খুবাইব আহমদ, পূর্ব গোড়ান, ঢাকা।
সুওয়াল: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকে পবিত্র কুরবানী দেয়ার হুকুম সম্পর্কে জানতে চাই।
জাওয়াব: পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ حَنَشٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ رَاَيْتُ حَضْرَتْ عَلِيًّا عَلَيْهِ السَّلَامُ يُضَحِّىْ بِكَبْشَيْنِ فَقُلْتُ لَهٗ مَا هٰذَا فَقَالَ اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوْصَانِـىْ اَنْ اُضَحِّىَ عَنْهُ فَانَا اُضَحِّىْ عَنْهُ.
অর্থ : “হযরত হানাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে দুটি দুম্বা কুরবানী করতে দেখলাম এবং জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কি? (দুটি কেন?) জবাবে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে ওছিয়ত মুবারক করে গিয়েছেন যে, আমি যেন উনার পক্ষ হতে পবিত্র কুরবানী করি। সুতরাং আমি উনার পক্ষ থেকে (একটি) পবিত্র কুরবানী করতেছি।” (আবূ দাঊদ শরীফ ২য় খণ্ড ২৯ পৃষ্ঠা, তিরমিযী শরীফ ১ম খণ্ড ১৮০ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ১২৮ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে এটা স্পষ্ট যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে কুরবানী করার জন্য ওছিয়ত মুবারক করলেন।
এখন ফিকিরের বিষয় হচ্ছে, সাধারণ একজন উম্মত যদি তার সন্তানদেরকে ওছিয়ত করেন তাহলে সন্তানের জন্য তা মান্য করা ফরয-ওয়াজিব হয়ে যায়। সন্তান যদি সামর্থ থাকা সত্ত্বেও সে ওছিয়ত পূর্ণ না করে তাহলে শরীয়ত অনুযায়ী গুনাহগার সাব্যস্ত হবে।
একজন পিতার ওছিয়ত পালন না করলে সন্তান যদি গুনাহগার হয় তাহলে হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ওছিয়ত মুবারক পালন না করলে তা কত ভয়াবহ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কাজেই যিনি নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, যিনি সমস্ত বাবারও বাবা! মহান আল্লাহ পাক উনার পরে যিনি মর্যাদা বা মাক্বাম মুবারক উনার অধিকারী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে ওছিয়ত মুবারক করলেন, উক্ত ওছিয়ত মুবারক পালনের গুরুত্ব কত বেশি এবং তা পালন না করলে উম্মতের কত কঠিন ও বড় গুনাহ হবে তা উম্মত মাত্রই সকলকে উপলব্ধি করে ফরয হিসেবে উনার সম্মানিত নাম মুবারকে কুরবানী করতে হবে। কেননা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْـهَوٰى. اِنْ هُوَ اِلَّا وَحْىٌ يُّوْحٰى.
অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী ব্যতীত কোন কথা বলে না, কোন কাজ করেন না।” (পবিত্র সূরা নজম শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ, ৩-৪)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উক্ত ওছিয়ত মুবারক মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকেই করা হয়েছে।
এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয়- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে ওছিয়ত মুবারক করেছেন। আর হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন-
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি হযরত খুলাফায়ে রশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি আশারায়ে মুবাশশরা উনাদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি ইমামুল আউয়াল মিন আহলে বাইতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। একসাথে অনেক কিছু।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত সুন্নত বা আদর্শ মুবারক পালন করা ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়েছে। আর হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজজাহূ আলাইহিস সালাম তিনি হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত চতুর্থ খলীফা।
সুতরাং হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজজাহূ আলাইহিস সালাম উনার আদর্শ মুবারক- “প্রতি বছর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ একটি এবং থেকে নিজের তরফ থেকে একটি কুরবানী করা” এই সম্মানিত আদর্শ মুবারক প্রতিটি মুসলমানের মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরতে হবে অর্থাৎ দৃঢ়তার সাথে দায়িমীভাবে অনুসরণ করতে হবে।
তাছাড়া নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতের পক্ষ থেকে কুরবানী দিতেন। তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে কুরবানী করার সুমহান দায়িত্ব স্বাভাবিকভাবেই উম্মতের উপরও বর্তায়। এই ব্যাপারে চু-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করার কোন অবকাশই নেই। তাই উম্মতের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে চরম পরম মুহব্বত ও আনুগত্যতার সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে কুরবানী করা। এ কুরবানী তার নিজের কুরবানী কবুল হওয়ারও ওছীলা স্বরূপ।
মুহম্মদ ইবনে মনিরুজ্জামান, বগুড়া
সুওয়াল: সম্প্রতি করোনা অজুহাতে মসজিদে জামায়াত সীমিত করা অর্থাৎ পাঞ্জেগানা নামাযে ৫ জন এবং জুমুয়ার নামাযে ১০ জন মুছল্লীকে নামায পড়ার এবং কাতারের মাঝখানে দূরত্ব বজায় রেখে দাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়। এটা কতখানি শরীয়ত সম্মত?
জাওয়াব: সুওয়ালে উল্লেখিত বিষয়টি সম্পূর্ণরুপেই সম্মানিত শরীয়ত তথা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার খিলাফ বা বিরোধী এবং সুস্পষ্ট কুফরীর শামিল।
মূলত: মসজিদে জামায়াতের জন্য ৫ জন অথবা ১০ মুছল্লীকে নির্দিষ্ট করার অর্থই হচ্ছে প্রকারান্তরে মসজিদে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করা, নিরুৎসাহিত করা, নিষেধ করা। নাউযুবিল্লাহ! এ বিষয়ে যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই উনার নাযিলকৃত সম্মানিত কিতাব পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্ট ফায়সালা জানিয়ে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللّٰـهِ أَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهٗ وَسَعٰى فِيْ خَرَابِهَا ۚ أُولٰـئِكَ مَا كَانَ لَـهُمْ أَنْ يَّدْخُلُوْهَا إِلَّا خَائِفِيْنَ ۚ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَّلَهُمْ فِي الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
অর্থ: ঐ ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে? যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত মসজিদসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার নাম মুবারক উচ্চারণ করতে নিষেধ করে এবং সেগুলোকে উজাড় বা বিরান করার চেষ্টা করে। তাদের জন্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় অর্থাৎ খালিছ তওবা ইস্তিগফার করা ব্যতিত মসজিদে প্রবেশ করা জায়িয নেই। তাদের জন্য রয়েছে ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি। (পবিত্র সূরা বাকারা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ১১৪)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার আলোকে প্রতিভাত যে, মসজিদে জামায়াতের জন্য ৫ জন কিংবা ১০ জন মুছল্লী সীমিত বা নির্দিষ্ট করার ব্যাপারে যারা নির্দেশনা দিয়েছে, সম্মতি দিয়েছে, জারি করেছে, প্রত্যেকেই ঈমানহারা হয়ে কাফির, মুনাফিক ও মুরতাদে পরিণত হয়েছে। সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মুরতাদের ফায়ছালা হচ্ছে, তাদের জীবনের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে গেছে, বিবাহ করে থাকলে তা বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় সন্তান হলে উক্ত সন্তান অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। হজ্জ করে থাকলে তাও বাতিল হয়ে গেছে। ওয়ারিশসত্ত্ব থেকে বঞ্চিত হবে এবং মারা গেলে তাদের গোসল, কাফন, দাফন, জানাযা কোনটাই করা যাবে না এবং মুসলমানদের কবরস্থানেও তাদেরকে দাফন করা যাবে না। বরং তাদেরকে কুকুর, শৃগালের ন্যয় গর্ত করে মাটিতে পূতে রাখতে হবে। নাউযুবিল্লাহ!
শুধু তাই নয়, মুরতাদের গোসল, কাফন, দাফন ও জানাযায় যে বা যারা শরীক হবে তাদের প্রতিও মুরতাদের হুকুম বর্তাবে। নাউযুবিল্লাহ! মুরতাদের তওবার জন্য সময়সীমা ৩ দিন। এর মধ্যে তওবা করলে তওবা গ্রহণযোগ্য হবে। অন্যথায় খিলাফত ব্যবস্থাপনায় তাদের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদ-। বর্তমানে পৃথিবীতে যেহেতু কোথাও খিলাফত ব্যবস্থা নেই তাই মহাসম্মানিত শরীয়ত উনার হুকুম জারী করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে যারা এ সমস্ত কুফরী ও শিরকী আক্বীদা পোষণ করেছে ও আমল করেছে তাদেরকে অবশ্যই এই সমস্ত কুফরী ও শিরকী আক্বীদা ও আমল থেকে খালিছ তওবা ইস্তিগফার করতে হবে। অন্যথায় ইন্তিকালের পর কঠিন আযাবে-গযবে তারা গ্রেফতার হবে। নাউযুবিল্লাহ!
অনুরূপ কাতারের মাঝখানে দূরত্ব বজায় রেখে অর্থাৎ ফাঁক ফাঁক করে দাঁড়ানোর নির্দেশনাও সম্মানিত শরীয়ত উনার বিধানের খিলাফ বা বিরোধী যা কুফরীর শামিল। এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ مَرْفُوْعًا أَقِيْمُوا الصُّفُوْفَ وَحَاذُوْا بَيْنَ الْمَنَاكِبِ وَسُدُّوا الْـخَلَلَ وَلِيْنُوْا بِأَيْدِيْ إِخْوَانِكُمْ وَلَا تَذَرُوْا فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ وَمَنْ وَّصَلَ صَفًّا وَّصَلَهُ اللهُ وَمَنْ قَطَعَهٗ قَطَعَهُ اللهُ
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে মরফূ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা নামাযের সারি বা কাতারসমূহ সোজা করবে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমান্তরাল করবে তথা সমান করবে, (কাতারের) ফাঁক পূরণ বা বন্ধ করবে এবং তোমাদের ভাইদের প্রতি বিনম্র হবে। তোমরা শয়তানের জন্য কাতারের মধ্যে ফাঁক রাখবে না। যে ব্যক্তি কাতার মিলাবে মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি তাকে মিলিয়ে দিবেন এবং যে ব্যক্তি কাতার কর্তন করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে কর্তন করে দিবেন।” (আবূ দাউদ, শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ اُقِيْمَتِ الصّلَاةُ فَاَقْبَلَ عَلَيْنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِوَجْهِهٖ فَقَالَ اَقِيْمُوْا صُفُوْفَكُمْ وَتَرَاصُّوْا فَاِنِّىْ اَرَاكُمْ مِنْ وَّرَاءِ ظَهْرِىْ.
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বর্ণনা করেন; একদা নামাযের ইকামত দেয়া হচ্ছে এমন সময় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের দিকে ফিরে বললেন, তোমরা তোমাদের কাতারগুলো সোজা কর আর তোমরা পরস্পরে মিলে দাঁড়াও কেননা আমি আমার পেছন দিক থেকেও তোমাদেরকে দেখতে পাই।” (বুখারী শরীফ)
অপর এক বর্ণনায় ইরশাদ মুবারক হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরছালীন ইমামুল মুরছালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
سَوُّوْا صُفُوْفَكُمْ وَحَاذُوْا بَيْنَ مَنَاكِبِكُمْ وَلِيْنُوْا فِيْ أَيْدِيْ إِخْوَانِكُمْ وَسُدُّوا الْخَلَلَ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ بَيْنَكُمْ بِـمَنْزِلَةِ الْحَذَفِ يَعْنِيْ أَوْلَادَ الضَّأْنِ الصِّغَارِ.
অর্থ: “তোমরা নামাযের সারি বা কাতারসমূহ সোজা করবে, তোমাদের বাহুসমূহকে একে অপরের সাথে মিলিয়ে রাখবে এবং তোমাদের ভাইদের হাতে নরম থাকবে, এবং তোমাদের মধ্যকার ফাকসমূহ বন্ধ করবে কেননা শয়তান তোমাদের মধ্যে ছোট কালো ভেড়ার বাচ্চার ন্যায় প্রবেশ করে। (আহমদ শরীফ)
قَوْلُهٗ ( وَسُدُّوا الْـخَلَلَ) أَيِ الْفَرْجَ رَوَى الْبَزَّارُ بِإِسْنَادِ حَسَنٍ عَنْهُ صَلَى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سَدَّ فُرْجَةً فِـي الصَّفِّ غُفِرَ لَهٗ
অর্থ: কাতারের মধ্যকার ফাঁকসমূহ বন্ধ করো অর্থাৎ বাজ্জারগ্রন্থে হাসান সনদে হাদীছ শরীফখানা বর্ণিত হয়েছে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- যে ব্যক্তি কাতারের ফাঁকসমূহ বন্ধ করবে তাকে ক্ষমা করা হবে।
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ সমূহ উনাদের বর্ণনার ভিত্তিতে ফায়ছালা হচ্ছে, কাতার সোজা করা এবং কাতারের মাঝখানে ফাঁক না রেখে পরস্পর মিলিয়ে দাঁড়ানো ওয়াজিব। যেমন এ প্রসঙ্গে বুস্তানুল আহবার মুখতাছারু নাইলিল আওতার কিতাব ৯৭/২ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-
اِنَّ تَسْوِيَةَ الصُّفُوْفِ وَاجِبَةٌ
অর্থ: নিশ্চয়ই কাতার সোজা করা ওয়াজিব।
একইভাবে উমদাতুল ক্বারী শরহু ছহীহিল বুখারী ৪৫৭/৮ পৃষ্ঠায় تَرَاصُّوْا শব্দের ব্যাখায় উল্লেখ রয়েছে-
فَوَجَبَ الْإِدْغِامُ وَمَعْنَاهَا تَضَامُّوْا وَتَلَاصَقُوْا حَتّٰـى يَتَّصِلَ مَا بَيْنَكُمْ وَلَايَنْقَطِعُ وَأَصْلُهٗ مِنَ الرَّصِّ يُقَالُ رَصَّ الْبِنَاءَ يَرُصُّهٗ رَصًّا إِذَا لَصِقَ بَعْضُهٗ بِبَعْضٍ
অর্থাৎ কাতার মিলানো ওয়াজিব আর এর অর্থ হচ্ছে তোমরা পরস্পর লাগালাগি হয়ে এবং মিলিত হয়ে দাঁড়াও যাতে মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের মাঝে সংযোগ স্থাপন করে দেন। আর তিনি বিচ্ছেদ ঘটান না। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত تَرَاصُّوْا শব্দটির মূল হচ্ছে رَصٌّ শব্দটি। যেমন বলা হয়, ভবনটি মিলিয়ে এমনভাবে স্থাপন করেছে যেন এক অংশ অপর অংশের সাথে মিলিত রয়েছে।
“ফাইযুল কাদীর শারহু জামিয়িছ ছগীর” কিতাবের ২য় খন্ডের ২৬৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(وَمَنْ سَدَّ فُرْجَةً) بِضَمِّ أَوَّلِهٖ خَلَلًا بَيْنَ الْـمُصَلِّيْنَ فِـيْ صَفٍّ …… وَهٰذَا وَارِدٌ عَلٰى مَنْهَجٍ تَأَكَّدَ سَدُّ الْفُرَجِ فِـي الصُّفُوْفِ وَكَرَاهَةٌ تَرْكُهَا…
অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, (“যে ব্যক্তি কাতারের মাঝখানে ফাঁক বন্ধ করবে”) অর্থাৎ কাতারে মুছল্লিদের মাঝে ফাঁক বন্ধ করবে ….. এ সংক্রান্ত বর্ণিত হাদীছখানা তা’কীদের জন্য এসেছে। তাই কাতারের মধ্যে ফাঁক বন্ধ না করলে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে।” (মাছাবীহুত তানবীর আলা ছহীহিল জামিয়িছ ছগীর)
আর নামায মাকরূহ তাহরীমী হলে নামায দোহরানো ওয়াজিব।
যেমন, বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১০৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
فَاِنْ كَانَتْ تِلْكَ الْكَرَاهَةُ كَرَاهَةُ تَـحْرِيـْمٍ تَـجِبُ الْاِعَادَةُ
অর্থ: “আর যদি নামাযের মধ্যে মাকরূহটা, মাকরূহে তাহরীমী হয়, তাহলে নামায দোহরানো ওয়াজিব।”
কাজেই, করোনা অজুহাতে মসজিদে জামায়াত সীমিত করা এবং কাতারের মাঝখানে দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া উভয়ই কুফরী। যারা এরূপ নির্দেশনা দিয়েছে এবং বাস্তবায়ন করেছে, সংশ্লিষ্ট সকলকে খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। একইভাবে যারা কাতার ফাঁক করে নামায পড়েছে, তাদেরকেও তওবা করতে হবে এবং তাদের সেই নামাযগুলো দোহরিয়ে পড়তে হবে।
মুহম্মদ মাছুম বিল্লাহ, শান্তিবাগ, ঢাকা
সুওয়াল: দৈনিক ইনকিলাব ৫ নভেম্বর ২০১৯ ঈসায়ী তারিখে প্রকাশিত পত্রিকায় এক প্রশ্নোত্তরে বলা হয়েছে, ছলাতুল বিতর ৩ রাকায়াত পড়া হলে দ্বিতীয় রাকায়াতে বসা যাবে না। এটা কতটুকু সঠিক?
জাওয়াব: উক্ত প্রশ্নোত্তরে যা বলা হয়েছে, তা মোটেও সঠিক নয় বরং চরম বিভ্রান্তিকর ও গোমরাহী।
উল্লেখ্য, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণ করেই নাযিল করা হয়েছে। আর সে আলোকেই আরবাআয়ে আদিল্লাহ তথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের সমন্বিত দলীলসমূহের ভিত্তিতে হানাফী মাযহাবে প্রতিটি বিষয়ে চূড়ান্ত ফায়ছালা বা সমাধান বা মাসয়ালা প্রদান করা হয়েছে।
কাজেই, কেউ যদি সম্মানিত হানাফী মাযহাবের মুকাল্লিদ বা অনুসারী হয়ে থাকে তাকে ৩ রাকায়াত বিতর নামায পড়তে হবে এবং ছলাতুল মাগরিবের ন্যায় দু বৈঠকে নামায শেষ করতে হবে। অর্থাৎ দু’ রাকায়াতের পর বসে তাশাহ্হুদ পড়ার পর উঠে তৃতীয় রাকায়াত পড়ার পর বসে যথা নিয়মে তাশাহহুদ, দুরূদ শরীফ ও দুআ মাছূরা পড়ে ডানে-বামে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করতে হবে। এটাই হচ্ছে সম্মানিত হানাফী মাযহাব মুতাবিক ছলাতুল বিতর পড়ার একমাত্র নিয়ম। এর বিপরীত বিতর পড়ার যে নিয়ম রয়েছে তা মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে। যা কেবল লা-মাযহাবীরাই অনুসরণ করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ বিষয়ে দলীলসহ বিস্তারিত জানতে হলে পাঠ করুন যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২২৫তম সংখ্যা সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ।
মুহম্মদ কামরুল হাসান, শহীদবাগ, ঢাকা
সুওয়াল: দৈনিক যুগান্তর ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে প্রকাশিত পত্রিকায় নারীদের চেহারা সতরের অন্তর্ভুক্ত কি না? এর উত্তরে এক-দুটি তাফসীর ও ফিক্বাহর কিতাবের উদ্ধৃতি এনে মহিলাদের চেহারা সতরের অন্তর্ভুক্ত নয় বলার চেষ্টা করেছে। নাউযুবিল্লাহ! এ বিষয়ে সঠিক জাওয়াব জানতে চাই।
জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَالَّذِىْ خَبُثَ لَا يَـخْرُجُ اِلَّا نَكِدًا
অর্থাৎ হারাম থেকে হারামই বের হয়। (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৮)
যার কারনে পৃথিবীর সমস্ত দেশ থেকে পঠিত একমাত্র আন্তর্জাতিক পত্রিকা দৈনিক আল ইহসান শরীফ ব্যতীত বাকী সমস্ত দৈনিক পত্রিকা হারাম ও অশ্লীল ছবি এবং সম্মানিত শরীয়ত বিরোধী খবর ও বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!
কাজেই, উক্ত পত্রিকাতে শরীয়ত বিরোধী ফতওয়া বা মাসয়ালা প্রকাশ বা পত্রস্থ করা হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই মুসলমানদের জন্য উক্ত পত্রিকা পড়াটাই জায়িয নয়। আর উক্ত পত্রিকার মাসয়ালা গ্রহণ করাটাতো পরের বিষয়।
মূলতঃ উক্ত পত্রিকা ও তার সমজাতীয় পত্রিকাগুলির মধ্যে প্রকাশিত ফতওয়া বা মাসয়ালাসমূহ অশুদ্ধ, ভুল ও বিভ্রান্তিকর। আর উক্ত পত্রিকাগুলিতে যারা ফতওয়া বা মাসয়ালা প্রদান করে থাকে, দেখা গেছে, তারা সকলেই উলামায়ে সূ। যাদেরকে অনুসরণ করার ব্যাপারে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে নিষেধ করা হয়েছে।
কাজেই, ফতওয়া বা মাসয়ালা অনুসরণ বা গ্রহণ করতে হবে যারা উলামায়ে হক্কানী-রব্বানী উনাদের। আর এ উদ্দেশ্যেই যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ এবং দৈনিক আল ইহসান শরীফ পত্রিকায় প্রকাশিত ফতওয়া বা মাসয়ালা বা লিখনী অনুসরণ ও গ্রহন করতে হবে। কেননা উক্ত তাজদীদী মুখপত্র সমূহে প্রকাশিত প্রতিটি বিষয়ই সঠিক, নির্ভুল ও দলীলসম্মতভাবে প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
সুতরাং মহিলাদের চেহারা সতরের অন্তর্ভুক্ত এটাই হচ্ছে সঠিক ও নির্ভুল ফতওয়া এবং পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ সম্মত ফতওয়া। এর বিপরীত হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ বা বিরোধী ফতওয়া।
দলীলসমূহ: তাফসীরে আহকামুল কুরআন জাসসাস, তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে খাযিন, তাফসীরে বাগবী, তাফসীরে ত্ববারী, তাফসীরে যাদুল মাসীর, তাফসীরে বায়দ্বাবী, তাফসীরে নাযমুদ দুরার, তাফসীরে আহমদিয়াহ, তাফসীরে ফাতহুল ক্বাদীর, তাফফীরে মাযহারী, তাফসীরে জালালাইন, তাফসীরে কামালাইন, তাফসীরে দুররে মানছূর, বুখারী, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ, দারিমী, বাইহাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, কানযুল উম্মাল, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ, মুযাহিরে হক, মিররাতুল মানাযীহ ইত্যাদি।
মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
সুওয়াল: অনুগ্রহপূর্বক নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দিয়ে উপকৃত করবেন।
(১) কেউ যদি কারো অনুপস্থিতে নিজ স্ত্রীর খেয়াল না করে তালাক দিলাম, তালাক দিলাম বলে। আর বলা অবস্থায় নিজ স্ত্রীর দিকে খেয়াল এসে যায় তাতে কি তালাক হবে?
(২) কেউ তার স্ত্রীর সাথে কম কথা বার্তা বলায় অন্য কেউ বললো, কথা-বার্তা বলিস না কেন? যাবে গা। এমতাবস্থায় স্বামী যদি রাগান্তিত হয়ে বলে, যাগ গা বা গেলে যাগ গা। আর স্ত্রী সেখানে অনুপস্থিত থাকে। এতে কি তালাক হবে?
(৩) স্ত্রীর বাড়িতে গমনেচ্ছুক কাউকে যদি স্বামী বিবাহ বিচ্ছেদের নিয়তে বলে যে, গিয়ে বলবেন, আর পারবো না বা পারতো না (সন্দেহ কোনটি বলেছে)। আর সে না বলে থাকে। এতে কি তালাক হবে?
(৪) দীর্ঘদিন যাবৎ স্বামী স্ত্রীকে তার বাড়ী হতে আনতে না যাওয়ায় স্ত্রী যদি ফোনে বলে, এখন কি করবেন? উত্তরে স্বামী যদি স্ত্রীকে বলে, তোমার ইচ্ছা। স্বামীর নিয়তে থাকে, তুমি ইচ্ছা হয় আসতেও পারো বা তালাকও গ্রহণ করতে পারো। এতে কি তালাক হবে?
জাওয়াব: (১) তালাক দেয়ার জন্য কারো উপস্থিত থাকা শর্ত নয়। আর তালাক দিলাম, তালাক দিলাম বলা অবস্থায় নিজ আহলিয়ার (স্ত্রীর) খেয়াল করলে বা খেয়াল এসে গেলে আহলিয়া বা স্ত্রীর প্রতি তালাক পতিত হবে না। নিয়ত থাকতে হবে অন্যথায় তালাক হবে না। এখন যতবার তালাক দিলাম তালাক দিলাম কথাটি উচ্চারণ করবে ততো তালাক পতিত হবে। যদি এক তালাকের নিয়তে তালাক তালাক অনেকবার বলে তাকিদের উদ্দেশ্যে তাহলে এক তালাক পতিত হবে। আর যদি একাধিক তালাকের নিয়তে বলে তাহলে যত তালাকের নিয়তে বলবে তত তালাক পতিত হবে।
এক বা দু’ তালাক রেজয়ী পতিত হলে ইদ্দতের মধ্যে বিনা তাহলীলে ও বিনা বিবাহ দোহরানে ফিরিয়ে নিতে পারবে। এক তালাক বা দুই তালাক বাইন হলে বিনা তাহলীলে শুধুমাত্র বিবাহ দোহরায়ে নিতে পারবে। আর তিন তালাক পতিত হলে বিনা তাহলীলে ফিরিয়ে নিতে পারবে না অর্থাৎ তিন তালাকপ্রাপ্তা আহলিয়া ইদ্দতের পর অপর কোন লোকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে উক্ত ব্যক্তি তালাক দিলে অথবা ইন্তিকাল করলে ইদ্দত অতিবাহিত হওয়ার পর উক্ত আহলিয়া রাজি থাকলে তখন প্রথম আহাল বা স্বামী তাকে পূনরায় বিবাহ করতে পারবে। অন্যথায় নয়।
(২) না, উক্তরূপ কথায় তালাক হবে না।
(৩) আহলের উক্ত কথায় আহলিয়ার প্রতি তালাক পতিত হবে। এক্ষেত্রে বিবাহ না দোহারানো ব্যতীত আহলিয়াকে গ্রহণ করতে পারবে না যদি বাইন তালাক হয়। আর রেজয়ী তালাক হলে বিবাহ দোহরানো ব্যতিত নিতে পারবে।
(৪) আহালের উক্ত কথায় আহলিয়া যদি তালাক গ্রহণ করে তাহলে তালাক হয়ে যাবে। আর যদি তালাক গ্রহন না করে আহালের বাড়িতে চলে যায় তাহলে তালাক হবে না।
উম্মে মুবাশশিরাহ, শেরপুর, বগুড়া
সুওয়াল: মুছাফাহা ও মুআনাকা করার হুকুম কি? করোনার অজুহাতে মুছাফাহা-মুআনাকা করতে নিষেধ করা কতটুকু শরীয়তসম্মত?
জাওয়াব: মুছাফাহা ও মুআনাকা উভয়টি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার গুরুত্বপূর্ণ বিধান তথা সম্মানিত সুন্নতময় আমল মুবারকের অন্তর্ভুক্ত। তাই করোনার অজুহাতে মুছাফাহা ও মুআনাকা করতে নিষেধ করাটা সম্পূর্ণরূপে শরীয়ত বিরোধী তথা স্পষ্ট হারাম ও কুফরী।
মুছাফাহা: স্মরণীয় যে, এক মুসলমানের সাথে আরেক মুসলমানের সাক্ষাৎ হলে সালাম বিনিময় করা যেমন সুন্নত তদ্রƒপ পরস্পর মুছাফাহা বা করর্মদন করাও সুন্নত। সাক্ষাতের প্রাক্কালে মুছাফাহা করার বিধান বা নিয়ম রয়েছে। আবার বিদায়কালেও মুছাফাহা করার ক্ষেত্রে বাধা নেই অর্থাৎ জায়িযই রয়েছে।
মুছাফাহা করার নিয়ম হচ্ছে, দুজনই উভয় হাত বাড়িয়ে মুছাফাহা করবে। এবং এ দুআ মুবারক বলবে- يَغْفِرُ اللهُ لَنَا অথবা غَفَرَ اللهُ لَنَا অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের ক্ষমা করুন।
এ নিয়মে মুছাফাহা করাটাই সুন্নত। এক হাতে মুছাফাহা করা সুন্নত মুবারক উনার খিলাফ তথা বিদআত। আর কাফির-মুশরিকদের হ্যান্ডশেকের সাথে সাদৃশ্য রেখে করা হলে তা কুফরী পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। নাউযুবিল্লাহ!
মুছাফাহা সম্পর্কে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْ مُسْلِمَيْنِ يَلْتَقِيَانِ فَيَتَصَافَحَانِ إِلَّا غُفِرَ لَهُمَا قَبْلَ أَنْ يَّفْتَرِقَا وَفِـىْ رِوَايَةِ اَبِـىْ دَاوٗدَ قَالَ اِذَا اِلْتَقَى الْـمُسْلِمَانِ فَتَصَافَحَانِ وَحَـمِدَا اللهَ وَاسْتَغْفَرَاهُ غُفِرَ لَـهُمَا
অর্থ: হযরত বারা ইবনে আঝিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন দুজন মুসলমানের পরস্পর সাক্ষাৎ ঘটে অতঃপর তারা মুছাফাহা করে, তারা পৃথক হওয়ার পূর্বেই তাদের গুণাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। সুবহানাল্লাহ!
আর আবূ দাউদ শরীফ উনার বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন দুজন মুসলমান মুছাফাহা করে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা করে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করে, তখন তাদের দুজনকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ ইত্যাদি)
মুআনাকা: আন্তরিক মুহব্বত, ভালবাসা, স্নেহ-মমতা, শ্রদ্ধা, সম্মান প্রকাশার্থে বন্ধু-বান্ধব, মান্যবর, ¯েœহধন্য কোন ব্যক্তির সাক্ষাৎ হলে তার সাথে মুআনাকা বা কোলাকুলি বা আলিঙ্গন করা। এটিও সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত।
মুআনাকা করার নিয়ম হচ্ছে, মুআনাকাকারী উভয়ে গলার দুদিকে মিলিয়ে মুআনাকা করবে। প্রথমে উভয়ের ডান দিক গলায় গলায় মিলাবে। এরপর একইভাবে বাম দিক মিলিয়ে পুনরায় ডান দিকে মিলিয়ে শেষ করবে। আর এ দুআ মুবারক বলবে-
اَللّٰهُمَّ زِدْ مُـحَبَّتِـىْ لِلّٰهِ وَرَسُوْلِهٖ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ঝিদ মুহাব্বাতী লিল্লাহি ওয়া রসূলিহ।
অর্থ: আয় মহান আল্লাহ পাক! আমার মুহব্বত আপনি বৃদ্ধি করে দিন মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারকের জন্য। (তিরমিযী শরীফ)
উক্ত নিয়মে মুআনাকা করাটাই সুন্নত।
কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
نَـهٰى رَسُوْلُ اللهِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍللهُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ وَﺳَﻠَّﻢَ عَنِ الْوُتَيْرَاءِ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছোট বিজোড় থেকে নিষেধ করেছেন।” (ইবনে আব্দিল বার) তাই, একবার অর্থাৎ এক হাতে মুছাফাহা করার ন্যায় একদিকে গলা মিলানো পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার পরিপন্থী।
উল্লেখ্য, কোন বিশেষ দিনে হোক আর বিশেষ দিন ছাড়া অন্য দিনেই হোক মুআনাকা করা জায়িয এবং পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার অর্ন্তভুক্ত।
মুআনাকা সম্পর্কে একাধিক পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়ছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْقَةِ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ قاَلَتْ قَدِمَ زَيْدُ بْنُ حَارِثَةَ الْـمَدِيْنَةَ وَرَسُوْلُ اللهِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍللهُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ وَﺳَﻠَّﻢَ فِـىْ بَيْتِىْ فَاَتَاهُ فَقَرَعَ الْبَابَ فَقَامَ اِلَيْهِ رَسُوْلُ اللهِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍللهُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ وَﺳَﻠَّﻢَ عُرْيَانًا يَـجُرُّ ثَوَبَهٗ وَاللهِ مَارَاَيْتُهٗ عُرْيَانًا قَبْلَهٗ وَلَابَعْدَهٗ فَاَعْتَنَقَهٗ وَقَبَّلَهٗ.
অর্থ: “হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত ঝায়িদ ইবনে হারিছাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মদীনা শরীফে আগমন করতঃ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে আমার হুজরা শরীফে আসলেন এবং দরজায় করাঘাত করলেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার হুজরা শরীফে ছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনাবৃত জিসিম মুবারকে চাদর টানতে টানতে উনার কাছে গেলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি উনাকে এর পূর্বে বা পরে কখনো অনাবৃত জিসিম মুবারকে দেখিনি। তিনি (মুহব্বতের আতিশয্যে) উনার সাথে মুআনাকা করলেন এবং উনাকে চুম্বন করলেন।” (তিরমিযী শরীফ)
প্রতিভাত যে, মুছাফাহা ও মুআনাকা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার অন্তর্ভুক্ত রহমতপূর্ণ, বরকতপূর্ণ ও মহাসম্মানিত সুন্নতময় দুটি আমল। প্রতিটি সুন্নতময় আমল অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে পালন করতে হবে। সম্মানিত সুন্নতময় আমল পালনের মধ্যেই উম্মতের জন্য ইহকালীন এবং পরকালীন রহমত, সুস্থতা, নাজাত ও কামিয়াবী নিহিত রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
সুন্নত মুবারক পালনের ব্যাপারে যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَـهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا ۚ وَاتَّقُوا اللهَ ۖ إِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
অর্থ: মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদের নিকট যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করো বা পালন করো এবং তিনি তোমাদেরকে যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাক। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠোর শাস্তিদাতা। (পবিত্র হাশর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা নিয়ে এসেছেন অর্থাৎ উনার মহান আদর্শ ও সুন্নত মুবারক যে অনুসরণ অনুকরণ করবে না, সে ঈমানদার নয়। (শরহুস সুন্নাহ, কিতাবুল হুজ্জাত, আরবাঈন, মিশকাত, মিরকাত ইত্যাদি)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لَوْ تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ لَكَفَرْتُمْ وَفِـىْ رِوَايَةٍ لَضَلَلْتُمْ
অর্থ: তোমরা যদি তোমাদের মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দাও বা অবজ্ঞা করো তাহলে অবশ্যই তোমরা কাফির হয়ে যাবে। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, অবশ্যই তোমরা গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। (মুসলিম শরীফ, নাসাঈ শরীফ, ইবনু মাজাহ শরীফ, মুসনাদে আহমদ, আবূ দাউদ শরীফ, ছহীহ ইবনু হিব্বান, সুনানুল কুবরা ইত্যাদি)
কাজেই, মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক পালন না করা, সুন্নত মুবারক তরক করা বা অবজ্ঞা করে ছেড়ে দেয়াই যেখানে ঈমানহারা, কাফির হওয়া, গোমরাহ হওয়া ও জাহান্নামের কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ, সেক্ষেত্রে করোনা গযব কিংবা অন্য কোন অজুহাতে মুছাফাহা ও মুআনাকার মতো খাছ সুন্নতময় আমল করতে নিষেধ করাটা অবশ্যই কাট্টা কুফরী এবং কাট্টা কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ। নাউযুবিল্লাহ! {দলীলসমূহঃ (১) বুখারী শরীফ, (২) মুসনাদে আহমদ, (৩) আবূ দাউদ শরীফ (৪) তিরমিযী শরীফ (৫) ইবনে মাজাহ শরীফ (৬) উমদাতুল ক্বারী, (৭) ফতহুল বারী, (৮) ইরশাদুস সারী, (৮) ফয়জুল বারী, (১০) তাইসীরুল ক্বারী, (১১) (১২) শরহে তিরমিযী, (১৩) শরহে নববী, (১৪) বজলুল মাজহুদ (১৫) মিরকাত, (১৬) আশয়াতুল লুময়াত, (১৭) লুময়াত, (১৮) শরহুত ত্বীবী, (১৯) তালীক্বুছ ছবীহ্, (২০) মুযাহিরে হক্ব, (২১) শরহুস্ সুন্নাহ্, (২২) মাকতুবাত শরীফ, (২৩) হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা (২৪) কিতাবুল হুজ্জাত, (২৫) আরবাঈন ইত্যাদি।}
মুহম্মদ মাহমুদ, জুম্মাহাট, উলিপুর, কুড়িগ্রাম।
সুওয়াল: পবিত্র কুরবানী উনার ফযীলত সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক।
জাওয়াব: পবিত্র কুরবানী উনার ফযীলত সম্পর্কে বহু পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ زَيدِ بْنِ اَرْقَمَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ اَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ! مَا هٰذِهِ الْاَضَاحِىُّ؟ قَالَ سُنَّةُ اَبِيْكُمْ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ الـسَّلاَمُ قَالُوْا فَمَا لَنَـا فِيْهَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ بِكُلِّ شَعْرَةٍ حَسَنَةٌ قَالُوْا فَالصُّوْفُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ بِكُلِّ شَعْرَةٍ مِّنَ الصُّوْفِ حَسَنَةٌ.
অর্থ : “হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই কুরবানী কি? তিনি জাওয়াবে বললেন, আপনাদের পিতা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সুন্নত। উনারা পূনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এতে আমাদের জন্য কি পরিমাণ নেকী রয়েছে? তিনি বললেন, পবিত্র কুরবানী উনার পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকী রয়েছে। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! পশমওয়ালা পশুর ক্ষেত্রে কি হুকুম? তিনি বললেন, পশমওয়ালা পশুর প্রত্যেকটি পশমের পরিবর্তেও একটি করে নেকী রয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عن حَضْرَتْ اَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِسْتَفْرَهُوْا ضَحَايَاكُمْ فَاِنَّهَا مَطَايَاكُمْ عَلَى الصِّرَاطِ
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন- তোমরা তোমাদের কুরবানীর পশুগুলো শক্তিশালী ও মোটা-তাজা দেখে নির্বাচন কর। কারণ এগুলো তোমাদের পুলসিরাতের উপর চড়ে যাওয়ার বাহন হবে।” (দাইলামী-মুসনাদুল ফিরদাউস ১/৮৫)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় উল্লেখ রয়েছে-
اَفْضَلُ الْعِبَادَاتِ يَوْمُ الْعِيْدِ عِرَاقَةُ دَمِ الْقُرْبَاتِ
অর্থ : “ঈদের দিন রক্ত প্রবাহিত করা সর্বশ্রেষ্ঠ আমল।” সুবহানাল্লাহ! (তুহফাতুল আহওয়াজী)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার দিনে বান্দার পবিত্র কুরবানী উনার পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই মহান আল্লাহ পাক তার গুণাহ মাফ করে দেন।” সুবহানাল্লাহ!
এক বর্ণনা মতে, পবিত্র কুরবানী উনার পশু কুরবানীদাতার নাজাতের ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করবে। (হাকিম ৪/২২২, বাযযার ২/৫৯, কাশফুল আসতার)
ফিরোজ আহমদ, মিরগঞ্জ, রংপুর।
সুওয়াল: কুরবানীর পশুর কোন কোন অংশ খাওয়া নাজায়িয?
জাওয়াব: পবিত্র কুরবানী বা হালাল পশুর ৮টি অংশ খাওয়া যাবে না। (১) দমে মাছফূহা বা প্রবাহিত রক্ত যা হারাম, (২) গুটলী বা গোদুদ খাওয়াও হারাম, (৩) অ-কোষ, (৪) মূত্রথলী, (৫) পিত্ত, (৬) ছোট ইস্তিঞ্জার রাস্তা বা লিঙ্গ, (৭) বড় ইস্তিঞ্জার রাস্তা বা গুহ্যদ্বার, এ ৭টি অংশ খাওয়া মাকরূহ তাহরীমী এবং (৮) শিরদাড়ার ভিতরের মগজ, এটা কেউ মাকরূহ তাহরীমী, আবার কেউ মাকরূহ তানযীহী বলেছেন। (শামী, মাতালিবুল মু’মিনীন, উমদাতুল কালাম, কিতাব- শাইখুল ইসলাম)
আসাদুয যামান, ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
সুওয়াল: আনজুমানে মুফিদুল ইসলামে কুরবানীর পশুর চামড়া বা চামড়া বিক্রির অর্থ প্রদান করা জায়িয হবে কি?
জাওয়াব: বর্তমান সময়ে তথাকথিত জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের একটি হচ্ছে “আনজুমানে মফিদুল ইসলাম”। তারা জনকল্যাণের নামে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার কুরবানী পশুর চামড়া ও চামড়া বিক্রির অর্থ মুসলমানদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে। এই অর্থ তারা আমভাবে খরচ করে থাকে। যেমন রাস্তাঘাট, পানির ব্যবস্থা, বেওয়ারিশ লাশ দাফন করার কাজে; সেটা মুসলমানদেরও হতে পারে আবার বিধর্মীদেরও হতে পারে। অথচ পবিত্র কুরবানীর পশুর চামড়া ও যাকাত-ফিতরা মুসলমান গরিব-মিসকীনদের হক্ব।
তা আমভাবে খরচ করা যাবে না, বরং মুসলমান গরিব-মিসকীনদের মালিক করে দিতে হবে। অর্থাৎ সম্মানিত শরীয়ত উনার নির্ধারিত খাতেই ব্যয় করতে হবে। তাই আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামে পবিত্র কুরবানীর পশুর চামড়া বা তার মূল্য ও যাকাত-ফিতরা দেয়া হারাম।
শুধু তাই নয়; এদের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাৎ, দুর্নীতি, লাশ গায়েব এবং কঙ্কাল চুরি (কবর থেকে লাশ তুলে কিংবা লাশকে দাফন না করে গরম পানিতে লাশের গোশত ছাড়িয়ে সে লাশের কঙ্কাল উচ্চ দামে বিক্রি করা) ও পাচারকারী দলের সাথে জড়িত থাকার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। যা অনলাইনসহ অনেক মিডিয়াতেই প্রকাশ পেয়েছে। কাজেই, আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামে কুরবানীর পশুর চামড়া বা তার মূল্য ও যাকাত-ফিতরা দেয়ার অর্থ হচ্ছে- টাকা আত্মসাৎ, দুর্নীতি, লাশ গায়েব এবং কঙ্কাল চুরি ও পাচার এসবের মতো হারাম ও গুনাহের কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করা। নাউযুবিল্লাহ!
তাছাড়া পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ৮ খাতের কোনো খাতের মধ্যেই আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম পড়ে না। তাই এদেরকে কুরবানীর পশুর চামড়া ও যাকাত, ফিতরা দিলে তা কস্মিনকালেও আদায় তো হবেই না; বরং গুনাহ হবে।
অনুরূপভাবে কোন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকেও যাকাত, ফিতরা ও কুরবানী পশুর চামড়া দেয়া জায়িয হবে না। কারণ- (১) তারা তা ধনী-গরীব, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে খরচ করে থাকে। যেমন রাস্তা-ঘাট, পানির ব্যবস্থা, বেওয়ারিশ লাশ দাফন করার কাজে। অথচ কুরবানী পশুর চামড়া মুসলমান গরীব-মিসকীনদের হক্ব। (২) মুসলমান গরীব-মিসকীনদের হক্ব ধনীদেরকে প্রদানের মাধ্যমে তাদের ইবাদত-বন্দেগী বিনষ্ট করছে। নাঊযুবিল্লাহ! (৩) মুসলমান গরীব-মিসকীনদের হক্ব মুসলমানদের শত্রু কাফির-মুশরিকদের উপকারার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ! (৪) এ সমস্ত প্রতিষ্ঠান ইসলামী শরীয়ত নির্ধারিত যাকাত, ফিতরা, মানত, কুরবানী পশুর চামড়া বা বিক্রিত অর্থ প্রদানের কোন খাতের আওতাভুক্তই নয়।
আমিনুর রহমান, দিনাজপুর
সুওয়াল: কুরবানী করার সুন্নতী পদ্ধতি জানালে খুশি হবো।
জাওয়াব: কুরবানীর পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা পশ্চিম দিকে রেখে অর্থাৎ ক্বিবলামুখী করে শোয়ায়ে পূর্ব দিক থেকে চেপে ধরতে হবে, তারপর কুরবানী করতে হবে। আর কুরবানী করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, সীনার উপরে নরম স্থানের উপর থেকে গলার মধ্যে একটি উঁচু হাড় রয়েছে: উভয়ের মাঝামাঝি স্থানে যেন যবেহ করা হয়। আরো উল্লেখ্য যে, গলাতে চারটি রগ রয়েছে, তন্মধ্যে গলার সম্মুখভাগে দুটি- খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী এবং দু’পার্শ্বে দুটি রক্তনালী। এ চারটির মধ্যে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং দুটি রক্তনালীর মধ্যে একটি অবশ্যই কাটতে হবে। অর্থাৎ চারটি রগ বা নালীর মধ্যে তিনটি অবশ্যই কাটতে হবে, অন্যথায় কুরবানী হবে না। যদি সম্ভব হয়, তবে ছুরি চালানোর সময় বিজোড় সংখ্যার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
কুরবানীর নিয়ত: (যবেহ করার পূর্বে)
إِنِّـيْ وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِيْ فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيْفًا ۖ وَّمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ. إِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَـحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ. لَا شَرِيْكَ لَهٗ ۖ وَبِذٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ. اَللّٰهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ.
উচ্চারণ: ইন্নী ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা হানীফাঁওঁ ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না ছলাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্ইয়া ইয়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রব্বিল আলামীন। লা শারীকালাহূ ওয়া বি যালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা।
এ দোয়া পড়ে-
بِسْمِ اللهِ اَللهُ اَكْبَرُ
‘বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে যবেহ করতে হবে।
যবেহ করার পর এ দোয়া পড়বে-
اَللّٰهُمَّ تَقْبَلْهُ مِنِّـىْ كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ سَيِّدِنَا حَبِيْبِنَا نَبِيِّنَا شَفِعِنَا رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَخَلِيْلِكَ سَيِّدِنَا حَضْرَتْ إِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَذَبِيْحِكَ سَيِّدِنَا حَضْرَتْ اِسْـمَاعِيْلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বালহু মিন্নী কামা তাক্বাব্বালতা মিন হাবীবিকা সাইয়্যিদিনা হাবীবিনা নাবিয়্যিনা শাফিয়িনা রাসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও খলীলিকা সাইয়্যিদিনা হযরত ইবরাহীমা আলাইহিস সালাম ও যাবীহিকা সাইয়্যিদিনা হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম।
যদি নিজের কুরবানী হয়, তবে مِنِّـىْ (মিন্নী) বলতে হবে। আর যদি অন্যের কুরবানী হয়, তবে مِنْ (মিন) শব্দের পর যার বা যাদের কুরবানী, তার বা তাদের নাম উল্লেখ করতে হবে। আর যদি অন্যের সাথে শরীক হয়, তাহলে مِنِّـىْ (মিন্নী)ও বলবে, অতঃপর مِنْ (মিন) বলে অন্যদের নাম বলতে হবে। কেউ যদি উপরোক্ত নিয়ত না জানে, তাহলে যবেহ করার সময় শুধু বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে কুরবানী করলেও শুদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ নিয়ত অন্তরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে অবশ্যই প্রত্যেক যবেহকারীর উচিত উপরোক্ত নিয়ত শিক্ষা করা। কেননা উপরোক্ত নিয়ত পাঠ করে পবিত্র কুরবানী করা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
{দলীলসমূহ: মুসনাদে আহমদ, আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, দারিমী, ইবনে মাজাহ শরীফ, বজলূল মযহুদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, মুযাহিরে হক্ব শরীফ, লুমায়াত শরীফ, ত্বীবী শরীফ, তালিকুছ ছবীহ শরীফ, আশয়াতুল লুমায়াত শরীফ, আলমগীরী শরীফ, শামী শরীফ, দুররুল মুখতার শরীফ, আইনুল হিদায়া ও বাহরুর রায়িক শরীফ ইত্যাদি।}
মুহম্মদ খাইরুল ইসলাম, মানিকনগর, ঢাকা
সুওয়াল: মুসলমানরা মৃত্যুবরণ করলে গোসল, কাফন, জানাযা ও দাফনের হুকুম কি? জীবিত বা মৃত মানুষ পোড়ানো কি জায়িয আছে? মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীর গোসল, কাফন দাফনের হুকুম কি?
জাওয়াব: কোন মুসলমান মারা গেলে বা ইন্তিকাল করলে জীবিত মুসলমানদের জন্য দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে তাদের গোসল, কাফন, জানাযা ও দাফনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অর্থাৎ কোন মুসলমান ইন্তিকাল করলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে গোসল দিয়ে কাফন ও জানাযা পড়িয়ে দাফন করতে হবে। এটা জীবিত মুসলমান তথা সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, এলাকাবাসীর প্রতি ফরযে কিফায়া। উক্ত কাজগুলি কেউ সম্পন্ন করলে সকলের পক্ষ থেকেই ফরযে কিফায়া কর্তব্যটি আদায় হয়ে যাবে। আর উক্ত কাজগুলি যদি কেউই সম্পন্ন না করে তাহলে এলাকাবাসী ফরযে কিফায়া অনাদায়ে কবীরা গুনাহে গুনাহগার হবে। নাউযুবিল্লাহ!
জীবিত হোক কিংবা মৃত হোক কাউকে পোড়ানো জায়িয নেই। মুসলমানদেরকে পোড়ানোর তো প্রশ্নই উঠে না। এমনকি যারা কাফির, মুশরিক ও মুনাফিকগোষ্ঠী তাদেরকেও পোড়ানো সম্মানিত দ্বীন ইসলাম সমর্থন করে না। কেননা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম তথা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যেহেতু পরকালে জাহান্নামীদেরকে আগুন দ্বারা শাস্তি প্রদান করবেন তাই দুনিয়াতে তিনি উনার সৃষ্টজীবকে আগুন দিয়ে শাস্তি দিতে বা আগুন দিয়ে পোড়ানো নিষেধ করেছেন।
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উ নার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ عَبْدِ اللهِ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ كُنَّا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهَ وَسَلَّمَ فِيْ سَفَرٍ فَانْطَلَقَ لِـحَاجَتِهٖ فَرَأَيْنَا حُمَّرَةً مَّعَهَا فَرْخَانِ فَأَخَذْنَا فَرْخَيْهَا فَجَاءَتِ الْـحُمَّرَةُ فَجَعَلَتْ تُعَرِّشُ فَجَاءَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهَ وَسَلَّمَ فَقَالَ مَنْ فَجَعَ هٰذِهٖ بِوَلَدِهَا رُدُّوْا وَلَدَهَا إِلَيْهَا. وَرَأَى قَرْيَةَ نَـمْلٍ قَدْ حَرَّقْنَاهَا فَقَالَ مَنْ حَرَّقَ هٰذِهٖ. قُلْنَا نَـحْنُ. قَالَ إِنَّهٗ لَا يَنْبَغِيْ أَنْ يُّعَذِّبَ بِالنَّارِ إِلَّا رَبُّ النَّارِ.
অর্থ: হযরত আবদুর রহমান ইবনু ‘আবদুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে। তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সফরে ছিলাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারার জন্য চলে গেলেন। এদিকে আমরা একটি ছোট পাখি দেখতে পেলাম। তার সাথে ছিলো দু’টি বাচ্চা। আমরা বাচ্চা দু’টিকে ধরে ফেলি। মা পাখিটি এসে পাখা ঝাপটাতে লাগলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফিরে এসে ইরশাদ মুবারক করলেন, কে এই পাখিটিকে তার বাচ্চা ধরে এনে ভীত সন্ত্রস্ত করেছে? তোমরা এটির বাচ্চা ফিরিয়ে দাও। আর তিনি আমাদের পুড়িয়ে মারা পিঁপড়ার একটি বাসস্থানও দেখতে পেলেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, এগুলো কে পুড়িয়েছে? আমরা বললাম, আমরা। তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আগুনের রব ছাড়া আগুন দিয়ে শাস্তি দেয়া কারো পক্ষে সমীচীন নয়। (বুখারী শরীফ)
উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা সহ আরো একাধিক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা দ্বারা প্রতিভাত হয়েছে যে, মৃত হোক কিংবা জীবিত হোক কোন মানুষকেই পোড়ানো জায়িয নেই। তা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কুফরী।
আর সাধারণ মৃত ব্যক্তির গোসল, কাফন, জানাযা ও দাফনের যেই হুকুম মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীর গোসল, কাফন, জানাযা ও দাফনেরও সেই একই হুকুম। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الشُّهَدَاءُ خَمْسٌ اَلْمَطْعُوْنُ وَالْمَبْطُوْنُ وَالْغَرِقُ وَصَاحِبُ الْـهَدْمِ وَالشَّهِيْدُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, শহীদ পাঁচ প্রকারেরঃ মহামারির কারণে যে লোক মারা যায়, যে পেটের অসুখের কারণে মারা যায়, পানিতে ডুবে যে লোক মারা যায়, চাপা পড়ে যে লোক মারা যায় এবং যে লোক মহান আল্লাহ তায়ালা উনার রাস্তায় (জিহাদে) শহীদ হয়। (বুখারী শরীফ)
উল্লেখিত পাঁচ শ্রেণীর মৃত ব্যক্তির মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় জিহাদে গিয়ে যারা শহীদ হন উনাদেরকে শুধু গোসল দিতে হয় না। উনাদের শহীদি রক্ত ও যখমসহ হাশরের ময়দানে উপস্থিত করা হবে এবং বিনা হিসেবে সম্মানিত জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। সুবহানাল্লাহ! আর বাকী চার শ্রেণীর মৃত ব্যক্তিকে ঐ নিয়মেই গোসল দিতে হবে যে নিয়মে অন্যান্য মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়া হয়ে থাকে। এছাড়া কাফন, জানাযা ও দাফনের ক্ষেত্রে সকলের একই হুকুম।
(দলীলসমুহ: তাফসীরে আহকামুল কুরআন জাসসাস, তাফসীরে তাবারী, কুরতুবী, কবীর, খাযিন, বাগবী, মাযহারী, তাফসীরে জালালাইন, দূররে মানছূর, যাদুল মাছীর, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস সারী, ফয়যুল বারী, তাইসীরুল ক্বারী, শরহে নববী, ফতহুল মুলহিম, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ফতওয়ায়ে শামী, রদ্দুল মুহতার, দুররুল মুখতার, শরহে বিক্বায়া, এনায়া, নেহায়া ইত্যাদি।
মুহম্মদ আজহারুল ইসলাম, সদর, চাঁদপুর
সুওয়াল: অনেকে করোনা কোভিট-১৯ ভাইরাসের উপসর্গ হিসেবে হাঁচির বিষয়টি তুলে ধরে মুসলমানদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ। এ বিষয়ে সঠিক ফায়ছালা জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: করোনা হচ্ছে বর্তমান সময়ে কাফির মুশরিকদের উপর আপতিত এক মহাগযব। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাছ ছালাম উনাদের প্রতি মিথ্যাচার, ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ, সম্মানিত মুসলমান উনাদের প্রতি সীমাহীন নির্যাতন, শহীদ করা এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে কটুক্তি করার কারণে বর্তমান যামানার মহান মুজাদ্দিদ ও ইমাম, আহলে বাইতে রসূল, নূরে মুকাররাম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি কাফির মুশরিকদের শাস্তি কামনা করে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট হাত তুলে বদ দোয়া করেন। উনার সেই মকবুল মুনাজাতের ফলে তারা ভুমিকম্প, ভুমিধ্বস, তুষারপাত, টর্নেডো, দাবানল, ইত্যাদি নানা গযবে নিপতিত হয় এবং বর্তমানে মহামারি আকারে তাদের দেশে ও তাদের মাঝে যে মহাগযব আপতিত হয়েছে সেটারই নাম হচ্ছে করোনা ভাইরাস। এই মহাগযব কাফির মুশরিক এবং তাদের যারা অনুচর শুধুমাত্র তাদের ধ্বংসের জন্যেই আপতিত হয়েছে। এ গযব কোন মুসলমানদের জন্যে নয় এবং এ গযব অতীতেও কারো জন্যেই আপতিত হয়নি। ফলে এ গযবের সাথে হাঁচিকে জড়ানো তথা এ গযবের উপসর্গ হিসেবে হাঁচিকে উল্লেখ করাটা চরম জিহালতী ও মুর্খতা ছাড়া কিছু নয়। কেননা হাঁচির বিষয়টা নতুন নয়। প্রথম মানব সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনিও হাঁচি মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
মূল কথা হচ্ছে, হাঁচি হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে বান্দার প্রতি বিশেষ নিয়ামত এবং সুন্নত মুবারক। তাই হাঁচিকে কাফির মুশরিকদের প্রতি আপতিত আযাব গযবের উপসর্গ হিসেবে উল্লেখ করাটা সম্পূর্ণরূপে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার খিলাফ বা বিরোধী ও কুফরী।
উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দার হাঁচি দেয়া পছন্দ করেন। বস্তুত মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে এই হাঁচি মানুষের জন্য এক বিশেষ নিয়ামত ও বিশেষ রহমত।
হাঁচি সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِنَّ اللهَ يُـحِبُّ الْعُطَاسَ وَيَكْرَهُ التَّثَاؤُبَ فَاِذَا عَطَسَ اَحَدُكُمْ وَحَـمِدَ اللهَ كَانَ حَقًّا عَلٰى كُلِّ مُسْلِمٍ سَـمِعَهٗ اَنْ يَّقُوْلَ لَهٗ يَرْحَـمُكَ اللهُ. وَاَمَّا التَّثَاؤُبُ فَاِنَّـمَا هُوَ مِنَ الشَّيْطَانِ، فَاِذَا تَثَاوَبَ اَحَدُكُمْ فَلْيَرُدَّهٗ مَا اسْتَطَاعَ فَاِنَّ اَحَدَكُمْ اِذَا تَثَاءَبَ ضَحِكَ مِنْهُ الشَّيْطَانُ.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি হাঁচি দেয়া পছন্দ করেন আর হাই তোলা অপছন্দ করেন। যদি তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে ‘আল্হামদুলিল্লাহ’ বলে তবে প্রত্যেক মুসলিম শ্রোতার তার জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা ওয়াজিব। আর হাই তোলা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়। কাজেই তোমাদের কোন ব্যক্তির হাই উঠলে সে যেন যথাসম্ভব তা রোধ করে। কেননা কেউ হাই তুললে শয়তান তার প্রতি হাসে।” (বুখারী শরীফ)
হাঁচির মাধ্যমে রোগ-জীবাণু শরীর থেকে বেরিয়ে গিয়ে শরীরকে সুস্থ-স্বাভাবিক রাখে যার কারণে এটা বলার কোন সুযোগ নেই যে, হাঁচিদাতা রোগগ্রস্ত। বরং একজন মানুষ একাধারে ৩টির বেশি হাঁচি দিলে তাকে সর্দি আক্রান্ত বলে ধরে নেয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ شَـمِّتْ اَخَاكَ ثَلاَثًا فَمَا زَادَ فَهُوَ زُكَامٌ .
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমার ভাইয়ের হাঁচির উত্তর তিনবার দিবে। এরপরও হাঁচি দিতে থাকলে তবে তার মস্তিষ্কে ঠান্ডা লেগেছে (তাই আর জবাব দিতে হবে না)।” (আবূ দাঊদ শরীফ)
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُشَمِّتُ الْعَاطِسُ ثَلَاثًا فَمَا زَادَ فَهُوَ مَزْكُوْمٌ
অর্থ: “হযরত সালামাহ ইবনে আকওয়া’ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হাঁচি দাতা ৩ বারের বেশি হাঁচি দিলে, তাহলে সে সর্দিগ্রস্ত।” (ইবনে মাজাহ্ শরীফ)
সুতরাং ৩ বারের বেশি কেউ যদি হাঁচি না দেয় তাহলে তাকে রোগগ্রস্ত বলা যাচ্ছে না।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا عَطَسَ وَضَعَ يَدَهٗ اَوْ ثَوْبَهٗ عَلٰى فِيْهِ وَخَفَضَ اَوْ غَضَّ بِـهَا صَوْتَهٗ.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যখন হাঁচি মুবারক আসতো তখন তিনি মুখ মুবারকে হাত বা কাপড় দিয়ে হাঁচির শব্দ নিচু করতেন।” (আবূ দাঊদ শরীফ)
প্রতিভাত হলো যে, হাঁচি দেয়া সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। তাই হাঁচি দেয়াকে অবজ্ঞা করা কুফরী। কেননা এতে একদিকে যেমন মহান আল্লাহ পাক উনার পছন্দনীয় কাজকে অবজ্ঞা করা হয়। অন্যদিকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনাকেও অবজ্ঞা করা হয়।
অতএব, যারা হাঁচিকে অবজ্ঞা করে থাকে তাদের তওবা করে সম্মানিত দ্বীন ইসলামে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
আহমদ ছিদ্দীক্বা মেহরিন বিনতে মাসুম, দাড়িদহ, বগুড়া
সুওয়াল: বেগানা পুরুষ ও মহিলা পরস্পর সালাম দিতে ও নিতে পারবে কিনা?
জাওয়াব: না, বেগানা পুরুষ ও মহিলা পরস্পর সালাম দিতে ও নিতে পারবে না। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে- এক মুসলমানের প্রতি আরেক মুসলমানের ছয়টি হক্ব বা দায়িত্ব রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে সাক্ষাত হলে সালাম দিবে। এর ব্যাখ্যা হচ্ছে- একজন মুসলমান পুরুষ পরিচিত-অপরিচিত সকল মুসলমান পুরুষকে এবং মাহরাম মহিলাদেরকে সাক্ষাত হলে সালাম দিবে। অনুরূপ একজন মহিলা তার আহাল বা স্বামী, মাহরাম পুরুষদেরকে সাক্ষাত হলে সালাম দিতে পারবে। কিন্তু বেগানা পুরুষ ও বেগানা মহিলা পরস্পর সালাম দেয়া বা নেয়া অর্থাৎ জাওয়াব দেয়া জায়িয নেই। কারণ বেগানা পুরুষ ও মহিলা সাক্ষাত করাটাই যেখানে জায়িয নেই সেখানে তাদের পরস্পর পরস্পরে সালাম দেয়া ও নেয়াও জায়িয নেই।
উল্লেখ্য বেগানা পুরুষ ও মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি সাক্ষাত বা দৃষ্টি লা’নতের কারণ হিসেবে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়- বেগানা পুরুষ, মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি করাটা চোখের ব্যভিচার এবং কথা বলাটা জবানের ব্যভিচার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বেগানা পুরুষ ও মহিলা উভয়ের দৃষ্টি অবনত রাখতে নির্দেশ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قُلْ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ يَغُضُّوْا مِنْ أَبْصٰرِهِمْ وَيَـحْفَظُوْا فُرُوْجَهُمْ ۚ ذٰلِكَ أَزْكٰى لَهُمْ ۗ إِنَّ اللهَ خَبِيرٌۢ بِمَا يَصْنَعُوْنَ. وَقُلْ لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ
অর্থ: “(আমার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি মু’মিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতার কারণ। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক তিনি তারা যা করে তার খবর রাখেন। আর আপনি মু’মিনাদেরকে বলুন, তারাও যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে।” (পবিত্র সূরা নূর শরীফ-৩০,৩১)
মূলত: মুসলমান বেগানা পুরুষ ও বেগানা মহিলা পরস্পর সরাসরি সাক্ষাতের কোন সুযোগই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে নেই। কারণ তাদের উভয়ের প্রতি পর্দা করা ফরয। তাই একান্ত জরুরত বশতঃ তাদের পরস্পর কথা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে বলার জন্য নির্দেশ করা হয়েছে।
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَإِذَا سَأَلْتُمُوْهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوْهُنَّ مِنْ وَّرَاءِ حِجَابٍ ۚ ذٰلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوْبِكُمْ وَقُلُوْبِـهِنَّ
অর্থ: যখন তোমরা বেগানা মহিলাদের কাছে কিছু চাইবে তখন আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের ও তাদের অন্তরের পবিত্রতার কারণ। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৩)
তাছাড়া বেগানা মহিলাদেরকে বেগানা পুরুষদের সাথে নরম স্বরে কথা বলতেও নিষেধ করা হয়েছে-
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ
অর্থ: তোমরা (বেগানা মহিলারা) নরম স্বরে কথা বলবে না। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৩২)
উল্লেখ্য, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ফরযে আইন বিধান সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি বিধান হচ্ছে পর্দা। যা লঙ্ঘণে প্রতি পলক বা দৃষ্টিতে কবীরা গুনাহ হয়ে থাকে। অর্থাৎ একজন বেগানা পুরুষ ও একজন বেগানা মহিলা পরস্পরের প্রতি দু সেকেন্ড ৫টি পলক বা দৃষ্টি ফেলে থাকে। সে হিসেবে প্রতি মিনিটে পলক বা দৃষ্টি দেয়ার কারণে তাদের প্রতি ১৫০টি কবীরা গোনাহ লেখা হয়। আর ঘন্টা হিসেবে ৯ হাজার কবীরা গুনাহ লেখা হয়। নাউযুবিল্লাহ!
স্মরণীয় যে, পর্দার বিধান লঙ্ঘনকারী ব্যক্তির গোনাহ সবচেয়ে বেশী। তারা লা’নতগ্রস্ত ও দাইয়্যুছ হিসেবে গণ্য। যার কারণে সম্মানিত জান্নাত উনার মধ্যে তারা প্রবেশ করতে পারবে না।
পর্দার বিধান পালন বা রক্ষার জন্যেই বেগানা পুরুষ ও মহিলা পরস্পর সাক্ষাত করা, পরস্পর দৃষ্টি দেয়া, পরস্পর সালাম দেয়া ও সালামের জাওয়াব দেয়া এবং একান্ত জরুরত ব্যতিত কথা বলা এবং নরম স্বরে কথা বলা, উচ্ছিষ্ট খাদ্য খাওয়া ও উচ্ছিষ্ট পানীয় পান করা ইত্যাদি কোনটাই জায়িয নেই।
উক্ত প্রতিটি বিষয় সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে আমভাবে মাকরূহ তাহরীমী এবং ক্ষেত্রবিশেষে হারাম ও কুফরী।
যেমন সালাম দেয়া ও সালামের জাওয়াব দেয়া বিষয়ে আম বা সাধারণ মাসয়ালা প্রসঙ্গে মাজালিসুল্ আবরার বায়ানুস্ সালাম, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
وَاَمَّا الرَّجُلُ اِذَا سَلَّمَ عَلٰى اِمْرَأَةٍ فَاِنْ كَانَتْ زَوْجَتُهٗ اَوْ جَارِيَتُهٗ اَوْ كَانَتْ مِنْ مَّـحَارِمَهٗ فَعَلَيْهَا الرَّدُّ وَاِنْ كَانَتْ اَجْنَبِيَةٌ شَابَّةٌ لَايَـجُوْزُ لَـهَا الرَّدُّ وَيَكُوْنُ الرَّجُلُ مُفْرِطًا فِى السَّلَامِ عَلَيْهَا.
অর্থ: “যখন কোন পুরুষ এমন মহিলাকে সালাম দিবে যে তার আহলিয়া, বাদী অথবা মাহরাম মহিলা তখন মহিলার জন্য তার সালামের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। যদি মহিলা বেগানা যুবতী হয়, তবে তার জন্য বেগানা পুরুষের সালামের জাওয়াব দেয়া জায়িয নেই। আর বেগানা পুরুষও বেগানা যুবতীকে সালাম দেয়াও জায়িয নেই।
উক্ত কিতাব সমূহে আরো বর্ণিত রয়েছে-
اَلْـمَرْأَةُ اِنْ سَلَّمَتْ عَلٰى رَجُلٍ فَاِذَا كَانَتْ زَوْجَتُهٗ اَوْ جَارِيَتُهٗ اَوْ كَانَتْ مِنْ مَـحَارِمَهٗ اَوْ كَانَتْ عَجُوْزًا لَايَـخَافُ مِنْهَا الْفِتْنَةَ فَعَلَيْهِ الرَّدُّ وَاِنْ كَانَتْ شَابَّةٌ تَـِمِيْلُ اِلَيْهَا النَّفْسُ يَكْرَهُ لَهُ الرَّدُّ وَتَكُوْنُ اِمْرَأَةٌ مُفْرِطَةٌ فِى السَّلَامِ عَلَيْهَا.
অর্থ: “স্বীয় আহলিয়া, বাঁদী, মাহরাম মহিলা এবং অতিবৃদ্ধা স্ত্রীলোক যার থেকে কোন ফিতনার আশংকা নাই এ রকম স্ত্রীলোক যদি কোন মাহরাম পুরুষকে সালাম দেয় তবে উক্ত সালামের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। যদি গাইরে মাহরামা যুবতী হয়, তার প্রতি মন আকৃষ্ট হওয়ার কারণে পুরুষের জন্য সালামের জাওয়াব দেয়া মাকরূহ তাহরীমী। আর বেগানা মহিলাও বেগানা পুরুষকে সালাম দেয়াটাও মাকরূহ তাহরীমী।
অতএব, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মূল ফতওয়া হচ্ছেন, বেগানা পুরুষ ও বেগানা মহিলা যে কোন বয়সেরই হোক না কেন একে অপরকে সালাম দেয়া ও সালামের জাওয়াব দেয়া নাজায়িয এবং গুনাহের কারণ। যা হতে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলার জন্য ফরযে আইন।