মুহম্মদ আলী হায়দার আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা জানুয়ারী/ফেব্রুয়ারী/মে/২০০৪ ঈসায়ী সনে পরপর তিনটি সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে ফতওয়ায়ে শামী, আলমগীরী, বাহরুর রায়িক, হিন্দিয়া, তাতারখানিয়া, ইত্যাদি কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “সানি জামাআত করা জায়েয নেই …।”…নির্ভরযোগ্য উক্তি অনুযায়ী সানী বা দ্বিতীয় জামায়াত করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী…।” আর আপনারা মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় লিখেছেন, জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয এবং সকল ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ঐক্যমতে জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহ্রীমী নয়; যদি জামায়াত প্রথম ছূরতে না হয়। কোনটি সঠিক? দয়া করে দলীল-আদিল্লাহসহ বিস্তারিতভাবে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য জাওয়াব দানে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ মহল্লা বা জামে মসজিদে (অর্থাৎ যেসব মসজিদে ইমাম-মুয়ায্যিন ও জামায়াত নির্ধারিত আছে এবং নির্দিষ্ট সময়ে জামায়াত কায়িম হয় সেসব মসজিদে একবার জামায়াত হওয়ার পর) সানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর মাধ্যমে যা জানতে পেরেছেন সেই ফতওয়াই সঠিক, নির্ভরযোগ্য, দলীলভিত্তিক এবং গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত। পক্ষান্তরে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং ফতওয়াগ্রাহ্য মতের বিপরীত। শুধু তাই নয়। বরং হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার মৌলভী ছাহেবরা মহল্লা বা জামে মসজিদে সানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করার বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়ে শক্ত গুনাহ্র কাজ করেছে। কেননা সঠিক, গ্রহণযোগ্য ও বিশুদ্ধ ফতওয়া মুতাবিক জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহরীমী নয়। এটাই ترجيح বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়া। আর ترجيح বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়ার বিপরীত ফতওয়া দেয়া সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়িয।
উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা কিতাবের নাম দিয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। বরং তার সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ, তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে মনগড়া বক্তব্য প্রদান করেছে এবং ক্ষেত্র বিশেষ নিজের ভ্রান্ত মতকে টিকিয়ে রাখতে কিতাবের ইবারত কারচুপি করে ফতওয়ায়ে শামী, আলমগীরী, বাহরুর রায়িক, হিন্দিয়া, তাতারখানিয়া, ইত্যাদি কিতাব”-এর বরাত দিয়ে যেটা বলতে চেয়েছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। আমরা পর্যায়ক্রমে সেটা তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ্। উল্লেখ্য, হাটহাজারীর অখ্যাত মাসিক পত্রিকার মৌলভী ছাহেবরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে প্রথমতঃ ‘ফতওয়ায়ে শামী’ কিতাবের বরাত দিয়ে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। কারণ “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবেই উল্লেখ আছে, বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে সানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহরীমী নয়। আর وبه نأخذ এটাই আমরা গ্রহণ করেছি।”
যেমন, “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
اذا لم تكن الجماعة على الهيئة الاولى لاتكره والا تكره وهو الصحيح وبالعدول عن المحراب تختلف الهيئة كذا فى البزازية انتهى وفى التاترخانية عن الولوالجية وبه نأخذ.
অর্থঃ- “সানী বা দ্বিতীয় জামায়াত যদি প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয়। (প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হওয়ার অর্থ হলো দ্বিতীয় জামায়াতের জন্য আযান ও ইক্বামত হবেনা। ইমামের নির্ধারিত স্থানে তথা মেহরাবে দাঁড়াতে পারবেনা।) তাহলে সানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ্ হবেনা। অন্যথায় মাকরূহ্ হবে। আর وهو الصحيح এটাই ছহীহ্ ও বিশুদ্ধ ফতওয়া। আর মেহরাব থেকে সরে দাঁড়ানোই হলো প্রথম ছূরতের বিপরীত।” অনুরূপ বায্যাযীয়া কিতাবেও উল্লেখ আছে। আর তাতারখানিয়া কিতাবে ওয়ালওয়ালিজীয়া কিতাব থেকে উল্লেখ আছে যে, وبه نأخذ এটাই আমরা গ্রহণ করেছি। “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, আযান-ইক্বামত ব্যতীত সানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করলে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে না। বরং সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ইজমা বা ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয। যেমন, “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫৫৩ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
ولو كرر أهله بدونهما …. جاز اجماعا.
অর্থঃ- “যদি মহল্লার মসজিদের অধিবাসীগণ আযান-ইক্বামত ব্যতীত সানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত করে, তাহলে সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ইজমা বা ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয। “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩৯৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ان الصحيح انه لايكره تكرار الجماعة اذا لم تكن على اليئة الاولى.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই (الصحيح) ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ মত এই যে, দ্বিতীয় জামায়াত যদি প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয় তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ্ হবেনা। অর্থাৎ প্রথম জামায়াতের মত আযান ও ইক্বামত না দিয়ে এবং ইমামের নির্ধারিত স্থানে না দাঁড়িয়ে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ্ হবে না। এটাই ছহীহ্ মত।” “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩৭৭ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
لايكره تكرار الجماعة فى مسجد واحد.
অর্থঃ- “একই মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ হবেনা।” উল্লেখ্য যে, হাটহাজারী এবং তাদের সমজাতীয় ইবারত কারচুপিকারীদের কবল থেকে সাধারণ মানুষকে হিফাজত করার উদ্দেশ্যে আমরা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাতে বিস্তারিতভাবে সুস্পষ্ট ফতওয়া উল্লেখ করেছি যে, আযান-ইক্বামত ব্যতীত এবং মেহরাবে না দাঁড়িয়ে জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করলে মাকরূহ্ হবেনা। এবং উক্ত শর্তে সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ইজমা বা ঐক্যমতে জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম জায়িয। মাকরূহ্ নয়, এটাই বিশুদ্ধ ফতওয়া। এছাড়াও আমরা আরো অনেক শর্ত-শারায়িত উল্লেখ করেছি, যার বিস্তারিত আলোচনা পূর্বেই করা হয়েছে। তাদের দ্বিতীয় দলীল হলো- “ফতওয়ায়ে আলমগীরী।” অথচ “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবে উল্লেখ আছে, উক্ত মসজিদে দ্বিতীয় আযান ব্যতীত সানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ নয়। এটা সকল ফুক্বাহা-ই-ক্বিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ইজমা হয়েছে। যেমন, “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
المسجد اذا كان له امام معلوم وجماعة معلومة فى محلة فصلى اهله فيه بالجماعة لايباح تكرارها فيه باذان ثان أما اذا صلوا بغير اذان يباح اجماع وكذا فى مسجد قارعة الطريق كذا فى شرح المجمع.
অর্থঃ- “যদি মহল্লার মসজিদে ইমাম ও জামায়াত নির্দিষ্ট থাকে এবং মহল্লার লোকেরা আযান দিয়ে জামায়াতের সাথে নামায আদায় করে তাহলে সানী বা দ্বিতীয়বার আযান দিয়ে দ্বিতীয় জামায়াত করা জায়িয নেই। তবে যদি মহল্লার মসজিদে ইমাম ও জামায়াত নির্দিষ্ট থাকে এবং মহল্লার লোকেরা দ্বিতীয় আযান ব্যতীত সানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করে, তাহলে সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ইজমা বা ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয। আর অনুরূপভাবে এই হুকুম রাস্তার মসজিদের জন্যও প্রযোজ্য। এটা ‘শরহে মাজমাআর’ মধ্যে উল্লেখ আছে।” তাদের তৃতীয় দলীল হলো- “বাহরুর রায়িক” অথচ “আল বাহরুর রায়িক” কিতাবেও উল্লেখ আছে, সাধারণভাবে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করতে কোন অসুবিধা নেই। যেমন, “বাহরুর রায়িক” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
لابأس به مطلقا اذا صلى فى غير مقام الامام.
অর্থঃ- (مطلقا) “সাধারণভাবে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করতে কোন অসুবিধা নেই তবে শর্ত হলো মুকাররার ইমামের নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য স্থানে দ্বিতীয় জামায়াত কায়িম করবে।” তাছাড়া “বাহরুর রায়িক” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩৪৬ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
يجوز تكرار الجماعة بلا اذان ولا اقامة ثانية اتفاقا.
অর্থঃ- “সকল ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার আযান ও ইক্বামত ব্যতীত দ্বিতীয় জামায়াত কায়িম করা জায়িয।” (চলবে)
মুসাম্মত সানজিদা আক্তার সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত মুহম্মদপুর, ঢাকা।
সুওয়ালঃ অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়- জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। তাদের সকল আমল হবে খুবই নিখুঁত ও সুন্দর। তাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে, তাদের রোযা দেখে তোমাদের রোযাকে তোমরা তুচ্ছ ও নগণ্য মনে করবে। তাদের আমল দেখে তোমরা তোমাদের আমলকে হেয় মনে করবে, তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার নিচে যাবেনা। তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন-প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। এ দলের আমল যতই তোমাদেরকে আকৃষ্ট করুক না কেন, কখনই তাদের দলে যাবেনা। কারণ প্রকৃতপক্ষে এরা হবে ইসলাম হতে খারিজ, দ্বীন হতে বহির্ভূত। তীর যেমন ধনুক হতে বের হয়ে যায় সে আর কখনও ধনুকের নিকট ফিরে আসেনা। তেমনিই এরা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে, আর কখনও দ্বীনের পথে, কুরআন ও সুন্নাহ্র পথে ফিরে আসবেনা। আমার প্রশ্ন হল, উপরোক্ত হাদীছ ছহীহ্ কি-না? ছহীহ্ হলে এ দ্বারা উদ্দেশ্য কারা? উক্ত হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতের কোন সম্পর্ক আছে কি-না? অনেকে এই হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতকে জড়াতে চান। উক্ত হাদীসের সঙ্গে তাবলীগ জামাতকে জড়ানো সঠিক কি-না? জবাবঃ প্রশ্নে বর্ণিত হাদীছ ছহীহ্। মুহাদ্দিছীনে কেরাম উক্ত হাদীছসহ এ জাতীয় হাদীছসমূহের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এ সব হাদীছ দ্বারা একটি নির্ধারিত জামাত বা খারিজী ফেরক্বা নামে পরিচিত তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর খেলাফত আমলে এই হাদীছসমূহের বাস্তবতা এবং খাওয়ারেজদের অবস্থার সমন্বয় ঘটেছিল। যার দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে বলা চলে যে, এ হাদীছসমূহ দ্বারা একমাত্র খাওয়ারেজদেরকেই বুঝানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণাদি ছাড়া অন্য কোন জামাতকে এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করা যাবেনা।
কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়া তাবলীগ জামাতকে এই হাদীছসমূহের মেসদাক বা উদ্দেশ্য বানানো, তাদেরকে খাওয়ারেজ বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে মারাত্মক অন্যায় ও অপরাধ। তাবলীগের নিয়মনীতি ও কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই। বর্তমান বিশ্বে আল্লাহ্ তা’আলা তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে পথহারা, ঈমানহারা, হেদায়েত থেকে বঞ্চিত অসংখ্য মানুষকে হেদায়েত করেছেন, ঈমান আনার তাওফিক দান করেছেন। এছাড়া এ জামাতের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে অসংখ্য জগদ্বিখ্যাত আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ। অতএব, তাবলীগ জামাতকে খারেজী জামাত বলা, মিথ্যা অপবাদ বৈ কিছুই নয়। (ফতহুল বারী ১২ঃ৩৫০, আল মিরকাত ৭ঃ১০৭) উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো- (১) উল্লিখিত হাদীছ শরীফে বর্ণিত গুণাবলী প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে আছে কি? (২) উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা কি শুধু খারিজী ফিরক্বার লোকদেরকেই বুঝানো হয়েছে? নাকি খারিজীদের ন্যায় আক্বীদা পোষণকারীদের ক্ষেত্রেও এ হাদীছ শরীফ প্রযোজ্য? (৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য? (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি? (৫) কুরআন-সুন্নাহ্র কোথাও প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করার নির্দেশ আছে কি? প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করা কুরআন-সুন্নাহ্ মতে জায়িয কিনা? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কিত উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের সাফাই গাইতে গিয়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যা করেছে। সাথে সাথে “ছয় উছূলীদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী কোন আক্বীদা-আমল নেই” বলে তাদের নির্লজ্জ দালালী করে নিজেদেরকে অপব্যাখ্যাকারী ও মিথ্যাবাদীরূপে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিক দলীলভিত্তিক আলোচনা করলেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে। তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো- (ধারাবাহিক) ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারীতার খণ্ডনমূলক জবাব-৩ প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, পর্যায়ক্রমে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলোর সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো-
প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ৯
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মনে করে বা প্রচার করে থাকে যে, “মাওলানা ইলিয়াস ছাহেব প্রবর্তিত “তাবলীগ জামায়াতই আসল ও একমাত্র নাযাতের পথ।” যে প্রসঙ্গে মাওলানা ইলিয়াস ছাহেবও তার “মলফুযাতের ২৪নং মলফুযে বলেছেন,“আসল কাজের তরীক্বা তাবলীগ হতে শিখতে হবে।” (পূর্ব প্রকাশিতের পর) মুয়ামালাতের বর্ণনা ইল্মে ফিক্বাহ্কে যে চার ভাগ করা হয়েছে, তার তৃতীয় ভাগ হচ্ছে “মুয়ামালাত।” যার অর্থ হচ্ছে লেনদেন বা আদান-প্রদান। মুয়ামালাতের অনেক শাখা-প্রশাখা বা বিষয় রয়েছে। যেমন, ব্যবসা-বাণিজ্য, বেচা-কেনা ইত্যাদি। মুয়ামালাতের একটি বিশেষ বিষয় হলো, হালাল কামাই করা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,
يايها الناس كلوا مما فى الارض حلا لا طيبا.
অর্থঃ- “হে মানুষেরা যমীনে যা হালাল খাদ্য রয়েছে, তা ভক্ষণ কর।” (সূরা বাক্বারা/১৬৮) আর এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
طلب كسب الحلال فريضة بعض الفريضة.
অর্থঃ- “(পুরুষের জন্য) অন্যান্য ফরযের পর হালাল কামাই করাও একটি ফরয।” (বাইহাকী) হাদীছ শরীফে ইরশাদ আরো হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
كل لحم نبت من السحت كانت النار اولى به.
অর্থঃ- “প্রত্যেক ঐ গোশ্তের টুকরা, যা হারাম রিযিক দ্বারা তৈরী হয়েছে, তার জন্য জাহান্নামই উপযুক্ত।” (আহ্মদ, বাইহাকী) সুতরাং হালাল কামাই করতে হলে হালাল-হারাম সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় ইল্ম বা শিক্ষা করাও ফরয। অথচ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে মুয়ামালাত সম্পর্কিত কোন শিক্ষাই দেয়া হয়না। মুয়াশারাতের বর্ণনা মুয়াশারাত শব্দের অর্থ জীবন-যাপন বা আদব-কায়দা। মুয়াশারাতের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বিবাহ-শাদী, পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার, প্রতিবেশীর হক্ব আদায় করা, স্বামী-স্ত্রীর হক্ব আদায় করা, বড়দেরকে শ্রদ্ধা করা, ছোটদেরকে স্নেহ করা ইত্যাদি। কাজেই উল্লিখিত বিষয়সমূহের ফরয পরিমাণ বা প্রয়োজনীয় ইল্ম বা শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে পিতা-মাতার হক্ব সম্পর্কে অবগত হওয়া প্রত্যেকের জন্যই অবশ্য কর্তব্য। পিতা-মাতার হক্ব এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ করেন,
وقضى ربك الا تعبدوا الا اياه وبالوالدين احسانا.
অর্থঃ- “আপনার রব, আপনাকে একমাত্র আল্লাহ পাক-এর ইবাদত করার নির্দেশ দিচ্ছেন এবং পিতা-মাতার সহিত সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিচ্ছেন।”(সূরা বণী ইসরাঈল/২৩) আর হাদীছ শরীফে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
رضى الرب فى رضى الوالدين وسخط الرب فى سخط الوالدين.
অর্থঃ- “পিতা-মাতার সন্তুষ্টির উপর আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টি। আর পিতা-মাতার অসন্তুষ্টির উপর আল্লাহ্ পাক-এর অসন্তুষ্টি।” (তিরমীযী, মিশকাত,) অতএব, পিতা-মাতার হক্ব সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় ইল্ম শিক্ষা করা ফরয। স্বামী-স্ত্রীর হক্ব স্বামীর প্রতি স্ত্রীর হক্ব সম্পর্কে কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
ولهن مثل الذى عليهن بالمعروف.
অর্থঃ- “নারীদের তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে, যেমনি আছে তাদের উপর পুরুষদের।” (সূরা বাক্বারা/২২৮) আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
والرجل راع على اهل بيته وهو مسئول عن رعيته.
অর্থঃ- “প্রত্যেক পুরুষ তার আহ্লে বাইত (স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি) বা পরিবারের রক্ষক এবং তিনি তার রক্ষিত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন।” (বুখারী শরীফ) অনুরূপ স্ত্রীর প্রতিও স্বামীর হক্ব রয়েছে। যে প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,
الرجال قومون على النساء.
অর্থঃ- পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বকারী।” (সূরা নিসা/৩৪) আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
لو كنت امر احدا ان يسجد لاحد لامرت المرأة ان تسجد لزوجها.
অর্থঃ- “আমি যদি একজন আরেকজনকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তবে স্ত্রীদেরকে নির্দেশ দিতাম, তাদের স্বামীদের সিজদা করার জন্য। মূলতঃ স্বামীর সন্তুষ্টির উপরই স্ত্রীর জান্নাত।” (মিশকাত) অতএব, প্রমাণিত হলো যে, স্বামী-স্ত্রীর হক্ব সম্পর্কিত ফরয পরিমাণ ইল্ম শিক্ষা করাও অবশ্য কর্তব্য। প্রতিবেশীর হক্ব প্রতিবেশীর হক্ব সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
واعبدوا الله ولاتشركوا به شيئا وبالوالدين احسانا وبذى القربى واليتمى والمساكين والجار ذى القربى والجار الجنب.
অর্থঃ- “ইবাদত কর আল্লাহ্ পাক-এর, তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করোনা। পিতা-মাতা এবং নিকট আত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন ও প্রতিবেশীর সাথে সৎ ব্যবহার কর বা তাদের হক্ব আদায় কর।” (সূরা নিসা/৩৬) আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
احسن مجاورة من جاورك تكن مسلما.
অর্থঃ- “তুমি প্রতিবেশীর সহিত সৎ ব্যবহার কর, তবেই তুমি মুসলমান হতে পারবে।” (ইহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন) অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
لا يؤمن عبد حتى يؤمن جاره بواءقه.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তির উৎপীড়ন হতে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়, সে মু’মিন নয়।” (ইহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন) অতএব, প্রতিবেশীর হক্ব সম্পর্ক্বিয় ইল্ম অর্জন করাও ফরয। আদব ও সম্মান আদব বা সম্মান প্রদর্শন সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
من لم يرحم صغيرنا ولم يؤقر كبيرنا ولم يبجل عالمنا فليس منا.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ছোটদেরকে দয়া করেনা, বড়দেরকে সম্মান করেনা এবং আলিমদেরকে তা’যীম করেনা, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (মিশকাত) মূলকথা হলো, “মুয়াশারাত” সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় ইল্ম শিক্ষাগ্রহণ করাও সকলের জন্য অবশ্য কর্তব্য বা ফরয। কিন্তু প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে মুয়াশারাতের একটি অংশ ‘ইকরামুল মুসলিমীন’ সম্পর্কে যৎসামান্য কিছু শিক্ষা দেয়া হয়, তাছাড়া বাকী সবই তাদের শিক্ষার মধ্যে অনুপস্থিত। উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ইসলামী পূর্ণ শিক্ষার দু’ভাগের একভাগ বা ইল্মে ফিক্বাহ্র যৎসামান্যই শিক্ষা দিয়ে থাকে। যা দিয়ে ইল্মে শরীয়তের তেমন কিছুই জানা যায়না বা আমল করা যায়না। (চলবে)
মুহম্মদ তছলিমুদ্দীন বসুনিয়া উলিপুর, কুড়িগ্রাম।
সুওয়ালঃ মাসিক মদীনা ফেব্রুয়ারী/২০০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-
প্রশ্নঃ অনেকের মুখে শুনেছি যে, ঘরে মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি থাকলে সেই ঘরে নামায হয় না। দোকান ঘরে বিভিন্ন জিনিসের ঠোঙ্গায় মানুষ ও জীব-জন্তুর ছবি থাকে। এই দোকান ঘরেই নামায আদায় করতে হয়। অনেক দোকানে ৮/১০ জনে জামাত করেও নামায পড়তে দেখা যায়। এমতাবস্থায় এসব দোকানে নামায শুদ্ধ হবে কিনা? এবং করণীয় কি? উত্তর ঃ মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি ঘরে মজুদ থাকলেই সেই ঘরে নামায শুদ্ধ হবে না,বিষয়টা এমন নয়। ছবি যদি নামাযীর সামনে থাকে তবে অবশ্যই নামায শুদ্ধ হবে না। কিন্তু যদি ছবি দৃশ্যমান না থাকে এবং বিশেষভাবে নামাযী ব্যক্তির চোখের সামনে না থাকে তাহলে নামাযের ক্ষতি হবে না। উল্লেখ্য, মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্যে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, (১) মানুষ বা জীব-জন্তু ইত্যাদি প্রাণীর ছবি ঘরে মওজুদ রাখতে কোন অসুবিধা নেই। তবে নামাযীর সামনে না পড়লেই হলো। (২) শুধুমাত্র নামাযীর সামনে মানুষ বা জীব- জন্তু ইত্যাদি প্রাণীর ছবি মওজুদ থাকলে নামায মাকরূহ্ হবে। নামাযীর ডানে-বামে, উপরে-নীচে, পিছনে মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি মওজুদ থাকলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না।
এখন আমার সুওয়াল হলো- মানুষ বা জীব-জন্তু ইত্যাদি প্রাণীর ছবি ঘরে মওজুদ থাকা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি মানুষ বা জীব-জন্তু ইত্যাদি প্রাণীর ছবি ঘরের ভিতরে নামাযীর চোখে পড়ে না, এমন কোন ঘরে প্রাণীর ছবি মওজুদ থাকলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। দলীলসহ সঠিক জাওয়াব জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ ঘরের ভিতরে নামাযরত অবস্থায় নামাযীর চোখে পড়ে না, এমন কোন ঘরে মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি মওজুদ রেখে নামায পড়া সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি, বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। নিম্নে মাসিক মদীনার মনগড়া বক্তব্য খণ্ডন করা হলো- প্রথমতঃ মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্যে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, (১) মানুষ বা জীব-জন্তু ইত্যাদি প্রাণীর ছবি ঘরে মওজুদ রাখতে কোন অসুবিধা নেই। তবে নামাযীর সামনে না পড়লেই হলো। এর জবাবে বলতে হয় যে, মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল হয়েছে। কারণ সর্বজনমান্য, বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে সুস্পষ্টভাবে এটাই উল্লেখ আছে যে, “মানুষ বা জীব-জন্তু ইত্যাদি প্রাণীর ছবি ঘরে মওজুদ রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বা হারাম।” যেমন, ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার সর্বজনমান্য, বিশ্বখ্যাত কিতাব “শরহে বিক্বায়াহ্” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৬৮ পৃষ্ঠার ১৮ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
وضع الصورة فى البيت ممنوعا مطلقا.
অর্থঃ- “সাধারণত (মানুষ বা জীব-জন্তু ইত্যাদি) প্রাণীর ছবি ঘরে রাখা নিষিদ্ধ বা হারাম।” “উমদাতুর রিয়ায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,
وضع الصورة فى البيت ممنوعا مطلقا.
অর্থঃ- “مطلقا বা সাধারণভাবে (মানুষ বা জীব-জন্তু ইত্যাদি) প্রাণীর ছবি ঘরে রাখা নিষিদ্ধ বা হারাম।” কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, “মানুষ বা জীব-জন্তু ইত্যাদি প্রাণীর ছবি ঘরে মওজুদ রাখাটাও মাকরূহ্ তাহ্রীমী বা নিষিদ্ধ।” যেমন, “গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩০২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
اور جاندار كى تصوير كا كهر مين ركهنا مكروه تحريمى بن.
অর্থঃ- “(মানুষ বা জীব-জন্তু ইত্যাদি) প্রাণীর ছবি ঘরে রাখা মাকরূহ্ তাহ্রীমী তথা নিষিদ্ধ।” “হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৪২ পৃষ্ঠার ৬ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
يكره جعل الصورة فى البيت.
অর্থঃ- “ঘরে প্রাণীর ছবি রাখা মাকরূহ্ তাহ্রীমী তথা নিষিদ্ধ।” “হাশিয়াতুত্ তাহ্তাবী আলাদ দুররিল মুখতার” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وكره جعل الصورة فى البيت لما ورد ان الملانكة لاتدخل بيتا فيه كلب او صورة.
অর্থঃ- “(মানুষ বা জীব-জন্তু ইত্যাদি) প্রাণীর ছবি ঘরে রাখা মাকরূহ্ তাহ্রীমী তথা নিষিদ্ধ।” কেননা হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে যে, “ঐ ঘরে রহমতের ফেরেশ্তা প্রবেশ করেনা, যে ঘরে কুকুর অথবা প্রাণির ছবি থাকে।” (আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ্,আহ্মদ, আন্ নাহ্রুল ফায়িক্ব, ইত্যাদি ) শুধু তাই নয়, কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, “যে ঘরে মানুষ বা জীব জন্তু ইত্যাদি প্রাণীর ছবি মওজুদ থাকে, সে ঘরে প্রবেশ করা, বসা এবং পরিদর্শন করাটাও মাকরূহ্ তাহ্রীমী তথা নিষিদ্ধ বা হারাম।” যেমন, “বিনায়া ফী শরহে হিদায়া” কিতাবের ২য় খণ্ডের ৫৫২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
يكره اتخاذ الصورة فى البيوت ويكره الدخول فى متل هذه البيوت والجلوس والزيارة.
অর্থঃ- “ঘরে (মানুষ বা জীব-জন্তু-ইত্যাদি) প্রাণীর ছবি রাখা বা তৈরী করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী। এবং এধরনের (মানুষ বা জীব- জন্তু ইত্যাদি) প্রাণীর ছবিযুক্ত ঘরে প্রবেশ করা, বসা এবং পরিদর্শন করাটাও মাকরূহ্ তাহ্রীমী তথা নিষিদ্ধ।” “নূরুদ দিরায়া” কিতাবের ২য় খণ্ডের ৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থঃ- “ঘরে প্রাণীর ছবি তৈরী করা এবং ঘরে প্রাণীর ছবি ঝুলিয়ে রাখা বা লটকানো মাকরূহ্ তাহ্রীমী। এবং এ ধরনের ছবিযুক্ত ঘরে যাওয়া এবং বসাও মাকরূহ্ তাহ্রীমী তথা নিষিদ্ধ।” “আইনুল হিদায়া” কিতাবের নিছফে আউয়াল খণ্ডের ৬৬১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থঃ- “ঘরে প্রাণীর ছবি তৈরী করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী। এবং এধরনের প্রাণীর ছবিযুক্ত ঘরে যাওয়া ও বসাটাও মাকরূহ্ তাহ্রীমী বা নিষিদ্ধ।” “ফতওয়ায়ে শামী’ কিতাবের ১ম খণ্ডের ৬৪৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
تكره كراهة جعل الصورة فى البيت … فظاهره الامتناع من الدخول.
অর্থঃ- “প্রাণীর ছবি ঘরে রাখা মাকরূহ্ তাহ্রীমী।…অতঃপর ফতওয়াগ্রাহ্য মতে এধরণের ছবিযুক্ত ঘরে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ বা হারাম।” “হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৪৩ পৃষ্ঠার ১নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
ويكره اتخاذ الصور فى البيت كما يكره الدخول فيها والجلوس لان فيه ترويجا للحرام.
অর্থঃ- “প্রাণীর ছবি ঘরে রাখা বা তৈরী করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী তথা নিষিদ্ধ। অনুরূপভাবে যে ঘরে প্রাণীর ছবি মওজুদ থাকে সে ঘরে প্রবেশ করা এবং বসাও মাকরূহ্ তাহ্রীমী তথা নিষিদ্ধ। কেননা প্রাণীর ছবি ঘরে মওজুদ রাখা এবং উক্ত প্রাণীর ছবিযুক্ত ঘরে প্রবেশ করা এবং বসা হারামের প্রচলনকারী হিসেবে প্রমাণিত হয়।” উপরোক্ত দলীল আদিল্লাহ্র মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হলো যে, “মানুষ বা জীব- জন্তু ইত্যাদি প্রাণীর ছবি ঘরে মওজুদ রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বা হারাম।” আরোও প্রমাণিত হলো যে, “যে ঘরে মানুষ বা জীব- জন্তু ইত্যাদি প্রাণীর ছবি মওজুদ থাকে, সে ঘরে প্রবেশ করা, বসা এবং পরিদর্শন করাটাও মাকরূহ্ তাহ্রীমী তথা নিষিদ্ধ বা হারাম।” সুতরাং যে ঘরে মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি মজুদ রাখাই হারাম, সেই ছবিযুক্ত ঘরে নামায শুদ্ধ হয় কি করে? অতএব, আবারো প্রমাণিত হলো, মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি ঘরে মওজুদ থাকলে,সেই ঘরে নামায পড়া শুদ্ধ হবে না। এটাই ফতওয়াগ্রাহ্য মত। (চলবে) মুহম্মদ মুহিউদ্দীন সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত সন্দ্বীপ শাখা, চট্টগ্রাম।
সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানী মাযহাবের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর- জানুয়ারী/২০০৩-০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে ‘‘বিত্রের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম এবং বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব পাবে বলে উল্লেখ করেছে।’’ তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ্, নাসায়ী থেকে দলীল হিসেবে কয়েকখানা হাদীছ শরীফও উল্লেখ করেছে।
আর হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ডিসেম্বর/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, ‘‘বিতির নামাযের পর দুই রাক্আত নফল নামায… দাঁড়িয়ে পড়া ভাল। কারণ, নফল নামায বিনা কারণে বসে পড়লে অর্ধেক সাওয়াব হয়।”
এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা হালকী নফল নামায সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে হাদীছ শরীফগুলো উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য। তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডনসহ হালকী নফল সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায যাকে “হালক্বী নফল” বলা হয়, তা দাঁড়িয়ে পড়া সম্পর্কে অখ্যাত মাসিক পত্রিকাদ্বয়ের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ হয়েছে। এবং ক্ষেত্রবিশেষে কুফরীমূলক হয়েছে।
কেননা সাধারণতঃ নফল নামায বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব হলেও বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়াই মুস্তাহাব-সুন্নত, যা উত্তম ও পূর্ণ ছওয়াব এবং অধিক ফযীলতের কারণ। কেননা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল এবং অন্যান্য নফলের ক্ষেত্রে একই হুকুম নয়। বরং বিত্র নামাযের পর দুই রাকায়াত নফলের হুকুম অন্যান্য নফল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অর্থাৎ অন্যান্য নফল দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব, বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব। আর হালক্বী নফল অর্থাৎ বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব, আর বসে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব। কারণ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায কখনও দাঁড়িয়ে আদায় করেননি। বরং বসেই আদায় করেছেন। যা সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। (ধারাবাহিক) উল্লেখ্য,রেযাখানীরা ‘বুখারী, মুসলিম,ইবনে মাজাহ ও নাসায়ী শরীফ’ ইত্যাদি কিতাব থেকে দলীল হিসেবে যে কয়েকখানা হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছে আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। কারণ তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে ইবারত কারচুপি করে “বুখারী, ইবনে মাজাহ, মিনহাজ, মিরকাত, মুসলিম ও নাসায়ী শরীফ ইত্যাদি কিতাব” -এর বরাত দিয়ে যেটা বলতে চেয়েছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। আমরা পর্যায়ক্রমে সেটা তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ্। নিম্নে মুসলিম ও নাসাঈ শরীফ কিতাবের বক্তব্য পর্যালোচনা করা হলো- উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম বলে, মুসলিম ও নাসায়ী শরীফ কিতাবের বরাত দিয়ে যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে, নিম্নে তা হুবহু উল্লেখ করা হলো। যেমন রেযাখানীদের হুবহু ইবারত খানা হচ্ছে – যেমন সহীহ মুসলিম ও নাসাঈ শরীফে উল্লেখ আছে যে,
عن عبد الله ابن عمرو قال رأيت النبى صلى الله عليه وسلم يصلى جالسا فقلت حدثت انك قلت ان صلوة القاعد على النصف عن صلوة القائم وانت تصلى قاعدا قال اجل ولكنى لست كاحد منكم (نسائى ج১، ص ১৮৮)
অর্থাৎ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু আন্হু হতে বর্ণিত। তিনি ইরশাদ করেন, আমি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’কে বসে নামায পড়তে দেখলাম। তখন আমি আরজ করলাম, ‘ (ইয়া রসূলাল্লাহ্) আপনি হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, বসে নামায আদায়কারীর সাওয়াব দাঁড়িয়ে নামায আদায়কারীর চেয়ে অর্ধেক। অথচ আপনি বসে নামায পড়েছেন? তখন হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করলেন, হ্যাঁ, (আমি তা’ বলেছি) তবে আমি তোমাদের কারো মত নই।- (নাসাঈ, ১ম/১৮৮; সহীহ মুসলিম) এর জবাবে বলতে হয় যে,“রেযাখানীরা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম বলে মুসলিম ও নাসাঈ শরীফ কিতাবের বরাত দিয়ে যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে, সেই ইবারতের মধ্যে যেহেতু بعد الوتر ركعتين (বা’দাল বিত্রি রাকয়াতাইনি) অর্থাৎ বিতরের পর দু’রাকায়াত (নফল) নামায যাকে হালকী নফল বলা হয় তার উল্লেখ নেই, সেহেতু মুসলিম ও নাসাঈ শরীফের সেই ইবারতের দ্বারা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামাযের প্রশ্ন আসে কি করে?
মুলতঃ উল্লিখিত হাদীছ শরীফে বিতরের পর দু’রাকায়াত নফল ব্যতীত অন্য সকল নফল নামাযের কথা বলা হয়েছে। বিতরের পর দু’রাকায়ত নফলের কথা বলা হয়নি। আর আমরা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাতের মধ্যে হাদীছ শরীফের সুস্পষ্ট ইবারতের দ্বারা প্রমাণ করে দিয়েছি যে, বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করা সুন্নত ও পূর্ণ ছওয়াব। কারণ হাদীছ শরীফের ইবারতের মধ্যে
يصلى بعد الوتر ركعتين خفيفتين وهو جالس.
বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করার বর্র্ণনা সুস্পষ্টভাবে হুবহু উল্লেখ আছে। সুতরাং পাঠকের সুবিধার্থে বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করা সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ খানা আবারো হুবহু তুলে ধরা হলো। যেমন, “ইবনে মাজাহ্্্্্্্ শরীফের” ৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
حدثنا محمد بن بشار حدثنا حماد بن مسعدة حدثنا ميمون بن موسى المرئى عن الحسن عن امه عن ام سلمة رضى الله عنها ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يصلى بعد الوتر ركعتين خفيفتين وهو جالس.
অর্থঃ- “ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মুহম্মদ ইবনে বাশ্শার রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত হাম্মাদ ইবনে মাসয়াদা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মায়মূনা ইবনে মূসা আল-মারায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি তাঁর মা থেকে বর্ণনা করেন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে যে, আখিরী রসুল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
يصلى بعد الوتر ركعتين خفيفتين وهو جالس.
বিত্র নামাযের পর সংক্ষিপ্তাকারে দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করতেন।” রেযাখানীদের কারচুপিমূলক বক্তব্য উদঘাটন ও খণ্ডন দ্বিতীয়তঃ রেযাখানীরা ‘মুসলিম ও নাসাঈ শরীফের’ বরাত দিয়ে যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে, উক্ত ইবারতেও তারা সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। কারণ রেযাখানীরা মুসলিম ও নাসাঈ শরীফ কিতাবের নাম দিয়ে যে সমস্ত ইবারত গুলো পাশাপাশি উল্লেখ করেছে, অথচ মুসলিম শরীফে সেভাবে হুবহু উক্ত সমস্ত ইবারত গুলো উল্লেখ নেই। তৃতীয়তঃ রেযাখানীরা ‘মুসলিম ও নাসাঈ শরীফের’ বরাত দিয়ে ইবারত লিখেছে عن صلوة القائم অথচ নাসাঈ শরীফে উল্লেখ আছে, من صلوة القائم. আর মুসলিম শরীফে এ ধরনের কোন ইবারতেই উল্লেখ নেই। চতুর্থতঃ রেযাখানীরা নাসাঈ শরীফ কিতাবের ইবারত উল্লেখ করে নাসাঈ শরীফের সঙ্গে মুসলিম শরীফের কথা চালিয়ে দিয়ে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে চরম জালিয়াতী করেছে। পঞ্চমতঃ রেযাখানীরা মুসলিম শরীফ নয়, নাসাঈ শরীফ থেকে যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে, উক্ত ইবারতের মধ্যে بعد الوتر ركعتين. (বা’দাল বিত্রি রাকয়াতাইনি) অর্থাৎ বিতরের পর দু’রাকায়াত (নফল) নামায যাকে হালকী নফল বলা হয় তার উল্লেখ নেই। ষষ্ঠতঃরেযাখানীরা নাসাঈ শরীফ কিতাবের ইবারত উল্লেখ করে নাসাঈ শরীফের সঙ্গে মুসলিম শরীফের কথা চালিয়ে দিয়ে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে চরম জালিয়াতী করেছে। অথচ মুসলিম শরীফ কিতাবেই বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করার বর্র্ণনা সুস্পষ্টভাবে হুবহু উল্লেখ আছে। যেমন, “মুসলিমঞ্জশরীফের” ১ম খণ্ডের ২৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن ابى سلمة قال سألت عائشة رضى الله عنها عن صلوة رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالت كان يصلى ثلث عشرة ركعة يصلى ثمان ركعات ثم يوتر ثم يصلى ركعتين وهو جالس فاذا اراد ان يركع قام فركع.
অর্থঃ- “ হযরত আবূ সালামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি হযরত আয়শা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর (রাতের) নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম: তিনি বলেন, আখিরী রসুল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (রাতে) তের রাকায়াত নামায আদায় করতেন। আট রাকায়াত (তাহাজ্জুদ) পড়ে তিন রাকায়াত বিত্র পড়তেন। অতঃপর বসে বসে দু’রাকায়াত (নফল) নামায পড়তেন।” অতঃপর যখন রুকু করতে ইচ্ছা করলেন, তিনি দাঁড়ালেন অতঃপর রুকু করলেন।” সপ্তমতঃ রেযাখানীরা ‘নাসাঈ শরীফ’ কিতাবের বরাত দিয়েছে, অথচ নাসাঈ শরীফ কিতাবেও উল্লেখ আছে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামায আদায়ের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করেছেন।” যেমন ‘‘নাসাঈ শরীফের’’ ১ম খণ্ডের ২৫০ পৃষ্ঠার ৫নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
وفى مسند الامام احمد عن ام سلمة رضى الله عنها قالت كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلى بعد الوتر ركعتين خفيفتين وهو جالس.
অর্থঃ- “মুসনাদুল ইমাম আহমদ্ ইবনে হাম্বল’’ কিতাবে উল্লেখ আছে, উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ্ পাক-এর রসুল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামাযের পর সংক্ষিপ্তাকারে দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করতেন।” ‘‘নাসাঈ শরীফের’’ ১ম খণ্ডের ২৫০ পৃষ্ঠার ৫নং হাশিয়ায় আরো উল্লেখ আছে,
وعن ابى مامة الباهلى رضى الله عنه كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلى ركعتين بعد الوتر وهو جالس يقرأ فيهما باذا زلزلت الارض، وقل يايها الكافرون.
অর্থঃ- “হযরত আবু উমামা আল-বাহিলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামায আদায়ের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করেছেন। আর উক্ত দু’রাকায়াত নামাযে اذا زلزلت الارض. এবং قل يايها الكافرون অর্থাৎ- সুরা যিলযাল এবং সুরা কাফিরুন পাঠ করতেন।” আর “মুসনাদুল ইমাম আহমদ্ ইবনে হাম্বল” কিতাবের ৫ম খণ্ডের ২৬০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
حدثنا عبد الله حدثنى أبى حدثنا عبد الصمد حدثنى ابى حدثنا عبد العزيز يعنى ابن صهيب عن ابى غالب عن ابى امامة رضى الله عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يصليهما بعد الوتر وهو جالس يقرأ فيهما اذا زلزلت الارض، وقل يايها الكافرون.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন আমার পিতা। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুছ ছমাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন আমার পিতা। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি,অর্থাৎ ইবনে ছুহাইব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবূ গালিব রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন, হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয় নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামায আদায়ের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করেছেন। আর উক্ত দু’ রাকায়াত নামাযে اذا زلزلت الارض এবং قل يايها الكافرون অর্থাৎ সুরা যিলযাল এবং সুরা কাফিরুন পাঠ করতেন।” ‘‘মুসনাদুল ইমাম আহমদ্ ইবনে হাম্বল’’ কিতাবের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ২৯৮-২৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
حدثنا عبد الله حدثنى أبى حدثنا حماد بن مسعدة حدثنا ميمون بن موسى المرائى عن الحسن عن أمه عن أم سلمة رضى الله عنها ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يركع ركعتين بعد الوثر وهو جالس.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, আব্দুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন আমার পিতা। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হাম্মাদ ইবনে মাসয়াদা রহমতুল্লাহি আলাইহিমা। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন মায়মূনা ইবনে মূসা আল-মারায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি তাঁর মা থেকে বর্ণনা করেন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে, নিশ্চয় নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করতেন।” অতএব, রেযাখানীরা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম বলে মুসলিম ও নাসাঈ শরীফের বরাত দিয়ে সাধারণ মানুষকে চরমভাবে ধোকা দিয়েছে। অথচ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
من غشى فليس منا.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি ধোকা দেয়, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” সুতরাং চিন্তার বিষয়, তাদের ফতওয়া কতটুকু গ্রহণযোগ্য। (চলবে) মুহম্মদ লুতফর রহমান, মুন্সীগঞ্জ মুছাম্মত রতনা বেগম শরীফসুন্দর, পীরগাছা, রংপুর
সুওয়ালঃ জনৈক মুসলমান ব্যক্তি এক হিন্দু পীরের অনুসারী। ঐ ব্যক্তির পীর প্রায় ত্রিশ-পয়ঁত্রিশ বছর পূর্বে মারা যায়। ঐ ব্যক্তি এখনও বিবাহ করেনি। তাকে বিবাহ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে সে বলে থাকে, তার পীরের ইজাযত পায়নি তাই সে বিবাহ করবে না। ঐ ব্যক্তি নিজেকেও পীর/দয়াল বলে দাবী করে থাকে। তার মধ্যে সুন্নতের কোন পাবন্দি নেই। তার দাড়ি নেই। সে কোর্তা পরিধান করেনা। কিন্তু মাঝে মধ্যে টুপি পরিধান করে থাকে। সে ঠিক মত নামায, রোযা আদায় করে না। পর্দা নেই। তার ভক্তদের মধ্যে নারী-পুরুষ আছে। সে টেলিভিশন দেখে থাকে, তার পীরের ছবিকে সামনে রেখে নামায আদায় করে থাকে। সে নিজে ও তার ভক্তরা ছবিকে সামনে রেখে ধ্যান-মগ্ন হয়। ঐ ব্যক্তি তার ভক্তদের নিয়ে বাৎসরিক একটা অনুষ্ঠান করে থাকে। উল্লিখিত সুওয়ালের বিবরণে যে সকল প্রশ্নের উদয় হয় তা হলো- (১) হিন্দু পীরের অনুসরণ করা।(২) হিন্দু পীরের ইজাযত না পাওয়ার কারণে বিবাহ হতে বিরত থাকা। (৩) নিজেকে পীর বা দয়াল বলে দাবী করা। (৪) সুন্নতের পাবন্দি না করা। (৫) নামায-রোযা আদায় না করা। (৬) পর্দা না করা। (৭) টিভি দেখা ও ছবিকে সামনে রেখে ধ্যানমগ্ন হওয়া। এখন আমার সুওয়াল হচ্ছে- উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে শরীয়তের ফায়সালা কি? এবং তার থেকে মসজিদের জন্য জমি নেয়া জায়িয হবে কিনা? মৃত্যুর পর তার জানাযায় শরীক হওয়া যাবে কিনা? তার সঙ্গে সামাজিক কোন কাজে উঠা-বসা করা যাবে কিনা? তার কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা যাবে কিনা? কুরআন-সুন্নাহ্র দলীলসহ জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,
لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة.
অর্থঃ- “অবশ্যই তোমাদের জন্য আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আহযাব/২১) অর্থাৎ মুসলমানকে মাথার তালু থেকে পায়ের তলা; হায়াত থেকে মউত পর্যন্ত আক্বাইদ-ইবাদত, মুয়ামালাত-মুয়াশারাত ইত্যাদি প্রতিক্ষেত্রেই একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে।
কাজেই কোন মুসলমানের জন্য কোন বিধর্মীকে অনুসরণ ও অনুকরণ করা, তার কথা-কাজের উপর ইস্তিকামত থাকা, তাকে অনুসরণ করে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নির্দেশের খিলাফ চলা, ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত তরক করা, হারাম-নাজায়িয আমল করা, বেপর্দা হওয়া, ছবি তোলা, টিভি দেখা ইত্যাদি সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত
(ধারাবাহিক)
মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১২৪ থেকে ১৩০তম সংখ্যায় সুওয়ালে উল্লিখিত প্রত্যেকটি প্রশ্নেরই জাওয়াব কুরআন ও সুন্নাহ্র দলীল-আদিল্লাহ্র ভিত্তিতে ধারাবাহিকভাবে প্রদান করা হয়েছে। উক্ত দলীল-আদিল্লাহ্ ভিত্তিক ধারাবাহিক জাওয়াবের মধ্যে প্রশ্নোল্লিখিত ব্যক্তি সম্পর্কে শরীয়তের ফায়সালাও বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ কেউ যদি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের যে আক্বীদা রয়েছে সে আক্বীদা মুতাবিক আক্বীদা পোষণ করে বা বিশুদ্ধ রেখে কোন বিধর্মীকে শুধুমাত্র অনুসরণ করে থাকে, বিবাহ্ হতে বিরত থাকে, নিজেকে পীর বা দয়াল বলে দাবী করে থাকে, সুন্নতের পাবন্দি না করে থাকে, নামায-রোযা আদায় না করে থাকে, পর্দা না করে থাকে, টি.ভি দেখে থাকে এবং ছবিকে সামনে রেখে ধ্যানমগ্ন হয়ে থাকে তাহলে সে চরম ফাসিক ও গোমরাহ্র অন্তর্ভুক্ত। আর যদি কেউ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের খিলাফ কোন আক্বীদা পোষণ করে তাহলে সে কাফির ও মুরতাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। স্মরণীয় যে, বিধর্মীদের কোন আক্বীদা গ্রহণ করা, শরীয়তের কোন ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নতকে ইন্কার বা ইহানত করা, কোন হারামকে হালাল কিংবা কোন হারামকে হালাল জানা ও মানা ইত্যাদি কুরআন-সুন্নাহ্ তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের খিলাফ ও কুফরী আক্বীদার অন্তর্ভুক্ত। শরীয়তে ফাসিক ব্যক্তির নিকট থেকে মসজিদ হোক, মাদ্রাসা হোক তাতে দান গ্রহণ করা জায়িয রয়েছে তবে শর্ত হচ্ছে, উক্ত দান হালাল হতে হবে। ফাসিক ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার জানাযায় শরীক হওয়া যাবে। তার সাথে সামাজিক কাজে-কর্মে উঠা-বসা করা যাবে কিন্তু তাকে সম্মান করা যাবে না। তার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা যাবে যদি সে অনুষ্ঠান শরীয়ত সম্মতভাবে করা হয়। আর কোন ব্যক্তি যদি কুফরী আক্বীদা ও আমলের কারণে কাফির ও মুরতাদে পরিণত হয় তাহলে তার থেকে মসজিদ, মাদ্রাসা ইত্যাদি কোন দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে দান-ছদকা গ্রহণ করা, তার মৃত্যুর পর জানাযায় শরীক হওয়া, তার সাথে সামাজিক কাজে-কর্মে উঠা-বসা করা, তার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা ইত্যাদি কোনটিই জায়িয নেই। {দলীলসমূহ ঃ (১) বাহরুর রায়িক, (২) আলমগীরী, (৩) ক্বাযীখান, (৪) হাশিয়ায়ে তাহতাবী, (৫) আইনুল হিদায়া, (৬) বায্যাযিয়া, (৭) তাতারখানিয়া, (৮) গায়াতুল আওতার, (৯) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, (১০) দুররুল মুখতার, (১১) রদ্দুল মুহতার, (১২) আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, (১৩) জাওহারাতুন্ নাইয়ারাহ, (১৪) আক্বাঈদে নছফী, (১৫) শরহে আক্বাঈদে নছফী, (১৬) ফিক্বহুল আকবর, (১৭) আক্বীদাতু তহাবী, (১৮) তাকমীলুল ঈমান, (১৯) আক্বাঈদে হাক্কাহ ইত্যাদি} সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত, মালিবাগ, ঢাকা খন্দকার মুহম্মদ আব্দুল হান্নান কর পরিদর্শন পরিদপ্তর, ঢাকা। মুহম্মদ শফির্উ রহমান নীপু
সভাপতি- ছাত্র আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ঢাকা।
সুওয়ালঃ সম্প্রতি মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ্, আওলাদে রসূল রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী সম্পর্কে মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা করে মুনাফিক গোষ্ঠী ঠিকানাবিহীন ভুয়া নামে যে লিফলেট বের করেছে সে লিফলেটের দাঁতভাঙ্গা জবাব ও প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ ঘোষণা পূর্বক যে লিফলেটখানা প্রকাশ করা হয়েছে তা বহুল পঠিত যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফেও প্রকাশ করার জন্য অনুরোধ করছি। আশাকরি এর দ্বারা মানুষ রাজারবাগ শরীফ-এর সত্যতা আর মুনাফিক গোষ্ঠীর মিথ্যাচারিতার প্রমাণ অবগত হতে পারবে। জাওয়াবঃ আপনাদের আবেদন ও অনুরোধের প্রেক্ষিতে উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত কর্তৃক প্রচারিত লিফলেটখানা হুবহু পেশ করা হলো- রাজারবাগ শরীফের সত্যতা ও মুনাফিক গোষ্ঠীর মিথ্যাচারিতার প্রমাণ অবৈধ সন্তানতুল্য মুনাফিক গোষ্ঠীর অবৈধ লিফলেটের মিথ্যা প্রপাগাণ্ডার দাঁতভাঙ্গা জবাব ও প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “আমি পাপী বা দুষ্ট প্রকৃতির লোকদেরকে প্রত্যেক নবী-রসূলের শক্র বানিয়েছি।” এ আয়াত শরীফ থেকে দু’টি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, (১) প্রত্যেক হাদীরই বিরোধিতাকারী ছিল এবং থাকবে। (২) হাদীগণের বিরোধিতা যারা করবে তারা অবশ্যই পাপী ও দুষ্ট প্রকৃতির লোক। মূলতঃ এ শ্রেণীর লোকগুলোই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরোধিতা করেছিল, শুধু যে বিরোধিতা করেছিল তাই নয়, সাথে সাথে বহু মিথ্যা তোহমতও দিয়েছিল। যেমন তারা বলেছিল- তিনি যাদুকর, জ্বিনে ধরা রোগী, নির্বংশ ইত্যাদি। (নাঊযুবিল্লাহ) এখানেই তারা থেমে যায়নি শেষ পর্যন্ত তারা তাঁর পবিত্রা আহলিয়া উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর প্রতিও মিথ্যা তোহমত দেয়। যা ইফ্কের ঘটনা হিসেবে মশহুর হয়ে আছে। মুনাফিকের দল মিথ্যা তোহমত দিয়েছে হযরত ছাহাবা-ই-কিরামগণের প্রতিও। হযরত ছাহাবা-ই-কিরামগণ নাকি স্বজনপ্রীতি করেছেন, খিলাফত ধ্বংস করে রাজতন্ত্র কায়িম করেছেন। (নাঊযুবিল্লাহ)। তারা মিথ্যা তোহমত দিয়েছে- ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি, গাউছুল আ’যম হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, সুলতানুল হিন্দ হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, আফজালুল আউলিয়া হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ পৃথিবীর সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরামগণের প্রতিও।
তারই ধারাবাহিকতায় নব্য মুনাফিক গোষ্ঠী ও দাজ্জালে কাজ্জাব গং বর্তমান যামানার মুজাদ্দিদ রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর প্রতি বিভিন্ন মাসিক, সাপ্তাহিক, এমনকি জাতীয় দৈনিকে বহুদিন যাবৎ এরা নানা মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা করে আসছে। সঙ্গতকারণেই পত্র-পত্রিকায় উক্ত প্রপাগান্ডার প্রতিবাদও প্রত্রস্থ হয়। তবে ইফ্কের ঘটনা যেরূপ হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর সত্যতা ও পবিত্রতাকে আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত করেছে। তদ্রুপ নব্য মুনাফিক গোষ্ঠীর মিথ্যা বক্তব্যগুলোও রাজারবাগ শরীফের সত্যতা আরো জোড়ালোভাবে মানুষের কাছে প্রমাণ করার সুযোগ করে দিয়েছে। সম্প্রতি এরা ঠিকানাবিহীন ভুয়া নামে একটি নতুন লিফলেট বের করেছে। নিম্নে তার জবাব দেয়া হলো- অবৈধ সন্তানতুল্য মুনাফিক গোষ্ঠীর অবৈধ লিফলেট-এর দফাওয়ারী দাঁতভাঙ্গা জবাব হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “কোন ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে, যাচাই-বাছাই না করে তাই বলে বেড়ায়।” মূলতঃ ‘আমরা ঢাকাবাসী’ নামের সংগঠনটি কোন মুনাফিক মহলের মিথ্যা দ্বারা প্ররোচিত হয়ে এই অবৈধ লিফলেট প্রকাশ করেছে। কিন্তু তাদের এই লিফলেট যে সম্পূর্ণই মিথ্যায় ভরপুর তা তারা নিজেরাও জানে। যে কারণে তাদের লিফলেটে তথাকথিত বেলায়েত হোসেন … নাম দেয়া হলেও তার ঠিকানা উল্লেখ করার সাহস তারা পায়নি। উল্লেখ্য, অবৈধ সন্তানের কোন পরিচয় বা ঠিকানা থাকেনা। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। অর্থাৎ তারাই প্রমাণ করে দিল যে, তারা অবৈধ সন্তানতুল্য। সুতরাং লোক সমাজে পরিচয় বা ঠিকানাবিহীন অবৈধ সন্তানতুল্য মুনাফিক গোষ্ঠীর অবৈধ লিফলেটের কিইবা গুরুত্ব থাকতে পারে?
১.০০ সুদঃ সুদ প্রসঙ্গে মুনাফিকরা যে বক্তব্য দিয়েছে তা ডাহা মিথ্যা। তৎপ্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, পৃথিবীর যমীনে কোন মা এমন কোন সন্তান প্রসব করেনি, যে সন্তান প্রমাণ করতে পারবে যে, রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী সুদভিত্তিক বা অন্য কোন প্রক্রিয়ায় লোন নিয়েছেন। তাঁর নামে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কোন লোন নেই। কাজেই মিথ্যাবাদী মুনাফিক গোষ্ঠীর প্রতি চ্যালেঞ্জ রইল, তারা প্রমাণ করুক যে, রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী কোন সুদী প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ বা লোন নিয়েছেন। এটি প্রমাণ করতে পারলে তাদের পুরস্কৃত করা হবে। প্রকৃতপক্ষে মুনাফিকরাই সুদী লোনের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত। ২.০০ ক্বায়িম-মক্বামঃ ক্বায়িম-মক্বাম সম্পর্কে মুনাফিকদের বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল। কারণ হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর জন্য যে স্বর্ণালঙ্কার, লাল কাপড় ও রেশমী কাপড় নিষেধ ছিল, তা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ৬৩ বৎসর বয়স মুবারক পর্যন্ত নয়। বরং তাঁর ৬৩ বৎসর বয়স মুবারক পর্যন্ত হযরত খাদিজাতুল কুবরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ও হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ভারী স্বর্ণালঙ্কার পড়তেন। মশহুর ইফকের ঘটনা; হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর পরিহিত গলার হারকে কেন্দ্র করে ঘটেছিল। আর প্রকৃতপক্ষে সাইয়্যিদাতুন্ নিসা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহাল আলীয়া উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর ক্বায়িম-মক্বাম। মূলতঃ ভুল ও মনগড়া মাসয়ালা বর্ণনা করা জাহিল মুনাফিকদের দায়িমী স্বভাব। ৩.০০ স্বর্ণের ব্যবসাঃ স্বর্ণের ব্যবসা সম্পর্কেও জাহিল মুনাফিকদের বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল ও মিথ্যা। কারণ ব্যবসা হিসেবে স্বর্ণের ব্যবসা হারাম নয়, বরং সম্পূর্ণ হালাল। কোন স্বর্ণের ব্যবসায়ী মুরীদ যদি পীর ছাহেবকে বরকতের জন্য শেয়ার দেয় তবে সেটাও দোষের নয়। যে কোন হালাল ব্যবসাই হারাম হয়ে যায় তখন, যখন উক্ত ব্যবসায় অসদুপায় অবলম্বন করা হয়। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী সব সময়ই বলেন, কেউ যদি তাঁকে হাদিয়া দিতে চায় তা যেন অবশ্যই হালাল থেকে দেয়। যারা হারাম ও অবৈধ ব্যবসায় জড়িত তারা হালাল ব্যবসা বুঝবে না।
৪.০০ পীর ছাহেবের প্রতি আচরণঃ অবৈধ লিফলেটে পীর ছাহেবের প্রতি তাঁর আচরণ সম্পর্কেও মুনাফিকরা মিথ্যা উদগীরণ করেছে। মূলতঃ যাত্রাবাড়ীর পীর ছাহেব ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় জীবদ্দশায় সব সময়ই রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর প্রশংসায় উচ্চকিত কক্ত ছিলেন। তিনি ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন যে, রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ওসীলায়ই তাঁর সিলসিলা জিন্দা থাকবে। আজ বাস্তবে তাই প্রমাণিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, যাত্রাবাড়ীর পীর ছাহেব ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সাথে এখনও রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর প্রগাঢ় রূহানী সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে, যা একমাত্র কাশ্ফধারী ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির পক্ষে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী যাত্রাবাড়ীর পীর ছাহেব ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর জানাযায় যাননি। স্মরণীয় যে, যাত্রাবাড়ীর পীর ছাহেব ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহিও তাঁর পীর ছাহেব ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর জানাযায় যাননি। এর দ্বারা তিনি পীর ছাহেব ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর একখানা সুন্নত আদায় করেছেন। যাদের রূহানিয়ত নেই, ক্বলবে যিকির জারী নেই- তারা এর মর্ম বুঝবে কি করে? ৫.০০ দেয়াল লিখনঃ আল বাইয়্যিনাতের নামে যে দেয়াল লিখন হয় তা অনুমতি গ্রহণ সাপেক্ষেই হয়। ৬.০০ সি.এন.জিঃ সি.এন.জি সম্পর্কেও জাহিল মুনাফিকদের বক্তব্য কাট্টা মিথ্যা। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন মানেই হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর সাথে সংশ্লিষ্টতা নয়। ‘বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা গ্রহণের যে কথা বলা হয়েছে’ তাও সম্পূর্ণ মিথ্যা। যদি তারা সত্যবাদী হয় তাহলে তাদের নাম/ঠিকানা ও স্বাক্ষরসহ ব্যক্তিগত অভিযোগ প্রকাশ করুক। পরের অর্থ আত্মসাৎকারী মুনাফিক ও মিথ্যাবাদীরা কখনই তা প্রমাণ করতে সক্ষম হবেনা ইনশাআল্লাহ্। ৭.০০ গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, মসজিদের স্থানে মার্কেটঃ মুনাফিকদের এ সম্পর্কিত বক্তব্যও ডাহা মিথ্যা। কারণ যে জায়গাটি ওয়াক্ফ করা হয়েছিল তা শুধু মসজিদের জন্যই নয় বরং তা মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, ঈদগাহ, জানাযা ইত্যাদি দ্বীনি কাজের জন্য ওয়াক্ফ করা হয়েছিল। তখন সেখানে বাড়ী ছিল, আর বর্তমানে মাদ্রাসা রয়েছে। অতিসত্ত্বর সেখানে স্থায়ীভাবে মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, ঈদগাহ ইত্যাদি স্থাপন করা হবে ইনশাআল্লাহ্। কাজেই ওয়াক্ফকৃত জায়গায় মার্কেট তৈরীর প্রশ্নই উঠেনা। উল্লেখ্য, মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা ইত্যাদির জন্য আনিত গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ তৎসংশ্লিষ্ট কাজের জন্যই ব্যবহৃত হচ্ছে। বাসস্থানের জন্য আদৌ নয়। আর ঘুষ দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। প্রকৃতপক্ষে মুনাফিকরাই গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ বিল চুরি করে থাকে এবং ঘুষ দিয়ে থাকে।
৮.০০ মাদ্রাসার এতিম ছাত্রঃ অবৈধ লিফলেটের এ বক্তব্যও সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক ও কাট্টা মিথ্যা প্রচারণা। প্রকৃত সত্য এই যে, মাদ্রাসায় এক তৃতীয়াংশ ছাত্রও ফুল বেতন দিতে পারে না। বরং মোট ছাত্রের বেতনে মাদ্রাসার দৈনন্দিন বাজারের টাকাও উঠেনা। অথচ এই মাদ্রাসায় বৎসর ব্যাপী নিয়মিত রুটিন অনুযায়ী সপ্তাহে প্রায় দু’-তিন দিন পোলাও-গোশ্ত, বড় মাছ, খিচুড়ি ইত্যাদি খাওয়ানো হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর ভর্তুকী দিয়ে থাকেন হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী। মুনাফিকরা এত বড় জাহিল যে, তারা এটাও জানেনা যে, মাদ্রাসায় শুধু এতিমরাই থাকেনা বরং গরীব-মিসকীন ছাত্রও রয়েছে তার সাথে মাদ্রাসার আনুসঙ্গিক বহুবিধ খরচও রয়েছে। সুতরাং যারা হারামখোর তারা এটা বুঝবে না। ৯.০০ বিলাসিতাঃ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আমলের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। যেমন, হাদীছ শরীফে প্রাণীর ছবি অঙ্কন নিষিদ্ধ, যার আধুনিক ছূরত ক্যামেরার ছবি যা অঙ্কনের মতোই হারাম। তদ্রুপ বাতাস খাওয়া সুন্নত, যার আধুনিক ছূরত হলো ইলেকট্রিক ফ্যান। এর আরো আধুনিক ছূরত হলো এসি। একইভাবে ঠাণ্ডা পানি পান করা সুন্নত, যার আধুনিক ছূরত ফ্রিজে রাখা ঠাণ্ডা পানি পান করা। বাতি জ্বালানো সুন্নত, আধুনিক ছূরত হলো ইলেকট্রিক লাইট। বর্তমানে দরস্-তাদরীস, তা’লীম-তালক্বীনের জন্য লাইট ব্যবহার ফরযের অন্তর্ভুক্ত। সুন্নত ও ফরয সুষ্ঠুভাবে আদায়ের জন্য জেনারেটরও সুন্নত ও ফরযের অন্তর্ভুক্ত। আর সময়ের আবর্তনে ঘড়ি ব্যবহার যেমন ফরয, তেমনি বাহন হিসেবে কেবল গাড়ী সুন্নতই নয় বরং পর্দা রক্ষার জন্য এখন গাড়ী ব্যবহার ফরয। বেপর্দা ও বেহায়ারা পর্দার মাসয়ালা বুঝবে না। এগুলো বিলাসিতা নয় বরং পূর্ণাঙ্গভাবে শরীয়ত পালনের জন্য অতিপ্রয়োজনীয়। আর নিত্যব্যবহার্য ও অতিপ্রয়োজনীয় মাল-সামানাসহ সফর করা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। যারা ফকির-মিসকীন, ভিক্ষা করে খায় তারা এটা বুঝবে না। প্রকৃতপক্ষে মুনাফিকদের বাহ্যিক লেবাসটিই তাদের মুখোশ। ১০.০০ ব্রডওয়েঃ অবৈধ লিফলেটে প্রকাশিত ব্রডওয়ে সম্পর্কিত বক্তব্যও সম্পূর্ণ মিথ্যা। ব্রডওয়ের মালিক, চেয়ারম্যান ও এম.ডি বা কোন ডাইরেক্টর হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী নন। যদি তা না হয়ে থাকেন তবে ‘ব্রডওয়ে তাঁর মালিকানায়’ কি করে বলা যায়? ব্রডওয়ে চালুর সময় ছিল নেটওয়ার্ক ব্যবসার যুগ। সে প্রবাহে কয়েকজন মুরীদ একান্ত স্বচ্ছভাবে এ ব্যবসা চালু করেন। যাবতীয় সরকারী কাগজ-পত্র ঠিক করেই এ ব্যবসা শুরু হয় এবং তা এখনও চালু রয়েছে। উল্লেখ্য যে, থানায় জিডির দ্বারাই কোন বিষয়ে প্রতারণা প্রমাণিত হয়না। শত্রুতাবশতঃ থানায় সম্পাদিত জি.ডি দ্বারাই প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণিত হয় কি? ব্রডওয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে এখনও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে জানা যেতে পারে। মুনাফিকরাই প্রতারণার মাধ্যমে পরের অর্থ আত্মসাৎ করে। ১১.০০ মহিলা সফরঃ এখানে মাহ্রাম শব্দের ব্যাখ্যা অনুধাবন করা আবশ্যক। শরীয়তের উছূল হলো যে, মহিলারা যদি কোন বিশেষ মহিলার অধীন হয় এবং তাঁর যদি মাহরাম থাকে তবে সেক্ষেত্রে ঐ মাহরামই যথেষ্ট। যেমন, বালিকা ও মহিলা মাদ্রাসা। এক্ষেত্রে অধ্যক্ষার অধীনে সমস্ত বালিকা, মহিলা ছাত্রী ও উস্তাদরা অবস্থান করে থাকে। শুধুমাত্র মাহরাম হলেই শরীয়তে সফর জায়িয হবে তাও নয়। কারণ, মাহরামের স্বভাব-চরিত্র যদি ভাল না হয় তবে সে যত নিকটাত্মীয়ই হোক না কেন, সে কখনোই মাহরাম হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে না। রাজারবাগ শরীফের পক্ষ থেকে যে সব মেয়ে ও মহিলাগণ সফর করে থাকেন তারা সবাই মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ বালিকা ও মহিলা মাদ্রাসার মুহতারামা অধ্যক্ষা, সাইয়্যিদাতুন্ নিসা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহাল আলীয়া-এর জাহিরী ও বাতিনী ছাত্রী। কাজেই রাজারবাগ শরীফে যেমন তারা তাঁর অধীনে থাকেন, তেমনি সফরেও তারা তাঁরই অধীনে থাকেন। এছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মহিলাদের সরাসরি মাহরাম থাকে। আর ইতিহাস সাক্ষী যে, উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণের অধীনে এরূপ অনেক মহিলা সফর করতেন, যাদের কোন সরাসরি মাহরাম থাকতেন না। অতএব, মূর্খলোক সব সময়ই বিপদের কারণ। আর আশাদ্দুদ্ দরজার জাহিলরা শরীয়তের মাসয়ালা বুঝবে কি করে? ১২.০০ লক্ববঃ লক্বব ব্যবহার করা ভণ্ড পীরের আলামত নয় বরং তা স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক, আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরামগণ ব্যবহার করেছেন। কাজেই লক্বব ব্যবহার তাঁদের সুন্নত। তাহলে কি জাহিল মুনাফিকরা এটা বলবে যে, তাঁরাও ভণ্ড। (নাউযুবিল্লাহ) কাজেই লক্বব ব্যবহার করা ভণ্ডামী বলা কাট্টা কুফরী। বিদ্য়াতী, গোমরাহ ও মুনাফিকরা সুন্নতের ক্বদর বুঝবে না। ১৩.০০ সি.আই.এঃ এ সম্পর্কেও মুনাফিকদের বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। তালেবান, লাদেন, মোল্লা উমর, সাদ্দাম, আরাফাত যে মুনাফিক, সি.আই.এ’র এজেন্ট সে বিষয়ে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে বিস্তর দলীল-আদিল্লাহ দেয়া হয়েছে। তালেবানরা যে হেরোইন বিক্রি করে চলতো, লাদেন যে বুশ পরিবারের গৃহভৃত্য, সাদ্দাম যে সি.আই.এ’র সাথে সম্পর্কযুক্ত, সে ব্যাপারে শুধু মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ-ই নয়, অন্যান্য আন্তর্জাতিক, জাতীয় পত্র-পত্রিকায়ও অনেক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। “একজন সি.আই.এ’র এজেন্ট বলতে পারবে, আরেকজন এজেন্ট কিনা” এটা আশাদ্দুদ্ দরজার জাহিলদের অবান্তর কথা। আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক মুনাফিক ও জাহান্নামী লোকদের চিহ্নিত করার অর্থ কি মুনাফিকরা এটা বলবে যে, তিনি মুনাফিক ও জাহান্নামী। (নাউযুবিল্লাহ) আশ্চর্য হলেও সত্য, মুনাফিকরা এত বড় জাহিল যে, তারা এটাও জানে না, সি.আই.এ’র এক এজেন্ট অপর এজেন্টের নাম প্রকাশ করেনা। ১৪.০০ সমালোচনাঃ জাহিল মুনাফিকদের এ সম্পর্কিত বক্তব্যও ডাহা মিথ্যা। কারণ, মাসিক আল বাইয়্যিনাতে কোন হক্কানী-রব্বানী আলিমগণের সমালোচনা করা হয়না। যারা ইসলামের নামে ছবি তোলে, বেপর্দা হয়, লংমার্চ করে, হরতাল করে, ব্লাসফেমী আইন চায়, মৌলবাদ দাবী করে, কুশপুত্তলিকা দাহ করে, হারামকে হালাল করে তাদেরকে মশহুর উলামা বলা কাট্টা কুফরী। মূলতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাতে যাদের সমালোচনা করা হয় তারা ভণ্ড পীরের চেয়েও অধম। কারণ ভণ্ডরাতো ভণ্ড হিসেবে চিহ্নিতই আছে। আর এরা তা হয়নি বলেই এদের আসল ছূরতে চিহ্নিত করা হয়। আশাদ্দুদ দরজার জাহিল মুনাফিকদের এ মাসয়ালা না জানাটাই স্বাভাবিক যে, কার সমালোচনা করা শরীয়ত সমর্থিত। ১৫.০০ আয়ের উৎসঃ শরাফত বিবর্জিত লোকেরাই অন্যের আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলে। স্মর্তব্য যে, রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলীকে মূলতঃ আল্লাহ পাকই গায়িবী মদদে পরিচালিত করে থাকেন। এছাড়াও আল্লাহ পাক তাঁকে পারিবারিকসূত্রেই বিশেষ স্বচ্ছলতা দান করেছেন। এখানে উল্লেখ্য, রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলীকে পরিবারের তরফ থেকেই তাঁর প্রাপ্য জায়গা বুঝিয়ে না দেয়া পর্যন্ত তার এওয়াজে চতুর্থ তলা দেয়া হয়েছে। “সুতরাং বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ সংগ্রহের” যে কথা বলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণই মিথ্যা ও ধারণা প্রসূত। কমজাত ও বেঈমানরাই গাইরুল্লাহকে রিযিকদাতা মনে করে। মুনাফিকদের প্রতি প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, মুনাফিক গোষ্ঠী কর্তৃক প্রকাশিত অবৈধ নিফলেটের বক্তব্য সম্পূর্ণই ডাহা মিথ্যা, ভুল, মনগড়া, উদ্দেশ্য প্রণোদিত, কল্পনাপ্রসূত, জিহালতপূর্ণ ও দলীলবিহীন। মুনাফিক গোষ্ঠীর প্রতি চ্যালেঞ্জ রইল যদি তারা সত্যবাদী ও বৈধ সন্তান হয়ে থাকে তবে যেন প্রকাশ্য বাহাছে এসে তাদের অবৈধ লিফলেটের বৈধতা প্রমাণ করে।
উল্লেখ্য, রাজারবাগ শরীফ-এর বিরোধীদের প্রতি বহু পূর্ব থেকেই প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ দিয়ে আসা হচ্ছে। একইভাবে এই অবৈধ লিফলেট প্রকাশকারীদের প্রতিও প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ রইল। প্রচারে- উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত ৫, আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা-১২১৭, মোবাইলঃ ০১৭১-২৬৪৬৯৪, ০১৭২-০৫৭৬০৫, ০১৭১-২৩৮৪৪৭
মুহম্মদ সোহেলুর রহমান, রামপুরা, ঢাকা।
সুওয়ালঃ হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালামকে কাফিরের বাচ্চা বলা কি?
জাওয়াবঃ কাট্টা কুফরী। নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণকে সামান্য থেকে সামান্য পরিমাণ ইহানত করা কুফরী। {দলীলসমূহঃ তাফসীরে ইবনে কাছীর, কবীর, আকাঈদে নিজামিয়া, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১১৭, ১২৯তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ সাইফুল হাবীব, মহাস্থানগড়, বগুড়া।
সুওয়ালঃ মীলাদ শরীফ পড়া কি?
জাওয়াবঃ সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম। {দলীলসমূহঃ সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা, কিতাবুত্ তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান্ নাযীর, সীরাতে শামী, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ২৮, ৩৬, ৭০তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ হারিস বিন হক, রহনপুর, রাজশাহী।
সুওয়ালঃ তাছাউফ শিক্ষা করা কি?
জাওয়াবঃ ফরয। যে তাছাউফ শিক্ষা করে না সে চরম ফাসিক। অস্বীকার করা কুফরী। {দলীলসমূহঃ তাফসীরে রুহুল বয়ান, ফতহুর রব্বানী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৪৪ ও ৮০তম সংখ্যা।}
মুহম্মদুল্লাহ, শাহ্জাহানপুর, ঢাখা।
সুওয়ালঃ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিতা-মাতা ঈমানদার ছিলেন কিনা?
জাওয়াবঃ অবশ্যই ঈমানদার ছিলেন। তাঁদেরকে ঈমানদার হওয়ার ব্যাপারে যারা সন্দেহ পোষণ করবে তারা কাট্টা কাফির। উম্মতের ইজমা হচ্ছে, সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগনের পিতা-মাতাগণ সকলেই খালিছ কামিল ঈমানদার ছিলেন। কেউই কাফির কিংবা মুশরিক ছিলেন না। {দলীলসমূহঃ তাওয়ারিখে মুহম্মদী, ফতওয়ায়ে সিরাজম্ মুনীর, ফতওয়ায়ে মিফতাহুল জিনান, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৮২, ১২৯তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ শহীর্দু রহমান, সিলেট।
সুওয়ালঃ ক্রিকেট ও ফুটবল খেলা কি জায়িয?
জাওয়াবঃ না, জায়িয নয়। উভয় খেলাই হারামের অন্তর্ভুক্ত। জায়িয বললে কুফরী হবে। {দলীলসমূহঃ শরহে আকাঈদে নছফী, দুররুল মুখতার, ফতওয়ায়ে আমীনিয়া, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৪৫, ৭১, ৮৭, ১০২তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ শাহাবুদ্দীন সরকার, চিলমারী, কুড়িগ্রাম।
সুওয়ালঃ যে ইমাম ছাহেবরা বেগানা মহিলার সাথে উঠা-বসা করে তার ইমামতি শুদ্ধ হবে কিনা?
জাওয়াবঃ না, শুদ্ধ হবে না। কারণ তারা চরম ফাসিক। নামায দোহরানো ওয়াজিব হবে। {দলীলসমূহঃ আলমগীরী, ক্বাযীখান, দুররুল মুখতার, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১২৮তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ হুমায়ূন কবীর, বানারিপাড়া, বরিশাল।
সুওয়ালঃ যে ঘরে বা মসজিদে প্রাণীর ছবি থাকে সেখানে নামায শুদ্ধ হবে কিনা?
জাওয়াবঃ না, শুদ্ধ হবে না। নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে। উক্ত নামায দোহরানো ওয়াজিব হবে। {দলীলসমূহঃ ক্বাযীখান, আলমগীরী, ফতহুল ক্বাদীর, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১৫তম সংখ্যা।}
হাফিয মুহম্মদ ইব্রাহীম খলীল, নীলফামারী।
সুওয়ালঃ ভোটকে আমানত বলা কি?
জাওয়াবঃ কুফরী। {দলীলসমূহঃ আল ফিকহু আলা মাযাহিবুল আরবায়া, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা, ইযালাতুল খফা, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৮৪, ৯০, ৯৭, ৯৮তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ রবিউল আউয়াল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
সুওয়ালঃ বুরনুস (উঁচু) টুপি পড়ে নামায আদায় করলে নামাযের ক্ষতি হবে কিনা?
জাওয়াবঃ হ্যাঁ, মাকরূহ তাহরীমী হবে। {দলীলসমূহঃ আলমগীরী, এতাবিয়া, আশয়াতুল লুমুয়াত, হাশিয়ায়ে মুহিউদ্দীন, শায়খযাদাহ, হেদায়া, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৪৭, ৭৫, ৭৬তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম।
সুওয়ালঃ ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াত করা সম্পর্কে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে কোন নির্দেশ আছে কি?
জাওয়াবঃ না, নেই। বরং ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামাতের এমন অনেক আক্বীদা ও আমল রয়েছে যা সরাসরি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের খিলাফ। [দলীলসমূহঃ তাফসীরে মাযহারী, মুসলিম, মিশকাত, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৩৫-৪৬তম সংখ্যা]
মুহম্মদ আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
সুওয়ালঃ শেষ যামানায় উম্মতে মুহম্মদী কত ফিরক্বা বা দলে বিভক্ত হবে?
জাওয়াবঃ ৭৩ ফিরক্বা বা দলে বিভক্ত হবে। তার মধ্যে একটি ফিরক্বা বা দল হক্ব, নাযাতপ্রাপ্ত ও জান্নাতী। আর অবশিষ্ট ৭২টি দলই নাহক্ব ও জাহান্নামী। [ দলীলসমূহঃ তিরমিযী, আহমদ, আবূ দাউদ, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৩৩তম সংখ্যা] মুছাম্মত শ্যামলী বেগম, ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সুওয়ালঃ বেহেশ্তের দরজায় কি লিখা আছে? জাওয়াবঃ বেহেশ্তের দরজায় লিখা আছে-
الديوث لايدخل الجنة.
অর্থাৎ- ‘দাইয়্যূছ বেহেশ্তে প্রবেশ করবে না। দাইয়্যূছ ঐ ব্যক্তি যে নিজে পর্দা করেনা এবং তার অধিনস্থদের পর্দা করায়না।’
[দলীলসমূহঃ মুসনাদে আহমদ, কানযুল উম্মাল, জরুরী তা’লীম (মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ থেকে প্রকাশিত), মাসিক আল বাইয়্যিনাত]