সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ১১৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

মাওলানা মুহম্মদ হারুনূর রশীদ, সেনপাড়া, রংপুর।

মাওলানা মুহম্মদ আবু জাফর, পাইকগাছা, খুলনা।

মুহম্মদ শফিকুর রহমান, পটিয়া, চট্টগ্রাম।

সুওয়াল : আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর মাধ্যমে আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার দিন তথা ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে মহান ঈদ হিসেবে জানতে পেরেছি। তাই আমরা সেই দিনকে ঈদের দিন বা খুশির দিন হিসেবে পালন করে থাকি।

অথচ এক শ্রেণীর লোক বলে যে, ইদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা ও দু’ঈদ ব্যতীত শরীয়তে আর কোন ঈদ নেই।

প্রকৃতপক্ষে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা ব্যতীত শরীয়তে আর কোন ঈদ আছে কি না? আর মাসিক আল বাইয়্যিনাতে যে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে মহান ঈদ বলা হয়েছে এর স্বপক্ষে কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনার দলীল বিস্তারিতভাবে জানালে আমরা উপকৃত হবো।

জাওয়াব : উল্লিখিত সুওয়ালে মূল দু’টি বিষয় ফুটে উঠেছে। (১) ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ঈদ তা শরীয়তে প্রমাণিত আছে কিনা?

(২) ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ঈদে আ’যম ও ঈদে আকবর উনার দলীল আদিল্লাহ শরীয়তে আছে কিনা?

প্রথমে “ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ঈদ” সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাতে যা বলা হয়েছে তা সঠিকই বলা হয়েছে অর্থাৎ আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার দিন ঈদে মীলাদুন নবী বা খুশির দিনের অন্তর্ভুক্ত।

যারা বলে থাকে, “শরীয়তে দু’ঈদ ব্যতীত অন্য কোন ইদ নেই” তারা প্রকৃতপক্ষে কিল্লতে ইলম, কিল্লতে ফাহম (কম জ্ঞান, কম বুঝ) অর্থাৎ কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদের সম্পর্কে নেহায়েত অজ্ঞ হওয়ার কারণেই তারা একথা বলে থাকে।

কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ দ্বারা যেভাবে দু’ঈদ ছাবিত হয়েছে বা রয়েছে ঠিক একইভাবে অন্যান্য ঈদ এবং ঈদে মীলাদুন নবী সাইয়্যিদু ঈদে আ’যম ও ঈদে আকবর হিসেবে ছাবিত বা প্রমাণিত হয়েছে।

যেমন, ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর সম্পর্কে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عن انس رضى الله تعالى عنه قال قدم النبى صلى الله عليه وسلم المدينة ولهم يومان يلعبون فيهما فقال ما هذان اليومان قالوا كنا نلعب فيهما فى الجاهلية فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم قد ابدل كم الله بهما خيرا منهما يوم الاضحى ويوم الفطر.

অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মদীনা শরীফ উনার মধ্যে (হিযরত মুবারক করেন) তাশরীফ নিলেন (তখন তিনি দেখতে পেলেন যে) পবিত্র মদীনা শরীফবাসীগণ সেখানে দু’দিন খেলাধুলা করে থাকে। অতঃপর তিনি বললেন, এ দু’দিন কোন দিন? তারা বললো, আমরা এ দু’দিনে জাহিলী যুগে খেলাধুলা করতাম। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এ দু’দিনের পরিবর্তে তোমাদের জন্য উত্তম দু’দিন দিয়েছেন, তাহলো ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর।” (আবু দাউদ, মিশকাত)

এরপর হতে মুসলমানদের মধ্যে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর পালিত হয়ে আসছে।

মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

প্রকৃতপক্ষে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই হাক্বীক্বী ঈদ। কারণ, সেই দিন স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ আনেন।

উল্লেখ্য, হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি, যমীনে আগমন ও বিদায় শুক্রবার দিন হওয়ার কারণে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে শুক্রবার দিনকে ঈদের দিন বা খুশির দিন হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عن عبيد بن السباق مرسلا وعن ابن عباس رضى الله تعالى عنه متصلا قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم فى جمعة من الجمع يا معشر المسلمين ان هذا يوم جعله الله عيدا فاغسلوا ومن كان عنده طيب فلايضره ان يمس منه وعليكم بالسواك.

অর্থ: “হযরত ওবায়েদ বিন সাব্বাক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুরসাল সনদে বর্ণনা করেন, আর হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুত্তাছিল সনদে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক জুমুয়ার দিনে বলেন, ‘হে মুসলমান সম্প্রদায়! এটি (জুমুয়ার দিন) এমন একটি দিন যাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈদ স্বরূপ নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং তোমরা এ দিনে গোসল করবে এবং যার নিকট কোন সুগন্ধি (আতর) আছে সে কোনরূপ অসুবিধা মনে না করে তা মেখে নিবে বা ব্যবহার করবে আর অবশ্যই তোমরা মিসওয়াক করবে।” (ইবনে মাজাহ শরীফ, মুয়াত্তা মালিক শরীফ, মিশকাত শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عن ابى ليلة بن عبد المنذر قال قال النبى صلى الله عليه وسلم ان يوم الجمعة سيد الايام واعظمها عند الله وهو اعظم عند الله من يوم الاضحى ويوم الفطر فيه خمس خلال خلق الله فيه ادم واهبط الله فيه ادم الى الارض وفيه توفى الله ادم وفيه ساعة لايسأل العبد فيها شيئا الا اعطاه ما لايسأل حراما وفيه تقوم الساعة ما من ملك مقرب ولا سماء ولا ارض ولا رياح ولا جبال ولا بحر الا هو مشفق من يوم الجمعة.

অর্থ: “হযরত আবু লায়লা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, জুমুয়ার দিন সকল দিনের সর্দার এবং সকল দিন অপেক্ষা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত।

এটি ঈদুল আযহার দিন ও ঈদুল ফিতরের দিন অপেক্ষাও মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এ দিনটিতে পাঁচটি (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয় রয়েছে, (১) এ দিনে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন, (২) এ দিনে উনাকে যমীনে প্রেরণ করেছেন, (৩) এ দিনে উনাকে ওফাত দান করেছেন, (৪) এ দিনটিতে এমন একটি সময় রয়েছে যে সময়টিতে বান্দা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তাকে তা দান করেন যে পর্যন্ত না সে হারাম কিছু চায় এবং (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এমন কোন ফেরেশতা নেই, আসমান নেই, যমীন নেই, বাতাস নেই, পাহাড় নেই, সমুদ্র নেই, যে জুমুয়ার দিন সম্পর্কে ভীত নয়।” (ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

স্মরণীয়, হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকার কারণে যদি জুমুয়ার দিন ঈদের দিন বা খুশির দিন হতে পারে। শুধু তাই নয় এমনকি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চেয়েও সম্মানিত, ফযীলতপ্রাপ্ত ও মহান হয় তাহলে যে মহান ব্যক্তিত্বের উছীলায় হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার যমীনে আগমন ঘটলো সেই মহান ব্যক্তির সাথে যেই দিনটি সম্পর্কযুক্ত সেই দিনটির সম্মান, ফযীলত ও মহত্ত্ব কতটুকু হবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। অর্থাৎ তা অবশ্যই ঈদের দিন হবে। এমনকি জুমুয়ার দিন অপেক্ষাও তা হবে শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত ঈদের দিন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه انه قرأ “اليوم اكملت لكم دينكم” الاية وعنده يهودى فقال لونزلت هذه الاية علينا لاتخذناها عيدا فقال ابن عباس فانها نزلت فى يوم عيدين فى يوم جمعة ويوم عرفة.

অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা

اليوم اكملت لكم دينكم الاية.

“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম” এ আয়াত শরীফটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন। তখন উনার নিকট এক ইহুদী ছিল সে বলে উঠলো, “যদি এই পবিত্র আয়াত শরীফ আমাদের ইহুদী সম্প্রদায়ের প্রতি নাযিল হতো আমরা পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিলের দিনটিকে “ঈদ” বলে ঘোষণা করতাম।” এটা শুনে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, এ পবিত্র আয়াত শরীফ সেই দিন নাযিল হয়েছে যেদিন এক সাথে দু’ঈদ ছিল- (১) জুমুয়ার দিন এবং (২) আরাফার দিন।” (তিরমিযী শরীফ)

এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মুহম্মদীর জন্য জুমুয়ার দিনের সাথে সাথে আরাফার দিনকেও ঈদের দিন হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। এছাড়াও বুখারী ও মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কর্তৃক বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরাফার দিনকে উম্মতে মুহম্মদীর জন্য ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

للصائم فرحتان قرحة عند فطره وفرحة عند لقاء ربه.

অর্থ: “রোযাদারের জন্য দু’টি খুশি রয়েছে। একটি তার ফিতর বা ইফতারের সময় এবং অপরটি তার রবের সাক্ষাতের সময়।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রোযাদারের জন্য দু’টি খুশি বা ঈদের কথা বলা হয়েছে। একটি হচ্ছে তার ইন্তিকালের পর মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সাক্ষাতের সময়। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে তার ফিতর বা ইফতারের সময়। আর ফিতর বা ইফতার হচ্ছে দু’প্রকার (১) কুবরা, (২) ছুগরা।

কুবরা হচ্ছে ঈদুল ফিতর যা হাদীছ শরীফ দ্বারা ঈদের দিন হিসেবে প্রমাণিত।

আর ছুগরা হচ্ছে যা রোযাদার প্রতিদিন মাগরিবের সময় করে থাকে। এটা প্রতি বছরে ২৯ দিন অথবা ৩০ দিন হয়ে থাকে।

উল্লেখ্য, ফিতর অর্থ রোযা ভঙ্গ করা। ফিতরকেই ইফতার বলা হয়। রোযাদার মাহে রমাদ্বান শরীফ পূর্ণ এক মাস অর্থাৎ ২৯ দিন বা ৩০ দিন রোযা রাখার পর পহেলা শাওওয়াল দিনের বেলা পানাহার প্রভৃতি ইন্দ্রিয় তৃপ্তিকর কার্যের মাধ্যমে রোযা ভঙ্গ করতঃ খুশি বা ঈদ করে। এটাই ইফতারীয়ে কুবরা যা ঈদুল ফিতর নামে পরিচিত।

আর রোযাদার পূর্ণ একদিন অর্থাৎ ছুবহে ছাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযা রাখার পর সন্ধা বেলা পানাহার প্রভৃতি ইন্দ্রিয় তৃপ্তিকর কার্যের মাধ্যমে রোযা ভঙ্গ করতঃ খুশি বা ঈদ করে। এটাই ইফতারীয়ে ছুগরা বা ঈদুল লাইল নামে অভিহিত।

ইফতারীয়ে ছুগরা বা ঈদুল লাইল ফরয রোযা হিসেবে বছরে ২৯ বা ৩০ দিন। আর সুন্নত রোযা হিসেবে কমপক্ষে মুহররম মাসে ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ তারিখ ২টি এবং তার সাথে আরো ১টি মোট ৩টি, ‘শাওওয়াল শরীফ মাসে ৬টি, যিলহজ্জ মাসে ১ হতে ৯ তারিখ পর্যন্ত ৯টি এবং অন্যান্য মাসসমূহে ৩টি করে ২৪টি সর্বমোট ৪২ দিন।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে,

من صام رمضان ثم اتبعه ستا من شوال كان كصيام الدهر.

অর্থ: “যে ব্যক্তি রমাদ্বান শরীফ মাসের রোযা রাখার পর শাওওয়াল শরীফ মাস উনার ছয়টি রোযা রাখলে সে যেন পূর্ণ বছর রোযা রাখলো।” (মুসলিম শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আরো বর্ণিত রয়েছে,

عن حفصة رضى الله تعالى عنها قالت اربع لم تكن يدعهن النبى صلى الله عليه وسلم صيام عاشوراء والعشر وثلثة ايام من كل شهر وركعتان قبل الفجر.

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফসা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, “চারটি জিনিষ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনো ছাড়েননি। (১) যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের রোযা, (অর্থাৎ প্রথম নয় দিন) (২) আশুরার দিনের রোযা, (৩) প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোযা, (৪) ফযরের ফরয নামযের পূর্বে দু’রাকায়াত সুন্নত নামায।” (নাসাঈ, মিশকাত শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

لكل مؤمن فى كل شهر اربعة اعياد او خمسة اعياد.

অর্থ: “প্রত্যেক মু’মিন উনাদের জন্য প্রতি মাসে চারটি ঈদ অথবা পাঁচটি ঈদ রয়েছে।” (হাশিয়ায়ে হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া, ফতহুল ক্বাদীর মা’য়াল কিফায়া)

এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মু’মিন উনাদের জন্য প্রতি মাসে ৪টি বা ৫টি ঈদের কথা বলা হয়েছে। কারণ, প্রতি মাসে সোমবার শরীফ ৪টি বা ৫টি হয়ে থাকে। আর শুক্রবারও প্রতি মাসে ৪টি বা ৫টি হয়ে থাকে।

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহের দ্বারা ছাবিত হলো, মু’মিনগণ উনাদের ঈদ শুধু দু’টিই নয়। অর্থাৎ ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরই নয় আরো অনেক ঈদ রয়েছে। শুক্রবার মু’মিনগণ উনাদের ঈদের দিন। আরবী বা চান্দ্র বছর অনুযায়ী এক বছরে প্রায় ৫০টি শুক্রবার হয়ে থাকে। সে হিসেবে এ ৫০টি দিনও মু’মিনগণ উনাদের জন্য ঈদের দিন।

একইভাবে সোমবার শরীফ দিনও মু’মিনগণ উনাদের ঈদের দিন। চান্দ্র বছর অনুযায়ী এক বছরে প্রায় ৫০টি সোমবার শরীফ হয়ে থাকে। সে হিসেবে এ ৫০টি দিনই মু’মিনগণ উনাদের জন্য ঈদের দিন। আর আরবী বছরে ১২টি মাসের মধ্যে একটি মাস হচ্ছে রমাদ্বান শরীফ। যা ২৯ বা ৩০ দিনে হয়ে থাকে। এবং এ ২৯ বা ৩০ দিন রোযাদার মু’মিনগণ উনাদের জন্য খুশির দিন বা ঈদের দিন।

সুন্নত রোযার ৪২ দিন খুশির বা ঈদের দিন।

মু’মিনগণ উনাদের জন্য আরাফার দিন ঈদের দিন বা খুশির দিন।

১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ঈদের দিন বা খুশির দিন।

এখন সর্বমোট মু’মিনগণ উনাদের জন্য ঈদের দিন বা খুশির দিন হলো- শুক্রবার ৫০দিন, সোমবার শরীফ ৫০দিন, আরাফার ১দিন, ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ১দিন, ঈদুল ফিতর ১দিন, ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ৩দিন, ফরয রোযার ২৯ বা ৩০ দিন, সুন্নত রোযার ৪২ দিন সর্বমোট ১৭৭ বা ১৭৮ দিন। অর্থাৎ বছরের প্রায় অর্ধেক দিনই মু’মিন-মুসলমানের জন্য ঈদ বা খুশির দিন।

অতএব, উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, যারা বলে “শরীয়তে দু’ঈদ অর্থাৎ ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর ব্যতীত অন্য কোন ঈদ নেই।” তাদের কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ।

প্রকৃতপক্ষে কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মু’মিন, মুসলমানদের জন্য ঈদ শুধুমাত্র দু’টিই নয়, আরোও রয়েছে। কাজেই ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর এ দু’ঈদ ব্যতীত অন্যান্য ঈদকে অস্বীকার করার অর্থ হলো, কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদেরকেই অস্বীকার করা। আর যারা কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদেরকে অস্বীকার করে তারা মু’মিন-মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। (চলবে)

মুহম্মদ শাহীনূর রহমান

সভাপতি- আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত

রাউজান, চট্টগ্রাম।

সুওয়াল : হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার মার্চ/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে ৩৯৫৯নং জিজ্ঞাসার সমাধানে বলা হয়েছে, “মিশকাত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হাদীছ শরীফটিতে উল্লিখিত সুন্নাতের অর্থ হচ্ছে ‘তরীকা’ বা পথ। সে মতে হাদীছ শরীফ উনার অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি ফিতনার যুগে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরীকা আঁকড়ে থাকবে সে একশ’ শহীদ উনাদের সাওয়াব পাবে। এখানে সুন্নাত বলতে একটি সুন্নাত উদ্দেশ্য নয়। (মিশকাত শরীফ-৩০, ফিক্বাত শরীফ-৩৬৫)।

এখন আমার সুওয়াল হলো- উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লিখিত “সুন্নাতী” শব্দের যে অর্থ করেছে তা সঠিক হয়েছে কি? আর সুন্নত বলতে সত্যিই কি একটি সুন্নত উদ্দেশ্য নয়? দয়া করে সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াব : হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লিখিত “সুন্নতী” শব্দের অর্থ সম্পর্কে হাটহাজারীর অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি, বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে যা সম্পূর্ণ মনগড়া ও দলীলবিহীন।

কারণ, মিশকাত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত উক্ত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে “সুন্নতী’ বলতে শুধুমাত্র একটি সুন্নতকেই বুঝানো হয়েছে। যেমন, “মিশকাত শরীফ উনার মধ্যে” বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা হচ্ছে,

وعن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تمسك بسنتى عند فساد امتى فله اجر مأة شهيد.

অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমার উম্মতের ফিৎনা-ফাসাদের যামানায় যে ব্যক্তি আমার একটি সুন্নতকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরে থাকবে অর্থাৎ যে একটি সুন্নতের আমল করবে। বিনিময়ে সে একশত শহীদের ছওয়াব পাবে।” (মিশকাত শরীফ, ৩০ পৃষ্ঠা)

উল্লেখ্য, একটি সুন্নতের আমল করলে একশত শহীদের ছওয়াব সম্পর্কে উক্ত হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় “শরহুত ত্বীবী” কিতাবের ১ম খ-ের ৩৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

“فله أجر مائة شهيد” وذلك لانه يلحقه مشقة فى ذلك الوقت باحياء السنة والعمل بها فهو كالشهيد الذى قاتل الكفار لاحياء الدين حتى قتل

অর্থাৎ- যে ব্যক্তি একটি সুন্নতের আমল করবে, তার জন্য একশত শহীদের ছওয়াব এজন্য যে, উক্ত সময়ে সুন্নত যিন্দা করা এবং সুন্নতের আমল করার ব্যাপারে এত কঠিন ও জটিল কষ্টের সম্মূখীন হতে হবে যে, মনে হবে সে যেন শহীদের মতোই দ্বীন যিন্দা করার জন্য কাফিরদের সঙ্গে যুদ্ধ করে এমনকি শাহাদাত বরণ করেন।” অনুরূপ বর্ণনা তা’লীকুছ ছবীহ কিতাবের ১ম খ-ের ১৩১ পৃষ্ঠাতেও উল্লেখ আছে,

উক্ত হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় মাহবুবে সুবহানী, গাউছে সামদানী, ইমামে রব্বানী, ক্বাইয়্যূমে আউয়াল, আফযালুল আউলিয়া, হযরত শায়খ আহমদ ফারুকী সিরহিন্দী মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “মুাকতুবাত শরীফ উনার মধ্যে” বলেছেন, “যে ব্যক্তি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিত্যাজ্য (লুপ্তপ্রায়) কোন একটি সুন্নতকে মৃত্যু পর্যন্ত আকঁড়ে ধরবে অর্থাৎ আমল করবে বিনিময়ে সে একশত শহীদের ছওয়াব পাবে।”

সুতরাং سنتى (সুন্নতী) দ্বারা শুধুমাত্র একটি মাত্র সুন্নতকেই বুঝানো হয়েছে।

আরো উল্লেখ্য যে, যদি সুন্নত বলতে একটি সুন্নত উদ্দেশ্য না হয় বরং সুন্নত বলতে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সকল সুন্নতকে ধরে নেয়া হয় তাহলে প্রশ্ন এসে যায় যে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সকল সুন্নত পালন করা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব হবে কি?

এর জবাব হলো, সকল সুন্নত পালন করা কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। তাহলে সকল সুন্নত পালন করার বিনিময়ে একশত শহীদের ছওয়াব পাওয়া কি করে সম্ভব হতে পারে?

উল্লেখ্য, একটি সুন্নত পালনের বিনিময়ে একশত শহীদের ছওয়াব তখনই পাবে যখন ফিৎনা-ফাসাদের যামানায় সুন্নতটি পালন করা হবে। আর ফিৎনা-ফাসাদের যামানা বলতে আখিরী যামানাকে বুঝানো হয়েছে।

আর আখিরী যামানা সম্পর্কে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “মাকতুবাত শরীফ উনার মধ্যে” বলেছেন যে, “এক হাজার হিজরীর পর হচ্ছে আখিরী যামানা।” আখিরী যামানায় ফিৎনা-ফাসাদ, ফিসক-ফুজুরী, মূর্খতা-অজ্ঞতা, বিদয়াত-বেশরা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। এমনকি হক্ব-নাহক্বের সংমিশ্রণে মানুষের পক্ষে প্রকৃত সুন্নত কোনটি তা জেনে আমল করাই কেবল দুঃসাধ্য হবে তা নয় বরং ফরয পালন করার ক্ষেত্রেও অনেক বাধার সম্মূখীন হবে যা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

যেমন, উলামায়ে ‘সূ’দের আমল যা ফরয-ওয়াজিব, হালাল-হারাম সব একাকার করে দিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে আওয়ামুন নাস ফরয-ওয়াজিব, হালাল-হারাম সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়েছে। মেছালস্বরূপ বলা যায়, বর্তমান যামানায় উলামায়ে ‘সূ’দের বে-পর্দা, বেহায়াপনা ও বেগানা মেয়ে লোকের সাথে বেপরওয়াভাবে প্রকাশ্যে বে-পর্দা হয়ে উঠা-বসা, খাওয়া-দাওয়া, চলা ফেরা ইত্যাদি করার কারণে আওয়ামুন নাস পর্দা সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়েছে।

অথচ পর্দা করা কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আয়াত শরীফ উনার দ্বারা ফরয বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

দ্বিতীয়তঃ উলামায়ে ‘সূ’দের বেপরওয়াভাবে প্রকাশ্যে ছবি তোলা, ভি.ডি.ও করা, ছবি দেখা, টেলিভিশন, ভি,সি,আর দেখা ইত্যাদি কারণে আওয়ামুন নাস সন্দিহান হয়ে পড়েছে যে, এটা হালাল অথবা হারাম।

অথচ শত-সহ¯্র বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত যে- ছবি তোলা, আকাঁ, রাখা, দেখা ইত্যাদি প্রত্যেকটিই হারাম ও শক্ত কবীরাহ গুণাহর কারণ।

অনুরূপ উলামায়ে ‘সূ’দের অন্যান্য আমল যেমন, ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, লংমার্চ করা, হরতাল করা, ব্লাসফেমী আইন তলব করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, লৌলবাদী দাবী করা ইত্যাদি হারাম কাজগুলোকে দায়িমীভাবে বেপরওয়া হয়ে করার কারণে আওয়ামুন নাস ফরয-ওয়াজিব, হারাম-হালালের মধ্যে সন্দিহান হয়ে পড়েছে।

সুতরাং এমন ফিৎনা-ফাসাদের যুগে ফরয পালনই যদি এত কঠিন হয় তাহলে সুন্নত পালন করা কত কঠিন হবে? তাও আবার সমস্ত সুন্নত! তবে কি উক্ত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত সুন্নত পালনের ফযীলত থেকে উম্মত মাহরূম থাকবে? না, সুন্নত পালনের ফযীলত থেকে মাহরূম থাকবেনা বরং সুন্নত পালনের ফযীলত অবশ্যই লাভ করবে। তবে ঐ ব্যক্তি লাভ করবে, যে একটিমাত্র সুন্নতকে মৃত্যু পর্যন্ত দায়িমীভাবে আকঁড়িয়ে থাকবে। অর্থাৎ পালন করবে। উপরোক্ত হাদীছ শরীফ উনার এটাই বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা।

অতএব, সুন্নত দ্বারা তরীকা বা সকল সুন্নতকে বুঝানো হয়নি বরং আলাদাভাবে প্রত্যেকটি সুন্নতকেই বুঝানো হয়েছে।

বিশেষতঃ এখানে এটাও উল্লেখ্য যে, বর্তমানে উলামায়ে ‘সূ’রাই সুন্নত পালনের বিরোধীতা করে থাকে। যেটা সুন্নত নয় সেটাকেই দলীল বিহীন, মনগড়াভাবে তারা সুন্নত বলে থাকে। যেমন চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপি সুন্নত; অথচ তারা বলে কিস্তি টুপি সুন্নত। কাজেই এতসব ফিৎনার মাঝে একটি সুন্নত পালনই এখন অনেক ফযীলতের বিষয়।

হাটহাজারী মৌলভীদের মিথ্যা দলীল খণ্ডন

উল্লেখ্য, হাটহাজারী মৌলভীরা সাধারণ মানুষকে ধোকা দেয়ার উদ্দেশ্যেই “মিশকাত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হাদীছ শরীফটিতে উল্লিখিত সুন্নাতের অর্থ হচ্ছে ‘তরীকা’ বা পথ। …. এখানে সুন্নত বলতে একটি সুন্নাত উদ্দেশ্যে নয়।”

তাদের এ বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসাবে দু’টি কিতাবের বরাত দিয়েছে। যেমন, মিশকাত শরীফ-৩০, মিক্বাত-১/৩৬৫)।

তাদের প্রথম দলীল হচ্ছে, মিশকাত শরীফ-৩০,

প্রথম দলীলের জাওয়াব, হাটহাজারী মৌলভীদের প্রথম দলীলের জাওয়াবে বলতে হয় যে, হাটহাজারীর মৌলভীরা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসাবে মিশকাত শরীফ উনার ৩০ পৃষ্ঠার যে বরাত দিয়েছে, অথচ মিশকাত শরীফ উনার ৩০ পৃষ্ঠায় এ ধরণের কোন বক্তব্যই উল্লেখ নেই।

তাদের দ্বিতীয় দলীল হচ্ছে, মিক্বাত-১/৩৬৫,

দ্বিতীয় দলীলের জাওয়াব, হাটহাজারীর মৌলভীদের দ্বিতীয় দলীলের জাওয়াবে বলতে হয় যে, হাটহাজারীর মৌলভীরা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে মিক্বাত কিতাব নামে একটি কিতাবের বরাত দিয়েছে, অথচ মিক্বাত নামে মিশকাত শরীফ উনার কোন মাশহুর বা উল্লেখযোগ্য শরাহ বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ নেই।

আর যদি মিক্বাতের পরিবর্তে মিরকাত ধরে নেয়া হয় তাহলে এক্ষেত্রেও বড়ই আফসুসের সঙ্গে বলতে হয় যে, তাদের এ ধরণের কোন বক্তব্যও অর্থাৎ মিশকাত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হাদীছ শরীফটিতে উল্লেখিত সুন্নাতের অর্থ হচ্ছে তরীক্বা বা পথ।” “…. এখানে ‘সুন্নত’ বলতে একটি সুন্নত উদ্দেশ্যে নয়।” তাদের এধরণের কোন বক্তব্যও মিরকাত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত উক্ত হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যাতেও উল্লেখ নেই।

সেহেতু আমরা ‘মিরকাত শরীফ’ বর্ণিত হাদীছ শরীফখানার ব্যাখ্যাসহ হুবহু ইবারত নি¤েœ তুলে ধরলাম।

আর এতেই প্রমাণিত হবে যে হাটহাজারীর মৌলভীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে যে দলীল দিয়েছে তা ডাহা মিথ্যা, ধোকাপূর্ণ, জালিয়াতী ও প্রতারণামূলক।

যেমন, “মিরকাত শরীফ উনার” ১ম খ-ের ২৫০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

(وعن ابى هريرة) رضى الله عنه (قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تمسك) اى عمل (بسنتى عند فساد امتى) اى عند غلبة البدعة والجهل والفسق فيهم (فله اجر مائة شهيد) لما يلحقه من المشقة بالعمل بها وباحيائها وتركهم لها كالشهيد المقاتل مع الكفار لاحياء الدين بل اكثر.

অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, আমার উম্মতের ফিৎনা-ফাসাদের সময় অর্থাৎ তাদের মধ্যে ফিসক-ফুজুরী, মুর্খতা-অজ্ঞতা বিদয়াত-বেশরা, গালিব হওয়ার সময় যে ব্যক্তি আমার একটি সুন্নতকে মজবুতভাবে আকঁড়ে ধরে থাকবে অর্থাৎ আমল করবে বিনিময়ে সে একশত শহীদের ছওয়াব পাবে।”

অর্থাৎ যখন তাদের সুন্নত তরক করার কারণে পুনরায় সুন্নত যিন্দা করা এবং সুন্নতের আমল করার ব্যাপারে এত কঠিন কষ্টের সম্মুখীন হতে হবে যে, মনে হবে সে যেন শহীদের মতোই দ্বীন যিন্দা করার জন্য কাফিদের সঙ্গে যুদ্ধকারী। বরং এর চেয়ে আরো বেশি কষ্টের সম্মুখীন হবে।

‘মিরকাত শরীফ উনার মধ্যে’ বর্ণিত উক্ত হাদীছ শরীফখানার ব্যাখ্যার উল্লিখিত হুবহু ইবারতের দ্বারা এটাই প্রমানিত হলো যে, উক্ত ইবারতের কোথাও সুন্নাত শব্দের অর্থ তরীক্বা বলা হয়নি। সুতরাং হাটহাজারী মৌলভীদের মিথ্যা দলীল খ-িত হলো।

সুতরাং হাটহাজারীর মৌলভীরা সুন্নাতী শব্দের যে অর্থ করেছে তা সম্পূর্ণই ভুল বলে প্রমাণিত হলো।

[বি: দ্র:- সুন্নতী বলতে শুধুমাত্র একটি সুন্নতকেই বুঝানো হয়েছে এ ব্যাপারে আরো জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৮৩ ও ৯৭তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে হাটহাজারীর অখ্যাত মাসিক মুঈনুল ইসলাম ও মাসিক মদীনা পত্রিকার সুন্নাতী শব্দের ভুল বক্তব্য খ-ন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। এবার দ্বিতীয়বারের মতো হাটহাজারীর অখ্যাত মাসিক পত্রিকার সুন্নাতী শব্দের ভুল বক্তব্য খ-ন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হলো।]

{দলীলসমূহ: (১) বাইহাক্বী শরীফ (২) মিশকাত শরীফ (৩) আবু দাউদ শরীফ (৪) তিরমিযী শরীফ (৫) আহমদ শরীফ (৬) মিরকাত শরীফ (৭) আশরাফুত তাওজীহ শরীফ (৮) শরহুত ত্বীবী শরীফ (৯) আশয়াতুল লুময়াত (১০) তানজীমুল আশতাত (১১) তালিকুছ ছবীহ (১২) মিরআতুল মানাজীহ (১৩) মুযাহিরে হক্ব (১৪) মকতুবাত শরীফ ইত্যাদি}

মুছাম্মত সানজিদা আক্তার

সভানেত্রী- ছাত্র আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত

মুহম্মদপুর, ঢাকা।

সুওয়াল : অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নি¤েœাক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার জবাব ছাপা হয়-

জিজ্ঞাসা : ছাহাবী হযরত আবু সাঈদ খুদরী ও হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি বলেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের বিথর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। তাদের সকল আমল হবে খুবই নিখূঁত ও সুন্দর। তাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে, তাদের রোযা দেখে তোমাদের রোযাকে তোমরা তুচ্ছ ও নগন্য মনে করবে। তাদের আমল দেখে তোমরা তোমাদের আমলকে হেয় মনে করবে, তারা কুরআন শরীফ গড়বে কিন্তু তা তাদের গলার নিচে যাবেনা। তারা কুরআন মরীফ উনার উপর আমল কিম্বা কুরআন শরীফ প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। এদলের আমল যতই তোমাদেরকে আকৃষ্ট করুক না কেন, কখনই তাদের দলে যাবেনা। কারণ প্রকৃতপক্ষে এরা হবে ইসলাম হতে খারিজ, দ্বীন হতে বহির্ভূত। তীর যেমন ধনুক হতে বের হয়ে যায় সে আর কখনও ধনুকের নিকট ফিরে আসেনা। তেমনিই এরা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে, আর কখনও দ্বীনের পথে, কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের পথে ফিরে আসবেনা।

আমার প্রশ্ন হল, উপরোক্ত হাদীছ শরীফ সহীহ কি-না। সহীহ হলে এ দ্বারা উদ্দেশ্যে কারা। উক্ত হাদীছ শরীফ উনার সাথে তাবলীগ জামাতের কোন সম্পর্ক আছে কি-না? অনেকে এই হাদীছ শরীফ উনার সাথে তাবলীগ জামাতকে জড়াতে চান। উক্ত হাদীছ শরীফ উনার সঙ্গে তাবলীগ জামাতকে জড়ানো সঠিক কি-না?

জবাব : প্রশ্নে বর্ণিত হাদীছ শরীফ সহীহ। মুহাদ্দিছীনে কিরাম উক্ত হাদীছ শরীফসহ এ জাতীয় হাদীছ শরীফসমূহের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এ সব হাদীছ শরীফ দ্বারা একটি নির্ধারিত জামাত বা খারিজী ফেরক্বা নামে পরিচিত তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার খেলাফত আমলে এই হাদীছ শরীফসমূহের বাস্তবতা এবং খাওয়ারেজদের অবস্থার সমন্বয় ঘটেছিল। যার দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে বলা চলে যে, এ হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা একমাত্র খাওয়ারেজদেরকেই বুঝানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণাদি ছাড়া অন্য কোন জামাতকে এই হাদীছ শরীফ উনার অন্তর্ভূক্ত করা যাবে না।

কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়া তাবলীগ জামাতকে এই হাদীছ শরীফসমূহের মেসদাক বা উদ্দেশ্য বানানো, তাদেরকে খাওয়ারেজ বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে মারাত্মক অন্যায় ও অপরাধ। তাবলীগের নিয়মনীতি ও কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই। বর্তমান বিশ্বে মহান আল্লাহ পাক তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে পথহারা, ঈমানহারা, হেদায়েত থেকে বঞ্চিত অসংখ্য মানুষকে হেদাযেত করেছেন, ঈমান আনার তাওফিক দান করেছেন। এছাড়া এ জামাতের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে অসংখ্য জগদ্বিখ্যাত আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ।

অতএব, তাবলীগ জামাতকে খারেজী জামাত বলা, মিথ্যা অপবাদ বৈ কিছুই নয়। (ফতহুল বারী ১২ : ৩৫০, আল মিরকাত শরীফ ৭ : ১০৭)

উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-

(১)  উল্লিখিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত গুণাবলী প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে আছে কি?

(২) উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা কি শুধু খারিজী ফিরক্বার লোকদেরকেই বুঝানো হয়েছে? নাকি খারিজীদের ন্যায় আক্বীদা পোষণকারীদের ক্ষেত্রেও এ হাদীছ শরীফ প্রযোজ্য?

(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?

(৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?

(৫) কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদের কোথাও প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করার নির্দেশ আছে কি? প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করা কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদের মতে জায়িয কিনা?

কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওযাব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব : প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামাত সম্পর্কিত উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।

শুধু তাই নয়, তারা প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের সাঁফাই গাইতে গিয়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করেছে। সাথে সাথে “ছয় উছূলীদের মধ্যে কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী কোন আক্বীদা-আমল নেই” বলে তাদের নির্লজ্জ দালালী করে নিজেদেরকে অপব্যাখ্যাকারী, দালাল ও মিথ্যাবাদীরূপে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিক দলীলভিত্তিক আলোচনা করলেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে।

তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে সুওয়াল বর্ণিত তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলিার দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নোল্লিখিত

অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারীতার

খ-নমূলক জবাব- (১)

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার জিজ্ঞাসার জবাবের প্রেক্ষিতে আপনার প্রথম সুওয়াল হলো- “(১) উল্লিখিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্য বর্ণিত গুণাবলীসমূহ প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে রয়েছে কি?”

এর জবাবে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকায় যে হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করা হয়েছে সে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বাতিল ফিরক্বার যে গুণাবলী বা আলামত বর্ণনা করা হয়েছে তার প্রায় সবগুলোই প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়।

যেমন, বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে-

প্রথমত বলা হয়েছে, “… পূর্ব দেশগুলোর মধ্যে হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। …”

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের উৎপত্তিও পূর্ব দেশ থেকে। অর্থাৎ ১৩৪৫ হিজরী সনে পূর্ব দেশ ভারতের মৌলভী ইলীয়াস মেওয়াতী সাহেব ‘তাবলীগ জামাত’ নামে প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের প্রবর্তন করে। বর্তমানেও ভারতের নিজামুদ্দীন বস্তিতে তাদের মূল মারকায বা ঘাঁটি রয়েছে।

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামাত নামক দলটি পূর্ব দেশ থেকেই বের হয়েছে।

অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত গুণাবলী বা আলামতসমূহের প্রথম আলামতটি প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে বিদ্যমান।

দ্বিতীয়ত : বলা হয়েছে, “…. এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। …”

এ কথা সর্বজনস্বীকৃত যে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের অধিকাংশ সদস্যই অশিক্ষিত, মূর্খ। শুধু তাই নয় কোন আলিম বা শিক্ষিত লোকও যদি তাদের দলভুক্ত হয়েছে তবে সেও ধীরে ধীরে মূর্খে পরিণত হয়ে গেছে তারও বহু প্রমাণ রয়েছে।

এর মূল কারণ হচ্ছে, তারা ‘তাবলীগী নেছাব’ বা ‘ফাজায়িলে আমল’ ব্যতীত অন্য কোন কিতাব দেখতেও চায়না, পড়তেও চায়না এবং ছয় উছূলের বাইরে কোন আলোচনাও তারা কখনও করেনা। তাই আলিম বা শিক্ষিত লোকও শরীয়তের পূর্ণাঙ্গ ইলম চর্চার অভাবে মূর্খে পরিণত হয়ে যায়।

আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো- ছয় উছূলী তাবলীগীরা আলিমদের চেয়ে মূর্খদেরকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে, যা তাদের মুরুব্বীদের বক্তব্য দ্বারাই প্রমাণিত হয়। যেমন, তাবলীগীদের বিশিষ্ট মুরুব্বী ইসমাঈল হোসেন দেওবন্দী তার লিখিত “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ১১৬ পৃষ্ঠায় লিখেছে, “…. অনেক স্থলে নবীগণ পর্যন্ত হিদায়েতে বিরাট সঙ্কটে ও বিপদে পড়িয়াছিলেন। তাই অনেক স্থলে বিরাট আলেমও ফেল পড়িতেছে। কিন্তু মূর্খগণ তথায় দ্বীন জয় করিতেছে।” নাউযুবিল্লাহ!

ছয় উছূলী তাবলীগীদের মুরুব্বী ইসমাঈল হোসেন নিজেই স্বীকার করলো যে, “ছয় উছূলী তাবলীগের অধিকাংশ সদস্য মূর্খ।” কেননা, সে “মূর্খগণ” দ্বারা ছয় উছূলী তাবলীগীদেরকেই বুঝিয়েছে।

তাবলীগ জামাত প্রসঙ্গে ‘তের দফা’ নামক কিতাবের ৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “… মূর্খ লোক আমীর হওয়ার জন্য তিন চিল্লাই যথেষ্ট। আর আলেমের জন্য প্রয়োজন সাত চিল্লার।”

এ বক্তব্য দ্বারাও বুঝা যায় যে, তাবলীগীরা মূর্খদেরকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আর এ কারণেই ছয় উছূলী তাবলীগের অধিকাংশ আমীরই মূর্খ।

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত দ্বিতীয় গুণাবলী বা আলামতটিও ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে রয়েছে।

তৃতীয়ত : বলা হয়েছে, “… তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফযীলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবেনা।”

এ কথা তো সকলেরই জানা যে, প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীরা বয়ানে শুধু “ফযীলতের” কথাই বলে থাকে। তাবলীগ করলে এত ফযীলত, গোশত করলে এত ফযীলত, চিল্লা দিলে এত ফযীলত ইত্যাদি ইত্যাদি। ফযীলতের বাইরে মাসয়ালা-মায়ায়িল নিয়ে তারা কোন আলোচনা করতে রাজী নয়।

যেমন, তারা তাদের ‘গোশতের’ ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে বলে থাকে যে, “গাশতকারীরা যে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায় সে রাস্তায় যে ঘাস হয়, সে ঘাস যে গরু খায়, সে গরুর দুধ বা গোশত যারা পান করবে বা খাবে, তারাও বেহেশতে যাবে।”

তারা আরো বলে থাকে যে, “কিছু সময় গাশতে বের হওয়া শবে বরাত ও শবে ক্বদরের রাত্রে হাজরে আসওয়াদকে সামনে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়েও বেশি ফযীলত।”

তাদের এ কথার সত্যতা আরো ভালোভাবে প্রমাণিত হয় তাদেরই মুরুব্বীদের বক্তব্য ও লিখনী দ্বারা। যেমন, “হযরতজীর মালফুজাত” নামক কিতাবের ১২৮ পৃষ্ঠায় ২০১ নং মালফুজে এবং ইসমাঈল হোসেন দেওবন্দী লিখিত “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ১০১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “… ফাযায়েলের মর্যাদা মাসায়েলের চেয়ে বেশি।”

কাজেই মাসায়েলের চেয়ে ফাযায়েলের প্রাধান্য দেয়ার অর্থই হলো হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত “তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফযীলতের”-এর কথার মেছদাক হয়ে যাওয়া।

অতএব, অখ্যাত পত্রিকায় উল্লিখিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত তৃতীয় আলামতটিও ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে ভালভাবেই বিদ্যমান রয়েছে।

চতুর্থতঃ বলা হয়েছে, “…. তারা কুরআন শরীফ উনার উপর আমল কিম্বা, কুরআন শরীফ প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবেনা কখনো।”

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীরা শুধুমাত্র যৎ সামান্য সৎ কাজের আদেশ দেয়, বদ কাজে কখনো বাধা দেয়না। এমনকি সমাজে কুরআন শরীফ উনার আইন বা খিলাফত প্রতিষ্ঠা হোক এটাও তারা চায়না এবং এর জন্য কোশেশও করেনা। বরং এর প্রতি মানুষদেরকে নিরুৎসাহিত করে থাকে। এর প্রমাণ তাদের লিখিত কিতাবাদীতেই রয়েছে। যেমন, “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ১০৯ পৃষ্ঠার, “তাবলীগে দাওয়াত কি এবং কেন? নামক কিতাবের ৭৫ পৃষ্ঠায় এবং “তাবলীগ জামাত সমালোচনা ও তার জবাব” নামক কিতাবের ৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “… প্রচলিত তাবলীগ জামাত জিহাদ পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান বা ছয় উছূলী তাবলীগই হচ্ছে জিহাদুল আকবর।”

ছয় উছূলী তাবলীগীদের উক্ত বক্তব্য দ্বারা কি এটাই প্রমাণিত হয়না যে, “শুধু তাবলীগ করলেই চলবে, জিহাদের কোন প্রয়োজন নেই।”

অথচ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাবলীগও করেছেন আবার জিহাদও করেছেন। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, ছয় উছূলী তাবলীগীরা কখনোই চায়না, কুরআন শরীফ উনার আইন তথা খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হোক। আর জন্য তারা বিন্দুমাত্রও কোশেশ করে না।

অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত চতুর্থ আলামতটিও প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে স্পষ্টভাবেই বিদ্যমান।

মূলকথা হলো- উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট ও অকাট্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, অখ্যাত পত্রিকায় উল্লিাখিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত গুণাবলীসমূহের প্রায় সবগুলোই প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে।

এবার আপনারাই বলুন, প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামাত তাদের উল্লিখিত উক্ত হাদীছ শরীফ উনার ‘মিছদাক’ কিনা? (চলবে)

মুহম্মদ রাকিবুল হাছান

সভাপতি- আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত

কাপাসিয়া, গাজীপুর।

সুওয়াল : মাসিক মদীনা এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নি¤েœাক্ত ৩২নং প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-

প্রশ্ন: ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাযের নির্ধারিত সময়সূচী আছে কিনা? না থাকলে নির্ধারিত সময় করা হয়না। কেন?

উত্তর সূর্য একটি বর্শা পরিমাণ উপরে উঠার অর্থাৎ সূর্যোদয়ের পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর থেকে ঠিক দ্বিপ্রহর শুরুর আগ পর্যন্ত ঈদের নামাযের নির্ধারিত সময়। এর মধ্যে ঈদুল আযহার নামায প্রথম ওয়াক্তে এবং ঈদুল ফিতরের নামায একটু দেরিতে পড়া উত্তম। কেননা, ঈদুল আযহার নামাযের পরই কুরবানী করতে হয় এবং ঈদুল ফিতরে নামাযের আগে ফিতরা বণ্টন করতে হয়। দুই ঈদের নামায যদি কোন অনিবার্য কারণবশতঃ নির্ধারিত দিনে পড়া না যায় তবে ঈদুল ফিতর-এর নামায পরদিন এবং ঈদুল আযহার নামায ১১ যিলহজ্জ পর্যন্ত কাযা পড়া যায়। উল্লেখ্য যে, কাযা পড়ার জন্যও নির্ধারিত সময় অনুসরণ করতে হবে।

মাসিক মদীনায় উল্লিখিত প্রশ্নের উত্তরে যে বিষয়গুলো আমার নিকট আপত্তিকর মনে হয়েছে তা নি¤েœ উল্লেখ করা হলো-

(ক) সূর্যোদ্বয়ের পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর থেকে ঈদের নামাযের ওয়াক্ত হয়।

(খ) অনিবার্য কারণবশতঃ …. ঈদুল আযহার নামায ১১ যিলহজ্জ পর্যন্ত কাযা পড়া যায়।

এখন আমার সুওয়াল হলো- মাসিক মদীনার উপরোক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? দয়া করে দলীল-আদিল্লাহসহ সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াব : সূর্যোদ্বয়ের পঁয়তাল্লিশ (৪৫) মিনি পর থেকে ঈদের নামাযের ওয়াক্ত সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত  বক্তব্য সঠিক হয়নি; বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে।

কেননা, আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক ঈদের নামাযের নির্ধারিত সময় বা ওয়াক্ত হলো, সকালে সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হবার পর থেকে। যাকে ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের পরিভাষায় সূর্য رمح বা এক নেজা (বর্শা) পরিমাণ, হাতের মাপ হিসেবে বার বিঘত বা ছয় হাত পরিমাণ উপরে উঠার পর থেকে এবং ঘড়ির মিনিট হিসেবে। সূর্য উদয়ের শুরু থেকে প্রায় তেইশ মিনিট পর ঈদের নামাযের উয়াক্ত হয়। (অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হবার পর থেকে অথবা সূর্য উদয়ের শুরু থেকে প্রায় তেইশ মিনিট পর) ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর যাহওয়াতুল কুবরা বা যাওয়াল অথবা শরয়ী অর্ধদিন বা দ্বিপ্রহর অর্থাৎ সূর্যের এস্তাওয়া আরম্ভ হবার পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে।

ফযরের ওয়াক্ত শেষ হবার পর, প্রায় তেইশ মিনিট পর্যন্ত মাকরূহ ওয়াক্ত এবং এরপর ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর যোহরের ওয়াক্ত শুরু হবার এক ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে। অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত শুরু হবার আগ পর্যন্ত।

সূর্য পূর্ণবাবে উদিত হবার পর থেকে অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত যা গড়ির হিসাব অনুযায়ী প্রায় তেইশ মিনিট অতিক্রম হবার পূর্বে ঈদের নামায আদায় করলে নামায হবেনা এবং যোহরের নামাযের ওয়াক্ত হবার পূর্বে এক ঘণ্টা যা মাকরূহ ওয়াক্ত নামে পরিচিত অর্থাৎ যাহওয়াতুল কুবরা বা সূর্যের এস্তাওয়া আরম্ভ হবার পর ঈদের নামায আদায় করলে তা আদায় হবে না।

অর্ধদিন বা নিছফুন নাহর দু’ভাগে বর্ণিত। একটি হলো শরয়ী অধদিন, আরেকটি উরফী (প্রচলিত) অধদিন। সূর্য উদয় হতে সূর্য অস্ত পর্যন্ত সময়কে দু’ভাগে ভাগ করলে প্রথম ভাগকে শরয়ী অধদিন বলা হয়। প্রথম ভাগের শেষ অংশকে বলা হয় শরয়ী দ্বিপ্রহর বা যাহওয়াতুল কুবরা। যাহওয়াতুল কুবরা হতে সূর্য ঢলা পর্যন্ত সময়কে এস্তাওয়ায়ে শামস বলা হয়। ওটার মধ্যবর্তী সময় নামায পড়া মাকরূহ। আর প্রচলিত অর্ধদিন বলতে বেলা বারটা বুঝানো হয়। ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শরয়ী অর্ধদিনের পূর্ব পর্যন্ত থাকে।

মেছালস্বরূপ : সকাল ছয়টার যদি সূর্য উদিত হয়, তাহলে প্রায় ছয়টা তেইশ মিনিট হতে ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং বারটায় যদি যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়, তাহলে তার পূর্বে এক ঘণ্টা বাদ দিয়ে অর্থাৎ প্রায় এগারটা পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকবে।

আর নি¤œবর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে আমরা ঈদের নামায কোন সময় আদায় করলে তা সুন্নত হবে, তা জানতে পারবো। যেমন, “সুনানু ইবনে মাজাহ শরীফ উনার” ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

عن ابن عمر ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يغدو الى المصلى فى يوم عيد.

অর্থ: “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঈদের দিন সকাল বেলা ঈদগাহে যেতেন।” (বুখারী শরীফ ১ম খ- ১৩৩ পৃষ্ঠা)

“সূনানু ইবনে মাজাহ শরীফ উনার” ৯৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

عن عبد الله بن رضى الله تعالى عنه انه خرج مع الناس يوم فطر او اضحى فانكر البطاء الامام وقال ان كنا لقد فرغنا ساعتنا هذه وذلك حين التسبيح.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি একবার লোকদের সাথে ঈদুল ফিতর অথবা ঈদুল আযহার দিন ঈদের নামায পড়ার জন্য বের হলেন। অতঃপর ইমামের বিলম্বে তিনি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বললেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় আমরা তো এ সময়ে (অর্থাৎ ইশরাকের সময়ে, সূর্য কিছু উপরে উঠতে) ঈদের নামায শেষ করতাম। আর তখন ছিল ইশরাকের নামাযের সময়। অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় ইশরাকের সময় সূর্য কিছু উপরে উঠতে) ঈদের নামায শেষ করতেন।” (আর দাউদ শরীফ ১ম খ- ১৬৮ পৃষ্ঠা)

“বযলুল মাজহুদ” কিতাবের ২য় খ- ২০১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وعن ابى الحويرث ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كتب الى عمرو بن حزم وهو بنجران عجل الاضحى واخر الفطر وذكر الناس.

অর্থ: “হযরত আবূল হুয়াইরিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আমর ইবনে হাযম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নাজরানের গর্ভণর থাকা অবস্থায় এই মর্মে চিঠি দিয়ে আদেশ করেছেন যে, ঈদুল আযহাব নামায খুব সকাল সকাল (সকালে তাড়াতাড়ি) পড়বে এবং ঈদুল ফিতরের নামায ঈদুল আযহার চেয়ে একটু দেরিতে আদায় করবে এবং নামাযের পর মানুষকে ওয়াজ নছীহত করবে।” (মিশকাত শরীফ ১২৭ পৃষ্ঠা, হাশিয়ায়ে মারাকিউল ফালাহ)

উপরোক্ত হাদীছ শরীফ উনার আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঈদুল আযহার নামায খুব সকালে ও ঈদুল ফিতরের নামায ঈদুল আযহার চেয়ে একটু দেরীতে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেহেতু খুব সকাল বেলা ঈদের নামাযের জন্য ঈদগাহে যাওয়া এবং খুব সকাল বেলাই ঈদের নামায পড়া সুন্নত।

আর এই খুব সকাল বেলার পরিমাণ কতটুকু ছিলো, সে সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ নিম্নে প্রদত্ত হলো-

যেমন, “আল মুখতাছারুল কুদুরী” কিতাবের ৩৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

فاذا حلت الصلوة بارتفاع الشمس دخل وقتها الى الزوال فاذا زالت الشمس خرج وقتها.

অর্থ: “সূর্য উদয়ের পর যখন নফল নামায পড়া জায়িয হয় তখন থেকেই ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে। অতঃপর সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়লে ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শেষ হবে।”

“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খ-ের ১৫০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ووقت صلاة العيدين من حين تبيض الشمس الى أن تزول كذا فى السراجية وكذا فى التبيين.

অর্থ: “দু’ঈদের নামাযের ওয়াক্ত সূর্য সাদা হওয়ার পর থেকে শুরু হয় এবং দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত থাকে। অনুরূপ সিরাজিয়া ও তাবয়ীন কিতাবে উল্লেখ আছে।”

“ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবের ২য় খ-ের ৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ان وقتها من الارتفاع الى الزوال.

অর্থ: “নিশ্চয়ই ঈদের নামাযের ওয়াক্ত হলো সূর্য উদয়ের পর থেকে দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত।”

“কিতাবুল ফিক্বহে আ’লাল মাযাহিবিল আরবায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৩৪৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

الحنفية قالوا وقتها من حل النافلة الى الزوال فاذا زالت الشمس وهو فيها فسدت.

অর্থ: “হানাফীগণ বলেন, ঈদের নামাযের ওয়াক্ত হলো সূর্য উদয়ের পর যখন নফল নামায পড়া জায়িয হয়, তখন থেকে দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত। সুতরাং ঈদের নামায পড়া অবস্থায় যদি সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ে, তাহলে ঈদের নামায ফাসিদ হয়ে যাবে।”

“বযলুল মাযহুদ” কিতাবের ২য় খ-ের ২০১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

عن جندب رضى الله تعالى عنه قال كان النبى صلى الله عليه وسلم يصلى بنا يوم الفطر والشمس على قيد رمحين والاضحى على قيد رمح.

অর্থ: “হযরত জুনদুব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে নিয়ে ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামায পড়েছিলেন তখন সূর্য দুই নেজা পরিমাণ উপরে ছিল। আর ঈদুল আযহার দিন আমাদেরকে নিয়ে ঈদের নামা পড়েছিলেন তখন সূর্য এক নেজা পরিমাণ উপরে ছিল।” (আউনুল মাবুদ ১ম খ- ৪৪২ পৃষ্ঠা)

এই হাদীছ শরীফ উনার আলোকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, ঈদুল আযহার নামায (সূর্য এক বর্শা পরিমাণ) সকালে পড়া সুন্নত। আর তুলনামূলক ঈদুল ফিতরের নামায (সূর্য দুই বর্শা পরিমাণ) একটু দেরিতে পড়া সুন্নত।”

“ইরশাদুস সারী” কিতাবের ২য় খ-ের ২১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

قال المالكية والحنفية والحنابلة من ارتفاع الشمس قيد رمح الى الزوال.

অর্থ: “মালিকী, হাম্বলী এবং হানাফী মাযহাবের ইমামগণ বলেছেন, সূর্য এক নেজা পরিমাণ উদয়ের পর থেকে দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত।”

“ইরশাদুস সারী” কিতাবের ২য় খ-ের ২১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وهو فعلها بعد الارتفاع قيد رمح فيكون ذلك الوقت افضل بالاجماع.

অর্থ: “সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের ঐক্যমতে ঈদের নামাযের উত্তম ওয়াক্ত হলো সূর্য এক নেজা পরিমাণ উদয়ের পর থেকে।”

“শরহে বিক্বায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ২০৩ পৃষ্ঠার ৩নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

من ارتفاع اى قدر رمح وهو اثنا عشر شبرا وهو الوقت الذى يحل فيه النافلة.

অর্থ: “ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় সূর্য এক নেজা পরিমাণ উদয়ের পর থেকে। আর এক নেজার পরিমাপ হলো বার বিঘত পরিমাণ। অর্থাৎ সূর্য বার বিঘত বা ছয় হাত পরিমাণ উপরে উঠলে ঈদের নামাযের ওয়াক্ত হয়। আর সূর্য বার বিঘাত বা ছয় হাত পরিমাণ উপরে উঠলে সেই ওয়াক্তটিই হবে এমন এক ওয়াক্ত যে ওয়াক্তে নফল নামায পড়াও জায়িয।” (উমদাতুর রেয়ায়া, হাশিয়াতুত তাহত্বাবী আ’লা মারাকিউল ফালাহ ৩৪৬ পৃষ্ঠা, নূরুল ইজাহ ১২১ পৃষ্ঠা)

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, সূর্য এক নেজা পরিমাণ উদয় হলে ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর এক নেজার পরিমাপ বা বিঘত বা ছয় হাত। সুতরাং সূর্য এক নেজা পরিমাণ (বা বার বিঘত পরিমাণ বা ছয় হাত পরিমাণ) উপরে উঠতে ঘড়ির মিনিট অনুযায়ী সময় লাগে প্রায় তেইশ মিনিট।

অতএব, সূর্য উদয়ের শুরু থেকে ঘড়ির মিনিট অনুযায়ী প্রায় তেইশ মিনিট পর থেকে ঈদের নামাযের (নির্ধারিত সময় বা) ওয়াক্ত শুরু হয় এবং দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত ওয়াক্ত থাকে।

সুতরাং মাসিক মদীনা যে বলেছে, “সূর্যোদ্বয়ের পঁয়তাল্লিশ (৪৫) মিনিট পর থেকে ….” তার এ বক্তব্য সম্পূর্ণই ডাহা মিথ্যা ও ভুল বলে প্রমাণিত হলো।

দ্বিতীয়তঃ মাসিক মদীনায় বলা হয়েছে, “… অনিবার্য কারণবশত: …. ঈদুল ফিতরের নামায পর দিন এবং ঈদুল আযহার নামায এগারই যিলহজ্জ পর্যন্ত কাযা পড়া যায়।”

এর জবাবে বলতে হয় যে, “মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্যও ভুল হয়েছে। কারণ, ঈদুল আযহার নামায এগার নয়, বরং বারই যিলহজ্জ পর্যন্ত আদায় করা যায়। আর শুধু অনিবার্য কারণবশতঃই নয় বরং নি¤œলিখিত শরীয়তসম্মত কারনে ঈদুল ফিতরের নামায পর দিন অর্থাৎ দ্বিতীয় দিন এবং ঈদুল আযহার নামায বারই যিলহজ্জ পর্যন্ত অর্থাৎ তৃতীয় দিন পর্যন্ত আদায় করা যায়।

আর শরীয়তসম্মত ওজরের কারণে ঈদুল ফিতরের নামায দ্বিতীয় দিন এবং ঈদুল আযহার নামায তৃতীয় দিন পর্যন্ত আদায় করলে তা কাবা হিসেবে গণ্য হবে না বরং আদা হিসেবেই গণ্য হবে। আর আমাদের হানাফী মাযহাবে ঈদের নামাযের কোন ক্বাযা নেই।

উল্লেখ্য, যে সকল শরীয়তসম্মত কারনে ঈদুল ফিতরের নামায পরদিন অর্থাৎ দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত পড়া যায় সে সকল শরীয়ত সম্মত কারণগুলো হলো-

১। যদি আকাশে মেঘ থাকার কারণে চাঁদ দেখা না যায় এবং পরের দিন সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে যাওয়ার পর সংবাদ পাওয়া যায় যে, গতকাল চাঁদ দেখা গেছে তাহলে দ্বিতীয় দিন ঈদের নামায পড়বে।

২। যদি সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে যাওয়ার পূর্বে চাঁদ দেখার সংবাদ পায় কিন্তু সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে যাওয়ার পূর্বে লোকজন একত্রিত হওয়ার সময় না পায় তাহলে দ্বিতীয় দিন ঈদের নামায পড়বে।

৩। যদি ১ম তারিখে ঈদের নামায পড়ার পর জানতে পারে যে, মেঘের কারণে না জেনে সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে যাওয়ার পর ঈদের নামায পড়া হয়েছে তাহলে দ্বিতীয় দিন পুনরায় ঈদের নামায পড়বে।

৪। যদি এমন বৃষ্টি হয় যে বৃষ্টির কারণে মানুষের পক্ষে বের হওয়া সম্ভব না হয় তাহলে দ্বিতীয দিন ঈদের নামায পড়বে।

৫। বিনা ওজরে দ্বিতীয় দিন ঈদুল ফিতরের নামায পড়া জায়িয নেই।

উপরোক্ত শরীয়তসম্মত ওজরের কারণে দ্বিতীয় দিন ঈদের নামায পড়লে তা ক্বাযা হিসেবে গণ্য হবে না বরং আদা হিসেবেই গণ্য হবে।

উল্লেখ্য, শরীয়তসম্মত কারণে দ্বিতীয় দিন ঈদের নামায পড়া যে জায়িয সে সম্পর্কে নি¤েœ দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হলো-

যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عن ابى عمير بن انس رضى الله تعالى عنه عن عمومه له من اصحاب النبى صلى الله عليه وسلم ان ركبا جائوا الى النبى صلى الله عليه وسلم شهدون انهم رأوا الهلال بالامس فامرهم ان يفطروا واذا اصبحوا ان يغدوا الى مصلاهم.

অর্থ: “হযরত আবূ উমাইর ইবনে আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এক চাচা থেকে বর্ণনা করেন। যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবীগণ উনাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। একদা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট কয়েকজন আরোহী এসে সাক্ষ্য দিল যে, তারা গতকাল ঈদের নতুন চাঁদ দেখেছেন।

অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদেরকে নির্দেশ দিলেন যে, তারা যেন রোযা ভেঙ্গে ফেলে এবং পরের দিন অর্থাৎ দ্বিতীয় দিন যখন সকাল হবে তখন তারা যেন সকাল সকাল ঈদের নামাযের জন্য ঈদগাহের দিকে রওয়ানা হয়।” (আবূ দাউদ শরীফ ১ম খ- ১৭১ পৃষ্ঠা, নাসাঈ শরীফ ১ম খ- ২৩১ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ১২৭ পৃষ্ঠা)

“আল লুবাব লিল মায়দানী” কিতাবে উল্লেখ আছে,

لان الاصل فيها ان لا تقضى كالجمعة الا انا تركناه بالحديث وقد ورد بالتأخير الى اليوم الثانى عند العذر.

অর্থ: “কেননা, ঈদের নামাযের ব্যাপারে اصلا বা মুলকথা হলো এই যে, জুমুয়ার নামাযের মত ঈদের নামায ক্বাযা পড়া যাবে না। অর্থাৎ জুমুয়ার নামায ফউত হয়ে গেলে যেমন, যোহরের নামায পড়তে হয় অনুরূপ ঈদের নামায ফউত হয়ে গেলে ক্বাযা পড়া যাবে না। তবে ঈদুল ফিতরের নামায দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত সূর্য উদয়ের (প্রায় তেইশ মিনিট) পর থেকে দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে পড়ার যে অবকাশ আমরা রেখেছি, তা হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লিখিত দলীলের ভিত্তিতে। আর হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ঈদুল ফিতরের নামায দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত দেরি করে পড়ার যে বর্ণনা রয়েছে তা ওজরের ভিত্তিতে।”

“মিরকাত শরীফ উনার” ৩য় খ-ের ২৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وفى شرح المنية ان حدث عذر منع الصلاة يوم الفطر قبل الزوال صلاها من الغد قبل الزوال و ان منع عذر من الصلاة فى اليوم الثانى لم يصل بعده بخلاف الاضحى فانها تصلى فى اليوم الثالث ايضا ان منع عذر فى اليوم الاول والثانى وكذا ان أخرها الى اليوم الثانى أوالثالث جاز لكن مع الاساءة.

অর্থ: “শরহুল মুনীয়া কিতাবে উল্লেখ আছে, ঈদুল ফিতরের দিন দ্বিপ্রহরের পূর্বে অর্থাৎ সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে যাওয়ার পূর্বে যদি কোন ওজর সংঘটিত হওয়ার কারণে ঈদুল ফিতরের নামায পড়তে বাধাগ্রস্থ হয় তাহলে পরের দিন সকালে সূর্য উদয়ের (প্রায় তেইশ মিনিট পর) থেকে দ্বিপ্রহরের পূর্বে অর্থাৎ সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে যাওয়ার পূর্বে ঈদুল ফিতরের নামায পড়বে। আর যদি কোন ওজরে ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিনও ঈদুল ফিতরের নামায পড়তে বাধাগ্রস্থ হয় তাহলে দ্বিতীয় দিনের পরের দিন অর্থাৎ তৃতীয় দিন ঈদুল ফিতরের নামায পড়বে না। তবে ঈদুল আযহার নামায তৃতীয় দিনও পড়া যাবে যদি কোন ওজরে প্রথম দিন ও দ্বিতীয় দিন ঈদুল আযহার নামায পড়তে বাধাগ্রস্থ হয়। অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের নামায যদি কোন ওজরে বাধাগ্রস্থ হয়ে প্রথম পড়বে এবং দ্বিতীয় দিনও যদি কোন ওজরে বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়তে না পারে তাহলে তৃতীয় দিন ঈদুল ফিতরের নামায পড়বে না। তবে এই নিয়ম ঈদুল আযহার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। কেননা, ঈদুল আযহার নামায কোন ওজরে প্রথম দিন পড়তে না পারলে দ্বিতীয় দিন পড়বে; এবং দ্বিতীয় দিনও যদি ওজরে পড়তে না পারে তৃতীয় দিন পড়বে কিন্তু ঈদুল ফিতরের নামায তৃতীয় দিন পড়া যাবে না। অনুরূপ যদি বিনা ওজরে ঈদুল আযহার নামায দ্বিতীয় দিন অথবা তৃতীয় দিন পর্যন্ত দেরি করে তাহলে জায়িয হলেও মাকরূহ তাহরীমীর গুণাহ হবে।” (মুযাহিরে হক্ব ১ম খ- ৪৭৭ পৃষ্ঠা)

“দিয়ায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,

وان كان عذر صلاها من الغد وبعد الغد ولا يصليها بعد ذلك لانها موقتة بوقت الاضحية.

অর্থ: “যদি কোন ওজর সংঘটিত হয় তাহলে দ্বিতীয় দিন ঈদুল আযহার নামায পড়বে। আর দ্বিতীয় দিনও ওজর সংঘটিত হলে তৃতীয় দিন ঈদুল আযহার নামায পড়া যাবে না। কেননা, ঈদুল আযহার নামাযের নির্ধারিত ওয়াক্তটি কুরবানীর সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট। অর্থাৎ কুরবানী যেমন দশ, এগার ও বার এই তিনদিন কারা যায় অনুরূপ ওজরের কারণে ঈদুল আযহার নামাযও দশ, এগার ও বার এই তিন দিন সূর্য উদয়ের (প্রায় তেইশ মিনিট) পর থেকে দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত পড়া যায়।”

উল্লেখ্য, আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক আইয়্যামে নহর বা কুরবানীর দিন হলো তিনদিন। অর্থাৎ দশ, এগার ও বারই যিলহজ্জ।

যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে,

الاضحى يومان بعد يوم الاضحى.

অর্থ: “কুরবানীর দিনটির পর আরো দু’দিন হলো কুরবানীর দিন।” (মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ)

আর ফতওয়ার কিতাবসমূহে উল্লেখ আছে,

أيام النحر ثلاثة يوم النحر وهو العاشر من ذى الحجة ويومان بعده.

অর্থ: “আইয়্যামে নহর বা কুরবানীর দিন হলো তিনদিন। আর তা হলো যিলহজ্জ মাসের দশ তারিখ এবং তার পরবর্তী দু’দিন। অর্থাৎ দশ, এগার ও বারই যিলহজ্জ এই তিনদিন হলো কুরবানীর দিন।” (খুলাছাতুল ফতওয়া, হাশিয়ায়ে তাহত্বাবী আলা মারাকিউল ফালাহ, বাহুরুর রায়িক, আলমগীরী, শরহে ইনায়া, শামী, নুরুল ইযাহ, আইনুল হিদায়া ইত্যাদি)

“শরহে বিক্বায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ২০৩ পৃষ্ঠার ১৪ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

ويصلى بعذر او بغيره ايامها لا بعدها.

অর্থ: “তবে ঈদুল আযহার নামায ওজরে হোক অথবা বিনা ওজরে হোক দশ, এগার ও বারই যিলহজ্জ এই তিন দিন পর্যন্ত পড়া যাবে। এই তিন দিনের পর আর পড়া যাবে না।”

“মারাকিউল ফালাহ” কিতাবে উল্লেখ আছে,

وتؤخر صلاة عيد الاضحى … بلا عذر مع الكراهة.

অর্থ: “ওজর ব্যতীত ……. ঈদুল আযহার নামায (দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন পর্যন্ত) দেরি করে পড়া মাকরূহ তাহরীমী।”

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, শরীয়তসম্মত ওজরের কারণে ঈদুল ফিতরের নামায দ্বিতীয় দিন পড়া যাবে এবং ঈদুল আযহার নামায তৃতীয় দিন অর্থাৎ বারই যিলহজ্জ পর্যন্ত পড়া যাবে।

সুতরাং শরীয়তসম্মত ওজরের কারণে ঈদুল ফিতরের নামায দ্বিতীয় দিন এবং ঈদুল আযহার নামায দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দিন পড়লে সেটা ক্বাযা বলে গণ্য হবে না বরং আদা হিসেবে গণ্য হবে।

অতএব, মাসিক মদীনা যে বলেছে, “ঈদুল ফিতরের নামায পর দিন এবং ঈদুল আযহার নামায এগারই যিলহজ্জ পর্যন্ত ক্বাযা পড়া যায়।” তার এ বক্তব্য ভুল ও জিহালতপূর্ণ বলেই প্রমাণিত হলো।

আর পরিশেষে বলতে হয় যে, আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া হলো, ঈদের নামাযের ক্বাযা নেই। যেমন, “মিরকাত শরীফ উনার” ৩য় খ-ের ২৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اذ مذهبه ان من لم يدرك صلاة العيد مع الامام لايقضيها.

অর্থ: “ইমামে আযম, হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযহাব হলো এই যে, যদি কোন ব্যক্তি ইমামের সাথে ঈদের নামায না পায় তাহলে সে ব্যক্তি ঈদের নামায ক্বাযা আদায় করবে না।”

বুখারী শরীফ উনার বিখ্যাত শরাহ “উমদাতুল ক্বারী” কিতাবের ৬ খ-ের ৩০৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

فقد قال قوم لاقضاء عليه اصلا وبه قال مالك واصحابه … وعند اصحابنا الحنفية كذلك لايقضيها اذا فاتت عن الصلاة مع الامام.

অর্থ: “ফউত হয়ে যাওয়া ঈদের নামাযের ব্যাপারে উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। তবে উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের একটি জামায়াত বলেছেন যে, ঈদের নামায ফউত হয়ে গেলে اصلا বা মূলতঃ ঈদের নামাযের কোন ক্বাযা নেই। আর ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং উনার মাযহাবের ইমামগণ এ মতটিকেই গ্রহণ করে বলেছেন যে, اصلا বা মূলতঃ ঈদের নামাযের কোন ক্বাযা নেই। আর অনুরূপ আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমামগণ উনার বলেছেন যে, মূলতঃ ঈদের নামাযের কোন ক্বাযা নেই। … সুতরাং ইমামের সাথে যদি ঈদের নামায ফউত হয়ে যায় তাহলে ফউত হয়ে যাওয়া ঈদের নামাযের ক্বাযা আদায় করবে না।”

“ইরশাদুস সারী” কিতাবের ২য় খ-ের ২২৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وقال الحنفية لاتقضى.

অর্থ: “হানাফী মাযহাবের ইমামগণ বলেন, ইমামের সাথে ঈদের নামায ফউত হয়ে গেলে অর্থাৎ পড়তে না পারলে ঈদের নামাযের ক্বাযা আদায় করা যাবেনা।”

হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “শরহু তারাজিমী আবওয়াবিল বুখারী” কিতাবের ২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন,

واما عند الحنفية فلا قضاء لصلاة العيد.

অর্থ: “অতঃপর হানাফী মাযহাবের ফতওয়া হলো, ঈদের নামাযের কোন ক্বাযা নেই।”

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, সূর্য উদয়ের প্রায় তেইশ মিনিট পর থেকে সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত হলো ঈদের নামাযের নির্ধারিত সময় বা ওয়াক্ত।

আর শরীয়তসম্মত ওজরের কারণে ঈদুল ফিতরের নামায দ্বিতীয় দিন সূর্য উদয়ের প্রায় তেইশ মিনিট পর থেকে দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত পড়া যাবে। এর পরে পড়া যাবে না।

অনুরূপ শরীয়ত সম্মত ওজরের কারণে ঈদুল আযহার নামায দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন সূর্য উদয়ের প্রায় তেইশ মিনিট পর থেকে দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত পড়া যাবে। এরপর পড়া যাবে না।

আর শরীয়তসম্মত ওজরের কারণে ঈদুল ফিতরের নামায দ্বিতীয় দিন এবং ঈদুল আযহার নামায দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে পড়লে সেটা আদা হিসেবেই গণ্য হবে। ক্বাযা হিসেবে নয়। আর বিনা ওজরে ঈদুল ফিতরের নামায দ্বিতীয় দিন পড়া জায়িয নেই। অনুরূপ বিনা ওজরে ঈদুল আযহার নামায দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে পড়লে মাকরূহ তাহরীমীর গুণাহ হবে।

আর সর্বশেষ কথা হলো, আমাদের হানাফী মাযহাবে ঈদের নামাযের কোন ক্বাযা নেই। সুতরাং মাসিক মদীনার বক্তব্য ভুল বলেই প্রমানিত হলো।

[বি: দ্র:- জরুরতে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।]

{দলীলসমূহ : (১) শরহুল মা’য়ানীল আছার, (২) বুখারী শরীফ (৩) তিরমিযী শরীফ (৪) আবু দাউদ শরীফ (৫) নাসাঈ শরীফ (৬) দারে কুতনী শরীফ (৭) ইবনে মাজাহ শরীফ (৮) ইবনে হাব্বান শরীফ (৯) দারিমী শরীফ (১০) হাকিম শরীফ (১১) বাইহাক্বী শরীফ (১২) মিশকাত শরীফ (১৩) উমদাদুল ক্বারী শরীফ (১৪) ইরশাদুস সারী শরীফ (১৫) শরহু তারাজিমী আবওয়াবিল বুখারী শরীফ (১৬) বযলুল মাযহুদ শরীফ (১৭) আউনুল মা’বুদ শরীফ (১৮) শরহুত ত্বীবী শরীফ (১৯) মিরকাত শরীফ (২০) আশয়াতুল লুময়াত শরীফ (২১) মুযাহিরে হক্ব শরীফ (২২) লুময়াত শরীফ (২৩) আদ দুররুল মানদ্বুদ শরীফ (২৪) শরহু সুনানে আবী দাউদ শরীফ (২৫) মিরআতুল মানাজীহ শরীফ (২৬) আল মুখতাছারুল কুদূরী (২৭) শরহে বিকায়া শরীফ (২৮) হিদায়া শরীফ (২৯) নিহায়া শরীফ (৩০) দিরায়া শরীফ (৩১) বিনায়া (৩২) আল জাওযাহারাতুন নাইয়ারাহ (৩৩) আত তালখীছ (৩৪) দুররুল মুখতার (৩৫) খুলাছাতুল ফতওয়া (৩৬) উছূলে কারখী (৩৭) শরহুল মুনীয়া (৩৮) মুহীত্ব (৩৯) বাজ্জাযিয়া (৪০) কাযীখান (৪১) ফতহুল ক্বাদীর (৪২) কিফায়া (৪৩) ফতওয়ায়ে নাওয়ায়িল (৪৪) বাহরুর রায়িক্ব (৪৫) বিদায়া শরীফ (৪৬) তাতারখানীয়া (৪৭) সিরাজীয়া (৪৮) তাবয়ীন (৪৯) ফতওয়ায়ে আলমগীরী (৫০) শরহে ইনায়া (৫১) হাশিয়ায়ে চলপী (৫২) আফিন্দী (৫৩) শরহুন নিকায়া (৫৪) শরহে ইলিয়াস (৫৫) আল মুনাহহাল (৫৬) মুনতাকাল আখবার (৫৭) উমদাতুর রেযায়া (৫৮) আল লুবাব লিল মায়দানী (৫৯) রদ্দুল মুহতার (৬০) হাশিয়াতুত তাহতাবী আ’লাদ দুররিল মুখতার (৬১) নূরুল ইজাহ (৬২) মারাকিউল ফালাহ (৬৩) নূরুল হিদায়া (৬৪) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া (৬৫) আইনুল হিদায়া (৬৬) গায়াতুল আওতার (৬৭) হাশিয়ায়ে মারাকিউল ফালাহ (৬৮) কিতাবুল ফিক্বহে আলাল মাযাহিবিল আরবায়া (৬৯) শামী (৭০) হাদিয়াতুল মুছল্লীন (৭১) ইলাউস সুনান (৭২) নূরুল ইছবাহ ইত্যাদি।}

মাওলানা মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান

মাওলানা মুহম্মদ মাছূম বিল্লাহ

মুহম্মদ আসাদুর রহমান, মুহম্মদ মাইজুর রহমান

ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

সুওয়াল : আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম এই তিনটি সংখ্যায় ৩৫৩টি অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে প্রদত্ত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ, মুহাক্কিক-মুদাক্কিক ও হক্কানী উলামায়ে কিরামগণ উনাদের ফতওয়া মুতাবিক জানতে পারলাম যে, “প্রাণীর ছবি তৈরি করা বা করানো, ঘরে রাখা সর্বাবস্থায় হারাম।”

অথচ রেযাখানী মুখপত্র নভেম্বর/২০০১ ঈসায়ী সংখ্যায় ছবি সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ফতওয়া প্রকাশ করেছে। যা কিনা মানুষের ঈমান-আমল বিনষ্ট হওয়ার কারণ। রেযাখানীদের ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যের যে বিষয়গুলো আপত্তিকর সেগুলো নি¤েœ উল্লেক করা হলো-

(ক) রেযাখানীরা ছবি তোলাকে বৈধ বলেছে; কিন্তু দলীল হিসেবে পেশ করেছে ঘরে ছবি রাখা সম্পর্কিত হাদীছ শরীফসমূহকে।

(খ) … কতেক উলামা যেসব ছবির শরীর ও ছায়া নেই সেসব ছবিকে বৈধ বলেছেন।

(গ) পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ এবং হাম্বলী, শাফেয়ী, মালেকী এমনকি হানাফীদেরও কেউ কেউ নাকি (গায়রে মুজাসসাম) শরীরবিহীন ছবিকে বৈধ বলেছেন।

(ঘ) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুরুর দিকে ছবি তৈরি করা ও সংরক্ষণ করাকে নিষেধ করেছিলেন; কিন্তু পরবর্তীতে অনুমতি দেন।

(ঙ) ছবি হারাম হওয়ার মূলে হলো গায়রুল্লাহর সম্মান ও ইবাদত।

(চ) প্রত্যেক যুগের ফক্বীহ, মুফতী, কাজী ও আলিমগণ যুগের চাহিদা অনুযায়ী ফতওয়া দিয়েছেন এবং দেয়া উচিত।

(ছ) সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তোলা বৈধ যা যুগের চাহিদাও।

(জ) প্রয়োজনীয় রেকর্ডের জন্য ফাইলবন্দি ছবিসমূহ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট জ্ঞান ও ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানার নিমিত্তে সরকারি-বেসরকারী যাদুঘর বা বিশেষ প্রতিষ্ঠানসমূহে পূর্বের নানা মনীষীগণের ছবি সংরক্ষণ/ধারণ করে রাখা বিশেষ প্রয়োজনে মাকরূহ হবেনা। এছাড়াও আরো বহু আপত্তিকর বিষয় তাদের উক্ত ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যে স্থান পেয়েছে।

কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে তাদের উল্লিখিত আপত্তিকর বক্তব্যগুলোর শরয়ী ফায়সালা কামনা করি।

জাওয়াব : পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমারা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ)

উল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পূর্ণ মিছদাক বা নমুনা হচ্ছে রেযাখানীরা। তারা ছবির ব্যাপারে এমন সব বক্তব্য প্রদান করেছে যা কিতাবে দেখা তো দূরের কথা কেউ কোনদিন শুনেওনি। মূলতঃ রেযাখানীরা নিজেদের কৃত বদ আমলকে ধামা-চাপা দেয়ার উদ্দেশ্যেই মনগড়াভাবে ছবিকে জায়িয করার অপচেষ্টা করেছে।

(ধারাবাহিক)

প্রাণীর ছবি সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত রেযাখানীদের আপত্তিকর ও প্রতারণামূলক বক্তব্য সমূহের খ-নমূলক জবাব- (ঙ)

অতঃপর রেযাখানীরা লিখেছে, “….. অবশ্যই মুহব্বতের প্রেক্ষিতে কোন পীর, বুযুর্গ বা যে কোন ব্যক্তির ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ ছবি হারাম হওয়ার মূলে হলো গায়রুল্লাহর সম্মান ও ইবাদত। …..।”

মূলতঃ রেযাখানীরা তাদের উক্ত বক্তব্য দ্বারা এটাই ছাবেত করতে চেয়েছে যে, যেসব ছবি সম্মান বা ইবাদতের উদ্দেশ্যে উঠানো হয়না সেসব ছবি উঠানো জায়িয। নাউযুবিল্লাহ!

রেযাখানীদের এ বক্তব্যটিও মনগড়া, প্রতারণামূলক ও দলীলবিহীন। কেননা, “সম্মান, “সম্মান ও ইবাদতই” ছবি হারাম হওয়ার মূল কারণ নয়। নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবেই এটাকে মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। তবে ছবি হারাম হওয়ার কারণ সমূহের মধ্যে এটিও একটি কারণ মাত্র। কিন্তু ছবি হারাম হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে,

مضاهاة لخلق الله.

অর্থাৎ “স্রষ্টার সাথে সাদৃশ্যতা”

কারণ ছবি ও মূর্তি তৈরি করার অর্থই হলো নিজেকে ¯্রষ্টা হিসেবে প্রকাশ করা। নাউযুবিল্লাহ! নির্ভরযোগ্য সকল কিতাবেই এটা উল্লেখ আছে।

নি¤েœ এ সম্পর্কিত কতিপয় দলীল পেশ করা হলো- ফখরুল মুহাদ্দিছীন, আল্লামা বদরুদ্দী আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত ব্যাখ্যা গ্রন্থ বুখারী শরীফ উনার শরাহ “উমদাতুল ক্বারী”-এর ২২ খ- ৭০ পৃষ্ঠায় লিখেন,

صورة الحيوان حرام اشد التحريم وهو من الكبائر وسواء صنعه لما يمتهن او بغيره فحرام بكل حال لان فيه مضاهاة لخلق الله.

অর্থ: “প্রাণীর ছবি তৈরি করা শক্ত হারাম ও কবীরা গুণাহ। সম্মানের জন্য তৈরি করুক অথবা অন্য কারণে, সবটার একই হুকুম। অর্থাৎ প্রত্যেক অবস্থাতেই তা হারাম। কেননা, ছবি ও মূর্তি তৈরির মধ্যে ¯্রষ্টার সাদৃশ্যতা রয়েছে।

রঈসুল মুহাদ্দিসীন, আল্লামা ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত মুসলিম শরীফ উনার ব্যাখ্যা গ্রন্থ “শরহে নববী” ৭ম জি: ৮১ পৃষ্ঠায় লিখেন,

تصوير صورة الحيوان حرام شديد التحريم وهو من الكبائر لانه متوعد عليه بهذا الوعيد الشديد المذكور فى الاحاديث وسواء صنعه بما يمتهن او بغيره فصنعته حرام بكل حال لان فيه مضاهاة لخلق الله تعالى …..

অর্থ: “প্রাণীর ছবি তৈরি করা শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। কেননা হাদীছ শরীফসমূহে এ ব্যাপারে কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাণীর ছবি সম্মানের জন্য তৈরি করুক অথবা অন্য কোন উদ্দেশ্যে তার একই হুকুম। অর্থাৎ সর্বাবস্থায়ই প্রাণীর ছবি উঠানো হারাম। কেননা এতে ¯্রষ্টার সাদৃশ্যতা প্রকাশ পায়।”

উক্ত কিতাবের উক্ত খ-ের ৮৪ পৃষ্ঠায় এ সম্পর্কে আরো উল্লেখ আছে যে,

قال العلماء سبب امتناعهم من بيت فيه صورة كونها معصية فاحشة وفيها مضاهاة لخلق الله تعالى …..

অর্থ: “উলামায়ে কিরামগণ বলেন, যে ঘরে প্রাণীর ছবি রয়েছে সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ না করার কারণ হলো, ছবি তৈরি করা গুনাহ ও ফাহেশা কাজ এবং এতে ¯্রষ্টার সাদৃশ্যতা রয়েছে …..।”

উল্লিখিত বিশ্বখ্যাত ও সর্বজনমান্য কিতাব ছাড়াও খোদ রেযাখানীদের গুরু রেযাখার “রেজভীয়া” কিতাবেও এরূপ উল্লেখ আছে।

যেমন, “রেজভীয়া” কিতাবের ১০ম খ-ে উল্লেখ আছে,

“…. علامه شامى دررد المحتار فرمايد فعل التصوير غير جائز مطلقا لانه مضاهاة لخلق الله تعالى بمدر ان از “بحر الرائق” است صنعه حرام بكل حال الان فيه مضاهاة لخلخ الله تعالى … وجون علت تحريم مشابهت بخلق المى ست تفاوت نمى كند …..”

অর্থ: “…. আল্লামা শামী “রুদ্দুল মুহতারে” উল্লেখ করেন যে, প্রাণীর ছবি তৈরি করা নাজায়িয। কেননা এটা ¯্রষ্টার সাদৃশ্যতা দাবী করার নামান্তর। অনুরূপ “বাহরুর রায়িকে” উল্লেখ আছে যে, প্রাণীর ছবি তৈরি করা প্রত্যেক অবস্থাতেই হারাম। কেননা এতে ¯্রষ্টার সাদৃশ্যতা রয়েছে।

… যেহেতু ছবি হারাম হওয়ার কারণ হলো ¯্রষ্টার সাথে সাদৃশ্যতা। তাই পার্থক্য করা যাবে না (বরং সব ধরণের ছবিই হারাম) …..।”

অতএব, খোদ রেযাখার বক্তব্য দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, ছবি হারাম হওয়ার মূলে হলো

مضاهاة لخلق الله.

স্রষ্টার সাথে সাদৃশ্যতা।’ অর্থাৎ ছবি তৈরিকারী প্রকারান্তরে ¯্রষ্টার সাদৃশ্যতা দাবী করলো, যা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হলো যে, রেযাখানীদের উপরোক্ত বক্তব্য মনগড়া, জিহালতপূর্ণ, দলীলবিহীন ও প্রতারণামূলক। তারা উক্ত বক্তব্যের দ্বারা সূক্ষ্মভাবে জনগণকে ধোকা দিতে চেয়েছিল।

তারাই এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছিল যে, তাদের ও তাদের আমদানীকৃত পীরদের ছবিগুলো যেহেতু সম্মান ও ইবাদতের জন্য উঠানো হয়না সেহেতু সেগুলো জায়িয।

কিন্তু এটা যে খোদ রেযা খারও বিরোধী বক্তব্য বর্তমান দাবীকৃত রেযাখানীদের জানা নাই। নাউযুবিল্লাহ! (চলবে)

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ