সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ২৬৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ আনিসুর রহমান

আমান বাড়িয়া।

সুওয়াল: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইলমে গইব সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বার লোকেরা বিভিন্ন প্রকার চু-চেরা করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দলীল সহকারে জাওয়াব প্রদান করলে ঈমান-আক্বীদা হিফাযতে সহায়ক হবে।

জাওয়াব: সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো অবশ্যই ইলমে গইব উনার অধিকারী। এমনকি উনার যারা উম্মত উনার অন্তর্ভুক্ত অন্য সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা এবং মনোনীত হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও ইলমে গইব উনার অধিকারী।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ উনাদের দ্বারাই প্রমাণিত যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ইলমে গইব উনার অধিকারী।

এ প্রসঙ্গে যিনি খ্বালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা জিন শরীফ ২৬ ও ২৭ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلٰى غَيْبِهِ اَحَدًا اِلَّا مَنِ ارْتَضٰى مِنْ رَسُولٍ

অর্থ: তিনি (মহান আল্লাহ পাক) আলিমুল গইব, তিনি উনার ইলমে গইব উনার মনোনীত রসূল ব্যতীত কারো নিকট প্রকাশ করেন না। অর্থাৎ হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে তিনি ইলমে গইব হাদিয়া করেছেন।

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে খাযিন ও তাফসীরে বাগবী শরীফ” উনাদের মধ্যে উল্লেখ আছে যে-

يعنى الا من يصطفيه لرسالته ونبوته فيظهره على ما يشاء من الغيب حتى يستدل على نبوته مما يخبر به من الـمغيبات

অর্থাৎ: মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে উনার সম্মানিত নুবুওওয়াত ও সম্মানিত রিসালত উনার জন্য মনোনীত করেন, উনাকে যতখানি ইচ্ছা ইলমে গইব হাদিয়া করেন। উনার ইলমে গইব উনার সম্মানিত নুবুওওয়াতের প্রমাণ স্বরূপ এবং উনার সম্মানিত মু’জিযাও বটে। শাব্দিক কিছু পার্থক্যসহ অনুরূপ ব্যাখ্যা তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরে জালালাইন, তাফসীরে সাবী ও তাফসীরে আযীযীতেও উল্লেখ আছে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ উনার ১৭৯নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا كَانَ اللّٰهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلٰكِنَّ اللّٰهَ يَجْتَبِىْ مِنْ رُسُلِه مَنْ يَشَاءُ

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার দায়িত্ব নয় যে, গইব সম্পর্কে তোমাদের (সাধারণ লোকদের) অবহিত করবেন। তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রসূল হিসেবে যাদেরকে মনোনীত করেছেন উনাদেরকে ইলমে গইব হাদিয়া করেন।

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিশ্বখ্যাত ও মশহূর তাফসীরগ্রন্থ তাফসীরে জালালাইন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-

ولكن الله يجتبى ويختار من يشاء فيطلع على غيبه كذا اطلع النبى صلى الله عليه وسلم على حال المنافقين.

অর্থ: তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁকে (রসূল হিসেবে) মনোনীত করেন, উনাকে ইলমে গইব হাদিয়া করেন। যেমন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুনাফিকদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল।

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার উক্তরূপ ব্যাখ্যা তাফসীরে বাইযাবী, তাফসীরে খাযিন, তাফসীরে কবীর, তাফসীরে জুমাল, তাফসীরে সাবীসহ আরো বহু নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ আছে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আর-রহমান শরীফ উনার ১-৪ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

الرَّحْمٰنُ. عَلَّمَ الْقُرْانَ. خَلَقَ الْإِنْسَانَ. عَلَّمَهُ الْبَيَانَ

অর্থ: দয়াময় মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়েছেন, তিনি ইনসান সৃষ্টি করেছেন এবং উনাকে বয়ান শিক্ষা দিয়েছেন।

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ তাফসীরে খাযিনে উল্লেখ আছে-

قيل الـمراد بالانسان محمدا صلى الله عليه وسلم البيان يعنى بيان ما كان وما يكون لانه ينبئ عن خبر  الاولين والاخرين وعن يوم الدين

অর্থ: বলা হয়েছে যে, ইনসান দ্বারা উদ্দেশ্য হলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর বয়ান দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, যা ঘটেছে এবং যা ঘটবে, পূর্বাপর সমস্ত কিছুর ইলিম মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে হাদিয়া মুবারক করেছেন। কেননা উনাকে পূর্ববর্তী-পরবর্তী এবং পরকাল সম্পর্কে সকল গইবি বিষয়ে ইলিম মুবারক হাদিয়া করা হয়েছে।

স্মর্তব্য যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো অবশ্যই এমনকি অন্য সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই যে ইলমে গইব উনার অধিকারী ছিলেন তার সুস্পষ্ট প্রমাণ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে। যেমন হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا تَأْكُلُونَ وَمَا تَدَّخِرُونَ فِي بُيُوتِكُمْ

অর্থ: তোমরা কি খেয়েছ আর কি ঘরে রেখে এসেছ সবই আমি (হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম) বলে দিতে পারি। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৯)

হযরত ইয়া’কূব আলাইহিস সালাম তিনি হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার স্বপ্নের কথা শ্রবণ করার পর উনার অন্যান্য আওলাদ উনাদের কৌশলের কথা আগেই বলে দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

يَا بُنَيَّ لَا تَقْصُصْ رُؤْيَاكَ عَلٰى اِخْوَتِكَ فَيَكِيدُوا لَكَ كَيْدًا

অর্থ: হে আমার আওলাদ! আপনার ভাইদের কাছে আপনার স্বপ্ন মুবারক বর্ণনা করবেন না। তাহলে উনারা (আপনার ব্যাপারে) কৌশল করবে। (পবিত্র সূরা ইউসুফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)

হযরত ইয়া’কূব আলাইহিস সালাম উনার বক্তব্য-

قَالَ اَلَمْ اَقُلْ لَكُمْ اِنِّي اَعْلَمُ مِنَ اللّٰهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ

অর্থ: আমি কি তোমাদের বলিনি যে, মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আমি এমন বিষয় জানি, যা তোমরা জান না? অর্থাৎ হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম জীবিত আছেন এবং তিনি উনার সম্মানিত পিতা উনার সাথে মিলিত হবেন। (পবিত্র সূরা ইউসুফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৯৬)

এখানে মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত ইয়া’কূব আলাইহিস সালাম উনার ইলমে গইব উনার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

অনুরূপভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইলমে গইব উনার বিষয়টি অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে।

যেমন বুখারী শরীফ উনার بدء الخلق নামক অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ حضرت عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ عليه السلام ، قَالَ  قَامَ فِينَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقَامًا فَأَخْبَرَنَا عَنْ بَدْءِ الْخَلْقِ حَتَّى دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ مَنَازِلَهُمْ، وَأَهْلُ النَّارِ مَنَازِلَهُمْ، حَفِظَ ذَلِكَ مَنْ حَفِظَ، وَنَسِيَّهُ مَنْ نَسِيَّهُ

অর্থ: হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক জায়গায় আমাদের সাথে অবস্থান মুবারক করছিলেন। সেখানে তিনি আমাদেরকে সৃষ্টির সূচনা থেকে সংবাদ দিচ্ছিলেন। এমনকি বেহেশতবাসী দোযখবাসীদেরকে নিজ নিজ ঠিকানায় পৌঁছে যাওয়া অবধি পরিব্যাপ্ত যাবতীয় অবস্থা ও ঘটনাবলীর বর্ণনা প্রদান করেন। যিনি ওইসব বিষয় স্মরণ রাখতে পেরেছেন তিনি তো স্মরণ রেখেছেন, আর যিনি স্মরণ রাখতে পারেননি তিনি ভুলে গেছেন।

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী শরীফ ১৫তম খণ্ডের ১১০ নং পৃষ্ঠায় বলেন-

دلالة على انه اخبر فى الـمجلس الواحد بجميع احوال الـمخلوقات من ابتدائها الى انتائها

অর্থাৎ- এ পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে বুঝা গেলো, একই অবস্থানে থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টিকুলের আদ্যোপান্ত যাবতীয় অবস্থার খবর দিয়েছিলেন।

মিশকাত শরীফ উনার معجزاة অধ্যায়ের মুসলিম শরীফ উনার উদ্ধৃতি দিয়ে হযরত আমর ইবনে আখতাব আনছারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত হয়েছে-

فاخبرنا بما هو كائن الى يوم القيامة فاعلمنا احفظنا.

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে সেই সমস্ত ঘটনাবলীর খবর দিয়েছেন যেগুলো ক্বিয়ামত পর্যন্ত ঘটতে থাকবে। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আলিম হলেন তিনি যিনি এসব বিষয়াদী সর্বাধিক স্মরণ রাখতে পেরেছেন।

মিশকাত শরীফে الفتن অধ্যায়ে হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হয়েছে-

ما ترك شيئا يكون فى مقامه الى قيام الساعة الا حدث به حفظه من حفظه ونسيه من نسيه

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে সবকিছুর খবর দিয়েছেন। কোনো কিছুই বাদ দেননি। যারা মনে রাখার তারা মনে রেখেছেন, যারা ভুলে যাওয়ার ভুলে গেছেন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حضرت اَبِي ذَرٍّ رضى الله تعالى عنه قَالَ لقد تَرَكَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  وما يحرك طَائِرٌ جَنَاحَيْهِ فِىْ السَّمَاءِ اِلَّا ذكرنا مِنْهُ عِلْمًا

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের নিকট থেকে এ অবস্থায় বিদায় নিয়েছেন যে, কোনো পাখি তার ডানা হেলানোর বর্ণনাও তিনি আমাদের নিকট বাকি রাখেননি।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حضرت اَبِى سعيد الخدريى رضى الله تعالى عنه قَالَ قام فينا رَسُولُ الله صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خطيبا بعد العصر فلم يدع شيئا يكون الى قيام الساعة الا ذكره حفظه من حفظه ونسيه من نسيه

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত আছরের নামাযের পর দাঁড়ালেন আর খুতবা দিতে গিয়ে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু সংঘটিত হবে তা তিনি বর্ণনা করেন। যিনি ওইসব বিষয়ে স্মরণ রাখতে পেরেছেন তিনি তা স্মরণে রেখেছেন, আর যিনি স্মরণে রাখতে পারেননি তিনি ভুলে গেছেন।

এ বিষয়ে আরও অনেক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১২৯তম সংখ্যা পাঠ করুন।

 

হাফিয মুহম্মদ আব্দুল কাদির

রাজারহাট, কুড়িগ্রাম

 

সুওয়াল: বাতিল ফিরক্বার লোকদের কারো কারো বক্তব্য হলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার তারিখ ও মাস সম্পর্কে কোনো তথ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পাওয়া যায় না। ছাহাবীগণ উনাদের মাঝেও এ বিষয়ে নাকি কোনো সুনির্দিষ্ট মত প্রচলিত নেই।

উক্ত বক্তব্য কতখানি সঠিক? দলীল সহকারে জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: উক্ত বক্তব্য মোটেই সঠিক নয়। বরং সম্পূর্ণ মিথ্যা, মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর। আর সত্য, সঠিক ও দলীলসম্মত যে বর্ণনা তা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে সুস্পষ্টরূপে বর্ণিত হয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস হাতির বছরের মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ।

নিম্নে দলীল আদিল্লাহ সহকারে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো:-

প্রথমত পবিত্র বৎসর ও পবিত্র বার সম্পর্কিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনা উল্লেখ করা হলো।

১নং পবিত্র হাদীছ শরীফ

عَنِ حَضْرَتِ الـمُطَّلبِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ قَيْسِ بْنِ مَـخْرَمَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ اَبِيْهِ عَنْ جَدّه قَالَ وُلِدْتُ اَنَا وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيلِ وَسَاَلَ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ عَلَيْهِ السَّلَامَ قُبَاثَ بْنَ اَشْيَمَ اَخَا بَنِيْ يَعْمَرَ بْنِ لَيْثٍ اَاَنْتَ اَكْبَرُ اَمْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقَالَ: رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَكْبَرُ مِنِّي وَاَنَا اَقْدَمُ مِنْهُ فِي الْمِيْلَادِ وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيْلِ.

অর্থ : “হযরত মুত্তালিব ইবনে আব্দিল্লাহ ইবনে কাইস ইবনে মাখরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি উনার পিতা হতে এবং উনার পিতা উনার দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি “হাতীর বছরে” বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, আমিও সেই হাতীর বছরেই বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেছি। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি হযরত কুবাস বিন আশিয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে প্রশ্ন করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বড় না আপনি বড়? তিনি উত্তরে বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার থেকে বড়, আর আমি উনার পূর্বে বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেছি।” (তিরমিযী শরীফ, হযরত আবূ ঈসা মুহাম্মদ ইবনু ঈসা রহমতুল্লাহি আলাইহি (২৭৯ হিঃ), আস সুনান, প্রকাশনা- বৈরুত, দারু ইহ্য়ায়িত তুরাসিল আরাবী, হাদীছ শরীফ নং ৩৬১৯)

২নং পবিত্র হাদীছ শরীফ

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ بِـهٰذَا الْـحَدِيْثِ زَادَ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَرَاَيْتَ صَوْمَ يَوْمِ الْاِثْنَيْنِ وَيَوْمِ الْـخَمِيْسِ قَالَ ‏فِيْهِ وُلِدْتُّ وَفِيْهِ اُنْزِلَ عَلَىَّ الْقُرْاٰنُ.

অর্থ : “হযরত আবূ কাতাদা আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইয়াওমুল ইছলাইনিল আযীম শরীফ ও ইয়াওমুল খ¦মীস রোযা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলো, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, এদিন (ইয়াওমুল ইছলাইনিল আযীম শরীফ) আমি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি, আর এদিনই আমার উপর ওহী বা পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছে।” (মুসলিম শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৮০৭, আবূ দাঊদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৪২৮)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফদ্বয় উনাদের বর্ণনা থেকে এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন বছর হিসেবে ‘হাতীর বছর’ আর বার হিসেবে ‘ইয়াওমুল ইছলাইনিল আযীম শরীফ’।

দ্বিতীয়ত পবিত্র বৎসর, পবিত্র মাস ও পবিত্র বার সম্পর্কিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনা করা হলো।

১নং পবিত্র হাদীছ শরীফ

عَنْ حَضْرَتْ عَفَّانَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ سَلِيْمِ بْنِ حَيَّانَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ سَعِيْدِ بْنِ مِينَا رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْأَنْصَارِيّ وَحَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيلِ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ الثَّانِـيْ عَشَرَ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعٍ الْاَوَّلِ.

অর্থ : “হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত সালিম বিন হাইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ হস্তি বাহিনী বর্ষের মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ হয়েছিল।” সুবহানাল্লাহ! (বুলুগুল আমানী শরহিল ফাতহির রব্বানী, আছ ছিহ্হাহ্ ওয়াল মাশাহীর ১ম খণ্ড ২৬৭ পৃষ্ঠা)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনার সনদের মধ্যে প্রথম বর্ণনাকারী হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে মুহাদ্দিছগণ উনারা বলেছেন, “তিনি একজন উচ্চ পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য ইমাম, প্রবল স্মরণশক্তি ও দৃঢ়প্রত্যয় সম্পন্ন ব্যক্তি।” (খুলাছাতুত তাহযীব শরীফ)

“দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ণনাকারী যথাক্রমে হযরত সালিম বিন হাইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারাও অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।” (খুলাছাহ শরীফ, তাক্বরীব শরীফ)

সনদের উপরের দুজন তো ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের তো কোন তুলনাই নেই। অপর তিনজন রাবী হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সালিম ইবনে হাইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের সম্পর্কে রেজালের কিতাবে বলা হয়েছে উনারা উচ্চ পর্যায়ের নির্ভযোগ্য ইমাম, ছিক্বাহ, তীক্ষ্ম স্মরণশক্তিসম্পন্ন, বিশস্ত এবং নির্ভরযোগ্য, দৃঢ় প্রত্যয়সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব।’’ (খুলাছাতুত তাহযীব ২৬৮ পৃষ্ঠা, ত্বাকরীবুত তাহযীব ২য় খন্ড ১২৬ পৃষ্ঠা, সমূহ রেজালের কিতাব)

আর হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা দু’জন উচ্চ পর্যায়ের ফক্বীহ ছাহাবী। উনাদের বিশুদ্ধ সনদ সহকারে বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, হাতীর বৎসর “মহাসম্মানিত  রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার ১২ই শরীফ এবং ইছনাইনিল আযীম শরীফ হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশকাল।”

এ ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনার উপরই হযরত ইমামগণ উনাদের ইজমা (ঐকমত্য) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (সীরাত-ই-হালবিয়াহ শরীফ, যুরক্বানী আলাল মাওয়াহিব শরীফ, মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ শরীফ ইত্যাদি)

উপরোক্ত বর্ণনার দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবসের তারিখ ও মাস সম্পর্কে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকে সুনির্দিষ্ট মত বর্ণিত রয়েছে।

কাজেই, ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবসের সম্মানিত তারিখ ও মাস সম্পর্কে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মাঝেও সুনির্দিষ্ট মত প্রচলিত নেই বলাটা চরম মিথ্যাচার তা সহজেই অনুধাবনীয়। যা অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ অস্বীকারের নামান্তর।

২নং পবিত্র হাদীছ শরীফ

ইমাম হযরত হাকিম নিশাপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ প্রসঙ্গে উনার কিতাবে উল্লেখ করেন-

عَنْ حَضْرَتْ مُـحَمَّدِ بْنِ اِسْحَاقَ رَحـْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِاِثْنَتَيْ عَشَرَ لَيْلَةٍ مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ

অর্থ : “হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার বারো রাত অতিবাহিত হওয়ার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” (মুস্তাদরাক লিল হাকিম শরীফ ৪র্থ খ-, ১৫৬৮ পৃষ্ঠা, হাদীছ শরীফ নং ৪১৮২)

৩নং পবিত্র হাদীছ শরীফ

قَالَ مُـحَمَّدُ بْنُ اِسْحَاقَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وُلِدَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ، عَامَ الْفِيْلِ لِاِثْنَتَيْ عَشْرَةَ لَيْلَةٍ مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعٍ الاَوَّلِ

অর্থ : “হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ, হস্তীর বছর, রাত্রির শেষভাগে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” (দালায়িলুন নুবুওওয়াত লি ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি : হাদীছ শরীফ নং ২৩; কিতাবুল ওয়াফা লি আহওয়ালিল মুস্তফা লি আল্লামা ইবনে জাওজী রহমতুল্লাহি আলাইহি, পৃষ্ঠা ৮৭; প্রকাশনা : দারূল কুতুব ইসলামিয়া, বৈরূত, লেবানন)

উপরোক্ত বিশুদ্ধ বর্ণনা মুতাবিক পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফই হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস। এটাই সর্বাধিক ছহীহ ও মশহূর মত। এর বিপরীতে যেসব মত ঐতিহাসিকগণ থেকে বর্ণিত হয়েছে তা অনুমান ভিত্তিক ও দূর্বল। অতএব তা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।

নি সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ, শরাহকারী উনাদের বর্ণনা উল্লেখ করা হলো-

১নং পবিত্র হাদীছ শরীফ

হাফিযুল হাদীছ ইমাম হযরত কুস্তালানি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

هُوَ الْـمَشْهُوْرُ اَنَّه وُلِدَ ثَانِـيْ عَشَرَ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ وَهُوَ قَوْلُ اِبْنِ اِسْحَاقَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَغَيْرِه

অর্থ: “প্রসিদ্ধ মত অনুসারে নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন। যা ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যদের এটাই মত।” (শরহুল মাওয়াহিব ১ম খ- ২৪৮ পৃষ্ঠা)

২নং বর্ণনা

وَعَلَيْهِ عَمَلُ اَهْلِ مَكَّةَ فِـيْ زِيَارَتِـهِمْ مَوْضِعَ مَوْلِدِه فِـىْ هٰذَا الْوَقْتِ

অর্থ : “মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তারিখে সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার অধিবাসী উনাদের মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের স্থান মুবারক যিয়ারত করার আমল বর্তমান অবধি জারী রয়েছে।’’ (শরহুল মাওয়াহিব ১ম খ- ২৪৮ পৃষ্ঠা)

নিম্নে ঐতিহাসিক উনাদের বর্ণনাও উল্লেখ করা হলো-

১নং পবিত্র হাদীছ শরীফ

বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইমাম হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ لِاِثْنَتَـيْ عَشْرَةَ لَيْلَةٍ خَلَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ عَامَ الْفِيْلِ

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, আমুল ফিল বা হস্তী বাহিনীর বছর রাতের শেষ ভাগে দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন।” (সীরাতে ইবনে হিশাম ১ম খণ্ড ১৫৮ পৃষ্ঠা)

২নং পবিত্র হাদীছ শরীফ

বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيْلِ لِاِثْنَتَـيْ عَشْرَةَ لَيْلَةٍ خَلَتْ مِنْ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ لِاَرْبَعِيْنَ سَنَةً مّنْ مُلْكِ كِسْرٰى انَوْشِيْرْوَان

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, আমুল ফিল বা হস্তী বাহিনীর বছর রাতে দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন। তখন ছিলো শাসক নাওশেরাওয়ার শাসনকালের ৪০তম বছর।” (তারীখে ইবনে খালদুন ২য় খণ্ড ৩৯৪ পৃষ্ঠা)

৩নং পবিত্র হাদীছ শরীফ

ইমাম হযরত জারির তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ عَامَ الْفِيْلِ لِاِثْنَىْ عَشْرَةَ لَيْلَةٍ مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, আমুল ফিল বা হস্তী বাহিনীর বছর রাতের শেষ ভাগে দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন।’’ (তারীখে ওমুম ওয়াল মূলক ২য় খণ্ড ১২৫ পৃষ্ঠা)

৪ নং পবিত্র হাদীছ শরীফ

ইমাম হযরত ইবনে কাছীর ও ইমাম হযরত যুরকানী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনারা বলেন-

وَهُوَ الْـمَثْهُوْرُ عِنْدَ الْـجُمْهُوْرِ .. هُوَ الَّذِيْ عَلَيْهِ الْعَمَلُ

অর্থ : “মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তারিখই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার (পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের) তারিখ হিসাবে জমহুর উলামায়ে কিরাম উনাদের নিকট প্রসিদ্ধ। উক্ত মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তারিখই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাশরীফ মুবারক গ্রহণ দিবস হিসেবে সবাই পালন করে আসছেন।” (শরহুল মাওয়াহিব ২য় খণ্ড ২৪৮ পৃষ্ঠা)

৫নং পবিত্র হাদীছ শরীফ

হাফিযুল হাদীছ হযরত আবুল ফাত্তাহ আন্দালুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

وُلِدَ سَيّدُنَا وَنَبِيُّنَا مُـحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ لِاِثْنَتَـيْ عَشْرَةَ لَيْلَةٍ مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ عَامَ الْفِيْلِ قِيْلَ بَعْدَ الْفِيْلِ بِـخَمْسِيْنَ يَوْمًا

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, রাতের শেষ ভাগে হস্তী বাহিনীর বছর দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন। বলা হয়, হস্তী বাহিনীর ঘটনার ৫০ দিন পরে তিনি দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন।” (আইনুল আছার ১ম খ- ৩৩ পৃষ্ঠা)

এছাড়াও বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, মুফাসসির, ফক্বীহ ও যুগশ্রেষ্ঠ আলিম, যিনি এই উপমহাদেশে পবিত্র হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের প্রচার-প্রসারকারী, যিনি শতাধিক কিতাবের সম্মানিত মুছান্নিফ বা প্রণেতা, যিনি প্রত্যহ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিয়ারত মুবারক লাভে ধন্য হতেন এবং যিনি সুপ্রসিদ্ধ ক্বদিরিয়া তরীক্বার বিশিষ্ট বুযুর্গ হযরত শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ হিসাবে মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তারিখই মশহূর। সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার অধিবাসী উনাদের আমল হলো উক্ত মুবারক তারিখে উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের মুবারক স্থান যিয়ারত করতেন।’’ (মা-ছাবাতা বিস সুন্নাহ ৮১ পৃষ্ঠা)

উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত আছে, “সমস্ত মুসলমান এ বিষয়ের উপর ইজমা করেছেন বা একমত যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন।” (মা-ছাবাতা বিস সুন্নাহ ৮২ পৃষ্ঠা)

এ বিষয়ে দেওবন্দী মুরুব্বীদের কিতাবেও উল্লেখ রয়েছে- “সারকথা যে বছর আছহাবে ফীল পবিত্র কা’বা শরীফ আক্রমন করে, সেই বছর পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসে মহাসম্মানিত ১২ তারিখ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) ছিলো পৃথিবীর জীবনে এক অনন্য বিশেষ দিবস। যেদিন নিখিল ভূবন সৃষ্টির মূল লক্ষ্য, দিবস রজনী পরিবর্তনের মূখ্য উদ্দেশ্য, হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম ও বনী আদমের গৌরব, হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার কিস্তির নিরাপত্তার নিগূঢ় তাৎপর্য, হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দুআ ও হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম ও হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ভবিষ্যদ্বাণীসমূহের উদ্দিষ্ট ব্যক্তিত্ব অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক নেন।” (সীরাতে খতিমুল আম্বিয়া, পৃষ্ঠা ৪, প্রকাশনা : এমদাদিয়া লাইব্রেরি)

পবিত্র হাদীছ শরীফ ও উনাদের শরাহ এবং ঐতিহাসিক উনাদের বর্ণনাসহ সকল প্রকার বর্ণনা দ্বারাই প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ মহাসম্মানিত ও পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ এবং হাতীর বৎসর। যা মহাকাশবিদগণও বিশুদ্ধ বলে স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছে।

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুড়া।

ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

 

সুওয়াল : মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব :

(পূর্ব প্রকাশিতের পর- ৩৭)

‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার একখানা

অর্থ মুবারক হচ্ছেন ‘অসীম ইলম মুবারক

উনার অধিকারী’:

মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার সম্মানিত শান মুবারক-এ সম্মানিত হাদীছ শরীফ ও সম্মানিত আসমানী কিতাব মুবারক উনাদের মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

يُؤْتَوْنَ الْعِلْمَ الْأَوَّلَ وَالْعِلْمَ الْاٰخِرَ.

অর্থ: “উনাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম-কালাম মুবারক হাদিয়া মুবারক করা হবে।” সুবহানাল্লাহ! (দালাইলুন নুবুওওয়াহ লিআবী  না‘ঈম ১/৩৮, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/৯৯, খছাইছুল কুবরা লিস সুয়ূত্বী ১/১৮, মাওয়াহিবুল লাদুন নিয়্যাহ ২/৪০৩, শরহুয যারক্বনী ৭/৪১২ ইত্যাদি)

এখানে يُؤْتَوْنَ শব্দ মুবারকখানা জমা’ বা বহুবচন নেয়া হয়েছে। এর লক্ষ-কোটি কারণ রয়েছে। তার মধ্যে দুটি বিশেষ কারণ হচ্ছে, এক. মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, ছাহিবু ইলমিল আউওয়ালি ওয়াল ইলমিল আখিরি, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার তা’যীমার্থে এখানে يُؤْتَوْن শব্দ মুবারকখানা জমা’ বা বহুবচন নেয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! তা’যীমার্থে যে, জমা’ বা বহুবচন শব্দ মুবারক ব্যবহার করা হয়, এর অনেক মিছাল বা দৃষ্টান্ত সম্মানিত কালামুল্লাহ শরীফ ও সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে রয়েছে। যেমন, যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّا نَـحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَاِنَّا لَه لَـحٰفِظُوْنَ.

অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি সম্মানিত ও পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ নাযিল করেছি এবং নিশ্চয়ই আমি উনার হিফাযতকারী।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা হিজর শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ- ৯)

এখানে স্বয়ং যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মুবারক শানে তা’যীমার্থে نَزَّلْنَا শব্দ মুবারকখানা জমা’ বা বহুবচন ব্যবহার করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

দুই. আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নিসবত মুবারক উনার কারণে যেমন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা এবং মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা অর্থাৎ উনারা প্রত্যেকেই সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার ইলম মুবারক উনার অধিকারী হয়েছেন, ঠিক তেমনিভাবে মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম,  মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিতো অবশ্যই সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম মুবারক উনার অধিকারী, শুধু তাই নয়, উনার সাথে সম্মানিত নিছবত মুবারক উনার কারণে সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, উম্মুল উমাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি এবং মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাতই শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারাও সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম মুবারক উনার অধিকারী। সুবহানাল্লাহ! তাই এখানে-

يُؤْتَوْنَ

শব্দ মুবারকখানা জমা’ বা বহুবচন নেয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَضَّرَ اللهُ امْرَءًا سَـمِعَ مِنَّا حَدِيْثًا فَبَلَّغَه كَمَا سَـمِعَه فَرُبَّ مُبَلَّغٍ اَوْعٰى مِنْ سَامِعٍ.

  অর্থ: “ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ওই ব্যক্তির সম্মানিত চেহারা মুবারক সম্মুজ্জ্বল করুন, (উনাকে সম্মানিত মুহব্বত-মা’রিফত, নিসবত-ক্বুরবত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক দান করুন,) যিনি আমার থেকে যেরূপ সম্মানিত হাদীছ শরীফ শুনবেন ঠিক হুবহু এরূপ বর্ণনা করবেন। কেননা (পরবর্তীতে) যেই সকল সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনাদের কাছে সম্মানিত হাদীছ শরীফ পৌঁছানো হবে, উনারা যাঁদের থেকে সম্মানিত হাদীছ শরীফ শুনবেন, উনাদের থেকে অধিক বেশি বুঝবেন, উপলব্ধি করবেন, অনেক বেশি সম্মানিত ইলম মুবারক উনার অধিকারী হবেন।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, ছহীহ ইবনে হিব্বান শরীফ, মুসনাদে বাযযার শরীফ, ত্ববারনী শরীফ ইত্যাদি)

এই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার পরিপূর্ণ মিছদাক্ব হচ্ছেন, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম সম্মানিত রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম মুবারক হাদিয়া মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি হচ্ছেন সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম মুবারক উনার মালিক। সুবহানাল্লাহ! তাই উনার একখানা সম্মানিত লক্বব মুবারক হচ্ছেন, ‘ছাহিবু ইলমিল আউওয়ালি ওয়াল ইলমিল আখিরি’ তথা সৃষ্টি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম মুবারক উনার মালিক। সুবহানাল্লাহ! তিনি সম্মানিত কুরআন শরীফ ও সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতিটি বিষয়ে যে বেমেছাল সম্মানিত তাজদীদ মুবারক করে যাচ্ছেন, তা অতুলনীয়, অকল্পনীয়, অভাবনীয় এবং অতি বিস্ময়কর। সুবহানাল্লাহ! বিশেষ করে তিনি সম্মানিত কুরআন শরীফ ও সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের হাক্বীক্বী শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক এতো বেমেছালভাবে প্রকাশ করছেন যে, যার দৃষ্টান্ত কায়িনাতের বুকে আর নেই। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম, কোন মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এরূপ সর্বোত্তমভাবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের হাক্বীক্বী শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান আলোচনা মুবারক করেননি। সুবহানাল্লাহ! কেউ কোনো কিতাবে দেখাতেও পারবে না। এটা উনার এক অনন্য বেমেছাল খুছূছিয়াত মুবারক, এক বেমেছাল বিস্ময়কর মহাসম্মানিত তাজদীদ মুবারক। সুবহানাল্লাহ! যা উনার বেমেছাল শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ। সুবহানাল্লাহ! এর মাধ্যম দিয়েই প্রতিভাত হয়ে যে, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি পৃথিবীর ইতিহাসে যত মুজাদ্দিদ, ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এসেছেন এবং ক্বিয়ামত যত মুজাদ্দিদ, ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা আসবেন উনাদের প্রত্যেকের সাইয়্যিদ। সুবহানাল্লাহ! তিনি শুধু যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া যত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক রয়েছেন, সমস্ত কিছুর অধিকারী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ!

আর এ কারণেই আমরা দেখতে পাই যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নির্দেশ মুবারক-এ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পর থেকে চতুর্থদশ হিজরী শতক পর্যন্ত অর্থাৎ ১৩শ’ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় ওলীআল্লাহ, মুজাদ্দিদ, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্তমান পঞ্চদশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ক্বায়িম-মাক্বাম-এ হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার সম্মানিত হাত মুবারক-এ বায়াত হয়ে মুরীদ হয়ে যান। সুবহানাল্লাহ!

 

মুহম্মদ রহমতুল্লাহ

ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

 

সুওয়াল: এক ব্যক্তির একদিন পারিবারিক দ্বন্দ্ব হয়। উনার আহলিয়া (স্ত্রী) বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় গিয়ে লোকদেরকে বিচার দেয়। রাস্তার এক লোক তার কথা শুনে তার আহাল (স্বামী) কে অপমানজনক অনেক কথা-বার্তা বলে। সে আহাল (স্বামী) তা সহ্য করতে না পেরে সবার সামনেই তার আহলিয়াকে (স্ত্রী) একসাথে তিন ত্বালাক্ব  ত্বালাক্ব দেয়। কিন্তু সরকারী আইন মুতাবিক ত্বালাক্ব  হয়নি বলে স্থানীয় চেয়ারম্যান সাহেবের সালিশের মাধ্যমে তারা আবার সংসার করতে থাকে। এভাবে প্রায় পাঁচ বছর অতিবাহিত হচ্ছে।

উল্লেখ্য যে, তার আহলিয়া বা স্ত্রী হিলা করতে নারাজ। তাকে হিলা করার কথা বললে, থানা পুলিশের ভয় দেখায়।

আমার জানার বিষয় হচ্ছে- সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে উল্লেখিত বিষয়ের সঠিক ফায়ছালা কি? দলীলভিত্তিক বিস্তারিত জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: সম্মানিত শরীয়ত উনার ফতওয়া মতে উল্লিখিত ব্যক্তির আহলিয়া বা স্ত্রীর উপর তিন ত্বালাক্ব  পতিত হয়েছে।

অতএব, সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত মুতাবেক উল্লিখিত স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ের হিলা ব্যতি সংসার করার কোন অধিকার নেই।

উক্ত আহাল ও আহলিয়ার জন্য ফরয হচ্ছে এখনই পৃথক বা আলাদা হয়ে যাওয়া এবং খালিছ তওবা ইস্তিগফার করা। আর এ বিষয়ে সম্মানিত শরীয়ত উনার যে ফায়ছালা রয়েছে সে অনুযায়ী আমল করা।

কারণ এমতাবস্থায় তাদের পরস্পর দেখা সাক্ষাত, কবীরা গুনাহের শামিল। তাদের একান্তবাস ব্যাভিচারের অন্তর্ভুক্ত হবে। এমতাবস্থায় যতজন সন্তান জন্মগ্রহণ করবে সকলেই অবৈধ বলে গণ্য হবে।

উক্ত আহাল ও আহলিয়া পাঁচ বছর ঘর সংসার করে কঠিন কবীরা গুনাহে গুনাহগার হয়েছে।

কারণ তারা এ ব্যাপারে সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত ব্যতীত সরকার, চেয়ারম্যান, মেম্বার, সম্প্রদায় ও ব্যক্তির ফায়ছালা মেনেছে যা মানা কুফরী হয়েছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে ত্বালাক্ব দেয়া সম্পর্কে সরকারী যে আইন রয়েছে তা সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত উনার সম্পূর্ণ খিলাফ হওয়ার কারণে তা মানা কাট্টা কুফরী হবে।

কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لا طاعة لـمخلوق فى معصية الخالق

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার বিরোধিতা করে কোনো মানুষের আনুগত্য করা জায়িয নেই।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

আর এ বিষয়ে থানা পুলিশকে ভয় পেলে হবে না এবং থানা পুলিশের দোহাই দিলেও চলবে না। ভয় পেতে হবে মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে এবং উনাদের আদেশ নির্দেশ মুতাবেক আমল করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

فَلَا تَخْشَوْهُمْ وَاخْشَوْنِىْ وَلِاُتِمَّ نِعْمَتِىْ عَلَيْكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ.

 অর্থ: “তোমরা মাখলূক্বাতকে ভয় করো না, আমাকে ভয় করো। তাহলে আমি তোমাদের নিয়ামত পরিপূর্ণ করে দিবো এবং তোমরা অবশ্যই হিদায়েতপ্রাপ্ত হবে।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫০

নচেৎ ইহকাল ও পরকালে কঠিন কাফফারা আদায় করতে হবে।

উল্লেখ্য, উক্ত আহাল যদি তার ত্বালাক্ব প্রাপ্তা আহলিয়াকে নিয়ে সংসার করতে চায় তাহলে উক্ত আহলিয়া (্স্ত্রী) ইদ্দত পালনের পর অন্যত্র বিবাহ বসে ঘর সংসার করার পর অর্থাৎ একান্তবাসের পর যদি দ্বিতীয় আহাল বা স্বামী তাকে ত্বালাক্ব  দেয় অতঃপর ইদ্দত পালন করে তারপর প্রথম আহাল বা স্বামী উক্ত আহলিয়া বা স্ত্রীকে পূনরায় বিবাহ করে সংসার করতে পারবে। এটা মহান আল্লাহ পাক উনারই নির্দেশ মুবারক।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فَاِنْ طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَه مِنْ بَعْدُ حَتّٰى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ

অর্থ: অতঃপর যদি সে তার আহলিয়াকে (স্ত্রীকে) তিন ত্বালাক্ব  দেয়, তবে সে আহলিয়া (স্ত্রী) যে পর্যন্ত না তাকে ছাড়া অপর কোন আহাল বা স্বামীর সাথে বিবাহ বসবে, সে পর্যন্ত তার জন্য হালাল হবে না। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩০)

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে-

عن حضرت على عليه السلام مرفوعا ايما رجل طلق  امرأته ثلاثا مبهنة او ثلاثا عند الاقراء لم تحل له حتى تنكح زوجا غيره.

অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি মারফু সনদে বর্ণনা করেন, কোনো ব্যক্তি যদি তার আহলিয়াকে একত্রে তিন ত্বালাক্ব  দেয় তবে সে আহলিয়া তার জন্য হালাল হবে না, যতক্ষণ না সে অন্য আহালকে বিবাহ করবে।” (দারুকুতনী, ফিকহুস সুনান ওয়াল আছার-২/৭৫)

যদি কারো আহলিয়া নিয়ে সমস্যা হয়, তাহলে কোন তারতীবে উক্ত সমস্যা সমাধান করতে হবে তা নি¤েœ বর্ণনা করা হলো:

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاللَّاتِى تَخَافُوْنَ نُشُوْزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِى الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ ۖ فَاِنْ اَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا ۗ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا

অর্থ: “তোমরা যারা নিজেদের আহলিয়ার (স্ত্রী) অবাধ্যতার আশঙ্কা করো তারা তাদের আহলিয়াকে নছীহত করো (তাতে কাজ না হলে) তাদের বিছানা পৃথক করে দিও। (তাতে কাজ না হলে) তাদের (মৃদু) প্রহার করবে। (এই পন্থা অবলম্বন করলে) যদি তারা অনুগত হয়ে যায় তাহলে তাদের ব্যাপারে অন্য কোনো পথের অনুসন্ধান করা থেকে বিরত থাকবে। অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মহান।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৪)

আর যদি এসব তারতীব অবলম্বন করার পরও কোনো ফল পাওয়া না যায়, আহলিয়ার মনোভাবের পরিবর্তন না আসে, আহাল-আহলিয়া উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক বিচ্ছেদের দিকে গড়তে থাকে তাহলে এরূপ ক্ষেত্রে কোন্ তারতীব অবলম্বন করতে হবে তাও মহান আল্লাহ পাক তিনি বলে দিয়েছেন। ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَاِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُوا حَكَمًا مِنْ اَهْلِه وَحَكَمًا مِنْ اَهْلِهَا اِنْ يُرِيدَا اِصْلَاحًا يُوَفِّقِ اللّٰهُ بَيْنَهُمَا ۗ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ عَلِيمًا خَبِيرًا

অর্থ: “যদি তোমরা তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিই আশঙ্কা করো তাহলে আহাল বা স্বামীর পরিবার থেকে মিমাংসা করার যোগ্যতা সম্পন্ন একজনকে এবং আহলিয়া বা স্ত্রীর পরিবার থেকে মিমাংসা করার যোগ্যতা সম্পন্ন একজনকে সালিস নিযুক্ত করবে। আর এই দুই ব্যক্তি যদি সংশোধন কামনা করে তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি আহাল ও আহলিয়ার মধ্যে মুহব্বত-সম্প্রীতি পয়দা করে দিবেন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাজ্ঞানী, সর্ববিষয়েই খবর রাখেন।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৫)

আর এই তারতীব অবলম্বন করে তথা সালিস দুই ব্যক্তির মাধ্যমে সংশোধনের সর্বাত্মক কোশেশও যদি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। বিচ্ছেদ ছাড়া কোনো পথ না থাকে তাহলে কিভাবে ত্বালাক্ব  বা বিচ্ছেদ ঘটাবে তারও বর্ণনা মহান আল্লাহ পাক তিনি সুনিপুনভাবেই দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَطَلِّقُوهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَاَحْصُوا الْعِدَّةَ ۖ وَاتَّقُوا اللّٰهَ رَبَّكُمْ

অর্থ: “যখন তোমরা আহলিয়াদেরকে (স্ত্রীদেরকে) ত্বালাক্ব  দেয়ার ইচ্ছা করবে তখন তাদেরকে ইদ্দতের মধ্যে ত্বালাক্ব  দিবে এবং ইদ্দত গণনা করবে। আর এ ব্যাপারে তোমাদের মহান রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করবে।” (পবিত্র সূরা ত্বালাক্ব  শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১)

উল্লেখ্য একসাথে তিন ত্বালাক্ব  দিবে না। যদি ত্বালাক্ব দিতে হয় তবে কোন তারতীবে দিবে, তা নি¤েœ বর্ণনা করা হলো।

ত্বালাক্ব দানের প্রথম তারতীব

আহলিয়া বা স্ত্রীকে ত্বালাক্ব  দেয়ার প্রয়োজন হলে আহলিয়া যখন স্বাভাবিক মাজুরতা থেকে পবিত্র হবে তখন তাকে বলবে, তোমাকে এক ত্বালাক্ব  দিলাম। এভাবে বলার পর তার সাথে নির্জনে অবস্থান করবে না। অতঃপর তাকে এই অবস্থার উপরে ছেড়ে দিবে। আর এই অবস্থায় যখন তার ইদ্দত শেষ হয়ে যাবে অর্থাৎ স্বাভাবিক তিন মাজুরতা শেষ হয়ে যাবে। অথবা আহলিয়া হামিলা বা সন্তান সম্ভবা হলে যখন সন্তান জন্মগ্রহন করবে তখন সে আহলিয়া বা স্ত্রী আপনা আপনিই যুদা বা বায়িন হয়ে যাবে। এভাবে ত্বালাক্ব  দেয়াকে তালাকে আহসান বা সর্বোত্তম ত্বালাক্ব  দান পদ্ধতি বলা হয়।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট তাবিয়ী শায়খুশ শুয়ূখ সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

كانو يستحبون ان يطلقها واحدا ثم يتركها حتى تحيض ثلاث حيض

অর্থ: “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা পছন্দ করতেন যে, আহাল তার আহলিয়াকে এক ত্বালাক্ব প্রদান করবে। অতঃপর স্বাভাবিক তিন মাজুরতা পর্যন্ত নির্জনে অবস্থান থেকে বিরত থাকবে।” (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, ফিকহুস সুনান ওয়াল আছার-২/৭৩)

ত্বালাক দানের দ্বিতীয় তারতীব:

ত্বালাক্ব দাতা স্বীয় আহলিয়াকে ঐ সময় এক ত্বালাক্ব  দিবে যখন সে আহলিয়া স্বাভাবিক মাজুরতা থেকে পবিত্র হবে। এক ত্বালাক্ব  দেয়ার পর তার সাথে ওত্বী বা নির্জনে অবস্থান করবে না। এমতাবস্থায় স্বাভাবিক মাজুরতা দ্বিতীয়বার আসবে এবং স্বাভাবিক মাজুরতা থেকে পবিত্র হলে দ্বিতীয়বার এক ত্বালাক্ব  দিবে। তার সাথে ওত্বী করবে না। এমতাবস্থায় তৃতীয়বার স্বাভাবিক মাজুরতা আসবে এবং তা হতে পবিত্র হওয়ার পর আবার এক ত্বালাক্ব  দিবে। এ তারতীবে ত্বালাক্ব  দেয়াকে হাসান বা সুন্নত ত্বালাক্ব  বলে। ফকীহুল উম্মত সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন-

طلاق السنة ان يطلقها طاهرا فى غير جماع

অর্থ: “সুন্নত ত্বালাক্ব  হলো, আহলিয়া (স্ত্রী) স্বাভাবিক মাজুরতা থেকে পবিত্র হওয়ার পর জিমা হয়নি তথা নিরিবিলি অবস্থান করেনি এরূপ অবস্থায় আহাল তার আহলিয়াকে ত্বালাক্ব  দেয়া।” (নাসাঈ শরীফ, ফিকহুস সুনান ওয়াল আছার-২/৭৩)

ত্বালাক্ব দানের তৃতীয় তারতীব:

ত্বালাক্ব দেয়ার আর একটি তারতীব রয়েছে, যে তারতীবে ত্বালাক্ব  দিলে ত্বালাক্ব  কার্যকর হবে বটে। তবে ত্বালাক্ব দাতা গোনাহগার হবে। আর সেটা হচ্ছে একই তুহুরে তিন ত্বালাক্ব  দেয়া কিংবা যে তুহুরে ওত্বী বা নির্জনে অবস্থান করেছে সে তুহুরে এক ত্বালাক্ব  দেয়া। তাছাড়া যার সাথে ওত্বী করা হয়েছে স্বাভাবিক মাজুরতার সময় তাকে এক ত্বালাক্ব  দেয়া। এ তারতীবে ত্বালাক্ব  দেয়াকে তালাকে বিদয়ী বা বিদয়াত ত্বালাক্ব  বলে।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

عن حضرت ابن عمر رضى الله تعالى عنه انه طلق امراته تطليقة وهى حائض ثم اراد ان يتبعها بطلقتين اخراوين عند القرئين الباقيين فبلغ ذلك النبى صلى الله عليه وسلم فقال يا ابن عمر رضى الله تعالى عنه ما هكذا امر الله اخطأت السنة والسنة ان تستقيل الطهر فتطلق لكل قرء فامرنى رسول الله صلى الله عليه وسلم فراجعتها ثم قال اذا هى حاضت ثم طهرت فطلق عند ذالك و امسك فقلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم لو طلقتها ثلاثا كان لى ان اراجعها قال لا كانت تبين منك وتكون معصية

অর্থ: “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি উনার আহলিয়াকে স্বাভাবিক মাজুর অবস্থায় ত্বালাক্ব  দেন। এরপর তিনি ইচ্ছা করেন যে, পরবর্তী দুই তুহুর বা পবিত্রতায় তাকে বাকি দুই ত্বালাক্ব  দিবেন। তার পূর্বে বিষয়টি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে পৌঁছে যায়। তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! মহান আল্লাহ পাক তিনি এভাবে ত্বালাক্ব  দেয়ার নির্দেশ মুবারক দেননি। আপনার দ্বারা সম্মানিত সুন্নত উনার খিলাফ কাজ সংঘটিত হয়েছে। সম্মানিত সুন্নত হলো- আপনি তুহুর বা পবিত্রতার জন্য অপেক্ষা করবেন এবং প্রত্যেক তুহুর বা পবিত্রতায় একবার ত্বালাক্ব  দিবেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুতাবিক আমি আমার আহলিয়াকে রাজায়াত করলাম বা ফিরিয়ে নিলাম। অতঃপর তিনি আমাকে বলেন, যখন আপনার আহলিয়া স্বাভাবিক মাজুর হবে এবং এরপর পবিত্র হবে তখন আপনি তাকে ত্বালাক্ব  প্রদান করবেন এবং নিজেকে বিরত রাখবেন। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যদি আমি তাকে তিন ত্বালাক্ব  দিতাম তাহলে কি আর ফিরিয়ে নিতে পারতাম? তিনি বললেন, না। সেক্ষেত্রে সে স্থায়ীভাবে আপনার থেকে পৃথক হয়ে যেত এবং এভাবে ত্বালাক্ব  দেয়া গুনাহের কারণ হতো। (দারুকুতনী ও তাবারানী শরীফ, ফিক্বহুস সুনান ওয়াল আছার-২/৭৪)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে-

عن حضرت على عليه السلام قال سمع النبى صلى الله عليه وسلم رجلا طلق البتة فغضب وقال يتخذون ايات الله هزوا. من طلق البتة الزمناه ثلاثا لا تحل له حتى تنكح زوجا غيره

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুনতে পেলেন যে, এক ব্যক্তি তার আহলিয়া বা স্ত্রীকে “আলবাত্তা” বা চুড়ান্ত ত্বালাক্ব  দিয়েছে। তখন তিনি জালালী শান মুবারক প্রকাশ করলেন এবং ইরশাদ মুবারক করলেন, তারা মহান আল্লাহ পাক উনার আয়াতসমূহকে তামাশার বিষয় বানিয়ে নিচ্ছে। যে ব্যক্তি “আল বাত্তা” বা চুড়ান্ত ত্বালাক্ব  দিবে আমরা তার সেই ত্বালাক্ব কে তিন ত্বালাক্ব  হিসেবে গণ্য করবো। সেই আহলিয়া তার জন্য হালাল হবে না, যতক্ষণ না সে অন্য কোনো আহালকে (স্বামী) বিবাহ করবে। (নাসায়ী শরীফ, দারু কুতনী শরীফ, ফিকহুস সুনান ওয়াল আছার-২/৭৫)

স্মরণীয় এক সাথে তিন ত্বালাক্ব  দেয়াকে তালাকে মুগাল্লাজা বলে। মুগাল্লাজা ত্বালাক্ব  দিলে ত্বালাক্ব  কার্যকরী বা পতিত হবে। তবে ত্বালাক্ব দাতা গুনাহগার হয়। কেননা যে উদ্দেশ্যে সম্মানিত শরীয়ত তালাকের বিধান দিয়েছেন সে বিধানকে সে রাগ বা গোসসা দমনের উপকরণ বানিয়েছে। যারা ত্বালাক্ব কে রাগ প্রশমনের উপকরণ বানায় তারা জাহিল ও গুনাহগার। কাজেই, ত্বালাক্ব দাতাকে খালিছ তওবা ইস্তিগফার করতে হবে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, ত্বালাক্বের যে তারতীব বর্ণনা করা হয়েছে, যদি ত্বালাক্ব  দেয়ার একান্ত প্রয়োজনই হয় তাহলে সে তারতীব অনুযায়ী ত্বালাক্ব  দিতে পারবে।

তবে আরো উল্লেখ্য, সম্মানিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

عن حضرت ابن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ابغض الحلال الى الله الطلاق

অর্থ: হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট হালালের মধ্যে সবচেয়ে অপছন্দনীয় হচ্ছে ত্বালাক্ব দেয়া। (আবূ দাউদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, দারু কুতনী শরীফ, বাইহাক্বী শরীফ)

মীর মুহম্মদ ছাবের আলী

বায়তুল মোকাররম মার্কেট, ঢাকা

মুহম্মদ হাবীবুর রহমান, সংসদ ভবন,ঢাকা

মুহম্মদ জুনাইদ, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

 

সুওয়াল: বর্তমানে মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার ব্যাপারে তীব্র মতভেদ দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। আবার কেউ বলছে জায়িয। উভয়েই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাব থেকে দলীল দিয়ে থাকে।

এখন আমরা কোনটা গ্রহণ করবো? বহুল প্রচারিত দলীলভিত্তিক মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সঠিক ফায়সালা তুলে ধরলে সাধারণ মুসলমানগণ উপকৃত হতো।

জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে মসজিদের ভিতরে বা মসজিদের বাহিরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার সঠিক ফায়ছালা হচ্ছে, মসজিদের ভিতরে হোক অথবা মসজিদের বাহিরে হোক, দাঁড়াতে সক্ষম হোক  অথবা দাঁড়াতে অক্ষম হোক, প্রত্যেক অবস্থাতেই চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসনে বসে নামায আদায় করা কাট্টা হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং নামায বাতিল হওয়ার কারণ। এ ফতওয়াটি ছহীহ, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য। এর খিলাফ কোন ফতওয়াই ছহীহ নয়, দলীলভিত্তিকও নয় এবং গ্রহণযোগ্যও নয়।

আমরা ধারাবাহিকভাবে উল্লিখিত বিষয়ে দলীল-আদিল্লাহ পেশ করার পাশাপাশি যারা চেয়ার, টেবিল, টুল ও বেঞ্চে বসে নামায পড়াকে জায়িয বলে, তাদের সে সমস্ত বক্তব্যগুলো নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা খ-ন করবো। ইন্শাআল্লাহ!

স্মর্তব্য যে, আমরা প্রথমত: প্রমাণ করেছি যে, মসজিদের ভিতরে, নামায পড়ার উদ্দেশ্যে চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসন ইত্যাদি প্রবেশ করানোই বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।

দ্বিতীয়ত: প্রমাণ করেছি যে, চেয়ারে বসে নামায পড়াও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ বা হারাম। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা, হযরত তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা, হযরত তাবি-তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা, হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কেউই অসুস্থ অবস্থাতে কখনো চেয়ারে বসে নামায পড়েছেন এরূপ কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। তাই চেয়ারে বসে নামায পড়া সুস্পষ্ট বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।

তৃতীয়ত: আমরা প্রমাণ করবো যে, চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। কারণ চেয়ারে বসে নামায আদায় করলে ফরয ক্বিয়াম তরক হয়। আর নামাযে ফরয তরক করলে নামায বাতিল হয়।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

قوموا لله قانتين

অর্থ: “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য একান্ত আদব ও বিনয়ের সাথে দাঁড়াও।” (পবিত্র সূরা বাক্বারাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩৮)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় “বাহরুর রায়িক” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৯০ ও ২৯২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

قوله فرضها التحريمة … والقيام لقوله تعالى وقوموا لله قانتين أى مطيعين والمراد به القيام فى الصلاة باجماع المفسرين وهو فرض فى الصلاة.

অর্থাৎ “নামাযের ফরয সমূহের মধ্যে প্রথমটি হলো তাকবীরে তাহরীমা বলা। আর দ্বিতীয়টি হলো ক্বিয়াম করা। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে নামায পড়া। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য অত্যন্ত বিনয়ের সহিত অর্থাৎ একান্ত আদব ও আনুগত্যের সহিত দাঁড়িয়ে যাও।” আর وقوموا لله قانتين  এই পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নামাযে ক্বিয়াম করা অর্থাৎ দাঁড়িয়ে নামায পড়া যা সমস্ত মুফাসসির রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ইজমা করেছেন যে, ফরয নামাযের মধ্যে ক্বিয়াম করা ফরয। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে নামায পড়া ফরয।”

“হিদায়া মায়াদ দিরায়া” কিতাবের প্রথম খণ্ডের ৯৮ পৃষ্ঠার باب صفة الصلوة  এর মধ্যে উল্লেখ আছে-

فرائض الصلوة ستة التحريمة …. والقيام لقوله  تعالى قوموا لله قانتين …

অর্থ: “সম্মানিত নামায উনার মধ্যে ফরয হলো ছয়টি। প্রথমটি হলো তাকবীরে তাহরীমা বলা । আর দ্বিতীয়টি হলো ক্বিয়াম করা। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে নামায পড়া ফরয। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য একান্ত আদব ও বিনয়ের সাথে দাঁড়াও।”

“আল মুখতাছারুল কুদুরী” কিতাবের ২৪ পৃষ্ঠায়  باب صفة الصلوة  এর মধ্যে উল্লেখ আছে-

فرائض الصلوة ستة التحريمة والقيام

অর্থ: “সম্মানিত নামায উনার ফরয হলো ছয়টি। উক্ত ছয়টি ফরযের মধ্যে প্রথম ফরয হলো তাকবীরে তাহরীমা বলা। আর দ্বিতীয় ফরয হলো ক্বিয়াম করা অর্থাৎ দাঁড়িয়ে নামায পড়া ফরয।

“আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ” কিতাবের প্রথম খণ্ডের ৬৩-৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

قوله رحمه الله تعالى فرائض الصلوة ستة ….. والقيام يعنى فى صلاة الفرض

অর্থ: “মুছান্নিফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সম্মানিত নামায উনার ফরয হলো ছয়টি উক্ত ছয়টি ফরযের মধ্যে দ্বিতীয় হলো ক্বিয়াম করা অর্থাৎ ফরয নামাযে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা ফরয।”

“ইনায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে-

(فرائض الصلاة ستة) … (التحريمة) وهى فرض (و) كذلك القيام لقوله تعالى وقوموا لله قانتين.

অর্থ: সম্মানিত নামায উনার ফরয ছয়টি… একটি হলো তাকবীরে তাহরীমা যা ফরয। অনুরূপভাবে ক্বিয়াম করাও ফরয অর্থাৎ দাঁড়িয়ে নামায পড়া ফরয।। কারন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য একান্ত আদব ও বিনয়ের সাথে দাঁড়াও।”

“শারহুল আইনী আলা কানযিদ দাক্বায়িক” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৯ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় باب صفة الصلاة  এর মধ্যে উল্লেখ আছে-

فرضها التحريمة….. والقيام

অর্থ: “সম্মানিত নামায উনার ফরসমূহের মধ্যে প্রথমটি হলো তাকবীরে তাহরীমা বলা। আর দ্বিতীয়টি হলো ক্বিয়াম করা। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে নামায পড়া ফরয।”

“আল লুবাব লিল মায়দানী” কিতাবেরباب صفة الصلوة  এর মধ্যে উল্লেখ আছে-

فرائض نفس الصلوة ستة … الاول التحريمة … والثانى القيام … وذلك فى فرض …..

অর্থ: “সম্মানিত ফরয নামায উনার মধ্যে ফরয হলো ছয়টি। প্রথমটি হলো তাকবীরে তাহরীমা বলা। আর দ্বিতীয়টি হলো ক্বিয়াম করা। অর্থাৎ ফরয নামায উনার মধ্যে দাঁড়িয়ে নামায পড়া ফরয।”

“শরহুত ত্বয়ী” কিতাবে  باب صفة الصلاة  এর মধ্যে উল্লেখ আছে-

فرضها التحريمة….. والقيام

অর্থ: “ সম্মানিত নামায উনার ফরসমূহের মধ্যে  প্রথমটি হলো তাকবীরে তাহরীমা বলা। আর দ্বিতীয়টি হলো ক্বিয়াম করা। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে নামায পড়া।”

“বাহরুর রায়িক” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৯২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ان القيام فرض فى الفرض

অর্থাৎ “ফরয নামাযে ক্বিয়াম করা ফরয অর্থাৎ দাঁড়িয়ে নামায পড়া ফরয।”

“তাবয়িনুল হাক্বায়িক্ব শারহু কানযিদ দাক্বায়িক্ব” কিতাবের ১ম খণ্ডের

باب صفة الصلاة

এর মধ্যে ২৭০ ও ২৭২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

فرضها التحريمة… والقيام لقوله تعالى وقوموا لله قانتين (البقرة: ۲۳۸)

অর্থাৎ “সম্মানিত নামায উনার ফরয সমূহের মধ্যে প্রথমটি হলো তাকবীরে তাহরীমা বলা। আর দ্বিতীয়টি হলো ক্বিয়াম করা। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে নামায পড়া। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য অত্যন্ত বিনয়ের সহিত দাঁড়িয়ে যাও।”

“আল বিনায়া ফী শারহিল হিদায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৭৬ ও ১৭৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

 فرائض الصلاة ستة … التحريمة أى أول الفرائض التحريمة…  والقيام الفريضة الثانية هى القيام فى الصلاة الفرض.

অর্থ: “সম্মানিত নামায উনার ফরয হলো ছয়টি …এই ছয়টি ফরযের মধ্যে প্রথমটি হলো তাকবীরে তাহরীমা বলা। … আর দি¦তীয় ফরয হলো,  ফরয নামাযে  ক্বিয়াম করা। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে ফরয নামায আদায় করা।”

“আইনী শরহে হিদায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫৮৮ ও ৫৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

فرائض الصلوة ستة … التحريمة اى اول الفريضة التحريمة…  والقيام الفريضة الثانية هى القيام فى الصلوة الفرض.

অর্থ: “সম্মানিত নামায উনার ফরয হলো ছয়টি … এই ছয়টি ফরযের মধ্যে প্রথমটি হলো তাকবীরে তাহরীমা বলা। … আর দি¦তীয় ফরয হলো,  ফরয নামাযে  ক্বিয়াম করা। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে ফরয নামায আদায় করা ফরয়।”

“ফতহুল কাদীর” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৩৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

فرائض الصلاة ستة التحريمة …… والقيام لقوله تعالى وقوموا لله قانتين

অর্থ: “সম্মানিত নামায উনার ফরয ছয়টি। প্রথমটি হলো তাকবীরে তাহরীমা বলা। আর দ্বিতীয়টি হলো ক্বিয়াম করা। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে নামায পড়া ফরয। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য একান্ত বিনয় ও আদবের সাথে দাঁড়াও।”

“বাহরুর রায়িক” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৯২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

لو صلى منفردا يقدر على القيام ولو صلى مع الامام لا يقدر … وصحيح فى الخلاصة انه يصلى فى بيته قائما قال وبه يفتى … لان القيام فرض فلا يجوز تركه لاجل الجماعة التى هى سنة.

অর্থাৎ “যদি কোন ব্যক্তি একাকী নামায পড়েন

তাহলে তিনি দাঁড়িয়ে নামায পড়তে সক্ষম। আর যদি ইমামের সাথে জামায়াতে নামায পড়েন, তাহলে তিনি দাঁড়িয়ে নামায পড়তে সক্ষম নন। …. তাহলে এই ব্যক্তি ঘরে একাকী নামায পড়বেন নাকি জামায়াতে নামায পড়বেন? এ ব্যাপারে খুলাছাতুল ফতওয়ার কিতাবে ছহীহ মত বর্ণনা করা হয়েছে যে, উক্ত ব্যক্তি জামায়াতে না গিয়ে তার ঘরেই দাঁড়িয়ে নামায পড়বেন।

وبه يفتى

এই মতের উপরেই ফতওয়া দেয়া হয়েছে।

কেননা ক্বিয়াম করা ফরয। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে নামায পড়া ফরয। কাজেই, জামায়াতের কারণে‘ ফরয ক্বিয়াম তরক করা জায়িয হবে না। কেননা জামায়াত হলো সুন্নত। অর্থাৎ জামায়াতে নামায পড়া সুন্নত। আর ক্বিয়াম করা হলো ফরয।

উপরোক্ত দলীলÑআদিল্লাহ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। কারণ চেয়ারে বসে নামায আদায় করলে ফরয ক্বিয়াম তরক হয়। আর নামাযে ফরয তরক করা নামায বাতিল হওয়ার অন্যতম কারন।

দ্বিতীয়ত: প্রমাণিত হলো যে, যারা ইমামের সাথে জামায়াতে দাঁড়িয়ে নামায পড়তে সক্ষম নন, তাদের জন্য উচিত হলো জামায়াতে না গিয়ে তার ঘরেই দাঁড়িয়ে নামায পড়বেন। কেননা জামায়াতে নামায পড়া সুন্নত। আর ক্বিয়াম তথা দাঁড়িয়ে নামায পড়া ফরয।

বর্তমানে যারা চেয়ারে বসে নামায পড়ছে, তাদের অধিকাংশই ক্বিয়াম বা দাঁড়াতে সক্ষম। কারণ তারা অফিসে, বাজারে, সবজায়গায় যাচ্ছে, সারাক্ষণ হাটাহাটি করছে, সবকাজ দাঁড়িয়েই করছে। অথচ নামাযের সময় চেয়ারে বসে যাচ্ছে। কাজেই যারা দাঁড়াতে সক্ষম তারা চেয়ারে বসে হোক আর যমীনে বসে হোক নামায আদায় করলে তাদের নামায হবেনা। কারণ ফরয নামাযের মধ্যে ক্বিয়াম করা হচ্ছে ফরয।

আল্লামা মুহম্মদ মুখতার হুসাইন

রাজারহাট, কুড়িগ্রাম

সুওয়াল: বাতিল ফিরক্বার লোকদের কারো কারো বক্তব্য হচ্ছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি লিখতে ও পড়তে জানতেন না। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!

এ বিষয়ে দলীলসহ জাওয়াব দিয়ে ঈমান-আক্বীদা হিফাযত করবেন।

জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اِنَّمَا الْعِلْمُ عِنْدَ اللّـهِ

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার কাছেই সমস্ত ইলিম মুবারক রয়েছে। (পবিত্র সূরা আহক্বাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩ এবং পবিত্র সূরা মূলক শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৬)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اُعْطِيْتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ

অর্থ: আমাকে সমস্ত ইলিম মুবারক হাদিয়া মুবারক করা হয়েছে। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বয়ং খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত ইলিমই হাদিয়া মুবারক করেছেন। কোন ইলিমই উনাকে হাদিয়া মুবারক করতে বাকী রাখেননি। আর লিখতে ও পড়তে পারা এ দুটি বিষয়ই সম্মানিত ইলিম মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র সূরা আলাক্ব শরীফ উনার মধ্যে যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করে ইরশাদ মুবারক করেন-

اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِىْ خَلَقَ. خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ. اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ . الَّذِىْ عَلَّمَ بِالْقَلَمِ . عَلَّمَ الْاِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ .

অর্থ: আপনার রব তায়ালা উনার নাম মুবারকে পাঠ করুন যিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আলাক্ব থেকে। পাঠ করুন (আপনার রব উনার নাম মুবারকে) কারণ আপনার রব সম্মানিত, দাতা, দয়ালু অনুগ্রহশীল। যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলম বা লিখনি দ্বারা। মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন যা তারা জানতো না। (পবিত্র সূরা আলাক্ব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১-৫)

উক্ত ১নং পবিত্র আয়াত শরীফ-

اِقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِىْ خَلَقَ.

উনার মধ্যে পড়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। আর ৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ-

الَّذِىْ عَلَّمَ بِالْقَلَمِ

উনার মধ্যে লেখার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ উনাদের শানে নুযূল সম্পর্কে বলা হয় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হিসেবে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেন। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম আমার নূর মুবারক অর্থাৎ আমার অজুদ মুবারক সৃষ্টি করেন। উনার থেকে সমস্ত কায়িনাত সৃষ্টি করা হয়। অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তিনি তখনও নবী ছিলেন যখন হযরত আবুল বাশার আদম আলাইহিস সালাম তিনি মাটি ও পানিতে এবং রূহে ও জিসিম মুবারকে অবস্থান করছিলেন। আর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকেও সেই অজুদ মুবারক অর্থাৎ নূর মুবারক উনার এক অংশ মুবারক দিয়ে সৃষ্টি করা হয়। নূরে মুজাস্্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নবী আলাইহিমুস উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হিসেবেই যমীনে আগমন করেন। তবে উনার নুবুওওয়াত মুবারক ও রিসালত মুবারক উনার কথা প্রকাশ করা হয় যখন দুনিয়াবী দৃষ্টিতে দুনিয়ায় আগমনের বয়স মুবারক চল্লিশ হয়। নুবুওওয়াত মুবারক ও রিসালত মুবারক প্রকাশের পূর্বে মহান আল্লাহ পাক তিনি কিছু ঘটনা ঘটান যা বান্দা ও উম্মতের জন্য ইবরত, নছীহত ও শিক্ষণীয়।

এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাস্্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী বয়স মুবারক যখন তেত্রিশ থেকে চৌত্রিশ তখন তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক নির্দেশে হেরা গুহা বা জাবালে নূরে যেয়ে মুরাকাবা-মুশাহাদা করতেন। সেখানে একাধারা কয়েকদিন পর্যন্ত অবস্থান মুবারক করতেন। কখনও কখনও সাথে খাদ্য মুবারকও নিয়ে যেতেন। আবার কখনও খাদ্য মুবারক শেষ হয়ে গেলে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম স্বয়ং তিনি নিজেই খাদ্য মুবারক সেখানে পৌঁছে দিতেন। অতঃপর যখন দুনিয়াবী বয়স মুবারক চল্লিশ হলো তখন মহান  আল্লাহ পাক তিনি নুবুওওয়াত মুবারক ও রিসালত মুবারক উনার কথা প্রকাশার্থে ‘পবিত্র সূরা আলাক্ব শরীফ’ উনার প্রথম পাঁচখানা পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন।

এই পবিত্র সূরা শরীফ নাযিলের তারতীব সম্পর্কে বলা হয়, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারকে একখানা জান্নাতি কাপড় মুবারকে পবিত্র সূরা আলাক্ব শরীফ উনার প্রথম পাঁচখানা পবিত্র আয়াত শরীফ লিখিত আকারে এনে পেশ করেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে আরজ করে বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ‘ইক্বরা’ অর্থাৎ দয়া করে পাঠ করুন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জবাবে বললেন, ‘ওয়ামা আনা বিক্বারিয়িন’ অর্থাৎ (মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক ব্যতীত আপনার কথায়) আমি পাঠ করতে পারি না। তখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি যে মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারকে এসেছেন সেটা প্রমাণ করার জন্য মুয়ানাকা করলেন। অতঃপর আবারো বললেন, আপনি দয়া করে পাঠ করুন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবারও জবাবে বললেন, অর্থাৎ (মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক ব্যতীত আপনার কথায়) আমি পাঠ করতে পারি না। এভাবে তিনবার মুয়ানাকা করে তিনবারই বললেন। তখন মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠ করতে বলা হলে তখন তিনি পাঠ করলেন একাধারা পাঁচখানা পবিত্র আয়াত শরীফ।

উপরোক্ত বর্ণনা থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার ওহী মুবারক ব্যতীত কারো কথা অনুযায়ী কোন কাজ করেন না, এমনকি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের কথা অনুযায়ীও নয়।

অনেকে বলে থাকে, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি ওহী মুবারক নাযিলের শুরুতে মুয়ানাকার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নাকি ফায়িয দিয়েছেন। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! আসলে এ কথাটা এভাবে বলা শুদ্ধ হবে না। এর সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ইলিম মুবারক দিয়েই সৃষ্টি করেছেন।

কাজেই, নতুন করে কোন ইলিম মুবারক দেয়ার প্রশ্নই আসতে পারে না। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র বলেন, আমি আপনাকে কিতাবহীন পেয়েছি অতঃপর কিতাব দিয়েছি। তাই কিতাব দেয়ার জন্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে ওহী মুবারক নাযিল করা হয়েছে। আর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত এবং খাদিমের অন্তর্ভুক্ত। উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করা ও তা’যীম-তাকরীম মুবারক করার কারণেই অর্থাৎ ওসীলাতেই হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وانما بعثت معلما

অর্থ: নিশ্চয়ই আমি মুআল্লিম হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। (দারিমী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অর্থাৎ: সমস্ত ইলিম উনার যিনি মালিক মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে কায়িনাতবাসীর প্রতি শিক্ষা দানের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুআল্লিম তথা শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, সকল ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম, সমস্ত জিন-ইনসান এবং সমস্ত সৃষ্টি সকলের সম্মানিত নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর সকলেই উনার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত এবং ছাত্রের অন্তর্ভুক্ত।

এখন যারা উম্মত ও ছাত্র তারা লেখা পড়া জানে আর তাদের যিনি সম্মানিত নবী ও রসূল এবং সম্মানিত শিক্ষক তিনি লেখা-পড়া জানেন না। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! এ ধরণের বক্তব্য নিরেট পাগল, চরম জাহিল, গুমরাহ ও কাফির ছাড়া আর কেউ প্রদান করতে পারে না।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت وهب بن منبه رحمة الله عليه قال قرات احدى وسبعين كتابا فوجدت فى جميعها ان الله عز وجل لم يعط جميع الناس من بدء الدنيا الى انقضائها من العقل فى جنب عمل محمد صلى الله عليه وسلم الا كحبة رمل من بين رمال جميع الدنيا وان محمدا صلى الله عليه وسلم  ارجح الناس عقلا وافضلهم رأيا

অর্থ:  হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, আমি (আসমানী) ৭১ টি কিাতব পাঠ করেছি। সবগুলো পাঠ করে বুঝতে পেরেছি যে, মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে সমাপ্তিকাল পর্যন্ত সকল মানুষকে যে জ্ঞান-বুদ্ধি দান করা হয়েছে তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইলিম মুবারক উনার তুলনায় এমন যেমন বিশ্বের সমস্ত বালুকণা হচ্ছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইলিম মুবারক আর বালুকণাসমূহের মধ্যে একটি বালুকণা হচ্ছে সবার ইলিম। নিঃসন্দেহে নূরে মুজাসাসম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সমস্ত মানবজাতির মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী-বুদ্ধিমান ও সর্বাধিক বিচার-বিবেচনাশীল। (খছায়িছুল কুবরা: ১/১১৯ পৃষ্ঠা, হিলইয়াতুল আউলিয়া ৪/২৬ পৃষ্ঠা, তারিখে দামেস্ক ৩/২৪২ পৃষ্ঠা)

উক্ত তাবিয়ী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ইলিম মুবারক সম্পর্কে কিছুটা মত প্রকাশ করেছেন মাত্র। প্রকৃতপক্ষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ও সম্মানিত ইলম মুবারক হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টিজগতের সকলের কল্পনাতীত পরিমাণ অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ও সম্মানিত ইলিম মুবারক উনার পরিমাপ করার ক্ষমতা একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার ব্যতীত আর কারোই নেই।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ও সম্মানিত ইলম মুবারক উনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

الرَّحْمٰنُ. عَلَّمَ الْقُرْآنَ. خَلَقَ الْاِنْسَانَ. عَلَّمَهُ الْبَيَانَ

অর্থ: দয়াময় মহান আল্লাহ পাক তিনি (উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে) পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়েছেন, তিনি ইনসান সৃষ্টি করেছেন এবং (উনাকে) বয়ান শিক্ষা দিয়েছেন। (পবিত্র সূরা আর রহমান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১-৪)

এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় তাফসীরে মা‘আলিমুত তানযীল ও তাফসীরে হুসাইনীতে বলা হয়েছে-

خلق الانسان اى محمدا صلى الله عليه وسلم علمه البيان يعنى بيان ما كان وما يكون

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি ইনসান তথা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং উনাকে বয়ান তথা পূর্বে যা হয়েছে এবং পরে যা হবে সমস্ত বিষয় সম্পর্কে অবহিত করেছেন।

তাফসীরে খাযিনে উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে-

قيل اراد بالانسان محمدا صلى الله عليه وسلم علمه البيان يعنى بيان ما كان وما يكون لانه صلى الله عليه وسلم نبى عن اخبر الاولين والاخرين وعن يوم الدين

অর্থ: বর্ণিত হয়েছে যে, (উক্ত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে) ইনসান বলতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝানো হয়েছে। উনাকে পুর্ববর্তী ও পরবর্তী যা হবে সব বিষয়ের বিবরণ শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কেননা উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী এবং ক্বিয়ামতের দিন হওয়া পর্যন্ত সবকিছু অবহিত করেছেন।

আল্লামা ইসমাইল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘তাফসীরে রূহুল বায়ানে’ উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে উল্লেখ করেন-

وعلم نبينا صلى الله عليه وسلم القران واسرار الالوهية كما قال وعلمك ما لم تكن تعلم

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের নবী ও রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজেই পবিত্র কুরআন শরীফ ও স্বীয় রব তায়ালা উনার রহস্যাবলী সম্বলিত ইলিম মুবারক হাদিয়া করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনার রব তায়ালা তিনি যাবতীয় অজানা বিষয় আপনাকে জানিয়েছেন।

অনুরূপ ব্যাখ্যা তাফসীরে মাদারিক ও তাফসীরে সাবীতেও উল্লেখ আছে।

ইমাম কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه و ابن كيسان رحمة الله عليه الانسان ههنا يراد به محمد صلى الله عليه وسلم البيان الحلال من الحرام والهدى من الضلال وقيل ما كان وما يكون لانه بين  عن الاولين والاخرين ويوم الدين

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও ইমাম কায়সান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বর্ণনা করেন, ইনসান শব্দ মুবারক দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝানো হয়েছে। আর বয়ান দ্বারা হারাম থেকে হালাল এবং পথভ্রষ্টতা থেকে হিদায়াতকে এবং এখানে এটাও বর্ণনায় এসেছে, যা কিছু হয়েছে ও যা কিছু হবে। সৃষ্টির শুরু থেকে বিচার দিবস হাশর পর্যন্ত এমনকি অনন্তকাল পর্যন্ত সবকিছুরই বর্ণনা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া মুবারক করা হয়েছে।

আল্লামা ইমাম খরপুস্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শরহে কাছীদায়ে বুরদায় উল্লেখ করেন-

وواقعون لديه عند حدهم و فى حديث يروى عن حضرت معاوية رضى الله عنه أنه كان يكتب بين يدى النبى صلى الله عليه وسلم فقال له: “الق الدواة، وحرف القلم، واقم الباء، وفرق السين، ولا تعور الميم، مع انه صلى الله عليه وسلم لم يكتب ولم يقرء من كتاب الاولين

অর্থ: হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে যে, তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনেই লিখার কাজ করতেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বলেছিলেন, দোয়াত এভাবে রাখ, কলমকে ঘুরাও, বা অক্ষরকে সোজা করো, সীন অক্ষরটিকে পৃথক করো এবং মীম অক্ষরকে বাঁকা করো। অথচ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি লিখার পদ্ধতি সৃষ্টির কারো কাছ থেকে কোনো দিন শিক্ষা করেননি। এবং পূর্ববর্তীদের কোনো কিতাবও তিনি পাঠ করেননি। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে সমস্ত ইলম মুবারকসহ যাবতীয় বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন।

বিশ্ববিখ্যাত তাফসীরকারক আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাফসীরে রূহুল  বায়ানে পবিত্র সূরা আনকাবূত শরীফ উনার ৪৮ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে বলেন-

وكان صلى الله عليه وسلم يعلم الخطوط ويخبر عنها

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি লিখতে জানতেন এবং সে বিষয়ে অপরকেও জ্ঞাত করতেন।

মিশকাতুল মাছাবীহ শরীফ বাবুল ওফাতুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধ্যায়ে বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ উনাদের বরাতে একখানা দীর্ঘ হাদীছ শরীফ উল্লেখ আছে-

عن حضرت ابن عبَّاس رضى الله تعالى  عنه قال : لـما حضر رسول الله صلى‌ الله‌ عليه‌ وسلم وفى البيت رجال فيهم عمر بن الخطَّاب عليه السلام قال النبىُّ صلى‌ الله‌ عليه‌ ‌ وسلم : هلمّوا أكتب لكم كتاباً  لن تضلُّوا بعده  فقال عمر عليه السلام قد غلب عليه الوجع، وعندكم القرآن حسبكم كتاب الله، فاختلف أهل البيت واختصموا فمنهم من يقول: قرِّبوا يكتب لكم رسول الله صلى الله عليه وسلم ومنهم من يقول ما قال عمر عليه السلام

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের সময় নিকটবর্তী হওয়ায় উনার পবিত্র হুজরা শরীফ উনার মধ্যে অনেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উপস্থিত ছিলেন। উনাদের মধ্যে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনিও ছিলেন। এক সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আসুন, আমি আপনাদের জন্য একটি কিতাব লিখে দিয়ে যাই, যেন আপনারা এরপর কখনো হিদায়েত থেকে বিচ্যুত না হন। তখন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশের সময় কষ্ট দেয়া ঠিক নয়। আর আপনাদের নিকট পবিত্র কুরআন শরীফ রয়েছে। সুতরাং মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কুরআন শরীফ-ই আপনাদের জন্য যথেষ্ট। বিষয়টি নিয়ে হুজরা শরীফ উনার মধ্যে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে ইখতিলাফ হলো ফলে উনাদের মধ্যে কেউ কেউ বললেন যে, কাগজ-কলম আনুন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেনো আপনাদের জন্য কিছু লিখে যান। আবার কেউ কেউ সে কথাই বললেন, যা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেছিলেন।

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, আপনারা খাতা-কলম নিয়ে আসুন, আমি আপনাদের লিখে দিয়ে যাই। আর এটা বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ উনাদের বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। তিনি ইরশাদ মুবারক করেননি যে, আমি বলি তোমরা লিখ। বরং তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কাগজ-কলম নিয়ে আসুন, আমি লিখে দিয়ে যাই।

এখন উক্ত বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ কিতাবে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দলীলসহ অন্যান্য ক্বিতয়ী বা অকাট্ট দলীলসমূহ উপেক্ষা করে যারা মনগড়া কথা বলবে, নিঃসন্দেহে তারা পথভ্রষ্ট ও জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত।

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব