বিশ্ব সমাদৃত হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের অনুপম মুবারক চরিতগ্রন্থ – আখবারুল আখইয়ার-১৬১
হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি
পূর্ব প্রকাশিতের পর
হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি গেছু দারাজ লক্ববেও প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। এ লক্ববে ভূষিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, হযরত শায়খ নাছীরুদ্দীন মাহমূদ চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি যে পালকি মুবারক-এ চলতেন তা অন্যান্য মুরীদগণ যেভাবে বহন করতেন হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও ঠিক সেভাবেই বহন করতেন। একদিন পালকি মুবারক উঠানোর সময় উনার কিছু চুল মুবারক পালকির একস্থানে বেঁধে যায়। তিনি উহা সরাতে গিয়ে পালকি মুবারক উঠাতে কিছুটা দেরি হয়ে যায়। সে কারণে হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার শায়খের অসন্তুষ্টি প্রাপ্তির আশঙ্কা করলেন। তাই তিনি উনার পালকি মুবারক বহন করা অবস্থায় শায়খ উনার ইশ্ক ও মুহব্বতে এমনভাবে চলতে লাগলেন যে, তিনি খুব সতর্কতার সাথে অনেক দূর পথ অতিক্রম করলেন। হযরত শায়খ চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উহা টের পেয়ে উনার প্রতি অনেক সন্তুষ্ট হলেন। এবং উনার সঠিক মুহব্বত ও পূর্ণ আক্বীদার উপরে তিনি উনাকে ধন্যবাদ দিলেন। এবং নিন্মোক্ত শের পাঠ করলেন-
ہر کہ مرید سید گیسو ردرازشد
واللہ خلاف نیست کہ او عشقبا زشد
অর্থ: যে ব্যক্তি হযরত সাইয়্যিদ গেছু দারাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুরীদ হবে মহান রব্বুল আলামীন উনার কসম! সে ব্যক্তি নিশ্চয়ই ইশক ও মুহব্বতের বাজপাখি হয়ে যাবে।
হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অনেকগুলি মালফূযাত ছিল যা ‘জাওয়ামিউল কালিম’ হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। মুহম্মদ নামের উনার একজন মুরীদ উক্ত মালফূযাতসমূহকে একত্রিত করেছিলেন। উহাতে তিনি লিখেছিলেন, যে হযরত শায়খ নাছীরুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি আমাকে খুবই মুহব্বত (স্নেহ) করতেন। প্রথমত আমার এমন খেয়াল ছিল যে, আমি অতি শীঘ্রই আমার শায়খ উনার খিদমতে হাজির হবো। কিন্তু শায়খ উনার খিদমতে হাজির হওয়ার আদব সম্পর্কে আমি জানতাম না। তাই আমি তখন হাজির হইনি। আর এ বিষয়টি আমি আমার পিতা যিনি হযরত শায়খ নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুরীদ ছিলেন। তিনি উনার শায়খের ছোহবতে থাকা অবস্থায় উনার কাছ থেকে শুনেছি তিনি বলেছেন, একদা আমি শায়খের খিদমতে হাজির হয়েছি। তখন তিনি আমাকে সম্মোধন করে বলেছিলেন মুহম্মদ! তুমি সর্বদা অসময়ে এসে থাক। আর তুমি যখন আমার কাছে আস তখন আমি চিন্তিত পেরেশান হয়ে যাই। সুতরাং আমি চাচ্ছি যে, তুমি আলাদাভাবে আমার সাথে কথোপকথন করবে। ওই সময় আমার বয়স ছিল মাত্র পনের বছর। কম বয়সী হওয়ার কারণে মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ওই মুবারক ক্বওল শরীফ শ্রবণে আমি খুব ভীত সন্ত্রস্ত ও চিন্তিত হয়ে গেলাম। আমি আরয করলাম। সুবহানাল্লাহ! এর চেয়ে বড় সৌভাগ্য আমার কি আছে যে, হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি দয়া করে আমাকে আলাদাভাবে কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন।
একবার আমি ইশরাক নামাযান্তে শায়খ উনার দরবার শরীফ-এ উনার খিদমতে হাজির হলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি ফজরের ওযু ইশরাক পর্যন্ত রাখতে পার? আমি উত্তরে বললাম: জি। আপনার ফায়েজ তাওয়াজ্জুতে রাখতে পারি। তখন তিনি বললেন, কতই বরকত (অনেক বরকত) যে তুমি ফজরের ওযু দ্বারা ইশরাকের দু’রাকায়াত নামায আদায় করতে পার। আমি বললাম, আপনার ফয়েজ তাওয়াজ্জুহর বদৌলতে উহা আমি করে থাকি। আমার মুর্শিদ ক্বিবলা তখন আমাকে পুনরায় বললেন, একই ওযু দ্বারা তুমি হাক্বীক্বী কল্যাণ লাভের জন্য আরো দু’রাকায়াত শুকরানা স্বরূপ নফল নামায আদায় করবে। আমি কিছু দিন উহা নিয়মিতভাবে আদায় করলাম। একদা তিনি আমাকে ওই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন আমি বললাম জি। তখন তিনি আমাকে পুনরায় বললেন, এই অযু দ্বারা চাশতের চার রাকায়াত নামায আদায় করবে। তাও আদায় হবে। ইশরাক নামাযের কিছু পরেই উহা আদায় করে নিবে।
আমি রজব মাসে প্রতিদিনই রোযা রেখে থাকি। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন: রজবের পুরো মাস রোযা রাখ কি? আমি আরয জানালাম: জি হ্যাঁ। তখন তিনি আমাকে বললেন, শা’বান মাসেও পুরো রোযা রাখবে। তখন আমি বললাম, শা’বান মাসে শুধুমাত্র ৯টি রোযা রেখে থাকি। যদি আরো ২১টি রাখি তবে একাধারা তিন মাস একসাথে রোযা রাখা হবে। আমি আরো বললাম, আপনার দোয়ায় উহাও আমি রাখতে পারবো। (চলবে)
মূল: হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তর: মাওলানা মুহম্মদ ফযলুল হক