ডাঃ মুহম্মদ হাবীবুর রহমান, পানছড়ি, খাগড়াছড়ি
জাওয়াব: সুওয়ালে উল্লেখিত আক্বীদা পোষণকারী ও প্রচারকারী ব্যক্তি চরম জাহিল ও গোমরাহ। এরূপ জাহিল ও গোমরাহ ব্যক্তি ইমাম হওয়ার উপযুক্ত নয়। এমন ব্যক্তিকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ করা হলে সে মুছল্লীদেরকে গোমরাহ করে ফেলবে।
আর এ কারণেই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
ان هذا العلم دين فانظروا عمن تأخذون دينكم
অর্থ: নিশ্চয়ই (পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের) ইলমই হচ্ছে দ্বীন। কাজেই, তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন বা ইলিম গ্রহণ করছো তাকে দেখে নাও। অর্থাৎ তার আক্বীদা, আমল-আখলাক্ব শুদ্ধ আছে কিনা তা যাচাই বাছাই করো। (মিশকাত শরীফ)
অতএব, যাদের স্বীয় নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে সঠিক ইলিম ও সঠিক আক্বীদা নেই এমন ব্যক্তি মসজিদের ইমাম বা খতীব হওয়া তো দূরের কথা সাধারণ মু’মিন মুসলমান হওয়াই দুষ্কর।
কারণ মু’মিন মুসলমান উনাদের জন্য সর্বপ্রথম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যথাযথ পরিচিতি-সম্মান-মর্যাদা মুবারক সম্পর্কে জানা এবং তদানুযায়ী আক্বীদা পোষণ করা, উনাকে সবকিছু থেকে বেশি মুহব্বত করা ও উনাকে পরিপূর্ণরূপে অনুসরণ অনুকরণ করার কোশেশ করা অপরিহার্য কর্তব্য।
জানা আবশ্যক যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নবী ও রসূল হিসেবেই পয়দা হয়েছেন।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-
عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قالوا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم متى وجبت لك النبوة قال وادم بين الروح والجسد.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কখন থেকে নবী?” তিনি বললেন, “হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি যখন রূহ মুবারক ও শরীর মুবারকে ছিলেন আমি তখন থেকে নবী।” (তিরমিযী, মিশকাত, কানযুল উম্মাল)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নবী হিসেবেই পয়দা হয়েছেন।
আর তিনি শুধু আমাদেরই নবী ও রসূল নন বরং তিনি সমস্ত হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী ও সমস্ত হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল তথা সমস্ত মাখলূক্বাতের তিনি নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
واذ اخذ الله ميثاق النبيين لـما اتيتكم من كتاب وحكمة ثم جاءكم رسول مصدق لـما معكم لتؤمنن به ولتنصرنه قال ااقررتم واخذتم على ذلكم اصرى قالوا اقررنا قال فاشهدوا وانا معكم من الشاهدين.
অর্থ: “আর যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন, আমি আপনাদেরকে কিতাব ও হিকমত দান করবো। অতঃপর যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আগমন করে আপনাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তা সত্যে প্রতিপাদন করবেন। (আপনারা উনাকে পেলে) অবশ্যই উনার প্রতি ঈমান আনবেন এবং উনার খিদমত করবেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে বললেন, আপনারা কি আপনাদের প্রতি আমার এ অঙ্গীকার স্বীকার ও গ্রহণ করে নিলেন? উনারা বললেন, আমরা স্বীকার করে নিলাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আপনারা সাক্ষী থাকুন এবং আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী রইলাম।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮১)
অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রসূল হিসেবেই পয়দা হয়েছেন, রসূল হিসেবেই ছিলেন, রসূল হিসেবেই যমীনে এসেছেন, বর্তমানেও রসূল হিসেবেই আছেন এবং অনন্তকাল ধরে রসূল হিসেবেই থাকবেন।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি এক কথায় বলেছেন-
وما محمد الا رسول.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রসূল ব্যতীত অন্য কিছু নন।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৪)
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বিশুদ্ধ কিতাব মুস্তাদরাক লিল হাকিম উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-
عن حضرت عمر بن الخطاب عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لـما افترى ادم الخطيئة قال يارب اسألك بحق محمد لـما غفرت لى فقال الله يا ادم وكيف عرفت محمدا ولم اخلقه قال يا رب لـما خلقتنى بيدك ونفخت فى من روحك رفعت رأسى فرأيت على قوائم العرش مكتوبا لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم فعلمت أنك لـم تضف الى اسمك الا احب الخلق اليك فقال الله صدقت يا ادم عليه السلام انه لاحب الخلق الى ادعنى بحقه فقد غفرت لك ولو لا محمد صلى الله عليه وسلم ما خلقتك. هذا حديث صحيح الاسناد .
অর্র্থ: “হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্র্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার দোয়া ক্ববূলের সময় হলো, তখন তিনি দোয়া করলেন, হে আমার রব! আমি আপনার কাছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম উনার ওয়াসীলায় প্রার্থনা করছি। অতএব আমার দোয়া ক্ববূল করুন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে হযরত আদম আলাইহিস সালাম! আপনি কিভাবে আমার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে চিনলেন, এখনো তো উনাকে যমীনে প্রেরণ করিনি। জাওয়াবে হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হে আমার রব তায়ালা! আপনি যখন আমাকে আপনার কুদরতী হাত মুবারকে তৈরি করে আমার মধ্যে রূহ মুবারক ফুঁকে দেন, তখন আমি আমার মাথা মুবারক উত্তোলন করে আরশ পাক উনার খুঁটিসমূহে লিখিত দেখতে পাই-
لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم
(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ বা মাবূদ নেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল।’ তখন আমি বুঝতে পারলাম, আপনার নাম মুবারক উনার সাথে যে সম্মানিত নাম মুবারক সংযুক্ত আছে, তিনি সৃষ্টির মধ্যে আপনার সবচেয়ে প্রিয় ও মাহবূব হবেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, হে হযরত আদম আলাইহিস সালাম! আপনি সত্য কথাই বলেছেন। কারণ তিনি সৃষ্টির মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় ও মাহবূব। হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আয় মহান আল্লাহ পাক! উনার ওসীলায় আমার প্রার্থনা ক্ববূল করুন। মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আমি আপনার দোয়া কবূল করলাম। যদি আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি না হতেন, তাহলে আমি আপনাকেও সৃষ্টি করতাম না। সুবহানাল্লাহ! এ হাদীছ শরীফ খানার সনদ ছহীহ তথা বিশুদ্ধ।
(আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৪র্থ খণ্ড ১৫৮৩ পৃষ্ঠা, আছ ছহীহাহ ১ম খণ্ড ৮৮ পৃষ্ঠা, মুখতাছারুল মুস্তাদরাক ২য় খণ্ড ১০৬৯ পৃষ্ঠা, আত তাওয়াসসুল ১১৫ পৃষ্ঠা, তাফসীরুদ দুররিল মানছূর লিস সুয়ূত্বী ১ম খণ্ড ৫৮ পৃষ্ঠা, কানযুল উম্মাল ১১ খণ্ড- ৪৫৫ পৃষ্ঠা)
কাজেই, উপরে উল্লেখিত পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে আগমনের পর দুনিয়াবী চল্লিশ বছর বয়স মুবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত ঘোষণা করার পূর্বেও তিনি নবী ও রসূল ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
স্মরণীয় যে, আমাদেরকে একদিন অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার প্রিয় হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কাছে হাযির হতে হবে এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শাফায়াত-সুপারিশ সবার জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়বে।
কাজেই উম্মতের জন্য এমন কথা কস্মিনকালেও বলা শুদ্ধ হবে না যা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শান ও মর্যাদার বিন্দুতম খিলাফ হয়।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার, “নুবুওওয়াতের পূর্বের জীবন অনুসরণীয় নয়।” নাঊযুবিল্লাহ!
এ কথা সম্পূর্ণভাবে গুমরাহী ও কুফরীমূলক। কারণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম নুবুওওয়াতী যিন্দেগী মুবারক ব্যতীত আর কোনো যিন্দেগীই নেই। কারণ তিনি নবী হিসেবেই সৃষ্টি হয়েছেন।
হ্যাঁ, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চল্লিশ বছর বয়স মুবারকে সম্মানিত নুবুওওয়াত উনার আনুষ্ঠানিকতা ঘোষণার পূর্ববর্তী যিন্দেগী অনুসরণীয় কি-না?
এর জবাবে বলতে হয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে অবস্থানকাল অর্থাৎ তেষট্টি বছর বয়স মুবারক-এর সম্পূর্ণটাই অনুসরণীয়। তবে এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, আমরা সবটাই কি আমল করবো?
এর জবাব হচ্ছে, সম্মানিত নুবুওওয়াত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার পর যে তেইশ বছর যিন্দেগী মুবারক তার সম্পূর্ণটাই অনুসরণীয় হওয়ার পরও তা আমল করা জায়িয নেই।
যেমন, “বুখারী শরীফ-এ” বর্ণিত রয়েছে, “নামায ফরয হওয়ার পর প্রথমদিকে নামাযে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কথা বলেছেন, পরবর্তীতে তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। অর্থাৎ বর্তমানে কেউ যদি নামাযরত অবস্থায় কথা বলে, তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। প্রত্যেকটি আমলই অনুরূপ। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রত্যেকটি আমল সম্পর্কে শেষ যে হুকুম দিয়েছেন সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। পূর্বেরটি হচ্ছে মানসূখ অর্থাৎ মাশরূহ বা ব্যাখ্যাকৃত আর পরবর্তীটি হচ্ছে নাসিখ অর্থাৎ শারিহ বা ব্যাখ্যাকারী।
অতএব, মাশরূহ ও শারিহ প্রত্যেকটিই অনুসরণীয় তবে শারিহ অনুযায়ী আমল করতে হবে।
যারা বলে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত মুবারক প্রাপ্তির পূর্বের যিন্দেগী অনুসরণীয় নয়; তাদেরকে প্রশ্ন করতে হয়, বর্তমানে যদি কেউ আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত ঘোষণার পূর্বের যিন্দেগী মুবারকের অনুসরণে “হিলফুল ফুযূল” করে তাহলে তা কি জায়িয হবে? অথবা নাজায়িয হবে? তারা এর জবাবে বলবে, অবশ্যই জায়িয হবে। কারণ এটা নাজায়িয হওয়ার পক্ষে কোনো আদেশ বা নির্দেশ মুবারক নাযিল করা হয়নি। অতএব, অন্যান্য বিষয়গুলোও অনুরূপ।
সুতরাং, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত ঘোষণার পূর্বের যিন্দেগী অনুসরণীয় নয়- এ কথা যারা বলে, তারা সম্পূর্ণই মনগড়াভাবে বলে থাকে। তাদের এ বক্তব্যের পক্ষে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস থেকে একটা দলীলও তারা পেশ করতে পারবে না।
অতএব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গোটা যিন্দেগী মুবারকই অনুসরণীয়।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة
অর্থ: “তোমাদের জন্য তোমাদের রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ মুবারক।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ২১)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وان تطيعوه تـهتدوا.
অর্থ: “তোমরা যদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করো তবেই হিদায়েত লাভ করবে।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা নূর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৪)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وما اتاكم الرسول فخذوه وما نـهاكم عنه فانتهوا
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদের জন্য যা এনেছেন তা আঁকড়ে ধরো এবং যা থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকো।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা হাশর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বকালে সবার জন্য অনুসরণীয়। অর্থাৎ তিনি যা এনেছেন তা আঁকড়ে ধরতে হবে এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ তিনি নিজ থেকে কোনো কথা বলেননি এবং কাজও করেননি।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وما ينطق عن الـهوى ان هو الا وحى يوحى
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী মুবারক ব্যতীত নিজের থেকে কোনো কথা মুবারক বলেন না।” (পবিত্র সূরা নজম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩, ৪)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ যদিও নাযিল হয়েছে সম্মানিত নুবুওওয়াত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার পর কিন্তু এটা মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম যা সম্মানিত লওহে মাহফুয উনার মধ্যে সংরক্ষিত রয়েছে। এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মিছদাক হচ্ছেন আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। অর্থাৎ সম্মানিত নুবুওওয়াত ঘোষণার পর তেইশ বছর; এবং তার পূর্বে চল্লিশ বছর এ তেষট্টি বছর বয়স মুবারকই এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মিছদাক। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তেষট্টি বছর যিন্দেগী মুবারকে কোনো কাজ, কোনো কথা, কোনো আদেশ-নিষেধ মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক ব্যতীত করেননি। প্রত্যেকটিই মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক নির্দেশেই করেছেন। তবে চল্লিশ বছর বয়স মুবারকের পরে যা করেছেন, বলেছেন তা আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত মুবারক ঘোষণার কারণে ওহী মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আর পূর্ববর্তী যিন্দেগী মুবারকে যা করেছেন, বলেছেন তা সম্মানিত নুবুওওয়াত উনার আনুষ্ঠানিকতা ঘোষণা না হওয়ার কারণে ওহী মুবারক বলে উল্লেখ করা হয়নি। তবে তাও মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারকেই করেছেন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত ঘোষণা করার পূর্বে কোনো কাজ মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমের খিলাফ করেছেন এমন কোনো দলীল কেউ পেশ করতে পারবে কি? কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। আক্বাইদের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে-
فى عصمة النبى صلى الله عليه وسلم عن سائر الذنوب قبل الوحى وبعد الوحى
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী মুবারক নাযিল হওয়ার পূর্বে ও পরে সকল প্রকার গুনাহ থেকে মা’ছুম বা নিস্পাপ ছিলেন।”
আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা করেছেন, বলেছেন, পরিধান করেছেন, খেয়েছেন, পান করেছেন ইত্যাদি সবকিছুই উত্তম থেকে উত্তমতর ছিলো। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
انا اعطينك الكوثر
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সম্মানিত কাওছার মুবারক হাদিয়া করেছি।” (পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ১)
“কাওছার”-এর ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়- প্রথমতঃ কাওছার বলা হয়েছে হাউজে কাওছারকে। যা খাছ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া মুবারক করেছেন। যার পানি পান করলে সম্মানিত জান্নাতে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পানির পিপাসা লাগবে না।
দ্বিতীয়তঃ কাওছার বলা হয়েছে খইরে কাছীর। অর্থ যা অতি উত্তম, অনেক ভালো। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যা সর্বকালের জন্য সবদিক থেকে উত্তম তাই হাদিয়া করেছেন। তা খাদ্য-পানীয় হোক অথবা আদেশ-নিষেধ হোক।
যেমন, তিনি যা ব্যবহার করেছেন বা যা উনার ব্যবহারে এসেছে। তিনি যা খেয়েছেন, পান করেছেন, যেখানে অবস্থান করেছেন, তিনি যা আদেশ-নিষেধ মুবারক করেছেন ইত্যাদি সমস্ত কিছুই সমস্ত কায়িনাতের মধ্যে সর্বকালের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ। সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত ঘোষণার পূর্বে হোক অথবা পরে হোক। কারণ পবিত্র আয়াত শরীফ যদিও পরবর্তীতে নাযিল হয়েছে কিন্তু তা মহান আল্লাহ পাক উনার কালামের অন্তর্ভুক্ত যা অনাদি অনন্তকালের জন্য একই হুকুম রাখে।
যার কারণে আক্বাইদের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে-
الانبياء عليهم السلام كلهم منزهون عن الصغائر والكبائر والكفر والقبائح.
অর্থ: “হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রত্যেকেই ছগীরা, কবীরা ও কুফরী গুনাহ থেকে পবিত্র। এমনকি অপছন্দীয় কাজ থেকেও পবিত্র।”
অতএব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত ঘোষণার পূর্বে ও পরে উভয় যিন্দেগী মুবারকেই তিনি নবী ও রসূল এবং অনুসরণীয়ও।
{দলীলসমূহঃ (১) তাফসীরে আহকামুল কুরআন, (২) তাফসীরে রুহুল বয়ান, (৩) তাফসীরে রুহুল মায়ানী, (৪) তাফসীরে খাযিন, (৫) তাফসীরে বাগবী, (৬) তাফসীরে ইবনে কাছীর, (৭) তাফসীরে তাবারী, (৮) তাফসীরে কুরতুবী, (৯) তাফসীরে কবীর, (১০) তাফসীরে মাযহারী, (১১) বুখারী, (১২) তিরমিযী, (১৩) মিশকাত, (১৪) কানযুল উম্মাল, (১৫) মুস্তাদরাকে হাকিম, (১৬) ফতহুল বারী, (১৭) উমদাতুল ক্বারী, (১৮) শরহে কিরমানী, (১৯) ইরশাদুস সারী, (২০) তুহফাতুল আহ্ওয়াযী, (২১) উরফুশ শাজী, (২২) মায়ারিফুস্ সুনান, (২৩) মিরকাত, (২৪) আশয়াতুল লুময়াত, (২৫) লুময়াত, (২৬) কাজীখান, (২৭) আলমগীরী, (২৮) শামী, (২৯) ফতহুল ক্বাদীর, (৩০) গায়াতুল আওতার, (৩১) বাহরুর রায়িক, (৩২) রদ্দুল মুহতার, (৩৩) দুররুল মুখতার, (৩৪) আইনুল হিদায়া (৩৫) শরহে আক্বাইদে নসফী, (৩৬) আক্বাইদে হাক্কাহ, (৩৭) তাকমীলুল ঈমান, (৩৮) আল ফিক্বহুল আকবার, (৩৯) ইহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন, (৪০) ক্বিমিয়ায়ে সা’য়াদাত ইত্যাদি।}