মুহম্মদ শহীদুল ইসলাম (শামীম)
রাঙ্গাদিয়া, চট্টগ্রাম
সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জানুয়ারী/২০০৩ঈঃ সংখ্যায় এক জিজ্ঞাসার সমাধানে বলা হয়েছে যে, “মীলাদের দ্বারা মুসলমানের আমলের পরিবেশ তৈরী হয় এটা ভিত্তিহীন কথা। ইসলামে মীলাদের কোন অস্তিত্ব নেই। রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ছাহাবা, তাবিয়ীন, তাবে তাবিয়ীন আইম্মায়ে মুজতাহিদীন কারো যুগেই এর অস্তিত্ব ছিলনা বরং পরবর্তীতে বিদয়াত রূপে ৬০৪ হিজরীতে এই মীলাদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। মীলাদের মধ্যে মিষ্টান্ন ভোজের শোরগোল হয়। প্রচলিত মীলাদ যে বিদয়াত তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। যার পরিণাম ভ্রষ্টতা সবশেষে জাহান্নাম।”
এছাড়া একইভাবে মাসিক মদীনা ফেব্রুয়ারী/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় নিম্নলিখিত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-
প্রশ্নঃ মিলাদ শরীফ পড়া যে বেদাত তার কিছু প্রমাণ জানতে চাই।
উত্তরঃ বেদাত বলা হয় ঐ সমস্ত আমলকে, যা এবাদত মনে করে সওয়াব পাওয়ার আশায় করা হয় কিন্তু কোরআন-হাদীসে সমর্থন পাওয়া যায় না। প্রচলিত মৌলুদ মানুষ এবাদত মনে করে সওয়াব পাওয়ার আশায় পড়ে থাকে। অথচ এই আমলের কোন উল্লেখ কোরআন্ হাদীসে বা পরবর্তী অনুসরণীয় যুগে, কোন অনুসরণযোগ্য ব্যক্তির আমলের মধ্যে পাওয়া যায় না। এ কারণেই প্রচলিত মীলাদ বেদাতের পর্যায়ভুক্ত। এখন আমার সুওয়াল হচ্ছে, মীলাদ সম্পর্কে উপরোক্ত পত্রিকাদ্বয়ে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধ হয়েছে কিনা? দয়া করে জানাবেন।
জাওয়াবঃ মীলাদ সম্পর্কে হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ও মাসিক মদীনা পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধতো হয়ইনি বরং সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভুল, গোমরাহীমূলক ও কুফরী হয়েছে। প্রত্যেক মুসলমানের এ ধরণের আক্বীদা ও বক্তব্য থেকে ইস্তিগ্ফার-তওবা করতে হবে। অন্যথায় কাট্টা কাফির হয়ে চির জাহান্নামী হতে হবে। তাদের বক্তব্যে তারা বলেছে, (১) আমলের পরিবেশ তৈরী হয়না। শুধু মিষ্টান্ন ভোজই হয়। (২) ইসলামে মীলাদের কোন অস্তিত্ব নেই এবং খাইরুল কুরুনেও ছিলোনা। (৩) পরবর্তীতে বিদ্য়াতরূপে প্রকাশ পায়। কাজেই এটা বিদ্য়াত। (৪) বিদ্য়াতীরা ভ্রষ্ট ও জাহান্নামী।
(ধারাবাহিক)
তারা তাদের উত্থাপিত বক্তব্যের চতুর্থ বক্তব্যে বলেছে, “বিদ্য়াতীরা ভ্রষ্ট ও জাহান্নামী।”
তাদের এ বক্তব্যের জবাবে বলতে হয়, সত্যিই কোন ব্যক্তি যদি বিদ্য়াতী হয় তাহলে সে অবশ্যই ভ্রষ্ট ও জাহান্নামী।
যেমন, হাদীছ শরীফে এসেছে,
كل بدعة ضلالة وكل ضلالة فى النار.
অর্থঃ- “প্রত্যেক বিদ্য়াতই গোমরাহী এবং প্রত্যেক গোমরাহ্ ব্যক্তিই জাহান্নামী।” (রযীন, বায্যার, তবারানী)
এখন আমরা প্রথমে ‘বিদ্য়াত কাকে বলে?’ ‘এর ব্যাখ্যা কি?’ এ সম্পর্কে আলোচনা করব। তাহলে কারা বিদ্য়াতী এবং কোন আমলটি বিদ্য়াত তা সহজেই অনুধাবন করা সম্ভব হবে। বিদ্য়াত-এর অর্থ ‘বিদ্য়াত’ শব্দের লুগাতী বা আভিধানিক অর্থ হলো নতুন উৎপত্তি, নতুন উদ্ভব, নতুন সৃষ্টি। পূর্বে যার কোন অস্তিত্ব ছিলনা। আর পারিভাষিক ও শরয়ী অর্থে বিদ্য়াত হচ্ছে,
ما احدث مما لااصل له فى الشريعة يدل عليه واما ماكان له اصل من الشرع يدل عليه فليس ببدعة شرعا وان كان بدعة لغة
অর্থঃ- “এমন নতুন বিষয় যার ভিত্তি শরীয়তে তথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসে নেই। সুতরাং শরীয়তে যে বিষয়ের ভিত্তি রয়েছে শরীয়তের দৃষ্টিতে তা বিদ্য়াত নয়। যদিও আভিধানিক অর্থে তাকে বিদ্য়াত বলা হয়।” (জামিউল উলূম ওয়াল হিকাম)
বিদ্য়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিশ্ব বিখ্যাত হাদীছ শরীফের কিতাব মিশকাত শরীফের শরাহ্ “মিরকাত শরীফে” উল্লেখ করেন,
قال الشافعى رحمة الله عليه مالحدث مما يخالف الكتاب اوالسنة او الاثر اوالاجماع فهو ضلالة وما احدث مما لايخالف شيأ مما ذكر فليس بمذموم.
অর্থঃ- “ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে নব উদ্ভাবিত কাজ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, আছার (অর্থাৎ হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের আমল বা ক্বওল) অথবা ইজ্মার বিরুদ্ধ বলে প্রমাণিত, তাই গোম্রাহী বা নিকৃষ্ট। আর যে নব উদ্ভাবিত কাজ উল্লিখিত কোনটির বিপরীত বা বিরুদ্ধ নয়, তা মন্দ বা নাজায়িয নয়।”
আজকাল কিছু জাহিল লোক রয়েছে যারা সকল বিদ্য়াতকেই (নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতি) গোম্রাহী বলে থাকে এবং দলীল হিসেবে তারা নিন্মোক্ত হাদীছ শরীফখানা পেশ করে থাকে।
যেমন, হাদীছ শরীফে ইরশাদ করা হয়েছে,
كل بدعة ضلالة.
অর্থঃ- “প্রত্যেক বিদ্য়াতই গোম্রাহী।” (মিশকাত শরীফ) অথচ তারা এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে নেহায়েতই অজ্ঞ। এ হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের শরাহ্ ‘মিরকাত শরীফে’ উল্লেখ করা হয়,
قوله كل بدعة ضلالة قال فى الازهار اى كل بدعة سيئة ضلالة.
অর্থঃ- “ছহিবে মিরকাত হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “আল আযহার” নামক কিতাবে كل بدعة ضلالة (প্রত্যেক বিদ্য়াতই নিকৃষ্ট) হাদীছ শরীফের এ অংশটুকুর ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়েছে, “اى كل بدعة سيئة ضلالة”
অর্থাৎ- সকল বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ গোম্রাহী। আর তাই শায়খ ইব্রাহীম হালবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
وعد النقل عن النبى صلى الله عليه وسلم وعن الصحابة والتابعين رضى الله عنهم وكونه بدعة لا ينافى كونه حسنا.
অর্থঃ- “নতুন উদ্ভাবিত কোন কাজ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিঈনগণের নিকট হতে প্রমাণিত না থাকলে অথবা উক্ত কাজের প্রতি বিদ্য়াত শব্দ আরোপিত হলেই যে তা মন্দ বা গোম্রাহী, একথা যুক্তিযুক্ত নয়। বরং তা ভালও হতে পারে।” (কবীরী শরহে মুনিয়াতুল মুছল্লী ২৫১ পৃষ্ঠা)
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহিও তাঁর “ইহ্ইয়াউল উলুম” কিতাবের ২য় খণ্ডের ২৬ পৃষ্ঠায় অনুরূপ মত পেশ করেন। উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা একথা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, বিদ্য়াত মাত্রই পরিত্যাজ্য নয় এবং সকল বিদ্য়াতই গোম্রাহী নয়। যদি তাই হতো, তবে তারাবীহ্ নামায জামায়াতে পড়া জায়িয হতো না। কেননা একেও বিদ্য়াত বলা হয়েছে, অর্থাৎ উত্তম বিদ্য়াত।
এখন বিদ্য়াত কত প্রকার ও কি কি এবং তার মধ্যে কোন্টি শরীয়তে গ্রহণযোগ্য আর কোন্টি শরীয়তে পরিত্যাজ্য তা আলোচনা করা হলো- বিদ্য়াত-এর শ্রেণী বিভাগ ইমাম, মুজতাহিদগণ শরীয়তের বিধান অনুযায়ী বিদ্য়াতকে প্রথমতঃ দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন- ১। বিদ্য়াতে ই’তিক্বাদী। অর্থাৎ আক্বীদা বা বিশ্বাসগত বিদ্য়াত। ২। বিদ্য়াতে আ’মালী। অর্থাৎ কর্মগত বিদ্য়াত। বিদ্য়াতে ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত বিদ্য়াত হলো- যে সমস্ত আক্বীদা কুরআন-সুন্নাহ্র মূলনীতির বহির্ভূত। মূলতঃ এ আক্বীদাগত বিদ্য়াতের সবই হারামের পর্যায়ভুক্ত এবং অবশ্যই পরিত্যাজ্য। যেমন- খারিজী, মু’তাজিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, শিয়া ইত্যাদি বাতিল ফিরক্বার আবির্ভাব। এই নব আবির্ভূত ফিরক্বার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী। বিদ্য়াতে আ’মালী বা কর্মগত বিদ্য়াত প্রথমতঃ দু’ভাগে বিভক্ত- (ক) বিদ্য়াতে হাসানাহ্, (খ) বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্। (ক) বিদ্য়াতে হাসানাহ্ আবার তিন প্রকার- (১) বিদ্য়াতে ওয়াজিব, (২) বিদ্য়াতে মুস্তাহাব ও (৩) বিদ্য়াতে মুবাহ্। আর এ বিদ্য়াতে হাসানাহ্ সম্পর্কেই হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
من سن فى الاسلام سنة حسنة فله اجرها واجر من عمل بها من بعده.
অর্থঃ- “যে কেউ দ্বীন ইসলামে উত্তম কোন পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে (যা শরীয়ত সম্মত), তার জন্য সে ছওয়াব পাবে এবং তারপরে যারা এ পদ্ধতির অনুসরণ করবে, তার ছওয়াবও সে পাবে।” (মুসলিম, মিশকাত, শরহে নববী, ফতহুল মুলহিম, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী) উল্লিখিত হাদীছ শরীফের দৃষ্টিতে বিদ্য়াতে হাসানাহ্কে বিদ্য়াত লিদ্দ্বীন বলা হয়। কেউ কেউ আবার উক্ত হাদীছ শরীফের দৃষ্টিতে বিদ্য়াতে হাসানাহ্কে (بدعت لغوى) বিদ্য়াতে লোগবীও বলে থাকেন। অর্থাৎ যদিও শাব্দিক অর্থে বিদ্য়াত বলা হয়েছে, মূলতঃ এগুলো সুন্নতেরই অন্তর্ভুক্ত। কারণ হাদীছ শরীফে (سنة) সুন্নত শব্দ উল্লেখ রয়েছে। (খ) আর বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ দু’প্রকার- (১) বিদ্য়াতে হারাম, (২) বিদ্য়াতে মাকরূহ্।
বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ সম্পর্কেও হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, من احدث فى امرنا هذا ما ليس منه فهو رد.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের ভিতরে কোন নতুন জিনিসের প্রবর্তন করবে, যার ভিত্তি এ দ্বীনে নেই, তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)
এ বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্কে বিদ্য়াত ফিদ্দ্বীন বলা হয়। আর এ বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্কেই শরয়ী (شرعى)) বিদ্য়াত বলা হয়।
মূলকথা হলো- যা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর নতুন উদ্ভব হয় এবং তা দ্বীনের সাহায্য করে থাকে অথবা সাহায্যকারী না হলেও দ্বীনের কোন ক্ষতি করে না, তাই বিদ্য়াত লিদ্দ্বীন বা লোগবী বিদ্য়াত অর্থাৎ বিদ্য়াতে হাসানাহ্। আর যে নতুন বিষয় উদ্ভব হওয়ার কারণে দ্বীনের কিছুমাত্রও ক্ষতি হয়, তবে তাই হবে বিদ্য়াত ফিদ্দ্বীন বা শরয়ী বিদ্য়াত অর্থাৎ বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্।
উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, বিদ্য়াত বলতেই তা পরিত্যাজ্য নয়। অর্থাৎ যেই বিদয়াত বা নতুন উদ্ভাবিত বিষয় কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের বিপরীত তা অবশ্যই বর্জনীয়। আর তাই বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ যা হারামের অন্তর্ভুক্ত, যদিও তা “কুরুনে ছালাছার” মধ্যে উদ্ভাবিত হোক না কেন। আর যেই নতুন উদ্ভাবিত বিষয় কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের অনুকুলে তা অবশ্যই জায়িয এবং উত্তম, আর একেই বিদ্য়াতে হাসানাহ্ বলা হয়। যদিও তা ‘কুরুনে ছালাছার’ পরে উদ্ভাবিত হোক না কেন। বিদ্য়াতে হাসানাহ্ ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্-এর বিশ্লেষণ নিম্নে বিদ্য়াতে হাসানাহ্ ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্র উদাহরণভিত্তিক ব্যাখ্যা দেয়া হলো- ১। বিদ্য়াতে ওয়াজিবঃ- যা পালন না করলে ইসলামের ক্ষতি বা সংকট হবে, যেমন কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ কাগজে কিতাব আকারে লিপিবদ্ধ করা, কুরআন শরীফের যের, যবর, পেশ দেয়া, মাদ্রাসা নির্মাণ করা, নাহু, ছরফ, উছূল ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কিতাব লিখা ও পড়া। ২। বিদ্য়াতে মুস্তাহাবঃ- যা শরীয়তে নিষেধ নেই এবং তা সমস্ত মুসলমানগণ ভাল মনে করে ছওয়াবের নিয়তে করে থাকেন। যেমন- তারাবীহ্ নামায জামায়াতে পড়া, মুছাফিরখানা, ইবাদতখানা, লঙ্গরখানা, খানকা শরীফ ইত্যাদি জনহিতকর কাজ করা। রমযান মাসে বিত্র নামায জামায়াতে আদায় করা ইত্যাদি। এ প্রসঙ্গে হযরত ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
ما راه الناس حسنا فهو عند الله حسن لاتجتمع امتى على الضلالة.
অর্থঃ- “লোকে যা ভাল মনে করে তা আল্লাহ্ পাক-এর নিকটও ভাল। আমার উম্মতগণ কখনো গোম্রাহীর মধ্যে একমত হবেনা।” (মিশকাত শরীফ) ৩। বিদ্য়াতে মুবাহ্ঃ- ঐ সমস্ত নতুন কাজ যা শরীয়তে নিষেধ নেই, যেমন- পোলাও, বিরিয়ানী, বুট, মুড়ি, পিয়াঁজো ইত্যাদি খাদ্য খাওয়া। ট্রেন, মোটরগাড়ী, প্লেন ইত্যাদি যান-বাহনে চড়া।
৪। বিদ্য়াতে হারামঃ- যা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের পরিপন্থী। যা ফরয-ওয়াজিব আমলসমূহ ধ্বংসের কারণ। যেমন- ইহুদী, নাছারা ও ভন্ড ফকিরদের কু-প্রথা বা আক্বীদাসমূহ। ৫। বিদ্য়াতে মাকরূহঃ- যার দ্বারা কোন সুন্নত বিলুপ্ত হয়ে যায়। যেমন- শার্ট, কোর্ট, প্যান্ট, টাই, কিস্তি, পাঁচ কল্লি টুপি ইত্যাদি বিধর্মী ও বিদ্য়াতীদের পোশাক পরিধান করা।
কেননা, হাদীছ শরীফে রয়েছে,
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم مااحدث قوم بدعة الارفع مثلها من السنة فتمسك بسنة خير من احداث بدعة.
অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যখনই কোন ক্বওম একটি বিদ্য়াতের উদ্ভব ঘটিয়েছে, তখনই একটি সুন্নত লোপ পেয়েছে। সুতরাং একটি সুন্নতের আমল করা (যদিও তা ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতর হয়) একটি বিদ্য়াত উদ্ভব করা হতে উত্তম।” (মুসনদে আহ্মদ, মিশকাত, মিরকাত, মুযাহিরে হক্ব, শরহুত্ ত্বীবী, তালীক, আশয়াতুল লুময়াত, মিরয়াতুল মানাজীহ্)
বিদ্য়াতের অনুরূপ সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা নিম্নোক্ত কিতাবসমূহেও রয়েছে। যেমন, বুখারী শরীফের শরাহ ফতহুল মুবীন, হাশিয়ায়ে মিশকাত, আশয়াতুল লুময়াত, ফতওয়ায়ে শামী, ইশবাউল কালাম, আসমাওয়াল লুগাত, হুসনুল মাকাছিদ ইত্যাদি।
আর যদি কোন ব্যক্তি বিদ্য়াতী না হয় তাহলে তাকে বিদ্য়াতী বলে ভ্রষ্ট ও জাহান্নামী বলা সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয, হারাম ও কুফরী।
স্মর্তব্য, তারা তাদের চতুর্থ বক্তব্যে মীলাদ শরীফ পাঠকারীদের ভ্রষ্ট ও জাহান্নামী বলেছে যা সুস্পষ্ট কুফরী হয়েছে। কারণ যে বিষয়টি বিদ্য়াত নয় সেটাকে বিদয়াতরূপে গণ্য করে তার আমলকারীকে বিদ্য়াতী ও জাহান্নামী বলার দ্বারা সে নিজেই বিদ্য়াতী ও জাহান্নামী হিসেবে গণ্য হবে। কারণ, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
وعن ابى الدرداء قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ان العبد اذا لعن شئا صعدت اللعنة الى السماء فتغلق ابواب السماء دونها ثم تهبط الى الارض فتغلق ابوابها دونها ثم تأخذ يمنا وشمالا فاذا لم تجد مساغا رجعت الى الذى لعن فان كان لذلك اهلا والا رجعت الى قائلها.
অর্থঃ- “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যখন কোন বান্দা কোন বস্তুকে অভিসম্পাত করে তখন সেই অভিসম্পাত আকাশে উঠে, তখন আকাশের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়, তখন সেই অভিসম্পাত যমীনের দিকে প্রত্যাবর্তন করে, তখন যমীনের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর তা ডান দিকে বাম দিকে যায় এবং যখন সেখানেও কোন রাস্তা না পায়, শেষ পর্যন্ত সেই ব্যক্তি বা বস্তুর দিকে প্রত্যাবর্তন করে, যার উপর অভিসম্পাত করা হয়েছে। যদি সে অভিসম্পাতের উপযুক্ত হয়, তবে তার উপর পতিত হয়; অন্যথায় অভিসম্পাতকারীর দিকেই ফিরে আসে।।” (আবূ দাউদ শরীফ) মীলাদ শরীফ পাঠ ও ক্বিয়াম সম্পর্কে মুহাক্কিক ও মুদাক্কিক ইমাম-মুজতাহিদগণের ছহীহ্ ফতওয়া হলো “সুন্নতে উম্মত মুস্তাহাসান।”
অতএব, যারা মীলাদ শরীফকে বিদয়াত বলে মূলতঃ তারাই বিদ্য়াতী ও জাহান্নামী। বাস্তবেও তাই, তারা যেসব আমল করে হাক্বীক্বত সে আমলগুলোই বিদয়াত যার প্রমাণাদি শরীয়তে তথা কুরআন-সুন্নাহ্র মধ্যে নেই। যেমন, ইসলামের নামে ভোট, নির্বাচন, গণতন্ত্র করা, ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, হরতাল করা, লংমার্চ করা, ব্লাসফেমী আইন তলব করা, প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ করা, পাঁচ কল্লি ও কিস্তি টুপি পরিধান করা, কোনা ফাঁড়া পাঞ্জাবী পরিধান করা ইত্যাদি ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, শরীয়তে কোন জায়িযকে নাজায়িয এবং কোন নাজায়িযকে জায়িয বলা উভয়ই কুফরী। কাজেই মীলাদ শরীফকে বিদ্য়াত বলা স্পষ্ট কুফরী। কোন মুসলমান কুফরী করলে সে শরীয়তের দৃষ্টিতে মুরতাদ হয়ে যায়। আর শরীয়তে মুরতাদের যে হুকুম দেয়া হয়েছে তা খুবই কঠিন। অতএব, প্রত্যেক মুসলমানের কুফরী করা হতে সতর্ক বা সাবধান থাকা উচিৎ। বিশেষভাবে স্মরণীয় যে, মীলাদ শরীফ সম্পর্কে হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকা এবং মাসিক মদীনা পত্রিকার মধ্যে যে সমাধান ও উত্তর প্রদান করা হয়েছে সে সমাধান ও উত্তর যে সম্পূর্ণরূপে দলীলবিহীন, মনগড়া, ভুল, গোমরাহীমূলক ও কুফরী হয়েছে তা আমরা নাহক্ব ও বাতিলের মুখোশ উন্মোচনকারী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাতে ১১৫তম সংখ্যা হতে বর্তমান ১১৮ তম সংখ্যায় কুরআন ও সুন্নাহ্র দলীল আদিল্লার মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়েছি। সাথে সাথে এটাও প্রমাণ করেছি শরীয়ত তথা কুরআন ও সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে মীলাদ শরীফ ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। এর বিরোধিতাকারী গোমরাহ, বিদ্য়াতী ও মুরতাদের অন্তর্ভুক্ত। শরীয়তের দৃষ্টিতে মুরতাদের মাসয়ালা হলো, তার স্ত্রী তালাক হয় যদি সে বিবাহিত হয়ে থাকে, হজ্ব বাতিল হয় যদি সে হজ্ব করে থাকে; এবং সে কাফির হয়। অর্থাৎ তার সকল নেক আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। তওবা না করা পর্যন্ত সে ঈমানদার হবেনা। বিবাহ না দোহ্রালে স্ত্রীর সাথে সংসার করা যাবেনা। যদি সংসার করে তবে যিনাকারীর গুনাহ্ হবে। সন্তান হলে তা হালাল হবেনা। যদি হজ্বের সামর্থ্য থাকে তবে পুনরায় তাকে হজ্ব করতে হবে, যদিও সে পূর্বে হজ্ব করে থাকে। তা না করলে কবীরা গুনাহ্ হবে। তার ওয়ারিশ সত্ত্ব বাতিল হয়ে যাবে। তাকে তিন দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য। যদি তওবা করে, তবে ক্ষমা করা হবে; অন্যথায় তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড। কেননা হাদীছ শরীফে রয়েছে, “তিন কারণে মৃত্যুদণ্ড দেয়া জায়িয। যথা- (ক) ঈমান আনার পর কুফরী করলে অর্থাৎ মুরতাদ হলে। (খ) ঐ যিনাকার বা যিনাকারিনী, যারা বিবাহিত বা বিবাহিতা। (গ) যে অন্যায়ভাবে কাউকে কতল করে।” (তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ্, মুসনদে শাফিয়ী, মুসনদে বাজ্জার, মুস্তাদরিকে হাকিম) আর এরা মারা যাবার পর যারা এদের জানাযার নামায পড়ে বা পড়ায় বা জানাযার নামাযে সাহায্য-সহযোগিতা করে, তাদের সকলের উপরই মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং এ সকল মুরতাদ মরলে বা নিহত হলে তাকে মুসলমানগণের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। এমনকি মুসলমানের ন্যায়ও দাফন করা যাবে না। বরং তাকে কুকুরের ন্যায় একটি গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতে হবে। কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
ان الذين كفروا وماتوا وهم كفار فلن يقبلن احدهم ملء الارض ذهبا ولو افتدى به اولئك لهم عذاب اليم وما لهم من نرين.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই যারা কাফির এবং কুফরী অবস্থায় মারা গেছে, তারা যদি যমীন (কুফরীর পরিবর্তে) পরিপূর্ণ স্বর্ণ তার ফিদিয়া বা কাফ্ফারা বাবদ দেয় (আমার থেকে বাঁচার জন্য), তা কখনো গ্রহণ করা হবেনা। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি বা আযাব এবং তাদের জন্য কোন ধরণের সাহায্যকারী নেই। (সূরা আলে ইমরান/৯১) (চলবে)
সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখতার হুসাইন নাজিম খান, কুড়িগ্রাম
সুওয়ালঃ মাসিক রাহমানী পয়গাম মে/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে এক জিজ্ঞাসার জবাবে সুন্নতী জামা সম্পর্কে বলা হয়েছে, “ …. হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম … জুব্বা ও ফাড়া উভয়টাকেই পছন্দ করতেন। সুতরাং জামা সম্পর্কে সুন্নত হচ্ছে- সতর ঢাকা, অপচয় না হওয়া, সাধারণভাবে ঢিলাঢোলা এবং নিসফে সাক পর্যন্ত লম্বা হওয়া। চাই জুব্বা হোক বা কল্লিদার ফাড়া হোক এতে কোন ভেদাভেদ নেই।”
এখন আমার সুওয়াল হলো- কল্লিদার ফাঁড়া জামা বা কোণা ফাঁড়া পাঞ্জাবী তা পরিধান করলে জামার সুন্নত আদায় হবে কি? দয়া করে দলীলসহ সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গামের সুন্নতী জামা সম্পর্কিত উক্ত বক্তব্য দ্বারা আপত্তিকর ও শরীয়ত বিরোধী যে বিষয়টি ফুটে উঠে তা হচ্ছে, (১) “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোণা ফাঁড়া পাঞ্জাবী পড়তেন বা পছন্দ করতেন। অর্থাৎ বর্তমান প্রচলিত কোণা ফাড়া পাঞ্জাবী সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। (নাউযুবিল্লাহ্)
তাদের উক্ত বক্তব্যের জাওয়াবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই মিথ্যা, মনগড়া ও কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ, এটা আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি সুস্পষ্ট “মিথ্যারোপ” বৈ কিছুই নয়।
তারা কোন নির্ভরযোগ্য তাফসীর, হাদীছ, ফিক্বাহ্, ফতওয়া ও সীরাতগ্রন্থসমূহের কোথাও দেখাতে পারবে না যে, আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কল্লিদার ফাঁড়া জামা বা কোণা ফাঁড়া কোর্তা ব্যবহার করেছেন। বরং তাদের দেওবন্দী মুহাদ্দিস আছগর হোসাইন দেহলভী ছাহেবই তার “গুলজারে সুন্নত” কিতাবে লিখেছে,
شكاف دار كرته جتنا هى لمبى هو هركز سنت ادا نه هوكى.
অর্থাৎ- “কোণা ফাঁড়া কোর্তা (জামা) যতই লম্বা হোক না কেন তা দ্বারা কখনও সুন্নত আদায় হবে না।” অতএব, তারা আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি মিথ্যারোপ করেছে। আর ছহীহ্ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
من كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من النار.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি জেনে-শুনে স্বেচ্ছায় আমার নামে মিথ্যা বলে সে যেন দুনিয়ায় থাকতেই তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়।” (বুখারী, মিশকাত)
কাজেই বলার অপেক্ষা রাখে না, যা সুন্নত নয় তাকে সুন্নত বলা সুস্পষ্ট কুফরী। এর থেকে তাদের খালিছ তওবা করা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। প্রকৃতপক্ষে তাদের বর্ণিত পোশাকটি হিন্দুদের পোশাক। সুতরাং কোণা ফাঁড়া পাঞ্জাবী হিন্দুদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বিধায় তা পরিধান করা হারাম ও কুফরী। কেননা হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদেরই দলভুক্ত।” (আবু দাউদ, আহমদ, মিশকাত)
উল্লেখ্য, কোণা ফাড়া পাঞ্জাবী মূলতঃ হিন্দুদের থেকেই উৎপত্তি লাভ করে। এ প্রসঙ্গে বাদশা আকবরের ইতিহাসে উল্লেখ আছে যে, যখন হিন্দুরা তার দরবারে আসা-যাওয়া করতো, তখন তারা সাধারণতঃ ধুতি, পৈতা ও টিকলী পরিধান করে আসতো। বাদশা দেখলো এরূপ পোশাকহীন বা উলঙ্গ অবস্থায় বাদশাহ্র দরবারে প্রবেশ করা বাদশাহ্র শানের খিলাফ। তাই বাদশাহ্ তাদেরকে পোশাক পরিধান করে আসার নির্দেশ দেয় এবং মুসলমানদের খিলাফ পোশাক ব্যবহার করতে বলে। হিন্দুরা তখন কোণা ফাঁড়া পাঞ্জাবী, ধুতি ও লম্বা টুপি পরিধান করতে লাগলো। মুসলমানরা যেহেতু গোল টুপি ব্যবহার করতো সেহেতু তারা লম্বা টুপিকে গ্রহণ করলো, আর কোণা ফাঁড়া পাঞ্জাবী ব্যবহার করার কারণ দু’টি- (১) মুসলমানদের কোর্তা গোল বিধায় তারা কোণা ফাঁড়া পাঞ্জাবী ব্যবহার করে, যেন মুসলমানদের সাথে মিল না হয়। (২) তারা যেহেতু ধুতি পরিধান করে, আর ধুতির লেজকে পাঞ্জাবীর পকেটে ঢুকিয়ে রাখে, তাই পাঞ্জাবীর কোনা যদি ফাঁড়া না হয় তবে ধুতির লেজ পকেটে ঢুকানো হলে পাঞ্জাবী উঠে থাকে তাই তারা কোণা ফাঁড়া পাঞ্জাবী ব্যবহার করে। অতএব, প্রমাণিত হলো যে, কোণা ফাঁড়া পাঞ্জাবী হিন্দুদেরই পোশাক এবং তারাই এর উৎপত্তিকারক।
অতঃপর কোণা ফাঁড়া পাঞ্জাবী ও লম্বা টুপি দেওবন্দ সিলসিলার লোকদের মধ্যে বিস্তার লাভ করার কারণ সম্পর্কে বলা হয় যে, দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা কাসেম নানুতুবী ছাহেব একজন মজ্জুব হালের লোক ছিলেন। তার জীবনীতে উল্লেখ আছে যে, তিনি এক মাহ্ফিলে যাওয়ার পর মাহ্ফিল শেষে লোকজন তাকে জিজ্ঞাসা করলো, আপনার নাম কি? তিনি বললেন, খুরশীদ হাসান! জিজ্ঞাসা করা হলো- আপনার বাড়ী কোথায়? তিনি বললেন, এলাহাবাদ! সকলে চলে যাওয়ার পর তার এক ছাত্র বললো- হুযূর! এটা কি মিথ্যা কথা হলো না? কারণ আপনার নাম কাসেম নানুতুবী অথচ আপনি বললেন, খুরশীদ হাসান। আর আপনার বাড়ী হলো- নানুতুয়া। অথচ আপনি বললেন, এলাহাবাদ। তখন মাওলানা কাসেম নানুতুবী ছাহেব বলেন, আমি সত্যই বলেছি, কারণ আবজাদ অক্ষর অনুযায়ী আমার নাম খুরশীদ হাসান। তাই আমি বলেছি আমার নাম খুরশীদ হাসান। আর এলাহাবাদ অর্থ হলো, আল্লাহ্ পাক-এর আবাদ। দুনিয়ার প্রতিটি স্থানই মূলতঃ আল্লাহ্ পাক-এর আবাদ। তাই আমি বলেছি আমার বাড়ী এলাহাবাদ। এরূপ বলার কারণ হলো লোকে যেন আমাকে না চিনে। মূলতঃ তিনি নিজেকে গোপন রাখার জন্যই এরূপ করতেন। যার পেছনে দু’টো কারণ ছিল। প্রথমতঃ তিনি মজ্জুব ছিলেন এবং নিজেকে চুপিয়ে রাখতে চাইতেন এবং দ্বিতীয়তঃ যেহেতু তিনি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছিলেন সেহেতু বৃটিশরা যাতে তাকে সনাক্ত করতে না পারে।
ঠিক এজন্য তিনি লম্বা টুপি ও কোণা ফাঁড়া পাঞ্জাবী পরিধান করতেন। আর তখন থেকেই দেওবন্দ মাদ্রাসার ছাত্ররা তাকে অনুসরণ করে লম্বা টুপি ও কোণা ফাঁড়া পাঞ্জাবী পরিধান করতে থাকে। যা এখন পর্যন্ত তাদের মধ্যে জারী রয়েছে। উল্লেখ্য, মাওলানা কাসেম নানুতুবী যেহেতু মজ্জুব অবস্থার শিকার ছিলেন সুতরাং তাকে মাজুর হিসেবে গণ্য করে অনুসরণ করা জায়িয নেই।
কাজেই সুন্নতী পোশাক পরিধান করাই উলামায়ে দেওবন্দের উচিৎ আর কুরআন-সুন্নাহ্কে বাদ দিয়ে এ ব্যাপারে মাওলানা কাসেম নানুতুবী ছাহেবকে অনুসরণ করা তাদের জন্য আদৌ শুদ্ধ নয়। মূলতঃ উস্তাদের অনুসরণ তখনই ফায়দাকর যখন উস্তাদের অনুসৃত কাজটি সুন্নত হয়ে থাকে।
অতএব, উপরোক্ত আলোচনা সাপেক্ষে সাব্যস্ত হলো- সাদা রংয়ের, সুতি কাপড়ের, গুটলীওয়ালা, নিছফুসাক, গোল, কোণাবন্ধ ক্বামীছ বা কোর্তাই খাছ সুন্নতী কোর্তা। এটাই হাদীছ শরীফ, ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবের বর্ণনা দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আর শরীয়তে কোণা ফাঁড়া কোর্তার কোন দলীল নেই। বরং তা সুন্নতের খিলাফ। হিন্দু ও বিজাতীয়দের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে হারাম ও নাজায়িয।
অতএব, অখ্যাত মাসিক রাহ্মানী পয়গাম পত্রিকার সুন্নতী জামা সম্পর্কিত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, দলীলবিহীন, মনগড়া, বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক বলেই প্রমাণিত হল।
খাছ সুন্নতী কোর্তা হচ্ছে- “নিছফুসাক পর্যন্ত বিলম্বিত, কোণাবন্ধ অর্থাৎ গোল, গুটলীওয়ালা ও কলারবিহীন।” এটা হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। আর খাছ সুন্নতী জামা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৬, ৮, ১৬, ৩৬, ৪৪, ৪৭, ৪৯, ৫১,৭০, ৮২তম সংখ্যাগুলো পাঠ করুন।
[বিঃ দ্রঃ- কোণা ফাঁড়া জামা যে সুন্নত নয় এবং কোণা ফাঁড়া জামা যে হিন্দুদের পোষাক এ সম্পর্কে জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১১, ২১, ৪৯ ও ৮৬তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে মাসিক রাহমানী পয়গামের কোণা ফাঁড়া জামা সম্পর্কে ভুল বক্তব্য খণ্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। এবার ৫ম বারের মত মাসিক রাহমানী পয়গামের কল্লিদার ফাঁড়া জামা সম্পর্কে ভুল বক্তব্য খণ্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হলো।]
{দলীলসমূহঃ (১) বুখারী, (২) তিরমিযী, (৩) আবূ দাউদ, (৪) নাসায়ী, (৫) ইবনে মাজাহ, (৬) মসনদে আহমদ (৭) মিশকাত, (৮) ফতহুল বারী, (৯) উমদাতুল কারী, (১০) ইরশাদুস্ সারী, (১১) জামউল ওসায়িল, (১২) শামায়িলে তিরমিযী, (১৩) তুহফাতুল আহওয়াযী, (১৪) বযলুল মাজহুদ, (১৫) মিরকাত, (১৬) শরহুত্ ত্বীবী, (১৭) তা’লীকুছ্ ছবীহ্, (১৮) লুময়াত, (১৯) আশয়াতুল লুময়াত, (২০) মুযাহিরে হক্ব, (২১) যাদুল মায়াদ, (২২) মাদারিজুন নুবুওওয়াত, (২৩) হাসিয়ায়ে মহিউদ্দিন শায়খ যাদাহ, (২৪) হাশিয়াতুশ্ শিহাব, (২৫) তাকরীরে হাবী শরহে বায়যাবী, (২৬) সীরাতুন্ নবী, (২৭) চল্লিশ আউলিয়া, (২৮) গুলজারে সুন্নত ইত্যাদি} মুহম্মদ রেদাওয়ানূর রহমান গোড়াই, টাঙ্গাইল। সুওয়ালঃ মাসিক মদীনা আগস্ট/২০০২ ঈসায়ী সখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়। প্রশ্নঃ- আসর ও মাগরিবের নামাযের মধ্যবর্তী সময়ে পবিত্র কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করা যাবে কিনা? উত্তরঃ- উল্লেখিত সময়ে যে কোন ধরনের নামায পড়া মকরূহ। কোরআন তেলাওয়াত করা যেতে পারে। এখন আমার সুওয়াল হলো- মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি আছর ও মাগরিবের নামাযের মধ্যবর্তী সময়ে যে কোন ধরণের নামায পড়া মাকরূহ্ এবং উল্লিখিত সময়ে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা যাবে কি? দলীল-আদিল্লাহ্সহ সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ আছর ও মাগরিবের নামাযের মধ্যবর্তী সময়ে অর্থাৎ আছর নামাযের পর থেকে সূর্যের রং পরিবর্তন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই মধ্যবর্তী সময়ে যে কোন ধরণের নামায পড়া এবং কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল, অশুদ্ধ এবং দলীলবিহীন হয়েছে। কারণ মাসিক মদীনার সম্পাদক জনাব মাহিউদ্দীন ছাহেব তার উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে কোন দলীল-আদীল্লাহ্ পেশ করেনি। বরং দলীল বিহীন ও মনগড়া ভাবেই এধরণের ভুল বক্তব্য পেশ করে সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্দেহ, সংশয় সৃষ্টি করেছে যা মূলতঃ ফিত্নার কারণ। যেমন, প্রথমতঃ সে বলেছে, “উল্লিখিত সময়ে যে কোন ধরণের নামায পড়া মাকরূহ্।” এর জবাবে বলতে হয় যে, মাসিক মদীনার সম্পাদক জনাব মাহিউদ্দীন ছাহেবের উক্ত বক্তব্য ডাহা মিথ্যা এবং বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবের সম্পূর্ণ বিপরীত ও বিরুদ্ধমত। কেননা, বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে এটাই বলা হয়েছে যে, উল্লিখিত সময়ে অর্থাৎ আছর নামাযের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত বা সূর্যের রং পরিবর্তন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই মধ্যবর্তী সময়ে যে কোন ধরণের নামায পড়া মাকরূহ্ নয়। বরং উল্লিখিত সময়ে যে কোন ধরণের শুধুমাত্র নফল নামায পড়া মাকরূহ্। সুতরাং আছর নামাযের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত এই মধ্যবর্তী সময়ে শুধুমাত্র নফল নামায ব্যতীত অন্যান্য নামায যেমন, ক্বাযা নামায অর্থাৎ ক্বাযায়ে আদার নামায, বিতর নামায, তিলাওয়াতে সিজদা এবং জানাযার নামায পড়া মাকরূহ্ নয়। নিম্নে সর্বজনমান্য, বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাব থেকে দলীল পেশ করা হলো- যেমন, এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত ফিক্বাহ্র কিতাব “শরহে বিকায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وكره النفل … بعد الصبح الا سنة وبعد اداء العصر الى اداء المغرب وصح الفوائت وصلوة الجنازة وسجدة التلاوة فى هذين اى بعد الصبح وبعد اداء العصر الى اداء المغرب.
অর্থঃ- “ছুবহে ছাদিক হওয়ার পর ফজর নামাযের সুন্নত ব্যতীত নফল নামায পড়া মাকরূহ্ এবং আছর নামায আদায় করার পর থেকে মাগরিবের নামায আদায় করার পূর্ব পর্যন্ত এই মধ্যবর্তী সময়ে নফল নামায পড়া মাকরূহ্। তবে এই দু’য়ের মধ্যে অর্থাৎ ছুবহে ছাদিকের পর এবং আছর নামায আদায় করার পর থেকে মাগরিবের নামায আদায় করার পূর্ব পর্যন্ত এই মধ্যবর্তী সময়ে ক্বাযা নামায, জানাযার নামায এবং তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করা ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ হবে। অর্থাৎ ছুবহে ছাদিকের পর এবং আছর ও মাগরিব নামাযের মধ্যবর্তী সময়ে ক্বাযায়ে আদার নামায, জানাযার নামায, তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করা মাকরূহ্ নয়।” (২) “শরহে ইলইয়াস” কিতাবে উল্লেখ আছে,
وكره النفل فقط بعد طلوع الصبح حتى تطلع الشمس قدر رمح او رمحين الاسنته ويكره النفل بعد اداء العصر الى اداء المغرب وكذا الصلوة المنذورة مكروهة فى هذين الوقتين واما قضاء الفوائت وسجدة التلاوة وصلوة الجنازة فيجوز بعد طلوع الصبح واداء العصر الى وقت الاصفرار من غير كراهية.
অর্থঃ- “ছুবহে ছাদিকের পর থেকে সূর্য এক নেজা অথবা দুই নেজা পরিমাণ উদয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ফজরের সুন্নত ব্যতীত শুধুমাত্র সর্বপ্রকার নফল নামায পড়া মাকরূহ্। এবং আছর নামায আদায় করার পর থেকে মাগরিব নামায আদায় করার পূর্ব পর্যন্ত এই মধ্যবর্তী সময়ে সর্বপ্রকার নফল নামায পড়া মাকরূহ্। অনুরূপভাবে এই দুই ওয়াক্তের মধ্যে মান্নতের নামাযও পড়া মাকরূহ্। তবে ছুবহে ছাদিকের পর থেকে সূর্য এক নেজা বা দুই নেজা পরিমাণ উদয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এবং আছরের নামায আদায় করার পর থেকে সূর্যের রং হলুদ বর্ণে পরিবর্তন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই মধ্যবর্তী সময়ে ফউত নামাযের ক্বাযা আদায় করা, তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করা এবং জানাযার নামায পড়া জায়িয, মাকরূহ্ নয়।”
(৩)
“আল মুখতাছারুল কুদূরী” কিতাবের ৩১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ويكره ان يتنفل بعد صلوة الغجر حتى تطلع الشمس وبعد صلوة العصر حتى تغرب الشمس ولابأس بان يصلى فى هذين الوقتين (اى بعد الفجر والعصر) المفوائت.
অর্থঃ- “ফজর নামাযের পর সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত এবং আছর নামাযের পর সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সর্বপ্রকার নফল নামায পড়া মাকরূহ্। তবে এই দুই ওয়াক্তের মধ্যে অর্থাৎ ফজর নামাযের পর সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত এবং আছর নামাযের পর সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত এই দুই ওয়াক্তের মধ্যে ক্বাযা নামায পড়তে কোন অসুবিধা নেই। অর্থাৎ ফজর ও আছর নামাযের পর ক্বাযা নামায অর্থাৎ ক্বাযায়ে আদার নামায পড়া মাকরূহ্ নয়।”
(৪)
“দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে,
وكره نفل ……… بعد صلاة فجر وصلاة عصر ولو المجموعة بعرفة لايكره قضاء فائتة ولو وترا او سجدة تلاوة وصلاة جنازة.
অর্থঃ- “ফজর নামাযের পর এবং আছরের নামাযের পর ….. নফল নামায পড়া মাকরূহ্। যদিও তা আরাফার ময়দানে একত্রিত হয়। তবে ফজর নামাযের পর এবং আছর নামাযের পর ক্বাযা নামায যদিও তা বিত্র নামায হয়, তিলাওয়াতে সিজদা এবং জানাযার নামায মাকরূহ্ নয়। অর্থাৎ ফজর এবং আছর নামাযের পর ক্বাযা নামায, বিত্র নামায, তিলাওয়াতে সিজদা এবং জানাযার নামায পড়া মাকরূহ্ নয়।”
(৫)
“হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৮৫-৮৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ويكره ان يتنفل بعد الفجر حتى تطلع الشمس وبعد العصر حتى تغرب لما روى انه عليه السلام نهى عن ذلك ولابأس بان يصلى فى هذين الوقتين (يعنى بعد العصر والفجر) الفوائت ويسجد للتلاوة ويصلى على الجنازة.
অর্থঃ- “ফজর নামাযের পর সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত এবং আছর নামাযের পর সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সর্বপ্রকার নফল নামায পড়া মাকরূহ্। কেননা, বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযের পর সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত এবং আছর নামাযের পর সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত নফল নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। তবে এই দুই ওয়াক্তের মধ্যে অর্থাৎ ফজর ও আছর নামাযের পর ক্বাযা নামায, কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের সিজদা এবং জানাযার নামায পড়তে কোন অসুবিধা নেই। অর্থাৎ ফজর ও আছর নামাযের পর ক্বাযায়ে আদার নামায, তিলাওয়াতে সিজদা এবং জানাযার নামায পড়া মাকরূহ্ নয়।”
(৬)
“আল লুবাব লিলমায়দানী” কিতাবে উল্লেখ আছে,
ويكره ان يتنفل قصدا ولو لها سبب بعد صلاة الفجر حتى تطلع الشمس وترفع وبعد صلاة العصر ولو لم تتغير الشمس حتى تغرب ولابأس بان يصلى فى هذين الوقتين المذكورين الفوائت ويسجد للتلاوة ويصلى على الجنازة.
অর্থঃ- “ফজর নামাযের পর সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত এবং আছর নামাযের পর সূর্যের রং পরিবর্তন না হলে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত কোন কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে হলেও সর্বপ্রকার নফল নামায পড়া মাকরূহ্। তবে উল্লিখিত এই দুই ওয়াক্তের মধ্যে অর্থাৎ ফজর নামাযের পর সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত এবং আছর নামাযের পর সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত এই দুই ওয়াক্তের মধ্যে ক্বাযা নামায, কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের সিজদা এবং জানাযার নামায পড়তে কোন অসুবিধা নেই। অর্থাৎ ফজর এবং আছর নামাযের পর ক্বাযায়ে আদার নামায, তিলাওয়াতে সিজদা এবং জানাযার নামায পড়া মাকরূহ্ নয়।”
(৭)
“বাহরুর রায়িক” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৫১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وعن التنفل بعد صلاة الفجر والعصر لا عن قضاء فائتة وسجدة تلاوة وصلاة جنازة أى منع عن التنفل فى هذين الوقتين.
অর্থঃ- “ফজর নামাযের পর এবং আছর নামাযের পর এই দুই ওয়াক্তের মধ্যে নফল নামায পড়া নিষেধ। তবে ফজর এবং আছর নামাযের পর ক্বাযা নামায, তিলাওয়াতে সিজদা এবং জানাযার নামায পড়া নিষেধ নয়।”
(৮)
“আল কিফায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,
ولابأس بان يصلى فى هذين الوقتين الفوائت اى بعد صلاة الفجر الى ان تاخذ الشمس فى الطلوع وبعد العصر الى ان تتغير الشمس.
অর্থঃ- “এই দুই ওয়াক্তের মধ্যে অর্থাৎ ফজর নামাযের পর সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত এবং আছর নামাযের পর সূর্যের রং পরিবর্তন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ক্বাযা নামায পড়তে কোন অসুবিধা নেই। অর্থাৎ ফজর এবং আছর নামাযের পর ক্বাযা নামায পড়া মাকরূহ্ নয়।”
(৯)
“জাওহারাতুন্ নাইয়ারাহ্” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ويكره ان يتنفل بعد صلاة الفجر حتى تطلع الشمس وبعد صلاة العصر حتى تغرب الشمس …. ولاباس ان يصلى فى هذين الوقتين الفوائت ويسجد للتلاوة ويصلى على الجنازة.
অর্থঃ- “ফজর নামাযের পর সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত এবং আছর নামাযের পর সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সকল প্রকার নফল নামায পড়া মাকরূহ্। …. তবে এই দুই ওয়াক্তের মধ্যে অর্থাৎ ফজর নামাযের পর সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত এবং আছর নামাযের পর সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত এই দুই ওয়াক্তের মধ্যে ক্বাযা নামায, কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের সিজদা এবং জানাযার নামায পড়তে কোন অসুবিধা নেই। অর্থাৎ ফজর ও আছর নামাযের পর ক্বাযা নামায অর্থাৎ ক্বাযায়ে আদার নামায, তিলাওয়াতে সিজদা এবং জানাযার নামায মাকরূহ্ নয়।”
(১০)
“আল ইনায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,
يجوز فيها قضاء الفوائت وصلاة الجنازة وسجدة التلاوة فيها بخلاف الثلاثة المذكورة.
অর্থঃ- “উল্লিখিত তিনটি ওয়াক্ত ব্যতীত অর্থাৎ সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত এবং দ্বিপ্রহর এই তিনটি ওয়াক্ত ব্যতীত অন্যান্য ওয়াক্তে ক্বাযা নামায, জানাযার নামায এবং তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করা জায়িয।”
(১১)
“মিনহাতুল খালিক” কিতাবে উল্লেখ আছে,
ويكره ان يتنفل بعد الفجر حتى تطلع الشمس وبعد العصر حتى تغرب ولابأس بان يصلى فى هذين الوقتين الفوائت.
অর্থঃ- “ফজর নামাযের পর সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত এবং আছর নামাযের পর সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সর্বপ্রকার নফল নামায পড়া মাকরূহ্। তবে এই দুই ওয়াক্তের মধ্যে অর্থাৎ ফজরের নামাযের পর সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত এবং আছরের নামাযের পর সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত এই দুই ওয়াক্তের মধ্যে ক্বাযা নামায পড়তে কোন অসুবিধা নেই। অর্থাৎ ফজর এবং আছরের পর ক্বাযায়ে আদার নামায পড়া মাকরূহ্ নয়।”
(১২)
“ফতওয়ায়ে নাওয়াযিল” কিতাবের ৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ولا بأس بالقضاء فيهما وكذا سجدة التلاوة وصلوة الجنازة.
অর্থঃ- “ঐ দুই ওয়াক্তের মধ্যে অর্থাৎ ফজর নামাযের পর সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত এবং আছর নামাযের পর সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত ক্বাযা নামায পড়তে কোন অসুবিধা নেই। অনুরূপ তিলাওয়াতে সিজদা ও জানাযার নামায পড়তেও কোন অসুবিধা নেই। অর্থাৎ ফজর ও আছর নামাযের পর ক্বাযায়ে আদার নামায, তিলাওয়াতে সিজদা এবং জানাযার নামায পড়া মাকরূহ্ নয়।”
(১৩)
“শরহুল মাজমা” কিতাবে উল্লেখ আছে,
ولابأس بالقضاء فيهما الى طلوع الشمس فى الفجر وتغيرها فى العصر.
অর্থঃ- “ফজর নামাযের পর সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত এবং আছর নামাযের পর সূর্যের রং পরিবর্তন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই দুই ওয়াক্তের মধ্যে ক্বাযা নামায পড়তে কোন অসুবিধা নেই।”
(১৪)
“ফতওয়ায়ে তাতারখানীয়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৪০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ووقتان اخران يكره فيها التطوع وهما بعد طلوع الفجر الى طلوع الشمس الا ركعتى الفجر وما بعد صلاة العصر الى وقت غروب الشمس ولا يكره فيهما الفرائض ولاصلاة الجنازة وفى الكافى ولا سجدة التلاوة.
অর্থঃ- “অপর দু’টি ওয়াক্তে নফল নামায পড়া মাকরূহ্। উক্ত মাকরূহ্ ওয়াক্ত দু’টি হলো, (১) ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পর থেকে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত তবে ফজর নামাযের দু’রাকায়াত সুন্নত ব্যতীত। (২) এবং আছর নামাযের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। এই দু’ওয়াক্তে নফল নামায পড়া মাকরূহ্। তবে এই দু’ওয়াক্তে ফরয নামায, জানাযার নামায মাকরূহ্ নয়। ‘কাফী’ কিতাবে উল্লেখ আছে, তিলাওয়াতে সিজদাও মাকরূহ্ নয়। সুতরাং আছর নামাযের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত ফরয নামায, জানাযার নামায, তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করা মাকরূহ্ নয়।”
(১৫)
‘হিদায়া’ কিতাবের হাশিয়া “আল খাববাযিয়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,
لابأس ان يصلى فى هذين الوقتين الفوائت.
অর্থঃ- “এই দুই ওয়াক্তের মধ্যে অর্থাৎ ফজর নামাযের পর সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত এবং আছর নামাযের পর সূর্যের রং পরিবর্তন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই দুই ওয়াক্তের মধ্যবর্তী সময়ে ক্বাযা নামায পড়তে কোন অসুবিধা নেই।”
(১৬)
“খুলাছাতুল ফতওয়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৬৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
تسعة اوقات يجوز فيها قضاء الفائتة وصلوة الجنازة وسجدة التلاوة ولايجوز فيها النفل ……… وبعد صلوة العصر قبل التغير.
অর্থঃ- “নয়টি ওয়াক্তে নফল নামায পড়া জায়িয নেই। তবে উক্ত নয়টি ওয়াক্তে ক্বাযা নামায, জানাযার নামায এবং তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করা জায়িয আছে। ….. আর উক্ত নয়টি ওয়াক্তের মধ্যে একটি ওয়াক্ত হলো আছরের নামাযের পর থেকে সূর্যের রং পরিবর্তন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। সুতরাং প্রমাণিত হলো, আছর নামাযের পর সূর্যের রং পরিবর্তন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই মধ্যবর্তী সময়ে শুধুমাত্র নফল নামায জায়িয নেই। তবে উক্ত মধ্যবর্তী সময়ে ক্বাযা নামায, তিলাওয়াতে সিজদা এবং জানাযার নামায পড়া জায়িয আছে।”
(১৭)
“বাহরুর রায়িক” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৫২ পৃষ্ঠায় আরোও বলা হয়েছে,
ان قضاء الفائتة ومامعها لاتكره بعد صلاة العصر الى غاية التغير.
অর্থঃ- “আছর নামাযের পর থেকে সূর্যের রং পরিবর্তন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ক্বাযা নামায এবং এর সংশ্লিষ্ট নামায মাকরূহ্ নয়।”
(১৮)
“ফতওয়ায়ে কাযীখান” কিতাবে উল্লেখ আছে,
وتسعة أوقات يجوز فيها قضاء الفوائت وصلاة الجنازة وسجدة التلاوة ولايجوز فيها نفل …. وبعد صلاة العصر قبل التغير.
অর্থঃ- “নয়টি ওয়াক্ত এমন যার মধ্যে নফল নামায পড়া জায়িয নেই। তবে উক্ত নয়টি ওয়াক্তে ক্বাযা নামায অর্থাৎ ক্বাযায়ে আদার নামায, জানাযার নামায এবং তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করা জায়িয। …. আর যে নয়টি ওয়াক্তে নফল নামায পড়া জায়িয নেই, উক্ত নয়টি ওয়াক্তের মধ্যে একটি ওয়াক্ত হলো আছর নামায আদায় করার পর থেকে সূর্যের রং পরিবর্তন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই মধ্যবর্তী সময়। সুতরাং আছরের নামাযের পর থেকে সূর্যের রং পরিবর্তন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই মধ্যবর্তী সময়ে শুধুমাত্র সর্বপ্রকার নফল নামায পড়া জায়িয নেই। তবে ক্বাযা নামায, তিলাওয়াতে সিজদা এবং জানাযার নামায পড়া জায়িয।”
(১৯)
“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১২১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ليس للقضاء وقت معين بل جميع اوقات العمر وقت له الا ثلاثة وقت طلوع الشمس ووقت الزوال ووقت الغروب فانه لاتجوز الصلاة فى هذه الاوقات.
অর্থঃ- “ক্বাযা নামাযের জন্য অর্থাৎ ক্বাযায়ে আদা নামাযের জন্য নির্দিষ্ট কোন ওয়াক্ত নেই। বরং তিনটি ওয়াক্ত ব্যতীত অর্থাৎ সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত এবং দ্বিপ্রহর ব্যতীত জীবনের সকল ওয়াক্তই হলো ক্বাযায়ে আদা নামাযের ওয়াক্ত। সুতরাং সূর্যোদয়, সূযাস্ত এবং দ্বিপ্রহর এই তিনটি ওয়াক্তে কোন নামাযই পড়া জায়িয নেই।”
(২০)
“ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৪০৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
تسعة اوقال يجوز فيها قضاء الفائتة وصلاة الجنازة وسجدة التلاوة ولايجوز فيها نفل …… وبعد صلاة العصر قبل التغير.
অর্থঃ- “নয় ওয়াক্তে নফল নামায পড়া জায়িয নেই। তবে উক্ত নয়টি ওয়াক্তে ক্বাযা নামায, জানাযার নামায এবং তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করা জায়িয আছে। …. আর উক্ত নয়টি ওয়াক্তের মধ্যে একটি ওয়াক্ত হলো আছরের নামায আদায় করার পর থেকে সূর্যের রং পরিবর্তন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। সুতরাং আছরের নামাযের পর থেকে সূর্যের রং পরিবর্তন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই মধ্যবর্তী সময়ে নফল নামায জায়িয নেই তবে ক্বাযা নামায, জানাযার নামায, তিলাওয়াতে সিজদা জায়িয।”
(২১)
“তানবীরুল আবছার” কিতাবে উল্লেখ আছে,
وكره نفل ……… بعد صلاة فجر وعصر لاقضاء فائتة وسجدة تلاوة وصلاة جنازة.
অর্থঃ- “ফজর এবং আছর নামাযের পর ….. নফল নামায পড়া মাকরূহ্ তবে ফজর এবং আছর নামাযের পর ক্বাযা নামায, তিলাওয়াতে সিজদা এবং জানাযার নামায পড়া মাকরূহ্ নয়।”
(২২)
“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
تسعة أوقات يكره فيها النوافل وما فى معناها لاالفرائض هكذا فى النهاية والكفاية فيجوز فيها قضاء الفائتة وصلاة الجنازة وسجدة التلاوة …… ومنها ما بعد صلاة العصر قبل التغير.
অর্থঃ- “নয়টি ওয়াক্তের মধ্যে নফল নামায পড়া মাকরূহ্ এবং নফল নামাযের ন্যায় অন্যান্য নফল নামাযও পড়া মাকরূহ্। তবে ফরয নামাযসমূহ আদায় করা মাকরূহ্ নয়। এটা নেহায়া এবং কিফায়া কিতাবে উল্লেখ আছে। আর যে নয়টি ওয়াক্তে নফল নামায পড়া মাকরূহ্ উক্ত নয়টি ওয়াক্তে ক্বাযা নামায, জানাযার নামায এবং তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করা জায়িয, মাকরূহ্ নয়। … উক্ত নয়টি মাকরূহ্ ওয়াক্তের মধ্যে একটি মাকরূহ্ ওয়াক্ত হলো আছর নামায আদায় করার পর থেকে সূর্যের রং পরিবর্তন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। সুতরাং আছর নামাযের পর থেকে সূর্যের রং পরিবর্তন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই মধ্যবর্তী সময়ে শুধুমাত্র সর্বপ্রকার নফল নামায পড়া মাকরূহ্। তিলাওয়াতে সিজদা, ক্বাযা নামায এবং জানাযার নামায পড়া মাকরূহ্ নয়।”
(২৩)
“মা’য়াদানুল হাক্বায়িক” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১২২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
اور نماز فجر کے بعد طلوع افتاب تک اور عصر کے بعد غروب افتاب تک نوافل پڑھنا مکروہ ہے… ہاں ان اوقات میں قضاء نماز سجدہ تلاوت نماز جنازہ پڑھنے میں کوئی حرج نھیں.
অর্থঃ- “ফজর নামাযের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত এবং আছর নামাযের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত সর্ব প্রকার নফল নামায পড়া মাকরূহ। তবে হ্যাঁ, এই দু’ওয়াক্তে অর্থাৎ ফজর নামাযের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত এবং আছর নামাযের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত ক্বাযা নামায, তিলাওয়াতে সিজদা এবং জানাযার নামায পড়তে কোন অসুবিধা নেই। সুতরাং আছর নামাযের পর থেকে সুর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত ক্বাযা নামায, তিলাওয়াতে সিজদা এবং জানাযার নামায পড়া মাকরূহ্ নয়।”
(২৪)
“ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
نو وقت ایسے بیں جنمیں نوافل اور جو اور نمازیں ان انکے حکم میں ہیں وہ مکروہ ہیں فرائض مکروہ انکے حکم میں ہیں وہ مکروہ ہیں فرائض مکروہ نھیں یہ نھایۃ اور کفایۃ میں لکھا ہے ان وقتوں میں قضا اور جنازہ کی نماز اور تلاوت کا سجدہ جائز ہی …. انکے عصر کی نماز کے بعد سورج کے متغیر ہو نے سے پھلے تک کا وقت ہے.
অর্থঃ- “নয় ওয়াক্ত এমন যার মধ্যে নফল নামাযসমূহ এবং অন্যান্য নামায যা নফল নামাযের হুকুম রাখে এমন নফল নামাযও আদায় করা মাকরূহ্। ফরয নামায আদায় করা মাকরূহ্ নয়। এটা নেহায়া ও কিফায়া কিতাবের মধ্যে লিখা আছে। তবে ঐ নয় ওয়াক্তের মধ্যে ক্বাযা নামায, জানাযার নামায এবং তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করা জায়িয। … আর যে নয় ওয়াক্তে নফল নামাযসমূহ পড়া মাকরূহ্ ঐ নয়টি মাকরূহ্ ওয়াক্তের মধ্যে একটি মাকরূহ্ ওয়াক্ত হলো আছর নামাযের পর থেকে সূর্যের রং পরিবর্তন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। সুতরাং আছর নামাযের পর থেকে সূর্যের রং পরিবর্তন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত শুধুমাত্র নফল নামায পড়া মাকরূহ্। ক্বাযা নামায, জানাযার নামায, তিলাওয়াতে সিজদা মাকরূহ্ নয়।”
(২৫)
“আইনুল হিদায়া” কিতাবের নিছফে আউয়াল খন্ডের ৩৬৪-৩৬৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
اور مکروہ ہے کہ نفل پڑھے بعد فجر کے یھاں تک کہ افتاب طلوع کرے اوربعد عصر کے یھاں تک کے افتاب غروب ہو …….. اور مضائقہ نہیں کہ ان دونوں وقتوں یعنی بعد نماز فجر وبعد نماز عصر کے تضاء نمازوں کو پڑھے اور تلاوت کا سجدہ کرے اور جنازہ کی نماز پڑ ھے.
অর্থঃ- “ফজর নামাযের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত এবং আছর নামাযের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত নফল নামায পড়া মাকরূহ্। ….. তবে এই দুই ওয়াক্তে অর্থাৎ ফজর নামাযের পর সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত এবং আছর নামাযের পর সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত এই দুই ওয়াক্তের মধ্যবর্তী সময়ে ক্বাযা নামায, তিলাওয়াতে সিজদা এবং জানাযার নামায পড়তে কোন অসুবিধা নেই। অর্থাৎ ফজর এবং আছর নামাযের পর নফল নামায পড়া মাকরূহ্ হলেও ক্বাযা নামায, তিলাওয়াতে সিজদা এবং জানাযার নামায পড়া মাকরূহ্ নয়।”
(২৬)
“গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
اور بعد فجر اور عصر کی نماز کے قصدا نفل مکروہ ھی … مکروہ نھیں قضا فوت ہو گئی نماز کی اگرچہ فائتۃ وتر ہو اور نہ سجدہ تلاوت کا اور نہ نماز جنازہ بعد نماز فجر اور عصر کے.
অর্থঃ- “ফজর এবং আছর নামাযের পর ইচ্ছাকৃত নফল নামায পড়া মাকরূহ্। ….. তবে ফজর এবং আছর নামাযের পর ফউত হয়ে যাওয়া নামাযের ক্বাযা নামায যদিও তা বিত্র নামায হয়, তিলাওয়াতে সিজদা এবং জানাযার নামায পড়া মাকরূহ্ নয়।”
(২৭)
“ফতওয়ায়ে বায্যাযিয়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,
عشرة أوقات يجوز فيها القضاء سوى الاوقات الثلاثة وصلاة الجنازة وسجدة التلاوة لاالنفل …….. والثالث بعد صلاة العصر الى ان يصلى المغرب.
অর্থঃ- “তিনটি ওয়াক্ত ব্যতীত অর্থাৎ সূর্যোদয়, সুর্যাস্ত, দ্বিপ্রহর এই তিনটি ওয়াক্ত ব্যতীত অন্যান্য দশটি ওয়াক্তের মধ্যে ক্বাযা নামায, জানাযার নামায এবং তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করা জায়িয। তবে নফল নামায জায়িয নয়। …….. উক্ত দশটি ওয়াক্তের তৃতীয় ওয়াক্তটি হলো আছর নামাযের পর থেকে মাগরিব নামায আদায় করার পূর্ব পর্যন্ত সময়। সূতরাং আছর নামাযের পর থেকে মাগরিব নামাযের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে ক্বাযা নামায, জানাযার নামায এবং তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করা জায়িয আছে। নফল নামায পড়া জায়িয নেই।”
(২৮)
“নূরুল হিদায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৭৭-৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
اور بعد فجر کے سوائے سنت فجر کے اور درمیان عصر اور مغرب کے نفل مکروہ ہے اور قضا اور نماز جنازہ اور سجدہ تلاوت ان دونوں وقتوں میں مکروہ نہیں.
অর্থঃ- “ফজর নামাযের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর ফজর নামাযের সুন্নত ব্যতীত এবং আছর ও মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়ে নফল নামায পড়া মাকরূহ্। তবে এই দুই ওয়াক্তের মধ্যে অর্থাৎ ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত এবং আছর ও মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়ে ক্বাযা নামায (অর্থাৎ ক্বাযায়ে আদার নামায), তিলাওয়াতে সিজদা এবং জানাযার নামায পড়া মাকরূহ্ নয়।”
(২৯)
“শরহুন্ নিকায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১২৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ويكره النفل فقط اى دون الفوائت وسجدة التلاوة وصلوة الجنازة بعد الصبح اى بعد طلوعها الا سنته وبعد اداء العصر الى اداء المغرب.
অর্থঃ- “ছুবহে ছাদিক হওয়ার পর ফজর নামাযের সুন্নত ব্যতীত এবং আছর নামায আদায় করার পর থেকে মাগরিবের নামায আদায় করার পূর্ব পর্যন্ত এই মধ্যবর্তী সময়ে শুধুমাত্র সর্বপ্রকার নফল নামায পড়া মাকরূহ্। তবে ক্বাযা নামায অর্থাৎ ক্বাযায়ে আদার নামায, তিলাওয়াতে সিজদা এবং জানাযার নামায পড়া মাকরূহ্ নয়।”
(৩০)
“আহ্সানুল মাসায়িল” কিতাবের ২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
اور بعد نماز فجر اور عصر کی نفل پڑھی ممنوع ہے مگر نماز قضا اور سجدہ تلاوت اور نماز جنازہ ان دونوں وقتوں میں درست ہے.
অর্থঃ- “ফজর এবং আছর নামাযের পর নফল নামায পড়া নিষিদ্ধ। তবে এই দু’ওয়াক্তে অর্থাৎ ফজর এবং আছর নামাযের পর ক্বাযা নামায, তিলাওয়াতে সিজদা এবং জানাযার নামায পড়া মাকরূহ্ নয়; জায়িয আছে।” উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, আছর ও মাগরিবের নামাযের মধ্যবর্তী সময়ে অর্থাৎ আছরের নামাযের পর থেকে সুর্যের রং পরিবর্তন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই মধ্যবর্তী সময়ে যে কোন ধরণের নামায পড়া মাকরূহ্ নয়। বরং উল্লিখিত সময়ে যে কোন ধরণের শুধুমাত্র নফল নামায মাকরূহ্। সুতরাং আছর নামাযের পর থেকে সূর্যের রং পরিবর্তন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই মধ্যবর্তী সময়ে সর্বপ্রকার শুধুমাত্র নফল নামায ব্যতীত অন্যান্য নামায যেমন, ক্বাযা নামায অর্থাৎ ক্বাযায়ে আদার নামায, বিতর নামায, তিলাওয়াতে সিজদা এবং জানাযার নামায পড়া মাকরূহ্ নয়। দ্বিতীয়তঃ মাসিক মদীনার সম্পাদক বলেছে, “উল্লিখিত সময়ে …… “কোরআন তেলাওয়াত করা যেতে পারে।” এর জবাবে বলতে হয় যে, মদীনার সম্পাদকের উক্ত বক্তব্যও সঠিক হয়নি। কারণ উল্লিখিত সময়ে অর্থাৎ আছর ও মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়ে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত না করাই উত্তম। বরং আছর ও মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়ে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত না করে দোয়া, দরূদ শরীফ, তাছবীহ-তাহ্লীল, যিকির-আযকার, মুরাকাবা-মুশাহাদা করাই উত্তম। কেননা, আছর এবং মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়ে কিতাবাদী অধ্যয়ন না করার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন, আমিরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, من احب كريمتيه فلايكتبن بعد العصر.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি তার দু’চক্ষুকে মুহব্বত করে অর্থাৎ চোখের সুস্থতা কামনা করে, সে যেন আছরের পর লেখাপড়া না করে।”
কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার উত্তম সময়
(৩১)
উল্লেখ্য, হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, افضل العبادة قراءة القران.
অর্থঃ- “(ফরয ইবাদতের পর নফল ইবাদতের মধ্যে) সর্বোত্তম (নফল) ইবাদত হলো কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা।” (কানযুল উম্মাল)
সুতরাং ফরয ইবাদতের পর কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার উত্তম সময় রাত্র। আবার রাতের প্রথম ভাগ অপেক্ষা শেষ ভাগে তিলাওয়াত করা অধিক উত্তম। মাগরিব এবং ইশার মধ্যবর্তী সময়েও তিলাওয়াত করা ভাল। আর দিনের বেলায় কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার উত্তম সময় হলো সূর্যোদয়ের ২৩ মিনিট পর থেকে।
উল্লেখ্য, আছর এবং মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়ে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত না করে দোয়া, দরূদ শরীফ, তাছবীহ্-তাহ্লীল, যিকির-আযকার, মুরাকাবা-মুশাহাদা করাই উত্তম।
(৩২)
যেমন “বাহরুর রায়িক” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৫১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الصلاة على النبى صلى الله عليه وسلم فى الاوقات التى تكره فيها الصلاة والدعاء والتسبيح افضل من قراءة القران.
অর্থঃ- “যে সকল ওয়াক্তে নামায পড়া মাকরূহ্ সে সকল মাকরূহ্ ওয়াক্ত সমূহে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার চেয়ে তাছবীহ্, দোয়া এবং দরূদ শরীফ পড়াই উত্তম।”
(৩৩)
“দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে,
الصلاة فيها على النبى صلى الله عليه وسلم افضل من قراءة القران.
অর্থঃ- “মাকরূহ্ ওয়াক্তগুলোতে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার চেয়ে দরূদ শরীফ পড়াই উত্তম।”
(৩৪)
“হাশিয়ায়ে আ’লা মারাকিউল ফালাহ্” কিতাবের ১২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الصلاة على النبى صلى الله عليه وسلم والدعاء والتسبيح فى الاوقات المكروهة افضل من قراءة القران.
অর্থঃ- “মাকরূহ্ ওয়াক্তগুলোতে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার চেয়ে তাসবীহ্, দোয়া এবং দরূদ শরীফ পড়াই উত্তম।”
(৩৫)
“গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৭৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
اوقات مذکورہ میں نبی صلی اللہ علیہ وسلم پر درود پڑھنا افضل ھی قران کے پڑ ھنے سے.
অর্থঃ- “উল্লিখিত মাকরূহ্ ওয়াক্তগুলোতে কুরআন শরীফ পড়ার চেয়ে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি দরূদ শরীফ পড়াই উত্তম।” অতএব, প্রমাণিত হলো যে, উল্লিখিত সময়ে অর্থাৎ আছর নামাযের পর থেকে সূর্যের রং পরিবর্তন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়ে ক্বাযা নামায অর্থাৎ ক্বাযায়ে আদার নামায, বিত্র নামায, তিলাওয়াতে সিজদা এবং জানাযার নামায পড়া মাকরূহ্ নয়। সুতরাং মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন যে বলেছে, “উল্লিখিত সময়ে যে কোন ধরণের নামায পড়া মাকরূহ্। কোরআন তেলাওয়াত করা যেতে পারে।” তার এ বক্তব্য ভুল বলেই প্রমাণিত হলো। {দলীলসমূহঃ (১) ফতওয়ায়ে নাওয়াযিল, (২) আল মুখতাছারুল কুদূরী, (৩) হিদায়া, (৪) বিকায়া, (৫) নিহায়া, (৬) ইনায়া, (৭) বিনায়া, (৮) কিফায়া, (৯) কাফী, (১০) কুনিয়া, (১১) বুগীয়া, (১২) হিলইয়া, (১৩) হালবী, (১৪) শরহে ত্বহাবী (১৫) আত্তুহফা, (১৬) আল মুজতাবা, (১৭) আল কুহিস্তানী, (১৮) মুহীতে সারাখ্সী, (১৯) দিরায়া, (২০) খুলাছাতুল ফতওয়া, (২১) ফতওয়ায়ে কাজীখান, (২২) ফতওয়ায়ে বায্যাযিয়া, (২৩) ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া, (২৪) তানবীরুল আবছার, (২৫) শরহে বেকায়া, (২৬) শরহে নিকায়া, (২৭) ফতহুল ক্বাদীর, (২৮) কানযুদ দাক্বায়িক, (২৯) আল লুবাব লিল মায়দানী, (৩০) বাহরুর রায়িক, (৩১) জাওহারাতুন্ নাইয়্যারাহ্, (৩২) শরহুল মাজমা, (৩৩) শরহে ইনায়া, (৩৪) শরহে দুরার, (৩৫) শরহে লুবাব, (৩৬) শরহে কানযুদ্ দাক্বায়িক্ব, (৩৭) শরহে মুনিয়াতুল মুছূল্লী, (৩৮) শরহে ইলইয়াস, (৩৯) আল খাব্বাযিয়া, (৪০) মিনহাতুল খালিক, (৪১) নূরুল হিদায়া, (৪২) নূরুদ্ দিরায়া, (৪৩) নূরুল ইজাহ্, (৪৪) উমদার্তু রিয়াআ, (৪৫) আলমগীরী, (৪৬) দুররুল মুখতার, (৪৭) আইনুল হিদায়া, (৪৮) গায়াতুল আওতার, (৪৯) হাশিয়ায়ে তাহতাবী, (৫০) হাশিয়ায়ে মারাকিউল ফালাহ্, (৫১) হাশিয়ায়ে চলপী, (৫২) নাহরুল ফায়িক, (৫৩) সিরাজীয়া, (৫৪) ফতওয়ায়ে ইতাবিয়া, (৫৫) তুহফাতুল ফিক্বাহ্, (৫৬) আইনী, (৫৭) মা’য়াদানুল হাক্বায়িক্ব, (৫৮) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, (৫৯) শামী, (৬০) কিতাবুল ফিক্বাহ্ আ’লাল মাযাহিবিল আরবায়া, (৬১) আরকানে আরবায়া, (৬২) আহ্সানুল মাসায়িল ইত্যাদি।}
মাওলানা মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান
মাওলানা মুহম্মদ মাছূম বিল্লাহ্
মুহম্মদ আসাদুর রহমান,
মুহম্মদ মাইজুর রহমান ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
সুওয়ালঃ আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম এই তিনটি সংখ্যায় ৩৫৩টি অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে প্রদত্ত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ, মুহাক্কিক-মুদাক্কিক ও হক্কানী উলামায়ে কিরামগণের ফতওয়া মুতাবিক জানতে পারলাম যে, “প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা করানো, ঘরে রাখা সর্বাবস্থায় হারাম।”
অথচ রেযাখানী মুখপত্র নভেম্বর/২০০১ ঈসায়ী সংখ্যায় ছবি সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ফতওয়া প্রকাশ করেছে। যা কিনা মানুষের ঈমান-আমল বিনষ্ট হওয়ার কারণ। রেযাখানীদের ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যের যে বিষয়গুলো আপত্তিকর সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো- (ক) রেযাখানীরা ছবি তোলাকে বৈধ বলেছে; কিন্তু দলীল হিসেবে পেশ করেছে ঘরে ছবি রাখা সম্পর্কিত হাদীছসমূহকে। (খ) .. কতেক উলামা যেসব ছবির শরীর ও ছায়া নেই সেসব ছবিকে বৈধ বলেছেন। (গ) পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ এবং হাম্বলী, শাফেয়ী, মালেকী এমনকি হানাফীদেরও কেউ কেউ নাকি (গায়রে মুজাস্সাম) শরীরবিহীন ছবিকে বৈধ বলেছেন। (ঘ) হুজুর আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুরুর দিকে ছবি তৈরী করা ও সংরক্ষণ করাকে নিষেধ করেছিলেন; কিন্তু পরবর্তীতে অনুমতি দেন। (ঙ) ছবি হারাম হওয়ার মূলে হলো গায়রুল্লাহ্র সম্মান ও ইবাদত। (চ) প্রত্যেক যুগের ফক্বীহ্, মুফতী, কাজী ও আলিমগণ যুগের চাহিদা অনুযায়ী ফতওয়া দিয়েছেন এবং দেয়া উচিত। (ছ) সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তোলা বৈধ যা যুগের চাহিদাও। (জ) প্রয়োজনীয় রেকর্ডের জন্য ফাইলবন্দি ছবিসমূহ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট জ্ঞান ও ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানার নিমিত্তে সরকারী-বেসরকারী যাদুঘর বা বিশেষ প্রতিষ্ঠানসমূহে পূর্বের নানা মনীষীগণের ছবি সংরক্ষণ/ধারণ করে রাখা বিশেষ প্রয়োজনে মাকরূহ্ হবেনা। এছাড়াও আরো বহু আপত্তিকর বিষয় তাদের উক্ত ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যে স্থান পেয়েছে। কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে তাদের উল্লিখিত আপত্তিকর বক্তব্যগুলোর শরয়ী ফায়সালা কামনা করি।
জাওয়াবঃ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম)
উল্লিখিত হাদীছ শরীফের পূর্ণ মিছদাক বা নমুনা হচ্ছে রেযাখানীরা। তারা ছবির ব্যাপারে এমন সব বক্তব্য প্রদান করেছে যা কিতাবে দেখা তো দূরের কথা কেউ কোনদিন শুনেওনি। মূলতঃ রেযাখানীরা নিজেদেরকৃত বদ আমলকে ধামা-চাপা দেয়ার উদ্দেশ্যেই মনগড়াভাবে ছবিকে জায়িয করার অপচেষ্টা করেছে।
(ধারাবাহিক)
প্রাণীর ছবি সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত রেযাখানীদের আপত্তিকর ও প্রতারণামূলক বক্তব্য সমূহের খণ্ডন মূলক জবাব-
(ঘ) অতঃপর রেযাখানীরা তাদের ছবি সম্পর্কিত কলঙ্কিত রচনায় লিখেছে, “ …. হুযূর আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুরুর দিকে ছবি তৈরী ও সংরক্ষণ করাকে নিষেধ করেছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে নকশাকৃত বা অঙ্কিত ছবির ব্যাপারে অনুমতি দেন।” রেযাখানীরা তাদের উপরোক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে “উমদাতুল ক্বারী” থেকে নিম্নোক্ত ইবারতখানা উল্লেখ করেছে,
وانما نهى الشارع اولا عن الصور كلها وان كانت رقما لانهم كانوا حديثى عهد بعبادة الصور فنهى عن ذالك جملة ثم لما تقرر نهيه عن ذالك اباح ماكان رقما فى ثوب للضرورة.
রেযাখানীরা উক্ত ইবারতের অর্থ করেছে এভাবে- “শারে আলাইহিস্ সালাম প্রথম দিকে প্রত্যেক ধরনের ছবি তৈরী করাকে নিষেধ করেছেন। যদিও তা কাপড়ের উপর নকশাকৃত হোক না কেন। কেননা ঐ সময় লোকেরা ছবির ইবাদত করতে অভ্যস্ত ছিলো। এজন্য সাধারণভাবে নিষেধ করেছেন। আর যখন ঐ নিষেধাজ্ঞার কারণ উঠে যায় তখন হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রয়োজনবশতঃ কাপড়ের উপর নকশাকৃত বা অঙ্কিত ছবির অনুমতি দেন। (আল্লামা বদরুদ্দীন আইনীঃ উমদাতুল ক্বারী, ২ খণ্ড, ৭৪ পৃষ্ঠা) রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানীরা উক্ত বক্তব্যের দ্বারা সাধারণ মানুষদেরকে সূক্ষ্মভাবে ধোকা দিতে চেয়েছে। অর্থাৎ তারা এটাই বুঝাতে চেয়েছে যে, প্রথম দিকে সব ধরণের প্রাণীর ছবিই নিষিদ্ধ ছিল। তবে পরবর্তীতে কাপড়ে প্রাণীর ছবি অঙ্কন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে কাপড়ের উপর প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা জায়িয। আর তাই রেযাখানীরা উক্ত ইবারতের স্থান বিশেষে মনগড়া ও ভুল অর্থ করেছে। বস্তুতঃ উক্ত ইবারতের দ্বারা যেটা বুঝানো হয়েছে তাহলো-
(صورة) ‘ছূরত’ বা ‘আকৃতি’ দু’প্রকার।
১। صورة الحيوان অর্থাৎ প্রাণীর ছূরত বা আকৃতি।
২। صورة غير الحيوان অর্থাৎ প্রাণহীন বস্তুর আকৃতি। যেমন, গাছপালা, তরুলতা, পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি। হাদীছ শরীফের ভাষায় এগুলোকে (رقم) বলা হয়। তাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম দিকে প্রাণী ও প্রাণহীন সকল ছবিই তৈরী করতে নিষেধ করেন। কিন্তু যখন গাছপালা ইত্যাদি প্রাণহীন বস্তুর পূজা বন্ধ হয়ে যায় তখন প্রয়োজনে কাপড়ের উপর গাছপালা ইত্যাদি প্রাণহীন বস্তুর ছবি অঙ্কনের অনুমতি দেন। অর্থাৎ প্রথমদিকে প্রাণী ও প্রাণহীন উভয়প্রকার ছবিই তৈরী করা নিষিদ্ধ ছিলো। তবে পরবর্তীতে প্রাণীর ছবি তৈরী করা নিষিদ্ধ থেকে যায় আর প্রাণহীনবস্তুর ছবি তৈরীর অনুমতি দেয়া হয়। এটাই “উমদাতুল ক্বারীর” উক্ত ইবারতের সঠিক ব্যাখ্যা। কেননা, “উমদাতুল ক্বারীর” উক্ত ইবারতে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ আছে যে,
انما نهى الشارع اولا عن الصور كلها وان كانت رقما.
অর্থাৎ- “শরীয়ত প্রণেতা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথমতঃ সর্বপ্রকার ছবিই নিষেধ করেন। এমনকি প্রাণহীন বস্তুর ছবিও।”
অথচ রেযাখানীরা নিজ হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে উক্ত ইবারতে উল্লিখিত وان كانت رقما. এ অংশটুকুর অর্থ করেছে, “যদিও তা কাপড়ের উপর নকশাকৃত হোক না কেন।”
অথচ উক্ত ইবারতে ثوب বা কাপড় শব্দের কোন অস্তিত্ব নেই। বরং শুধুমাত্র رقم শব্দ রয়েছে আর رقم শব্দের অর্থ যে, প্রাণহীন বস্তুর আকৃতি বা নকশা তা উমদাতুল ক্বারীসহ আরো বহু কিতাবেই উল্লেখ আছে। নিম্নে رقم শব্দের সঠিক অর্থ তুলে ধরা হলো।
هذا يحتج به من يدل باباحة ماكان رقما مطلقا كما سبق وجوابنا وجواب الجمهور عنه انه محمول على رقم على صورة الشجر وغيره مالس بحيوان وقد قدمنا ان هذا جائز عندنا.
অর্থঃ- “যারা মতলক বা সাধারণভাবে কাপড়ে অঙ্কিত ছবিকে জায়িয বলেছে তারা এ হাদীছ শরীফের উপর ভিত্তি করেই বলেছে। আর আমাদের ও জমহুর আলিমগণের ফতওয়া হলো- হাদীছ শরীফে বর্ণিত رقم দ্বারা গাছপালার অনুরূপ প্রাণহীন বস্তুর আকৃতিকেই বুঝানো হয়েছে। আর পূর্বেই বলা হয়েছে যে, এরূপ গাছপালার ছবি আমাদের নিকট জায়িয।”
উল্লিখিত ইবারত দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্য ভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইমাম নববী-এর মতে ও জমহুর আলিমগণের মতে হাদীছ শরীফে বর্ণিত “الا رقما فى ثوب”-এর অর্থ হলো গাছ-পালা বা প্রাণহীন বস্তুর ছবি।
শুধু শরহে নববীতেই নয়, হাদীছ শরীফের অন্যান্য ব্যাখ্যা গ্রন্থসমূহেও ইমাম নববী ও জমহুর আলিমগণের উক্ত মত উল্লেখ রয়েছে, যেমন-
يحتج به من يجوز الرقم مطلقا وجوابنا وجواب الجمهور انه محمول على رقم مالا روح فيه.
অর্থঃ- “যারা সাধারণভাবে কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবিকে জায়িয বলে তারা এ হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে পেশ করে থাকে। কিন্তু আমাদের এবং জমহুর উলামাদের ফতওয়া হলো উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা মূলতঃ প্রাণহীন বস্তুর ছবিকেই বুঝানো হয়েছে।” (শরহুল উবাই ওয়া সিনূসী-এর ৭ম জিঃ ২৫৬ পৃষ্ঠা)
قال النووى يجمع بين الاحاديث بان المراد باستثناء الرقم فى الثوب ما كانت الصورة فيه من غير ذوات الارواح كصورة الشجر ونحوها.
অর্থঃ- “(কাপড়ের ছবি ব্যতীত) …. ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উক্ত হাদীছ শরীফে যে কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবিকে বাদ দেয়া হয়েছে অর্থাৎ জায়িয বলা হয়েছে তা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, প্রাণহীন বস্তুর ছবি যেমন, গাছপালা, তরুলতা ইত্যাদি।” (ফাতহুল বারী শরহে বুখারী-এর ১০ জিঃ ৩৯০ পৃষ্ঠা)
…. قال النووى …….. بان المراد استثناء الرقم فى الثوب ما كانت الصورة فيه من غير ذوات الارواح كصورة الشجر ونحوها.
অর্থঃ- “(কাপড়ের অঙ্কিত ছবি অর্থাৎ কাপড়ে অঙ্কিত (গাছপালার) নক্শা ব্যতীত) … ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “الا رقما فى الثوب” এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, প্রাণহীন বস্তুর ছবি। যেমন, গাছপালা ইত্যাদি।” (ইরশাদুস্ সারী শরহে বুখারী”-এর ৮ম জিঃ ৪৮৩ পৃষ্ঠা)
واجاب عنه الجمهور بان المراد من “الرقم فى الثوب” هو ما كان فيه من نقش الشجر ونحوه مما لاروح له.
অর্থঃ- হাদীছ শরীফে বর্ণিত “الا رقما فى ثوب” -এর ব্যাখ্যায় জমহুর উলামাগণ বলেন, হাদীছ শরীফে বর্ণিত رقم শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো গাছপালার নকশা, অনুরূপ প্রাণহীন বস্তুর আকৃতি।” (ফাতহুল মুলহিম- ৪র্থ জিঃ ১৫০ পৃষ্ঠা) উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, উক্ত ইবারতে উল্লিখিত رقم শব্দের সঠিক ও গ্রহণেযোগ্য অর্থ হলো, “প্রাণহীন বস্তু গাছপালা, তরুলতা, পাহাড়পর্বত ইত্যাদি। সাইয়্যিদুল কাওনাইন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রাণহীন বস্তুর ছবি তৈরী করার অনুমতি দিয়েছেন। প্রাণীর ছবি নয়। এটাই উক্ত ‘উমদাতুল ক্বারীতে’ উল্লেখ করা হয়েছে।
রেযাখানীরা প্রাণহীন বস্তুর ছবিকে প্রাণীর ছবি হিসেবে চালিয়ে দিয়ে নিজেদেরকে আবারো প্রতারক, ঠকবাজ, ধোকাবাজ হিসেবে প্রমাণ করলো। (চলবে)
মুহম্মদ আহছানুল্লাহ্ ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া।
সুওয়ালঃ ব্লেড বা খুর দ্বারা মোঁছ চেছে ফেলা জায়িয আছে কি-না? কেউ কেউ বলেন, “মোছ চাছা ও খাট করা উভয়ই জায়িয ও সুন্নত।”
এ বক্তব্য কতটুকু শরীয়ত সম্মত? দলীলসহ সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ মোঁছের ব্যাপারে শরীয়তসম্মত বক্তব্য বা ফতওয়া হলো, মোঁছ কেটে ছোট করে রাখা সুন্নত। আর মোঁছ মুণ্ডন বা চেছে ফেলা মাকরূহ্ তাহরীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্। কেউ কেউ মোছলা বা আকৃতি-বিকৃতির কারণ হিসেবে হারামও ফতওয়া দিয়েছেন। কেউই এমন একখানা হাদীছ শরীফ পেশ করতে পারবেনা যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে মোঁছ বা গোঁফ মুবারক চেছেছেন বা চেছে ফেলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। বরং অসংখ্য ক্বওলী ও ফে’লী হাদীছ শরীফের দ্বারা প্রমাণিত যে, ‘সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ গোঁফ বা মোঁছ মুবারক ছোট ছোট করে রাখতেন এবং অপরকেও ছোট করে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।’
যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে,
عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم عشر من الفطرة قص الشارب واعفاء اللحية.
অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “দশটি জিনিস মানুষের ফিৎরাতের অন্তর্ভুক্ত। তার মধ্যে দু’টি হচ্ছে, গোঁফ কাটা ও দাড়ী লম্বা রাখা।” (আবু দাউদ, আহমদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্)
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من فطرة الاسلام اخذ الشارب واعفاء اللحى فان المجوس تعفى شوابها وتحفى لحاها فخالفواهم خذوا شواربكم واعفوا لحاكم.
অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামূল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “গোঁফ কাটা ও দাড়ী লম্বা রাখা ইসলামী ফিৎরাতের অন্তর্ভুক্ত। আর নিশ্চয়ই মজূসীরা গোঁফ লম্বা রাখে এবং দাড়ী কেটে ফেলে, সুতরাং তোমরা মজূসীদের বিরোধিতা কর, গোঁফ কাট এবং দাড়ী লম্বা রাখ।” (ইবনে হাব্বান)
عن ابن عمر رضى الله عنهما عن النبى صلى الله عليه وسلم قال خالفوا المشركين وفروا اللحى واحفوا الشوارب.
অর্থঃ- “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘মুশরিকদের বিরোধিতা কর, দাড়ী লম্বা রাখ ও গোঁফ খুব ছোট কর।” (মুসলিম)
عن ابن عمر رضى الله عنهما قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انهكوا الشوارب واعفوا اللحى.
অর্থঃ- “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘গোঁফ ছোট কর এবং দাড়ী লম্বা কর।”
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم جزوا الشوارب وارخوا اللحى خالفوا المجوس.
অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা মজূসীদের বিরোধিতা করে গোঁফ ছেটে ফেল ও দাড়ী লম্বা করো।” (মুসলিম)
عن زيد بن ارفم رضى الله عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال من لم ياخذ شاربه فليس منا.
অর্থঃ- “হযরত যায়িদ ইব্নে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি নিজ গোঁফ কাটেনা (ছোট করেনা) সে আমার উম্মত নয়।” (আহমদ, তিরমিযী, নাসায়ী)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, গোঁফ বা মোঁছ অধিক লম্বাও রাখা যাবেনা এবং সম্পূর্ণ চেছেও ফেলা যাবেনা বরং ছোট ছোট করে রাখতে হবে। উল্লিখিত হাদীছ শরীফের মর্ম বা উদ্দেশ্য এটাই।
কারণ, হাদীছ শরীফসমূহে গোঁফ বা মোঁছের ব্যাপারে যতগুলো শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, তার প্রত্যেকটির দ্বারাই গোঁফ ছেটে খাট বা ছোট করে রাখার নির্দেশ পাওয়া যায়। হলক্ব বা চেছে ফেলার নয়।
যেমন, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
মোঁছ কাট (1) قص الشاربতোমাদের মোঁছ ধর (খাট কর) (2) خذوا شواربكم মোঁছ কাট (3) جزوا الشوارب মোছঁ ভালরূপে ছোট কর (4) انهكوا الشوارب মোঁছ অধিক খাট কর (5) واحفوا الشوارب উল্লিখিত হাদীছ শরীফের একটির দ্বারাও গোঁফ বা মোঁছ حلق মুণ্ডন বা চেছে ফেলার প্রমাণ পাওয়া যায়না।
কারণ, গোঁফ বা মোঁছ সম্পূর্ণ চেছে ফেলায় আকৃতি বিকৃতি হয়, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম।
মহান আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আ’লামীন যখন হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে সিজ্দা না করার কারণে ইবলিসের গলায় লা’নতের তওক পরিয়ে জান্নাত থেকে বের করে দেন, তখন ইবলিস যে অঙ্গীকার করেছিল, তা কুরআন শরীফে এভাবে বর্ণিত হয়েছে,
ولامرنهم فليغيرن خلق الله ومن يتخذ الشيطن وليا من دون الله فقد خسر خسرانا مبينا.
অর্থঃ- “(ইবলিস শয়তানের অঙ্গীকার) আর আমি তাদের (বান্দাদের) আল্লাহ্ পাক-এর সৃষ্টিকৃত আকৃতি পরিবর্তন বা বিকৃত করার আদেশ করবো। (আল্লাহ্ পাক বলেন, এ ব্যাপারে) যারা আল্লাহ্ পাক ব্যতীত শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে, তারা প্রকাশ্য ক্ষতিগ্রস্তের অন্তর্ভুক্ত।” (সূরা নিসা/১১৯)
উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় “তাফসীরে বয়ানুল কুরআন” কিতাবের ২য় জিঃ ১৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
اور بھی تعلیم دونگا جس سے وہ اللہ تعالی کی بنائی ھوئی صورت کوبیگار اور یہ اعمال فاسقی سے ھے جیسے دارھی مند انا …….
অর্থঃ- “(ইবলিস বলেছিল) আমি আরো শিক্ষা দেব, যার কারণে তারা (মানুষেরা) আল্লাহ্ পাক-এর সৃষ্টিকৃত আকৃতি পরিবর্তন করবে। মূলতঃ এটা ফাসিকী কাজের অন্তর্ভুক্ত। যেমন দাড়ী মুণ্ডন করা ……..।” অর্থাৎ পুরুষের দাড়ী ও গোঁফ চেঁছে ফেলার কারণে মেয়ে লোকের সদৃশ হয়ে যায়।
অথচ পুরুষের জন্যে মেয়ে লোকের আকৃতি ও মেয়ে লোকের জন্যে পুরুষের আকৃতি ধারণ করা শরীয়তে সম্পূর্ণ হারাম করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন যে,
عن ابن عباس رضى الله عنهما قال لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم المتشبهين من الرجال بالنساء والمتشبهات من النساء بالرجال.
অর্থঃ- হযরত ইব্নে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ সকল পুরুষের প্রতি অভিসম্পাত (লা’নত) করেছেন, যারা মেয়ে লোকের আকৃতি ধারণ করে। অনুরূপ যে সকল মেয়ে লোক পুরুষের আকৃতি ধারণ করে, তাদের প্রতিও অভিসম্পাত বা লা’নত করেছেন।” (বুখারী)
তাই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন ও ইমাম মুজতাহিদগণের কেউ নিজ গোঁফ বা মোঁছ মুণ্ডন করতেননা। সকলেই গোঁফ বা মোঁছ ছোট ছোট করে রাখতেন।
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا راى رجلا طويل الشوارب يأخذ شفرة وسواكا فيضع السواك تحت الشارب ويقص عليه.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই কোন লম্বা মোঁছ বিশিষ্ট লোক দেখতেন, তখনই তিনি কেচি গ্রহণ করে মোঁছের নীচে মেছওয়াক রেখে মোঁছের বর্ধিতাংশ কেটে দিতেন।” (কাশফুল উম্মাহ)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, পুরুষের জন্যে তার “দাড়ী ও গোঁফ” চেঁছে ফেলার অর্থ হলো ইবলিস শয়তানকে অনুসরণ ও অনুকরণ করা আর মেয়ে লোকের আকৃতি ধারণ করা, যা শরীয়তে সুস্পষ্টভাবে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। যা গযব ও লা’নত প্রাপ্তির কারণ।
কেউ কেউ “احفاء” ইহ্ফা শব্দের উপর ভিত্তি করে বলে থাকে যে, মোঁছ হলক্ব বা চেছে ফেলাই সুন্নত। কারণ ইহ্ফা শব্দটি মুবালাগা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যার অর্থ হলো ভালরূপে মুণ্ডন করা।
তাদের এ কথাটি শুদ্ধ নয়, কারণ অধিকাংশ হাদীছ শরীফেই মোঁছ খাট করার কথা বলা হয়েছে। আর অনুসরণীয় মুহাদ্দিসীন-ই-কিরামগণ যেমন, হযরত ইব্নে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁদের কিতাবসমূহে ‘ইহ্ফা’ শব্দের অর্থ করেছেন অধিক খাঁট করা।
অতএব, ‘ইহ্ফা’ শব্দের লুগাতী অর্থ যদিও মুন্ডন করা, কিন্তু মোঁছের ক্ষেত্রে লুগাতী অর্থ গ্রহণযোগ্য হবেনা। বরং মুহাদ্দিসগণের ইস্তিলাহী অর্থই গ্রহণযোগ্য অর্থাৎ এখানে ইহ্ফা শব্দের অর্থ হলো, অধিক খাট করা। তাছাড়া মুবালাগা হিসেবে ‘ইহ্ফা’ শব্দের অর্থ বারবার বা বেশী বেশী খাট করাও হয়। গোঁফ বা মোঁছের শরয়ী পরিমাপ ও আহকাম এ প্রসঙ্গে ‘মিশকাত শরীফের’ বিখ্যাত ফার্সী শরাহ্ “আশয়াতুল লুময়াত” কিতাবের ১ম জিঃ ২২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
یکے ازان دہ خصلت کوتاہ کردن سنت است وشارب نام موئیا است ہبرلب بالااست ومختار کوتاہ کردن انھاست وپست کر دن انھا چنانکہ پیدا گرددطرف لب وپست کردن انھا چنانکہ اثر ازان بماند. وحلق کردن وکروہ است.
অর্থঃ- “হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণের দশটি সুন্নতের মধ্যে একটি হলো মোঁছ বা গোঁফ কাটা। উপরের ঠোটের উপরিভাগে যে লোম বা কেশ উঠে, এটাকে মোঁছ বা গোঁফ বলে। গ্রহণযোগ্য বা মুখতার মত হলো গোঁফ বা মোঁছ খাট বা ছোট করে রাখবে, তা এরূপভাবে খাট করে রাখবে, যেন ঠোটের প্রান্ত দেখা যায়। অর্থাৎ এ পরিমাণ খাট করবে, যেন মোঁছের চিহ্ন পরিস্ফুটিত থাকে। আর মোঁছ সম্পূর্ণ (حلق) বা মুণ্ডন করে ফেলা মাকরূহ্ তাহ্রীমী।”
উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে,
واحفاء پست کردن موئے لب است. واخفلاف در حد “احفاء” است کم چہ مقداراست. وروایت کردہ شدہ است ازامام ابو حنیفۃ رحمہ اللہ تعالی کہ شارب بمقدار ابرو باید.
অর্থঃ- “(হাদীছ শরীফে বর্ণিত) (احفاء) “ইহ্ফা” শব্দের অর্থ হলো খাট করা। মোঁছ বা গোঁফ খাট করার পরিমাণের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। তবে ইমামে আ’যম, হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মত হলো, মোঁছ বা গোঁফ চোখের ভ্রুর ন্যায় রাখবে।”
বিখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত মূল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর প্রসিদ্ধ কিতাব “মিরকাত শরীফের” ১ম জিঃ ৩০১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
(قص الشارب) قال ابن حجر فيسن احفائه حتى تبدو حمرة الشفة العليا ولايحفه من اصله والامر باحفائه محمول على ما ذكر واخرج بقصه حلقه فهو مكروه وقيل حرام لانه مثلة.
অর্থঃ- “ইব্নে হাজর রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মোঁছ বা গোঁফ এ পরিমাণ খাট করা সুন্নত, যাতে ঠোটের লালিমা প্রকাশ পায়। মোঁছ মূল থেকে মুণ্ডন করবেনা। মোঁছ খাট করার ব্যাপারে হাদীছ শরীফে “ইহ্ফা” শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ উপরে আলোচনা করা হয়েছে।
অন্য হাদীছ শরীফে (قص) ক্বাচ্ছুন শব্দ এসেছে, এর অর্থও খাট করা। যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মোঁছ সম্পূর্ণ মুণ্ডন করে ফেলা মাকরূহ্ তাহ্রীমী। কেউ কেউ হারামও বলেছেন, কেননা মোঁছ মুন্ডন করার কারণে (মোছলা) অর্থাৎ আকৃতি বিকৃতি হয়।
ফিক্বাহ্র বিখ্যাত কিতাব “ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে” উল্লেখ আছে যে,
ويأخذ من شاربه حتى يصير مثل الحاجب وكذا فى الغياشية.
অর্থঃ- “চোখের ভ্রুর লোম পরিমাণ রেখে মোঁছ কেটে ফেলবে। অনুরূপ ‘গিয়াছিয়াতে’ উল্লেখ আছে।”
“বাহ্রুর রায়িক” কিতাবের ৮ম জিঃ ২০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وينبغى للرجل ان ياخذ من شاربه حتى يوازى الطرف العليا من الشفة ويصير مثل الحاجب.
অর্থঃ- “পুরুষের জন্যে ঊর্ধ্ব ওষ্ঠ প্রকাশ পায় এবং ভ্রুর লোম পরিমাণ রেখে মোঁছ কাটা উচিত।”
“তাহাবী শরীফের” ২য় জিঃ ৩৩৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
فالنظر على ذالك ان يكون كذالك حكم الشارب قصه حسن واحفائه احسن والفضل وهذا مذهب ابى حنيفة وابى يوسف ومحمد رحمهم الله تعالى.
অর্থঃ- “মোঁছ খাট করার ব্যাপারে হাদীছ শরীফের তাৎপর্য এই যে, মোঁছ খাট করা উত্তম, আর কিছু বেশী খাট করা অধিকতর ভাল ও উত্তম। এটাই ইমামে আ’যম হযরত আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম হযরত আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম হযরত মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মাযহাব বা মত।”
“গায়াতুল আওতার” কিতাবের ৪র্থ জিঃ ১৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
مجتبی میں ھے کہ مونچھوں کا مڈھنا بدعت ھے اور قول ضعیف یہ ھے کہ سنت ھے.
অর্থঃ- “মুজতবা” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, মোঁছ মুণ্ডন করা বিদ্য়াত। আর যারা মুন্ডন করা সুন্নত বলে, তাদের ক্বওল জঈফ বা দুর্বল। অর্থাৎ গ্রহণযোগ্য নয়।” অতএব, প্রমাণিত হলো যে, গ্রহণযোগ্য ও মুফতাবিহী মতানুসারে মোঁছ রাখার নিয়ম বা পদ্ধতি হলো, “মোঁছ চোখের ভ্রুর ন্যায় খাট রাখবে। মোঁছ সম্পূর্ণ চেছে ফেলা অধিকাংশের মতে মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্, আর কারো কারো মতে হারাম।” মোঁছ ভিজা পানি পান করার হুকুম “অনেকের ধারণা গোঁফ বা মোঁছ ভিজা পানি পান করা মাকরূহ্ বা নিষিদ্ধ, যার কারণে অনেকে মোঁছ সম্পূর্ণ চেছে ফেলে।”
তাদের এ ধারণা সম্পূর্ণই ভুল। কারণ শরীয়ত তথা ফিক্বাহ্র নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবেই এ ধরণের কোন কথাই উল্লেখ নেই। বরং মোঁছ ভিজা পানি পান করা সম্পূর্ণ জায়িয ও হালাল। তাছাড়া মোঁছ যতই চেছে ফেলা হোক না কেন তার চিহ্ন অবশ্যই কিছুনা কিছু অবশিষ্ট থাকবে। কাজেই কোন অবস্থাতেই মোঁছ ভিজানো ছাড়া পানি পান করা সম্ভব নয়। অতএব, এরূপ ভুল ধারণা বা রসমের বশবর্তী হয়ে মোঁছ চেছে ফেলা জায়িয নয় বরং মোঁছ সম্পূর্ণ চেছে ফেলা মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ যেটা উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। {দলীলসমূহঃ (১) আহ্কামুল কুরআন জাস্সাস, (২) কুরতুবী, (৩) মাযহারী, (৪) রুহুল বয়ান, (৫) রুহুল মায়ানী, (৬) খাযিন, (৭) বাগবী, (৮) তাবারী, (৯) কবীর, (১০) ইবনে আব্বাছ, (১১) ইবনে কাছীর, (১২) দুররে মনছূর, (১৩) তাফসীরে ফতহুল ক্বাদীর, (১৪) যাদুল মাছীর, (১৫) শায়খ যাদাহ্, (১৬) আহমদী, (১৭) বয়ানুল কুরআন, (১৮) বুখারী, (১৯) মুসলিম, (২০) আবূ দাউদ, (২১) আহমদ, (২২) তিরমিযী, (২৩) নাসাঈ, (২৪) ইবনে মাজাহ, (২৫) ইবনে হাব্বান, (২৬) মিশকাত, (২৭) ফতহুল বারী, (২৮) উমদাতুল ক্বারী, (২৯) শরহে কিরমানী, (৩০) তাইসীরুল বারী, (৩১) শরহে নববী, (৩২) ফতহুল মুলহিম, (৩৩) মুফহিম, (৩৪) তুহ্ফাতুল আহওয়াযী, (৩৫) মিরকাত, (৩৬) আশয়াতুল লুময়াত, (৩৭) লুময়াত, (৩৮) শরহুত্ ত্বীবী, (৩৯) তালীকুছ্ ছবীহ্, (৪০) কাশফুল গুম্মাহ্, (৪১) তাহাবী, (৪২) গায়াতুল আওতার, (৪৩) আলমগীরী, (৪৪) বাহরুর রায়িক, (৪৫) ফতহুল ক্বাদীর, (৪৬) আইনুল হিদায়া, (৪৭) গিয়াছিয়া, (৪৮) মুজতবা, (৪৯) নিহায়া ইবনুল আছীর, (৫০) লুগাতুল হাদীছ ইত্যাদি}