সরকার মুহম্মদ আল মাহমুদ রানীরবন্দর, চিরিরবন্দর, দিনাজপুর।
সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা জানুয়ারী/২০০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে নিম্নোক্ত জিজ্ঞাসা-সমাধান ছাপা হয়-
জিজ্ঞাসাঃ আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জুম্আর খুত্বা পাঠের সময় ইমাম সাহেবকে ডান হাতে একটি লাঠি নিয়ে খুত্বা পড়তে দেখা যায়। তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাতে লাঠি নিয়ে খুত্বা পাঠ করতেন, তাই আমরাও তাঁর সুন্নাত হিসেবে এভাবে খুত্বা পাঠ করি। এটা কি সঠিক?
সমাধানঃ খুত্বার সময় লাঠি ব্যবহার করা, যা হাদীস শরীফে পাওয়া যায়, সেটি মিম্বার তৈরীর পূর্বের ঘটনা। মিম্বার তৈরীর পর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুত্বার সময় আর লাঠি ব্যবহার করেননি। বলা বাহুল্য, বর্তমানে আমাদের দেশের কিছু কিছু এলাকায় খুত্বার সময় আকর্ষণীয় কারুকাজ খচিত ও সুসজ্জিত লাঠি যেভাবে গুরুত্ব সহকারে ব্যবহার করা হয়, এটি নাজায়েয ও বিদ্আত। এ সম্পর্কে ‘সাফ্রুস্ সাআদাহ্’ গ্রন্থে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। (সাফ্রুস্ সাআদাহ্-৫১, দুররুল মুখতার- ৩/৪১, ফাত্ওয়ায়ে আলমগিরিয়্যাহ্- ১/১৪৮, হাশিয়ায়ে ত্বাহ্ত্বাভী- ৫১৫, মিরক্বাত- ৩/৩১)।
এখন আমার সুওয়াল হলো- খুৎবার সময় লাঠি ব্যবহার করা সম্পর্কে অখ্যাত মাসিক পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বার তৈরীর পর মিম্বারে দাঁড়িয়ে থুৎবার সময় লাঠি ব্যবহার করেননি। দয়া করে নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য দলীল আদিল্লাহ সহ সঠিক জাওয়াব জানিয়ে আমাদের ঈমানকে হিফাযত করবেন।
জাওয়াবঃ খুৎবার সময় লাঠি ব্যবহার করা সম্পর্কে হাটহাজারীর অখ্যাত মাসিক পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই মিথ্যা, মনগড়া, ধোকাপূর্ণ, বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বার তৈরীর পূর্বে যেরূপ খুৎবার সময় লাঠি মুবারক ব্যবহার করেছেন অনুরূপভাবে মিম্বার তৈরীর পরেও মিম্বার মুবারকে দাঁড়িয়ে খুৎবার সময় লাঠি মুবারক ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ মিম্বার তৈরীর পূর্বে এবং মিম্বার তৈরীর পরেও সর্বাবস্থায় রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুৎবার সময় লাঠি মুবারক ব্যবহার করেছেন। যা সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। যেমন এ প্রসঙ্গে আল্লামা জাফর আহমদ উসমানী সাহেব তাঁর বিখ্যাত “ইলাউস সুনান” কিতাবের ৮ম খ-ের ৫৯-৬০ পৃষ্ঠায় হাদীছ শরীফের বিখ্যাত কিতাব “আছারুস সুনান” এবং “মারাসীল” কিতাবের বরাত দিয়ে যে হাদীছ শরীফ খানা উল্লেখ করেছেন তা হলো,
قال بان شهاب “وكان اذا قام أخذ عصا فتوكأ عليها وهو قائم على المنبر ثم كان أبوبكر الصديق وعمربن الخطاب وعثمان بن عفان يفعلون ذلك”. رواه أبو داؤد فى مراسيله (ص৯) وفى أثار الينن (ج২ ص ৯৭)
অর্থঃ- “বিখ্যাত তাবিয়ী হযরত ইবনে শিহাব যুহ্রী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (মিম্বার তৈরীর পর) যখন খুৎবা দেয়ার জন্য মিম্বার শরীফে দাঁড়াতেন, তখন লাঠি মুবারক ধরতেন। এবং মিম্বার মুবারকে দাঁড়িয়ে লাঠির উপর ভর দিয়ে খুৎবা দিতেন। (অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেছাল শরীফের পর) অনুরূপভাবে আফযালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া নবীগণের পরে শ্রেষ্ঠ মানুষ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু,হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু ও হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান যুন্নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু, উনারা সকলেই যখন খুৎবা দেয়ার জন্য মিম্বার শরীফে দাঁড়াতেন তখন লাঠি মুবারক ধরতেন। এবং মিম্বার মুবারকে দাঁড়িয়ে লাঠির উপর ভর দিয়ে খুৎবা দিতেন। অর্থাৎ খুৎবার সময় মিম্বার শরীফে দাঁড়িয়ে লাঠি মুবারক ব্যবহার করতেন। হযরত ইমাম আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত হাদীছ শরীফ খানা তাঁর “মারাসিল” কিতাবের ৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন। অনুরূপ “আছারুস সুনান” কিতাবের ২য় খ-ের ৯৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।” উপরোক্ত হাদীছ শরীফের ইবারতে যেহেতু
وهو قائم على المنبر.
ইবারতটি সুস্পষ্টভাবেই উল্লেখ আছে, সেহেতু উক্ত হাদীছ শরীফের মাধ্যমে সূর্যের আলোর ন্যায় সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হলো যে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বার তৈরীর পর মিম্বার মুবারকে দাঁড়িয়ে খুৎবার সময় লাঠি মুবারক ব্যবহার করেছেন। সুতরাং যেটা হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত সেটাকে অস্বীকার করা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া “কুতুবে সিত্তার” অন্যতম কিতাব “ছহীহ্ আবূ দাউদ শরীফ ও ইবনে মাজাহ শরীফে” স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুৎবা দেয়ার সময় হাত মুবারকে লাঠি নিয়েছেন। যেমন “ছহীহ আবূ দাঊদ শরীফ” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৬৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
حدثنا سعيد بن منصور حدثنا شهاب بن خراش حدثنا شعيب بن رزيق الطائفى قال جلست الى رجل له صحبة من رسول الله صلى الله عليه وسلم يقال له الحكم بن حزن الكلفى فانشأ يجدثنا قال وفدت الى رسول الله صلى الله عليه وسلم سابع سبعة او تاسع تسعة فدخلنا عليه فقلنا يا رسول الله زرناك فادع الله لنا بخير فامربنا او امرلنا بشئ من النمر والشان اذا ذاك دون فاقمنا بها اياما شهدنا فيها الجمعة مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فقام متوكئا على عصا اوقوس.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম আবূ দাঊদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, সাঈদ ইবনে মানছূর রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, শিহাব ইবনে খিরাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, শুয়াইব ইবনে রুযাইক্ব আত্ব ত্বায়িফী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একজন ছাহাবীর নিকট বসলাম। যাঁর নাম ছিল হাকাম ইবনে হাযন আল কুলাফী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, একদা আমি সাত জনের সপ্তম অথবা নয় জনের নবম ব্যক্তি প্রতিনিধি হিসেবে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফে গেলাম। গিয়ে আমরা তাঁকে বললাম ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমরা আপনার সাথে সাক্ষাত করার জন্য এসেছি। অতএব, আপনি আমাদের ভাল এবং কল্যাণের জন্য আল্লাহ পাক-এর কাছে দু’য়া করুন। অতঃপর তিনি খেজুর দ্বারা আমাদের মেহমানদারী করার নির্দেশ দিলেন। তখন মুসলমানগণ কষ্টের মধ্যে ছিলেন। আমরা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে কিছু দিন অবস্থান কালে একটি জুমুয়ার নামাযও সেখানে প্রত্যক্ষ করলাম। অতঃপর জুমুয়ার খুৎবা দেয়ার সময় রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লাঠি অথবা ধনুকের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ালেন।” আর হাদীছ শরীফের কিতাব “ইবনে মাজাহ্ শরীফ”-এর ৭৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
حدثنا هشام بن عمار حدثنا عبد الرحمن بن سعدبن عماربن سعد حدثنى ابى عن ابيه عن جده ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان اذا خطب فى الحرب خطب على قوس واذا خطب فى الجمعة خطب على عصى.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, হযরত হিশাম ইবনে আম্মার রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, আব্দুর রহমান ইবনে সা’দ ইবনে আম্মার ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, আমার পিতা। তিনি তাঁর পিতা থেকে, তাঁর পিতা তাঁর দাদা থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করে বলেন, নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন জ্বিহাদে খুৎবা দিতেন তখন খুৎবার সময় ধনুক ব্যবহার করতেন। আর যখন জুমুয়ার নামাযে খুৎবা দিতেন তখন লাঠি ব্যবহার করতেন।” ‘মিশকাত শরীফের’ ১২৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ان النبى صلى الله عليه وسلم كان اذا خطب يعتمد على عنزته اعتمادا.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন খুৎবা দিতেন, তখন তিনি বর্শার উপর ভর দিয়ে খুৎবা দিতেন।” (মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্) “ইলাউস সুনান” কিতাবের ৮ম খ-ের ৫৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن الحكم بن حزم الكلفى رضى الله عنه فى حديث طويل. شهدنا الجمعة مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فقام متوكئا على عصا أوقوس.
অর্থঃ- “হযরত হাকাম ইবনে হাযন আল কুলাফী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এক লম্বা হাদীছ শরীফে বর্ণনা করেন যে, একদা আমরা রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে জুমুয়ার নামাযে উপস্থিত ছিলাম। অতঃপর (আমরা দেখলাম যে) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমুয়ার খুৎবা দেয়ার জন্য লাঠি অথবা ধনুকের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ালেন।” “রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবে উল্লেখ আছে,
انه صلى الله عليه وسلم قام أى فى الخطبة متوكئا على عصا أو قوس.
অর্থঃ- “নিশ্চয় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুৎবা দেয়ার সময় লাঠি অথবা ধনুকের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেন।” ইমামুল মুফাস্সিরীন, ফক্বীহুল আছর আল্লামা ইমাম কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে কুরতুবী”-এর ৯ম জিঃ, ১১৪ পৃষ্ঠায় “সুরায়ে জুমুয়ার” তাফসীরে উক্ত হাদীছ শরীফের বরাতে লিখেন,
ويخطب متوكئا على قوس اوعصا.
অর্থঃ- “খতীব ছাহেব খুৎবা দেয়ার সময় ধনুক অথবা লাঠির উপর ভর দিয়ে বা হাতে নিয়ে খুৎবা দিবে।” তাছাড়া হাদীছ শরীফের শরাহ্ ও ফিক্বাহ্-এর প্রায় সব কিতাবসমূহেই খুৎবার সময় লাঠি ব্যবহার করা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন “ইবনে মাজাহ শরীফের’ ৭৯ পৃষ্ঠার ২নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
أن أخذ العصا سنة كالقيام.
অর্থঃ- “(জুমুয়ার) খুৎবা দেয়ার সময় দাঁড়ানো যেমন সুন্নত, অনুরুপ খুৎবা দেয়ার সময় লাঠি ব্যবহার করাও সুন্নত।” ‘আউনুল মা’বূদ’ কিতাবের ১ম খ-ের ৪৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
أن الخطيب ينبغى أن يعتمد على شيئ كالقوس والسيف والعنزة والعصا.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই খতীব ছাহেবের উচিত হবে কোন কিছুর উপর যেমন ধনুক, তরবারী, বর্শা অথবা লাঠির উপর ভর দিয়ে খুৎবা দেয়া।” ‘শরহুত্ তীবী’ কিতাবের ৩য় খণ্ডের ২৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
أن الخطيب عليه أن يعتمد على شيئ كالقوس والسيف والعنزة والعصا.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই খতীব ছাহেবের জন্য জরুরী যে, তিনি যেন কোন কিছুর উপর যেমন ধনুক, তরবারী, বর্শা অথবা লাঠির উপর ভর দিয়ে খুৎবা দেন।” আর ‘শরহুত্ তীবী’ কিতাবের ৩য় খ-ের ৪৩৯ পৃষ্ঠায়
صلاة العيدين
এর অধ্যায়ে আরোও উল্লেখ আছে,
السنة أن يتكى الخطيب على شيئ
অর্থঃ- “কোন কিছু (যেমন লাঠির) উপর ভর দিয়ে খুৎবা দেয়া খতীব ছাহেবের জন্য সুন্নত।” “রদ্দুল মুহতার আ’লা দুররিল মুখতার” কিতাবের ৩য় খ-ের ৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
أن أخذ العصا سنة كالقيام.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই (জুমুয়ার) খুৎবা দেয়ার সময় লাঠি ব্যবহার করা ক্বিয়ামের মতই সুন্নত।” “শরহে বিকায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ২০২ পৃষ্ঠার ৩নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
ويخطب متوكئا على عصا.
অর্থঃ- “খতীব ছাহেব খুৎবা দেয়ার সময় লাঠির উপর ভর দিয়ে খুৎবা দিবেন।” “ইলাউস সুনান” কিতাবের ৮ম খ-ের ৫৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
أن أخذ العصا سنة كالقيام. অর্থঃ- “(জুমুয়ার) খুৎবা দেয়ার সময় দাঁড়ানো যেমন সুন্নত, অনুরুপ খুৎবা দেয়ার সময় লাঠি ব্যবহার করাও সুন্নত।” “উমদাতুর রিয়ায়া’ কিতাবে উল্লেখ আছে,
ويخطب متوكئا على عصا او قوس كما ثبت عن النبى صلى الله عليه وسلم فى سنن ابى داؤد.
অর্থঃ- “খতীব ছাহেব খুৎবা দেয়ার সময় লাঠি অথবা ধনুকের উপর ভর দিয়ে খুৎবা দিবেন।” যেমন ‘সুনানে আবূ দাঊদ’ শরীফের মধ্যে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লাঠি অথবা ধনুকের উপর ভর দিয়ে খুৎবা দিতেন।” আর ফিক্বাহ্র নির্ভরযোগ্য ও বিশ্ববিখ্যাত কিতাব “গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খ-ের ৩৮১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………..
অর্থঃ- “মুহীত” কিতাবে উল্লেখ আছে (জুমুয়ার) খুৎবার মধ্যে দাঁড়ানো যেরূপ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত তদ্রুপ খুৎবার সময় লাঠি মুবারক ব্যবহার করাও সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। অনূরূপ শামী কিতাবেও উল্লেখ আছে।” এছাড়া “শরহে বেকায়াতে” উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………..
অর্থঃ- “নামাযের মত খুৎবাতে হাত বাঁধতে হবে না বরং লাঠি বা ধনুক হাতে (ভর দিয়ে) দাঁড়ানো অধিকতর উত্তম।” (শরহে বেকায়া ১ম জিঃ পৃঃ ২৮৪ (উর্দূ তরজমা)) “আল ফিক্বহুল ইসলামিয়্যু ওয়া আদাল্লাতুহু” কিতাবের ২য় খ-ের ২৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
اعتماد الخطيب…….. أثناء قيامه على نحو عصا أوسيف أوقوس سنة عند الجهور مندوب عند المالكية. لما روى الحكم بن حزن قال وفد على النبى صلى الله عليه وسلم، فشهدنا معه الجمعة فقام متوكئا على سيف أوقوس أو عصا مختصرا . كما انه يجعل يمناه على المنبر.
অর্থঃ- “খতীব ছাহেব … মিম্বারে দাঁড়িয়ে লাঠি তরবারী অথবা ধনুকের উপর ভর দিয়ে খুৎবা প্রদান করা জমহুর উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে সুন্নত। আর মালিকী মাযহাবে মানদূব বা মুস্তাহাব। “কেননা হাকাম বিন হাযন রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদা আমি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে প্রতিনিধি হিসাবে আগমন করলাম। অতঃপর আমরা তাঁর সঙ্গে জুমুয়ার নামাযে শরীক হলাম। (আমরা দেখলাম খুৎবা দেয়ার সময়) নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তরবারী, ধনুক অথবা লাঠির উপর ভর দিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে খুৎবা প্রদান করলেন। … যেমন, তিনি মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে ডান হাতে লাঠি ব্যবহার করতেন।” আল্লামা জাফর আহমদ উসমানী সাহেব তাঁর “ইমদাদুল আহকাম” কিতাবের ১ম খ-ের ৬৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………..
অর্থঃ- “ জুমুয়ার নামাযে খুৎবা দেয়ার সময় লাঠি ব্যবহার করা, জায়িয না নাজায়িয? জাওয়াবঃ- জুমুয়ার খুৎবা দেয়ার সময় লাঠি ব্যবহার করা সুন্নত।” আশরাফ আলী থানভী ছাহেব তাঁর “ইমদাদুল ফতওয়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৬৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………..
অর্থঃ- “শামী কিতাব ভালভাবে দেখে নাও খুৎবা দেয়ার সময় লাঠি ব্যবহার করা সুন্নত বলা হয়েছে। এবং এ ব্যাপারে হাদীছ শরীফও বর্ণনা করা হয়েছে। আর এ ব্যাপারে যে মতপার্থক্য রয়েছে তার ফায়সালা হলো যে, মুলতঃ খুৎবার সময় লাঠি ব্যবহার করা সুন্নত।” কেউ বলে থাকে যে, “কেউ যদি হাতে লাঠি নেয়াকে জরুরী মনে করে তার উপর আমল করে, তাহলে মাকরূহ্ হবে।” মূলতঃ এ বক্তব্যও সঠিক নয়। কারণ সুন্নতকে সুন্নত হিসেবে জরুরী মনে করা আদৌ দোষণীয় নয় এবং তা মাকরূহ্ বা অপছন্দনীয় হওয়ার কারণ কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। বরং সুন্নতকে সুন্নত হিসেবে জরুরী মনে করে গুরুত্বের সাথে পালন করার ব্যাপারে হাদীস শরীফে নির্দেশ করা হয়েছে। যেমন- আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
عليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين المهديين تمسكوابها وعضوا عليها بالنواجر.
অর্থঃ- “তোমাদের উপর আমার সুন্নত এবং হিদায়েতপ্রাপ্ত খোলাফা-ই-রাশেদীনগণের সুন্নত পালন করা অপরিহার্য। তোমরা তা মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্তভাবে আঁকড়িয়ে ধর।” (আহমদ, আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ্, মিশকাত) সুতরাং কেউ যদি লাঠি ব্যবহারকে নাজায়িয, বিদয়াত বা মাকরূহ্ প্রমাণ করতে চায় তবে তাকে প্রথমতঃ এরূপ একখানা হাদীছ শরীফ দেখাতে হবে যেখানে লাঠি ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ লাঠি ব্যবহার করা জায়িয বা সুন্নত হওয়ার স্বপক্ষে যতগুলো দলীল রয়েছে, নাজায়িয, বিদ্য়াত ও মাকরূহ্ হওয়ার পক্ষেও ঠিক ততগুলো দলীল পেশ করতে হবে; কিন্তু তারা তা ক্বিয়ামত পর্যন্ত কোশেশ করলেও পারবেনা।
মূলকথা হলো, খুৎবা দান কালে লাঠি ব্যবহার করা সুন্নত, জায়িয তো অবশ্যই। দু’একটি কিতাবে যদি মাকরূহ্ লিখেও থাকে তবে তা অবশ্যই ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। অথবা তা গ্রহণযোগ্য বা ফতওয়াগ্রাহ্য মত নয়। কাজেই উক্ত ফতওয়ার উপর আমল করা যাবেনা।
উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে ১ম দলীল হিসাবে“সাফ্রুস্ সাআদাহ্” কিতাবের বরাত দিয়েছে। এর জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারীর মেীলভী ছাহেবরা কিতাবের নাম লিখেছে “সাফ্রুস্ সাআদাহ”। মূলতঃ কিতাবের নাম “সাফ্রুস্ সাআদাহ” নয়। বরং কিতাবের নাম হচ্ছে “সিফ্রুস্ সায়াদাহ্”। দ্বিতীয়তঃ “সিফ্রুস্ সায়াদাহ্” কিতাবটি ফতওয়ার কিতাব নয়। বরং সেটি হচ্ছে সিরাতের কিতাব। তৃতীয়তঃ “সিফ্রুস্ সায়াদাহ্” কিতাবের মাসয়ালা হানাফী মাযহাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা “সিফ্রুস্ সায়াদাহ্” কিতাবটি হচ্ছে শাফেয়ী মাযহাবের। চতুর্থতঃ “সিফ্রুস্ সায়াদাহ্” কিতাবের বক্তব্য ফতওয়া গ্রাহ্য বা মু’তাবার মতের খিলাফ হওয়ার কারণে গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা “সিফ্রুস্ সায়াদাহ্” কিতাবের ৮১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ولم يكن يأخذ السيف.
অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুৎবার সময়
سيف
বা তরবারী ব্যবহার করেন নাই। অথচ হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাব সমুহে উল্লেখ আছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুৎবার সময় سيفবা তরবারীও ব্যবহার করেছেন। যেমন হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,
روى الحكم بن حزن قال وفدت على النبى صلى الله عليه وسلم، فشهدنا معه الجمعة فقام متوكئا على سيف أو قوس أوعصا مختصرا.
অর্থঃ- “হাকাম বিন হাযন রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত আছে। তিনি বলেন, একদা আমি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে প্রতিনিধি হিসাবে আগমন করলাম। অতঃপর আমরা তাঁর সঙ্গে জুমুয়ার নামাযে শরীক হলাম। (আমরা দেখলাম খুৎবা দেয়ার সময়) নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম سيف বা তরবারী, ধনুক অথবা লাঠির উপর ভর দিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে খুৎবা প্রদান করলেন।” ২য় দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছে, র্দুরুল মুখ্তার- ৩/৪১, এর জবাবে বলতে হয় যে, র্দুরুল মুখ্তার কিতাবের বক্তব্য যে ترجيح বা প্রধান্যপ্রাপ্ত নয়। বরং র্দুরুল মুখ্তার কিতাবের শরাহ্ রদ্দুল মুহ্তার কিতাবের বক্তব্যই যে ترجيح বা প্রধান্যপ্রাপ্ত, গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত তা তাদের গুরু আশরাফ আলী থানভী ছাহেবই তাঁর “ইমদাদুল ফতওয়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৬৮১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………..
অর্থঃ- “এ ব্যাপারে ‘রদ্দুল মুহতার’ কিতাবে দু’টি ছুরত বর্ণনা করা হয়েছে,একটি আবূ দাউদ শরীফ থেকে রেওয়ায়েত করা হয়েছে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুৎবা দেয়ার সময় লাঠি অথবা ধনুকের উপর ভর দিতেন। দ্বিতীয়টি মুহীত’ কিতাব থেকে বর্ণনা করা হয়েছে যে, খুৎবা দেয়ার সময় হাতে লাঠি ব্যবহার করা সুন্নত। যেরূপ খুৎবা দেয়ার সময় দাঁড়ানো সুন্নত। আর এ ব্যাপারে ‘রদ্দুল মুহতার’ কিতাবের বক্তব্যটি ترجيح বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত, গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত।” ৩য় দলীল হিসাবে উল্লেখ করেছে, ফাত্ওয়ায়ে আলমগিরিয়্যাহ্- ১/১৪৮,
এর জবাবে বলতে হয় যে, ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে খুলাছার বক্তব্য পেশ করা হয়েছে। অথচ খুলাছার বক্তব্যকে “হিলইয়া” কিতাবে রদ করা হয়েছে। যেমন ফিক্বাহ্র নির্ভরযোগ্য ও বিশ্ববিখ্যাত কিতাব “গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খ-ের ৩৮১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………..
অর্থঃ- “হিলইয়া’ কিতাবে খুলাছার বক্তব্য এই বলে রদ করা হয়েছে যে, আবূ দাঊদ শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুৎবার সময় লাঠির উপর ভর দিয়ে দাঁড়ানো প্রমাণিত রয়েছে। তাই এটা মাকরূহ হয় কিভাবে। বরং “মুহীত” কিতাবে উল্লেখ আছে (জুমুয়ার) খুৎবার মধ্যে দাঁড়ানো যেরূপ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত, তদ্রুপ খুৎবার সময় লাঠি মুবারক ব্যবহার করাও সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। অনূরূপ “শামী” কিতাবেও উল্লেখ আছে।” ৪র্থ দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছে, হাশিয়ায়ে ত্বাহ্ত্বাভী- ৫১৫, অথচ “হাশিয়ায়ে তাহতাবী আ’লা মারাকিউল ফালাহ্” কিতাবের ৩৩৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
بأنه ثبت أنه صلى الله عليه وسلم قام خطيبا بالمدينة متكئا على عصا أو قوس كما فى أبى داؤد وكذا رواه البراء بن عزب عنه صلى الله عليه وسلم وصححه ابن السكن.
অর্থঃ- “কেননা খুৎবার সময় লাঠি ব্যবহার করা হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত আছে যে, নিশ্চয় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা শরীফে খুৎবা দেয়ার সময় লাঠি অথবা ধনুকের উপর ভর দিয়ে দাড়াতেন। যেমনটি আবূ দাঊদ শরীফে বর্ণিত আছে, অনূরূপ খুৎবার সময় লাঠি ব্যবহার করা সম্পর্কে বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। আর ইবনে সাকান রহমতুল্লাহি আলাইহি উহাকে ছহীহ বলেছেন।” ৫ম দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছে, মিরক্বাত- ৩/৩১ অথচ ‘মিরকাত শরীফের’ ৩য় খ-ের ২৯৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
أن الخطيب ينبغى أن يعتمد على شيئ كالقوس والسيف والعنزة والعصا.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই খতীব ছাহেবের উচিত হবে কোন কিছুর উপর যেমন ধনুক, তরবারী, বর্শা অথবা লাঠির উপর ভর দিয়ে খুৎবা দেয়া।” অতএব, উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা থেকে সূর্যের আলোর ন্যায় সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হলো যে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বার তৈরীর পূর্বে যেরূপ খুৎবার সময় লাঠি মুবারক ব্যবহার করেছেন অনুরূপভাবে মিম্বার তৈরীর পরেও وهو قائم على المنبر. মিম্বার মুবারকে দাঁড়িয়ে খুৎবার সময় লাঠি মুবারক ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ মিম্বার তৈরীর পূর্বে এবং মিম্বার তৈরীর পরেও সর্বাবস্থায় রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুৎবার সময় লাঠি মুবারক ব্যবহার করেছেন। যা সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। সুতরাং হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা যে বলেছে, “মিম্বার তৈরীর পর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুত্বার সময় আর লাঠি ব্যবহার করেননি।” তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং কুফরীমুলক হয়েছে বলেই প্রমাণিত হলো। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন আমলকে নাজায়িয, বিদয়াত, মাকরূহ্ বা অপছন্দনীয় ইত্যাদি বলা বা উত্তম নয় বলে উল্লেখ করা কাট্টা কুফরী। যেমন এ সম্পর্কে আক্বাইদের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কদু খাওয়া সুন্নত এবং আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কদু খেতে পছন্দ করতেন। অতএব কেউ যদি বলে, আমি কদু পছন্দ করিনা, তবে সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে। কারণ সে আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আমল তথা সুন্নতকে ইহানত ও অপছন্দ করেছে। আর সুন্নাতকে ইহানত করা, অপছন্দ ও অবজ্ঞা করা সবই কুফরী। এ প্রসঙ্গে আক্বাঈদের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,
اهانة السنة كفر
“সুন্নতের ইহানত বা অবজ্ঞা করা কুফরী।” অতএব, যেখানে ছহীহ্ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বার তৈরির পূর্বে এবং মিম্বার তৈরির পরে স্বয়ং নিজেই খুৎবাদান কালে হাত মুবারকে লাঠি মুবারক ব্যবহার করেছেন এবং অসংখ্য ইমাম-মুজতাহিদগণ এটাকে সুন্নত বলে রায় দিয়েছেন; সেখানে দু’একটি ফিক্বাহ্র কিতাবের বক্তব্যের সঠিক মর্ম উপলব্ধি না করে খুৎবার সময় লাঠি ব্যবহার করাকে নাজায়িয, বিদ্য়াত বা মাকরূহ্ ইত্যাদি বলা গোমরাহী ও কুফরী বৈ কিছুই নয়।
{দলীলসমূহঃ (১) তাফসীরে কুরতুবী, (২) আছারুস সুনান, (৩)মারাসীলে আবূ দাউদ, (৪) আবূ দাউদ শরীফ, (৫) ইবনে মাজাহ্ শরীফ, (৬) নাসায়ী শরীফ, (৭) মুসনাদে ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, (৮) ত্ববারানী শরীফ, (৯) বাইহাকী শরীফ, (১০) মুছান্নেফে ইবনে আবী শাইবা, (১১) মিশকাত শরীফ, (১২) বযলূল মাজহুদ, (১৩) আউনুল মা’বূদ, (১৪) মিরকাত, (১৫) আশয়াতুল লুময়াত, (১৬) লুময়াত, (১৭) শরহুত্ ত্বীবী, (১৮) তা’লীকুছ্ ছবীহ্, (১৯) মুযাহিরে হক্ব, (২০) হিলইয়া, (২১) আল কাহেস্তানী, (২২) সিরাজুল ওয়াহ্হাজ, (২৩) আত তালখীছ (২৪) আল জালালী, (২৫) মুযমারাত, (২৬) আল মুজতাবি, (২৭) মুহীত, (২৮) বাহ্রুর রায়িক, (২৯) হাবীল কুদসী, (৩০) আন্ নাহরূল ফায়িক, (৩১) শরহে বিক্বায়া, (৩২) রদ্দুল মুহতার, (৩৩) শামী, (৩৪) মাজমাউল বিহার, (৩৫) হাশিয়ায়ে তাহ্্তাবী আ’লা দুররিল মুখতার, (৩৬) হাশিয়ায়ে তাহ্্তাবী আ’লা মারাক্বিউল ফালাহ্, (৩৭) গায়াতুল আওতার, (৩৮) রওজাতুল উলামা, (৩৯) উমতাতুর রিয়ায়া, (৪০) শরহে সিফরুস্ সায়াদাহ, (৪১) কিতাবুল মাদখাল, (৪২) ইলাউস সুনান, (৪৩) আল ফিক্বহুল ইসলামিয়্যু ওয়া আদাল্লাতুহু (৪৪) নূরুল ইযাহ, (৪৫) ইমাদাদুল ফতওয়া, (৪৬) ইমদাদুল আহ্কাম, (৪৭) ফতওয়ায়ে রহীমিয়া ইত্যাদি}
সাইয়্যিদ মুহম্মদ তীতুমীর, সাতক্ষীরা।
মুহম্মদ ফয়জুল্লাহ্, লালমনিরহাট।
মুহম্মদ নুরুল্লাহ্ খন্দকার, সিরাজগঞ্জ।
সুওয়ালঃ আমরা আগে আলিমগণের মুখে শুনতাম যে, টি.ভি দেখা জায়িয নেই। কিন্তু বর্তমানে দেখতে পাচ্ছি অনেক মাওলানা ছাহেবরা টি.ভিতে অনুষ্ঠান করছে। বিশেষ করে মানুষ যাদেরকে বড় মাওলানা মনে করে তারাই সেটা করছে। তাদের সে অনুষ্ঠানগুলো এ.টি.এন টিভি চ্যানেলসহ আরো অনেক চ্যানেলে প্রায়ই দেখানো হয় এবং তাতে ইসলামের অনেক শিক্ষণীয় বিষয় আছে বলে অনেকেই তা দেখে থাকে। এছাড়া মাসিক মদীনা মে/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যার ২১নং প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, “টেলিভিশন একটি যন্ত্রমাত্র। খোলা চোখে যা কিছু দেখা জায়িয বা মুবাহ টেলিভিশনের পর্দাতেও সেগুলি দেখা জায়েয বা মুবাহ। শিক্ষণীয় কিছু দেখলে বা শুনলে পূণ্য হওয়ারই কথা। অপর দিকে পাপযুক্ত যেসব দৃশ্য দেখানো হয় সেগুলি দেখা ও শোনাতে অবশ্যই গোনাহ্ হবে।” অনুরূপ মাসিক রাহমানী পয়গাম জুলাই/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যার এক জিজ্ঞাসার জবাবে বলা হয়েছে, “টিভি দেখার শরয়ী মূলনীতি হলো, যে সকল বস্তু বা বিষয়াবলী (টিভির পর্দা, রেডিও ইত্যাদির মাধ্যম ছাড়া) সরাসরি দেখা ও শুনা জায়েয সেগুলো টিভির পর্দা, রেডিও ইত্যাদিতেও দেখা বা শুনা জায়িয। আর যে সকল বস্তু বা বিষয়াবলী সরাসরি দেখা ও শুনা জায়েয নেই সেগুলো টিভি, রেডিও ইত্যাদিতেও দেখা-শুনা জায়েয নেই।” এখন আমার জানার যে বিষয় তাহলো- (১) মাসিক মদীনা পত্রিকার প্রশ্নের উত্তর ও মাসিক রাহমানী পয়গাম পত্রিকার জিজ্ঞাসার জবাব শরীয়ত সম্মত হয়েছে কিনা? (২) ছবি কাকে বলে ও ছবির সংজ্ঞা কি? (৩) শরীয়তে টি.ভি দেখা জায়িয কিনা? (৪) নাজায়িয পদ্ধতিতে ইল্মে দ্বীন শিক্ষা করা অর্থাৎ ইল্মে দ্বীন শিক্ষার জন্য টিভি দেখা, শোনা ও টিভি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা শরীয়তসম্মত কিনা? (৫) (ক) নাজায়িয হলে যে সকল মাওলানা ছাহেব অনুষ্ঠান করে ও দেখে তাদের সম্পর্কে শরীয়তের ফতওয়া কি? (খ) এদেরকে আলিম বলা যাবে কিনা? (গ) এদের পিছনে নামায পড়া যাবে কিনা? (ঘ) এদের ফতওয়া শরীয়তে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা? কুরআন-সুন্নাহ্র দলীল সহকারে জাওয়াব দিলে খুবই উপকৃত ও খুশী হব।
জাওয়াবঃ সুওয়ালে বর্ণিত সুওয়ালকারীর পাঁচটি সুওয়ালের জাওয়াবই ধারাবাহিকভাবে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ্।
(ধারাবাহিক)
(৫) (গ) এদের পিছনে নামায পড়া যাবে কিনা? এর জবাবে বলতে হয় যে, এদের পিছনে নামায পড়া যাবেনা। কারণ, এরা ইমামের উপযুক্ত নয়। ইমামের যোগ্য হওয়ার জন্য শরীয়তে নেককার হওয়ার শর্ত আরোপ করেছে। কোন ফাসিক-ফুজ্জার কিংবা কাফির-মুরতাদ ইমামের যোগ্য নয়। শরীয়তে টি.ভি দেখা, টি.ভিতে অনুষ্ঠান করা উভয়টি নাজায়িয ও হারাম। সুতরাং যে সকল মাওলানা ছাহেব টি.ভি দেখে ও টি.ভিতে অনুষ্ঠান করে তারা দু’শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।
একঃ যারা হারাম ও নাজায়িয মনে করে টি.ভি দেখে ও টি.ভিতে অনুষ্ঠান করে শরীয়তের দৃষ্টিতে তারা ফাসিকের অন্তর্ভুক্ত। শরীয়তের ফতওয়া হচ্ছে, “কোন ফাসিক ব্যক্তিকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ করা মাকরূহ্ এবং তার পিছনে নামায পড়াও মাকরূহ। মুছল্লীগণ ফাসিক ইমামের পিছনে নামায আদায় করলে নামাযের পরিপূর্ণ ফায়দা হাছিল করতে পারবে না।”
এজন্য বিশ্বখ্যাত ফতওয়ার কিতাব ‘দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ফতহুল ক্বাদীর’ ইত্যাদি কিতাবে ফাসিক ইমামের পিছনে নামায আদায় করলে নামায মাকরূহ্ হওয়ার কারণে উক্ত নামায পুনরায় দোহরানো ওয়াজিব ফতওয়া দেয়া হয়েছে। এ শ্রেণীর ইমাম যদি তওবা-ইস্তিগ্ফার না করে তাহলে নামাযের পরিপূর্ণ ফায়দা হাছিলের জন্য উক্ত ইমাম ছাহেবকে অব্যহতি দিয়ে নেককার, পরহেযগার আল্লাহ্ওয়ালা ইমাম নিয়োগ করা মসজিদ কমিটি ও মুছল্লীদের দায়িত্ব-কর্তব্য। অন্যথায় সকলেই ফাসিকী গুনাহে গুনাহ্গার সাব্যস্ত হবে।
দুইঃ যারা হালাল ও জায়িয মনে করে টি.ভি দেখে ও টি.ভিতে অনুষ্ঠান করে শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদের উপর কুফরীর ফতওয়া বর্তাবে।
শরীয়ত ইমামের জন্য ঈমানদার হওয়ার শর্ত আরোপ করেছে। কোন কাফির, মুরতাদ ব্যক্তিকে ইমাম নিয়োগ করা জায়িয নেই এবং তাদের পিছনে নামায আদায় করলে নামায আদায় হবে না।
এ সম্পর্কে বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, তাফসীরে কুরতুবী, আহকামুল কুরআন, মাযহারী, দুররুল মুখতার, খানিয়াহ, ক্বাযীখান, বায্যাযিয়া, হিদায়া, বিনায়া, আনফারুবিয়া, আল ফিক্বহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আক্বাঈদে নছফী, শরহে আক্বাঈদে নছফী, আক্বাঈদে হাক্কা, তাকমীলুল ঈমান, শরহে ফিক্বহে আকবর ইত্যাদি হাদীছ শরীফ, তাফসীর, ফিক্বাহ, ফতওয়া ও আক্বাঈদের কিতাবসমূহে বর্ণিত রয়েছে।
সুতরাং এ শ্রেণীর ইমাম তাদের কুফরী আক্বীদা ও আমল থেকে খালিছ তওবা-ইস্তিগফার না করা পর্যন্ত তাদেরকে ইমামতিতে বহাল রাখা এবং তাদের পিছনে নামায পড়া কারো জন্যই জায়িয নেই। এক্ষেত্রে মসজিদ কমিটি ও মুছল্লীদের দায়িত্ব-কর্তব্য হলো এ সকল ইমামকে ইমামতি থেকে অব্যহতি দেয়া। অন্যথায় সকলেই কুফরী গুনাহে গুনাহগার সাব্যস্ত হবে। প্রকাশ থাকে যে, শরীয়তে হালাল-হারাম উভয়ই সাব্যস্ত হয়ে গেছে। এখন আর নতুন করে কোন কিছু হালাল কিংবা হারাম সাব্যস্ত হবে না। হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম হিসেবে জানা ও মানা ফরয। যদি কেউ এর বিপরীত আক্বীদা পোষণ করে ও আমল করে অর্থাৎ হারামকে হালাল অথবা হালালকে হারাম সাব্যস্ত করে তাহলে সেটা কুফরী হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,
قاتلوا الذين لايؤمنون بالله ولا باليوم الاخر ولايحرمون ماحرم اله ورسوله.
অর্থঃ- “ঐ সকল লোকদের ক্বতল কর যারা আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি এবং ক্বিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেনা এবং আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা হারাম সাব্যস্ত করেছেন তা হারাম সাব্যস্ত করেনা।” (সূরা তওবা/২৯) হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
الحلال بين والحر ام بين.
অর্থঃ- “হালাল স্পষ্ট এবং হারাম স্পষ্ট।” (বুখারী শরীফ) অতএব, হালালকে হালাল হিসেবে মানতে হবে এবং হারামকে হারাম হিসেবে মানতে হবে। এর খিলাফ করা কুফরী। কোন মুসলমান কুফরী করলে সে মুরতাদ হয়ে যায়। মুরতাদের হুকুম হলো- তার স্ত্রী তালাক হয় যদি সে বিবাহিত হয়ে থাকে, হজ্জ বাতিল হয় যদি সে হজ্জ করে থাকে; এবং সে কাফির হয়। অর্থাৎ তার সমস্ত নেক আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। তওবা না করা পর্যন্ত সে ঈমানদার হবেনা। বিবাহ না দোহ্রালে স্ত্রীর সাথে সংসার করা যাবেনা। যদি সংসার করে তবে যিনাকারীর গুনাহ্ হবে। সন্তান হলে তা হালাল হবেনা। যদি হজ্জের সামর্থ থাকে তবে পুনরায় তাকে হজ্জ করতে হবে, যদিও সে পূর্বে হজ্ব করে থাকে। তা না করলে কবীরা গুনাহ্ হবে। তার ওয়ারিছ সত্ত্ব বাতিল হয়ে যাবে। তাকে তিন দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য। যদি তওবা করে, তবে ক্ষমা করা হবে; অন্যথায় তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদ-।
কেননা হাদীছ শরীফে রয়েছে, “তিন কারণে মৃত্যুদ- দেয়া জায়িয। যথা- (ক) ঈমান আনার পর কুফরী করলে অর্থাৎ মুরতাদ হলে। (খ) ঐ ব্যভিচারি বা ব্যভিচারিনী, যারা বিবাহিত বা বিবাহিতা। (গ) যে অন্যায়ভাবে কাউকে কতল করে।” (তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ্, মুসনদে শাফিয়ী, মুসনদে বাজ্জার, মুস্তাদরিকে হাকিম)
আর এরা মারা যাবার পর যারা এদের জানাযার নামায পড়ে বা পড়ায় বা জানাযার নামাযে সাহায্য-সহযোগিতা করে, তাদের সকলের উপরই মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং এ সকল মুরতাদ মরলে বা নিহত হলে তাকে মুসলমানগণের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। এমনকি মুসলমানের ন্যায়ও দাফন করা যাবে না। বরং তাকে কুকুরের ন্যায় গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতে হবে। কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
ان الذين كفروا وماتوا وهم كفار فلن يقبل من احدهم ملء الارض ذهبا ولو افتدى به اولئك لهم عذاب اليم وما لهم من نصرين.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই যারা কাফির এবং কুফরী অবস্থায় মারা গেছে, তারা যদি (কুফরীর পরিবর্তে) যমীন পরিপূর্ণ স্বর্ণ তার ফিদিয়া বা কাফ্ফারা বাবদ দেয় (আমার থেকে বাঁচার জন্য), তা কখনো গ্রহণ করা হবেনা। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি বা আযাব এবং তাদের জন্য কোন ধরনের সাহায্যকারী নেই। (সূরা আলে ইমরান/৯১) (চলবে)
মুসাম্মত সানজিদা আক্তার সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত
মুহম্মদপুর, ঢাকা।
সুওয়ালঃ অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়-
জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। তাদের সকল আমল হবে খুবই নিখূঁত ও সুন্দর। তাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে, তাদের রোযা দেখে তোমাদের রোযাকে তোমরা তুচ্ছ ও নগণ্য মনে করবে। তাদের আমল দেখে তোমরা তোমাদের আমলকে হেয় মনে করবে, তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার নিচে যাবেনা। তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন-প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। এদলের আমল যতই তোমাদেরকে আকৃষ্ট করুক না কেন, কখনই তাদের দলে যাবেনা। কারণ প্রকৃতপক্ষে এরা হবে ইসলাম হতে খারিজ, দ্বীন হতে বহির্ভূত। তীর যেমন ধনুক হতে বের হয়ে যায় সে আর কখনও ধনুকের নিকট ফিরে আসেনা। তেমনিই এরা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে, আর কখনও দ্বীনের পথে, কুরআন ও সুন্নাহ্র পথে ফিরে আসবেনা।
আমার প্রশ্ন হল, উপরোক্ত হাদীছ ছহীহ্ কি-না? ছহীহ্ হলে এ দ্বারা উদ্দেশ্য কারা? উক্ত হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতের কোন সম্পর্ক আছে কি-না? অনেকে এই হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতকে জড়াতে চান। উক্ত হাদীসের সঙ্গে তাবলীগ জামাতকে জড়ানো সঠিক কি-না?
জবাবঃ প্রশ্নে বর্ণিত হাদীছ ছহীহ্। মুহাদ্দিছীনে কেরাম উক্ত হাদীছসহ এ জাতীয় হাদীছসমূহের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এ সব হাদীছ দ্বারা একটি নির্ধারিত জামাত বা খারিজী ফেরক্বা নামে পরিচিত তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর খেলাফত আমলে এই হাদীছসমূহের বাস্তবতা এবং খাওয়ারেজদের অবস্থার সমন্বয় ঘটেছিল। যার দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে বলা চলে যে, এ হাদীছসমূহ দ্বারা একমাত্র খাওয়ারেজদেরকেই বুঝানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণাদি ছাড়া অন্য কোন জামাতকে এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করা যাবেনা। কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়া তাবলীগ জামাতকে এই হাদীছসমূহের মেসদাক বা উদ্দেশ্য বানানো, তাদেরকে খাওয়ারেজ বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে মারাত্মক অন্যায় ও অপরাধ। তাবলীগের নিয়মনীতি ও কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই। বর্তমান বিশ্বে আল্লাহ্ তা’আলা তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে পথহারা, ঈমানহারা, হেদায়েত থেকে বঞ্চিত অসংখ্য মানুষকে হেদায়েত করেছেন, ঈমান আনার তাওফিক দান করেছেন। এছাড়া এ জামাতের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে অসংখ্য জগদ্বিখ্যাত আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ। অতএব, তাবলীগ জামাতকে খারেজী জামাত বলা, মিথ্যা অপবাদ বৈ কিছুই নয়। (ফতহুল বারী ১২ঃ৩৫০, আল মিরকাত ৭ঃ১০৭) উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো- (১) উল্লিখিত হাদীছ শরীফে বর্ণিত গুণাবলী প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে আছে কি? (২) উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা কি শুধু খারিজী ফিরক্বার লোকদেরকেই বুঝানো হয়েছে? নাকি খারিজীদের ন্যায় আক্বীদা পোষণকারীদের ক্ষেত্রেও এ হাদীছ শরীফ প্রযোজ্য? (৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য? (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি? (৫) কুরআন-সুন্নাহ্র কোথাও প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করার নির্দেশ আছে কি? প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করা কুরআন-সুন্নাহ্ মতে জায়িয কিনা?
কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কিত উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের সাফাই গাইতে গিয়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যা করেছে। সাথে সাথে “ছয় উছূলীদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী কোন আক্বীদা-আমল নেই” বলে তাদের নির্লজ্জ দালালী করে নিজেদেরকে অপব্যাখ্যাকারী ও মিথ্যাবাদীরূপে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিক দলীলভিত্তিক আলোচনা করলেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে। তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো- (ধারাবাহিক) ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারীতার খ-নমূলক জবাব-৩ প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?”
আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, পর্যায়ক্রমে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলোর সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো- প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য-৮ আবার তারা একথাও প্রচার করে থাকে যে, হাদীছ শরীফে ৭৩টি দলের মধ্যে যে দলটিকে নাযী বা নাযাত প্রাপ্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতই উক্ত নাযাত প্রাপ্ত দল।”
তাদের এ বক্তব্য, প্রচারণা ও দাবী নেহায়েতই অজ্ঞতামূলক, মনগড়া ও চরম আপত্তিকর ও কুফরী হয়েছে। কারণ তাদের এ বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায় যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বাইরে যারা রয়েছে, তারা ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরকার অন্তর্ভুক্ত। অথচ মাত্র প্রায় ৮০ বৎসর পূর্বে প্রচলিত ছয় উছূলভিত্তিক তাবলীগের উৎপত্তি ঘটে। আর প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উৎপত্তি লাভের পূর্বে সুসংবাদপ্রাপ্ত অনেক ইমাম, মুজ্তাহিদ, ফক্বীহ্, ওলীআল্লাহ্, বুযুর্গানে দ্বীন অতীত হয়েছেন। যাঁদের অনেকের মর্যাদা সম্পর্কে হাদীছ শরীফেও ইরশাদ হয়েছে। এছাড়া অনেক নেক্কার মুসলমানও ইন্তিকাল করেছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের কথানুযায়ী প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় তারা নাযাতপ্রাপ্ত নয়। (নাঊযুবিল্লাহ) মূলতঃ তাদের এ কথা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। উল্লেখ্য, ফিকির করলে তাদের একথা সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালাম, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতিও আরোপিত হয়, যা জঘণ্য কুফরী। (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)
মূলতঃ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা হাদীছ শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েই এ ধরনের বক্তব্য পেশ করেছে। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
ستفترق امتى على ثلاث وسيعين ملة كلهم فى النار الا ملة واحدة قالوا من هى يا رسول الله قال ما انا عيه واصحابى رواه الترمذى، وفى رواية احمد وابى داود عن معاوية قال ثنتان وسبعون فى النار وواحدة فى الجنة وهى الجماعة.
অর্থঃ- “অতি শীঘ্রই আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত বাহাত্তরটি দলই জাহান্নামে যাবে। তখন হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নাযাত প্রাপ্ত দল কোনটি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি এবং আমার ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মত ও পথের উপর যারা ক্বায়িম থাকবে (তারাই নাযাতপ্রাপ্ত দল)।” ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি এ হাদীছ বর্ণনা করেন। আর মসনদে আহ্মদ ও আবূ দাঊদ শরীফে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে যে, বাহাত্তরটি দল জাহান্নামে যাবে, আর একটি মাত্র দল জান্নাতে যাবে। মূলতঃ সে দলটি হচ্ছে, আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত।” উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত কিতাব মিশকাত শরীফের শরাহ্ “মিরকাতুল মাফাতীহ্”-এর ১ম জিঃ ২৪৮ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন যে,
..(قالوا من هى) اى تلك الملة اى اهلها الناجبة …… (قال ما انا عليه واصحابى)
… فكذا هنا المراد هم المهتدون المتمسكون بسنتى وسنة الخلفاء الرأشدين من بعدى فلاشك واريب انهم هم اهل السنة والجماعة وقيل التقدير اهلها من كان على ما انا عليه واصحابى من الاعتقاد والقول والفعل فان ذالك يعرف بالاجماع.
অর্থঃ- “ ………. হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ জিজ্ঞাসা করলেন, সে দল কোন্টি অর্থাৎ নাযাতপ্রাপ্ত দল কোনটি? ………. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যারা আমি ও আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মত-পথে ক্বায়িম থাকবে (তারাই নাযাত প্রাপ্ত দল)। ……।” মূলতঃ এ কথার দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে যে, (যারা নাযাত প্রাপ্ত দল) তারা হিদায়েত প্রাপ্ত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এবং তাঁর খোলাফা-ই- রাশেদীনগণের সুন্নত সমূহকে মজবূতভাবে ধারণকারী। আর এতে কোন প্রকার সন্দেহ নেই যে, তারাই মূলতঃ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত। আরো বুঝানো হয়েছে যে, (যারা নাযাতপ্রাপ্ত দল), তারা আক্বীদা, ক্বওল ও ফে’লের দিক থেকে আমি ও ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের অনুসারী হবে, আর এটা মূলতঃ ইজ্মা দ্বারা প্রমাণিত।” সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হাদীছ শরীফে বর্ণিত নাযাতপ্রাপ্ত দল তারাই, যারা আক্বীদা ও আমলের দিক থেকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পূর্ণ অনুসারী বা ইসলামের হুকুম-আহ্কাম পরিপূর্ণভাবে পালনকারী। যে প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন, “তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর এবং জেনে শুনে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করোনা।” উল্লেখ্য, ইসলামে পরিপূর্ণ প্রবেশ কেবল আমল দ্বারাই আদায় হয় না, তার সাথে সাথে আক্বীদাও কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসসম্মত হওয়া শর্ত। অথচ প্রচলিত তাবলীগ জামাতের শিক্ষার দ্বারা আদৌ মহান আল্লাহ্ পাক-এর আদেশ পরিপূর্ণভাবে পালন ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পূর্ণ অনুসরণ সম্ভব নয়। উপরন্ত তাদের অনেক আক্বীদাই ত্রুটিপূর্ণ রয়েছে। যা ইতোমধ্যে প্রদত্ত সুওয়ালের জাওয়াবে আলোচনা হয়েছে। তাহলে কি করে এ কথা বলা যেতে পারে যে, “হাদীছ শরীফে ৭৩টি দলের মধ্যে যে দলটিকে নাযী বা নাযাত প্রাপ্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তা প্রচলিত ছয় উসূলভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতই।”
বিশেষভাবে স্মরণীয় যে, আক্বীদা শুদ্ধ না হলে আমলের কোন মূল্যই আল্লাহ্ পাক-এর নিকট নেই। তাই আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফের অসংখ্য স্থানে আমলের পূর্বে ঈমানের কথা বলেছেন। সূরা আছরের মধ্যে আল্লাহ পাক সুস্পষ্টভাবে ইরশাদ করেন,
ان الانسان لفى خسر الا الذين امنوا وعملوا الصلحت.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই সকল মানুষ ধ্বংসের মধ্যে, একমাত্র তারা ব্যতীত, যাঁরা ঈমান এনেছে (আক্বীদা শুদ্ধ করেছে) এবং নেক আমল করেছে।”
আর হাদীছ শরীফে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
تركت فيكم امرين لن تضلوا ما تمسكتم بهما كتاب الله وسنتى.
অর্থঃ- “তোমাদের নিকট আমি দু’টি জিনিস রেখে গেলাম, যতদিন তোমরা এ দু’টোকে আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে, অর্থাৎ অনুসরণ-অনুকরণ করবে, ততদিন তোমরা গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট হবেনা। সে দু’টি হলো, (১) কুরআন শরীফ, (২) আমার সুন্নত।” (বুখারী শরীফ) বর্ণিত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফের দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, যাদের আক্বীদা ও আমল কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফসম্মত, একমাত্র তারাই নাযাতপ্রাপ্ত ও ধ্বংস হতে মুক্ত। আর যাদের আক্বীদা ও আমল কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের বিপরীত, তারা নাযাতপ্রাপ্ত দল তো নয়ই বরং তারা চরম গোমরাহ্ ও বিভ্রান্ত। যেমন বিভ্রান্ত হয়েছে, শিয়া বা রাফিজী, মু’তাযিলা, ক্বদরিয়া, জাবারিয়া, খারিজী, মরজিয়া ফিরকাসহ ৭২টি বাতিল ফিরকা। যদিও তারা নিজেদেরকে মুসলমান ও নাযাতপ্রাপ্ত দল বলে দাবী করে থাকে। কিন্তু আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া মুতাবিক তারা মুসলমান ও নাযাতপ্রাপ্ত দলের অন্তর্ভুক্ত নয়।
শুধু তাই নয় বরং কারো আক্বীদার মধ্যে যদি বিন্দুমাত্রও কুফরী থাকে, আর সে যদি পাহাড়সম আমলও করে, তবুও তার পক্ষে নাযাত পাওয়া সম্ভব নয়। যেমন, কোন ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলাকে জায়িয বা হালাল মনে করে, অথচ সে অনেক নেক আমলও করে, তার পক্ষে কস্মিনকালেও নাযাত পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ অসংখ্য ছহীহ্ হাদীছ শরীফ, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবের নির্ভরযোগ্য বর্ণনা দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা (হাতের মাধ্যমে হোক অথবা ক্যামেরার দ্বারা হোক) হারাম। আর আক্বাঈদের কিতাবে লেখা আছে, হারামকে হালাল জানা বা হালালকে হারাম জানা উভয়টাই কুফরী। এক্ষেত্রে বিশেষ উদাহরণ হলো, কাদিয়ানী সম্প্রদায়, যারা প্রায় ইসলামের সকল বিধি-বিধানই স্বীকার করে, কিন্তু শুধুমাত্র “খতমে নুবুওওয়াত” অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শেষ নবী স্বীকার না করার কারণে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া মুতাবিক তারা (কাদিয়ানীরা) কাট্টা কাফির। কাজেই প্রমাণিত হলো যে, নাযাতপ্রাপ্ত দল তারাই, যারা পরিপূর্ণভাবে ইসলাম পালন করে এবং যাদের আক্বীদা ও আমল সম্পূর্ণই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসসম্মত।
উল্লেখ্য, যে যত কিছুই দাবী করুক না কেন, তার দাবী ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত তার আক্বীদা ও আমল কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফসম্মত না হবে। অতএব, প্রচলিত ছয় উছূলভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে শরীয়তের খিলাফ ও কুফরীমূলক হয়েছে। কাজেই তাদের সকলেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো এ থেকে খালিছ তওবা ও ইস্তিগফার করা। (চলবে)
মুহম্মদ মুহিউদ্দীন
সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত সন্দ্বীপ শাখা, চট্টগ্রাম।
সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানী মাযহাবের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর- জানুয়ারী/২০০৩’০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে ‘‘বিত্রের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম এবং বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব পাবে বলে উল্লেখ করেছে।’’ তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে বুখারী, ইবনে মাজাহ্, নাসায়ী থেকে দলীল হিসেবে কয়েকখানা হাদীছ শরীফও উল্লেখ করেছে। আর হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ডিসেম্বর/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে,‘‘বিতির নামাযের পর দুই রাক্আত নফল নামায …….. দাঁড়িয়ে পড়া ভাল। কারণ, নফল নামায বিনা কারণে বসে পড়লে অর্ধেক সাওয়াব হয়।’’ এখন আমার সুওয়াল হলো তারা হালকী নফল নামায সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে হাদীছ শরীফ গুলো উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহনযোগ্য। তাদের প্রতিটি দলীলের খ-ন সহ হালকী নফল সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল আদিল্লাহ্ পেশ করে, আমাদের ঈমান আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায যাকে “হালক্বী নফল” বলা হয়, তা দাঁড়িয়ে পড়া সম্পর্কে অখ্যাত মাসিক পত্রিকাদ্বয়ের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ হয়েছে। এবং ক্ষেত্র বিশেষে কুফরীমুলক হয়েছে। কেননা সাধারণতঃ নফল নামায বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব হলেও বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়াই মুস্তাহাব সুন্নত, যা উত্তম ও পূর্ণ ছওয়াব এবং অধিক ফযীলতের কারণ। কেননা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল এবং অন্যান্য নফলের ক্ষেত্রে একই হুকুম নয়। বরং বিত্র নামাযের পর দুই রাকায়াত নফলের হুকুম অন্যান্য নফল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অর্থাৎ অন্যান্য নফল দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব। আর হালক্বী নফল অর্থাৎ বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব আর বসে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব।
কারণ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায কখনও দাঁড়িয়ে আদায় করেন নাই। বরং বসেই আদায় করেছেন। যা সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। (ধারাবাহিক)
স্মর্তব্য, আমরা বিগত সংখ্যায় বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত হালকী নফল সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ সমূহ বিভিন্ন হাদীছ শরীফের কিতাব থেকে এবং অনুসরণীয় ইমাম মুজতাহিদ ও ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের বক্তব্য দ্বারা অকাট্য দলীল আদিল্লাহ্র মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়েছি যে, বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায সংক্ষিপ্তাকারে বসেই আদায় করা মুস্তাহাব সুন্নত, যা উত্তম ও পূর্ণ ছওয়াব। কারন বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে আদায় করার ব্যাপারে বর্ণিত হাদীছ শরীফ সমুহে جالس শব্দটি অর্থাৎ বসেই আদায় করার বর্ণনাটি সুস্পষ্টভাবেই উল্লেখ আছে। বর্তমান সংখ্যায় কিতাবের বক্তব্য খ-ন করার আগে রেযাখানীদের দলীল বিহীন, মনগড়া ও প্রতারণা মুলক বক্তব্য খ-ন করা হলো
উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বুখারী, ইবনে মাজাহ ও নাসায়ী শরীফ ইত্যাদি কিতাব থেকে দলীল হিসেবে যে কয়েকখানা হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছে আসলে উক্ত কিতাব সমূহের বক্তব্য যে সেরকম নয়।বরং তার সম্পূর্ণ বিপরীত। আমরা পর্যায়ক্রমে সেটা তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ্। নিম্নে প্রথমে বুখারী শরীফের বক্তব্য পর্যালোচনা করা হলো যেমন রেযাখানীদের হুবহু ইবারত খানা হলো-
ان صلى قائما فهو افضل ومن صلى قاعدا فله نصف اجر القائم- رواه البخارى.
অর্থঃ- ‘(নফল) নামায দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম। আর যে বসে পড়ে তার জন্য দাঁড়িয়ে আদায়কারীর চেয়ে অর্থেক সাওয়াব রয়েছে।’ এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানীরা বুখারী শরীফের বরাত দিয়ে যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে, সেই ইবারতের মধ্যে যেহেতু بعد الوتر ركعتين. (বা’দাল বিত্রি রাকয়াতাইনি) অর্থাৎ বিতরের পর দু’রাকায়াত (নফল) যাকে হালকী নফল বলা হয় তার উল্লেখ নেই, সেহেতু বুখারী শরীফের সেই ইবারতের দ্বারা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামাযের প্রশ্ন আসে কি করে? মুলতঃ উল্লিখিত হাদীছ শরীফে বিতরের পর দু’রাকায়াত নফল ব্যতীত অন্য সকল নফল নামাযের কথা বলা হয়েছে। বিতরের পর দু’রাকায়ত নফলের কথা বলা হয়নি। আর আমরা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাতের মধ্যে হাদীছ শরীফের সুস্পষ্ট ইবারতের দ্বারা প্রমাণ করে দিয়েছি যে, বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করা সুন্নত ও পূর্ণ ছওয়াব। কারণ হাদীছ শরীফের ইবারতের মধ্যে
يصلى بعد الوتر ركعتين خفيفتين وهو جالس.
বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করার বর্র্ণনা সুস্পষ্টভাবে হুবহু উল্লেখ আছে। সুতরাং পাঠকের সুবিধার্থে বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করা সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ খানা আবারো হুবহু তুলে ধরা হলো, যেমন, “ইবনে মাজাহ শরীফ” ৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
حدثنا محمد بم بشتر جدثمت جكتدبم كسهدو جدثمت كيكزم بم كزسة تلكرئ هم تلجصم هم تكخ هم ك سلكو رضة الله تعالى عنها ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يصلى بعد الوتر ركعتين خفيفتين وهو جالس.
অর্থঃ- “ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মুহম্মদ ইবনে বাশ্শার রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত হাম্মাদ ইবনে মাসয়াদা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মায়মূনা ইবনে মূসা আল-মারায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি তাঁর মা থেকে বর্ণনা করেন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে যে, আখিরী রসুল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
يصلى بعد الوتر ركعتين خفيفتين وهو جالس.
বিত্র নামাযের পর সংক্ষিপ্তাকারে দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করতেন।” অতএব, রেযাখানীরা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম বলে বুখারী শরীফের বরাত দিয়ে সাধারণ মানুষকে চরমভাবে ধোকা দিয়েছে। অথচ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
من عشى فليس منا.
অর্থাৎঃ- যে ব্যক্তি ধোকা দেয়, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়। সুতরাং চিন্তার বিষয় তাদের ফতওয়া কতটুকু গ্রহণযোগ্য। (চলবে)
মুহম্মদ লুতফর রহমান, মুন্সীগঞ্জ।
মুসাম্মত রতনা বেগম শরীফ সুন্দর, পীরগাছা, রংপুর।
সুওয়ালঃ জনৈক মুসলমান ব্যক্তি এক হিন্দু পীরের অনুসারী। ঐ ব্যক্তির পীর প্রায় ত্রিশ-পয়ঁত্রিশ বছর পূর্বে মারা যায়। ঐ ব্যক্তি এখনও বিবাহ করেনি। তাকে বিবাহ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে সে বলে থাকে, তার পীরের ইজাযত পায়নি তাই সে বিবাহ করবে না। ঐ ব্যক্তি নিজেকেও পীর/দয়াল বলে দাবী করে থাকে। তার মধ্যে সুন্নতের কোন পাবন্দি নেই। তার দাড়ি নেই। সে কোর্তা পরিধান করেনা। কিন্তু মাঝে মধ্যে টুপি পরিধান করে থাকে। সে ঠিক মত নামায, রোযা আদায় করে না। পর্দা নেই। তার ভক্তদের মধ্যে নারী-পুরুষ আছে। সে টেলিভিশন দেখে থাকে, তার পীরের ছবিকে সামনে রেখে নামায আদায় করে থাকে। সে নিজে ও তার ভক্তরা ছবিকে সামনে রেখে ধ্যান-মগ্ন হয়। ঐ ব্যক্তি তার ভক্তদের নিয়ে বাৎসরিক একটা অনুষ্ঠান করে থাকে। উল্লিখিত সুওয়ালের বিবরণে যে সকল প্রশ্নের উদয় হয় তা হলো- (১) হিন্দু পীরের অনুসরণ করা।
(২) হিন্দু পীরের ইজাযত না পাওয়ার কারণে বিবাহ হতে বিরত থাকা। (৩) নিজেকে পীর বা দয়াল বলে দাবী করা। (৪) সুন্নতের পাবন্দি না করা। (৫) নামায-রোযা আদায় না করা। (৬) পর্দা না করা। (৭) টিভি দেখা ও ছবিকে সামনে রেখে ধ্যানমগ্ন হওয়া। এখন আমার সুওয়াল হচ্ছে- উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে শরীয়তের ফায়সালা কি? এবং তার থেকে মসজিদের জন্য জমি নেয়া জায়িয হবে কিনা? মৃত্যুর পর তার জানাযায় শরীক হওয়া যাবে কিনা? তার সঙ্গে সামাজিক কোন কাজে উঠা-বসা করা যাবে কিনা? তার কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা যাবে কিনা? কুরআন-সুন্নাহ্র দলীলসহ জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,
لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة.
অর্থঃ- “অবশ্যই তোমাদের জন্য আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আহযাব/২১)
অর্থাৎ মুসলমানকে মাথার তালু থেকে পায়ের তলা; হায়াত থেকে মউত পর্যন্ত আক্বাইদ-ইবাদত, মুয়ামালাত-মুয়াশারাত ইত্যাদি প্রতিক্ষেত্রেই একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে।
কাজেই কোন মুসলমানের জন্য কোন বিধর্মীকে অনুসরণ ও অনুকরণ করা, তার কথা-কাজের উপর ইস্তিকামত থাকা, তাকে অনুসরণ করে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নির্দেশের খিলাফ চলা, ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত তরক করা, হারাম-নাজায়িয আমল করা, বেপর্দা হওয়া, ছবি তোলা, টিভি দেখা ইত্যাদি সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
সুওয়ালে উল্লিখিত প্রত্যেকটি প্রশ্নেরই জাওয়াব ধারাবাহিকভাবে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ।
(ধারাবাহিক)
(৫) নামায-রোযা আদায় না করা। নামায-রোযা উভয়টি ফরযে আইন ইবাদত। ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক যে ব্যক্তি নামায কিংবা রোযা আদায় করবে না সে চরম ফাসিকের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর কেউ যদি নামায-রোযা অস্বীকার করে তাহলে সে কাফির হবে। কোন ফাসিক ও কোন কাফির ব্যক্তি হাদী হওয়ার উপযুক্ত নয়। স্বয়ং আল্লাহ্ পাক নামায ও রোযা আদায়ের ব্যাপারে কালাম পাকের অসংখ্য স্থানে আদেশ-নির্দেশ করেছেন। আল্লাহ্ পাক আদেশ দান করতঃ ইরশাদ করেন,
اقيموا الصلوة.
অর্থঃ- “তোমরা নামায ক্বায়িম কর।” (সূরা বাক্বারা/১১০) আরো ইরশাদ করেন,
حافظوا على الصلوات.
অর্থঃ- “তোমরা নামাযগুলো আদায়ে যত্নবান হও।” (সূরা বাক্বারা/২৩৮) আল্লাহ পাক তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন,
وأمر اهلك بالصلوة واصطبر عليها.
অর্থঃ- “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি আপনার আহল্-ইয়াল তথা উম্মতদেরকে নামাযের জন্য আদেশ করুন এবং তা পালনে ইস্তিকামত থাকতে বলুন।” (সূরা ত্বাহা/১৩২) হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
الصلوة عماد الدين من ادامها اقام الدين ومن تركها فقد هدم الدين.
অর্থঃ- “নামায হলো দ্বীন ইসলামের খুঁটি। যে ব্যক্তি যথাযথভাবে নামায আদায় করল সে দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত রাখল। আর যে নামাযকে তরক করল সে দ্বীনকে ধ্বংস করল।” (বুখারী শরীফ) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
بين العبد وبين الكفر ترك الصلوة.
অর্থঃ- “মু’মিন বান্দা ও কাফিরের মাঝে পার্থক্য হলো নামায তরক করা। অর্থাৎ মু’মিন বান্দা নামায পড়ে আর যারা কাফির তারা নামায পড়ে না।” (মুসলিম শরীফ) অপর এক হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
اول مايحاسب به العبد يوم القيامة الصلوة.
অর্থঃ- “ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামায সম্পর্কেই বান্দাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” রোযা প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
يايها الذين امنوا كتب عليكم الصيام كما كتب على الذين من قبلكم لعلكم تتقون.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল। এটা এজন্য করা হয়েছে, যেন তোমরা তাক্বওয়া বা আল্লাহ্ভীতি অর্জন করতে পার।” (সূরা বাক্বারা/১৮৩) আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন,
فمن شهد منكم الشهر فليصمه.
অর্থঃ- “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রমযান মাস পাবে সে যেন উক্ত মাসে রোযা রাখে।”(সূরা বাক্বারা/১৮৫) হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
بعد من ادرك رمضان فم يغفرله.
অর্থঃ- “হালাকী বা ধ্বংস ঐ ব্যক্তির জন্য, যে রমযান মাস পেল অথচ সে তার গুনাহখাতা ক্ষমা করাতে পারল না।” (হাকিম, মিশকাত) অপর এক হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
ان الشقى من حرم فيه رحمة الله عز وجل.
অর্থঃ- “হতভাগা ঐ ব্যক্তি! যে রমযান মাসে আল্লাহ্ পাক-এর রহমত থেকে বঞ্চিত রইল।” (তবারানী শরীফ)
উল্লেখ থাকে যে, প্রত্যেক ঈমানদার বান্দার উপর ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে দু’টি কাজ ফরয- প্রথমটি হলো নামায আদায় করা আর দ্বিতীয়টি হলো রমযান মাসের রোযা রাখা।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই ছাবিত বা প্রমাণিত হলো যে, কেউ যদি নামায-রোযা আদায় না করে তাহলে সে ফরয তরক করার কারণে কবীরা গুনাহে গুনাহগার হবে। খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করে নামায-রোযা আদায় না করা পর্যন্ত সে কখনোই মু’মিনে কামিল হতে পারবে না বরং চরম ফাসিকের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আর যদি সে নামায-রোযা অবজ্ঞা বা অস্বীকার করে তাহলে তা কুফরী হবে। কোন মুসলমান যদি কুফরী করে তাহলে সে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। তখন উক্ত কুফরী থেকে খালিছ তওবা-ইস্তিগফার না করা পর্যন্ত সে মুসলমান থাকতে পারবেনা। (চলবে)