মুহম্মদ আলী হায়দার
আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম
সুওয়াল : হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা জানুয়ারী/ফেব্রুয়ারী/মে/২০০৪ ঈসায়ী সনে পরপর তিনটি সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে ফতওয়ায়ে শামী, আলমগীরী, বাহরুর রায়িক, হিন্দিয়া, তাতারখানিয়া, ইত্যাদি কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “সানি জামায়াত করা জায়েয নেই …।” … নির্ভরযোগ্য উক্তি অনুযায়ী সানী বা দ্বিতীয় জামায়াত করা মাকরূহ তাহরীমী …।”
আর আপনারা মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় লিখেছেন, জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয এবং সকল ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের ইজমা বা ঐক্যমতে জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহরীমী নয়; যদি জামায়াত প্রথম ছূরতে না হয়। কোনটি সঠিক?
দয়া করে দলীল-আদিল্লাহসহ বিস্তারিতভাবে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াব : মহল্লা বা জামে মসজিদে (অর্থাৎ যেসব মসজিদে ইমাম-মুয়াযবিন ও জামায়াত নির্ধারিত আছে এবং নির্দিষ্ট সময়ে জামায়াত কায়িম হয় সেসব মসজিদে একবার জামায়াত হওয়ার পর) সানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর মাধ্যমে যা জানতে পেরেছেন সেই ফতওয়াই সঠিক, নির্ভরযোগ্য, দলীলভিত্তিক এবং গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত।
পক্ষান্তরে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং ফতওয়াগ্রাহ্য মতের বিপরীত। শুধু তাই নয় বরং হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার মৌলভী ছাহেবরা মহল্লা বা জামে মসজিদে সানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কাযিম করার বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়ে শক্ত গুণাহর কাজ করেছে। কেননা সঠিক, গ্রহণযোগ্য ও বিশুদ্ধ ফতওয়া মুতাবিক জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহরীমী নয়। এটাই ترجيح (তারজীহ) বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়া। আর ترجيح (তারজীহ) বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়ার বিপরীত ফতওয়া দেয়া সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়িয।
উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা কিতাবের নাম দিয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। বরং তার সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ, তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে মনগড়া বক্তব্য প্রদান করেছে এবং ক্ষেত্র বিশেষ নিজের ভ্রান্ত মতকে টিকিয়ে রাখতে কিতাবের ইবারত কারচুপি করে। ফতওয়ায়ে শামী, আলমগীরী, বাহরুর রায়িক, হিন্দিয়া, তাতারখানিয়া, ইত্যাদি কিতাব”-এর বরাত দিয়ে যেটা বলতে চেয়েছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। আমরা পর্যায়ক্রমে সেটা তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ।
(ধারাবাহিক)
উল্লেখ্য, হাটহাজারীর অখ্যাত মাসিক পত্রিকার মৌলভী ছাহেবরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসাবে ফতওয়ায়ে শামী, আলমগীরী, বাহরুর রায়িক, হিন্দিয়া, তাতারখানিয়া, ইত্যাদি কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “সানি জামায়াত করা জায়েয নেই …।” … নির্ভরযোগ্য উক্তি অনুযায়ী সানী বা দ্বিতীয় জামায়াত করা মাকরূহ তাহরীমী …।”
হাটহাজারীদের উক্ত বক্তব্য যে, সম্পূর্ণ ভুল ও ধোকাপূর্ণ। তা আমরা আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” এর বিগত সংখ্যাগুলোতে “ফতওয়ায়ে শামী, আলমগীরী, বাহরুর রায়িক, হিন্দিয়া, তাতারখানিয়া ইত্যাদি কিতাব”-এর বক্তব্য বিস্তারিত ভাবে বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে প্রমাণ করেছি যে, তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, জিহালতপূর্ণ, জালিয়াতী প্রতারণামূলক ও ধোকাপূর্ণ। কারণ হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে।
শুধু তাই নয়, বরং ফতওয়ায়ে শামী, আলমগীরী, বাহরুর রায়িক, হিন্দিয়া, তাতারখানিয়া ইত্যাদি কিতাবেই উল্লেখ আছে, মহল্লা বা জামে মসজিদে পুনরায় আযান ব্যতীত যদি দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করে, তাহলে সকলের ইজমা বা ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার জামায়াত কাযিম করা জায়িয। এই হুকুম রাস্তার মসজিদের জন্যও প্রযোজ্য।
সুতরাং পাঠকের সুবিধার্থে মহল্লা বা জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয এবং সকল ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের ঐক্যমতে মহল্লা বা জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহরীমী নয়; যদি দ্বিতীয় জামায়াত প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয়। এ সম্পর্কিত নির্ভরযোগ্য, সঠিক, গ্রহণযোগ্য, বিশুদ্ধ এবং ترجيح (তারজীহ) বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়াটি উক্ত কিতাবগুলো থেকে প্রমাণ স্বরূপ শুধুমাত্র “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ইবারত আবারো তুলে ধরা হলো।
যেমন, “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খ-ের ৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
المسجد اذا كان له امام معلوم وجماعة معلومة فى محلة فصلى اهله فيه بالجماعة لايباح تكرارها فيه باذان ثان أما اذا صلوا بغير اذان يباح اجماعا وكذا فى مسجد قارعة الطريق كذا فى شرح المجمع.
অর্থঃ- “যদি মহল্লার মসজিদে ইমাম ও জামায়াত নির্দিষ্ট থাকে এবং মহল্লার লোকেরা আযান দিয়ে জামায়াতের সাথে নামায আদায় করে তাহলে সানী বা দ্বিতীয়বার আযান দিয়ে দ্বিতীয় জামায়াত করা জায়িয নেই। তবে যদি মহল্লার মসজিদে ইমাম ও জামায়াত নির্দিষ্ট থাকে এবং মহল্লার লোকেরা দ্বিতীয় আযান ব্যতীত সানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করে, তাহলে সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ইজমা বা ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয। আর অনুরূপভাবে এই হুকুম রাস্তার মসজিদের জন্যও প্রযোজ্য। এটা ‘শরহে মাজমাআর’ মধ্যে উল্লেখ আছে।”
এছাড়াও নিম্নে সর্বজনমান্য, বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাব থেকে দলীল পেশ করা হলো- যেমন, “মুলতাক্বাত” কিতাবে উল্লেখ আছে,
يجوز تكرار الجماعة بلا اذان ولا اقامة ثانية اتفاقا.
অর্থঃ “সকল ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার আযান ও ইক্বামত ব্যতীত দ্বিতীয জামায়াত কাযিম করা জায়িয।”
“কিতাবুল হুজ্জাত আ’লা আহলিল মাদীনা” কিতাবের ১ম খ-ের ৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ولو كرر اهله يدونهما … جاز اجماعا.
অর্থঃ “যদি মহল্লার মসজিদের অধিবাসীগণ আযান-ইক্বামত ব্যতীত সানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত করে, তাহলে সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের اجماعا (ইজমা) বা ঐক্যমতে দ্বিতীযবার জামায়াত কায়িম করা জায়িয।
উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,
ويجوز ايضا اذا كانت الثنية على غير الهيئة الأولى.
অর্থঃ- “অনুরূপভাবে দ্বিতীয় জামায়াত কায়িম করাও জায়িয, যদি দ্বিতীয় জামায়াত প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয়।” অর্থাৎ প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হওয়ার অর্থ হলো, দ্বিতীয় জামায়াতের জন্য আযান ও ইক্বামত হবেনা, ইমামের নির্ধারিত স্থানে দাঁড়াতে পারবেনা, তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করলে জায়িয হবে, মাকরূহ হবে না।
“আল উবাব” কিতাবে উল্লেখ আছে,
انه يجوز تكرار الجماعة بلا أذان ولا اقامة ثانية اتفاقا.
অর্থ: “নিশ্চয় সকল ইমাম মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার আযান ও ইক্বামত ব্যতীত দ্বিতীয় (সানী) জামায়াত কায়িম করা জায়িয।
“আল ফিকহুল ইসলামিয়্যু ওয়া আদাল্লাতুহু” কিতাবের ২য় খ-ের ১৬৩ পৃষ্ঠায় উল্লেক আছে,
ان الحنفية قالوا يكره تكرار الجماعة بأذان وإقامة فى مسجد محلة، إلا …… كرر أهله الجماعة بدون الأذان والاقامة.
অর্থ: “নিশ্চয় হানাফীগণ বলেন, মহল্লার মসজিদে আযান ও ইক্বামত সহ দ্বিতীয়বার জামায়াত করা মাকরূহ …. তবে হ্যাঁ মহল্লার মসজিদের অধিবাসীগণ যদি আযান ও ইক্বামত ব্যতীত দ্বিতীয় জামায়াত করে, তাহলে দ্বিতীয় জামায়াত করা মাকরূহ হবে না।” অর্থাৎ আযান-ইক্বামত ছাড়া দ্বিতীয় জামায়াত করা মাকরূহ নয়।
উক্ত কিতাবে আরো বলা হয়েছে,
والمراد بمسجد المحلة ما له إمام وجماعة معلومون والكراهة إذا تكرر الأذان فلو صلى جماعة فى مسجد المحلة بغير أذان أبعح.
অর্থঃ- “মহল্লার মসজিদ দ্বারা উদ্দশ্যে হলো, যে মসজিদে ইমাম ও জামায়াত নির্দিষ্ট থাকে। আর মাকরূহ্ হলো যখন দ্বিতীয় আযান দেয়া হয়। সুতরাং মহল্লার মসজিদে যদি দ্বিতীয়বার আযান ব্যতীত দ্বিতীয় জামায়াতে নামায পড়া হয়, তাহলে দ্বিতীয় জামায়াত জায়েয।” “শরহু দুরারিল বিহার” কিতাবে উল্লেখ আছে,
يجوز تكرار الجماعة بلا أذان ولا اقامة ثانية اتفاقا.
অর্থঃ- “দ্বিতীয়বার আযান ও ইক্বামত ব্যতীত দ্বিতীয় জামায়াত কায়িম করা জায়িয। ইহা সকল ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের সর্বসম্মত মত।” “বাহরুর রায়িক” কিতাবের ১ম খ-ের ৩৪৬ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
ما نقله الرملى عن رسالة العلامة السندى عن الملتقط وشرح المحجمع وشرح درر البحار والعباب من انه يجوز تكرار الجماعة بلا أذان ولا اقامة ثانية التفاقا قال وفى بعضها اجماعا.
অর্থঃ- “আল্লামা রমলী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আল্লামা সিন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর “রেসালা” থেকে যা নকল করেছেন, তা হচ্ছে আল মুলতাক্বাত্ব, শরহুল মাজমা, শরহু দুরারিল বিহার এবং আল উবাব কিতাব থেকে বর্ণিত আছে যে, “সকল ইমাম মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার আযান ও ইক্বামত ব্যতীত দ্বিতীয় (সানী) জামায়াত কায়িম করা জায়িয। তিনি আরো বলেন, উক্ত কিতাবগুলোর কোন কোন কিতাবে اجماعا (ইজমা) শব্দটি উল্লেখ আছে।” অর্থাৎ কোন কোন কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “সকল ইমাম মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের (اجماعا) ইজমা মতে দ্বিতীয়বার আযান ও ইক্বামত ব্যতীত দ্বিতীয় জামায়াত কায়িম করা জায়িয। (চলবে)
মুসাম্মত সানজিদা আক্তার
সভানেত্রী- ছাত্রী আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত
মুহম্মদপুর, ঢাকা।
সুওয়াল : অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নি¤েœাক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার জবাব ছাপা হয়-
জিজ্ঞাসা : ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি বলেন যে, রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্যে হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। তাদের সকল আমল হবে খুবই নিখূঁত ও সুন্দর। তাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে, তাদের রোযা দেখে তোমাদের রোযাকে তোমরা তুচ্ছ ও নগণ্য মনে করবে। তাদের আমল দেখে তোমরা তোমাদের আমলকে হেয় মনে করবে, তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার নিচে যাবে না। তারা কুরআন শরীফ উনার উপর আমল কিম্বা কুরআন শরীফ প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। এ দলের আমল যতই তোমাদেরকে আকৃষ্ট করুক না কেন, কখনই তাদের দলে যাবেনা। কারণ প্রকৃতপক্ষে এরা হবে ইসলাম হতে খারিজ, দ্বীন হতে বহির্ভূত। তীর যেমন ধনুক হতে বের হয়ে যায় সে আর কখনও ধনুকের নিকট ফিরে আসেনা। তেমনিই এরা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে, আর কখনও দ্বীনের পথে, কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের পথে ফিরে আসবেনা।
আমার প্রশ্ন হলো, উপরোক্ত হাদীছ শরীফ ছহীহ কি না? ছহীহ হলে এ দ্বারা উদ্দেশ্য কারা? উক্ত হাদীছ শরীফ উনার সাথে তাবলীগ জামাতের কোন সম্পর্কে আছে কি-না? অনেকে এই হাদীছ শরীফ উনার সাথে তাবলীগ জামাতকে জড়াতে চান। উক্ত হাদীছ শরীফ উনার সঙ্গে তাবলীগ জামাতকে জড়ানো সঠিক কি-না?
জবাব : প্রশ্নে বর্ণিত হাদীছ শরীফ ছহীহ। মুহাদ্দিছীনে কিরাম উক্ত হাদীছ শরীফসহ এ জাতীয় হাদীছ শরীফসমূহের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এ সব হাদীছ শরীফ দ্বারা একটি নির্ধারিত জামাত বা খারিজী ফেরক্বা নামে পরিচিত তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত আমলে এই হাদীছ শরীফসমূহের বাস্তবতা এবং খাওয়ারেজদের অবস্থার সমন্বয় ঘটেছিল। যার দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে বলা চলে যে, এ হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা একমাত্র খাওয়ারেজদেরকেই বুঝানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোন প্রমানাদি ছাড়া অন্য কোন জামাতকে এই হাদীছ শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত করা যাবেনা।
কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়া তাবলীগ জামাতকে এই হাদীছ শরীফসমূহের মেসদাক বা উদ্দেশ্য বানানো, তাদেরকে খাওয়ারেজ বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে মারাত্মক অন্যায় ও অপরাধ। তাবলীগের নিয়মনীতি ও কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই। বর্তমান বিশ্বে মহান আল্লাহ তা’আলা তিনি তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে পথহারা, ঈমানহারা, হেদায়েত থেকে বঞ্চিত অসংখ্য মানুষকে হেদায়েত করেছেন, ঈমান আনার তাওফিক দান করেছেন। এছাড়া এ জামাতের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে অসংখ্য জগদ্বিখ্যাত আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ।
অতএব, তাবলীগ জামাতকে খারেজী জামাত বলা, মিথ্যা অপবাদ বৈ কিছুই নয়। (ফতহুল বারী ১২ঃ৩৫০, আল মিরকাত ৭ঃ১০৭)
উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানায় বিষয় হলো-
(১) উল্লিখিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত গুণাবলী প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে আছে কি?
(২) উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা কি শুধু খারিজী ফিরক্বার লোকদেরকেই বুঝানো হয়েছে? নাকি খারিজীদের ন্যায় আক্বীদা পোষণকারীদের ক্ষেত্রেও এ হাদীছ শরীফ প্রযোজ্য?
(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?
(৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্বানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?
(৫) কুরআন শরীফ সুন্নাহ শরীফ উনাদের কোথাও প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করার নির্দেশ আছে কি? প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করা কুরআন শরীফ সুন্নাহ শরীফ উনাদের মতে জায়িয কিনা?
কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব : প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামাত সম্পর্কিত উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।
শুধু তাই নয়, তারা প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের সাফাই গাইতে গিয়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করেছে। সাথে সাথে “ছয় উছূলীদের মধ্যে কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ বিরোধী কোন আক্বীদা আমল নেই” বলে তাদের নির্লজ্জ দালালী করে নিজেদেরকে অপব্যাখ্যাকারী ও মিথ্যাবাদীরূপে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিক দলীলভিত্তিক আলোচনা করলেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত হবে।
তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওযাব দেয়া হলো-
(ধারাবাহিক)
ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারীতার খ-নমূলক জবাব-৩
প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?”
আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্যা কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নি¤েœ ধারাবাহিকভাবে, পর্যায়ক্রমে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলোর সাথে সাথে কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো-
প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য-১১
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের সমর্থনপুষ্ট প্রায় কিতাবেই একথা লেখা আছে যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ কোন কোন ক্ষেত্রে ভুল করেছিলেন। যেমন, হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি গন্দম খেয়ে ভুল করেছিলেন ও হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম দাওয়াত না দিয়ে ভুল করেছিলেন ইত্যাদি। (মালফুযাতে শায়খুল হাদীছ ২৩১ পৃষ্ঠা, তাবলীগ গোটা উম্মতের শুরু দায়িত্ব, লেখক- মাওলানা ইসমাইল হোসেন, দেওবন্দী ৬১ পৃষ্ঠা)
তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপেই কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ বিরোধী ও কুফরীমূলক। কারণ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা মতে নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ মা’ছূম বা নিষ্পাপ। কেননা সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণই ছিলেন মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ ও মনোনীত বান্দাহগণ উনাদের অন্তর্ভুক্ত। উনারা প্রত্যেকেই ছিলেন ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কুরআন শরীফ উনার একাধিক স্থানে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
نوحى اليهم.
অর্থ: “আমি উনাদের (নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের) প্রতি ওহী পাঠাতাম।” (সূরা ইউসূফ/১০৯, নহল/৪৩, আম্বিয়া/৭) অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের যাবতীয় কার্যাবলীই ওহীর দ্বারা (মহান আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক) পরিচালিত হতো। যার পরিপ্রেক্ষিতে আক্বাঈদের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে,
الانبياء عليهم السلام كلهم معصومون.
অর্থ: “সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণ মাছূম বা নিষ্পাপ।”
আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে,
الانبياء عليهم السلام كلهم منزهون من الصغائر والكبائر والكفر والقبائح.
অর্থ: “সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণ উনারাই ছগীরা, কবীরা, কুফরী এবং অপছন্দীয় কাজ হতেও পবিত্র।”
এ উছূলের ভিত্তিতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো, কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ কখনও ভুল করেননি। ইচ্ছাকৃত তো নয়ই, অনিচ্ছাকৃতও নয়। অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা কোন ভুলই করেননি। (শরহে আক্বাঈদে নছফী, ফিক্বহে আকবর, তাকমীলুল ঈমান, আক্বাইদে হাক্কাহ)
অতএব, যারা নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের ভুল সম্পর্কে বলে থাকে, আক্বাঈদ সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই তারা তা বলে থাকে। যেমন তারা বলে থাকে যে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি গন্দম খেয়ে ভুল করেছিলেন। নাউযুবিল্লাহ!
মূলত: তাদের একথা সঠিক নয়। প্রকৃত ঘটনা হলো, যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে আদেশ করেছিলেন যে,
لاتقربا هذه الشجرة.
অর্থ: “তোমরা এই (গন্দমের) গাছের নিকটবর্তী হয়ো না।” (সূরা বাক্বারা/৩৫)
তখন উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার এ আদেশ অনুযায়ী সে গাছের নিকটবর্তী হননি। বরং উক্ত গাছের অনুরূপ বিপরীত দিকের অন্য একটি গাছ থেকে হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম তিনি ফল এনে শরবত বানিযে অথবা কেটে খাইয়েছিলেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, নিষেধকৃত গাছ থেকে নয় বরং তার বিপরীত দিকের অন্য একটি গাছ দেখিয়ে, ইবলিস শয়তান এসে হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাকে মিথ্যা কছম খেয়ে বলেছিল যে, যদি আপনারা এ গাছের ফল খান, তবে আপনারা ফেরেশতা হয়ে যাবেন অথবা স্থায়ীভাবে বেহেশতে বসবাস করতে পারবেন। কোন কোন বর্ণনা মুতাবিক তখন হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম তিনি সে গাছ হতে ফল এনে শরবত বানিয়ে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে খাইয়েছিলেন। অপর বর্ণনায় ফল কেটে খাইয়েছিলেন। এ ঘটনা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার অনিচ্ছাকৃতভাবে সংঘটিত হয়েছিল। সুতরাং যা অনিচ্ছকৃতভাবে সংঘটিত হয়, তা কি করে ভুল বা অপরাধ হতে পারে? বাস্তবিক তা কখনই ভুল হতে পারেনা। (সমূহ তাফসীরের কিতাব)
এর মেছালস্বরূপ উল্লেক করা যায়- হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার শাহাদতের ঘটনা। তিনি যে শাহাদতবরণ করেছিলেন, এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই।
উনাকে ইসলামের শত্রুরা শহীদ করার জন্য একে একে পাঁচবার বিষ পান করায়। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতে তিনি প্রত্যেক বারই বেঁচে যান। ষষ্ঠবার উনাকে শহীদ করার জন্য উনার পানির কলসিতে, যে কলসির মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখতেন, যেন তার ভিতর কিছু ফেলা না যায়, সেই কাপড়ের উপর শত্রুরা হিরক চূর্ণ বিষ মিশ্রিত পানি কলসি থেকে ঢেলে পান করেন, যার ফলশ্রুতিতে তিনি শাহাদত বরণ করেন। যা উনার অনিচ্ছাকৃতভাবে সংঘটিত হয়েছিল। (সিররুশ শাহাদাতাঈন, শুহাদায়ে কারবালা, সীরতে ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন আলাইহিমুস সালাম)
এখন প্রশ্ন উঠে, শরীয়তের দৃষ্টিতে উনার শাহাদাতকে আত্মহত্যা বলতে হবে, না ভুল করার কারণে ইন্তেকাল করেছেন, তা বলতে হবে?
মূলত: উপরোক্ত দু’টির কোনটিই বলা যাবেনা। যদি কেউ কোন একটিও বলে, তবে সে মিথ্যা তোহমত দেয়ার গুনাহে গুনাহগার হবে, যা কুফরীর শামিল হবে। তদ্রুপ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার ঘটনাও। যা উনার অজান্তে সংঘটিত হয়েছিল। অনুরূপ অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনার ঘটনাও। মানুষ সঠিক ইতিহাস না জানার কারণে এবং কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনাদের সঠিক ব্যাখ্যা না বুঝার কারণে, নবী-রসূল আলইহিমুস সালামগণ উনাদের শানে বেয়াদবীমূলক কুফরী কথাবার্তা বলে থাকে।
হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের সাথে কতটুকু আদব রক্ষা করতে হবে, সে প্রসঙ্গে কিতাবে হযরত ইমাম সাররী সাকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ঘটনা উল্লেখ ছিলেন। যিনি ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত ছিলেন। তিনি একবার স্বপ্নে দেখেন মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম উনাকে। দেখে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘হে মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম! আপনার অন্তরে যদি মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত সত্যিকার ভাবেই প্রবল হতো, তাহলে আপনি কি করে আপনার ছেলে হযরত ইউসুফ আলাইহিমুস সালাম উনার জুদাইয়ের (বিচ্ছেদের) কারণে উনার মুহব্বতে চল্লিশ বছর যাবত কেঁদে কেঁদে আপনার চক্ষু নষ্ট করেছিলেন?’ একথা বলার সাথে সাথে গাযেব থেকে নেদা (আওয়াজ হলো, “হে সাররী সাকতী! মুখ শামলিয়ে নবী-রসূল উনাদের শানে কথা বলো।” এরপর হযরত ইউসুফ আলাইহিমুস সালাম উনাকে উনার সামনে পেশ করা হলে তিনি দেখে বেহুশ হয়ে পড়ে যান এবং এভাবে একাধারা তের দিন, তের রাত্র বেহুশ থাকার পর হুঁশ ফিরে পান। তখন গাযেব থেকে নেদা হয়, “মহান আল্লাহ পাক উনার নবী উনাদের শানের খিলাফ কথা বললে এরূপই হয়ে থাকে।” (তাযকিরাতুল আওলিয়া)
উপরোক্ত ওয়াকিয়ার আলোকে প্রতিভাত হয় যে, আদম কত সুক্ষ্ম জিনিস এবং হযরত নবী আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের ক্ষেত্রে কত আদবের সাথে কথা বলতে হবে এবং উনাদের সাথে উনাদের শানের খিলাফ কথা বলার কি পরিণতি? বেয়াদব সম্পর্কে হযরত জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থ: “বেয়াদব মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত থেকে বঞ্চিত।” (মসনবী শরীফ)
অতএব, প্রতীয়মান হয় যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের প্রতি কতটুক আদব রক্ষা করা দরকার।
উল্লেখ্য যে, হযরত সাররী সাকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমামুয যামান, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত ও মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল হওয়া সত্বেও উনার প্রতি সতর্কবানী ও সাবধানবাণী উচ্চারিত হয়েছে।
মূলত: নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ ভুল করা তো দূরের কথা, কোন প্রকার অপছন্দনীয় কাজও উনারা করতেন না। বরং সর্বপ্রকার অপছন্দনীয় কাজ থেকেও বেঁচে থাকতেন বা পবিত্র থাকতেন। (চলবে)
সূফী, মুহম্মদ তছলিমুদ্দীন বসুনিয়া
উলিপুর, কুড়িগ্রাম
সুওয়াল : মাসিক মদীনা ফেব্রুয়ারি/২০০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নি¤েœাক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-
প্রশ্ন : অনেকের মুখে শুনেছি যে, ঘরে মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি থাকলে সেই ঘরে নামায হয় না। দোকান ঘরে বিভিন্ন জিনিষের ঠোঙ্গায় মানুষ ও জীব-জন্তুর ছবি থাকে। এই দোকান ঘরেই নামায আদায় করতে হয়। অনেক দোকানে ৮/১০ জনে জামাত করেও নামায পড়তে দেখা যায়। এমতাবস্থায় এসব দোকানে নামায শুদ্ধ হবে কিনা? এবং করণীয় কি?
উত্তর : মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি ঘরে মজুদ থাকলেই সেই ঘরে নামায শুদ্ধ হবে না, বিষয়টা এমন নয়। ছবি যদি নামাযীর সামনে থাকে তবে অবশ্যই নামায শুদ্ধ হবে না। কিন্তু যদি ছবি দৃশ্যমান না থাকে এবং বিশেষভাবে নামাযী ব্যক্তির চোখের সামনে না থাকে তাহলে নামাযের ক্ষতি হবে না।
উল্লেখ্য, মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্যে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, (১) মানুষ বা জীব-জন্তু ইত্যাদি প্রাণীর ছবি ঘরে মওজুদ রাখতে কোন অসুবিধা নেই। তবে নামাযীর সামনে না পড়লেই হলো।
(২) শুধুমাত্র নামাযীর সামনে মানুষ বা জীব-জন্তু ইত্যাদি প্রাণীর ছবি মওজুদ থাকলে নামায মাকরূহ হবে। নামাযীর ডানে-বামে, উপরে-নীচে, পিছনে মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি মওজুদ থাকলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না।
এখন আমার সুওয়াল হলো- মানুষ বা জীব-জন্তু ইত্যাদি প্রাণীর ছবি ঘরে মওজুদ থাকা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি?
আর সত্যিই কি মানুষ বা জীব-জন্তু ইত্যাদি প্রাণীর ছবি ঘরের ভিতরে নামাযীর চোখে পড়ে না, এমন কোন ঘরে প্রাণীর ছবি মওজুদ থাকলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। দলীলসহ সঠিক জাওয়াব জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব : ঘরের ভিতরে নামাযরত অবস্থায় নামাযীর চোখে পড়ে না, এমন কোন ঘরে মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি মওজুদ রেখে নামায পড়া সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি, বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে।
(ধারাবাহিক)
উল্লেখ্য, বিগত সংখ্যায় আমরা ঘরে ছবি মওজুদ রেখে নামায পড়া সম্পর্কে মাসিক মদীনার ভুল বক্তব্য দলীল আদিল্লাহ-এর মাধ্যমে খ-ন করে প্রমাণ করে দিয়েছি যে, “মানুষ বা জীব-জন্তু ইত্যাদি প্রাণীর ছবি ঘরে মওজুদ রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বা হারাম।”
শুধু তাই নয়। বরং আমরা আরো প্রমাণ করে দিয়েছে যে, “যে ঘরে মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি মওজুদ থাকে, সে ঘরে প্রবেশ করা, বসা এবং পরিদর্শন করাটাও মাকরূহ তাহরীমী তথা নিষিদ্ধ বা হারাম।”
সুতরাং যেখানে ঘরে মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি মওজুদ রাখাই হারাম, সেখানে ছবিযুক্ত ঘরে নামায শুদ্ধ হয় কি করে?
অতএব, মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি ঘরে মওজুদ থাকলে, সেই ঘরে নামায পড়া শুদ্ধ হবে না। এটাই সঠিক, নির্ভরযোগ্য, দলীলভিত্তিক এবং গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত।
নিম্নে মাসিক মদীনার মনগড়া
বক্তব্য খণ্ডন করা হলো-
দ্বিতীয়ত : মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্যে এটাও প্রতীয়মান হয় যে, “(২) শুধুমাত্র নামাযীর সামনে মানুষ বা জীব-জন্তু ইত্যাদি প্রাণীর ছবি মওজুদ থাকলে নামায মাকরূহ হবে। নামাযীর ডানে-বামে, উপরে-নীচে, পিছনে মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি মওজুদ থাকলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না।”
এর জবাবে বলতে হয় যে, মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্যও ভুল হয়েছে। কারণ সর্বজনমান্য, বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে সুস্পষ্টভাবে এটাই উল্লেখ আছে যে, মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি ঘরে মওজুদ রেখে নামায পড়লে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে। চাই উক্ত প্রাণীর ছবি নামাযীর সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নীচে, দৃষ্টির সামনে অথবা দৃষ্টির আড়ালে দৃশ্যমান থাকুক অথবা চোখের সামনে পড়–ক বা না পড়–ক সকল অবস্থাতেই প্রাণীর ছবি ঘরে মওজুদ থাকলে সে ঘরে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী হবে।
যেমন, “আল ফিক্বহুল মুইয়াসসার আ’লা মাযহাবিল ইমামিল আ’যম আবী হানীফা আন নু’মান” কিতাবের ৯৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الصلاة فى مكان فيه صورة سواء كانت الصورة فوق رأسه، أوبين يديه، أو خلفه.
অর্থ: “প্রাণীর ছবিযুক্ত স্থানে বা ঘরে নামায পড়লে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে। চাই প্রাণীর ছবি নামাযীর মাথার উপর, অথবা নামাযীর সামনে অথবা নামাযীর পিছনে যেখানেই থাকুক না কেন; সকল অবস্থাতেই প্রাণীর ছবি ঘরে মওজুদ থাকলে সে ঘরে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী হবে।”
“দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে,
وأن يكون فوق رأسه أو بين يديه أو بحذائه يمنة أو يسرة أو محل سجوده تمثال … و .. خلفه.
অর্থ: “নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে, যদি প্রাণীর ছবি বা মূর্তি নামাযীর মাথার উপর অথবা নামাযীর সামনে অথবা নামাযীর জুতায় ডানে-বামে, সিজদার স্থানে অথবা নামাযীর পিছনে থাকে।”
“গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খ-ের ৩০২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থ: “নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে, যদি নামাযীর মাথার উপর ছাদে, অথবা সামনে, অথবা নামাযীর বরাবর ডানে-বামে কোন প্রাণীর ছবি থাকে।”
“বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খ-ের ২৭ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
وتكره … وان يكون فوق رأسه أو بين يديه أو بحذائه صورة.
অর্থ: “নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে, যদি … নামাযীর মাথার উপর, অথবা সামনে অথবা ডানে-বামে অথবা জুতার মধ্যে প্রাণীর ছবি থাকে।”
“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খ-ের ১১৯ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
ويكره أن يصلى وبين يديه أو فوق رأسه أو على يمينه أو على يساره أو فى ثوبه تصاوير.
অর্থ: “নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী হবে এ অবস্থায় যে, যদি নামাযীর সামনে অথবা মাথার উপরে অথবা নামাযীর ডানে-বামে অথবা নামাযীর কাপড়ের মধ্যে প্রাণীর ছবি থাকে।”
“শরহে বিক্বায়াহ” কিতাবের ১ম খ-ের ১৬৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وسورة اى صورة حيوان امامه او بحذائه اى على احد جنبيه او فى السقف او معلقة.
অর্থ: “নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে, যদি প্রাণীর ছবি নামাযীর সামনে অথবা নামাযীর ডানে-বামের কোন দিকে অথবা ছাদের উপর ঝুলন্ত বা লটকানো থাকে।”
“শরহুন নিক্বায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ২১৭ পৃষ্ঠায় হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
بان يكون الصورة فوق راسه منقوشة فى السقف او معلقة فى الهواء او تكون بحذائه فى جانب القبلة او على يمينه او شماله.
অর্থ: “যদি প্রাণীর ছবি নামাযীর মাথার উপর ছাদে নকশাযুক্ত অবস্থায় অথবা শূন্যে ঝুলন্ত বা লটকানো অবস্থায় অথবা নামাযীর সামনে ক্বিবলার দিকে অথবা নামাযীর ডানে-বামে থাকে তাহলে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে।”
“মা’য়াদানুল হাক্বায়িক্ব” কিতাবের ১ম খ-ের ১৫২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থ: “নামাযীর মাথার উপর, অথবা নামাযীর সামনে, অথবা নামাযীর বরাবর ডানে-বামে প্রাণীর ছবি থাকলে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে।”
“আহসানুল মাসায়িল” কিতাবের ৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থ: “নামাযী ব্যক্তি যদি এভাবে খাড়া হয় যে, তার মাথার উপর বা সামনে অথবা নামাযীর বরাবরে ডানে-বামে কোন প্রাণীর ছবি থাকে, তাহলে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে।”
“মিনহাতুল খালিক্ব” কিতাবে উল্লেখ আছে,
وان يكون فوق رأسه أو بين يديه أو بحذائه صورة.
অর্থ: “যদি নামাযীর মাথার উপর, সামনে, অথবা ডানে-বামে জুতার মধ্যে কোন প্রাণীর ছবি থাকলে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে।”
“উমদাতুর রিয়ায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,
تكره الصلوة اذا كانت الصورة قدام المصلى اوعلى جنب الايمن والايسر او فوق رأسه فى السقف او معلقة على السقف او فى الستر.
অর্থ: “নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে, যদি প্রাণীর ছবি মুছল্লীর সামনে বা ডানে-বামে বা মাথার উপর ছাদে, অথবা ছাদের উপর বা পর্দায় ঝুলন্ত বা লটকানো থাকে।”
“হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ১৪২ পৃষ্ঠার ৮ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
لكن بعضها اشد كراهة فى ما اذا كانت الصورة خلفه … فيكره الصلوة … اذا كان فوق رأسه او بين يديه او بحذائه.
অর্থ: “তবে নামায শক্ত মাকরূহ তাহরীমী হবে যদি প্রাণীর ছবি নামাযীর পিছনে থাকে। ….. অতঃপর নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে, …… যদি প্রাণীর ছবি নামাযীর মাথার উপরে, সামনে অথবা নামাযীর জুতায় ডানে-বামে থাকে।”
“শরহে ইলইয়াস” কিতাবে উল্লেখ আছে,
بان يكون الصورة فوق راسه منقوشة فى السقف او معلقة فى الهواء او تكون بحذانه فى جانب القبلة او على يمينه او شماله.
অর্থ: “যদি প্রাণীর ছবি নামাযীর মাথার উপর ছাদে নকশাযুক্ত অবস্থায় অথবা শূন্যে ঝুলন্ত বা লটকানো অবস্থায় অথবা নামাযীর সামনে ক্বিবলার দিকে অথবা নামাযীর ডানে-বামে থাকে তাহলে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে।”
“মাজমাউল আনহুর ফী শারহি মুলতাক্বাল আবহুর”
কিতাবের ১ম খ-ের ১২৫-১২৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وان تكون فوق رأسه اى فى السقف او بين يديه بان تكون معلقة او موضوعة فى حائط القبلة او بحذائه اى على احد جانبيه صورة … واشدها كراهة ان تكون امام المصلى ثم فوق رأسه ثم عن يمينه ثم عن يساره ثم خلفه.
অর্থ: “নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে, যদি প্রাণীর ছবি নামাযীর মাথার উপর, অর্থাৎ ছাদে, অথবা নামাযীর সামনে ক্বিবলার দিকে দেয়ালে রাখা অবস্থায় অথবা ঝুলন্ত অবস্থায়, অথবা নামাযীর ডানে-বামের কোন একদিকে থাকে। …. এবং নামায শক্ত মাকরূহ তাহরীমী হবে, যদি প্রাণীর ছবি মুছল্লির সামনে, মাথার উপর, ডানে-বামে, অথবা মুছল্লির পিছনে থাকে।”
“দুররুল মুনতাক্বা ফী শরহিল মুলতাক্বা” কিতাবে উল্লেখ আছে,
وان تكون فوق رأسه او بين يديه او بحذانه او فى موضع سجوده صورة وكذا خلفه.
অর্থ: “নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে, যদি প্রাণীর ছবি নামাযীর মাথার উপর, সামনে, ডানে-বামে, অথবা সিজদার স্থানে থাকে। অনুরূপভাবে নামাযীর পিছনেও প্রাণীর ছবি থাকলে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে।”
“ছলাতুর রহমান তরজমায়ে মুনীয়াতুল মুছাল্লী” কিতাবের ১০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থ: “যদি নামাযীর মাথার উপর ছাদে, সামনে-পিছনে, নিকটে-দূরে ঝুলন্ত বা লটকানো অথবা জমিনে রাখা অবস্থায় প্রাণীর ছবি থাকলে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে।”
মাসিক মদীনার ছবি সংক্রান্ত ফতওয়া সম্পূর্ণরূপে ভুল, বিভ্রান্তিকর ও শরীয়তের খিলাফ বলে প্রমাণিত হলো। (চলবে)
মুহম্মদ মুহিউদ্দীন
সভাপতি- আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত
সন্দ্বীপ শাখা, চট্টগ্রাম।
সুওয়াল : চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানী মাযহাবের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারি/২০০৩-০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে “বিতরের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম এবং বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব পাবে বলে উল্লেখ করেছে।” তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ, নাসায়ী থেকে দলীল হিসেবে কয়েকখানা হাদীছ শরীফও উল্লেখ করেছে।
আর হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ডিসেম্বর/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যা জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “বিতির নামাযের পর দুই রাকয়াত নফল নামায… দাঁড়িয়ে পড়া ভাল। কারণ, নফল নামায বিনা কারণে বসে পড়লে অর্ধেক সাওয়াব হয়।”
এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা হালকী নফল নামায সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে হাদীছ শরীফগুলো উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য। তাদের প্রতিটি দলীলের খ-নসহ হালকী নফল সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব : বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায যাকে “হালক্বী নফল” বলা হয়, তা দাঁড়িয়ে পড়া সম্পর্কে অখ্যাত মাসিক পত্রিকাদ্বয়ের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং কুরআন শরীফ, সুন্নাহর খিলাফ হয়েছে। এবং ক্ষেত্রবিশেষে কুফরীমূলক হয়েছে।
কেননা সাধারণত: নফল নামায বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব হলেও বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়াই মুস্তাহাব-সুন্নত, যা উত্তম ও পূর্ণ ছওয়াব এবং অধিক ফযীলতের কারণ। কেননা বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল এবং অন্যান্য নফলের ক্ষেত্রে একই হুকুম নয়। বরং বিতর নামাযের পর দুই রাকায়াত নফলের হুকুম অন্যান্য নফল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অর্থাৎ অন্যান্য নফল দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব, বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব। আর হালক্বী নফল অর্থাৎ বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব, আর বসে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব।
কারণ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায কখনও দাঁড়িয়ে আদায় করেননি। বরং বসেই আদায় করেছেন। যা সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।
ধারাবাহিক)
উল্লেখ্য, রেযাখানীরা ‘বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ ও নাসায়ী শরীফ’ ইত্যাদি কিতাব থেকে দলীল হিসেবে যে কয়েকখান হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছে আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। কারণ তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে ইবারত কারচুপি করে “বুখারী, ইবনে মাজাহ, মিনহাজ, মিরকাত, মুসলিম নাসায়ী ও রদ্দুল মুহতার, হাশিয়ায়ে ইবনে মাজাহ ইত্যাদি কিতাব”-এর বরাত দিয়ে যেটা বলতে চেয়েছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। আমরা পর্যায়ক্রমে সেটা তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ।
নি¤েœ হাশিয়ায়ে ইবনে মাজাহ-এর বক্তব্য পর্যালোচনা করা হলো-
উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম বলে, হাশিয়ায়ে ইবনে মাজাহ-এর বরাত দিয়ে যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে, নি¤েœ তা হুবহু উল্লেখ করা হলো।
যেমন রেযাখানীদের হুবহু ইবারত খানা হচ্ছে-
انكر الامام مالك حديث الركعتين بعد الوتر قال لم يصح وقال الامام لا اصليها ولا امنع منها حاشيه سنن ابن ماجه ৮৫ وايضا اشعة اللمعات.
অর্থাৎ বিতরের পর দু’রাকাত নামাযের সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ শরীফ বিশুদ্ধ নয় বলে ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি তা অস্বীকার করেন আর ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি নিজেও তা পড়িনা এবং অন্য পড়লে তা নিষেধও করিনা। (হাশিয়ায়ে ইবনে মাজ পৃ: ৮৫, আশিয়্যাতুল লু’মাত, কৃত: ইমাম শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি)
রেযাখানীদের কারচুপিমূলক
বক্তব্য উদঘাটন ও খ-ন
এখানে প্রথমত: বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, “ইবারত চোর রেযাখানীরা হাশিয়ায়ে ইবনে মাজাহ-এর বরাত দিয়ে যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে, হাশিয়ায়ে ইবনে মাজাহ-এর মধ্যে তাদের উল্লিখিত ইবারতের পূর্ববর্তী ইবারত গুলো তারা কারচুপি করে উল্লেক করেনি।
দ্বিতীয়ত : রেযাখানীরা হাশিয়ায়ে ইবনে মাজাহ-এর বরাত দিয়ে, ইবারত কারচুপি করে তাদের উল্লিখিত ইবারত গুলো উল্লেখ করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে।
তৃতীয়ত : রেযাখানীরা হাশিয়ায়ে ইবনে মাজাহ-এর বরাত দিয়ে যে ইবারত উল্লেখ করেছে উক্ত ইবারতের মধ্যেও রেযাখানীরা ইবারত কার চুপি করেছে এবং ইবারত ভুল করেছে।
যেমন রেযাখানীরা ইবারত লিখেছে, قال لم يصح
অথচ কিতাবে উল্লেখ আছে, وقال لم يصح
রেযাখানীরা ইবারত লিখেছে, وقال الامام
অথচ কিতাবে উল্লেখ আছে, وقال الامام احمد
রেযাখানীরা ইবারত লিখেছে, لااصليها ولاامنع منها
অথচ কিতাবে উল্লেখ আছে, لااصليهما ولاامنع منهما
চতুর্থত : রেযাখানীরা যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে উক্ত ইবারতের অর্থেও তারা ভুল করেছে। যেমন রেযাখানীরা অর্থ করেছে, “বিতরের পর দু’রাকাত নামাযের সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ শরীফ বিশুদ্ধ নয় বলে ইমাম মারেক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তা অস্বীকার করেন।”
রেযাখানীদের উক্ত অর্থ সঠিক হয়নি। বরং ভুল হয়েছে। সুতরাং সঠিক অর্থ হলো, “ইমাম মারেক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দৃষ্টিতে বিতরের পর দু’রাকায়াত নামায পড়া সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ সহীহ নয়; বিধায় তিনি তা গ্রহণ করেন নি।” অর্থাৎ “ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিতরের পর দু’রাকায়াত নামায পড়া সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ উনাকে সহীহ মনে করেন না।
পঞ্চমত : রেযাখানীরা কিতাবের নাম লিখেছে, হাশিয়ায়ে ইবনে মাজ অথচ ইবনে মাজ বলে কোন কিতাবের নাম নেই। বরং কিতাবের নাম হলো “হাশিয়াযে ইবনে মাজাহ”
ষষ্ঠত : রেযাখানীরা কিতাবের নাম লিখেছে, “আশিয়্যাতুল লু’মাত।”
অথচ কিতাবের নাম হলো, “আশয়াতুল লুময়াত।”
সপ্তমত : রেযাখানীরা হাশিয়ায়ে ইবনে মাজাহ-এর বরাত দিয়ে যে ইবারত গুলো কারচুপি করেছে, ইবনে মাজাহ-এর হায়িশায় উল্লিখিত সেই ইবারতেই উল্লেখ আছে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করেছেন।
যেমন “ইবনে মাজাহ” শরীফ উনার ১ম খ-ের ৮৫ পৃষ্ঠার ২নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
وقد جاء ذلك فى الصحيحين عن عائشة رضى الله عنها كان يصلى ثلث عشرة ركعة يصلى ثمان ركعات ثم يوتر ثم يصلى ركعتين وهو جالس.
অর্থ: “বিতরের পর দু’রাকায়াত নামায পড়া সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ বুখারী ও মুসলিম শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত আছে যে, হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (রাতে) তের রাকায়াত নামায আদায় করতেন। আট রাকায়াত (তাহাজ্জুদ) পরে তিন রাকায়াত বিতর পড়তেন। অতঃপর দু’রাকায়াত (নফল) নামায وهو جالس. বসেই আদায় করতেন।”
“ইবনে মাজাহ” শরীফ উনার ১ম খ-ের ৮৫ পৃষ্ঠার ২নং হাশিয়ায় রেযাখানীদের উল্লিখিত ইবারতের পূর্ববর্তী ইবারতে আরোও উল্লেখ আছে,
وروى احمد احمد فى مسنده عن ام سلمة رضى الله عنها وابى امامة رضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلى بعد الوتر ركعتين الخ (اى وهو جالس.)
وروى ذلك عن جماعة من الصحابة غير من ذكر.
অর্থ: “ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল” রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুসনাদ কিতাবে উল্লেক করেছেন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামা আলাইহাস সালাম এবং হযরত আবু উমামা আলাইহিস সালাম উনাদের হতে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায (বসেই) আদায় করতেন।” উক্ত হাদীছ শরীফ খানা উল্লিখিত রাবীগণ ছাড়াও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের একটি জামায়াত থেকে বর্ণিত আছে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, রেযাখানীরা হাশিয়ায়ে ইবনে মাজাহ এর বরাত দিয়ে যে ইবারত গুলো কারচুপি করেছে, হাশিয়ায়ে ইবনে মাজাহ এর’ উল্লিখিত সেই ইবারতেই উল্লেখ আছে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করেছেন। যা হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লিখিত وهو جالس. ইবারতটিই প্রমাণ করে।
সুতরাং রেযাখানীরা হাশিয়ায়ে ইবনে মাজাহ-এর’ বরাত দিয়ে ইবারত কারচুপি করে, সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। (চলবে)
মুহম্মদ হুমায়ূন কবীর
বানারীপাড়া, বরিশাল
সুওয়াল : আমরা জানি যে, তারাবীহর নামায ২০ রাকায়াত এবং তা আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অথচ কেউ কেউ বলে ৮ রাকায়াত পড়াই সুন্নত। আবার কেউ কেউ বলে ১২ রাকায়াত পড়াই সুন্নত।
এখন আমরা কোন মতের উপর আমল করবো এবং কোন মতটি ছহীহ?
জাওয়াব : আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া মুতাবিক তারাবীহর নামায ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অতএব, কেউ যদি ২০ রাকায়াত থেকে এক রাকায়াতও কম পড়ে, তবে তার সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক্ব করার গুণাহ হবে। অর্থাৎ তারাবীহর নামায ২০ রাকায়াতই পড়তে হবে। এবং এর উপরই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ইজমা হয়েছে।
যারা বলে, তারাবীহর নামায ৮ রাকায়াত, তারা ‘বুখারী শরীফ-এ’ বর্ণিত হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার হাদীছ শরীফখানা দলীলস্বরূপ পেশ করে থাকে। যাতে বর্ণিত আছে যে, “মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রমাদ্বান শরীফ মাসে এবং রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্যান্য মাসে (বিতরসহ) ১১ রাকায়াত নামায আদায় করতেন।”
মূলত: এটি হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামাযের বর্ণনা, তারাবীহর নামাযের বর্ণনা নয়। কারণ তারাবীহর নামায শুধু রমাদ্বান শরীফ মাসে জন্যই নির্দিষ্ট। রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্যান্য মাসে তারাবীহর নামায নেই। আর তাহাজ্জুদ নামায সারা বৎসরই পড়তে হয়।
উল্লেখ্য, অনেকে ক্বিয়ামল লাইল অর্থাৎ তারাবীহ এবং তাহাজ্জুদ নামাযকে এক ও অভিন্ন মনে করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে এটা শুদ্ধ নয়। বরং তাহাজ্জুদ ও তারাবীহ নামায এবং হুকুম সম্পূর্ণ আলাদা। যেমন, তারাবীহ শুধুমাত্র রমাদ্বান শরীফ মাসেই পড়তে হয় আর তাহাজ্জুদ রমাদ্বান শরীফ ও গায়রে রমাদ্বান শরীফ সব মাসেই পড়তে হয়। তারাবীহর নামায সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ আর তাহাজ্জুদ নামায সুন্নতে যায়িদা ইত্যাদি।
এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ পত্রিকার ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ১২৩তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৩০৪ খানা অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে ছাবেত করা হয়েছে যে, তারাবীহর নামায ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। এবং এটাই গ্রহণযোগ্য ও ছহীহ মত।
{দলীলসমূহঃ (১) মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, (২) সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী, (৩) আল কবীর লিত তবারানী, (৪) আল জাওহারুন্নাকী, (৫) নাইনুল আওতার, (৬) ইরশাদুস সারী, (৭) মিরকাত, আওজাযুল মাসালিক, (৮) মা’আরিফে মাদানিয়া, (৯) ফতহুল বারী, (১০) উমদাতুল ক্বারী, (১১) বযলুল মাজহুদ, (১২) ফিকহুস সুনান ওয়াল আছার, (১৩) নছবুর রাইয়াহ, (১৪) আইনী শরহে বুখারী, (১৫) আত তা’লীকুল হাছানাহ, (১৬) মুযাহিরে হক্ব, (১৭) আশয়াতুল লুময়াত, (১৮) ই’লাউস সুনান, (১৯) ফতওয়ায়ে আলমগীরী, (২০) খুলাছাতুল ফতওয়া, (২১) মজমুয়াতুল ফতওয়া, (২২) বাহরুর রায়িক, (২৩) মারাকিউল ফালাহ, (২৪) ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন, (২৫) গুনইয়াতুত ত্বালিবীন ইত্যাদি}
মুহম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম বকশী
ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম।
সুওয়াল : রমাদ্বান শরীফ মাস আসলেই কেউ কেউ পেপার-পত্রিকায় ও প্রচার মাধ্যমে প্রচার করে থাকে যে, “রোযা অবস্থায় ইনজেকশন এমনকি স্যালাইন নিলেও রোযা ভঙ্গ হয়না।”
এখন আমার সুওয়াল হলো- তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোন দলীল আছে কি?
জাওয়াব : যারা বলে থাকে যে, “রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, স্যালাইন ও ইনহেলার নিলেও রোযা ভঙ্গ হয়না” তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল ও জিহালতপূর্ণ।
তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য একটি দলীলও পেশ করতে পারবেনা। পক্ষান্তরে রোযা অবস্থায় যে কোন ইনজেকশন, স্যালাইন ও ইনহেলার নিলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে এ ফতওয়াটিই ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য। কারণ এর স্বপক্ষে ফিক্বাহ ও ফতওয়ার নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের অসংখ্য দলীল বিদ্যমান রয়েছে।
যেমন, “হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ২২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ومن احتقن … افطر لقوله صلى الله عليه وسلم الفطر مما دخل.
অর্থ: “যদি কোন ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে।”
“বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খ-ের ২৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
واذا احتقن … افطر لقوله عليه السلام الفطر مما دخل وليس مما خرج.
অর্থ: “যদি কোন ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে এবং বের হলে রোযা ভঙ্গ হবেনা।”
“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খ-ের ২০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেক আছে, ومن احتقن ….. افطر.
অর্থ: “যদি কোন ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে।”
“ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ২ খ-ের ৪০২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
من حقن المريض دواءه بالحقنة وبالضم احتقن غير جائز.
অর্থ: “যদি কেউ রোগাক্রান্ত (রোযাদার) ব্যক্তিকে ইনজেকশনের মাধ্যমে ঔষধ প্রদান করে বা রোগাক্রান্ত ব্যক্তি কারো দ্বারা ইনজেকশন নেয় তবে তা জায়িয হবেনা।” অর্থাৎ ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হবে।”
স্মরণীয় যে, রোযা ভঙ্গের শর্ত হলো- ‘মগজ কিংবা পাকস্থলীতে কিছু পৌঁছা। আর চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, ইনজেকশন, স্যালাইন ও ইনহেলার ইত্যাদি মগজ ও পাকস্থলীতে পৌঁছে থাকে। তাই ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণ ফতওয়া প্রদান করেছেন যে, এগুলো প্রত্যেকটিই রোযা ভঙ্গের কারণ।
অতএব, উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে প্রমানিত হলো যে, ইনজেকশন নিলে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হবে।
[বিঃ দ্রঃ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ২১, ২২, ৪৬ ও ৪৭তম সংখ্যা পাঠ করুন।]
{দলীলসমূহ ঃ (১) বুখারী (২) মুসলিম, (৩) মিশকাত, (৪) ফতহুল বারী, (৫) উমদাতুল ক্বারী, (৬) ইরশাদুস সারী, (৭) শরহে নববী, (৮) ফতহুল মুলহিম, (৯) মুফহিম, (১০) মিরকাত, (১১) আশয়াতুল লুময়াত, (১২) লুময়াত, (১৩) শরহুত ত্বীবী, (১৪) তালিকুছ ছবীহ, (১৫) মুযাহিরে হক্ব, (১৬) মাবছুত, (১৭) মাবছুত লি সারাখুসী, (১৮) ফতহুল ক্বাদীর, (১৯) আলমগীরী, (২০) বাহরুর রায়িক্ব, (২১) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, (২২) হিদায়া মায়াদ দিরায়া, (২৩) শামী, (২৪) বাদায়েউছ ছানায়ে, (২৫) খুলাছাতুল ফতওয়া, (২৬) ইরড়ঢ়যধৎসধপবঁঃরবং ্ ঝবসরংড়ষরফং ঈযধঢ়ঃবৎ ভৎড়স ঃযব ঃযবড়ৎু ধহফ ঢ়ৎধপঃরপব ড়ভ ওহফঁংঃৎরধষ চযধৎসধপু নু ষবড়হ খধপযসধহ/ঐবৎনবৎঃ. অ. খরবনবৎসধহ/ঔড়ংবঢ়য খ. কধহরম. (২৭) এুঁঃড়হ’ং সবফরপধষ ঢ়যুংরড়ষড়মু. (২৮) জবসরহমঃড়হ’ং ঢ়যধৎসধপবঁঃরপধষ. (২৯) এড়ড়ফসধহ এরষসধহ ঢ়যধৎসধপড়ষড়মু. (৩০) ঈঁহহরহমযধসষ’ং সধহঁধষং ড়ভ ঢ়ৎধপঃরপধষ ধহধঃড়সু, (৩১) গধৎঃরহফধঃব ঊীঃৎধ চযধৎসধপড়ঢ়ড়বরধ. ইত্যাদি।
মাওলানা মুহম্মদ সালাহুদ্দীন
ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
সুওয়াল : তারাবীহ নামাযে কুরআন শরীফ খতম করে বিনিময় গ্রহণ করা জায়িয আছে কিনা? এ সম্পর্কে ফুক্বাহায়ে কিরামের সঠিক মতামত বা ফতওয়া জানতে ইচ্ছুক।
জাওয়াব : “সময় ও স্থান নির্ধারণ করার শর্তে কুরআন শরীফ খতম করা তথা খতমে তারাবীহ ও সূরা তারাবীহসহ সকল প্রকার ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুয়াক্কাদা ইত্যাদি সর্বপ্রকার ইবাদতের বিনিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক দেয়া এবং গ্রহণ করা জায়িয ও শরীয়তসম্মত।” এটাই গ্রহণযোগ্য মত এবং এ মতের উপরই ফতওয়া। এর বিপরীত ফতওয়া দেয়া নাজায়িয ও হারাম।”
এ প্রসঙ্গে “তাফসীরে রুহুল বয়ানে” উল্লেখ রয়েছে যে,
وافتى المتاخرون بصحة الاجرة للاذان والاقامة والتذكير والتدريس والحج والغزو وتعليم القران والفقه وقراتهما لفتور رغبات اليوم.
অর্থ: “উলামায়ে মুতাআখখিরীনগণ বর্তমানকালে দ্বীনের খিদমতে আগ্রহ শিথিল হওয়ার কারণে আযান, ইক্বামত, ওয়াজ-নছীহত, শিক্ষাকতা, হজ্জ, যিহাদ, কুরআন শরীফ ও ফিক্বাহ শিক্ষা দিয়ে এবং ফিক্বাহ ও কুরআন শরীফ পাঠ করে ইজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা ছহীহ বা জায়িয ফতওয়া দিয়েছেন।”
নির্ভরযোগ্য ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাব “বাহরুর রায়িক” কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে,
ان المفتى به جواز الاخذ على القرائة.
অর্থ: “কুরআন শরীফ পাঠ করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয, এটা ফতওয়াগ্রাহ্য মত।”
এ প্রসঙ্গে “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবে উল্লেক আছে,
اختلفوا فى الاستيجار على قراة القران عند القبر مدة معلومة قال بعضهم يجوز وهو المختار كذا فى سراج الوهاج.
অর্থ: “কোন নির্দিষ্ট সময়ে কবরের নিকট কুরআন শরীফ পড়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করার ব্যাপারে আলিমগণ উনাদের মধ্যে মতানৈক্য আছে, কতক বলেছেন, এটা জায়িয। আর এটাই ফতওয়াগ্রাহ্য মত।” “সিরাজুল ওহহাজ” কিতাবেও অনুরূপ মত রয়েছে।
“তাহতাবী” কিতাবে উল্লেখ আছে,
المختار جواز الاستيجار على قرأة القران الخ.
অর্থ: “কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয হওয়াই (ফক্বীহগণ উনাদের) মনোনীত মত।”
আর ফিক্বাহ শাস্ত্রের উসূল বা নিয়ম হলো- মতভেদযুক্ত মাসয়ালায় যে মতটাকে ويه يفتى – وهو المختار – عليه الفتاوى ইত্যাদি শব্দ দ্বারা ترجيح বা প্রাধান্য দেয়া হবে, সে মতটিই গ্রহণযোগ্য হবে। প্রাধান্যপ্রাপ্ত মাসয়ালার বিপরীত ফতওয়া দেয়া সম্পূর্ণই নাজয়িয ও হারাম।
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে,
ابن حجر المكى قال لايحل لهما الحكم والافتاء بغير الراجح لانه التباع للهواء وهو حرام اجماعا.
অর্থ: “মুহাক্কিক ইবনে হাজর মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ইখতিলাফযুক্ত মাসয়ালায় প্রাধান্যপ্রাপ্ত মাসয়ালার বিপরীত ফতওয়া দেয়া বা আমল করা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। কেননা এটা নফসের অনুসরণ।” এটা “ফতওয়ায়ে কোবরাতে” ও উল্লেখ আছে। (উকুদে রসমুল মুফতী পৃষ্ঠা/৩)
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, খতমে তারাবীহর বিনিময় দেয়া ও নেয়া উভয়টাই জায়িয।
বিশেষভাবে স্মরণীয় যে, হাফিয ছাহেবকে যেহেতু সময় ও স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হয়, সেহেতু খতমে তারাবীহ বা সূরা তারাবীহ পড়ানোর বিনিময় বা পারিশ্রমিক দেয়া এবং গ্রহণ করা উভয়টাই জায়িয। এমনকি এ অবস্থায় হাফিয ছাহেব দাবী করেও তা আদায় করতে পারবেন।
[বিঃ দ্রঃ তারাবীহ নামাযে কুরআন শরীফ খতম করে বিনিময় গ্রহণ করা জায়িয এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ২৩ ও ২৪তম সংখ্যার ফতওয়া বিভাগ পড়–ন এবং বিশেষ করে ৩৬, ৪৭, ৬৬, ৭১, ৭৭, ৮৭, ৮৮, ৯০ ও ১১১তম সংখ্যা পাঠ করুন।
সেখানে মাসিক মদীনা, অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এবং হাটহাজারীর অখ্যাত মাসিক পত্রিকার ভুল বক্তব্য খ-ন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও ১৩, ১৪, ২২, ২৫, ২৬, ৩০, ৩৬, ৪৭, ৫২, ৫৩, ৫৭ এবং ৫৮ থেকে ৬৯তম সংখ্যার মতামত বিভাগের উজরত সম্পর্কে তথাকথিত শায়খুল হাদীছের “ভ-ামী ফাঁস” মতামতটি পাঠ করুন।)
{দলীলসমূহ : (১) তাফসীরে রুহুল বয়ান, (২) তাফসীরে ইকলীল, (৩) তাফসীরে আযীযী, (৪) আলমগীরী, (৫) তাতারখানিয়া, (৬) দুররুল মুখতার, (৭) আশবাহ ওয়ান নাজায়ির, (৮) জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ (৯) বাহরুর রায়িক, (১০) তাহতাবী, (১১) বাহজাতুল ফতওয়া, (১২) কাশফুল গুম্মাহ, (১৩) ফতওয়ায়ে আলী আফেন্দী, (১৪) ফতওয়ায়ে ফয়জী, (১৫) ফতওয়ায়ে আবূ সাউদ ইমাদী, (১৬) ফতওয়ায়ে আব্দুর রহীম আফেন্দী, (১৭) মজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে আব্দুল হাই, (১৮) হাদিক্বায়ে নাদিয়াহ, (১৯) মাদারেজুন নবুওয়াত, (২০) রোবউল ইফাদাহ, (২১) হাশিয়ায়ে মিসকীন, (২২) জামিউর রুমূজ (২৩) শিফাউল আলীল, (২৪) ইয়াতীমাতুদ্দাহর লিল ইমাম আলাউদ্দীন হানাফী ইত্যাদি।}
সুওয়াল : আজকাল অনেকে মসজিদে এবং যে সমস্ত স্থানে তারাবীহ নামায হয়, সে সমস্ত স্থানে রমাদ্বান শরীফ মাসে তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা হয়। এটা কতটুকু শরীয়তসম্মত?
জাওয়াব : তারাবীহ, সূর্যগ্রহণ (কুসুফ) ও এস্তেসকা এই তিন প্রকার নফল নামায ছাড়া অন্য কোন নফল নামায হানাফী মাযহাব মুতাবিক জামায়াতে আদায় করা মাকরূহে তাহরীমী।
অবশ্য যদি কখনও কোন সময় কোন ব্যক্তি রমাদ্বান শরীফ হোক আর গায়রে রমাদ্বান শরীফ হোক একাকি চুপে চুপে তাহাজ্জুদ বা অন্য কোন নফল পড়াকালীন তার পেছনে এক বা দু’জন ইক্তিদা করে, তবে মাকরূহ তাহরীমী হওয়ার ব্যাপারে ইখতিলাফ আছে।
আর যদি চারজন হয়, সর্বসম্মত মতে মাকরূহে তাহরীমী। আর যদি ঘোষণা দিয়ে বা আহবান করে তাহাজ্জুদ বা অন্য কোন নফল নামায জামায়াতের সাথে আদায় করে, তা মাকরূহ তাহরীমী হবে।
কোন কোন ফিকাহের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্য সময়ে জামায়াতের সাথে নফল নামায আদায় করা জায়িয নয়। এ উক্তির কারণে অনেকে মনে করে থাকেন, রমাদ্বান শরীফ মাসে তাহাজ্জুদ ও অন্য কোন নফল নামায জামায়াতে আদায় করা জায়িয।
এখানে রমাদ্বান শরীফ মাসে জামায়াতের সাথে নফল নামায পাঠ করা জায়িয বলতে তারাবীহর নামাষকে বুঝানো হয়েছে। কারণ, অন্য সময়ে তারাবীহ নামায পড়তে হয় না। যেমন বিতর নামায রমাদ্বান শরীফ মাসে জামায়াতে পড়া মুস্তাহাব। অন্য সময়ে বিতর নামায জামায়াতে পড়া কারো কারো মতে মাকরূহ তানযীহী। আর কারো কারো মতে মাকরূহ তাহরীমী।
{দলীলসমূহ : (১) ফতওয়ায়ে সিরাজীয়া, (২) ফতওয়ায়ে গিয়াসীয়া, (৩) ফতওয়ায়ে খুলাছা, (৪) ফতওয়ায়ে শাফীয়া, (৫) বাহরূর রায়িক, (৬) আলমগীরী (৭) খানিয়া, (৮) মকতুবাত শরীফ ইত্যাদি ও অন্যান্য ফিক্বাহর কিতাবসমূহ}
মুহম্মদ আলেয়া বেগম
নূরপুর, রংপুর।
সুওয়াল : মহিলাদের জামায়াতে তারাবীহ নামায পড়ার ক্ষেত্রে শরীয়তের হুকুম কি?
জাওয়াব : আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আম ফতওয়া হলো মহিলাদের পাঁচ ওয়াক্ত, জুমুয়া, তারাবীহ ও ঈদের নামাযসহ সকল নামাযের জামায়াতের জন্য মসজিদ, ঈদগাহ ও যে কোন স্থানে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী। আর খাছ ফতওয়া হলো কুফরী।
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থঃ- মহিলাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামায, জুমুয়া ও ঈদের নামাযের জামায়াতে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী, যদিও প্রাপ্তা বয়স্কা ও বৃদ্ধা হোক সময়ের পরিবর্তনের কারণে। তাই ওলামায়ে মুতাআখ্খেরীনগণ ফতওয়া দেন যে, মহিলাদের জামায়াতে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী। (গায়াতুল আওতার, দুররুল মুখতার, তাহ্তাবী, রদ্দুল মুহতার, শরহে তানবীর) “ইমদাদুল আহ্কাম” কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
قد اجمعت الامة على كراهة خروج النساء الى الجماعة.
অর্থঃ- “মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”
আর খাছ ফতওয়া হলো কুফরী। কারণ, এতে হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিষেধাজ্ঞা, হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার সমর্থন এবং হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের ইজমাকে উপেক্ষা করা হয়। তথা উনাদের বিরোধিতা করা হয়। যা সম্পূর্ণ কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
ليغيظ بهم الكفار.
অর্থ: “একমাত্র কাফিররাই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে।” (সূরা ফাতহ/২৯)
এর ব্যাখ্যায় আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
من غاظه اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم فهو كافر.
অর্থ: “যে ব্যক্তি রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবীগণ উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ বা বিরোধিতা করে সে কাফির।”
حب الصحابة ايمان وبغضهم كفر.
অর্থ: “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের মুহব্বত হচ্ছে ঈমান। আর উনাদের বিরোধিতা বা বিদ্বেষ পোষণ কুফরী।” (কানযুল উম্মাল)
উপরন্তু মহিলাদের নিজ ঘরে নামায পড়া মসজিদে জামায়াতে নামায পড়া অপেক্ষা উত্তম এবং পঁচিশগুণ ফযীলত লাভের কারণ।
যেমন, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن عمر عن النبى صلى الله عليه وسلم صلاة المراة تفضل على صلاتها فى الجمع خمسا وعشرين درجة.
অর্থঃ- “মহিলাদের মসজিদে জামায়াতে নামায আদায় করার চেয়ে ঘরে একা নামায পড়ায় ২৫ গুণ বেশী ফযীলত।” (দায়লামী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ৩৮৯)
عن ام سلمة قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم خير مساجد النساء قمر بيوتهن.
অর্থঃ- “হযরত উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মহিলাদের জন্য উত্তম মসজিদ হলো, তার ঘরের গোপন প্রকোষ্ঠ।” (সুনানুল কুবরা, আহমদ, মুয়াত্তা ইমাম মালিক)
সুতরাং মহিলাদের তারাবীহ, জুমুয়া, ঈদ, পাঁচ ওয়াক্ত ইত্যাদি সকল প্রকার নামায জামায়াতে আদায়ের জন্য মসজিদে যাওয়ার অর্থই হলো শরীয়তের অন্যতম দলীল ইজমাকে অস্বীকার করা যা মূলতঃ কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদেরকে অস্বীকার করারই নামান্তর। আর কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদেরকে অস্বীকার করা হচ্ছে সুস্পষ্ট কুফরী।
(এ সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১১, ১৪, ১৯, ২২, ২৯, ৩৭, ৪৪, ৪৭, ৪৮, ৫৫, ৬৫, ৭১, ৮২, ১০১ ও ১০২তম সংখ্যাগুলো পড়–ন যাতে বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ হতে প্রায় ১০০টি দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হয়েছে।)
{দলীলসমূহ : (১) সুনানুল কুবরা, (২) আহমদ, (৩) মুয়াত্তা ইমাম মালিক, (৪) সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী, (৫) জাওহারুন নক্বী, (৬) দায়লামী শরীফ, (৭) ফতহুল ক্বাদীর, (৮) আবু দাউদ, (৯) বুখারী শরীফ, (১০) মুসলিম শরীফ, (১১) মিশকাত শরীফ, (১২) ইমদাদুল আহকাম, (১৩) নুরুল আনোয়ার, (১৪) উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী, (১৫) ফতহুল মুলহিম, (১৬) শরহে মুসলিম, (১৭) তাফহীমুল মুসলিম, (১৮) ফায়জুল বারী শরহে বুখারী, (১৯) বযলুল মাযহুদ শরহে আবু দাউদ শরীফ, (২০) মায়ারিফে মাদানিয়াহ, (২১) শরহে তিরমিযী, (২২) সুনানে নাসাই শরহে ইমামুস সুয়ূতী, (২৩) মিরকাত শরহে মিশকাত শরীফ, (২৪) দরসে তিরমিযী, (২৫) মায়ারিফে সুনান, (২৬) আশয়াতুল লুময়াত শরহে মিশকাত, (২৭) মুযাহিরে হক্ব, (২৮) লুময়াত শরহে মিশকাত, (২৯) ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, (৩০) ফতওয়ায়ে রহিমীরা ইত্যাদি}
মুহম্মদ আব্দুল মান্নান, মৌলভীবাজার।
সুওয়াল : তারাবীহ নামায কত রাকায়াত?
জাওয়াব : বিশ রাকায়াত। আট কিংবা বার রাকায়াত নয়। বিশ রাকায়াত হতে এক রাকায়াতও কেউ যদি কম পড়ে তাহলে সুন্নত মুয়াক্কাদাহ তরক করার কারণে তার ওয়াজিব তরকের গুণাহ হবে।
{দলীলসমূহ : আহকামুল কুরআন লিল জাসসাস, মুয়াত্তা মালিক, বাইহাক্বী, মারাকিউল ফালাহ, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ২০, ২২, ২৫, ২৭, ২৮, ২৯, ৩১, ৪১, ৫২, ৭৭, ১০০তম সংখ্যা}
মুহম্মদ বদরুয যামান, কিশোরগঞ্জ।
সুওয়াল : রোযার নিয়ত করা কি? এটা কখন করতে হয়?
জাওয়াব : রোযার নিয়ত করা ফরয। রোযা সাধারণতঃ ছয় প্রকার- ১। ফরয, ২। ক্বাযা, ৩। কাফফারা, ৪। নফল, ৫। নির্দিষ্ট মান্নত, ৬। অনির্দিষ্ট মান্নত।
ফরয রোযা নফল রোযা নির্দিষ্ট মান্নতের রোযার নিয়ত দ্বি-প্রহরের পূর্ব পর্যন্ত করা জায়িয আছে। তবে রাত্রিতে নিয়ত করাটাই আফযল। আর কাযা রোযা, কাফফারা রোযা এবং অনির্দিষ্ট মান্নতের রোযার নিয়ত ছুবহে ছাদিকের পূর্বেই করতে হবে। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)
মুসাম্মত আমিনা বেগম, সুনামগঞ্জ।
সুওয়াল : অনেকেই নামায পড়েনা কিন্তু রমাদ্বান শরীফ মাসে রোযা রাখে, এই রোযার কি কোন ফযীলত পাওয়া যাবে?
জাওয়াব : মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন,
فمن يعمل مثقال ذرة خيرايره ومن يعمل مثقال ذرة شرايره.
অর্থ: “যদি কেউ একবিন্দু নেকী করে, তার প্রতিদান সে পাবে। আর একবিন্দু বদী করলেও তার বদলা তাকে গ্রহণ করতে হবে।” (সূরা যিলযাল/৭, ৮)
انى لا اضيع عمل عامل منكم من ذكر او انثى.
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মধ্যে কোন আমলকারী পুরুষ ও মহিলার আমলকে নষ্ট করিনা।” (সূরা আলে ইমরান/১৯৫)
কাজেই যে নেক কাজ করবে, সে নেকীর বদলা পাবে। আর যে বদ কাজ বা গুণাহর কাজ করবে, সে তারও বদলা পাবে।
রমাদ্বান শরীফ মাসে রোযা রাখা ফরয এবং নামায পড়াও ফরয। যে উভয়টি করবে, সে পূর্ণ ফায়দা হাছিল করবে। আর যদি কেউ শুধু রমাদ্বান শরীফ মাসে রোযা রাখে, নামায না পড়ে, তবে তার রোযা রাখার ফরয আদায় হবে কিন্তু নামায না পড়ার গুণাহ তার উপর বর্তাবে।
কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পাকে ইরশাদ মুবারক করেন,
من عمل صالحا فلنفسه ومن اساء فعليها وما ربك بظلام للعبيد.
অর্থ: “যে নেক কাজ করে, সে তার নিজের জন্য করে। অর্থাৎ সে তার ছওয়াব পাবে, আর যে পাপ কাজ করে, সেটা তার উপর বর্তাবে। অর্থাৎ গুণাহর শাস্তি তাকে ভোগ করতে হবে। আর আপনার রব বা প্রতিপালক বান্দার প্রতি জুলুম করেন না।” (সূরা হা-মীম-সিজদাহ/৪৬)
সুতরাং যে ব্যক্তি নামায আদায় করা ব্যতীত শুধু রমাদ্বান শরীফ মাসে রোযা রাখবে, সে রোযা রাখার সওয়াব পাবে এবং অবশ্যই সে নামায তরক করার গুণাহে গুণাহগার হবে।
{দলীলসমূহ: (১) আহকামুল কুরআন শরীফ, (২) কুরতুবী শরীফ, (৩) মাযহারী শরীফ, (৪) খাযিন, (৫) বাগবী, (৬) তাফসীরে কবীর, (৭) রুহুল বয়ান, (৮) রুহুল মায়ানী, (৯) দুররে মানছুর, (১০) ইবনে কাছীর ইত্যাদি}
মুহম্মদ আবু বরক, চট্টগ্রাম।
সুওয়াল : রোযা অবস্থায় রান্না করার সময় চুলার ধুঁয়া, রাস্তায় চলার সময় গাড়ীর ধুঁয়া, রাস্তার ধুলাবালি ও মশা-মাছি হঠাৎ নাক বা মুখ দিয়ে প্রবেশ করে, তাহলে কি রোযা ভঙ্গ হবে?
জাওয়াব : না, রোযা ভঙ্গ হবে না। হ্যাঁ, যদি কেউ ইচ্ছাকৃত সেবন করে বা খায়, তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)
মুসাম্মত নাহিদা নুজাত, নড়িয়া, শরীয়তপুর।
সুওয়াল : তরকারী পাক করার সময় লবন হয়েছে কিনা, তা দেখার জন্য জিহ্বার অগ্রভাগ দিয়ে স্বাদ পরীক্ষা করা জায়িয আছে কিনা?
জাওয়াব : সাধারণভাবে এরূপ করা জায়িয নেই। হ্যাঁ যদি কেউ সতর্কতার সাথে এরূপ করে, তবে তা মাকরূহের সহিত জায়েয রয়েছে, না করাই উচিৎ। তবে কারো স্বামী যদি এমন জালিম হয় যে, তরকারীতে লবন কম বা বেশি হলে মারধর, জুলুম ইত্যাদি করে, তাহলে জালেমের জুলুম হতে বাঁচার জন্য জিহ্বার অগ্রভাগ দিয়ে তরকারীর স্বাদ পরীক্ষা করা জায়িয রয়েছে। এক্ষেত্রে মাকরূহ হবেনা। লক্ষণীয় যে, তরকারীযুক্ত থুথু কোন ক্রমেই যেন ভিতরে প্রবেশ না করতে পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)
মুহম্মদ আবুল কাশেম, বি-বাড়িয়া।
সুওয়াল : অনেকে দেখা যায়, রোযা রেখে বার বার থুথু ফেলে থাকে। এই থুথু না ফেলে গিলে ফেললে রোযার কোন ক্ষতি হবে কি?
জাওয়াব : রোযা রেখে মুখের থুথু বার বার না ফেলে গিলে ফেললে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। (আলমগীরী)
মুহম্মদ গোলাম মোস্তফা, ফরিদপুর।
সুওয়াল : রোযা রাখা অবস্থায় চোখে ওষুধ বা সুরমা দিলে রোযা ভঙ্গ হবে কি?
জাওয়াব : না, রোযা রাখা অবস্থায় চোখে ওষুধ বা সুরমা দিলে রোযা ভঙ্গ হবে না। এমনকি যদি ওষুধের স্বাদ গলায় অনুভব হয় বা সুরমার রং যদি থুথুর সাথে দেখা দেয়, তাতেও রোযা ভঙ্গ হবেনা কিন্তু রোযা অবস্থায় কানে তেল দিলে রোযা ভঙ্গ হবে। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী, মাবছূত, আইনুল হিদায়া।)
মুহম্মদ কামাল হুসাইন, সিলেট
সুওয়াল : রোযা রাখা অবস্থায় হাত পা কেটে অথবা কোন ক্ষতস্থান থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়লে রোযা ভঙ্গ হবে কি?
জাওয়াব : রোযা রাখা অবস্থায় শরীরের কোন অঙ্গ-প্রতঙ্গ কেটে অথবা ক্ষতস্থান থেকে রক্ত নির্গত হলে, রোযা ভঙ্গও হবেনা, মাকরূহও হবে না।
একটা উছূল মনে রাখতে হবে, তাহলো- সাধারণত: ওযু অবস্থায় শরীরে কিছু প্রবেশ করলে ওযু ভঙ্গ হয়না, বরং বের হলে ওযু ভঙ্গ হয়ে যায়। আর রোযা অবস্থায় শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে বা করালে রোযা ভঙ্গ হয়, কিছু বের হলে অর্থাৎ রক্ত, পূজ ইত্যাদি বের হওয়ার কারনে রোযা ভঙ্গ হয় না, তা কম হোক আর বেশি হোক। (আলমগীরী, হিদায়া)
আবুল হুসাইন মুহম্মদ হাবীবুল্লাহ
মাদারটেক, ঢাকা।
সুওয়াল : রোযা অবস্থায় আগরবাতি জালানো সম্পর্কে শরীয়তের হুকুম কি?
জাওয়াব : রোযা অবস্থায় আগরবাতি জালানো নিষেধ। কারণ আগরবাতির ধুঁয়া যদি নাকে প্রবেশ করে, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। তবে রাস্তায় চলার সময় গাড়ির ধুঁয়া বা মহিলারা রান্না-বান্না করার সময় চুলার ধুঁয়া যদি নাকে যায়, তাহলে মাজুরের কারণে রোযা ভঙ্গ হবে না। (গায়াতুল আওতার)
মুসাম্মত লাইলী খাতুন, নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম।
সুওয়াল : রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ পান করালে মায়ের রোযা ভঙ্গ হবে কি?
জাওয়াব : না, রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ খাওয়ালে মায়ের রোযা ভঙ্গ হবে না, এমনকি ওযুও ভঙ্গ হবে না। (আলমগীরী)
মুহম্মদ আবুল হাসান, মতলব, চাঁদপুর।
সুওয়াল : রোযা রেখে টুথপেষ্ট, দাঁতের মাজন, কয়লা বা ছাই ইত্যাদি দ্বারা দাঁত মাজলে রোযার কোন ক্ষতি হবে কি?
জাওয়াব : উপরে উল্লিখিত মাজনের দ্বারা দাঁত মাজলে রোযা মাকরূহ হবে। তবে যদি মাজনের সামান্য পরিমাণ ভিতরে চলে যায়, তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে এবং ক্বাযা করা ওয়াজিব হবে, কাফফারা আদায় করতে হবে না। (আলমগীরী)
মুসাম্মত কুনছুমা জুয়েল রোজি, চট্টগ্রাম।
সুওয়াল : রোযা অবস্থায় ওযু করতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভিতর পানি প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে কি?
জাওয়াব : ওযু করার সময় রোযার কথা যদি ভুলে যায়, আর এমতাবস্থায় গলার ভিতর কিছু পানি প্রবেশ করে, তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে না।
পক্ষান্তরে ওযু করার সময় সে রোযা আছে, একথা যদি মনে থাকে, আর অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভিতর পানি ঢুকে যায়, তাহলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। রোযা ক্বাযা করতে হবে কিন্তু কাফফারা আদায় করতে হবে না। {দলীলসমূহ : সমূহ ফিক্বাহর কিতাব।}
মুহম্মদ জাকির হুসাইন, যশোর।
সুওয়াল : হুক্কা, বিডি, সিগারেট পান করলে কি রোযা ভঙ্গ হবে?
জাওয়াব : হ্যাঁ, অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হবে। আর এ সমস্ত পান করা মাকরূহ তাহরীমীর অন্তর্ভুক্ত।
{দলীলসমূহ : (১) দুররে ছামীন, (২) ফতওয়ায়ে আযীযী, (৩) আলমগীরী, (৪) শামী ইত্যাদি।}
মুহম্মদ ইউছূফ, ঢাকা।
সুওয়াল : রোযা রেখে নাকে পানি দেয়া ও গড়গড়া করা যাবে কিনা?
জাওয়াব : রোযা অবস্থায় নাকে পানি দিয়ে উপরের দিকে টান দেয়া ও কুলি করার সময় গড়গড়া করার হুকুম নেই। বরং নিষেধ রয়েছে। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)
মুহম্মদ আমজাদ হুসাইন, ধামইরহাট, নওগাঁ।
সুওয়াল : রোযার নিয়ত ও ইফতারীর দু’য়া জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব : ছুবহে ছাদিকের পূর্বে পানাহার করে নিম্নোক্ত নিয়মে নিয়ত করতে হয়।
نويت ان اصوم غدا من شهر رمضان المبارك فرضا لك يا الله فتقبل منى انك انت السميع العليم.
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন আছুমা গদাম-মিং শাহরি রমাদ্বানাল মুবারক, ফারদ্বল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাক্বব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আংতাস সামীউল আলীম।’
অর্থ : আমি আগামীকাল পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের ফরয রোযা রাখার নিয়ত করছি। আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।
উল্লেখ্য, ছুবহে ছাদিকের পর দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত নিয়ত করতে হলে غدا (গদান) অর্থাৎ ‘আগামীকাল’-এর পরিবর্তে اليوم (আল ইয়াওমা) অর্থাৎ ‘আজ’ শব্দ মিলিয়ে নিয়ত বলতে হবে। যেমন,
نويت ان اصوم اليوم الخ.
অর্থাৎ- “আমি আজ রোযা রাখার নিয়ত করছি।”
ইফতারীর দু’য়া :
اللهم لك صمت وعلى رزقك افطرت.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা আফত্বরতু। (মিশকাত)
অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ পাক! আমি আপনার জন্যই রোযা রেখেছি এবং আপনার প্রদত্ত রিযিক দ্বারা ইফতার করছি।”
মুহম্মদ সাইফুর রহমান, মৌলভীবাজার।
সুওয়াল : তারাবীহর নামাযে দু’রাকায়াত ও চার রাকায়াতের পর কি দু’য়া পড়তে হয়?
জাওয়াব : তারাবীহর নামাযে দু’রাকায়াতের পর নিম্নোক্ত দুয়া পড়তে পড়তে হয়-
هذا من فضل ربى يا كريم المعروف يا قديم الاحسان احسن الينا باحسانك القديم ثبت فلوبنا على دينك برحمتك يا ارحم الرحمين.
উচ্চারণ : হাযা মিন ফাদ্বলি রব্বী, ইয়া কারীমাল মা’রূফ, ইয়া ক্বদীমাল ইহসান, আহসিন ইলাইনা বিইহসানিকাল ক্বদীম, ছাব্বিত কুলূবানা আলা দীনিকা বিরহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।
অর্থ: “ইয়া রমাদ্বান শরীফ উনার রোযা ও তারাবীহর নামায) আমার রবের করুণা বা দয়া। হে সম্মানিত দাতা, হে চির ইহসানকারী, আপনার ইহসানের দ্বারা আমাদের প্রতি ইহসান করুন এবং আপনার সদয় অনুগ্রহে আমাদের দিল-মনকে আপনার দ্বীনের উপর কায়িম রাখুন। আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনিই সর্বপেক্ষা দয়ালু।”
আর চার রাকায়াতের পর নিম্নোক্ত দু’য়া পড়তে হয়-
سبحان ذى الملك والملكوت سبحان ذى العزة والعظمة والهيبة والقدرة والكبرياء والجبروت. سبحان الملك الحى الذى لاينام ولايموت ابدا ابدا سبوح قدوس ربنا ورب الملئكة والروح.
উচ্চারণ : সুবহানা যিল মুলকি ওয়াল মালাকূতি সুবহানা যিল ইযযাতি ওয়াল আযমাতি ওয়াল হাইবাতি ওয়াল কুদরতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল জাবারূত, সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল লাযী লা-ইয়ানামু ওয়ালা-ইয়ামূতু আবাদান আবাদা, সুববূহুন কুদ্দূসুর রব্বুনা ওয়া রব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।
অর্থ: “আমি ঐ মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি সমস্ত কর্তৃত্ব ও ফেরেশতাগণ উনাদের মালিক। আমি উনারই পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি সমস্ত ইজ্জত, আযমত, হাইবত (প্রভাব), কুদরত, বড়ত্ব ও শক্তিমত্তার অধিকারী। আমি সেই চিরজীবী মালিকেরই পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি বিশ্রাম করেন না, যিনি অমর, যিনি পুত:পবিত্র, তিনিই আমাদের রব এবং ফেরেশতা ও রূহসমূহের রব।”
উল্লেখ্য, যদি কারো উপরোক্ত দু’য়া জানা না থাকে তবে সে দুরূদ শরীফ পাঠ করবে।
মুহম্মদ শাহিনুর রহমান (শাহিন)
পানছড়ি, খাগড়াছড়ি।
সুওয়াল : তারাবীহর নামাযে কয় রাকায়াত পর পর মুনাজাত করার নিয়ম? আর কি বলে মুনাজাত করতে হয়? জানতে ইচ্ছুক।
জাওয়াব : চার রাকায়াতের পর দু’য়া পড়ে মুনাজাত করবে। মুনাজাতটি নিম্নমরুপ-
اللهم صلى على سيدنا ونبينا وحبيبنا وشفيعنا ومولنا محمد صلى الله عليه وسلم – اللهم انا نسئلك الجنة ونعوذبك من النار يا خالق الجنة والنار برحمتك ياعزيز ياغفار ياكريم يا ستار يا رحيم يا جبار يا خالق يا بار. اللهم اجرنا من النار يا مجير يا مجير يا مجير برحمتك يا ارحم الراحمين – ربنا اتنا فى الدنيا حسنة وفى الاخرة حسنة وقنا عذاب النار، سبحن ربك رب العزة عمايصفون وسلم على المرسلين والحمد لله رب العلمين.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা সাইয়্যিদিনা ওয়া নাবিয়্যিনা, ওয়া হাবীবিনা ওয়া শাফীয়িনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউযুবিকা মিনান নার, ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার, বিরহমাতিকা ইয়া আযীযু, ইয়া গফফারু, ইয়া কারীমু, ইয়া সাত্তারু, ইয়া রহীমু, ইয়া জাব্বারু, ইয়া খালিক্ব, ইয়া বাররু, আল্লাহুম্মা আজিরনা মিনান নার, ইয়া মুজীরু, ইয়া মুজীরু, ইয়া মুজীব, বিরহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন। রব্বানা আতিনা ফিদ দুনইয়া হাসানাহ ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ ওয়া ক্বিনা আযাবান নার। সুবহানা রব্বিকা রব্বিল ইযযাতি আম্মা ইয়াছিফূন ওয়া সালামুন আলাল মুরসালীন ওয়াল হামুদ লিল্লাহি রব্বিল আলামীন।
অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি ছলাত-সালাম অর্থাৎ খাছ রহম ও শান্তি নাযিল করুন আমাদের সাইয়্যিদ, নবী, হাবীব, শাফায়াতকারী ও অভিভাবক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। আয় মহান আল্লাহ পাক! নিশ্চয়ই আমরা আপনারই নিকট জান্নাতের আবেদন করছি এবং আপনারই নিকট জাহান্নাম থেকে পানাহ তলব করছি, হে জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টিকারী! হে ক্ষমতাশালী, হে ক্ষমাকারী, হে দানশীল, হে অপরাধ গোপনকারী, হে দয়ালু, হে পরাক্রমশীল, হে সৃষ্টিকর্তা, হে অনুগ্রহকারী। আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনার সদয় অনুগ্রহে আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তিদান করুন, হে মুক্তিদানকারী, হে মুক্তিদানকারী, হে মুক্তিদানকারী, হে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু মহান আল্লাহ পাক। আয় আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে ভালাই দান করুন। সমস্ত ইজ্জত-সম্মানের মালিক আপনার রবের জন্যই। যিনি পবিত্র তারা যা বর্ণনা করে তা থেকে। সালাম বা খাছ শান্তি বর্ষিত হোক রসূলগণ উনাদের উপর। আর তামাম আলমের রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যই সমস্ত প্রশংসা।”
মুহম্মদ ছিদ্দিকুল আলম, কুমিল্লা।
সুওয়াল : রোযা রেখে মুখে গুল ও গুল জাতীয় দ্রব্য যেমন তামাকের পাতা, সাদা পাতা ইত্যাদি রাখা এবং গুল দিয়ে দাঁত মাজলে রোযার কোন ক্ষতি হবে কিনা?
জাওয়াব : শুধু গুলই নয় বরং পেষ্ট, কয়লা পাউডার, ছাই ইত্যাদি যে কোন প্রকারের মাজন দ্বারা রোযা রেখে দাঁত মাজা মাকরূহ। উপরোল্লিখিত মাজন দ্বারা দাঁত মাজার সময় যদি সামান্য মাজনও গলার ভিতর প্রবেশ করে, তাহলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং রোযা ক্বাযা করা ওয়াজিব হবে, কাফফারা আদায় করতে হবেনা।
উল্লেখ্য, গুল ও তামাকের পাতা, সাদা পাতা ইত্যাদি এগুলো এক প্রকার নেশা জাতীয় দ্রব্য, যা দ্বারা অনেকে নেশা করে থাকে। যদি নেশার জন্য কেউ গুল দ্বারা দাঁত মাজন করে অথবা তামাকের পাতা, সাদা পাতা মুখে রাখে তাহলে তা সম্পূর্ণই হারাম হবে। এছাড়াও গুল, তামাকের পাতা, সাদা পাতা ইত্যাদি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। (বেহেশতী জেওর)
মুছাম্মত রোজী আখতার, মানিকগঞ্জ।
সুওয়াল : আমি ও আমার স্বামী যদি বাড়িতে নামায পড়ি তাহলে আমরা জামায়াতের ছওয়াব পাব কি-না? যদি জামায়াতের ছওয়াব পাই তাহলে আমার স্বামীকে যদি বলি, ‘আপনি মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে আমাকে সাথে নিয়ে নামায পড়বেন, এতে আপনি ও আমি দু’জনেই জামায়াতের ছওয়াব পাব।’
এক্ষেত্রে সঠিক মাসয়ালা কি হবে তা জানতে ইচ্ছুক।
জাওয়াব : কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহিলাদের জামায়াতে নামায পড়ার ব্যাপারে আদেশ-নিদের্শ করা হয়নি। বরং হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, “মহিলারা ঘরের প্রকোষ্ঠে একাকী নামায পড়লে পঁচিশগুণ ছওয়াব পাবে।” (দাইলামী)
আর মহিলাদের জন্য কোন নামাযই জামায়াতে আদায় করার জন্য মসজিদ ও ঈদগাহে যাওয়া জায়িয নেই। বরং তা আম ফতওয়া মতে মাকরূহ তাহরীমী আর খাছ ফতওয়া মতে কুফরী। কিন্তু পুরুষদেরকে জামায়াতে এবং মসজিদে নামায পড়ার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ করা হয়েছে।
অতএব, ওজর ব্যতীত মসজিদে জামায়াত তরক করে স্বামী তার স্ত্রীকে নিযে আলাদা ঘরে জামায়াত জারী করতে পারবে না। কেননা, এভাবে প্রত্যেক স্বামী মসজিদে না গিয়ে তার স্ত্রীকে নিয়ে ঘরে আলাদা জামায়াত পড়তে থাকলে মসজিদ বিরান হয়ে যাবে। আর মসজিদ বিরান করা শক্ত কঠিন গুণাহ।
{দলীলসমূহ : দাইলামী, মিশকাত, ইমদাদুল আহকাম, আলমগীরী, বাহরুর রায়িক্ব, তাতারখানিয়া, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১১তম সংখ্যা}
খতমে নুবুওওয়াত প্রচার কেন্দ্র খতমে নুবুওওয়াত অস্বীকারকারীরা কাফির “ইসলামী শরীয়তের হুকুম মুতাবিক যারা মুসলমান থেকে খতমে নুবুওওয়াত অস্বীকারকারী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয় যেমন- কাদিয়ানী, বাহাই ইত্যাদি তাদের তওবার জন্য নির্ধারিত সময় ৩ দিন এরপর তওবা না করলে তাদের শাস্তি মৃত্যুদ-।” কাদিয়ানী রদ! (পঞ্চম ভাগ) (কুতুবুল ইরশাদ, মুবাহিছে আয’ম, বাহরুল উলূম, ফখরুল ফুক্বাহা, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, তাজুল মুফাস্সিরীন, হাফিযুল হাদীছ, মুফতিউল আ’যম, পীরে কামিল, মুর্শিদে মুকাম্মিল হযরতুল আল্লামা মাওলানা শাহ্ ছূফী শায়খ মুহম্মদ রুহুল আমিন রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক প্রণীত “কাদিয়ানী রদ” কিতাবখানা (৬ষ্ঠ খ-ে সমাপ্ত) আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছি। যাতে কাদিয়ানীদের সম্পর্কে সঠিক ধারণাসহ সমস্ত বাতিল ফিরক্বা থেকে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসারীদের ঈমান-আক্বীদার হিফাযত হয়। আল্লাহ্ পাক আমাদের প্রচেষ্টায় কামিয়াবী দান করুন (আমীন)। এক্ষেত্রে তাঁর কিতাব থেকে হুবহু উদ্ধৃত করা হলো, তবে তখনকার ভাষার সাথে বর্তমানে প্রচলিত ভাষার কিছুটা পার্থক্য লক্ষণীয়)। (ধারাবাহিক) মির্জ্জা ছাহেব উহার প্রতিবাদে ১৯০৭ সালের ৫ই নবেম্বর তারিখে ‘তাবছেরা’ নামক একখানা বিজ্ঞাপন নিম্নোক্ত মর্ম্মে প্রচার করিলেন; উর্দূ কম্পোজ করতে হবে “খোদা বলিলেন, আমি তোমার আয়ু বৃদ্ধি করিয়া দিব- অর্থাৎ যে শত্রু বলিতেছে যে, ইংরাজি ১৯০৭ সালের জুলাই হইতে ১৪ মাস কেবল তোমার আয়ুষ্কাল বাকি রহিয়াছে, কিম্বা অন্য শত্রু এইরূপ যে ভবিষ্যদ্বাণী করিতেছে, আমি এই সমস্তকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করিব এবং তোমার বয়স বৃদ্ধি করিয়া দিব, যেন লোকে জানিতে পারে যে, আমি খোদা এবং প্রত্যেক বিষয়ে আমার ক্ষমতাধীন। ইহা মহা গৌরবাম্বিত ভবিষ্যদ্বাণী-যাহাতে আমার জয় ও শত্রুর পরাজয়, আমার সম্মান ও শত্রুর অপমান এবং আমার উন্নতি ও শত্রুর অবনতির কথা বর্ণনা করিয়াছেন এবং শত্রুর উপর কোপ ও শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন, কিন্তু ুআমার সম্বন্ধে লিখিয়াছেন যে, দুনইয়াতে তোমার নাম উন্নত করা হইবে এবং সহায়তা ও বিজয় তোমার ভাগ্যনিহিত হইবে। আর যে শত্রু মৃত্যু কামনা করে, সে নিজেই আমার চক্ষুদ্বয়ের সম্মুখে হস্তী-স্বামি দিগের ন্যায় বিধবস্ত ও বিনষ্ট হইবে।” (অসমাপ্ত)