نيات (নিয়ত) অর্থ: অন্তরের দৃঢ় সংকল্প, দৃঢ় ইচ্ছা। অন্তরের দৃঢ় সংকল্প ও ইচ্ছাকে নিয়ত বলে। মহান আল্লাহ পাক এবং উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি রেযামন্দি মুবারক হাছিলের লক্ষ্যে কোন আমল বা কাজ করার আন্তরিক সংকল্পকে বিশুদ্ধ নিয়ত বলে। কোন নেক আমল করার পূর্বে নিয়ত বিশুদ্ধ করা আবশ্যক। সেক্ষেত্রে যাচাই বাছাই করা উচিত যে, নিয়ত বিশুদ্ধ হচ্ছে কি না।
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, এক অঞ্চলের এক আমীর লোকজন নিয়ে শিকারে বের হলেন। শিকারের পিছু ছুটতে ছুটতে সেই আমীর ব্যক্তি তার লোকজন হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় একাকী হয়ে পড়েন। এখন দীর্ঘ সময় চলাচলের কারণে আমীর ব্যক্তি পিপাসা অনুভব করেন এবং পিপাসা নিবারণের জন্য কোন উপায় খঁুজতে থাকেন। খুঁজতে খুঁজতে তিনি গহীন জঙ্গলের ভিতরে আঙ্গুরের বাগান বেষ্টিত একটি বাড়ি দেখতে পান। আমীর ব্যক্তি খেঁাজ নিয়ে জানতে পারেন যে, এ বাড়িতে একজন দরবেশ ব্যক্তি উনার আহলিয়া ও শিশু কন্যা সন্তান নিয়ে বসবাস করেন। দরবেশ ব্যক্তি জঙ্গল হতে কাঠ সংগ্রহ করে তা বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আমীর যখন সেই বাড়িতে আসেন। তখন দরবেশ ব্যক্তি নিজ কাজে ব্যস্ত থাকায় বাড়ীতে উপস্থিত ছিলেন না। আমীর ব্যক্তি দরবেশ ব্যক্তির শিশু কন্যা সন্তানের কাছে এক পেয়ালা সুপেয় পানীয় বা শরবত চাইলেন। দরবেশ ব্যক্তির মেয়ে আঙ্গুর বাগান হতে আঙ্গুর নিয়ে তা শরবত বানিয়ে আমীরকে দিলেন। আমীর তা পান করে অনুভব করলেন যে এটা অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট। তাই, আমীর ব্যক্তি আরো এক পেয়ালা চাইলেন। যখন দ্বিতীয় পেয়ালা তাকে দেয়া হলো তখন তা অত্যন্ত তিতা ও বিস্বাদ অনুভূত হলো। আমীর বললেন, প্রথম পেয়ালা ছিল সুস্বাদু কিন্তু দ্বিতীয় পেয়ালা এমন বিস্বাদ হলো কেন? দরবেশের কন্যা বললেন, একই বাগানের একই গাছ হতেই আঙ্গুর আনা হয়েছে, স্বাদ ভিন্ন হওয়ার তো কারণ নেই। তবে নিশ্চয়ই আপনার নিয়তে কোন সমস্যা হয়েছে, যার কারণে দ্বিতীয় পেয়ালার স্বাদ নষ্ট হয়ে গেছে। তখন আমীর ব্যক্তি স্বীকার করলেন যে, প্রথম পেয়ালা শরবত পান করে তৃপ্তি লাভ করায় মনে মনে এ বাগান জবর দখল করার চিন্তা করেছিলাম। তাই দ্বিতীয় পেয়ালার শরবত বিস্বাদ হয়ে গিয়েছে। তখন দরবেশ ব্যক্তির মেয়ে বললেন যে, নিয়তের সমস্যার কারণে আপনার স্বাদেও সমস্যা তৈরী হয়েছে।
ইবাদতে মাকসুদা তথা মূল বা ফরয ইবাদতের জন্য নিয়ত করা ফরয। আর ইবাদতে গাইরে মাকসুদা তথা আনুসঙ্গিক ইবাদতের জন্য নিয়ত করা সুন্নত মুবারক। সেক্ষেত্রে অন্তরের নিয়তই মূল বা ফরয। আর মৌখিক উচ্চারণ মুস্তাহাব সুন্নত।
প্রতিটি আমল বা কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। যে নিয়তে যে কাজ করা হয় সেরূপ প্রতিদান বা ফল লাভ হয়ে থাকে। এজন্য কোন আমল বা কাজ করার পূর্বে নিয়তকে বিশুদ্ধ করা আবশ্যক। অনেক সময়ব্যাপী অনেক আমল করেও খুব সামান্যই প্রতিদান প্রাপ্ত হতে পারে। আবার বিশুদ্ধ নিয়তে অল্প সময়ে কিংবা অল্প আমলই সীমাহীন ফযীলত লাভ করা যায়। কখনো আমল করতে না পেরেও বিশুদ্ধ নিয়তের কারণে পুরোপুরি ফযীলত লাভ করা যায়।
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৭৬)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮২)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৩)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৪)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৫) –