হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২১৪) হুসনুল খুল্ক্ব বা সচ্চরিত্রবান মুরীদই শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সর্বাধিক নৈকট্যশীল ও সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত।

সংখ্যা: ২৫৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

 আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

শোকরগোজারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোজার না করলে

 নিয়ামত বন্ধ হয়

 তারপর হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি অন্ধ লোকটির কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন, তুমি কি চাও? লোকটি বললো, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমার দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দেন। আমি যেন, উনার সুন্দর সৃষ্টিরাজী নয়নভরে দেখতে পাই। তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি তার চোখে হাত বুলানোর সাথে সাথে দৃষ্টি শক্তি ফিরে আসলো। হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে কি পাওয়ার আশা করো? সে বললো, আমাকে যেন মহান আল্লাহ পাক একটি বকরী দান করেন। তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তাকে এমন একটি বকরী এনে দিলেন যা অতিসত্বর বাচ্চা দিবে। এবং বরকতের জন্য দোয়া করতঃ অদৃশ্য হয়ে গেলেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যে তিন ব্যক্তির উট, গরু ও বকরীতে মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে গেল। এখন তাদের প্রত্যেকেই বিরাট ধনী। কিছুকাল পর সেই হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম মুসাফির বেশে প্রথমে কুষ্ঠ রোগীর কাছে এসে বললেন, আমি সফরে এসে খুবই অভাবগ্রস্থ হয়ে পড়েছি। আমার একমাত্র বাহন জন্তুটিও মারা গেছে। পথ খরচ শেষ হয়ে গেছে। দয়া করে আপনি যদি আমাকে কিছু সাহায্য করতেন তাহলে আমি সহসাই দেশে ফিরে যেতে পারতাম। অন্যথায় আমার কষ্টের সীমা থাকবে না। মহান আল্লাহ পাক উনার দয়া ছাড়া আমার কোন উপায় নেই। যে মহান আল্লাহ পাক আপনাকে এমন সুন্দর স্বাস্থ্য ও সুশ্রী চেহারা দান করেছেন, উনার নাম মুবারকে আপনার কাছে একটি উট চাচ্ছি। মেহেরবানী করে আমাকে একটি উট দান করুন। আমি তাতে চড়ে কোন রকমে বাড়ীতে পৌঁছতে পারবো।

লোকটি বললো, হে নাদান! তুমি এখনই এখান থেকে চলে যাও। আমার নিজেরই অনেক প্রয়োজন। তোমাকে কিছু দেয়া সম্ভব নয়।

হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তার কথা শুনে বললেন, তোমাকে আমার চেনা চেনা মনে হয়। তুমি না কুষ্ঠ রোগী ছিলে? লোকেরা তোমাকে রোগের কারণে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও ঘৃণা করতো? তুমি নিঃস্ব ছিলে না? মহান আল্লাহ পাক তিনি কি তোমাকে এসব ধন-সম্পদ দান করেননি? লোকটি বললো, কি এসব আবোল তাবোল বলছেন? বাপ-দাদার আমল থেকে আমাদের এই ধন-সম্পদ। বংশানুক্রমে আমরা এসব ভোগ দখল করে আসছি। আর আমার কুষ্ঠ রোগ বলতে কিছুই ছিল না। তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, যদি তুমি মিথ্যুক হও, তাহলে মহান আল্লাহ পাক যেন তোমাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেন। একথা বলে হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি চলে গেলেন। আর অল্প কিছুদিনের মধ্যে কুষ্ঠ রোগীটি সর্বহারা হয়ে পূর্বের অবস্থানে ফিরে গেল।

তারপর হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম টাক পড়া ব্যক্তির কাছে গেলেন। লোকটির বর্তমান সুন্দর চেহারা। মাথায় কুচকুচে কালো চুল যা তার চেহারায় সোভা বর্ধন করেছে। যেন তার কোন রোগই ছিল না। হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তার কাছে একটি গাভী চাইলেন। সেও উটওয়ালার মতই নীতিবাচক জাওয়াব দিল। হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উটওয়ালার মতো তাকেও পূর্বের অবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু সে বুঝতে চাইলো না। বরং উটওয়ালার মতো না শোকর করলো। হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তাকেও বদদোয়া করে বললেন, যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন তোমাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেন। হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনার দোয়া মুবারক ব্যর্থ হওয়ার নয়। হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি চলে যাওয়ার সাথে সাথে তার টাক পরা শুরু হলো। সমস্ত ধন-সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেলা। সব শেষে, হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম অন্ধ ব্যক্তির কাছে গেলেন। বললেন, বাবা! আমি মুসাফির। খুবই মুছীবতগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। আপনি মেহেরবানী করে আমাকে কিছু সাহায্য করুন। যে মহান আল্লাহ পাক আপনাকে এতো ধন-সম্পদের মালিক বানিয়ে দিয়েছেন উনার মুবারক নামে উনার সন্তুষ্টি মুবারকের জন্য আমাকে একটি বকরী দান করুন। যাতে কোনরকম ভাবে বাড়ীতে পৌঁছতে পারি।

লোকটি বললো, অবশ্যই আমি অন্ধ ও কপর্দকহীন ছিলাম। আমি আমার অতীত জীবনের কথা আজও ভুলিনি। মহান আল্লাহ পাক তিনি শুধু আমার দৃষ্টিশক্তিই ফিরিয়ে দেননি সাথে সাথে অনেক ধন-সম্পদও দান করেছেন। (আলহামদুলিল্লাহ)

কাজেই এসবই মহান আল্লাহ পাক উনার দয়া-ইহসান। আমার নিজস্ব কিছুই নেই। কাজেই, আপনার যে কয়টি বকরীর প্রয়োজন ইচ্ছেমত তা আপনি নিয়ে যেতে পারেন। হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি তখন বললেন, আমার এসবের প্রয়োজন নেই। আপনাদের তিনজনকে পরীক্ষা করারই আমার উদ্দেশ্য। পরীক্ষা করা শেষ হয়ে গেছে। তারা দুজন পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে। তাদের দুইজনের প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি অসন্তুষ্ট। একমাত্র তুমি পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছ। মহান আল্লাহ পাক তোমার প্রতি সন্তুষ্ট। তিনি তোমার নিয়ামতরাজী বৃদ্ধি করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ!

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৪)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৫)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৬)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল ল মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৭)

মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৮)