ছবর উনার মাক্বাম উনার ফযীলত-সম্মান (৪)
আখিরাতের জীবনে মহান আল্লাহ পাক উনার আযাব ও গযব হতে যে ব্যক্তি বাঁচতে চায়, মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত ও অনুগ্রহ প্রাপ্তির আশা পোষণ করে এবং যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে আগ্রহী-অনুরাগী, সর্বোপরি যে ব্যক্তি মা’রিফাত-মুহব্বত, সন্তুষ্টি-রেযামন্দি তালাশ করে তার কর্তব্য হলো দুনিয়ার লোভ-লালসা ও প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা হতে নিজেকে সংযত রাখা, দুঃখ-কষ্ট, রোগ-শোক ও আপদ-বিপদে ধৈর্যধারণ করা।
যিনি খ¦ালিক মালিক রব তায়ালা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَالله يُـحِبُّ الصَّابِرِيْنَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি ছবরকারীদের মুহব্বত করেন।
ছবর বা ধৈর্য চার প্রকারে বিভক্ত। যথা: ১. মহান আল্লাহ পাক কতৃর্ক ফরযকৃত ইবাদতসমূহ সমাধা করার ব্যাপারে ছবর করা। ২. মহান আল্লাহ পাক কর্তৃক নিষিদ্ধ কাজ হতে বিরত থাকার ব্যাপারে ছবর করা। ৩. দুঃখ-কষ্ট ও বিপদ আপদে ছবর করা। ৪. কোন মুসীবতে পতিত হওয়ার অব্যবহিত পর প্রথম অন্তর্জ্বালার মুহূর্তেই ছবর করা ।
যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত ও ফরয কার্য সমাধা করার ব্যাপারে ছবর করবে, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে তিনশত গুণ মর্যাদা দান করবেন। প্রত্যেক মর্যাদার মধ্যবর্তী ব্যবধান হবে আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান। সুবহানাল্লাহ! অনুরূপ, যে ব্যক্তি নিষিদ্ধ কাজ হতে বিরত থাকার ব্যাপারে ধৈর্যধারণ করবে, তাকে মহান আল্লাহ পাক ক্বিয়ামতের দিন ছয়শত গুণ মর্যাদা দান করবেন। প্রত্যেক মর্যাদার মধ্যবর্তী ব্যবধান হবে সপ্তম আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী দুরত্বের সমান। এমনিভাবে যে ব্যক্তি মুসীবতে ধৈর্যধারণ করবে, ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ পাক তাকে সাতশত গুণ মর্যাদা দান করবেন। প্রত্যেক মর্যাদার মধ্যবর্তী দূরত্ব হবে আরশ থেকে তাহতাচ্ছারা (যমীনের সর্বনিম্ন সপ্তম তবকের) নীচ পর্যন্ত দূরত্বের সমান।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, কোন বান্দা মুছীবতে পতিত হওয়ার পর যদি একমাত্র আমারই উপর ভরসা করে এবং আমার প্রতি আনুগত্য সহকারে দৃঢ়পদ থাকে, তা হলে আমার কাছে প্রার্থনা করার পূর্বেই আমি তার মনোবাঞ্ছা পূরণ করি। পক্ষান্তরে যদি সে আমাকে উপেক্ষা করে কোন মাখলূক্বের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে, তাহলে আমি তার জন্য আসমানের দরজা (সাহায্য) বন্ধ করে দিই।
অতএব, সত্যিকারের জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হলো- আপদ-বিপদে, দুঃখ-কষ্টে ধৈর্যধারণ করা; এ ব্যাপারে কোনরূপ অভিযোগ উত্থাপন না করা। তাহলেই দুনিয়া ও আখিরাতের কঠিন শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য যে, হযরত আম্বিয়ায়ে কিরাম আলাইহিমুস সালাম ও হযরত আউলিয়া কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে সর্বাধিক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে।
হযরত মুআ’য বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন কোন বান্দাকে রোগাক্রান্ত করেন, তখন বাম কাধের হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনাকে তার পাপরাশির লিপিবদ্ধ করতে নিষেধ করে দেন এবং ডান কাঁধের হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনাকে এই মর্মে নির্দেশ করেন যে, এই অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ অবস্থায় যেসব ইবাদত ও নেক আমল করতে সক্ষম ছিল, তার আমলনামায় সেগুলোর ছাওয়াব লিপিবদ্ধ করতে থাকুন।