ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-২৫

সংখ্যা: ২৩৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

(বিলাদাত শরীফ- ৮০ হিজরী, বিছাল শরীফ- ১৫০ হিজরী)

সমঝ ও বিচক্ষণতা-২

পূর্ব প্রকাশিতের পর

অবশেষে ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট গিয়ে বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলল। হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি সবকিছু শুনে বললেন, তোমরা মহল্লার মসিজদের ইমাম, মুয়াজ্জিন এবং দু চার জন গন্যমান্য ব্যক্তিকে আমার নিকট নিয়ে আস। তাদেরকে আনা হলে হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “তোমরা কি চাওনা যে, এই ব্যক্তির চুরি হয়ে যাওয়া মালামাল সে আবার ফিরে পাক?” তারা বলল অবশ্যই চাই। ইমামে আ’যম রহমতুল্লাইহি আলাইহি বললেন, তাহলে তোমরা ফিরে গিয়ে তোমাদের এলাকায় যত চোর-বদমায়েশ আর সন্দেহজনক ব্যক্তি আছে সকলকে কোন একটা ঘরে বা মসজিদে জমা করো। এরপরে দু একজন দরজায় দাঁড়িয়ে যাও এবং যার মাল চুরি গেছে তাকেও সাথে দাঁড় করাও। অতঃপর একেকজন করে ঘর থেকে বের কর এবং এই লোককে জিজ্ঞেস কর, সে চোর কিনা। যদি চোর না হয় তাহলে বলবে, না এ লোক চোর না। আর যদি চোর হয় তাহলে চুপ থাকবে, কিছুই বলবেনা। আর তোমরা তাকে গ্রেফতার করে তদন্ত করবে। সেই ব্যক্তিই চোর হবে। হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পরামর্শ মত এভাবেই তারা চোর ধরে সব মালামাল উদ্ধার করল অথচ গৃহস্বামীর আহলিয়ার উপর তালাকও পড়ল না। সুবহানাল্লাহ!

ইবনে জাওযী, ইয়াহইয়া ইবনে জাফর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, এই ঘটনা আমি নিজ কানে হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট শুনেছি। হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, একবার আমি মরুভূমির মধ্যে সফর করছিলাম। রাস্তায় পিপাসা অনুভূত হল এবং পানির ভীষণ প্রয়োজন দেখা দিল। কিন্তু আশে পাশে কোথাও পানি ছিল না। এমন সময় গ্রাম্য এক লোক এক মশক পানি নিয়ে আমার নিকটে এল। আমি তার কাছে পানি চাইলে সে দিতে অস্বীকৃতি জানাল এবং বলল পাঁচ দিরহামের বিনিময়ে দিতে পারি। সুতরাং আমি পাঁচ দিরহাম দিয়ে মশকসহ তার কাছ থেকে পানি কিনে নিলাম। এরপরে আমি সেই বেদুইনকে বললাম জনাব! ছাতুর প্রতি যদি আপনার কোন আগ্রহ থাকে তাহলে আপনাকে দিতে পারি। সে বলল, দিন। আমি ছাতু দিলাম যা যাইতুনের তেলে মাখানো ছিল। সে খুব মজা করে পেট ভরে খেল। খাওয়ার পরেই তার পিপাসা লাগল ভীষন। একেতো ছাতু তার উপরে আবার তেল মাখানো। সে বড় অনুনয়- বিনয় করে আমার কাছে পানি চাইল। আমি বললাম জনাব, পাঁচ দিরহাম হলে এক পেয়ালা দিতে পারি। তার কমে হবে না। সে যেহেতু পানির মুখাপেক্ষি ছিল তাই এই প্রস্তাবেই রাজি হয়ে গেল। আমি এক পেয়ালা পানির বদলে আমার পাঁচ দিরহামও ফেরত পেলাম আবার মশক আর পানিও আমার কাছে রয়ে গেল।

একবার হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সামনে এক জটিল মাসয়ালা পেশ করা হলো। সমসাময়িক সকল হযরত ইমাম-মুজতাহিদীন উনারা সমাধান দিতে অপারগ হয়ে গিয়েছিলেন। পরে উনাকে জিজ্ঞাসা করা হল, “এক মহিলা ছাদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মই বেয়ে উপরে উঠছিল, হঠাৎ করে তার স্বামী তাকে দেখে ফেললো। স্ত্রীর এই কাজ তার খুব অপছন্দ হল তাই সে রাগান্বিত হয়ে বলল, যদি তুমি উপরে উঠ তাহলে তিন তালাক, আবার নিচে নামলেও তিন তালাক। এমতাবস্থায় তালাক থেকে বাঁচার জন্য মহিলা কি পন্থা অবলম্বন করবে? হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, একদম সহজ সমাধান রয়েছে। সেটা হল, মহিলা আর উপরে উঠবেনা এবং নিচেও নামবেনা। যেখানে আছে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে। আর কিছু লোক যেয়ে মইসহ তাকে নামিয়ে এনে মাটিতে রেখে দিবে তাহলে তালাক পড়বে না। আর তার স্বামীর কসমও ভঙ্গ হবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, এর অন্য কোন সমাধান আছে কিনা? তিনি বললেন, দ্বিতীয় আরেকটা সমাধান আছে সেটা হল কিছু মেয়ে লোক গিয়ে ঐ মহিলাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে তুলে নিয়ে এসে মাটিতে রেখে দিবে। তাহলে তালাক পড়বে না।

একবার লুলুই গোত্রের একটি দল কোন কাজ উপলক্ষে কুফায় আগমন করল। তাদের মধ্যে এক ব্যক্তির আহলিয়া ছিল খুবছূরত। কুফার জনৈক ব্যক্তির দৃষ্টি পড়ল তার উপর। সে কলা কৌশলে তার সাথে ভাব জমিয়ে তাকে নিজের স্ত্রী বলে দাবী করল। মহিলাও নিজের স্বামীকে অস্বীকার করে উক্ত কুফীকে স্বামী বলে পরিচয় দিল। তার আসল স্বামী লুলুই বেচারা পেরেশান হয়ে পড়ল। সে বলছে আমার স্ত্রী আর কুফী বলছে তার স্ত্রী। কিন্তু তার সাথে কোন সাক্ষি না থাকায় কেউ তার কথায় কান দিল না। অবশেষে হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট উক্ত ঘটনা ব্যক্ত করা হলো। তিনি কাজী ইবনে আবী লায়লাসহ আরো কয়েকজন কাজী, ফুকাহা আর মহিলাদের একটি দল নিয়ে উক্ত স্থানে পৌঁছলেন, যেখানে লুলুই গোত্রের লোকেরা তাঁবু ফেলে অবস্থান করছিল। সেখানে পৌঁছে তিনি আগন্তুক মহিলাদেরকে একে একে ঐ তাঁবুতে প্রবেশ করতে বললেন, যেখানে লুলুই ব্যক্তি অবস্থান করছিল। আদেশ অনুযায়ী কুফী মহিলারা যখন ঐ তাঁবুতে প্রবেশ করতে গেল তখন লুলুই ব্যক্তির কুকুর ঘেউ ঘেউ করতে শুরু করল এবং পথ রোধ করে দাঁড়াল। এর পরে হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত বিতর্কিত মহিলাকে লুলুই ব্যক্তির তাঁবুতে ঢুকতে বললেন। মহিলা তাঁবুর নিকট যাওয়ার সাথে সাথে কুকুরটি লেজ নাড়িয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে লাগল এবং একবারও ঘেউ ঘেউ করল না। হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। এই মহিলা প্রকৃত পক্ষে এই লুলুই ব্যক্তির আহলিয়া। কুকুরটি আগে থেকে তাকে চেনে বিধায় ঘেউ ঘেউ করে নাই। এরপরে মহিলার উপর চাপ প্রয়োগ করলে সেও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলল ইনিই আমার আসল স্বামী। শয়তানের ধোকায় পড়ে আমি মিথ্যা বলেছিলাম।

 

ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-২৯

সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গওছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, ইমামুর রাসিখীন, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি (২৩)

সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গওছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, ইমামুর রাসিখীন, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি (২১)

সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গওছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, ইমামুর রাসিখীন, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি (২০)

সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গওছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, ইমামুর রাসিখীন, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি (১৪)