শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার
প্রতি আদব ও হুসনে যন
সম্মানিত ত্বরীক্বত উনার পুরোটাই আদব। অর্থাৎ এ সম্মানিত পথে প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি স্তরে প্রতিটি বিষয়েই আদব বজায় রাখতে হয়। আদব ব্যতীত কোনভাবেই কামিয়াবী লাভ করা সম্ভব নয়। বেয়াদব কখনোই সফলতা লাভ করতে পারে না।
আর হুসনে যন বা উত্তম ধারণা হচ্ছে, উত্তম ইবাদত। হুসনে যন বা উত্তম ধারনা না থাকলে ত্বরীক্বতের পথে পূর্ণতা লাভ করা যায় না। যিনি যত বেশী হুসনে যন বা সুন্দর ধারণা রাখতে পারেন তিনি তত সহজে মানযীলে মাকসূদে পৌঁছতে পারেন।
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদে যামান, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি আদব বা শিষ্টাচার ও হুসনে যন বা উত্তম ধারণার চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন। উনার শায়েখ সুলত্বানুল আরিফীন, শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত উসমান হারূনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি যে আদব ও হুসনে যন পোষন করতেন তার বদৌলতে তিনি অতি অল্প সময়ে উন্নতির শীর্ষ চূড়ায় পৌঁছার তাওফীক্ব পেয়েছেন। যা আগত-অনাগত সকলের জন্যই ইবরত-নছীহত।
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি জাহিরী ইলিম মুবারক উনার সকল শাখায় বিশেষ বুৎপত্তি অর্জন করার পর গভীরভাবে উপলব্ধি করলেন যে, ইলমে তাছাওউফ ব্যতীত শুধু জাহিরী ইলিম দ্বারা পুরোপুরি ফায়দা হাছিল করা সম্ভব নয় অর্থাৎ শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচা সম্ভব নয়। তাই কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সন্ধানে বিভিন্ন স্থানে সফর করলেন।
নিশাপুরের অন্তর্গত হারূন নামক স্থানে তৎকালীন যুগশ্রেষ্ঠ ওলী, সুলত্বানুল আরিফীন, শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত উসমান হারূনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক ছোহবতে হাজির হলেন। তিনি মনে করতেন, উনার চেয়ে অধিকতর কামিল ওলী আর দ্বিতীয় কেউ নেই। উনার খিদমত মুবারকে আঞ্জাম দিতে পারলে যে কামিয়াবী হাছিল হবে তা অন্য কারো ছোহবতে কখনোই সম্ভব হবে না। উনার প্রতিটি আদেশ-নিষেধই তিনি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আদব, ইহতিরাম ও মুহব্বতের সহকারে পালন করতে লাগলেন। ফলে উনার প্রতি মুহব্বত ও সম্মানবোধ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে লাগলো। উনার তায়াল্লুক-নিছবত মুবারক গভীর থেকে গভীরতম হতে লাগলো। সুবহানাল্লাহ!
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজেই বলেন যে, সুলত্বানুল আরিফীন, শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত উসমান হারূনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ছোহবত মুবারকে যুগ শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাশীল পীর ও মুর্শিদগণ সমবেত ছিলেন। আমিও আদব উনার সাথে সেখানে হাযির হলাম এবং অবনত মস্তকে আদবের সাথে দাঁড়িয়ে রইলাম। হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি আমাকে আদেশ মুবারক করলেন, দুই রাকায়াত নামায আদায় করুন। আমি তৎক্ষনাত উনার আদেশ মুবারক পালন করলাম। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, ক্বিলামুখী হয়ে বসুন। আমি অত্যন্ত আদবের সাথে ক্বিবালামুখী হয়ে বসলাম। তিনি বললেন, পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ পাঠ করুন। আমি পূর্ণ শ্রদ্ধার সাথে সম্পূর্ণ সূরা শরীফটি পাঠ করলাম। তিনি পূনরায় আদেশ মুবারক করলেন, ৬০ বার সুবহানাল্লাহ শরীফ পাঠ করুন। আমি এই আদেশ মুবারকও শ্রদ্ধার সাথে পালন করলাম। হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা নিজে উঠে দাঁড়ালেন এবং আমার হাত মুবারক নিজের হাত মুবারকে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পৌঁছিয়ে দিলাম। অতঃপর সুলত্বানুল আরিফীন, শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত উসমান হারূনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার চার টুকরা বিশিষ্ট সুন্নতী টুপি মুবারক আমার মাথায় পড়িয়ে দিলেন। নিজের খাছ কম্বলখানি আমার শরীর মুবারকে জড়িয়ে দিলেন। অতঃপর বললেন, বসুন। আদেশ মুবারক পাওয়ামাত্র আমি অত্যন্ত আদবের সাথে বসে পড়লাম। তিনি বললেন, হাজার বার পবিত্র সূরা ইখলাছ শরীফ পাঠ করুন। আমি শেষ করলে তিনি আমাকে বললেন, আমাদের মাশায়িখদের স্তরে একমাত্র এটাই এক দিন ও এক রাতের মুজাহাদা বা রিয়াদ্বত-মাশাক্কাত। অতএব, যান, পূর্ণ একদিন ও এক রাত পর্যন্ত মুজাহাদা করতে থাকুন। আমি হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী পূর্ণ এক দিন ও এক রাত মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদতে, নামাযে ও মুজাহাদায় কাটিয়ে দিলাম
হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৪) ছবর উনার মাক্বাম এবং তা হাছিলের পন্থা-পদ্ধতি