পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ শরীফ ও পবিত্র ছহীহ ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত, দিন, সময় ও মুহূর্তের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৪

সংখ্যা: ২৪১তম সংখ্যা | বিভাগ:

পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ শরীফ ও পবিত্র ছহীহ ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত, দিন, সময় ও মুহূর্তের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৪


[সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-উনার ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব উনার অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) ২৭. ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) ২৮. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬৮-২৩৭), ২৯. জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯২-১৯৩তম সংখ্যা) ৩০. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯৫-২১৩তম সংখ্যা), ৩১. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে “কুলাঙ্গার, পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” (২০৩তম সংখ্যা), ৩২. হানাফী মাযহাব মতে নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ে ‘আমীন’ অনুচ্চ আওয়াজে বা চুপে চুপে পাঠ করাই শরীয়তের নির্দেশ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১২তম সংখ্যা), ৩৩. পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২২০তম সংখ্যা থেকে যা এখনো চলছে) পেশ করার পাশাপাশি-

৩৪তম ফতওয়া হিসেবে

“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিনের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিনের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ

 সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলাম উনার নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরক ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” উনার মধ্যে এমনসব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।

বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো “উলামায়ে সূ”। ইহুদীদের এজেন্ট উলামায়ে ‘সূ’রা হারাম টিভি চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে মুসলমান উনাদের বিশেষ বিশেষ ফযীলতযুক্ত আমলের রাত ও দিনসমূহ পালন করাকে বিদয়াত, নাজায়িয ও শিরক বলে ফতওয়া দিয়ে মুসলমান উনাদেরকে অশেষ খায়ের, বরকত, নিয়ামত, নাজাত অর্থাৎ রেযামন্দি বা সন্তুষ্টি মুবারক থেকে মাহরূম করছে। যেমন তারা বলে থাকে যে, পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা বিদয়াত, শিরক। নাউযুবিল্লাহ! পবিত্র শবে বরাত পালন করা বিদয়াত, নাজায়িয। নাউযুবিল্লাহ! পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ পালন করা বিদয়াত। নাউযুবিল্লাহ! অনুরূপ আরো অনেক বিষয়কেই তারা বিনা দলীলে মনগড়াভাবে নাজায়িয ও বিদয়াত বলে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!

অপরদিকে বেদ্বীনী-বদদ্বীনী অর্থাৎ কাফির মুশরিক, ইহুদী, নাছারাদের যত পর্ব বা দিবস রয়েছে সেগুলোকে শুধু জায়িযই নয় বরং নিয়ামত বলে আখ্যা দিয়ে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! যেমন বাইতুল মুকাররমের সাবেক খতীব ওবায়দুল হক্ব প্রকৃতপক্ষে উবাই বলেছিল, “পহেলা বৈশাখ আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত।” নাঊযুবিল্লাহ!

অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এসব বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ্ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা বিদয়াত শিরক এবং পহেলা বৈশাখ মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত।” নাউযুল্লিাহ! তারা ঈমানহারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে হালাল বা জায়িয বিষয়কে হারাম বা নাজায়িয বলা এবং হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে-

استحلال الـمعصية كفر.

অর্থাৎ “গুনাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী শরীফ)

অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “সূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমান উনাদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।

অনুরূপ উলামায়ে “সূ”দের এ কুফরীমূলক বক্তব্য মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে “পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা থেকে বিরত থাকবে এবং হারাম পহেলা বৈশাখ পালন করবে” তারা অশেষ খায়ের, বরকত ও নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হওয়ার কারণে কঠিন গুনাহগার অর্থাৎ জাহান্নামী হবে। নাউযুবিল্লাহ!

কাজেই, যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব সমঝদার মুসলমানগণ তারা তাদের ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে অর্থাৎ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার রিযামন্দি হাছিল করতে পারে সে জন্যেই “পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিনের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াটি” প্রকাশ করা হলো।

 সম্মানিত ইসলামী মাস, বিশেষ বিশেষ রাত, দিন, মুহুর্ত ও সময় সমূহ সম্পর্কে এবং চন্দ্র ও সূর্যের গতিবিধির ব্যাপারে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার ২৬ খানা পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ

 সূর্য ও চাঁদ এই দু’টি সম্মানিত ইসলামী মাস, রাত, দিন, মুহুর্ত ও সময় নিরুপনের ব্যাপারে মানদন্ড হিসেবে বিবেচিত। অর্থাৎ সূর্য ও চন্দ্র উনাদের আবর্তনের কারণে বিশেষ বিশেষ রাত, দিন, মুহুর্ত ও সময়গুলো সুচারুরূপে আগমণ করে থাকে। এজন্য আমরা সম্মানিত ইসলামী মাস, রাত, দিন, মুহুর্ত ও সময় ইত্যাদীর আলোচনার পাশাপাশি চন্দ্র ও সূর্যের আবর্তন ও তাদের গতিবিধি সম্পর্কে আলোচনা করবো। যাতে করে বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে যায় এবং বুঝতে সহজ হয়। নিম্নে এ সম্পর্কিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হলো:

পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর-১

ولقد ارسلنا موسى باياتنا ان اخرج قومك من الظلمت الى النور وذكرهم بايام الله ان فى ذلك لايت لكل صبار شكور. (سورة ابراهيم شريف ৫ الاية شريف)

অর্থ: আমি হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে আমার নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছিলাম এবং বলেছিলাম আপনি আপনার সম্প্রদায়কে অন্ধকার হতে আলোতে নিয়ে আসুন। আর মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়গুলোর কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন। এতে নিদর্শন মুবারক ও উপদেশ রয়েছে প্রত্যেক পরম ধৈর্য্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য। (পবিত্র সূরাতু ইবরাহীম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ যদিও হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ব্যাপারে নাযিল হয়েছে, কিন্তু উনার হুকুম আম বা ব্যাপকভাবে সকলের জন্য সকল সময়েই প্রযোজ্য। মূলত এ পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা অতীতের কল্যাণময় ও অকল্যানময় ঘটনাসমূহকে স্মরণ করতে বলা হয়েছে এজন্য যে, যাতে এগুলো থেকে ইবরত-নছীহত মুবারক গ্রহন করা হয়। এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ নির্ভরযোগ্য সর্বজনমান্য সকল তাফসীর গ্রন্থেই কমবেশি আলোচনা করা হয়েছে। নি¤েœ তাফসীর উনার কিতাব উনাদের ইবারত উল্লেখ করা হলো-

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘তানবীরুল মাকবাস মিন তাফসীরি ইবনি আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’ নামক কিতাবে বর্ণিত আছে-

(وذكرهم بايام الله) بايام عذاب الله ويقال بايام رحمة الله (ان فى ذلك) فيما ذكرت (لايات) لعلامات (لكل صبار) على الطاعة (شكور) على النعمة.

অর্থ: “(আর মহান আল্লাহ পাক উনার রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন) নাফরমান জাতির প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আযাব নাযিলের রাত, দিন ও সময়সমূহ এবং নেক বান্দাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত নাযিলের রাত, দিন ও সময়সমূহকে স্মরণ করুন (নিশ্চয়ই এতে রয়েছে) যা উল্লেখ রয়েছে (উপদেশ) নিদর্শন, (প্রত্যেক পরম ধৈর্য্যশীল) আনুগত্যের ব্যাপারে ধৈর্যধারণকারী (ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য) নিয়ামতের শুকরিয়াকারীদের জন্য।”

আল ইমামুল কাবীর আল মুহাদ্দিছুশ শাহীর আতবাক্বাতিল উম্মাহ আলা তাকাদ্দুমিহী ফিত তাফসীর হযরত আবূ জা’ফর মুহম্মদ বিন জারীর আত ত্বাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত মুবারক ৩১০ হিজরী) উনার লেখা “জামিউল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন (তাফসীরুত ত্ববারী)” ১৩ খ- ১২৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

حدثنى الـمثنى رحمة الله عليه قال اخبرنا ابو حذيفة رحمة الله عليه قال ثنا شبل رحمة الله عليه عن ابن ابى نجيح رحمة الله عليه عن مـجاهد رحمة الله عليه وذكرهم بايام الله قال بالنعم التى انعم بها عليهم انجاهم من ال فرعون وفلق لـهم البحر وظلل عليهم الغمام وانزل عليهم الـمن والسلوى.

অর্থ: (হযরত ইমাম আবূ জা’ফর ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন) “আমার নিকট পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মুছান্না রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত আবূ হুযাইফাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হযরত শিবিল রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইবনু আবী নুজাইহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত মুজাহিদ তাবিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন। ‘মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন’ এ পবিত্র আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, উক্ত বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহে তাদের উপর যে নিয়ামত প্রদান করা হয়েছিলো সেগুলি হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি (বণী ইসরাঈলকে) ফিরাউন গোষ্ঠীর অত্যাচার থেকে হিফাযত করেছিলেন, উনাদের জন্য সাগরে রাস্তা করে দিয়েছিলেন, মেঘমালা দ্বারা উনাদেরকে ছায়া দান করেছিলেন এবং উনাদের জন্য আকাশ থেকে ‘মান্না’ ও ‘সালওয়া’ খাদ্য নাযিল করেছিলেন।”

عن سعيد بن جبير رحمة الله عليه وذكرهم بايام الله قال بنعم الله.

অর্থ: “হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন’ এ পবিত্র আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় বলেন, তা হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার প্রদত্ত নিয়ামত নাযিলের দিন।

عن قتادة رحمة الله عليه وذكرهم بايام الله يقول ذكرهم بنعم الله عليهم

অর্থ: “হযরত ক্বতাদাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন’ এ পবিত্র আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় বলেন, মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার পক্ষ থেকে উনাদের উপর নাযিলকৃত নিয়ামতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।”

عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه عن ابى رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم وذكرهم بايام الله قال نعم الله.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত উবাই রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে, তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি وذكرهم بايام الله উনার তাফসীরে ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামতের কথা স্মরণ করে দিন।”

ইমাম আবুল ফিদা হাফিয ইবনে কাছীর দামেশকী শাফিয়ী আশয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত মুবারক: ৭৭৪ হিজরী) উনার লেখা ‘তাফসীরুল কুরাআনিল আযীম তথা তাফসীরে ইবনে কাছীর’ উনার ২য় খ- ৮১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وذكرهم بايام الله اى باياديه ونعمه عليهم فى اخراجه اياهم من اسر فرعون وفهره وظلمه وغشمه، وانجائه اياهم من عدوهم، وفلقهه لـهم البحر، وتظليله اياهم الغمام، وانزاله عليهم الـمن والسلوى الى غير ذلك من النعم، قال ذلك مجاهد رحمة الله عليه وقتادة رحمة الله عليه وغير واحد، وقد ورد فيه الحديث الـمرفوع الذى رواه عبد الله بن الامام احمد بن حنبل رحمة الله عليه فى مسند ابيه حيث قال: حدثنى يحيى بن عبد الله مولى بنى هاشم رحمة الله عليه، حدثنا محمد بن ابان الجعفى رحمة الله عليه عن ابى اسحاق رحمة الله عليه عن سعيد بن جبير رحمة الله عليه عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه عن ابى بن كعب رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم فى قوله تعالى: (وذكرهم بايام الله) قال: بنعم الله، ورواه ابن جرير رحمة الله عليه وابن ابى حاتم رحمة الله عليه من حديث محمد بن ابان رحمة الله عليه به، ورواه عبد الله رحمة الله عليه ابنه ايضا موقوفا وهو اشبه. مسند احمد الجلد ۵ الصفحة ۱۲۲

অর্থ: (মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন) অর্থাৎ বণী ইসরাঈলকে ফিরআউনের অত্যাচার অবিচার ও তার কয়েদ হতে মুক্ত করে ও উনাদের শত্রু হতে উনাদেরকে নিষ্কৃতি দান করে সমুদ্রের মধ্য দিয়ে উনাদের জন্য পথ করে দিয়ে মেঘমালার সাহায্যে উনাদের জন্য ছায়া দান করে এবং মান্না ও সালওয়া উনাদের উপর অবতীর্ণ করে, ইহা ছাড়া আরো যে অনেক নিয়ামত মুবারক মহান আল্লাহ তায়ালা উনাদেরকে দান করেছেন তার উল্লেখ করে আপনি বণী ইসলাঈলকে উপদেশ দান করুন। হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ক্বাতাদাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্য তাফসীরকারগণ এই তাফসীর করেছেন। এ সম্পর্কে একটি মারফূ পবিত্র হাদীছ শরীফ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতার মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল নামক কিতাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, আমার কাছে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত ইয়াহইয়া ইবনে আব্দুল্লাহ মাওলায়ে বণী হাশিম রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মুহম্মদ আবান আল জুফী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি হযরত আবূ ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি তাবিয়ী হযরত সাঈদ বিন জুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে, তিনি ছাহাবী হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে, তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন, নূরুম্ মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি (সাইয়্যিদুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

وذكرهم بايام الله এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামতসমুহ স্মরণ করিয়ে তাদেরকে উপদেশ দিন। হযরত ইবনে জারীর ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইবনু আবী হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা দু’জন পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হযরত মুহম্মদ ইবনে আবান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন। উনার পুত্র হযরত আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি মাওকূফ সূত্রে হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেছেন। (মুসনাদে আহমদ শরীফ ৫ম খণ্ড ১২২ পৃষ্ঠ)

হযরতুল আল্লামা ক্বাযী মুহম্মদ ছানাউল্লাহ উছমানী হানাফী মাতুরীদী মাযহারী নকশবন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত: ১১৪৩ হিজরী, ওফাত: ১২২৫ হিজরী) উনার লেখা ‘তাফসীরুল মাযহারী’ ৫ম খ- ১১৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(وذكرهم بايام الله) قال ابن عباس رضى الله تعالى عنه وابى بن كعب رضى الله عنه ومجاهد رحمة الله عليه وقتادة رحمة الله عليه بنعم الله، وقال مقاتل رحمة الله عليه بوقائع الله فى الامم السابقة قوم نوح عليهم السلام وعاد وثـمود، يقال فلان عالـم بايام العرب اى بوقائعهم، والتقدير فذكرهم بـما كان فى ايام الله الـماضية من النعمة او البلاء (ان فى ذلك) الوقائع (لايات) على وجود الصانع وعلمه وقدرته حكمته ووحدته (لكل صبار) يصبر كثيرا على البلاء والطاعة عن الـمعصية. (شكور) يشكر كثيرا على نعمائه والـمراد به لكل مؤمن.

অর্থ: (মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ক্বতাদাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা ‘ايام الله’ উনার অর্থ করেছেন ‘মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামতসমূহ, হিসেবে। হযরত মুক্বাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এটা দ্বারা উদ্দেশ্য ঐসকল ইতিবৃত্ত যা ঘটেছিলো পূর্ববর্তী জাতি ক্বওমে নূহ আলাইহিস সালাম, ক্বওমে আদ ও ক্বওমে ছামূদ-উনাদের যুগে। প্রচলিত একটি প্রবাদ- জনৈক ব্যক্তি আইয়্যামুল আরবের আলিম, অর্থাৎ লোকটি আরববাসীদের ইতিহাস জানেন। এভাবে মর্মার্থ দাঁড়ায়- হে আমার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার ক্বওমকে ওই সকল ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিন, যেগুলো সংঘটিত হয়েছিলো তাদের পূর্বসূরীদের যামানায়, কখনো নিয়ামতরূপে আবার কখনো বালা-মুছীবতরূপে। (নিশ্চয়ই এতে রয়েছে) অতীতের ঘটনাসমূহে রয়েছে (উপদেশসমূহ) ওই সকল ঘটনাবলীর মধ্যে রয়েছে মহান আল্লাহ পাক উনার এককত্ব ও শক্তিমত্তার আশ্চর্য নিদর্শন ও হিকমত। (প্রত্যেক পরম ধৈর্যশীল) যারা বালা-মুছীবতের সময় ছবর করেন (ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য) যাঁরা নিয়ামতসমূহ পাওয়ার কারণে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। উনার দ্বারা উদ্দেশ্য প্রত্যেক মু’মিন-মুসলমানগণ।

জামীউল উলূম, মাওলানা, মাওলায়ে রূম, শায়খ ইসমাঈল হাক্কী আল বারূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত : ১১৩৭ হিজরী) উনার লেখা ‘তাফসীরে রূহুল বয়ান’ উনার ৪র্থ খ- ৩৯৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(وذكرهم بايام الله) على التذكير بالوقائع التى وقعت على الامم الـماضية قبل نوح عليه السلام وعاد وثمود. والـمعنى وعظهم وانذرهم مـما كان فى ايام الله من الوقائع ليحذروا فيؤمنوا (ان فى ذلك) اشارة الى ايام الله ( لايات) عظيمة او كثيرة دالة على وحدانية الله وقدرته وعلمه وحكمته (لكل صبار) مبالغ فى الصبر على طاعة الله وعلى البلايا (شكور) مبالغ فى الشكر على النعم والعطايا. كانه قال لكل مؤمن كامل اذ الايـمان نصفيان نصفه صبر ونصفه شكر.

অর্থ: “(মহান আল্লাহ পাক উনার দিবস সমূহের কথা তাদেরকে স্বরণ করিয়ে দিন) পূর্ববর্তী জাতিদের উত্থান-পতনের কথাগুলো বর্ণনা করে তাদেরকে উপদেশ দিন। যেমন : হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার জাতি, হযরত হূদ আলাইহিস সালাম উনার জাতি আদ সম্প্রদায় এবং হযরত ছালিহ আলাইহিস সালাম উনার জাতি ছামূদ সম্প্রদায়ের অবস্থা বর্ণনা করুন। এর অর্থ হলো- আপনি পূর্ববর্তী দিনের ঘটনাগুলো উল্লেখ করে তাদেরকে নছীহত করুন এবং সতর্ক করুন। এতে তারা সতর্ক হবে এবং ঈমানদার হবে। (নিশ্চয়ই এতে) পূর্ববর্তী দিনের ইতিহাসের মধ্যে (তাদের জন্য উপদেশ রয়েছে) বড় বড় ও অনেক উপদেশ। উনার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার তাওহীদ, কুদরত, ইলম ও হিকমত গুলো জানা যায়। (প্রত্যেক পরম ধৈর্যশীল ব্যক্তির জন্য) যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্যে এবং বালা-মুছীবতে পূর্ণ ছবরকারী (পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য) যাঁরা নিয়ামত ও অনুদানের ব্যাপারে পরিপূর্ণ শুকরগুজারী। প্রত্যেক মু’মিনে কামিল উনাদের ঈমানের দুটি ভাগ। অর্ধেক হলো ধৈর্য আর অর্ধেক হলো শুকরগুজারী।”

খাতিমাতুল মুহাক্কিক্বীন, উমদাতুল মুদাক্কিক্বীন, মুফতীয়ে বাগদাদ, আল্লামা আবুল ফদ্বল শিহাবুদ্দীন সাইয়্যিদ মাহমূদ আলূসী বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত: ১২৭০ হিজরী) উনার লেখা ‘রূহুল মায়ানী ফী তাফসীরিল কুরআনিল আযীম ওয়াস সাবয়িল মাছানী’ কিতাবের ১৩তম খ- ১৮৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(وذكرهم بايام الله) اى بنعمائه وبلائه كما روى عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما، وحاصل الـمعنى بالترغيب والترهيب والوعد والوعيد. وعن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهما ايضا والربيع رحمة الله عليه ومقاتل رحمة الله عليه وابن زيد رحمة الله عليه الـمراد بايام الله وقائعه سبحانه ونقماته فى الامم الخالية، ومن ذلك ايام العرب لحروبـها وملاحمها كيوم ذى قار ويوم الفجار ويوم قضة وغيرهما. واستظهره الزمخشرى رحمة الله عليه للغلبة العرفية وان العرب استعملته للوقائع، وانشد الطبرسى لذلك قول عمرو بن كلثوم:

وايام لنا غرر طوال: عصينا الـملك فيها ان ندينا

وانشده الشهاب للمعنى السابق، وانشد لهذا قوله: وايامنا مشهورة فى عدونا.

واخرج النسائى عبد الله بن احمد رحمة الله عليه فى زوائد الـمسند والبيهقى فى شعب الايـمان وغيرهم عن ابى بن كعب رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم انه فسر الايام فى الاية بنعم الله تعالى والائه، وروى ذلك ابن الـمنذر رحمة الله عليه عن ابن عباس رضى الله عنه ومجاهد رحمة الله عليه، وانت تعلم انه ان صح الحديث فعليه الفتاوى.

অর্থ: (মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্বরণ করিয়ে দিন) অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামতসমূহ ও উনার কর্তৃক নাযিলকৃত বালা-মুছীবত সমূহের কথা তাদেরকে স্বরণ করিয়ে দিন। যা বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি। মূল মর্মার্থ হলো- আপনি তাদেরকে উপদেশ, ভীতি প্রদর্শন দ্বারা এবং কৃত অঙ্গিকার ও শাস্তির অঙ্গিকারের কথা স্বরণ করিয়ে নছীহত মুবারক করুন। ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা, হযরত রবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুক্বাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইবনু যায়েদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, ايام الله দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- মহান আল্লাহ সুবহানাহু উনার পক্ষ থেকে বান্দাদের প্রতি বিশেষ স্বরণীয় ঘটনাসমূহ এবং পূর্ববর্তী জাতিদের শাস্তি, প্রতিশোধ, ঘাত প্রতিঘাত ইত্যাদি অবস্থাদী। এ ছাড়াও এর দ্বারা আরবদের যুদ্ধ বিগ্রহ, হত্যা খুন-খারাবীর ইতিহাস যেমন: ‘ইয়াওমুল যী কার,’ ‘ইয়াওমুল ফুজ্জার, ‘ইয়াওমে ক্বাদ্বাহ’ ও এ ছাড়া অন্যান্য বিশেষ ঘটনাবহুল দিবসকে স্বরণ করতে বলা হয়েছে। আল্লামা যামাখশারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রাধান্যপ্রাপ্ত মর্মার্থের ব্যাপারে মত প্রকাশ করে বলেন, আরবরা ايام الله উনার অর্থ করে থাকেন- ঘটনা ও ইতিহাস হিসেবে। যেমনটি ত্ববারাসী তিনি আমর বিন কুলছূম-এর কবিতা আবৃতি করে উদাহরণ পেশ করেন।

(কবিতা) : ‘ঘটনাবহুল দুর্যোগময় সময়গুলো আমাদের জন্য লম্বা হয়েছে।’

এই একই অর্থে কবিতা আবৃতি করেছেন আল্লামা শিহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি। যেমনটি তিনি বলেন: (কবিতা): ‘আমাদের মুসলমানগণের বিজয়ের ঘটনাবহুল দিনগুলো আমাদের শত্রুদের কাছে আতঙ্কের।’

হযরত ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘নাসায়ী শরীফ-এ’, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘যাওয়ায়িদুল মুসনাদ’ কিতাবে, হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘শুয়াবুল ঈমান, কিতাবে এবং অন্যান্যগণ হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই তিনি ايام শব্দের তাফসীরে ইরশাদ করেন তা হচ্ছে- মহান আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক বান্দার প্রতি প্রদত্ত নিয়ামত, দয়া, দান, অনুগ্রহ, কল্যানসমূহ। যা হযরত ইবনুল মুনযির রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন।

বিশ্ব বিখ্যাত সর্বজনমান্য ‘তাফসীরুল জালালাঈন’ কিতাবের ২০৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وذكرهم بايام الله بنعمه ان فى ذلك التذكير لايت لكل صبار على الطاعة شكور للنعم.

অর্থ : (মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন) অর্থ নিয়ামতে পূর্ণ দিবস সমূহের কথা (নিশ্চয়ই এতে রয়েছে) উপদেশ (নছীহত, প্রত্যেক পরম ধৈর্যশীলের জন্য) যাঁরা আনুগত্যতায় ধৈর্য্যধারণ করেন (এবং প্রত্যেক পরম কৃতজ্ঞতাকারীর জন্য) যাঁরা নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করেন।

(وذكرهم بايام الله) يقول: عظهم وخوفهم بمثل عذاب الاليم الخالية فيحذروا فيؤمنوا (ان في ذلك) يقول: إن في هلاك الامم الخالية (لايت) يعني لعبرة (لكل صبار شكور) يعني المؤمن صبور على أمر الله عز وجل عند البلاء الشديد، شكور لله تعالى في نعمه. (تفسير مقاتل بن سليمان المؤلف: الامام ابو الحسن مقاتل بن سليمان بن بشير الأزدي البلخي رحمة الله عليه سورة ابراهيم شريف رقم الاية شريف ۵)

অর্থ : (মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন) তিনি বলেন: পূর্ববর্তী জাতীদের প্রতি যে আযাব নাযিল হয়েছিল তা স্মরণ করে দিয়ে তাদেরকে নছীহত করুন এবং ভয় প্রদর্শন করুন। যাতে তারা ভয় করে এবং পবিত্র ঈমান গ্রহণ করে। (নিশ্চয়ই এতে রয়েছে) পূর্ববর্তী উম্মাতের ধ্বংসের মধ্যে (নছীহত,) অর্থাৎ উপদেশ (প্রত্যেক পরম ধৈর্যশীলের জন্য এবং প্রত্যেক পরম কৃতজ্ঞতাকারীর জন্য) অর্থাৎ কঠিন পরীক্ষার সময় মহান আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্লা উনার প্রতি ছবরকারী মু’মিনদের জন্য এবং মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নি’য়ামত গ্রহণে শুকরগুজারী বান্দাদের জন্য। (তাফসীরে মুক্বাতিল বিন সুলাইমান লেখক: ইমাম আবুল হাসান মুক্বাতিল বিন সুলাইমান বিন বাশীর আযদী বালখী রহমাতুল্লাহি আলাইহি পবিত্র সূরাহ ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-৫)

عن مجاهد رحمة الله عليه (وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ الله) قال: بنعم الله عز وجل. (تفسير مجاهد المؤلف: ابو الحجاج مجاهد بن جبر التابعي المكي القرشي المخزومي رحمة الله عليه سورة ابراهيم شريف رقم الاية شريف ۵)

অর্থ: হযরত মুজাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি (মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন) উনার ব্যাখ্যায় বলেন: মহান আল্লাহ তায়ালা উনার প্রদত্ত নিয়ামত উনার কথা স্মরণ করে দিন। (তাফসীরে মুজাহিদ লেখক: আবুল হাজ্জাজ মুজাহিদ বিন জাবর তাবিয়ী মাক্কী কুরাশী মাখযূমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি পবিত্র সূরাহ ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-৫)

(وَذَكِّرْهُمْ بِاَيَّامِ الله) يعني خوّفهم بمثل عذاب الأمم الخالية ليؤمنوا. وقال مجاهد رحمة الله عليه: أيام نعمه. وكذلك قال قتادة رحمة الله عليه والسدي رحمة الله عليه يعني ذكرهم نعمائي ليؤمنوا بي. (بحر العلوم اى تفسير السمرقندي المؤلف: الامام المفسر الفقيه ابو الليث نصر بن محمد بن احمد بن ابراهيم السمرقندي الحنفي رحمة الله عليه المتوفى ৩৭৩ هجري سورة ابراهيم شريف رقم الاية شريف ۵)

অর্থ: (মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন) পূর্ববর্তী জাতিদের প্রতি যে আযাব নাযিল হয়েছিল তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করুন, যাতে তারা পবিত্র ঈমান গ্রহণ করে। হযরত মুজাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: তা হচ্ছে নিয়ামত প্রাপ্তির দিন সমূহ। অনুরুপ হযরত ক্বতাদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত সুদ্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনারা ব্যাখ্যা করে বলেন যে, তাদেরকে আমার নিয়ামত সমূহের কথা স্মরণ করে দিন যাতে তারা পবিত্র ঈমান গ্রহণ করে। (বাহরুল উলূম অর্থাৎ তাফসীরুস্ সামারকান্দী লেখক: ইমাম মুফাসসির ফক্বীহ আবুল্ লাইছ নাছর বিন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন ইবরাহীম সামারকান্দী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত মুবারক: ৩৭৩ হিজরী পবিত্র সূরাহ ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-৫)

وقوله: (وذكرهم بايام الله) روي عن ابي بن كعب رضى الله عنه انه قال: معناه بنعم الله. وفي بعض المسانيد نقل هذا مرفوعا الى النبي صلى الله عليه وسلم. والقول الثاني: بايام الله أي بنقم الله. وقال بعضهم: بوقائع الله يعني بما اوقع بالامم الماضية. (تفسير السمعاني المؤلف: ابو المظفر السمعاني منصور بن محمد بن عبد الجبار التميمي المروزي الشافعي رحمة الله عليه سنة الولادة: ۴۸۹ هجري سنة الوفاة ۴۸۹ هجري سورة ابراهيم شريف رقم الاية شريف ۵)

অর্থ: মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বানী: (মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন) হযরত উবাই বিন কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু অত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে বলেন: আয়াত শরীফ দ্বারা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিয়ামত সমূহ স্মরণ করতে বলা হয়েছে। কতক সনদে এই ভাবে নকল করা হয়েছে যে, উক্ত ব্যাখ্যাখানা সাইয়্যিদুনা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে মারফূ’ সূত্রে বর্ণিত আছে। দ্বিতীয় ব্যাখ্যা: আইয়ামিল্লাহ অর্থ মহান আল্লাহ তায়ালা উনার পক্ষ থেকে শাস্তি সমূহ। কতক হযরত মুফাসসিরূন কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম বলেন: তা হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত বিশেষ ঘটনা সমূহ অর্থাৎ পূর্ববর্তী উম্মাতদের ঘটনা সমূহ। (তাফসীরুস্ সাময়ানী লেখক: আবুল মুজাফফার সাময়ানী মানছূর বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল জাব্বার তামীমী মারূযী শাফিয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি জন্ম মুবারক: ৪২৬ হিজরী ওয়াফাত মুবারক: ৪৮৯ হিজরী পবিত্র সূরাহ ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ৫)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنه عَنِ اُبَى بْنِ كَعْبٍ رضى الله عنه عَنِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فِي قَوْلِه تَبَارَكَ وَتَعَالى: “وَذَكّرْهُمْ بِايَّامِ اللهِ” قَالَ: بنعم الله تَبَارَكَ وَتَعَالى. (تفسير ابن ابى حاتم المؤلف: الإمام الحافظ ابو محمد عبد الرحمن بن ابي حاتم الرازي سورة ابراهيم شريف رقم الاية شريف ۵)

অর্থ: হযরত ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে, তিনি নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত নাবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বাণী মুবারক (মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন) উনার ব্যাখ্যায় বলেন: তা হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিয়ামতসমূহ। (তাফসীরে ইবনু আবী হাতিম লেখক: ইমাম হাফিয আবূ মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান বিন আবী হাতিম রাযী রহমাতুল্লাহি আলাইহি পবিত্র সূরাহ ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-৫)

(وَذَكِّرْهُمْ بِاَيَّامِ الله) وانذرهم بوقائعه التي وقعت على الامم قبلهم قوم نوح عليه السلام وعاد وثمود، ومنه ايام العرب لحروبها وملاحمها او بايام الانعام حيث ظلل عليهم الغمام وانزل عليهم المن والسلوى وفلق لهم البحر. (مدارك التنزيل وحقائق التأويل اى تفسير النسفي المؤلف: الامام الفقيه المفسر ابو البركات عبد الله بن احمد بن محمود النسفي الحنفي الماتريدي رحمة الله عليه المتوفى ۷۱۰ هجري سورة ابراهيم شريف رقم الاية شريف ۵)

অর্থ: (মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন) আপনি তাদেরকে ঐ সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করে ভীতি প্রদর্শন করুন, যা আপনার পূর্ববর্তী উম্মাত ক্বওমে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম, ক্বওমে আ’দ ও ক্বওমে ছামূদ ইত্যাদীর ধ্বংস হওয়ার ঘটনা। তন্মধ্যে আরবের যুদ্ধ-বিগ্রহ, মারামারি-কাটাকাটি দিন গুলো। অথবা তাদের উপর মেঘমালা দ্বারা ছায়া প্রদান, আকাশ থেকে মান্না-সালওয়া নাযিল এবং সাগর দুই ভাগ হয়ে রাস্তা হওয়া ইত্যাদী নিয়ামত সমূহ স্মরণ করিয়ে উপদেশ দিতে বলা হয়েছে। (মাদারিকুত তানযীল ওয়া হাক্বায়িকুত তা’বীল অর্থাৎ তাফসীরুন নাসাফী লেখক: ইমাম ফক্বীহ মুফাসসির আবুল বারাকাত আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন মাহমূদ নাসাফী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৭১০ হিজরী পবিত্র সূরাহ ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-৫)

قوله: (وذكِّرهم بايام الله) ثلاثة اقوال: احدها: انها نِعَمُ الله، رواه اُبيُّ بن كعب رضى الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم، وبه قال مجاهد وقتادة وابن قتيبة رحمة الله عليهم.

والثاني: انها وقائع الله في الامم قبلهم، قاله ابن زيد وابن السائب ومقاتل رحمة الله عليهم.

والثالث: انها ايام نِعَم الله عليهم وايام نِقَمِه ممن كَفر من قوم نوح عليه السلام وعاد وثمود، قاله الزجاج رحمة الله عليه. (زاد المسير في علم التفسير اى تفسير الجوزي المؤلف: الامام جمال الدين عبد الرحمن بن علي بن محمد الجوزي الحنبلي الاشعري رحمة الله عليه الـمتوفى ۵۹۷ هجري سورة ابراهيم شريف رقم الاية شريف ۵)

অর্থ: মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বাণী: (মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন) অত্র আয়াত শরীফ উনার তিনখানা ব্যাখ্যা রয়েছে। এক: আইয়ামিল্লাহ হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিয়ামত সমূহ। যা হযরত উবাই ইবনু কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত নাবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন। যা হযরত মুজাহিদ, ক্বাতাদাহ ও ইবনুল্ কুতাইবাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও বর্ণনা করেছেন।

দুই: আইয়ামিল্লাহ হচ্ছে পূর্ববর্তী উম্মাতের উত্থান-পতনের ঘটনা সমূহ। যা হযরত ইবনু যায়েদ, ইবনুস্ সায়িব ও মুক্বাতিল রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বর্ণনা করেছেন।

তিন: আইয়ামিল্লাহ হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিয়ামতপূর্ণ দিনসমূহ এবং পূর্ববর্তী কাফির গোষ্ঠি ক্বওমে নূহ আলাইহিস সালাম, ক্বওমে আ’দ ও ক্বওমে ছামূদ তাদের প্রতি শাস্তি নাযিলের দিনসমূহ। যা হযরত যুজাজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন। (যাদুল মাসীর ফী ইলমিত তাফসীর অর্থাৎ তাফসীরুল জাওযী লেখক: ইমাম জামালুদ্দীন আব্দুর রহমান বিন আলী বিন মুহাম্মাদ জাওযী হাম্মালী আশয়ারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৫৯৭ হিজরী পবিত্র সূরাহ ইবরাহীম শরীফ-৫)

অসমাপ্ত


পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৬

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৭

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৮

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১