শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার খিদমত মুবারকের আঞ্জাম (২)
পূনরায় জিজ্ঞাসা করা হলা। আপনার কোন আমল মহান আল্লাহ পাক তিনি কবুল করেছেন। তিনি বললেন, আমার কোন আমলই কাজে আসেনি। শুধু আমার নছীহত যা আমি মানুষদেরকে দান করতাম, সেটাই আমাকে ক্ষমা করিয়েছে। আর সবচেয়ে বড় ইনাম (পুরস্কার) পেয়েছি আমার শায়েখ ও মুর্শিদ ক্বিবলা উনার মুবারক খিদমত করার জন্য। আমাকে বলা হলো- আপনি আপনার শায়েখ উনার খিদমতে কার্পণ্য করেননি। যার জন্য আপনাকে ক্ষমা করে কবুল করে হলো।
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অশ্রুসিক্ত নয়নে বললেন, ক্বিয়ামতের দিন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সবাইকে স্ব স্ব রওজা শরীফ থেকে উঠানো হবে। উনাদের কাঁধ মুবারকের উপর কম্বল থাকবে। প্রত্যেক কম্বলে কম বেশি এক লক্ষ সুতা লাগানো থাকবে। প্রত্যেক সুতায় কমবেশি এক লক্ষ গীট থকবে। উনাদের মুরীদান, স্ত্রী, পুত্র-কন্যাসহ সকল আহাল-ইয়াল এবং বংশধরগণ সেই সুতা ধরে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত না হাশরের কঠিন হাঙ্গামা থেকে মুক্তি না পাবে। মহান আল্লাহ পাক তাদেরকে পুলসিরাতে পৌঁছাবেন এবং স্বীয় শায়েখ ও মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সাথে এই ত্রিশ হাজার বছরের পথ (পুলসিরাত) ঐ কম্বল ধরে থাকার বরকতে চোখের পলকে পার হয়ে যাবে। আর সম্মানিত জান্নাতের দরজায় পৌঁছে বিনা দ্বিধায় তথায় প্রবেশ করবে। কোথাও কোন বাঁধার সম্মুখী হবে না। সুবহানাল্লাহ! (দলীলুল আরিফীন-৮৪)
সুলতানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, কুতুবুল বাররি ওয়াল বাহার, মুজাদ্দিদে যামান, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি মুহব্বত ও সম্মানের সাথে কোন হক্কানী-রব্বানী আলিম কিংবা ওলীআল্লাহ উনার চেহারা মুবারকের দিকে দৃষ্টি করে মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জন্য একজন ফেরেশতা পয়দা করে দেন, যিনি ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার জন্য দোয়া- প্রার্থনা করতে থাকবে।”
তিনি ইহাও বলেছেন- যে ব্যক্তি কোন হক্কানী-রব্বানী আলিম কিংবা ওলীআল্লাহ উনাকে মনে-প্রাণে মুহব্বত করবে তার আমল নামায় হাজার বছরের ইবাদত-বন্দেগীর সওয়াব লিখিত হয়। আর সেই অবস্থায় তার ইন্তিকাল হলে হক্কানী-রব্বানী আলিম ও ওলীআল্লাহগণ উনাদের সাথে তার হাশর নশর হবে।” সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, ফকীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “একদিন এক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে হাজির হলেন। বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ! ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
كيف تقول فى رجل احب قوما ولـم يلحق بهم قال الـمرء مع من احب
অর্থ: “সেই ব্যক্তির ফায়সালা কি, যে কাউকে মুহব্বত করে কিন্তু উনার মত আমল করতে পারে না। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি যাকে মুহব্বত করবে তার সাথে তার হাশর-নশর হবে।” (বুখারী শরীফ)
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদে যামান আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, “এক ব্যক্তি হক্কানী-রব্বানী আলিম এবং পীর-মাশায়িখগণকে খারাপ জানত। উনাদের কোন খিদমত মুবারক করতো না। উনাদের সাথে সবসময় শত্রুতা পোষণ করতো। উনাদেরকে দেখলে বিদ্বেষের কারণে মুখ ফিরিয়ে নিতো। সে ব্যক্তি একদিন মারা গেল। তার চেহারা বাম দিকে বাঁকা হলো। তাকে কবরে রাখার পর তার মুখ ক্বিবলার দিকে করানোর চেষ্টা করা হলো। কিন্তু কোনক্রমেই মুখ ক্বিবলার দিকে ফিরানো গেলো না। এভাবে অনেক কোশেশ করা হলো কিন্তু কোন ফল হলো না।
এক সময় গায়েবী আওয়াজ আসলো, কেন তাকে কষ্ট দিচ্ছ? দুনিয়াতে সে হক্কানী-রব্বানী আলিম ও পীর-মাশায়িখগণ উনাদেরকে খারাপ জানতো। উনাদের কোন কথা-বার্তা গ্রাহ্যই করতো না। উনাদেরকে দেখলে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিত। আর সেই কারণে সে লা’নতগ্রস্থ হয়েছে।
আজ আমি আমার রহমত থেকে তাকে বঞ্চিত করেছি। তার চেহারাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিয়েছি। তাকে কবর হতে ভল্লুকের চেহারা বিশিষ্ট করে হাশরের ময়দানে হাজির করাবো। নাউযুবিল্লাহ! (তাযকিরাতুল আউলিয়া-৪/২৩৪)