আখিরী যামানা : হাদীছ শরীফে এ জামানার হাল সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বানী করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ঘাট অঘাট হবে। অযোগ্য লোকের হাতে শাসন ক্ষমতা পড়বে। নামধারীরা আলিম দাবী করবে। আমলহীনরা আবেদ দাবী করবে। ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রসঙ্গতঃ একটি মহল নিজেদেরকে সুন্নী বলে দাবী করে। প্রচলিত অর্থে এরা নিজেদেরকে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একান্ত আশিক বলে দাবী করে।
কিন্তু দাবীর সাথে যদি আমলের সঙ্গতি না থাকে তখন তা নিফাকের পর্যায়ভুক্ত হয়। আখিরী জামানার হাদীছ শরীফ তখন তাদের প্রতি প্রযোজ্য হয়। অসুন্নী তথা বিদয়াতীরা আখিরী জামানায় সুন্নী দাবী করবে- এই কথা তখন সত্যে প্রতিপন্ন হয় । যদিও এই সত্য বহু আগেই অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত হয়েছে। তারপত্তে নিত্য নতুন ঘটনার দ্বারা এ বিষয়টি আরো প্রকটভাবে প্রমাণিত হয়।
গত ২৪শে ফেব্রুয়ারী ২০০৫ দৈনিক ইত্তেফাকের ২য় পৃষ্ঠায় একটি ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়, “গতকাল বাংলাদেশ ইসলামী ….. আয়োজিত রজত জয়ন্তী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন অধ্যক্ষ মহাসচিব।’
ক্যাপশনের উপরে মহাসচিব ছাহেদের স্পষ্ট ছবি রয়েছে। ছবি তোলা জায়িয অথবা নাজায়িয়- সে ব্যাপারে মহাসচিৰ ছাহেবকে অন্য দলীল দেয়ার প্রয়োজন নেই ।
কারণ, এ ব্যাপারে মহাসচিব ছাহেবের নিজেরই অনুবাদকৃত একটি বই রয়েছে। এটি ছহীহ হাদীছ বুখারী শরীফের অনুবাদ। যেখানে মহাসচিব ছাহেব নিজেই অনুবাদ করেছেন, ‘কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে ছবি তোলে বা আঁকে।
শুধু একটি নয়। ছবি তোলার বিরুদ্ধে শক্ত শাস্তি ও কঠিন নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত আরো হাদীছ শরীফ মহাসচিব ছাহেব তার বইয়ে লিখেছেন। তিনি আরো বলেছেন, ‘কোন অন্যায় দেখার পর প্রথমে তাকে হাত দিয়ে বাধা দিবে। তা না পারলে মুখে বাঁধা দিবে। তা না পারলে অন্তর থেকে ঘৃণা
করবে।’
তবে তার নিজের ছবি তোলার বিরুদ্ধে মহাসচিব ছাহেব হাত বা মুখ ব্যবহার করেছেন বা অন্তর থেকে ঘৃণা করেছেন এরূপটি মনে করার কারণ নেই। কারণ যথেষ্ট দলীল রয়েছে যে, তিনি নিজের বইয়ে, পুস্তিকায় নিজেই ছবি সন্নিবেশ করেছেন। শুধু তাই নয় তিনি এখন টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করার মত মহা হারাম কাজটিও করছেন।
মূলতঃ একটি নেক আরো দশটি নেককে টানে। একটি হারাম আরো দশটি হারামকে টানে। হাদীছ শরীফে ইরশাদ রয়েছে, মানুষ যত বৃদ্ধ হয় তার অন্তরের খাহেশাত আরও প্রবল হয়। বয়ঃবৃদ্ধ মহাসচিব ছাহেবের ক্ষেত্রেও যে তাই হচ্ছে। ছবি তোলা, টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করার পাশাপাশি ইসলামী
অনুষ্ঠানের নামে তিনি আরেকটি মহা বিদয়াতী কাজের হোতা সাব্যস্ত হলেন। ইসলামী
….. অনুষ্ঠান নামে তিনি রজত জয়ন্তী করলেন, করালেন। তার ইসলামী সংগঠন সুন্নী … বলে দাবী করে থাকে। তিনি মূল প্রতিষ্ঠানের মহাসচিন। সুতরাং এই রজত জয়ন্তীতে প্রধান অতিথি হওয়ায় এটাই প্রমাণিত হয় যে, এ রজত জয়ন্তী সম্পূর্ণ তার ইচ্ছায় বা নির্দেশেই হয়েছে।
অথচ তার কি জানা উচিৎ ছিল রজত জয়ন্তী আদৌ সুন্নীয়তের সাথে সম্পৃক্ত কোন অনুষ্ঠান নয়। বরং এটি মহা বিদয়াতী অনুষ্ঠান, হারাম অনুষ্ঠান। এর ইতিহাস তথা ইসলাম তাই বলে।
জয়ন্তী ও জুবিলী কাকে বলে ?
জয়ন্তী অর্থ ইন্দ্ৰকন্যা, দুর্গা; শ্রী কৃষ্ণের জন্য তিধি বা জন্ম বাত্রিং পতাকা। জয়ন্তী অনুষ্ঠানের উৎস হচ্ছে শ্রী কৃষ্ণের জন্ম তিথি থেকে। এ ধারাবাহিকতার ঐতিহ্য রক্ষা করে হিন্দু সম্প্রদায় জয়ন্তী পালন করে। আর শরীয়তে নাজায়িয হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানদের মধ্যেও কেউ কেউ তাদের সাথে মিল রেখে রবীন্দ্র জয়ন্তী ও নজরুল জয়ন্তী উৎসব অনুষ্ঠান করে থাকে। ইন্দ্রকন্যা, দুর্গা ও শ্রী কৃষ্ণের জন্মের স্মৃতিবাহী জন জয়ন্তী উৎসব অনুষ্ঠান হিন্দু শাস্ত্র দ্বারাই প্রমাণিত।
উল্লেখ্য, জয়ন্তী আর জুবিলী এখন সমার্থক। মূলতঃ ভূবিদীর ধারণাটিই এখন জয়ন্তীর সাথে যোগ হয়ে নতুন মাত্রা লাভ করেছে। ইহুদী খ্রীষ্টানদের Diamond, Golden, Silver Jubilee -র ধারণা জয়ন্তীর সাথে যোগ হয়ে হীরক, স্বর্ণ ও রজত জয়ন্তী পালিত হয়ে থাকে ।
এছাড়াও প্লাটিনাম জয়ন্তী, হলি ইয়ার জয়ন্তী এবং মিলেনিয়াম জয়ন্তী-এর ইংরেজী নামগুলো যথাক্রমে- Platinum jubilee, Holy year jubilee and Millennium jubilee.
jubilee শব্দের উদ্ভব ঘটেছে ফরাসী ভাষার jubile, লাটিন ভাষার jubilaeus এবং হিব্রু ভাষার Yobel এই ভিন শব্দ থেকে। আর এই তিনের অর্থ যা, ইংরেজী jubilee অর্থও তাই। লামাপা ইংরেজী অভিধানে জুবিলী অর্থ করা হয়েছে The blast of a trumpet, Blast অর্থ প্রবল বাত্যা, ঝঞ্ঝা, বিস্ফোরণ আর Trumpet অর্থ ভেঁপু, ভেরধ্বনি ইত্যাদি। আভিধানিক অর্থকে সামনে রেখে জুবিলী অর্থ হয় মহোৎসব, মহাআনন্দ উৎসব ইত্যাদি ।
রজত, সুবর্ণ, হীরক, প্লাটিনাম, হলি ইয়ার ও মিলেনিয়াম জয়ন্তীর ইতিহাস হচ্ছে এই সিলভার জুবিলী বা রজত জয়ন্তীঃ রোমান ক্যাথলিকগুলো প্রতি পঁচিশ বছর পর জাঁকজমকের সাথে ধর্মীয় অনুষ্ঠান উৎসব পালন করে থাকে। এ উৎসবের নাম তারা করেছে সিলভার জুবিলী ।
(Roman catholic church celebration of a twenty. lifth anniversary)। বাংলায় যাকে বলা হয় রজত জয়ন্তী।
জয়ন্তীর সাথে দুর্গা ও শ্রী কৃষ্ণের সম্পর্ক আর জুবিলীর সাথে খ্ৰীষ্টান, ইহুদী ও শিয়াদের সম্পর্ক।
উল্লেখ্য এ প্রসঙ্গে Encyclopaedia Britannica আছে, “Jubilee, Year of, also called HOLY YEAR, in the Roman Catholic church, a celebration that is observed on certain special
occasions and for 1 year every 25 years.
অর্থাৎ “জুবিলী একে পবিত্র বর্ষ নামেও অভিহিত করা হয়। রোমান কাথিলিক চার্চে নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে নির্দিষ্ট বিশেষ উপলক্ষকে কেন্দ্র করে প্রত্যেক ২৫ বছরে উদযাপিত এক বছরব্যাপী অনুষ্ঠান।”
এ প্রসঙ্গে Encyclopedia Americana তে উল্লেখ আছে, In the Roman Catholic Church an ordinary jubilee, or Holy Year, occurs every 25th year and carries a plenary indulgence for those who repent and make a pilgrimage to Rome.
অর্থাৎ, “রোমান ক্যাথলিক চার্চে প্রতি ২৫ বছরে একটি সাধারণ জুবিলী তথা পবিত্র বর্ষ উদযাপ্তি হয় যা রোমে গমণকারী অনুতপ্ত তীর্থ যাত্রীদের জন্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে অবাধ পাপ মোচনের বার্তা বহন করত।
উল্লেখ্য, উপরোক্ত ২৫ বছর, ৫০ বছর ইত্যাদি বছর পূর্তি বা জুবিলী পালন সম্পর্কে শরীয়তের ফায়সালা হলো, কোন মুসলমানের জন্যই বিধর্মী ও বিজাতিয়দের কোন অনুষ্ঠানকে অনুসরণ ও অনুকরণ করা জায়িয নেই। তা শুধুমাত্র নাজায়িযই নয় বরং হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। তা স্বনামে হোক অথবা বেনামে হোক উভয়ের একই হুকুম
মহান আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন; “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আহলে কিতাব (ইহুদী-নাছারা) এবং কাফিরদের মধ্যে যারা তোমাদের দ্বীনকে খেল-তামাশার বস্তু হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করোনা : এ ব্যাপারে আল্লাহ্ পাককে ভয় কর যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাক।” (সূরা মায়িদা(৫৭)
আল্লাহ পাক “সূরা আল ইমরানের” ৮৫নং আয়াত শরীফে আরো বলেন, “যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম (বিধর্মী ও বিজাতীয়দের নিয়ম-নীতি ও তর্জ-তরীক্বা, তলব বা অনুসরণ ও অনুকরণ করে, তার থেকে তা কখনই গ্রহণ করা হবেনা এবং সে পরকালে (অবশ্যই) ক্ষতিমস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে।” (সূরা আলে ইমরান:৮৫)
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা মুশরিকদের অর্থাৎ মূর্তিপূজক বা হিন্দুদের বিপরীত আমল কর।” (বুখারী, মুসলিম)
যদি তাই হয় তাহলে ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠান পালন করা কি করে জায়িয হতে পারে? যা হিন্দু, ইহুদী, নাছারা ও শিয়া ইত্যাদি বাতিল, গোমরাহ্ ফিরবার তর্জ-তরীকার অন্তর্ভুক্ত।
কাজেই কেউ যদি ইসলাম ব্যতীত অর্থাৎ কুরআন-সুন্নাহ ব্যতীত বিধর্মী বা বিজাতীয়দের অনুসরণ ও অনুকরণ করে তবে তাদের যে কঠোর পরিণতি হবে সে সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে। ” (মুসনাদে আহমদ)
সুতরাং আখিরী জামানার সুন্নীগণ! আপনারা কি ভেবে দেখবেন যে, সুন্নীয়তের নামে আপনারা একের পর এক কিরূপ বিদয়াত, হারাম আর জাহান্নামের দিকে যাচ্ছেন।
আপনাদের মহা সচিব ছাহেব আপনাদের আমাকে কতটুকু গোমরাহীতে নামিয়ে দিচ্ছেন। নিজের প্রচার-প্রসারের জন্য তিনি ছবি তোলা, টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করার পর এবং বিধর্মীদের রজত জয়ন্তীও করছেন। আর বিধর্মীদের সাথে তাশাব্বুহ রাখলে বিধর্মীদের সাথেই হাশর-নশর হবে সে হাদীছ শরীফ আপনার মহাসচিব ছাহেবই তো বার বার আওড়াচ্ছেন।
-মুহম্মদ গোলাম মুর্শীদ, ঢাকা।
বৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বৃটিশ ভূমিকা-১১