সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৩৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মুবারক যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত ছলাত শরীফ ও সালাম মুবারক।

মুসলমান মাত্রই পবিত্র বিদায় হজ্জের কথায় আবেগতাড়িত হন। পবিত্র বিদায় হজ্জের খুতবা শরীফ দ্বারা অনুপ্রাণিত হন। পবিত্র বিদায় হজ্জের খুতবা শরীফ উনার প্রথম দিকেই বর্ণিত হয়েছে, “আজকের এ দিন যেমন পবিত্র, তেমনি প্রতিটি মুসলমানের জান-মাল অনেক পবিত্র। আপন জান-মাল রক্ষার্থে মুসলমান যে যুদ্ধ করবে তা জিহাদ বলে গণ্য হবে।” প্রসঙ্গত, মুসলমানের জান-মাল রক্ষা করা যেমন ফরয, তেমনি তা রক্ষার জন্য জিহাদী যোগ্যতা অর্জন করাও জরুরী।

পবিত্র মুসলিম শরীফ ও মুসনাদে আহমদ শরীফ উনাদের মধ্যে হযরত সালমান ইবনে আকওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দৌঁড় অনুশীলনে ইযাযত মুবারক দিয়েছেন।” (তবে অবশ্যই খেলা হিসেবে নয়; বরং জিহাদের প্রশিক্ষণ হিসেবে।)

আর আবূ দাউদ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে, “মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রোকনা পাহলোয়ানকে কুস্তিতে ধরাশায়ী করেছিলেন।”

(তবে তা অবশ্যই খেলা হিসেবে নয়; বরং রিসালতের প্রমাণ ও মু’জিযা হিসেবে তিনি রোকনা পাহলোয়ানের সাথে কুস্তি লড়েছেন এবং তাকে পরাস্ত করেছেন।)

উল্লেখ্য, পবিত্র হাদীছ শরীফ বা সম্মানিত শরীয়তে যে সমস্ত বিষয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে, সে সমস্ত বিষয়গুলি কোনো প্রকার খেলার অন্তর্ভুক্ত নয়। অর্থাৎ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে তীর ধনুক চালনা করা, অশ্বকে প্রশিক্ষণ দেয়া, স্ত্রীর সাথে শরীয়সম্মত হাসিখুশি করা, সাঁতার কাটা, সুতা কাটা, দৌঁড় অনুশীলন করা ইত্যাদি বিষয়গুলিকে শিখার জন্য তাকিদ দেয়া হয়েছে জিহাদের অংশ হিসেবে; খেলার জন্য নয়।

কারণ, উল্লিখিত বিষয়ের মধ্যে যেমন দ্বীনী ফায়দা রয়েছে, তেমনি দুনিয়াবী ফয়দাও নিহিত রয়েছে। যেমন- তীর চালনা করা, অশ্বকে প্রশিক্ষণ দেয়া, সাঁতার কাটা, দৌঁড় অনুশীলন ইত্যাদি জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণের অন্তর্ভুক্ত এবং স্বাস্থ্যকে সুঠাম ও বলিষ্ঠ রাখার কারণ।

কিন্তু মুসলমান সে আদর্শ ও চেতনা এবং ঐতিহ্য ভুলে গেছে। কেবলমাত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্প্রতি দেশের নাগরিকদের সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জানা গেছে, দেশটির মন্ত্রিপরিষদ এই মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ১৮ বছরের বেশি সকল পুরুষ কিংবা যারা হাইস্কুলের পড়াশোনা শেষ করেছে এবং ৩০ বছরের নিচে যাদের বয়স, তাদেরকে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে।

সময়সীমা হবে হাইস্কুল সম্পাদনকারীদের জন্য ৯ মাস এবং যারা সম্পন্ন করেনি তাদের জন্য ২ বছর। মহিলাদের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ ঐচ্ছিক। অথচ অন্যান্য অনেক অমুসলিম দেশে অনেক আগ থেকেই সাধারণ নাগরিকের জন্যও সামরিক প্রশিক্ষণ অব্যাহত আছে।

জার্মানির তরুণদের বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হয়।

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে উত্তেজনা মোকাবিলায় তরুণদের সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করে ডিক্রি জারি করেছে দেশটির অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দর তুরচিনোভ।

সিঙ্গাপুরে ১৮ বছর বয়স কাছাকাছি সময়ে, ১৬ বৎসর বয়স থেকে সব পুরুষ ঝরহমধঢ়ড়ৎবধহং ন্যাশনাল সার্ভিস নামক সামরিক প্রশিক্ষণ-এর আওতায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হয়। প্রশিক্ষণ না নিলে ৩ বছরের জেল অথবা ঝএউ ৫,০০০ জরিমানা অথবা উভয় দ- হবে।

ফিলিপাইনে সামরিক প্রশিক্ষণ শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অংশ। এর একটি নাম ঈঅঞ (ঈরঃরুবহ অৎসু ঞৎধরহরহম) : বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা প্রথম ধাপ ৮-১৫ বছর বয়সের মধ্যে। পুরো স্কুলের জন্য চার ঘণ্টা প্রতি সপ্তাহে পুরোপুরি সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে। সব পুরুষ মহিলার। পরীক্ষা হবে অন্যান্য বিষয়ের মতো। পাস করা বাধ্যতামূলক।

আর কলেজ, ইউনিভার্সিটির ট্রেনিংকে বলা হয় ঈগঞ (ঈরঃরুবহ গরষরঃধৎু ঞৎধরহরহম): এই কোর্স শুধু পুরুষদের। সপ্তাহে একদিন হিসেবে ২ বছর। এই প্রশিক্ষণ না নিলে ডিগ্রি পাস সার্টিফিকেট দেয়া হয় না।

ইউরোপের সুইস যুক্তরাষ্ট্র (ঝরিংং ঋবফবৎধঃরড়হ) ১৮৪৮ এবং ১৮৭৪ সালের আইনের মাধ্যমে সুইস নাগরিকদের জন্য সামগ্রিকভাবে প্রতিরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করে সুইজারল্যান্ডে নাগরিক-সৈনিক সমন্বয়ে প্রতিরক্ষা বাহিনী সংগঠিত করেছে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরে জার্মানিসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রে নির্দিষ্ট বয়সের তরুণ-তরুণীদের সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করে প্রতিরক্ষা বাহিনীতে নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে, যা ঈরারষরধহং-রহ-ঁহরভড়ৎস নামে চিহ্নিত। যুক্তরাষ্ট্রেও নির্দিষ্ট বয়সের তরুণ-তরুণীদের সাময়িকভাবে সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করে (ঈড়হংপৎরঢ়ঃরড়হ) প্রয়োজন অনুযায়ী সামরিক বাহিনীর আকার বৃদ্ধি করে চলেছে। এসব রাষ্ট্রের প্রয়োজন কিন্তু ভিন্ন। সামরিক বাহিনীর উপর সিভিলিয়ান কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এসব ক্ষেত্রে প্রধান লক্ষ্য নয়। নাগরিকদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে এসব দেশে সামরিক বাহিনীকে এমনভাবে প্রস্তুত রাখা হয় যেন সঙ্কটকালে বৃহৎ কলেবরের বাহিনী জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে।

তাই অনেকে মনে করেন, আগামী কয়েক দশক পরে নাগরিক-সৈনিক বাহিনীও রূপান্তরিত হয়ে যেতে পারে নিয়মিত প্রতিরক্ষা বাহিনীতে।

সম্প্রতি আমাদের দেশেও দেশের প্রথম প্রতিরক্ষা নীতি বাস্তবায়নে যুবকদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগী হিসেবে গড়ে তোলার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

মূলত, দেশের সাধারণ মানুষকে সামরিক শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারলে দেশের উপকারের চেয়ে একজন সাধারণ নাগরিকের উপকারই আগে হবে।

সামরিক প্রশিক্ষণ পেলে সব ধরনের কাজই সে করতে পারবে। মনের ভেতর এক ধরনের সাহস তৈরি হবে। জাতির মেরুদ- সোজা হয়ে দাঁড়াবে। শত্রুরা ভীত সন্ত্রস্ত হবে। বিশেষতঃ ভারতের সদ্য নির্বাচনে মোদির আস্ফালনের বিপরীতে ৯৭ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশ বাংলাদেশের সব নাগরিকের জন্য যুদ্ধবিদ্যা শিক্ষা, শরীর চর্চা তথা প্রশিক্ষণ নেয়া আত্মরক্ষার্থেই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ৭১-এ আমাদের আত্মরক্ষার অনুশীলন ছিল না বলেই অনেক বিপাকে পড়তে হয়েছে। এখন মোদির ভারতই যদি আমাদের আক্রমণ করে, তবে সে সম্পর্কে আমাদেরকে পূর্বেই সতর্ক হতে হবে।

কাজেই ৭১-এর পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে সব মুসলমানেরই পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সামরিক প্রশিক্ষণ নেয়া জরুরী। এ ব্যাপারে নাগরিক সচেতনতা তৈরিতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।

মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা মুবারক ফয়েজ, তাওয়াজ্জুহ।

যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সা-লাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়