প্রজ্ঞাময় ও পরাক্রমশালী আল্লাহ পাক-এর জন্যই সব প্রশংসা। যার অপার করুণায় মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর বর্তমান সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই সব ছলাত ও সালামের লক্ষ্যস্থল। যিনি মানুষকে কিতাব শিক্ষা দিয়েছেন, তাযকিয়া করেছেন, হিকমত শিক্ষা দিয়েছেন বা নছীহত করেছেন। আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন, “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি নছীহত করুন, নিশ্চয়ই আপনার নছীহতগুলো মু’মিনদের জন্য ফায়দাকর।” (সূরা জারিয়াত/৫৫) বিদায় হজ্বে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সাক্ষ্য প্রদান করেছেন যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যথাযথভাবে স্বীয় নছীহত প্রদানের কাজ সম্পন্ন করেছেন।
উল্লেখ্য, তারপর এই নছীহত প্রদানের কাজে সম্পৃক্ত হন নায়েবে নবীগণ, যারা উলামায়ে হক্ব। আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন, “তোমাদের মধ্যে এমন একদল হওয়া উচিত যারা কল্যাণের দিকে ডাকবেন, সৎ কাজের আদেশ দিবেন এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবেন এরাই সফলকাম।” (সূরা আলে ইমরান/১০৪) আরো ইরশাদ করেন, “যারা ইল্মপ্রাপ্ত হয়েছেন তারাই মর্যাদাবান।” (সুরা মুজাদালাহ্) আর সে মর্যাদার পাশাপাশি তাদের নিদর্শণ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর বান্দাগণের মাঝে আলিমরাই আল্লাহ পাককে বেশী ভয় করেন।” (সূরা ফাতির)
উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহের প্রেক্ষিতে প্রতিভাত হয় যে, যারা ইল্ম লাভ করেছেন এবং তদানুযায়ী আমল করেন ও আল্লাহ পাককে ভয় করেন তারাই মর্যাদাবান, তারাই আলিম। অন্যরা কেবলই নামধারী। মূলতঃ নামধারী মাওলানা, খতীব, শাইখুল হাদীছ ইত্যাদি সম্পর্কে ইসলামের শুরু হতেই অনেক আলোচনা হলেও আজ আখিরী যামানায় একই বিষয়ে পর্যালোচনার, মূল্যায়নের এবং চিহ্নিতকরনের অবকাশ ও অত্যাবশ্যকতা পূর্বাপেক্ষা অনেক বেশী। যদিও কোন কোন মহল মনে করেন, আলিম নামধারীদের সমালোচনা, তাদের কুকীর্তির বয়ান, আমভাবে, আম জনতাকে জানানো যাবেনা। যদি বা করতে হয় তবে তা চুপিসারে। সাধারণকে সে বিষয়ে অবহিত করতে তাদের ঘোর আপত্তি। তবে এ আপত্তি যে কেবলই অমূলক, তাতে সন্দেহ নেই। যেহেতু কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফেই নামধারী, দুষ্টমতি উলামায়ে ছূদের সম্পর্কে সরাসরি কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। কুরআন শরীফে বলা হয়েছে, “যারা তাওরাতের হাফিয হয়েছে তৎপর তদ্রুপ আমল করেনি তারা কিতাবরাশি বহনকারী গর্দভের ন্যায়।” (সূরা জুমুয়া) হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “শেষ যুগে কতগুলো প্রবঞ্চক-মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব হবে তারা এরূপ হাদীছসমূহ (বাক্যবলী) বলবে, যা তোমরা শোননি, তোমাদের পূর্বপুরুষ শোনেনি। তোমরা তাদের নিকট যেয়োনা এবং তাদেরকে তোমাদের নিকট স্থান দিওনা। তবে তারা তোমাদের গোমরাহ ও ফাসাদ তৈরী করতে পারবে না।” (মুসলিম শরীফ)
সুতরাং বোঝা যাচ্ছে যে, উক্ত কায্যাবের দল ইল্ম বিতরণের নামেই বা মানুষকে হিদায়েতের দিকে আহ্বানের ছদ্মাবরণেই এসব হীণ ষড়যন্ত্র ফেঁদে বসবে। এবং এজন্যে আরো সতর্কবাণী উচ্চারণ করে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয়ই এই ইল্ম দ্বীন, কাজেই তোমরা যার নিকট দ্বীন শিক্ষা করবে, তার অবস্থা তদন্ত কর।” অর্থাৎ কি তাদের আমল, কি তাদের আক্বীদা, কি তাদের গোপন (স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক) অভিলাষ, সে সম্পর্কে অবগত হও। শাইখুল হাদীছ, মাওলানা, মুফতী, খতীব, মুহাদ্দিছ দাবী করার পরও তারা ছবি তোলা, নারী নেতৃত্ব, লংমার্চ, হরতাল, কুশপুত্তলিকা দাহ, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী আইন ইত্যাদি হারাম কাজে জড়িত কিনা সে সম্পর্কে সচেতন হও। অতএব, আমভাবে, আম মানুষের কাছে আলিম নামধারীদের সমালোচনা করলে, তাদের আমলশুন্যতা ব্যক্ত করলে, সুন্নতের খেলাফ বিদ্য়াতীদের চিহ্নিত করলে, হরহামেশা হারামকে হালালকারীদের এবং বিদ্য়াতী, বিজাতীয় ও বেশরা পথ অনুসারণকারী তথাকথিত আন্দোলনকারীদের হাক্বীক্বত তুলে ধরলে, যারা আঙ্গুল দিয়ে দাঁত কামড়ায়, যাদের আঁতে ঘা লাগে তারা আসলে সেসব নামধারী, দুষ্টমতি উলামায়ে ছূদেরই দোসর। প্রসঙ্গক্রমে স্মর্তব্য, হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আলিমের ভুল, মুনাফিকের বিরোধ ও ভ্রান্তপথে চালিত শাসকদের হুকুম মুসলমানদের ক্ষতির কারণ।” বলাবাহুল্য, উপরোক্ত তিনটি অবস্থাই বর্তমানে বিশেষভাবে বিরাজ করছে। আজ ভ্রান্ত শাসকের হুকুমে মুসলমান যেমন বিপন্ন হচ্ছে তেমনি তার সঠিক প্রতিকার না করে উপরন্তু আরো গোমরাহী, বিদ্য়াতী ও বিজাতীয় পন্থায় প্রতিকার করতে গিয়ে নামধারী তথা উলামায়ে ছূর দল ইসলাম বিদ্বেষী কাফিরদেরই শক্তিশালী করেছে। তারা আজকে জঙ্গীবাদকে গ্রহণ করে এদেশ বিক্রির পাঁয়তারা করছে। জ্ঞতব্য যে, উলামায়ে ‘ছূ’দের বিড়ম্বনার হাত হতে বাঁচতে হলে, তাদের তথাকথিত ইসলামী আন্দোলনের অসাঢ়তা উপলব্ধি করতে হলে, যারা আল্লাহ পাককে হাক্বীক্বীভাবে ভয় করেন তাদের ছোহ্বতের বিকল্প নেই। তাই উলামায়ে ‘ছূ’দের চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি উলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণের তথা যামানার ইমাম ও মুজাদ্দিদে আ’যমের ছোহবতের মাধ্যমেই কেবল আল্লাহ পাক-এর রহমত ও কাঙ্খিত কামিয়াবী হাছিল সম্ভব।