নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِيْ مَنْصُورِيْنَ عَلَى الْـحَقِّ لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَـهُمْ
অর্থ: সর্বদাই আমার উম্মতের মধ্যে একটি সাহায্যপ্রাপ্ত বিজয়ী দল হক্বের উপর থাকবে। বাতিলপন্থিরা উনাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত দ্বীন উনাকে জীবন্ত রাখার জন্য যুগে যুগে নিযুক্ত করেছেন নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম, ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া এবং উনাদের ওয়ারিছ ওলীআল্লাহ ও মুজাদ্দিদ উনাদেরকে এবং উনাদের সহযোগিতা করার জন্য উনাদের মুরীদ মু’তাকিদ ও সহযোগীদেরকে। তবে এদের মধ্যে থেকে অনেকেই উক্ত বিষয়ের সঠিক কাজগুলির বিরোধিতা করে থাকে এমনকি নিজেরা মুরতাদ হয়ে চলে যায়। তবে তাদের চলে যাওয়ায় সেসব ওলীআল্লাহ মুজাদ্দিদগণ উনাদের কোন ক্ষতি হবে না। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের পরিবর্তে এমন কিছু লোককে নিয়ে আসবেন যারা মুহব্বতের সাথে কাজগুলোকে আঞ্জাম দিবেন এবং তারা হবেন অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রমী।
প্রসঙ্গত দেখা যায়, বাতিলপন্থীরা তো বটেই বরং নিজ দল বা গোত্রেরই কিছু লোক হক্বের বিরোধিতা করে থাকে এমনকি তারা দল থেকে বের হয়ে যায়। ক্ষেত্রবিশেষে মুরতাদে পরিণত হয়।
সুপ্রসিদ্ধ কথা; সর্বদাই একটি দল হক্বের উপর থাকবেন, আর গাফিল ও ইহানতকারীরা মুরতাদ হয়ে যাবে আর তাদের পরিবর্তে এমন হক্কানী সম্প্রদায়কে নিযুক্ত করা হবে যারা হবেন কঠোর পরিশ্রমী। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَنْ يَّرتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِيْنِهٖ فَسَوْفَ يَأْتِي اللهُ بِقَوْمٍ يُـحِبُّهُمْ وَيُحِبّوْنَهٗ أَذِلَّةٍ عَلَى الْـمُؤْمِنِيْنَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِريْنَ يـُجَاهِدُوْنَ فِـيْ سَبِيْلِ اللهِ وَلَا يـَخَافُوْنَ لَومَةَ لَائِمٍ ۚ ذٰلِكَ فَضلُ اللهِ يُؤْتِيْهِ مَنْ يَّشَاءُ ۚ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
অর্থ: হে ঈমানদাররা! তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ তার দ্বীন থেকে ফিরে যায় তথা মুরতাদ হয়ে যায়, মহান আল্লাহ পাক তিনি তবে শীঘ্রই তাদের পরিবর্তে নিয়ে আসবেন এমন একটি সম্প্রদায়, তাদের তিনি মুহব্বত করবেন ও উনারা মুহব্বতকারী হবেন, উনারা মু’মিনদের প্রতি দয়াশীল হবেন, কাফিরদের প্রতি হবেন কঠোর, উনারা মহান মহান আল্লাহ পাক উনার পথে জিহাদ করবেন, আর ভয় করবেন না কোনো নিন্দুকের নিন্দা। এই হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার এক দয়া, তিনি তা প্রদান করেন তিনি যাকে ইচ্ছে করেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি পরম প্রশস্ত ও সর্বজ্ঞাত। (পবিত্র সূরা মায়িদাহ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৪)
হক্কানী রব্বানী আউলিয়া কিরাম উনাদের শানে সবসময় সার্বিকভাবে হুসনে যন বা সুধারণা
পোষণ করতে হবে
অন্যান্য মহৎ গুণের পাশাপাশি একজন মুসলিমকে যে বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে তা হল সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ পাক উনার উপর ভরসা করা ও সুধারণা পোষণ করা। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সুধারণা পোষণ করা। হক্কানী রব্বানী আউলিয়া কিরাম উনাদের শানে সবসময় সার্বিকভাবে হুসনে যন রাখা। মুসলমান ঈমানদারদের প্রতি সুধারণা পোষণ করা। কেননা হুসনে যন বা সুধারণা পোষণ করা ওয়াজিব।
হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার তিনদিন পূর্বে বলতে শুনেছি-
لاَ يَمُوتَنَّ أَحَدُكُمْ إِلاَّ وَهُوَ يُحْسِنُ الظَّنَّ بِاللهِ عَزَّ وَجَلَّ
অর্থ: তোমাদের কেউ যেন মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি সুধারণা পোষণ ব্যতীত মৃত্যুবরণ না করে। (মুসলিম শরীফ)
অনুরূপভাবে মু’মিনদের প্রতি অপরাপর মু’মিনদের সুধারণা পোষণ করাও ওয়াজিব। সুধারণা সমাজে কল্যাণ বয়ে আনে, ভ্রাতৃত্ববোধ অটুট রাখে। সুচিন্তা-সুধারণা আমাদেরকে বিবেকবান উন্নত মানুষে পরিণত করে। প্রত্যেক বিবেকবান মানুষেরই সুধারণামূলক মনোভাব থাকা আবশ্যক। কেননা অপরের উপর ভাল ধারণা পোষণ করা নেকীতে পরিণত হয়। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
حُسْنُ الظَّنِّ مِنْ حُسْنِ الْعِبَادَةِ
অর্থ: ‘সুন্দর ধারণা সুন্দর ইবাদতের অংশ’। সুবহানাল্লাহ! (আবূ দাউদ শরীফ: ৪৯০৯)
সুধারণা পোষণ উন্নত চরিত্রের ভূষণ। অন্যের সম্পর্কে সুধারণার ফলে পারস্পরিক ভুল বুঝাবুঝির অবসান পুরোপুরিভাবে সম্ভব। মানুষের প্রতি সুধারণা পোষণ করা উত্তম ইবাদতের সমতুল্য।
হুসনে যন হচ্ছে পাইপের মত: যিনি যত বেশী হুসনে যন রাখবেন তিনি তত বেশী ফায়িয তাওয়াজ্জুহ ও নিয়ামত মুবারক লাভ করবেন। আর এজন্য স্বপ্নেও হযরত শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি বদ যন রাখা যাবে না। সবসময়ই হুসনে যন বা সুধারণা রাখতে হবে।
মূলতঃ কারো প্রতিই বদ যন রাখা যাবে না। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, ‘তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। কারণ ধারণাভিত্তিক কথা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। তোমরা একে অপরের দোষ অনুসন্ধান করো না আর তোমরা পরস্পর পরস্পরের ব্যাপারে হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করো না এবং পরস্পর শত্রুতা ও দুশমণি পোষণ করো না; বরং ভাই ভাই হয়ে থাক। (বুখারী শরীফ)
এজন্য মুরতাদ হওয়া ও মুরতাদের শাস্তি থেকে বাঁচতে হলে সবসময় হযরত শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার শানে হুসনে যন রাখা সালিক-সালিকা, মুরীদদের জন্য ফরয-ওয়াজিব। কেননা যারা দ্বীন থেকে ফিরে মুরতাদ হয়ে যায় সেসব মুরতাদের হুকুম সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّمَا جَزَاءُ الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللَّـهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا أَن يُقَتَّلُوا أَوْ يُصَلَّبُوا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم مِّنْ خِلَافٍ أَوْ يُنفَوْا مِنَ الْأَرْضِ ۚ ذَٰلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِي الدُّنْيَا ۖ وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ
অর্থ: যারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে আর দেশে গন্ডগোল বাধাতে তৎপর হয় তাদের একমাত্র প্রাপ্য হচ্ছে, তাদের কতল করো, অথবা শূলে চড়াও, অথবা তাদের হাত ও তাদের পা বিপরীত দিকে কেটে ফেলো, অথবা তাদের দেশ থেকে নির্বাসিত করো। এটি হচ্ছে তাদের জন্য ইহলোকে লাঞ্ছনা, আর তাদের জন্য পরকালে রয়েছে কঠোর শাস্তি। (পবিত্র সূরা মায়িদাহ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
এককথায় এসব মুরতাদের শাস্তি হলো: তাদের প্রত্যেককেই গ্রেফতার করে জেল-হাজতে প্রবেশ করাতে হবে। অতঃপর তওবা করার জন্য তিন দিন সময় দিতে হবে। যদি তারা তওবা করে ভালো; অন্যথায় তাদের প্রত্যেককেই পবিত্র শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে।
কাজেই হক্কানী রব্বানী আউলিয়া কিরাম উনাদের শানে সবসময় সার্বিকভাবে হুসনে যন রাখতে হবে; আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার শান মুবারকে খাছভাবে হুসনে যন পোষণ করতে হবে। কেননা উনার কাছে বাইয়াত হয়ে ফিরে গেলে মুরতাদ হবে। নাউযুবিল্লাহ!
-শেখ মুহম্মদ আব্দুর রহমান মাছূম, বগুড়া।