হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৩৫) ক্বানায়াত উনার মাক্বামে ফানা ও বাক্বা কতিপয় আউলিয়ায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম-২ আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

সংখ্যা: ২৭৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

পূর্ব প্রকাশিতের পর

পরের দিন আমি আবার বাজারে গেলাম। কিন্তু অনেক তালাশ করেও উনাকে পেলাম না। আমি লোকদেরকে উনার বিবরণ দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। সেই কিশোর বালক কোথায়?

তারা বললো, তিনি শুধু সপ্তাহে একদিন কাজ করেন। আগামী ইয়াওমুস সাবত আসলে উনাকে পাবেন। আমি মনে মনে ভাবলাম, কাজ আপাতত স্থাগিত রাখবো। উনাকে দিয়েই কাজ করাবো। আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম। ইয়াওমুস সাবত খুব সকালে আমি বাজারে গেলাম এবং উনাকে একই অবস্থায় পেলাম। আমি উনাকে সালাম করলাম। তিনি সালামের জওয়াব দিলেন। আমি কাজের কথা বললাম। তিনি পূর্বের ন্যায় শর্ত দিলেন। আমি সেই শর্তে উনাকে নিয়ে এলাম। উনাকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে, দূরে বসে দেখতে লাগলাম, তিনি কিভাবে একাই এতো কাজ করতে পারেন।

দেখতে পেলাম উনি বালু ও সিমেন্টগুলো নাড়াচাড়া করে দেয়ালে লাগিয়ে দিচ্ছেন। আর ইটগুলো লাফ দিয়ে আপনা আপনি (আপছে আপ) যথাস্থানে বসে যাচ্ছে। এটা দেখে আমার হক্কুল ইয়াক্বীন (দৃঢ় বিশ্বাস) হলো যে, তিনি অবশ্যই একজন ওলীআল্লাহ। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার বন্ধুর কাজগুলো কুদরতীভাবে সুসম্পন্ন করে দিচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ!

সন্ধার সময় তিনি ফিরে যেতে চাইলেন। আমি উনাকে অতিরিক্ত কিছু দিরহাম দিলাম। কিন্তু তিনি তা নিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলেন। অবশেষে এক দিরহাম ও এক দানিক (১/৬ দিরহাম) নিয়েই বিদায় হলেন।

পরের সপ্তাহে আমি উনার তালাশে আবারো বাজারে গেলাম। কিন্তু উনাকে পেলাম না। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম যে, তিনি একটি জঙ্গলে নির্জনস্থানে তিন দিন থেকে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে আছেন। উনার অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। আমি সেই ব্যক্তিকে কিছু হাদিয়া দিয়ে বললাম, ভাই! আমাকে উনার কাছে নিয়ে চলো।

সে ব্যক্তি আমাকে এক নির্জন স্থানে নিয়ে গেল। দেখলাম, তিনি অসহায়ের মত পড়ে আছেন। আমি উনাকে সালাম দিলাম। তিনি মাথা মুবারক উঠালেন। সালামের জাওয়াব দিলেন। দেখলাম, উনার মাথা মুবারকের নীচে একটি ইট। আমি উনার মাথা মুবারক আমার কোলে তুলে নিলাম। তিনি আমাকে নছীহত করলেন- বন্ধু আমার! স্বচ্ছল বা পার্থিব জীবন তোমাকে যেন ধোঁকায় ফেলতে না পারে। সতর্ক থাকবে। এ জীবন একদিন শেষ হবে। আরাম-আয়েশও একদিন ফুরিয়ে যাবে। তুমি যখন কোন কবরস্থানে যাবে তখন চিন্তা করবে তোমাকেও একদিন কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে।

হে আবু আমের! একটু পড়েই আমি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করবো। তুমি আমাকে গোছল দিবে। আমার পরিহিত কাপড়েই কাফন দিবে। আমি বললাম, কেন নতুন কাপড় পরাবো না? তিনি বললেন, মৃত ব্যক্তির তুলনায় জীবিত ব্যক্তিই নতুন কাপড়ের অধিক হক্বদার। আমার গোটা জীবনটাতো এভাবে কাটিয়ে দিলাম।

আমার এই বস্তা এবং লুঙ্গি কবর খননকারীকে দিবে। এই পবিত্র কুরআন শরীফখানা এবং আংটিটি কথিত আমীরুল মু’মিনীন কথিত খলীফা হারুনুর রশিদকে দিবে। আর বলবে- আমার নিকট তোমার একটি আমানত আছে। এক মুসাফির বালক তা দিয়েছেন। তাকে আরো বলবে, তুমি সাবধান থাকো। এই গাফলতি ও ধোকার মাঝে তোমার যেন মৃত্যু না হয়। একথা বলতে বলতে- তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করলেন। আর তখনি আমি জানতে পারলাম যে, ইনি কথিত খলীফা হারুনুর রশিদের কলিজার টুকরা পুত্র। আমি উনার সকল ওসিয়ত মুবারক পূর্ণ করলাম। পবিত্র কুরআন শরীফ এবং আংটিটি নিয়ে বাগদাদে পৌঁছলাম। পবিত্র কুরআন শরীফ এবং আংটিটি কথিত খলীফাকে দিলাম। তার ছেলে আমাকে যা বলতে বলেছেন আমি সবকিছু বললাম। কথিত খলীফা, আমিরুল মু’মিনীন, আমার কথা শুনে মাথা নীচু করলো এবং দীর্ঘক্ষণ কাঁদলো। কথিত খলীফা বললো, হে আবু আমের! আমার নিকটে বসো। আমি তার নিকট বসলাম। সে আমাকে বললো, তুমি আমার ছেলেকে কি চিনতে? সে কি কাজ করতো? বললাম, তিনি রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। তুমি তাকে নিজ হাতে গোসল দিয়েছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। আমি নিজ হাতে উনাকে গোসল দিয়েছি। কথিত খলীফা বললো, তোমার হাত দু’টি একটু বাড়িয়ে দাও। আমি হাত বাড়ালাম। সে আমার হাতে বুছা দিলো। অতঃপর বুকের উপর রেখে অঝোর নয়নে কাঁদলো। তারপর বছরার দিকে রওয়ানা হলো। বছরায় পৌঁছে আপন স্নেহধন্য পুত্রের কবরের পাশে দাঁড়ালো। নিজকে সংবরণ করতে পারলো না। বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলো। হুঁশ ফিরে আসলে দুঃখজনিত কন্ঠে কয়েকটি কবিতা পাঠ করলো। কথিত খলীফার বিরহ-বিচ্ছেদের ব্যাথায় জর্জড়িত হয়ে উপস্থিত সকলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।

হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২১১) হুসনুল খুল্ক্ব বা সচ্চরিত্রবান মুরীদই শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সর্বাধিক নৈকট্যশীল ও সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত।

হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২১২) হুসনুল খুল্ক্ব বা সচ্চরিত্রবান মুরীদই শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সর্বাধিক নৈকট্যশীল ও সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত।

হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২১৩) হুসনুল খুল্ক্ব বা সচ্চরিত্রবান মুরীদই শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সর্বাধিক নৈকট্যশীল ও সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত।

হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২১৪) হুসনুল খুল্ক্ব বা সচ্চরিত্রবান মুরীদই শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সর্বাধিক নৈকট্যশীল ও সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত।

হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২১৫) হুসনুল খুল্ক্ব বা সচ্চরিত্রবান মুরীদই শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সর্বাধিক নৈকট্যশীল ও সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত।  আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম