পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৯

সংখ্যা: ২৪৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে

সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৯

[সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামউনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ” উনার ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-উনার অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন উনার শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা)  ২৭. ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) ২৮. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬৮-চলমান), ২৯. জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯২-১৯৩তম সংখ্যা) ৩০. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯৫-২১৩তম সংখ্যা), ৩১. পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের দৃষ্টিতে “কুলাঙ্গার, পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করার পর-

৩২তম ফতওয়া হিসেবে

“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”-

পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

 সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব উনার উপর মউত পর্যন্ত ইস্তিক্বামত থাকা ফরয

পূর্ব প্রকাশিতের পর

পবিত্র তাফসীর শরীফ উনাদের নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে ‘আত-তাক্বলীদুশ্ শারয়ী তথা শরীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’ উনার সমর্থনে পবিত্র আয়াত শরীফ সমূহ উনাদের ছহীহ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও আহকাম

পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমাউল উম্মাহ ও ছহীহ ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দলীল-আদিল্লাহ মোতাবেক সম্মানিত ইসলামী শরীয়াত উনার যাবতীয় হুকুম-আহকাম মেনে চলার জন্য কারো অনুসরণ করাকে ‘আত-তাকলীদুশ শারয়ী তথা শরীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’ বলে। উনাকে ‘তাকলীদুল ইসলাম’, ‘তাকলীদুদ্ দীন’ ও ‘তাকলীদুদ্ দালায়িলিল আরবায়াহ’ অর্থাৎ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার চারখানা দলীল উনাদের অনুসরণও বলা হয়ে থাকে।

নি¤েœ পবিত্র তাফসীর শরীফ উনাদের নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে ‘আত-তাক্বলীদুশ্ শারয়ী তথা শরীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’ উনার সমর্থনে পবিত্র আয়াত শরীফ সমূহ উল্লেখ করে উনাদের ছহীহ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও আহকাম বা বিধি-বিধান আলোচনা করা হলো।

পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর- ৩৪

يَوْمَ نَدْعُو كُلَّ أُنَاسٍ بِإِمَامِهِمْ فَمَنْ أُوتِيَ كِتَابَه بِيَمِينِه فَأُولئِكَ يَقْرَءُونَ كِتَابَهُمْ وَلَا يُظْلَمُونَ فَتِيلًا. (سورة بنى اسرائيل شريف ৭১ الاية الشريفة(

অর্থ: যেদিন আমি প্রত্যেক দলকে তাদের ইমামের (যাকে তারা অনুসরণ করতো তাদের) নামে ডাকবো। অত:পর যাঁদেরকে ডান হাতে তাঁদের আমলনামা দেয়া হবে, তাঁরা নিজেদের আমলনামা পাঠ করবে। আর তাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও অবিচার করা হবে না। (পবিত্র সূরাতু বানী ইসরাঈল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৭১)

অত্র পবিত্র আয়াত উনার বিশুদ্ধ

তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ

(৫৩৯-৫৫২)

قال مجاهد رحمة الله عليه وقتادة رحمة الله عليه اى بنبيهم عليه السلام وقال ابو صالح رحمة الله عليه والضحاك رحمة الله عليه بكتابهم الّذى انزل اليهم اخرج ابن مردوية عن على عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يدعى قوم بامام لهم وكتاب ربهم، وعن سعيد بن جبير رحمة الله عليه عن ابن عباس رضى الله عنهما بامام زمانهم الّذى دعاهم فى الدنيا الى ضلالة او هدى قال الله تعالى وَجَعَلْناهُمْ اَئِمَّةً يَّهْدُوْنَ بِاَمْرِنا وقال وَجَعَلْناهُمْ اَئِمَّةً يَّدْعُونَ اِلَى النَّارِ وقيل بمعبودهم، وعن سعيد بن المسيب رحمة الله عليه قال كل قوم يجتمعون الى رئيسهم فى الخير والشر وقال الحسن رحمة الله عليه  وابو العالية رحمة الله عليه اعمالهم الّتى قدموها وقال قتادة رحمة الله عليه ايضا بكتابهم الّذى فيه اعمالهم بدليل سياق الاية ويسمى الكتاب اماما قال اللّه تعالى وَكُلَّ شَىْءٍ اَحْصَيْناهُ فِىْ اِمامٍ مُبِيْنٍ وقيل بالقوى الحاملة لهم على عقائدهم وافعالهم، وقال محمّد بن كعب رحمة الله عليه بامهاتهم جمع ام كخف وخفاف والحكمة فى ذلك اجلال عيسى عليه السلام واظهار شرف الحسن عليه السلام والحسين عليه السلام وان لايفتضح لولاد الزنى، قوله بامامهم حال اى مختلطين بمن ايتمّوا به من نبىّ او كتاب او رئيس فى الخير او الشر او حاملين اعمالهم او صحائفها او صلة لندعوا يعنى ندعوهم باسم امامهم يقال يا امة فلان يا اتباع فلان يا اهل دين وكتاب كذا يا اصحاب اعمال كذا يا ابن مريم عليها السلام يا ابن فاطمة عليها السلام ونحو ذلك. (التفسير المظهرى سورة بنى اسرائيل شريفة ৭১ الاية الشريفة المؤلف: حضرت محمد ثناء الله الهندى البانى بنى النقشبندى الحنفى الماتريدى رحمة الله عليه المتوفى سنة ১২১৬ هجرى)

অর্থ: হযরত মুজাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ক্বতাদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেন, ইমাম দ্বারা প্রত্যেক ক্বওমের হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনারা উদ্দেশ্য। হযরত আবূ ছালিহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত দ্বহহাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেন, উনাদের কাছে নাযিলকৃত কিতাবসহ। হযরত ইব্নু মারদুবিয়াহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: يدعى قوم بامام لهم وكتاب ربهم ‘প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের ইমাম ও তাদের রব তায়ালা উনার কিতাব সহ আহ্বান করা হবে।’ হযরত সাঈদ ইব্ন জুবাইর রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার সূত্রে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, তাদের সময়কার নেতাসহ যারা দুনিয়ায় তাদের ভ্রান্তি অথবা হিদায়াতের প্রতি আহ্বান করেছে। কেননা, মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘উনাদেরকে আমি ইমাম বানিয়েছিলাম, যাঁরা আমার আদেশ মতে পথ প্রদর্শন করতেন। (পবিত্র সূরা সাজদাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৪) তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, ‘তাদেরকে আমি করেছিলাম ইমাম, তারা লোকদেরকে জাহান্নামের দিকে আহ্বান করত। (পবিত্র সূরাতুল ক্বছাছ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪১) কেউ কেউ বলেন, নিজ নিজ উপাস্যসহ তাদেরকে আহ্বান করা হবে।

হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিব রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, প্রত্যেক সম্প্রদায় তাদের ভাল ও মন্দের কাজের নেতার কাছে সমবেত হবে। হযরত হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আবুল আলিয়াহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য তাদের পূর্বকৃত আমলনামা। হযরত ক্বতাদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, পবিত্র আয়াত শরীফ উনার বর্ণনা ধারা অনুযায়ী অর্থ হবে- তাদের সে কিতাব, যাতে তাদের আমল রয়েছে অর্থাৎ আমলনামা। এখানে কিতাবকে ইমাম নামে অভিহিত করা হয়েছে। যেমন, মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘এবং আমি প্রতিটি বিষয়কে সংরক্ষণ করেছি, একটি প্রকাশ্য ইমামে অর্থাৎ কিতাবে। (পবিত্র সূরা ইয়া-সীন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১২) কেউ কেউ বলেন, আক্বীদাহ ও আমলে উদ্বুদ্ধকারী তাদের শক্তিসহ ডাকা হবে।

হযরত মুহাম্মাদ বিন কা’ব রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তাদের মায়েদের সহ ডাকা হবে। এখানে امام শব্দ ام শব্দের বহুবচন। যেরূপ خف এর বহুবচন خفاف এরূপ করার রহস্য হচ্ছে: হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মাহাত্ম প্রকাশ করা এবং ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের মর্যাদা প্রমাণ করা এবং জারজ সন্তানদের মর্যাদাহানি না করা।

তারকীব: মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ক্বওল শরীফ بامامهم এখানে হাল, অর্থাৎ যার অনুসরণ করেছিল তাকে সাথে নিয়ে আসা অবস্থায়; তিনি হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালাম হন বা কোন কিতাব হোক, ভাল-মন্দ কাজের নেতা হোক, কিংবা তাদের আমল অথবা আমলনামা বহণকারী অবস্থায় হোক। অথবা بامامهم এখানে (হরফে জার ও মাজরূর) এটি ندعو ফে’লের ছিলাহ হবে। অর্থাৎ তাদের ঈমান ও তাদের ইমামের নাম উচ্চারণ করে তাদেরকে ডাকা হবে এভাবে যে, হে অমুকের উম্মাত! হে অমুকের অনুসরণকারী! এবং হে অমুক দীন ও অমুক কিতাবের অনুসারীবর্গ। হে অনুরূপ আমলকারীরা! হে হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম উনার পুত্র! হে হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনার কলিজার টুকরা পুত্র! এভাবে এভাবে ডাকা হবে। (আত-তাফসীরুল মাযহারী পবিত্র সূরাতু বানী ইসরাঈল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৭১ লেখক: হযরত মুহাম্মাদ ছানাউল্লাহ হিন্দী পানীপথী নকশাবন্দী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১২১৬ হিজরী, তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাফসীরুত্ ত্ববারী, আত-তাফসীরুল কবীর, তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরে রূহুল মায়ানী, তাফসীরুল খাযিন, তাফসীরুল বাগবী, যাদুল মাসীর ফী ইলমিত তাফসীর লিল জাওযী, তাফসীরুস সামারকান্দী, মাদারিকুত তানযীল অর্থাৎ তাফসীরুন নাসাফী, তাফসীরুল কুরতুবী, তাফসীরুত ত্ববারানী, তাফসীরু আবিস সাঊদ)

(৫৫৩)

الامام فى اللغة كل من ائتم به قوم كانوا على هدى او ضلالة، فالنبى عليهم الضلوة والسلام امام امته والخليفة امام رعيته والقران امام المسلمين وامام القوم هو الذى يقتدى به فى الصلاة. (مفاتيح الغيب اى التفسير الكبير اى تفسير الرازى سورة بنى اسرائيل شريفة ৭১ الاية الشريفة المؤلف: الامام العالم العلامة والحبر البحر الفهامة فخر الدين محمد بن عمر التميمى الرازى الشافعى المتوفى سنة ৬০৬ هجرى(

অর্থ: অভিধান শাস্ত্রের পরিভাষা: সম্প্রদায় যার নেতৃত্ব মেনে নেয় তাকে ইমাম বলা হয়, সেই সম্প্রদায় হিদায়াতের উপর থাক অথবা গোমরাহীর উপর থাক। তাই, নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার উম্মাতের ইমাম (তথা তিনিই সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন ইমামুল কায়িনাত), খলীফাহ তিনি উনার অধিনস্তদের ইমাম, পবিত্র কুরআন মাজীদ মুসলমান উনাদের ইমাম এবং কোন সম্প্রদায়ের ইমাম ঐ ব্যক্তি লোকেরা যাঁকে নামাযের ইমাম হিসেবে ইক্তিদা করে। (মাফাতীহুল গইব অর্থাৎ আত-তাফসীরুল কবীর অর্থাৎ তাফসীরুর রাযী পবিত্র সূরাতু বানী ইসরাঈল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৭১ লেখক: আল-ইমামুল আলিমুল আল্লামা, আল-হিবরুল বাহরুল ফাহ্হামাহ ফখরুদ্দীন  মুহাম্মাদ বিন উমর তামীমী রাযী শাফিয়ী আশয়ারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৬০৬ হিজরী)

(৫৫৪)

وقال على عليه السلام: بامام عصرهم. وروى عن النبى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فى قوله “يَوْمَ نَدْعُوا كُلَّ اُناسٍ بِاِمامِهِمْ” فقال: كل يدعى بإمام زمانهم وكتاب ربهم وسنة نبيهم صلى الله عليه وسلم. (الجامع لاحكام القران اى تفسير القرطبى سورة بنى اسرائيل شريفة ৭১ الاية الشريفة المؤلف: حضرت ابو عبد الله محمد بن احمد بن ابى بكر بن فرح الانصارى الخزرجى شمس الدين القرطبى رحمة الله عليه المتوفى ৬৭১ هجرى(

অর্থ: হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, এখানে ইমাম দ্বারা যামানার ইমাম তথা মুজাদ্দিদ ও মুজতাহিদ উদ্দেশ্য। ‘যেদিন আমি প্রত্যেক দলকে তাদের ইমামের নামে ডাকবো’ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, সেদিন প্রত্যেককে তাদের যামানার ইমামসহ , মহান রব তায়ালা উনার নাযিলকৃত কিতাবসহ এবং তাদের নবী-রসূল আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার সুন্নাত বা আদর্শসহ ডাকা হবে। (আল-জামিউ লিআহকামিল কুরআন কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুল কুরতুবী পবিত্র সূরাতু বানী ইসরাঈল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৭১ লেখক: হযরত আবূ আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন আবূ বকর বিন ফারাহ আনছারী খযরাযী শামসুদ্দীন কুরতুবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৬৭১ হিজরী)

(৫৫৫)

وقيل: بمذاهبهم، فيدعون بمن كانوا يأتمون به فى الدنيا: يا حنفى يا شافعى يا معتزلى يا قدرى ونحوه، فيتبعونه في خير او شر او على حق او باطل، وهذا معنى قوله ابى عبيدة رحمة الله عليه. (الجامع لاحكام القران اى تفسير القرطبى سورة بنى اسرائيل شريفة ۷۱ الاية الشريفة المؤلف: حضرت ابو عبد الله محمد بن احمد بن ابى بكر بن فرح الانصارى الخزرجى شمس الدين القرطبى رحمة الله عليه المتوفى ۶۷۱ هجرى(

অর্থ: কেউ কেউ বলেন: তাদের মাযহাবের নামে ডাকা হবে। দুনিয়ায় তারা যে মাযহাবের অনুসারী ছিল সেই নামে ডাকা হবে। যেমন: হে হানাফী মাযহাবের অনুসারীগণ! হে শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারীগণ! হে মু’তাযিলাহ বাত্বিল ফিরক্বার অনুসারীরা! হে ক্বদরিয়া বাত্বিল ফিরক্বার অনুসারীরা! অনুরূপভাবে। তারা যাকে ভাল ব্যাপারে অনুসরণ করেছে অথবা মন্দ ব্যাপারে অনুসরণ করেছে অথবা হক্ব মাযহাবকে অনুসরণ করেছে অথবা বাত্বিল মাযহাবকে অনুসরণ করেছে সে সংশ্লিষ্টতার সাথে তাদেরকে ডাকা হবে। এ ব্যাখ্যা হযরত আবূ উবাইদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার। (আল-জামিউ লিআহকামিল কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুল কুরতুবী পবিত্র সূরাতু বানী ইসরাঈল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৭১ লেখক: হযরত আবূ আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন আবূ বকর বিন ফারাহ আনছারী খযরাযী শামসুদ্দীন কুরতুবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৬৭১ হিজরী)

(৫৫৬-৫৫৭)

}بامامهم} اى بمن ائتموا به من نبى عليه السلام فيقال يا امة موسى عليه السلام ويا امة عيسى عليه السلام ونحو ذلك او مقدم فى الدين فيقال يا حنفى ويا شافعى ونحوهما او كتاب فيقال يا اهل القران ويا اهل الانجيل وغيرهما او دين فيقال يا مسلم ويا يهودى ويا نصرانى ويا مجوسى وغير ذلك. وفى التأويلات النجمية يشير الى ما يتبعه كل قوم وهو امامهم. (روح البيان فى تفسير القران اى تفسير الحقى سورة بنى اسرائيل شريفة ۷۱ الاية الشريفة المؤلف: حضرت اسماعيل حقى بن مصطفى الاستانبولى الحنفى الخلوتى البروسوى رحمة الله عليه تاريخ الوفاة ۱۱۲۷ هجرى(

অর্থ: (ইমামকে সহ ডাকা হবে) অর্থাৎ যে ব্যক্তি যে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার উম্মত তাকে সেই নামে ডাকা হবে। যেমন: বলা হবে- হে হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার উম্মত, হে হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার উম্মত এবং অনুরূপভাবে অন্যান্যদেরকেও ডাকা হবে। অথবা দ্বীন ইসলাম পালনের ব্যাপারে যাঁদের অনুগামী উনাদের নামে ডাকা হবে। যেমন: বলা হবে- হে হানাফী মাযহাবের অনুসারীগণ! হে শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারীগণ! এবং অনুরূপ অন্যান্যদেরকে ডাকা হবে। অথবা কিতাবের নামে ডাকা হবে। যেমন: বলা হবে- হে পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার অনুসারীগণ! হে পবিত্র ইনজীল শরীফ উনার অনুসারীগণ! এবং অনুরূপভাবে অন্যান্যদেরকে ডাকা হবে। অথবা দীন বা ধর্মের নামে ডাকা হবে। যেমন: বলা হবে- হে সম্মানিত মুসলিমগণ! হে ইয়াহূদীরা! হে নাছারা বা খ্রীস্টানরা! হে মাজূসী বা অগ্নী উপাসকরা! এবং অনুরূপভাবে অন্যান্যদেরকে ডাকা হবে। ‘তা’বীলাতুন্ নাজমিয়াহ’ কিতাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, কোন সম্প্রদায় যে ব্যক্তিকে নেতৃস্থানীয় মনে করে তাকেই ইমাম বলা হয়। আর সেই ইমামের নামসহ ক্বিয়ামতের দিন তার অনুসারীদেরকে ডাকা হবে। (রূহুল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুল হাক্কী পবিত্র সূরাতু বানী ইসরাঈল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৭১ লেখক: হযরত ইসমাঈল হাক্কী বিন মুছতফা ইস্তাম্বূলী হানাফী খালওয়াতী বারূসাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১১২৭ হিজরী)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ এবং উনার তাফসীর থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, প্রত্যেক নবী-রসূল আলাইহিমুছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনারা উনাদের উম্মতের ইমাম, আসমানী কিতাব সমূহ তাঁর অনুসারীদের ইমাম, যার যার আমলনামা তার ইমাম, হক্ব মাযহাবের ইমামগণ তাদের অনুসারীদের ইমাম, যামানার ইমাম তথা মুজাদ্দিদ উনার অনুসারীদের জন্য ইমাম, অনুসরনীয় মুরশিদ বা শায়েখ হচ্ছেন উনার অনুসারীগণের ইমাম, আউলিয়ায়ে কিরাম তথা হযরত উলামায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা হচ্ছেন উনাদের অনুসারীদের জন্য ইমাম এবং কোন জনপদের নামাযের মুছাল্লীদের জন্য ইমামই হচ্ছেন তাদের ইমাম। যাদেরকে সহ ক্বিয়ামতের দিন আহ্বান করা হবে। এতে হক্বপন্থী ইমাম উনার সাথে হক্বপন্থী অনুসরণকারীগণ উপস্থিত হবেন, আর বাতিলপন্থী ইমাম বা নেতার সাথে বাতিলপন্থী অনুসারীরা উপস্থিত হবে। এভাবে হক্ব ও নাহক্ব সুস্পষ্টভাবে আলাদা হয়ে যাবে।

পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর- ৩৫

قُلْ كُلٌّ يَّعْمَلُ عَلٰى شَاكِلَتِه فَرَبُّكُمْ اَعْلَمُ بِمَنْ هُوَ اَهْدٰى سَبِيْلًا. (سورة بنى اسرائيل شريفة ۸۴ الاية الشريفة)

অর্থ: (হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলুন, প্রত্যেকেই (হযরত ছহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আন্হুম) স্বীয় ইজতিহাদ-ফিক্র আদত অনুযায়ী আমল করেন। তবে, আপনাদের রব মহান আল্লাহ তায়ালা তিনিই ভালো জানেন যে, কে হক্ব পথে আর কে অধিক হক্ব পথে রয়েছেন। (পবিত্র সূরাতু বানী ইসরাঈল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৮৪)

অত্র পবিত্র আয়াত উনার বিশুদ্ধ

তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ

(৫৫৮)

قال تعالى: قُلْ كُلٌّ يَّعْمَلُ عَلٰى شاكِلَتِه قال الزجاج رحمة الله عليه: الشاكلة الطريقة والمذهب. (مفاتيح الغيب اى التفسير الكبير اى تفسير الرازى سورة بنى اسرائيل شريفة ۸۴ الاية الشريفة المؤلف: الامام العالم العلامة والحبر البحر الفهامة فخر الدين محمد بن عمر التميمى الرازى الشافعى المتوفى سنة ۶۰۶ هجرى(

অর্থ: মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ক্বওল মুবারক: ‘আপনি বলুন, প্রত্যেকেই স্বীয় ইজতিহাদ-ফিক্র আদত অনুযায়ী আমল করেন’ হযরত যুজাজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এখানে শাকিলাহ অর্থ ত্বরীক্বাহ তথা নিয়ম-নীতি ও সম্মানিত মাযহাব। (মাফাতীহুল গইব অর্থাৎ আত-তাফসীরুল কবীর অর্থাৎ তাফসীরুর রাযী পবিত্র সূরাতু বানী ইসরাঈল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৮৪ লেখক: আল-ইমামুল আলিমুল আল্লামা, আল-হিবরুল বাহরুল ফাহ্হামাহ ফখরুদ্দীন  মুহাম্মাদ বিন উমর তামীমী রাযী শাফিয়ী আশয়ারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৬০৬ হিজরী)

(৫৫৯)

}قُلْ كُلٌّ} اى كل احد {يَعْمَلُ على شَاكِلَتِه} على مذهبه وطريقته التي تشاكل حاله في الهدى والضلال {فَرَبُّكُمْ اَعْلَمُ بِمَنْ هُوَ اهدى سَبِيلًا} اسد مذهبًا وطريقةً. (مدارك التنزيل وحقائق التأويل اى تفسير النسفى سورة بنى اسرائيل شريفة ۸۴ الاية الشريفة المؤلف: ابو البركات عبد الله بن احمد بن محمود النسفى الحنفى الماتريدى رحمة الله عليه المتوفى ۷۱۰ هجرى(

অর্থ: (আপনি বলুন, প্রত্যেকেই) প্রত্যেকেই (স্বীয় ইজতিহাদ-ফিক্র আদত অনুযায়ী আমল করেন।) সম্মানিত মাযহাব ও ত্বরীক্বা তথা নিয়ম-পদ্ধতি অনুযায়ী চলেন। সেই পদ্ধতি হিদায়াতের পথে হোক অথবা গোমরাহীর পথে হোক। (তবে, আপনাদের রব মহান আল্লাহ তায়ালা তিনিই ভালো জানেন যে, কে হক্ব পথে আর কে অধিক হক্ব পথে রয়েছেন।) অর্থাৎ সঠিক মাযহাব ও ত্বরীক্বায় আছেন। (মাদারিকুত্ তানযীল ওয়া হাক্বায়িকুত্ তা’বীল অর্থাৎ তাফসীরুন নাসাফী পবিত্র পবিত্র সূরাতু বানী ইসরাঈল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৮৪ লেখক: হযরত আবুল বারাকাত আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন মাহমূদ নাসাফী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৭১০ হিজরী)

(৫৬০-৫৬১)

قال فى القاموس الشاكلة الشكل والناحية والنية والطريقة والمذهب. (روح البيان فى تفسير القران اى تفسير الحقى بنى اسرائيل شريفة ۸۴ الاية الشريفة المؤلف: حضرت اسماعيل حقى بن مصطفى الاستانبولى الحنفى الخلوتى البروسوى رحمة الله عليه تاريخ الوفاة ۱۱۲۷ هجرى(

অর্থ: ‘ক্বামূস’ গ্রন্থকারের ভাষায় শাকিলাহ অর্থ: দৃষ্টিকোন, নিয়্যাত, ত্বরীক্বাহ বা নিয়ম-পদ্ধতি ও সম্মানিত মাযহাব বা মুসলমান উনাদের চলার পথ। (রূহুল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুল হাক্কী পবিত্র সূরাতু বানী ইসরাঈল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৮৪ লেখক: হযরত ইসমাঈল হাক্কী বিন মুছতফা ইস্তাম্বূলী হানাফী খালওয়াতী বারূসাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১১২৭ হিজরী)¬

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ এবং উনার তাফসীর থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, প্রত্যেকেই তার শাকিলাহ, ত্বরীক্বাহ, পদ্ধতি, নিয়ম-নীতি ও সম্মানিত মাযহাব অনুযায়ী চলে। অর্থাৎ এখানে সঠিক মাযহাব অনুযায়ী চলার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।

পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর- ৩৬

مَنْ يَّهْدِ اللهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَه وَلِيًّا مُّرْشِدًا. (سورة الكهف شريفة ۱۷ الاية الشريفة(

অর্থ: মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি যাঁকে হিদায়াত করেন তিনিই হিদায়াত প্রাপ্ত হন। আর যে গোমরাহীতে দৃঢ় থাকে, আপনি তাদের জন্য কোনো সঠিক পথপ্রদর্শক ওলী (অভিভাবক, মুরশিদ, শায়েখ, ওলীআল্লাহ) পাবেন না। (পবিত্র সূরাতুল্ কাহ্ফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ১৭)

অত্র পবিত্র আয়াত উনার বিশুদ্ধ

তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ

(৫৬২)

مَن يَّهْدِ اللهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِ مثل اصحاب الكهف وَمَن يُضْلِلْ فَلَن تَجِدَ لَه وَلِيًّا مُّرْشِدًا كدقيانوس الكافر واصحابه. (مفاتيح الغيب اى التفسير الكبير اى تفسير الرازى سورة الكهف شريفة ۱۷ الاية الشريفة المؤلف: الامام العالم العلامة والحبر البحر الفهامة فخر الدين محمد بن عمر التميمى الرازى الشافعى المتوفى سنة ۶۰۶ هجرى(

অর্থ: (মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি যাঁকে হিদায়াত করেন তিনিই হিদায়াত প্রাপ্ত হন) যেমন আছহাবে কাহ্ফ এর সদস্যবৃন্দ রহমাতুল্লাহি আলাইহিম (আর যে গোমরাহীতে দৃঢ় থাকে, আপনি তাদের জন্য কোনো সঠিক পথপ্রদর্শক ওলী পাবেন না।) যেমন দাক্ইয়ানূস কাফির বাদশা ও তার সঙ্গি-সাথীরা। (মাফাতীহুল গইব অর্থাৎ আত-তাফসীরুল কবীর অর্থাৎ তাফসীরুর রাযী পবিত্র সূরাতুল্ ক্বাহ্ফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ১৭ লেখক: আল-ইমামুল আলিমুল আল্লামা, আল-হিবরুল আহরুল ফাহ্হামাহ ফখরুদ্দীন  মুহাম্মাদ বিন উমর তামীমী রাযী শাফিয়ী আশয়ারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৬০৬ হিজরী)

অত্র আয়াত শরীফ এবং উনার তাফসীর থেকে এটাই বুঝা যায় যে, যে বা যারা গোমরাহীর উপর দৃঢ় থাকে, সে বা তারা কখনোই হিদায়াতের পথ প্রদর্শনকারী ওলীআল্লাহ ও মুরশিদ উনাদের সন্ধান পায় না। সন্ধান পেলেও উনাদের আনুগত্যতা অর্জন করতে পারে না। যেমন, কাফির বাদশা দাকইয়ানূস হযরত আছহাবে কাহ্ফ ওলীআল্লাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে চেনার পরও আনুগত্যতা করতে পারেনি, এমনকি উনাদেরকে স্বীয় রাজ্য থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। তাই, সে কাফিরে পরিণত হয়ে যায়। আর হযরত আছহাবে কাহ্ফ রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ছুহবাত তথা সাহচর্য অর্জন করার ফলে উনাদের খিদমতকারী কুকুরটিও জান্নাতী হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! সেই কুকুরটি মারদূদ দরবেশ বালয়াম বিন বাউরার ছূরতে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সুবহানাল্লাহ! (মছনবীয়ে রূমী, সমূহ তাফসীর উনার কিতাব)

অসমাপ্ত

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৫

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৬

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৭