তাফসীরুল কুরআন আমাল বা অবৈধ আকঙ্খা পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য

সংখ্যা: ২২৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

 

পার্থিব ধন-সম্পদ কিংবা দুনিয়াবী পদমর্যাদা প্রভৃতির জন্য আশা-আকাঙ্খা করা অবশ্যই নিন্দনীয়। তবে দ্বীনি ইলম অর্জন, জিহাদে অংশগ্রহণ ইত্যাদি নেক কাজের আকাঙ্খা নিন্দনীয় নয়; বরং প্রশংসনীয়। অতএব বলা যায়, আশা-আকাঙ্খার ভাল-মন্দ উভয় দিক রয়েছে। অত্র প্রবন্ধে কেবল মন্দ বা অবৈধ আকাঙ্খা সম্পর্কে আলোকপাত করা হচ্ছে; যা প্রকৃতপক্ষে কাফির-মুশরিকদের স্বভাব-বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত।

যেমন- এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন-

ذرهم ياكلوا ويتمتعوا ويلههم الامل فسوف يعلمون

অর্থ : “আপনি তাদেরকে তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দিন, তারা আহার করুক, ভোগ করুক এবং আশা-আকাঙ্খায় মোহগ্রস্ত থাকুক। শীঘ্রই তারা প্রকৃত অবস্থা জানতে পারবে।” (পবিত্র সূরা হিজর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত আমর ইবনে শুআইব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতার মাধ্যমে, তিনি উনার দাদা হতে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اول صلاح هذه الامة اليقين والزهد و اول فسادها البخل والامل

অর্থ : “এই উম্মতের কল্যাণের সূচনা হলো (মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি) ইয়াক্বীন বা অটল বিশ্বাস এবং (দুনিয়ার প্রতি) বিরাগ অবলম্বন করা। আর অনিষ্টতার মূল হলো কার্পণ্য ও অবৈধ আকাঙ্খা।” (বায়হাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

হযরত সুফীয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

ليس الزهد فى الدنيا بلبس الغليظ والخشن واكل الجشب انما الزهد فى الدنيا قصر الامل

অর্থ : “দুনিয়াতে খসখসে মোটা পোশাক পরিধান করা এবং স্বাদবিহীন খাদ্য ভক্ষণ করা বুযূর্গী বা পরহেযগারী নয়; বরং প্রকৃত পরহেযগারী হলো দুনিয়ার প্রতি মোহ বা আকাঙ্খাকে খাটো রাখা।” (শরহুস সুন্নাহ শরীফ)

ছহীহ বুখারী শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একটি চতুর্ভুজ আঁকলেন এবং উহার মধ্যে একটি রেখা টানলেন যা অতিক্রম করে বাইরে চলে গেছে। অতঃপর মধ্য রেখাটির উভয় পার্শ্বে অনেকগুলো ছোট ছোট রেখা এঁকে বললেন, (মনে করুন; মধ্য রেখাটি) ইহা মানুষ। আর ইহা অর্থাৎ চতুর্ভুজ হলো তার আকাঙ্খা। আর এ সকল ছোট ছোট রেখাগুলো হলো তার বিপদ-মুছীবত (যাতে সে আপতিত হতে পারে)। যদি সে একটি বিপদ হতে রক্ষা পায় তবে পরবর্তী বিপদে আক্রান্ত হয়। যদি সেটা হতেও রক্ষা পায় তবে তার পরেরটিতে আক্রান্ত হয়।

ছহীহ বুখারী শরীফ ও ছহীহ মুসলিম শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لا يزال قلب الكبير شابا فى اثنين فى حب الدنيا وطول الامل

অর্থ : “বৃদ্ধ লোকের অন্তর দুটি ব্যাপারে সর্বদা জওয়ান হয়ে থাকে। দুনিয়ার মুহব্বত ও দীর্ঘ আকাঙ্খা।”

ছহীহ তিরমিযী শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

هذا ابن ادم وهذا اجله ووضع يده عند قفاه ثم بسط فقال وثم امله

অর্থ : “এই হলো আদম সন্তান অর্থাৎ মানুষ আর ইহা হলো তার মৃত্যু অতঃপর হাত মুবারক প্রসারিত করে বললেন, এ স্থানে মানুষের আকাঙ্খা।” অর্থাৎ তিনি হাত মুবারক দিয়ে ইশারা করে মানুষ তার কিছুটা পিছনে মৃত্যুর স্থান এবং মৃত্যুর কিছুটা পিছনে তার আকাঙ্খা বুঝিয়ে দিলেন।

অর্থাৎ মৃত্যু মানুষের অতি নিকটবর্তী, কিন্তু মানুষ মৃত্যু হতে গাফিল হয়ে অত্যধিক আশা-আকাঙ্খার পিছনে ধাবিত হয়ে থাকে; যা তার বদবখতীর কারণ। কাজেই অবৈধ আকাঙ্খা দূর করতে হলে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। আর ইলমে তাছাওউফই হচ্ছে অন্তর পরিশুদ্ধ করার একমাত্র মাধ্যম।

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী