মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১৮৭) অতি প্রিয় ও পছন্দনীয় বস্তু কুরবান বা বিসর্জন না দেয়া পর্যন্ত শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার গভীর নিছবত, তায়াল্লুক, মুহব্বত, নৈকট্য হাছিল হয় না।

সংখ্যা: ২২৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আরাইহিম উনারা উনাদের অতি প্রিয় ও পছন্দনীয় বিষয় বা বস্তুগুলো কুরবান বা বিসর্জন দেয়ার জন্য জীবন মরণ রিয়াজত-মাশাক্কাত, চেষ্টা-কোশেশ করে থাকেনউনারা রিয়াজত-মাশাক্কাতের দ্বারা প্রিয় বিষয়বস্তুগুলো পরিত্যাগ করতে করতে এমনই এক তবকা বা স্তরে পৌঁছেন যে, পার্থিব জীবনের কোন কিছুর প্রতি উনাদের কোন আকর্ষন থাকেনাফলে উনাদের দৃষ্টিপথে, মানষপটে মহান আল্লাহ পাক তিনিই আসেনমহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত সবকিছুকে ভুলে যানউনাদের স্মৃতি থেকে মুছে যায়আর তখনই মহান আল্লাহ পাক উনার দায়িমী দিদার মুবারক বা দায়িমী হুযূরী লাভ হয়যাকে ইলমে তাছাওউফ  উনার পরিভাষায় ইহসান বলা হয়

শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ হযরত হাকিম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হচ্ছেন এক্ষেত্রে উজ্জল দলীলতিনি প্রিয় ও পছন্দনীয় বিষয়বস্তু পরিত্যাগ করার জন্য জীবন-মরণ কোশেশে লিপ্ত ছিলেন

এক পর্যায়ে তিনি বলেন, এজন্য আমি নিজ নফসকে মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদতে নিযুক্ত করতে বহু চেষ্টা করেও সফল হতে পারলাম নাতখন আমার মনে এ কথা জেগে উঠল যে, মহান আল্লাহ পাক আমাকে মনে হয় দোযখের জন্যই পয়দা করেছেনতবে দোযখীকে বাঁচিয়ে রেখে কি হবে এই ভেবে আমি জাইহুন নদীর তীরে গিয়ে উপস্থিত হলামসেখানে একটি লোক পেয়ে আমি তাকে বললাম, ভাই! তুমি আমার হাত-পাগুলো একটু বেঁধে দাওসে আমার কথামত তাই করে সেখান থেকে চলে গেলআমি তখন সেই বাঁধা অবস্থায় হামাগুড়ি দিয়ে নদীর তীরে চলে গেলামতারপর কোনরূপ গড়িয়ে আমি জাইহুন নদীর পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লামভাবলাম এবার মরতে পারবোকিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছা ছিল অন্যরূপহঠাৎ আপনা হতেই আমার হাত পায়ের বাধন খুলে গেলআর সহসা পানির একটি ঝলক এসে আমাকে ছিটকে নদীর উপকূলে উঠিয়ে দিলএভাবে আমি আমার নিজের প্রাণ ত্যাগের ব্যাপারে বিফল হয়ে পড়লামতখন আমার ভিতরে এমন ইলিম-হিকমত ও মারিফাত-মুহব্বতের গুপ্ত এক রহস্য প্রবেশ করলো যে, তা আর আমার বলার সাধ্য নেইতবে যা দেখলাম তাতেই আমি ফানার দরজায় পৌঁছে গেলাম

হযরত মুহাম্মদ আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রথম জীবনে  অত্যন্ত সুশ্রী এবং রূপবান ছিলেনযার ফলে অনেক যুবতী উনার প্রতি অত্যন্ত আকৃষ্ট হয়ে পড়তোকিন্তু তিনি তাদের দিকে একবার ফিরেও তাকাতেন নাএকদা একজন খুব ছূরত মেয়ে অত্যন্ত সুন্দর পোশাক ও অলঙ্কারে ভূষিত হয়ে হযরত মুহাম্মদ আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট গিয়ে উপস্থিত হলোতিনি তখন একটি নির্জন বাগিচায় একাকী ভ্রমণ করছিলেনএ অবস্থায় তিনি মহিলাটিকে দেখামাত্র উর্ধশ্বাসে সেখান থেকে ছুটে পালালেনকিন্তু ইশকের আগুনে উষ্ণ মেয়েটিও উনার পিছনে ছুটতে লাগলোকিন্তু সে উনার নাগাল পেলনাদীর্ঘ চল্লিশ বছর পার হওয়ার পর চরম বার্ধক্যে এসে হঠাৎ সেই ঘটনাটি উনার অন্তরপটে ভেসে উঠলএ সময় উনার অন্তরের মধ্যে এমন একটি খেয়াল হল, যা না হওয়াই সঙ্গত ছিলউনার মন বলে উঠল, কেন সেদিন আমি অত কঠিন হতে গেলাম, বেচারির মনের আশা পুরা করে দিয়ে তারপর না হয় তওবা করে নিতাম

মনের মধ্যে এরূপ ধারণাটি জাগার পরক্ষণেই উনার হুঁশ হলতিনি হঠাৎ কেঁপে উঠলেন, ইসতিগফার পড়তে লাগলেনআমার মন এ কি বলছে? মহান আল্লাহ পাক উনার ভয়ে তিনি তখন কান্না-কাটি শুরু করলেন এবং একাধারে তিন দিন পর্যন্ত উনার তা জারি থাকলোতিনি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে এই দোয়া করতে লাগলেন, হে খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক! আপনি আমার মনের এই পাপ খেয়াল থেকে আমাকে নাজাত দান করুনআর এর অপরাধ ক্ষমা করে দিন

এভাবে রোনাজারী করতে করতে তৃতীয় দিন রাতে তিনি স্বপ্নে দেখলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে লক্ষ্য করে বলছেন, হে ব্যক্তি! তুমি পেরেশান হয়ো নাকেননা আমার রিসালাতের যামানা যত দুরবর্তী হয়ে চলছে, অবস্থা ততই দ্রƒত মন্দের দিকে অগ্রসর হচ্ছেঅতএব, এ যামানায় বেগুনাহ ও পবিত্র থাকার গুরুত্ব যথেষ্ট

হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৪)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৫)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৬)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল ল মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৭)

মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৮)