পবিত্র মাহে রবীউছ ছানী শরীফ ও উনার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ২৪৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

পবিত্র মাহে রবীউছ ছানী শরীফ ও উনার প্রাসঙ্গিক আলোচনা


পবিত্র রবীউছ ছানী মাস হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আলোচনার বিশেষ মাস। কেননা এ মাসে অনেক হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন এবং বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। যেমন এ মাসের ৩ তারিখ পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা বিনতু রসূলিল্লাহ আছছানিয়াহ হযরত রুক্বাইয়া আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! আবার এ মাসেরই ১৯ তারিখ বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আওলাদ বিনতু মুজাদ্দিদে আ’যম, নূরে মুকাররাম, সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত নিবরাসাতুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর এ মাসের ১১ তারিখ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আরেক আওলাদ হিজরী ষষ্ঠ শতাব্দী সনের মহান মুজাদ্দিদ, গউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

হযরত মুজাদ্দিদীনে কিরাম আলাইহিমুস সালাম উনাদের আগমনের ধারাবাহিকতায় বর্তমান হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দী সনের মহান মুজাদ্দিদ হচ্ছেন মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল উমাম সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! উনাকে চিনতে পারলে অতীতের সকল হযরত মুজাদ্দিদ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে চেনা ও জানা সহজ ও সম্ভব হবে। সুবহানাল্লাহ! কেননা একজন হযরত নবী ও রসূল আলাইহিস সালাম তিনি যেমন আরেকজন হযরত নবী ও রসূল আলাইহিস সালাম উনার সত্যায়নকারী তদ্রƒপ একজন হযরত মুজাদ্দিদ আলাইহিস সালাম তিনিও আরেকজন হযরত মুজাদ্দিদ আলাইহিস সালাম উনার সত্যায়নকারী।

কাজেই, হাল যামানায় মুজাদ্দিদ হিসেবে যিনি যমীনে অবস্থান করবেন, উনার পরিচয় লাভ করে উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা এবং উনাকে অনুসরণ করে চলা জিন-ইনসান সকলের জন্যেই ফরয। এই কারণে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন যমীনে আগমনকারী সর্বশেষ নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর ক্বিয়ামত পর্যন্ত আর কেউ নবী ও রসূল হিসেবে যমীনে আগমন করবেন না। এ সুদীর্ঘ সময়ে বা কালে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বায়িম-মক্বাম হিসেবে উনার পরিপূর্ণ অনুসারী এবং উনার তরফ থেকে যিনি মনোনীত খলীফা বা প্রতিনিধি যমীনে অবস্থান করবেন বা আগমন করবেন উনারা ঐ সম্মানিত কাজেরই পরিপূর্ণ আঞ্জাম দানকারী যেই সম্মানিত কাজের আঞ্জাম দিয়েছেন স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! যেমন এ প্রসঙ্গে সূরা আলে ইমরান শরীফ ১৬৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

لَقَدْ مَنَّ اللـهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِى ضَلَالٍ مُّبِينٍ

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি অবশ্যই ঈমানদারগণ উনাদের প্রতি ইহসান করেছেন যে, তিনি উনাদের মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন এই জন্য যে, তিনি উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে শুনাবেন, উনাদেরকে (বাহ্যিক-আভ্যন্তরীণ) তাযকিয়া বা পরিশুদ্ধ করবেন এবং উনাদেরকে কিতাব শিক্ষা দিবেন ও হিকমত শিক্ষা দিবেন। যদিও পূর্বে উনারা প্রকাশ্য গোমরাহীতে নিপতিত ছিল।

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাক শানে যেরূপ بعث “প্রেরণ করেছেন” শব্দ মুবারক উল্লেখ করা হয়েছে তদ্রƒপ শতাব্দীকালে আগমনকারী হযরত মুজাদ্দিদীনে কিরাম আলাইহিমুস সালাম উনাদেরও মুবারক শানে উক্ত শব্দ মুবারক থেকেই গঠিত يبعث “প্রেরণ করবেন” শব্দ মুবারক উল্লেখ করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে –

عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ الله تَعَالـى عَنْهُ فِيْمَا اَعْلَمُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِنَّ الله عَزَّ وَجَلَّ يَبْعَثُ لِـهٰذِهِ الْاُمَّةِ عَلـٰى رَأْسِ كُلّ ماِئَةِ سَنَةٍ مَنْ يـُّجَدّدُ لـَهَا دِيْنَهَا.

অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সর্বাধিক অবগত যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক জাল্লা শানুহূ তিনি প্রতি একশ বছরের মাথায় এ উম্মতের জন্য এমন একজন মনোনীত ব্যক্তি উনাকে প্রেরণ করবেন যিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার তাজদীদ করবেন অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আক্বায়িদী ও আ’মালী সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করে মানুষকে গোমরাহীর পথ থেকে ফিরিয়ে হিদায়েতের পথে পরিচালিত করবেন।” (আবূ দাঊদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অর্থাৎ যামানার মহান মুজাদ্দিদ আলাইহিস সালাম উনার নিকট যারা বাইয়াত হয়ে উনাকে অনুসরণ করবেন, উনারাই হাক্বীক্বী ঈমানদার ও মুসলমান। উনাদের জন্যই দুনিয়া ও আখিরাতে কামিয়াবী ও সুসংবাদ রয়েছে।

অতএব, প্রত্যেকের উচিত বর্তমান পঞ্চদশ হিজরী শতাব্দীর সুমহান মুজাদ্দিদ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে উনাকে অনুসরণ করে চলা। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে কবুল করুন। আমীন।


-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শাওওয়াল ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে যিলক্বদ এবং তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা