সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদে যামান, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রথম মাকতুবাত বা চিঠি মুবারক (৪)
আমার ভাই কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি। মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার মর্যাদা-সম্মান বৃদ্ধি করুন।
আমার মহান শায়েখ কুতুবুল মাশায়িখ, সুলত্বানুল আউলিয়া, খাজায়ে জাঁহা, সাইয়্যিদুনা হযরত ওসমান হারুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আহলে মা’রিফাত ভিন্ন অন্য কাউকে ইশক এর রহস্যভেদ জ্ঞাত করা বা জানানো নিষেধ।
এক ব্যক্তি উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আহলে মা’রিফাত” উনাকে কিভাবে চেনা যাবে?
উত্তরে তিনি বললেন, “আহলে মা’রিফাত” এর আলামত বা চিহ্ন হচ্ছে, ত্যাগ। যার মধ্যে ত্যাগ আছে, যে সবকিছু বিসর্জন দিতে পারে তাকে “আহলে মা’রিফাত’-এর অন্তর্ভুক্ত মনে করবেন। আর তিনিই মহান আল্লাহ পাক উনার মা’রিফাত বা পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম।
আর যার মধ্যে ত্যাগ নেই, যে সবকিছুকে বিসর্জন দিতে পারে না তার মধ্যে মা’রিফাত মুহব্বত মুবারকের গন্ধও নেই। আর ইহা ভালোভাবে জেনে রাখুন যে, পবিত্র কালিমায়ে শাহাদত এবং নফী (না) ও ইসবাত (হ্যাঁ) মহান আল্লাহ পাক উনার মা’রিফাত মুবারক বা পরিচিতি।
এক্ষেত্রে দুনিয়াবী ধন-সম্পদ এবং সম্মান-মর্যাদা অত্যন্ত কঠিন প্রতিবন্ধকতা। এসব বস্তু অনেক সালিক বা মুরীদকে সঠিক রাস্তা হতে বিমুখ করেছে। তারা বিপথগামী বা ভ্রষ্ট হয়েছে। মানুষের নিকট সম্পদ ও সম্মান অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে দেখা দেয়। এ দুটোর মোহে তারা মোহগ্রস্ত হয়ে থাকে। যার ফলে তারা পথভ্রষ্ট বা বিপথগামী হয়ে যায়।
অনেক লোকই ধন-সম্পদ ও সম্মান-মর্যাদার প্রত্যাশী হয়ে থাকে। এ দুটোর পিছনে দিন-রাত ছুটে বেড়ায়। জীবনের অনেক মূল্যবান সময় তাদের পিছনে ব্যয় করে থাকে।
কাজেই, যারা ধন-সম্পদ ও সম্মান-মর্যাদার প্রত্যাশাকে মন থেকে মুছে ফেলতে পেরেছে তারাই ‘নফী’ করেছে। আর যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মা’রিফাত-মুহব্বত হাছিল করতে পেরেছে সে সম্পূর্ণ ‘ইছবাত’ করে নিয়েছে। আর এ বিষয়টি ‘নফী-ইছবাত’ যিকিরের দ্বারা হাছিল হয়।
সুতরাং যে কালিমায়ে তাইয়্যিবা পাঠ করেনি অর্থাৎ ‘নফী-ইছবাত’ যিকির করেনি তার এ মাক্বাম হাছিল করা তথা মহান আল্লাহ পাক উনার মা’রিফাত মুবারক বা পরিচিতি মুবারক লাভ করা সম্ভব নয়।
একদিন আমার সম্মানিত শায়েখ সুলতানুল আউলিয়া, খাজায়ে জাহাঁ, সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা উসমান হারুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নফী-ইছবাতের কালিমা (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ) সম্মন্ধে এক মর্মস্পর্শী নছীহত মুবারক করেন। তিনি বললেন, ‘নফী’ অর্থ: নিজেকে না দেখা। আর ‘ইছবাত’ অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনাকেই দেখা। কেননা নিজের অস্তিত্বে নিজে অবস্থান করে মহান আল্লাহ পাক উনার মধ্যে অবস্থান করা যায় না।
কাজেই নফীকে হাক্বীক্বীভাবেই বা পরিপূর্ণরুপে নফী করা আবশ্যক। অন্যথায় কোন ফায়দা হাছিল করা সম্ভব নয়।
যদি এ খেয়াল করা হয় যে, হাস্তী (অস্তিত্ব) বলতে শুধু মহান আল্লাহ পাক উনার হাস্তীকেই বুঝায় তাহলে উদ্দেশ্য হাছিল হতে পারে।