ছবরের মাক্বাম উনার ফযীলত-সম্মান (৫)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়্যীন, মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: যখন কোন বান্দা অসুস্থ হয়, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার নিকট দুইজন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমাস সালাম উনাদেরকে পাঠান। এই মর্মে নির্দেশ মুবারক দান করেন যে, আমার এই বান্দা কি আমল করে, তা আপনারা লক্ষ্য করুন। অসুস্থ বান্দা যদি মহান আল্লাহ পাক উনার ছানা-ছিফত বা প্রশংসা ও শুকুর বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাহলে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বান্দার এই ছানা-ছিফত ও শুকুর মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফে পেশ করেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, উক্ত বান্দার প্রতি আমার হক্ব ও প্রাপ্য সাব্যস্ত হয়ে গেছে। সুতরাং আমি যদি এই পীড়াবস্থায় তাকে মৃত্যু দান করি, তাহলে অবশ্যই তাকে জান্নাত দিবো। আর যদি রোগ হতে মুক্তি দান করি, তাহলে তার স্বাস্থ্য, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, গোশতপেশী ও রক্ত প্রবাহ পূর্বের চেয়েও আরও উন্নততর করে দিবো এবং সেই সঙ্গে তার সমুদয় গুণাহ্ মাফ করে দিবো।” সুবহানাল্লাহ!
বনী ইসরাঈলের জনৈক ভবঘুরে ও বদ লোক ছিল। বিভিন্ন ধরণের গর্হিত কাজে সে লিপ্ত থাকতো। নগরবাসীরা বহু চেষ্টা কোশেশ করেও সংশোধন করতে পারেনি। অবশেষে অতিষ্ঠ হয়ে সকলেই মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফে তার কদর্যতা হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য কায়মনোবাক্যে কাকুতি-মিনতি করে মুনাজাত করলো। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তাদের দোআ কবুল করেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত মুসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট সম্মানিত ওহী মুবারক পাঠালেন, “হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! বনী ইসরাঈল গোত্রে একজন বদকার যুবক আছে, তাকে শহর হতে বহিষ্কার করে দিন। যাতে শুধুমাত্র এক ব্যক্তির পাপের কারণে সমগ্র নগরবাসীর উপর আমার গযব নাযিল না হয়।
সাইয়্যিদুনা হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী তাকে বহিষ্কার করে দিলেন। সেই যুবক শহর হতে বহিষ্কৃত হয়ে পার্শ্ববর্তী অপর এক বস্তিতে আশ্রয় গ্রহণ করে। মহান আল্লাহ পাক সাইয়্যিদুনা হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট পুনরায় সম্মানিত ওহী মুবারক পাঠিয়ে তাকে সেখান থেকেও বহিষ্কার করার নির্দেশ মুবারক দিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তাই করলেন। লোকটি এক বিজন প্রান্তরে গিয়ে আশ্রয় নিলো। যেখানে মানুষ বা পশুপক্ষী এমনকি তরুলতা বলতে কিছুই ছিলনা। পরবর্তী এক পর্যায়ে লোকটি সেখানে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এমন অসহায় অবস্থায় তার পার্শ্বে সাহায্যকারী বলতে কেউ ছিল না। এই করুণ অবস্থায় সে ভুলুন্ঠিত হয়ে বারবার বলছিল, হায় আফসুস! আজকে যদি মা আমার কাছে থাকতেন, তাহলে তিনি আমার দুঃখে দুঃখিতা হতেন। আমার সেবা-শুশ্রম্নষা করতেন। মায়া-মুহব্বত করতেন। আমার জন্য নয়ন সিক্ত করে রোদন করতেন। হায়! আজকে যদি আমার পিতা কাছে থাকতেন, তাহলে তিনি আমার সাহায্য-সহযোগিতা করতেন।
হায়! যদি আমার আহলিয়া (স্ত্রী) পার্শ্বে থাকতো, তাহলে সে আমার দুঃখে কাঁদতো। যদি আমার সন্তান-সন্ততি এখানে থাকতো, তাহলে তারা আমার মৃতদেহের পার্শ্বে বসে কান্নাকাটি করতো। আর বলতো, আয় মহান আল্লাহ পাক! আমার প্রবাসী পিতাকে আপনি ক্ষমা করে দিন। তিনি অসহায়-দুর্বল, আপনার নাফরমান, অবাধ্য ও স্বেচ্ছাচারী। লোকেরা তাকে শহর থেকে বস্তিতে বের করে দিয়েছে। পুনরায় তাকে বস্তি থেকে বিজন প্রান্তরে বহিষ্কার করেছে। আর আজকে তিনি ইহকালের এই বিজন ভূমি থেকে পরকালের পথে চিরবিদায় গ্রহণ করছেন। সবকিছু থেকে তিনি নিরাশ ও বঞ্চিত হয়ে একমাত্র আপনার দিকে রওয়ানা হচ্ছেন। আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি আমাকে, আমার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও আহলিয়া থেকে সুদূর প্রান্তরে নিক্ষেপ করেছেন, জীবনের এই করুণ মুহূর্তে দয়া করে আমাকে আপনার রহমত ও করুণা থেকে চিরবঞ্চিত করবেন না। তাদের বিচ্ছেদে আপনি আমার অন্তর দগ্ধীভূত করেছেন, মেহেরবানী করে আমার পাপরাশির কারণে আমাকে দোযখের অগ্নিতে দগ্ধীভূত করবেননা।” (মুকাশাফাতুল কুলূব-৩৬)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮২)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৩)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৪)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৫) –
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৬)