হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৩৪) ক্বানায়াত উনার মাক্বামে ফানা ও বাক্বা কতিপয় আউলিয়ায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

সংখ্যা: ২৭৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

আব্বাসীয় কথিত খলীফা হারুনুর রশিদ। তার একজন ছেলে ছিলেন। সেই ছেলে ছিলেন সূফী, দুনিয়া বিরাগী, অল্পে তুষ্ট আল্লাহওয়ালা। উনার বেশ-ভূষা, চলা-ফেরা ছিলো একান্ত সাধারণ। পরনে ছিলো না রাজকীয় পোষাক। রাজ প্রাসাদের কোন ছোঁয়া স্পর্শ করতে পারেনি উনাকে। কতিত খলীফার সভাসদরা এ নিয়ে অনেক ধরণের কথা-বার্তা বলতো, সমালোচনা করতো। এমনকি খোদ কথিত খলীফাকেও তারা সমালোচনা থেকে বাদ দেয়নি। কথিত খলীফা যদি উনাকে কিছু সময় দিতো, নছীহত করতো তাহলে হয়তো বা তিনি এরূপ জীবন-যাপন ত্যাগ করতঃ রাজকীয় জীবন-যাপন করতেন।

একদিন হারুনুর রশিদ সভাসদদেরকে নিয়ে বসে আছে। এমন সময় ষোল বৎসরের সেই কিশোর পাশ দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। উনাকে দেখে হারুনুর রশীদ কাছে ডাকলেন। তিনি নিকটবর্তী হলেন। হারুনুর রশীদ উনাকে অনেক নছীহত করলো। বললো, বৎস! আপনার এরূপ চাল-চলনে আমার ব্যক্তিত্বে আঘাত আসে। আমাকে লোক সমাজে লজ্জিত হতে হয়। আপনি এসব বেশ ভূষা ছেড়ে দিয়ে শাহী দরবারের সম্মান- গৌরব অক্ষুন্ন রাখুন।

হারুনুর রশীদের কথাগুলো তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। অতঃপর বললেন, সম্মানিত পিতা! আপনার রাজ্যের পরিধি অতি সামান্য। আর আমার রাজ্যের পরিধি ও সীমা অনেক বিস্তৃত।

একথা বলে তিনি নিকটে অবস্থিত একটি পাখির দিকে ইশারা করে বললেন- হে পাখি, তুমি আমার হাতে এসে বস। একথা বলার সাথে সাথে পাখিটি উড়ে এসে কিশোর বালকের হাতে বসলো। একটু পর তিনি পাখিকে ইশারা করে যেতে বললেন। আর পাখিটি তৎক্ষণাৎ পূর্বের স্থানে গিয়ে বসলো।

কিশোর বালক হারুনুর রশীদের দিকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনি পাখিটিকে ডাকেন তো দেখি, পাখি আপনার কথা শুনে কি না। আপনি তো খলীফা দাবিদার! আপনার আজ্ঞাবহ সবাই। জ্বিন-ইনসান, পশু-পাখি সবাই আপনার রাজ্যে বাস করে। কাজেই, আপনার আদেশ-নিষেধ পালন করতে বাধ্য।

কিশোর বালক উনার রূহানী ক্ষমতা দেখে সভাসদগণ আশ্চার্যান্বিত হলো। তিনি হারুনূর রশিদকে লক্ষ্য করে বললেন। হে আমার সম্মানিত পিতা! আপনি যখন আমাকে দুনিয়ার কারণে অপমানিত করলেন, তখন আমিও প্রতিজ্ঞা করেছি আমি আপনার থেকে পৃথক হয়ে যাবো। একথা বলে তিনি আসবাব-পত্র ছাড়াই বের হয়ে গেলেন। উনার সাথে ছিলো শুধু এক জিলদ পবিত্র কুরআন শরীফ, মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির ও পবিত্র দুরূদ শরীফ পড়ার একটি তাছবীহ এবং একটি আংটি।

কিশোর বালক রাজ-প্রাসাদ থেকে বের হয়ে চলতে চলতে এক সময় বসরা শহরে এসে পৌঁছলেন। সে শহরে সেখানকার মজদুরদের সাথে মাটি কাটার কাজ শুরু করলেন। তিনি সপ্তাহে একদিন তথা ইয়াওমুছ সাবত কাজ করেন। মজুরী এক দিরহাম ও এক দানিক তথা এক দিরহামের ষষ্ঠাংশ।

হযরত আবু আমের বসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার ঘরের একটি দেয়াল ভেঙ্গে গেল। আমি মেরামতের জন্য একদিন মজদুর বা লেবার তালাশ করলাম। বসরা শহরে  যেখানে মজদুর বা শ্রমিকরা বসে সেখানে দেখলাম একজন খুব ছূরত কিশোর বালক বসে নিবিড়ভাবে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করছেন। উনার মত খুব ছূরতের অধিকারী কোন বালক ইতিপূর্বে আমি কখনও দেখিনি। আমি উনাকে বললাম, এই ছেলে কাজ করবেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ; আমরা কাজ করার জন্যই সৃষ্টি হয়েছি। তবে কাজটি কোন ধরণের?

আমি বললাম, মাটি কাটার কাজ তিনি বললেন, উত্তম কাজ। তবে আমার দুটি শর্ত আছে, এক দিরহাম ও এক দানিক (এক ষষ্ঠাংশ) দিরহাম দিতে হবে। আর পবিত্র আযান হওয়ার সাথে সাথে আমাকে নামায পড়ার সময় দিতে হবে। আমি উনার দুটি শর্তই মেনে নিলাম। বললাম, ঠিক আছে। আমি উনাকে নিয়ে এসে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেলাম। মাগরিবের সময় এসে দেখি তিনি একাই দশ জনের কাজ করেছেন। আমি উনাকে ধার্যকৃত মজুরী দিলাম। খুশী হয়ে আরো দুই দিরহাম দিলাম। তিনি বললেন, এতো দিরহাম দিয়ে কি করবো? তিনি তা নিতে অস্বীকার করলেন। অবশেষে আমি উনাকে এক দিরহাম ও এক দানিকই দিয়ে বিদায় করলাম।

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫১)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫২)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৩)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৪)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৫)