ছবরের মাক্বাম উনার ফযীলত-সম্মান (৬)
লোকটির এই করুন আর্তনাদ, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কবুল হলো। তার আহলিয়া (স্ত্রী) ও মায়ের আকৃতি দিয়ে দু’জন হুর, সন্তান-সন্ততির আকৃতি দিয়ে জান্নাতের কয়েকজন শিশু-কিশোর এবং পিতার আকৃতি দিয়ে একজন ফেরেশতা পাঠিয়ে দিলেন। তারা সকলেই লোকটির পার্শ্বে বসে কান্না-কাটি করতে লাগলো। এভাবে সকলের উপস্থিতিতে সে আনন্দচিত্তে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে মিলিত হয় এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি তার সমস্ত গুণাহ্ মাফ করে দেন। এভাবে সম্পূর্ণ পবিত্র হয়ে সে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট সম্মানিত ওহী মুবারক পাঠালেন, হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আপনি অমুক বিজন প্রান্তরে গিয়ে দেখুন, আমার এক মাহবূব বা প্রিয় বান্দার ইন্তিকাল হয়েছে। আপনি তার কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করুন। মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম অনুসারে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম সেখানে গিয়ে সে যুবকটিকেই দেখলেন, যাকে তিনি ইতিপূর্বে মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমে শহর থেকে বস্তিতে, আবার বস্তি থেকে বিজন ভূমিতে বিতাড়িত করেছিলেন। তিনি আরও দেখলেন যে, লোকটির আশেপাশে বেহেশতের হুর-পরীগণ তাকে বেষ্টন করে বসে আছেন। এতদ্দর্শনে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আরয করলেন: হে মহান আল্লাহ পাক! এই লোকটি তো সে-ই, যাকে আমি আপনার হুকুমে শহর ও বস্তি থেকে বহিষ্কার করেছি। মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন: হে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আমি তার প্রতি দয়া ও রহমত নাযিল করেছি এবং তার যাবতীয় পাপকার্য ক্ষমা করে দিয়েছি। কারণ, সে এই বিজন প্রান্তরে স্বীয় জন্মভূমি, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অসহায় অবস্থায় কান্নাকাটি করেছে। আমি তার মায়ের দেহাবয়বে বেহেশতের হুর, তার পিতার সাদৃশ্যে বেহেশতের ফেরেশতা এবং তার আহলিয়ার আকৃতিতে অপর একজন হুর পাঠিয়ে দিয়েছি। এরা সকলেই আমার কাছে তার এই দুঃখ-যাতনায় ভরপুর মুসাফেরী অবস্থার প্রতি রহম ও করুণার জন্য প্রার্থনা করেছে। একজন আশ্রয়হীন মুসাফির যখন মারা যায় তখন আসমান ও যমীনের সমগ্র মাখলুক্ব-সৃষ্টি তার প্রতি দয়া ও রহমত বর্ষণের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে প্রার্থনা করতে থাকে। সুতরাং এ অবস্থায় আমি কি তার প্রতি দয়া ও করুণা প্রদর্শন করবো না? অথচ আমিই একমাত্র অনন্ত মেহেরবান ও অসীম দয়ালু। (মুকাশাফাতুল কুলূব-৩৮)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আত্তার রহমতুল্লাহি আলাইহি একজন বিশিষ্ট বুজুর্গ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বলেন: তুমি যদি কোন বান্দার অন্তকরণের সত্যাসত্য ও প্রকৃত অবস্থা যাচাই করতে চাও, তাহলে তার সুখ-স্বাচ্ছন্দ ও দুঃখ-কষ্ট উভয় অবস্থার কার্যকলাপের প্রতি লক্ষ্য কর। যদি সে কেবল সুখ- স্বাচ্ছন্দের সময়েই মহান আল্লাহ পাক উনার শোকর আদায় করে, অথচ দুঃখ-কষ্টের সময় হা-হুতাশ করে, তাহলে বুঝতে হবে সে মিথ্যুক ও প্রতারক। বস্তুতঃ কোন ব্যক্তি যদি সমগ্র জ্বিন ও মানবকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ জ্ঞানের অধিকারী হয়, অতঃপর কোন দুর্ভোগে পতিত হওয়ার পর কোনরূপ শেকায়াত বা অভিযোগ উত্থাপন করে, তাহলে একথা নিশ্চিত যে, তার সমস্ত ইলিম ও জ্ঞানচর্চা সম্পূর্ণ বৃথা এবং সকল আমল ও ইবাদত একেবারে নিষ্ফল।
পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন:
مَن لَـمْ يَـرْضُ بِقَضَائِيْ وَلَـمْ يَشْكُرْ لِعَطَائِيْ فَـلْيَطْلُبْ رَبَّا سَوَائِیْ
অর্থ: যে ব্যক্তি আমার (নির্ধারিত) তাকদীরের প্রতি অসন্তুষ্ট এবং আমার দান ও নিয়ামতে অকৃতজ্ঞ, সে যেন আমাকে ছাড়া অন্য কোন রব তালাশ করে নেয়। (মুকাশাফাতুল কুলূব-৩৯)
হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৮)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৭৮)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৭৮)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮০)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৭৬)