যে বয়সের শিশু-সন্তানরা খেলা-ধুলায় মত্ত থাকে সে বয়স মুবারকে গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম ছিলেন। তিনি ছিলেন ধীরস্থির, অচঞ্চল, গাম্ভীর্যপূর্ণ থাকতেন যেন একজন পূর্ণ বয়সের লোক। দুই বছর বয়স হতে তিন বছর পর্যন্ত তিনি উনার বাড়ীর পাশে পাথরের উপর বসে কখনো যিকির করতেন। কখনো মুরাকাবা (ধ্যানমগ্ন) থাকতেন। উনার সমবয়সীরা কখনো উনাকে খেলার সাথী বানাতে পারতো না। তিনি তাদেরকে অতি পরিষ্কার ভাষায় বলে দিতেন এসব আমার ভাল লাগে না।
তিনি সকালে ও সন্ধ্যায় স্বীয় সম্মানিত পিতা সাইয়্যিদ গিয়াস উদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট হতে ইলিম হাছিল করতেন। উনার মেধাশক্তি এতোই প্রখর ছিলো যে, কোন একটি বিষয় একবারের বেশী দুবার পাঠ করতে হতো না। উনার নিকট কেউ কোন বিষয় আলাপ করলে তিনি সেটা উনার মধ্যে গেঁথে রাখতেন। এভাবে বয়স মুবারক বাড়ার সাথে সাথে উনার ইলিম ও হিকমত মুবারকের ভান্ডারও বাড়তে থাকে।
সুলতানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বয়স মুবারক যখন চার বছর ৪ মাস ৪ দিন তখন উনার বাসার নিকটবর্তী একটি মক্তবে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। সেখানে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ এবং বিভিন্ন মাসয়ালা-মাসায়িল শিক্ষা করেন। ঐ সময় তাতার দস্যূরা সাধারণ মানুষ ও তাদের বাড়ী-ঘরগুলো ধ্বংসের সাথে সাথে খোরাসানের বড় বড় মাদরাসা, খানকা শরীফসহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছিলো।
ঈদের দিন। নতুন পোষাক-পরিচ্ছেদ পরিহিত অবস্থায় গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি ঈদগাহের উদ্দেশ্যে চলছেন। শরীর মুবারকে আতর মুবারকের ঘ্রাণ বাতাসের সাথে মিলে যাচ্ছে। চোখ মুবারকে সুরমা মুবারক। আল্লাহু আকবার তাকবীর ধ্বণিতে আকাশ বাতাস মুখরিত। পথিমধ্যে হঠাৎ একটি বালক দৃষ্টি গোচর হলো। বালকটি অন্ধ। নোংরা শরীর, গায়ে ময়লা। শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। পড়নে ছেড়া-ফাটা, ফেলে দেয়ার মতো কাপড়। বালকটি উনারই সমবয়সী। মনে কোন আনন্দ নেই। আছে শুধু দুঃখ-কষ্ট ভারাক্রান্ত মন ও মনন। দুই চক্ষু দিয়ে পানি পড়ছে। হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি উনার পিতা তখন উনার দুই ভাইকে সাথে নিয়ে অনেকটা পথ এগিয়ে গেছেন। গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চিন্তা ও সিদ্ধান্ত এক সাথে কাজ করলো। এগিয়ে গেলেন অন্ধ বালকটির দিকে। অত্যন্ত মুহব্বতের সাথে একটা হাত ধরে বললেন আমার সাথে চলো। তিনি তাকে নিজের বাড়ী নিয়ে এলেন। গোসল করালেন। নিজের পরিহিত অত্যন্ত দামী, সুন্দর ও নতুন পোষাকটি তাকে পরিয়ে দিলেন। শরীরে আতর লাগিয়ে ঈদের নামাযের জন্য তৈরী করলেন। নিজে একটি সাধারণ পোষাক পরিধান করে বালকটিকে নিয়ে ঈদগাহে গিয়ে ঈদের নামায পড়লেন। নামায শেষ হলে তাকে সাথে নিয়েই বাড়ী ফিরলেন। অবশ্য উনার আগেই উনার সম্মানিত পিতা ও দুই ভাই নামায শেষ করে বাড়ী ফিরে এসেছিলেন।
উনারা যখন হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এ কাজটি দেখলেন তখন প্রথমে একটু বিরক্ত হলেও পরক্ষণে খুশী হলেন। উনারাও ছেলেটিকে সাথে নিয়ে এক সাথে খাবার খেলেন। তারপর হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছেলেটিকে সাথে নিয়ে তার বাড়ীতে পৌছে দিলেন।
ছেলেটি অত্যন্ত খুশি হলো। তার আর কোন দুঃখ-কষ্ট রইলনা। অতি অল্প বয়স মুবারকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই সুন্নত মুবারকটি পালন করলেন। সর্বোপরি সুলতানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদে যামান আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নিওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি শিশুকাল থেকেই গরীবে নেওয়াজী তথা অতিথি পরায়ন ছিলেন তা প্রমাণিত হলো। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে গরীবে নেওয়াজীর শিক্ষা ও রহমত উনার জন্মগত স্বভাব হিসেবে হাদীয়া করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! পরবর্তী জীবনে যা উনাকে সীমাহীন মর্যাদা-মর্তবার আসনে সমাসীন করেছিলো।
হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৪) ছবর উনার মাক্বাম এবং তা হাছিলের পন্থা-পদ্ধতি