সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূর মহাসম্মানিত রবীউল আউওয়াল শরীফ ও সম্মানিত রবীউছ ছানী শরীফ এবং উনাদের প্রাসঙ্গিক আলোচনা -আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

সংখ্যা: ২৮০তম সংখ্যা | বিভাগ:

ঈদ মুবারক! ঈদ মুবারক!! ঈদ মুবারক!!!

মালিকুত তামাম, ক্বসিমুন নিয়াম, কূল মাখলুকাতের মহাসস্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে তাশরীফ গ্রহণ তথা বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের মহিমান্বিত দিনটিই হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদের দিন।  যেই দিনটিকে সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর, ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলা হয়েছে। সর্বোপরি এ দিনটিকে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদ অর্থ: শ্রেষ্ঠ এবং আ’ইয়াদ হচ্ছে ঈদ শব্দের বহুবচন। যার অর্থ: খুশি, আনন্দ, ঈদ, বারবার ফিরে আসা। আর শরীফ অর্থ: সম্মানিত, মর্যাদাবান। অর্থাৎ একত্রে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার অর্থ হচ্ছে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সর্বশ্রেষ্ঠ খুশি মুবারক প্রকাশ করা, সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ মুবারক পালন  করা। যা প্রতিবছর, প্রতিমাস, প্রতিসপ্তাহ, প্রতিদিন এবং প্রতিক্ষণ ও প্রতিসময়ই খুশির আমেজ, রহমত, বরকত, নিয়ামত, নাজাত ও শাফায়াত লাভের পয়গাম নিয়ে উপস্থিত। সুবহানাল্লাহ!

স্মরণীয় যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেমন সর্বশ্রেষ্ঠ, ঠিক তেমনি উনার সাথে নিসবতযুক্ত যাবতীয় বিষয়ই সর্বশ্রেষ্ঠ। উনার সাথে নিসবতযুক্ত বিষয় ব্যক্তি হলে অন্য ব্যক্তি হতে শ্রেষ্ঠ, বস্তু হলে অন্য বস্তু হতে শ্রেষ্ঠ, স্থান বা সময় হলে অন্য স্থান বা সময় হতে শ্রেষ্ঠ। যার কারণে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেই সম্মানিত বছরে যমীনে তাশরীফ নিয়েছেন তথা মহাসম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন সেই সম্মানিত বছর হচ্ছেন অন্য সমস্ত বছর হতে শ্রেষ্ঠ। যেই সম্মানিত মাসে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন সেই সম্মানিত মাস অন্য সমস্ত মাস হতে শ্রেষ্ঠ। যেই সম্মানিত তারিখে মহাপবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন সেই সম্মানিত তারিখ অন্য সমস্ত তারিখ হতে শ্রেষ্ঠ। যেই সম্মানিত দিনে বিলাদতী শান মুবরাক প্রকাশ করেছেন সেই সম্মানিত দিন অন্য সমস্ত দিন হতে শ্রেষ্ঠ। যেই সম্মানিত সময়ে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন সেই সম্মানিত সময় অন্য সমস্ত সময় হতে শ্রেষ্ঠ। সুবহানাল্লাহ!

তাই মহাসম্মানিত আহলে বাইতে রসূল, ক্বায়িম- মাক্বামে রসূল, নূরে মুকাররম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সাথে যেই সম্মানিত বছর, সম্মানিত মাস, সম্মানিত তারিখ, সম্মানিত দিন ও সম্মানিত সময় নিসবতযুক্ত হয়েছেন উনাদের বেমেছোল তাজদীদী নাম মুবারক প্রকাশ করেছেন। কায়িনাতবাসীর জন্য তা জানা অপরিহার্য কর্তব্য।

যেমন উক্ত সম্মানিত বছর উনার নাম মুবারক হচ্ছেন সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ওয়াম শরীফ। সম্মানিত মাস রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার নাম মুবারক হচ্ছেন সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ। সম্মানিত তারিখ ১২ই শরীফ উনার নাম মুবরক হচ্ছেন সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ। সম্মানিত দিন ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম উনার সম্মানিত নাম মুবারক হচ্ছেন সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ। সম্মানিত সময় ছুবহে ছাদিক্ব উনার সম্মানিত নাম মুবারক হচ্ছেন সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আওক্বাত শরীফ। সুবহানাল্লাহ!

জানা আবশ্যক যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ নিয়েছেন অর্থাৎ পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন সেজন্য খুশি মুবারক প্রকাশ করার জন্য স্বয়ং যিনি খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনিই আদেশ মুবারক করেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ উনার ৫৭ ও ৫৮ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মানুষ জাতিকে সম্বোধন করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَاۤ أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَتْكُم مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَشِفَآءٌ لِّمَا فِي الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ. قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مِّـمَّا يَجْمَعُوْنَ

অর্থ: হে মানুষেরা, তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে মহান নছীহতকারী, অন্তরের মহান শিফা দানকারী, মহান হিদায়েত দানকারী এবং মু’মিনদের জন্য মহান রহমত দানকারী আগমন করেছেন। অর্থাৎ আমার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন। সুতরাং তাদেরকে বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ফদ্বল ও মহাসম্মানিত রহমত মুবারক তথা আপনাকে তারা পেয়েছে এ কারণে তারা যেন অবশ্যই খুশি মুবারক প্রকাশ করে। এটা তাদের সমস্ত নেক আমল বা ইবাদত থেকে শ্রেষ্ঠ।

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে যদিও শুধু মানুষদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে তবে তা দ্বারা সমস্ত সৃষ্টিই উদ্দেশ্য। মানুষকে সম্বোধন করা হয়েছে আশরাফুল মাখলুক্বাত হিসেবে। কিন্তু পবিত্র আয়াত শরীফ উনার হুকুম সমস্ত সৃষ্টির জন্যেই। যেহেতু মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কায়িনাতবাসী সকলের জন্যেই মহাসম্মানিত রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন সেহেতু উনাকে পাওয়ার কারণে মানুষ তো অবশ্যই কায়িনাতবাসী সকলকেই খুশি মুবারক প্রকাশ করতে হবে। কেননা কায়িনাতবাসী তথা মাখলূকাত উনার কারণেই অস্তিত্ব লাভ করেছে। অর্থাৎ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওজুদ পাক নূর মুবারক উনার থেকে কুদরতীভাবে সৃষ্টি হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

যার কারণে কায়িনাতবাসী সকলের প্রতি ফরয করে দেয়া হয়েছে যে, তাদের যিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাশরীফ মুবারক আনয়নে তথা মহাপবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশে অবশ্যই যেন খুশি মুবারক প্রকাশ করে। এই খুশি মুবারক প্রকাশ করার সম্মানিত আমল বা ইবাদত তাদের কৃত সমস্ত আমল বা ইবাদত থেকে শ্রেষ্ঠ। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র, হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে খুশি মুবারক প্রকাশ করা তথা মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত এই কারণে যে, এই মহাসম্মানিত ইবাদত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিছবতযুক্ত এবং উনার জন্যেই করা হয়। তাছাড়া স্বয়ং যিনি খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য দায়িমীভাবে খুশি মুবারক প্রকাশ করে যাচ্ছেন এবং উনার ছানা-ছিফত মুবারক করে যাচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ!

যেমন এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

إِنَّ اللهَ وَمَلآئِكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّ

অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার সকল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত শরীফ (দুরূদ শরীফ) পেশ করেন অর্থাৎ উনার ছানা-ছিফত মুবারক করেন এবং উনার জন্যে খুশি মুবারক প্রকাশ করেন।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)

অতএব, যেখানে স্বয়ং যিনি খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার অনুগত সকল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খুশি মুবারক প্রকাশ করতঃ উনার ছানা-ছিফত মুবারক করে যাচ্ছেন দায়িমীভাবে সেখানে উম্মতের কি করা উচিত?

মূলতঃ উম্মতের প্রতিও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য দায়িমীভাবে ছানা-ছিফত মুবারক করতঃ খুশি মুবারক প্রকাশ করাটা সর্বশ্রেষ্ঠ ফরয উনার অন্তর্ভুক্ত।

উক্ত সর্বশ্রেষ্ঠ ফরয ইবাদত উম্মত যখন অত্যধিক মুহব্বত, জওক-শওক ও সাধ্য-সামর্থ্য অনুযায়ী এবং পূর্ণ সাখাওয়াতীর সাথে পালন করবে তখনই তাদের পক্ষে সীমাহীন রহমত, বরকত, নিয়ামত, মাগফিরাত, নাজাত ও শাফায়াত মুবারক লাভ করা সহজ ও সম্ভব হবে। সুবহানাল্লাহ!

যেমন এ প্রসঙ্গে মহসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدِىْ وَهُوَ لَيْلَةُ اثْنَـىْ عَشَرَ مِنْ رَّبِيْع الْاَوَّلِ بِاتِّـخَاذِهٖ فِيْهَا طَعَامًا كُنْتُ لَهٗ شَفِيْعًا يَّوْمَ الْقِيَامَةِ

অর্থ: যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদত শরীফ মহাপবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ মহিমান্বিত রাত (ও দিবস) উনাকে খাদ্য খাওয়ানোর মাধ্যমে যথাযথভাবে সম্মান করবে, আমি ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য মহান শাফায়াতকারী হবো। সুবহানাল্লাহ! (নি’মতে কুবরা উর্দূ ১১ পৃষ্ঠা)

সুপ্রসিদ্ধ আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম কিতাবে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জন্য রহমত মুবারক উনার সমস্ত দরজা খুলে দিবেন, তার জন্য সকল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম ক্ষমা প্রার্থনা করবেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ন্যায় সে ব্যক্তি নাজাত ও ফযীলত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!

মাহে রবীউছ ছানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উখরা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শাওওয়াল ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা