৩৬ বছরে বিচার হয়নি বলে এখনো বিচার করা যাবে না- এ কথা ভুয়া। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করলেই মুক্তিযোদ্ধাই নয় গোটা দেশের প্রতিই সম্মান প্রদর্শন করা হবে। এর জন্যঃ প্রচলিত আইনে প্রয়োজন বিশেস ট্রাইব্যুনাল গঠন ॥ এ দাবি এখন গোটা দেশবাসীর দাবী।এখন গোটা দেশবাসীর দাবী ॥ যুদ্ধুাপরাধীদের বিচার হক্কুল ইবাদের অন্তর্ভুক্ত।

সংখ্যা: ১৭৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র বাঙালি যুবক রেমন্ড ফয়সাল সোলায়মান। ২০০৫ সালে তার শ্রেণী কক্ষে ‘ক্রিমিনাল ল’ পড়ানোর সময় বিভিন্ন দেশের গণহত্যার কথা বলা হলেও বাংলাদেশের গণহত্যার কথা বলা হয় না। ফয়সাল বিচলিত হয়ে শিক্ষককে এ ব্যাপারে অবহিত করেন। শিক্ষক বলেন, তিনি  সেই গণহত্যার কথা জানেন না। ক্ষুব্ধ ফয়সাল সে বছরই সিডনি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ম্যাজিস্ট্রেট নিকোলাসের আদালতে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। নিকোলাস এ গণহত্যা সম্পর্কে জানতে সাত মাসের জন্য সময় নেন ও এরপর শুনানির তারিখ দেন। পরে নিকোলাস জানান, এ বিচারিক ক্ষমতা তার নেই। তিনি এ পরামর্শও দেন, সবচেয়ে ভালো হবে দেশে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে এদের বিচার করা। পরে ফয়সালের মামলাটি তুলে নেয়া হয়। সিডনিতে যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে কাজ করছে প্রবাসী বাঙালিদের সংগঠন ‘জাস্টিস ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড-১৯৭১’। সম্প্রতি দেশে এসেছেন সংগঠনের আহবায়ক অস্ট্রেলিয়ার দ্যা ইউনভার্সিটি অব নিউ ক্যাসেলের সিনিয়ার লেকচারার ডক্টর আবুল হাসনাত মিল্টন। তিনি জানান, অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে তারা এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি কাজ করছে।  ড. মিল্টন জানান, তারা ২০০৮ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী একাত্তরের গণহত্যার নৃশংসতা সম্পর্কে জানাবেন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য জনমত গড়ে তুলবেন। এখন কথা হলো, বিদেশে কেন, দেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে বাধা কোথায়? উল্লেখ্য, স্বাধীনতা উত্তর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের বাহিনী স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি দালাল আইন করে সেই আইনের অধীনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শুরু করেন। দালাল আইনের অধীনে ৩৭ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয় এবং বিভিন্ন আদালতে তাদের বিচার শুরু হয়। এরপর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর তখন ১১ হাজারেরও বেশি ব্যক্তি যুদ্ধাপরাধের দায়ে কারাগারে আটক ছিল এবং তাদের বিচার কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু নৃশংস হত্যাকা-ের পর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর দালাল আইন বাতিল করে ও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার দোহাই দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পথ বন্ধ করেন। ঐ সময়ই যুদ্ধাপরাধী হিসেবে প্রমাণিত অপরাধীরা সুপ্রীমকোর্টে আপিল করে বিভিন্ন আদালত থেকে বেকসুর খালাস পায়। এরপর আর কোন সরকারই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেয়নি। উল্লেখ্য, দালাল আইনে আটক যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই তাদের জন্যই কেবল সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু অভিযুক্তদের ক্ষেত্রে এ কথা বলা হয়নি, বরং সাধারণ ক্ষমার সেই প্রেস নোটে স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে, “ধর্ষণ, খুন, খুনের চেষ্টা, ঘরবাড়ি অথবা জাহাজে অগ্নিসংযোগের দায়ে দ-িত ও অভিযুক্তদের ক্ষেত্রে ক্ষমা প্রদর্শন প্রযোজ্য হবে না।” উল্লেখ্য, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের জন্য বাংলাদেশের সংবিধানে সুস্পষ্ট নির্দেশাবলী আছে। এ ধরনের অপরাধের বিচারের জন্য সংবিধানে আইন প্রণয়নের বিধান আছে এবং সেভাবে প্রণীত আইনের বিধান সংবিধানের অন্য কোন বিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্য বা তার পরিপন্থী বলে বেআইনি বা বাতিল হবে না- সে রক্ষাকবচও রয়েছে। মূলতঃ আমাদের সংবিধান ও তদানুযায়ী প্রণীত আইনে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের মতো বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দেশের একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব। সংবিধানের ৪৭(৩) অনুচ্ছেদে এ ব্যাপারে নির্দেশাবলী রয়েছে। এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিধানটি চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করার অধিকারও দেয়া হয়নি। সংবিধানের ঐ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রণীত  হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩।’ এতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান আছে সরকার যে কোন সময় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারে। দৈনিক আল ইহসানে দীর্ঘদিন যাবত রাজারকার-জামাতী-দেওবন্দী যুদ্ধাপরাধীদের সম্পর্কে ধারাবাহিক লেখনীর প্রেক্ষিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার এখন গোটা দেশবাসী তথা গোটা বিশ্ববাসী। ১৯৭১ সালে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধকালে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর হিসেবে জামাতী, খারেজী, দেওবন্দীরা শান্তি বাহিনী, রাজাকার, আলবাদর ও আল শামস বাহিনী গঠন করে নিরস্ত্র মানুষ হত্যা, নারী ধর্ষণ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, নিপীড়ন প্রভৃতি চালিয়েছে। গত ৩৬ বছর ধরেই বার বার এই ঘৃণ্য অপরাধীদের বিচারের অসমাপ্ত কাজ সমাধা করার জন্য বিচ্ছিন্নভাবে দাবি উঠেছে।  এখন দৈনিক আল ইহসানে লেখালেখীর প্রেক্ষিতে  মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে নানা পেশা ও শ্রেণীর মানুষ, অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধারা, মুক্তিযুদ্ধকালীন সেক্টর কমান্ডাররা, শহীদ পরিবার ও সন্তানরা তা আগে এতটা তীব্র ছিল না।  দেশের আইনজ্ঞ, মুক্তিযুদ্ধের গবেষক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণীর বরেণ্য মানুষ ও শহীদ-স্বজনরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবির পক্ষে তাদের মতপ্রকাশ করেছেন।  উল্লেখ্য, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এদেশে পাকসেনা ও তাদের এদেশীয় দোসর আলবাদর, রাজাকার, আলশামস ও শান্তি কামিটির সদস্যদের সম্মিলিত হত্যাযজ্ঞ পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম হত্যাযজ্ঞ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং ‘ওয়ার্ল্ড গিনেস রেকর্ড বুকে’ বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ গণহত্যার তালিকায় রয়েছে। সেসময় যুদ্ধাপরাধ হিসেবে এ দেশে ৫৩ ধরনের অপরাধ সংগঠিত হয়। এরমধ্যে ১৭ ধরনের যুদ্ধাপরাধ, ১৩ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং ৪ ধরনের গণহত্যা সংক্রান্ত অপরাধ রয়েছে। ঐ সময়ে ব্যাপক হত্যা ও নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে দেশে প্রায় পাঁচ হাজার বধ্যভূমি তৈরি হয়। এর মধ্যে ৯২০টি বধ্যভূমি ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি শনাক্ত করতে পেরেছে। এছাড়া ৮৮টি নদী ও ৬৫টি ব্রিজ ও কালভার্ট শনাক্ত করা গেছে, যেখানে একাত্তরে নিয়মিতভাবে বাঙালিদের হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হতো। প্রচলিত আইনে যুদ্ধাপরাধীদের যুদ্ধ জন্য প্রয়োজন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করলে তার সমাধান সহজে সম্ভব। কারণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার কথা সংবিধানের ৪৭-এর (৩) অনুচ্ছেদে সুস্পষ্ট বলা আছে। ১৯৭৩ সালের ১৯ জুলাই বাংলাদেশের তৎকালীন জাতীয় সংসদে পাস হওয়া আইন যাকে ‘অ্যাক্ট ১৯’ বলা হয়, সেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩-এর অধীনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতে পারে। সংবিধানের ৪৭-এর (৩) বিধান বলে এই আইনকে সাংবিধানিক আইনের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আরো কঠোরতর আইন প্রণয়ন বা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে সংবিধানের এই অনুচ্ছেদে। সুতরাং সরকার চাইলে এখনই বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শুরু করতে পারে।  উল্লেখ্য, ব্যক্তিগতভাবে একাত্তরে পাকসেনা কিংবা তাদের এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে যে কোনো নির্যাতিত প্রচলিত আইনে হত্যা, খুনসহ অন্যান্য অভিযোগের মামলা দায়ের করতে পারেন। এতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে ব্যাপক অর্থে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতে হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে এবং এর দায়িত্ব নিতে হবে দেশের সরকারকে। এখন যে মামলাগুলো হচ্ছে, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন হলে সেগুলো ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা যাবে। বলার অপেক্ষা রাখে না একাত্তরের গণহত্যা ছিল ভয়ঙ্কর ও পরিকল্পিত। এই পরিকল্পনার আদর্শভিত্তিক অংশীদার হিসেবে জামাতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম ও মুসলিম লীগের প্রতিনিধিরা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এর জন্য অবশ্যই সরকারের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা প্রাসঙ্গিক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারই ট্রাইব্যুনাল গঠন করে, নিজে বাদী হয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করে থাকে। ভুক্তভোগীরা বা প্রত্যক্ষদর্শীরা সাক্ষী হিসেবে সেই আদালতে হাজির হন। এ ধরনের ট্রাইব্যুনাল করার বিধান দেশের সংবিধানেই রয়েছে।  বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, যুদ্ধাপরাধ কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে সংঘটিত হয়নি। নরঘাতকের দল গণহত্যা চালিয়ে একটি জাতি বা নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছিল। তাই সরকারেরই উচিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন ও আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় গণহত্যা সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের মতো বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরী। বলাবাহুল্য, প্রচলিত আইনের চেয়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাম্য। প্রচলিত  আইনে যেমন প্রয়োজন তেমন যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ ব্যক্তির পক্ষে উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। উত্থাপিত অভিযোগ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে প্রমাণ করতে না পারলে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীরা পার পেয়ে যাবে। অন্যদিকে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হলে সামগ্রিকভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভব। এক্ষেত্রে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন ‘হার্ড এভিডেন্স’এর প্রয়োজন হয় না। এর বাদী থাকে সরকার। ফলে সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের দায়িত্বও সরকারের। সুতরাং যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধগুলো  প্রশ্নাতীতভাবে সত্য বলে প্রমাণ করা সহজ হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, জাতি হিসেবে আমাদের দায়িত্ব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা এবং তা বর্তমান সরকারের সময় করতে হবে। বিচার বিভাগ পৃথকীকরণসহ অপরাধ ও দুর্নীতি দমনের মতো বড় বড় কাজ করতে পারলে যুদ্ধাপরাধীর বিচার করাও তাদের জন্য একান্ত প্রাসঙ্গিক ও গভীর যুক্তিযুক্ত। কারণ ব্যক্তিগতভাবে মামলা করে বেশিদূর এগোনো যাবে না। অপরাধীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা দুরূহ হবে। তাই বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেই বিচার করতে হবে।  এ ব্যাপারে সংবিধানের ৪৭-এর (৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে; “এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অন্যান্য অপরাধের জন্য কোন সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য কিংবা যুদ্ধবন্দীকে আটক, ফৌজদারীতে সোপর্দ কিংবা দ-দান করিবার বিধান-সম্বলিত কোন আইন বা আইনের বিধান এই সংবিধানের কোন বিধানের সহিত অসামঞ্জস্য বা তাহার পরিপন্থী, এই কারণে বাতিল বা বেআইনি হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে না।” এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত অপরাধ যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় তার বেলায় আইনের আশ্রয় নেয়া ও মৌলিক অধিকারের কিছু সাংবিধানিক সুযোগও রহিত করা হয়েছে। অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই অনুচ্ছেদের অধীন আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টে প্রতিকারও চাইতে পারেন না।  অতএব দেখা যাচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী এখন খুবই স্পর্শকাতর পর্যায়ে পৌঁছেছে। এবং দিন দিন এর বিস্তৃতি ঘটতেই থাকবে। কাজেই গত ৩৬ বছরে হয়নি একথা বলেও বিষয়টি দাবিয়ে রাখার উপায় আর নেই। বরং যতদিন, যখনই এদেশে ২৬শে মার্চ আসবে, ১৬ই ডিসেম্বর আসবে, বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার, বীরশ্রেষ্ঠদের সম্মান, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধার প্রসঙ্গ উঠবে প্রাসঙ্গিকভাবেই তখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অনিবার্য হয়ে উঠবে। ৩৬ বছরে বিচার হয়নি। সম্প্রতি সাবেক প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরী ক্ষমতাকালীন সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেননি বলে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন। বদরুদ্দোজা ক্ষমা চেয়ে নিজেকে আত্মরক্ষা করেছেন বলে সন্তুষ্টিতে রয়েছেন। কিন্তু যে ঢেউয়ের স্রোতে তিনি এই ক্ষমা চেয়েছেন সে ঢেউয়ে ক্রমশঃ আরো ঊর্মি জাগবে। সে তরঙ্গ আরো তুঙ্গে উঠবে। তখন কিন্তু তার তোড়ে কেউই ঠিক থাকতে পারবে না। বরং সমাসীন সরকারকেই তার দায় বহন করতে হবে। কাজেই বিষয়টির প্রতি যতই তাড়াতাড়ি দৃষ্টি দেয়া যায় ততই মঙ্গল। কারণ যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তাঁর তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত ও দৈনিক আল ইহসানের মাধ্যমে ইতোমধ্যে দেশবাসীকে ইল্ম দিয়েছেন। তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেছেন। হক্কুল ইবাদ সম্পর্কে সমঝ দিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধী রাজাকাররা যে হত্যা-লুক্তন-ধর্ষণ চালিয়েছে তা ক্ষমা করার অধিকার কোন সরকারের বা কোন ব্যক্তি বিশেষের নেই। ততক্ষণ পর্যন্ত না সংশ্লিষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে তার যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়া না হয় এবং তাতে সন্তুষ্ট হয়ে সে ক্ষমা না  করে দেয়। উল্লেখ্য শরীয়তের দৃষ্টিতে হক্কুল্লাহ- যা আল্লাহ পাক-এর হক্বের সাথে জড়িত যথা- নামায, কালাম, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি তা আল্লাহ পাক-এর কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ পাক ক্ষমা করে দেন। কিন্তু হক্কুল ইবাদ যা বান্দার জান-মাল-সম্মান বা হক্বের সাথে জড়িত তা যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত বান্দা ক্ষমা করে না দেয় ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ পাক ক্ষমা করেন না। বলাবাহুল্য, যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধ বান্দার হক্কুল ইবাদতের সাথে সম্পর্কযুক্ত। সরকারের ক্ষমতা নেই তাদের ক্ষমা করার। সরকারদের বরং ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে তাদেরকে অনিবার্যভাবে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এটা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব-কর্তব্যও বটে। -মুহম্মদ আরিফুর রহমান।

 শুধু আজকের প্রেক্ষাপটে নয়, অতীত ইতিহাস হতেই ইহুদী-খ্রীষ্টানরা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু মুসলিম সন্ত্রাসবাদ নয়, মার্কিন হামলার পিছনে কি ইহুদী-খ্রীষ্টানরাই দায়ী নয়? -২২  

ইরাকের মীরজাফর সাদ্দাম  রাশিয়ার বেলারুশ যেতে চায় কেন?    

চট্টলার বহুল প্রচলিত দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ্যে আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাতের কাছে ক্ষমা চেয়ে তারা রক্ষা পেলো ॥

প্রসঙ্গঃ ছবি, অশ্লীল ছবি ইনকিলাব ও হাটহাজারীর আহমক শাফী উপাখ্যান

শুধু আজকের প্রেক্ষাপটে নয়, অতীত ইতিহাস হতেই ইহুদী-খ্রীষ্টানরা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু মুসলিম সন্ত্রাসবাদ নয়, মার্কিন হামলার পিছনে কি ইহুদী-খ্রীষ্টানরাই দায়ী নয়? -২৩