সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ১২৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

সাইয়্যিদ মুহম্মদ আখতারুজ্জামান কামিল পরীক্ষার্থী/০৪ নাগেশ্বরী আলিয়া মাদ্রাসা, কুড়িগ্রাম।

সুওয়ালঃ   খাছ সুন্নতী লুঙ্গি তথা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের লুঙ্গি কি রকম ছিল? দলীল-আদিল্লাহসহ জানালে আমরা খাছ সুন্নত পালনে ধন্য হবো।

জাওয়াবঃ  খাছ সুন্নতী লুঙ্গি যা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পরিধান করেছিলেন, তা হচ্ছে, (১) সিলাইবিহীন বা ফাঁড়া, (২) দৈর্ঘ্য সাড়ে চার হাত প্রস্থ আড়াই হাত ও (৩) নিছফু সাক্ব থেকে টাখনুর উপর পর্যন্ত।  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিলাইযুক্ত বা ফাঁড়া নয় এমন লুঙ্গি কখনো পরিধান করেননি। যেমন, বুখারী শরীফের ২য় জিঃ ২৪ পারা ৮৬৫ পৃষ্ঠায় এবং শামায়িলুত্ তিরমিযী ৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে যে,

 حدثنا مسدد قال حدثنا اسما عيل قال اخبرنا ايوب عن حميد بن هلال عن ابى بردة قال اخرجت الينا عائشة كساء اواذارا غليظا فقالت قبض روح النبى صلى الله عليه وسلم فى هذين.

 অর্থঃ- “হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, হযরত মুসাদ্দাদ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত ইসমাঈল রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত আইয়ূব রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত হুমাইদ বিন হিলাল রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। হযরত আবূ বুরদাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা আমাদের সামনে একটি চাদর এবং একটি মোটা সিলাইবিহীন লুঙ্গি বের করে আনেন। অতঃপর তিনি বলেন, এ দু’টি কাপড় মুবারক পরিহিত অবস্থায় হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রূহ মুবারক (আল্লাহ পাক-এর কাছে) নেয়া হয়।” অনুরূপ বর্ণনা মুসলিম শরীফ ও ইবনু মাজাহ শরীফে আছে। অত্র হাদীছ শরীফের كساء وازترا ‘চাদর এবং ফাঁড়া লুঙ্গি’ এর ব্যাখ্যায় ‘শামায়িলুত্ তিরমিযী’ এর শরাহ ‘শরহে ইমাম আব্দুর রউফ মানাবী মিছরী’ এর ১ম জিঃ ২১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

 وهو ما يستر اعلى اليدن ضد الازتر.

 অর্থঃ- “كساء বা চাদর যা শরীরের উপরের অংশ ঢেকে রাখে। ازار ‘ইযার’ বা সিলাইবিহীন লুঙ্গি এর বিপরীত। অর্থাৎ সিলাইবিহীন লুঙ্গি শরীরের নিম্নাংশ ঢেকে রাখে। “আল মাওয়াহিবুল্ লাদুন্নিয়া আলাশ্ শামায়িলিল্ মুহম্মদিয়া”-এর ১০২ পৃষ্ঠায় আছে,

والكساء ما يستر اعلى البدن ضد الازار.

  অর্থঃ- كساء ‘কিসা’ বা চাদর যা শরীরের উপরের অংশ ঢেকে রাখে। اذار ‘ইযার’ বা সিলাইবিহীন লুঙ্গি এর বিপরীত। অর্থাৎ সিলাইবিহীন লুঙ্গি শরীরের নিম্নাংশ ঢেকে রাখে। এ ইবারত দু’টি থেকে প্রমাণিত হয়, হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চাদর মুবারক ও লুঙ্গি মুবারক হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে দেখিয়েছিলেন। তা সিলাইবিহীন তথা ফাঁড়া ছিল। একটি দিয়ে শরীরের উপরের অংশ ঢাকা হতো তা যেমন সিলাইবিহীন চাদর ছিল তেমনি অন্যটি দিয়ে নিম্নাংশ ঢাকা হতো, যার নাম হচ্ছে ইযার বা সিলাইবিহীন লুঙ্গি। “শামায়িলুত্ তিরমিযী” এর ৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,

 حدثنا ممحمود بن غيلان انا ابو داود عن شعبة عن الاشعث بن سليم قال سمعت عمتى فحدثت عن عمها قال بينما انا امشى بالمدينة اذا انسان خلفى يقول ارفع ازارك فانه اتقى وابقى فالتفت فاذا هو رسول الله صلى الله عليه وسلم فقلت يا رسول الله انما هى بردة ملحاء قال امالك فى اسوة فنظرت فاذا اذاره الى نصف ساقيه.

 অর্থঃ- “হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মাহমূদ বিন গইলান রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর দেন হযরত আবূ দাঊদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত শু’বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আশয়াছ বিন সুলাইম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি বলেন, আমি  আমার ফুফু رهم)) থেকে, তিনি হাদীছ বর্ণনা করেন,  তাঁর চাচা (হযরত উবাইদ বিন খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থেকে। তিনি বলেন, একদা আমি মদীনা শরীফে হেঁটে চলছিলাম। এমন সময় আমার পিছন দিকে একজন লোক বলে উঠলেন, ‘তোমার সিলাইবিহীন লুঙ্গি উঁচু কর, কেননা তা ধুলামাটি অধিক রক্ষাকারী ও অধিকতর স্থায়ীত্বকারী। তখন আমি চেহারা ফিরিয়ে দেখলাম, তিনি হলেন হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম!  এটা তো কালো ডোরাদার সাদা রংয়ের কাপড়। তিনি (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “আমার মধ্যে কি তোমার জন্য অনুসরণীয় অনুকরণীয় নেই? অর্থাৎ আমার আদর্শ তোমার জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। তখন আমি লক্ষ্য করলাম যে, তাঁর (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর) সিলাইবিহীন লুঙ্গী মুবারক তাঁর নিসফু সাক্ব পর্যন্ত। অত্র হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় হযরত আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘জামউল্ ওসায়িল ফী শরহিশ্ শামায়িল’ নামক কিতাবের ১ম জিঃ ২১৩ পৃষ্ঠায় সুন্নতী, সিলাইবিহীন লুঙ্গী সম্পর্কে বর্ণনা করেন,

 (فنظرت) اى الى لباسه (فاذا اذاره) باعتبار طرفيه (اى نصف ساقيه)

  অর্থঃ- (আমি লক্ষ্য করলাম) অর্থাৎ তাঁর পোশাক মুবারকের দিকে (তাঁর তথা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সিলাইবিহীন লুঙ্গি মুবারক) সূক্ষ্ম বিবেচনায় সিলাইবিহীন লুঙ্গির দু’প্রান্ত (তাঁর নিসফু সাক্ব পর্যন্ত প্রলম্বিত ছিল।) ازاره এর ব্যাখ্যায় অত্র ইবারতে উল্লিখিত طرفيه ‘ত্বরফাইহি’ শব্দটি  দ্বারা বুঝা যায় যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর লুঙ্গি মুবারক ‘সিলাইবিহীন’ তথা ফাঁড়া ছিল। তাই সিলাইবিহীন বা ফাঁড়া লুঙ্গি খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণও সিলাইবিহীন লুঙ্গি পরিধান করতেন। যেমন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে। বুখারী শরীফের ‘কিতাবুল লিবাস’ ২য় জিঃ ২৪ পারা ৮৬০ পৃষ্ঠায় আছে,

حدثنا احمدبن يونس قال حدثنا زهير قال حدثنا موسى بن عقبة عن سالم عن ابيه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال من جر ثوبه خيلاء لم ينظر الله اليه يوم القيامة فقال ابو بكرن الصديق يا رسول الله ان احد شقى ازارى يسترخى الا ان اتعاهد ذلك منه فقال النبى صلى الله عليه وسلم لست ممن يصنعه خيلاء.

 অর্থঃ- হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আহমদ বিন ইউনূস রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত যুহাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মূসা বিন উক্ববা, হযরত সালিম বিন আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি তাঁর পিতা হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে, তিনি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পরিধানের কাপড় অহংকার বশতঃ (গিরার নিচে) ঝুলিয়ে চলে, আল্লাহ পাক ক্বিয়ামতের দিন তার দিকে (রহমতের সাথে) তাকাবেন না। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার সিলাইবিহীন লুঙ্গির দু’প্রান্তের একদিক ঝুলে পড়ে, যদি না আমি তাতে গিরা দেই। তখন হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, আপনি তাদের অন্তর্ভুক্ত নন, যারা অহংকার বশতঃ তা করে।” এরূপ হাদীছ শরীফ ‘জামউল্ ওসায়িল’ নামক কিতাবের ১ম জিঃ ২১৬ পৃষ্ঠায়ও উল্লেখ আছে। অত্র হাদীছ শরীফে

ان احد شقى ازارى يسترخى الا ان اتعاهد ذلك منه.

দ্বারা ‘সিলাইবিহীন লুঙ্গির দু’প্রান্তের একদিক’ বুঝানো হয়েছে, যা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পরিধানে ছিল। বুখারী শরীফের বিখ্যাত শরাহ ফতহুল বারী ১০ম জিঃ  ২৫৫ পৃষ্ঠায় এবং উমদাতুল ক্বারী ২১ জিঃ ২৯৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,

 قوله (فقال ابوبكر) هو الصديق (ان احد شقى ازارى) كذا بالتشنية للنسفى والكشميهنى. ولغير هما شق با لافراد والشق بكسر المعجمة الجانب ويطلق ايضا على النصف.

 অর্থঃ- “মুছান্নিফের উক্তি (হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আরজ করলেন) যিনি ছিদ্দীক্ব তথা চরম সত্যবাদী (নিশ্চয়ই আমার সিলাইবিহীন লুঙ্গির দু’প্রান্তের একদিক) আল্লামা নাসাফী এবং কাশমীহানী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা شقى শব্দটি দ্বিবচনের সহিত পড়েছেন। অন্যান্যগণ شق শব্দটি شين বর্ণে যের দিয়ে একবচন হিসাবে পড়েছেন। যার অর্থ হলো দু’প্রান্তের একপ্রান্ত। দু’দিকের অর্ধাংশ। বুখারী শরীফের বিশ্বখ্যাত শরাহ ‘ইরশাদুস্ সারী’ ৮ম জিঃ ৪১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

  (ان احد شقى) …… اى احد جنبى

অর্থাৎ (নিশ্চয়ই সিলাইবিহীন লুঙ্গির দু’প্রান্তের একদিক) ……..

অর্থাৎ ফাঁড়া লুঙ্গির একদিক। উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যা থেকেও স্পষ্ট হলো, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তথা ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের লুঙ্গি মুবারক ছিল সিলাইবিহীন, ফাঁড়া। যা খাছ সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সুন্নতে ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের অন্তর্ভুক্ত। সুন্নতী লুঙ্গির পরিমাপ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সিলাইবিহীন লুঙ্গি মুবারক ছিল লম্বায় সাড়ে চার হাত এবং প্রস্থ আড়াই হাত। যেমন, ‘শামায়িলুত তিরমিযী’-এর বিশ্ববিখ্যাত শরাহ ‘শরহে ইমাম আব্দুর রউফ মানাবী মিছরী’ এর ১ম জিঃ ২১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

قال الشهاب ابن حجر الهيتمى وكان اذاره صلى اله عليه وسلم اربعة اذرع وشبرا فى عرض ذراعين وشبر.

অর্থঃ- “হযরত ইমাম শিহাব ইবনে হাযার হাইছামী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সিলাইবিহীন, ফাঁড়া লুঙ্গি মুবারক ছিল সাড়ে চার হাত লম্বা এবং আড়াই হাত প্রস্থ।

وقيل اربعة اذرع ونصف فى عرض ذراعين وشبر.   অর্থঃ- “কেউ কেউ বলেন, আড়াই হাত প্রস্থের সাড়ে চার হাত লম্বা কাপড়।”

 وفطبقات ابن سعد من حديث ابى هريرة كان له اذار من نسج عمان طوله اربعة اذرع وشبر فى ذراعين وشبر.

অর্থঃ- ‘ত্ববাকাত ইবনে সা’দ’ নামক সীরাত গ্রন্থে আছে। হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফে রয়েছে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওমান দেশের তৈরি ইযার বা সিলাইবিহীন লুঙ্গি ছিল। যার দৈর্ঘ্য ছিল সাড়ে চার হাত, আর প্রস্থ ছিল আড়াই হাত।” অনুরূপ বর্ণনা “আল মাওয়াহিবুল্ লাদুন্নিয়া আলাশ্ শামায়িলিল্ মুহম্মদিয়া’এবং ‘খাছায়িলে নববী’ নামক কিতাবেও বর্ণিত রয়েছে। কোন কোন ইমামের মতে খাছ সুন্নতী সিলাইবিহীন লুঙ্গির দৈর্ঘ্য চার হাতের কথাও উল্লেখ আছে। হযরত ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘ওয়াফা’ নামক কিতাবে, আবুশ্ শাইখ তাঁর ‘কিতাবু আখলাক্বিল মুছতফা’ নামক কিতাবে এবং ‘দিমইয়াত্বী’ দৈর্ঘ্য চার হাত হওয়ার ব্যাপারে মত পেশ করেছেন। কিন্তু বিশুদ্ধ মতে, সাড়ে  চার হাত হওয়াই অধিক ছহীহ। লুঙ্গির দৈর্ঘ্যরে ব্যাপারে মতানৈক্য থাকলেও প্রস্থ যে আড়াই হাত খাছ সুন্নত এ ব্যাপারে কারো কোন ইখতিলাফ নেই। লক্ষণীয় যে, ইবারতে লুঙ্গির দৈর্ঘ্যের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তা সাড়ে চার হাত হবে। এর দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, সুন্নতী লুঙ্গি সিলাইবিহীন, ফাঁড়া হবে। অর্থাৎ ازار ইযার দ্বারা ফাঁড়া লুঙ্গিই উদ্দেশ্য। ازار (ইযার) শব্দের বিশ্লেষণঃ  ازار ‘ইযারুন’ শব্দটি একবচন। এর বহুবচন হলো   ازر‘উযুরুন’। এটি ইসমে জামিদ। যার অর্থ হলো, ইযার, লুঙ্গি, তহবন্দ, দেহের নিম্নাংশের পরিধেয় কাপড়, চাদর, দোপাট্টা, মৃত ব্যক্তির কাফনের ইযার বা লুঙ্গি ইত্যাদি।  ازار অর্থ মৃত ব্যক্তির কাফনের ইযার বা সিলাইবিহীন লুঙ্গি। যা সিলাইবিহীন বা ফাঁড়া দেয়া হয়। অথচ কিতাবে ফাঁড়া শব্দের আরবী উল্লেখ ছাড়াই শুধু ازار ‘ইযার’ শব্দ দ্বারা ফাঁড়া বা সিলাইবিহীন লুঙ্গি বুঝানো হয়েছে। যেমন, আল্ মুখতাছারুল্ কুদুরী কিতাবের ৪১ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছে,

 والسنة ان يكفن الرحل ف ثلاثة اثواب ازار وقسيص ولفافة ……… وتكفن المراة فى خسة اثواب ازار وقميص وخمار وخرقة تربط بها ثدياها ولفافه.  অর্থঃ- “সিলাইবিহীন ইযার বা লুঙ্গি, ক্বমীছ ও লিফাফা। এ তিন কাপড় দিয়ে পুরুষের কাফন দেয়া সুন্নত। ….. আর স্ত্রীলোককে পাঁচটি কাপড় দিয়ে কাফন দিবে। যথাঃ সিলাইবিহীন ইযার, ক্বমীছ, খিমার বা ওড়না, খিরক্বা বা সিনাবন্ধনী ও লিফাফা।” অনুরূপ বর্ণনা হিদায়া, ফতহুল ক্বদীর, কিফায়া, শরহুল ইনায়া, আইনী, শরহে বিক্বায়া, দুররুল্ মুখতার, রদ্দুল্ মুহতার, শামী, নূরুল ঈযাহ, মারাকিউল ফালাহ্, ফতওয়ায়ে আলমগীরী ইত্যাদি ফতওয়া ও ফিক্বাহ্র কিতাবসমূহে রয়েছে।  ازار অর্থ চাদর। যা সবসময় সিলাইবিহীন থাকে, চাদর কখনো সিলাইযুক্ত হয়না। ازار অর্থ দোপাট্টা যা মহিলারা পরিধান করে থাকে। সেটাও সিলাইবিহীন। অনুরূপভাবে লুঙ্গি, তহবন্দকে আরবীতে ازار বলা হয়। তাও সিলাইবিহীন। মুলতঃ ازار অর্থের সবকিছুই সিলাইবিহীন।। উল্লেখ্য, পৃথিবীর নির্ভরযোগ্য কোন অভিধানে ও ব্যাখ্যা গ্রন্থে ঞ্জব্জৎব্জ॥‘ইযার’ অর্থ সিলাইযুক্ত লুঙ্গি বলা হয় নাই। বরং সিলাইবিহীন, ফাঁড়া লুঙ্গি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সিলাইযুক্ত লুঙ্গি পড়েছেন এরূপ একটি দুর্বল দলীলও কেউ দেখাতে পারবেনা। অতএব, উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনার মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে,  (১) সিলাইবিহীন লুঙ্গি খাছ সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পরিধান করতেন।  (২) লুঙ্গি সুতী কাপড়ের হওয়া খাছ সুন্নত।  (৩) লুঙ্গি ‘নিছফু সাক্ব’ থেকে শুরু করে’ টাখনুর উপর পর্যন্ত স্থানের মধ্যেই ঝুলানো খাছ সুন্নত।  (৪) লুঙ্গি সাড়ে চার হাত লম্বা এবং আড়াই হাত প্রস্থ হওয়া সুন্নত। (৫) পুরুষদের টাখনুর নিচে ক্বামীছ, লুঙ্গি ও সেলোয়ার পরিধান করা হারাম আর মহিলাদের জন্য পায়ের পাতাও ঢেকে রাখা ফরয।

{দলীলসমূহঃ

(১) বুখারী শরীফ, (২) ফতহুল বারী, (৩) উমদাতুল ক্বারী, (৪) ইরশাদুস্ সারী, (৫) শরহুল্ কিরমানী, (৬) তাইসীরুল বারী, (৭) মুসলিম শরীফ, (৮) শরহুন নববী, (৯) শরহুল উবাই ওয়াস্ সিনূসী, (১০) আল মুফহিম, (১১) ফতহুল্ মুলহিম, (১২) আবূ দাঊদ শরীফ, (১৩) বযলুল মাজহুদ, (১৪) আউনুল মা’বুদ, (১৫) তিরমিযী শরীফ, (১৬) তুহফাতুল আহওয়াযী, (১৭) আরিদ্বাতুল্ আহওয়াযী, (১৮) উরফুশ্ শাযী, (১৯) শামায়িলুত তিরমিযী, (২০) জামউল ওয়াসায়িল, (২১) শরহে আব্দুর রউফ মানাবী মিছরী, (২২) আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া আলাশ্ শামায়িলিল্ মুহম্মদিয়া, (২৩) খাছায়িলে নববী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, (২৪) নাসায়ী শরীফ, (২৫) ইবনু মাজাহ শরীফ, (২৬) মিশকাত শরীফ, (২৭) মিরকাত, (২৮) আশয়াতুল লুময়াত, (২৯) লুময়াত, (৩০) শরহুত ত্বীবী, (৩১) আত্ তা’লীকুছ ছবীহ, (৩২) মুযাহিরে হক্ব, (৩৩) মিরয়াতুল মানাজীহ, (৩৪) মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, (৩৫) মুয়াত্তা ইমাম মালিক, (৩৬) মুওয়াত্তা ইমাম মুহম্মদ, (৩৭) সুনানুদ দারিমী, (৩৮) ওয়াফা, (৩৯) কিতাবু আখলাকিল মুস্তাফা, (৪০) ত্ববাকাতে ইবনে সা’দ, (৪১) আল্ মুখতাছারুল্ কুদুরী, (৪২) হিদায়া, (৪৩) ফতহুল ক্বদীর, (৪৪) কিফায়া, (৪৫) শরহুল ইনায়া, (৪৬) আইনী, (৪৭) শরহে বিকায়া, (৪৮) দুররুল্ মুখ্তার, (৪৯) রদ্দুল্ মুহতার শামী, (৫০) নূরুল ঈযাহ, (৫১) মারাকিউল ফালাহ্, (৫২) ফতওয়ায়ে আলমগীরী, (৫৩) লিসানুল আরব, (৫৪) লুগাতে হীরা, (৫৫) আল মু’জামুল ওয়াজীয, (৫৬) আল মিছবাহুল মুনীর, (৫৭) মুখতারুছ্ ছিহ্হাহ্, (৫৮) জামে’ উর্দূ লুগাত, (৫৯) ফরহঙ্গে আমেরা, (৬০) ফরহঙ্গে জাদীদ, (৬১) ফীরুযুল্ লুগাত, (৬২) মিছবাহুল্ লুগাত, (৬৩) আল মুনজিদ ফিল লুগাহ্ (৬৪) বয়ানুল লিসান, (৬৫) লুগাতে কেশওয়ারী, (৬৬) আল কামূসুল ইছতিলাহীল্ জাদীদ, (৬৭) আল কামূসুল মাদারিসী, (৬৮) আল মানার, (৬৯) আল কামুষূল মুহীত, (৭০) আল্  কাওছার ইত্যাদি।}

মুহম্মদ লুতফর রহমান,  মুন্সীগঞ্জ। মুসাম্মত রতনা বেগম শরীফ সুন্দর, পীরগাছা, রংপুর।

সুওয়ালঃ  জনৈক মুসলমান ব্যক্তি এক হিন্দু পীরের অনুসারী। ঐ ব্যক্তির পীর প্রায় ত্রিশ-পয়ঁত্রিশ বছর পূর্বে মারা যায়। ঐ ব্যক্তি এখনও বিবাহ করেনি। তাকে বিবাহ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে সে বলে থাকে, তার পীরের ইজাযত পায়নি তাই সে বিবাহ করবে না। ঐ ব্যক্তি নিজেকেও পীর/দয়াল বলে দাবী করে থাকে। তার মধ্যে সুন্নতের কোন পাবন্দি নেই। তার দাড়ি নেই। সেই কোর্তা পরিধান করেনা। কিন্তু মাঝে মধ্যে টুপি পরিধান করে থাকে। সে ঠিক মত নামায, রোযা আদায় করে না। পর্দা নেই। তার ভক্তদের মধ্যে নারী-পুরুষ আছে। সে টেলিভিশন দেখে থাকে, তার পীরের ছবিকে সামনে রেখে নামায আদায় করে থাকে। সে নিজে ও তার ভক্তরা ছবিকে সামনে রেখে ধ্যান-মগ্ন হয়। ঐ ব্যক্তি তার ভক্তদের নিয়ে বাৎসরিক একটা অনুষ্ঠান করে থাকে। উল্লিখিত সুওয়ালের বিবরণে যে সকল প্রশ্নের উদয় হয় তা হলো-  (১) হিন্দু পীরের অনুসরণ করা। (২) হিন্দু পীরের ইজাযত না পাওয়ার কারণে বিবাহ হতে বিরত থাকা। (৩) নিজেকে পীর বা দয়াল বলে দাবী করা। (৪) সুন্নতের  পাবন্দি না করা। (৫) নামায রোযা আদায় না করা। (৬) পর্দা না করা। (৭) টিভি দেখা ও ছবিকে সামনে রেখে ধ্যানমগ্ন হওয়া। এখন আমার সুওয়াল হচ্ছে- উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে শরীয়তের ফায়সালা কি? এবং তার থেকে মসজিদের জন্য জমি নেয়া জায়িয হবে কিনা? মৃত্যুর পর তার জানাযায় শরীক হওয়া যাবে কিনা? তার সঙ্গে সামাজিক কোন কাজে উঠা-বসা করা যাবে কিনা? তার কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা যাবে কিনা? কুরআন-সুন্নাহ্র দলীলসহ জাওয়াব দানে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ  আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,

لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة.

অর্থঃ- “অবশ্যই তোমাদের জন্য আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আহযাব/২১) অর্থাৎ মুসলমানকে মাথার তালু থেকে পায়ের তলা, হায়াত থেকে মউত পর্যন্ত আক্বাইদ-ইবাদত, মুয়ামালাত-মুয়াশারাত ইত্যাদি প্রতিক্ষেত্রেই একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। কাজেই কোন মুসলমানের জন্য কোন বিধর্মীকে অনুসরণ ও অনুকরণ করা, তার কথা-কাজের উপর ইস্তিকামত  থাকা, তাকে অনুসরণ করে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নির্দেশের খিলাফ চলা, ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত তরক করা, হারাম-নাজায়িয আমল করা, বেপর্দা হওয়া, ছবি তোলা, টিভি দেখা ইত্যাদি সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। সুওয়ালে উল্লিখিত প্রত্যেকটি প্রশ্নেরই জাওয়াব ধারাবাহিকভাবে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ।

(ধারাবাহিক)

(৩) নিজেকে পীর বা দয়াল বলে দাবী করা। এখানে দু’টি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একটি হচ্ছে, নিজেকে পীর বলে দাবী করা। আরেকটি হচ্ছে, দয়াল বলে  দাবী করা। প্রথমতঃ কোন ব্যক্তির পীর হওয়ার জন্য শরীয়ত কর্তৃক যে সব যোগ্যতা বা শর্ত-শারায়িত রয়েছে তা ব্যতীত নিজেই নিজেকে পীর দাবী করা জায়িয নেই। পীর হওয়ার জন্য শরীয়ত কর্তৃক যে শর্ত আরোপ করা হয়েছে তা হলো, কোন সালিক তরীক্বতের রাস্তায় প্রবেশ করে কামিল পীর ছাহেবের ছোহবত ইখতিয়ার করতঃ তরীক্বতের সবকাদি আদায় করার মাধ্যমে বিভিন্ন মাক্বাম বা মঞ্জিল অতিক্রম করে যখন তাকমীল বা পূর্ণতায় পৌঁছেন তখন আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশে পীর ছাহেব তাঁকে পূর্ণতার যে সনদ প্রদান করেন তার নামই খিলাফত।  আর যিনি খিলাফত লাভ করেন তাকে খলীফা বলা হয়। প্রত্যেককে খিলাফত লাভ করে খলীফা হয়ে পীর হতে হয়। খিলাফত লাভ না করে কেউই পীর হতে পারেনা।  অতএব (১) প্রথমত তাকে কোন হক্বানী পীর ছাহেবের তরফ থেকে খিলাফতপ্রাপ্ত হতে হবে। (২) তাঁর আক্বীদা আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুরূপ হতে হবে। (৩) আমলের দিক থেকে সুন্নতের পাবন্দ হতে হবে। (৪) ইল্মের দিক থেকে এতটুকু ইল্মের অধিকারী হতে হবে যার দ্বারা তিনি নিজেকে এবং তাঁর অধীনস্থ মুরীদদেরকে বিদ্য়াত-বেশরা তথা কুফরী-শেরেকী থেকে ফিরিয়ে হক্ব মতে পথে দায়িম-কায়িম রাখতে পারেন।  কাজেই উল্লিখিত যোগ্যতা বা শর্ত-শারায়িত ব্যতীত কোন ব্যক্তি যদি পীর দাবি করে তাহলে সে চরম মিথ্যাবাদী ও প্রতারক রূপে সাব্যস্ত হবে। এর থেকে তাকে খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। অন্যথায় সে  কঠিন গোনাহে গুনাহগার হবে। দ্বিতীয়তঃ কোন মুসলমানের জন্য দয়াল দাবী করা জায়িয নেই। কেননা হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা গোশাই বা ধর্মগুরু তাদেরকে তারা দয়াল বা দয়াল বাবা বলে থাকে। কোন মুসলমানের জন্য কোন বিধর্মীদের সাথে তাশাব্বুহ বা সাদৃশ্য রাখা জায়িয নেই। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

ليس منا من تشبه بغيرنا

অর্থঃ- “ঐ ব্যক্তি আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয় যে অন্য ধর্মের সাথে সাদৃশ্য বা মিল রাখে। (তিরমিযী, মিশকাত) এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন,

 ليس منا من تشبه بغيرنا.

  অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা কাফিরদের অনুরূপ হয়োনা।” (সূরা আলে ইমরান/১৫৬) আল্লাহ পাক আরো বলেন,

يايها الذين امنوا لاتكونوا كالذين كفروا.  অর্থঃ- “তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে সম্বোধন কর না, কেউ ঈমান আনার পর তাকে মন্দ নামে সম্বোধন করা গুনাহ্র কাজ।” (সূরা হুজুরাত/১১) আল্লাহ পাক আরো বলেন,

ولاتنابزوا بالالقاب بئس الاسم الفسوق بعد الايمان.   অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা কাফিরদের অনুসরণ কর তাহলে তারা তোমাদেরকে হক্ব থেকে ফিরিয়ে দিবে। এতে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।” (সূরা আলে ইমরান/১৪৯) কাজেই কোন মুসলমানের জন্যেই দয়াল দাবী করা জায়িয নেই। যে দাবী করবে সে চরম গোমরাহ্র অন্তর্ভুক্ত। তাকে যারা অনুসরণ করবে তারাও চরম গোমরাহ হবে। অতএব, কোন ব্যক্তি নিজে নিজে পীর দাবী করলে তার দাবী গ্রহণযোগ্য হবেনা ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত শরীয়তের উল্লিখিত শর্ত-শারায়িত মুতাবিক খিলাফতপ্রাপ্ত না হয়। আর কোন মুসলমানের জন্যই কোন প্রকারেই দয়াল দাবী করা জায়িয নেই। ইহা সস্পূর্ণ হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। (চলবে)  ছূফী মুহম্মদ শফিকুল ইসলাম ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া। মুহম্মদ ইমতিয়াজ, চট্টগ্রাম।  সুওয়ালঃ  হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ডিসেম্বর/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে আখিরী যোহ্র পড়া সম্পর্কে নিম্নোক্ত জিজ্ঞাসা-সমাধান ছাপা হয়- জিজ্ঞাসাঃ অনেককে দেখা যায়, জুম্আর নামাযের পর অর্থাৎ বা’দাল জুম্আর পর … আখেরী যোহর পড়ে থাকেন। … এ … নামায পড়ার ব্যাপারে শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি কি?……… সমাধানঃ জুম্আর নামায পড়ার পর আবার আখেরী বা সতর্কতামূলক যোহর পড়া বৈধ নয়। কেননা, যেখানে জুম্আর নামায পড়া বৈধ, সেখানে সতর্কতামূলক যোহর পড়ার দরকার নেই। কিন্তু যেখানে জুম্আ পড়া বৈধ নয়, সেখানে জুম্আর পরিবর্ততে জামাআতের সাথে যোহর পড়াই  ওয়াজিব। কাজেই সতর্কতামূলক যোহর বৈধ হওয়ার কোন অবকাশ নেই।           এখন আমার সুওয়াল হলো- আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র অর্থাৎ সতর্কতামূলক যোহর পড়া সম্পর্কে হাটহাজারীর অখ্যাত মাসিক  পত্রিকার উক্ত জিজ্ঞাসার সমাধান সঠিক হয়েছে কি? নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লাহ্সহ সঠিক জাওয়াব দিবেন। জাওয়াবঃ  আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র (অর্থাৎ সতর্কতামূলক যোহর) পড়া সম্পর্কে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত  মাসিক পত্রিকার উক্ত জিজ্ঞাসার সমাধান সম্পূর্ণই ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং ক্ষেত্র বিশেষে কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ, প্রথমতঃ ‘‘জুম্আর নামায পড়ার পর আবার আখেরী যোহর বা সতর্কতামূলক যোহর পড়া যে বৈধ নয়’’ একথা কোথায় উল্লেখ আছে তা হাটহাজারীর অখ্যাত পত্রিকায় কিতাবের নাম ও ইবারতসহ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেনি।  সুতরাং হাটহাজারীর উক্ত দলীলবিহীন বক্তব্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা কোন কথা বলতে হলে দলীল দিয়েই বলতে হবে। বিনা দলীলে মনগড়াভাবে বললে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না।        দ্বিতীয়তঃ আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়ার নির্দেশ শুধুমাত্র জুমুয়ার নামায বৈধ বা অবৈধ হওয়ার কারণে দেয়া হয়নি। বরং ইমাম,মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ প্রধানতঃ দুটি কারণেই জুমুয়ার দিন জুমুয়ার নামায আদায় করার পর চার রাকায়াত “আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র” পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রথম কারণ

মিছর বা শহরের ব্যাখ্যায় ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মধ্যে ইখতিলাফ বা মতভেদ হওয়ায়।  দ্বিতীয় কারণ   ইমাম আবূ ই্উসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মধ্যে “এক শহরে একাধিক মসজিদে জুমুয়া জায়িয হওয়ার ব্যাপারে ইখতিলাফ বা মতভেদ হওয়ায়।” উপরোক্ত ইখতিলাফ বা মতভেদের কারণে পরবর্তী ইমাম-মুজতাহিদ বা ফক্বীহ্গণ ইজতিহাদ করতঃ ফতওয়া দেন যে, ইহ্তিয়াত বা সতর্কতার জন্যে জুমুয়ার নামায আদায় করার পর চার রাকায়াত ইহ্তিয়াতুয্ যোহর বা আখিরী যোহরের নিয়তে পড়া মুস্তাহাব বা “মুস্তাহ্সান” অর্থাৎ উত্তম।           যেমন, বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাব “রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবের ২য় খ-ের ১৪৫ ও ১৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

لما ابتلى أهل مرو باقامة الجمعتين فيها مع اختلاف العاماء فى جواز هما أمر أئمتهم لالأربع بعدها حتما احتيا طا لايمنح الشريعة الاحتياط للتقوى.

অর্থঃ- “একই শহরে একাধিক মসজিদে জুমুয়া জায়িয হওয়ার ব্যাপারে উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ইখতিলাফ থাকা সত্ত্বেও যখন শহরবাসীগণ একই শহরে একাধিক মসজিদে জুমুয়া পড়তে লাগলেন তখন ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাদেরকে ইহ্তিয়াত বা সতর্কতার জন্য জুমুয়ার পর চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র নামায ওয়াজিব হিসেবে আদায় করার জন্য নির্দেশ দেন। কেননা তাক্বওয়ার জন্য ইহ্তিয়াত বা সাবধানতা অবলম্বন করতে শরীয়ত নিষেধ করেনি।”        অতএব, উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক ইবারতের  মাধ্যমে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে এটাই  প্রমাণিত হলো যে, জুম্আর নামায পড়ার পর আবার আখেরী যোহর বা সতর্কতামূলক যোহর ওয়াজিব হিসেবেই আদায় করতে হবে। সুতরাং হাটহাজারীর অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য যে সম্পূর্ণই মিথ্যা ও দলীল বিহীন তা সুস্পষ্ট ভাবেই প্রমাণিত হলো।          তৃতীয়তঃ সন্দেহ থেকে বাঁচার জন্য ইহ্তিয়াত বা সতর্কতা অবলম্বন করে চার রাকায়াত ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র বা আখিরী যোহরের নামায পড়ার অনুমতি শরীয়তই প্রদান করেছে।              যেমন, “আন্ নাহরুল ফায়িক্ব” কিতাবে উল্লেখ আছে,

أنه لاينبغى التردد فى ندبها على القول بجواز التعدد خروجا عت الخلاف اه وفى شرح الباقانى هوا الصحيح وبالجملة فقد ثبت أنه ينبغى الاتيان بهذه الأربع بعد الجمعة، لكن بقى الكلام فى تحقيق أنه واجب أومندوب؟ قال المقدسى: ذكر ابن الشحنة عن جده التصريح بالندب، وبحث فيه بأنه ينبغى أن يكون عندمجرد التوهم، أما عند قيام الشك والاشتباه فى صحة الجمعة فالظاهر الوجوب، ونقل عن شيخه ابن الهمام مايفيده.

অর্থঃ- “একই শহরে একাধিক জুমুয়া জায়িয একথা স্বীকার করলেও ইখতিলাফী মাসয়ালায় সন্দেহ দূর করার জন্য আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়া যে মুস্তাহাব হবে, এতে সন্দেহ করা উচিৎ নয়। “শরহুল বাক্বানী’তে লিখিত আছে, এটা ছহীহ্ মত।         মূলকথা, উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়াই উচিৎ। কিন্তু এখন বিবেচনার বিষয় হচ্ছে যে, আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র ওয়াজিব না মুস্তাহাব? (সমস্যার সমাধানে) মুকাদ্দাসী বলেছেন, ইবনে শিহনা রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর দাদা হতে এটা (আখিরী যোহ্র) মুস্তাহাব হওয়ার কথা ব্যক্ত করেছেন। অতঃপর তিনি বলেছেন যে, মনের সংশয়-দুশ্চিন্তা নিবারণের জন্য (আখিরী যোহ্র) পড়া মুস্তাহাব হবে। তবে জুমুয়া ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে অধিক সন্দেহ হলে (অর্থাৎ শহর বা অন্যান্য শর্তের প্রতি সন্দেহ হলে) ফতওয়া গ্রাহ্য মতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়া ওয়াজিব হবে। অতঃপর তিনি তাঁর শাইখ আল্লামা ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে আখিরী যোহ্র ওয়াজিব হওয়ার মত প্রকাশ করেন।” (রদ্দুল মুহতার, শামী ২য় জিঃ ১৪৬ পৃষ্ঠা, শরহুল বাকানী,  আখিরী যোহ্র তত্ত্ব  ২২ পৃষ্ঠা)        “ফাতাওয়ায়ে ফাইদুর রসূল” কিতাবের ১ম খ-ের ৪১৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উদূ লেখা ঢুকবে……………….

অর্থঃ- “(একই শহরে একাধিক মসজিদে) জুমুয়া ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ থাকার কারণে সে স্থানে চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র পড়া মুস্তাহাব। কিন্তু কোন স্থান শহর হওয়ার ব্যাপারে অধিক সন্দেহ হলে, সে অবস্থায় সেখানে আখিরী যোহ্র পড়া ওয়াজিব।”       তাছাড়া সন্দেহ হতে বাঁচার জন্য ইহ্তিয়াত বা তাকওয়া অবলম্বন করাকে হাদীস শরীফও সমর্থন করে।          যেমন, হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

فمن اتقى الشبهات استبرأ لدينه وعرضه.

 অর্থঃ- “যে ব্যক্তি সন্দেহ হতে বাঁচলো সে তার দ্বীন ও সম্মানকে হিফাযত করলো।” (বুখারী, মুসলিম) এ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় ফিক্বাহ্র কিতাবসমূহে উল্লেখ আছে,

لايضنع شرعية الاحتياط للتقوى.

অর্থঃ- “শরীয়তে তাক্বওয়ার জন্য ইহ্তিয়াত বা সাবধানতা অবলম্বন করতে নিষেধ নেই।” (কবীরী, ছগীরী, শামী) “শামী” কিতাবে উল্লেখ আছে,

الاولى هو الاحتياط.

অর্থঃ- “ইহ্তিয়াত বা সাবধানতা অবলম্বন করাই হচ্ছে অধিক উত্তম।”     “ফতওয়া আলমগীরী” কিতাবের ১ম খ-ের ১২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

والاحتياط واحب فى العبادات.

অর্থঃ- “ইবাদতে ইহ্তিয়াত বা সাবধানতা অবলম্বন করা ওয়াজিব।” সুতরাং প্রমাণিত হলো, সন্দিহান অবস্থায় সন্দেহ থেকে বাঁচার জন্য আখিরী যোহ্র পড়া ক্ষেত্রবিশেষে জরুরী বা ওয়াজিব হবে এবং ক্ষেত্রবিশেষে উত্তম বা মুস্তাহাব হবে।  চতুর্থতঃ উপরোক্ত দু’টি বিষয়ে ইখতিলাফ থাকায় অবশ্যই সন্দেহ থেকে যায়। সুতরাং কোন স্থান মিছর বা শহর হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ থাকায় জুমুয়ার পর চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়া ওয়াজিব। আর যদি শহর হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ না থাকে কিন্তু একই শহরে একাধিক মসজিদে জুমুয়া জায়িয হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ থাকায় সেখানে জুমুয়ার পর চার রাকায়াত ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র বা আখিরী যোহ্র পড়া মুস্তাহ্সান, মুস্তাহাব, আওলা বা উত্তম। আর সেটাই ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে ইহ্তিয়াত্ বা সতর্কতামূলক চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

পঞ্চমতঃ শরীয়তের দলীল হচ্ছে- কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস। এদের জন্য আফসুস! এরা শরীয়তের দলীল সম্পর্কেও অবগত নয়। আর ইজমা ও ক্বিয়াসের বাস্তবরূপ হচ্ছে ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবগুলো। তাই আমরা ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবের অনেক দলীল-আদিল্লাহ্ দ্বারা প্রমাণ করেছি।   শুধু তাই নয় “বাহরুর রায়িক”  কিতাবে আখিরী যোহ্রের নিয়ত কিভাবে করবে, তাও উল্লেখ করা হয়েছে।  যেমন “বাহরুর রায়িক্ব” কিতাবের ২য় খ-ের  ১৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 هويت اخر ظهر ادركت وقته ولم اصله بعد.

অর্থঃ- “আমি আখিরী যোহ্রের নিয়ত করছি, যার ওয়াক্ত পেয়েছি কিন্তু এখনও আদায় করিনি।”

মূলকথা হলো, আখিরী যোহর সম্পর্কিত হাটহাজারীর অখ্যাত পত্রিকার উপরোক্ত বক্তব্য অশুদ্ধ তো বটেই বরং তা দলীলবিহীন, প্রতারণামূলক ও সাথে সাথে ইমাম, মুজতাহিদগণের নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ।  ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য ফত্ওয়া হলো, জুমুয়ার নামাযের পর চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র পড়া ক্ষেত্র বিশেষে ওয়াজিব আর ক্ষেত্র বিশেষে মুস্তাহাব বা উত্তম, জায়িয তো বটেই, যা  শরীয়ত দ্বারা তথা নির্ভরযোগ্য ও অনুসরণীয় ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবের বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। সেটাকে অবৈধ বলা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। অতএব হাটহাজারীর অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য কুফরীমূলক হয়েছে। [বিঃ দ্রঃ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ১০, ২৮, ৩২, ৪৫, ৫৯, ৯৭, ৯৮, ৯৯, ১০০ ও ১১৩তম সংখ্যাগুলো পাঠ করুন। সেখানে মাসিক মুঈনুল ইসলামের আখিরী যোহ্র সম্পর্কে ভুল বক্তব্য খণ্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে।]   এবার চতুর্থবারের মত মাসিক মুঈনুল ইসলামের ভুল বক্তব্য খ-ন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হলো।]

{দলীলসমূহঃ (১) ফতওয়ায়ে আলমগীরী, (২) বাহরুর রায়িক, (৩) শামী, (৪) দুররুল মুখতার, (৫) রদ্দুল মুহতার, (৬) মুহীত্ব, (৭) ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া, (৮) কাফী, (৯) আইনী, (১০) গায়াতুল আওতার, (১১) কবীরী, (১২) ছগীরী, (১৩) কিতাবুল ফিক্বাহ্ আলা মাযাহিবিল আরবায়া, (১৪) শরহুন নিক্বায়া, (১৫) ফতহুল ক্বাদীর, (১৬) ফতওয়ায়ে আযীযী, (১৭) বাহারে শরীয়ত, (১৮) ইলমুল ফিক্বাহ্, (১৯) রুকুনুদ্দীন, (২০) ফতওয়ায়ে আমিনিয়া, (২১) কিন্ইয়াহ্, (২২) মারাকিউল ফালাহ্, (২৩) শরহ্ বিক্বায়া ইত্যাদি। }  মুসাম্মত সানজিদা আক্তার সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত মুহম্মদপুর, ঢাকা।

সুওয়ালঃ  অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়- জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না।  তাদের সকল আমল হবে খুবই নিখূঁত ও সুন্দর। তাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে, তাদের রোযা দেখে তোমাদের রোযাকে তোমরা তুচ্ছ ও নগণ্য মনে করবে। তাদের আমল দেখে তোমরা তোমাদের আমলকে হেয় মনে করবে, তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার নিচে যাবেনা। তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন-প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। এদলের আমল যতই তোমাদেরকে আকৃষ্ট করুক না কেন, কখনই তাদের দলে যাবেনা। কারণ প্রকৃতপক্ষে এরা হবে ইসলাম হতে খারিজ, দ্বীন হতে বহির্ভূত। তীর যেমন ধনুক হতে বের হয়ে যায় সে আর কখনও ধনুকের নিকট ফিরে আসেনা। তেমনিই এরা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে, আর কখনও দ্বীনের পথে, কুরআন ও সুন্নাহ্ পথে ফিরে আসবেনা। আমার প্রশ্ন হল, উপরোক্ত হাদীছ ছহীহ্ কি-না? ছহীহ্ হলে এ দ্বারা উদ্দেশ্য কারা? উক্ত হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতের কোন সম্পর্ক আছে কি-না? অনেকে এই হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতকে জড়াতে চান। উক্ত হাদীসের সঙ্গে তাবলীগ জামাতকে জড়ানো সঠিক কি-না? জবাবঃ প্রশ্নে বর্ণিত হাদীছ ছহীহ্। মুহাদ্দিছীনে কেরাম উক্ত হাদীছসহ এ জাতীয় হাদীছসমূহের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এ সব হাদীছ দ্বারা একটি নির্ধারিত জামাত বা খারিজী ফেরক্বা নামে পরিচিত তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর খেলাফত আমলে এই হাদীছসমূহের বাস্তবতা এবং খাওয়ারেজদের অবস্থার সমন্বয় ঘটেছিল। যার দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে বলা চলে যে, এ হাদীছসমূহ দ্বারা একমাত্র খাওয়ারেজদেরকেই বুঝানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণাদি ছাড়া অন্য কোন জামাতকে এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করা যাবেনা। কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়া তাবলীগ জামাতকে এই হাদীছসমূহের মেসদাক বা উদ্দেশ্য বানানো, তাদেরকে খাওয়ারেজ বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে মারাত্মক অন্যায় ও অপরাধ। তাবলীগের নিয়মনীতি ও কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই। বর্তমান বিশ্বে আল্লাহ্ তা’আলা তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে পথহারা, ঈমানহারা, হেদায়েত থেকে বঞ্চিত অসংখ্য মানুষকে হেদায়েত করেছেন, ঈমান আনার তাওফিক দান করেছেন। এছাড়া এ জামাতের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে অসংখ্য জগদ্বিখ্যাত আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ। অতএব, তাবলীগ জামাতকে খারেজী জামাত বলা, মিথ্যা অপবাদ বৈ কিছুই নয়। (ফতহুল বারী ১২ঃ৩৫০, আল মিরকাত ৭ঃ১০৭) উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো- (১) উল্লিখিত হাদীছ শরীফে বর্ণিত গুণাবলী প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে আছে কি? (২) উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা কি শুধু খারিজী ফিরক্বার লোকদেরকেই বুঝানো হয়েছে? নাকি খারিজীদের ন্যায় আক্বীদা পোষণকারীদের ক্ষেত্রেও এ হাদীছ শরীফ প্রযোজ্য? (৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য? (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি? (৫) কুরআন-সুন্নাহ্র কোথাও প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করার নির্দেশ আছে কি? প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করা কুরআন-সুন্নাহ্ মতে জায়িয কিনা? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী। জাওয়াবঃ  প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কিত উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।  শুধু তাই নয়, তারা প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের সাফাই গাইতে গিয়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যা করেছে। সাথে সাথে “ছয় উছূলীদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী কোন আক্বীদা-আমল নেই” বলে তাদের নির্লজ্জ দালালী করে নিজেদেরকে অপব্যাখ্যাকারী ও মিথ্যাবাদীরূপে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিক দলীলভিত্তিক আলোচনা করলেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে। তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-  (ধারাবাহিক) ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে  উল্লিখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা  ও মিথ্যাচারীতার খ-নমূলক জবাব-৩

 প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত  বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, পর্যায়ক্রমে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলোর সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো-  প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ৬ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা আরো বলে থাকে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “গারে হেরায়” চিল্লা দেয়ার ওসীলাই কুরআন ও নুবুওওয়াত প্রাপ্ত হয়েছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে তাদের কিতাবে বিবৃত হয়েছে- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ৪০ দিন পর্যন্ত “গারে হেরা” পর্বতে থাকিয়া আল্লাহ পাক-এর ধ্যান ও যেকেরে চিল্লা দিলেন, যাহার ফলে তিনিও কুরআন ও নুবুওওয়াত প্রাপ্ত হইলেন। (তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব পৃষ্ঠা-৮৯, লেখক ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা ও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ইহানত ও  মিথ্যা তোহ্মতের শামিল, যা সম্পূর্ণ কুফরী। প্রথমতঃ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চিল্লা হিসেবে গারে হেরাতে কখনো একাধারে চল্লিশ দিন ব্যয় করেননি। বরং যখন তাঁর বয়স মুবারক তেত্রিশ থেকে চৌত্রিশ, তখন থেকে তিনি মাঝে মাঝে গারে হেরাতে গিয়ে মুরাক্বাবা করতেন। যা তাঁর সীরাত কিতাবসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে। মূলতঃ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা তাদের প্রচলিত চিল্লাকে সুন্নত প্রমাণ করতে গিয়ে আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, যা কুফরী হয়েছে। যে প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,

من كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من النار.

অর্থঃ- “যে আমার নামে মিথ্যা বলে, সে যেন দুনিয়ায় থাকতেই তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়।” (বুখারী, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল ক্বারী, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব) দ্বিতীয়তঃ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে, গারে হেরাতে ধ্যান ও যিকিরে চিল্লা দেয়ার ফলে কুরআন ও নুবুওওয়াত দেয়া হয়েছে, তাদের এ কথাও মিথ্যা, অশুদ্ধ ও কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ কোন নবীকে নুবুওওয়াত ও কোন রসূলকে রিসালত দেয়ার জন্য রিয়াযত-মুশাক্কাত, মুরাক্বাবা-মুশাহাদা, শর্ত করা হয়নি। অর্থাৎ রিয়াযত-মুশাক্কাত বা মুরাক্বাবা-মুশাহাদার বিনিময়ে বা বদলে অথবা কোশেশের কারণে কাউকেও নুবুওওয়াত বা রিসালত দেয়া হয়নি। বরং বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, রিয়াযত-মুশাক্কাত, মুরাক্বাবা-মুশাহাদা ইত্যাদি কোশেশের দ্বারা ওলীআল্লাহ হওয়া যায়, নবী-রসূল হওয়া যায়না। নবী-রসূল আলাইহিস্ সালামগণ সম্পর্কে এ প্রকার শর্ত আরোপ করা তাঁদের শানের খিলাফ, যদ্বারা তাঁদেরকে ইহানত করা হয। আর নবী-রাসূল আলাইহিস্ সালামগণকে ইহানত করা কাট্টা কুফরী। উল্লেখ্য যে, কাফিরেরা নবী-রসূল আলাইহিস্ সালামগণ সম্পর্কে নানা প্রকার মন্তব্য পেশ করার ফলে কে নবী-রসূল হবেন, সে প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,

الله اعلم حيث يجعل رسالته.

অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাকই সবচেয়ে অধিক জানেন, কোথায় তাঁর রিসালত রাখতে হবে। অর্থাৎ কাকে নবী এবং কাকে রসূল হিসেবে মনোনীত করতে হবে, তা আল্লাহ্ পাক সমধিক জ্ঞাত।” (সূরা আনআম/১২৪) আল্লাহ পাক ‘সূরা হজ্জের’ ৭৫নং আয়াত শরীফে আরো বলেন,

 الله يصطفى من الملئكة رسلاومن الناس.

 অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক ফেরেশ্তা ও মানুষের মধ্য থেকে রসূল মনোনীত করেন।” মূলতঃ উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, সমস্ত নবী-রাসূল আলাইহিস্ সালামগণকে আল্লাহ পাকই মনোনীত করেন। (সমূহ তাফসীরের কিতাব) যদি তাই হয় তাহলে যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যাঁর শান সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ পাকই ‘সূরা ইমরানের’ ৮১নং আয়াত শরীফে বলেন,

واذ اخذ الله ميثاق النبين لما اتيتكم من كبت وحكمة ثم جاء كم رسول مصدق لما معكم لتؤمنن به ولتنصرنه قال ءاقررتم واخذتم على ذلكم اصرى قالوا اقررنا قال فاشهدوا وانا معكم من الشهدين.

অর্থঃ- “এবং যখন আল্লাহ পাক নবীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার বা শপথ গ্রহণ করলেন যে, আমি কিতাব ও হিকমত থেকে তোমাদেরকে যা দান করেছি। অতঃপর তোমাদের নিকট তোমাদের কিতাবকে সত্যে প্রতিপাদন করার জন্য কোন রসূল আসেন, তখন নিশ্চয়ই সে রসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তাঁকে সাহায্য করবে। আল্লাহ্ পাক বললেন, তোমরা কি শপথ স্বীকার করে এবং এ শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহণ করে নিলে? তাঁরা বললেন, আমরা স্বীকার করে নিলাম। আল্লাহ্ পাক বললেন, তোমরা স্বাক্ষী থাক এবং আমিও তোমাদের সাথে স্বাক্ষী রইলাম।” এ আয়াত শরীফের তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে এই যে, ওয়াদা নেয়া হয়েছে তা কোথায় নেয়া হয়েছে সে বিষয়ে ইখতিলাফ থাকলেও অর্থাৎ তা রোজে আযলে, আলমে আরওয়াহ্য় বা অন্য কোথাও হয়ে থাকলেও তবে এ বিষয়ে সকলে একমত যে, ওয়াদা যেখানেই নেয়া হোক না কেন, তবে তা সৃষ্টির শুরুতে নেয়া হয়েছে। (সমূহ তাফসীরের কিতাব) আর হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قالوا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم متى وجبت لك النبوة قال كنت نبيا وادم بين الروح والجسد.

অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, হে আল্লাহ পাক-এর রসূল! আপনি কখন থেকে নবী? তিনি বললেন, “আমি তখনো নবী ছিলাম, যখন হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম রূহ্ এবং শরীরে ছিলেন।” (তিরমিযী, মিশকাত, উরফুশ্ শাজী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী, মায়ারেফুস্ সুনান, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, শরহুত্ব ত্বীবী)  অন্য হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে,

كنت نبيا وادم بين الماء والطين.

 অর্থঃ- “আমি তখনো নবী ছিলাম, যখন হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম মাটি ও পানিতে ছিলেন।” উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফের মাধ্যমে এ কথাই সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যে, তিনি তখনো নবী ছিলেন, যখন হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর সৃষ্টিই হয়নি। আর কোন নবী আলাইহিস্ সালামকে নুবুওওয়াত দেয়া হয়নি, কোন রসূলকে রিসালত দেয়া হয়নি, আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রিসালতের উপর ঈমান না আনা পর্যন্ত। অথচ সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিস্ সালাম-এর নুবুওওয়াত ও রিসালত দেয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে সেই রোজ আযলেই। (সমূহ তাফসীরের কিতাব)  তাহলে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের এ কথা কি করে শুদ্ধ হতে পারে যে, আল্লাহ পাক-এর রসূল ও হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নুবুওওয়াত দেয়া হয়েছে, গারে হেরাতে ধ্যান ও যিকিরে চিল্লা দেয়ার কারণে। (নাঊযুবিল্লাহ)

আর কুরআন শরীফ, যা আল্লাহ্ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দিয়েছেন, তা সম্পর্কেও তাদের বক্তব্য মিথ্যা ও কাট্টা কুফরী। কারণ, গারে হেরায় যিকির ও ধ্যানে চিল্লা দেয়ার কারণে আল্লাহ্ পাক, আল্লাহ পাক-রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কুরআন শরীফ দেননি বরং আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ পাক-এর রসূল হিসেবে তৈরী করেছেন, সে জন্যই কুরআন শরীফ দিয়েছেন। মূলতঃ তাদের উক্ত বক্তব্য আল্লাহ পাক উনার রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ, তোহমত ও তাঁর শানের ইহানত বৈ কিছুই নয়; যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। (চলবে)

সাইয়্যিদ  মুহম্মদ  তীতুমীর, সাতক্ষীরা।

মুহম্মদ ফয়জুল্লাহ্, লালমনিরহাট।

মুহম্মদ  নুরুল্লাহ্  খন্দকার,  সিরাজগঞ্জ।

সুওয়ালঃ   আমরা আগে আলিমগণের মুখে শুনতাম যে, টিভি দেখা জায়িয নেই। কিন্তু বর্তমানে দেখতে পাচ্ছি অনেক মাওলানা ছাহেবরা টিভিতে অনুষ্ঠান করছে। বিশেষ করে মানুষ যাদেরকে বড় মাওলানা মনে করে তারাই সেটা করছে। তাদের সে অনুষ্ঠানগুলো এ.টি.এন টিভি চ্যানেলসহ আরো অনেক চ্যানেলে প্রায়ই দেখানো হয় এবং তাতে ইসলামের অনেক শিক্ষণীয় বিষয় আছে বলে অনেকেই তা দেখে থাকে। এছাড়া মাসিক মদীনা মে/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যার ২১নং প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, “টেলিভিশন একটি যন্ত্রমাত্র। খোলা চোখে যা কিছু দেখা জায়িয বা মুবাহ টেলিভিশনের পর্দাতেও সেগুলি দেখা জায়েয বা মুবাহ। শিক্ষণীয় কিছু দেখলে বা শুনলে পূণ্য হওয়ারই কথা। অপর দিকে পাপযুক্ত যেসব দৃশ্য দেখানো হয় সেগুলি দেখা ও শোনাতে অবশ্যই গোনাহ্ হবে।”  অনুরূপ মাসিক রাহমানী পয়গাম জুলাই/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যার এক জিজ্ঞাসার জবাবে বলা হয়েছে, “টিভি দেখার শরয়ী মূলনীতি হলো, যে সকল বস্তু বা বিষয়াবলী (টিভির পর্দা, রেডিও ইত্যাদির মাধ্যম ছাড়া) সরাসরি দেখা ও শুনা জায়েয সেগুলো টিভির পর্দা, রেডিও ইত্যাদিতেও দেখা বা শুনা জায়িয। আর যে সকল বস্তু বা বিষয়াবলী সরাসরি দেখা ও শুনা জায়েয নেই সেগুলো টিভি, রেডিও ইত্যাদিতেও দেখা-শুনা জায়েয নেই।”

এখন আমার জানার যে বিষয় তাহলো- (১) মাসিক মদীনা পত্রিকার প্রশ্নের উত্তর ও মাসিক রাহমানী পয়গাম পত্রিকার জিজ্ঞাসার জবাব শরীয়ত সম্মত হয়েছে কিনা? (২) ছবি কাকে বলে ও ছবির সংজ্ঞা কি? (৩) শরীয়তে টি.ভি দেখা জায়িয কিনা?  (৪) নাজায়িয পদ্ধতিতে ইল্মে দ্বীন শিক্ষা করা অর্থাৎ ইল্মে দ্বীন  শিক্ষার জন্য টিভি দেখা, শোনা ও টিভি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা শরীয়তসম্মত কিনা? (৫) (ক) নাজায়িয হলে যে সকল মাওলানা ছাহেব অনুষ্ঠান করে ও দেখে তাদের সম্পর্কে শরীয়তের ফতওয়া কি?(খ) এদেরকে আলিম বলা যাবে কিনা? এদের পিছনে নামায পড়া যাবে কিনা? কুরআন-সুন্নাহ্র দলীল সহকারে জাওয়াব দিলে খুবই উপকৃত ও খুশী হব।

জাওয়াবঃ  সুওয়ালে বর্ণিত সুওয়ালকারীর পাঁচটি সুওয়ালের জাওয়াবই ধারাবাহিকভাবে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ্।  (ধারাবাহিক) (৫) (ক) নাজায়িয হলে যে সকল মাওলানা ছাহেব অনুষ্ঠান করে ও দেখে তাদের সম্পর্কে শরীয়তের ফতওয়া কি?  এর জবাবে বলতে হয় যে, টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করা ও টেলিভিশন দেখা উভয়টাই শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িযের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই যে সমস্ত মাওলানা ছাহেবরা টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করে ও টেলিভিশন দেখে তারা দু’ শ্রেণীতে বিভক্ত। প্রথম শ্রেণীঃ যারা টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করা ও টেলিভিশন দেখা হারাম জেনে করে ও দেখে তারা শরীয়তের দৃষ্টিতে ফাসিকের অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয় শ্রেণীঃ যারা টেলিভিশন দেখা ও টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করা জায়িয মনে করে শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদের উপর কুফরীর ফতওয়া বর্তাবে। কারণ শরীয়তের উছূল হচ্ছে, হারামকে হালাল জানা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

 কেননা শরীয়তের মাসয়ালা হলো, হারামকে হালাল এবং হালালকে হারাম বললে, কুফরী হয়। যারা কুফরী করে তাদের স্ত্রী তালাক হবে (যদি বিয়ে করে থাকে) এবং এক্ষেত্রে পুনরায় তওবা করে, বিয়ে না দোহরানো ব্যতীত তার স্ত্রীর সাথে বসবাস করা বৈধ হবেনা। আর এই অবৈধ অবস্থায় সন্তান হলে সেই সন্তানও অবৈধ হবে। হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে (যদি হজ্জ করে থাকে), সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে। তার ওয়ারিশ সত্ব বাতিল হবে। (তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ্, মসনদে শাফিয়ী, মসনদে বাজ্জার, মুস্তাদরেকে হাকিম) (চলবে)

মুহম্মদ  রকিবুদ্দীন  খন্দকার হোমনা, কুমিল্লা।

মুহম্মদ মুখতারুজ্জামান, সিলেট

সুওয়ালঃ  আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর পূর্ববতী একটি সংখ্যায় দেখেছি যে, হাফ শার্ট পরিধান করে  নামায পড়া মাকরূহ তাহ্রীমী এবং উক্ত  নামায দোহ্রায়ে পড়া ওয়াজিব ।  অথচ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানী মাযহাবের মুখপত্র মার্চ-এপ্রিল  ২০০৩/ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে,‘‘হাফ শার্ট পরিধান করে নামায পড়া বেমানান।’’

এখন আমার সুওয়াল হলো, তারা বেমানান দ্বারা কি বুঝাতে চেয়েছে । তবে কি তাদের মতে হাফ শার্ট পরিধান করে  নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী নয়? দয়া করে দলীল আদিল্লাহসহ সঠিক জাওয়াব জানিয়ে বাধিত করবেন ।

জাওয়াবঃ  হাফশার্ট অর্থাৎ উভয় হাতের কনুই পর্যন্ত বা কনুইর উপর পর্যন্ত হাতাওয়ালা জামা পরিধান করে নামায পড়া সম্পর্কে রেযাখানী মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক নয়। কেননা হাফ শার্ট পরিধান করে নামায পড়া শুধু বেমানানই নয়, বরং শরীয়তের দৃষ্টিতে তা মাকরূহ্ তাহ্রীমী। কারণ শরীয়তে তথা ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাব সমূহে এ কথাই উল্লেখ করা হয়েছে যে, আস্তিন বা জামার হাতা কনুই পর্যন্ত কনুই এর উপর উঠিয়ে নামায পড়লে তা মাকরূহ্ তাহরীমি হবে। সেমতে যে সকল শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত বা কনুই এর উপর পর্যন্ত বিলম্বিত সে শার্ট পরিধান করে নামায পড়লে নামায অবশ্যই মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে। যেমন, সর্বজনমান্য ও বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব ‘ফতওয়ায়ে আলমগীরী, খুলাছাতুল ফতওয়া ও ফতওয়ায়ে ক্বাযীখান’ কিতাবের ১ম খ-ের ১০৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ولو صلى رافعا كميه الى المرفقين كره.

  অর্থঃ- “যদি উভয় হাতা কনুই পর্যন্ত বা কনুই এর উপরে জামার হাতা উঠিয়ে নামায পড়ে, তাহলে নামায  মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে ।’’ “ফতহুল ক্বাদীর’’ কিতাবের ১ম খ-ের ৩৬৫ পৃষ্ঠায় এবং ‘মিনহাতুল খালিক্ব ও বাহরুর রায়িক’ কিতাবের ২য় খ-ের ২৪ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

وتكره الصلاة ايضا مع تشمير الكم عن الساعد

  অর্থঃ-‘‘অনুরূপ কনুই এর উপরে জামার হাতা উঠিয়ে নামায পড়লে, নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে ।’’ “আল বাহ্রুর রায়িক’’ কিতাবের ২য় খ-ের ২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে ,

الكراهة بان يكون رافعا كميه الى المرفقين.

 অর্থঃ-‘‘ উভয় হাতা কনুই পর্যন্ত বা কনুই এর উপরে জামার হাতা উঠিয়ে নামায পড়া মাকরূহ্  তাহ্রীমী ।’’  ‘ফতওয়ায়ে শামী’ কিতাবের ১ম খ-ে ৬৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وقيد الكراهة فى الخلاصة والمنية بان يكون رافعا كميه الى المرفقين.

অর্থঃ- ‘‘খোলাছা ও মুনিয়া’ কিতাবে উভয় হাতা কনুই পর্যন্ত বা কনুইর উপরে জামার হাতা উঠিয়ে নামায পড়াকে মাকরূহ্ তাহ্রীমী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।’’ ‘মারাকিউল ফালাহ’ কিতাবের ২৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 تشمير كميه عنهما …….. الى المرفقين.

  অর্থঃ- ‘‘জামার হাতাদ্বয়  উভয় হাতের কনুই পর্যন্ত বা কনুই এর উপরে উঠিয়ে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী।’’  “কিতাবুল ফিক্বহে আ’লাল মাযাহিবিল আরবায়া’’  কিতাবের  ১ম খ-ের ২৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ومنها تشمير كميه عن ذراعيه وهو مكروه باتفاق.

 অর্থঃ-ঞ্জ‘‘জামার হাতাদ্বয় উভয় হাতের কনুই এর উপরে উঠিয়ে নামায পড়া, সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ঐক্যমতে মাকরূহ্ তাহ্রীমী ।’’ “আইনুল হিদায়া’’ কিতাবের নিছফে আউয়াল খ-ের ৬৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উদূ লেখা ঢুকবে……………….

 অর্থঃ-‘‘কনুই পর্যন্ত জামার হাতা উঠিয়ে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ।’’ ‘সুন্নী বেহেশতী জেওর’ কিতাবের ১ম খ-ের ৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উদূ লেখা ঢুকবে……………….

 অর্থঃ- ‘‘অর্ধ কনুই এর উপরে জামার হাতা উঠিয়ে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী।’’  “বাহারে শরীয়ত’’ কিতাবের ৩য় খ-ের ১২১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উদূ লেখা ঢুকবে……………….

  অর্থঃ-‘‘জামার কোন হাতা অর্ধ কনুই থেকে উপরে তুলে অথবা জামার হাতা গুটিয়ে নামায পড়াও মাকরূহ তাহরীমী। চাই তা নামাযের পূর্বে উঠানো থাকুক অথবা নামাযের মধ্যে উঠাক। (উভয় অবস্থাতেই মাকরূহ্ তাহ্রীমী।) ‘‘ফতওয়ায়ে রেজভীয়া’’ কিতাবের ৩য় খ-ের ৪১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

  উদূ লেখা ঢুকবে……………….

 অর্থঃ- “মাসয়ালা… (২) জামার হাতা কনুইর উপরে উঠিয়ে কনুই খোলা অবস্থায় নামায পড়াতে কিরূপ ক্ষতি?…….. জাওয়াব …… (২) নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে এবং তা দোহরায়ে আদায় করা ওয়াজিব। যদি উক্ত নামায দোহরায়ে আদায় না করে তবে গুনাহগার থাকবে।” (দুররে মুখতার, হিলইয়া) উপরোক্ত দলীল-আদিল্লাহ্র ভিত্তিতে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হলো যে, হাফ শার্ট পরিধান করে অর্থাৎ উভয় হাতের কনুই পর্যন্ত বা কনুই এর উপরে জামার হাতা উঠিয়ে নামায পড়লে, নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে । তাছাড়া জামার হাতা কনুই পর্যন্ত বা কনুই এর উপরে উঠিয়ে নামায পড়লে নামাযে  মনোযোগ বা খুশূ-খুযূর বিঘœ ঘটে। خشوع (খুশু) হলো নামাযের রূহ বা প্রাণ। যেমন, কিতাবে উল্লেখ করা হয়,

الخشوع الذى هو روح الصلوة.

অর্থঃ- ‘‘খুশূ হলো নামাযের রূহ বা প্রাণ, রূহ বা প্রাণ ছাড়া যেমন মানুষের দেহ মূল্যহীন অনুরূপ খুশূ ছাড়া নামাযও মূল্যহীন। নামাযের খুশূ-খুযূ পয়দা করার জন্য মাকরূহ্ তাহ্রীমী, তানযীহী এবং সর্বপ্রকার ত্রুতি-বিচ্যুতি থেকে নামাযীকে পরহেয করতে হবে।’’ সুতরাং ‘‘হাফশার্ট পরিধান করে নামায  পড়া সম্পর্কে’’ রেযাখানী মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে বলেই প্রমাণিত হলো। অতএব, ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া হলো, যে সকল শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত বা কনুই এর  উপর পর্যন্ত বিলম্বিত সে হাফশার্ট পরিধান করে অথবা জামার হাতা কনুই পর্যন্ত বা কনুই এর উপরে উঠিয়ে নামায আদায় করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী। বিঃ দ্রঃ হাফশার্ট পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী। এ সম্পর্কে জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৩৮, ৪০তম সংখ্যা এবং বিশেষ করে ৬১তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে হাফশার্ট পরিধান করে নামায পড়া সম্পর্কে মাসিক মদীনার ভুল বক্তব্য খ-ন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। এবার প্রথম বারের মতো হাফশার্ট পরিধান করে নামায পড়া সম্পর্কে রেযাখানী মুখপত্রের ভুল বক্তব্য খ-ন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হলো। {দলীলসমূহঃ- (১)  কাযী খান, (২) কুনিয়া, (৩) মূনীয়াতুল মুছল্লি, (৪) খূলাছাতুল ফতওয়্,া (৫) ফতহুল ক্বাদির, (৬) বাহরুর রায়িক, (৭) মিনহাতুল খালিক্ব, (৮) আলমগীরী, (৯) দুররুল মুখতার, (১০) হিলইয়া, (১১) বিনায়া শরহে হিদায়া, (১২) আইনুল হিদায়া, (১৩) রদ্দুল মুহতার, (১৪) শামী, (১৫) শারামবলালীয়া, (১৬) শরহু মুনিয়াতিল মুছল্লী, (১৭) আল মুজতাবী, (১৮) মারাকিউল ফালাহ্,  (১৯) শরহুন নিক্বায়া, (২০) নাহরুল ফায়িক,  (২১) শরহে ইলইয়াস, (২২) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, (২৩) হাশিয়াতুত তাহতাবী, (২৪) গায়াতুল আওতার, (২৫) আইনী, (২৬) নুরুল ইজাহ্,(২৭) নূরুদ দিরায়া, (২৮) কিতাবুল ফিক্বহে আ’লাল মাযাহিবিল আরবায়া, (২৯) নূরুল ইছবাহ্ (৩০) সুন্নী বেহেশ্তী জেওর, (৩১) আলফিক্বহুল ইসলামিয়্যু ওয়া আদাল্লাতুহু, (৩২) আলফিক্বহুল হানাফী ফী ছাওবিহিল জাদীদ, (৩৩) আনোয়ারে মাহ্মূদা (৩৪) বাহারে শরীয়ত, (৩৫) ফতওয়ায়ে রেজভীয়া ইত্যাদি।}

 

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ