনুরূপভাবে আযানের জবাব বলবে যেরূপ মুয়াজ্জিন বলে।” “মাজমাউল আনহুর” কিতাবের ১ম খন্ডের ৭৮ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

 اجابة المؤذن باللسان قيل واجبة …… قاله المصنف لكن رجح فى البحر والنهر القول بالوجوب.

 অর্থঃ- “মুখে মুয়াজ্জিনের আযানের জবাব দেয়া  ওয়াজিব বলা হয়েছে,…..মুছান্নেফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, তবে “বাহ্রুর রায়েক” ও “নাহ্রুল ফায়েক” কিতাবের  প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়া হলো মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব।” “ফতওয়ায়ে কাজীখান” কিতাবে উল্লেখ আছে,

 من سمع الاذان فعليه ان يجيب قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من لم يجب الاذان فلا صلاة له.

 অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আযান শুনবে তাদের সকলের  উপর ওয়াজিব হলো মৌখিক আযানের জবাব দেয়া। কারণ রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আযানের জবাব দিবেনা তার কোন নামায নেই।” “মারাকিউল ফালাহ্” কিতাবের ১৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 وهذا مبنى على وجوب الاجابة بالقول.

 অর্থঃ- “আর এটাই অর্থাৎ বর্ণিত হাদীছ শরীফ মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণ।” “দুররুল মুখতার ফি শরহে তানবীরুল আবছার” কিতাবে উল্লেখ আছে,

 ويجيب وجوبا …………. من سمع الاذان ولو جنبا ……. بان يقول بلسانه.

 অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আযান শুনবে তাদের সকলের  জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব, যদিও সে নাপাকি অবস্থায় থাকে।” “হাশিয়ায়ে তাহ্তাবী আলা দুররিল মুখতার” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 وعلى المعتمد يجيب باللسان.

 অর্থঃ- “নির্ভরযোগ্য মতে মৌখিক বা শাব্দিকভাবে  মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব।” (চলবে)

 মুহম্মদ নেছারুদ্দীন  হোসনীদালান, ঢাকা

 সুওয়ালঃ আশুরাকে কেন্দ্র করে কিছু লোক নবী-রাসূল আলাইহিমুস্ সালাম সম্পর্কে এলোমেলো বক্তব্য পেশ করে থাকে। যেমন তারা বলে থাকে যে, হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম গন্ধম খেয়ে ভুল করেছিলেন ইত্যাদি।  এখন আমার প্রশ্ন হলো- সত্যিই কি নবী-রাসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ভুল-ত্রুটি করেছিলেন অথবা করেননি? সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো, কোন নবী-রাসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ কখনও ভুল করেননি। ইচ্ছাকৃত তো নয়ই, অনিচ্ছাকৃতও নয়। অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ কোন ভুলই করেননি। (শরহে আক্বাইদে নসফী, ফিক্বহে আকবর, তাকমীলুল ঈমান, আক্বাইদে হাক্কাহ) অর্থাৎ সকল নবী-রাসূল আলাইহিমুস্ সালামগণই ছিলেন আল্লাহ্ পাক-এর খাছ ও মনোনীত বান্দাহ্গণের অন্তর্ভূক্ত। তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ যদি ভুল করেন একথা যদি স্বীকার করা হয় তা হলে এ  থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে স্বয়ং আল্লাহ পাকই ভুল করেছেন। (নাঊযুবিল্লাহ) যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। অথচ স্বয়ং আল্লাহ পাকই তাঁর কুরআন শরীফের একাধিক স্থানে ইরশাদ করেন, نوحى اليهم. অর্থঃ- “আমি তাঁদের (নবী-রাসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের) প্রতি ওহী পাঠাতাম।” (সূরা ইউসুফ/১০৯, নহল্/৪৩, আম্বিয়া/৭) অর্থাৎ নবী-রাসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের যাবতীয় কার্যাবলীই ওহীর দ্বারা (আল্লাহ্ পাক কর্তৃক) পরিচালিত হতো। যার পরিপ্রেক্ষিতে আক্বাইদের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে-

 الانبياء عليهم السلام كلهم معصومون.

 অর্থঃ- “সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণ মা’ছূম বা নিস্পাপ।”

 الانبياء عليهم السلام كلهم منزهون عن الصغائر والكبائر والكفر والقبائح.

 অর্থঃ- “সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণই ছগীরা, কবীরা, কুফরী এবং অপছন্দনীয় কাজ হতেও পবিত্র।” অতএব, যারা নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের ভুল সম্পর্কে বলে থাকে, আক্বাইদ সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই তারা তা বলে থাকে। যেমন তারা বলে থাকে যে, হযরত আদম আলাইহিমুস্ সালাম গন্দম খেয়ে ভুল করেছিলেন। (নাঊযুবিল্লাহ্) মূলতঃ তাদের একথা সঠিক নয়। সম্পূর্ণরূপে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের আক্বিদা কেউ পোষন করলে সে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। (এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর  ১০, ১৫, ৪৫, ৫৭, ৬৪, ৬৮,  ৭০, ৭১, ৭৩,  ৮০,  ৮২, ১০৫ ও ১০৬তম সংখ্যাগুলো দেখুন।)  মুহম্মদ রাশেদুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম।  সুওয়ালঃ বর্তমান সময়ে বিভিন্ন দেশে নববর্ষ উপলক্ষে পহেলা তারিখে যেমন- ১লা বৈশাখ, ১লা জানুয়ারী ইত্যাদি তারিখে ভাল ভাল খাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়, এটা কতটুকু শরীয়তসম্মত? আর শরীয়তে কোন নির্দিষ্ট দিনে ভাল খাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়েছে কি? জাওয়াবঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে দশই মুর্হরমে ভাল খাদ্য খাওয়ানোর তাগিদ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

 من وسع على عياله فى النفقة يوم عاشوراء وسع الله عليه سائر سنته.

 অর্থঃ- “যে ব্যক্তি তার পরিবারবর্গকে আশুরার দিন অর্থাৎ দশই মুর্হরমে ভাল খাদ্য খাওয়াবে, আল্লাহ্ পাক তাকে এক বৎসরের জন্য সচ্ছলতা দান করবেন।”  অর্থাৎ দশই মুর্হরম প্রত্যেক পরিবারের প্রধানের দায়িত্ব অধিনস্থদের ভাল খাদ্য খাওয়ানো। আর কুরআন-সুন্নাহ্-এর দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ ও পহেলা জানুয়ারীতে ভাল খাদ্য খাওয়ানোর জন্য আলাদা কোন নির্দেশ নেই। (এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ২, ১০, ১৫, ৪৫, ৫৭, ৬৮, ৮০ ও ৯২তম সংখ্যাগুলো দেখুন।) {দলীলসমূহঃ (১) জামিউল ফাওয়ায়েদ, (২) ত্ববারানী, (৩) বায়হাক্বী, (৪) ইবনে হাব্বান, (৫) মসনদে ফেরদৌস লিদ দায়লামী, (৬) মাসাবাতা বিস্ সুন্নাহ্ ইত্যাদি} মুহম্মদ পারভেজ হুসাইন, ঢাকা।  সুওয়ালঃ আশুরা উপলক্ষে কয়টি রোযা রাখা সুন্নত, জানতে বাসনা রাখি। জাওয়াবঃ আশুরা উপলক্ষে দু’টি রোযা রাখা সুন্নত। ৯ ও ১০ তারিখে অথবা ১০ ও ১১ তারিখে। তবে উত্তম হলো ৯ ও ১০ তারিখ রোযা রাখা। শুধু ১০ই মুর্হরম আশুরার উদ্দেশ্যে ১টি রোযা রাখা মাকরূহ্। কারণ ইহুদীরা সেদিনটিতে রোযা রেখে থাকে। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

 صوموا يوم عشوراء وخالفوا فى اليهود صوموا قبله او بعده يوما.

 অর্থঃ- “তোমরা আশুরার রোজা রাখ এবং (এ ব্যাপারে) ইহুদীদের বিপরীত কর। তোমরা আশুরার আগের দিনে অথবা পরের দিনেও রোযা রাখো।”  {দলীলসমূহঃ (১) মিশকাত, (২) তিরমিযী, (৩) মুয়াত্তা মালিক, (৪) জামিউল ফাওয়ায়িদ, (৫) দাইলামী, (৬) মাসাবাতা বিস্ সুন্নাহ ইত্যাদি}  মুহম্মদ আশিকুল্লাহ ছিদ্দিকী, নেছারাবাদ,  পিরোজপুর।  সুওয়ালঃ হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর শাহাদাত সম্পর্কে কেউ কেউ ইয়াযীদকে কেন্দ্র করে, কাতিবে ওহী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দোষারোপ করে। এটা কতটুকু সঠিক? জাওয়াবঃ কোন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে কোন ব্যাপারে দোষী সাবস্ত করা জায়িয নেই। কাতিবে ওহী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দোষারোপ করা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।  কেননা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের দ্বারা ছাবিত আছে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে দোষারোপ করা কুফরী।  এ প্রসঙ্গে কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 ليغيظبهم الكفار.

 অর্থঃ- “কাফিররাই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে।” (সূরা ফাতহ্/২৯) আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 حب الصحابة ايمان وبغضهم كفر.

 অর্থঃ- “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মুহব্বত ঈমান এবং তাঁদের বিদ্বেষ পোষণ কুফরী। (কান্যুল উম্মাল)

 من غاظه اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم فهو كافر.

 অর্থঃ- “যে ব্যক্তি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে সে কাফির।” অতএব, বিশিষ্ট ছাহাবী, কাতিবী ওহী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে কোনরূপ দোষারোপ করা সম্পূর্ণরূপে কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ তথা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব